আপদ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের – চলিত ভাষার
“জীবনের ছোট ছোট বাঁকে লুকিয়ে থাকে বড় বড় ঝড়…
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা এমনই একটি ছোটগল্প —
‘আপদ’।
এটা শুধু একটি গল্প নয়,
এটি এক মায়াবী চিত্র, যেখানে মানুষের ভয়, সংকট,
আর মনুষ্যত্বের আসল রূপ ধরা পড়ে নিপুণভাবে।
চলুন, খুলে দেখি সেই গল্পের পাতা —
যেখানে ‘আপদ’ আমাদের সামনে তোলে জীবনের এক কঠিন সত্য।
\\
সন্ধ্যার দিকে ঝড় ক্রমশ প্রবল হতে লাগল। বৃষ্টির ঝাপটা, বজ্রের শব্দ এবং বিদ্যুতের ঝিকিমিকিতে আকাশে যেন দেবতা ও অসুরের যুদ্ধ বেধে গেল। কালো কালো মেঘগুলো মহাপ্রলয়ের জয়পতাকার মতো দিকবিদিকে উড়তে শুরু করল, গঙ্গার এপারে ওপারে বিদ্রোহী ঢেউগুলো কলরবে নৃত্য শুরু করল, এবং বাগানের বড় বড় গাছগুলো সব শাখা ঝটপট করে হাহুতাশ সহকারে ডানে বামে লুটোপুটি করতে লাগল।
তখন চন্দননগরের বাগানবাড়িতে একটি দীপালোকিত বদ্ধ ঘরে খাটের সামনের নিচের বিছানায় বসে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথাবার্তা চলছিল।
শরৎবাবু বলছিলেন, “আর কিছুদিন থাকলেই তোমার শরীর সম্পূর্ণ সেরে উঠবে, তখন আমরা দেশে ফিরতে পারব।”
কিরণময়ী বলছিলেন, “আমার শরীর সম্পূর্ণ সেরে উঠেছে, এখন দেশে ফিরলে কোনো ক্ষতি হবে না।”
বিবাহিত ব্যক্তিমাত্রেই বুঝতে পারবেন, কথাটা যত সংক্ষেপে বললাম তত সংক্ষেপে শেষ হয়নি। বিষয়টি বিশেষ কঠিন নয়, তবু বাদ-প্রতিবাদ কিছুতেই মীমাংসার দিকে এগোচ্ছিল না; কানহীন নৌকার মতো ক্রমাগতই ঘুরপাক খেয়ে মরছিল; অবশেষে অশ্রু-তরঙ্গে ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিল।
শরৎ বললেন, “ডাক্তার বলছে, আর কিছুদিন থেকে গেলে ভালো হয়।”
কিরণ বললেন, “তোমার ডাক্তার তো সব জানে!”
শরৎ বললেন, “জানে তো, এই সময়ে দেশে নানারকম রোগের প্রাদুর্ভাব হয়, তাই আর মাস দুয়েক কাটিয়ে গেলেই ভালো হয়।”
কিরণ বললেন, “এখানে এখন বুঝি কোথাও কারো কোনো রোগ হয় না।”
পূর্ব ইতিহাসটা এই। কিরণকে তার ঘরের এবং পাড়ার সবাই ভালোবাসে, এমনকি শাশুড়িও। সেই কিরণের যখন কঠিন পীড়া হল তখন সবাই চিন্তিত হয়ে উঠল, এবং ডাক্তার যখন বায়ুপরিবর্তনের প্রস্তাব করল, তখন ঘর এবং কাজকর্ম ছেড়ে প্রবাসে যেতে তার স্বামী এবং শাশুড়ি কোনো আপত্তি করলেন না। যদিও গ্রামের বিচক্ষণ জ্ঞানী ব্যক্তিরা, বায়ুপরিবর্তনে আরোগ্যের আশা করা এবং স্ত্রীর জন্য এতটা হৈচৈ করে তোলা, নব্য স্ত্রৈণতার একটা নির্লজ্জ আতিশয্য বলে স্থির করলেন এবং প্রশ্ন করলেন, এর আগে কি কারো স্ত্রীর কঠিন পীড়া হয়নি, শরৎ যেখানে যাওয়া স্থির করেছেন সেখানে কি মানুষরা অমর, এবং এমন কোনো দেশ আছে কি যেখানে ভাগ্যের লিখন সফল হয় না— তবু শরৎ এবং তার মা সে-সব কথায় কান দিলেন না; তখন গ্রামের সমস্ত সমবেত জ্ঞানের চেয়ে তাদের হৃদয়ের লক্ষ্মী কিরণের প্রাণটুকু তাদের কাছে গুরুতর বোধ হল। প্রিয়জনের বিপদে মানুষের এরকম মোহ ঘটে থাকে।
শরৎ চন্দননগরের বাগানে এসে বাস করছেন, এবং কিরণও রোগমুক্ত হয়েছেন, শুধু শরীর এখনো সম্পূর্ণ সবল হয়নি। তার মুখে চোখে একটি করুণ শীর্ণতা অঙ্কিত হয়ে আছে, যা দেখলে হৃদকম্প সহ মনে উদয় হয়, আহা বড় রক্ষা পেয়েছি!
কিন্তু কিরণের স্বভাবটা সঙ্গপ্রিয়, আমোদপ্রিয়। এখানে একলা আর ভালো লাগছে না; তার ঘরের কাজ নেই, পাড়ার সখী নেই; শুধু সারাদিন নিজের রুগ্ণ শরীরটাকে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে মন চায় না। ঘণ্টায় ঘণ্টায় তাপ মেপে ওষুধ খাও, পথ্য পালন করো, এতে বিরক্তি ধরে গেছে; আজ ঝড়ের সন্ধ্যাবেলায় বদ্ধ ঘরে স্বামী-স্ত্রীতে তা নিয়েই তর্ক বেধে গেল।
কিরণ যতক্ষণ উত্তর দিচ্ছিল ততক্ষণ উভয়পক্ষে সমানভাবে দ্বন্দ্ব চলছিল, কিন্তু অবশেষে কিরণ যখন নীরব হয়ে বিনা প্রতিবাদে শরতের দিক থেকে একটু বিমুখ হয়ে ঘাড় বেঁকিয়ে বসল তখন দুর্বল অসহায় পুরুষটির আর কোনো অস্ত্র রইল না। পরাজয় স্বীকার করতে যাচ্ছে, এমন সময় বাইরে থেকে বেহারা চেঁচিয়ে কিছু জানাল।
শরৎ উঠে দরজা খুলে শুনলেন, নৌকাডুবি হয়ে একটি ব্রাহ্মণবালক সাঁতার দিয়ে তাদের বাগানে এসে উঠেছে।
শুনে কিরণের মান-অভিমান দূর হয়ে গেল, তৎক্ষণাৎ আলনা থেকে শুকনো কাপড় বের করে দিলেন এবং দ্রুত একবাটি দুধ গরম করে ব্রাহ্মণের ছেলেকে ভেতরে ডেকে পাঠালেন।
ছেলেটির লম্বা চুল, বড় বড় চোখ, গোঁফের রেখা এখনো ওঠেনি। কিরণ তাকে নিজে বসিয়ে খাওয়িয়ে তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেন।
শুনলেন, সে যাত্রার দলের ছেলে, তার নাম নীলকান্ত। তারা কাছে সিংহবাবুদের বাড়ি যাত্রা করতে নিমন্ত্রিত হয়েছিল; এর মধ্যে নৌকাডুবি হয়ে তাদের দলের লোকের কী হল কে জানে; সে ভালো সাঁতার জানত, কোনোমতে প্রাণ বাঁচিয়েছে।
ছেলেটি এখানেই থেকে গেল। আর একটু হলে সে মারা পড়ত, এই ভেবে তার প্রতি কিরণের অত্যন্ত দয়ার উদ্রেক হল।
শরৎ মনে করলেন, হল ভালো, কিরণ একটা নতুন কাজ হাতে পেলেন, এখন কিছুদিন এইভাবেই কেটে যাবে। ব্রাহ্মণবালকের কল্যাণে পুণ্য সঞ্চয়ের আশায় শাশুড়িও খুশি হলেন। এবং অধিকারী মহাশয় ও যমরাজের হাত থেকে হঠাৎ এই ধনী পরিবারের হাতে বদলি হয়ে নীলকান্ত বিশেষ আরাম বোধ করল।
কিন্তু অচিরেই শরৎ এবং তার মায়ের মত পরিবর্তন হতে লাগল। তারা ভাবলেন, আর দরকার নেই, এখন এই ছেলেটাকে বিদায় করতে পারলে ঝামেলা চলে যায়।
নীলকান্ত গোপনে শরতের হুঁকোয় ফড়ফড় শব্দে তামাক টানতে শুরু করল। বৃষ্টির দিনে নির্ভয়ে তার শখের সিল্কের ছাতাটা মাথায় দিয়ে নতুন বন্ধু সংগ্রহের চেষ্টায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াতে লাগল। কোথাকার একটা ময়লা গ্রাম্য কুকুরকে আদর দিয়ে এমন স্পর্ধিত করে তুলল যে, সে অনাহূত শরতের সুসজ্জিত ঘরে ঢুকে পরিষ্কার জাজিমের ওপর পায়ের ধুলোর দাগ এঁকে আসতে লাগল। নীলকান্তের চারপাশে দেখতে দেখতে একটি বিশাল ভক্ত শিশুদের দল গঠিত হয়ে উঠল, এবং সে বছর গ্রামের আমবাগানে কাঁচা আম পাকার সুযোগ পেল না।
কিরণ এই ছেলেটাকে খুব বেশি আদর দিতেন, তাতে সন্দেহ নেই। শরৎ এবং শরতের মা সে বিষয়ে তাকে অনেক নিষেধ করতেন, কিন্তু তিনি তা মানতেন না। শরতের পুরনো জামা-মোজা এবং নতুন ধুতি-চাদর-জুতা পরিয়ে তাকে বাবু সাজিয়ে তুললেন। মাঝে মাঝে যখন-তখন তাকে ডেকে নিয়ে তার স্নেহ এবং কৌতুক দুটোই মিটত। কিরণ হাসিমুখে পানের বাটা পাশে রেখে খাটের ওপর বসতেন, দাসী তার ভিজে এলোচুল আঁচড়ে আঁচড়ে শুকিয়ে দিত এবং নীলকান্ত নিচে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে নল-দময়ন্তীর পালা অভিনয় করত— এভাবে দীর্ঘ দুপুর খুব তাড়াতাড়ি কেটে যেত। কিরণ শরৎকে তার সঙ্গে একাসনে দর্শকশ্রেণীতে বসাতে চেষ্টা করতেন, কিন্তু শরৎ অত্যন্ত বিরক্ত হতেন এবং শরতের সামনে নীলকান্তের প্রতিভাও সম্পূর্ণ ফুটে উঠত না। শাশুড়ি মাঝে মাঝে ঠাকুর-দেবতার নাম শোনার আশায় টেনে আসতেন কিন্তু অচিরেই তার চিরাচরিত দুপুরের ঘুম তাকে অভিভূত করে শয্যাশায়ী করে দিত।
শরতের কাছ থেকে কানমলা, চড়-থাপ্পড় নীলকান্তের ভাগ্যে প্রায়ই জুটত; কিন্তু তার চেয়ে কঠিন শাসনে অভ্যস্ত থাকায় সেটা তার কাছে অপমান বা বেদনাদায়ক মনে হত না। নীলকান্তের দৃঢ় ধারণা ছিল যে, পৃথিবীর জল-স্থলের মতো মানবজন্মটা আহার এবং প্রহারে বিভক্ত; প্রহারের অংশটাই বেশি।
নীলকান্তের ঠিক কত বয়স নির্ণয় করে বলা কঠিন; যদি চৌদ্দ-পনেরো হয় তবে বয়সের চেয়ে মুখ অনেক পেকে গেছে বলতে হবে, যদি সতেরো-আঠারো হয় তবে বয়সের অনুরূপ পাকেনি। হয় সে অকালপক্ব, নয়তো অকাল-অপক্ব।
আসল কথা এই, সে অল্প বয়সেই যাত্রার দলে ঢুকে রাধিকা, দময়ন্তী, সীতা এবং বিদ্যার সখী সাজত। অধিকারীর প্রয়োজনে বিধাতার দয়ায় খানিকটা বাড়ার পর তার বৃদ্ধি থেমে গেল। সবাই তাকে ছোটোই দেখত, নিজেকেও সে ছোটোই মনে করত, বয়সের উপযুক্ত সম্মান সে কারো কাছ থেকে পেত না। এই সব স্বাভাবিক এবং অস্বাভাবিক কারণে সতেরো বছর বয়সে তাকে অপরিপক্ব সতেরোর চেয়ে অতিপরিপক্ক চোদ্দের মতো দেখাত। গোঁফের রেখা না ওঠায় এই ভ্রম আরো দৃঢ় হয়েছিল। তামাকের ধোঁয়ার প্রভাবে বা বয়সের অনুপযুক্ত ভাষা ব্যবহারের কারণে নীলকান্তের ঠোঁটের কাছটা কিছু বেশি পাকা মনে হত, কিন্তু তার বড়ো বড়ো চোখের মধ্যে একটা সরলতা এবং কচিত্ব ছিল। মনে হয়, নীলকান্তের ভিতরটা স্বভাবত কাঁচা, কিন্তু যাত্রার দলের সংস্পর্শে উপরিভাগে পাকার লক্ষণ দেখা দিয়েছে।
শরৎবাবুর আশ্রয়ে চন্দননগরের বাগানে বাস করতে করতে নীলকান্তের ওপর প্রকৃতির নিয়ম অবাধে কাজ করতে লাগল। সে এতদিন যে একটা বয়ঃসন্ধিকালে অস্বাভাবিকভাবে দীর্ঘকাল আটকে ছিল এখানে এসে সেটা কখন নিঃশব্দে পার হয়ে গেল। তার সতেরো-আঠারো বছর বয়স সম্পূর্ণভাবে পরিণত হয়ে উঠল।
তার সে পরিবর্তন বাইরে থেকে কারো চোখে পড়ল না কিন্তু তার প্রথম লক্ষণ এই যে, যখন কিরণ নীলকান্তের প্রতি বালকোচিত ব্যবহার করতেন সে মনে মনে লজ্জিত এবং ব্যথিত হত। একদিন আমোদপ্রিয় কিরণ তাকে মেয়েবেশে সখী সাজতে বলেছিলেন, সে-কথাটা হঠাৎ তার খুবই কষ্টদায়ক লাগল অথচ তার উপযুক্ত কারণ খুঁজে পেল না। এখন তাকে যাত্রার অনুকরণ করতে ডাকলেই সে অদৃশ্য হয়ে যেত। সে যে একটা যাত্রার দলের ছেলের চেয়ে বেশি কিছু নয় এ কথা কোনোভাবেই তার মনে ঢুকত না।
এমনকি সে বাড়ির সরকারের কাছে কিছু কিছু করে লেখাপড়া শিখতে মনস্থ করল। কিন্তু বউঠাকরুনের স্নেহভাজন বলে নীলকান্তকে সরকার দুই চোখে দেখতে পারত না, এবং মনের একাগ্রতা রেখে পড়াশোনা কোনোদিন অভ্যাস না থাকায় অক্ষরগুলো তার চোখের সামনে দিয়ে ভেসে যেত। গঙ্গার ধারে চাঁপাতলায় গাছের গুঁড়িতে ঠেস দিয়ে কোলের ওপর বই খুলে সে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকত; জল ছলছল করত, নৌকা ভেসে যেত, ডালের ওপর চঞ্চল পাখি কিচিরমিচির শব্দে নিজের মনে কথা বলত, নীলকান্ত বইয়ের পাতায় চোখ রেখে কী ভাবত সেই জানে অথবা সেও জানে না। একটা কথা থেকে কিছুতেই আরেকটা কথায় যেতে পারত না, অথচ বই পড়ছি ভেবে তার ভারি একটা আত্মগৌরব হত। সামনে দিয়ে যখন একটা নৌকা যেত তখন সে আরো বেশি আড়ম্বরের সঙ্গে বইটা তুলে বিড়বিড় করে পড়ার ভান করত; দর্শক চলে গেলে সে আর পড়ার উৎসাহ রাখতে পারত না।
পূর্বে সে অভ্যস্ত গানগুলো যন্ত্রের মতো নিয়মিত গাইত, এখন সেই গানের সুরগুলো তার মনে এক অদ্ভুত চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। গানের কথা অতি সাধারণ, তুচ্ছ শব্দালংকারে ভরা, তার অর্থও নীলকান্তের কাছে সম্পূর্ণ বোধগম্য নয়, কিন্তু যখন সে গাইত—
“ওরে রাজহংস, জন্মি দ্বিজবংশে
এমন নৃশংস কেন হলি রে—
বল্ কী জন্যে, এ অরণ্যে,
রাজকন্যার প্রাণসংশয় করিলি রে—”
তখন সে যেন হঠাৎ অন্য জগতে চলে যেত, তখন চারপাশের পরিচিত জগৎটা এবং তার তুচ্ছ জীবনটা গানে রূপান্তরিত হয়ে একটা নতুন রূপ ধারণ করত। রাজহংস এবং রাজকন্যার কথা থেকে তার মনে এক অপরূপ ছবির আভাস জেগে উঠত, সে নিজেকে কী মনে করত স্পষ্ট করে বলা যায় না, কিন্তু যাত্রার দলের পিতৃ-মাতৃহীন ছেলে বলে ভুলে যেত। নিতান্ত গরিবের ঘরের হতভাগ্য মলিন শিশু যখন সন্ধ্যাশয্যায় শুয়ে রাজপুত্র রাজকন্যা এবং সাত রাজার ধন মানিকের কথা শোনে, তখন সেই ক্ষীণদীপালোকিত জীর্ণ ঘরের কোণের অন্ধকারে তার মনটা সব দারিদ্র্য ও হীনতার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে এক রূপকথার রাজ্যে একটা নতুন রূপ, উজ্জ্বল বেশ এবং অপ্রতিহত ক্ষমতা ধারণ করে; সেইরকম গানের সুরের মধ্যে এই যাত্রার দলের ছেলেটি নিজেকে এবং নিজের জগৎটিকে একটি নতুন রূপে সৃষ্টি করত— জলের শব্দ, পাতার মর্মর, পাখির ডাক এবং যে লক্ষ্মী এই লক্ষ্মীছাড়াকে আশ্রয় দিয়েছেন তার হাস্যময় স্নেহময় মুখ, তার কল্যাণময় বাহু এবং দুর্লভ সুন্দর পায়ের ছাপ কী এক মায়ামন্ত্রবলে সুরের মধ্যে রূপান্তরিত হয়ে যেত। আবার একসময় এই গীতমরীচিকা কোথায় মিলিয়ে যেত, যাত্রার দলের নীলকান্ত ঝাঁকড়া চুল নিয়ে আত্মপ্রকাশ করত, আমবাগানের মালিক প্রতিবেশীর অভিযোগে শরৎ এসে তার গালে ঠাসঠাস করে চড় কষিয়ে দিতেন, এবং বালক-ভক্তদের নেতা হয়ে নীলকান্ত জলে স্থলে এবং গাছের ডালে নতুন নতুন উপদ্রব সৃষ্টি করতে বেরিয়ে পড়ত।
এর মধ্যে শরতের ভাই সতীশ কলকাতা কলেজের ছুটিতে বাগানে এসে আশ্রয় নিল। কিরণ খুব খুশি হলেন, তার হাতে আরেকটা কাজ জুটল; বসায় খাওয়ায় পরায় সমবয়সী দেবরের প্রতি পরিহাসের জাল বিস্তার করতে লাগলেন। কখনো হাতে সিঁদুর মাখিয়ে তার চোখ টিপে ধরেন, কখনো তার জামার পিঠে বাঁদর এঁকে রাখেন, কখনো ঝনৎ করে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে মিষ্টি হাসিতে পলায়ন করেন। সতীশও ছাড়ার পাত্র নয়; সে তার চাবি চুরি করে, তার পানের মধ্যে লঙ্কা পুরে, অলক্ষ্যে খাটের পায়ার সাথে তার আঁচল বেঁধে প্রতিশোধ নিতে থাকে। এভাবে দুজনে সারাদিন তর্ক-বিতর্ক, হাসি, এমনকি মাঝে মাঝে ঝগড়া, কান্না, সাধাসাধি এবং পুনরায় শান্তিস্থাপন চলতে লাগল।
নীলকান্তকে কী ভূতে পেয়েছে কে জানে। সে কী উপলক্ষ করে কার সাথে বিবাদ করবে ভেবে পায় না, অথচ তার মন তীব্র তিক্ততায় ভরে গেল। সে তার ভক্ত বালকদের অন্যায়ভাবে কাঁদাতে লাগল, তার সেই পোষা দেশি কুকুরটাকে অকারণে লাথি মেরে কেঁই কেঁই শব্দে আকাশ মুখরিত করে তুলল, এমনকি পথে ঘুরতে গিয়ে জোরে লাঠি মেরে আগাছাগুলোর ডাল ভেঙে চলতে লাগল।
যারা ভালো খেতে পারে, তাদের সামনে বসিয়ে খাওয়াতে কিরণ খুব ভালোবাসেন। ভালো খাওয়ার ক্ষমতা নীলকান্তের ছিল, সুস্বাদু খাবার বারবার খাওয়ার অনুরোধ তার কাছে কখনো ব্যর্থ হত না। এইজন্য কিরণ প্রায় তাকে ডেকে নিয়ে নিজে বসিয়ে খাওয়াতেন, এবং এই ব্রাহ্মণবালকের তৃপ্তির সাথে আহার দেখে তিনি বিশেষ সুখ পেতেন। সতীশ আসার পরে ব্যস্ততাবশত নীলকান্তের খাওয়ার সময় প্রায়ই কিরণকে অনুপস্থিত থাকতে হত; আগে এমন ঘটনায় তার খাওয়ায় কোনো ব্যাঘাত হত না, সে শেষে দুধের বাটি ধুয়ে তার জল পর্যন্ত খেয়ে তবে উঠত— কিন্তু এখন কিরণ নিজে ডেকে না খাওয়ালে তার বুক ব্যথায় ভরে উঠত, তার মুখ বিস্বাদ হয়ে যেত, না খেয়ে উঠে পড়ত; গলায় আটকে আসা কণ্ঠে দাসীকে বলত, আমার ক্ষুধা নেই। মনে করত, কিরণ খবর পেয়ে এখনই অনুতপ্ত হয়ে তাকে ডেকে পাঠাবেন, এবং খাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করবেন, সে তবুও সে অনুরোধ রাখবে না, বলবে, আমার ক্ষুধা নেই। কিন্তু কিরণকে কেউ খবরও দেয় না, কিরণ তাকে ডাকেও পাঠান না; খাবার যা থাকে দাসী খেয়ে ফেলে। তখন সে নিজের শোবার ঘরের প্রদীপ নিভিয়ে দিয়ে অন্ধকার বিছানার ওপর পড়ে ফুলে ফুলে ফেঁপে ফেঁপে মুখের ওপর জোরে বালিশ চেপে ধরে কাঁদতে থাকে; কিন্তু কী তার অভিযোগ, কার বিরুদ্ধে তার দাবি, কে তাকে সান্ত্বনা দিতে আসবে! যখন কেউই আসে না, তখন স্নেহময়ী বিশ্বমাতা নিদ্রা এসে ধীরে ধীরে কোমল হাতের স্পর্শে এই মাতৃহীন ব্যথিত বালকের অভিমান শান্ত করে দেন।
নীলকান্তের দৃঢ় ধারণা হল, সতীশ কিরণের কাছে তার নামে সর্বদাই লাগায়; যেদিন কিরণ কোনো কারণে গম্ভীর হয়ে থাকতেন সেদিন নীলকান্ত মনে করত, সতীশের চক্রান্তে কিরণ তারই ওপর রাগ করে আছেন।
এখন থেকে নীলকান্ত একাগ্রভাবে তীব্র ইচ্ছার সাথে সর্বদাই দেবতার কাছে প্রার্থনা করে, ‘আর-জন্মে আমি যেন সতীশ হই এবং সতীশ যেন আমি হই।’ সে জানত, ব্রাহ্মণের একান্ত মনের অভিশাপ কখনো ব্যর্থ হয় না, এইজন্য সে মনে মনে সতীশকে ব্রহ্মতেজে দগ্ধ করতে গিয়ে নিজে দগ্ধ হতে থাকত, এবং ওপরের তলা থেকে সতীশ ও তার বউঠাকরুনের উচ্ছ্বসিত হাসিমিশ্রিত পরিহাসের শব্দ শুনতে পেত।
নীলকান্ত স্পষ্টভাবে সতীশের কোনো শত্রুতা করতে সাহস পেত না, কিন্তু সুযোগ পেলে তার ছোটখাটো অসুবিধা ঘটিয়ে তৃপ্তি পেত। ঘাটের সিঁড়িতে সাবান রেখে সতীশ যখন গঙ্গায় নামতে শুরু করত তখন নীলকান্ত ফস করে এসে সাবান চুরি করে নিত; সতীশ যথাসময়ে সাবানের খোঁজে এসে দেখত, সাবান নেই। একদিন নাহতে নাহতে হঠাৎ দেখল তার বিশেষ প্রিয় চিকন-কাজ-করা জামাটি গঙ্গার জলে ভাসছে; ভাবল, হাওয়ায় উড়ে গেছে, কিন্তু হাওয়াটা কোন্ দিক থেকে বইল তা কেউ জানে না।
একদিন সতীশকে আনন্দ দেবার জন্য কিরণ নীলকান্তকে ডেকে তাকে যাত্রার গান গাইতে বললেন; নীলকান্ত নীরব হয়ে রইল; কিরণ আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোর আবার কী হল রে।” নীলকান্ত তার জবাব দিল না। কিরণ আবার বললেন, “সেই গানটা গা-না।” “সে আমি ভুলে গেছি” বলে নীলকান্ত চলে গেল।
অবশেষে কিরণের দেশে ফেরার সময় হল। সবাই প্রস্তুত হতে লাগল; সতীশও সঙ্গে যাবে। কিন্তু নীলকান্তকে কেউ কোনো কথাই বলে না। সে সঙ্গে যাবে কি থাকবে, সে প্রশ্ন কারো মনে উদয় হয় না।
কিরণ নীলকান্তকে সঙ্গে নেবার প্রস্তাব করলেন। তাতে শাশুড়ি স্বামী এবং দেবর সবাই একসাথে আপত্তি করে উঠলেন, কিরণও তার সিদ্ধান্ত ত্যাগ করলেন। শেষে যাত্রার দুই দিন আগে ব্রাহ্মণবালককে ডেকে কিরণ তাকে স্নেহের সাথে নিজের দেশে যেতে উপদেশ দিলেন।
সে টানা কয়েকদিন অবহেলার পর মিষ্টি কথা শুনে আর থাকতে পারল না, একেবারে কেঁদে উঠল। কিরণেরও চোখ ছলছল করে উঠল; যাকে চিরকাল কাছে রাখা যাবে না তাকে কিছুদিন আদর করে তার মায়া বসিয়ে দেওয়া ভালো হয়নি বলে কিরণের মনে বড় অনুতাপ জাগল।
সতীশ কাছে উপস্থিত ছিল; সে অতবড়ো ছেলের কান্না দেখে ভারি বিরক্ত হয়ে বলে উঠল, “আরে বোকা, কথা নেই বার্তা নেই, একেবারে কাঁদেই অস্থির!”
কিরণ এই কঠোর কথার জন্য সতীশকে ভর্ৎসনা করলেন। সতীশ বলল, “তুমি বুঝ না বউদি, তুমি সবাইকে খুব বেশি বিশ্বাস করো; কোথাকার কে তার ঠিক নেই, এখানে এসে দিব্য রাজার হালে আছে। আবার পুনর্মূষিক হওয়ার আশঙ্কায় আজ মায়াকান্না জুড়েছে— ও ভালোই জানে যে, দুফোঁটা চোখের জল ফেললেই তুমি গলে যাবে।”
নীলকান্ত তাড়াতাড়ি চলে গেল; কিন্তু তার মন সতীশের কাল্পনিক মূর্তিকে ছুরি দিয়ে কাটতে লাগল, সূচ দিয়ে বিঁধতে লাগল, আগুন দিয়ে জ্বালাতে লাগল, কিন্তু প্রকৃত সতীশের গায়ে একটি চিহ্নও বসল না, কেবল তারই হৃদয় থেকে রক্তক্ষরণ হতে লাগল।
কলকাতা থেকে সতীশ একটি শৌখিন দোয়াতদান কিনে এনেছিল, তাতে দুই পাশে দুই ঝিনুকের নৌকার ওপর দোয়াত বসানো এবং মাঝে একটা জার্মান রূপার হাঁস খোলা ঠোঁটে কলম নিয়ে ডানা মেলে বসে আছে, সেটির প্রতি সতীশের অত্যন্ত যত্ন ছিল; প্রায় সে মাঝে মাঝে সিল্কের রুমাল দিয়ে খুব সাবধানে সেটি ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার করত। কিরণ প্রায়ই হাসি করে সেই রূপার হাঁসের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ঠুকতেন এবং বলতেন, “ওরে রাজহংস, জন্মি দ্বিজবংশে এমন নৃশংস কেন হলি রে” এবং এটাই উপলক্ষ করে দেবরের সাথে তার হাস্যকৌতুকে বাক্যবিতণ্ডা চলত।
স্বদেশযাত্রার আগের দিন সকালবেলায় সেই জিনিসটা খুঁজে পাওয়া গেল না। কিরণ হেসে বললেন, “ঠাকুরপো, তোমার রাজহংস তোমার দময়ন্তীর খোঁজে উড়েছে।”
কিন্তু সতীশ রাগে জ্বলে উঠল। নীলকান্তই যে সেটা চুরি করেছে এ-বিষয়ে তার সন্দেহ রইল না— গতকাল সন্ধ্যায় তাকে সতীশের ঘরের কাছে ঘুরঘুর করতে দেখেছে, এমন সাক্ষীও পাওয়া গেল।
সতীশের সামনে অপরাধী আনা হল। সেখানে কিরণও উপস্থিত ছিলেন। সতীশ একেবারেই তাকে বলে উঠল, “তুই আমার দোয়াত চুরি করে কোথায় রেখেছিস, এনে দে।”
নীলকান্ত নানা অপরাধে এবং বিনা অপরাধেও শরতের কাছে অনেক মার খেয়েছে এবং সবসময় হাসিমুখে তা সহ্য করেছে। কিন্তু কিরণের সামনে যখন তার নামে দোয়াত চুরির অপবাদ এল, তখন তার বড় বড় দুই চোখ আগুনের মতো জ্বলতে লাগল; তার বুকের কাছটা ফুলে গলার কাছে ঠেলে উঠল; সতীশ আরেকটা কথা বললেই সে তার দুই হাতের দশ নখ নিয়ে রেগে বেড়ালছানার মতো সতীশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত।
তখন কিরণ তাকে পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে মৃদু মিষ্টিস্বরে বললেন, “নীলু, যদি সেই দোয়াতটা নিয়ে থাকিস আমাকে চুপিচুপি দিয়ে যা, তোকে কেউ কিছু বলবে না।”
তখন নীলকান্তের চোখ ফেটে টসটস করে জল পড়তে লাগল, শেষে সে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগল।
কিরণ বাইরে এসে বললেন, “নীলকান্ত কখনোই চুরি করে নি।”
শরৎ এবং সতীশ দুজনেই বলতে লাগলেন, “নিশ্চয়, নীলকান্ত ছাড়া আর কেউই চুরি করে নি।”
কিরণ দৃঢ়ভাবে বললেন, “কখনোই না।”
শরৎ নীলকান্তকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ইচ্ছা করলেন, কিরণ বললেন, “না, ওকে এই চুরি সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না।”
সতীশ বলল, “ওর ঘর এবং বাক্স তল্লাশি করা উচিত।”
কিরণ বললেন, “তা যদি করো, তাহলে তোমার সঙ্গে আমার জন্মশোধ শত্রুতা হবে। নির্দোষীর প্রতি কোনো সন্দেহ প্রকাশ করতে পারবে না।”
বলতে বলতে তার চোখের পাতা দুটি জলে ভিজে উঠল। তারপর সেই দুটি করুণ চোখের অশ্রুজলের দোহাই দিয়ে নীলকান্তের প্রতি আর কোনো হস্তক্ষেপ করা হল না।
নিরীহ আশ্রিত বালকের প্রতি এইরূপ অত্যাচারে কিরণের মনে অত্যন্ত দয়ার সঞ্চার হল। তিনি ভালো দুজোড়া ফরাশডাঙার ধুতি-চাদর, দুটি জামা, একজোড়া নতুন জুতা এবং একটি দশ টাকার নোট নিয়ে সন্ধ্যাবেলায় নীলকান্তের ঘরে ঢুকলেন। তার ইচ্ছা ছিল, নীলকান্তকে না বলে সেই স্নেহের উপহারগুলো আস্তে আস্তে তার বাক্সের মধ্যে রেখে আসবেন। টিনের বাক্সটিও তার দেওয়া।
আঁচল থেকে চাবির গোছা নিয়ে নিঃশব্দে সেই বাক্স খুললেন। কিন্তু তার উপহারগুলো রাখতে পারলেন না। বাক্সের মধ্যে লাটাই, কঞ্চি, কাঁচা আম কাটার জন্য ঘষা ঝিনুক, ভাঙা গ্লাসের তলা প্রভৃতি নানা জিনিস স্তূপাকারে রাখা।
কিরণ ভাবলেন, বাক্সটি ভালো করে গুছিয়ে তার মধ্যে সব জিনিস রাখতে পারবেন। সেই উদ্দেশ্যে বাক্সটি খালি করতে লাগলেন। প্রথমে লাটাই, লাঠি, ছুরি, ছড়ি প্রভৃতি বের হতে লাগল; তার পর কয়েকটা ময়লা এবং কাঁচা কাপড় বের হল, তার পর সবের নিচে হঠাৎ সতীশের সেই বহুযত্নের রাজহংসশোভিত দোয়াতদানটি বেরিয়ে এল।
কিরণ আশ্চর্য হয়ে লাল মুখে অনেকক্ষণ সেটি হাতে করে নিয়ে ভাবতে লাগলেন।
এর মধ্যে কখন নীলকান্ত পিছন থেকে ঘরে ঢুকল তিনি তা জানতেও পারলেন না। নীলকান্ত সবই দেখল, মনে করল, কিরণ নিজে চোরের মতো তার চুরি ধরতে এসেছেন এবং তার চুরিও ধরা পড়েছে। সে যে সাধারণ চোরের মতো লোভে পড়ে চুরি করে নি, সে যে শুধু প্রতিশোধ নেবার জন্য এ কাজ করেছে, সে যে ঐ জিনিসটা গঙ্গার জলে ফেলে দেবে বলেই ঠিক করেছিল, শুধু এক মুহূর্তের দুর্বলতাবশত ফেলে না দিয়ে নিজের বাক্সের মধ্যে রেখেছে, সে-সব কথা সে কী করে বুঝাবে। সে চোর নয়, সে চোর নয়! তবে সে কী। কী করে বলবে সে কী। সে চুরি করেছে কিন্তু সে চোর নয়। কিরণ যে তাকে চোর বলে সন্দেহ করেছেন, এ নিষ্ঠুর অন্যায় সে কোনোভাবেই বুঝাতে পারবে না, সহ্য করতেও পারবে না।
কিরণ একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে সেই দোয়াতদানটা বাক্সের ভিতরে রাখলেন। চোরের মতো তার ওপর ময়লা কাপড় চাপা দিলেন, তার উপরে বালকের লাটাই, লাঠি, ঝিনুক, কাঁচের টুকরা প্রভৃতি সবই রাখলেন এবং সবচেয়ে ওপর তার উপহারগুলো ও দশ টাকার নোটটি সাজিয়ে রাখলেন।
কিন্তু পরের দিন সেই ব্রাহ্মণবালকের কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না। গ্রামের লোকেরা বলল, তাকে দেখেনি; পুলিশ বলল, তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তখন শরৎ বললেন, “এইবার নীলকান্তের বাক্সটা পরীক্ষা করে দেখা যাক।”
কিরণ জেদ করে বললেন, “সে কিছুতেই হবে না।”
বলে বাক্সটি নিজের ঘরে এনে দোয়াতটি বের করে গোপনে গঙ্গার জলে ফেলে আসলেন।
শরৎ সপরিবারে দেশে চলে গেলেন; বাগান একদিনে শূন্য হয়ে গেল। শুধু নীলকান্তের সেই পোষা গ্রাম্য কুকুরটা খাবার ত্যাগ করে নদীর ধারে ধারে ঘুরে ঘুরে খুঁজে খুঁজে কাঁদতে কাঁদতে বেড়াতে লাগিল।