Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025

    আমাদের সাদা বাড়ি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025

    আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আমাদের সাদা বাড়ি – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প58 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৫. মেজোভাইয়ের বান্ধবী

    মেজোভাইয়ের এই বান্ধবীর সঙ্গে আমার আগে কখনো কথা হয় নি। আজ কথা হল। সন্ধ্যার আগে আগে তিনি বাসায় এলেন। আমি দোতলা থেকে দেখলাম। বেচারিকে খুব কুক্কান্ত মনে হচ্ছিল। মনে হয় অনেক দূর থেকে হেঁটে হেঁটে এসেছে। দুপুরে খাওয়া হয় নি।

    জিতু মিয়া আমাকে এসে বলল, আপনেরে ডাকে।

    আমাকে ডাকবে কেন? আমাকে ডাকে না। ভাইয়াকে ডাকে। তুই গিয়ে বল উনি নেই।

    বলছি, আফা আপনের সাথে কথা বলতে চায়।

    মেয়েটি জড়োসড়ো হয়ে বসার ঘরে বসেছিল। আমাকে দেখে আরো যেন জড়োসড়ো হয় গেল। তার পরনে হালকা সবুজ রঙের শাড়ি। সবুজ শাড়িতে মেয়েদের খুব মানায় অথচ এই রঙটা কেন জানি মেয়েরা পছন্দ করে না।

    আপনি কি আমাকে ডেকেছেন?

    জ্বি।

    কী ব্যাপার বলুন তো?

    আমার সঙ্গে একটু বাইরে আসুন। প্লিজ।

    আমি বিস্মিত হয়ে তার সঙ্গে এগিয়ে গেলাম। আমাকে সে একেবারে রাস্তায় নিয়ে এসে নিচু স্বরে বলল, আমি যে এসেছি। এটা যেন ও না জানে।

    কেউ জানবে না। অবশ্যি এখন যদি ভাইয়া চলে আসেন তাহলে ভিন্ন কথা। সম্ভবত আসবেন না। কয়েকদিন ধরেই রাত আটটা সাড়ে আটটার দিকে আসেছেন। ব্যাপারটা কী বলুন তো?

    পরীক্ষা দিচ্ছে না কেন জানেন?

    আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, পরীক্ষা দিচ্ছে না! কী বলছেন এসব?

    না, দিচ্ছে না। শুধু প্ৰথম পরীক্ষাটায় বসেছিল। তারপর আর বসে নি।

    সে কী!

    আমার বড়ভাই ওর সঙ্গে পড়ে। তার কাছ থেকে শুনেছি। আমি ওকে জিজ্ঞেস করায় খুব রাগারগি করল। আমার সঙ্গে সে কখনো রাগারগি করে না। আমার এত মনটা খারাপ হয়েছে!

    মেয়েটির চোখে সম্ভবত পানি এসে গেছে। সে আমার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। বেচারি চোখের পানি লুকানোর চেষ্টা করছে। আমি বললাম, ভাইয়া পরীক্ষা দিচ্ছে না, আমরা এটা জানতাম না। আমরা জানতাম, সে ঠিকমতোই পরীক্ষা দিচ্ছে। আপনি কি আরো কিছু বলবেন?

    আরেকটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম থাক, সেটা বলব না।

    চলুন আপনাকে রিকশায় তুলে দিয়ে আসি।

    না-না, লাগবে না। আমি যে এসেছিলাম। এটা দয়া করে বলবেন না।

    না। আমি বলব না।

    আচ্ছা, ওর কি কোনো সমস্যা হয়েছে?

    কোনো সমস্যা হয় নি। যদি হয়েও থাকে কেটে যাবে। আপনি চিন্তা করবেন না।

    এগার তারিখ আমার জন্মদিন ছিল। ও আসে নি। ওর সঙ্গে তিন বছর ধরে আমার পরিচয়। প্ৰত্যেক জন্মদিনে সে আসে। এবার আসে নি।

    এর পরের জন্মদিনে নিশ্চয়ই থাকবেন।

    মেয়েটাকে আমি রিকশায় তুলে দিলাম। তার জন্যে আমার খারাপ লাগতে লাগল। পরীক্ষা না দেয়ার অপরাধ ক্ষমা করা যায়। কিন্তু এমন চমৎকার একটি মেয়ের জন্মদিনে উপস্থিত না হওয়ার অপরাধ কিছুতেই ক্ষমা করা যায় না।

    বেচারির নিশ্চয়ই সাদামাটা ধরনের জন্মদিনের উৎসব হয়েছে। নিমন্ত্রিত অতিথিও হয়তোবা একজনই। এই মেয়ে নিজের হাতে পায়েস রান্না করেছে। অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর তার চোখ পানি এসেছে। জন্মদিনে কাউকে কাদানোর অপরাধে কোর্টে নালিশ হয় না। কিন্তু হওয়া বোধ হয় উচিত।

    মেজোভাইকে পরীক্ষার কথা জিজ্ঞেস করতেই তার চোখ-মুখ কঠিন করে বললেন, তোকে খবর দিল কে?

    আমার এক বন্ধুর ছোট ভাই। কথাটা কি সত্যি?

    হ্যাঁ।

    পরীক্ষা দিলে না কেন?

    কী মুশকিল, তোর কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি?

    কৈফিয়ত চাচ্ছি না তো। জানতে চাচ্ছি।

    প্রিপারেশন ভালো ছিল না, কাজেই ড্রপ করে দিলাম। এটা এমন কোনো বড় ব্যাপার না। সামনের বছর দেব।

    পরীক্ষা ড্রপ করেছ এটাইবা বাসায় বললে না কেন? বলার দরকার না? মা তোমার পরীক্ষার জন্য রোজা রাখছেন।

    রোজা রাখছেন নাকি?

    হ্যাঁ। এটা তো নতুন কিছু না। সবার পরীক্ষার সময়েই মা রোজা রাখেন। আগে রুটিন জেনে নিয়ে সেই রুটিন মতো…।

    রোজা রেখে মা খুবই ক্লান্ত হয়েছিলেন। ইফতারি পর ঘর অন্ধকার করে শুয়েছিলেন। এই অবস্থাতেই মেজোভাই তার পরীক্ষা ড্রপ করার কথা বললেন। মা শান্ত ভঙ্গিতে শুনলেন, তারপর ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, আচ্ছা যা।

    তিনি পরের দিনও রোজা রাখলেন। আগেই মানত করা। কাজেই সবগুলোই নাকি রাখতে হবে।

    বাবা পরীক্ষা ড্রপ করার প্রসঙ্গে কিছুই বললেন না। এটাও বেশ আশ্চার্যের ব্যাপার। আগে সবরকম পরীক্ষার ব্যাপারে তাঁর আগ্রহের সীমা ছিল না। প্রশ্ন নিয়ে তাঁর সঙ্গে রাতে বসতে হত। কোনটা কী আনসার দেয়া হয়েছে তা বলতে হত।

    মেজোভাই সেকেন্ড ইয়ার থেকে থার্ড ইয়ারে উঠার পরীক্ষা দিচ্ছে। বাবা প্রশ্ন পড়ার জন্য বসে আছেন। মেজোভাই বিরক্ত হয়ে বললেন, এসব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রশ্নের তুমি কী বুঝবে?

    তুই বুঝিয়ে দে। বুঝিয়ে দিলে বুঝব।

    বুঝিয়ে দিলেও বুঝবে না। তোমার বোঝার কথা না।

    তবু কোশ্চেনাটা দে। কোশ্চেন দেখতে তো অসুবিধা নেই।

    মোজোভাই মহাবিরক্ত হয়ে কোশ্চেন এগিয়ে দিলেন। বাবা গভীর মনোযোগে কোশ্চেন দেখতে দেখতে বললেন, প্রথম প্রশ্নটার আনসার করেছিস?

    হ্যাঁ।

    দু নম্বর প্রশ্নটা তো অংক। অংক না?

    হ্যাঁ।

    হয়েছে অংকটা?

    করে দিয়ে এসেছি। হয়েছে কিনা জানি না।

    কারো সঙ্গে উত্তর মিলিয়ে দেখিস নি–মানে ভালো ছেলেদের সঙ্গে?

    আমি নিজেই তো একজন ভালো ছেলে। আমি আর কার সাথে মিলাব?

    সেই ভালো ছেলে পরীক্ষা দিচ্ছে না। আর বাবা এই প্রসঙ্গে কোনো কথা বলছেন না— এটা ভাবাই যায় না। আসলে বাবার শরীর খুব খারাপ করেছে। তার এখন কোনো বোধশক্তি বা চিন্তাশক্তি আছে বলেই মনে হচ্ছে না। রাতে একেবারেই ঘুমোতে পারেন না। কড়া ঘুমের ওষুধ খাবার পরও তিনি জেগে। থাকেন। বসে থাকেন বারান্দায় জলচৌকিতে। বিড়বিড় করে কার সঙ্গে যেন কথা বলেন।

    বুনোভাই বাবাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন। আমিও সঙ্গে গেলাম। এই ডাক্তারের ঠিকানা দিয়েছেন আমাদের পাড়ার ডাক্তার। ইনি একজন সাইকিয়াট্রিষ্ট। ভদ্রলোকের ব্যবহার ভালো, কথাবার্তা ভালো। প্রশ্ন করেন আগ্ৰহ নিয়ে। ডাক্তার রোগীকে প্রশ্ন করছে। এ রকম মনে হয় না। মনে হয় পরিচিত একজন মানুষ অন্যজনের খোঁজ নিচ্ছেন।

    আপনার সমস্যাটা কী বলুন তো?

    মনে একটা অশান্তি। বাড়িটা ঠিকমতো বানাতে পারি নি। রেলিং দেয়া হয় নি। ছাদে দুটো ঘর করার কথা ছিল–ড্রাইভার এবং মালীর ঘর।

    টাকা কম পড়ে গেল?

    না, কম পড়ে নি। মইনুদ্দিন টাকা পাঠিয়েছিল। যা দরকার তার চেয়েও অনেক বেশি খরচ করে ফেললাম।

    ও আচ্ছা।

    ও এখন মাঝে মাঝে আসে। কিছু অবশ্যি বলে না। বন্ধু মানুষ, কী আর বলবে!

    বুনোভাই বললেন, ডাক্তার সাহেব, আমি আপনাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলি।

    আপনাকে কিছু বুঝিয়ে বলতে হবে না। আমি প্রশ্ন করে জেনে নিচ্ছি। আপনারা দুইভাই বরং বাইরে গিয়ে বসুন।

    ঘণ্টাখানিক পর ডাক্তার আমাদের ডাকলেন। বুনোভাইকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বললেন, আপনার বাবার মাথায় ইলেকট্রিক শক দেয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। তার যা শরীর এবং বয়স আমি ঠিক ভরসা পাচ্ছি না। হিপনটিক ড্রাগ কিছু দিয়েছি। ঐগুলো চলুক এবং আপনারা এক কাজ করুন, ঐ বাড়ি থেকে আপনার বাবাকে সরিয়ে নিন। গ্রাম-ট্রামের দিকে নিয়ে যান। আরেকটা কথা— আপনারা আপনার বাবাকে ডাক্তার দেখাতে এত দেরি করেছেন কেন? আপনাদের উচিত ছিল আরো আগেই তাকে নিয়ে আসা।

    ফেরার পথে বাবা খুব স্বাভাবিক আচরণ করলেন। মেজোভাই পরীক্ষা ড্রপ করে কাজটা খুব খারাপ করেছে এই কথাও বললেন। তার মানে আশপাশে কী ঘটছে তা যে একবারেই জানেন না–তা না, জানেন। এক সময় বললেন, তোর মা এখন আর আগের মতো চোঁচামেচি করে না। বেচারির শরীর দুর্বল হয়েছে। তার দিকে লক্ষ রাখা দরকার। আমাকে ডাক্তার দেখানোর আগে তোদের উচিত ছিল তাকে ডাক্তার দেখানো।

    তাঁকেও দেখাব।

    সে স্বাস্থ্যবিধি একেবারেই মানে না। স্বাস্থাবিধি মানলে এরকম হয় না।

    তা ঠিক।

    তা ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই চিরতার পানি আর ইসবগুলের ভূষি এই দুটা জিনিস কম্পলসারি করে দেয়া উচিত। সপ্তাহে একদিন অৰ্জ্জুন গাছের ছাল।

    জি। ঠিকই বলেছেন।

    সব সময় মনটাও প্রফুল্ল রাখা দরকার। যাবতীয় অসুখের মূলে আছে মনের অবস্থা। অসুখটা প্রথমে তৈরি হয় মনে, তারপর সারা সারা শরীরে ছড়িয়ে যায়।

    ঠিক বলেছেন।

    আগেরকার সাধু-সন্ন্যাসীরা যে দীর্ঘ জীবন লাভ করেতেন তার কারণ হল তাদের মনে কোনো ঝামেলা ছিল না। মন ছিল নির্মল। বুঝতে পারছিস? নির্মল। আচ্ছা, আমরা যাচ্ছি। কোথায়?

    বাসায়।

    মইনুদিনের সঙ্গে দেখা হয়ে না গেলে হয়। হয়তো গিয়ে দেখব বসার ঘরে।

    বুনোভাই বললেন, তুমি এই একটা ভুল সবসময় করছ। তুমি ভুলে যাচ্ছ উনি জীবিত নেই।

    ভুলে যাব কেন? আমার খুব ভালো মনে আছে। লিভার ক্যান্সারে মারা গেল। স্বাস্থ্যবিধি না মানার কুফল। বিড়ি খেত বুঝলি? বিড়ির গন্ধে তার কাছে যাওয়া যেত না। কতবার বলেছি বিড়িটা ছাড়।

    টাকা-পয়সা যখন হয়েছে তখনো বিড়ি খেতেন?

    না, তখন কি আর বিড়ি খাওয়া যায়? এয়ারকন্ডিশান্ড গাড়িতে চড়ে কেউ কি বিড়ি খেতে পারে?

    বাসায় পৌঁছে বাবা যে কাজটি করলেন তা দেখে আমরা পুরোপুরি নিঃসন্দেহ হলাম যে, তাঁর জগৎ-সংসার সত্যি সত্যি উল্টে গেছে। আমরা ঘরে ঢুকছি। বড় আপা দরজা খুলে দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। বাবা বড় আপার দিকে তাকিয়ে বললেন, স্লামলিকুম। কেমন আছেন?

    বড় আপা সব জিনিস অনেক দেরিতে বোঝেন। বাবা যে তাকে চিনতে পারছেন না তাও তিনি বুঝলেন না। তিনি আদুরে গলায় বললেন, এত দেরি হল কেন?

    বাবা তখন অত্যন্ত বিস্ময়ের সঙ্গে বললেন, কিছু মনে করবেন না, আমি তো ঠিক. মানে চিনি ঠিকই, নামটা মনে আসছে না। আপিন কি পাশের বাসা থেকে এসেছেন?

    বড় আপা চেঁচিয়ে কেঁদে-টেদে একটা হইচই বাঁধিয়ে দিলেন। মা হইচই শুনে নিচে নেমে এসে ধমক দিলেন, এসব কী থাম তো। থাম।

    বড় আপা ফোঁপাতে ফোপাতে বললেন, বাড়িটা অপয়া। এই বাড়ি আমাদের দিয়ে দেবার পর থেকে এতসব যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। এই বাড়ি তোমরা তানিয়াকে বা অন্য কাউকে দিয়ে দাও।

    মেজোভাই বিরক্ত স্বরে বললেন, কীসের সঙ্গে কী? আপা, তুমি কি দয়া করে চুপ করবে? শুধু শুধু হইচই, চিৎকার।

    মোটেও শুধু শুধু না। এই বাড়িতে কিছুতেই থাকা যাবে না।

    আহ, কী যন্ত্রণা! বাড়ি কী দোষ করলো তা তো বুঝলাম না। মানুষের অসুখ-বিসুখ হয় না?

    গাধা, তুই চুপ কর।

    বাবার ঘোর-ভাবটা সম্ভবত কেটে গেছে। তিনি বিরক্ত গলায় বললেন, ঝগড়া হচ্ছে কী নিয়ে? বড় আপার দিকে তাকিয়ে বললেন, কাঁদছিস কেন তুই? এ কী বিশ্ৰী স্বভাব! কথায় কথায় চোখে পানি। তুই হচ্ছিস সবার বড়। তুই সবাইকে সামলো-সুমলে রাখবি। তা না, কেঁদে অস্থির।

    তোমার শরীর কি এখন ঠিক হয়েছে, বাবা?

    হ্যাঁ, ঠিক আছে।

    বাবা সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠতে শুরু করেছেন। বাবার সঙ্গে সঙ্গে উঠছেন বড় আপা। বাবা বড় আপার হাত ধরে আছেন। যে মেয়েকে একটু আগেই তিনি চিনতে পারছিলেন না। সেই মেয়ের হাত ধরে পরম নির্ভরতার সঙ্গে তিনি এগুচ্ছেন। বড় আপা বললেন, বাবা, তোমাকে একটা কথা বলি। মন দিয়ে শোন। আমার তেমন বুদ্ধি নেই। আমি বোকা ধরনের মেয়ে। কিন্তু বাবা, আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি— বাড়িটা অপয়া। নীতুরও তাই ধারণা। বাবা, তুমি বাড়িটা কাউকে দিয়ে দাও।

    বাবা কী যেন বললে, নিচ থেকে কিছু বোঝা গেল না। আমি তোকালাম মেজোভাইয়ের দিকে। তাঁর মুখ রাগে গানগন করছে। অনেক কষ্টে তিনি রাগ সামলাচ্ছেন। পুরোপুরি সামলাতেও পারছেন না। থু করে ঘরের ভেতরেই একদলা থুথু ফেললেন। সেই থুথু আমার পায়ের কাছে এসে পড়ল। আমি তার দিকে তাকিয়ে হাসলাম। মানুষের হাসিরও অনেক রকম অর্থ হয়। এই হাসির অর্থ হচ্ছে–ভাইয়া নিজেকে সামলাও।

    মার মুখ করুণ। মনে হচ্ছে তিনি কেঁদে ফেলবেন। মার শরীর যে এত খারাপ হয়েছে তা এই প্রথম আমি লক্ষ করলাম। পরিবারের কারোর স্বাস্থ্য ভাঙতে শুরু করলে চট করে তা কারো চোখে পড়ে না। হঠাৎ একদিন পড়ে, তখন চমকে উঠতে হয়।

    মা আমার দিকে তাকিয়ে প্রায় নিজের মনে বললেন, এসব কী হচ্ছে রে, রঞ্জু? এসব কী হচ্ছে?

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    আশাবরী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    Our Picks

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025

    আমাদের সাদা বাড়ি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025

    আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }