Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025

    আমাদের সাদা বাড়ি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025

    আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প107 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৪. স্বামীর সংসার হাতে নেয়ার প্রবল বাসনা

    বিয়ের পর মেয়েদের ভেতরে স্বামীর সংসার হাতে নেয়ার প্রবল বাসনা দেখা যায়। মহানন্দে তারা সংসারের দায়িত্ব নিয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে। কী বাজার হবে, কী রান্না হবে তা নিয়ে মহা ব্যস্ততা। জানালায় নতুন পর্দা লাগানো। টিভিটা সরিয়ে নতুন জায়গায় রাখা। কাজের লোক দিয়ে বাথরুমের কমোড ঘষাঘষি করানো। সব কিছুতেই উৎসাহ।

    দস্তা-কন্যার ভেতর সে-রকম কিছুই দেখা গেল না। সে সারাক্ষণ ঘুরঘুর করছে আমার পেছনে। আমি বারান্দায় গেলে সেও বারান্দায়। আমি ছাদে গেলে সেও ছাদে।

    আমি বিকেল থেকে আমাদের বাড়ির পেছনের লেবুবাগানে কাজ করছি, সেও মোড়া পেতে আমার পাশে বসে আছে। লেবুবাগানে কাজ করার বিষয়টা আপনাকে বলি। আমি একটা অ্যাক্সপেরিমেন্টাল লেবুবাগান করেছি। সেখানে বারটা কাগজি লেবুর গাছ আছে। গাছগুলির তিনটা গ্রুপ করেছি। প্রতিটি গ্রুপে চারটা করে গাছ। একটা গ্রুপকে স্বাভাবিকভাবে বড় হতে দেয়া হচ্ছে। আরেকটা গ্রুপে কোনো পাতা গজাতে দেয়া হচ্ছে না। পাতা হওয়া মাত্র ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। এই গ্রুপের চারটা গাছই পুরোপুরি পত্রশূন্য। আরেকটা গ্রুপে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে। গরম বাতাস দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন বিকেলে এদেরকে দু’ঘণ্টা গরম বাতাস খাওয়ানো হয়। তিনটা গাছেই ফুল ফুটেছে। আমি দেখতে চাচ্ছি কোন গাছের লেবু কেমন হয়।

    দস্তা-কন্যা খুব আগ্রহ নিয়ে আমার কর্মকাণ্ড দেখছে। এক সময় সে বলল, এগুলি কেন করছ?

    আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম, সময় কাটানোর জন্যে করছি।

    তোমার কি সময় কাটে না?

    কাটে, তবে ভালোভাবে কাটে না।

    তোমার কি কোথাও বেড়াতে যেতে ইচ্ছা করে না?

    না।

    আত্মীয়স্বজনের বাসায় যেতে ইচ্ছা করে না?

    মা। তাছাড়া আমার তেমন আত্মীয়স্বজন নেই। আমাদের পরিবারের নিয়ম হচ্ছে, এই পরিবারের লোকজন বেশিদিন বাঁচে না। সামান্য অসুখেই এদের খেল। খতম হয়ে যায়। সর্দি জ্বর, ডায়েরিয়ার মতো নির্দোষ রোগে আমার দু’বোন মারা গেছে।

    বলো কী?

    অসুখ-বিসুখে যারা মারা যায় না তারা তাদের নিজেদের ব্যবস্থা নিজেরা করে।

    তার মানে?

    কেউ ঘুমের ওষুধ খায়, কেউ চলন্ত গাড়ির দরজা খুলে বড় রাস্তায় ঝাঁপ দিয়ে পড়ে।

    তুমি ঠাট্টা করছ। তুমি অবশ্যই ঠাট্টা করছ।

    আমি ঠাট্টা করছি এরকম মনে হচ্ছে কেন?

    তুমি হাসতে হাসতে কথা বলছ। হাসতে হাসতে কেউ এমন ভয়ঙ্কর কথা বলতে পারে না।

    শোন দস্তা-কন্যা, সব মানুষ একরকম না। কাগজি লেবু গাছ সবই একরকম, কিন্তু প্রতিটি মানুষই আলাদা। আমি আলাদা। তুমি আলাদা।

    হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে তুমি গাছে গরম বাতাস দিচ্ছ কেন?

    প্রতিটি কাগজি লেবু গাছ একই রকম, তারপরেও এদেরকে মানুষের মতো আলাদা করা যায় কি-না সেই পরীক্ষা করছি। External stimuli দিয়ে পরিবর্তনটা করার চেষ্টা করছি।

    আমার মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি ঠিক সুস্থ না।

    সুস্থতা ব্যাপারটা পুরোপুরি আপেক্ষিক। অনেকে হয়তো তোমাকেও অসুস্থ বলবে।

    কেন? আমি কী করলাম?

    এই যে তুমি সব কিছু ফেলে আমার সঙ্গে ট্যাগ হয়ে আছ, এটা অসুস্থতা? ছায়ার মতো আমার সঙ্গে লেগে আছ। অন্ধকারে ছায়া থাকে না। তুমি। অন্ধকারেও আছ।

    তুমি কি আমার কাজে বিরক্ত হচ্ছ?

    বিরক্ত হচ্ছি না। আবার পতিপ্রেম দেখে আনন্দে গদগদও হচ্ছি না। আমি সমান সমান আছি।

    সমান সমান আছি মানে কী?

    সমান সমান আছি মানে তোমার ছায়া-স্বভাব দেখে বিরক্ত হচ্ছি না, আবার খুশিও হচ্ছি না।

    ফ্রিজের ভেতর কয়েকটা পলিথিনের প্যাকেট দেখলাম। প্যাকেটে কী?

    প্যাকেটে রক্ত। মানুষের রক্ত। বি-পজিটিভ।

    রক্ত ফ্রিজে রেখেছ কেন?

    তুমি যা ভাবছ তা-না। রক্ত খাবার জন্যে রাখি নি। আমি ভ্যাম্পায়ার না। একটা অ্যাক্সপেরিমেন্ট করার জন্যে রক্ত এনে রেখেছি।

    গাছের গোড়ায় দেবে?

    ঠিক ধরেছ। তোমার বুদ্ধি খারাপ না।

    দস্তা-কন্যা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আমার এক দূরসম্পর্কের ভাই আছে। আমাদের বিয়ের সময় সে থাকতে পারে নি। সৌজন্য সাক্ষাতের জন্যে তার বাসায় একবার যাওয়া দরকার। তুমি কি যাবে?

    আমি দস্তা-কন্যার চোখের দিকে তাকালাম। সে সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে নিল। মনে হয় তার শ্বাসকষ্টও শুরু হলো। হালকাভাবে শাঁ শাঁ শব্দ শুনছি। আমি সঙ্গে সঙ্গে বুঝলাম দূরসম্পর্কের ভাই টাই কিছু না, দস্তা-কন্যা আমাকে কোনো একজন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিতে চাচ্ছে। আমি বললাম, কোনো অসুবিধা নেই। তুমি যেদিন বলবে সেদিনই তোমার ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে আসব।

    উনি হয়তো উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করবেন, তাতে তুমি কিছু মনে করো না। উনার উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করা স্বভাব।

    আমি কিছুই মনে করব না। উনার সব প্রশ্নের জবাব দেব।

    সত্যি?

    হ্যাঁ সত্যি।

    থ্যাংক য়্যু।

    তোমার শ্বাসকষ্টটা কি কমেছে?

    আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল তুমি বুঝলে কী করে?

    ভাব-ভঙ্গি দেখে বুঝলাম। তুমি যেমন আমার ভাব-ভঙ্গিতে বুঝে ফেললে আমাকে তোমার দূরসম্পর্কের ভাইয়ের বাসায় নেয়া দরকার, সে-রকম আর কী।

    দস্তা-কন্যা হকচকিয়ে গেল। তাকিয়ে রইল আমার দিকে। বুঝতে পারছি সে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে। সাইকিয়াট্রিস্টের ব্যাপারটা আমি ধরে ফেলব–এটা সে হয়তো ধারণা করে নি।

    দস্তা-কন্যা ক্ষীণ গলায় বলল, চা খাবে?

    আমি বললাম, হ্যাঁ খাব।

    সে প্রায় ছুটে গেল চা আনতে।

    দস্তা-কন্যার দূরসম্পর্কের ভাইয়ের সঙ্গে আমি দেখা করতে গিয়েছি। তার সঙ্গে অনেক কথা হয়েছে। তিনি আমাকে ঘুমের ওষুধপত্রও দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে তো আপনাকে আগেই বলেছি। তাঁর সঙ্গে আমার দ্বিতীয় দফায় আবার দেখা হয় তার গুলশানের চেম্বারে। সেটা আমার জন্যে খুবই ইন্টারেস্টিং অভিজ্ঞতা। আপনাকে যথাসময়ে বলব। গল্পের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার চেষ্টা করছি, মনে হয় সে-রকম পারছি না। আপনি আমার এই অক্ষমতা নিজগুণে ক্ষমা করবেন। সবচে’ ভালো হতো যদি পুরো ব্যাপারটা আমি গুছিয়ে লিখে ফেলতে পারতাম। আমার লেখালেখি আসে না। দস্তা-কন্যার আবার লেখালেখি। খুব আসে। তাকে দেখছি প্রতি রাতেই টেবিলে ঝুঁকে পড়ে কী যেন লিখে। এক রাতে এরকম লিখছে, আমি নিঃশব্দে তার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। শান্ত গলায় বললাম, কী লিখছ?

    সে ঝট করে খাতা বন্ধ করে ভীত গলায় বলল, কিছু না।

    আমি বললাম, কিছু না-টা কী? গল্প, উপন্যাস? গল্প, উপন্যাসের আরেক নাম–“কিছু না।

    দস্তা জবাব দিল না। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে ভয় পাচ্ছে–আমি বোধহয় তার কাছ থেকে খাতাটা কেড়ে নিয়ে নেব। আমি বললাম, ভয় পাচ্ছ কেন?

    সে বলল, ভয় পাচ্ছি না তো।

    আমি বললাম, তোমার যা ইচ্ছা তুমি লিখতে পার। আমি কখনো সেটা পড়ব না। তুমি বোধহয় জানো না, আমি সত্যবাদী।

    আমি জানি তুমি সত্যবাদী।

    কীভাবে জানো?

    মানুষকে দেখে বুঝা যায়।

    তাহলে খাতাটা বুকের সঙ্গে চেপে ভয়ে কাঁপছ কেন? তোমার যে অবস্থা কিছুক্ষণের মধ্যেই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যাবে। সহজ হও তো।

    দস্তা সঙ্গে সঙ্গে সহজ হয়ে গেল। হাসল। টেবিলের উপর খাতাটা রাখতে রাখতে বলল, তোমার যদি কখনো ইচ্ছা করে খাতায় কী লিখেছি তা পড়বে, তাহলে পড়তে পার।

    আচ্ছা ঠিক আছে।

    খাতায় যা লিখেছি সবই আমার নিজের মতামত লেখাটাকে গুরুত্বের সঙ্গে নেবে না।

    আচ্ছা নেব না।

    সাথী আপা তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছিল। তুমি কি কথা বলবে?

    কেন বলব না? আমি যদি তোমার দূরসম্পর্কের ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে পারি–তোমার নিজের বোনের সঙ্গে কেন কথা বলব না!

    সাথী আপার স্বভাব হচ্ছে সে চট করে রেগে যায়। যদি রেগে যায়, তুমি কিছু মনে করো না।

    উনি রেগে যাবেন সে-রকম কিছু কি আমি করেছি?

    না, করো নি। কিন্তু আপার রাগের কোনো ঠিক নেই।

    উনি যদি রাগারাগি করেনও আমি কিছুই মনে করব না। শান্ত ভঙ্গিতে তার কথা শুনব।

    উনি উনি করছ কেন?

    তোমার বড় বোন, আমি উনি উনি করব না?

    দস্তা-কন্যা ক্ষীণ গলায় বলল, কী আশ্চর্য ঘটনা, তার সঙ্গে বিয়ে হলে সে…

    দস্তা কথা শেষ করল না। মাঝপথে থেমে গেল। আমি বললাম, উনার সঙ্গে কথা কি টেলিফোনে হবে? না-কি আমাকে তোমাদের বাড়িতে যেতে হবে?

    দস্তা হড়বড় করে বলল, বাড়িতে যেতে হবে না। তুমি আমাদের বাড়িতে যেতে পছন্দ কর না, আমি জানি। টেলিফোনে কথা বললেই হবে।

    বেশ, টেলিফোন ধরে দাও। আমি সুবোধ বালকের মতো কথা বলব।

    এখন বলবে?

    হ্যাঁ।

    আপা কি হাসপাতালে না বাসায় তা তো জানি না। আচ্ছা দেখি। আপা উল্টাপাল্টা কিছু বললে প্লিজ তুমি কিছু মনে করো না। আপা আমাদের দু’বোনের কাছে মায়ের মতো। ছোটনের জন্মের সময় আমার মা মারা যান। তখন আমার নিজের বয়স তিন বছর। আর আপার বয়স সাত বছর। এই সাত বছরের মেয়েই কিন্তু আমাদের দেখাশোনা করেছে। আপাকে যে আমরা কী পরিমাণ ভালোবাসি, কী পরিমাণ শ্রদ্ধা করি, সেটা পৃথিবীর কারো পক্ষেই বোঝা সম্ভব না। আমাদের কাছে আপা এক দিকে, আর সমস্ত পৃথিবী এক দিকে।

    তাই না-কি?

    হ্যাঁ তাই। আপা যদি আমাকে ডেকে বলে–তুই যা ছাদে ওঠ, তারপর ছাদ থেকে লাফ দিয়ে উঠানে পড়ে যা। আমি সঙ্গে সঙ্গে সেটা করব।

    তোমার আপা যদি বলে, একটা কাজ কর–গ্লাসে ইঁদুর মারা বিষ মিশিয়ে শরবত বানা। তারপর এই শরবত তোর স্বামীকে খেতে দে। তুমি দেবে?

    দস্তা হতাশ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল। তার মনে হয় শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যাচ্ছে। হা করে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। কপালে ঘাম। আমি বললাম, তুমি এরকম ভাব করছ যেন সত্যি সত্যি তোমার আপা তোমাকে ইঁদুর মারা বিষের শরবত বানাতে বলেছে। সহজ হও তো।

    দস্তা সহজ হবার চেষ্টা করতে করতেই টেলিফোন সেটের কাছে গেল। তার আপাকে সম্ভবত পাওয়া গেছে। দস্তা ইশারায় আমাকে ডাকছে।

    আমি টেলিফোন রিসিভার হাতে নিয়ে নরম গলায় বললাম, কেমন আছেন?

    সাথী সৌজন্যমূলক প্রশ্নের উত্তরের ধার দিয়েও গেল না। কঠিন গলায় বলল, আপনি আমার বোনকে দস্তা নামে ডাকেন কেন? এটা কোন ধরনের রসিকতা? দস্তা আবার কী?

    আমি বললাম, আপনার তো বিয়ে হয় নি, সেই জন্যে আপনি জানেন না। স্বামীরা তাদের নবপরিণীতা স্ত্রীর সঙ্গে অনেক রহস্য করে। স্ত্রীর নাম পাল্টে তার পছন্দের নাম দেয়া একটা সাধারণ ব্যাপার।

    সেই পছন্দের নাম দস্তা? আপনি কখনো তাকে দস্তা ডাকবেন না। কখনো না।

    আচ্ছা এখন থেকে ডাকব না। এখন থেকে রূপা ডাকব।

    আপনি রূপাকে আটকে রেখেছেন কেন?

    আটকে রাখি নি তো।

    অবশ্যই আটকে রেখেছেন। আটকে রেখেছেন বলে সে তার অসুস্থ বাবাকে দেখতে আসতে পারছে না।

    উনি অসুস্থ না-কি?

    কী আশ্চর্য, আপনি জানেন না যে বাবা অসুস্থ?

    না, আমি জানি না।

    রূপা আপনাকে বলে নি?

    না, বলে নি।

    আপনাকে বলে নি কারণ সে জানে আমাদের বাবা অসুস্থ–এই খবরে আপনার কিছু যায় আসে না। আপনি আমার কথা শুনুন–আমার বোনকে আটকে রাখবেন না। তাকে এখুনি আমাদের বাড়িতে পাঠাবার ব্যবস্থা করুন। বাবার শরীর কতটা খারাপ তা আমি জানি। আমি একজন ডাক্তার।

    এখন তো রাত অনেক হয়েছে।

    যত রাতই হোক আপনি তাকে পাঠান। আপনার কোনো অধিকার নেই আমার বোনকে আটকে রাখার।

    আমি তাকে পাঠাচ্ছি। কিন্তু আপনি ভুল করছেন–আমি তাকে আটকে রাখি। নি। কেন শুধু শুধু তাকে আটকে রাখব?

    আপনি মানসিকভাবে অসুস্থ একজন মানুষ। আপনার পক্ষে তাকে তালাবন্ধ করে রাখা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।

    আর কিছু বলবেন?

    না, আর কিছু বলব না।

    আমার একটা প্রশ্ন ছিল। অভয় দিলে প্রশ্নটা করি। আপনি যে-রকম রেগে আছেন প্রশ্ন করতে ভরসা পাচ্ছি না।

    কী প্রশ্ন?

    আপনারও কি রূপার মতো শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে? শ্বাসকষ্ট হলো। অনেকটা সাইকোসমেটিক ডিজিজ। যেহেতু আপনাদের তিন বোনের ভেতর অস্বাভাবিক মিল, সেহেতু সাইকোসমেটিক ডিজিজগুলিও তিনজনেরই হবার কথা।

    আমার সঙ্গে জ্ঞান কপচাবেন না।

    সাথী খট করে টেলিফোন রেখে দিল। আমি দস্তা-কন্যার দিকে তাকিয়ে। বললাম, রূপা, বাবাকে দেখতে যাবে, তৈরি হও।

    দস্তা-কন্যা অবাক হয়ে বলল, তুমি আমাকে রূপা ডাকছ কেন? তুমি রূপা ডাকবে না। তুমি দস্তা ডাকবে।

    গাড়িতে করে রূপাকে একাই তাদের বাড়িতে পাঠালাম। সে এমন ভাব করতে লাগল যেন দীর্ঘদিনের জন্যে বহুদূর দেশে যাচ্ছে। সম্ভাবনা এরকম যে আর ফিরবে না। তার চোখে অশ্রুবিন্দুও দেখা গেল। সে ধরা গলায় বলল, আমি কিন্তু রাতে থাকব না। আমি ফিরে আসব। তুমি ঘুমুবে না। তুমি অবশ্যই জেগে থাকবে। অবশ্যই আমার জন্যে অপেক্ষা করবে।

    আমি বললাম, আমি অপেক্ষা করব। কিন্তু রূপা, তুমি কাঁদছ কেন?

    রূপা চোখ মুছতে মুছতে বলল, তোমাকে না বললাম আমাকে রূপা ডাকবে না? দস্তা ডাকবে।

    রূপাকে নামিয়ে গাড়ি ফিরে এলো। জানা গেল, তার বোনরা তাকে রেখে দিয়েছে। রাতটা সে বোনদের সঙ্গে থাকবে।

     

    মানুষ আর কিছু পারুক না-পারুক দ্রুত অভ্যস্ত হতে পারে। ট্যানারির পাশে যার বাসা, সে চামড়ার গন্ধে অভ্যস্থ হয়ে যায়। নির্মল আলো-বাতাসে তার সারাক্ষণ মনে হয়–জীবন থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কী যেন একটা চলে গেছে। রাতে ঘুম হয় না। ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসে। নিঃশ্বাসে কষ্ট হয়।

    রূপার সঙ্গে আমি অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। এক রাতের জন্যে সে নেই, আমার মনে হলো–এ কী! আমি কোথায়? নিজের বাড়িটাও আমার কাছে অচেনা মনে হতে লাগল। রাত একটার পর থেকে ভয় ভয় করতে লাগল। মনে হলো লাইব্রেরি ঘরে কে যেন হাটছে, বই নাড়াচাড়া করছে।

    বারান্দার চেয়ার ধরে টানাটানির শব্দ পেলাম। এই শব্দটা স্বাভাবিক। মাঝে মাঝে বানরগুলি বারান্দায় চলে এসে চেয়ার টানাটানি করে। তবে তখন তাদের কিচকিচ শব্দ শোনা যায়। এখন কোনো কিচকিচ শব্দ শোনা যাচ্ছে না। একবার মনে হলো–বারান্দায় গিয়ে দেখে আসি ঘটনা কী। সঙ্গে সঙ্গেই মনে হলো, যদি দেখি কিছুই নেই, বারান্দা শূন্য, তাহলে ভয় পাব। এরচে’ না দেখাই ভালো।

    ভূতের ভয় কাটানোর দুটি পদ্ধতি আছে। দু’টি পদ্ধতির একটি হলো, সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে যাওয়া। নগ্ন হয়ে হাঁটাহাঁটি করা। যে ভূতের ভয়ে অস্থির হয়ে আছে, নগ্ন হওয়া মাত্র তার সব ভয় কেটে যাবে। নগ্ন হবার কারণে তার ভেতরে প্রবল লজ্জার বোধ তৈরি হবে। লজ্জাবোধ, ভয়বোধকে কাটিয়ে দেবে। অনেকটা মেটার এন্টিমেটারের এনিহিলেশনের মতো।

    ভয় কাটানোর দ্বিতীয় উপায় হলো, ভূতের বই পড়তে শুরু করা। বিষে। বিষক্ষয়।

    আমি রাতের খাওয়া শেষ করে একটা ভূতের বই হাতে নিয়ে বিছানায় গেলাম। পাতা খুলে পড়তে শুরু করেছি, তখনি শুনলাম পাশের ঘরে চামচের শব্দ। কেউ যেন চা বানাচ্ছে। এই একটা কাপে চামচ নাড়ল, এই সে দ্বিতীয় কাপে চামচ নাড়ছে। চা সম্ভবত দু’কাপ বানানো হচ্ছে।

    এমন কি হতে পারে যে কাজটা বানর করছে? বানর অনুকরণ করতে খুবই ভালোবাসে। সে রূপাকে চা বানাতে দেখেছে। এখন অনুকরণ করছে। বানরের সম্ভাবনা সম্পূর্ণ বাতিল করতে হলো। কারণ বানরের উপদ্রব থেকে বাঁচার জন্যে পুরো বাড়ি নেট দিয়ে ঘেরা। শুধু বারান্দার একটা অংশ খালি। যেখানে আমি বানরের সঙ্গে কথা বলি।

    তাহলে চামচ কে নাড়ছে? আমার হেলুসিনেশন হচ্ছে? পুরাতন ব্যাধি মাথাচাড়া দিচ্ছে? হেলুসিনেশন কোনো ব্যাধি না, হেলুসিনেশন হলো আধি। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আছে—

    ‘ব্যাধির চেয়ে আধি হলো বড়’

    ব্যাধি শরীরের রোগ। আধি মনের রোগ। আমাকে কোনো ব্যাধিতে ধরে নি, আমাকে ধরেছে আধিতে। শরীরের ব্যাধিকে উপেক্ষা করে সে ব্যাধি সারানো যায় না। টাইফয়েড হলে ক্লোরোমাইসিটিন লাগবে। নিউমোনিয়া হলে পেনিসিলিন নিতে হবে। মনের আধিকে হয়তো উপেক্ষা করে সারানো যায়। আমি চায়ের কাপের চামচের শব্দ সম্পূর্ণ উপেক্ষা করলাম–বই পড়তে শুরু করলাম। লেখক যথেষ্ট জমাট ভূতের গল্প ফেঁদেছেন। পরিবেশ সুন্দর তৈরি করেছেন।

    একজন যাত্রী দূরপাল্লার ট্রেনে যাচ্ছেন। প্রথম শ্রেণীর কামরায় তিনি একা। রাত এগারোটার মতো বাজে। শীতের রাত। ভালো শীত পড়েছে। বাইরে ঘন কুয়াশা। জানালা দিয়ে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তারপরেও তিনি দীর্ঘ সময় জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইলেন। একা একা তিনি ‘বোর হচ্ছিলেন। ব্যাগ খুলে হুইস্কির বোতল খুলে নির্জলা হুইস্কি এক সঙ্গে অনেকখানি খেয়ে ফেললেন। তার ভালো নেশা হয়ে গেল। শরীর ঝিমঝিম করতে লাগল। ঘুমও পেল। কম্বল গায়ে জড়িয়ে তিনি শুয়ে পড়লেন। ট্রেনের ঝাকুনিতে ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুম ভাঙল প্রচণ্ড শীতে। তিনি দেখলেন ট্রেনের কামরার প্রতিটি জানালা খোলা। জানালা দিয়ে হু-হু করে বরফের মতো ঠাণ্ডা বাতাস আসছে। তিনি ধড়মড় করে উঠে বসলেন। অবাক হয়ে দেখলেন…

    গল্পের এই পর্যায়ে আমার ঘরের দরজার পাশে খুট করে শব্দ হলো। আমি বললাম, কে?

    দরজার আড়াল থেকে অবিকল রূপার গলায় কেউ একজন বলল, আপনার চা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। চা খেয়ে আসুন।

    আমি হাতের বই রাখলাম। পাশের ঘরে গেলাম। সেখানে সত্যি সত্যি পিরিচে ঢাকা চা। আমি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে শোবার ঘরে ঢুকলাম। চায়ে চুমুক দিলাম। দরজার আড়াল থেকে নারীকণ্ঠ বলল, চায়ে চিনি হয়েছে?

    আমি বললাম, হয়েছে। তুমি কি কাঁসা-কন্যা?

    (হাসি)

    দরজার আড়ালে কেন? সামনে আস।

    (হাসি।) (চুড়ির টুনটুন শব্দ।)।

    কাঁসা-কন্যা, তুমি কি জানো যে তোমার কোনো অস্তিত্ব নেই? তুমি হচ্ছ আমার কল্পনা।

    জানি না।

    আমার ভয়ঙ্কর একটা রোগ হয়েছে। রোগটার নাম আধি।

    আধি আবার কেমন রোগ? মনের রোগ। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আছে—

    বিনুর বয়স তেইশ তখন, রোগে ধরল তারে।
    ঔষধে ডাক্তারে
    ব্যাধির চেয়ে আধি হল বড়;
    নানা ছাপের জমল শিশি, নানা মাপের কৌটো হল জড়ো।

    রবীন্দ্রনাথের নাম শুনেছ?

    শুনেছি।

    তা তো শুনবেই। আমি যা যা জানি, তুমিও তা জানো। আমার সমস্ত জ্ঞানই তোমার মধ্যে আছে।

    তাহলে আধি কী জানলাম না কেন?

    তারও ব্যাখ্যা আছে–তোমাকে পুরোপুরি আমার মতো করে তৈরি করলে খেলাটা জমে না। খেলা জমানোর জন্যে এটা করা হয়েছে। তোমাকে সামান্য অন্যরকম করা হয়েছে। যাতে আমাকে বিভ্রান্ত করা যায়।

    কে আপনাকে বিভ্রান্ত করছে?

    আমিই আমাকে বিভ্রান্ত করছি। সাপ হয়ে দংশন করছি, আবার ওঝা হয়ে ঝাড়ছি।

    (হাসি)

    হাসছ কেন?

    (আবারো হাসি)

     

     

     

    তুমি যে মিষ্টি করে একটু পরপর হেসে উঠছ তারও কিন্তু ব্যাখ্যা আছে। ব্যাখ্যাটা হলো–কেউ হাসলে আমার ভালো লাগে। কেউ কাঁদলে কিংবা মন। খারাপ করে থাকলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। তখন ইচ্ছা করে যে কাঁদছে তাকে আরো কাঁদিয়ে দেই। আমি এরকম কেন হয়েছি–শুনতে চাও?

    চাই।

    আমি বড় হয়েছি কান্নার শব্দে। আমার মা নানাবিধ দুঃখ-কষ্টে সবসময় কাঁদতেন। আমার দু’বোন কাঁদত। যখন বাবা নেশা করতেন তিনিও হো হো শব্দ করে কাঁদতেন। আমাদের বাড়িটা ছিল কান্নার বাড়ি। সেই বাড়িতে একজন শুধু হাসত।

    সে কে?

    আমার মেজ বোন। সে সব কিছুতেই হাসত।

    আমার মতো?

    হ্যাঁ, তোমার মতো। মেজ বোনের বয়স যখন দশ বছর, তখন সে বাবার উপর রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। আর কোনোদিন ফিরে নি।

    সে কী!

    তুমি এতে চমকে উঠলে কেন? তুমি তো সবই জানো। আমি যা জানি তুমিও তা জানো।

    আপনার সেই বোন এখন কোথায়?

    জানি না কোথায়। সে হারিয়ে গেছে।

    তাকে খোঁজার চেষ্টা করা হয় নি?

    মানুষের পক্ষে সম্ভব সব চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা মাসের পর মাস এই ভেবে কাটিয়েছি যে সে ফিরে আসবে।

    আপনি খুবই উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন। আর কথা বলবেন না। শুয়ে পড়ুন। পানি খাবেন? বরফ দেয়া ঠাণ্ডা পানি?

    হ্যাঁ খাব।

    আমি দরজার দিকে তাকিয়ে আছি আমি নিশ্চিত যে আজ সে যখন দরজার আড়াল থেকে বের হবে তখন তাকে দেখা যাবে। কল্পনা-কন্যা বাস্তবে রূপ নেবে।

    যা ভেবেছি তাই হলো। আমি কাঁসা-কন্যাকে এক ঝলক দেখলাম। সে দরজার আড়াল থেকে বের হয়ে দ্রুত পাশের ঘরে চলে গেল।

    সে দেখতে কেমন?

    রূপার মতো। আমার মস্তিষ্ক কল্পনায় অচেনা কোনো মেয়েকে তৈরি করে নি। অচেনা মেয়ে তৈরি করা তার জন্যে কষ্টকর হতো। সে চেনা একজনকেই তৈরি করেছে।

    ভাই সাহেব, আমি আমার জীবন-গল্পের কঠিন একটা সময়ে চলে এসেছি। আমার জীবনে দু’টি বিশেষ ঘটনা এই সময় ঘটে।

    এক. কাঁসা-কন্যাকে প্রথমবার কিছুক্ষণের জন্যে দেখতে পাই।

    দুই. আমার শ্বশুরসাহেব মারা যান।

    আমার শ্বশুরসাহেবের মৃত্যুর খবর অবশ্যি সেই রাতে পাই না। খবরটা আসে পরদিন ভোরে।

    কোনো জামাইয়ের কাছেই তার শ্বশুরের মৃত্যু বিশেষ ঘটনা না। আমার কাছে বিশেষ ঘটনা, কারণ শ্বশুরসাহেবের মৃত্যুর পর রূপার দুই বোন বাস করার জন্যে আমার বাড়িতে উঠে এলো। ঐ বাড়িতে তারা থাকতে পারছিল না। ভয় পাচ্ছিল।

    আপনি কি এডগার এলেন পো’র নাম শুনেছেন? আমেরিকান কবি ও গদ্যকার। তাঁর মূল আগ্রহ ছিল Supernatural-এর দিকে। বিখ্যাত সব ভূতের গল্প লিখেছেন। তাঁর অনেক গল্প নিয়ে সুন্দর সুন্দর ছবিও হয়েছে। ঢাকায় এসেছে Pit and the pendulum. উনার গল্প ঠিকঠাক পরিবেশে পড়লে ‘ঘুম খতম পয়সা হজম হয়ে যাবে।

    অদ্ভুত অদ্ভুত কায়দায় খুনের বর্ণনা তার লেখায় পাওয়া যায়। একটা খুন কীভাবে করা হয় তার সামারি এন্ড সাবসটেন্স আপনাকে বলি। অসুস্থ বৃদ্ধ একজন মানুষ। রোজ গভীর রাতে খুব সাবধানে তার ঘরের দরজা খোলা হয়। বৃদ্ধের ঘুম ভেঙে যায়। তিনি আতঙ্ক নিয়ে তাকিয়ে থাকেন। বৃদ্ধ দেখতে পান। তাঁর ঘরের দরজা সামান্য ফাঁক হলো। তিনি ভয়ে চেঁচিয়ে উঠেন–কে কে? কেউ জবাব দেয় না। বৃদ্ধের ভয় তুঙ্গস্পর্শী হয়, তিনি থরথর করে কাঁপতে। থাকেন। এই পর্যায়ে খোলা দরজার ফাক দিয়ে তাঁর চোখে ফেলা হয় লণ্ঠনের আলো। বৃদ্ধ মারা যায় চোখে হঠাৎ আলো পড়ার ভয়ে এবং অস্বাভাবিক উত্তেজনায়।

    অল্প যে কয়টি ভূতের গল্প আমাকে অভিভূত করেছে–এলেন পো’র এই গল্প তার একটি। আমি সবচেয়ে বেশিবার সম্ভবত এই গল্পটিই পড়েছি। গল্পটি আমাকে এত অভিভূত কেন করেছে তার কারণটা বলি। এই গল্প পড়েই প্রথম বুঝতে পারি মৃত্যু খুবই সহজ ব্যাপার। একটি মানুষকে খুন করার জন্যে ছুরিকঁচি, বন্দুক কিছুই লাগে না। কায়দামতো সামান্য ভয় দেখাতে পারলেই হয়।

    তবে গল্পের মৃত্যু এবং বাস্তবের মৃত্যু একরকম নাও হতে পারে। চোখে আলো ফেলে গল্পে হয়তোবা একজনকে মারা সম্ভব। বাস্তবে কি সম্ভব? আমি ঠিক করলাম ব্যাপারটা পরীক্ষা করে দেখব। আমি চোখে আলো ফেলবার জন্যে পাঁচ ব্যাটারির একটা টর্চ কিনলাম।

    আরে না না, এখনকার কথা বলছি না। সাত-আট বছর আগের কথা বলছি। আমার মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রবণতা আছে। সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করলে আমি হয়তোবা ভালো সায়েন্টিস্ট হতাম। দুঃখের ব্যাপার হলো, আমি এমন বিষয়ে পড়াশোনা করেছি যেখানে হাতে-কলমে গবেষণার সুযোগ নেই।

    আমার পড়াশোনার বিষয় দর্শন। এই বিষয়টা এমন যে এর সাহায্যে ঈশ্বর আছেন এই বিষয়ে একশ’ প্রমাণ দেয়া যায়, আবার ঈশ্বর নেই এই বিষয়ে একশ’ প্রমাণ দেয়া যায়। খুবই মজার ব্যাপার।

    শুধুমাত্র চোখে আলো ফেলে ‘THE END’ খেলাটা আমি খেলতে পারি নি, কারণ আমাদের বাড়িতে গুরুতর অসুস্থ কেউ ছিল না। গুরুতর কেন, মোটামুটি অসুস্থও কেউ নেই। এই বাড়িতে সুস্থ-সবল লোকজন বাস করে।

    রূপার দুই বোন যখন থাকতে এলো তখন হঠাৎ করে মনে হলো–মন্দ না। THE END-খেলা খেলা যেতে পারে। এই দুই বোন অসুস্থ না, খুবই সুস্থ; তবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। বাবার মৃত্যু তারা নিতেই পারছে না। তাদের দেখে মনে হচ্ছে তাদের জগৎ-সংসার কপূরের মতো উড়ে গেছে। তারা এখন আর মানুষের পর্যায়ে নেই, জম্বি পর্যায়ে।

    জম্বি চেনেন তো? জম্বি হলো মৃত মানুষ যারা জীবিতদের মতো জীবনযাপন করে। জিন্দালাশ বলতে পারেন। আমার বাড়িতে থাকতে এসে তারা খুবই বিব্রত বোধ করতে লাগল। বিশেষ করে রূপার বড় বোন সাথী। তারা তাদের নিজের বাড়িতে থাকতে পারছিল না। সেখানে নানান সমস্যা। সন্ধ্যা। মিলাবার পরপরই না-কি চটি ফটফট করে কে হাঁটে। মাঝে মাঝে দরজার কাছাকাছি এসে চটির শব্দ থেমে যায়। দরজা খুললে দেখা যায় কেউ নেই।

    আমরা এই ঘটনাটাকে বলতে পারি ‘চটি ভূতের উপদ্রব। তিন বোনের কাছে চটি ভূত এত ভয়ঙ্কর কেন তা জানতে হলে তার বাবার মৃত্যুর সময়ের কথাটা বলতে হয়। ভদ্রলোক শ্বাসকষ্ট এবং বুকের ব্যথায় ছটফট করছিলেন। মেয়েরা ছোটাছুটি করছিল কীভাবে ডাক্তারের কাছে বাবাকে নিয়ে যাওয়া যায় সেই বুদ্ধি বের করার জন্যে। তাদের বাসার টেলিফোন কাজ করছিল না। তারা পর্যায়ক্রমে ছুটে দোতলার বারান্দায় যাচ্ছিল যদি সেখান থেকে কোনো রিকশা বা বেবিট্যাক্সি দেখা যায়। অন্য সময় সারারাতেই তাদের বাড়ির সামনে রিকশা বা বেবিটেক্সি দেখা যায়। সেই রাতে কিছুই ছিল না।

    এমন অবস্থায় সোবাহান সাহেবের বুকের ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট হঠাৎ স্বাভাবিক হয়ে গেল। তিনি সহজ স্বাভাবিক গলায় বললেন, পানি খাব। ঠাণ্ডা পানি।

    রূপা দৌড়ে পানি নিয়ে এলো। তিনি পানির গ্লাসের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত গলায় বললেন, আধা গ্লাস পানি এনেছিস কী করে? পুরো গ্লাস আন। তৃষ্ণা পেয়েছে।

    রূপা গ্লাস ভর্তি পানি নিয়ে এলো। তিনি এক চুমুকে তৃপ্তি নিয়ে পানি শেষ করে বললেন, বাথরুমে যাব। চটিজুতা জোড়া আন।

    চটিজুতা জোড়া খুঁজে পাওয়া গেল না। তাঁর ছোট মেয়েটা স্পঞ্জের স্যান্ডেল এনে দিয়ে বলল, চটি পাওয়া যাচ্ছে না, স্পঞ্জের স্যান্ডেল পর।

    সোবাহান সাহেব থমথমে গলায় বললেন, চটিজুতা জোড়া যাবে কোথায়? ঘরেই আছে, খুঁজে বের কর।

    তিন বোন ব্যাকুল হয়ে চটিজুতা খুঁজতে লাগল। তিনি কিছুক্ষণ পর পর খোঁজ নিচ্ছেন–এই, পাওয়া গেছে? আমার যে বাথরুমে যেতে হবে ভুলে। গেছিস! তিন ধুমসি মিলে করছিস কী? চটি জোড়া খুঁজে বের করতে পারছিস না?

    সাথী এসে কোমল গলায় বলল, বাবা, তোমার শরীরটা খারাপ। এইভাবে চিৎকার করবে না।

    আমার বাথরুমে যেতে হবে না? আমি কি বিছানায় হেগে দেব? তোরা তাই চাস?

    স্পঞ্জের স্যান্ডেলটা পরে যাও বাবা।

    অবশ্যই আমি স্পঞ্জের স্যান্ডেল পরব না। তোরা যেখান থেকে পারিস চটি জোড়া খুঁজে আন। প্রয়োজনে আলাউদ্দিনের চেরাগের দৈত্যকে দিয়ে আমার চটি এনে দিবি। তিন ধুমসি, কাজ নেই কর্ম নেই, শুধু গুটুর গুটুর, শুধু রঙ-তামাশা। রঙ-তামাশা অনেক সহ্য করেছি, আর না…

    এই বলে চিৎকার করতে করতেই তাঁর স্ট্রোক হলো। Cerebral Stroke. সেই স্ট্রোকেই মৃত্যু।

    সেরিব্রেল স্ট্রোকের বাংলা জানেন? বাংলা হলো ‘সন্ন্যাস রোগ’। সন্ন্যাসীরা কী করে? তারা তাদের অতি প্রিয় বাড়ি ছেড়ে চলে যায়, আর ফিরে আসে না। সন্ন্যাস রোগে প্রাণবায়ু তার ঘর অর্থাৎ তার শরীর ছেড়ে চলে যায়। আর ফিরে। আসে না।

    কী বলতে কী বলছি, মূল অংশে আসি। রূপার বাবা চটি চটি’ করতে করতে মারা গেলেন। মৃত্যুর পর পরই চটি পায়ে তার হাঁটার শব্দ শোনা যেতে লাগল। তিন বোনই শুনল। চটর চটর শব্দ হচ্ছে। এই তিনি যাচ্ছেন বাথরুমের দিকে, এই গেলেন বারান্দায়। চটির শব্দের সঙ্গে তাঁর খুকখুক কাশিও কয়েকবার শোনা গেল। ভয় এবং তীব্র আতঙ্কে তিন বোনই জমে গেল। মৃত্যুশোকের বদলে তাদের গ্রাস করল তীব্র ভয়।

    আপনি কি বুঝতে পারছেন চটির শব্দ শোনার পেছনে কাজ করছে–মানসিক অবসাদ এবং তীব্র ঘোর? মানুষের আত্মা (যদি থেকে থাকে) নিশ্চয়ই চটি পায়ে হাঁটাহাঁটি করবে না। সোবাহান সাহেব যদি মরে ভূত হয়েও থাকেন তারপরেও সেই ভূত নিশ্চয়ই তার তিন অসহায় মেয়েকে ভয় দেখাবে না। এটা হলো সাধারণ যুক্তি। ভয় যুক্তি মানে না–তিন বোন তাদের ভূত-পিতার ভয়েই অস্থির হয়ে আমার বাড়িতে উঠে এলো।

    আমি যথেষ্টই বিরক্ত হলাম। একা থেকে আমার অভ্যাস। আমার কোনো কাজের লোকেরই যেখানে দোতলায় আসার হুকুম নেই, সেখানে তিন কন্যা দোতলায় বাস করবে–এটা মেনে নেয়া আমার জন্যে খুব কঠিন। তারপরেও আমি তাদের সঙ্গে যথেষ্ট ভালো ব্যবহার করলাম। সাথী বিব্রত গলায় বলল, কয়েকটা দিন শুধু থাকা।

    আমি বললাম, আপনার যত দিন থাকতে ইচ্ছা হয় থাকবেন। কোনো সমস্যা নেই।

    সাথী বলল, আপনার সমস্যা না থাকতে পারে, আমার সমস্যা আছে। আমি কেন বোনের স্বামীর বাড়িতে বাস করব?

    আমি বললাম, সমস্যায় পড়েছেন বলে বাস করছেন। শখ করে তো থাকছেন না।

    সাথী বলল, আপনার তো অনেক লোকজন আছে, আপনি তাদেরকে বলেন আমাকে দু’রুমের ছোট একটা অ্যাপার্টমেন্ট খুঁজে দিতে। আমি ছোটনকে নিয়ে সেখানে থাকব।

    নিজের বাড়িতে যাবেন না?

    না।

    চটির ফটফট শব্দ শুনবেন বলে ভয় পাচ্ছেন?

    সাথী রাগী গলায় বলল, যে ঘটনা ঘটেছে সেটা নিয়ে দয়া করে হাসিতামাশা করবেন না। আমি হাসি-তামাশা পছন্দ করি না। আমার সেন্স অব হিউমার নিম্ন পর্যায়ের।

    আমি বললাম, আপনার লজিক সেন্স অব হিউমারের চেয়েও নিম্ন পর্যায়ের।

    তার মানে কী? আপনি কী বলতে চাচ্ছেন?

    আমি শান্ত গলায় বললাম, অ্যাপার্টমেন্ট হাউসে উঠে কিন্তু আপনি চটির শব্দ থেকে বাঁচতে পারবেন না। চটির শব্দ আপনার পেছনে পেছনে সেখানেও উপস্থিত হবে। কারণ চটির শব্দটা হয় আপনার মস্তিষ্কে। কেউ চটি পরে আপনাকে ভয় দেখায় না। আমার ধারণা এই বাড়িতেও আপনারা চটির শব্দ শুনবেন। হয়তো আজ রাতেই শুনবেন।

    সাথী অসম্ভব বিরক্ত গলায় বলল, জ্ঞানী জ্ঞানী কথা আপনি আপনার স্ত্রীর সঙ্গে করবেন। সে জ্ঞানী কথা শুনতে পছন্দ করে। আমি করি না। আর আপনি আরেকটা কথা ভুলে যাচ্ছেন। কথাটা হলো আমি একজন ডাক্তার। যে মানসিক কারণ আপনি বলছেন সেই কারণ আমি জানি। আমাকে শেখাতে হবে না।

    আর শেখাব না।

    অ্যাপার্টমেন্ট হাউস খুঁজে দিতে বলেছি, দয়া করে খুঁজে দিন। এই বাড়িতে তিন-চার দিনের বেশি আমি থাকতে পারব না। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।

    আমি বললাম, আমার সঙ্গে শেষপর্যন্ত বিয়ে না হয়ে তাহলে ভালোই হয়েছে। বিয়ে হলে দমবন্ধ অবস্থায় জীবন কাটাতে হতো।

    সাথী কঠিন গলায় বলল, আপনার-আমার বিয়ের প্রসঙ্গটা আপনি আর কখনো তুলবেন না। কখনো না।

    আমি বললাম, জি আচ্ছা।

    আপনি আপনার মতো থাকবেন। আমরা দু’বোন থাকব আমাদের মতো। আমরা আপনাকে বিরক্ত করব না। দয়া করে আপনিও আমাদের বিরক্ত করবেন না।

    আমি বিনীতভাবে বললাম, জি আচ্ছা।

    সাথী বলল, আমরা আমাদের মতো করে খেয়ে নেব। সবাই এক সঙ্গে বসে খাওয়া–এইসব ফর্মালিটির মধ্যে আমাদের টানবেন না। প্লিজ।

    জি আচ্ছা।

    সাথী আমার ‘জি আচ্ছা’ বলা শেষ করার আগেই হুট করে উঠে চলে গেল। ঠিক তখনি আমার মনে হলো এডগার এলেন পো’র THE END খেলাটা এই কঠিন মহিলার সঙ্গে খেলা যেতে পারে।

    আপনি যা ভাবছেন তা কিন্তু না। আমার মাথায় খুনের কোনো পরিকল্পনা ঘুরছিল না। আমি ছোট্ট একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে চাচ্ছিলাম, সাথী নামের আমার হলেও হতে পারত স্ত্রীকে মানসিক একটা ধাক্কা দিয়ে দেখতে চাচ্ছিলাম কী হয়। সে এখন এমনিতেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এই অবস্থায় ছোট্ট ধাক্কাই কাজ করে। গভীর রাতে হঠাৎ তার চোখে তীব্র আলো ফেলা। ভয়টাকে আরো জমানোর জন্যে আমাকে এক জোড়া চটিজুতা জোগাড় করতে হবে। চটিতে ফটফট শব্দ করতে করতে তাদের ঘরের জানালার সামনে দাঁড়াব। খুব সাবধানে জানালার পর্দা সরিয়ে তার মুখে পাঁচ ব্যাটারির টর্চের তীব্র আলো ফেলে আবার চটির ফটফট শব্দ করে চলে আসব।

    এই কাজটার জন্যে বিশেষ একটা রাত বের করতে হবে। ঝড়-বৃষ্টির রাত, যে রাতে ইলেকট্রিসিটি থাকবে না। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের মতো বৃষ্টির শব্দ হতে থাকবে।

    আমি এক্সপেরিমেন্টটা করি মে মাসের উনিশ তারিখ রাত দু’টায়। রাতটা ছিল ঝড়-বৃষ্টির। এক্সপেরিমেন্টের জন্যে রাতটা শুভ ছিল না। কারণ ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। বিদ্যুৎ চমকানোর কারণে চোখে আলো পড়লে সেই আলোটা স্বাভাবিক মনে হবে। মনে হবে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ভয়টা সে-রকম লাগবে না।

    আমি সে-কারণেই টর্চের মুখে লাল কাগজ লাগিয়ে আলোটাকে লাল করে ফেললাম।

    যথাসময়ে আলো ফেলা হলো। যে-রকম হবে ভেবেছিলাম সে-রকম হলো। সাথী ক্ষীণ স্বরে একবার বলল, কে? তারপরে গোঙানির মতো আওয়াজ করে চুপ করে গেল। আমি হতাশ হয়ে নিজের ঘরে চলে এলাম। তখনো বুঝতে পারি নি সাথী মারা গেছে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআশাবরী – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article আমাদের সাদা বাড়ি – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    আমাদের সাদা বাড়ি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    আশাবরী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    Our Picks

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025

    আমাদের সাদা বাড়ি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025

    আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }