Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025

    হে পূর্ণ, তব চরণের কাছে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025

    ভ্রমণের নবনীতা – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আরণ্যক – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    উপন্যাস বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এক পাতা গল্প306 Mins Read0

    ১৫.আরণ্যক – পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ

    পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ

    ১
    ধাওতাল সাহু মহাজনের কাছে আমাকে একবার হাত পাতিতে হইল। আদায় সেবার হইল কম, অথচ দশ হাজার টাকা রেভিনিউ দাখিল করিতেই হইবে। তহসিলদার বনোয়ারীলাল পরামর্শ দিল, বাকি টাকাটা ধাওতাল সাহুর কাছে কর্জ করুন। আপনাকে সে নিশ্চয়ই দিতে আপত্তি করিবে না। ধাওতাল সাহু আমার মহালের প্রজা নয়, সে থাকে গবর্নমেণ্টের খাসমহলে। আমাদের সঙ্গে তার কোনোপ্রকার বাধ্যবাধকতা নাই, এ অবস্থায় সে যে এক কথায় আমাকে ব্যক্তিগতভাবে হাজারতিনেক টাকা ধার দিবে, এ বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ ছিল।

    কিন্তু গরজ বড় বালাই। একদিন বনোয়ারীলালকে সঙ্গে লইয়া গোপনে গেলাম ধাওতাল সাহুর বাড়ি, কারণ কাছারির অপর কাহাকেও জানিতে দিতে চাহি না কর্জ করিয়া দিতে হইতেছে।

    ধাওতাল সাহুর বাড়ি পওসদিয়ার একটা ঘিঞ্জি টোলার মধ্যে। বড় একখানা খোলার চালার সামনে খানকতক দড়ির চারপাই পাতা। ধাওতাল সাহু উঠানের এক পাশের তামাকের ক্ষেত নিড়ানি দিয়া পরিষ্কার করিতেছিল-আমাদের দেখিয়া শশব্যস্তে ছুটিয়া আসিল, কোথায় বসাইবে, কি করিবে ভাবিয়া পায় না, খানিকক্ষণের জন্য যেন দিশাহারা হইয়া গেল।

    -একি! হুজুর এসেছেন গরিবের বাড়ি, আসুন, আসুন। বসুন হুজুর। আসুন তহসিলদার সাহেব।

    ধাওতাল সাহুর বাড়িতে চাকর-বাকর দেখিলাম না। তাহার একজন হৃষ্টপুষ্ট নাতি, নাম রামলখিয়া, সে-ই আমাদের জন্য ছুটাছুটি করিতে লাগিল। বাড়িঘর আসবাবপত্র দেখিয়া কে বলিবে ইহা লক্ষপতি মহাজনের বাড়ি।

    রামলখিয়া আমার ঘোড়ার পিঠ হইতে জিন খুরপাচ খুলিয়া ঘোড়াকে ছায়ায় বাঁধিল। আমাদের জন্য পা ধুইবার জল আনিল। ধাওতাল সাহু নিজেই একখানা তালের পাখা দিয়া বাতাস করিতে লাগিল। সাহুজীর এক নাতনি তামাক সাজিতে ছুটিল। উহাদের যত্নে বড়ই বিব্রত হইয়া উঠিলাম। বলিলাম-ব্যস্ত হবার দরকার নেই সাহুজী, তামাক আনতে হবে না, আমার কাছে চুরুট আছে।

    যত আদর-আপ্যায়নই করুক, আসল ব্যাপার সম্বন্ধে কথা পাড়িতে একটু সমীহ হইতেছিল, কি করিয়া কথাটা পাড়ি?

    ধাওতাল সাহু বলিল-ম্যানেজার সাহেব কি এদিকে পাখি মারতে এসেছিলেন?

    – না, তোমার কাছেই এসেছিলাম সাহুজী।

    – আমার কাছে হুজুর? কি দরকার বলুন তো?

    – আমাদের কাছারির সদর খাজনার টাকা কম পড়ে গিয়েছে, সাড়ে তিন হাজার টাকার বড় দরকার, তোমার কাছে সেজন্যেই এসেছিলাম।

    মরিয়া হইয়াই কথাটা বলিয়া ফেলিলাম, বলিতেই যখন হইবে।

    ধাওতাল সাহু কিছুমাত্র না ভাবিয়া বলিল-তার জন্যে আর ভাবনা কি হুজুর? সে হয়ে যাবে এখন, তবে তার জন্যে কষ্ট করে আপনার আসবার দরকার কি ছিল? একখানা চিরকুট লিখে তহসিলদার সাহেবের হাতে পাঠিয়ে দিলেই আপনার হুকুম তামিল হত।

    মনে ভাবিলাম এখন আসল কথাটা বলিতে হইবে। টাকা আমি ব্যক্তিগতভাবে লইব, কারণ জমিদারের নামে টাকা কর্জ করিবার আমমোক্তারনামা আমার নাই। একথা শুনিলেও ধাওতাল কি আমায় টাকা দিবে? বিদেশী লোক আমি। আমার কি সম্পত্তি আছে এখানে যে এতগুলি টাকা বিনা বন্ধকে আমায় দিবে? কথাটা একটু সমীহের উপরই বলিলাম।

    – সাহুজী, লেখাপড়াটা কিন্তু আমার নামেই করতে হবে। জমিদারের নামে হবে না।

    ধাওতাল সাহু আশ্চর্য হইবার সুরে বলিল-লেখাপড়া কিসের? আপনি আমার বাড়ি বয়ে এসেছেন, সামান্য টাকার অভাব পড়েছে তাই নিতে। এ তো আসবার দরকারই ছিল না, হুকুম করে পাঠালেই টাকা দিতাম। তারপর যখন এসেছেনই-তখন লেখাপড়া কিসের? আপনি স্বচ্ছন্দে নিয়ে যান, যখন কাছারিতে আদায় হবে, আমায় পাঠিয়ে দিলেই হবে।

    বলিলাম-আমি হ্যাণ্ডনোট দিচ্ছি, টিকিট সঙ্গে করে এনেছি। কিংবা তোমার পাকা খাতা বার কর, সই করে দিয়ে যাই।

    ধাওতাল সাহু হাত জোড় করিয়া বলিল-মাপ করুন হুজুর। ও কথাই তুলবেন না। মনে বড় কষ্ট পাব। কোনো লেখাপড়ার দরকার নেই, টাকা আপনি নিয়ে যান।

    আমার পীড়াপীড়িতে ধাওতাল কর্ণপাতও করিল না। ভিতর হইতে আমায় নোটের তাড়া গুনিয়া আনিয়া দিয়া বলিল-হুজুর, একটা কিন্তু অনুরোধ আছে।

    -কি?

    – এ-বেলা যাওয়া হবে না। সিধা বার করে দিই, রান্নাখাওয়া করে তবে যেতে পাবেন।

    পুনরায় আপত্তি করিলাম, তাহাও টিকিল না। তহসিলদারকে বলিলাম-বনোয়ারীলাল, রাঁধতে পারবে তো? আমার দ্বারা সুবিধে হবে না।

    বনোয়ারী বলিল-তা চলবে না, হুজুর, আপনাকে রাঁধতে হবে। আমার রান্না খেলে এ পাড়াগাঁয়ে আপনার দুর্নাম হবে। আমি দেখিয়ে দেব এখন।

    বিরাট এক সিধা বাহির করিয়া দিল ধাওতাল সাহুর নাতি। রন্ধনের সময় নাতি-ঠাকুরদা মিলিয়া নানা রকম উপদেশ-পরামর্শ দিতে লাগিল রন্ধন সম্বন্ধে।

    ঠাকুরদাদার অনুপস্থিতিতে নাতি বলিল-বাবুজী, ঐ দেখেছেন আমার ঠাকুরদাদা, ওঁর জন্যে সব যাবে। এত লোককে টাকা ধার দিয়েছেন বিনা সুদে, বিনা বন্ধকে, বিনা তমসুকে-এখন আর টাকা আদায় হতে চায় না। সকলকে বিশ্বাস করেন, অথচ লোকে কত ফাঁকিই দিয়েছে। লোকের বাড়ি বয়ে টাকা ধার দিয়ে আসেন।

    গ্রামের আর একজন লোক বসিয়া ছিল, সে বলিল-বিপদে আপদে সাহুজীর কাছে হাত পাতলে ফিরে যেতে কখনো কাউকে দেখি নি বাবুজী। সেকেলে ধরনের লোক, এতবড় মহাজন, কখনো আদালতে মকদ্দমা করেন নি। আদালতে যেতে ভয় পান। বেজায় ভীতু আর ভালোমানুষ।

    সেদিন যে-টাকা ধাওতাল সাহুর নিকট হইতে আনিয়াছিলাম, তাহা শোধ দিতে প্রায় ছ’মাস দেরি হইয়া গেল-এই ছ’মাসের মধ্যে ধাওতাল সাহু আমাদের ইসমাইলপুর মহালের ত্রিসীমানা দিয়া হাঁটে নাই, পাছে আমি মনে করি যে সে টাকার তাগাদা করিতে আসিয়াছে। ভদ্রলোক আর কাহাকে বলে!

    ২
    প্রায় বছরখানেক রাখালবাবুদের বাড়ি যাওয়া হয় নাই, ফসলের মেলার পরে একদিন সেখানে গেলাম। রাখালবাবুর স্ত্রী আমায় দেখিয়া খুব খুশি হইলেন। বলিলেন-আপনি আর আসেন না কেন দাদা, কোনো খোঁজখবর নেন না-এই নির্বান্ধব জায়গায় বাঙালির মুখ দেখা যে কি-আর আমাদের এই অবস্থায়-

    বলিয়া দিদি নিঃশব্দে কাঁদিতে লাগিলেন।

    আমি চারিদিকে চাহিয়া দেখিলাম। বাড়িঘরের অবস্থা আগের মতোই হীন, তবে এবার ততটা যেন বিশৃঙ্খল নয়। রাখালবাবুর বড় ছেলেটি বাড়িতেই টিনের মিস্ত্রির কাজ করে-সামান্যই উপার্জন-তবু যা হয় সংসার একরকম চলিতেছে।

    রাখালবাবুর স্ত্রীকে বলিলাম-ছোট ছেলেটিকে অন্তত ওর মামার কাছে কাশীতে রেখে একটু লেখাপড়া শেখান।

    তিনি বলিলেন-আপন মামা কোথায় দাদা? দু-তিনখানা চিঠি লেখা হয়েছিল এত বড় বিপদের খবর দিয়ে-দশটি টাকা পাঠিয়ে দিয়ে সেই যে চুপ করল-আর দেড় বছর সাড়াশব্দ নেই। তার চেয়ে দাদা ওরা মকাই কাটবে, জনার কাটবে, মহিষ চরাবে-তবুও তেমন মামার দোরে যাবে না।

    আমি তখনই ঘোড়ায় ফিরিব-দিদি কিছুতেই আসিতে দিলেন না। সেবেলা থাকিতে হইবে। তিনি কি একটা খাবার করিয়া আমায় না খাওয়াইয়া ছাড়িবেন না।

    অগত্যা অপেক্ষা করিতে হইল। মকাইয়ের ছাতুর সহিত ঘি ও চিনি মিশাইয়া একরকম লাড্ডু বাঁধিয়া ও কিছু হালুয়া তৈরি করিয়া দিদি খাইতে দিলেন। দরিদ্র সংসারে যতটা আদর-অভ্যর্থনা করা যাইতে পারে, তাহার ত্রুটি করিলেন না।

    বলিলেন-দাদা, ভাদ্র মাসের মকাই রেখেছিলাম আপনার জন্য তুলে। আপনি ভুট্টাপোড়া খেতে ভালবাসেন, তাই।

    জিজ্ঞাসা করিলাম-মকাই কোথায় পেলেন? কিনেছিলেন?

    -না। ক্ষেতে কুড়ুতে যাই, ফসল কেটে নিয়ে গেলে যে-সব ভাঙ্গা, ঝরা ভুট্টা চাষারা ক্ষেতে রেখে যায়-গাঁয়ের মেয়েরাও যায়, আমিও যাই ওদের সঙ্গে-এক ঝুড়ি, দেড় ঝুড়ি করে রোজ কুড়োতাম।

    আমি অবাক হইয়া বলিলাম-ক্ষেতে কুড়ুতে যেতেন?

    -হ্যাঁ, রাত্রে যেতাম, কেউ টের পেত না। গাঁয়ের কত মেয়েরা তো যায়। তাদের সঙ্গে এই ভাদ্র মাসে কম্‌সে-কম দশ টুক্রি ভুট্টা কুড়িয়ে এনেছিলাম।

    মনে বড় দুঃখ হইল। এ কাজ গরিব গাঙ্গোতার মেয়েরা করিয়া থাকে-এদেশের ছত্রী বা রাজপুত মেয়েরা গরিব হইলেও ক্ষেতের ফসল কুড়াইতে যায় না। আর একজন বাঙালির মেয়েকে এ-কাজ করিতে শুনিলে মনে বড়ই লাগে। এই অশিক্ষিত গাঙ্গোতাদের গ্রামে বাস করিয়া দিদি এসব হীনবৃত্তি শিখিয়াছেন-সংসারের দারিদ্র্যও যে তাহার একটা প্রধান কারণ সে-বিষয়ে ভুল নাই। মুখ ফুটিয়া কিছু বলিতে পারিলাম না, পাছে মনে কষ্ট দেওয়া হয়। এই নিঃস্ব বাঙালি পরিবার বাংলার কোনো শিক্ষা-সংস্কৃতি পাইল না, বছরকয়েক পরে চাষী গাঙ্গোতায় পরিণত হইবে, ভাষায়, চালচলনে, হাবভাবে। এখন হইতেই সে-পথে অনেক দূর অগ্রসর হইয়াছে।

    রেলস্টেশন হইতে বহু দূরে অজ পল্লীগ্রামে আমি আরো দু-একটি এরকম বাঙালি-পরিবার দেখিয়াছি। এইসব পরিবারে মেয়ের বিবাহ দেওয়া যে কি দুঃসাধ্য ব্যাপার! এমনি আর একটি বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবার জানিতাম-দক্ষিণবিহারে এক অজ গ্রামে তাঁরা থাকিতেন। অবস্থা নিতান্তই হীন, বাড়িতে তাঁদের তিনটি মেয়ে ছিল, বড়টির বয়স একুশ-বাইশ বছর, মেজটির কুড়ি, ছোটটিরও সতের। ইহাদের বিবাহ হয় নাই, হইবার কোনো উপায়ও নাই-সঘর জোটানো, বাঙালি পাত্রের সন্ধান পাওয়া এসব অঞ্চলে অত্যন্তই কঠিন।

    বাইশ বছরের বড় মেয়েটি দেখিতে সুশ্রী-এক বর্ণও বাংলা জানে না-আকৃতি-প্রকৃতিতে খাঁটি দেহাতী বিহারী মেয়ে-মাঠ হইতে মাথায় মোট করিয়া কলাই আনে, গমের ভুসি আনে।

    এই মেয়েটির নাম ছিল ধ্রুবা। পুরাদস্তুর বিহারী নাম।

    তাহার বাবা প্রথমে এই গ্রামে হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারি করিতে আসিয়া চাষবাসের কাজও আরম্ভ করেন। তারপর তিনি মারা যান, বড় ছেলে, একেবারে হিন্দুস্থানি-চাষবাস দেখাশুনা করিত, বয়স্থা ভগ্নীদের বিবাহের যোগাড় সে চেষ্টা করিয়াও করিতে পারে নাই। বিশেষত পণ দিবার ক্ষমতা তাদের আদৌ ছিল না জানি।

    ধ্রুবা ছিল একেবারে কপালকুণ্ডলা। আমাকে ভাইয়া অর্থাৎ দাদা বলিয়া ডাকিত। গায়ে অসীম শক্তি, গম পিষিতে, উদুখলে ছাতু কুটিতে, মোট বহিয়া আনিতে, গোরু-মহিষ চরাইতে চমৎকার মেয়ে, সংসারের কাজকর্মে ঘুণ। তাহার দাদা এ প্রস্তাবও করিয়াছিলেন যে, এমন যদি কোনো পাত্র পান, তিনটি মেয়েকেই এক পাত্রে সম্প্রদান করিবেন। মেয়ে তিনটিরও নাকি অমত ছিল না।

    মেজ মেয়ে জবাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম-বাংলা দেখতে ইচ্ছে হয়?

    জবা বলিয়াছিল-নেই ভেইয়া, উঁহাকো পানি বড্ডি নরম ছে-

    শুনিয়াছিলাম বিবাহ করিতে ধ্রুবারও খুব আগ্রহ। সে নিজে নাকি কাহাকে বলিয়াছিল তাহাকে যে বিবাহ করিবে, তাহার বাড়িতে গোরুর দোহাল বা উদুখলওয়ালী ডাকিতে হইবে না-সে একাই ঘণ্টায় পাঁচ সের গম কুটিয়া ছাতু করিতে পারে।

    হায় হতভাগিনী বাঙালি কুমারী! এত বৎসর পরেও সে নিশ্চয় আজও গাঙ্গোতীন সাজিয়া দাদার সংসারে যব কুটিতেছে, কলাইয়ের বোঝা মাথায় করিয়া মাঠ হইতে আনিতেছে, কে আর দরিদ্রা দেহাতী বয়স্কা মেয়েকে বিনাপণে বিবাহ করিয়া পালকিতে তুলিয়া ঘরে লইয়া গিয়াছে মঙ্গলশঙ্খ ও উলুধ্বনির মধ্যে!

    শান্ত মুক্ত প্রান্তরে যখন সন্ধ্যা নামে, দূর পাহাড়ের গা বাহিয়া যে সরু পথটি দেখা যায় ঘনবনের মধ্যে চেরা সিঁথির মতো, ব্যর্থযৌবনা, দরিদ্রা ধ্রুবা হয়তো আজও এত বছরের পরে সেই পথ দিয়া শুকনো কাঠের বোঝা মাথায় করিয়া পাহাড় হইতে নামে-এ ছবি কতবার কল্পনানেত্রে প্রত্যক্ষ করিয়াছি-তেমনি প্রত্যক্ষ করিয়াছি আমার দিদি, রাখালবাবুর স্ত্রী, হয়তো আজও বৃদ্ধা গাঙ্গোতীনদের মতো গভীর রাত্রে চোরের মতো লুকাইয়া ক্ষেতে-খামারে শুকনো তলায়-ঝরা ভুট্টা ঝুড়ি করিয়া কুড়াইয়া ফেরেন।

    ৩
    ভানুমতীদের ওখান হইতে ফিরিবার পরে শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি সেবার ঘোর বর্ষা নামিল। দিনরাত অবিশ্রান্ত বৃষ্টি, ঘন কাজল-কালো মেঘপুঞ্জে আকাশ ছাইয়াছে; নাঢ়া ও ফুলকিয়া বইহারের দিগন্তরেখা বৃষ্টির ধোঁয়ায় ঝাপসা, মহালিখারূপের পাহাড় মিলাইয়া গিয়াছে-মোহনপুরা রিজার্ভ ফরেস্টের শীর্ষদেশ কখনো ঈষৎ অস্পষ্ট দেখা যায়, কখনো যায় না। শুনিলাম পূর্বে কুশী ও দক্ষিণে কারো নদীতে বন্যা আসিয়াছে।

    মাইলের পর মাইল ব্যাপিয়া কাশ ও ঝাউবন বর্ষার জলে ভিজিতেছে, আমার আপিসঘরের বারান্দায় চেয়ার পাতিয়া বসিয়া দেখিতাম, আমার সামনে কাশবনের মধ্যে একটা বনঝাউয়ের ডালে একটা সঙ্গীহারা ঘুঘু বসিয়া অঝোরে ভিজিতেছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা একভাবেই বসিয়া আছে-মাঝে মাঝে পালক উষ্কখুষ্ক করিয়া ঝুলাইয়া বৃষ্টির জল আটকাইবার চেষ্টা করে, কখনো এমনিই বসিয়া থাকে।

    এমন দিনে আপিসঘরে বসিয়া দিন কাটানো আমার পক্ষে কিন্তু অসম্ভব হইয়া উঠিত। ঘোড়ায় জিন কষিয়া বর্ষাতি চাপাইয়া বাহির হইয়া পড়িতাম। সে কি মুক্তি! কি উদ্দাম জীবনানন্দ! আর, কি অপরূপ সবুজের সমুদ্র চারিদিকে-বর্ষার জলে নবীন, সতেজ, ঘনসবুজ কাশের বন গজাইয়া উঠিয়াছে-যতদূর দৃষ্টি চলে, এদিকে নাঢ়া-বইহারের সীমানা ওদিকে মোহনপুরা অরণ্যের অস্পষ্ট নীল সীমারেখা পর্যন্ত বিস্তৃত থৈ থৈ করিতেছে-এই সবুজের সমুদ্র-বর্ষাসজল হাওয়ায় মেঘকজ্জল আকাশের নিচে এই দীর্ঘ মরকতশ্যাম তৃণভূমির মাথায় ঢেউ খেলিয়া যাইতেছে-আমি যেন একা এ অকূল সমুদ্রের নাবিক-কোন্ রহস্যময় স্বপ্নবন্দরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়াছি।

    এই বিস্তৃত মেঘচ্ছায়াশ্যামল মুক্ত তৃণভূমির মধ্যে ঘোড়া ছুটাইয়া মাইলের পর মাইল যাইতাম-কখনো সরস্বতীকুণ্ডীর বনের মধ্যে ঢুকিয়া দেখিয়াছি-প্রকৃতির এই অপূর্ব নিভৃত সৌন্দর্যভূমি যুগলপ্রসাদের স্বহস্তে রোপিত নানাজাতীয় বন্য ফুলে ও লতায় সজ্জিত হইয়া আরো সুন্দর হইয়া উঠিয়াছে। সমগ্র ভারতবর্ষের মধ্যে সরস্বতী হ্রদ ও তাহার তীরবর্তী বনানীর মতো সৌন্দর্যভূমি খুব বেশি নাই-এ নিঃসন্দেহে বলতে পারি। হ্রদের ধারে রেড ক্যাম্পিয়নের মেলা বসিয়াছে এই বর্ষাকালে-হ্রদের জলের ধারের নিকট। জলজ ওয়াটারক্রোফটের বড় বড় নীলাভ সাদা ফুলে ভরিয়া আছে। যুগলপ্রসাদ সেদিনও কি একটা বন্যলতা আনিয়া লাগাইয়া গিয়াছে জানি। সে আজমাবাদ কাছারিতে মুহুরীর কাজ করে বটে, কিন্তু তাহার মন পড়িয়া থাকে সরস্বতী কুণ্ডীর তীরবর্তী লতাবিতানে ও বন্যপুষ্পের কুঞ্জে।

    সরস্বতী কুণ্ডীর বন হইতে বাহির হইতাম-আবার মুক্ত প্রান্তর, আবার দীর্ঘ তৃণভূমি-বনের মাথায় ঘন নীল বর্ষার মেঘ আসিয়া জমিতেছে, সমগ্র জলভার নামাইয়া রিক্ত হইবার পূর্বেই আবার উঠিয়া আসিতেছে নবমেঘপু -একদিকের আকাশে এক অদ্ভুত ধরনের নীল রং ফুটিয়াছে-তাহার মধ্যে একখণ্ড লঘুমেঘ অস্তদিগন্তের রঙে রঞ্জিত হইয়া বহির্বিশ্বের দিগন্তে কোন্ অজানা পর্বতশিখরের মতো দেখা যাইতেছে।
    সন্ধ্যার বিলম্ব নাই। দিগন্তহারা ফুলকিয়া বইহারের মধ্যে শিয়াল ডাকিয়া উঠিত-একে মেঘের অন্ধকার, তার উপর সন্ধ্যার অন্ধকার নামিতেছে-ঘোড়ার মুখ কাছারির দিকে ফিরাইতাম।

    কতবার এই ক্ষান্তবর্ষণ মেঘ-থম্কানো সন্ধ্যায় এই মুক্ত প্রান্তরের সীমাহীনতার মধ্যে কোন্ দেবতার স্বপ্ন যেন দেখিয়াছি-এই মেঘ, এই সন্ধ্যা, এই বন, কোলাহলরত শিয়ালের দল, সরস্বতী হ্রদের জলজ পুষ্প, মঞ্চী, রাজু পাঁড়ে, ভানুমতী, মহালিখারূপের পাহাড়, সেই দরিদ্র গোঁড়-পরিবার, আকাশ, ব্যোম সবই তাঁর সুমহতী কল্পনায় একদিন ছিল বীজরূপে নিহিত-তাঁরই আশীর্বাদ আজিকার এই নবনীলনীরদমালার মতোই সমুদয় বিশ্বকে অস্তিত্বের অমৃতধারায় সিক্ত করিতেছে-এই বর্ষা-সন্ধ্যা তাঁরই প্রকাশ, এই মুক্ত জীবনানন্দ তাঁরই বাণী, অন্তরে অন্তরে যে বাণী মানুষকে সচেতন করিয়া তোলে। সে দেবতাকে ভয় করিবার কিছুই নাই-এই সুবিশাল ফুলকিয়া বইহারের চেয়েও, ঐ বিশাল মেঘভরা আকাশের চেয়েও সীমাহীন, অনন্ত তাঁর প্রেম ও আশীর্বাদ। যে যত হীন, যে যত ছোট, সেই বিরাট দেবতার অদৃশ্য প্রসাদ ও অনুকম্পা তার উপর তত বেশি।

    আমার মনে যে দেবতার স্বপ্ন জাগিত, তিনি যে শুধু প্রবীণ বিচারক, ন্যায় ও দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, বিজ্ঞ ও বহুদর্শী কিংবা অব্যয়, অক্ষয় প্রভৃতি দুরূহ দার্শনিকতার আবরণে আবৃত ব্যাপার তাহা নয়-নাঢ়া-বইহারের কি আজমাবাদের মুক্ত প্রান্তরে কত গোধূলিবেলায় রক্ত-মেঘস্তূপের, কত দিগন্তহারা জনহীন জ্যোৎস্নালোকিত প্রান্তরের দিকে চাহিয়া মনে হইত তিনিই প্রেম ও রোমান্স, কবিতা ও সৌন্দর্য, শিল্প ও ভাবুকতা-তিনি প্রাণ দিয়া ভালবাসেন, সুকুমার কলাবৃত্তি দিয়া সৃষ্টি করেন, নিজেকে সম্পূর্ণরূপে বিলাইয়া দিয়া থাকেন নিঃশেষে প্রিয়জনের প্রীতির জন্য-আবার বিরাট বৈজ্ঞানিকের শক্তি ও দৃষ্টি দিয়া গ্রহ-নক্ষত্র-নীহারিকার সৃষ্টি করেন।

    ৪
    এমনি এক বর্ষামুখর শ্রাবণ-দিনে ধাতুরিয়া ইসমাইলপুর কাছারিতে আসিয়া হাজির।

    অনেক দিন পরে উহাকে দেখিয়া খুশি হইলাম।

    -কি ব্যাপার, ধাতুরিয়া? ভালো আছিস তো?

    যে ছোট পুঁটুলির মধ্যে তাহার সমস্ত জাগতিক সম্পত্তি বাঁধা, সেটা হাত হইতে নামাইয়া আমায় হাত তুলিয়া নমস্কার করিয়া বলিল- বাবুজী, নাচ দেখাতে এলাম। বড় কষ্টে পড়েছি, আজ এক মাস কেউ নাচ দেখে নি। ভাবলাম, কাছারিতে বাবুজীর কাছে যাই, সেখানে গেলে তাঁরা ঠিক দেখবেন। আরো ভালো ভালো নাচ শিখেছি বাবুজী।

    ধাতুরিয়া যেন আরো রোগা হইয়া গিয়াছে। উহাকে দেখিয়া কষ্ট হইল।

    -কিছু খাবি ধাতুরিয়া?

    ধাতুরিয়া সলজ্জভাবে ঘাড় নাড়িয়া জানাইল, সে খাইবে।

    আমার ঠাকুরকে ডাকিয়া ধাতুরিয়াকে কিছু খাবার দিতে বলিলাম। তখন ভাত ছিল না, ঠাকুর দুধ ও চিঁড়া আনিয়া দিল। ধাতুরিয়ার খাওয়া দেখিয়া মনে হইল সে অন্তত দু-দিন কিছু খাইতে পায় নাই।

    সন্ধ্যার পূর্বে ধাতুরিয়া নাচ দেখাইল। কাছারির প্রাঙ্গণে সেই বন্য অঞ্চলের অনেক লোক জড়ো হইয়াছিল ধাতুরিয়ার নাচগান দেখিবার জন্য। আগের চেয়েও ধাতুরিয়া নাচে অনেক উন্নতি করিয়াছে। ধাতুরিয়ার মধ্যে যথার্থ শিল্পীর দরদ ও সাধনা আছে। আমি নিজে কিছু দিলাম, কাছারির লোক চাঁদা করিয়া কিছু দিল। ইহাতে তাহার কত দিনই বা চলিবে?

    ধাতুরিয়া পরদিন সকালে আমার নিকট বিদায় লইতে আসিল।

    -বাবুজী, কবে কলকাতা যাবেন?

    -কেন বল তো?

    -আমায় কলকাতায় নিয়ে যাবেন বাবুজী? সেই যে আপনাকে বলেছিলাম?

    -তুমি এখন কোথায় যাবে ধাতুরিয়া? খেয়ে তবে যেও।

    -না, বাবুজী, ঝল্লুটোলাতে একজন ভুঁইহার বাভনের বাড়ি, তার মেয়ের বিয়ে হবে, সেখানে হয়তো নাচ দেখতে পারে। সেই চেষ্টাতে যাচ্ছি। এখান থেকে আট ক্রোশ রাস্তা- এখন রওনা হলে বিকেল নাগাদ পৌঁছব।

    ধাতুরিয়াকে ছাড়িয়া দিতে মন সরে না। বলিলাম- কাছারিতে যদি কিছু জমি দিই, তবে এখানে থাকতে পারবে? চাষবাস কর, থাক না কেন?

    মটুকনাথ পণ্ডিতেরও দেখিলাম খুব ভালো লাগিয়াছে ধাতুরিয়াকে। তাহার ইচ্ছা ধাতুরিয়াকে সে টোলের ছাত্র করিয়া লয়। বলিল- বলুন না ওকে বাবুজী, দু-বছরের মধ্যে মুগ্ধবোধ শেষ করিয়ে দেব। ও থাকুক এখানে।

    জমি দেওয়ার কথায় ধাতুরিয়া বলিল- বাবুজী, আপনি আমার বড় ভাইয়ের মতো, আপনার বড় দয়া। কিন্তু চাষ-কাজ কি আমায় দিয়ে হবে? ওদিকে আমার মন নেই যে! নাচ দেখাতে পেলে আমার মনটা ভারি খুশি থাকে। আর কিছু তেমন ভালো লাগে না।

    -বেশ, মাঝে মাঝে নাচ দেখাবে, চাষ করতে তো জমির সঙ্গে তোমায় কেউ শেকল দিয়ে বেঁধে রাখবে না?

    ধাতুরিয়া খুব খুশি হইল। বলিল- আপনি যা বলবেন, আমি তা শুনব। আপনাকে বড় ভালো লাগে, বাবুজী। আমি ঝল্লুটোলা থেকে ঘুরে আসি- আপনার এখানেই আসব।

    মটুকনাথ পণ্ডিত বলিল- আর সেই সময় তোমাকে টোলেও ঢুকিয়ে নেব। তুমি না হয় রাত্রে এসে পড়ো আমার কাছে। মূর্খ থাকা কিছু নয়, কিছু ব্যাকরণ, কিছু কাব্য লব্‌জ রাখা দরকার।

    ধাতুরিয়া তাহার পর বসিয়া বসিয়া নৃত্যশিল্পের বিষয়ে নানা কথা কি সব বলিল, আমি তত বুঝিলাম না। পূর্ণিয়ার হো-হো-নাচের ভঙ্গির সঙ্গে ধরমপুর অঞ্চলের ঐ শ্রেণীর নাচের কি তফাৎ-সে নিজে নূতন কি একটা হাতের মুদ্রা প্রবর্তন করিয়াছে- এইসব ধরনের কথা।

    -বাবুজী, আপনি বালিয়া জেলায় ছট্ পরবের সময় মেয়েদের নাচ দেখেছেন? ওর সঙ্গে ছক্কর-বাজি নাচের বেশ মিল থাকে একটা জায়গায়। আপনাদের দেশে নাচ কেমন হয়?

    আমি তাহাকে গত বৎসর ফসলের মেলায় দৃষ্ট ননীচোর নাটুয়া’র নাচের কথা বলিলাম। ধাতুরিয়া হাসিয়া বলিল- ও কিছু না বাবুজী, ও মুঙ্গেরের গেঁয়ো নাচ। গাঙ্গোতাদের খুশি করবার নাচ। ওর মধ্যে খাঁটি জিনিস কিছু নেই। ও তো সোজা।

    বলিলাম- তুমি জানো? নেচে দেখাও তো?

    ধাতুরিয়া দেখিলাম নিজের শাস্ত্রে বেশ অভিজ্ঞ। ‘ননীচোর নাটুয়ার’ নাচ সত্যিই চমৎকার নাচিল- সেই খুঁত খুঁত করিয়া ছেলেমানুষের মতো কান্না, সেই চোরা ননী বিতরণ করিবার ভঙ্গি- সেইসব। তাহাকে আরো মানাইল এইজন্য যে, সে সত্যিই বালক।

    ধাতুরিয়া বিদায় লইয়া চলিয়া গেল। যাইবার সময় বলিল-এত মেহেরবানিই যখন করলেন বাবুজী, একবার কলকাতায় কেন নিয়ে চলুন না? ওখানে নাচের আদর আছে।

    এই ধাতুরিয়ার সহিত আমার শেষ দেখা।

    মাস দুই পরে শোনা গেল, বি এন ডব্লিউ রেল লাইনের কাটারিয়া স্টেশনের অদূরে লাইনের উপর একটি বালকের মৃতদেহ পাওয়া যায়-নাটুয়া বালক ধাতুরিয়ার মৃতদেহ বলিয়া সকলে চিনিয়াছে। ইহা আত্মহত্যা কি দুর্ঘটনা তাহা বলিতে পারিব না। আত্মহত্যা হইলে, কি দুঃখেই বা সে আত্মহত্যা করিল?

    সেই বন্য অঞ্চলে দু-বছর কাটাইবার সময় যতগুলি নরনারীর সংস্পর্শে আসিয়াছিলাম- তার মধ্যে ধাতুরিয়া ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। তাহার মধ্যে যে একটি নির্লোভ, সদাচঞ্চল, সদানন্দ, অবৈষয়িক, খাঁটি শিল্পীমনের সাক্ষাৎ পাইয়াছিলাম, শুধু সে বন্য দেশ কেন, সভ্য অঞ্চলের মানুষের মধ্যেও তা সুলভ নয়!

    ৫
    আরো তিন বৎসর কাটিয়া গেল।

    নাঢ়া-বইহার ও লবটুলিয়ার সমুদয় জঙ্গলমহাল বন্দোবস্ত হইয়া গিয়াছে। এখন আর কোথাও পূর্বের মতো বন নাই। প্রকৃতি কত বৎসর ধরিয়া নির্জনে নিভৃতে যে কুঞ্জ রচনা করিয়া রাখিয়াছিল, কত কেঁয়োঝাঁকার নিভৃত লতাবিতান, কত স্বপ্নভূমি-জনমজুরেরা নির্মম হাতে সব কাটিয়া উড়াইয়া দিল, যাহা গড়িয়া উঠিয়াছিল পঞ্চাশ বৎসরে, তাহা গেল এক দিনে। এখন কোথাও আর সে রহস্যময় দূরবিসর্পী প্রান্তর নাই, জ্যোৎস্নালোকিত রাত্রিতে যেখানে মায়াপরীরা নামিত, মহিষের দেবতা দয়ালু টাঁড়বারো হাত তুলিয়া দাঁড়াইয়া বন্য মহিষদলকে ধ্বংস হইতে রক্ষা করিত।

    নাঢ়া-বইহার নাম ঘুচিয়া গিয়াছে, লবটুলিয়া এখন একটি বস্তি মাত্র। যে দিকে চোখ যায়, শুধু চালে চালে লাগানো অপকৃষ্ট খোলার ঘর। কোথাও বা কাশের ঘর। ঘন ঘিঞ্জি বসতি-টোলায় টোলায় ভাগ করা- ফাঁকা জায়গায় শুধুই ফসলের ক্ষেত। এতটুকু ক্ষেতের চারিদিকে ফনিমনসার বেড়া। ধরণীর মুক্তরূপ ইহারা কাটিয়া টুকুরা টুকরা করিয়া নষ্ট করিয়া দিয়াছে।

    আছে কেবল একটি স্থান, সরস্বতী কুণ্ডীর তীরবর্তী বনভূমি।

    চাকুরির খাতিরে মনিবের স্বার্থরক্ষার জন্য সব জমিতেই প্রজাবিলি করিয়াছি বটে, কিন্তু যুগলপ্রসাদের হাতে সাজানো সরস্বতী-তীরের অপূর্ব বনকু কিছুতেই প্রাণ ধরিয়া বন্দোবস্ত করিতে পারি নাই। কতবার দলে দলে প্রজারা আসিয়াছে সরস্বতী কুণ্ডীর পাড়ের জমি লইতে- বর্ধিত হারে সেলামি ও খাজনা দিতেও চাহিয়াছে, কারণ একে ঐ জমি খুব উর্বরা, তাহার উপর নিকটে জল থাকায় মকাই প্রভৃতি ভালো জন্মাইবে; কিন্তু আমি রাজি হই নাই।

    তবে কতদিন আর রাখিতে পারিব? সদর আপিস হইতে মাঝে মাঝে চিঠি আসিতেছে সরস্বতী কুণ্ডীর জমি আমি কেন বিলি করিতে বিলম্ব করিতেছি। নানা ওজর-আপত্তি তুলিয়া এখনো পর্যন্ত রাখিয়াছি বটে, কিন্তু বেশি দিন পারিব না। মানুষের লোভ বড় বেশি, দুটি ভুট্টার ছড়া আর চীনাঘাসের এককাঠা দানার জন্য প্রকৃতির অমন স্বপ্নকু ধ্বংস করিতে তাহাদের কিছুমাত্র বাধিবে না, জানি। বিশেষ করিয়া এখানকার মানুষে গাছপালার সৌন্দর্য বোঝে না, রম্য ভূমিশ্রীর মহিমা দেখিবার চোখ নাই, তাহারা জানে পশুর মতো পেটে খাইয়া জীবনযাপন করিতে। অন্য দেশ হইলে আইন করিয়া এমন সব স্থান সৌন্দর্যপিপাসু প্রকৃতিরসিক নরনারীর জন্য সুরক্ষিত করিয়া রাখিত, যেমন আছে কালিফোর্নিয়ার যোসেমাই ন্যাশনাল পার্ক, দক্ষিণ আফ্রিকায় আছে ক্রুগার ন্যাশনাল পার্ক, বেলজিয়ান কঙ্গোতে আছে পার্ক ন্যাশনাল আলবার্ট। আমার জমিদাররা ও ল্যাণ্ডস্কেপ বুঝিবে না, বুঝিবে সেলামির টাকা, খাজনার টাকা, আদায় ইরশাল, হস্তবুদ।

    এই জন্মান্ধ মানুষের দেশে একজন যুগলপ্রসাদ কি করিয়া জন্মিয়াছিল জানি না- শুধু তাহারই মুখের দিকে চাহিয়া আজও সরস্বতী হ্রদের তীরবর্তী বনানী অক্ষুন্ন রাখিয়াছি।

    কিন্তু কতদিন রাখিতে পারিব?

    যাক্, আমারও কাজ শেষ হইয়া আসিল বলিয়া।

    প্রায় তিন বছর বাংলা দেশে যাই নাই- মাঝে মাঝে বাংলা দেশের জন্য মন বড় উতলা হয়। সারা বাংলা দেশ আমার গৃহ- তরুণী কল্যাণী বধূ সেখানে আপন হাতে সন্ধ্যাপ্রদীপ দেখায়; এখানকার এমন লক্ষ্মীছাড়া উদাস ধূ ধূ প্রান্তর ও ঘন বনানী নয়- যেখানে নারীর হাতের স্পর্শ নাই।

    কি হইতে যেন মনে অকারণ আনন্দের বান ডাকিল তাহা জানি না। জ্যোৎস্নারাত্রি- তখনই ঘোড়ায় জিন কষিয়া সরস্বতী কুণ্ডীর দিকে রওনা হইলাম, কারণ তখন নাঢ়া ও লবটুলিয়া বইহারের বনরাজি শেষ হইয়া আসিয়াছে- যাহা কিছু অরণ্যশোভা ও নির্জনতা আছে তখনো সরস্বতীর তীরেই। আমি মনে মনে বেশ বুঝিলাম, এ আনন্দকে উপভোগ করিবার একমাত্র পটভূমি হইতেছে সরস্বতী হ্রদের তীরবর্তী বনানী।

    ঐ সরস্বতীর জল জ্যোৎস্নালোকে চিক্চিক্ করিতেছে-চিক্চিক্ করিতেছে কি শুধু? ঢেউয়ে ঢেউয়ে জ্যোৎস্না ভাঙ্গিয়া পড়িতেছে। নির্জন, স্তব্ধ বনানী হৃদের জলের তিন দিকে বেষ্টন করিয়া, বন্য লাল হাঁসের কাকলি, বন্য শেফালি-পুষ্পের সৌরভ, কারণ যদিও জ্যৈষ্ঠ মাস, শেফালিফুল এখানে বারোমাস ফোটে।

    কতক্ষণ হ্রদের তীরে এদিকে ওদিকে ইচ্ছামতো ঘোড়া চালাইয়া বেড়াইলাম। হ্রদের জলে পদ্ম ফুটিয়াছে, তীরের দিকে ওয়াটারক্রোফ্ট ও যুগলপ্রসাদের আনীত স্পাইডার লিলির ঝাড় বাঁধিয়াছে। দেশে চলিয়াছি কতকাল পরে, এ নির্জন অরণ্যবাস হইতে মুক্তি পাইব, সেখানে বাঙালি মেয়ের হাতে রান্না খাদ্য খাইয়া বাঁচিব, কলিকাতায় এক-আধ দিন থিয়েটার-বায়োস্কোপ দেখিব, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কত কাল পরে আবার দেখা হইবে।

    এইবার ধীরে ধীরে সে অননুভূত আনন্দের বন্যা আমার মনের কূল ভাসাইয়া দোলা দিতে লাগিল। যোগাযোগ হইয়াছিল বোধ হয় অদ্ভুত-এতদিন পরে দেশে প্রত্যাবর্তন, সরস্বতী হ্রদের জ্যোৎস্নালোকিত-বারিরাশি ও বনফুলের শোভা, বন্য শেফালির জ্যোৎস্না-মাখানো সুবাস, শান্ত স্তব্ধতা-ভালো ঘোড়ার চমৎকার কোনাকুনি ক্যাণ্টার চাল, হু-হু হাওয়া- সব মিলিয়া স্বপ্ন! স্বপ্ন! আনন্দের ঘন নেশা! আমি যেন যৌবনোন্মত্ত তরুণ দেবতা, বাধাবন্ধহীন, মুক্ত গতিতে সময়ের সীমা পার হইয়া চলিয়াছি-এই চলাই যেন আমার অদৃষ্টের জয়লিপি, আমার সৌভাগ্য, আমার প্রতি কোন্ সুপ্রসন্ন দেবতার আশীর্বাদ!

    হয়তো আর ফিরিব না-দেশে ফিরিয়া মরিয়াও তো যাইতে পারি। বিদায় সরস্বতী-কুণ্ডী, বিদায় তীরতরু-সারি, বিদায় জ্যোৎস্নালোকিত মুক্ত বনানী। কলিকাতার কোলাহলমুখর রাজপথে দাঁড়াইয়া তোমার কথা মনে পড়িবে, বিস্তৃত জীবনদিনের বীণার অনতিস্পষ্ট ঝঙ্কারের মতো মনে পড়িবে যুগলপ্রসাদের আনা গাছগুলির কথা, জলের ধারে স্পাইডার লিলি ও পদ্মের বন, তোমার বনের নিবিড় ডালপালার মধ্যে স্তব্ধ মধ্যাহ্নে ঘুঘুর ডাক, অস্তমেঘের ছায়ায় রাঙা ময়নাকাঁটার গুঁড়ি ও ডাল, তোমার নীল জলে উপরকার নীল আকাশে উড়ন্ত সিল্লী ও লাল হাঁসের সারি-জলের ধারের নরম কাদার উপরে হরিণশিশুর পদচিহ্ন … নির্জনতা, সুগভীর নির্জনতা। বিদায়, সরস্বতী কুণ্ডী।

    ফিরিবার পথে দেখি সরস্বতী হ্রদের বন হইতে বাহির হইয়া মাইলখানেক দূরে একটা জায়গায় বন কাটিয়া একখানা ঘর বসাইয়া মানুষ বাস করিতেছে- এই জায়গাটার নাম হইয়াছে নয়া লবটুলিয়া-যেমন নিউ সাউথ ওয়েল্স্ বা নিউ ইয়র্ক- নূতন গৃহস্থ পরিবার আসিয়া বনের ডালপালা কাটিয়া (নিকটে বড় বন নাই, সুতরাং সরস্বতীর তীরবর্তী বন হইতেই আমদানি নিশ্চয়ই) ঘাসের ছাওয়া তিন-চারখানা নিচু নিচু খুপরি বাঁধিয়াছে। তারই নিচে এখনো পর্যন্ত ভিজা দাওয়ার উপর একটা নারিকেল কিংবা কড়ুয়া তেলের গলা-ভাঙ্গা বোতল, একটি উলঙ্গ হামাগুড়িরত কৃষ্ণকায় শিশু, কয়েকটি সিহোড়া গাছের সুরু ডালে বোনা ঝুড়ি, একটি মোটা রূপার অনন্ত পরা যক্ষের মতো কালো আঁটসাঁট গড়নের বউ, খানকয়েক পিতলের লোটা ও থালা ও কয়েকখানা দা, খোন্তা, কোদাল। ইহাই লইয়া ইহারা প্রায় সবাই সংসার করে। শুধু নিউ লবটুলিয়া কেন, ইসমাইলপুর ও নাঢ়া-বইহারের সর্বত্রই এইরূপ। কোথা হইতে উঠিয়া আসিয়াছে তাই ভাবি; ভদ্রাসন নাই, পৈতৃক ভিটা নাই, গ্রামের মায়া নাই, প্রতিবেশীর স্নেহমমতা নাই-আজ ইসমাইলপুরের বনে, কাল মুঙ্গেরের দিয়ারা চরে, পরশু জয়ন্তী পাহাড়ের নিচে তরাইভূমিতে -সর্বত্রই ইহাদের গতি, সর্বত্রই ইহাদের ঘর।

    পরিচিত কণ্ঠের আওয়াজ পাইয়া দেখি রাজু পাড়ে এই ধরনের একটি গৃহস্থবাড়িতে বসিয়া ধর্মতত্ত্ব আলোচনা করিতেছে। উহাকে দেখিয়া ঘোড়া হইতে নামিলাম। আমায় সবাই মিলিয়া খাতির করিয়া বসাইল। রাজুকে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিলাম সে এখানে কবিরাজি করিতে আসিয়াছিল। ভিজিট পাইয়াছে চারিকাঠা যব এবং নগদ আট পয়সা। ইহাতেই সে মহা খুশি হইয়া ইহাদের সহিত আসর জমাইয়া দার্শনিক তত্ত্ব আলোচনা জুড়িয়া দিয়াছে।

    আমায় বলিল-বসুন, একটা কথার মীমাংসা করে দিন তো বাবুজী! আচ্ছা, পৃথিবীর কি শেষ আছে? আমি তো এদের বলছি বাবু, যেমন আকাশের শেষ নেই, পৃথিবীরও তেমনি শেষ নেই। কেমন, তাই না বাবুজী?

    বেড়াইতে আসিয়া এমন গুরুতর জটিল বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সম্মুখীন হইতে হইবে, তাহা ভাবি নাই।

    রাজু পাঁড়ের দার্শনিক মন সর্বদাই জটিল তত্ত্ব লইয়া কারবার করে জানি এবং ইহাও জানি যে ইহাদের সমাধানে সে সর্বদাই মৌলিক চিন্তার পরিচয় দিয়া আসিতেছে, যেমন রামধনু উইয়ের ঢিবি হইতে জন্মায়, নক্ষত্রদল যমের চর, মানুষ কি পরিমাণে বাড়িতেছে তাহাই সরেজমিনে তদারক করিবার জন্য যম কর্তৃক উহারা প্রেরিত হয়-ইত্যাদি।

    পৃথিবীতত্ত্ব যতটা আমার জানা আছে বুঝাইয়া বলিতে রাজু বলিল- কেন সূর্য পূর্বদিকে ওঠে, পশ্চিমে অস্ত যায়, আচ্ছা কোন্ সাগর থেকে সূর্য উঠছে আর কোন্ সাগরে নামছে এর কেউ নিরাকরণ করতে পেরেছে? রাজু সংস্কৃত পড়িয়াছে, ‘নিরাকরণ’ কথাটা ব্যবহার করাতে গাঙ্গোতা গৃহস্থ ও তাহার পরিবারবর্গ সপ্রশংস ও বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে রাজুর দিকে চাহিয়া রহিল এবং সঙ্গে সঙ্গে ইহাও ভাবিল ইংরেজিনবিশ বাঙালি বাবুকে কবিরাজমশায় একেবারে কি অথৈ জলে টানিয়া লইয়া ফেলিয়াছে! বাঙালি বাবু এবার হাবুডুবু খাইয়া মরিল দেখিতেছি!
    বলিলাম-রাজু, তোমার চোখের ভুল, সূর্য কোথাও যায় না, এক জায়গায় স্থির আছে।

    রাজু আমার মুখের দিকে অবাক হইয়া চাহিয়া রহিল। গাঙ্গোতার দল হা হা করিয়া তাচ্ছিল্যের সুরে হাসিয়া উঠিল। হায় গ্যালিলিও, এই নাস্তিক বিচারমূঢ় পৃথিবীতেই তুমি কারারুদ্ধ হইয়াছিলে!

    বিস্ময়ের প্রথম রেশ কাটিয়া গেলে রাজু আমায় বলিল-সূরযনারায়ণ পূর্বে উদয়-পাহাড়ে উঠেন না বা পশ্চিম-সমুদ্রে অস্ত যান না?

    বলিলাম- না।

    – এ কথা ইংরিজি বইতে লিখেছে?

    – হাঁ।

    জ্ঞান মানুষকে সত্যই সাহসী করে; যে শান্ত, নিরীহ রাজু পাঁড়ের মুখে কখনো উঁচু সুরে কথা শুনি নাই- সে সতেজে, সদর্পে বলিল- ঝুট্ বাত বাবুজী। উদয়-পাহাড়ের যে গুহা থেকে সূরযনারায়ণ রোজ ওঠেন সে গুহা একবার মুঙ্গেরের এক সাধু দেখে এসেছিলেন। অনেক দূর হেঁটে যেতে হয়, পূর্বদিকের একেবারে সীমানায় সে পাহাড়, গুহার মুখে মস্ত পাথরের দরজা, ওঁর অভ্রের রথ থাকে সেই গুহার মধ্যে। যে-সে কি দেখতে পায় হুজুর? বড় বড় সাধু মহান্ত দেখেন। ঐ সাধু অভ্রের রথের একটা কুচি এনেছিলেন- এই এত বড় চক্চকে অভ্র- আমার গুরুভাই কামতাপ্রসাদ স্বচক্ষে দেখেছেন।

    কথা শেষ করিয়া রাজু সগর্বে একবার সমবেত গাঙ্গোতাদের মুখের দিকে চক্ষু ঘুরাইয়া-ফিরাইয়া চাহিল।

    উদয়-পর্বতের গুহা হইতে সূর্যের উত্থানের এতবড় অকাট্য ও চাক্ষুষ প্রমাণ উত্থাপিত করার পরে আমি সেদিন একেবারে নিশ্চুপ হইয়া গেলাম।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleচাঁদের পাহাড় – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    Next Article হলুদ নদী সবুজ বন – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    ছোটগল্প বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    কাদা kada

    August 11, 2025
    উপন্যাস কল্লোল লাহিড়ী

    ইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী

    May 28, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025

    হে পূর্ণ, তব চরণের কাছে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025

    ভ্রমণের নবনীতা – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.