Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আরণ্য – বুদ্ধদেব গুহ

    বুদ্ধদেব গুহ এক পাতা গল্প12 Mins Read0

    ১-২. চিকরাসি স্বগতোক্তি করল

    আরণ্য – উপন্যাস – বুদ্ধদেব গুহ

    তারা কোথায় গেল বল তো? পেছনে নেই তো?

    চিকরাসি স্বগতোক্তি করল, বম্বে রোডে গাড়ি চালাতে চালাতে, সামনে তাকিয়ে।

    পেছনে থাকতেই পারে না। ওরা কত আগে বেরিয়েছে।

    জারুল বলল।

    সবে সন্ধে নামছে। ওদের গাড়িটা বিদ্যাসাগর সেতু পেরিয়ে কলকাতার চক্কর এড়িয়ে এসে বম্বে রোড ধরে প্রায় কোলাঘাটের কাছাকাছি চলে এসেছে।

    চিকরাসির গাড়ি চালাচ্ছে চিকরাসিই। সামনে বাঁদিকে বসে আছে গামহার। পেছনে জারুল। জারুল চিকরাসির বান্ধবী। আজকালকার বান্ধবী। তুই-তোকারি করে একে অন্যকে। বিয়ে এখনও হয়নি। তবে যে-কোনো সময়েই হতে পারে। ওরা আজকালকার ছেলে-মেয়ে বলেই আবার কোনোদিনও নাও হতে পারে। চিকরাসির স্টিভেডর বাবা নেপাল ব্যানার্জি প্রতি মাসে গাড়ি পাল্টাতেন। পুরনো দিনের রাজা মহারাজাদের যেমন আস্তাবল আর পিলখানা থাকত তেমনই ব্যানার্জির গাড়ির গ্যারাজ ছিল দেখবার মতো। দশ-বারোখানা নতুন গাড়ি এবং পাঁচ-ছটি অ্যান্টিক গাড়িও থাকত। ‘The Statesman’ এর Vintage Rally-তে প্রথম দিন থেকে যোগ দিতেন নেপাল ব্যানার্জি। নেপাল ব্যানার্জির ছেলে চিকু ব্যানার্জি বাবার ব্যবসাতে যায়নি। সে সফটওয়্যারের ব্যবসা করে। ইনফরমেশান টেকনোলজি নিয়ে পড়াশুনা করেছে। সে তার বাবার মতো প্রতি মাসে গাড়ি পাল্টায় না কিন্তু প্রতি মাসে বান্ধবী পাল্টায়। তবে বান্ধবীরা পিলখানা অথবা গ্যারাজে থাকে না বলেই তাদের তার বাবার গাড়িগুলোর মতো একইসঙ্গে দেখা যায় না এক জায়গাতে পাশাপাশি।

    চিকরাসি ওরফে চিকু ব্যানার্জি কলকাতার নামকরা প্লে-বয়। প্লে-বয় যদিও কিন্তু চল্লিশেই তার গভীরতা, ব্যক্তিত্ব এবং বুদ্ধি অনেক পরিণত বয়স্ক মানুষের থেকেও বেশি। এটা অন্য অনেকেরই মতো গামহার ঘোষ-এরও মত।

    গামহার, বয়সে চিকরাসির চেয়ে অনেকই বড়। ওরা যদিও গামহারকে দাদা বলে, সে বয়সের দাবীতে ওদের কাকাও হতে পারত সহজেই। গামহার আর্টিস্ট। জলরঙ তার মাধ্যম। অ্যাকোয়ার কাজও করে। আজকাল জল ছেড়ে অ্যাক্রিলিক-এ গেছে। স্বভাবে বোহেমিয়ান। এতোদিন তার আঁকা ছবি, ছবির বাণিজ্যিক জগতে কল্কে পায়নি। ক্রিকেটারদেরই মতো, অ্যাড মডেলদেরই মতো, এখন চিত্রকরদের বাজারও খুবই ভাল। প্রৌঢ়ত্বের শেষে পৌঁছে গামহার অর্থ এবং স্বীকৃতি দুই-ই পেয়েছে। তবে তাতে সে অভিভূত বা উত্তেজিত হয়নি। জাগতিক অসাফল্য এতো বছর তাকে যেমন পীড়িত করেনি, সাম্প্রতিক অতীত থেকে অর্থ ও যশের এই চকিত উৎসারও তাকে আদৌ বিচলিত বা উত্তেজিত করেনি। যেমনটি ছিল, তেমনটিই আছে। ব্যর্থতা ও সাফল্য একই পর্দাতে তার মনে বেজেছে, সে প্রকৃত আর্টিস্ট বলেই। কবিতা লিখলে বা ছবি আঁকলে বা গান গাইলেই শুধু সে কারণেই সৃষ্টিশীল শিল্পীসত্তা কোনো মানুষের মধ্যে বর্তে যায় না। তার লক্ষণ আলাদা।

    বিয়ে একটা করেছিল গামহার অতি অল্পবয়সে। বিয়ের মানে না জেনেই। সে নিজেও ঠিক করেনি পাত্রী। তার বিধবা মা-এর একজন সঙ্গী ও খেলার পুতুলের প্রয়োজন ছিল বলে তিনিই পছন্দ করে এনেছিলেন লালিকে। গামহার-এর মানসিকতা ও রুচির সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। থাকবার মধ্যে তার সুস্পষ্ট লক্ষণ-যুক্ত একটি নারী-শরীর ছিল। ক্যাটক্যাটে লাল রঙ পছন্দ করত। রবীন্দ্রসঙ্গীত পছন্দ করত না। এবং একসঙ্গে চারটে হাঁসের ডিমের ওমলেট খেতো। গামহারকে পৌনঃপুনিকভাবে সাহেবদের মতো আদর করতে উপদেশ দিতো বলে বিয়ের দেড় মাস পরই তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। নৈকট্য তেমন কখনও যেমন হয়নি, বিচ্ছেদটা তাই আদৌ বুঝতে পারেনি গামহার।

    গামহার ঘোষ অত্যন্তই সূক্ষ্ম রুচির শিল্পী মানুষ। তার সূক্ষ্মতাটা লোক-দেখানো নয়। শুধু অন্য সূক্ষ্ম মানুষই তার সূক্ষ্মতাটা বুঝতে পারত। নিজেকে অন্যের কাছে জাহির করবার বা নিজেকে বোঝানোর কোনো তাগিদও তার ছিল না কোনোদিনও। তার নিজের নিজস্ব একটা পৃথিবী ছিল। সেখানে সে একা-একাই সুখী ছিল নিরন্তর। এবং এখনও আছে। এই অতি-সূক্ষ্ম রুচির কারণেই অনেক ভুল-রুচি পুরুষ তাকে মেয়েলি বলে এসেছে। তার চেহারাটা একটু নরম-সরম। তার জাগতিক সাফল্যর অভিঘাত তার উপর পড়েনি যে, তার আরও একটা কারণ এই যে, নিজের নাম-যশ-অর্থের জন্যে কখনও কাঠ-খড় পোড়ায়নি। যারা তা পোড়ায়, তাদের সে তার শিল্পীসুলভ মানসিকতাতে ঘেন্না করে। সে ঘেন্নাটা প্রকাশ করার নয় বলেই সেই ঘেন্নাটা তার অভ্যন্তরে সঞ্চিত হয়। সঞ্চিত হতে হতে তা পুঞ্জীভূত হয়ে গেছে। কোনোরকম ঘেন্না প্রকাশ করাতেই সব ভদ্রলোকেরই জন্মগত অনীহা, তাই সেই ঘেন্নার প্রকাশ ঘটেনি। কোষবৃদ্ধি-হওয়া পুরুষের মতো অন্যের চোখের আড়ালে এই ঘৃণার ভার স্ফীত-অণ্ডকোষের মতোই বয়ে বেড়িয়েছে গামহার। এবং বয়ে বেড়াচ্ছে।

    বছর তিনেক হলো, বলতে গেলে হঠাৎই একজন ফরাসিনীর চোখে পড়াতে গামহার ঘোষের ছবির কদর হয়েছে সারা পৃথিবীতে এবং ক্রমশ আরও হচ্ছে। এই বিলম্বিত সাফল্যে তেমন আনন্দিত বা আলোড়িত হতে পারেনি গামহার। যে-মানুষের সৃষ্টি দেশের মানুষের চোখেই পড়ল না গত তিরিশ বছর, সেই মানুষই এখন পাদপ্রদীপের আলোর সামনে চলে এলো শুধুমাত্র একজন বিদেশিনী সমালোচকের প্রশংসাতে, এটা মনে করেই গামহার-এর লজ্জা হয়। এই লজ্জা নিজের কারণে যতটা না হয় তার চেয়ে অনেকই বেশি হয় দেশের মানুষদেরই কারণে। লজ্জার কারণটা বুঝিয়ে বলতে পারে না সকলকে। বোঝর বোধহয় প্রয়োজনও তেমন বোধ করে না।

    কী ভাবছ গামহারদা। চুপচাপ কেন?

    জারুল বলল।

    ভাবছি, জুনিপারকে নিয়ে এলে বেশ হতো। জঙ্গল না দেখলে তো ভারতবর্ষকে দেখা হয় না। কলকাতা, দিল্লী, বম্বে, ব্যাঙ্গালোরে আর যাই হোক আসল ভারতবর্ষ তো নেই।

    তা ঠিক। তা, নিয়ে এলেই পারতে। ও গাড়িতে তো অনেকই জায়গা ছিল।

    ও যে পরশুই চলে গেল মনট্রিয়ালে। আবার আসবে পুজোর পরে, প্যারিস হয়ে।

    ঠিক আছে। তখন একবার জঙ্গলে নিয়ে চলো। শীতে ওঁর কষ্টও কম হবে।

    কষ্ট কিসের? এখনকার গাড়ি তো সবই এয়ারকন্ডিশানড। এপ্রিলই হোক, কী মে।

    তা বটে। তবে জঙ্গল তো আর এয়ারকন্ডিশানড নয়। তাছাড়া মে মাসে পাগল আর চোরাশিকারী ছাড়া কেউই জঙ্গলে যায় না।

    জারুল বলল, এই এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেও গরম কম পাবে না গামহারদা। জঙ্গলের গরমটা অনেকটা প্রেমে পড়ার মতো। হঠাৎ, কখন যে ব্যাপারটা ঘটে যায়, বোঝা পর্যন্ত যায় না! গভীরে ঢুকে যাওয়ার পরে, অবশ্য গরম কম লাগে, তবে রাতে তো খুবই প্লেজেন্ট। কম্বল গায়ে দিয়ে শুতে হবে। মার্চ মাসেই ভীষণ গরম পড়ে যায় ওড়িশাতে।

    দেখি! নাম শুনেছি এতো সিমলিপালের। কেমন জায়গা দেখা যাবে। তোমাদেরই কল্যাণে।

    জারুল বলল, তুমি আর কোন কোন জঙ্গল দেখেছ গামহারদা?

    আমি? না, না। কোনো জঙ্গলই প্রায় দেখিনি। মামাবাড়ি ছিল কেষ্টনগরের নেদেরপাড়াতে। ছেলেবেলাতে সে-পাড়ার সব বাড়িতেই প্রায় বড় বড় বাগান ছিল। আম জাম-কাঁঠালের। জঙ্গল বলতে ওই। আর খুব ছেলেবেলাতে একবার গেছিলাম হাজারিবাগে। সেখানে খুবই জঙ্গল ছিল। আবছা আবছা মনে আছে। বড়মামার সঙ্গে গেছিলাম মামার এক বন্ধুর বাড়িতে। ওঁরা ওখানকারই বাসিন্দা। মামা খুবই ভীতু মানুষ ছিলেন। বাঘ দেখার কোনো ইচ্ছাই তার ছিল না কিন্তু কলকাতা থেকে এসেছি শুনে বাঘই আমাদের দেখবার জন্য রামগড়ের ঘাটের পথের মাঝে বসেছিল। সবে সন্ধে হয়েছে তখন। বাঘ দেখে তো বড়মামা তার বন্ধুকে আলোয়ান সমেত এমনই জড়িয়ে ধরেন যে, গাড়ি প্রায় খাদে চলে যায় আর কী। আর আমার মা নাকি বাঘ দেখে গাড়ির মধ্যে অজ্ঞানই হয়ে গেছিলেন। কথায়ই বলে, নরানাং মাতুলক্রমঃ। যার বড়মামা এতো ভীতু তার ভাগ্নে সাহসী হয় কী করে বল?

    চিকরাসি আর জারুল হেসে ফেলল গামহার-এর সরল স্বীকারোক্তিতে।

    ওরা দু’জনে হাসতেই পারে। জঙ্গলের পোকা ওরা দু’জনেই। জারুল জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বন্যপ্রাণী ও পাখির ছবি তোলে। পরিবেশ-প্রতিবেশ নিয়ে একটি কাগজও করার ইচ্ছা আছে। কানহার জঙ্গলেই গত শীতের আগের শীতে ওদের দুজনের আলাপ হয়। তারপরই ঘনিষ্ঠতা। তারপর থেকে চিকরাসি আর জারুল জঙ্গলে গেলে একই সঙ্গে যায় দুজনে। কলকাতাতেও প্রায় প্রতি উইক-এন্ডেই দেখা-সাক্ষাৎ হয়। চিকু ব্যানার্জির এই বান্ধবী প্রায় বছর দুই টিকে যে গেল, এনিয়ে কলকাতার হাই সোসাইটিতে গুজ-গুজ ফুসফুস-এর শেষ নেই।

    জারুল তার ভোলা ওয়াইল্ডলাইফ-এর ছবি বিক্রি করে দেশি-বিদেশি নানা পত্র পত্রিকায়। আজকাল ওয়াইল্ডলাইফ ফোটোগ্রাফি রীতিমতো একটি লাভজনক পেশা হয়ে গেছে। বন ও বন্যপ্রাণী নিয়ে লেখালেখি তো প্রফেসন হয়েছেই। পেশা হয়ে উঠছে বলেই ভালবাসা কমছে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তো আর পয়সার জন্য অরণ্যকে ভালবাসেননি।

    ক্যালকাটা সুইমিং ক্লাবে শুক্রবার রাতে ক্যান্ডল-লাইট ডিনার খায়, তাজ-এর কফিশপে টুকটাক, ওবেরয়ের নতুন থাই-রেস্তোরাঁতে শনিবার রাতে ডিনার। পয়সা রোজগারটা ওদের কাছে কোনো সমস্যাই নয়, পয়সা কীভাবে খরচ করবে সেইটাই সমস্যা। যত টেনশান, তা নিয়েই।

    গামহার ঘোষের যৌবন চলে গেছে বলেই যৌবনের দাম সে বোঝে। বোঝে যে যৌবন, দাঁত অথবা জন্মদাত্রী মায়েরই মতো। থাকতে, কম মানুষই কদর করে তার, প্রকৃত দাম বোঝে।

    নিজের যৌবন চলে গেছে অবশ্যই। তবে সেটা শরীরেরই যৌবন। মনে মনে গামহার ঘোষ অনেক যুবকের চেয়েও অনেকই বেশি যুবক। এবং সে কারণেই সে প্রায়ই ভুলে যায় যে, সে যুবক নয়। ফলে, নানারকম বিপদ-আপদ-এরও সম্মুখীন হতে হয়। ছোট বড়। শারীরিক এবং মানসিক।

    ঐ তো ঝাঁঝিরা।

    জারুল, গামহারকে চমকে দিয়ে পেছন থেকে বলে উঠল।

    চিকরাসিদের গাড়ি ততক্ষণে কোলাঘাটের ব্রিজ পেরিয়ে ওপারে নামছে।

    হারিত আর ঝাঁঝি ওদের মারুতি এস্টিম গাড়ি থেকে নেমে, গাড়িটা পথের বাঁদিকে দাঁড় করিয়ে গাড়িতে হেলান দিয়ে অপেক্ষা করছিল চিকরাসিদের জন্যে। সাদা গাড়ি।

    চিকরাসি ঘাড় নিচু করে গামহার-এর কাঁধের পাশ দিয়ে হারিতকে বলল, কি? তোমরা কতক্ষণ?

    মিনিট পনেরো।

    এগিয়ে গেলে না কেন?

    বাঃ। একটা রাঁদেভু পয়েন্ট ঠিক না করে এগিয়ে যাওয়া কি ঠিক হতো? বলো, কোথায় দাঁড়াব?

    চলো, সোজা গ্রীনফিল্ডস-এ গিয়ে দেখা হবে। খড়গপুরের গোলাই-এর পরে।

    ওখানে যাবে? শুনেছি জায়গাটা খারাপ হয়ে গেছে। মালিকে মালিকে কেস চলছে।

    সে কি! সর্দারজীরাও বাঙালি হয়ে গেল কবে থেকে?

    আরে এতোদিন এখানে আছে, জল-হাওয়া তো লেগেছে।

    তা ঠিক।

    চলোই, না দেখা যাক। শুনেছি একটা নতুন হোটেলও হয়েছে গ্রীনফিল্ডস-এর আগে। পথের বাঁদিকে।

    কোথায় যাবো তাহলে? ঠিক করে বলল।

    না। গ্রীনফিল্ডস-এই চলো। আ নোন ডেভিল ইজ বেটার দ্যান অ্যান আননোন, ওয়ান। ওখানেই খেয়ে-দেয়ে রাতটা কাটিয়ে ভোরে এক কাপ করে চা খেয়ে বেরিয়ে পড়ব। তাহলে চাহালাতে দশটা নাগাদ পৌঁছে যাব।

    ঠিক আছে। তাহলে এসো তোমরা।

    আমরা এগোই। বলে, ওরা এগিয়ে গেলো।

    চিকরাসি স্টিয়ারিংয়ে গিয়ে বসলো।

    .

    ০২.

    হারিত আর ঝাঁঝির সঙ্গে গামহার-এর একবারই আলাপ হয়েছে চিকরাসির বাড়ির এক পার্টিতে। প্রথম দর্শনেই এই ঝাঁঝি মেয়েটিকে ভারী ভাল লেগেছিল গামহার ঘোষের। এই ভাল লাগাটার মধ্যে এক বিশেষত্ব আছে। এই ভাললাগার রকমটা সকলের বোঝার নয়। হোসেইন-এর যেমন মাধুরী দীক্ষিতকে ভাল লাগে, হিমতোষ-এর কাজলকে, গামহার-এর তেমনই ভাল লেগেছে ঝাঁঝিকে। একজন সাহিত্যিক যেমন কোনো নারীকে ভাল লাগলে তাকে তার উপন্যাসের নায়িকা করেন, নাম-ধাম, গায়ের রঙ, সামাজিক প্রতিবেশ বদলে দিয়ে। একজন শিল্পী কিন্তু তা করেন না। হয়ত পারেন না। তার ভাললাগার নারীকে রক্তমাংস ধার দেন তিনি তুলি আর রঙ দিয়ে, তার কামনা আর কল্পনা দিয়ে। কারোকে ভাললাগার ঝুঁকিটা তাই একজন শিল্পীর, একজন সাহিত্যিকের কোনো নারীকে ভাললাগা বা ভালবাসার ঝুঁকির চেয়ে অনেকই বেশি। সাহিত্যিক নিজেকে আড়াল করতে পারেন, ক্যামোফ্লেজ করতে পারেন কিন্তু শিল্পী সহজেই ধরা পড়ে যান। সেকারণেই হয়ত একজন শিল্পীর ভালবাসা নারীরা সহজে বুঝতে পারেন এবং অনেক ক্ষেত্রেই সেই ভালবাসার প্রতিদানও দেন। সাহিত্যিক তাঁর নিজের সৃষ্টির জালে নিজেই ঢাকা পড়ে যান। তার ভাললাগা বা ভালবাসা তাঁর ভাললাগার নারীর কাছে অনেক সময়ে পৌঁছয়ই না পর্যন্ত। সে-নারীর বই-টই পড়ার অভ্যেস না থাকলে বা সেই নারী বুদ্ধিহীন বা কম বুদ্ধিমতী হলে তো পৌঁছয় নাই-ই।

    লম্বা, কালো, ছিপছিপে, ভারী সুন্দর করে সাজাতে জানে নিজেকে ঝাঁঝি। সাধারণে সুন্দরী বলতে যা বোঝন তা সে আদৌ নয়। ফিগারটি সুন্দর। ব্যক্তিত্বময়ী। মুখটি যে খুব একটা সুন্দর তাও নয়। বরং সাধারণ। এই সাধারণের মধ্যেই অসাধারণত্ব খুঁজে পায় সৃষ্টিশীল সাহিত্যিক অথবা শিল্পীর চোখ। তারা যে তাদের কলম এবং তুলি দিয়ে ভিখারিণীকে রানীতে পর্যবসিত করতে পারেন মুহূর্তে সে-কথা তাদের নিজেদের মতো আরও কেউই জানেন না। জানেন না বলেই, তাদের এই ঐশী ক্ষমতাতে তারা ন্যায্যত গর্ববোধ করেন। বাস্তবকে তুচ্ছ করার ক্ষমতা, নস্যাৎ করার ক্ষমতা, একমাত্র বিধাতার আছে আর আছে সাহিত্যিক ও শিল্পীদের। তাই তো তারা দ্বিতীয় বিধাতা। গামহার আসলে সঠিক বুঝতে পারে না ব্যাপারটা ঠিক কি? ঝাঁঝিকে দেখলেই তার মধ্যে ঝাঁঝিকে শারীরিকভাবে পাবার আকাঙ্ক্ষা জাগে। গামহার যে এখনও এতখানি যুবক আছে তা ঝাঁঝিকে যতবারই দেখে ততবারই বুঝতে পারে। কোনো পুরুষ অথবা কোনো নারীই যে-কোনো নারী বা পুরুষকে দেখে শারীরিক আকর্ষণ বোধ করেন না। এই ব্যাপারটা আগে থাকতে বোঝা পর্যন্ত যায় না। যখন বোঝা যায়, তখন শরীরে বৈদ্যুতিক শক লাগে।

    নিজের ভাবনার জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে গামহার একটু কেশে, গলাটা পরিষ্কার করে নিয়ে বলল, একটু চা খেলে হতো না চিকু?

    এয়ারকন্ডিশনড গাড়িতে গামহার-এর গলা ধরে যায়। গামহার-এর আবার সায়নাসাইটিস আছে। এয়ারকন্ডিশানার থেকে যে ধুলো বেরোয়, তা থেকে অনেক সময়ে ন্যাজাল অ্যালার্জিও হয়। চিকরাসির গাড়ি রীতিমতো ফ্রিজের মতো ঠাণ্ডা।

    চিকরাসি বলল, তুমি যা বলবে দাদা। অলওয়েজ অ্যাট ইয়োর সার্ভিস।

    বলেই, বলল, চলো। সামনে ডানদিকে একটা ভাল ধাবা আছে। সেখানে খাব।

    শুধু চাই-ই তো?

    হ্যাঁ। আবার কি?

    লেড়ো বিস্কুট পাওয়া যাবে না?

    জারুল বলল।

    ওর কথাতে হেসে উঠল চিকরাসি আর গামহার।

    একটু পরেই গাড়ি থামাল চিকরাসি।

    আমার কিন্তু কম দুধ কম চিনি।

    গামহার বলল।

    আমার শুধুই পাতলা লিকার। দুধ-চিনি ছাড়া।

    জারুল বলল।

    আমার বেশি দুধ বেশি চিনি।

    চিকরাসি দরজার কাছে এসে-দাঁড়ানো ধাবার ছেলেটিকে বুঝিয়ে দিল তিনরকম চায়ের কথা।

    জারুল বলল, লেড়ো বিস্কিট হ্যায় ভাই?

    কী বিস্কিট বইলতেচেন মা?

    লেড়ো।

    নাই। ব্রিটানিয়া আচে।

    দু-স্‌স্‌। শুধু চা-ই দাও।

    চিকরাসি হেসে উঠল।

    বলল, ঠিক আছে। জঙ্গলে তোমাকে লেডো বিস্কিট খাওয়াব।

    কী করে?

    বাঃ। চপ-এর ক্র্যাম-এর জন্য আনিনি বুঝি সঙ্গে? চিকু ব্যানার্জির বন্দোবস্তে কিছুমাত্র খুঁত-খামতি পাবে না। বুঝেছো ম্যাম।

    সেই জন্যেই তো তোমার উপরে এমনই নিশ্চিন্তে বডি ফেলে দিই।

    হাসতে হাসতে বলল জারুল।

    চা খেতে খেতে গামহার ভাবছিল, ঝাঁঝি নামটাও খুব সুন্দর। একবার ওদের পাড়ার লেবুদার সঙ্গে মল্লিকপুরের বিলে তালের ডোঙা করে মাছ ধরতে গিয়ে নৌকো উল্টে দম বন্ধ হয়ে মারা যেতে বসেছিল ও। সেই জলজ গন্ধের হালকা ও গাঢ় উজ্জ্বল সবুজ ও হলুদরঙা গোছ গোছ মসৃণ ঝাঁঝির কথা গামহার কখনও ভুলবে না। সেই ঝাঁঝিজনিত বিপদে ও মারাত্মকভাবে জড়িয়ে গেছিল। তাই ঝাঁঝি শব্দর উচ্চারণেই ও বিপদের গন্ধ পায় নাকে। সত্যি ঝাঁঝি নয়, মানবী ঝাঁঝিকে দেখলেও সেইরকম অনুভূতিই হয়। মৃত্যুর গন্ধ আসে নাকে।

    প্রথমবার যখন দেখা হয়, তখন সেই রাতে চিকরাসির বাড়ির পার্টিতে সামান্যক্ষণ-দেখা ঝাঁঝিকে ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেনি। তারপরেও বার তিনেক দেখা হয়েছে। যতই দেখেছে ততই সেই মল্লিকপুরের বিলের ঝাঁঝিরই মতো ঝাঁঝিতে জড়াচ্ছে গামহার, বুঝতে পারে।

    একে অন্যকে সঠিকভাবে বোঝাবুঝির জন্যে প্রকৃতিই সবচেয়ে ভাল জায়গা বোধহয়। মনে হয়। গামহার ঘোষ প্রকৃতি নিয়ে এ-পর্যন্ত তেমন কিছু আঁকেইনি। চিকরাসিই বলতে গেলে জোর করেই ওকে নিয়ে চলেছে এবারে। বলেছে, বসন্তর বনই না দেখে তুমি এতো বছর ছবি আঁকলে কী করে গামহারদা তা তো আমি বুঝেই উঠতে পারি না। ন্যাংটো মেয়ে এঁকে এঁকে কি আর্টিস্ট হওয়া যায় সত্যিকারের! তোমাদের ঐসব আর্ট কলেজের শিক্ষা পদ্ধতিটাই ভুল। আর্টিস্টের মতো আর্টিস্ট তৈরি করতে হলে তাদের প্রথমেই সব সেরা আর্টিস্টের স্টুডিওতে নিয়ে যাওয়া উচিত।

    সেটা কোথায়? কার স্টুডিও?

    অন্যমনস্ক গামহার জিজ্ঞেস করেছিল।

    জারুল বলল, সত্যি তুমি গামাদা! সেটা প্রকৃতি। ঈশ্বরবাবুর স্টুডিও। সেখানেই তো নিয়ে যাচ্ছি তোমায় আমরা। একবার গেলে, বারবার যেতে হবে, হিমালয়েরই মত টানবে বন-জঙ্গল তোমাকে। যে-কোনো পর্বতারোহী আর ট্রেকারদের জিজ্ঞেস করে দেখো তুমি, তারা তোমাকে বলবে সেই টান-এর কথা। যারা জানে, তারাই জানে।

    গামহার বলল, ডাকো ছেলেটাকে। পয়সাটা দিই। তারপর যাওয়া যাক।

    তুমি পয়সা দেবে কি? তুমি আমাদের গেস্ট। তোমার সঙ্গে যে পার্স আছে সেকথাটাই ভুলে যাও। তুমি বরং পরে আমাদের একবার বেড়াতে নিয়ে যেও, তখন আমরা আমাদের পার্স বাড়িতে রেখে আসব। এ যাত্রা তোমার পার্স-এ তুমি হাতই ছোঁয়াতে পারবে না।

    যা বলো তোমরা। পড়েছি যবনের হাতে খানা খেতে হবে সাথে।

    সুন্দরী মাত্রই বিপজ্জনক। কে যে কার চোখে সুন্দরী, কার জন্যে কে বিপজ্জনক তা ঈশ্বরই জানেন। একে ঝাঁঝি-জনিত বিপদের কথা ভেবেই আতঙ্কিত গামহার ঘোষ তার উপর আবার Mummy of All Mummies-প্রকৃতি। এক অজানা, নিরাবয়ব, অপ্রত্যক্ষ ঝাঁঝি টু দ্যা পাওয়ার এন-এর ভয়ে গামহার-এর মন জঙ্গলে পৌঁছবার অনেক আগে থেকেই ঝাঁ ঝাঁ করতে লাগল।

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Article৪. এখন শেষবিকেল
    Next Article ৩-৪. ন্যাশনাল হাইওয়ে

    Related Articles

    বুদ্ধদেব গুহ

    বাবলি – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্ৰ ১ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ২ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৩ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৪ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    অবেলায় – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.