Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আমার ডেঞ্জারাস মামী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প163 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৩. নীরা মামী

    ৩. নীরা মামী

    বাসায় এসে দেখি সোফায় একজন শাড়ী পরা মেয়ে ঘুমিয়ে আছে। পা দুটো তুলে দিয়েছে সোফার হাতলে। আঁচল দিয়ে মুখ ঢাকা তাই চেহারা দেখা যাচ্ছে না। সোফার পাশে জুতোগুলো খুলে রাখা আছে, সাধারণ জুতো না মিলিটারিদের বুটের মতন জুতো। একপাশে একটা বিশাল ব্যাকপেক, সেখান থেকে নানারকম জিনিসপত্র বের হয়ে আছে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

    মুখ দেখা না গেলেও আমার বুঝতে একমুহর্ত দেরি হলো না যে মেয়েটা নীরা মামী। আমার মনে হয় সারা পৃথিবীতে নীরা মামী হচ্ছে একমাত্র মহিলা যে শাড়ীর সাথে বুট জুতো পরে। তাছাড়া এরকম ভয়াবহ ব্যাকপেক নীরা মামী ছাড়া আর কেউ ঘাড়ে নিয়ে টানাটানি করবে না।

    আমি আনন্দে চিৎকার করে বললাম, “নীরা মামী।”

    সোফায় শুয়ে থাকা মেয়েটা একটু নড়ে বলল, “খবরদার চাঁচাবি না। ঘুমাতে দে।”

    নীরা মামীর গলার স্বর! কাজেই আমি আবার চিৎকার করলাম, “নীরা মামী! নীরা মামী!”

    মামী মুখ থেকে আঁচল সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে একটা ধমক দিলেন, “বললাম চ্যাঁচাবি না। তারপরেও চ্যাঁচাচ্ছিস। কাছে আয়।”

    আমি ছুটে নীরা মামীর কাছে গেলাম। মামী আমার চুলগুলো একটু এলোমেলো করে দিলেন, কানটা একটু টেনে আদর করে আবার শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে ঘুমিয়ে গেলেন। কে জানে কয়েক রাত হয়ত ঘুমান নাই। নীরা মামীর জন্য এটা মোটেও অস্বাভাবিক কিছু না।

    নীরা মামীর কথা বলে শেষ করা যাবে না। প্রথম কথা হচ্ছে নীরা মামীকে আসলে মামী বলা যাবে কিনা আমি সেটাও জানি না। আমার যে মামাকে বিয়ে করে মামী হয়েছিলেন সেই মামার সাথে নীরা মামীর ডিভোের্স হয়ে গেছে। আমি বড়ো মানুষদের গুজগুজ ফুসফুস শুনে বুঝেছি বাইরের পরিবারের কারো সাথে নিজের পরিবারের কারো ডিভোর্স হয়ে গেলে তখন তার সাথে আর সম্পর্ক থাকে না। কিন্তু নীরা মামীর সাথে আমাদের পুরোপুরি সম্পর্ক আছে। নীরা মামী কখন কোথায় থাকেন আমরা জানি না কিন্তু যখন ঢাকা আসেন সবসময় আমাদের বাসায় ওঠেন। দুই চারদিন থেকে আবার উধাও হয়ে যান। যে কয়দিন আমাদের বাসায় থাকেন তখন আমাদের আনন্দের শেষ থাকে না। এরকম মজার মানুষকে কেমন করে আমার মামা ডিভোর্স করে দিল আমি চিন্তা করে পাই না। কে জানে পুরুষ মানুষেরা মনে হয় এরকমই, যদি তার বউ বেশী স্মার্ট হয় তখন ডিভোর্স করে দেয়।

    যাই হোক, আমি বড়ো হয়ে যে যে কাজগুলো করব বলে ঠিক করেছি, নীরা মামী তার সবগুলো করেছেন। পাহাড়ে গিয়েছেন, সমুদ্রে গিয়েছেন, প্লেন থেকে লাফ দিয়েছেন, কারাতে শিখেছেন, সিনেমায় অ্যাক্টিং করেছেন (পার্টটা খুবই ছোটো ছিল, ঝগড়া করে একজনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া), বই লিখেছেন, আন্দোলন করেছেন, পুলিশের মার খেয়েছেন, জেলে গিয়েছেন। সোজা কথায় বলা যায় এমন কোনো কাজ নাই যেটা নীরা মামী করেন নাই। আর যেগুলো বাকী আছে সেগুলোও যে করে ফেলবেন সে ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই।

    কাজেই আমি অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন নীরা মামী ঘুম থেকে উঠবেন।

    শেষ পর্যন্ত মামী ঘুম থেকে উঠলেন, তারপর শাড়ীর আঁচলটা কোমরে প্যাচিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে ইঁদুরের বিষের মতো কালো কুচকুচে এক মগ চা বানিয়ে ডাইনিং টেবিলের একটা চেয়ারে বসে আরেকটা চেয়ারে পা তুলে দিলেন। আমাকে কেউ বলে দেয় নাই কিন্তু অনুমান করতে পারি মহিলাদের এভাবে চেয়ারে পা তুলে বসে থাকা ঘোরর বেআইনী কাজ!

    নীরা মামী আম্মুকে বললেন, “আপা ঠ্যাং দুইটা টনটন করছে চেয়ারে তুলে দিলাম। ঠিক আছে?”

    আম্মু বলল, “ঠিক না থাকলেই আর কী আসে যায়? কিন্তু তোমার ঠ্যাং টনটন করছে কেন?”

    “একদিনের জন্য বেশি হাঁটা হয়ে গেছে।”

    “কত বেশি?”

    “জানি না। তিরিশ থেকে পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার হবে।”

    আম্মু চোখ কপালে তুলে বললেন, “তুমি ত্রিশ পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার হেঁটে এসেছ? কেন?”

    নীরা মামী বললেন, “এই তো!” তার মানে এর বেশী কিছু বলবেন না। কৌতূহলে আমার পেট ফেটে যাচ্ছিল কিন্তু জানি এটা নীরা মামীর স্বভাব।

    আমি নীরা মামীর পাশে বসে তার চা খাওয়া দেখছি। আপু আর পিলুও বসেছে। পিলু বলল, “মামী, তুমি দাবা খেলতে পারো?”

    মামী মাথা নাড়ল, বলল, “পারি। খুব ভালো না। কেন?”

    পিলু বলল, “আমার সাথে কেউ দাবা খেলতে চায় না। তুমি খেলবে?”

    আমি বললাম, “মামী রাজী হয়ো না রাজী হয়ো না কিছুতেই রাজী হয়ো না।”

    মামী অবাক হয়ে বললেন, “কেন?”

    “তোমাকে হারিয়ে দেবে। এই ফাজিলটা অন্য কিছু পারে না, কিন্তু দাবা খেলায় সবাইকে হারিয়ে দেয়।”

    মামী চোখ বড়ো বড়ো করে বললেন, “সত্যি?”

    আমি বললাম, “হ্যাঁ।”

    মামী বললেন, “নিয়ে আয় দাবার বোর্ড। দেখি তোর সাথে খেলে।”

    পিলু আনন্দে তার সবগুলো দাঁত বের করে দাবার বোর্ড আনতে গেল। ঠিক এরকম সময় চম্পা এসে হাজির। নীরা মামী অবাক হয়ে বললেন, “এই মেয়েটা কে? আগে দেখি নাই।”

    চম্পাকে নিয়ে কথা বলতে আমি খুবই সাবধান, তাই আমি চুপ করে রইলাম, আপু বলল, “এ হচ্ছে ঝর্ণা খালার মেয়ে চম্পা।”

    চম্পা মুখ শক্ত করে বলল, “শম্পা।”

    আপু তখন বুঝিয়ে দিল, “আগে চম্পা ছিল, চম্পা নামটা গ্রাম্য তাই এখন সে এটাকে শম্পা করে ফেলেছে।”

    আমি নিচু গলায় নীরা মামীকে ফিসফিস করে বললাম, “কেউ এখন তাকে চম্পা ডাকলে সে তার চোখ গেলে দিবে।”

    মামী তখন বেশ আগ্রহ নিয়ে চম্পার দিকে তাকালেন। মাথা নেড়ে বললেন, “যখন তোমার শম্পা নামটাও আর পছন্দ হবে না তখন নামটা কী রাখবে? পম্পা? মম্পা? লম্পা?”

    চম্পার আলাপটা পছন্দ হলো না তাই কোনো উত্তর দিল না। নীরা মামী তাই অন্যদিকে গেলেন, জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কীসে পড়ো? কোন স্কুল, কোন ক্লাস?”

    চম্পা এবারেও কোনো উত্তর দিল না, তাই আপু বলল, “তাকে এখনো কোনো স্কুলে দেওয়া যায় নাই। চম্পা বলেছে সে লেখাপড়া করবে না।”

    নীরা মামী হাসি হাসি মুখে বললেন, “ও আচ্ছা! লেখাপড়া করবে না? ভেরি গুড! কিন্তু তাহলে বড়ো হয়ে কী হবে?”

    চম্পা এই প্রথম কথা বলল, “আমি নায়িকা হব।”

    নীরা মামী পর্যন্ত এই উত্তরে অবাক হলেন, চোখ বড়ো বড়ো করে বললেন, “নায়িকা?”

    চম্পা মাথা নাড়ল। নীরা মামী বললেন, “আর যদি নায়িকা না হতে পারো? নায়িকা হওয়া খুব সোজা না। আমিও চেষ্টা করেছিলাম, হতে পারি নাই। শুধু ধাক্কাধাক্কির একটা পার্ট পেয়েছিলাম।”

    চম্পা নীরা মামীকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখল, তারপর জিজ্ঞেস করল, “তুমি সত্যিই নায়িকা হতে চেয়েছিলে?”

    “হ্যাঁ।” নীরা মামী মাথা নাড়লেন, তারপর বললেন, “কিন্তু আমি তো লেখাপড়া করেছিলাম তাই নায়িকা না হলেও সমস্যা হয় নাই। অন্য কিছু হয়েছি। কিন্তু তোমার সমস্যা হবে।”

    “কী সমস্যা?”

    “তুমি তো লেখাপড়া করবে না তাই নায়িকা হতে না পারলে অন্য কিছু হতে পারবে না। মনে হয় রিকশা চালাতে হবে।”

    চম্পা চোখ বড়ো বড়ো করে বলল, “রিকশা? মেয়েরা কখনো রিকশা চালায় না।”

    “আজকাল চালায়। ভালো ভালো রিকশা আছে। রিকশার পেছনে সুন্দর সুন্দর নায়িকার ছবি থাকে।

    চম্পার চোখ আরও বড়ো বড়ো হয়ে গেল।

    নীরা মামী বলতে থাকল, “ছেলেরা রিকশা চালালে সবাই তাকে মামা ডাকে। মেয়েরা চালালে তাদের খালা ডাকবে। তোমাকেও সবাই খালা ডাকবে। চম্পা না হলে শম্পা না ডেকে আমরা সবাই তোমাকে খালা ডাকতে পারি। প্র্যাকটিস হবে। কী বলো?”

    চম্পা পাথরের মতো মুখ করে চলে গেল। পিলু অনেকক্ষণ থেকে বোর্ডে গুটি সাজিয়ে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছে। নীরা মামী তার দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুই কি লেখাপড়া করবি নাকি তোকেও মামা ডাকতে হবে?”

    পিলু বলল, “না আমাকে মামা ডাকতে হবে না। তুমি দাবা খেলবে কিনা বলো।”

    কাজেই নীরা মামী পিলুর সাথে দাবা খেলতে শুরু করলেন। আমি আর আপু নীরা মামীকে বুদ্ধি দিতে লাগলাম, কিন্তু লাভ হলো না, দেখতে দেখতে নীরা মামী পরপর দুই দান হেরে গেলেন। নীরা মামী পিলুর ঘাড় ধরে কয়েকটা ঝাঁকুনি দিয়ে বললেন, “তুই যদি এভাবে খেলতে থাকিস তাহলে কোনো চিন্তা নাই। তোকে কেউ মামা ডাকবে না।”

    নীরা মামীর কথা শুনে খুশীতে পিলু তার সবগুলো দাঁত বের করে এমন একটা হাসি দিল যে সেটা দেখে আমরাও হেসে ফেললাম।

    .

    রাতে যখন নীরা মামীর আশেপাশে কেউ নেই তখন আমি ফিসফিস করে তাকে বললাম, “মামী, তোমাকে একটা জিনিস জিজ্ঞেস করি?”

    মামী চোখ তুলে জিজ্ঞেস করলেন, “কী জিনিস?”

    “মামার বউকে মামী বলে, কিন্তু তুমি তো আর মামার বউ না। তোমাকে কি মামী ডাকতে হবে?”

    মামী অবাক হয়ে বলল, “তাহলে কী ডাকবি?”

    আমি বললাম, “মানে ইয়ে তোমাকে তো মোটেই মামীর মতো লাগে না, সেজন্য বলছিলাম–”

    “সেজন্য কী বলছিলি?”

    “তোমাকে কি আপু ডাকতে পারি? নীরা মামী থেকে নীরা আপু অনেক ভালো শোনায়–”

    শুনে মামীর সে কী হাসি। হাসতে হাসতে প্রায় গড়িয়ে পড়তে লাগলেন। আমি কথাটা বলছিলাম গোপনে যখন আশেপাশে কেউ নাই, কিন্তু মামী এত জোরে গলা ফাটিয়ে হাসতে লাগলেন যে সবাই দৌড়ে এলো দেখার জন্য কী এমন হাসির ব্যাপার হয়েছে। পিলু জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে মামী? তুমি হাসছ কেন?”

    নীরা মামী কোনোমতে হাসি থামিয়ে বলল “টুলু আমাকে আর মামী ডাকবে না–এখন থেকে আপু ডাকবে–”

    আমি আপত্তি করে বললাম, “আমি সেভাবে বলি নাই–”

    আপু কিন্তু সাথে সাথে বলল, “টুলু ঠিকই বলেছে, তোমাকে মোটেও মামীর মতো মনে হয় না। তোমাকে দেখতে আপুর মতো লাগে।”

    পিলও মাথা নাড়ল, “ঠিক বলেছ। ঠিক। মামী শুনলেই ভয় লাগে।”

    মামী হাসি থামিয়ে বলল, “তোদের যা খুশী ডাক। মামী, খালা, চাচী, আপু, ভাবী, নানী, দাদী, ফুফু যা ইচ্ছা তাই। শুধু স্যার আর ম্যাডাম ডাকিস তাহলেই হবে।”

    পিলু জিজ্ঞেস করল, “কেন মামী? স্যার ম্যাডাম ডাকলে কী হয়?”

    মামী বললেন, “তাহলে মনে হবে এক্ষুণি বুঝি কেউ স্যালুট দিবে।”

    “স্যালুট দিলে কী হয়?”

    মামী বলল, “জানি না। আমার জানটা ধরাস করে ওঠে।”

    .

    সেই রাতে নীরা মামী একটা অসাধ্য সাধন করে ফেললেন। কীভাবে করলেন সেটা আমরা বুঝতে পারলাম না। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে চা খেয়ে মামী চম্পাকে ডেকে নিয়ে তার ঘরের দরজা বন্ধ করলেন। আমরা দরজায় কান পেতে শোনার চেষ্টা করলাম ভেতরে কী নিয়ে আলোচনা হচ্ছে কিন্তু ফিসফিস কথা, দুই চারটা শব্দ, মাঝে মাঝে একটু হাসির আওয়াজ ছাড়া আর কিছু শুনতে পেলাম না। প্রায় এক ঘণ্টা পরে চম্পা মামীর ঘর থেকে বের হলো। তার চোখমুখ কেমন জানি চকচক করছে। আমি ভয়ের চোটে চম্পার সাথে কথা বলি না, তাই কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস হলো না। আপু জিজ্ঞেস করল, “মামীর সাথে কী নিয়ে কথা বলেছ, চম্পা?”

    চম্পা বলল, “এখন থেকে আমার নাম চম্পা। শম্পা না।” আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, “কিন্তু তুমি না বলেছিলে চম্পা নামটা গেরাইম্যা!”

    চম্পা গম্ভীর হয়ে বলল, “নাম কোনোদিন গেরাইম্যা হয় না। চম্পা একটা ফুলের নাম। শম্পা কিছু না।”

    শুনে আমরা চমৎকৃত হলাম। আপু জিজ্ঞেস করল, “আর কী নিয়ে কথা বলেছ।”

    “বড়ো হয়ে কী হব সেটা নিয়ে।”

    “কী হবে?”

    “নায়িকা। নায়িকা না হতে পারলে পাইলট। পাইলট না হতে পারলে ডাক্তার। ডাক্তার না হতে পারলে মন্ত্রী।”

    আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কীসের মন্ত্রী?”

    “এইটা বড়ো হয়ে ঠিক করব। মামী বলেছে শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষা মন্ত্রী বুঝেছো তো? লেখাপড়ার মন্ত্রী।”

    পিলু বলল, “কিন্তু তুমি তো লেখাপড়াই করবে না। লেখাপড়া না করে লেখাপড়ার মন্ত্রী হবে কেমন করে?”

    এই প্রথম চম্পার মুখে একটা দুঃখের ছায়া পড়ল, একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, তারপর বলল, “এখন লেখাপড়া করতে হবে।”

    আপু খুশী হয়ে বলল, “বাহ! তার মানে এখন তুমি স্কুলে ভর্তি হবে?”

    চম্পা মাথা নাড়ল, বলল, “কালকে মামী আমাকে স্কুলের ব্যাগ কিনে দিবে। স্কুলের ব্যাগ আর খাতা পেনসিল। সাথে বই।”

    আমি বললাম, “ভেরি গুড।”

    “যখন কলেজে উঠব তখন কম্পিউটার কিনে দিবে। এখন এটারে কম্পিউটার বলে না, বলে ল্যাপটপ, যেরকম লেপ তোশক সেরকম ল্যাপটপ।”

    মামী চম্পাকে ল্যাপটপ কিনে দিবে শুনে পিলুর চোখ হিংসায় ছোটো ছোটো হয়ে গেল।

    আমরা মাথা নাড়লাম। চম্পা বলল, “যখন আমি বড়ো হব তখন আমি কী করব জানো?”

    পিলু জিজ্ঞেস করল “কী করবে?”

    “মাকে একটা গাড়ী কিনে দেব। লাল রঙের টয়োটা গাড়ী। মাতো গাড়ী চালাতে পারে না সেজন্য আমার গাড়ী চালানো শিখতে হবে।”

    পিলু বলল, “আমিও গাড়ী চালানো শিখব।”

    আপু বলল, “ভেরি গুড। তোরা দুজন মিলে আমাদের সব জায়গায় নিয়ে যেতে পারবি।”

    চম্পা ঘাড় নেড়ে রাজী হয়ে গেল। তারপর বলল, “খালি একটা সমস্যা।”

    জিজ্ঞেস করলাম, “কী সমস্যা?”

    “মামী বলেছে চিৎকার করে কান্দা যাবে না। আস্তে আস্তে শব্দ না করে কান্দতে হবে।”

    আপু বলল, “সমস্যা কেন হবে? এটা তো ভালো কথা।”

    চম্পা মাথা নাড়ল, তারপর বলল, “না। এইটা সমস্যা।”

    চম্পা মনে হলো তার নতুন সমস্যাটা নিয়ে চিন্তা করতে করতে চলে গেল।

    মামী একটু পরেই তার ঘর থেকে বের হয়ে এলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “মামী, তুমি কেমন করে চম্পাকে ঠিক করে দিয়েছ?”

    মামী হাসলেন, বললেন, “খাবার স্যালাইন।”

    আমি অবাক হয়ে বললাম, “খাবার স্যালাইন!”

    “হ্যাঁ। এক চিমটি ভয়, এক মুঠি উপদেশ আর এক লিটার আদর। বাচ্চাদের চিকিৎসার মহা ওষুধ।”

    .

    নীরা মামী পরের দিন যখন চম্পাকে তার স্কুলের ব্যাগ কিনে দিতে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন সাথে পিলুকে আর আমাকেও নিয়ে গেলেন। আপুকেও নিতে চাইছিলেন কিন্তু তখন আপুর একটা স্কুলের ক্লাস ছিল, রাস্তায় রাস্তায় ছোটো বাচ্চারা যারা ঘুরে বেড়ায় তাদের লেখাপড়া করানোর একটা স্কুল আছে, আপু সেখানে ভলান্টিয়ার। স্কুলটার কোনো বিল্ডিং নাই, ফুটপাতে বসে বসে সবাই পড়ে। তাই আপু যেতে পারল না, তবে আমি গেলাম। নীরা মামী চম্পাকে তার স্কুল ব্যাগ, স্কুলের ব্যাগের ভেতরে করে নেওয়ার জন্য খাতা কলম, পেনসিল এসব কিনে দিলেন। পিলুর জন্য ছবি আঁকার ওয়াটার কালার রংতুলি, যদিও পিলু জীবনেও ছবি আঁকে নাই আঁকার ইচ্ছাও নাই, সে মানুষ আঁকলে সেটাকে ঘোড়ার মতো দেখায়। আমি নীরা মামীকে জিজ্ঞেস করলাম,

    “তুমি পিলুর জন্য রংতুলি কেন কিনে দিচ্ছ? পিলু তো ছবি আঁকতে পারে না। ট্যারা বেঁকা কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং মার্কা ছবি আঁকে।”।

    মামী বললেন, “পিকাসোর ছবি দেখেছিস? এত সুন্দর ছবি আঁকতে পারে কিন্তু তবু ট্যারা বেঁকা কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং আঁকে!”

    কাজেই আমি আর কী বলব? আমার কী পছন্দ আর কী অপছন্দ জানতে চাইলেন, আমি বললাম, “আমার পছন্দের কিছু নাই, অপছন্দ হচ্ছে লেখাপড়া। বিশেষ করে অঙ্ক। বড় হয়ে পৃথিবী থেকে অঙ্ক তুলে দেওয়ার একটা আন্দোলন করব।”

    মামী মুখ টিপে হাসলেন, বললেন, “বড়ো হয়ে কেন? বুকে জোর থাকলে এখনই শুরু করে দে। যেরকম গণিত অলিম্পিয়াড আছে সেরকম গণিত ধ্বংস অলিম্পিয়াড়।”

    মামী আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করছেন কিনা বুঝতে পারলাম না, মুখ শক্ত করে বললাম, “ঠিক আছে। এখন থেকেই শুরু করে দিব।”

    মামী বললেন, “ভেরি গুড।” তারপর আমাদের নিয়ে একটা বইয়ের দোকানে ঢুকে আমাকে ‘গণিতের মজার অঙ্ক’ নামে একটা বই কিনে দিলেন। আমি মামীকে থামানোর চেষ্টা করলাম, বললাম, “মামী, তুমি পয়সা নষ্ট করো না। এই বই আমি জীবনেও খুলে দেখব না।”

    মামী বললেন, “আমি কি তোকে খুলে দেখতে বলেছি?”

    “তাহলে আমি কী করব এই বই দিয়ে?”

    “বৃষ্টির দিনে পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ছিঁড়ে কাগজের নৌকা বানিয়ে পানিতে ভাসিয়ে দিতে পারিস।”

    তখন আমি আর কী বলব?

    মামী আপুর জন্যেও একটা বই কিনলেন। সেই বইটা আবার ইংরেজিতে। এত ছোটো ছোটো টাইপ যে মনে হয় ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে পড়তে হবে, ভেতরে একটা ছবির নিশানা পর্যন্ত নাই! এই বই কেউ আমাকে দিলে আমার মেজাজ গরম হয়ে যেত কিন্তু আপুর ব্যাপার স্যাপার আলাদা, কে জানে সে হয়ত খুশী হয়ে যাবে।

    মামী তারপর বাসার সবার জন্য অনেকগুলো চকলেট কিনলেন, তখন আমার মনটা একটু ভালো হলো। মামীর সব কাজের মাঝে ছোটো বড়ো আর মাঝারি পাগলামো থাকে কিন্তু সবাইকে খুশী কেমন করে করতে হয় সেটা খুব ভালো করে জানেন। এই রকম একটা মামীকে পেয়েও আমাদের মামা কেমন করে খুশী হলো না বুঝতে পারি না।

    মামী অবশ্য পরের দিনই চলে গেলেন, কী নাকি কাজ আছে। যাওয়ার সময় বলে গেলেন কয়েকদিনের ভেতর আবার আসবেন।

    সত্যি আসবেন নাকি আমাদের সান্তনা দেওয়ার জন্য বলেছেন কে জানে!

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleটি-রেক্সের সন্ধানে – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article আহা টুনটুনি উহু ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }