Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    লুব্ধক – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    হারবার্ট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আমার প্রতিবাদের ভাষা – তসলিমা নাসরিন

    তসলিমা নাসরিন এক পাতা গল্প401 Mins Read0

    পতিতাপ্রথা বন্ধ হোক

    পতিতাপ্রথা বন্ধ হোক

    পতিতাপ্রথা নির্মূল করার জন্য ফ্রান্সে চমৎকার একটা আইন পাশ হয়ে গেল। মূল কথা হলো, শরীর বেচতে পারো তুমি, কিন্তু শরীর কিনতে পারো না। ধরা পড়লে পতিতার খদ্দেরকে পনেরোশ ইউরো জরিমানা দিতে হবে। পনেরোশ ইউরো বাংলাদেশের টাকায় এক লক্ষ আটান্ন হাজার আটশ তিপান্ন। পতিতাদের জন্য কোনও জরিমানা বা শাস্তির ব্যবস্থা নেই। বঞ্চিত, লাঞ্ছিত, দুঃখিতা, নির্যাতিতা মেয়েদের বাঁচাবার জন্য আসলে শরীর বেচা অন্যায় নয়, পতিতাপ্রথা নির্মূল আইনে এই অংশটির অবতারণা। পতিতাপ্রথা বন্ধ করার আইন অনেক দেশই করেছে, কিন্তু সুইডেনই প্রথম এই অভিনব আইনটি তৈরি করেছিল, যৌন সম্পর্কের জন্য শরীর বিক্রি করা অন্যায় নয়, শরীর কেনা অন্যায়। কিন্তু এখানেই সবকিছুর শেষ নয়। পতিতাদের জন্য নতুন চাকরি বা ব্যাবসার ব্যবস্থা করা দেওয়া তো আছেই, অন্যের যৌন পুতুল না হয়ে নিজের মান মর্যাদা নিয়ে নতুন জীবন যাপনে যাওয়ার পথও তাদের দেখিয়ে দেওয়া হয়। সুইডেনের আইনটি ইউরোপের অনেক দেশকেই প্রভাবিত করেছে, এবং অনেক দেশই সুইডেনের এই আইনটি গ্রহণ করেছে। ফ্রান্সের প্রথম নারী অধিকার মন্ত্রী নাজাত বেলকাসেম ফ্রান্সে এই পতিতাপ্রথা বিলুপ্তির আইনটি পাশ করার ব্যাপারে সেদিন আমার একটা লেখা বের হয়েছে লা মন্দ নামের ফরাসি পত্রিকায়। নাজাত খুব উচ্ছ্বসিত আমার লেখাটি নিয়ে। নাজাত কিন্তু জাতে ফরাসি নন, মরক্কোর মেয়ে, মুসলমান। কিন্তু ফান্সেই লেখাপড়া করেছেন, বেড়ে উঠেছেন। তিরিশের কোঠায় বয়স, নারীবাদী, সংগ্রামী।

    বাংলাদশ থেকেও যেন অচিরে পতিতাপ্রথার বিলুপ্তি ঘটে। সমগ্র বিশ্ব থেকেই যেন নারীবিরোধী এই প্রথাটি নির্বংশ হয়। ব্যাপারটি সোজা নয়, পতিতাপ্রথা টিকিয়ে রাখার জন্য নানা মহল উদগ্রীব, এতে কিছু নারী সংগঠন যেমন আছে, স্বয়ং পতিতারাও আছে।

    ক্রীতদাসপ্রথার সঙ্গে পতিতাপ্রথার মূলত কোনও পার্থক্য নেই। ক্রীতদাসরা যখন তুলো ক্ষেতে চাষের কাজ করতো, দাসমালিকরা প্রায়ই সশরীরে উপস্থিত হয়ে কিছু ক্রীতদাসীকে যৌনকর্মের জন্য তুলে নিয়ে যেতো। ত্বক যাদের একটু কম কালো, সাধারণত তাদেরকেই পছন্দ করতো। বাজারে নিয়ে যৌন ব্যবসার জন্য ভাড়া খাটাতো, নয়তো সরাসরি পতিতালয়েই তাদের নগদ টাকায় বিক্রি করে দিতো। আঠারো/উনিশ শতকে যে প্রথাটিকে বলা হতো ক্রীতদাস প্রথা, বিংশ/একবিংশ শতকে সেই প্রথাকে বলা হচ্ছে পতিতাপ্রথা।

    উনিশ শতকে ক্রীতদাসপ্রথার বিলুপ্তির সময় মানুষের ক্রয় বিক্রয় নিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল বিরাট বিতর্ক। ক্রীতদাসদের মুক্তির প্রশ্ন উঠলে সমাজের অনেক সাদা ভদ্রলোক মন্তব্য করেছিলো, আফ্রিকার কালো মানুষগুলো আসলে ক্রীতদাস হিসেবেই ভালো আছে। স্বাধীনতা উপভোগ করার কোনও অধিকার বা যোগ্যতা তাদের নেই। সত্যি কথা বলতে কী, এই ক্রীতদাসদাসীগুলোর সঙ্গে যত না মানুষের মিল, তার চেয়ে বেশি জন্তু জানোয়ারের মিল।

    শুধু সাদারা নয়, অনেক ক্রীতদাসীও এই প্রথার বিলুপ্তি চায়নি। বিশেষ করে সেই ক্রীতদাসীরা, যারা মালিকদের বাড়িতে বাচ্চাকাচ্চা দেখাশোনা, রান্না বান্না আর ঘরদোর পরিষ্কারের কাজ করতো। তাদের অবস্থা হাড়ভাঙা খাটুনি খাটা চাষের ক্ষেতের ক্রীতদাসীদের চেয়ে ভালো ছিলো। মালিকদের বাড়ির খাবার খেয়ে, যদিও উচ্ছিষ্ট, তৃপ্তই ছিলো বাড়ির ক্রীতদাসীরা। আসলে ক্রীতদাসীর জীবন ছাড়া অন্য কোনও জীবনের কথা তারা নিজেদের জন্য ঠিক কল্পনাও করতে পারতো না। বাড়ির ক্রীতদাসীরা না চাইলেও ক্ষেতের ক্রীতদাসীরা কিন্তু ক্রীতদাসপ্রথার বিলুপ্তি চেয়েছিলো।

    আমরা আজ সেই ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি করছি। পতিতাপ্রথার পক্ষে সাধারণত যারা মুখর তারা নিজেরা কখনও পতিতা ছিলোনা বা যৌনব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলো না, পতিতালয়ের বা পতিতাপ্রথার নির্যাতন তাদের সইতে হয়নি। যৌনব্যবসায় জড়িত এমন অনেক মেয়েও পতিতাপ্রথার পক্ষে বলছে। তারা বলছে, অন্য যে কোনও শ্রমের মতো পতিতাবৃত্তিও শ্রম। আগ বাড়িয়ে এও কেউ কেউ বলছে যে এই শ্রম নাকি সমাজে মেয়েদের ক্ষমতায়নে সাহায্য করছে।

    কলগার্ল হিসেবে যারা কাজ করে, ম্যাডামএর ভূমিকায় যারা, তাদের অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে রাস্তার পতিতাদের চেয়ে ভিন্ন। তাই পতিতাদের উঁচু শ্রেণী, মাঝারী শ্রেণী, আর নিচু শ্রেণীতে ভাগ করার একটা প্রবণতা দেখা দেয়। এ কিন্তু অনেকটা সেই ক্রীতদাসীর শ্রেণীভাগের মতো। বাড়ির ক্রীতদাসীরা উঁচু শ্রেণীর ক্রীতদাসী, আর ক্ষেতে খাটা ক্রীতদাসীরা নিচু শ্রেণীর ক্রীতদাসী। তা ঠিক, তবে সবচেয়ে নিষ্ঠুর সত্য হলো, তারা সবাই ক্রীতদাসী। এক মালিকের অধীনেই তাদের দাসত্ব করতে হয়েছে। দাসত্ব চকচক করলেই দাসত্বের সংজ্ঞা পাল্টে যায় না। যে মেয়েরা আজ এই পতিতাপ্রথার ভেতরে থেকে এই প্রথার পক্ষে কথা বলছে, এই প্রথা থেকে তারা না বেরিয়ে এলে তাদের পক্ষেও বোঝা সম্ভব নয় প্রথাটি ঠিক কী। বাড়ির ক্রীতদাসীদেরও ক্রীতদাসপ্রথার বাইরে এসে বুঝতে হয়েছে ক্রীতদাসপ্রথাটা ঠিক কী ছিল।

    ক্রীতদাসপ্রথা আর পতিতাপ্রথার মূলে আছে খাঁটি দাসত্ব। শুধু পরিচয়টা দুক্ষেত্রে ভিন্ন হতে হয়। পতিতাপ্রথার জন্য দরকার যৌন পরিচয়, ক্রীতদাসপ্রথার জন্য দরকার বর্ণ পরিচয়। এই দুই প্রথা ও প্রতিষ্ঠান একই প্রকৃতির। একই প্রক্রিয়ায় মানুষের ওপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালানো হয়। মানুষকে অসম্মানিত, অপমানিত, নির্যাতিত ও নিগ্রীহিত করা হয়।

    এই পৃথিবীতে মেয়েদের বিরুদ্ধে একটা যৌনযুদ্ধ চলছে। দীর্ঘ দীর্ঘ কাল এই যুদ্ধটা চলছে। এটাকে পৃথিবীর প্রাচীনতম পেশা বলে লোককে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা হয় বটে, আসলে এটা কিন্তু প্রাচীনতম পেশা নয়, এটা বরং মেয়েদের বিরুদ্ধে পৃথিবীর প্রাচীনতম নির্যাতন। শুধু প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের বিরুদ্ধে বলাটা ঠিক নয়, মেয়েশিশুদের বিরুদ্ধেও বটে। আজ বিশ্বের প্রায় সর্বত্র শিশুদের জোর জবরদস্তি করে, ভয় দেখিয়ে, ধর্ষণ করে, মেরে আধমরা করে যৌনক্রীতদাসী বানানো হচ্ছে। পুরুষের যৌনক্ষুধা মেটাতে, পুরুষের শরীরকে কিছুক্ষণের জন্য পুলক দিতে লক্ষ কোটি অসহায় মেয়ে ও শিশুকে বেঁচে থাকার সর্বসুখ বিসর্জন দিতে হচ্ছে, মানুষ হয়েও মানুষের ন্যূনতম অধিকার থেকে তারা নিজেদের বঞ্চিত করতে বাধ্য হচ্ছে।

    পতিতাপ্রথার সহজ সংজ্ঞা হলো, মেয়েদের বিরুদ্ধে পুরুষের যৌন নির্যাতন। আরও একটু খুলে বললে পতিতাপ্রথার মানে মেয়েদের বিরুদ্ধে পুরুষের যৌন হেনস্থা, ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, মেয়েদের ওপর পুরুষের অবাধ আধিপত্য, মেয়েদের মানবাধিকার লঙ্খন। এসব যদিও যে কোনও গণতন্ত্রে আইনত নিষিদ্ধ, কিন্তু গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পতিতালয়ের ভেতরে এসব বহাল তবিয়তে চলছে। যতটা ঘৃণ্যতম, কুৎসিততম, জঘন্যতম, উৎকটতম, কদর্যতম, নিকৃষ্টতম ব্যবহার কোনও মেয়ের সঙ্গে করা সম্ভব পুরুষের, তা নির্দ্বিধায় পুরুষেরা করে পতিতাদের সঙ্গে। যদিও এই ব্যবহার করলে আইনের চোখে তারা অপরাধী, কিন্তু পতিতাবৃত্তিকে বৈধ করলে এইসব অপরাধকে আপনাতেই বৈধ বলে মেনে নেওয়া হয়।

    বাংলাদেশে কত কোটি পতিতা এখন, জানি না। সম্ভবত পৃথিবীর অনেক দেশের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। অভাবের তাড়নায় বাবার বিক্রি করে দিয়েছে মেয়েকে। প্রতারক প্রেমিকেরা বিক্রি করেছে, স্বামীরা জোর করে পতিতালয়ে পাঠিয়েছে যেন শরীর বেচে টাকা রোজগার করে স্বামীর ঘূর্তির আর সংসারের খরচ চালায়। পতিতাবৃত্তির সঙ্গে নারীপাচার অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এ দুটো একে অপরের পরিপুরক। যারা দাবি করে পতিতালয়ের সব মেয়েই প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে, স্বেচ্ছায় এই পেশায় নাম লিখিয়েছে, তারা মিথ্যে বলে। পতিতালয়ের মেয়েদের বেশির ভাগই শিশু, বেশির ভাগকেই জোর করে বা ভুলিয়ে ভালিয়ে বা অপহরণ করে এনে বিক্রি করা হয়েছে। পতিতার জীবন সাধারণত মেয়েরা বারো তেরো বছর বয়সে শুরু করে। ওই বয়সে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার কোনও স্বাধীনতা থাকে না, নানারকম বয়স্ক পুরুষের ধর্ষণ থেকে নিজেকে বাঁচানোর কায়দাও জানা থাকে না।

    পতিতাবৃত্তিতে মেয়েদের দারিদ্র ঘোচে না। কোটি কোটি টাকা যা আয় হচ্ছে যৌন-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে, সেসব টাকা পতিতাদের বা নির্যাতিত মেয়েদের হাতে পৌঁছয় না। মেয়েরা প্রতিদিন নারী পাচারকারী, আর দালালের ভয়াবহ সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। মেয়েরা এই যৌন নির্যাতন থেকে বেরোতে চায়, কিন্তু তাদের বেরোতে দেওয়া হয় না। পছন্দমতো কোনও পেশা বেছে নেওয়ার কোনও অধিকার তাদের নেই।

    নারী নির্যাতনকে কোনও না কোনও যুক্তিতে যারা মেনে নেয়, তারা দিব্যি দাবি করে মেয়েরা স্বেচ্ছায় পতিতা হয় না। কোনও মেয়েই শখ করে, পছন্দ করে, সংগ্রাম করে পতিতা হয় না। অন্য কোনও বৃত্তিতে যাওয়ার জন্য যত সংগ্রাম আছে, সেই সবকটি সংগ্রামে ব্যর্থ হয়েই পতিতা হয়। মেয়েরা স্বেচ্ছায় অসম্মানিত, অপমানিত আর অত্যাচারিত হতে চায় না। মেয়েরা স্বেচ্ছায় গ্রহণ করে না যৌন নির্যাতন।

    পতিতা বানাতে মেয়েদের বাধ্য করে পুরুষেরা। যদি মেয়েরা চায় পতিত হতে, নিশ্চয়ই কোনও না কোনও কারণে বাধ্য হয়ে চায়। বাধ্য হয়ে চাওয়া আর স্বেচ্ছায় চাওয়ার মধ্যে এক সমুদ্র ব্যবধান। কোনও মেয়ে শখ করে আগুনে ঝাঁপ দেয় না। সতীদাহের আগুনে মেয়েদের ছুঁড়ে দিয়ে বলা হতো মেয়েরা স্বেচ্ছায় ওই আগুনে ঝাঁপ দিয়েছে। যে বউরা স্বামীর মার খায়, সেই বউদেরও বলা হয় স্বামীর মার খেতে তাদের ভালো লাগে। যারা চায় বউরা স্বামীর মার খাক, তারাই এই রটনা রটায়।

    ক্রীতদাসরা যেমন চাইতো ক্রীতদাসপ্রথার বিলুপ্তি, পতিতারাও পতিতাপ্রথার বিলুপ্তি চায়। যে ব্যবসায়ীরা মেয়েদের যৌনবস্তু বানিয়ে ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছে, তারা মেয়েদের মুখ দিয়ে বলাতে চায় যে মেয়েরা পতিতা প্রথাকে টিকিয়ে রাখতে আগ্রহী। মেয়েদের মানবাধিকারের ব্যাপারটি যেন গণনার মধ্যে আনা না হয়, তাই এই আয়োজন। আর তা ছাড়া, ক্রীতদাস হতে চাই বলে কেউ যদি চিৎকার করে, তাকে কি ক্রীতদাস হওয়ার সুযোগ করে দেবো। কেউ যদি বলে শেকলে বেঁধে তাকে প্রকাশ্যে পেটানো হোক। পেটাবো? নিশ্চয়ই তাকে মানসিকভাবে সুস্থ করে তোলার ব্যবস্থা করবো, আর যেসব কারণে অন্যায় আবদার সে করছে বা করতে বাধ্য হচ্ছে, সেই কারণগুলো দূর করবো।

    মানুষের ওপর ঘৃণ্য আর অমানবিক নির্যাতনের কারণে ক্রীতদাসপ্রথা আজ বিশ্বে নিষিদ্ধ। কিন্তু কী কারণে পতিতাপ্রথাকে আজও পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ নির্মূল করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না! গর্দভরা গালভরে উচ্চারণ করছে যে যুক্তিহীন কারণগুলো, সেগুলো কিন্তু সত্যিকার কারণ নয় যে এই প্রথাটি টিকে ছিলো, সুতরাং টিকে থাকবেই অথবা বাজে চরিত্রের মেয়েরা এই পেশা চালিয়ে যাবেই। এই প্রথাটি মেয়েদের মন্দ চরিত্রের জন্য নয়, ক্ষমতাবান এবং বদ পুরুষেরা এই প্রথাকে ছলে বলে কৌশলে টিকিয়ে রাখছে বলে টিকে আছে। আরও একটি ভুল সংশোধনের প্রয়োজন আছে। শরীর বিক্রি করা কিন্তু পৃথিবীর প্রাচীনতম পেশা নয়। চাষ করা, হাতিয়ার বানানো বা ইত্যাদি ছিল মানুষের প্রাচীনতম পেশা। এক গোত্র আরেক গোত্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিনিময়ের মাধ্যমে বাণিজ্য করতো।

    আজ পতিতাপ্রথা বা যৌন নির্যাতন পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম তো বটেই, সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বেড়ে ওঠা সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এই কারখানার কাঁচামাল দুর্ভাগা, অনাথ, শিশুদের দরিদ্র আর প্রতারিত মেয়েদের শরীর।

    সভ্য দেশগুলো এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। দেশগুলোর মধ্যে সুইডেনই প্রথম নারীনির্যাতন ব্যবসাটিকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছে। পতিতাপ্রথাকে সরকারিভাবে নারীর ওপর পুরুষের জঘন্য যৌন নির্যাতন হিসেবে ঘোষণা করেছে সুইডেন। পতিতা ব্যবসাকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। তবে শরীর কেনা নিষিদ্ধ। যে পুরুষই শরীর কিনতে চায়, সেই অপরাধী হিসেবে গণ্য হয়। শরীর কেনার লোক না থাকলে, শরীরের বাজার হাট আপনাতেই উঠে যায়। পুরুষের আনন্দ স্ফুর্তির জন্য পুরুষরাই টিকিয়ে রেখেছে এই যৌন নির্যাতনের ব্যবসা। সুইডেনে শরীর বিক্রি কিন্তু নিষিদ্ধ নয়। নিষিদ্ধ নয় বলে দুর্ভাগা দরিদ্র মেয়েরা যারা শরীর বিক্রি করার জন্য রাস্তাঘাটে দাঁড়িয়ে থাকে বা এদিক ওদিক খদ্দের খুঁজে বেড়ায়, তারা পুলিশি হেনস্থার শিকার হয় না। অপদস্থ করা তো দূরের কথা, তাদের স্পর্শ করাও অপরাধ। কিন্তু যেই না কোনও পুরুষ কোনও মেয়েকে কিনতে নেবে, অমনি ক্রেতা পুরুষের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেওয়া হবে। নিরানব্বই সালে এই আইনটি জারি করার পর সুইডেনে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে পতিতাবৃত্তি। এভাবেই রোধ করা যায়। এই নারী নির্যাতন ব্যবসা। অনেকের প্রশ্ন, পতিতারা শরীর বিক্রি ছাড়া অন্য আর কোনও কাজ করতে পারবে কি না। প্রথমেই মনে রাখতে হবে পতিতাবৃত্তি কোনও পেশা নয়, পতিতাবৃত্তি নির্ভেজাল যৌন ক্রীতদাসীত্ব, যৌন নির্যাতন।

    ভারতের আইনে পতিতালয়ের ভেতরে মেয়েদের ওপর যৌন নির্যাতন চললে অসুবিধে নেই। পতিতালয়ের সীমানা ডিঙোলে ভদ্র পরিবেশকে কলুষিত করার দায়ে পতিতাদের লাঞ্ছিত করা হয়। যারা মূল অপরাধী, যারা নির্যাতনকারী, তাদের শাস্তি না দিয়ে মেয়েদের, নির্যাতিতদের দেওয়া হয় শাস্তি। ভারতেও যদি আজ সুইডেনের আইনের মতো শরীর ক্রয় করা নিষিদ্ধ হয়, তাহলে নারী নির্যাতনের ব্যবসা এত ফুলে ফেঁপে উঠবে না।

    পতিতাপ্রথাকে বৈধ করা মানে নারী নির্যাতনকে বৈধ করা। যে রাষ্ট্রে পতিতাপ্রথা বৈধ সেই রাষ্ট্র সত্যিকার কোনও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়। গণতন্ত্র মানবাধিকার নিশ্চিত করে, নারী পুরুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করে। কোনও সভ্যতা বা কোনও গণতন্ত্র মানুষের ওপর নির্যাতনকে ছল ছুতোয় মেনে নেওয়ার চেষ্টা করে না। করতে পারে না। যদি করে, সেই গণতন্ত্রের নাম নিতান্তই পুরুষতন্ত্র, আর সেই সভ্যতার নাম বর্বরতা ছাড়া অন্য কিছু নয়।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103 104 105 106 107 108
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন
    Next Article ছোট ছোট দুঃখ কথা – তসলিমা নাসরিন

    Related Articles

    তসলিমা নাসরিন

    সেইসব অন্ধকার – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    অগ্রন্থিত লেখার সংকলন – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    বন্দিনী – তসলিমা নাসরিন

    August 21, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নির্বাসন – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    নেই, কিছু নেই – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    তসলিমা নাসরিন

    ফেরা – তসলিমা নাসরিন

    August 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    লুব্ধক – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    হারবার্ট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.