দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
১
কিছুতেই এখানকার এই জীবনের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারছি না। বাংলা দেশ থেকে সদ্য এসেছি, সারাজীবন কলকাতায় কাটিয়েছি। এই অরণ্যভূমির নির্জনতা যেন পাথরের মতো বুকে চেপে আছে।
এক-একদিন বিকেলে বেড়াতে বেরিয়ে অনেক দূর চলে যাই। কাছারির কাছে তবু লোকজনের গলা শোনা যায়। দু-তিন রশি গেলেই কাছারির ঘরগুলো লম্বা বনঝাউ আর কাশের জঙ্গলের আড়ালে পড়ে। তখন মনে হয়, পৃথিবীতে আমি একা। তারপর যতদূর যাওয়া যায়, চওড়া মাঠের দু-ধারে ঘন বনের সারি বহুদূর পর্যন্ত চলে গেছে। শুধু বন আর ঝোপ—গজারি গাছ, বাবলা, বন্য কাঁটাবাঁশ, বেতের ঝোপ। গাছ আর ঝোপের মাথায় অস্তগামী সূর্য সিঁদুর ছড়িয়ে দিয়েছে। সন্ধ্যার হাওয়ায় বন্য ফুল আর তৃণের সুগন্ধ। প্রতি ঝোপ পাখির কলরবে মুখর, তার মধ্যে হিমালয়ের বনটিয়াও আছে। মুক্ত দূরপ্রসারী তৃণভূমি আর শ্যামল বনভূমির মেলা।
এই সময় মাঝে মাঝে মনে হতো, এখানে প্রকৃতির যে রূপ দেখছি, এমনটা আর কোথাও দেখিনি। যতদূর চোখ যায়, এসব যেন আমার। আমি এখানে একমাত্র মানুষ। আমার নির্জনতা ভাঙতে কেউ আসবে না। মুক্ত আকাশের নিচে নিস্তব্ধ সন্ধ্যায় দূর দিগন্তের সীমা পর্যন্ত মন আর কল্পনাকে ছড়িয়ে দিই।
কাছারি থেকে প্রায় এক ক্রোশ দূরে একটা নির্জন জায়গা আছে। সেখানে কয়েকটা ছোট পাহাড়ি ঝরনা ঝিরঝির করে বয়ে যাচ্ছে। তার দু-পাশে জলজ লিলির বন, কলকাতার বাগানে যাকে বলে স্পাইডার লিলি। বন্য স্পাইডার লিলি কখনো দেখিনি, জানতামও না যে নির্জন ঝরনার পাথর-বিছানো তীরে ফোটা লিলি ফুলের এত শোভা হয়, বাতাসে তারা এত মৃদু কোমল সুগন্ধ ছড়ায়। কতবার গিয়ে সেখানে চুপ করে বসে আকাশ, সন্ধ্যা আর নির্জনতা উপভোগ করেছি।
মাঝে মাঝে ঘোড়ায় চড়ে বেড়াই। প্রথম প্রথম ভালো চড়তে পারতাম না, ক্রমে ভালোই শিখলাম। শিখে বুঝলাম, জীবনে এত আনন্দ আর কিছুতে নেই। যে কখনো এমন নির্জন আকাশের নিচে দিগন্তব্যাপী বনপ্রান্তরে ইচ্ছেমতো ঘোড়া ছুটিয়ে বেড়ায়নি, তাকে বোঝানো যাবে না সে কী আনন্দ! কাছারি থেকে দশ-পনেরো মাইল দূরে সার্ভে পার্টি কাজ করছে। আজকাল প্রায়ই সকালে এক পেয়ালা চা খেয়ে ঘোড়ার পিঠে জিন কষে বেরিয়ে পড়ি। কোনোদিন বিকেলে ফিরি, কোনোদিন ফেরার পথে জঙ্গলের মাথায় নক্ষত্র ওঠে। বৃহস্পতি জ্বলজ্বল করে। জ্যোৎস্নারাতে বনফুলের সুবাস জ্যোৎস্নার সঙ্গে মেশে। শৃগালের ডাক প্রহর ঘোষণা করে। জঙ্গলের ঝিঁঝিঁ পোকা দল বেঁধে ডাকতে থাকে।
২
যে কাজে এখানে এসেছি, তার জন্য অনেক চেষ্টা করছি। এত হাজার বিঘা জমি, হঠাৎ বন্দোবস্ত হওয়াও তো সোজা নয়। আরেকটা ব্যাপার এখানে এসে জেনেছি। এই জমি ত্রিশ বছর আগে নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছিল। বিশ বছর হলো বেরিয়েছে। কিন্তু যারা পিতৃপিতামহের জমি গঙ্গায় ভেঙে যাওয়ার পর অন্যত্র চলে গিয়ে বাস করছিল, সেই পুরোনো প্রজাদের জমিদার এই জমিতে দখল দিতে চান না। মোটা সেলামি আর বাড়তি হারে খাজনার লোভে নতুন প্রজাদের সঙ্গেই বন্দোবস্ত করতে চান। অথচ যে গৃহহীন, আশ্রয়হীন, অতি দরিদ্র পুরোনো প্রজারা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তারা বারবার অনুরোধ, কান্নাকাটি করেও জমি পাচ্ছে না।
আমার কাছেও অনেকে এসেছিল। তাদের অবস্থা দেখে কষ্ট হয়। কিন্তু জমিদারের হুকুম, কোনো পুরোনো প্রজাকে জমি দেওয়া যাবে না। কারণ, একবার বসে পড়লে তারা আইনত পুরোনো স্বত্ব দাবি করতে পারে। জমিদারের লাঠির জোর বেশি। প্রজারা বিশ বছর ধরে ভূমিহীন, গৃহহীন অবস্থায় দেশে দেশে মজুরি করে খায়। কেউ সামান্য চাষবাস করে, অনেকে মরে গেছে। তাদের ছেলেপিলে নাবালক বা অসহায়। প্রবল জমিদারের বিরুদ্ধে স্রোতের মুখে কুটোর মতো ভেসে যাবে।
এদিকে নতুন প্রজা কোথায় পাওয়া যাবে? মুঙ্গের, পূর্ণিয়া, ভাগলপুর, ছাপরা থেকে যারা আসে, দর শুনে পিছিয়ে যায়। দু-পাঁচজন কিছু কিছু নিচ্ছেও। এভাবে ধীরে চললে দশ হাজার বিঘা জঙ্গলী জমি প্রজাবিলিতে বিশ-পঁচিশ বছর লেগে যাবে।
আমাদের একটা ডিহি কাছারি আছে, সেও ঘোর জঙ্গলময় মহাল। এখান থেকে উনিশ মাইল দূরে। জায়গাটার নাম লবটুলিয়া। এখানে যেমন জঙ্গল, সেখানেও তেমনি। শুধু সেখানে কাছারি রাখার উদ্দেশ্য, সেই জঙ্গলটা প্রতি বছর গোয়ালাদের গোরু-মহিষ চরানোর জন্য খাজনা করে দেওয়া হয়। এছাড়া সেখানে প্রায় দু-তিনশো বিঘা জমিতে বন্য কুলের জঙ্গল আছে। লাক্ষা-কীট পোষার জন্য লোকে এই কুল-বন ইজারা নেয়। এই টাকা আদায়ের জন্য সেখানে দশ টাকা মাইনের একজন পাটোয়ারি আর তার একটা ছোট কাছারি আছে।
কুল-বন ইজারা দেওয়ার সময় এল। একদিন ঘোড়ায় চড়ে লবটুলিয়ায় রওনা হলাম। আমার কাছারি আর লবটুলিয়ার মাঝে একটা উঁচু রাঙামাটির ডাঙা, প্রায় সাত-আট মাইল লম্বা। এর নাম ‘ফুলকিয়া বইহার’। নানা ধরনের গাছপালা আর ঝোপজঙ্গলে ভরা। কোথাও কোথাও বন এত ঘন যে ঘোড়ার গায়ে ডালপালা ঠেকে। ফুলকিয়া বইহার যেখানে নেমে সমতল ভূমির সঙ্গে মিশেছে, সেখানে চানন বলে একটা পাহাড়ি নদী পাথরের ওপর দিয়ে ঝিরঝির করে বয়। বর্ষায় সেখানে জল গভীর, শীতে এখন তত জল নেই।
লবটুলিয়ায় এই প্রথম এলাম। খুব ছোট একটা খড়ের ঘর, মেঝে জমির সঙ্গে সমতল। ঘরের বেড়া শুকনো কাশ আর বনঝাউয়ের ডালপাতা দিয়ে বাঁধা। সন্ধ্যার কিছু আগে পৌঁছলাম। এত শীত যে যেখানে থাকি, সেখানেও নেই। শীতে জমে যাওয়ার উপক্রম হলাম।
সিপাহীরা বনের ডালপাতা জ্বালিয়ে আগুন করল। সেই আগুনের ধারে ক্যাম্প-চেয়ারে বসলাম। বাকি সবাই গোল হয়ে আগুনের চারপাশে বসল।
পাটোয়ারি কোথা থেকে পাঁচ সের একটা রুই মাছ এনেছিল। এখন কথা উঠল, রান্না করবে কে? আমি পাচক আনিনি। নিজেও রান্না জানি না। আমার সঙ্গে দেখা করতে সাত-আটজন লবটুলিয়ায় অপেক্ষা করছিল। তাদের মধ্যে কণ্টু মিশ্র নামে এক মৈথিল ব্রাহ্মণকে পাটোয়ারি রান্নার জন্য ঠিক করল।
পাটোয়ারিকে বললাম, “এরা সবাই কি ইজারা ডাকবে?”
পাটোয়ারি বলল, “না হুজুর। ওরা খাবার লোভে এসেছে। আপনার আসার খবর শুনে দু-দিন ধরে কাছারিতে এসে বসে আছে। এদেশের লোকের এই অভ্যাস। আরো অনেকে কাল হয়তো আসবে।”
এমন কথা কখনো শুনিনি। বললাম, “সে কী! আমি তো এদের নেমন্তন্ন করিনি?”
“হুজুর, এরা বড় গরিব। ভাত জিনিসটা খেতে পায় না। কলাইয়ের ছাতু, মকাইয়ের ছাতু—এই বারোমাস খায়। ভাত খাওয়া এরা ভোজের সমান মনে করে। আপনি আসছেন, এখানে ভাত খেতে পাবে, সেই লোভে সব এসেছে। দেখুন না, আরো কত আসে।”
বাংলা দেশের লোক এদের তুলনায় অনেক বেশি সভ্য হয়ে গেছে, মনে হলো। কেন জানি না, এই অন্নভোজনলোলুপ সরল মানুষগুলোকে সে রাতে এত ভালো লাগল! আগুনের চারপাশে বসে তারা নিজেদের মধ্যে গল্প করছিল। আমি শুনছিলাম। প্রথমে তারা আমার আগুনে বসতে চায়নি, আমার প্রতি সম্মান দেখাতে দূরত্ব রাখতে চেয়েছিল। আমি তাদের ডেকে আনলাম। কণ্টু মিশ্র কাছে বসে আসান কাঠের ডালপালা জ্বালিয়ে মাছ রাঁধছে। ধুনো পোড়ানোর মতো সুগন্ধ বেরোচ্ছে ধোঁয়া থেকে। আগুনের বাইরে গেলে মনে হয়, আকাশ থেকে বরফ পড়ছে—এত শীত!
খাওয়াদাওয়া শেষে অনেক রাত হয়ে গেল। কাছারিতে যত লোক ছিল, সবাই খেল। তারপর আবার আগুনের ধারে গোল হয়ে বসা গেল। শীতে মনে হচ্ছে, শরীরের রক্ত পর্যন্ত জমে যাবে। ফাঁকা বলেই শীত এত বেশি মনে হয়, নাকি হিমালয় বেশি দূর নয়।
আগুনের ধারে আমরা সাত-আটজন। সামনে ছোট ছোট দুটো খড়ের ঘর। একটায় থাকব আমি, আরেকটায় বাকি এতগুলো লোক। চারপাশে অন্ধকার বন আর প্রান্তর। মাথার ওপর নক্ষত্র-ছড়ানো বিশাল অন্ধকার আকাশ। আমার বড় অদ্ভুত লাগল। যেন চিরপরিচিত পৃথিবী থেকে নির্বাসিত হয়ে মহাশূন্যের এক গ্রহে অজানা রহস্যময় জীবনধারার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছি।
একজন ত্রিশ-বত্রিশ বছরের লোক এই দলের মধ্যে আমার মনোযোগ বিশেষভাবে টানছিল। নাম গনোরী তেওয়ারী। শ্যামবর্ণ, দোহারা চেহারা, মাথায় বড় চুল, কপালে দুটো লম্বা ফোঁটা কাটা। এই শীতে গায়ে একটা মোটা চাদর ছাড়া কিছু নেই। এদেশের রীতি অনুযায়ী গায়ে একটা মেরজাই থাকা উচিত ছিল, তাও নেই। অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছিলাম, সে সবার দিকে কেমন কুণ্ঠিতভাবে তাকাচ্ছিল। কারো কথায় প্রতিবাদ করছিল না, তবে কথা কম বলছিল তাও নয়।
আমার কথার উত্তরে শুধু বলে—হুজুর।
এদেশের লোকে যখন কোনো মান্য বা উচ্চপদস্থ ব্যক্তির কথা মানে, তখন শুধু মাথা সামান্য ঝুঁকিয়ে সসম্ভ্রমে বলে—হুজুর।
গনোরীকে বললাম, “তুমি থাকো কোথায়, তেওয়ারীজি?”
আমি যে তাকে সরাসরি প্রশ্ন করব, এতটা সম্মান তার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। সে আমার দিকে তাকাল। বলল, “ভীমদাসটোলা, হুজুর।”
তারপর সে তার জীবনের ইতিহাস বর্ণনা করতে লাগল। একটানা নয়, আমার প্রশ্নের উত্তরে টুকরো টুকরো।
গনোরী তেওয়ারীর বয়স যখন বারো, তখন তার বাবা মারা যান। এক বুড়ি পিসি তাকে মানুষ করে। সে পিসিও বাবার মৃত্যুর পাঁচ বছর পর মারা গেলেন। তখন গনোরী জগতে ভাগ্য খুঁজতে বেরোয়। কিন্তু তার জগৎ পূর্বে পূর্ণিয়া শহর, পশ্চিমে ভাগলপুর জেলার সীমানা, দক্ষিণে এই নির্জন অরণ্যময় ফুলকিয়া বইহার, উত্তরে কুশী নদী—এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এর মধ্যে গ্রামে গ্রামে গৃহস্থের দুয়ারে ঘুরে কখনো ঠাকুরপূজা করে, কখনো গ্রাম্য পাঠশালায় পণ্ডিতি করে কষ্টে কলাইয়ের ছাতু আর চীনা ঘাসের দানার রুটির সংস্থান করেছে। সম্প্রতি দু-মাস ধরে চাকরি নেই। পর্বতা গ্রামের পাঠশালা উঠে গেছে। ফুলকিয়া বইহারের দশ হাজার বিঘা অরণ্যে লোকের বস্তি নেই। এখানে যে মহিষপালকরা মহিষ চরাতে আনে, তাদের বাথানে ঘুরে খাদ্যভিক্ষা করে বেড়াচ্ছিল। আজ আমার আসার খবর পেয়ে অনেকের সঙ্গে এখানে এসেছে।
কেন এসেছে, সে কথা আরো চমৎকার।
“এখানে এত লোক এসেছে কেন, তেওয়ারীজি?”
“হুজুর, সবাই বলল, ফুলকিয়ার কাছারিতে ম্যানেজার এসেছেন, সেখানে গেলে ভাত খেতে পাওয়া যাবে। তাই ওরা এল, ওদের সঙ্গে আমিও এলাম।”
“ভাত এখানকার লোকে কি খেতে পায় না?”
“কোথায় পাবে হুজুর। নউগচ্ছিয়ায় মাড়োয়ারীরা রোজ ভাত খায়। আমি নিজে আজ ভাত খেলাম বোধ হয় তিন মাস পর। গত ভাদ্রমাসের সংক্রান্তিতে রাসবিহারী সিং রাজপুতের বাড়ি নেমন্তন্ন ছিল। সে বড়লোক, ভাত খাইয়েছিল। তারপর আর খাইনি।”
যত লোক এসেছিল, এই ভয়ঙ্কর শীতে কারো গায়ে জামাকাপড় নেই। রাতে আগুন পুষে রাত কাটায়। শেষরাতে শীত বাড়লে ঘুম হয় না। আগুনের কাছে ঘেঁষে বসে ভোর পর্যন্ত থাকে।
কেন জানি না, এদের হঠাৎ এত ভালো লাগল! এদের দারিদ্র্য, সারল্য, কঠোর জীবনসংগ্রামে যুঝতে পারার ক্ষমতা—এই অন্ধকার অরণ্যভূমি আর হিমবর্ষী মুক্ত আকাশ বিলাসিতার কোমল পথে এদের যেতে দেয়নি, কিন্তু এদের সত্যিকারের পুরুষমানুষ করে গড়েছে। দুটো ভাত খাওয়ার আনন্দে যারা ভীমদাসটোলা আর পর্বতা থেকে নয় মাইল পথ হেঁটে এসেছে বিনা নেমন্তন্নে, তাদের মনের আনন্দ গ্রহণের শক্তি কত সতেজ, ভেবে বিস্মিত হলাম।
অনেক রাতে কিসের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। শীতে মুখ বের করাও কষ্টকর। এত শীত যে জানতাম না, তাই উপযুক্ত গরম কাপড় আর লেপ-তোশক আনিনি। কলকাতায় যে কম্বল গায়ে দিতাম, সেটাই এনেছিলাম। শেষরাতে সেটা যেন ঠান্ডা জল হয়ে যায়। যে পাশে শুই, শরীরের গরমে সে দিকটা তবু থাকে। অন্য পাশে ফিরতে গিয়ে দেখি বিছানা কনকন করছে। মনে হয়, পৌষ মাসের রাতে ঠান্ডা পুকুরের জলে ডুব দিলাম। পাশেই জঙ্গলে কিসের সম্মিলিত পদশব্দ। কারা যেন দৌড়াচ্ছে। গাছপালা, শুকনো বনঝাউ মটমট শব্দে ভেঙে দৌড়াচ্ছে।
কী ব্যাপার, বুঝতে না পেরে সিপাহী বিষ্ণুরাম পাঁড়ে আর স্কুলমাস্টার গনোরী তেওয়ারীকে ডাকলাম। তারা ঘুম-জড়ানো চোখে উঠে বসল। কাছারির মেঝেতে যে আগুন জ্বালানো হয়েছিল, তার শেষ আলোতে তাদের মুখে আলস্য আর ঘুমের ভাব ফুটে উঠল। গনোরী কান পেতে একটু শুনে বলল, “কিছু না হুজুর, নীলগাইয়ের দল দৌড়াচ্ছে জঙ্গলে।”
কথা শেষ করে সে নিশ্চিন্তে পাশ ফিরে শুতে যাচ্ছিল। জিজ্ঞেস করলাম, “নীলগাইয়ের দল হঠাৎ এত রাতে এমন দৌড়াচ্ছে কেন?”
বিষ্ণুরাম পাঁড়ে আশ্বাসের সুরে বলল, “হয়তো কোনো জানোয়ার তাড়া করছে, হুজুর। এ ছাড়া আর কী।”
“কী জানোয়ার?”
“কী আর জানোয়ার, হুজুর। জঙ্গলের জানোয়ার। বাঘ হতে পারে, নয়তো ভাল্লুক।”
যে ঘরে শুয়ে আছি, তার কাশডাঁটায় বাঁধা আগড়ের দিকে চোখ পড়ল। সে আগড় এত হালকা যে বাইরে থেকে একটা কুকুর ঠেলা দিলেও ঘরের মধ্যে উল্টে পড়বে। এমন অবস্থায় ঘরের সামনে জঙ্গলে নিস্তব্ধ রাতে বাঘ বা ভাল্লুক নীলগাইয়ের দল তাড়া করে নিয়ে যাচ্ছে। এ খবরে যে খুব আশ্বস্ত হলাম না, তা বলাই বাহুল্য।
একটু পরেই ভোর হয়ে গেল।
৩ দিন যত যেতে লাগল, জঙ্গলের মোহ ততই আমাকে পেয়ে বসল। এর নির্জনতা আর বিকেলের সিঁদুর-ছড়ানো বনঝাউয়ের জঙ্গলের কী আকর্ষণ, বলতে পারি না। আজকাল ক্রমশ মনে হয়, এই দিগন্তব্যাপী বিশাল বনপ্রান্তর, এর রোদপোড়া মাটির তাজা সুগন্ধ, এই স্বাধীনতা, এই মুক্তি ছেড়ে কলকাতার গোলমালের মধ্যে আর ফিরতে পারব না!
এ মনের ভাব একদিনে হয়নি। কত রূপে, কত সাজে বন্যপ্রকৃতি আমার মুগ্ধ, অনভ্যস্ত দৃষ্টির সামনে এসে আমাকে ভুলিয়েছে! কত সন্ধ্যা এসেছে অপূর্ব রক্তমেঘের মুকুট মাথায়, দুপুরের খর রোদ এসেছে উন্মাদিনী ভৈরবীর বেশে, গভীর রাতে জ্যোৎস্নাবরণী সুরসুন্দরীর সাজে, হিমস্নিগ্ধ বনকুসুমের সুবাস মেখে, আকাশভরা তারার মালা গলায়। অন্ধকার রাতে কালপুরুষের আগুনের খড়গ হাতে দিগ্বিদিক ব্যাপিয়ে বিরাট কালীমূর্তিতে।
৪
একদিনের কথা জীবনে কখনো ভুলব না। মনে আছে, সেদিন দোলপূর্ণিমা। কাছারির সিপাহীরা ছুটি নিয়ে সারাদিন ঢোল বাজিয়ে হোলি খেলেছে। সন্ধ্যায়ও নাচগানের বিরাম নেই দেখে আমি নিজের ঘরে টেবিলে আলো জ্বেলে অনেক রাত পর্যন্ত হেড অফিসের জন্য চিঠি লিখলাম। কাজ শেষ হতে ঘড়ি দেখলাম, রাত প্রায় একটা। শীতে জমে যাওয়ার মতো অবস্থা। একটা সিগারেট ধরিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে উঁকি মেরে মুগ্ধ ও বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। যে জিনিস আমাকে মুগ্ধ করল, তা পূর্ণিমা-নিশীথিনীর অবর্ণনীয় জ্যোৎস্না।
হয়তো যতদিন এসেছি, শীতকাল বলে গভীর রাতে কখনো বাইরে আসিনি। বা অন্য যে কোনো কারণেই হোক, ফুলকিয়া বইহারের পূর্ণ জ্যোৎস্নারাত্রির রূপ এই প্রথম দেখলাম।
দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়ালাম। কেউ কোথাও নেই। সিপাহীরা সারাদিন আমোদ-প্রমোদের পর ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। নিঃশব্দ অরণ্যভূমি, নিস্তব্ধ জনহীন রাত। সে জ্যোৎস্নারাত্রির বর্ণনা নেই। এমন ছায়াবিহীন জ্যোৎস্না জীবনে দেখিনি। এখানে খুব বড় গাছ নেই, ছোটখাটো বনঝাউ আর কাশবন—তাতে তেমন ছায়া হয় না। চকচকে সাদা বালি মেশানো জমি আর শীতের রোদে অর্ধশুষ্ক কাশবনে জ্যোৎস্না পড়ে এমন অপার্থিব সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে, যা দেখলে মনে ভয় হয়। মনে যেন একটা উদাস, বাঁধনহীন মুক্তভাব। মন হু-হু করে ওঠে। চারদিকে তাকিয়ে সেই নীরব রাতে জ্যোৎস্নাভরা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে মনে হলো, এক অজানা পরীরাজ্যে এসে পড়েছি। মানুষের কোনো নিয়ম এখানে খাটবে না। এই জনহীন স্থান গভীর রাতে জ্যোৎস্নায় পরীদের বিচরণভূমি হয়ে যায়। আমি অনধিকার প্রবেশ করে ভালো করিনি।
তারপর ফুলকিয়া বইহারের জ্যোৎস্নারাত্রি কতবার দেখেছি। ফাল্গুনের মাঝামাঝি দুধ্লি ফুল ফুটে সমস্ত প্রান্তরে রঙিন ফুলের গালিচা বিছিয়ে দেয়। তখন কত জ্যোৎস্নাশুভ্র রাতে দুধ্লি ফুলের মিষ্ট সুবাস প্রাণ ভরে শুঁকেছি। প্রতিবারই মনে হয়েছে, জ্যোৎস্না যে এত অপরূপ হতে পারে, মনে এমন ভয়মিশ্রিত উদাস ভাব আনতে পারে, বাংলা দেশে থাকতে তা কখনো ভাবিনি! ফুলকিয়ার সে জ্যোৎস্নারাত্রির বর্ণনা দেওয়ার চেষ্টা করব না। সে সৌন্দর্যালোকের সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরিচয় না হলে, শুধু কানে শুনে বা লেখা পড়ে তা উপলব্ধি করা যায় না। অমন মুক্ত আকাশ, অমন নিস্তব্ধতা, অমন নির্জনতা, অমন দিগন্তবিস্তৃত বনানীর মধ্যেই শুধু সে রূপ ফুটে ওঠে। জীবনে একবারও সে জ্যোৎস্নারাত্রি দেখা উচিত। যে দেখেনি, ভগবানের সৃষ্টির এক অপূর্ব রূপ তার কাছে চির-অপরিচিত রয়ে গেল।
৫
একদিন ডিহি আজমাবাদের সার্ভে-ক্যাম্প থেকে ফেরার সময় সন্ধ্যার মুখে বনের মধ্যে পথ হারিয়ে ফেললাম। বনের ভূমি সবখানে সমতল নয়। কোথাও উঁচু জঙ্গলাবৃত বালিয়াড়ি টিলা, তারপরই দুটো টিলার মাঝে ছোটখাটো উপত্যকা। জঙ্গলের কোথাও বিরাম নেই। টিলার মাথায় উঠে চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম, যদি কাছারির মহাবীরের ধ্বজার আলো দেখা যায়। কোনো দিকে আলোর চিহ্ন নেই। শুধু উঁচুনিচু টিলা, ঝাউবন আর কাশবন। মাঝে মাঝে শাল আর আসান গাছের বন। দুই ঘণ্টা ঘুরেও জঙ্গলের কূলকিনারা পেলাম না। হঠাৎ মনে পড়ল, নক্ষত্র দেখে দিক ঠিক করি না কেন। গ্রীষ্মকাল, কালপুরুষ প্রায় মাথার ওপর। বুঝতে পারলাম না, কোনদিক থেকে এসে কালপুরুষ মাথার ওপর উঠেছে। সপ্তর্ষিমণ্ডল খুঁজে পেলাম না। তাই নক্ষত্রের সাহায্যে দিক নির্ণয়ের আশা ছেড়ে ঘোড়াকে ইচ্ছেমতো ছেড়ে দিলাম। মাইল দুয়েক গিয়ে জঙ্গলের মধ্যে একটা আলো দেখা গেল। আলো লক্ষ্য করে সেখানে পৌঁছে দেখলাম, জঙ্গলের মধ্যে কুড়ি বর্গহাত পরিষ্কার জায়গায় একটা নিচু ঘাসের খুপরি। কুঁড়ের সামনে গ্রীষ্মেও আগুন জ্বালানো। আগুন থেকে একটু দূরে একটা লোক বসে কী করছে।
আমার ঘোড়ার পায়ের শব্দ শুনে লোকটা চমকে উঠে বলল, “কে?” তারপর আমাকে চিনতে পেরে তাড়াতাড়ি কাছে এল। খুব খাতির করে ঘোড়া থেকে নামাল।
পরিশ্রান্ত হয়েছিলাম। প্রায় ছ-ঘণ্টা ঘোড়ার ওপর। সার্ভে ক্যাম্পেও আমিনের পিছু পিছু ঘোড়ায় জঙ্গলের মধ্যে ঘুরেছি। লোকটার দেওয়া ঘাসের চেটাইয়ে বসলাম। জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার নাম কী?”
লোকটা বলল, “গনু মাহাতো, জাতি গাঙ্গোতা।”
এ অঞ্চলে গাঙ্গোতা জাতির জীবিকা চাষবাস আর পশুপালন, তা আমি এতদিনে জেনেছিলাম। কিন্তু এই লোকটা এই জনহীন গভীর বনের মধ্যে একা কী করে?
বললাম, “তুমি এখানে কী করো? তোমার বাড়ি কোথায়?”
“হুজুর, মহিষ চরাই। আমার ঘর এখান থেকে দশ ক্রোশ উত্তরে ধরমপুর, লছমনিয়াটোলা।”
“নিজের মহিষ? কতগুলো আছে?”
লোকটা গর্বের সুরে বলল, “পাঁচটা মহিষ আছে, হুজুর।”
পাঁচটা মহিষ! দস্তুরমতো অবাক হলাম। দশ ক্রোশ দূরের গ্রাম থেকে মাত্র পাঁচটা মহিষ নিয়ে এই বিজন বনের মধ্যে মহিষচরানোর খাজনা দিয়ে একা খুপরি বেঁধে মহিষ চরায়। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, এই ছোট্ট খুপরিতে কীভাবে সময় কাটায়? কলকাতা থেকে নতুন এসেছি, শহরের থিয়েটার-বায়োস্কোপে লালিত যুবক আমি—বুঝতে পারলাম না।
কিন্তু এদেশের অভিজ্ঞতা বাড়লে বুঝেছিলাম, কেন গনু মাহাতো এভাবে থাকে। তার অন্য কোনো কারণ নেই। গনু মাহাতোর জীবনের ধারণাই এইরকম। যখন তার পাঁচটি মহিষ, তখন তাদের চরাতে হবে। আর চরাতে হলে জঙ্গলে থাকতে হবে, কুঁড়ে বেঁধে একা থাকতেই হবে। এ অতি সাধারণ কথা। এতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে!
গনু কাঁচা শালপাতায় একটা লম্বা পিকা বা চুরুট বানিয়ে সসম্ভ্রমে আমার হাতে দিয়ে অভ্যর্থনা করল। আগুনের আলোয় তার মুখ দেখলাম—চওড়া কপাল, উঁচু নাক, রং কালো, মুখশ্রী সরল, শান্ত চোখের দৃষ্টি। বয়স ষাটের ওপর হবে। মাথার চুল একটাও কালো নেই। কিন্তু শরীর এমন সুগঠিত যে, এই বয়সেও প্রতিটি মাংসপেশী আলাদা করে গোনা যায়।
গনু আগুনে আরো কাঠ ফেলে নিজেও একটা শালপাতার পিকা ধরাল। আগুনের আভায় খুপরির মধ্যে এক-আধটা পিতলের বাসন চকচক করছে। আগুনের কুণ্ডের বাইরে ঘোর অন্ধকার আর ঘন বন। বললাম, “গনু, একা এখানে থাকো, জন্তু-জানোয়ারের ভয় করো না?”
গনু বলল, “ভয় করলে আমাদের কি চলে, হুজুর? আমাদের যখন এই ব্যবসা! সেদিন রাতে আমার খুপরির পিছনে বাঘ এসেছিল। মহিষের দুটো বাচ্চা আছে, ওদের ওপর তাক। শব্দ শুনে রাতে উঠে টিন বাজাই, মশাল জ্বালি, চিৎকার করি। রাতে আর ঘুম হলো না, হুজুর। শীতকালে তো সারারাত এই বনে ফেউ ডাকে।”
“খাও কী এখানে? দোকান তো নেই, জিনিসপত্র পাও কোথায়? চালডাল?”
“হুজুর, দোকানে জিনিস কেনার মতো পয়সা কি আমাদের আছে? নাকি আমরা বাঙালি বাবুদের মতো ভাত খেতে পাই? এই জঙ্গলের পিছনে আমার দু-বিঘে খেড়ী ক্ষেত আছে। খেড়ীর দানা সেদ্ধ, আর জঙ্গলে বাথুয়া শাক হয়, তাই সেদ্ধ, আর একটু নুন—এই খাই। ফাগুন মাসে জঙ্গলে গুড়মী ফল ফলে। নুন দিয়ে কাঁচা খেতে বেশ লাগে। লতানে গাছ, ছোট ছোট কাঁকুড়ের মতো ফল। সে সময় এক মাস এ অঞ্চলের যত গরিব লোক গুড়মী ফল খেয়ে কাটিয়ে দেয়। দলে দলে ছেলেমেয়ে আসবে জঙ্গলের গুড়মী তুলতে।”
জিজ্ঞেস করলাম, “রোজ রোজ খেড়ীর দানা সেদ্ধ আর বাথুয়া শাক ভালো লাগে?”
“কী করব, হুজুর। আমরা গরিব লোক। বাঙালি বাবুদের মতো ভাত খেতে পাব কোথায়? ভাত এ অঞ্চলে শুধু রাসবিহারী সিং আর নন্দলাল পাঁড়ে দুবেলা খায়। সারাদিন মহিষের পিছনে ভূতের মতো খাটি, হুজুর। সন্ধে বেলা ফিরি, তখন এত ক্ষিদে পায় যে, যা পাই তাই খেতে ভালো লাগে।”
গনুকে বললাম, “কলকাতা শহর দেখেছ, গনু?”
“না, হুজুর। কানে শুনেছি। ভাগলপুর শহরে একবার গিয়েছি। বড় ভারি শহর। ওখানে হাওয়ার গাড়ি দেখেছি। বড় তাজ্জব জিনিস, হুজুর। ঘোড়া নেই, কিছু নেই, আপনা-আপনি রাস্তা দিয়ে চলছে।”
এই বয়সে তার স্বাস্থ্য দেখে অবাক হলাম। সাহসও আছে, মনে মনে স্বীকার করতে হলো।
গনুর জীবিকার একমাত্র অবলম্বন পাঁচটি মহিষ। তাদের দুধ এই জঙ্গলে কে কিনবে? দুধ থেকে মাখন তুলে ঘি করে। দু-তিন মাসের ঘি জমিয়ে নয় মাইল দূরের ধরমপুরের বাজারে মাড়োয়ারিদের কাছে বিক্রি করে। আর থাকার মধ্যে ওই দু-বিঘা খেড়ী, অর্থাৎ শ্যামাঘাসের ক্ষেত। যার দানা সেদ্ধ এ অঞ্চলের প্রায় সব গরিব লোকের প্রধান খাদ্য। গনু সে রাতে আমাকে কাছারিতে পৌঁছে দিল। কিন্তু গনুকে এত ভালো লাগল যে, কতবার শান্ত বিকেলে তার খুপরির সামনে আগুন পুষে গল্প করেছি। ওদেশের নানা তথ্য গনুর কাছে যেভাবে শুনেছি, তা আর কেউ দিতে পারেনি।
গনুর মুখে কত অদ্ভুত কথা শুনতাম। উড়ুক্কু সাপের কথা, জীবন্ত পাথর, আঁতুড়ে ছেলের হাঁটাচলার কথা। ওই নির্জন জঙ্গলের পরিবেশের সঙ্গে গনুর গল্পগুলো অতি উপাদেয় ও রহস্যময় লাগত। আমি জানি, কলকাতায় বসে এসব গল্প শুনলে আজগুবি আর মিথ্যে মনে হতো। যেখানে-সেখানে যে-কোনো গল্প শোনা চলে না। গল্প শোনার পটভূমি আর পরিবেশের ওপর তার মাধুর্য অনেকটা নির্ভর করে, এটা গল্পপ্রিয় মানুষরাই জানেন। গনুর সব অভিজ্ঞতার মধ্যে আমার আশ্চর্য লেগেছিল বন্যমহিষের দেবতা টাঁড়বারোর কথা।
কিন্তু, যেহেতু এই গল্পের একটা অদ্ভুত উপসংহার আছে, সে কথা এখন না বলে যথাস্থানে বলব। এখানে বলে রাখি, গনু যে গল্পগুলো বলত, তা রূপকথা নয়, তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। গনু জীবনকে অন্যভাবে দেখেছে। অরণ্য-প্রকৃতির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে সারাজীবন কাটিয়ে সে অরণ্য-প্রকৃতির বিশেষজ্ঞ। তার কথা হঠাৎ উড়িয়ে দেওয়া চলে না। মিথ্যে বানিয়ে বলার মতো কল্পনাশক্তি গনুর নেই বলেই আমার মনে হয়।