Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025

    আমাদের সাদা বাড়ি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025

    আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প121 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৫. এনগেজমেন্টের দিনই চিত্রার বিয়ে

    এনগেজমেন্টের দিনই চিত্রার বিয়ে হয়ে যাবে এই খবরটা গোপন রইল না। সকাল আটটায় চিত্রার খালা উত্তরা থেকে টেলিফোন করলেন। টেনশানে তার হাঁপানির টান উঠে গেছে। বুকে ব্যথা হচ্ছে, কপালে ঘাম জমছে। তার ধারণা। অধিক উত্তেজনার কারণে তার স্ট্রোক করতে যাচ্ছে। তিনি কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, শায়লা খবর শুনেছিস।

    শায়লা বললেন, কি খবর? চিত্রা তোকে কিছু বলে নি?

    না তো।

    চিত্ৰাতো ডেনজারাস মেয়ে! এত বড় একটা খবর তোকে কিছু বলে নি?

    গল্পটা কি আপা?

    খবরটা শোনার পর থেকে আমার শরীর কেমন যেন করছে। স্ট্রোকের আগে যে সব লক্ষণের কথা ডাক্তাররা বলেন তার সব কটা লক্ষণ এখন আমার মধ্যে, কপাল ঘামছে। ডান হাত ব্যথা করছে। বেশির ভাগ লোকের ধারণা বাম হাত ব্যথা করা হার্ট এটাকের লক্ষণ–আসলে কিন্তু বাম হাত না, ডান হাত। আমি এখন ডান হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত বাঁকা করতে পারছি না।

    শায়লা চুপ করে রইলেন। তার বড় আপার এই সমস্যা মূল বিষয়ে যাবার আগে এদিক ওদিক যেতে থাকবেন। মূল বিষয় চাপা পড়ে থাকবে। বোঝা যাচ্ছে ভয়ংকর কিছু ঘটেছে। বরপক্ষীয়রা কি মত বদলেছে? লোম মুহূর্তে বলতে আমাদের কিছু সমস্যা হচ্ছে ছেলের কিছু আত্মীয়স্বজন বিদেশ থেকে এসে পৌঁছায় নি। কাজেই বৃহস্পতিবার এনগেজমেন্টটা হবে না। আমরা পরে আপনাদের ডেট জানিয়ে দেব।

    শায়লা মনের উত্তেজনা অনেক কষ্টে চাপা দিয়ে স্বাভাবিক গলায় বলার চেষ্টা করলেন, বড় আপা কি হয়েছে বল তো? এনগেজমেন্টটা কি সত্যি হচ্ছে?

    তুই এনগেজমেন্টের কথা ভুলে যা।

    শায়লার বুক ধক করে উঠল। মনে হল সে মেঝেতে পড়ে যাচ্ছে।

    চিত্রার বড় খালা বললেন, এনগেজমেন্টের কথা মাথা থেকে দূর করে দে। এনগেজমেন্ট ফেনগেজমেন্ট না। ঐ দিন বিয়ে হচ্ছে।

    কি বললে?

    ওরা কাজি নিয়ে আসছে, ঐ দিন বিয়ে পড়ানো হবে।

    কি বলছ তুমি?

    এরা চিত্রার সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেছে। চিত্রার কোনো আপত্তি নেই।

    কবে চিত্রার সঙ্গে কথা বলেছে?

    এত কিছু তো আমি জিতেস করি নি। তুই তোর মেয়েকে ডেকে শক্ত করে একটা ধমক দে। জরুরি খবরগুলি সে দেবে না? চিত্রা বিয়ের কনে না হলে আমি তোদের বাড়িতে এসে কষে একটা চড় লাগাতাম।

    সত্যি বিয়ে হচ্ছে আপা?

    সত্যি তো বটেই। ওর বিয়ে পড়িয়ে রাতেই বউ নিয়ে চলে যাবে। চিত্রার সঙ্গে এ বিষয়েও ওদের কথা হয়েছে। চিত্রার আপত্তি নেই।

    কি বলছ তুমি?

    যা সত্যি তাই বলছি। তার হাতে শুধু আজকের দিনটা সময় আছে। যা করার করে ফেল।

    কি করব?

    সেটাও তো বুঝতে পারছি না, কি করবি। আহা আমি চলে আসছি। একটা ইসিজি করিয়ে তারপর আসব। আমাদের বাড়ির একতলার ভাড়াটে–বাড়িতে মিনি ক্লিনিক খুলেছে। ইসিজি-ফিসিজি সবই আছে। পাঁচশ টাকা করে ইসিজিতে নেয়। আমার কাছ থেকে নিশ্চয়ই নেবে না।

    চিত্রার বড় খালা কথা বলেই যাচেছন। হার্টের অসুখ সংক্রান্ত নানান কোচ্ছা কাহিনী। কার কবে খালি বাড়িতে হার্ট এটাক হল। সে নিজে ডাক্তার হয়েও মনে করল গ্যাসট্রিকের ব্যথা। এন্টাসিড খেয়ে ঘরে বসে টিভিতে কৌন বনে পা ক্রোড়পতি দেখছে। হার্ট এটাকের উত্তেজনা আর কৌন বনে পা ক্রোড়পতির উত্তেজনা দুটায় ডাবল একশন। এক ধাক্কায় শেষ। শায়লা বিরক্তিতে ঠোঁট কামড়াচ্ছে। টেলিফোন বনানি শোনার সময় তার নেই। দুনিয়ার কাজ পড়ে আছে। অথচ মুখের ওপর টেলিফোন রাখাও যাচ্ছে না।

    শায়লা!

    বল আপা।

    চিত্রার কিছু কাপড় চোপড় ব্যবহারি জিনিসপত্র গুছিয়ে স্যুটকেসে দিয়ে দে। সে নিশ্চয়ই একবস্ত্রে শ্বশুর বাড়িতে যাবে না। ভালো সুটকেস আছে?

    না।

    কাউকে নিউমার্কেটে পাঠিয়ে দে, ইন্ডিয়ান স্যামসোনাইট কিনে নিয়ে আসুক। মিডিয়াম সাইজ সুটকেস হাজার দুই টাকা পড়বে। দেখতে খারাপ না। কামাল আতাতুর্ক মার্কেটে বিদেশীটা পাওয়া যাবে। তবে সেকেন্ড হ্যান্ড হবার সম্ভাবনা। সেকেন্ড হ্যান্ড স্যুটকেস কেনার দরকার কি?

    আচ্ছা। আপা আমি এখন যাই–আমার মাথা ঘুরছে।

    শায়লা টেলিফোন রেখে খাবার ঘরের দিকে এগুলেন। রহমান সাহেব কাপড় পরছেন। রাতে তাঁর চেহারায় যে অস্বাভাবিকতা ছিল, এখন তা নেই। শায়লা বললেন, কোথায় যাচ্ছ?

    রহমান সাহেব বললেন, কোথায় আর যাব? অফিসে যাচ্ছি।

    তুমি বোধ হয় জান না, আজ চিত্রার এনগেজমেন্ট হবে না। সরাসরি বিয়ে হয়ে যাবে।

    জানি।

    শায়লা অবাক হয়ে বললেন, জনি মানে? কে বলেছে?

    চিত্রা বলেছে। ও তার স্যুটকেস গুছিয়ে রেখেছে।

    শায়লা বানু স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। মেয়ে তাঁকে কিছুই বলে নি অথচ ঠিকই তার বাবাকে বিয়ের খবর দিয়েছে। সুটকেস গুছিয়ে রেখেছে। হয়তো দেখা যাবে মীরাও সব জানে। শুধু তিনিই কিছু জানেন না।

    শায়ালা বললেন, আমি তোমার অফিসে যাবার দরকার নেই।

    ছুটি নিয়ে আসিনি তো।

    মেয়ের বিয়ের জন্যে একদিন অফিস কামাই করতে পারবে না? এমনই কঠিন তোমার অফিস? খবর্দার তুমি অফিসে যাবে না।

    রহমান সাহেব ক্ষীণ গলায় বললেন, আমি অফিসে গিয়ে ছুটি নিয়ে আসি? এক ঘণ্টা লাগবে। যাব আর আসব।

    যেতেই হবে?

    এক ঘন্টার মধ্যে চলে আসব।

    শায়লা তীক্ষ্ণ চোখে কিছুক্ষণ স্বামীর দিকে তাকিয়ে চিত্রার খোঁজে গেলেন। যে মেয়ের আজ বিয়ে হয়ে যাচ্ছে সেই মেয়েকে কঠিন কোনো কথা বলা মোটেই ঠিক হবে না। তারপরেও তিনি জানতে চাইবেন— এত বড় একটা খবর তাকে না দিয়ে সে তার বাবাকে কি কারণে দিল। হঠাৎ করে তিনি কেন এত গুরুত্বহীন হয়ে পড়লেন?

     

    চিত্রা সুন্দর একটা শাড়ি পরেছে। খুব বেশি সাজগোজ সে কখনো করে না। আজ একটু সেজেছেও। ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়েছে। চোখে কাজল। গালে হালকা পাউডার। মনে হচ্ছে সে বাইরে কোথাও যাচ্ছে, তারই প্রস্তুতি।

    শায়লা অবাক হয়ে বললেন, তুই কোথায় যাচ্ছিস?

    চিত্রা বলল, যেখানেই যাই এগারোটার আগেই চলে আসব মা।

    শায়লা তীক্ষ্ণ গলায় বললেন, তুই এগারোটায় আসবি না, রাত দশটায় আসবি তা তো জানতে চাচ্ছি না। আমি জানতে চাচ্ছি তুই যাচ্ছিস কোথায়?

    বন্ধুর বাসায় যাচ্ছি।

    আজ তুই কোথাও বের হতে পারবি না।

    কেন?

    বিয়ের দিন কনে ঘর থেকে বের হতে পারে না। নিয়ম নেই।

    চিত্রা হাসি মুখে বলল, পুরনো কালের নিয়ম-কানুন এখন কেউ মানে না মা। বিয়ের দিন কনেকে ঘর থেকে বের হতে হয়। পার্লারে গিয়ে চুল বাঁধতে হয়।

    আমি তোর সঙ্গে তর্ক করতে পারব না। তুই ঘর থেকে বের হবি না।

    মা আমিও তোমার সঙ্গে তর্ক করতে পারব না। আমাকে যেতেই হবে। খুবই জরুরি।

    যেতেই হবে?

    হ্যাঁ, যেতেই হবে। আমাকে ঘরে আটকে রাখার চেষ্টা করে লাভ নেই। আমি যাবই।

    শায়লা আহত গলায় বললেন, তাহলে অপেক্ষা কর তোর বড় গলা আসুক। বড় খালার গাড়ি নিয়ে যাবি। তোর সঙ্গে মীরা যাবে।

    মীরা কি আমার পাহারাদার?

    তুই যা ভাবার ভেবে নে। মীরা অবশ্যই তোর সঙ্গে যাবে।

    মা শোন, তুমি রেগে যায়। লেগে যাবার মতো কিছু হয় নি। আমি বড় বালার গাড়ি নিয়ে কোথাও যাব না। রিকশা নিয়ে যাব। এবং অবশ্যই মীরাকে সঙ্গে নেব না। তুমি শুধু শুধুই ভয় পাচ্ছ।

    আমি ভয় পাব কেন?

    অবশ্যই তুমি ভয় পাচ্ছ। ভয়ে তোমার চোখ ছোট হয়ে গেছে। ভয়টা দূর কর মা। গল্প উপন্যাসে দেখা যায় যে দিন বিয়ে সেদিন সকালবেলা মেয়ে ঘর থেকে বের হয়ে অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করে। এই কাজ আমি কখনো করব না। আমি যখন বলছি এগারোটার মধ্যে ফিরব। অবশ্যই ফিরব। এখন আমাকে একটু সাহায্য কর তো মা, দেখ তো টিপটা যে দিয়েছি টিপটা কি মাঝখানে হয়েছে?

    শায়লা কিছু না বলে চলে গেলেন। তার চোখে পানি এসে গেছে। চোখের পানি তিনি মেয়েকে দেখতে চান না। তার খুবই মন খারাপ লাগছে। সংসারে নিজেকে অপ্রয়োজনীয় এবং তুচ্ছ মনে হচ্ছে। অথচ তিনি একা সংসারকে বুকে আগলে এই অবস্থায় এনেছেন।

    মীরা আজ স্কুলে যায় নি। শায়লা তাকে স্কুলে যেতে নিষেধ করেছেন। ঘরে নানান কাজকর্ম আছে। মীরার সাহায্য দরকার। অথচ মীরা কাজ করার কিছু পাচ্ছে না। সব কাজকর্ম আগেই গোছানো। কাজ খুঁজে নিয়ে কাজ করার মতো মেয়ে মীরা না। তার ইচ্ছা করছে গল্পের বই নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে পড়তে শুরু করা। এই কাজটা করার সাহস হচ্ছে না। মা খুব রাগ করবেন। বেশি রেগে গেলে হাত থেকে টান দিয়ে বই ছিঁড়ে ফেলবেন। মীরা ঘর থেকে বের হল। তার হাতে শীর্ষেন্দুর একটা বই— ঘুনপোকা। বারান্দার কোনো আড়াল বের করে বই পড়তে শুরু করতে ইচ্ছা করছে। বাগান বিলাস গাছটার আড়ালে বসা যায়। বাগান বিলাসের আড়ালে বসলে চট করে মা তাকে দেখতে পাবেন না। অথচ মা ডাকলেই সে শুনতে পাবে। তবে গাছ ভর্তি শুয়োপোকা। গায়ে শুয়োপোকা না উঠলেই হল।

    মীরা কি করছ।

    মীরা চমকে উঠল। মজনু ভাই। নিঃশব্দে পেছনে এসে দাঁড়িয়ে চমকে দিয়েছে। মীরা গম্ভীর গলায় বলল, কি ব্যাপার?

    তোমার জন্যে একটা জিনিস এনেছি।

    কি জিনিস?

    কাঁঠালচাপা ফুল। তীব্র গন্ধ। শাহবাগের মোড়ে বিক্রি করছিল দুটাকা পিস। আমি দরদাম করে তিনটা কিনেছি পাঁচ টাকায়। ফুলটার এমন গন্ধ–আধমাইল দূর থেকে পাওয়া যায়।

    মীরা একবার ভাবল ফুল নেবে না। তারপরেও নিল।

    মজনু বলল, একটা গ্রাস ভর্তি করে পানি নাও–তার ওপর ফুলগুলি দিয়ে রাখ— দেখ কি গন্ধ হয়। দেখবে গন্ধে মাথা ধরে যাবে।

    যে গন্ধে মাথা ধরে যায় সেই গন্ধ শুঁকে লাভ কি?

    কথার কথা বললাম, গন্ধে তো আর সত্যি মাথা ধরে না।

    মীরা বলল, আচ্ছা মজনু ভাই, আপনি কি আমাদের বাসার টেলিফোন নাম্বার জানেন?

    মজনু বলল, হ্যাঁ জানি। তোমাদের টেলিফোন নাম্বার জানি। চিত্রার মোবাইল টেলিফোনের নাম্বারও জানি। কখন কোন দরকার হয়। চিত্রার আজ এনগেজমেন্ট না?

    হ্যাঁ।

    চাচিকে বল যে আমি আজ সারাদিন ফ্রি করে রেখেছি। যে কোনো কাজে আমি আছি। আমার পরিচিত এক ডেকোরেটর আছে তাকে বললেই আধঘণ্টার মধ্যে মরিচ বাতি দিয়ে গেট সাজিয়ে দেবে। অন্যেরা যা নেয় তার অর্ধেক চার্জ করলে। যাও চাচিকে জিজ্ঞেস করে এসো।

    মা মরিচবাতির গেট করাবে না। কাজেই জিজ্ঞেস করার দরকার নেই।

    তবু জেনে আস। প্লেট থালা জগ এইসব লাগবে কি-না। তার কাছে সব লেটেষ্ট ডিজাইনের থালা বাসন।

    মীরা বলল, মজনু ভাই আপনাকে একটা উপদেশ দেই শুনুন। আজ মার মেজাজ খুবই খারাপ। আপনি দয়া করে মার সামনে পড়বেন না। উনি আপনার ওপর রেগে আছেন।

    আমার ওপর রেগে আছেন কেন?

    আপনি খুব ভালো করেই জানেন কেন? আপনি প্রায়ই বাসায় টেলিফোন করেন। করেন না।

    মনুর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। সে চোখ নামিয়ে নিল। এতক্ষণ সে বেশ স্বাভাবিক ভাবেই মীরার সঙ্গে কথা বলছিল। এখন আর বলতে পারছে না। তার কপাল ঘামছে।

    মীরা বলল, নিজের পরিচয় না দিয়ে দিনের পর দিন টেলিফোন করা কি ঠিক?

    মজনু বলল, ঠিক না।

    কেন আপনি টেলিফোন করেন?

    মজনু বলল, তুমি টেলিফোনে খুব সুন্দর করে হ্যালো বল। এটা শোনার জন্যে কথা বলি। তুমি হ্যালো বলার পরই আমি টেলিফোন রেখে দেই।

    মীরা কঠিন গলায় বলল, বাজে কথা বলবেন না। আপনি হড়বড় করে অনেক কথা বলেন। নিজের নাম মজনু, আমাকে লাইলী বানিয়ে প্রেমের রেলগাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন। আমি বোকা মেয়ে না। আমার সঙ্গে চালাকি করতে যাবেন না। মজনু ফিসফিস করে বলল, আর কোনোদিন টেলিফোন করব না।

    কথাবার্তার এই পর্যায়ে শায়লা বের হয়ে এলেন। তিনি মেয়ের হাতের কাঁঠালচাপা ফুল দেখলেন, মজনুকে দেখলেন। অতি দ্রুত দুই এর সঙ্গে দুই যোগ করে চার করলেন। মজনুর দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললেন, মজনু তোমার ভাই নিজাম সাহেব কি অফিসে চলে গেছেন না এখনো বাসায় আছেন?

    মজনু চাপা গলায় বলল, বাসায় আছেন।

    তুমি তোমার ভাইকে পাঠিয়ে দাও তো। আমার দরকার আছে।

    মজনু মনে হল হাঁপ ছেড়ে বাচল। সে প্রায় দৌড়ে গেল তার ভাইকে খবর দিতে।

    ভাড়াটে হিসেবে নিজাম সাহেবকে শায়লা পছন্দ করেন। চুক্তিপত্রে আছে মাসের প্রথম সপ্তাহে ভাড়া দিতে হবে, নিজাম সাহেব তিন তারিখের আগেই বাড়ি ভাড়া শোধ করে দেন। বাড়ির টুকিটাকি রিপেয়ারিং এর জন্যে বাড়িওয়ালার কাছে ধন্যা দেন না। নিজেই মিস্ত্রী ডাকিয়ে সারিয়ে নেন। গত মাসে মিস্ত্রি ডাকিয়ে কলের লিক সারালেন। এবং মিস্ত্রিকে নিয়ে শায়লার কাছে এসে বললেন, ভাবী আপনাদের পানির কলে কোনো সমস্যা থাকলে সারিয়ে নিন। আমার চেনা মিস্ত্রী। ভালো কাজ করে। এ রকম ভাড়াটে পাওয়া ভাগ্যের কথা।

    নিজাম সাহেব বসার ঘরে ঢুকে হাসি মুখে বললেন, ভাবী কোথায়? অফিসে যাবার মুখে জরুরি তলব। ভাড়া বাড়াচ্ছেন না-কি?

    শায়লা বললেন, চা খাবার জন্যে ডেকেছি ভাই। ভাপা পিঠা করেছি। ভাপা পিঠা দিয়ে এক কাপ চা খান।

    বাড়ি ভাড়া তাহলে বাড়ছে না? যাক বাঁচলাম। আপনার মেয়ের না-কি আজ এনগেজমেন্ট?

    শায়লা বললেন, আপনার মেয়ে বলছেন কেন ভাই? মেয়ে তো আপনারও।

    নিজাম সাহেব বললেন, আপনি খুবই ভাগ্যবতী মহিলা। আমার স্ত্রীর কাছে ছেলে সম্পর্কে শুনেছি। ভাগ্যগুণেই শুধু এমন ছেলে পাওয়া যায়।

    দোয়া করলেন ভাই।

    অবশ্যই দোয়া করি। ঘাস দিলে দোয়া করি।

    আপনি কিন্তু আমার মেয়ের এনগেজমেন্টের সময় উপস্থিত থাকবেন। অফিস শেষ করে সোজা বাসায় চলে আসলেন।

    রোজই তো তাই আসি। আজ না হয় আরো ঘন্টাখানিক আগে চলে আসব। আর মজনুকে বলে যাচ্ছি যে কোনো কাজ ঘর ঝাঁট দেয়া থেকে শুরু করে বাথরুম পরিষ্কার সব ওকে দিয়ে করিয়ে নেবেন। কোনো সমস্যা নেই।

    শায়লা চায়ের কাপ নিজাম সাহেবের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে সহজ গলায় বললেন, মজনু সম্পর্কে একটা কথা বলার জন্যে আপনাকে ডেকেছি ভাই। আপনাকে আমি খুব কাছের মানুষ মনে করি বলেই বলছি। আপনার সঙ্গে ভাড়াটে বাড়িওয়ালা সম্পর্কে থাকলে কখনো বলতাম না।

    নিজাম সাহে চিন্তিত গলায় বললেন, ঘটনা কি?

    শায়লা বললেন, ঘটনা খুবই সামান্য। আপনার কানে তোলার মতো কোনো ঘটনাই না। কিন্তু আমার ছোট মেয়েটা খুবই নরম টাইপের। সে দারুণ আপসেট। এই জন্যেই আপনাকে বলা।

    ব্যাপারটা বলুন তো ভাবী। ঘটনা মনে হয় কিছুটা আঁচ করতে পারছি। ঐ শুয়রের বাচ্চা মীরা মা-মণির কাছে প্রেমপত্র পাঠিয়েছে।

    প্রায় সে রকমই। তবে প্রেমপত্র না–মজনু প্রায়ই বাসায় টেলিফোন করে। মীরা টেলিফোন ধরলে–আজেবাজে কথা বলে। অশ্লীল কথা।

    বলেন কি?

    শায়লা বললেন, ভাই এটা কোন বড় ব্যাপার না। মেয়ে বড় হলে এরকম সমস্যা বাবা-মাকে পোহাতেই হয়। আপনাকে ব্যাপারটা জানতামই না। আপনাকে খুব কাছের মানি জানি বলেই বলছি। ভাই আরেকটা ভাপা পিঠা দেই।

    দিন আরেকটা পিঠা খাই। শরীরে শক্তি করে নেই। তারপর দেখেন কি করি। আজ আমি এই শুয়োরের বাচ্চার পটকা গেলে ফেলব। ওর কিছু উপকার করব বলে সেরে নিয়ে এসেছিলাম। উপকারের ঘাড়ে লাথি। বাজারের পয়সা মারা। বিল দেয়ার জন্যে টাকা দিয়ে পাঠালে, বাসায় ফিরে এসে বলে টাকা পকেট মার হয়েছে, এতো নৈমিত্তিক ঘটনা। এখন আবার হয়েছে প্রেম কুমার। ছাল নাই কুত্তার বাঘের মতো ডাক। ডাক আমি বের করছি।

    শায়লা বললেন, একটু ধমক দিয়ে বুঝিয়ে দিলেই হবে।

    নিজাম সাহেব বললেন, শাস্তির ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দিন ভাবী। শাস্তি নিয়ে কিছু বললে আমি খুবই মাইন্ড করব।

     

    নিজাম সাহেব খুব আয়োজন করেই শাস্তির ব্যবস্থা করলেন। মীরাদের বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে একশ এক বার কান ধরে উঠ-বোস। প্রতিবার উঠবোস করার সময় মুখে বলতে হবে মীরা আমার মা।

    শাস্তি পর্ব শুরু হয়েছে। মজনুর  হাত-পা কাঁপছে। চোখ লাল। শরীর দিয়ে টপ টপ করে ঘাম পড়ছে। সে উঠবোস করছে বিড়বিড় করে প্রায় অস্পষ্ট স্বরে বলছে— মীরা আমার মা। মীরা আমার মা। তার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে নিজাম সাহেব উঠ-বোসের হিসাব রাখছেন, ছয়-সাত-আট-নয়-দশ-এগারো…।

    শায়লা রান্নাঘরে রান্না করছিলেন। মীরা তার কাছে ছুটে গিয়ে বলল, মা এসব কি হচ্ছে? মজনু ভাইকে কান ধরে উঠবোস করাচ্ছে। মা প্লিজ বন্ধ কর। মা আমি তোমার পায়ে পড়ি।

    শায়লা বিরক্ত গলায় বললেন, ন্যাকামী করবি না। ন্যাকামী করার মত কিছু হয় নি। শাস্তি পাওয়া দরকার ছিল, শাস্তি হচ্ছে।

    মা প্লিজ, প্লিজ।

    শায়লা কঠিন চোখে মেয়ের দিকে তাকালেন। মীরা রান্নাঘর থেকে বের হয়ে এল। তার ছুটে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে ইচ্ছা করছে। সে দরজার দিকে একঝলক তাকালো। গেটের বাইরে অনেক লোকজন জড় হয়েছে। সবাই খুব মজা পাচ্ছে। মীরা মজনুকে দেখতে পাচ্ছে না, তবে নিজাম সাহেবের গলার স্বর শুনতে পারছে— একত্রিশ, বত্রিশ, তেত্রিশ, চৌত্রিশ… একশ হতে আরো অনেক বাকি।

     

    টেলিফোন বাজছে। মীরা টেলিফোনের কাছেই বসে আছে। তার টেলিফোন ধরতে ইচ্ছা করছে না। সে মনে মনে একটা প্রতিস্থা করেছে— জীবনে কখনো টেলিফোন ধরবে না। শায়লা রান্নাঘর থেকে বললেন, মীরা টেলিফোন ধর।

    মীরা টেলিফোন ধরল। তার সারা শরীর দিয়ে বরফের মতো শীতল কিছু বয়ে গেল। সেই ছেলেটা না বলছে।

    হ্যালো মীরা তুমি কেমন আছ?

    ভালো।

    আজ তো তোমার বোনের এনগেজমেন্ট, দেখছ তোমার সব খবর প্লাশি। আচ্ছা তুমি কি এনগেজমেন্টের উপলক্ষে শাড়ি পরবে?

    জানি না।

    অবশ্যই জান— ধুধু আমাকে বলতে চাচ্ছ না।

    মীরা টেলিফোন রেখে দিল। সে মস্ত বড় একটা ভুল করেছে। টেলিফোন যার সঙ্গে তার কথা হয় সে মজনু ভাই না। অন্য কেউ। মজনু ভাই ও টেলিফোন করে কিন্তু সে হ্যালো শুনেই রেখে দেয়। মীরার শরীর কাঁপছে। সে কি করবে? নিজেই বারান্দায় ছুটে গিয়ে বলবে–নিজাম চাচা যথেষ্ট হয়েছে। আর না। এটা সে বলতে পারবে না। তার এত সাহস নেই। আপা থাকলে বলতে পারত। আপাকে দেখে মনে হয় সাহস নেই। কিন্তু তার অনেক সাহস।

    নিজাম সাহেবের গলা শোনা যাচ্ছে। সত্তুর, একাত্তুর, বাহাত্তুর…। মজনু ভাই তার সঙ্গে বিড়বিড় করছেন, মীরা আমার মা। মীরা আমার মা। তবে এখন আর আমার শব্দটা শোনা যাচ্ছে না। এখন শোনা যাচ্ছে–মীরা মা। মীরা মা। আবারো টেলিফোন বাজছে। সেই ছেলে নিশ্চয়ই আবারো টেলিফোন করেছে। শায়লা রান্নাঘর থেকে ধমক দিলেন— মীরা টেলিফোন ধরছিস না কেন?

    মীরা টেলিফোন ধরল। তার মাথা কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে। টেলিফোনে কে কথা বলছে, কি বলছে–কিছুই বুঝতে পারছে না। একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। ছাদ থেকে কে যেন লাফ দিয়ে পড়েছে। তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। মীরা বলল, জ্বি আচ্ছা। জ্বি আচ্ছা। ওপাশ থেকে কে যেন বলল, এটা কি রং নাম্বার হয়েছে? মীরা তার উত্তরেও বলল, জ্বি আচ্ছা। মীরার সমস্ত মনোযোগ বারান্দায়। সেখানে শাস্তি পর্ব শেষ হয়েছে। নিজাম সাহেব বলছেন যে ভাবে এক বস্ত্রে আমার বাসায় উঠেছিলি— ঠিক সেই ভাবে এক বস্ত্রে এখন বের হয়ে যাবি। গেট খুলে বের হয়ে যাবি। পেছন দিকে ফিরে তাকাবি না। দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পোষার কথা এতদিন শুধু বই-এ পড়েছি। আজ দেখলাম বাস্তবে।

    মীরা জানালার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মজনু ভাই চলে যাচ্ছে এই দৃশ্যটা সে দেখতে চাচ্ছে। মানুষটা গেট দিয়ে বের হবার সময় একবারও কি পেছন ফিরে তাকাবে না?

     

    রহমান সাহেব ছুটির দরখাস্তু নিয়ে নিজেই বড় সাহেবের কাছে গেলেন। বিনীত ভঙ্গিতে বললেন, স্যার আজ আমার মেয়ের বিয়ে।

    বড় সাহেব বললেন, মেয়ের বিয়ে?

    জ্বি স্যার। আগে কথা ছিল এনগেজমেন্ট হবে–পরে ঠিক হয়েছে বিয়েই হয়ে যাবে। এই জন্যেই ছুটি।

    মেয়ের বিয়ের দিন অফিস করবেন এটা কেমন কথা। অবশ্যই ছুটি। দরখাস্ত আমার পি.এ-র কাছে রেখে চলে যান। ও আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেলাম, একটা ছেলের চাকরির কথা বলেছিলেন মজনু নাম। আমার বড় শালাকে বলেছিলাম। সে একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানির জি এম। ও চাকরির ব্যবস্থা কনেছে — স্টোর কিপার। চার হাজার ছয়শ টাকা বেতন প্লাস আদার ফেসিলিটিজ।

    স্যার আপনার অশেষ মেহেরবাণী।

    বড় সাহেব ললেন, এত সহজে যে চাকরি হয়ে যাবে আপনি কি ভেবেছিলেন?

    জি স্যার ভেবেছিলাম। যে দিন আপনাকে বলেছি সেদিনই আমি জানি মনের চাকরি হবে। আপনি ব্যবস্থা করে দেবেন।

    আগে থেকে জানলে তো ভালোই। আমার বড় শালার কার্ড আমি আমার পি এর কাছে দিয়ে রেখেছি। আপনি সেখানে থেকে নিয়ে যান। আর ঐ ছেলেকে পাঠিয়ে দিন। সব ঠিক করাই আছে। ইন্টারভ্যু টিন্টারভ্যু কিছু লাগবে না।

    জ্বি আচ্ছা স্যার।

    রহমান সাহেব অফিস থেকে বের হলেন। তাঁর মন সামান্য খারাপ। রতন আজ অফিসে আসে নি। গত দিনই অফিস থেকে বের হবার সময় দেখেছিলেন রতনের জ্বম এসেছে। জ্বর নিশ্চয়ই বেড়েছে। তার ইচ্ছা ছিল মেয়ের বিয়েতে রতনকে রাখলেন। যে কোনো শুভ কাজে সব প্রিয়জনদের পাশে রাখতে হয়। রতন তার প্রিয়জন তো বটেই। রতনের আগের বাসায় তিনি বেশ কয়েকবার গিয়েছেন। গত মাসে সে বাসা বদলেছে। নতুন বাসার ঠিকানা রহমান সাহেবের জানা নেই। জানা থাকলে তিনি অবশ্যই রতনকে দেখতে যেতেন।

    রহমান সাহেব হাঁটতে শুরু করলেন। এই সময়ে অফিস থেকে বের হয়ে তার অভ্যাস নেই। সব কেমন যেন অন্য রকম লাগছে।

    এত সকাল সকাল বাসায় ফিরে কি হলে? চুপচাপ ঘরে বসে থাকা ছাড়া তার আর করার কি আছে? ঘরে থাকা মানেই মীরাকে বিরক্ত করা। তারচে নিউমার্কেটের কাঁচাবাজারে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা যায়। চারটা ক্যাপসিকাম কিনে ফরিদার বাসায় চলে যাওয়া যায়। নতুন একটা তরকারি খেয়ে দেখা দরকার। অনেকদিন গরুর গোসত দিয়ে ওল খাওয়া হয় না। ওল সামান্য গলায় ধরবে। অনেকে গরম পানিতে ওল সিদ্ধ করে সেই পানি ফেলে দিয়ে গলা ধরার সমস্যার সমাধান করে। রহমান সাহেব তার পক্ষপাতি না। ধরুক একটু গলায়। তারও আলাদা মজা আছে। বাজারে কচুর লতি উঠেছে। চিকন চিকন কালো রঙের কচুর লতি চিংড়ি মাছ দিয়ে অসাধারণ হয়। তার মা দিতেন। তিনি কচুর লতির সঙ্গে কুচি কুচি করে কাঁঠাল বিচি দিয়ে দিতেন। সেই স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। ক্যাপসিকাম না কিনে কচুর লতি এবং কাঁঠাল বিচি কেনা যায়।

    দুপুরে ফরিদার বাসায় খাওয়া দাওয়া করে তাকে নিয়েই নিজের বাসায় যাওয়া। চিত্রার এনগেজমেন্টে সে থাকবে না, তা হয় না। তাছাড়া এটা এনগেজমেন্টও না। রীতিমতো বিয়ে।

    ফরিদার সঙ্গে জহিরের যে সমস্যা ছিল তা নিশ্চয়ই এতক্ষণে মিটে গেছে। ছোট ছোট ঝগড়া সহজে মিটতে চায় না। ছোট ঝগড়াগুলি চোর-কাটার মতো কাপড়ের এক জায়গা থেকে উঠে অন্য জায়গায় লাগে। বড়গুলি হল মানকাটার মতো। একবার তুলে ফেললে দ্বিতীয়বার লাগার সুযোগ নেই।

    রহমান সাহেব বোনকে ফেলে নিজের মনে হেঁটে চলে এসেছিলেন–এই ব্যাপারটা তার আর তেমন করে মনে পড়ছে না। তিনি কোনো অস্বস্তি বোধ করছেন না। তিনি জানেন ফরিদা তার ওপর খুবই রাগ করেছে। তবে এটাও জানেন সে রাগ করে বেশিক্ষণ থাকতে পারবে না। পৃথিবীতে বোন ছাড়া তার আর কেউ নেই— এই কঠিন সত্যটা ফরিদা জানে। কাজেই সে তার ভাইজানের সব অপরাধ ক্ষমা করে দেবে।

    তিনি কাঁচাবাজার থেকে বেশ কিছু বাজার করে ফেললেন। কচুর লতি, কাঁঠাল বিচি, দুটা কলার থোর, লাউ ডগা। মাছের মধ্যে কিনলেন চিংড়ি মাছ আর মলা মাছ। এত মাছ পলিথিনের ব্যাগে করে নেয়া যায় না। তিনি দশা টাকা দিয়ে চটের একটা ব্যাগ কিনে ফেললেন। বাজার থেকে বের হবার মুখে হঠাৎ চোখে পড়ল কচি লাউ বিক্রি হচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে এই মাত্র লাউ গাছ থেকে ছিঁড়ে আনা হয়েছে। তিনি তের টাকা দিয়ে একটা লাউ কিনলেন।

    ফরিদার জন্যে একটা উপহার কিনতে ইচ্ছা করছে। খুব খুশি হয়ে যায় এমন কোনো উপহার। ফরিদার সবচে বড়গুণ হচ্ছে যে কোনো তুচ্ছ জিনিস পেয়েও সে খুশি হয়। সেই খুশির মধ্যে কোনো ভান থাকে না। একবার নিউমার্কেটের সামনে গোল প্লাস্টিকের বক্সে সুঁচ বিক্রি হচ্ছিল। বক্সের ভেতর অনেকগুলি খাপ। একেক ধাপে একেক মাপের সুঁচ। ঢাকনা ঘুরিয়ে পছন্দসই মাপের সুঁচের কাছে গেলে সেই সুঁচ বের হয়ে আসে। তিনি সেই সুঁচের বাক্স বোনের জন্যে একটা কিনলেন। ফরিদা উপহার হাতে নিয়ে গাঢ় গলায় বলল, ভাইজান তুমি কোত্থেকে খুঁজে খুঁজে এমন সব অদ্ভুত জিনিস আমার জন্যে আন? কে তোমাকে এত কষ্ট করতে বলেছে। নিজের ওপর তোমার কোনো মায়া নেই। রোদে রোদে ঘুরে কি করে শরীরের অবস্থা। দেখি একটু দাঁড়াও তো তোমাকে সালাম করি।

    সালাম করবি কেন?

    একটা উপহার দিয়েছ আমি তোমাকে সালাম করব না। তুমি আমাকে কি ভাব?

    রহমান সাহেবের স্পষ্ট মনে আছে সালাম করে উঠে দাঁড়িয়ে ফরিদা চোখ মুছতে লাগল। উপহার পাবার আনন্দে তার চোখে পানি এসে গেছে।

    রিকশায় উঠে রহমান সাহেবের মনে হল বোনের জন্যে আজ ভালো কোনো উপহার নিতেই হবে। তাঁর সবচে পছন্দ কাচের চুড়ি। দুই বাক্স কাচের চুড়ি কিনে নিয়ে গেলে কেমন হয়? কাচের চুড়ি কোথায় পাওয়া যায় তিনি জানেন না। খুঁজে বের করা যাবে। রতন সঙ্গে থাকলে খুব সুবিধা হত। সে চেনে না এমন জায়গা নেই। কেউ যদি রতনকে বলে— রতন একটা ছমাস বয়েসী হাতির বাচ্চা কিনতে চাই। কোথায় পাওয়া যাবে বল তো। রতন সঙ্গে সঙ্গে বলবে, আসেন আমার সঙ্গে।

     

    দুই লাক্স কাচের চুড়ি কিনে রহমান সাহেব ফরিদাদের ফ্ল্যাটে উপস্থিত হলেন। সেখানে অনেক লোকজন পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। বিরাট হৈচৈ। তিনি অবাক হয়ে শুনলেন–ফ্ল্যাট বাড়ির ছাদ থেকে একটা মেয়ে লাফ দিয়েছে। মেয়েটার নাম ফরিদা। তখনো তিনি বুঝতে পারলেন না— এই ফরিদা তার অচেনা কেউ। ফরিদা তারই বোন। ফরিদার জন্যেই তিনি দুই বাক্স কাচের চুড়ি এনেছেন।

    অচেনা এক ভদ্রলোক রহমান সাহেবকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেল। জহিরকে শুকনো মুখে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। তার ঠোঁট চিমসে মেরে গেছে। সে সিগারেট টানছে। আর একটু পর পর পুপু ফেলছে। জহিরের সঙ্গে তার কিছু বন্ধু-বান্ধব। তারাও শুকনো মুখে সিগারেট টানছে। প্রত্যেকের চেহারাই কালাসের মতো। রহমান সাহেবকে দেখে জহির এগিয়ে এল। চিন্তিত মুখে বলল, ভাইজান দেখেছেন কি রকম বিপদে পড়েছি। পুলিশ টাকা খাওয়ার জন্যে নানান ফ্যাকড়া করছে। বলছে এটা নাকি সুইসাইড না, হত্যা। তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে ছাদে তুলে পেছন থেকে নাকি ধাক্কা দিয়ে ফেলেছে।

    রহমান সাহেব বললেন, কে ধাক্কা দিয়ে ফেলেছে?

    বহির বিরক্ত মুখে বলল, কেউ ফেলে নি। কে আবার মেলবে। আমাকে বিপদে ফেলার জন্যে নিজেই পি দিয়েছে। তা ভাগ্য ভালো যে চিঠিতে আমার সম্পর্কে সত্যি কথাগুলি লিখেছে।

    কি লিখেছে?

    আমি যে স্বামী হিসেবে কত ভালো এইটা লিখেছে। সে যদি লিখত তার মৃত্যুর জন্যে আমি দায়ী তাহলে আজ আমার খবর ছিল। তবে সমস্যা হয়েছে কি ভাইজান, চিঠিটা এখন আছে পুলিশের কাছে। আমার কাছ থেকে টাকা খাওয়ার জন্যে পুলিশ চিঠি গায়েব করে দিতে পারে। আমি চেষ্টা করছি মূল চিঠিটা, মুল চিঠি না হলে তার একটা ফটোকপি হলেও যোগাড় করতে। ফটোকপি আমি একজন ফার্স্টক্লাস ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে এটাচড করিয়ে নেন।

    রহমান সাহেব কি বলবেন ভেবে পেলেন না। তার প্রচণ্ড ভয় লাগছে। বুক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ফরিদা মারা গেছে এই ব্যাপারটা এখনো তার কাছে সে রকম স্পষ্ট হয় নি।

    জহির হাতে সিগারেট ফেলে আরেকটা সিগারেট ধরাল। রহমান সাহেবের দিকে ঝুঁকে এসে বলল, গত রাতে আপনি ফরিদাকে রেখে চলে যাবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আমি দরজা খুলে তাকে বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে। যা হবার হয়েছে। এখন ঘরে ঢোক। হাত মুখ ধুয়ে ভাত খাও। সে তখন বলল, না। তারপর রাগ দেখিয়ে ফট ফট করে ছাদে চলে গেল। আমার তখনই উচিত ছিল তাকে ছাদে যেতে না দেয়া। সে যে আমাকে এত বড় বিপদে ফেললে আমি চিন্তাও করি নি।

    রহমান সাহেব চুপ করে আছেন। তার কেমন যেন লাগছে। মনে হচ্ছে না ঘটছে তার কিছুই সত্যি না। স্বপ্নের ভেতর ঘটেছে। তিনি দুঃস্বপ্ন দেখছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি জেগে উঠবেন। তখন আর এই ঝামেলায় থাকতে হবে না।

    জহির বলল, ভাইজান চালাবেন?

    রহমান সাহেব বললেন, না। পানি থাব।

    ঐ দোকানের দিকে চলেন, পানি খাবেন চাও খাবেন। এরা চা-টা ভালো বানায়। আমি ছয় কাপ চা খেয়ে ফেলেছি। সকালে নাশতা টাশতা কিছুই থাই নি। চায়ের ওপর আছি।

    রহমান সাহেব যন্ত্রের মতো জহিরকে অনুসরণ করলেন। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চায়ে চুমুক দিলেন। জহির ভুল বলে নি। চা-টা ভালো। জহির বলল, ভাইজান আপনি এসেছেন খুব ভালো হয়েছে। আপনি আমার একটা উপকার করেন।

    কি উপকার?

    কিছুক্ষণের মধ্যেই সুরতহাল হয়ে যাবে। টাকা দিয়ে মনে করেছি। উপর থেকে মন্ত্রী লেভেলে চাপও দিয়েছি। ডাবল একশান। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডেডবডি হ্যান্ডওভার করে দেবে। আমি আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের গাড়ি যোগাড় করেছি। আপনি ডেড বডি নিয়ে যান। আমি পুলিশের ঝামেলা শেষ করে আসছি।

    রহমান সাহেব অবাক হয়ে বললেন, কোথায় নিয়ে যান?

    জহির বিরক্ত মুখে বলল, আপনার বাড়িতে নিয়ে যান। এ ছাড়া তো আর জায়গা দেখি না। আমার ফ্ল্যাটে নেওয়াই যাবে না। রাজ্যের মানুষ ভিড় করে আছে। সাংবাদিক ফাংবাদিকও আছে। এরা ভেবেছে মশলাদার কোনো ঘটনা আছে—ফ্রন্ট পেজ নিউজ করে পত্রিকার সার্কুলেশন বাড়বে। চা আরেক কাপ খাবেন ভাইজান?

    না।

    খান আরেক কাপ। নার্ভ ঠিক থাকলে। চায়ের মধ্যে কেফিন আছে। কেফিন নার্ভ ঠিক রাখে। এই আমাদের আরো দুকাপ চা দাও। ভাইজান আপনি চায়ের সঙ্গে সিগারেটও খান। চায়ের কেফিন আর সিগারেটের নিকোটিন— দুইটায় মিলে নার্ভ একেবারে পুকুরের পানির মতো ঠাণ্ডা রাখবে। আমি যে এত নর্মাল আছি— এই দুই বন্ধুর জন্যে আছি। সকালে খুবই কান্নাকাটি করেছি। তারপর ভাবলাম আগে কাজ গুছায়ে নেই। তারপর কান্নাকাটি। কান্নাকাটির সময় পার হয় নাই। সারাজীবনই কান্নাকাটির জন্যে পড়ে আছে।

    রহমান সাহেব আরেক কাপ চা নিলেন। সিগারেট ধরালেন। তার কাছে মনে হল জহির সত্যি কথাই বলেছে। শরীরের কাঁপুনিটা কমে এসেছে। জহির বলল, ভাইজান তাহলে আপনি এই উপকারটা করুন। ডেডবডি নিয়ে আপনার বাসায় চলে যান। আমি পুলিশের ঝামেলা শেষ করে, আজিমপুর গোরস্থানের সঙ্গে কথাবার্তা বলে চলে আসছি। কোরানে হাফেজ টাফেজ জাতীয় কাউকে পান কিনা দেখেন। কোরান পাঠ করতে থাকুক। টাকা-পয়সা যা লাগে আমি দেব।

    রহমান সাহেব বললেন, আচ্ছা।

    জহির বলল, আপনি যে শক্ত আছেন এটা দেখে ভালো লাগছে। বিপদের সময় কেউ মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারে না। আপনাকে দেখলাম মাথা ঠাণ্ডা। আপনার ব্যাগে কি?

    বাজার।

    জহির ব্যাগের ভেতর উঁকি দিয়ে বলল, লাউটা ভালো কিনেছেন। লম্বা লাউ মিষ্টি হয়। গোল লাউ দেখতে ভালো, কিন্তু খেতে ভালো না। লাউ কিনে আপনি জিতেছেন।

     

    লাশের গাড়ির ভেতর রহমান সাহেব বসে আছেন। পাশাপাশি দুটা লম্বা সিট। একটায় তিনি বসেছেন। অন্যটায় ফরিদা শুয়ে আছে। শাদা কাপড় দিয়ে ঢাকা। রহমান সাহেবের কাছে মনে হচ্ছে এ অমিলে যদিদা না। অন্য কেউ। কিশোরী কোনো মেয়ে। শাদা কাপড়ে ঢাকা বলেই কি না— ফরিদাকে খুব ছোট খাট মনে হচ্ছে। রহমান সাহেবের দমবন্ধ লাগছে। পাশের গাড়িটা পুলিশের প্রিজন ভ্যানের মতো। কোনো জানালা নেই। একটা ছোট্ট রেলের টিকিট চরের জানালার মতো জানালা আছে। এই জানালা দিয়ে গাড়ির ড্রাইভারের সঙ্গেই শুধু কথা বলা যায়। বাইরের কিছু দেখা যায় না।

    গাড়ি চলতে শুরু করেছে। ড্রাইভারকে এখনো বলা হয় নি কোথায় যেতে হবে। ড্রাইভার অবিশ্যি একবার জিজ্ঞেস করেছে— কোনদিকে যাব? রহমান সাহেব কিছু বলেন নি। গাড়ি কোথায় যাবে তিনি জানেন কি জায়গাটার নাম এই মুহূর্তে মনে আসছে না। একটু পরেই মনে আসবে।

    রাস্তার কোনো গর্তে গাড়ি প্রবল ঝাঁকুনি গেল। ফরিদা সিট থেকে পড়ে যাচ্ছিল, রহমান সাহেব ছুটে এসে তাকে ধুলেন। আর তখনি ফরিদা কথা বলে উঠল। চৌবাচ্চার মাছটা যে রকম ক্ষীণ স্বরে কথা বলেছিল সে কম ক্ষীণ স্বর। কিন্তু স্পষ্ট ও তীক্ষ্ণ।

    ভাইজান তুমি এটা নিয়ে করছ?

    রহমান সাহেব বিড়বিড় করে বললেন, কি করেছি?

    আমাকে কোন বুদ্ধিতে তুমি তোমার বাসায় নিয়ে যাচ্ছে? আজ তোমার মেয়ের বিয়ে। কত লোকজন আসবে। একটা শুভ কাজ হবে। এর মধ্যে তুমি একটা মরা লাশ নিয়ে উপস্থিত হবে। কি সর্বনাশের কথা।

    তাহলে কি করব?

    ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বল। তারপর গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা ধর। ড্রাইভারের চোখের আড়াল হওয়ামাত্র একটা বেবিটেক্সি নিয়ে বাসায় চলে যাও।

    কি বলছিস তুই?

    তোমার যাতে ভালো হয় আমি তাই বলছি।

    তারপর তোর কি হবে?

    আমার যা হয় হবে। মৃত মানুষের কিছু হয় না। তোমার বাড়িতে আজ উৎসব। তুমি যাও তো।

    ড্রাইভার গাড়ির গতি কমিয়ে দুবার হন দিয়ে বিরক্ত গলায় বলল, কোথায় যাব বলেন।

    রহমান সাহেব বললেন, ভাই গাড়িটা থামান আমার একটু নামতে হবে। দুমিনিট। পিছনের দরজাটা খুলে দেন।

    ব্যাপার কি?

    ভাইসাহেব বাথরুমে যাব।

    ড্রাইভার গাড়ি থামাল। রহমান সাহেব গাড়ি থেকে নামলেন। বিনীত গলায় বললেন, বেশিক্ষণ লাগবে না। পাঁচ মিনিট। আপনি একটা সিগারেট ধরন। সিগারেট শেষ করতে করতে আমি চলে আসব।

    ড্রাইভার সিগারেট ধরাল না। নিজের সিটে ফিরে গম্ভীর মুখে বসে রইল। রহমান সাহেব বড় বড় পা ফেলে উল্টো দিকে হাঁটা ধরলেন। লাশের গাড়ি চোখের আড়াল হওয়া মাত্র প্রায় লাফ দিয়ে একটা রিকশায় উঠে পড়লেন।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআমাদের সাদা বাড়ি – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আমাদের সাদা বাড়ি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    আশাবরী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    Our Picks

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025

    আমাদের সাদা বাড়ি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025

    আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }