Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    লুব্ধক – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    হারবার্ট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    তসলিমা নাসরিন এক পাতা গল্প401 Mins Read0

    কোথায় আছি

    কোথায় আছি

    ভাইরাসের মতো খবরটা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে, আমি ভারত ছেড়ে চলে গিয়েছি আমেরিকায়। কেন? আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের খুনীরা যারা অভিজিৎ ওয়াশিকুর-অনন্তকে কুপিয়ে মেরেছে, তারা আমাকেও মেরে ফেলবে এই ভয়ে। এতই যদি আমার ভয়, তাহলে ইউরোপের নাগরিক হয়েও, আমেরিকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়েও কেন বাংলাদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য এত চেষ্টা করেছি, আর, কেনই বা বছরের পর বছর ভারতে শুধু থাকিইনি, থাকার জন্য যুদ্ধও করেছি? এ দুটো দেশেই তো জীবনের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, এ দুটো দেশেই আমার বিরুদ্ধে মিছিল হয়েছে, আমার ওপর শারীরিক আক্রমণ হয়েছে, আমার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি হয়েছে, আমার মাথার দাম ঘোষিত হয়েছে, এ দুটো দেশেই ধর্মান্ধ সন্ত্রাসীরা আমাকে মেরে ফেলার জন্য ওত পেতে থাকে। এতকাল পর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেঁচে থাকায় অভ্যস্ত আমি ভয় পেয়ে পালাবো? পালিয়ে যাওয়ার মানুষ তো কোনওদিনই ছিলাম না। নিরাপদ জায়গা ফেলে আমি তো সারা জীবন অনিরাপদ জায়গাতেই জেনেশুনে বাস করেছি, শুধু নির্যাতিত মানুষদের, যাদের কথা লিখি, তাদের পাশে থাকার জন্য। নিজের সুবিধের জন্য, নিজের বাঁচার জন্য, আজ অবধি কিছু তো করিনি।

    আজ একুশ বছর নির্বাসনে। অনেক আগে, যখন আমার খুব নাম ডাক, ইসলামী মৌলবাদীরা হাতের নাগালে পেলে আমাকে জবাই করবে– খবরটি বিশ্বের সর্বত্র প্রচার হচ্ছে, ইউরোপের সরকার, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে জিজ্ঞেস করা হতো, তোমাকে কী করে সাহায্য করতে পারি বলো। আমি সবাইকেই বলেছি, আমাকে নয়, বাংলাদেশের গরিব মেয়েদের সাহায্য করো। আমাকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে বলে কিছু দাতা দেশ বলেছিলো তারা বাংলাদেশকে দান দেওয়া বন্ধ করে দেবে। আমি বলেছি, ও কাজটি কখনও করো না। বাংলাদেশের দরিদ্র মেয়েরা তোমাদের সাহায্য পেলে খেয়ে পরে বাঁচবে, শিক্ষিত আর স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ পাবে।

    না, নিজের জন্য আজও ভাবছি না। এবার আমার আমেরিকায় আসার কিছু কারণের মধ্যে একটি বড় কারণ, সেকুলার হিউম্যানিস্ট কনফারেন্সে বাংলাদেশের নিরীশ্বরবাদী লেখকরা কী রকম মৃত্যুভয়ে গুটিয়ে আছে, সে সম্পর্ক বলা, তাদের প্রাণে বাঁচানোর জন্য ইউরোপ-আমেরিকার সরকার এবং সংগঠনের কাছে আবেদন করা। আর এখানে যে ফাণ্ড তৈরি করা হচ্ছে আমার জন্য, সেটি মুলত যাবে দেশ থেকে ওই লেখকদের বিদেশে নিয়ে আসা এবং বিদেশে তাদের থাকাখাওয়ার খরচে।

    নব্বইয়ের শুরুতে লক্ষ লক্ষ মৌলবাদীর মিছিল দেখেছি, যে মিছিলে আমার ফাঁসির দাবি উঠতো। ওই মৌলবাদীদের সুযোগ্য পুত্ররা আজ দেশের প্রতিভাবান লেখকদের জবাই করে, নয়তো পেছন থেকে ঘাড়ে কোপ বসায়। আমি তাদের পুরোনো শত্রু। ঢাকা থেকে দিল্লি তো খুব দুরে নয়। সন্ত্রাসীরা পশ্চিমবঙ্গেই বোমা বানানোর কারখানা তৈরি করতে পারে, খোঁজ নিলে দেখা যাবে চাপাতি চালানোর ট্রেনিংটাও হয়তো পশ্চিমবঙ্গের কোনও শহরেই করছে। ওদিকে বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের হিটলিস্টে এখন এক ঝাঁক উজ্জ্বল লেখক, যারা ধর্মে নয়, বিজ্ঞানে বিশ্বাসী, শরিয়ায় নয়, নারীর সমানাধিকারে বিশ্বাসী। লেখকরা আজ ভয়ে লেখালেখি বন্ধ করে দিয়েছে, ঘরের কোনে লুকিয়ে রয়েছে, ভয়ে দেশ ছাড়তে চাইছে, মাথায় হেলমেট পরে বাইরে বেরোচ্ছে, কেউ কেউ শহর থেকে চলে গেছে অচেনা গ্রামে, চেহারা বদলে মিশে গেছে মানুষের ভিড়ে।

    সবাই ভাবছে কোপ এবার তাকেই খেতে হবে। প্রায় প্রতিমাসেই একজনকে কুপিয়ে মারা হচ্ছে। হুমকি পেয়ে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করতে গেছেন কিছু লেখক, পুলিশ রিপোর্ট নিচ্ছে না, সোজা বলে দিচ্ছে, বাঁচতে চাইলে দেশ থেকে পালাও। খুনীদের গ্রেফতার করছে না পুলিশ, কেন করছে না জিজ্ঞেস করলে বলছে, ওপরের নির্দেশ নেই। শুধু লেখক বা ব্লগারদের নয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শফিউল ইসলামকে কুপিয়ে মেরে ফেলেছে সন্ত্রাসীরা। তাঁর দোষ, তিনি তাঁর ক্লাসের ছাত্রীদের বোরখা পরে আসতে বারণ করেছিলেন, বলেছিলেন মুখ ঢাকা থাকলে পড়াতে অসুবিধে হয়।

    সমাজ যেভাবে আছে, সেভাবেই যদি থাকে, ঘটে বুদ্ধি আছে এমন কাউকেও চাপাতির হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব নয়। সমাজকে বদলাতে হলে ধর্মান্ধদের ধর্মনুভূতিতে আঘাত করাটা খুব জরুরি। অন্য কোনও অনুভূতিতে আঘাত লাগলে মানুষ এত বীভৎস বর্বর হয়ে ওঠে না, কেবল ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগলেই হিতাহিত জ্ঞান হারায়। যারা বাংলাদেশের ব্লগার হত্যার বিরুদ্ধে, তারা অনেকই ব্লগারদের পক্ষ নিতে গিয়ে বলছেন যে ব্লগাররা কারও ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেয়নি। তাহলে কি ধর্মান্ধদের মতো তারাও মনে করেন ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেওয়া অন্যায়? মুশকিলটা ঠিক এই জায়গায়। লক্ষ্য করেছি, এটা মেনে নিতে গণ্যমান্য মনীষীদেরও অসুবিধে হচ্ছে যে, মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়াটা অন্যায় নয়।

    অনুভূতিতে কোনওরকম আঘাত ছাড়াই পুরো জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাওয়ার দাবি অত্যন্ত অন্যায় দাবি। সব মানুষের মত এক নয়। মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা করলে অনুভূতি একবার কেন, বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করলে অনুভূতির ওপর আঘাত নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। মত প্রকাশের স্বাধীনতার অস্তিত্ব থাকতেই হবে যদি গণতন্ত্রের অস্তিত্ব রাখতে হয়।

    ধর্মানুভূতির রাজনীতি অনেককাল ধরে চলছে। ধর্মানুভূতির সঙ্গে সংঘাত লাগছে গণতন্ত্রের, শুভবুদ্ধির, জ্ঞানের, বিজ্ঞানের, নারীর অধিকারের, মানবাধিকারের, সমানাধিকারের। যে কোনও একটি পক্ষ আমাদের নিতেই হবে। আমরা ধর্মানুভূতি রক্ষা করতে চাই নাকি গণতন্ত্র, শুভবুদ্ধি, জ্ঞান, বিজ্ঞান, নারীর অধিকার, মানবাধিকার, সমানাধিকার ইত্যাদি রক্ষা করতে চাই?

    পৃথিবীর কোথাও নারীবিদ্বেষীদের অনুভূতিতে আঘাত না দিয়ে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পৃথিবীর কোথাও মানবাধিকারবিরোধী লোকদের অনুভূতিতে আঘাত না দিয়ে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পৃথিবীর কোথাও গণতন্ত্র বিরোধী লোকদের অনুভূতিতে আঘাত না দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পৃথিবীর কোথাও ধর্মান্ধদের অনুভূতিকে আঘাত না দিয়ে বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পৃথিবীর কোথাও মানুষের ধর্মানুভূতিকে ক্রমাগত আঘাত না দিয়ে ধর্মানুভূতির নামে ধর্ম ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব হবে না, ধর্মীয় সন্ত্রাস বন্ধ করা সম্ভব হবে না।

    একবিংশ শতাব্দিতে চৌদ্দশ বছর আগের বর্বরতাকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। কোপানোর বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে প্রতিবাদ না হলে কোপানো চলতে থাকবে। আজ বিজ্ঞানীদের, মুক্তমনাদের কোপাবে, কাল হিজাব না পরলে, নামাজ না পড়লে, রোজা না করলে কোপাবে।

    সেক্লার সংগঠনটি তাদের ফাণ্ড রেইজিংএর চিঠিটি বিলি করার পরই সমস্যা হয়েছে। বিশ্বের সব প্রচার মাধ্যমের কাছে আমি আমেরিকায় এসেছির চেয়ে বড় খবর আমি ভারত ছেড়েছি। আমার ভারত ছাড়ার খবরটা যারাই ছড়িয়েছে, একটু বাড়িবাড়ি করেই ছড়িয়েছে। চিঠিতে লেখাছিল নাআমি তল্পিতল্পানিয়ে জন্মের মতো ভারত ছাড়ছি। ভারত ছেড়ে কোথায় যাবো? এখনও তো ভারতেই পড়ে আছে আমার বাড়িভর্তি বইখাতা, কাপড়চোপড়, অযুত-নিযুত জিনিসপত্তর, পোষা বেড়াল। দিল্লি থেকে বেরিয়েছি ছোট একটা সুটকেসে দুটো জিনস, দুটো শর্টস, আর কটা টিশার্ট নিয়ে। ল্যাপটপ, আইপ্যাড তো হাতে থাকেই, সে যেখানেই যাই। ভারত ছাড়ার খবরটা নিঃসন্দেহে কোনও সুখবর নয়। আমার কোনও সুখবর কি কখনও কোথাও প্রকাশ হয়েছে। এই যে দীর্ঘ বাইশ বছর ইউরোপ আর আমেরিকার বিভিন্ন সরকার, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মানবাধিকার সংগঠন, নারীবাদী দল আমাকে বক্তৃতার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছে, একটা সুস্থ সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন নিয়ে নিজের সময়, শ্রম, অর্থকড়ি, বিদ্যেবৃদ্ধি সব ঢেলে দিচ্ছি, এই যে এত সভ্য দেশ থেকে এত সম্মান পেয়েছি, এত পুরস্কার, এত ডক্টরেট উপমহাদেশের কোথাও কেউ কি খবর করেছে? কখনও করেনি, শুধু লিখে গেছে কটা পুরুষের সঙ্গে শুয়েছি, কটা বিয়ে করেছি, কোন দেশ আমাকে তাড়িয়েছে, কোন রাজ্য আমাকে ঘাড়ধাক্কা দিয়েছে, কত লোক আমাকে ঘৃণা করে, কত লোক আমার লেখা পছন্দ করে না, আমাকে লক্ষ করে লোহার চেয়ার ছুঁড়ে মারা হয়, রাজ্য আমার বই নিষিদ্ধ করে, টিভিতে আমার মেগাসিরিয়াল দেখাতে আপত্তি করে, এসব। আমার নামের আগে জুড়ে দেয় একটি শব্দ, বিতর্কিত। শব্দটি জুড়তে জুড়তে এখন এটিকে তারা আমার নামের অংশ বলেই সম্ভবত ভাবে। বিতর্কিত বিশেষণটি আমার ক্ষেত্রে নেতিবাচক অর্থেই ব্যবহার করা হয়। দুই বাংলাআমাকে শুধু তাড়িয়ে শান্ত হয়নি, সবরকম চেষ্টা করেছে, যেন আমি হয়ে উঠি একটা নিষিদ্ধ নাম, একটা নিষিদ্ধ লেখক।

    এতকাল কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করেনি আমি কোথায় আছি বা আমি বেঁচে আছি কি না। আজ হঠাৎ আমি ভারত ছাড়লাম কেন জানতে চাইছে। ভারতের মৌলবাদী তোষণ রাজনীতি, মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতা, গরিবের অসহায়তা, সামাজিক অব্যবস্থা, ধর্ম, জাতপাত, পুরুষতন্ত্র, কুসংস্কার ইত্যাদি নিয়ে নিজের মত প্রকাশ করলে কট্টর জাতীয়তাবাদী, ধর্মান্ধ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন পুরুষতান্ত্রিক নারীবিরোধীরা আমাকে নোংরা নোংরা গালি দিয়েছে, ধমকে ভারত ছাড়তে বলেছে, বলেছে বাংলাদেশে ফেরত যেতে। পৃথিবীর সব দেশকে আপন ভাবলে, দেশ আর দেশের মানুষের ভালো চাইলে, অনেক কষ্ট পেতে হয়। রিফুজি, বেগার, ইউ বাংলাদেশি, আমাদের দেশের কোনও ব্যাপারে নাক গলাবি না– এসব গালি অনেক শুনেছি। অনেক ধারণা করে আমার নিশ্চয়ই কোনও বদ মতলব আছে, তা না হলে অন্য দেশের মেয়েরা ধর্ষিতা হলে আমি এত রাগ করি কেন, কন্যাশিশুদের পুতে ফেলা হলে আমি এত রুখে উঠি কেন, নারী নির্যাতন বাড়লে আমি উদ্বিগ্ন কেন, এ দেশ তো আর আমার দেশ নয়! আমি আপন ভাবলেও আমাকে আপন ভাবার লোক আমি খুব কমই পেয়েছি। আমার কথা পছন্দ না হলে আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে, আমাকে লাথি মেরে ভারত থেকে তাড়াবে। প্রায়ই শুনি এমন হুমকি। একদিকে মুসলিম মৌলবাদীদের আক্রমণ। আরেকদিকে নারীবিদ্বেষী, কট্টর ডানপন্থী, কুসংস্কারের ডিপো, উগ্র হিন্দুত্ববাদীর আক্রমণ। যাদের থাকার কথা আমার পাশে, যে বামপন্থী সেকুলার দলের, তারা আমার বই নিষিদ্ধ করে, আমাকে রাজ্য থেকে তাড়ায়, আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটায়। তারা মিথ্যে দোষ দেয়, তাদের সরল সমীকরণ, আমি যেহেতু ইসলামী মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করি, আমি তবে নিশ্চয়ই হিন্দুত্ববাদীদের বন্ধু, নিশ্চয়ই ক্রিশ্চান অথবা ইহুদি মৌলবাদীদের বন্ধু। ভারতের উদারপন্থী সেকুলারদের মধ্যে একটা বড় অংশই ভণ্ড। শুধু ভারতবর্ষে বধূহত্যা হলেই নয়, সোমালিয়ার মেয়েদের যৌনাঙ্গ ছেদন হলেও, ইতালির মেয়েদের গর্ভপাতে বাধা দেওয়া হলেও, সৌদি আরবে মেয়েদের বোরখা পরতে বাধ্য করা হলেও আমি প্রতিবাদ করি। বাংলাদেশে হিন্দুরা অত্যাচারিত হলেই নয়, গুজরাতে বা ফিলিস্তিনে মুসলমানরা, পাকিস্তানে ক্রিশ্চানরা অত্যাচারিত হলেও প্রতিবাদ করি। তা সেকুলারদের অজানা নয়। তারপরও আমাকে ব্রাত্য করতে এরা দ্বিধা করেনি।

    এদের বাইরেও মানুষ আছে, যারা ভালোবাসে। ভারতবর্ষের কত কত শহরে কত কত মানুষ দৌড়ে আসে সই নিতে,, ছবি তুলতে, জড়িয়ে ধরতে, একটু হাত স্পর্শ করতে, একটু কাঁদতে, একটুখানি পায়ের ধুলো নিতে। ওই ভালোবাসার কাছে আমি একদিন ফিরে যাবোই। আমার সবজিওয়ালা জয়ন্ত আমার জন্য অপেক্ষা করে থাকে, আমার মাছওয়ালা বনমালী আমার জন্য অপেক্ষা করে। অপেক্ষা করে শাড়ির দোকানের মজুমদার। অপেক্ষা করে আছে অসংখ্য চেনা অচেনা শুভাকাঙ্খী। ওই ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন
    Next Article ছোট ছোট দুঃখ কথা – তসলিমা নাসরিন

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    ফেরা – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    লুব্ধক – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    হারবার্ট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.