Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025

    হে পূর্ণ, তব চরণের কাছে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025

    ভ্রমণের নবনীতা – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আরণ্যক – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    উপন্যাস বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এক পাতা গল্প306 Mins Read0

    ০৯.আরণ্যক – নবম পরিচ্ছেদ

    নবম পরিচ্ছেদ

    ১
    প্রায় তিন বছর কাটিয়া গিয়াছে।

    এই তিন বছরে আমার অনেক পরিবর্তন ঘটিয়াছে। লবটুলিয়া ও আজমাবাদের বন্য প্রকৃতি কি মায়া-কাজল লাগাইয়া দিয়াছে আমার চোখে-শহরকে একরকম ভুলিয়া গিয়াছি। নির্জনতার মোহ, নক্ষত্রভরা উদার আকাশের মোহ আমাকে এমন পাইয়া বসিয়াছে যে, মধ্যে একবার কয়েক দিনের জন্য পাটনায় গিয়া ছট্ফট্ করিতে লাগিলাম কবে পিচঢালা বাঁধাধরা রাস্তার গণ্ডি এড়াইয়া চলিয়া যাইব লবটুলিয়া বইহারে,- পেয়ালার মতো উপুড়-করা নীল আকাশের তলে মাঠের পর মাঠ, অরণ্যের পর অরণ্য, যেখানে তৈরি রাজপথ নাই, ইটের ঘরবাড়ি নাই, মোটর-হর্নের আওয়াজ নাই, ঘন ঘুমের ফাঁকে যেখানে কেবল দূর অন্ধকার বনে শেয়ালের দলের প্রহর-ঘোষণা শোনা যায়, নয়তো ধাবমান নীলগাইয়ের দলের সম্মিলিত পদধ্বনি, নয়তো বন্য মহিষের গম্ভীর আওয়াজ।

    আমার উপরওয়ালারা ক্রমাগত আমাকে চিঠি লিখিয়া তাগাদা করিতে লাগিলেন, কেন আমি এখানকার জমি প্রজাবিলি করিতেছি না। আমি জানি আমার তাহাই একটি প্রধান কাজ বটে, কিন্তু এখানে প্রজা বসাইয়া প্রকৃতির এমন নিভৃত কুঞ্জবনকে নষ্ট করিতে মন সরে না। যাহারা জমি ইজারা লইবে, তাহারা তো জমিতে গাছপালা বনঝোপ সাজাইয়া রাখিবার জন্য কিনিবে না-কিনিয়াই তাহারা জমি সাফ করিয়া ফেলিবে, ফসল রোপণ করিবে, ঘরবাড়ি বাঁধিয়া বসবাস শুরু করিবে-এই নির্জন শোভাময় বন্য প্রান্তর, অরণ্য, কুণ্ডী, শৈলমালা জনপদে পরিণত হইবে, লোকের ভিড়ে ভয় পাইয়া বনলক্ষ্মীরা ঊর্ধ্বশ্বাসে পলাইবেন-মানুষ ঢুকিয়া এই মায়াকাননের মায়াও দূর করিবে, সৌন্দর্যও ঘুচাইয়া দিবে।

    সে জনপদ আমি মনশ্চক্ষে স্পষ্ট দেখিতে পাই।-

    পাটনা, পূর্ণিয়া কি মুঙ্গের যাইতে তেমন জনপদ এদেশের সর্বত্র। গায়ে গায়ে কুশ্রী বেঢপ খোলার একতলা কি দোতলা মাঠকোঠা, চালে চালে বসতি ফনিমনসার ঝাড়, গোবরস্তূপের আবর্জনার মাঝখানে গোরু-মহিষের গোয়াল-ইঁদারা হইতে রহট্ দ্বারা জল উঠানো হইতেছে, ময়লা কাপড় পরা নরনারীর ভিড়, হনুমানজীর মন্দিরে ধ্বজা উড়িতেছে, রুপার হাঁসুলি গলায় উলঙ্গ বালক-বালিকার দল ধুলা মাখিয়া রাস্তার উপর খেলা করিতেছে।

    কিসের বদলে কি পাওয়া যাইবে!

    এমন বিশাল ছেদহীন, বাধাবন্ধনহীন উদ্দাম সৌন্দর্যময়ী অরণ্যভূমি দেশের একটা বড় সম্পদ-অন্য কোনো দেশ হইলে আইন করিয়া এখানে ন্যাশনাল্ পার্ক করিয়া রাখিত। কর্মক­ান্ত শহরের মানুষ মাঝে মাঝে এখানে আসিয়া প্রকৃতির সাহচর্যে নিজেদের অবসন্ন মনকে তাজা করিয়া লইয়া ফিরিত। তাহা হইবার জো নাই, যাহার জমি সে প্রজাবিলি না করিয়া জমি ফেলিয়া রাখিবে কেন।

    আমি প্রজা বসাইবার ভার লইয়া এখানে আসিয়াছিলাম- এই অরণ্যপ্রকৃতিকে ধ্বংস করিতে আসিয়া এই অপূর্বসুন্দরী বন্য নায়িকার প্রেমে পড়িয়া গিয়াছি। এখন আমি ক্রমশ সে-দিন পিছাইয়া দিতেছি। যখন ঘোড়ায় চড়িয়া ছায়াগহন বৈকালে কিংবা মুক্তাশুভ্র জ্যোৎস্নারাত্রে একা বাহির হই, তখন চারিদিকে চাহিয়া মনে মনে ভাবি, আমার হাতেই ইহা নষ্ট হইবে? জ্যোৎস্নালোকে উদাস আত্মহারা, শিলাস্তৃত ধূ ধূ নির্জন বন্য প্রান্তর! কি করিয়াই আমার মন ভুলাইয়াছে চতুরা সুন্দরী।

    কিন্তু কাজ যখন করিতে আসিয়াছি, করিতেই হইবে। মাঘ মাসের শেষে পাটনা হইতে ছটু সিং নামে এক রাজপুত আসিয়া হাজার বিঘা জমি বন্দোবস্ত লইতে চাহিয়া দরখাস্ত দিতেই আমি বিষম চিন্তায় পড়িলাম-হাজার বিঘা জমি দিলে তো অনেকটা জায়গাই নষ্ট হইয়া যাইবে-কত সুন্দর বনঝোপ, লতাবিতান নির্মমভাবে কাটা পড়িবে যে!

    ছটু সিং ঘোরাঘুরি করিতে লাগিল- আমি তাহার দরখাস্ত সদরে পাঠাইয়া দিয়া ধ্বংসলীলাকে কিছু বিলম্বিত করিবার চেষ্টা করিলাম।

    ২
    একদিন লবটুলিয়া জঙ্গলের উত্তরে নাঢ়া বইহারের মুক্ত প্রান্তরের মধ্য দিয়া দুপুরের পরে আসিতেছি- দেখিলাম, একখানা পাথরের উপর কে বসিয়া আছে পথের ধারে।

    তাহার কাছে আসিয়া ঘোড়া থামাইলাম। লোকটির বয়স ষাটের কম নয়, পরনে ময়লা কাপড়, একটা ছেঁড়া চাদর গায়ে।
    এ জনশূন্য প্রান্তরে লোকটা কি করিতেছে একা বসিয়া?

    সে বলিল- আপনি কে বাবু?

    বলিলাম- আমি এখানকার কাছারির কর্মচারী।

    -আপনি কি ম্যানেজারবাবু?

    -কেন বল তো? তোমার কোনো দরকার আছে? হ্যাঁ, আমিই ম্যানেজার।

    লোকটা উঠিয়া আমার দিকে আশীর্বাদের ভঙ্গিতে হাত তুলিল। বলিল- হুজুর, আমার নাম মটুকনাথ পাঁড়ে, ব্রাহ্মণ, আপনার কাছেই যাচ্ছি।

    -কেন?

    -হুজুর, আমি বড় গরিব। অনেক দূর থেকে হেঁটে আসছি হুজুরের নাম শুনে। তিন দিন থেকে হাঁটছি পথে পথে। যদি আপনার কাছে চলাচলতির কোনো একটা উপায় হয়-

    আমার কৌতূহল হইল, জিজ্ঞাসা করিলাম- ক’দিন জঙ্গলের পথে তুমি কি খেয়ে আছ?

    মটুকনাথ তাহার মলিন চাদরের একপ্রান্তে বাঁধা পোয়াটাক কলাইয়ের ছাতু দেখাইয়া বলিল-সেরখানেক ছাতু ছিল এতে বাঁধা, এই নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। তাই ক’দিন খাচ্ছি। রোজগারের চেষ্টায় বেড়াচ্ছি হুজুর- আজ ছাতু ফুরিয়ে এসেছে, ভগবান জুটিয়ে দেবেন আবার।

    আজমাবাদ ও নাঢ়া বইহারের এই জনশূন্য বনপ্রান্তরে উড়ানির খুঁটে ছাতু বাঁধিয়া লোকটা কি রোজগারের প্রত্যাশায় আসিয়াছে বুঝিতে পারিলাম না। বলিলাম-বড় বড় শহর ভাগলপুর, পূর্ণিয়া, পাটনা, মুঙ্গের ছেড়ে এ জঙ্গলের মধ্যে এলে কেন পাঁড়েজী? এখানে কি হবে? লোক কোথায় এখানে? তোমাকে দেবে কে?

    মটুকনাথ আমার মুখের দিকে নৈরাশ্যপূর্ণ দৃষ্টিতে চাহিয়া বলিল- এখানে কিছু রোজগার হবে না বাবু? তবে আমি কোথায় যাব? ও-সব বড় শহরে আমি কাউকে চিনি নে, রাস্তাঘাট চিনি নে, আমার ভয় করে। তাই এখানে যাচ্ছিলাম-

    লোকটাকে বড় অসহায়, দুঃখী ও ভালোমানুষ বলিয়া মনে হইল। সঙ্গে করিয়া কাছারিতে লইয়া আসিলাম।

    কয়েকদিন চলিয়া গেল। মটুকনাথকে কোনো কাজ করিয়া দিতে পারিলাম না,- দেখিলাম সে কোনো কাজ জানে না- কিছু সংস্কৃত পড়িয়াছে, ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতের কাজ করিতে পারে। টোলে ছাত্র পড়াইত, আমার কাছে বসিয়া সময়ে অসময়ে উদ্ভট শ্লোক আবৃত্তি করিয়া বোধ হয় আমার অবসর-বিনোদনের চেষ্টা করে।

    একদিন আমায় বলিল-আমায় কাছারির পাশে একটু জমি দিয়ে একটা টোল খুলিয়ে দিন হুজুর।

    বলিলাম-কে পড়বে টোলে পণ্ডিতজী, বুনো মহিষ ও নীলগাইয়ের দল কি ভট্টি বা রঘুবংশ বুঝবে?

    মটুকনাথ নিপাট ভালোমানুষ-বোধ হয় কিছু না ভাবিয়া দেখিয়াই টোল খুলিবার প্রস্তাব করিয়াছিল। ভাবিলাম, বুঝিবা এবার সে নিরস্ত হইবে। কিন্তু দিনকতক চুপ করিয়া থাকিয়া আবার সে কথাটা পাড়িল।

    বলিল-দিন দয়া করে একটা টোল আমায় খুলে। দেখি না চেষ্টা করে কি হয়। নয়তো আর যাব কোথায় হুজুর?

    ভালো বিপদে পড়িয়াছি, লোকটা কি পাগল! ওর মুখের দিকে চাহিলেও দয়া হয়, সংসারের ঘোরপ্যাঁচ বোঝে না, নিতান্ত সরল, নির্বোধ ধরনের মানুষ-অথচ একরাশ নির্ভর ও ভরসা লইয়া আসিয়াছে- কাহার উপর কে জানে?

    তাহাকে কত বুঝাইলাম, আমি জমি দিতে রাজি আছি, সে চাষবাস করুক, যেমন রাজু পাঁড়ে করিতেছে। মটুকনাথ মিনতি করিয়া বলিল, তাহারা বংশানুক্রমে শাস্ত্রব্যবসায়ী ব্রাহ্মণ-পণ্ডিত, চাষকাজের সে কিছুই জানে না, জমি লইয়া কি করিবে?

    তাহাকে বলিতে পারিতাম, শাস্ত্রব্যবসায়ী পণ্ডিত-মানুষ এখানে মরিতে আসিয়াছ কেন, কিন্তু কোনো কঠিন কথা বলিতে মন সরিল না। লোকটাকে বড় ভালো লাগিয়াছিল। অবশেষে তাহার নির্বন্ধাতিশয্যে একটা ঘর বাঁধিয়া দিয়া বলিলাম, এই তোমার টোল, এখন ছাত্র যোগাড় হয় কি না দেখ।

    মটুকনাথ পূজার্চনা করিয়া দু-তিনটি ব্রাহ্মণ ভোজন করাইয়া টোল প্রতিষ্ঠা করিল। এ জঙ্গলে কিছুই মেলে না, সে নিজের হাতে মকাইয়ের আটার মোটা মোটা পুরী ভাজিল এবং জংলী ধুঁধুলের তরকারি। বাথান হইতে মহিষের দুধ আনাইয়া দই পাতিয়া রাখিয়াছিল। নিমন্ত্রিতের দলে অবশ্য আমিও ছিলাম।

    টোল খুলিয়া কিছুদিন মটুকনাথ বড় মজা করিতে লাগিল।

    পৃথিবীতে এমন মানুষও সব থাকে!

    সকালে স্নানাহ্নিক সারিয়া সে টোলঘরে একখানা বন্য খেজুরপাতায় বোনা আসনের উপর গিয়া বসে এবং সম্মুখে মুগ্ধবোধ খুলিয়া সূত্র আবৃত্তি করে, ঠিক যেন কাহাকে পড়াইতেছে! এমন চেঁচাইয়া পড়ে যে, আমি আমার আপিসঘরে বসিয়া কাজ করিতে করিতে শুনিতে পাই।

    তহসিলদার সজ্জন সিং বলে- পণ্ডিতজী লোকটা বদ্ধ পাগল। কি করছে দেখুন হুজুর!

    মাস-দুই এইভাবে কাটে। শূন্য ঘরে মটুকনাথ সমান উৎসাহে টোল করিয়া চলিয়াছে। একবার সকালে, একবার বৈকালে। ইতিমধ্যে সরস্বতী পূজা আসিল। কাছারিতে দোয়াত-পূজার দ্বারা বাবেঞ্জীর অর্চনা নিষ্পন্ন করা হয় প্রতি বৎসর, এ জঙ্গলে প্রতিমা কোথায় গড়ানো হইবে? মটুকনাথ তার টোলে শুনিলাম আলাদা পূজা করিবে, নিজের হাতে নাকি প্রতিমা গড়িবে।

    ষাট বছরের বৃদ্ধের কি ভরসা, কি উৎসাহ!

    নিজের হাতে ছোট প্রতিমা গড়িল মটুকনাথ। টোলে আলাদা পূজা হইল।

    বৃদ্ধ হাসিমুখে বলিল- বাবুজী, এ আমাদের পৈতৃক পুজো। আমার বাবা চিরকাল তাঁর টোলে প্রতিমা গড়িয়ে পুজো করে এসেছেন, ছেলেবেলায় দেখেছি। এখন আবার আমার টোলে-

    কিন্তু টোল কই?

    মটুকনাথকে একথা বলি না অবশ্য।

    ৩
    সরস্বতী পূজার দিন-দশবারো পরে মটুকনাথ পণ্ডিত আমাকে আসিয়া জানাইল, তাহার টোলে একজন ছাত্র আসিয়া ভর্তি হইয়াছে। আজই সে নাকি কোথা হইতে আসিয়া পৌঁছিয়াছে।

    মটুকনাথ ছাত্রটিকে আমার সামনে হাজির করাইল। চোদ্দ-পনেরো বছরের কালো শীর্ণকায় বালক, মৈথিলী ব্রাহ্মণ, নিতান্ত গরিব, পরনের কাপড়খানি ছাড়া দ্বিতীয় বস্ত্র পর্যন্ত নাই।

    মটুকনাথের উৎসাহ দেখে কে। নিজে খাইতে পায় না, সেই মুহূর্তে সে ছাত্রটির ভরণপোষণের ভার গ্রহণ করিয়া বসিল। ইহাই তাহার কুলপ্রথা, টোলের ছাত্রের সকল প্রকার অভাব-অনটন এতদিন তাহাদের টোল হইতে নির্বাহ হইয়া আসিয়াছে, বিদ্যা শিখিবার আশায় যে আসিয়াছে, তাহাকে সে ফিরাইতে পারিবে না।

    মাস দুইয়ের মধ্যে দেখিলাম, আরো দু-তিনটি ছাত্র জুটিল টোলে। ইহারা একবেলা খায়, একবেলা খায় না। সিপাহীরা চাঁদা করিয়া মকাইয়ের ছাতু, আটা, চীনার দানা দেয়, কাছারি হইতে আমিও কিছু সাহায্য করি। জঙ্গল হইতে বাথুয়া শাক তুলিয়া আনে ছাত্রেরা- তাহাই সিদ্ধ করিয়া হয়তো একবেলা কাটাইয়া দেয়। মটুকনাথেরও সেই অবস্থা।

    রাত দশটা-এগারোটা পর্যন্ত মটুকনাথ শুনি ছাত্র পড়াইতেছে টোলঘরের সামনে একটা হরীতকী গাছের তলায়। অন্ধকারেই অথবা জ্যোৎস্নালোকে- কারণ আলো জ্বালাইবার তেল জোটে না।

    একটা জিনিস লক্ষ্য করিয়া আশ্চর্য হইয়াছি। মটুকনাথ টোলঘরের জন্য জমি ও ঘর বাঁধিয়া দেওয়ার প্রার্থনা ছাড়া আমার কাছে কোনোদিন কোনো আর্থিক সাহায্য চায় নাই। কোনোদিন বলে নাই, আমার চলে না, একটা উপায় করুন না। কাহাকেও সে কিছু জানায় না, সিপাহীরা নিজের ইচ্ছায় যা দেয়।

    বৈশাখ হইতে ভাদ্র মাসের মধ্যে মটুকনাথের টোলের ছাত্রসংখ্যা বেশ বাড়িল। দশ-বারোটি বাপে-তাড়ানো মায়ে-খেদানো গরিব বালক বিনা পয়সায় অল্প আয়াসে খাইতে পাইবার লোভে নানা জায়গা হইতে আসিয়া জুটিয়াছে। কারণ এসব দেশে কাকের মুখে একথা ছড়ায়। ছাত্রগুলিকে দেখিয়া মনে হইল ইহারা পূর্বে মহিষ চরাইত; কারো মধ্যে এতটুকু বুদ্ধির উজ্জ্বলতা নাই-ইহারা পড়িবে কাব্য-ব্যাকরণ? মটুকনাথকে নিরীহ মানুষ পাইয়া পড়িবার ছুতায় তাহার ঘাড়ে বসিয়া খাইতে আসিয়াছে। কিন্তু মটুকনাথের এসব দিকে খেয়াল নাই, সে ছাত্র পাইয়া মহা খুশি।

    একদিন শুনিলাম, টোলের ছাত্রগণ কিছু খাইতে না পাইয়া উপবাস করিয়া আছে। সেইসঙ্গে মটুকনাথও।

    মটুকনাথকে ডাকাইয়া ব্যাপার জিজ্ঞাসা করিলাম।

    কথাটা ঠিকই। সিপাহীরা চাঁদা করিয়া যে আটা ও ছাতু দিয়াছিল, তাহা ফুরাইয়াছে, কয়েক দিন রাত্রে শুধু বাথুয়া শাক সিদ্ধ আহার করিয়া চলিতেছিল, আজ তাহাও পাওয়া যায় নাই। তাহা ছাড়া উহা খাইয়া অনেকের অসুখ হওয়াতে কেহ খাইতে চাহিতেছে না।

    -তা এখন কি করবে পণ্ডিতজী?

    -কিছু তো ভেবে পাচ্ছি নে হুজুর। ছোট ছোট ছেলেগুলো না খেয়ে থাকবে-

    আমি ইহাদের সকলের জন্য সিধা বাহির করিয়া দিবার ব্যবস্থা করিলাম। দু-তিন দিনের উপযুক্ত চাল, ডাল, ঘি, আটা। বলিলাম-টোল কি করে চালাবে, পণ্ডিতজী? ও উঠিয়ে দাও। খাবে কি, খাওয়াবে কি?

    দেখিলাম আমার কথায় সে আঘাত পাইয়াছে। বলিল-তাও কি হয় হুজুর? তৈরি টোল কি ছাড়তে পারি? ঐ আমার পৈতৃক ব্যবসায়।

    মটুকনাথ সদানন্দ লোক। তাহাকে এসব বুঝাইয়া ফল নাই। সে ছাত্র কয়টি লইয়া বেশ মনের সুখেই আছে দেখিলাম।

    আমার এই বনভূমির একপ্রান্ত যেন সেকালের ঋষিদের আশ্রম হইয়া উঠিয়াছে মটুকনাথের কৃপায়। টোলের ছাত্ররা কলরব করিয়া পড়াশুনা করে, মুগ্ধবোধের সূত্র আওড়ায়, কাছারির লাউ-কুমড়ার মাচা হইতে ফল চুরি করে, ফুলগাছের ডাল-পাতা ভাঙিয়া ফুল লইয়া যায়, এমন কি মাঝে মাঝে কাছারির লোকজনের জিনিসপত্রও চুরি যাইতে লাগিল – সিপাহীরা বলাবলি করিতে লাগিল, টোলের ছাত্রদের কাজ।

    একদিন নায়েবের ক্যাশবাক্স খোলা অবস্থায় তাহার ঘরে পড়িয়া ছিল। কে তাহার মধ্য হইতে কয়েকটি টাকা ও নায়েবের একটি ঘষা-সোনার আংটি চুরি করিল। তাহা লইয়া খুব হৈ হৈ করিল সিপাহীরা। মটুকনাথের এক ছাত্রের কাছে কয়েকদিন পরে আংটিটা পাওয়া গেল। সে কোমরের ঘুন্সিতে বাঁধিয়া রাখিয়াছিল, কে দেখিতে পাইয়া কাছারিতে আসিয়া বলিয়া দিল। ছাত্র বামালসুদ্ধ ধরা পড়িল।

    আমি মটুকনাথকে ডাকাইয়া পাঠাইলাম। সে সত্যই নিরীহ লোক, তাহার ভালোমানুষির সুযোগ গ্রহণ করিয়া দুর্দান্ত ছাত্রেরা যাহা খুশি করিতেছে। টোল ভাঙ্গিবার দরকার নাই, অন্তত কয়েকজন ছাত্রকে তাড়াইতেই হইবে। বাকি যাহারা থাকিতে চায়, আমি জমি দিতেছি, উহারা নিজের মাথার ঘাম পায়ে ফেলিয়া জমিতে কিছু কিছু মকাই, চীনাঘাস ও তরকারির চাষ করুক। খাদ্যশস্য যাহা উৎপন্ন হইবে, তাহাতেই উহাদের চলিবে।

    মটুকনাথ এ-প্রস্তাব ছাত্রদের কাছে করিল। বারোজন ছাত্রের মধ্যে আটজন শুনিবামাত্র পলাইল। চারজন রহিয়া গেল, তাও আমার মনে হয় বিদ্যানুরাগের জন্য নয়, নিতান্ত কোথাও কোনো উপায় নাই বলিয়া। পূর্বে মহিষ চরাইত, এখন না-হয় চাষ করিবে। সেই হইতে মটুকনাথের টোল চলিতেছে মন্দ নয়।

    ৪
    ছটু সিং ও অন্যান্য প্রজাদের জমি বিলি হইয়া গিয়াছে। সর্বসুদ্ধ প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমি। নাঢ়া বইহারের জমি অত্যন্ত উর্বর বলিয়া ঐ অংশেই দেড় হাজার বিঘা জমি একসঙ্গে উহাদের দিতে হইয়াছে। সেখানকার প্রান্তরসীমার বনানী অতি শোভাময়ী, কতদিন সন্ধ্যাবেলা ঘোড়ায় আসিবার সময় সে বন দেখিয়া মনে হইয়াছে, জগতের মধ্যে নাঢ়া বইহারের এই বন একটা বিউটি স্পট-গেল সে বিউটি স্পট!

    দূর হইতে দেখিতাম বনে আগুন দিয়াছে, খানিকটা পোড়াইয়া না ফেলিলে ঘন দুর্ভেদ্য জঙ্গল কাটা যায় না। কিন্তু সব জায়গায় তো বন নাই, দিগন্তব্যাপী প্রান্তরের ধারে ধারে নিবিড় বন, হয়তো প্রান্তরের মাঝে মাঝে বন-ঝোপ, কত কি লতা, কত কি বনকুসুম।…

    চট্ চট্ শব্দ করিয়া বন পুড়িতেছে, দূর হইতে শুনি-কত শোভাময় লতাবিতান ধ্বংস হইয়া গেল, বসিয়া বসিয়া ভাবি। কেমন একটা কষ্ট হয় বলিয়া ওদিকে যাই না। দেশের একটা এত বড় সম্পদ, মানুষের মনে যাহা চিরদিন শান্তি ও আনন্দ পরিবেশন করিতে পারিত – একমুষ্টি গমের বিনিময়ে তাহা বিসর্জন দিতে হইল!

    কার্তিক মাসের প্রথমে একদিন জায়গাটা দেখিতে গেলাম। সমস্ত মাঠটাতে সরিষা বপন করা হইয়াছে-মাঝে মাঝে লোকজনেরা ঘর বাঁধিয়া বাস করিতেছে, ইহার মধ্যেই গোরু-মহিষ, স্ত্রী-পুত্র আনিয়া গ্রাম বসাইয়া ফেলিয়াছে।

    শীতকালের মাঝামাঝি যখন সর্ষেক্ষেত হলুদ ফুলে আলো করিয়াছে তখন যে দৃশ্য চোখের সম্মুখে উন্মুক্ত হইল, তাহার তুলনা নাই। দেড় হাজার বিঘা ব্যাপী একটা বিরাট প্রান্তর দূর দিগ্বলয়সীমা পর্যন্ত হলুদ রঙের গালিচায় ঢাকা-এর মধ্যে ছেদ নাই, বিরাম নাই-উপরে নীল আকাশ, ইন্দ্রনীলমণির মতো নীল-তার তলায় হলুদ-হলুদ রঙের ধরণী, যতদূর দৃষ্টি যায়। ভাবিলাম, এও একরকম মন্দ নয়।

    একদিন নূতন গ্রামগুলি পরিদর্শন করিতে গেলাম। ছটু সিং বাদে সকলেই গরিব প্রজা। তাহাদের জন্য একটি নৈশ স্কুল করিয়া দিব ভাবিলাম-অনেক ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে সর্ষেক্ষেতের ধারে ধারে ছুটাছুটি করিয়া খেলা করিতে দেখিয়া আমার নৈশ স্কুলের কথা আগে মনে পড়িল।

    কিন্তু শীঘ্রই নূতন প্রজারা ভয়ানক গোলমাল বাধাইল। দেখিলাম ইহারা মোটেই শান্তিপ্রিয় নয়। একদিন কাছারিতে বসিয়া আছি, খবর আসিল নাঢ়া বইহারের প্রজারা নিজেদের মধ্যে ভয়ানক দাঙ্গা শুরু করিয়াছে, যাহার পাঁচ-বিঘা জমি সে দশ-বিঘা জমির ফসল দখল করিতে বসিয়াছে। আরো শুনিলাম সর্ষে পাকিবার কিছুদিন আগে ছটু সিং নিজের দেশ হইতে বহু রাজপুত লাঠিয়াল ও সড়কিওয়ালা গোপনে আনিয়া রাখিয়াছিল, তাহার আসল উদ্দেশ্য এখন বোঝা যাইতেছে। নিজের তিন-চার শ বিঘা আবাদী জমির ফসল বাদে সে লাঠির জোরে সমস্ত নাঢ়া বইহারের দেড় হাজার বিঘা ( বা যতটা পারে) জমির ফসল দখল করিতে চায়।

    কাছারির আমলারা বলিল- এ-দেশের এই নিয়ম হুজুর। লাঠি যার ফসল তার।

    যাহাদের লাঠির জোর নাই, তাহারা কাছারিতে আসিয়া আমার কাছে কাঁদিয়া পড়িল। তাহারা নিরীহ গরিব গাঙ্গোতা প্রজা-সামান্য দু-দশ বিঘা জমি জঙ্গল কাটিয়া চাষ করিয়াছিল, স্ত্রী-পুত্র আনিয়া জমির ধারেই ঘরবাড়ি করিয়া বাস করিতেছিল- এখন সারা বছরের পরিশ্রমের ও আশার সামগ্রী প্রবলের অত্যাচারে যাইতে বসিয়াছে!

    কাছারির দুইজন সিপাহীকে ঘটনাস্থলে পাঠাইয়াছিলাম ব্যাপার কি দেখিতে। তাহারা ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটিয়া আসিয়া জানাইল-ভীমদাসটোলার উত্তর সীমায় ভয়ানক দাঙ্গা বাধিয়াছে।

    তখনই তহসিলদার সজ্জন সিং ও কাছারির সমস্ত সিপাহীদের লইয়া ঘোড়ায় করিয়া ঘটনাস্থলে রওনা হইলাম। দূর হইতে একটা হৈ চৈ গোলমাল কানে আসিল। নাঢ়া বইহারের মাঝখান দিয়া একটি ক্ষুদ্র পার্বত্য নদী বহিয়া গিয়াছে-গোলমালটা যেন সেদিকেই বেশি।

    নদীর ধারে গিয়া দেখি নদীর দুইপারেই লোক জড়ো হইয়াছে- প্রায় ষাট-সত্তর জন এপারে, ওপারে ত্রিশ-চল্লিশ জন ছটু সিং-এর রাজপুত লাঠিয়াল। ওপারের লোক এপারে আসিতে চায়, এপারের লোকেরা বাধা দিতে দাঁড়াইয়াছে। ইতিমধ্যে জন দুই লোক জখমও হইয়াছে- তাহারা এপারের দলের। জখম হইয়া নদীর জলে পড়িয়াছিল, সেই সময় ছটু সিং-এর লোকেরা টাঙি দিয়া একজনের মাথা কাটিতে চেষ্টা করে-এ-পক্ষ ছিনাইয়া নদী হইতে উঠাইয়া আনিতেছে। নদীতে অবশ্য পা ডোবে না এমনি জল, পাহাড়ি নদী, তার উপর শীতের শেষ।

    কাছারির লোকজন দেখিয়া উভয় পক্ষ দাঙ্গা থামাইয়া আমার কাছে আসিল। প্রত্যেক পক্ষ নিজেদের যুধিষ্ঠির এবং অপর পক্ষকে দুর্যোধন বলিয়া অভিহিত করিতে লাগিল। সে হৈ-হৈ কলরবের মধ্যে ন্যায়-অন্যায় নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। উভয় পক্ষকে কাছারিতে আসিতে বলিলাম। আহত লোক দুটির সামান্য লাঠির চোট লাগিয়াছিল, এমন গুরুতর জখম কিছু নয়। তাহাদেরও কাছারিতে লইয়া আসিলাম।

    ছটু সিং-এর লোকেরা বলিল, দুপুরের পরে তাহারা কাছারিতে আসিয়া দেখা করিবে। ভাবিলাম, সব মিটিয়া গেল। কিন্তু তখনো আমি এদেশের লোক চিনি নাই। দুপুরের অল্প পরেই আবার খবর আসিল নাঢ়া বইহারে ঘোর দাঙ্গা বাধিয়াছে। আমি পুনরায় লোকজন লইয়া ছুটিলাম। একজন ঘোড়সওয়ার পনের মাইল দূরবর্তী নওগছিয়া থানায় রওনা করিয়া দিলাম। গিয়া দেখি ঠিক ওবেলার মতোই ব্যাপার। ছটু সিং এবেলা আরো অনেক লোক জড়ো করিয়া আনিয়াছে। শুনিলাম রাসবিহারী সিং রাজপুত ও নন্দলাল ওঝা গোলাওয়ালা ছটু সিংকে সাহায্য করিতেছে। ছটু সিং ঘটনাস্থলে ছিল না, তাহার ভাই গজার সিং ঘোড়ায় চাপিয়া কিছুদূরে দাঁড়াইয়া ছিল- আমায় আসিতে দেখিয়া সরিয়া পড়িল। এবার দেখিলাম রাজপুতদলের দুজনের হাতে বন্দুক রহিয়াছে।

    ওপার হইতে রাজপুতেরা হাঁকিয়া বলিল- হুজুর, সরে যান আপনি, আমরা একবার এই বাঁদীর বাচ্চা গাঙ্গোতাদের দেখে নিই।

    আমার দলবল গিয়া আমার হুকুমে উভয় দলের মাঝখানে দাঁড়াইল। আমি তাঁহাদিগকে জানাইলাম নওগছিয়া থানায় খবর গিয়াছে, এতক্ষণ পুলিস অর্ধেক রাস্তা আসিয়া পড়িল। ওসব বন্দুক কার নামে? বন্দুকের আওয়াজ করিলে তার জেল অনিবার্য। আইন ভয়ানক কড়া।

    বন্দুকধারী লোক দুজন একটু পিছাইয়া পড়িল।

    আমি এপারের গাঙ্গোতা প্রজাদের ডাকিয়া বলিলাম- তাহাদের দাঙ্গা করিবার কোনো দরকার নাই। তাহারা যে যার জায়গায় চলিয়া যাক্। আমি এখানে আছি। আমার সমস্ত আমলা ও সিপাহীরা আছে। ফসল লুঠ হয় আমি দায়ী।

    গাঙ্গোতা-দলের সর্দার আমার কথার উপর নির্ভর করিয়া নিজের লোকজন হটাইয়া কিছুদূরে একটা বকাইন গাছের তলায় দাঁড়াইল। আমি বলিলাম- ওখানেও না। একেবারে সোজা বাড়ি গিয়ে ওঠো। পুলিস আসছে।

    রাজপুতেরা অত সহজে দমিবার পাত্রই নয়। তাহারা ওপারে দাঁড়াইয়া নিজেদের মধ্যে কি পরামর্শ করিতে লাগিল। তহসিলদারকে জিজ্ঞাসা করিলাম, কি ব্যাপার সজ্জন সিং? আমাদের উপর চড়াও হবে নাকি?

    তহসিলদার বলিল, হুজুর, ওই যে নন্দলাল ওঝা গোলাওয়ালা জুটছে, ওকেই ভয় হয়! ও বদমাশটা আস্ত ডাকাত।

    -তা হলে তৈরি হয়ে থাকো। নদী পার কাউকে হতে দেবে না। ঘণ্টা দুই সামলে রাখো, তার পরেই পুলিস এসে পড়বে।

    রাজপুতেরা পরামর্শ করিয়া কি ঠিক করিল জানি না, একদল আগাইয়া আসিয়া বলিল- হুজুর, আমরা ওপারে যাব।

    বলিলাম, কেন?

    -আমাদের কি ওপারে জমি নেই?

    -পুলিসের সামনে সে কথা বোলো। পুলিস তো এসে পড়ল। আমি তোমাদের এপারে আসতে দিতে পারি নে।

    -কাছারিতে একরাশ টাকা সেলামি দিয়ে জমি বন্দোবস্ত নিয়েছি কি ফসল লোকসান করবার জন্যে? এ আপনার অন্যায় জুলুম।

    -সে কথাও পুলিসের সামনে বোলো।

    -আমাদের ওপারে যেতে দেবেন না?

    -না, পুলিস আসবার আগে নয়। আমার মহলে আমি দাঙ্গা হতে দেবো না।

    ইতিমধ্যে কাছারির আরো লোকজন আসিয়া পড়িল। ইহারা আসিয়া রব উঠাইয়া দিল পুলিস আসিতেছে। ছটু সিং-এর দল ক্রমশ দু-একজন করিয়া সরিয়া পড়িতে লাগিল। তখনকার মতো দাঙ্গা বন্ধ হইল বটে, কিন্তু মারপিট, পুলিস-হাঙ্গামা, খুন-জখমের সেই যে সূত্রপাত হইল, দিন দিন তাহা বাড়িয়া চলিতে লাগিল বৈ কমিল না। আমি দেখিলাম ছটু সিং-এর মতো দুর্দান্ত রাজপুতকে একসঙ্গে অতটা জমি বিলি করিবার ফলেই যত গোলমালের সৃষ্টি। ছটু সিংকে একদিন ডাকাইলাম। সে বলিল, এসবের বিন্দুবিসর্গ সে জানে না। সে অধিকাংশ সময় ছাপরায় থাকে। তার লোকেরা কি করে না-করে তার জন্য সে কি করিয়া দায়ী।

    বুঝিলাম লোকটা পাকা ঘুঘু। সোজা কথায় এখানে কাজ হইবার সম্ভাবনা নাই। ইহাকে জব্দ করিতে হইলে অন্য পথ দেখিতে হইবে।

    সেই হইতে আমি গাঙ্গোতা প্রজা ভিন্ন অন্য কোনো লোককে জমি দেওয়া একেবারে বন্ধ করিয়া দিলাম। কিন্তু যে-ভুল আগেই হইয়া গিয়াছে, তাহার কোনো প্রতিকার আর হইল না। নাঢ়া বইহারের শান্তি চিরদিনের জন্য ঘুচিয়া গেল।

    ৫
    আমাদের বারো মাইল দীর্ঘ জংলী-মাহলের উত্তর অংশে প্রায় পাঁচ-ছ’শ একর জমিতে প্রজা বসিয়া গিয়াছে। পৌষ মাসের শেষে একদিন সেদিকে যাইবার দরকার হইয়াছিল-গিয়া দেখি এরা অঞ্চলের চেহারা বদলাইয়া দিয়াছে।

    ফুলকিয়ার জঙ্গল হইতে হঠাৎ বাহির হইয়া চোখে পড়িল সামনে দিগন্তবিস্তীর্ণ ফুলফোটা সর্ষেক্ষেত-যতদূর চোখ যায়, ডাইনে, বাঁয়ে, সামনে, একটানা হল্দে-ফুল-তোলা একখানা সুবিশাল গালিচা কে যেন পাতিয়া গিয়াছে-এর কোথাও বাধা নাই, ছেদ নাই, জঙ্গলের সীমা হইতে একেবারে বহু, বহু দূরের চক্রবালরেখায় নীল ও শৈলমালার কোলে মিশিয়াছে। মাথার উপরে শীতকালের নির্মেঘ নীল আকাশ। এই অপরূপ শস্যক্ষেতের মাঝে মাঝে প্রজাদের কাশের খুপরি। স্ত্রী-পুত্র লইয়া এই দুরন্ত শীতে কি করিয়া তাহারা যে এই কাশডাঁটার বেড়া-ঘেরা কুটিরে এই উন্মুক্ত প্রান্তরের মধ্যে বাস করে!

    ফসল পাকিবার সময়ের আর বেশি দেরি নাই। ইহার মধ্যে কাটুনী মজুরের দল নানাদিক হইতে আসিতে শুরু করিয়াছে। ইহাদের জীবন বড় অদ্ভুত,- পূর্ণিয়া, তরাই ও জয়ন্তীর পাহাড়-অঞ্চল ও উত্তর ভাগলপুর হইতে স্ত্রী-পুত্র লইয়া ফসল পাকিবার সময় ইহারা আসিয়া ছোট ছোট কুঁড়েঘর নির্মাণ করিয়া বাস করে ও জমির ফসল কাটে- ফসলের একটা অংশ মজুরিস্বরূপ পায়। আবার ফসল কাটা শেষ হইয়া গেলে কুঁড়েঘর ফেলিয়া রাখিয়া স্ত্রী-পুত্র লইয়া চলিয়া যায়। আবার আর-বছর আসিবে। ইহাদের মধ্যে নানা জাতি আছে- বেশির ভাগই গাঙ্গোতা কিন্তু ছত্রী, ভূমিহার ব্রাহ্মণ পর্যন্ত আছে।

    এ-অঞ্চলের নিয়ম, ফসল কাটিবার সময় ক্ষেতে বসিয়া খাজনা আদায় করিতে হয়-নয়তো এত গরিব প্রজা, ফসল ক্ষেত হইতে উঠিয়া গেলে আর খাজনা দিতে পারে না। খাজনা আদায় তদারক করিবার জন্য দিনকতক আমাকে ফুলকিয়া বইহারের দিগন্তবিস্তীর্ণ শস্যক্ষেতের মধ্যে থাকিবার দরকার হইল।

    তহসিলদার বলিল-ওখানে তা হলে ছোট তাঁবুটা খাটিয়ে দেব?

    -একদিনের মধ্যেই ছোট একটি কাশের খুপরি করে দাও না?

    -এই শীতে তাতে কি থাকতে পারবেন হুজুর?

    -খুব। তুমি তাই কর।

    তাহাই হইল। পাশাপাশি তিন-চারটা ছোট ছোট কাশের কুটির, একটা আমার শয়নঘর, একটা রান্নাঘর, একটাতে দুটজন সিপাহী ও পাটোয়ারী থাকিবে। এ-ধরনের ঘরকে এদেশে বলে ‘খুপরি’- দরজা-জানালার বদলে কাশের বেড়ার খানিকটা করিয়া কাটা-বন্ধ করিবার উপায় নাই-হু-হু হিম আসে রাত্রে। এত নিচু যে হামাগুড়ি দিয়া ভিতরে ঢুকিতে হয়। মেঝেতে খুব পুরু করিয়া শুকনো কাশ ও বনঝাউয়ের সুঁটি বিছানো-তাহার উপর শতরঞ্জি, তাহার উপর তোশক-চাদর পাতিয়া ফরাস করা। আমার খুপরিটি দৈর্ঘ্যে সাত হাত, প্রস্থে তিন হাত। সোজা হইয়া দাঁড়ানো অসম্ভব ঘরের মধ্যে, কারণ উচ্চতায় মাত্র তিন হাত।

    কিন্তু বেশ লাগে এই খুপরি। এত আরাম ও আনন্দ কলিকাতায় তিনচারতলা বাড়িতে থাকিয়াও পাই নাই। তবে বোধ হয় আমি দীর্ঘদিন এখানে থাকিবার ফলে বন্য হইয়া যাইতেছিলাম, আমার রুচি, দৃষ্টিভঙ্গি, ভালো-মন্দ লাগা সবেরই উপর এই মুক্ত অরণ্য-প্রকৃতির অল্প-বিস্তর প্রভাব আসিয়া পড়িয়াছিল, তাই এমন হইতেছে কি না কে জানে।

    খুপরিতে ঢুকিয়া প্রথমেই আমার ভালো লাগিল সদ্য-কাটা কাশ-ডাঁটার তাজা সুগন্ধটা, যাহা দিয়া খুপরির বেড়া বাঁধা। তাহার পর ভালো লাগিল আমার মাথার কাছেই এক বর্গহাত পরিমিত ঘুলঘুলিপথে দৃশ্যমান, অর্ধশায়িত অবস্থায় আমার দুটি চোখে দৃষ্টির প্রায় সমতলে অবস্থিত ধূ-ধূ বিস্তীর্ণ সর্ষেক্ষেতের হলদে ফুলরাশি। এ-দৃশ্যটা একেবারে অভিনব, আমি যেন একটা পৃথিবীজোড়া হলদে কার্পেটের উপরে শুইয়া আছি। হু-হু হাওয়ায় তীব্র ঝাঁঝালো সর্ষেফুলের গন্ধ!

    শীতও যা পড়িতে হয় পড়িয়াছিল। পশ্চিমে হাওয়ার একদিনও কামাই ছিল না, অমন কড়া রৌদ্র যেন ঠাণ্ডা জল হইয়া যাইত কন্কনে পশ্চিমা হাওয়ার প্রাবল্যে। বইহারের বিস্তৃত কুল-জঙ্গলের পাশ দিয়া ঘোড়ায় করিয়া ফিরিবার সময় দেখিতাম দূরে তিরাশী-চৌকার অনুচ্চ নীল পাহাড়শ্রেণীর ওপারে শীতের সূর্যাস্ত। সারা পশ্চিম আকাশ অগ্নিকোণ হইতে নৈর্ঋত কোণ পর্যন্ত রাঙা হইয়া যায়, তরল আগুনের সমুদ্র, হু-হু করিয়া প্রকাণ্ড অগ্নিগোলকের মতো বড় সূর্যটা নামিয়া পড়ে-মনে হয় পৃথিবীর আহ্নিকগতি যেন প্রত্যক্ষ করিতেছি, বিশাল ভূপৃষ্ঠ যেন পশ্চিম দিক হইতে পূর্বে ঘুরিয়া আসিতেছে; অনেকক্ষণ চাহিয়া থাকিলে দৃষ্টিবিভ্রম উপস্থিত হইত, সত্যই মনে হইত যেন পশ্চিম দিক্চক্রবাল-প্রান্তের ভূপৃষ্ঠ আমার অবস্থিতিবিন্দুর দিকে ঘুরিয়া আসিতেছে।

    রোদটুকু মিলাইয়া যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেজায় শীত পড়িত, আমরাও সারাদিনের গুরুতর পরিশ্রম ও ঘোড়ায় ইতস্তত ছুটাছুটির পর সন্ধ্যাবেলা প্রতিদিন আমার খুপরির সামনে আগুন জ্বালিয়া বসিতাম।

    সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকারাবৃত বনপ্রান্তরের ঊর্ধ্বাকাশে অগণ্য নক্ষত্রালোক কত দূরের বিশ্বরাজির জ্যোতির দূতরূপে পৃথিবীর মানুষের চক্ষুর সম্মুখে দেখা দিত। আকাশে নক্ষত্ররাজি জ্বলিত যেন জল্জ্বলে বৈদ্যুতিক বাতির মতো-বাংলা দেশে অমন কৃত্তিকা, অমন সপ্তর্ষিমণ্ডল কখনো দেখি নাই। দেখিয়া দেখিয়া তাহাদের সঙ্গে নিবিড় পরিচয় হইয়া গিয়াছিল। নিচে ঘন অন্ধকার বনানী, নির্জনতা, রহস্যময়ী রাত্রি, মাথার উপরে নিত্যসঙ্গী অগণ্য জ্যোতির্লোক। এক-একদিন একফালি অবাস্তব চাঁদ অন্ধকারের সমুদ্রে সুদূর বাতিঘরের আলোর মতো দেখাইত। আর সেই ঘনকৃষ্ণঅন্ধকারকে আগুনের তীক্ষ্ণ তীর দিয়া সোজা কাটিয়া এদিকে ওদিকে উল্কা খসিয়া পড়িতেছে। দক্ষিণে, উত্তরে, ঈশানে, নৈর্ঋতে, পূর্বে, পশ্চিমে, সবদিকে। এই একটা, ওই একটা, ওই দুটো, এই আবার একটা- মিনিটে মিনিটে, সেকেণ্ডে সেকেণ্ডে।

    এক-একদিন গনোরী তেওয়ারী ও আরো অনেকে তাঁবুতে আসিয়া জোটে। নানা রকম গল্প হয়। এইখানেই একদিন একটা অদ্ভুত গল্প শুনিলাম। কথায় কথায় সেদিন শিকারের গল্প হইতেছিল। মোহনপুরা জঙ্গলের বন্য-মহিষের কথা উঠিল। দশরথ সিং ঝাণ্ডাওয়ালা নামে এক রাজপুত সেদিন লবটুলিয়া কাছারিতে চরির ইজারা ডাকিতে উপস্থিত ছিল। লোকটা একসময়ে খুব বনে-জঙ্গলে ঘুরিয়াছে, দুঁদে শিকারি বলিয়া তার নাম আছে। দশরথ ঝাণ্ডাওয়ালা বলিল- হুজুর, ওই মোহনপুরা জঙ্গলে বুনো মহিষ শিকার করতে আমি একবার টাঁড়বারো দেখি।

    মনে পড়িল গনু মাহাতো একবার এই টাঁড়বারোর কথা বলিয়াছিল বটে। বলিলাম- ব্যাপারটা কি?

    -হুজুর, সে অনেক দিনের কথা। কুশী নদীর পুল তখন তৈরি হয় নি। কাটারিয়ায় জোড়া খেয়া ছিল, গাড়ির প্যাসেঞ্জার খেয়ায় মালসুদ্ধ পারাপার হত। আমরা তখন ঘোড়ার নাচ নিয়ে খুব উন্মত্ত, আমি আর ছাপ্রার ছটু সিং। ছটু সিং হরিহরছত্র মেলা থেকে ঘোড়া নিয়ে আসত, আমরা দুজন সেইসব ঘোড়াকে নাচ শেখাতাম, তারপর বেশি দামে বিক্রি করতাম। ঘোড়ার নাচ দু-রকম, জমৈতি আর ফনৈতি। জমৈতিতে যে-সব ঘোড়ার তালিম বেশি, তারা বেশি দামে বিক্রি হয়। ছটু সিং ছিল জমৈতি নাচ শেখাবার ওস্তাদ। দুজনে তিন-চার বছরে অনেক টাকা করেছিলাম।

    একবার ছটু সিং পরামর্শ দিলে ঢোলবাজ্যা জঙ্গলে লাইসেন্স নিয়ে বুনো মহিষ ধরে ব্যবসা করতে। সব ঠিকঠাক হল, ঢোলবাজ্যা দ্বারভাঙ্গা মহারাজের রিজার্ভ ফরেস্ট। আমরা কিছু টাকা খাইয়ে বনের আমলাদের কাছ থেকে পোরমিট্ আনালাম। তারপর ক’দিন ধরে ঘন জঙ্গলের মধ্যে বুনো মহিষের যাতায়াতের পথের সন্ধান করে বেড়াই। অত বড় বন হুজুর, একটা বুনো মহিষের দেখা যদি কোনো দিন মেলে! শেষে এক বুনো সাঁওতাল লাগালাম। সে একটা বাঁশবনের তলা দেখিয়ে বললে, গভীর রাত্রে এই পথ দিয়ে বুনো মহিষের জেরা (দল) জল খেতে যাবে। সেই পথের মধ্যে গভীর খানা কেটে তার ওপর বাঁশ ও মাটি বিছিয়ে ফাঁদ তৈরি করলাম। রাত্রে মহিষের জেরা যেতে গিয়ে গর্তের মধ্যে পড়বে।

    সাঁওতালটা দেখে শুনে বললে- কিন্তু সব করছিস বটে তোরা, একটা কথা আছে। ঢোলবাজ্যা জঙ্গলের বুনো মহিষ তোরা মারতে পারবি নে। এখানে টাঁড়বারো আছে।

    আমরা তো অবাক। টাঁড়বারো কি?

    সাঁওতাল বুড়ো বললে- টাঁড়বারো হোলো বুনো মহিষের দলের দেবতা। সে একটাও বুনো মহিষের ক্ষতি করতে দেবে না।

    ছটু সিং বললে-ওসব ঝুট্ কথা। আমরা মানি নে। আমরা রাজপুত, সাঁওতাল নই।

    তারপর কি হোলো শুনলে অবাক হয়ে যাবেন হুজুর। এখনো ভাবলে আমায় গায়ে কাঁটা দেয়। গহিন রাতে আমরা নিকটেই একটা বাঁশঝাড়ের আড়ালে অন্ধকারে নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছি, বুনো মহিষের দলের পায়ের শব্দ শুনলাম, তারা এদিকে আসছে। ক্রমে তারা খুব কাছে এল, গর্ত থেকে পঞ্চাশ হাতের মধ্যে। হঠাৎ দেখি গর্তের ধারে, গর্তের দশ হাত দূরে এক দীর্ঘাকৃতি কালোমতো পুরুষ নিঃশব্দে হাত তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এত লম্বা সে-মূর্তি, যেন মনে হোলো বাঁশঝাড়ের আগায় ঠেকেছে। বুনো মহিষের দল তাকে দেখে থমকে দাঁড়িয়ে গেল, তারপর ছত্রভঙ্গ হয়ে এদিক ওদিক পালাল, ফাঁদের ত্রিসীমানাতে এল না একটাও। বিশ্বাস করুন আর না করুন, নিজের চোখে দেখা।

    তারপর আরো দু-একজন শিকারিকে কথাটা জিজ্ঞাসা করেছি, তারা আমাদের বললে, ও-জঙ্গলে বুনো মহিষ ধরবার আশা ছাড়। টাঁড়বারো একটা মহিষও মারতে ধরতে দেবে না। আমাদের টাকা দিয়ে পোরমিট আনানো সার হোলো, একটা বুনো মহিষও সেবার ফাঁদে পড়ল না।

    দশরথ ঝাণ্ডাওয়ালার গল্প শেষ হইলে লবটুলিয়ার পাটোয়ারীও বলিল- আমরাও ছেলেবেলা থেকে টাঁড়বারোর গল্প শুনে আসছি। টাঁড়বারো বুনো মহিষের দেবতা- বুনো মহিষের দল বেঘোরে পড়ে প্রাণ না হারায়, সে দিকে তাঁর সর্বদা দৃষ্টি।

    গল্প সত্য কি মিথ্যা আমার সে-সব দেখিবার আবশ্যক ছিল না, আমি গল্প শুনিতে শুনিতে অন্ধকার আকাশে জ্যোতির্ময় খড়গধারী কালপুরুষের দিকে চাহিতাম, নিস্তব্ধ ঘন বনানীর উপর অন্ধকার আকাশ উপুড় হইয়া পড়িয়াছে, দূরে কোথায় বনের মধ্যে বন্য কুক্কুট ডাকিয়া উঠিল; অন্ধকার ও নিঃশব্ধ আকাশ, অন্ধকার ও নিঃশব্দ পৃথিবী শীতের রাত্রে পরস্পরের কাছাকাছি আসিয়া কি যেন কানাকানি করিতেছে- অনেক দূরে মোহনপুরা অরণ্যের কালো সীমারেখার দিকে চাহিয়া এই অশ্রুতপূর্ব বনদেবতার কথা মনে হইয়া শরীর যেন শিহরিয়া উঠিত। এইসব গল্প শুনিতে ভালো লাগে, এইরকম নির্জন অরণ্যের মাঝখানে ঘন শীতের রাত্রে এইরকম আগুনের ধারে বসিয়াই।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleচাঁদের পাহাড় – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
    Next Article হলুদ নদী সবুজ বন – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    ছোটগল্প বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    কাদা kada

    August 11, 2025
    উপন্যাস কল্লোল লাহিড়ী

    ইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী

    May 28, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025

    হে পূর্ণ, তব চরণের কাছে – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025

    ভ্রমণের নবনীতা – নবনীতা দেবসেন

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.