Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ এক পাতা গল্প254 Mins Read0

    ১৪. জগত-মণি কর্ডোভা

    জগত-মণি কর্ডোভা

    মুসলিম-সাম্রাজ্যের পূর্বভাগ যখন তার সোনার যুগের সীমান্তে উপনীত, সেই সময় সে সাম্রাজ্যের সুদূর পশ্চিমভাগও স্পেনে অনুরূপ জাঁকজমকের মধ্যে রাজ্য-শাসনে ব্যস্ত। আমাদের পক্ষে স্পেনের এ যুগ অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ, আমরা যে সভ্যতা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি তার জন্ম হয় প্রাথমিক মধ্যযুগীয় খৃস্টান সংস্কৃতির অন্তঃস্থলে আরব সংস্কৃতির প্রবেশের ফলে; আর সে আরব সংস্কৃতি প্রধানতঃ এই স্পেন হতেই অগ্রসর হয়। নবম এবং একাদশ শতাব্দীর মাঝখানে এই পাশ্চাত্যে মুসলিম-সভ্যতা তার উচ্চতর শিখরে আরোহণ করে। কিন্তু এ সম্বন্ধে অনুসন্ধান করার আগে আমাদিগকে আমাদের কাহিনী প্রসঙ্গে ৭৫০ অব্দে ফিরে যেতে হবে।

    আমরা আগে দেখেছি যে, ৭৫০ সালে আব্বাসীয় বংশ উমাইয়া বংশকে উৎখাত করে। আমরা আরো দেখেছি, বিজয়ী বংশ পরাজিত বংশের যাকে যেখানে পেয়েছে, সেখানেই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।

    অতিঅল্প সংখ্যক লোকই এই নৃশংস হত্যার কবল হতে রেহাই পায়; তার মধ্যে একজন ছিলেন বিশ বছরের একটি যুবক। নাম তার আবদুর রহমান। লম্বা, পাতলা, লালচুল, ঈগলের মত তীক্ষ্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, অত্যন্ত সবল স্নায়ু, অসামান্য কর্মক্ষমতা নানাদিক দিয়েই অসাধারণ। ইনিই স্পেনে চলে যান ইনিই লড়াই করে প্রভুত্ব অর্জন করেন, ইনিই প্রাচ্যে নিশ্চিহ্ন উমাইয়া বংশকে স্পেনে ক্ষতায় প্রতিষ্ঠিত রাখেন।

    তাঁর পলায়নের কাহিনী রোমাঞ্চকর। তিনি ইউফ্ৰেতীস নদীর পশ্চিম পারে একটি বেদুঈন তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন। এমন সময় একদা আব্বাসীয়দের কৃষ্ণ পতাকাবাহী একদল অশ্বারোহী সেখানে আবির্ভূত হয়। তাঁর সঙ্গে তাঁর তেরো বছরের ভাই ছিল। ভাইকে নিয়ে তিনি নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মনে হয়, ভাই তাঁর সাঁতারে দক্ষ ছিল না। পার হতে লোকেরা চীৎকার করে ডাকতে থাকে, ‘ফিরে এস–ফিরে এস। তোমার গায় হাত তুলব না।’ আবদুর রহমানের নিষেধ সত্ত্বেও বালক ফিরে যায়। পারের লোকেরা তাকে তখনি হত্যা করে। আবদুর রহমান সাঁতরিয়ে অপর পারে গিয়ে ওঠেন।

    বন্ধুহীন, কপর্দকহীন আবদুর রহমান পায় হেঁটে দক্ষিণ-পশ্চিম পানে চলেন এবং বহু কষ্টের পর ফিলিস্তিনে গিয়ে পৌঁছেন। এখানে একটি বন্ধুর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়। এখান হতে আবার তিনি পশ্চিম পানে রওয়ানা হলো। এমনিভাবে তিনি গিয়ে পৌঁছেন উত্তর আফ্রিকায়। সেখানকার প্রাদেশিক শাসনকর্তা তাকে হত্যা করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি কোনরকমে বেঁচে যান। আজ এ কওমের কাছে গিয়ে কয়েক দিন থাকেন; কাল আর এক কওমের কাছে যান–পর তৃতীয় এক কওমের কাছে। এমনিভাবে যুবক ঘুরে বেড়াতে থাকেন। আর নতুন বংশে গুপ্তচর তার পেছনে লেগে থাকে। অবশেষে পাঁচ বছর পর তিনি সিউটায় গিয়ে পৌঁছেন। তিনি দামেস্কের দশম খলীফার পৌত্র ছিলেন এই অঞ্চলের বার্বাররা তাঁর মাতুল বংশ ছিল। তারা তাকে আশ্রয় দেয়।

    সিওটা বরাবর প্রণালীর ওপারে দামেস্কের নিযুক্ত একদল সিরীয় সৈন্য অবস্থান করছিল। তিনি তাদের কাছে গিয়ে হাজির হন। তারা তাঁকে নেতা বলে স্বীকার করে নেয়। দক্ষিণের শহরগুলি একে একে তাঁর সামনে দুয়ার খুলে দেয়। সমস্ত স্পেন আয়ত্তে আনতে তার আরো কয়েক বছর সময় লাগে; কিন্তু তিনি অবিরাম চেষ্টা করতে থাকেন। বাগদাদের আব্বাসীয় খলীফা স্পেনের জন্য একজন গভর্নর নিযুক্ত করে পাঠান, যাতে তিনি আবদুর রহমানকে উৎখাত করে সেদেশে আব্বাসীয় শাসন কায়েম করতে পারেন। দুই বছর পর বাগদাদের খলীফা আবদুর রহমানের নিকট হতে একটি উপহার পান? সেই গভর্নরের মস্তক লবন ও কর্পূরে রক্ষিত, কালো পতাকা ও তার নিযুক্তির সনদ দ্বারা আবৃত। দেখে খলীফা ব্যস্তভাবে বলে ওঠেন : আল্লাহর দরগায় শুকরিয়া যে, তিনি আমার আর এমন দুশমনের মাঝখানে সমুদ্র স্থাপন করেছেন। স্বয়ং শার্লেমেন একটি সংঘর্ষে তার দুর্দান্ত প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুর রহমানের শক্তি-পরীক্ষা করেন। সে সংঘর্ষের কাহিনী পাশ্চাত্য সাহিত্যে অমর হয়ে আছে।

    শার্লেমেনকে আব্বাসীয় খলীফাদের মিত্র মনে করা হত। তাছাড়া, নতুন আমীর বা সুলতান স্বভাবতঃই তার শত্রু মধ্যে গণ্য ছিলেন। শার্লেমেন ৭৭৮ সালে উত্তর-পূর্ব স্পেনের সীমান্ত পথে একদল সৈন্য পাঠান। তারা সারাগোসা পর্যন্ত এসে পৌঁছে। কিন্তু সারাগোসা আগন্তুক সৈন্যদের সম্মুখে নগর-দ্বার বন্ধ করে দেয়। ঠিক সেই সময়ই নিজ দেশে শার্লেমেনের কর্তৃত্ব অস্বীকার করে শত্রুদল মাথা তোলে। ফলে শার্লেমেনের সৈন্যদল সারাগোসা হতেই ফিরে যায়। পিরেনীজের পার্বত্য পথে যখন এরা প্রত্যাবর্তন করতে থাকে, তখন বাস্ক এবং অন্যান্য পার্বত্যজাতি পেছন হতে এদের আক্রমণ করে। ফলে এদের বহু সৈন্য ও রসদ বিধ্বস্ত হয়। নিহত নেতাদের মধ্যে একজন ছিলেন, প্রখ্যাতনামা বীর রোলেন্ড। চ্যানসন-ডি-রোলেন্ড’ নামক গ্রন্থে তাঁর সে বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। এ গ্রন্থখানি কেবল ফরাসী-সাহিত্যের অমূল্য রত্ন নয়–মধ্যযুগের একটি অপূর্ব সুন্দর মহাকাব্য।

    ৭৮৮ সালে আবদুর রহমানের মৃত্যু হয়। তার দুই বছর আগে মক্কা ও বায়তুল মোকাদ্দেসের প্রতিদ্বন্দ্বী মসজিদ হিসেবে তিনি কর্ডোভায় একটি বিরাট মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। তাঁর পরবর্তীরা এ মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ ও এর কলেবর বৃদ্ধি করেন। অল্পকাল মধ্যেই এ মসজিদ পাশ্চাত্য-ইসলামের উপাসনালয় হয়ে দাঁড়ায়। এর অসংখ্য উন্নত স্তম্ভ ও বিপুল অঙ্গন দর্শকদের বিস্ময় উৎপাদন করত। ১২৩৬ সালে মসজিদটিকে গীর্জায় পরিণত করা হয়। আজো এ কীর্তি ‘লা-মেজকিটা’ (মসজিদ) নামে বেঁচে আছে। এ মসজিদ ছাড়া, রাজধানীতে এর আগেই গোয়াডেল কুইভার নদীর উপর একটি মস্ত সেতু নির্মিত হয়। পরে এর খিলান সংখ্যা সতেরোতে গিয়ে দাঁড়ায়। গোয়াডেল কুইভার নামটি আরবী নাম ‘ওয়াদী-উল-কবীর’ (বড় নদী) নামের অপভ্রংশ। কিন্তু উমাইয়া প্রভুত্বের প্রতিষ্ঠাতা কেবল প্রজাপুঞ্জের সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন; তিনি বিভিন্ন উপায়ে আরব, সিরিয়ান, বার্বার, নুমিডিয়ান, হিস্পনো-আরব এবং গথ প্রভৃতি জাতিকে মিলিয়ে একজাতি গঠনের চেষ্টা করেন, যদিও তার এ চেষ্টার সাফল্যের সম্ভাবনা ছিল নিতান্ত অল্প। নম হতে একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত যে সাংস্কৃতিক আন্দোলন মুসলিম-স্পেনকে দুটি ‘বশ্ব-সংস্কৃতির অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত করে, সে আন্দোলনের সূত্রপাত কার্যতঃ তিনিই করেন।

    খলীফা আবদুর রহমানের দরবার সমস্ত ইউরোপের সর্বাপেক্ষা জাকজমকপূর্ণ দরবারসমূহের অন্যতম ছিল। সে দরবারে বাইজেন্টাইন ম্রাট এবং জার্মানী, ইটালী ও ফ্রান্সের রাজাদের তরফ থেকে দূত আনাগোনা করত। তার রাজধানী কর্ডোভার বাসিন্দা ছিল ৫ লক্ষ, মসজিদ ছিল ৭শ’, সরকারী গোসলখানা ছিল ৩শ’। তৎকালীন জগতে বাগদাদ ও কনস্টানটিনোপল ছাড়া এমন আড়ম্বরপূর্ণ নগর আর একটিও ছিল না। ৪শ’ কামরা, হাজার হাজার গোলাম-বাঁদী ও প্রাসাদ রক্ষীদের আবাসস্থানসহ রাজপ্রাসাদ শহরের উত্তর পশ্চিমে সিয়েরা মোরেনার একটি শৈল-বাহুর উপর স্থাপিত ছিল। নীচে প্রবাহিত ছিল গোয়াডাল কুইভার। ৯৩৬ সালে আবদুর রহমান এই শাহী মনজিল নির্মাণ শুরু করেন। একটা কাহিনী প্রচলিত আছে যে, খলীফার একজন উপপত্নী মৃত্যুকালে অগাধ ধন রেখে ওসিয়ত করে যায় যে, খৃস্টানদের দেশে কোন মুসলমান বন্দী থাকলে ঐ টাকায় যেন তাদের মুক্তি-মূল্য দেওয়া হয়। কিন্তু খৃস্টানদের দেশে অমন কোন মুসলিম বন্দী না পাওয়া যাওয়ায় খলীফা আজ জাহরা নাম্নী তার অন্য উপপত্নীর পরামর্শ ও নাম অনুসারে এই প্রাসাদের পত্তন করেন। এ মনজিলের জন্য মার্বেল আনা হয় নুমিডীয়া ও কার্থেজ হতে এবং সোনার মূর্তিসহ স্তম্ভ (খরিদা সূত্রে বা উপহার হিসেবে) আনা হয় কনস্টানটিনোপল হতে। ১০ হাজার শ্রমিক ১৫০০ ভারবাহী পশু সহ বিশ বছর কাল এর নির্মাণ কাজে মোতায়েন থাকে। পরবর্তী খলীফারা এর বিস্তৃতি ও সৌন্দর্য বিধান করেন। ফলে একে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে শাহী মহল্লা। ১৯১০ সালে এবং তার পরে মাটি খুঁড়ে আজ-জাহরার কতকাংশকে বের করা হয়েছে।

    আজ-জাহরা প্রাসাদে যখন খলীফা বসতেন, তখন ৩,৭৫০ জন ব্ল্যাভ’ দেহরক্ষী তাঁকে ঘিরে থাকত। তাঁর একলক্ষ সুশিক্ষিত সৈন্য ছিল। দেহরক্ষীরা তাদের আগে চলত। জার্মান এবং অন্যান্য জাতি স্ল্যাভোনিক জাতিসমূহের মধ্য হতে লোক বন্দী করে এনে আরবদের কাছে বিক্রি করত। কেবল এদেরই স্ন্যাভ বলা হত। পরবর্তীকালে ফিরিঙ্গী, গ্যলিসীয়ান, লম্বার্ড ও অন্যান্য বিদেশীদের মধ্য হতে যত গোলাম খরিদ করা হত, তাদের সবাইকে স্ল্যাভ নাম দেওয়া হয়। এদের সাধারণতঃ অল্প বয়সে খরিদ করে আরবায়িত করা হত। স্পেনের এই ‘জেনিসারী’ বা মামলুকদের সাহায্যে কেবল যে রাজদ্রোহ ও দস্যুতা দমন রাখা হত এমন নয়, প্রাচীন আর অভিজাত সমাজের প্রভাবকেও আয়ত্তে রাখা হত। এ-সময় কৃষি ও বাণিজ্যের যথেষ্ট উন্নতি হয়; রাজকোষ কেঁপে ওঠে। আদায়ী রাজস্বের পরিমাণ ছিল ৬২ লক্ষ ৪৫ হাজার দিনার; সৈন্যদের বেতন ও জনহিতকর কাজের জন্য এর এক তৃতীয়াংশ ব্যয়ই যথেষ্ট ছিল। বাকী একৃ তৃতীয়াংশ সংরক্ষিত তহবিলে যেত। এর আগে কোন সময়ই কর্ডোভা এত সমৃদ্ধিশালী, আন্দালুসীয়া এমন সম্পদের আকর এবং রাষ্ট্র এত শক্তি-দৃপ্ত ছিল না। একজন লোকের প্রতিভা বলে এ অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়। তিনি ৭৩ বছর বয়স মহাপ্রয়াণ করেন। কথিত আছে, মৃত্যুর আগে তিনি বলেন যে, তাঁর সমস্ত জীবনে মাত্র চৌদ্দদিন সুখে কেটেছিল।

    প্রাচ্যে হোক আর পাশ্চাত্যেই হোক, মুসলিম-জগতের সর্বত্র যে কোন বংশের অধীনে রাজপদ অনিশ্চিত ছিল। প্রথম আবদুর রহমানের সময় হতে স্পেনে উমাইয়া বংশ নামতঃ রাজ্যশাসন চালিয়ে যাচ্ছিল। এ বংশের পরবর্তী উল্লেখযোগ্য শাসনকর্তা তৃতীয় আবদুর রহমান যখন ৯১২ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেন, তখন গৃহ-বিবাদ, কওমী বিদ্রোহ এবং আমীরদের রাজনৈতিক অযোগ্যতা–সমস্ত মিলে স্পেনের সুসংবদ্ধ রাজ্যের সীমানাকে সংকীর্ণ করতে করতে কর্ডোভা ও তার উপকণ্ঠে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছিল।

    তৃতীয় আবদুর রহমান প্রখ্যাতনামা পূর্ববর্তী আবদুর রহমানের মতই শাসন ভার গ্রহণকালে ২৩ বছরের যুবক ছিলেন এবং তাঁর মতই এঁরও বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা ও সংকল্পের দৃঢ়তা ছিল। একে একে তিনি বিজিত প্রদেশগুলি পুনর্জয় করেন, রাজ্যময় শৃঙ্খলা স্থাপন করেন এবং বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতার সঙ্গে শাসন চালাতে থাকেন। তিনি পঞ্চাশ বছরকাল ৯১২-৯৬১ রাজত্ব করেন। সে যুগের হিসেবে এ অত্যন্ত দীর্ঘকাল। স্পেনে তিনিই প্রথম নিজকে খলীফা বলে ঘোষণা করেন। তাঁরই সময় হতে স্পেনে উমাইয়া বংশীয় খিলাফত শুরু হয়। তার এবং তার লাগ পরবর্তী দুইজন খলীফার আমলে পাশ্চাত্যে মুসলিম-শাসন উন্নতির চরম শিখরে উপনীত হয়। এই যুগে–অর্থাৎ মোটামুটি দশম শতাব্দীতে কর্ডোভা সমস্ত ইউরোপের মধ্যে সংস্কৃতির দিক দিয়ে সবচেয়ে উন্নত শহর এবং বাগদাদ ও কন্সটানটিনোপলের সঙ্গে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ তিনটি সংস্কৃতিকেন্দ্রের অন্যতম ছিল। কর্ডোভার পরিবার সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ১৩ হাজার, শহরতলী ছিল ২১টি, কুতুবখানা ছিল ৭০টি, বইয়ের দোকান, মসজিদ ও প্রাসাদ ছিল অসংখ্য। স্বভাবতঃই এর খ্যাতি দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং এর দৃশ্য ভ্রমণকারীদের মনে বিস্ময়-সম্ভ্রমের উদ্রেক করে। শহরে বহু মাইল বিস্তৃত ইটে বাঁধানো পাকা রাস্তা ছিল এবং দুই পাশের বাড়ীর দীপের প্রভায় গলিসমূহ আলোক-উজ্জ্বল হয়ে থাকত। এ সময়ের ৭০০ বছর পর লন্ডনে একটি সরকারী বাতি দেখা যায়নি। আর এর অনেক শতাব্দী পর পর্যন্ত প্যারিসে কোন বৃষ্টির দিনে কেউ সিঁড়ি বেয়ে ঘরে উঠলে তাকে এক হাঁটু কাদা নিয়ে উঠতে হত।”

    নর্ডিক জাতীয় বার্বারদের সম্বন্ধে আরবরা যে মনোভাব পোষণ করত, তা টলেডোর সুবিজ্ঞ বিচারক সাইদের কথায় বুঝা যায়। তিনি বলেনঃ যেহেতু সূর্য এদের মাথার উপর সোজাসুজি কিরণপাত করে না, সেই জন্য এদের দেশের আবহাওয়া ঠাণ্ডা আর আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন। সুতরাং, এদের মেজাজও ঠাণ্ডা হয়ে পড়েছে–আর এদের ব্যবহার হয়ে পড়েছে অমার্জিত। এদের দেহ সুল, গায়ের রং পাতলা এবং চুল লম্বা। সূক্ষ্ম রস-জ্ঞান ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধির এদের একান্ত অভাব; নির্বুদ্ধিতা ও বোকামি আছে এদের প্রচুর। লিয়ন, ন্যাভার অথবা বার্সেলোনার শাসনকর্তার যখনই একজন সার্জন, রাজমিস্ত্রী, গানের ওস্তাদ অথবা উচ্চশ্রেণীর দরজীর দরকার হত, তখনই তারা কর্ডোভায় তোক পাঠাতেন। এ মুসলিম রাজধানীর যশোঃগাথা সুদূর জার্মানী পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে এবং তথাকার একজন মঠবাসিনী কর্ডোভা সম্পর্কে মুগ্ধ কণ্ঠে বলেন : কর্ডোভা দুনিয়ার মণি।

    খলীফাদের শাসনাধীন স্পেন ইউরোপের সমৃদ্ধতম দেশসমূহের অন্যতম ছিল। ঘন বসতির দিক দিয়েও এ দেশ কোন দেশেরই পেছনে ছিল না। রাজধানীতে ১৩ হাজার বস্ত্র-বয়ন শিল্পী ও একটি উন্নত চামড়ার কারখানা ছিল। চামড়া পাকা করা ও চামড়ার উপর উন্নত হরফে লেখার বিদ্যা স্পেন হতেই মরক্কোতে যায় এবং এ উভয় দেশ হতে যায় ফ্রান্সে ও ইংল্যান্ডে। পশম ও রেশমের কাপড় কর্ডোভা ছাড়া মালাগা, আলমেরিয়া ও অন্যান্য কেন্দ্রেও বোনা হত। গুটি পোকার চাষ প্রথমে চীনের একচেটিয়া ছিল। মুসলমানরাই এ-বিদ্যা চীন হতে স্পেনে নিয়ে যায়। স্পেনে গুটি পোকার চাষের বেশ উন্নতি হয়। আলমেরিয়াতে কাঁচ ও পিতলের জিনিস তৈরি হত। ভ্যালেনসিয়ার অন্তর্গত পেটারনা মৃৎশিল্পের কেন্দ্র ছিল। জায়েন ও আলগার্ভে সোনা-রূপার খনির জন্য, কর্ডোভা লোহা ও সীসার খনি এবং মালাগা রুবীর জন্য বিখ্যাত ছিল। দামেস্কের মত টলেড়ো তলোয়ারের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত ছিল। ইস্পাত ও অন্যান্য ধাতুর উপর সোনা-রূপার কাজ ও ফুল তোলার বিদ্যা দামেস্ক হতে স্পেনে আসে। এ শিল্প স্পেন ও বাকী ইউরোপের কোন কোন শহরে বেশ উন্নতি লাভ করে। স্পেনীয় আরবরা পশ্চিম এশিয়ায় প্রচলিত কৃষি-পদ্ধতি আমদানী করে। তারা খাল কাটে, আঙ্গুরের আবাদ করে এবং অন্যান্য ফল-মূলের মধ্যে নতুন প্রচলন করে-ধান, খুবানী, পীচ, ডালিম, কমলালেবু, আখ, কার্পাস ও জাফরান। উপদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সমতল ভূমি আবহাওয়া ও উর্বরতার দিক দিয়ে উন্নত ছিল; এ-স্থান নানারকম কৃষি-শিল্পের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এখানকার ভাগ-চাষীরা প্রচুর পরিমাণে গম ও অন্যান্য শস্য এবং বিভিন্ন রকম ফল উৎপাদন করত।

    কৃষির এই উন্নতি মুসলিম-স্পেনের এক পরম গৌরব এবং এই দেশের পক্ষে আরবদের একটি অমর অবদান ছিল। কারণ, আজো স্পেনের বাগানগুলিতে মুরীয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। জেনারলাইফ স্পেনের একটি অতি বিখ্যাত বাগান। নামটি আরবী জান্নাতুল আরিফ’ (পরিদর্শকের বেহেশত) নামের অপভ্রংশ। এটি ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষ ভাগের কীর্তি এবং আলহামরার বাইরে একটি ইমারত এর বিশ্রামাগার ছিল। সুবিস্তৃত ছায়া, ঝর্ণা এবং মৃদু হাওয়ার জন্য এ বাগান বিখ্যাত ছিল। এর আকার ছিল অনেকটা বৃত্তাকার। কয়েকটি ছোট নদী এর পানি-সেচের উৎস ছিল। নদীগুলি মাঝে মাঝে জল প্রপাত সৃষ্টি করে ফুল, লতা ও গাছের মধ্যে হারিয়ে যেত। আজ সেখানে কেবল কয়েকটি বিরাট আকারের সাইপ্রেস ও মাটল গাছ বিদ্যমান।

    মুসলিম-স্পেনের কৃষি ও শিল্পজাত দ্রব্য বাসিন্দাদের ব্যবহারের পর উদ্ধৃত থাকত। সেভিল নদীতীরস্থ এক মস্ত বন্দর ছিল। এখান হতে কার্পাস, জলপাই এবং তেল রফতানী হত এবং এখানে আমদানী হত মিসরের কাপড় ও গোলাম এবং ইউরোপ ও এশিয়া হতে গায়িকা-বালিকা। মালাগা ও জায়েন হতে রফতানী হত জাফরান, ডুমুর, মার্বেল এবং চিনি। আলেকজান্দ্রিয়া ও কনস্টানটিনোপল মারফত, স্পেনের উৎপন্ন দ্রব্য সুদূর ভারত ও মধ্য-এশিয়ার বাজারসমূহে গিয়ে পৌঁছত। দামেস্ক, বাগদাদ এবং মক্কার সঙ্গে এর তেজারতি অত্যন্ত সক্রিয় ছিল। আধুনিক জগতের নৌ বিদ্যাঘটিত আন্তর্জাতিক শব্দসমূহের মধ্যে এডমিরাল, আরসেনাল, এভারেজ, ক্যাবল, শেলোপ ইত্যাদি আরবী-অদ্ভূত শব্দের অস্তিত্ব হতেই বোঝা যায়, এককালে সমুদ্রের উপর আরব জাতির প্রভুত্ব কত ব্যাপক ছিল।

    সরকার রীতিমত ডাক-চলাচলের ব্যবস্থা পরিচালনা করত। রাষ্ট্রের মুদ্রা প্রাচ্য আদর্শে তৈরী হত। দিনার ছিল সোনার আর দেরহেম ছিল রূপার মুদ্রা। উত্তরের খৃস্টান দেশগুলিতে আরব-মুদ্রা চালু ছিল; কারণ, প্রায় চারশ’ বছর পর্যন্ত আরব ও ফরাসী মুদ্রা ছাড়া এদের নিজস্ব কোন মুদ্রা ছিল না।

    বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া রাজধানীতে একটি প্রথম শ্রেণীর কুতুবখানা ছিল। আল হাকাম একজন গ্রন্থ-প্রেমিক ছিলেন। তার প্রতিনিধিরা পাণ্ডুলিপি খরিদ বা নকল করে নেওয়ার উদ্দেশ্যে আলেকজান্দ্রিয়া, দামেস্ক ও বাগদাদের বইয়ের দোকান তন্ন তন্ন করে খুঁজে বেড়াত। এইরূপে সংগৃহীত বইয়ের সংখ্যা নাকি অবশেষে চার লক্ষে গিয়ে দাঁড়ায়। সে বইয়ের ক্যাটালগ ছিল চুয়াল্লিশ বালাম। আর এইসব বালামের প্রত্যেকটির বিশ পাতা জুড়ে নাম ছিল কেবল কবিতার বইয়ের। মুসলিম খলীফাদের মধ্যে আল-হাকামই বোধহয় সবচেয়ে বড় বিদ্বান ছিলেন। তিনি নিজে লাইব্রেরীর অনেকগুলি বই ব্যবহার করতেন এবং সে সবের মার্জিনে তিনি যে নোট লিখে রাখতেন, পরবর্তী সংগ্রাহকরা তাকে অত্যন্ত মুল্যবান মনে করত। আলইসবাহানী নামক উমাইয়াদের একজন বংশধর ইরাকে বসে আগানী লিখছিলেন। এ গ্রন্থের প্রথম কপি সংগ্রহের জন্য আল হাকাম গ্রন্থকারকে এক হাজার দিনার পাঠিয়ে দেন। এ সময় আন্দালুসীয়ায় সংস্কৃতির সাধারণ মান এত উঁচু স্তরে গিয়ে পৌঁছেছিল যে, সুবিখ্যাত ওলন্দাজ পণ্ডিত ডোজী মুগ্ধকণ্ঠে মন্তব্য করেন : ‘প্রায় প্রত্যেকেই লেখাপড়া জানত। অথচ এ সময় খৃস্টান-ইউরোপে প্রাথমিক লেখাপড়ার সামান্য চল ছিল এবং তাও সীমাবদ্ধ ছিল পাদ্রী-পুরোহিতদের মধ্যে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার
    Next Article দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.