Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আতঙ্ক একাদশ – অনুষ্টুপ শেঠ

    লেখক এক পাতা গল্প153 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ব্ল্যাক আইল্যান্ড

    “হেই! দেখবে এসো!”

    তিয়া নিজের মাইক্রোস্কোপ থেকে উঠে এল। আসাহি একটা আদ্দিকালের কাঠের দেয়ারে গ্যাঁট হয়ে বসে আছে। ওর সামনের ডিভাইসে যতগুলো এদিক-ওদিক বেরোনো হাত পা, প্রায় ততগুলোই স্ক্রিন। ল্যাবের সেরা অ্যানালাইজার মেশিন ওটা। ঠিক যেমন আসাহি ল্যাবের সেরা অ্যানালিস্ট। এতটুকুও জৈব পদার্থ পেলে সেটা থেকে খুব অল্প সময়েই নিখুঁত ভাবে ও আর ওর পার্টনার— মানে মেশিনটা, বলে দিতে পারে জিনিসটা কোন প্রাণীর শরীর থেকে এসেছে। প্রাণীটির তখনকার শারীরিক অবস্থা সম্বন্ধেও অনেক কিছু বলে দিতে পারে আসাহি। ব্যাপারটা দেখতে লাগে ম্যাজিকের মতো।

    এ-সবই আসাহির নিজের লেখা প্রোগ্রামের কেরামতি। প্রোবাবিলিস্টিক মডেল কাজে লাগিয়ে সেগুলো একের পর এক বৈশিষ্ট্য খুঁজে আর মিলিয়ে চলে। তারপর হয় জেনেটিক ম্যাপিং। ব্যাপারটা নিয়ে আসাহি স্বাভাবিকভাবেই স্পর্শকাতর। কাউকে নিজের মেশিনে হাত তো লাগাতে দেয়ই না, তা নিয়ে আলোচনাও করে না কারো সঙ্গে। ফলে দেমাকি আর স্বার্থপর বলে কিছুটা বদনামই আছে ওর। একমাত্র মুম্বই থেকে আসা তিয়াশার সঙ্গেই ওর একটু বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে বলা যায়। তিয়া খুব ভালো স্টুডেন্ট। কথা কম, কাজ বেশি— নীতি মেনে চলে বলে আসাহি’র সঙ্গে ওর এই বোঝাপড়াটুকু তৈরি হয়েছে।

    স্ক্রিনে একটা সাদা-কালো জ্যামিতিক প্যাটার্ন খুব ধীরে-ধীরে ঘুরছিল। তিয়া জানে ওটা কী। আসাহি যে স্যাম্পলটা জোগাড় করেছিল, গত কয়েকদিন ধরে তার বেসিক অ্যানালিসিসগুলো ওই করে দিয়েছিল। তাই ও জানে, সেই ফলাফলের সঙ্গে আসাহি’র ‘ম্যাজিক’ যুক্ত হয়ে এই ছবিটা তৈরি হয়েছে।

    ভারি অদ্ভুত ছিল জিনিসটা। রবারের মতো নরম টুকরোটা আসাহি ওকে প্রথমে দিতে চায়নি। তিয়াও জোর করেনি। ও জানত, পেশাগতভাবে বায়োস্ট্যাটিস্টিশিয়ান হলেও বেশ কিছু কাজ আসাহি নিজেই করে নিতে পারে বইকি। তবে শেষ অবধি আসাহি নিজেই এসেছিল ওর কাছে।

    “তিয়া, আমার কাজে কিছু একটা ভুল হচ্ছে মনে হয়। ঠিক শিওর নই। একটু হেল্প করবে প্লিজ?”

    আসাহি’র বয়েস চল্লিশের ওপারেই হবে। জাপানিদের অবশ্য বয়স বোঝা যায় না। তবে এখানে এসে অবধি তিয়া চতুর্দিকে যেমন ছিপছিপে ফিট চেহারা দেখছে, সেই তুলনায় আসাহি বেঢপ। মাথার চুল কালো হলেও পাতলা হয়ে এসেছে। নধর একটা ভুঁড়ি আছে। মোটা-মোটা নিকোটিনের দাগ লাগা আঙুলগুলো খুব ক্ষিপ্র বা সূক্ষ্ম কাজের উপযুক্ত নয়। সেই তুলনায় তিয়া’র সরু লম্বা সার্জনের আঙুল আর কমবয়েসের ধৈর্য আর স্টেডি নার্ভ এই ধরনের ক্লান্তিকর অথচ জটিল কাজের জন্য অনেক বেশি উপযুক্ত। তাছাড়া, তিয়া মলিকিউলার বায়োলজির লোক, এই কাজগুলো ওর প্রায় নিত্যকর্ম বলা চলে। তিয়া মূল কাজ করে দেওয়ার পর থেকে ওই স্যাম্পল আর তার ফলাফল নিয়েই পড়ে ছিল আসাহি।

    স্ক্রিনে ঘুরতে থাকা প্যাটার্নের মধ্যে একটা লাল বিন্দু একটু পর-পর চমকে উঠছে, আবার মিলিয়ে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে বিপ-বিপ আওয়াজ হচ্ছে একটানা। ওটা অ্যানোমলির সূচক। মানে এমন কিছু একটা ধরা পড়েছে, যা ওতে থাকার কথা নয়।

    “দেখছ?” আসাহি স্ক্রিনের দিকে মুখ তুলে বলল, “কী মনে হচ্ছে?”

    হাতেকলমে কাজটুকু করে দিলেও আসাহি জিনিসটা নিয়ে যে কী করতে চাইছে, তা বুঝতে পারছিল না তিয়া। নাক-মুখ কুঁচকে, চোখ সরু করে ঘুরন্ত প্যাটার্নটা লক্ষ করেও ও একটাই কথা বলতে পারে, “এ তো অ্যানোমলি। মানে যন্ত্রের হিসেবের সঙ্গে ফল মিলছে না। তাই তো?”

    “ঠিক।” খুশি হয়ে মাথা নাড়ল আসাহি, “এইজন্য তোমায় দেখালাম। অদ্ভুত না? সন্দেহজনক ব্যাপার, বুঝলে। ভালো করে দেখতে হবে।”

    তিয়ার ফেরার সময় হয়ে গেছে। নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নেওয়ার ফাঁকে ও আসাহিকে জিজ্ঞেস করল, “যাবে না?”

    “উঁ? হুম্! আরেকটু। তুমি ওয়েট কোরো না।”

    তিয়া কাঁধ ঝাঁকিয়ে বেরিয়ে পড়ল। ও জানে আসাহির স্বভাব। আজ সারারাত হয়তো ওই অ্যানোমেলির উৎস কী, তা জানার জন্য পড়ে থাকবে ল্যাবে।

    *****

    পরদিন তিয়া আর লুইজি এসে দেখল, আসাহি চেয়ারেই হাত পা ছড়িয়ে ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে নাক ডাকাচ্ছে। মানে ও সারারাত কাজ করেছে এই নিয়ে। পিটার ধমকে-ধামকে তাকে ডে রুমে শুতে পাঠাল। বিকেল নাগাদ আসাহি আবার ফিরে এল— ঘুমিয়ে ফ্রেশ, সেই সঙ্গে চরম উত্তেজিত।

    “আরে তোমরা সব ফেলে এদিকে দেখবে এসো।“

    সব শোনার পর ওদেরও মাথা ভোঁ ভোঁ করছিল বইকি।

    আজকের দিনে, এই সময়ে, একটা একদম নতুন প্রাণী, একটা নতুন স্পিসিস আবিষ্কার করে ফেলেছে ওরা। ভাবা যায়! নেহাত ছোটো সাইজের কীট-পতঙ্গও নয়। মার্কোসের যন্ত্রের আন্দাজ বলছে, এই প্রাণীর দৈর্ঘ্য তিন থেকে চার ফুট। তার চেয়েও বড়ো কথা, এর ডি.এন.এ-র গড়ন একেবারে আলাদা।

    “কোথায় পেলে এই স্যাম্পলটা?” পিটার জিজ্ঞেস করল।

    আসাহি কেমন ঘোরের মধ্যে বসে ছিল। ঘুরে তাকয়ে বলল, “সে তো বলা যাবে না।”

    এই শুরু হল ওর স্বভাবসিদ্ধ এড়িয়ে যাওয়া। পিটার শ্রাগ করে নিজের সিটে ফিরে গেল। লুইজিও ফিরে যাচ্ছিল। ঘুরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী করবে এবার?”

    আসাহি জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটল। তারপর বলল, “অথরিটিকে জানাতে হবে।”

    “সে তো হবেই।” লুইজি মাথা নাড়ল, “এক্সপিডিশন টিম যাবে। প্রাণীটিকে খুঁজে বার করবে। এগুলো তো স্ট্যান্ডার্ড প্রসেস”

    আসাহি আবারও ঠোঁট ভেজাল জিভ দিয়ে। ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল কিছু একটা অস্বস্তিতে আছে। পিটারও ব্যাপার বুঝে সিট ঘুরিয়ে চেয়ে ছিল এদিকেই। তিয়াশাও সাগ্রহে তাকিয়ে ছিল আসাহি’র দিকে।

    “বলছি…আবিষ্কারের ক্রেডিটটা নিজেরাই নিলে হ’ত না?”

    “মানে?”

    তিনজনে প্রায় একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠেছিল। আসাহি হাতের ইশারায় গলা নামাতে বলে বলল, “এটা আমি অথরিটিকে জানাতে চাইছি না। মানে, পারব না। তার কারণ আছে, সে বাদ দাও। কিন্তু আমরা চারজনে গিয়ে যদি এই প্রাণীটিকে ধরে আনতে পারি, তার ফলটা আন্দাজ করতে পারছ? কতখানি নামডাক হবে আমাদের, সেটা স্রেফ ভাবো।”

    আর সবার মতো তিয়াশাও হাঁ করে তাকিয়েছিল আসাহি’র দিকে। পিটারের মাথা সবচেয়ে ঠান্ডা, তাই ওই ব্যাপারটা ভালোভাবে বুঝে নিতে চাইল, “তা ভেবেছি। কিন্তু ধরে আনব কোথা থেকে? স্যাম্পলটা কোত্থেকে পেয়েছ, তাই তো বলছ না তুমি!”

    “কীভাবে পেয়েছি সেটা জানতে চেও না। কিন্তু এই চামড়ার টুকরোটা কোত্থেকে পেয়েছি— সেটা বলতে পারি। সেখানেই খুঁজতে হবে।”

    “জায়গাটা কোথায়?”

    “আমার দেশের বাড়ি চিতা টাউনে।” ওদের সবার চোখে চোখ বুলিয়ে, গলা আরো খাদে নামিয়ে বলল আসাহি, “ওর কাছে একটা জায়গা আছে। আমরা ওটাকে বলি ‘ব্ল্যাক আইল্যান্ড’। উইকেন্ডে দেশে গেছিলাম, তখনই ওটা পেয়েছি।”

    *****

    স্পিডবোট নিলে তাড়াতাড়ি হত, কিন্তু আওয়াজও হত। ওরা কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়নি। এরকম একটা দুঃসাহসিক অভিযানে চট করে বেরিয়ে যাওয়া যায় না। কিন্তু আসাহি’র উত্তেজনা ক্রমে ওদেরকেও গ্রাস করেছিল। সে তো পারলে সেই রাত্রেই বেরিয়ে যেত তার দেশের বাড়ির উদ্দেশে। পিটার ধমক-ধামক দিয়ে দুটো দিন নিয়েছিল মালপত্র কেনাকাটা আর অন্য প্ল্যানিঙের জন্য।

    পিটারের গাড়িতে ছিল ওরা চারজন, সঙ্গে একটা করে ব্যাকপ্যাক। পিটার বলেছিল, ওর শখের বন্দুকটা না নিয়ে অচেনা জায়গায় যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ওর লাইসেন্স আছে, তাই বন্দুকটা সঙ্গে নেওয়া হয়েছিল। কালোবাজারে নানা বে-আইনি জিনিস কেনার ব্যাপারে লুইজিকে বিশেষজ্ঞ বলা চলে। ওর সঙ্গেও ছিল একটা ছোট্ট, লাইসেন্স-বিহীন আগ্নেয়াস্ত্র।

    তিয়া’র কাছে অবশ্য কোনো অস্ত্র ছিল না।

    চিতা শহরের মূল মোড়টায় পৌঁছতে আধঘণ্টার একটু বেশি লাগল। সেখান থেকে আসাহি’র বাড়ি আর মিনিট পাঁচেক। বাড়িতে কেউ ছিল না। আসাহি তালা খুলে দিলে ওরা ঢুকে পড়ল।

    “নৌকো জোগাড় হলে আজ রাতে বেরোব।” আসাহি বলল, “নৌকো ভাড়া করার জন্য পিটারকে যেতে হবে। আমাকে এখানকার লোকজন চেনে, তাই সমস্যা হতে পারে। দাঁড় বাওয়া নৌকো নেবে— পাঁচ ছ’জনের মতো জায়গা থাকে যেন। তবে হ্যাঁ, বলবে না কিন্তু যে ব্ল্যাক আইল্যান্ডে যাব। তাহলে আর ভাড়া দেবে না ব্যাটারা!”

    পিটার ওয়াং টোকিওর বাসিন্দা। ও দিব্যি ট্যুরিস্ট সেজে দরাদরি করতে পারবে, আবার জাপানি বলতে-বুঝতেও পারবে। তাই ওকে পাঠানোটা লজিক্যাল। পিটার মেনে নিয়েও বলল, “ব্ল্যাক আইল্যান্ডে যাব— এটা বললে সমস্যা হবে কেন? কী আছে ওখানে?”

    “আরে ধুর! যত কুসংস্কার এদের। গেলে নাকি পাপ হয়। ওটা নাকি শয়তানের হাওয়া খাওয়ার জায়গা। যত্ত ফালতু ভাবনাচিন্তা!”

    “তুমি শয়তানের বডি-পার্ট নিয়ে আসনি তো?” ঠাট্টার গলাতেই বলেছিল লুইজি। তাতেও আসাহি এত চটে গেল কেন, বুঝিনি।

    ছোটো, ঝিমধরা শহরটা ঘুমিয়ে পড়ল রাত নামার একটু পরেই। নিঃশব্দে জেটিতে এল ওরা। তারপর কথাবার্তা যত কম সম্ভব বলে ভেসে পড়ল দরিয়ায়। পিটার আর লুইজি দাঁড় বাইতে লাগল, আসাহি হাল ধরে বসে রইল।

    তিয়া পারের দিকে মুখ করে বসেছিল। উলটো দিকে, দূরে আকাশের গায়ে জমাট অন্ধকারের মতো ভেসে থাকা কালো পাথুরে ছোট্ট দ্বীপটার দিকে ওর চোখ চলে যাচ্ছিল। দ্বীপে কোনো গাছপালা চোখে পড়ছিল না। এতটাই ন্যাড়া লাগছিল জায়গাটা, যেন এবড়ো-খেবড়ো কিছু পাথর ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে ওখানে।

    এই নিয়েও ভয় পায় এরা? সত্যি! গেঁয়োই বটে।

    বেশ কসরত করে পাথুরে আঘাটায় নৌকোটা ভিড়িয়ে দিল পিটার। লাফ মেরে নেমে পড়ল ওরা সবাই, তারপর পাথর টপকে উঠে এল দ্বীপের মূল অংশে। সবটাই ন্যাড়া, তবে দূরে কিছু গাছের সারি শুরু হয়েছে। অন্ধকারে ঝুপসি আউটলাইন দেখা যাচ্ছে।

    লুইজি ওর ব্যাকপ্যাক থেকে বাইনোকুলার বের করে চারপাশ দেখছিল। ওর শখের জিনিস ওটা, রাত্রেও স্পষ্ট দেখা যায়। পাশ থেকে আসাহি ফিসফিস করে বলল, “কী বুঝছ?”

    “কী আবার বুঝব? কিছুই তো নেই এখানে!”

    এইবার তিয়া বুঝতে পারল, কেন ওর এত অস্বস্তি হচ্ছিল দ্বীপে নামার পর থেকেই। জনমানবহীন জঙ্গলেরও কিছু নিজস্ব শব্দ থাকে। পোকামাকড়ের ডাক, গাছে ঘুমোনো পাখিদের মাঝে মাঝে নড়েচড়ে ডানা মেলা, হাওয়ায় গাছের পাতা নড়া, নিশাচর পশুদের চলাফেরার আওয়াজ, দূর থেকে প্যাঁচার ডাক, মাথার উপর বাদুড় উড়ে যাওয়া— কিছু না কিছু থাকেই।

    এখানে কিচ্ছু নেই। একেবারে নিপাট, নিরেট স্তব্ধতা। হাওয়াটুকুও চলছে না যেন। দমবন্ধ হয়ে আসছিল ওর।

    “দাঁড়িয়ে থেকে কী হবে?” আসাহি বলল, “আমরা বরং এগোই। হয়তো দ্বীপের আরেকটু ভিতরদিকে আছে প্রাণীটা।”

    উত্তেজনাটা ফিরে এল আবার। সত্যি কি ওরা এক অভূতপূর্ব প্রাণী আবিষ্কার করতে চলেছে? বড়ো দড়ি আছে পিটারের ব্যাকপ্যাকে। পেলেই… না, একটু বেশি ভেবে ফেলছে তিয়া। আগে তো খুঁজে পাওয়া যাক!

    ঘণ্টাখানেক পর দ্বীপের মাঝামাঝি ওইরকমই আরেকটা ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়েছিল ওরা। কথা বলার মতো কিছুই খুঁজে পাচ্ছিল না কেউ। শেষে তিয়াই হতাশ গলায় মুখ খুলল, “এইবার?”

    জবাব না দিয়ে পিটার বন্দুকটা হাত থেকে ফেলে ধপ করে পা ছড়িয়ে বসেই পড়ল মাটিতে।

    এতক্ষণ ধরে ছোট্ট দ্বীপটা তন্নতন্ন করে খুঁজেছে ওরা— সমস্ত পাথরের আড়াল, গুহা, গাছপালা। নতুন প্রাণী চুলোয় যাক, কোনো প্রাণীই নেই এই দ্বীপে। কাঁকড়া নয়, এমনকি পিঁপড়েও আছে বলে মনে হয়নি। কিন্তু সমুদ্রের মধ্যে এরকম অদ্ভুত নিষ্প্রাণ অঞ্চল কী করে হতে পারে? আর কিছু না থাক, সিগালরা তো বাসা বাঁধেই এমন দ্বীপে। কিন্তু কিচ্ছু নেই!

    মনে মনে একটা যুক্তি খাড়া করে এর তিয়া। বাসা যে বাঁধবে, সেরকম গাছই বা কই?

    হ্যাঁ, এও আরেক অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য এই দ্বীপের। কোনো চেনা গাছ চোখে পড়েনি। দ্বীপের মাঝামাঝি জায়গায় একটা অজানা, কম উচ্চতার গাছ রয়েছে শুধু। খানিকটা পেয়ারাগাছের মতো দেখতে, নরম ডাল আর বিশাল বড়ো পাতা— তিয়ার এক হাতের চেয়েও বড়। রবারগাছের পাতার মতো মোটা, অশ্বত্থের পাতার মতো টিকিওলা পাতাগুলো দেখে তিয়া কিচ্ছু বুঝল না। গাছের ডালাপালাগুলো কাণ্ডের মতো অংশটা থেকে বাইরে-বাইরে ছড়িয়ে আছে। এমন অদ্ভুত গড়ন বলেই কি সিগালরা ওখানে বাসা বাঁধেনি?

    প্রশ্নটা করতেই আসাহি’র ধমক খেতে হল, “সিগালরা মাটিতে, পাথরের খাঁজে খোঁজে বাসা করে। গাছে নয়!”

    এবার তিয়াও বসে পড়ল মাটিতে।

    লুইজি গভীর ভ্রূকুটি করে নিজের হাতের পাতা দেখছিল। মাথাটা এবার একটা ঝটকা দিয়ে তুলে বলল, “আচ্ছা… এমন নয় তো…”

    কথাটা বলতে ওর আটকাচ্ছিল মনে হয়। পিটার তাড়া দিল, “এমন কী নয়?”

    “এমন নয় তো, যে… যাকে আমরা খুঁজছি, সে… ডাইনোসর গোত্রের কিছু, ভয়ানক মাংসাশী? সমস্ত পাখি, ছোট জানোয়ার, পোকা মাকড় সব হয়তো সে খেয়ে ফেলেছে। এখানে কিছু এলেই হয়তো সে খেয়ে ফেলে। তাই আর কিছু নেই— এমন হতে পারে না?”

    সবার চোখ আসাহি’র দিকে ঘুরে গেল। প্রশ্নটা করার দরকার হল না।

    “আচ্ছা, আচ্ছা।” আসাহি দু’হাত তুলে ওদের শান্ত করতে চাইল, “আমি বলছি, নমুনাটা কীভাবে পেয়েছি। মানে, আমার কিছু ছোটবেলার দোস্ত আছে এখানে। তারা ঠিক… সৎপথে ব্যবসা করে না। তাই যা শুনছ তা গোপন রাখতে হবে। তাদের মধ্যে একজনের পুলিশের নজর এড়িয়ে লুকোনোর দরকার ছিল। শেষ অবধি ঠিক হয়েছিল, সে এই দ্বীপে এসে লুকোবে— এই আমরা যেমন এলাম, রাত্রে, লুকিয়ে।”

    “তারপর?”

    “পরদিন কাকভোরে নৌকো করে তাকে ফেরত আনা এল। এই দ্বীপ নিয়ে এত কথা চলে বলে সবাই সতর্ক ছিল। এমনকি আমিও… আসলে এদের ব্যবসার ভাগ আমিও পাই মাঝেমধ্যে। সেদিন ভোরে আমিও আউটহাউস থেকে চোখ রাখছিলাম। জেটিতে পৌঁছোনোর আগেই দেখি রাঊল দাঁড় বাইতে-বাইতে ঢলে পড়ল। সবাইকে ডেকে, আরেকটা নৌকো নিয়ে গিয়ে তাকে কোনোরকমে টেনেটুনে পারে আনার পনেরো মিনিটের মধ্যেই সে মারা যায়। হার্টফেল করেছিল সম্ভবত।”

    তিয়া আঁতকে উঠল, “অ্যাঁ!”

    “কী হয়েছিল? লোকটা কিছু বলেনি?” পিটার জিজ্ঞাসা করে।

    “বলেছিল। প্রলাপ বকছিল। যতক্ষণ বেঁচে ছিল জড়িয়ে জড়িয়ে খালি বলেছিল, ‘পালাও, নইলে দ্বীপের প্রেতাত্মারা খেয়ে ফেলবে।’ পুলিশের ভয়ে আমরা আর এই নিয়ে কথা বাড়াইনি। চুপচাপ সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল ওর ভাইকে বলে।”

    তিয়ার বুক ধড়ফড় করছিল। আসাহিটা কী সাংঘাতিক লোক! এগুলো আগে জানলে…

    “কিন্তু ওই জিনিসটা পাওয়ার সঙ্গে এর কী সম্পর্ক?” লুইজি আসল কথা থেকে মন সরায় না।

    “ওটা রাঊলের, মানে ওই মৃত লোকটার হাতের চামড়ার টুকরো।” নিচু গলায় বলল আসাহি, “বডিটা টানাটানি-ধরাধরি করার সময় কোন ফাঁকে আমার জামায় লেগে গেছিল। পরে বাড়ি এসে দেখলাম। হাতের ওই জায়গাটা ক্ষতবিক্ষত ছিল, যেন কোনো হিংস্র কুকুর ধারালো দাঁতে চিবিয়ে দিয়েছে। তাই ভেবেছিলাম, ওটা টেস্ট করতে হবে। করতে গিয়ে দেখলাম… সে তো তোমরা দেখেইছ।”

    “কী সর্বনাশ!” পিটার উঠে দাঁড়াল, “এগুলো কী বলছ তুমি? জেনেশুনে, এরকম বিপজ্জনক জায়গায় আমাদের কিচ্ছু না জানিয়ে এইভাবে নিয়ে এলে?”

    “আরে প্লিজ।” অনুনয় করল আসাহি, “একটু রিস্ক তো নিতেই হবে। এত বড়ো একটা আবিষ্কারের ব্যাপার! তাছাড়া আমরা তো একেবারে নিরস্ত্র নই। তোমার বন্দুক আছে! আমার কাছেও আছে একটা মারাত্মক স্টান-গান। যত বড়ো জন্তুই হোক না কেন, এর ঘা খেলে এক পা-ও এগোতে পারবে না।”

    “নিকুচি করেছে তোমার অস্ত্রের।” রাগে ফেটে পড়ল লুইজি, “চুলোয় যাও তুমি আর তোমার আবিষ্কার। আমি চললাম। আর কে-কে আসছে আমার সঙ্গে?”

    নিজের ব্যাকপ্যাক কাঁধে তুলে তিয়া-ও উঠে দাঁড়াতে যাচ্ছিল, মাঝপথে থমকে গেল। চোখের কোণ দিয়ে দেখেছে, একটা ছায়া সাঁৎ করে যেন নড়ে উঠল গাছেদের পিছনে। ঘুরে সেদিকে তাকাল সে।

    “লুইজি…”

    জোরে ডাকতে ভয় করছিল তিয়া’র। কিন্তু লুইজিও কিছু দেখেছিল। বাইনোকুলার বার করে চোখে লাগাচ্ছিল সে। তাছাড়া জঙ্গলটা এতক্ষণ কেমন ছাড়া ছাড়া ফাঁকা ফাঁকা, গা এলানো গোছের ছিল না? হঠাৎ এমন অন্যরকম দেখাচ্ছে কেন গাছগুলোকে?

    ওরা খেয়াল করেনি, কিন্তু পিটার ততক্ষণে হাঁটা লাগিয়েছিল। পেছন ফিরে হাঁকল, “হেই তিয়া, লুইজি— চলে এসো। পাগলের পাল্লায় পড়ে বেঘোরে প্রাণ খোয়াবে নাকি?”

    “কেউ যাবে না!” হুঙ্কার দিয়ে উঠে দাঁড়াল আসাহি। ওর হাতে ধরা ছোট্ট অস্ত্রের চেয়েও বেশি করে ওর কুঁচকে যাওয়া মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল, ফেটে পড়ার ঠিক আগের অবস্থায় আছে ও।

    “মর গে’ তবে!” পিটারও নিজের বন্দুক আসাহি’র দিকে তাক করল। দু’জনে দু’জনের দিকে নিষ্পলক চেয়ে রইল যুযুধান বাঘের মতো।

    তিয়া অসহায়ভাবে বলল, “প্লিজ! তোমরা পাগলামি বন্ধ করবে?”

    “আসাহি!” লুইজি’র ধারালো গলাটা সবার নজর ওর দিকে টেনে নিল। ওর অস্ত্রটাও ততক্ষণে আসাহিকে নিশানায় এনেছিল।

    পিটার এতেই উৎসাহ পেল। আচমকা বন্দুক ফেলে এক লাফে এগিয়ে এসে আসাহি’র হাতের স্টানগান চেপে ধরল সে। তৎক্ষণাৎ আসাহি এক হাত তুলে ক্যারাটের ভঙ্গিমায় মারল ওর ঘাড়ের কাছে। পরক্ষণেই নিজের বন্দুকটা সোজা করল ও।

    তিয়া একটা সাদা আলোর ঝলক দেখল। ক্র্যাক্ করে হওয়া আওয়াজের সঙ্গেই তাল মিলিয়ে লুইজি’র হাত একটা ঝটকা দিল।

    জড়াজড়ি অবস্থায় মারপিট করতে করতে আসাহি আর পিটার দুজনেই দাম্ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। কয়েক সেকেন্ড পর দু’জনের একজন আস্তে-আস্তে গড়িয়ে সরে গেল পাশে। হাতে ভর দিয়ে উঠে বসল সে। উঠে দাঁড়াতে গিয়ে পারল না, ‘উহ্’ করে বসে পড়ল আবার।

    দ্বীপের অন্ধকারে চোখ সয়ে গেছে বলে তিয়া’র বুঝতে অসুবিধে হল না, লোকটা পিটার। ওর বাঁ পা কেমন অস্বাভাবিকভাবে বেঁকে আছে। আসাহি কিন্তু চোখ খোলা অবস্থায় একেবারে কাঠের গুঁড়ির মতো নিস্পন্দ হয়ে পড়ে রইল।

    “সরি, পিট!” পিটারের পাশে দাঁড়িয়ে ওকে উঠতে সাহায্য করছিল লুইজি, “তাক তো ওকেই করেছিলাম। তোমার পায়েই লাগল হতভাগা গুলিটা!”

    “তুমি আর কী করবে?” যন্ত্রণাকাতর গলায় বলল পিটার, “এটা অ্যাক্সিডেন্ট। সব এই পাগলটার দোষ!”

    তিয়া আর থাকতে পারল না। জিজ্ঞেস করল, “ওর কী হল?”

    পিটার আর লুইজি দুজনেই আওয়াজ করে হাসল ওর কথায়। লুইজি বুঝিয়ে দিল, “কাড়াকাড়িতে স্টানগানটা ফায়ার হল, দ্যাখোনি? ব্যাটা নিজের অস্ত্রে নিজেই ঘায়েল হয়েছে।”

    পিটার এর মধ্যে পা ঘষটে ঘষটে ওর বন্দুকটার কাছে গিয়ে ওটা হাতে তুলে নিয়েছিল। লুইজি ডাকল, “কাম হিয়ার তিয়া। হেল্প মি। হতচ্ছাড়াকে এখন বয়ে নিয়ে যেতে হবে!”

    আসাহি বেশ ভারী। তিয়া’র হাঁফ ধরে যাচ্ছিল ওর একটা হাত নিজের কাঁধে নিয়ে টেনে তুলতে। এইভাবে হেঁচড়ে ওকে নিয়ে কী করে অতটা যাবে, তাতে লোকটার পায়ের যে কী দশা হবে— এইসব ভাবনাই ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। তখনই পিটারের আর্তনাদ ভেসে এল, “ওহহহ!”

    চিৎকারটাকে পায়ের ব্যথার ফল বলে ভাবার উপায় রইল না, কারণ বন্দুকের আওয়াজ ভেসে এল প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই। পেছনে ফিরে তিয়া আর লুইজি— দু’জনেই একেবারে জমে গেল।

    অন্ধকারে, মরা চাঁদের আলোয়, কিসের সঙ্গে লড়াই করছে পিটার?

    কেউ কি ওর একটা হাত টেনে ধরে রেখেছে? হ্যাঁ! অন্যহাতে ধরা বন্দুক সেদিকে ঘুরিয়ে মরিয়ার মতো আবার গুলি চালাল সে। সেই করালগ্রাস আলগা হল, ওর হাত ছিটকে বেরিয়ে এল কারও নাগাল থেকে। লেংচে-লেংচে ওদের দিকে ছুটে আসতে-আসতে পিটার চেঁচাল, “হেল্প!”

    এপাশের গাছের সারির নীচে আসাহিকে কোনোমতে নামিয়ে দিয়েই তিয়া আর লুইজি ছুটল পিটারের দিকে। কোন আতঙ্কের তাড়া খেয়ে ছুটে আসছে ও? সেই নতুন, অজানা জন্তু ছাড়া আর কীই বা হবে?

    কিন্তু কই, ওকে তো কিছু ধাওয়া করে আসছে না! তাহলে কি ওদের দেখে ওটা অপেক্ষা করছে?

    “গো-গো-গো!” কোনোমতে বলে উঠল পিটার, “দৌড়োও তিয়া! আমাদের এক্ষুনি পালাতে হবে এখান থেকে। লুইজি, রান! নৌকোয় চলো।”

    একহাতে লুইজির কাঁধ বেড় দিয়ে, অন্যহাতে তিয়াকে ঠেলতে-ঠেলতে নৌকোর দিকে নিয়ে চলল পিটার। তিয়ার জামা ভিজে যাচ্ছিল পিটারের হাত থেকে গড়িয়ে পড়া রক্তে। ঘাড় ঘুরিয়ে তিয়া বারবার দেখার চেষ্টা করছিল, সেই জন্তুটা তেড়ে আসছে কি না। না, কেউ আসছিল না। কিন্তু গাছগুলো প্রবলভাবে নড়ছিল, যেন বড়ো কোনো জন্তু চলে ফিরে বেড়াচ্ছে ওদের মাঝে।

    “আসাহি!”

    তিয়ার চিৎকারে তিনজনেই থমকে দাঁড়াল। তারপর লুইজিও ব্যাপারটা খেয়াল করল।

    এইখানেই তো নামিয়ে দিয়েছিল ওরা আসাহিকে। কিন্তু ও কোথায় গেল? গাছতলা তো পুরো খালি! বিশাল পাতাগুলো উদ্ধত ভাবে উপর দিকে উঠে আছে। আগেও কি এমনটাই ছিল? পাতাগুলো যে এমন ডোরাকাটা, তাও তো আগে খেয়াল করেনি তিয়া। চোখে কি ভুল দেখছে ওরা?

    এবার নড়াচড়াটা খালি চোখেই ধরা পড়ল। তিয়া টের পেল, ওর গায়ের লোম ভয়ে দাঁড়িয়ে উঠেছে। লুইজি একবার ক্রস আঁকল।

    শব্দটা তখনই শুরু হল। খুব মিহি। কিচ্ছু বোঝা যায় না, অথচ আওয়াজটা হচ্ছে। প্রায় শোনাই যায় না এমন গলায় কে যেন কাকে ডাকছ। কী যেন কথা বলছে। উল্লাস করছে! কান পাতলে কিছুই স্পষ্ট নয়, অথচ কান যেন সেই অশ্রুত শব্দে ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে।

    তিয়ার কষ্ট হচ্ছিল। দু’ হাতে কান চেপে ধরতে যাচ্ছিল ও। তার আগে পিটার আহত হাত দিয়েই ওর হাত ধরে একটা ঝটকা টান দিয়ে বলল, “রান, তিয়া, রান! পালাও! শুনো না দাঁড়িয়ে। শুনো না। পালাও!”

    আওয়াজটা বাড়ছিল। যে জিনিসটার কাঁপুনির ফলে সেটা হচ্ছিল, তা যেন আরো দ্রুত নড়াচড়া করছিল। তিয়া’র মগজ একটু-একটু করে আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছিল। আওয়াজটা আর অসহ্য নয়, বরং ভারি সুন্দর… সুরেলা আর মিঠে লাগছিল ওর কাছে।

    পিটারের হাত ঝেড়ে ও পায়ে-পায়ে এগিয়ে গেল গাছতলার দিকে।

    গাছের ডালগুলো নুইয়ে এসে আদর করার ভঙ্গিতে তিয়াকে ছুঁতে চাইছিল। উপরে তাকাল তিয়া। গাছের উপরে ডেলাপাকানো ডালপালা এক ঝলক সরে গেল। তাদের অচ্ছেদ্য বন্ধনে বন্দি ছিন্নভিন্ন জিনিসটাও ও দেখতে পেল তখনই।

    চমকে উঠে পিছিয়ে আসতে গিয়েই তিয়া’র হাতে সুড়সুড়ি লাগল। একটা সুন্দর, মরা চাদের আলোতেও উজ্জ্বল ডোরা কাটা পাতার ডগার শুঁড়টা ওকে ছুঁয়েছিল। ভিজে-ভিজে খড়খড়ে জিনিসটার ছোঁয়া লাগতেই তিয়া’র হাতে জ্বালা করে উঠল।

    পরমুহূর্তেই ওর চুলেও হ্যাঁচকা টান পড়ল। পিটার ওর পনিটেল ধরে টান মেরেছে। তিয়ার হাতে রক্তের একটা সরু রেখা ফুটে উঠেছিল তার আগে, ওই পলকের স্পর্শেই।

    আর কিছু বোঝার চেষ্টা না করে অন্ধের মতো পিটার আর লুইজির পিছন-পিছন সমুদ্রতীরের দিকে দৌড়োল তিয়া। ঠিক কীভাবে যে ওরা নৌকোয় উঠল, তারপর সেটাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল দ্বীপের পাথুরে তট থেকে দূরে— ওর খেয়াল নেই।

    চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল দ্বীপটা। পুরো ফাঁকা, শুধু মাঝের কিছুটা অংশে জঙ্গলের আবছা জটলা। ন্যাড়া, বৃক্ষশূন্য তটভূমির দিকে তাকিয়ে ভয়ে থরথর করে কাঁপছিল ওরা তিনজন। ওদের কানে তখনো তালা ধরিয়ে দিচ্ছিল দূর থেকে ভেসে আসা শব্দটা।

    ঝিঁ ঝিঁ ঝিঁ ঝিঁ!

    এতদিন নিজেদের মধ্যে কামড়াকামড়ি করে আর সালোকসংশ্লেষে পাওয়া কমসম খাবারের ভরসায় টিঁকে ছিল রাক্ষুসে গাছগুলো। কিন্তু সেই মুহূর্তে তারা দুলছিল বেশ ক’দিন বাদে পাওয়া মহাভোজের উল্লাসে। কোনো হাওয়া ছাড়াই হেলেদুলে উঠছিল তারা।

    শাখা থেকে শাখায় ভাগ হয়ে চালান হয়ে যাচ্ছিল আসাহির মৃতদেহের টুকরোগুলো।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্রতিঘাত – অনীশ দেব
    Next Article বিনুর বই ও নির্বাচিত ছোটোগল্প – অন্নদাশঙ্কর রায়

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }