Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    লুব্ধক – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    হারবার্ট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    তসলিমা নাসরিন এক পাতা গল্প401 Mins Read0

    এই সময়

    এই সময়

    ১. ভালোই তো। স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্রতিবাদটি বেশ চমৎকার। প্রথম যেদিন দেখেছিলাম, বেশ ফুরফুরে লেগেছিল। প্রায় তিরিশ বছর যাবৎ অনেকটা একা একাই ট্যাবু ভেঙে চলেছি। তাই কাউকে ট্যাবু ভাঙতে দেখলে বেশ শান্তি পাই। স্যানিটারি ন্যাপকিনকে প্রতিবাদের মাধ্যম করা এই প্রথম নয়, আগেও করা হয়েছে। চার্লি নামে এক মেয়ে গতবছর একটা টুইট করেছিলেন, টুইটটা এরকম: মেয়েদের পিরিয়ডকে যেরকম ঘেন্না করে পুরুষেরা, ধর্ষণকেও যদি একইরকম ঘেন্না করতো! এই টুইট দেখে এলোনে নামের এক জার্মান শিল্পী এমনি উত্তেজিত ছিলেন যে সে চার্লির ওই টুইটের কথাগুলো চল্লিশটা স্যানিটারি ন্যাপকিনের ওপর লিখে তাঁর শহরের দেয়ালে দেয়ালে সেঁটে দিয়েছিলেন। টুইটের ওই কথা ছাড়াও নিজ থেকে আরও লিখেছিলেন, পুরুষরা মেয়েদের শরীরকে ধর্ষণ করে, পোশাককে নয়। এসবের জন্য এলোনে নিন্দিত নন্দিত দুই-ই হয়েছেন। এলোনে বলেছেন, মানুষকে একটু নাড়া খাওয়ানোর জন্য তিনি ইচ্ছে করেই স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেছিলেন। সেক্সিজম যে প্রতিদিনকার সমস্যা তা তাঁর মনে হয়েছে সবাইকে জানানো দরকার। এলোনে টের পেয়েছেন, পিরিয়ডকে ধর্ষণের সঙ্গে মিলিয়ে দিলে লোকদের বেশ অস্বস্তি হয়। ওই অস্বস্তি দিতে পারাটাই সাকসেস। এলোনে প্রথম স্যানিটারি প্যাড়কে শিল্পের পর্যায়ে তোলেননি। এর আগে ট্রেসি এমিন নামের একজন শিল্পী প্রেগনেন্সি টেস্টের পাশে একটা জারে পুরোনো ব্যবহৃত ট্যাম্পুন রেখেছিলেন। ওটাই ছিল ওর আর্ট। ওই আর্টটার নাম ছিল পেনটিংএর ইতিহাস-১। চিলির একজন আর্টিস্ট পাঁচ বছর ধরে জমানো পিরিয়ডের রক্তের একটা প্রদর্শনী করেছিলেন। প্রদর্শনীটা দেখে একজন মন্তব্য করেছিলেন, পুরুষের রক্ত উৎযাপন হয়, কারণ এ রক্ত সাহসের, আর আমাদের মেয়েদের রক্তকেই চিরকাল লজ্জার বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। চাবুকের মতো গায়ে লাগে এই সত্যটা।

    ভারতের জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে স্যানিটারি প্যাডের প্রতিবাদ। যাদবপুরে এসে থামলে চলবে না। প্রতিবাদকে সারা উপমহাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রতিবাদের এই ভাষাটি সার্থক এই কারণে যে, এই ভাষাটি ভদ্রলোকদের পছন্দ হচ্ছে না। ওদের পছন্দের ভাষা দিয়ে ওদের পছন্দের পুরুষতন্ত্রের প্রতিবাদ করলে প্রতিবাদটায় জোর থাকে না। যে ভাষা এতকাল ব্যবহৃত হয়েছে, সেই ম্যাড়ম্যাড়ে ভাষা পাল্টে আরও তীব্র, তীক্ষ্ণ ভাষা ব্যবহারের সময় এসেছে। নিষিদ্ধ রক্তমাখা কাপড় পতাকার মতো উড়িয়ে প্রতিবাদ হোক পুরুষতন্ত্রের, নারীবিদ্বেষের। পুরুষের শেখানো ভাষায়, পুরুষের দেখানো পথে এতকাল মেয়েরা হেঁটেছে, এবার নিজেদের মতো করে হাঁটুক।

    নারীর না হয়ে ঋতুস্রাব যদি পুরুষের হতো, তবে কিন্তু ঋতুস্রাবের রক্ত নিয়ে সমাজে লজ্জা করার কিছু থাকতো না। বরং পুরুষের ওই রক্তকে পবিত্র বলে ঘোষণা করা হতো, ওদের রক্তকে পুজোও করা হতো, ওদের স্যানিটারি প্যাডকে ওরা অত্যন্ত গৌরবের সঙ্গে প্রদর্শন করতো। নারীর ঋতুস্রাবের রক্তকে পুরুষেরা এতকাল ঘৃণা করেছে, এই রক্তকে অপবিত্র বলেছে, আজ নারীরাই তাদের রক্তকে পবিত্র বলে ঘোষণা করুক। এই পবিত্র রক্ত দিয়ে লিখে রাখুক যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে তাদের গর্জে ওঠার কাহিনী।

    ২.ছাত্র রাজনীতির ভাষা খুব একটা বদলাচ্ছে বলবো না। তবে কিছুটা তো বদলানোর চেষ্টা হচ্ছে। ছাত্র আন্দোলন এখনও নারী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়নি। মাঝে মাঝে দুএকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের ওপর যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ হচ্ছে, এই যা। ছাত্রছাত্রী উভয়ে মিলে প্রতিবাদ করছে। কিন্তু এই প্রতিবাদে যোগ না দেওয়া ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যাও কিন্তু প্রচুর। এটুকু প্রতিবাদ, এটুকু রুখে ওঠা যথেষ্ট নয়। এই প্রতিবাদ ছড়িয়ে দিতে হবে সর্বত্র। নারী-আন্দোলনকে নারীদের নিজস্ব আন্দোলন ভাবাটা ঠিক নয়। নারীর সমস্যা সমাজের সমস্যা। সমাজের সমস্যার সমাধান করতে সমাজের সবার অংশগ্রহণ জরুরি। সামাজিকভাবে না হলে, রাজনৈতিকভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। ছাত্ররা সমাজের সচেতন শ্রেণী। এই শ্রেণী যদি নারীর মানবাধিকার লঙ্নের প্রতিবাদ না করে, তবে করবে কে? নারীর সমানাধিকারের প্রয়োজনীয়তাকে অবজ্ঞা করে যে রাজনীতি, সে রাজনীতি কোনোমতেই সুস্থ রাজনীতি নয়।

    ৩. স্যানিটারি ন্যাপকিন সাঁটিয়ে আন্দোলন করাটা, আমি মনে করি, অভিনব এবং নান্দনিক। আগেই বলেছি নারীবিদ্বেষীদের গায়ে এই আন্দোলনটা জ্বালা ধরাচ্ছে বলে এই আন্দোলনটার সফল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। পুরুষেরা যখন জামা খুলে বুকে পিঠে গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক লিখে মিছিলে হাঁটে, মানুষ মুগ্ধ হয়, কবিরা তাদের নিয়ে কাব্য লেখেন, শিল্পী ছবি আঁকেন, চিত্রপরিচালক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, চারদিকে তাদের জনপ্রিয়তা হৈরৈ করে বাড়ে। আর ফেমেন গোষ্ঠীর যে মেয়েরা খোলা বুকে-পিঠে একই জিনিস লিখে রাস্তায় হাঁটে, পুলিশ দৌড়ে এসে চ্যাংদোলা করে তাদের সবকটাকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। স্লোগান লেখা পুরুষের খোলা শরীর গৌরবের, আর স্লোগান লেখা নারীর খোলা শরীর লজ্জার,ঘৃণার,সংকোচের! খোলা বুকে ফেমেনের যে প্রতিবাদ, তাকে নান্দনিক বলবে না সমাজের ভদ্রলোকরা। ফেমেনের প্রতিবাদ ভদ্রলোকদের অস্বস্তি দেয়। অস্বস্তি দেয় বলেই নারীর সমস্যা নিয়ে ফেমেনের প্রতিবাদগুলো সাড়া ফেলেছে, মানুষ উঠে বসেছে, সমস্যাগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করছে, সচেতন হচ্ছে।

    যারা অভিযোগ করছে স্যানিটারি ন্যাপকিন সাঁটিয়ে আন্দোলন করাটা নান্দনিক নয়, তাদের বলছি– যৌনহেনস্থা নান্দনিক নয়, ধর্ষণ নান্দনিক নয়, ডমেস্টিক ভায়োলেন্স নান্দনিক নয়, তবে এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদটাকে কেন নান্দনিক হতে হবে?

    এই সব সমালোচক ভদ্রলোক সমাজে আগেও ছিল, এখনও আছে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে এদের সংখ্যাটা অনেক বেশি। এদের মূল্য দেওয়ার আদৌ কোনও প্রয়োজন নেই। এরা মেয়েদের নিতান্তই যৌন সামগ্রী ছাড়া আর কিছু বলে ভাবতে পারে না। এরা যত শীঘ বিলুপ্ত হয়, তত শীঘ্র আসবে সমাজের মঙ্গল।

    ৪. যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে যাদবপুরের আন্দোলন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীদের জানাচ্ছি আমার সংগ্রামী অভিনন্দন। সারা দেশে কন্যাশিশু হত্যা, বাল্য বিবাহ, পণপ্রথা, বধূনির্যাতন, বধূহত্যা, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, খুন, ঘৃণা, ইত্যাদির শিকার হচ্ছে মেয়েরা। মেয়েদের নিরাপত্তা কোথাও নেই, ঘরে নেই, রাস্তা ঘাটে নেই, এমনকী সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠেও নেই। যে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কার, অন্ধত্ব, বৈষম্য থেকে মুক্ত হওয়ার কথা, নারী-পুরুষের সমানাধিকার বিষয়ে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জ্ঞান দেয়, শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করে, সচেতন করে, আলোকিত করে — সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থা ঘটে, এর চেয়ে লজ্জা আর কী আছে। সবচেয়ে সুস্থ, শিক্ষিত, সচেতন, চরিত্রবান, আদর্শবান নাগরিক তো আশা করি আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই! নারী-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীকেই সরব হতে হবে। প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হলেই সত্যিকার শিক্ষিত হওয়া হয় না। নারীকে যারা যৌনবস্তু ঠাওরায়, তাদের আদৌ শিক্ষিত বলে গণ্য করা উচিত নয়।

    ৫. স্যানিটারি প্যাড নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা হয় না। দোকান থেকে প্যাড কিনলে দোকানী নিজ দায়িত্বে বাদামি কাগজের ঠোঙায় প্যাড ঢুকিয়ে দেয়, যেন বাইরে থেকে কেউ বুঝতে না পারে এটা স্যানিটারি প্যাড। যারা ঋতুস্রাবকে নোংরা আর অপবিত্র বলে, তারাই স্যানিটারি প্যাড নিয়ে নাক সিঁটকাবে। তাই তো স্বাভাবিক। স্যানিটারি প্যাড নিয়ে আজ আলোচনা শুরু হয়েছে, আলোচনা হতে হতেই একসময় এ নিয়ে আলোচনাটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

    ধর্ষণ আর যৌনতা নিয়ে আজকাল আলাপ আলোচনা হয়। কিন্তু আগে এ দুটো বিষয় নিয়ে আলাচনা হওয়ার জো ছিল না। দুটোই ছিল ট্যাবু সাবজেক্ট। বেড়ালের গলায় ঘন্টা বেঁধেছে কেউ। আলোচনা অল্প সল্প শুরু করেছে। এখন এটি অল্পে সল্পে সীমাবদ্ধ নেই।

    ৬. যাদবপুরের আন্দোলন যদি রাজ্য সরকার ভালো চোখে না দেখে, তাহলে বুঝতে হবে রাজ্য সরকার নারীর অধিকারকে ভালো চোখে দেখে না। পুরুষতন্ত্র এমনই ভয়ংকর ক্ষমতাধর যে নারীকেও বাধ্য করে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা গ্রহণ করতে। বদ-পুরুষের মতো অনেক নারীও ধর্ষণের জন্য দোষ দেয় ধর্ষিতাকে। যদি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাটাকে অন্যায় বলে ধরে নেয় যাদবপুরের প্রশাসন, তবে বুঝতে হবে ওই প্রশাসন আজ নারীবিদ্বেষীদের দখলে। চারদিকে শুধু সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত, সত্যিকার শিক্ষিত মানুষের বড় অভাব। এখন তরুণদের ওপর ভরসা। ওরাই জীর্ণ পুরাতনকে বিয়ে করবে।

    ৭. আমার আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ডে আমি আমার শৈশবের কথা লিখেছি। ১৮ বছর আগের লেখা বই আমার মেয়েবেলা। এখনও মানুষ পড়ছে। এখনও পাঠকের কাছে এই বইটি খুব প্রিয়। যে কথা বলতে হয়না, সে কথা আমি বলেছি। বলাটা উচিত বলেই বলেছি। না বলার পেছনে কোনও যুক্তি দেখিনি বলেই বলেছি। লোকে নিন্দা করবে, ছিঃ ছিঃ করবে, তা নিয়ে দুর্ভাবনায় পড়ার মানুষ আমি নই। আমার মেয়েবেলা পড়ে প্রচুর মেয়ে আমাকে বলেছে, তাদের জীবনেও ওই ঘটনাগুলো ঘটেছে যা আমার জীবনে ঘটেছে। পার্থক্য শুধু এই, আমি মুখ ফুটে বলেছি, তারা বলতে পারেনি। আমি না হয় অনেক মেয়ের হয়েই লিখলাম। লেখা পড়ে ওদের অনেক নির্ভার লাগে। ওরাও সাহস সঞ্চয় করে, ওরাও আমার মতো করে বলতে চেষ্টা করে, বলে, ঘুরে দাঁড়ায়। এভাবেই সমাজের পরিবর্তন হয়। ঢাক ঢোল পিটিয়ে। পরিবর্তন চাই বললেই পরিবর্তন চলে আসে না। পরিবর্তনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হয়। হাজার বছরের পুরুষতান্ত্রিক সংস্কারকে অস্বীকার করতে বুকের পাটা লাগে। সেই বুকের পাটাটা অর্জন করা সহজ নয়।

    আমার ঋতুমতী হওয়ার কাহিনী বর্ণনা করেছি বলে, অথবা কিভাবে যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছি আমি, সেই গল্পটা দ্বিধাহীন বলেছি বলে যারা আমার নিনে করেছে, যারা আমার সত্য বলাটা অপছন্দ করেছে তাদের আমি বড় করুণার চোখে দেখি, তাদের ক্ষুদ্রতার সঙ্গে আমি কোনওকালেই আপোস করি না। ওইসব লেখাতে বাংলাদেশে আমার মেয়েবেলা বইটি হাসিনা সরকার অশ্লীলতার দোষ দিয়ে নিষিদ্ধ করেছে ১৯৯৯ সালে। বইটি আজও ও দেশে নিষিদ্ধ। ছোটলোকরা তো বলেই বেড়িয়েছে, আমি বেশ্যা। বেশ্যা না হলে, তারা বিশ্বাস করে না, নিজের ওপর যৌন হেনস্থার বর্ণনা এত নির্লজ্জ ভাবে কোনও ভদ্রঘরের মেয়ে দিতে পারে। অনেক বড় বড় লেখক পর্যন্ত বলেছেন, তোমার মেয়েবেলাটা ভালোই লিখেছিলে, তবে ওই যৌনতার বর্ণনাটা দেওয়ার দরকার ছিল না। ওটা ভালগার। হ্যাঁ আমি তোমাদের বদমাইশির কথা লিখলে সেটা ভালগার, আমি আমার শরীরের কথা লিখলে সেটা অশ্লীল। আর তোমরা যখন নারীর শরীরের বর্ণনা দাও, যৌন সঙ্গমের বর্ণনা দাও, সেটা শিল্প। নারীর শরীর নিয়ে পুরুষরা লিখলেই আর্ট, আর নারীরা লিখলেই অশ্লীলতা, বেশ্যাদের মতো কাজ। এই নষ্ট সমাজ থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু হয়তো আশা করাও যায় না।

    মেয়েরা যদি পুরুষের শেখানো ভাষায় না লেখে, কী বলবে-কতটুকু বলবে কোথায় সীমা টানবে— এই রুলটা না মানে, তবে পুরুষতান্ত্রিক লোকদের বড় রাগ হয়। এই সমাজে যে মেয়েরা নারীবিরোধীদের গায়ে রাগ না ধরাতে পারে, যে মেয়েরা নারীবিরোধীদের কাছ থেকে নষ্ট, স্লাট, বেশ্যা ইত্যাদি আখ্যা না পায় — সেই মেয়েদের নিয়ে খুব বেশি আশা করার নেই।

    নারীবিরোধী সমাজের সঙ্গে আপোস যারা করে না, যারা অবাধ্য, যারা নিয়ম ভাঙে, তারাই সমাজ পাল্টায়। তারাই বিবর্তন ঘটায়। আমি তাদেরই স্যালুট করি।

    ৮. রূপী কৌরের ঋতুস্রাবের রক্তমাখা ছবিটা দুর্দান্ত। দিপিকা পাড়ুকোনের মাই চয়েজ ভিডিওটাও অসাধারণ। মেয়েরা শেষ অবধি কথা বলছে। যাদবপুরেও মেয়েরা জেগে উঠেছে। মানবসভ্যতা টিকিয়ে রাখতে হলে এই জাগরণটার ভীষণ প্রয়োজন। মানুষ-প্রজাতির এক দল তার নিজের প্রজাতিকে কেবল ভিন্ন লিঙ্গ হওয়ার কারণে নির্যাতন করছে, বঞ্চিত করছে, লাঞ্ছিত করছে, হেনস্থা করছে, এবং হাজার হাজার বছর ধরে এটা চলছে; গায়ের জোরে, পেশির জোরে, অশিক্ষা আর কুশিক্ষার জোরে চলছে –ভাবলে শিউরে উঠি। আরও হাজার বছর আগেই উচিত ছিল এই জাগরণের। নারী পুরুষকে এক মিছিলে হাঁটতে হবে সমানাধিকারের দাবিতে। আমরা পেশি দিয়ে সমাজ চালাই না, বুদ্ধি দিয়ে চালাই। সুতরাং যার পেশির জোর বেশি, সে বেশি মুল্যবান, যার পেশির জোর কম, সে কম মুল্যবান–এভাবে ভাবাটা হাস্যকর। নারী তার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পেলে নারীর চেয়ে পুরুষই বেশি উপকৃত হবে। সঙ্গিনী হিসেবে শিক্ষিত স্বনির্ভর সমকক্ষ নারীকে পাওয়া আর দাসি বাঁদিকে পাওয়ার মধ্যে বিরাট পার্থক্য।

    নারী-পুরুষের বৈষম্য ঘোচানোর দায় নারীর একার নয়। এ বৈষম্য ঘোচানোর দায় সব মানুষের। যে মানুষেরা সচেতন, যে মানুষেরা চেঁচালে, চেষ্টা করলে বৈষম্য ঘোচে, দায়িত্বটা তাদেরই নিতে হবে। নারী-পুরুষের বৈষম্য যতদিন থাকবে ততদিন মানবজাতিকে সভ্য জাতি বলার কোনও যুক্তি নেই। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই নারীবিরোধী পুরুষরা পুরুষরক্ষা সংগঠন, পুরুষাধিকার সংস্থা ইত্যাদি গড়ে তুলেছে। এসব সংগঠন নারীবিরোধিতা, নারীবিদ্বেষ, নারীঘৃণা প্রচার করতে সারাক্ষণই ব্যস্ত। আমার খুব ভালো লাগে, যখন দেখি পুরুষরা নারীর অধিকারের পক্ষে মিছিলে নামছে। এই পুরুষের সংখ্যা খুব বেশি নয়, কিন্তু এই সংখ্যাটা বাড়ুক, চাই। এই সংখ্যাটা বাড়লেই সমাজে পরিবর্তন আসবে। যে পুরুষরা নারীকে ধর্ষণ করে, খুন করে, তারা আজ প্রতিজ্ঞা করুক আজ থেকে কোনও নারীকে তারা ধর্ষণ করবে না বা খুন করবে না। যে পুরুষরা নারী নির্যাতনে বেশ হাত পাকিয়েছে, তারা আজ প্রতিজ্ঞা করুক নারী নির্যাতন আর করবে না। যে পুরুষেরা যৌন হেনস্থা করে, তারা আজ থেকে বন্ধ করুক যৌন হেনস্থা। আজ থেকে সংসারের যাবতীয় কাজ, নিজেদের সন্তান-পালন, নিজেরা মিলেজুল করুক। আজ থেকে বাইরের দুনিয়ার কাজ নারী-পুরুষ উভয়ে করুক, স্বনির্ভর আর পরনির্ভরের সংসারের বদলে সংসার হয়ে উঠুক দুজন স্বনির্ভর মানুষের সংসার। আজ থেকে নারী আর পুরুষের সমতা আসুক সংবিধানে, রাষ্ট্রে, আইনে, সমাজে, পরিবারে, অফিসে, আদালতে, রাস্তা-ঘাটে, বাসে, ট্রেনে, জাহাজে, লঞ্চে সর্বত্র। নারী-পুরুষের মধ্যে গড়ে উঠুক সত্যিকারের বন্ধুতা। প্রভু-দাসির সম্পর্কটা, উঁচু নিচুর সম্পর্কটা সম্পূর্ণ নির্মূল হোক।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন
    Next Article ছোট ছোট দুঃখ কথা – তসলিমা নাসরিন

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    ফেরা – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    লুব্ধক – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    হারবার্ট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.