Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025

    আমাদের সাদা বাড়ি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025

    আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প121 Mins Read0
    ⤷

    ০১. চিত্রাদের বাড়ির পরিস্থিতি খুবই অস্বাভাবিক

    আজ চিত্রাদের বাড়ির পরিস্থিতি খুবই অস্বাভাবিক। অথচ বাড়ির সবাই ভাব করছে যেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। আজকের দিনটা আলাদা কোনো দিন না। অন্য আর দশটা দিনের মতোই। সবাই অভিনয় করে স্বাভাবিক থাকার প্রাণপণ চেষ্টা করছে। অভিনয় করে স্বাভাবিক থাকা বেশ কঠিন ব্যাপার। চিত্রাদে বাড়ির কেউই অভিনয়ে তেমন পারদর্শী না। কাজেই বাড়ির সবাইকে খানিকটা অস্বাভাবিক লাগছে। সবচে অস্বাভাবিক লাগছে চিত্রার মা শায়লা বানুকে। সামান্য কোনো উত্তেজনার বিষয় হলেই তার প্যালপেটিশন হয়, কপাল ঘামতে থাকে, ঘন ঘন পানির পিপাসা পায়। এই তিনটিই এখন তার হচেছ। অথট ভাল করছেন কিছুই হয়েছে না। তার সামনে পিরিচে ঢাকা পানির গ্লাস। কিন্তু তিনি এখনো গ্লাসে চুমুক দেন নি।

    তারা সবাই অপেক্ষা করছে একটা টেলিফোন-কলের অন্যে। চিত্রার মেজোখালা উত্তরা থেকে টেলিফোনটা করবেন। বিশেষ খবরটা দেবেন। ইয়েস অথবা নো।

    চিত্রার বিয়ের আলাপ-আলোচনা চলছে। বরপক্ষের লোকজন দুই দফা মেয়ে দেখে গেছে। কিন্ত তাদের কথাবার্তা মোটেই স্পষ্ট না। হ্যাঁ-না বলা দূরে থাকুক, কোনো ইঙ্গিত পর্যন্ত দিচ্ছে না।

    ছেলে সবার খুব পছন্দের। লম্বা, গায়ের রঙ বিলেতি সাহেবদের মতো। বাবা-মার একমাত্র ছেলে। মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। ছেলের বাবার ঢাকা শহরেই তিনটা বাড়ি। তার চেয়েও আশ্চর্য কলা তাদের নাকি লন্ডনেও একটা বাড়ি আছে। ছুটি কাটাতে তারা যখন লন্ডন যায় তখন হোটেলে ওঠে না, নিজেদের বাড়িতে ওঠে। ছুটি কাটাতে সব সময় যে লন্ডন যায় তাও না। গত বছর গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। বড়লোকদের দুটা ভাগ আছে। এক ভাগ হলো সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়া গ্রুপ। ছুটি ছাটায় এরা সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়ার বাইরে যেতে পারে না। আরেক ভাগ আমেরিকা-লন্ডন অপ। চিলার যার সঙ্গে বিয়ের কথা হচেই সে আমেরিকা-লন্ডন পের।

    সেই তুলনায় চিত্রারা কিছুই না। ঢাকা শহরে তাদেরও একটা বাড়ি আছে। দোতলা ফাউন্ডেশনের একতলা বাড়ি। এই বাড়ির জুনো ব্যাংকে লোন আছে বিশ লাখ টাকা। প্রতি দুমাস পরে পরে ব্যাংক থেকে একটা চিঠি আসে। তখন চিত্রার মা শায়লা বানুর মুখ শুকিয়ে যায়। সংসার চালানো, ব্যাংকের লোন দেয়া, দুই মেয়ের পড়াশোনা সবই তার একার দেখতে হয়। চিত্রার বাবা চৌধুরী খলিলুর রহমান মোটেই সংসারী মানুয় না। তিনি এজি অফিসের বিল সেকশানের নিচের দিকের অফিসার। চাকরি শুরু করেছিলেন হেড এসিসটেন্ট হিসেবে। দুটা প্রমোশন পেতে তার কুড়ি বছর লেগেছে। অফিসে যাওয়া, অফিস থেকে ফেরা। মাঝে মধ্যে অফিস থেকে ফেরার পথে টুকটাক কাঁচাবাজার করা ছাড়া সংসারে তার কোনো ভূমিকা নেই।

    শায়লা বানু সংসারের এই অবস্থাতেও মোটামুটি ভেলকি দেখিয়েছেন। যাত্রাবাড়িতে সাড়ে তিনকাঠা জমির উপর বাড়ি করেছেন। রাজমিস্ত্রি ডেকে বাড়ি বানিয়ে ফেলা না, রীতিমতো আর্কিটেক্ট দিয়ে ডিজাইন করে বাড়ি বানানো। বাড়ির অর্ধেকটা ভাড়া দিয়েছেন। ভাড়ার টাকায় ব্যাংকের লোন শোধ দেয়া হচ্ছে। তিনি নিজে এনজিওতে একটা চাকরি যোগাড় করেছেন। সন্ধ্যার পর তাকে কাজে যেতে হয়। বয়স্কদের নিক্ষরতা দূর করার একটা প্রকল্পের তিনি শিক্ষিকা। এই চাকরিতেও তিনি খুব ভালো করছেন। শিক্ষিকা থেকে তিনি এখন হয়েছেন প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর। এনজিওর বেতন ভালো। বেতনের একটি টাকাতেও তিনি হাত না দিয়ে সংসার চালানোর চেষ্টা করেন। টাকাটা জমা হচ্ছে মেয়েদের বিয়ের খরচের জন্যে। তা ছাড়া এই বাড়ি তার দোতলা করা ইচ্ছা। দোতলা হয়ে গেলে পুরো একতলাটা তিনি কোনো এনজিওকে ভাড়া দিয়ে দেবেন। সে রকম কথাও হয়ে আছে।

    তিনি যে অবস্থানে আছে। সেখান থেকে মেয়ের এত ভালো নিয়ে আশা করা ঠিক না। তিনি আশাও করেন নি। চিত্রা খুবই সুন্দরী মেয়ে, কিন্তু গায়ের রঙ ময়লা। বাংলাদেশে মেয়ের সৌন্দর্যবিচারে গায়ের রক্তের ভূমিকাই প্রধান। গায়ের রঙ ধরে শাদা হলে ট্যারা চোখের মেয়ে, ভালো করে তাকালে যার নাকের নিচে সূক্ষ্ম গো দেখা যায় তাকেও রূপবতী হিসেবে গণ্য করা হয়। শাশুড়ি পাড়া-প্রতিবেশীকে গুন আহ করে সৃষ্ট দেখাতে দেখাতে গোপন অহঙ্কার নিয়ে লেন আমার বউয়ের গায়ের রঙটা ময়লা, খুব শখ ছিল— রঙ দেখে বউ আনব। কি আর করা, সব শখ তো পূরণ হয় না।

    শায়লা শানুর সব শখই মনে হয় পূরণ হতে যাচেছ। খুবই আশ্চর্যজনকভাবে আমেরিকা-লন্ডন গ্রুপের একনে পাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। চিত্র কার্জন হল থেকে যাছিল ইউনিভার্সিটি লাইব্রেরিতে। এর আগের দিন বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তায় পানি জমে আছে। সে সাবধানে ফুটপাত দিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ তার পাশ শেষে একটা পাজেরো জিপ গেল এবং তাকে পানিতে-কাদায় মাখামাখি করে ফেলল। এরকম পরিস্থিতিতে গাড়ি কখনো দাঁড়ায় না। দ্রুত চোখের আড়াল হয়ে যায়। চিত্রার ব্যাপারে সেরকম হলো না। গাড়ি একটু সামনে গিয়েই ব্রেক কমে দাঁড়াল। গাড়ি যে চালাচ্ছিল সে নেমে এল (অত্যন্ত সুপুরুষ এক যুবক। গায়ের রঙ সাহেবদের মতো। উচ্চতা ছয় ফুট এক ইঞ্চি। পরনে মার্ক এন্ড স্পেনসার কোম্পানির গাঢ় নীল রেজার।) যে নেমে এল তার নাম আহসান খান। মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। এই হলো যোগাযোগের সূত্র।

    এই যোগাযোগের মধ্যেও ভাগ্যের একটা ব্যাপার আছে বলে শায়লা মনে করেন। বিয়ের ব্যাপারটা নাকি পূর্বনির্ধারিত। শায়লা শানুর ধারণা আল্লাহ ঠিক করে রেখেছেন এখানে বিয়ে হবে। সে-কারণেই চিত্রা কাদা-পানিতে মাখামাখি হয়েছে। তবে তিনি ঠিক ভরসাও পাচ্ছেন না। ছেলেপক্ষের মানুষরা, হা-না। মেয়ে পছন্দ হয়েছে, মেয়ে পছন্দ হয় নি এইসব কিছুই বলছে না। ছেলে মে খুব আগ্রহী তার আগ্রহেই বিয়ে হয়ে এরকমও মনে হচ্ছে না। ছেলে খুব আগ্রহী হলে টেলিফোন করত বা ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে চিত্রার খোঁজ করত। তাও করে নি। বরং পাত্র পক্ষের মধ্যে কেমন গা-ছাড়া গা-ছাড়া ভাব। মেয়ে দেখতে অনেক মিষ্টিটিষ্টি নিয়ে আসে এটাই নিয়ম। ওরা এনেছে একটা কে। সোনারগাঁও হোটেলের দামি কেন এটা সত্যি, তারপরেও তো কেক। বিশাল কোনো কেক না, চার পাউন্ডের কেক। চিলা যখন চা নিয়ে ওদের সামনে গেল তপন ছেলের মা হঠাৎ মোবাইল টেলিফোন নিয়ে অতি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। চিলার সঙ্গে কোনো কথা নেই— চিত্রার দিকে ভালো করে তাকালেনও না। কার সঙ্গে বিরাট গল্প জুড়ে দিলেন। টেলিফোনেই হাসাহাসি। এমন কোনো জরুরি টেলিফোন নিশ্চয়ই না। বয়স্ক একজন ভদ্রলোক এসেছিলেন। তিনি ঘরে ঢোকার পর থেকে গভীর মনোযোগ দিয়ে টাইম পত্রিকা পড়া শুরু করলেন। পত্রিকা তিনি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন। চিলা তার সামনে চায়ের কাপ দিতেই তিনি বললেন, সরি আমি চা-কফি কিছুই খাই না। বলেই আবার টাইম। পড়া শুরু করলেন।

    শায়লা বানু পর শাবারদাবারের আয়োজন করেছিলেন। গানের তৈরি পিঠা, চটপটি, সমুচা, পরোটা, মাংস, মিষ্টি, মলমূল। এত পাবার দেখে অন্তত অদ্রতা কনে বলা উচিত ছিল— এত আয়োজন। সেসব কিছুই না। ছেলের ছোটচাচা শুধু একটা পাটিসাপটার অর্ধেকটা নিলেন, হাত দিয়ে চাপ দিয়ে ভেতরের ক্ষীরটা বের কনের খোসার অর্ধেকটা গেলেন। ছেলের মা শুধুই এককাপ চা। চানোর কাপ হাতে নিয়ে দুটা চুমুক দিয়ে কাপ নামিয়ে রাখলেন এবং আবারও মোবাইল টেলিফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

    চিত্রা সম্পর্কে শায়লা শানুর অনেক কিছুই বলার ছিল। কি কি বলবেন সব গুছিয়ে রেখেছিলেন। কথাগুলি এমনভাবে বললেন যেন মেয়ের বদনাম করা। হচ্ছে। আসলে বদনামের আড়ালে প্রশংসা। যেমন আমার মেমোটা খুবই খেয়ালি। তার খেয়ালির জন্যে মাঝে মাঝে এমন বিরক্ত লাগে। এস,এস,সি, পরীক্ষার দুদিন আগে হঠাৎ সে সব বইপত্র গুছিয়ে তুলে ফেলল আর পড়লে না। তার নাকি পড়া শেষ। আমি অনেক মাধমকি করলাম, রাগারাগি করলাম, কিছুতেই বই খুলবে না। বই দেখলেই তার নাকি বমি আসে। বললে বিশ্বাস করবেন না এক মাস পরীক্ষা চলল, এই এক মাস সে বই খুলল না। আমি তো ধরেই নিয়েছি এই মেয়ে পাস করবে না। রেজাল্ট বের হলে দেণি ছয়টা লেটার পেয়েছে। আর দশ-পনেরো নাম্বার পেলে পেস থাকত।

    পড়াশোনার এই অংশ বলা হবার পর–গানের ব্যাপারটা নিয়ে আসতেন। মুখে বিরক্তি নিয়ে বলতেন, মেয়েটার গানের গলা এত ভালো, কি গান করলে না। তার নাকি ভালো লাগে না। টিচার রেখে দিয়েছি। সপ্তাহে দুদিন আসে, সঙ্গে তবলটি আসে। সে রেয়াজ করবে না। গানের স্যারের সঙ্গে রাজ্যের পছন্ন। তলটির সঙ্গে গল্প। একদিন দেখি সে তবলচির কাছ থেকে তবলা বাজানো শিখছে। মেয়েমানুষ তবলা বাজাড়ে দেখতে কেমন লাগে বলুন তো! টিভিতে সেদিন গানের অডিশন দিতে যাবে, আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি সঙ্গে যাব। হঠাৎ সে বেঁকে বসল অডিশন দিতে যাবে না। তার নাকি ইচ্ছা করছে। শেষপর্যন্ত রাজি হলো, কি শর্ত দিয়ে দিল বাড়িতে কোনো মেহমান এলে আমি বলতে পারব না, চিত্রা-মা একটা গান শুনাতো। বলুন এই মেয়েকে নিয়ে আমি কী করি? শেষপর্যন্ত তার শর্তেই রাজি হলাম। প্রথম অডিশনেই পাস করল। সে এখন টিভিতে নজরুলগীতিতে এনলিস্টেড। প্রতি তিন মাসে একটা করে প্রোগ্রাম পায়। সেই প্রোগ্রামও সে মিস করে। গতবার প্রোগ্রামটা ইচ্ছা করে মিস করল। সেদিন তার বান্ধবীর জন্মদিন। সে টিভিতে যাবে না। বান্ধবীর জন্মদিনে যাবে। শিল্পকলা একাডেমি থেকে টার্কিতে একটা গানের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পেয়েছিল। সরকারি অনুষ্ঠান কৃত সম্মানের ব্যাপার। অথচ কিছুতেই

    তাকে রাজি করাতে পারলাম না।

    এই গলে শোনার পর ছেলেপক্ষের কেউ না কেউ অবশ্যই বললে, বাহ খুব। তো গুণী মেয়ে, দেণি একটা গান শুনি।

    শায়লা বানু সেই ব্যবস্থাও করে রেখেছিলেন। তবলচি এনে রেখেছিলেন। সঙ্গে একজন বাঁশিবাদক। কোন গান চিত্র গাইবে সেটাও ঠিক করে অনেকবার করে গাওয়ানো হয়েছে—

    পথ চলিতে যদি চকিতে
    কভু দেখা হয় পরাণ প্রিয়।

    শায়লা বানু মেয়ের গান শুনানোর কোনো সুযোগই পেলেন না। গুছিয়ে রাখা কোনো কথাই কেউ শুনল না। বরং তাকে অত্যন্ত অপমানসুচক একটা কথা শুনতে হলো। ছেলের মা বললেন, আপনাদের বাথরুমটা একটু ব্যবহার করব। বলেই একপা এগিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে বললেন, বাথরুম পরিষ্কার আছে তো?

    অপমান গারো লাগার কথা। শায়লা বানুর নিজের পরিষ্কারের বাতিক আছে। তাঁর বাড়ি তিনি ছবির মতো গুছিয়ে রাখেন। তাকে কি-না বলা বাথরুম পরিষ্কার আছে তো? ড্রয়িং রুমের সঙ্গের বাথরুমটা তিনি ঘষে ঘষে চকচকে করে রেখেছেন। বাথরুমের বেসিনের উপর ছোট টবে চার ধরনের অর্কিড রেখেছেন। বাথরুমে এয়ার ফ্রেসনার দিয়েছেন। তার ধারণা এই বাথরুম যত পরিস্কার ছেলেপক্ষীয়দের কোনো বাথরুম এত পরিষ্কার না।

    শায়লা বানু সৌখিন মানুষ। তিনি তার বাড়ির সামনে গোলাপবাগান করেছেন। সেই বাগানে চল্লিশ ধরনের গোলাপ আছে। তিন রকমের বাগানবিলাস লাগানো হয়েছে। সেই গাছ বড় হয়ে বাড়ির ছাদ পর্যন্ত উঠেছে। বাড়ির সামনে একটা অংশ তিনি রেখেছেন রঙিন মাছের জন্যে। ছোয় টোবাকো, পাড়টা মার্বেল দিয়ে বাঁধানো। চৌবাচ্চায় কিছু রঙিন মাছ। এই মাছের জন্যে শায়লা বানুকে কম কষ্ট করতে হয় না। মাছের খাবার দিতে হয়, প্রতিদিন পানি পরিষ্কার করতে হয়। সন্ধ্যাবেলায় মাছগুলিকে চৌবাচ্চা থেকে তুলে জারে করে ঘরে নিয়ে আসতে হয়। এইসব ব্যাপারে বাড়ির কেউ যে তাকে সাহায্য করে না, বরং উল্টোটা করে। চিলার বাবা রাতের খাবার পর মাছের চৌবাচার পাশে বসে সিগারেট খান। এবং জ্বলন্ত সিগারেটের টুকরা চৌবাচ্চায় ফেলেন। এই নিয়ে রাগারাগি কম হয় নি।

    একা তিনি কতদিক সামলাবেন? মেয়ের বিয়ে যদি শেষপর্যন্ত ঠিক হয়ে যায়। তাহলেও বিপদ আছে। বিয়ের পুরো ব্যাপারটা তাকে একা সামাল দিতে হবে। ব্যাংকে টাকা যা আছে তাতে বিয়ের খরচ উঠবে না। টাকা ধার করতে হবে। সাভারে তিন কাঠার একটা প্লট কেনা আছে। সেটা বিক্রি করতে হবে। জমি বিক্রি কেনার চেয়ে অনেক কঠিন। এই কঠিন কাজটা তাকেই করতে হবে।

     

    টেলিফোন বাজছে।

    এটাই কি সেই বিশেষ টেলিফোন? শায়লা বানুর বুক ধক ধক করছে। তার হাতের কাছেই টেলিফোন, তিনি পরলেন না। অবহেলার ভঙ্গিতে বললেন, মীরা টেলিফোনটা ধর তো। মীরা তার দ্বিতীয় মেয়ে। এবার এস,এস,সি, দিয়েছে। তিনি মেয়ে ভাগ্যে ভাগ্যবতী। তার এই মেয়েটা রূপবতী। সবচে বড় কথা এর গায়ের রঙ ভালো। এর বিয়ে নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করতে হবে না। শায়লা বানু দুই মেয়ের কথা ভেবে তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। মেয়েরা তার বাবার রূপ পেয়েছে। মেয়েদের বাবা যৌবনে অসম্ভব রূপবান ছিলেন। শায়লা বানুর বাবা ছেলের রূপ দেখে মুখ হয়েছিলেন। শুধুমাত্র তার আগ্রহেই বিয়েটা হয়। শায়লার বিয়েতে মত ছিল না। বি.এ. পাস একটা ছেলে, চাকরি নেই। পরিবারের অবস্থা ভালো না। তার সঙ্গে কিসের বিয়ে? কিন্তু শায়লার বাবার এক কথা, আমি আমার জীবনে এত সুন্দর ছেলে দেখি নি। এই ছেলে হাত ছাড়া করা যাবে না। আমার পরিবারের রূপ নেই, এই ছেলে রূপ নিয়ে আসবে।

    শায়লার বাবা তার রূপবান জামাই-এর পরিণতি দেখে যেতে পারেন নি। শায়লার বিয়ের এক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি মারা যান। মৃত্যুর সময় তার রূপবান জামাই পাশেই ছিল। অত্যন্ত সুপুরুষ একজন যুবক ছেলের দিকে তাকিয়ে তার আনন্দময় মৃত্যু হয় বলে শায়লার ধারণা।

    শায়লা মীরার দিকে তাকিয়ে আছেন। মীরা টেলিফোনে কেমন যেন মাথা নিচু করে কথা বলছে। তার মুখ লালচে দেখাচ্ছে। ভালো লক্ষণ না। প্রেম-প্রেম খেলা না তো? সেরকম কিছু হলে শুরুতেই খেলা বন্ধ করতে হবে। শায়লা বললেন, কার টেলিফোন

    মীরা হাত দিয়ে রিসিভার চেপে ধরে বললেন, আমাদের ক্লাসের একটা মেয়ে। কথা বলতে গিয়ে তার গলা কেপে গেল। চোখের দৃষ্টি নেমে গেল।

    মেয়েটার নাম কী?

    নাম ইতি।

    ওদের বাসা কোথায়?

    মগবাজারে।

    বাবা কী করেন?

    কাস্টমসে চাকরি করেন।

    শায়লা বানু এতগুলি প্রশ্ন করলেন জানার জন্যে যে মীরা আসলেই কোনো মেয়ের সঙ্গে কথা বলছে নাকি কোনো ছেলের সঙ্গে। ছেলের সঙ্গে কথা বললে এত দ্রুত প্রশ্নের জবাব দিতে পারত না। গণ্ডগোল করে ফেলত। সবচে ভালো হতো যদি তিনি বলতেন, দেখি টেলিফোনটা দে তো। আমি একটু ইতির সঙ্গে কুণা বলি। এটা করা ঠিক হবে না। বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। তবে তিনি যে প্রশ্নগুলি করেছেন সেগুলি কাজে লাগবে। দিন দশেক পর প্রশ্নগুলি আবার তিনি মীরাকে করবেন। ইতিদের বাসা কোথায়? ইতির বা কী করেন? ইতি বলে সত্যি যদি কেউ থেকে থাকে তাহলে মীরা ঠিকঠাক প্রশ্নের জবাব দেবে। আর ইতি কোনো বানানো বান্ধবী হলে উত্তর দিতে গিয়ে জট পাকিয়ে ফেললে।

    মীরা টেলিফোনটা রাখ তো। জরুরি কল আসবে। লাইন বিজি রাখলে লল না।

    মীরা লুট করে টেলিফোন রেখে গল্প থেকে বের হয়ে গেল। শায়লা বের হলেন। বাগানের ফুলগাছে পানি দেবেন। বাগানবিলাসে শুয়োপোকা হয়েছে। গাছে ওষুধ দেবেন। টেলিফোনটা এর মধ্যে চলে আসার কথা। এখনো আসছে

    কেন বুঝতে পারছেন না। তাহলে কি ওরা না বলে দিয়েছে? বড় আপা লজ্জায় পড়ে দুঃসংবাদটা দিতেন না।

    চিত্রা মাছের চৌবাচ্চায় কাছে বসে আছে। তাকে খুব একটা দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত বলে মনে হচ্ছে না। সে খুব আগ্রহএর সঙ্গে মাছ দেখছে। মা’কে বারান্দায় আসতে দেখেই চিত্রা বলল, মা তোমার জন্যে তিনটা দুঃসংবাদ আছে একটা ছোট, একটা মান্মারি এবং একটা বড়। কোন দুঃসংবাদটা আগে শুনতে চাও?

    শায়লা বিরক্ত গলায় বললেন, যা বলার সহজ-স্বাভাবিকভাবে বলবি। পেঁচিয়ে কথা বলবি না। ছোট-বড়-মাঝারি দুঃসংবাদ আবার কী?

    মেজাজ খারাপ কেন মা?

    মেজাজ খারাপ না, পেচানো কথা শুনলেই আমার রাগ লাগে।

    মেজাজ খারাপ থাকলে নরমাল কথা শুনলেও রাগ লাগে। আর যদি মেজাজ ভালো থাকে তাহলে পেঁচানো কথা শুনলেও মনে হয় বাহু সাধারণ কথাকেই মেয়েটা কি সুন্দর করে পেঁচিয়ে বলছে। আমার মেয়ে পাচকুমারী। যা-ই হোক দুঃসংবাদগুলি মানের ক্রমানুসানে বলছি। সবচে কম দুঃসংবাদ হলো— মাছের চৌবাচ্চায় ভুটা সিগারেটের টুকরা ভাসছে। তার চেয়েও হাইডোজের দুঃসংবাদ হচ্ছে—একটা মাছ মরে ভেসে উঠেছে। এখন শোনো সবচেয়ে খারাপ দুঃসংবাদটা। সবচে খারাপ সংবাদ হলো— চিত্র কথা বলা বন্ধ করে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল।

    বলে ফেল। চুপ করে আছিস কেন?

    দুঃসংবাদ আস্তে আস্তে দিতে হয় এই জন্যে চুপ করে আছি। যা-ই হোক বলে ফেলি— বড়খালা বিয়ের যে খবরটা দেবেন বলেছেন সেই খবরটা হলো— না। ওরা তোমার বড়মেয়ের ব্যাপারে ইন্টারেস্টেড না। সোনারগাঁও হোটেল থেকে আনা চার পাউন্ডের কেকের টাকাটা ওদের পানিতে গেছে।

    তুই কী করে জানলি?

    যেভাবেই হোক জেনেছি। বড়খালা দুপুরেই খবর পেয়েছেন, খবরটা দিতে তার কষ্ট লাগতে বলে এখনো দিচ্ছেন না।

    তুই কখন জেনেছিস?

    আমিও তখনই জেনেছি।

    কিভাবে জেনেছিস?

    চিত্রা হাসিমুখে বলল, মা তুমি ভুলে গেছ যে আমার একটা মোবাইল টেলিফোন আছে।

    তোকে কে থর দিয়েছে?

    কে দিয়েছে এটা মোটেই ইম্পর্টেন্ট না। খবরটা কি সেটা ইম্পর্টেন্ট। মা শোনো, মরা মাছটা এখন কী করবে?

    শায়লা তিক্ত গলায় বললেন, মরা মাছু আমি কি করব মানে? মরা মাছ মানুষ। কী করে?

    চিত্রা বলল, রান্না করে খায়, এইটুকু জানি। এই মাছ তুমি নিশ্চয়ই রান্না লবে না।

    চিত্র তুই ঢং করছিস কেন? তোর ঢংটা তো আমি বুঝতে পারছি না। বরপক্ষের ওরা না করেছে, তার জন্যে তোকে ঢং করতে হবে কেন?

    তুমি খুবই মন খারাপ করে আছ তোমার মন খারাপ ভাবটা কমানোর অনন্য করছি।

    শায়লা পানির ঝাড়ি হাতে নিয়ে গাছে পানি দিতে গেলেন। তার রীতিমতো কান্না পাচ্ছে। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন এই বিয়েটা হবে। বিয়ের পর মেয়েসামাই হানিমুন করতে চলে যাবে ইউরোপে। মানুষকে এই খবরটা দেয়াতেও তো আনন্দ। দুলী-দুঃখী মুখ করে বলা— মনটা খুব খারাপ। মেয়ে-জামাই হানিমুন করতে ইউরোপ যাচ্ছে। সুইজারল্যান্ডে হানিমুন করবে সেখান থেকে ফ্রান্স আর ইতালি হয়ে দেশে ফিরবে। মেয়েটাকে এতদিন দেখা না ভেবেই কেমন যেন লাগছে। আমি ওদের বললাম, তোরা দেশে হানিমুন কর। দেশে কত সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে সেখানে যা, কক্সবাজার যা, টেকনাফ যা, কুয়াকাটা মা। সমুদ্র ভালো না লাগলে রাঙ্গামাটি যাঁ, জাফলং যা। দুজনের মধ্যে ভালোবাসা থাকলে চাঁদপুরও যা সিঙ্গাপুরও তা। এইসব কিছুই বলা যাবে না। সাধারণ কোনো একটা ছেলের সঙ্গে চিত্রার বিয়ে হবে। যে নতুন বউকে নিয়ে রিকশায় শ্বশুর বাড়িতে আসবে। রিকশা ভাড়া কমানোর জন্যে রিকশাওয়ালার সঙ্গে চেঁচামেচি করবে।

    চিত্রা মার দিকে তাকিয়ে বলল, মা শুধু-শুধু গাছে পানি দিচ্ছে। আকাশে কি রকম মেঘ করেছে দেখ। এক্ষুণি বৃষ্টি নামবে।

    শায়লা জবাব দিলেন না। চিত্রা বলল, মা আমার একটা অনুরোধ রণিবে? প্লিজ। স্কলারশিপের পনেরোশ টাকা আমার কাছে আছে। চল সবাই মিলে বাইরে খেতে যাই। ফুর্তি করে আমি। তুমি মুখ ভোতা করে আছ দেখতে অসহ্য লাগছে।

    আমার মাথা ধরেছে আমি কোথাও যাব না।

    চিত্রা বলল, মা শোনে ওরা তিনবার করে আমাকে দেখে গিয়ে জানিয়েছে মেয়ে পছন্দ হয় নি। আমি কি পরিমাণ অপমানিত হয়েছি তুমি বুঝতে পারছ না? তুমি মনখারাপ করে অমাৱ অপমানটা আরো বাড়াচ্ছে। হাতমুখ ধুয়ে একটা ভালো শাড়ি পরে চল যাই হৈচৈ করে আসি।

    বললাম তো আমার মাথা ধরেছে। তা ছাড়া চাইনিজ-ফুড আমার ভালোও লাগে না।

    যাবে না?

    না।

    চিত্রা চিন্তিত গলায় বলল, মা আরো একটা দুঃসংবাদ আছে। তোমার মাছদের মধ্যে মড়ক লেগেছে, আরেকটা মাছ মারা গেছে। দাড়িওয়ালা একটা গোল্ডফিশ ছিল না। ঐ টা।

    বৃষ্টির ফোটা পড়তে শুরু করেছে। এখনো শায়ালা গাছে পানি দিচ্ছেন। ঘরে টেলিফোন বাজছে শায়লার তাতে কোনো ভাবান্তর হচ্ছে না। অথচ কিছুক্ষণ আগেই টেলিফোনের শব্দ শুনলেই চমকে উঠছিলেন। মীরা বারান্দায় এসে অবাক হয়ে বলল, মা তুমি বৃষ্টির মধ্যে গাছে পানি দিচ্ছে কেন? শায়লা পানির ঝাঝরি নামিয়ে রাখলেন।

    মীরা বলল, বড়খালা টেলিফোন করেছেন। তোমাকে চাচ্ছেন।

    শায়লা পানির ঝাঝড়ি রেখে উঠে এলেন। একটু সময় পেলে ভালো হতো মেজাজ ঠিক করা যেত। গলার স্বর শুনে বড়আপা মোন বুঝতে না পারে সে ম খারাপ করেছে।

    হলো বড়আপা। কেমন আছ?

    ভালো আছি তোর গলা এরকম শোনাচ্ছে কেন? অসুখ নাকি রে?

    ঠাণ্ডা লেগেছে। একটু জ্বর-জ্বররে আছে।

    মেয়ের এত বড় শুভসংবাদ আর তুই কিনা মেদামারা হয়ে আছিস!

    শায়লার বুকে ধক করে উঠল। মেয়ের এত বড় শুভসংবাদ মানে কী?

    হ্যালো, শালা এদিকে আমার বিপদটা শোন। আমার সমস্যা তো জানিস। কিছু হলেই নফল নামাজ মানত করে ফেলা। আমি পঞ্চাশ রাকাত নফল নামাজ মানত করেছিলাম। হাঁটুর ব্যথা নিয়ে পঞ্চাশ রাকাত নামাজ পড়া সোজা কথা?

    শায়লার মাথা ঝিমঝিম করছে। সংবাদ কি শুভ? তাহলে চিত্রা এসব কি বলল?

    চিত্রার বড় থালা হড়বড় করে কথা বলছেন। তার মুখ ভর্তি পান। সব কথা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। তিনি বললেন–ছেলেপক্ষ কি বলেছে সব তো ডিটেল ঢিলাকে বলেছি। ওরা দুটার সময় টেলিফোন করেছে। মেয়ে তাদের খুবই পছন্দ। বিয়ের তারিখ করতে চায় সেপ্টেম্বরের সাত। ছেলে বিয়ের পর হানিমুনে যাবে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। চিত্রার পাসপোর্ট আছে কি না, না থাকলে ইমিডিয়েটলি করতে বলল। আগামী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাবেলায় এনগেজমেন্ট করতে চায়। কোনো সমস্যা আছে কি না জানতে চাইল। আমি তার সঙ্গে কথা না-বলেই বলে দিয়েছি সমস্যা নেই। সমস্যা আছে?

    না। কিসের সমস্যা।

    ওরা দশ-পনেরোত্তন আসবে। মেয়েকে রিং পরিয়ে দেবে ঐ রিং আবার আসছে ইংল্যান্ড থেকে। চিত্রার আঙুলের মাপ চেয়েছে। কাল সকালের মধ্যেই অস্কুলের মাপ লাগবে। তোর মেয়ে রাজকপাণী। এখন আল্লাহ-আলাহ করে ছোটটাকে পার করতে পারলে তুই একেবারে ঝাড়া হাত-পা। শোন শায়লা, আমি কাল সকালে নিজে এসে আঙুলের মাপ নেব। চিত্রাকে বলে রাখবি যেন আমি না-আসা পর্যন্ত লাইরে না যায়। এই কদিন ওর ইউনিভার্সিটি বন্ধ। ও ঘরে বসে থাকবে।

    শালা টেলিফোন নামিয়ে রেখে মাছের চৌবাচ্চার কাছে গেলেন। দুটা মাছ তে ভেসে থাকার কঙ্কা। কোনো মাছ মরে ভেসে নেই। শায়লার চোখে পানি। সে। বৃষ্টি ভালোই পড়ছে। আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে পুরো ভিজে যেতে হবে। চিত্রা দন্না ধরে দাঁড়িয়েছে। সেখান থেকেই চেচিয়ে বলল, মা তুমি ঞ্চি মত পাল্টেই? আমরা কি আজ বাইরে খেতে যাব?

    শায়লা বললেন, হ্যাঁ যাব। দুই মিথ্যা কথাগুলি কেন বললি?

    চিত্রা বলল, তুমি এত আপসেট হয়েছিলে দেখে মজা লাগল। তুমি সত্যটা জেনে যাতে অনেক বেশি আনন্দ যাতে পাও সেজন্যেই মিথ্যা বানিয়ে বললাম। মা তুমি তো ভিজে যাচ্ছে। উঠে আস।

    শায়লার বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো লাগছে। তার মনে হচ্ছে তিনি কৈশোরে ফিরে গেছেন। তখন তারা থাকতেন ময়মনসিংহে। বৃষ্টি নামলেই বৃষ্টিতে ভেজা ছিল তার প্রধান শথের একটি। ময়মনসিংহ শহর থেকে চলে আসার পর আর ইচ্ছা করে বৃষ্টিতে ভেজা হয় নি।

    বৃষ্টি আসার মুখে চিলার বাবা নিউমার্কেটের কাঁচাবাজারে ঢুকে পড়লেন। কাঁচাবাজারে ঘুরতে তার ভালো লাগে। প্রথম কিছুক্ষণ তিনি সব্জি দেখেন। কলার থোড় হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখেন। একটা পাতা উঁচু করে ভেতরটা দেখেন। ফুলগুলি সোনালি আছে কিনা, থোড় কেনার সময় এটাই বিবেচ্য। সজনে ডাটা হাতে নিয়ে। দোকানি দেখতে না পায় এমনভাবে লুট করে সজনে ডাটার মাথা ভেঙে গন্ধ শুকেন। গাছ থেকে সদ্য পেড়ে আনা ডাটার প্রাণ এক রকম আর সাত দিনের বাসি চিমসে ধরা সজনের ঘ্রাণ অন্য রকম। তার আগ্রহ সবচে বেশি ক্যাপসিকামে। এই সব্জি তিনি আগে কখনো খান নি। মরিচ মরিচ গন্ধ, আবার ঠিক মরিচও না। তিনি কাঁচাবাজারে যখনই ঢুকেন তখনি এই সব্জিটা কিনতে ইচ্ছে করে। পনেরো টাকা পিসের সব্জি কেনা সম্ভব না। তারচেয়েও বড় ভয় লায়লা রাগ করবে। নতুন কিছু নিয়ে গেলেই শায়লা রাগ করে। একবার তিনি এক কেজি মেটে আলু নিয়ে গেলেন। শায়লা বলল, কি এনেছ তুমি। জিনিসটা কি? দেখতে এত কুৎসিত।

    তিনি মিনমিনে গলায় বললেন, মেটে আলু।

    মেটে আলুর নাম জীবনে শুনি নি। এটা কী বস্তু?

    জংলি আলু। চাষ করতে হয় না, বনে বাদাড়ে আপনাতেই হয়। খেতে ভালো।

    আমাদের জংলি আলু খেতে হবে কেন? আমরা কি জংলি? উদ্ভট কিছু দেখলেই কিনে ফেলতে হয়? কি এক বস্তু নিয়ে এসেছ–কালো, ছাতা পড়ে আছে। তোমার মেয়েরা তো এই জংলি জিনিস এথনো যাবে না।

    আমার জন্যে আলাদা করে একটু রান্না করে দিও।

    তোমার জন্যে আলাদা রান্না? একবাড়িতে দুরকমের রান্না? ভাবতেও খারাপ লাগল না? একজন উর্দি পরা বাবুর্চি রেখে দাও। যে শুধু তোমার রান্না-বান্না করবে। জংলি আলু কিনলে। জংলি মোরগ কিনবে। বাজারে জংলি মোরগ পাওয়া যায় না?

    মেটে আলু বাড়িতে রান্না হয় নি। রান্নাঘরের এক কোনায় কিছুদিন আলুগুলি পড়ে রইল। তারপর সেখানেই চারা গজিদে গেল। সোনালি এবং সবুজ রঙের গাছ প্রতিদিন একটু একটু করে বাড়ছে। দেখার মতো দৃশ্য। রহমান সাহেব প্রতিদিন অফিসে যাবার আগে টুক করে ক্লান্নাঘরে ঢুকে দেখে আসতেন। একসময় তিনি বাড়ির পেছনে চারাগুলি পুঁতে দিলেন। গাছ যদি হয় মন্দ কি? গাছের শুন্যে আলাদা যত্ন করতে হবে না। জংলি গাছ— এদের যত্ন লাগে না। শায়লার নজরে হয়তো পড়বে না। বাড়ির পেছন দিকে সে যায় না।

    আরেকবার তিনি এক ডজন কুমড়ার ফুল নিয়ে এলেন। কুমড়ার ফুল সচরাচর পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও নেতিয়ে থাকা ফুল পাওয়া যায়। সেদিনের মুললি ছিল টাটকা। মনে হচ্ছিল কিছুক্ষণ আগেই গাছে থেকে পাড়া হয়েছে। ফুলের বোটায় কষ লেগে আছে। শায়লা ফুল দেখে ভুরু কুঁচকে বললেন, মুল দিয়ে কি করতে হবে? বড় বানিয়ে খাওয়াতে হবে?

    রহমান সাহেব নিচু গলায় বললেন, কুমড়া ফুলের বড়া অতি সুখাদ্য। টাটকা। টাটকা ভেজে দিও। তোমার মেয়েরা পছন্দ করবে।

    শায়লা বিরক্ত গলায় বললেন, পরে বেসন নেই। কেন এইসব যন্ত্রণা কর? ফুল পাওয়ার দরকার কি? গুল দেখার জিনিস। সেই মুল খেয়ে ফেলতে হবে। কেন? ফুলের বড়া ডুবা তেলে ভাজতে হয়। কি পরিমাণ তেল লাগে সেটা জান। আমি প্রাণপণ চেষ্টা করছি খরচ কমাতে আর তুমি চেষ্টা করছ কিভাবে খরচটা তিনগুণ করা যায়।

    রহমান সাহেব বেসন কিনে আনলেন, তেল কিনে আনলেন। এতো আয়োজনের সেই ফুল শেষপর্যন্ত ভাজা হলো না। শায়লা মুল ধুতে গিয়ে দেখেন–ফুলের ভেতর থেকে হলুদ পোকা বের হচ্ছে। তিনি তৎক্ষণাৎ লুকে বললেনহল মেলে দিয়ে আসতে।

     

    রহমান সাহেব আজ আর সব্জি বাজারে গেলেন না। সরাসরি মাছের এলাকায় চলে এলেন। কত রকমের মাছ সাজানো। দেখতেই ভালো লাগে। মেয়েরা যেমন শাড়ি-গয়নার দোকান ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে সুন্দর কোনো শাড়ি দেখলেই বলে এই শাড়িটা নামান তো জমিনটা দেহি। রহমান সাহেবও তাই করেন। নতুন কোনো মাছ দেখলেই খুব আনন্দের সঙ্গে মাছ হাতে নেন। রামসোছ মাছের দাড়িতে হাত বুলাতে তার ভালো লাগে। টাটকা বোয়াল, মুখটা লাল মনে হয় এই মাত্র ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে মুখ হয়ে তাকিয়ে থাকার মতো দৃশ্য। টাটকা বাছা মাছ দেখে মনে হয় রূপার পাত। কেমন ঝকমক করে।

    রহমান সাহেব আজ এসেছেন মাছ কিনতে দেখতে না। অনেকদিন থেকেই তার একটা ভালো ইলিশ মাছ কেনার শখ। গোল সাইজের মাঝারি ইলিশ। চোখে ইমৎ লাল রঙের ছোপ। বরিশালের ইলিশ না, পদ্মার ইলিশও না, চাঁদপুরের ইলিশ। পদ্মার ইলিশ খুব সুস্বাদু বলে যে কথাটা প্রচলিত এটা ঠিক না। এখন স্বাদের ইলিশ–চাঁদপুরের ইলিশ।

    রহমান সাহেবের বাড়িতে এই মাছটা রান্না হয় না। কারণ চিত্রা ইলিশ মাছের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। গায়ে জ্বর নিয়ে একবার ইলিশ মাছ খেয়ে বমি করেছিল, তারপরই মাছের গন্ধটা তার মাথায় ঢুকে গেছে। সে বলে দিয়েছে যদি ইলিশ মাছ রাধতেই হয়, সে যখন বাসায় থাকবে না, তখন যেন রান্না হয়। লায়লা বাড়িতে এই মাছ আনাই বন্ধ করে দিয়েছেন।

    সিজনের জিনিস সিজনে খেতে হয়। কমলার সিনে একটা কমলার কোয়া হলেও মুখে দিতে হয়। জলপাইয়ের সিজনে লবণ মাখিয়ে একটা জলপাই খেতে হয়। বর্ষা হল ইলিশের সিজন। বর্ষায় সর্ষে বাটা দিয়ে একবার ইলিশ না খেলে কিভাবে হয়? তবে ভালো ইলিশ এখন চার-পাঁচশ টাকার কমে পাওয়া। যায় না। আর এই টাকার ব্যবস্থাটাও হঠাৎ করে হয়ে গিয়েছে। রহমান সাহেব তার অফিসের ড্রয়ারে খুচরা টাকা রাখেন, বেশি না সামান্যই। দু টাকার কিছু নোট, পাঁচ-দশ টাকার কয়েকটা নোট। সেখান থেকে সিগারেট কেনার টাকা দিতে গিয়ে দেখেন পাঁচশ টাকার একটা দলা পাকানো নোট। তিনি নিজেই দলা পাকিয়েছেন। (মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে দলা পাকানো তার স্বভাব। মাঝে মাঝেই কাজটা করেন। কেন করেন নিতে জানেন না।) তিনি দলাপাকানো নোট নিয়ে সোজা করে দেখেন একটা পাঁচশ টাকার নোট। ইলিশ মাছ কেনার চিন্তাটা তখনি তার মাথায় আসে। মাছ কিনতে হবে, সরিষা কিনতে হবে। পুরনো সরিষার ঝাঝ বেশি, কিন্তু তিতকুটে ভাব আছে। নতুন সরিষা কিনতে হবে। কাঁচামরিচ কিনতে হবে। রান্নার সময় দেখা যাবে বাসায় কাঁচামরিচ নেই। পুঁই শাকের বড় পাতা পাওয়া গেলে খুব ভালো হয়। ইলিশের পাতুড়ি রান্না করা যায়। তার অতি প্রিয় খাবারের একটি। এক হালি কাগজি লেবুও কেনা দরকার। কাগজি লেবুর সুঘ্রাণ মিশিয়ে পাতুড়ি খাবার আনন্দই অন্য রকম।

    সব বাজার সারতে রাত নটা বেজে গেল। রহমান সাহেবের মনে হলো— এত রাতে ইলিশ মাছ নিয়ে গেলে রান্না হবে না। শায়লা অবশ্যই মাছটা ফ্রিজে রেখে দেবে। তার সময় সুযোগ অনুসারে ফ্রিজ থেকে বের হবে। রহমান সাহেব ঠিক করলেন তিনি মাছটা নিয়ে তার ছোটবোন ফরিদার বাসায় চলে যাবেন। সে থাকে কলাবাগানে। তার রান্নার হাত খুবই ভালো। তাকে বললেই হবে— তোর জন্যে মাছ এনেছি। তুই তো পাতুড়ি খুব ভালো রান্না করিস। দেখি রান্না কর। সরিষা, কাঁচামরিচ সবই আছে। পুঁই পাতাও এনেছি।

    ফরিদা খুব আগ্রহ করে রান্না করবে এবং বলবে—ভাইয়া খেয়ে যাও। না খেয়ে গেলে রান্না করা মাছ আমি নর্দমায় ফেলে দেব। তোমার চোখের সামনেই ফেলব। আমাকে তো তুমি চেন না। তিনি বিড়বিড় করে বললেন, বাড়িতে রান্না করেছে। ওরা না খেয়ে বসে থাকবে। ফরিদা বলবে, থাকুক না খেয়ে বসে। একবেলা বোনের সঙ্গে খেলে ভাবী কি তোমাকে শাস্তি দেবে? কানে ধরে ওঠবোস করালে? বোনের কথায় না পেরে তিনি নিতান্ত অনিচ্ছায় রাজি হবেন। বলবেন, আচ্ছা ঠিক আছে। খেয়েই যাই।

    বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে তিনি ফরিদার বাসায় উপস্থিত হলেন। ফরিদা গরম চাদর গায়ে জড়িয়ে দরজা খুলল। তার চোখ মুখ লাল, চুল উসগু-গুসকু। তিনি বললেন, কি হয়েছে রে?

    ফরিদা বলল, আর এসেছে। সকাল থেকে বুকে ব্যথা করছে। ওকে বললাম, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাও। ও বলল ডাক্তারের বিকালে চেম্বারে বসে। আমি সন্ধ্যাবেলা নিয়ে যাব। এখন বাজে সাড়ে নটা। সাহেব এখনো ফিরেন নাই।

    বুকে ব্যথা কী বেশি?

    দুপুরে বেশি ছিল, এখন কম। পানি খেলে ব্যথাটা কমে। চার-পাঁচ বালতি পানি খেয়ে ফেলেছি।

    জহির গেছে কোথায়?

    মনে হয়, তাস খেলতে গেছে। তাসের নেশা হয়েছে, রোজ সন্ধ্যায় বন্ধুর বাসায় তাস খেলতে যায়। আমার ধারণা পয়সা দিয়ে খেলে।

    বলিস কী?

    ফরিদা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, কতরকম যথার মধ্যে যে আছি তোমাকে কি বলব। বলতে লজ্জাও লাগে। ব্যাগে কি মাছ?

    রহমান সাহেব ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, তুই ইলিশ মাছ ভালো রাধিস। তোর জন্যে একটা মাছ নিয়ে এলাম। মাছটা টাটকা–এক্ষুণি বেঁধে ফেল। টাটকা মাছের স্বাদই অন্যরকম।

    এখন মাছ রাধতে পার না ভাইয়া। রান্না বান্না আমার মাথায় উঠেছে। কত কিছু যে ঘটেছে তুমি তো জানই না। বাবুর বাবাকে পুলিশে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। একরাত ছিল হাজতে।

    বলিস কী?

    রিকশা করে যাচ্ছিল পেছন থেকে একটা প্রাইভেট কার এসে রিকশায় ধাক্কা দেয়। সে রিকশা থেকে নেমে তার স্বভাব মতো গাড়ির ড্রাইভারকে টেনে বের করে চড় থাপ্পড় দেয়। গাড়িটা হলো সরকারি দলের এমপির। এম.পি সাহেবের শালা গাড়িতে বসে ছিল। বুঝতেই তো পারছ এম. পির শালা তো সহজ জিনিস না। এদের হম্বিতম্বি হয় মন্ত্রীদের মতো। এম.পির শালার কারণে পুলিশ বাবুর বাবাকে এরেস্ট করে হাজতে নিয়ে গেল। জননিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে দিবে এমন অবস্থা। শেষে মন্ত্রী-টন্ত্রী ধরে ছাড়া পেয়েছে। গাড়ির ড্রাইভারের পায়ে ধরে তাকে মাফ চাইতে হয়েছে। কি লজ্জা বলতো ভাইয়া।

    লজ্জা তো বটেই। তোর শরীরটা খারাপ তুই বিশ্রাম কর। আমি উঠি।

    চা না খেয়ে যেতে পারবে না। চা খাও।

    আরেকদিন এসে খাব।

    আচ্ছা ঠিক আছে আরেকদিন এসে খেও—এখন বসতে বলছি বোস। তোমার তোর বিয়ের কথাবার্তা নাকি হচ্ছে?

    জানি না তো।

    কি বল জানি না। জানো ঠিকই বলবে না। তোমার কি ধারণা আমাদের। বললে আমরা বিয়ে ভাঙিয়ে দেব?

    ছিঃ ছিঃ কি বলছিস তুই।

    কিছু মনে করো না ভাইয়া। যা বললাম, মনের দুঃখে বললাম। তোমাদের কোনো ব্যাপারেই তো এখন আমরা নেই। বাবুর জন্মদিন করলাম, ভাবীকে তোমার দুই মেয়েকে আমি নিজে গিয়ে বলে এলাম–তুমি ঠিকই এলে ভাবী এল না। মেয়ে দুটাকে পাঠাতে পারত, তাও পাঠাল না। হয়তো আমরা তোমার মেয়ের বিয়েতে দাওয়াতও পাব না। বাবুর বাবা গরিব তো! এই জন্যে এ অবহেলা। বড়লোক হতো, পাজেরো গাড়ি থাকত–ঠিকই ভাবী দুই মেয়েকে নিয়ে বাবুর জন্মদিনে আসত। ভাইয়া আমার কথায় রাগ করছ না তো?

    না রাগ করছি না।

    রাগ করলেও আমার মনের কথা আমি বলবই। নিজের ভাইকে না বললে কাকে বলব? ভাইয়া চিত্রার যে ছেলের সঙ্গে বিয়ের কথা হচ্ছে সে নাকি বিরাট মালদার পার্টি। জাহাজের মালিক। বিদেশেই থাকে। হঠাৎ হঠাৎ দেশে আসে।

    আমি কিছুই জানি না। ফরিদা আজকে উঠি। আমার শরীরটাও ভালো না।

    কী হয়েছে তোমার?

    মাঝে মাঝে মাথায় খুব যন্ত্রণা হয়।

    তোমাকে দেখেই মনে হচ্ছে তোমার শরীর খারাপ। চুল সব পেকে গেছে। তুমি বুড়ো হয়ে গেছ। ভিটামিন খাও ভাইয়া। বাবুর বাবা রোজ সকালে কি একটা ভিটামিন খায় ওর স্বাস্থ্য দেখ কত ভালো। এম.পির শালার ড্রাইভারকে এক থাপ্পড় দিয়েছিল এতেই ড্রাইভারের গাল বেঁকে গেছে।

    রহমান হাসলেন।

    ফরিদা রাগী গলায় বলল, তুমি হাসবে না। হাসির কোনো কথা না। আমি ভিটামিন ফাইলটা নিয়ে আসছি। তুমি নিয়ে যাও। ওকে বলব আরেক ফাইল কিনে নিতে।

    লাগবে না। তুই নাম বল আমি কিনে নেন।

    তুমি জন্মেও কিনবে না। তোমাকে আমি চিনি না। ফাইলটা নিয়ে যাও।

    ফরিদা ভিটামিনের ফাইল এনে রহমান সাহেবের হাতে দিতে দিতে বলল। ভাইয়া তুমি এতক্ষণ ছিলে একবারও তো বাবুর খোঁজ করলে না। অথচ এই ছেলে বড়মামা বলতে পাগল।

    বাবু ঘুমাচ্ছে নাকি?

    না ও গেছে তার টাটার বাসায়। ওদের কম্পিউটার আছে। কম্পিউটারে গেম খেলতে গেছে। বাবুর একটা কম্পিউটারের এত শখ। অথচ এটাই দিতে পারছি না। ঘরে একটা কম্পিউটার থাকলে কত জ্ঞান হয়। ভাইয়া একটু চেষ্টা করে দেখ তো— লোনে কম্পিউটার কেনা যায় কিনা। মাসে মাসে লোন শোধ দিতাম।

    আমার তো এরকম পরিচিত কেউ নেই।

    তারপরেও একে ওকে জিজ্ঞেস করে দেন। আমি তো আর তোমাকে কিনে তো বলছি না। মানুষের কাছ থেকে চেয়ে চিন্তে উপহার নয়। আমার স্বভাবের মধ্যে নেই।

     

    রহমান সাহেব বাড়ি ফিরলেন কাক ভেজা হয়ে। বাস থেকে অনেকটা পথ বৃষ্টিতে হাঁটতে হয়েছে। রিকশা ছিল, পাঁচ টাকা ভাড়ার জায়গায় সব রিকশাই চাচ্ছে পনেরো টাকা। একজন চাইল কুড়ি টাকা। তিনি বৃষ্টিতে ভিজেই রওনা হলেন। আষাঢ় মাসের বৃষ্টিতে ঠাণ্ডা লাগে না, শ্রাবণ মাসের বৃষ্টিতে গায়ে কাঁপন ধরে যায়। বাড়ির কাছাকাছি এসে তাঁর মানে হলো জ্বর এসে যাচ্ছে। দাঁতে দাঁত লেগে ঠক ঠক শব্দ হচ্ছে। খুব ক্ষিদেও লেগেছে। ইলিশ মাছ গরম গরম ভেজে দিলে এক গামলা ভাত খেয়ে ফেলা যেত।

    বাড়িতে কেউ নেই। কাজের বুয়া জইতরীর মা আয়োজন করে টিভি দেখছে। সামনে পানের বাটা। রাহমান সাহেবকে দেখে জইতরীর মা বলল, খালুজান বাড়িত কেউ নাই। রহমান সাহেব বললেন, আচ্ছা।

    তারা হেই সইন্ধ্যাকালে গেছে। অখন রাইত বাড়ে দশটা। টিভির খবরও শেষ।

    রহমান সাহেব আবারো বললেন, আচ্ছা।

    বাড়িতে কেউ নেই শুনে তিনি শান্তি বোধ করছেন। তাঁকে কৈফিয়ত দিতে হবে না, কেউ কঠিন গলায় জানতে চাইবে না বাড়ি ফিরতে এত রাত হলো কেন? বৃষ্টিতে ভেজার দরকার পড়ল কেন?

    জইতরীর মা, আজ রান্না কি?

    ডিমের সালুন, কুমড়া ভাজি, ডাইল।

    ভাত দিয়ে দাও। আমি গোসল করে আসি। পায়ে নোংরা পানি লেগেছে।

    গরম পানি দিব খালুজান? চুলাত পানি গরম আছে।

    আচ্ছা দাও।

    আম্মারার জন্যে চিন্তা লাগতাছে লালুজান। সইন্ধ্যাকালে গেছে অখন বাজে দশটা। দেশের অবস্থা ভাল না।

    রহমান সাহেব কিছু বললেন না। তোয়ালে হাতে বাথরুমের দিকে রওনা হলেন। স্ত্রী কন্যাদের জন্যে তাঁর কেন কোনো দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে না, এটা ভেবে সামান্য চিন্তিত বোধ করলেন। তার ইচ্ছা করছে না খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিছানায় শুয়ে পড়তে। বৃষ্টির রাতে ঘুমটা আরামের হবে। যদিও ঘুমানো ঠিক হবে না। ওদের ফিরে আসা পর্যন্ত জেগে থাকতে হবে।

    রহমান সাহেব গরম পানি দিয়ে আরাম করে গোসল করলেন। ভাতও খেলেন আরাম করে। তার পকেটে রাখা সিগারেটের প্যাকটা ভিজে ন্যাতা ন্যাতা হয়ে গিয়েছিল, জইতারীর মা চুলার পাশে রেখে সেই ন্যাতা ন্যাতা সিগারেট ও ঠিক করে ফেলল। তিনি আরাম করে সিগারেট ধরালেন। তার নিজেকে একজন মুখী মানুষ বলে মনে হতে লাগল। জর্দা দিয়ে একটা পান খেতে পারলে ভালো হতো। অফিসে দুপরে খাবার পর সব সময় একটা পান খান। কিন্তু এ বাড়িতে পান খাওয়া নিষেধ। শালা পান চিবানো দেখতেই পারে না। এ বাড়িতে শুধু জইতরীর মার পান খাওয়ার অনুমতি আছে।

    খালুজান আফনের টেলিফোন। ছোট আফা টেলিফোন করছে।

    রহমান সাহেব ভয়ে ভয়ে টেলিফোন ধরতে গেলেন। বাড়ির কেউ টেলিফোন করছে শুনলেই তার ভয় ভয় লাগে। নিজেকে অপরাধী অপরাধী মনে হয়। যেন টেলিফোনে তার কাছে কেউ কৈফিয়ত তলব করবে।

    হ্যালো বাবা।

    হ্যাঁ।

    আমরা বাইরে খেতে এসেছিলাম। সেখান থেকে বড়খালার বাসায় গিয়েছি। বড়খালা ছাড়ছে না। আমরা রাতে এখানে থেকে যান।

    আচ্ছা।

    আপার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। তারিখও হয়ে গেছে। সেপ্টেম্বরের সাত তারিখ— শুক্রবার।

    আচ্ছা।

    আমরা ভেবেছিলাম ওরা বোধহয় No করে দেবে। তুমি কি ভেবেছিলে ইয়েস না নো।

    বিয়ের কথাবার্তা আলাপ আলোচনার কিছুই রহমান সাহেব জানেন না। তারপরেও বললেন— ইয়েস ভেবেছিলাম।

    আমিও ইয়েস ভেবেছিলাম। আপাকে কেউ দেখলে আর পছন্দ করবে না এটা হতেই পারে না। বাবা তুমি মার সঙ্গে কথা বল।

    শায়লা গম্ভীর গলায় বললেন, তুমি কখন বাসায় এসেছ?

    রহমান সাহেব মিনমিন করে বললেন, আজ একটু দেরি হয়েছে।

    এটা তো নতুন কিছু না। দেরি তো রোজই হচ্ছে। চিত্রা তার স্কলারশিপের টাকায় আজ আমাদের খাওয়াল। তোমাকেও নিয়ে যেতে চাইছিল। তুমি তো রাত দশটার আগে বাসাতেই ফের না। কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়াও কে জানে। ভাত খেয়েছ?

    হুঁ।

    দরজা ভালো করে বন্ধ করে ঘুমাবে। রান্নাঘরে গিয়ে দেখলে গ্যাসের চুলা বন্ধ করা হয়েছে কিনা।

    আচ্ছা।

    মাছের চৌবাচ্চায় সিগারেটের টুকরা মেললে না।

    আচ্ছা।

    প্রতিদিন না করি তারপরেও তো ফেল।

    আর ফেলব না।

    চিত্রার বিয়ে তো ঠিক হয়ে গেল। এই বৃহস্পতিবারে এনগেজমেন্ট। দয়া করে বাসায় থেকো। ঐ দিন আবার ভাই০বোনদের বাসায় রওনা হয়ো না। তোমার একমাত্র কাজই তো আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে বাড়িতে ফকিরের মতো ঘুরে বেড়ানো। চিত্রার এনগেজমেন্টের দিন তুমি অফিসের দু-একজন কলিগকে বলতে চাইলে, বলতে পার। তাই বলে অফিস শুদ্ধ সবাইকে নিয়ে এসো না।

    আচ্ছা।

    টেলিফোন রাখলাম। চিত্রাকে কিছু বলবে?

    না থান।

    মেয়েকে অভিনন্দন দাও। ধর আমি চিত্রাকে দিচ্ছি।

    রহমান সাহেব অনেকক্ষণ টেলিফোন ধরে বসে রইলেন। চিত্রা বোধহয় দূরে কোথাও ছিল। রহমান সাহেব কিছুতেই ঠিক করতে পারলেন না মেয়েকে কি বলবেন। চিত্রা তোমাকে বিয়ে ঠিক হবার কারণে অভিনন্দন এই ধরনের কথা কি মেয়েকে বলা যায়? এতো মহাবিপদ।

    হ্যালো বাবা।

    হ্যাঁ।

    তোমার একটা চাইনিজ পাওনা রইল। একদিন শুধু তুমি আর আমি চাইনিজ শেয়ে আসব।

    কবে?

    তুমি যেদিন বললে সেদিন। তুমি যদি আগামীকাল যেতে চাও। আগামীকালই নিয়ে যাও। যাবে আগামীকাল?

    আচ্ছা।

    টেলিফোন রাখি বাবা? আর কিছু বললে?

    না।

    যাও ঘুমিয়ে পড়।

    আহা।

    রহমান সাহেবের খুব আনন্দ লাগছে। জ্বর জ্বর ভাব পুরোপুরি চলে গেছে। জইতরীর মা টিভি দেখছে। তাঁর ইচ্ছা করছে জইতরীর মা’র সঙ্গে বসে টিভি দেখতে।

    রহমান সাহেব বললেন, জইতরীর মা তোমার পানের বাটা থেকে একটা পান বানিয়ে দাও তো। আর শোন আগামীকাল রাতে আমার জন্যে কিন্তু রান্না করবে না। আমি বাইরে খাব। আমার দাওয়াত আছে।

    জ্বে আচ্ছা। পানে জর্দা দিমু?

    হ্যাঁ দাও। বেশি দিও না।

    তিনি পান খেলেন। পানের সঙ্গে সিগারেট খেলেন। জইতরীর মার সঙ্গে গানের অনুষ্ঠান দেখলেন। ঘুমুতে যাবার আগে দরজা বন্ধ করতে গিয়ে দেখেন বৃষ্টি থেমে গেছে। মেঘের ফাঁকে চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোয় ভেজা বাগানবিলাসের পাতা চকচক করছে। মনে হচ্ছে চাঁদের আলো আঠার মতো গাছের গায়ে লেগে গেছে।

    মাছের চৌবাচ্চার পাশে কে যেন বসে আছে। সিগারেট টানছে। সিগারেটের আগুন উঠছে নামছে। তাঁর দিকে পেছন দিয়ে বসেছে বলে তিনি মুখ দেখতে পাচ্ছেন না। রহমান সাহেব দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে এলেন। চৌবাচ্চার পাশে দাঁড়ানো মানুষটা তার পায়ের শব্দ পেয়েই চমকে উঠে দাঁড়াল।

    কে?

    চাচাজি আমি মজনু।

    ও আচ্ছা তুমি। কি করছ?

    কিছু করছি না চাচাজি।

    রহমান সাহেব মানুষটাকে চিনতে পারছেন না। তবুও পরিচিত মানুষের মতো কথা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার ধারণা কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি চিনতে পারবেন। তাঁর এই সমস্যা আগে ছিল না। কিছুদিন হলো হচ্ছে। পরিচিত মানুষদেরও তে সময় লাগে। তবে শেষ পর্যন্ত চিনতে পারেন।

    ছেলেটাকে এখন নিলেন। ভাড়াটে নিজাম সাহেবের চাচাতো ভাই। তাদের সঙ্গেই থাকে। বছর দুই আগে চাকরির খোঁজে এসেছিল। চাকরি হয় নি। সে এই বাড়িতেই আছে। নিজাম সাহেবের যাবতীয় কাজ করে দেয়। বাজার করা, ইলেকট্রিসিটি বিল দেয়া, ঘর মুছে দেয়া–সব কাজেই সে পারদর্শী। রোজই যে ছেলের সঙ্গে দেখা হয় তাকে চিনতে না পারায় রহমান সাহেবের খুবই অবাক লাগল।

    তুমি একটু আগে সিগারেট খাচ্ছিলে না?

    মজুন জবাব দিল না। মাথা নিচু করে বইল। রহমান সাহেব আনন্দিত গলায় বললেন, জ্বলন্ত সিগারেটের টুকরাটা তুমি চৌবাচ্চায় ফেলেছ তাই না?

    জ্বি।

    একটা রহস্যভেদ হলো বুঝলে বাবা, চিত্রার মার ধারণা আমি এই চৌবাচ্চায় সিগারেট ফেলতাম। অথচ আমি ফেলতাম না। রোজ সকালে সিগারেটের করা দেখা যেত। তখন আমি কি ভাবতাম জান? আমি ভাবতাম আমিই সিগারেট ফেলে ভুলে যাচ্ছি। ইদানীং আমার ভুলে যাওয়া রোগ হয়েছে। শুরুতে তুমি যে কথাবার্তা বলছিলে— আমি তোমাকে চিনতে পারছিলাম না। তুমি বললে না— তোমার নাম মজনু। আমি ভাবছিলাম, কোন মজনু? বাবা তুমি কি খাওয়া দাওয়া করেছ?

    মজনু চুপ করে রইল।

    রাত বারটার মতো বাজে। এখনো না খেয়ে আছ। যাও খেয়ে শুয়ে পড়।

    মজনু নিচু গলায় বলল, ভাত খাব না চাচাজি।

    খাবে না কেন?

    ভাইজানের বাসায় যেতে ভয় লাগছে।

    কেন?

    ভাইজান সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে আমাকে এক জায়গায় পাঠিয়েছিল। টাকাটা হাইজ্যাকাররা নিয়ে গেছে। উনাকে এটা কি ভাবে বলব বুঝতে পারছি। না। উনি বিশ্বাস করলেন না। উনি ভাববেন–টাকাটা আমি মেরে দিয়েছি।

    তা মনে করলেন কে?

    ভাইজান আমাকে বিশ্বাস করে না। চাচাজি আমি খুবই গরিব কিন্তু এইসব কাজ আমি করি না।

    বিশ্বাস না করলে না করবে তাই বলে ভাত না খেয়ে থাকবে নাকি? যাও সব খুলে বল। তারপর খাওয়া দাওয়া কর। তোমাকে তো আর না খাইয়ে রাখবে না।

    আচ্ছা যাই। এমন ক্ষিধা লেগেছে চাচাজি। ক্ষিধার চোটে মাথা বেদনা শুরু হয়েছে। চাচাজি আমার জন্যে একটু দোয়া করবেন।

    অবশ্যই দোয়া করব। অবশ্যই করব।

    আমার জন্যে একটা চাকরির চেষ্টাও দেখবেন চাচাজি। আমি ইন্টারমিডিয়েট পাস। দশ নম্বরের জন্য ফাস্ট ডিভিশান পাই নাই। এস.এস.সি তে ফাস্ট ডিভিশন ছিল— জেনারেল অংকে লেটার মার্ক ছিল। যে কোনো চাকরি আমি করল চাচাজি–পিওনের চাকরি, দারোয়ানের চাকরি। ক্লাস টু-থির ছাত্রদের প্রাইভেট পড়াতে পারব। একটু চেষ্টা নিবেন চাচাজি। খুব কষ্টে আছি।

    আমি চেষ্টা নিব। যাও খেতে যাও। আজ তোমাদের বাসায় রান্না কি?

    গরুর মাংস। দুপুরে গরুর মাংস এনেছিলাম। এরা দুপুরে যা রাঁধে রাতে সেটাই খায়। রাতে ভাত ছাড়া আর কিছু রান্না হয় না। দুপুরে যদি ডাল শেষ হয়ে যায়, রাতে আর ডাল রাঁধবে না। আমি ডাল ছাড়া খেতে পারি না।

    রহমান সাহেব আগ্রহের সঙ্গে বললেন, আমিও পারি না। আগে সব তরকারির সঙ্গে ডাল খেতাম। চিত্রার মা বলত, সব কিছুর সঙ্গে ডাল মেশালে তরকারির স্বাদ কিভাবে পাবে? এখন সবার শেষে ডাল খাই। অভ্যাস হয়ে গেছে। মানুষ অভ্যেসের দাস।

    চাচাজি, আমি যাই।

    যাও। কোনো দুঃশ্চিন্তা করবে না।

    আমার চাকরির ব্যাপারে একটু মাথায় রাখবেন চাচাজি।

    অবশ্যই মাথায় রাখব।

    রহমান সাহেবের ঘুম চটে গেছে। তিনি আরো কিছুক্ষণ বারান্দায় হাঁটাহাটি করলেন। মজনুর সমস্যার সমাধান হয়েছে কিনা এটা না জেনে ঘুমুতে যেতেও ইচ্ছা করছে না। বেচারা ডাল ছাড়া খেতে পারে না। ওদের বাড়িতে আবার রাতে রানা হয় না। দুপুরের ভাল আছে কিনা কে জানে। তার বাড়িতে ডাল আছে। একটি ডাল পাঠিয়ে দিতে পারলে ভালো হতো।

    তিনি চৌবাচ্চার পাশে বসে একটা সিগারেট পরালেন। শায়লা আজ চৌবাচ্চার মাছ জারে ভরতে ভুলে গেছে। মাছগুলি মনের আনন্দে ছোটাছুটি করছে। বৃষ্টির পানি পেয়ে তাদের বোধহয় ভালো লাগছে। চৌবাচ্চায় চাঁদের প্রতিবিম্ব। চট নলে চোখে পড়ে না। মাথা এদিক ওদিক করতে হয়। রহমান সাহেব মাথা এদিক ওদিক করে চাঁদ দেখতে লাগলেন। এই সময় অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটল, বড় একটা মাছ পানির ভেতর থেকে মুখ বের করে খুবই ক্ষীণ কি সস্পষ্ট গলায় বলল, আজ আমাদের খাবার দেয়া হয় নি।

    রহমান সাহেবের গা দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল। ঘটনা কি? মাছ কেন মানুষের মতো কথা বলবে? তাঁর কি মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে? মাথা খারাপ হয়ে গেলে তা সর্বনাশ। চাকরি চলে যাবে। এরা তাকে কোনো পাগলাগারদে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসবে। পাগলদের সঙ্গে থেকে থেকেই তার মাথা আরো পারাপ হবে। তিনি চৌবাচ্চার দিয়ে আবারো তাকালেন। বড় মাছটা মুখ বের করে ঠোঁট নাড়ছে তবে এখন আর কোনো কথা শোনা যাচ্ছে না। শুধু বিজবিজ শব্দ হচ্ছে। রহমান সাহেব বিড়বিড় করে বললেন, আল্লাহ রহম কর গো। রহম কর।

    ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআমাদের সাদা বাড়ি – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আমাদের সাদা বাড়ি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    আশাবরী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    Our Picks

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025

    আমাদের সাদা বাড়ি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025

    আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }