Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ এক পাতা গল্প254 Mins Read0

    ০৮. স্পেন বিজয়

    স্পেন বিজয়

    সিরিয়া, ইরাক, পারস্য ও মিসর অধিকার ইসলামের বিজয়-ইতিহাসের প্রথম অধ্যায় সূচনা করে। এরপর কিছুকাল আত্মকলহে কেটে যায়। তারপর শুরু হয় দ্বিতীয় অধ্যায়।

    দুর্নিবার ঘূর্ণিবার্তার মত এক প্রচণ্ড অভিযান মহানবীর পতাকাকে অক্সাস নদীর ওপার বহন করে নিয়ে যায়। এই অক্সাসই ছিল পারস্যভাষী ও তুর্কীভাষী দেশসমূহের মধ্যে সনাতন সীমারেখা। ক্রমে ইসলামের বিজয়-কেতন বহির্মঙ্গোলীয়া পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে। বোখারা, তাশক, সমরকন্দ,–সমস্ত মুসলিম বাহিনীর সম্মুখে আত্মসমর্পণ করে। মধ্য-এশিয়ায় মুসলিম আধিপত্য এমন দৃঢ়ভাবে সংস্থাপিত হয় যে, চীন জাতিও হস্তক্ষেপ করতে বিরত হয়। আর একটি পূর্ব-গামী বাহিনী দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয় এবং যাকে এখন আমরা বলি বেলুচিস্তান, তারই ভিতর দিয়ে গিয়ে ৭১২ সালে সিন্ধু দেশ অধিকার করে। দক্ষিণ পাঞ্জাবস্থিত মুলতানে তখন এক সুবিখ্যাত বৌদ্ধ মন্দির ছিল। মুসলিম বিজয় ক্রমে এই মুলতান পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে এবং ভারতের সীমান্ত প্রদেশসমূহে ইসলাম চিরতরে শিকড় গেড়ে বসে। (এইসব বিজয় মাত্র কয়েক বছর আগে পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাস্তব রূপ গ্রহণ করেছে। এখানে ইসলাম এক নব সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসে–বৌদ্ধ সংস্কৃতি।

    উত্তর কেন্দ্রীয় সীমান্তে আরব বিজয়-তরঙ্গ কনস্টান্টিনোপলের দুর্গ-মূলে প্রহত হয়ে ফিরে আসে। তবে এই যুগে আরবরা যে কনস্টান্টিনোপল বছর-কাল পর্যন্ত (৭১৬’র আগস্ট হতে ৭১৭’র সেপ্টেম্বর) অবরোধ করে রাখে, তা অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। গোল্ডেন হর্নের মুখে একটি বিরাট শিকল টানিয়ে আরব নৌ-বাহিনীর প্রবেশপথ রুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল।

    কিন্তু পশ্চিমদিকের অভিযানেই মুসলমানেরা সবচেয়ে বিস্ময়কর বিজয় লাভ করে। তারা আগেই উত্তর আফ্রিকায় প্রাচীন কার্থেজের সীমা পর্যন্ত তাদের অধিকার বিস্তার করেছিল। তখন উত্তর আফ্রিকার একাংশের বাসিন্দা ছিল বার্বার জাতি। এরা শ্বেতাঙ্গ জাতিদের এক হেমিটিক শাখা ছিল। ইতিহাস-পূর্ব যুগে। হয়তো এরা সিমাইটদের সঙ্গে একই মূল জাতি হতে উদ্ভূত হয়েছিল। উপকূল ভাগের বেশীর ভাগ বার্বাররাই খৃস্টানধর্ম গ্রহণ করেছিল। টার্টুলিয়ান, সেন্টসাইপ্রিয়ান, সর্বোপরি সেন্ট অগস্টাইন–এরা প্রাথমিক খৃস্টান পুরোহিত সমাজে দিপাল ছিলেন এবং এঁদের প্রত্যেকেই এই বার্বারদের মধ্য হতে উদ্ভূত হয়েছিলেন। কিন্তু উপকূল হতে ভিতরের অংশের বাসিন্দারা রোমক বা বাইজেন্টাইন সভ্যতা দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবান্বিত হয় নাই। আসলে উত্তর আফ্রিকার এ যাযাবর এবং অর্ধ-যাযাবর জাতি-সমূহের মনোবৃত্তির কাছে রোমক ও বাইজেন্টাইন সভ্যতা কখনো আপন বলে অনুভূত হয় নাই। ইসলামের একজন মহাশক্তিশালী সেনাপতি মুসা-ইবনে নুসাইয়ার এই বার্বারদের মধ্য দিয়ে তার বিজয়-রথ চালিয়ে যান।

    বার্বাররা তখন সভ্যতার যে স্তরে অবস্থিত, সে স্তরের লোকের কাছে ইসলামের এক বিশেষ আকর্ষণ ছিল। কাজেই সেমিটিক আরবরা সহজেই তাদের হেমিটিক জ্ঞাতি ভাইদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ পেতে বসল। ইসলাম আবার এক মহাআশ্চর্যজনক সাফল্য লাভ করল? অর্ধসভ্য যাযাবর জাতিদের ভাষায় ছিল তারা আরবী, আর ধর্মে ছিল তারা ইসলাম। বিজেতাদের রক্ত নতুন রক্তের সহযোগে উজ্জীবিত হয়ে উঠল। আরবী ভাষা নিজ বিজয়ের জন্য পেল এক বিরাট ক্ষেত্র আর উদীয়মান ইসলাম তার বিশ্ব-প্রভুত্ব স্থাপনের আরোহণ পথে পেল, পা রাখার নতুন স্থান।

    আরবরা যে দ্রুতগতিতে এবং যেমন সম্পূর্ণভাবে স্পেন অধিকার করে, তা মধ্যযুগীয় সামরিক ইতিহাসে এক অতুলনীয় স্থান অধিকার করে আছে। ৭১০ সালে প্রথম পরীক্ষামূলক অভিযান শুরু হয়। ৪ শত পদাতিক ও ১ শত অশ্বারোহী এই অভিযানে অংশগ্রহণ করে। এরা জাতিতে সবাই বার্বার এবং মুসার সৈন্যদল-ভুক্ত ছিল। মুসা উমাইয়া খলীফাদের অধীনে উত্তর আফ্রিকার গভর্নর ছিলেন। আক্রমণকারী সৈন্যদল তারিফা নামক ক্ষুদ্র উপদ্বীপে অবতরণ করে। তারিফাঁকে ইউরোপের সর্বদক্ষিণ ডগা বলা যেতে পারে।

    মুসা ৬৯৯ খৃস্টাব্দ হতে উত্তর আফ্রিকার গভর্নর ছিলেন। কার্থেজের পশ্চিম অঞ্চলের সমস্ত ভূ-ভাগ হতে তিনি বাইজেন্টাইনদের চিরতরে বিতাড়িত করেন। এবং ক্রমে তার বিজয় অভিযান আটলান্টিকের উপকূলভাগে গিয়ে পৌঁছে। এইরূপে তিনি ইউরোপে মুসলিম অভিযান-পথ খোলাসা করেন। মুসার প্রাথমিক স্পেনীয় অভিযান সাফল্যমণ্ডিত হয়। স্পেনের তত্ত্বালীন ভিসিয়োগথ রাজাদের মধ্যে বংশগত দ্বন্দ্ব জেগে ওঠে। এ উভয় কারণে উৎসাহিত হয়ে এবং রাজ্য জয়ের চেয়ে লুণ্ঠন আশায় অধিকতর প্রলুব্ধ বোধ করে ৭১১ খৃস্টাব্দে মুসা তারিককে ৭ হাজার সৈন্য-সহ স্পেন বিজয়ে প্রেরণ করেন। তারিক জাতিতে বাবার এবং মুসার আজাদী দেওয়া লোক ছিলেন তার সৈন্যদের অধিকাংশই বার্বার জাতীয় ছিল। তারিক এক পাহাড়ের উপর অবতরণ করেন। এই পাহাড় জিব্রাইটার (জবল-আল-তারিক-অর্থাৎ তারিক পাহাড়) নামে তারিককে অমর করে রেখেছে। এখানে প্রণালীটি পাশে মাত্র তের মাইল। কথিত আছে, সিউটার গভর্নর কাউন্ট জুলীয়ান তারিকের নৌ-বহরের রসদ-পত্র জোগান।

    পথে আরো কিছু সৈন তারিকের সঙ্গে যোগ দেয়। এইরূপে বর্ধিত বার হাজার সৈন্য নিয়ে ৭১১ খৃস্টাব্দের ১৯ জুলাই তারিক সালাদো নদীর মুখে রাজা রডারিকের সম্মুখীন হন। রডারিক উইটিজার পুত্রকে তাড়িয়ে দিয়ে নিজে সিংহাসনে বসেন। রডারিকের সৈন্য সংখ্যা ২৫ হাজার হওয়া সত্ত্বেও তারা ভীষণভাবে পরাজিত হয়। রডারিকের ভাগ্যে অতঃপর কি ঘটে, তা আজো প্রহেলিকা হয়ে আছে। স্পেনীয় ও আরব ঐতিহাসিকেরা কেবল এইটুকু বলেই তুষ্ট যে, রডারিক উধাও হয়ে গেলেন।

    এই চূড়ান্ত বিজয়ের পর মুসলমানেরা স্পেনময় কেবল যেন বেড়িয়ে বেড়িয়ে এগিয়ে গেল। কোথাও উল্লেখযোগ্য লড়াই আর কিছুই হল না। কেবল যেসব শহরে ভিসিয়োগহ্ নাইটদের প্রভুত্ব ছিল, সেখানে তারা যথেষ্ট বাধা দিল। তারিক সৈন্যদলের প্রধান অংশ-সহ ইসিজার পথে রাজধানী টলেডোর দিকে অগ্রসর হলেন; বাকী সৈন্যগণকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে বিভিন্ন শহরের দিকে পাঠিয়ে দিলেন। দক্ষিণে সেভিল শহর দুর্গ দ্বারা সুরক্ষিত ছিল; সে শহর আরব সৈন্যরা এড়িয়ে গেল। এক দল আর্কিদোনা অবরোধ করল; আর্কিদোনা বিনা লড়াইয়ে আত্মসমর্পণ করল। আর একদল আল-ভীরা দখল করল। তৃতীয় দলে অশ্বারোহী ছিল। এ দল মুসলমানদের ভবিষ্যৎ রাজধানী কর্ডোভা অবরোধ করে বসল। দুই মাস পর্যন্ত অবরোধ চল্ল। কথিত আছে, এরপর এক বিশ্বাসঘাতক রাখাল দুর্গের ভগ্ন প্রাচীর দেখিয়ে দেয় এবং তার ফলে কর্ডোভার পতন হয়। মালাগা কোন বাধাই দিল না। ইসিজায় হল এ অভিযানের সবচেয়ে ভীষণ লড়াই এবং পরিণামে আরবরাই জয়লাভ করল। কয়েকজন ইহুদীর বিশ্বাসঘাতকতায় রাজধানী টলেডোর পতন হল। এইরূপে তারিক ৭১১ খৃস্টাব্দের বসন্তকালে একটা অতর্কিত আক্রমণের নেতা হিসেবে শুরু করে গ্রীষ্মকালের শেষ ভাগ পর্যন্ত অর্ধ স্পেনের অধীশ্বর হয়ে বসলেন। একটা সমগ্র রাজ্যকে তিনি ধ্বংস করে ফেলেন।

    মুসা তার ক্ষুদ্র সহকারীর এই অপ্রত্যাশিত ও বিস্ময়কর সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে ১০ হাজার সৈন্যসহ ৭১২ সালের জুন মাসে স্পেন অভিমুখে ধাবিত হলেন। এ সৈন্যদের সবাই ছিল আরব ও সিরিয়া হতে সংগৃহীত। তিনি সেই সব শহর ও দুর্গ বিজয়ের জন্য বেছে নিলেন যেগুলি তারিক এড়িয়ে গিয়েছিলেন । মেডিনা, সিডোনীয়া ও কারমোনা। সেভিলে ছিল স্পেনের সবচেয়ে বড় শহর এর সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং এককালের রোমক রাজধানী। মুসা সেভিল অবরোধ করলেন। ৭১৩ সালের জুন পর্যন্ত অবরোধ চল্প। কিন্তু সবচেয়ে কঠিন সংগ্রাম করতে হল মেরিডা জয় করতে। এক বছর অবরোধের পর ৭১৩ সালের ১ জুন মেরিডা অধিকৃত হয়।

    টলেডো শহরে বা তার নিকটবর্তী কোন স্থানে মুসা ও তারিকের মধ্যে সাক্ষাৎ ঘটে। কথিত হয়, তারিকের বিজয় অভিযানের প্রথম দিকে মুসা তাকে আর অগ্রসর হতে নিষেধ করেন; কিন্তু তারিক সে আদেশ মান্য করেন নাই। সেই অপরাধে মুসা এই সাক্ষাৎকালে তারিককে বেত্রাঘাত করে শৃঙ্খলাবদ্ধ করেন। কিন্তু বিজয় অভিযান রুদ্ধ হল না। অল্পকাল মধ্যেই উত্তরে সারাগোসা পর্যন্ত ইসলামী ঝাণ্ডা উড্ডীন হল এবং মুসলমান সৈন্যরা আরাগন, লিয়ন, অরিয়াস এবং গ্যালিসিয়ার উচ্চ ভূমিতে প্রবেশ করল। সেই বছরেরই শরৎকালে খলীফা ওলীদ মুসাকে সুদূর দামেস্কে ডেকে পাঠালেন–সেই একই অপরাধে, যে অপরাধে মুসা নিজ অধীনস্থ তারিককে শাস্তি দিয়েছিলেন ও তার মনীবের বিনা আদেশে স্বাধীনভাবে কাজ করার অপরাধে।

    মুসা তার দ্বিতীয় পুত্র আবদুল আজীজকে নব-বিজিত রাজ্যের শাসন-ভার দিয়ে ধীরে ধীরে স্থলপথে দামেস্কের পানে চল্লেন। তাঁর সঙ্গে চল্প তার অফিসার মণ্ডলী, চারশত ভিসিগথ বংশীয় শাহ্জাদা–তাদের মাথায় রাজমুকুট, তাদের কোমরে সোনার কোমরবন্দ-অগণ্য গোলাম ও যুদ্ধবন্দী এবং অফুরন্ত লুষ্ঠিত ধন-রত্ন। আরব ঐতিহাসিকেরা উত্তর আফ্রিকার পশ্চিম হতে পূর্ব পর্যন্ত এই বিজয়-শোভাযাত্রার কথা অতি আনন্দের সঙ্গে বর্ণনা করেছেন। তাঁদের বর্ণনা পাঠককে প্রাচীনকালে বিজয়ী রোমক বীরদের বিজয় কুচকাওয়াজের কথা মনে করিয়ে দেয়। এই বিরাট শোভাযাত্রা দামেস্কে পৌঁছার আগেই তার খবর দামেস্কে গিয়ে পৌঁছল। খলীফা ওলীদ তখন রোগশয্যায় শায়িত। তাঁর ভাই সোলায়মান তার উত্তরাধিকারী। মুসা টাইবেরিয়াসে উপস্থিত হয়ে সোলায়মানের আদেশ পেলেন : রাজধানীতে দেরীতে প্রবেশের প্রতীক্ষায় ঐখানে অপেক্ষা করুন। ভাবী খলীফা ভেবেছিলেন, ওলীদ শীঘ্রই ওপরে চলে যাবেন; তখন তার সিংহাসন-আরোহণের উৎসবের মধ্যে শোভাযাত্রা রাজধানীতে প্রবেশ করবে।

    রত্ন-ঝলমল পোশাক পরিহিত ভিসিয়োগ-বংশীয় শাহ্জাদাদের সঙ্গে নিয়ে মুসা ৭১৫ খৃস্টাব্দের ফেব্রুয়ারী মাসে দামেস্কে প্রবেশ করলেন। মনে হল, ওলীদ খুশীর সঙ্গেই তার বিজয়ী সেনাপতিকে গ্রহণ করলেন। মহান উমাইয়া মসজিদে যে বিপুল সম্ভ্রম ও ধূমধামের সঙ্গে অভ্যর্থনার উৎসব সম্পন্ন হল, তা বিজয়ী ইসলামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল গৌরব-স্তম্ভ। এই প্রথম ইউরোপীয় শাহজাদা ও হাজার হাজার ইউরোপীয় বন্দীকে আমীরুল মুমিনিনের সম্মুখে বশ্যতা স্বীকারের শপথ গ্রহণ করতে দেখা গেল।

    মুসা খলীফাকে অন্যান্য মূল্যবান জিনিসের মধ্যে একটি অপূর্ব কারুকার্য খচিত টেবিল নজর দিলেন। প্রাচীন কাহিনী বলে, বাদশাহ্ সোলায়মান জ্বীন মিস্ত্রী দ্বারা এই টেবিল নির্মাণ করিয়েছিলেন। কাহিনীতে আরো পাওয়া যায় যে, রোমকরা বায়তুল মোকাদ্দেস হতে এই টেবিল তাদের নিজ রাজধানীতে চালান দেয় এবং পরবর্তীকালে সেখানে হতে গথরা এ টেবিল নিয়ে যায়। প্রত্যেক গহ্ রাজা তার পূর্ববর্তী রাজার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বহু মূল্য রত্নরাজিতে এ টেবিল সুশোভিত করতেন। রাজধানীর প্রধান গীর্জায় এই অমূল্য টেবিল রক্ষিত ছিল, বোধহয় কোন পুরোহিতের নিয়ে পলায়নের সময় তারিক তার নিকট হতে উদ্ধার করেন। টলেডোতে যখন মুসার সঙ্গে তারিকের সাক্ষাৎ হয়, তখন মুসা তারিককে বেত মারার সঙ্গে সঙ্গে টেবিলটিও কেড়ে নেন। কিন্তু তারিক নাকি চুপে চুপে একটি পায়া সরিয়ে ফলেন এবং এখন খলীফার সামনে নাটকীয়ভাবে হারান পায়াটি উপস্থিত করেন : টেবিলটি যে আসলে তিনিই সগ্রহ করেন, তারই প্রমাণ স্বরূপ।

    অনেক করিৎকর্মা আরব সেনাপতির ভাগ্যে যা ঘটেছে, মুসার ভাগ্যেরও তা-ই ঘটল। ওলীদের পরবর্তী খলীফা তাঁকে অপদস্থ করলেন। রোদে হয়রান হয়ে ভেঙ্গে না পড়া পর্যন্ত তাঁকে খোলা আকাশতলে দাঁড়িয়ে রাখা হল। তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হল; তাঁকে সর্ব ক্ষমতা হতে বঞ্চিত করা হল। তার সম্বন্ধে আমরা যে শেষ সংবাদ পাই তা এই যে, হেজাজের এক দূর পল্লীতে এই বৃদ্ধ আফ্রিকা-স্পেন বিজয়ী বীর ভিক্ষা করে জীবনযাপন করেছেন।

    স্পেন এখন খেলাফতী-সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে পড়ল। এর আরবী নাম দেওয়া হল, আল-আন্দালুস। ভ্যাণ্ডাল শব্দের সঙ্গে আন্দালুসের ব্যুৎপত্তিগত যোগ আছে। আরবদের স্পেন অধিকারের আগে ভ্যাণ্ডালরা স্পেন অধিকার করেছিল। মুসার পরবর্তী শাসকদের জন্য স্পেনের উত্তর এবং পূর্বভাগে অল্প স্থানই দখলের বাকী ছিল; বিদ্রোহ দমনও বেশি করতে হয় নাই। মধ্যযুগীয় ইউরোপে স্পেন ছিল সুন্দরতম ও বৃহত্তম অঞ্চল সমূহের অন্যতম। মাত্র সাত বছর সময়ের মধ্যে এই অঞ্চলের বিজয় পরিপূর্ণ হল। বিজেতারা অতঃপর কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত স্পেনের ভাগ্যবিধাতা হয়ে রইল।

    এ বিস্ময়কর বিজয়মালাকে আপাতদৃষ্টিতে অপূর্ব বলেই মনে হয়। তবে, এর কারণ নির্ধারণ কঠিন নয় এবং উপরে যে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হয়েছে, তা থেকেই এর কারণ অনুমান করা চলে। ভিসিয়োগথরা (পশ্চিমী গহ্) খৃস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর প্রথমভাগে বর্বর টিউটন জাতি হিসেবে স্পেনে প্রবেশ করে। এদের এবং স্পেনীয়-রোমক বাসিন্দাদের মধ্যে বিভেদ-রেখা কোনক্রমেই মুছে ফেলা সম্ভব হয় নাই। সুয়েভী ও ভ্যাঙালরা জার্মানী হতে এসে গধূদের আগে স্পেনে প্রবেশ করে। তাদের উচ্ছেদ করতে ভিসিয়োগধূদের বহুকাল পর্যন্ত সংগ্রাম করতে হয়েছে। ভিসিয়োগা একচ্ছত্র এবং কখনো কখনো স্বেচ্ছাচারী রাজারূপে শাসন কাজ চালিয়েছে। তারা বরাবর আরিয়ান সম্প্রদায়ভুক্ত খৃস্টানধর্ম পালন করে চলেছে। অবশেষে ৫৮৭ খৃস্টাব্দে রিকার্ড নামক তাদের একজন ক্যাথলিক সম্প্রদায়ভুক্ত খৃস্টানধর্ম গ্রহণ করেন। দেশের বাসিন্দারা সবাই ক্যাথলিক ধর্মপন্থী ছিল। ক্যাথলিক ধর্মপন্থী হিসেবে তারা বরাবর অন্য ধর্ম পন্থীদের শাসনকে ঘৃণার চোখে দেখত। বাসিন্দাদের মধ্যে বহুসংখ্যক গোলাম ও ভূমি-দাস ছিল। তারা তাদের এ দুর্ভাগ্যের কলঙ্ক-তিলক ললাটে নিয়ে স্বভাতঃই তুষ্ট ছিল না। এই দাস শ্ৰেণী যদি আক্রমণকারীদের সঙ্গে সহযোগিতা করে তাদের সাফল্য বিধান করে থাকে, তবে তাতে আশ্চর্যের কিছুই নাই। তারপর বাসিন্দাদের মধ্যে ছিল বেশ কিছুসংখ্যক ইহুদী। গথ রাজারা এদের উপর জুলুম করে করে এদের সহানুভূতি হারিয়েছিল। এদের জোর করে খৃস্টান করার চেষ্টা চরমে পৌঁছল তখন, যখন ৬১২ সালে রাজা হুকুম জারী করে বসলেন যে, হয় ইহুদীদের খৃস্টান হতে হবে, না হয় তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত এবং তারা নির্বাসিত হবে। এই জন্যই আমরা দেখতে পাই যে, মুসলিম বিজেতারা তাদের স্পেনীয় অভিযানকালে কয়েকটি বিজিত শহর ইহুদীদের হাতে ন্যস্ত করে নিজেরা বাকী অঞ্চল অধিকারে ব্যাপৃত হয়েছেন।

    আমাদের আরো মনে রাখতে হবে যে, রাজা ও তাঁর গহ্-বংশীয় আমীর রইসদের মধ্যে রাজনৈতিক মতানৈক্য এবং আত্মকলহ রাষ্ট্রের শক্তি খর্ব করে রেখেছিল। ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষভাগে গথীয় আমীরেরা বড় বড় ভূখণ্ডের অধীশ্বর হয়ে উঠেছিল। মুসলিম আক্রমণের পূর্ব-মুহূর্তে এই আমীরদের একজন জোর করে দেশের সিংহাসন দখল করে বসেছিলেন। কাজেই সিংহাসনচ্যুত রাজার জ্ঞাতিরা অসঙ্কোচে নতুন রাজার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল । উইটিজার সিংহাসনচ্যুত পুত্র অচিলা অকপটে বিশ্বাস করে আসছিলেন যে, আরবরা তারই পক্ষ হয়ে লড়াই করেছে। এলেডো অধিকারকালে উক্ত শহরে তার যে ব্যক্তিগত জমিদারী ছিল, তিনি তা-ই ফেরত পেয়ে তুষ্ট রইলেন এবং এখানে মহাধুমধামে জীবনযাপন করতে লাগলেন। তার পিতৃব্য বিশপ ওপাসকে রাজধানীতে তাঁর স্বপদে বহাল করা হল। সিউটার গভর্নর জুলীয়ান সম্বন্ধে কথিত হয় যে, তিনি আরব নৌ-বাহিনীকে নৌবহর সরবরাহ করেছিলেন। স্পেন বিজয়ে তিনিও অভিনয় করেন; তবে তাঁর অভিনয়ের গুরুত্ব স্পষ্টতঃই অতিরঞ্জিত হয়েছে। ফ্রান্স ও স্পেনের মধ্যে যে কয়টি শেষ বাধা ছিল, সারাগোসার পতনে তার একটি দূর হল; কিন্তু পিরেনীজ পর্বত রয়ে গেল। কোন কোন আরব ঐতিহাসিক বলেন যে, মুসা পিরেনীজ অতিক্রম করেছিলন। তিনি নাকি এমন আশাও করেছিলেন সে, ফিরিঙ্গীদের দেশ অতিক্রম করে কনস্টান্টিনোপলের পথে তিনি দামেস্কে খলীফার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করবেন। আদতে কিন্তু তিনি কখনো পিরেনীজ পার হন নাই। ইউরোপের ভূগোল সম্বন্ধে আরব আক্রমণকারীদের জ্ঞান স্পষ্ট থাকার কথা নয়। কাজেই ফিরিঙ্গীদের দেশ জয় করে দামেস্কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের কল্পনা যতই উদ্ভট হোক না কেন, অমন কল্পনা সত্যি তাদের মাথায় প্রবেশ করে থাকতে পারে। মুসার পরবর্তীদের মধ্যে তৃতীয় জন আল-হার ইবনে আব্দুর রহমান আল থাকাফী ৭১৭ কি ৭১৮ সালে প্রথম পিরেনীজ অতিক্রম করেন।

    ফ্রান্সের মঠ ও গীর্জার ঐশ্বর্যে প্রলুব্ধ হয়ে এবং মেরোভিনৃজীয়ান দরবারের প্রধান অফিসারদের সঙ্গে একুইটেইন-এর ডিউকদের আত্মকলহের সুযোগে আল-হারু মাঝে মাঝে ফ্রান্সের বুকে অতর্কিত আক্রমণ চালাতে শুরু করেন। তার উত্তরাধিকারী আস্ সামাহ ইবনে মালিক আল-খাওয়ালানী এই আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকেন। ৭২০ সালে আস-সামাহ্ সেটিমেনীয়া দখল করেন। সেপটিমেনীয়া ভূতপূর্ব ভিসিয়োগথ রাজ্যের একটি সামন্ত প্রদেশ ছিল। অতঃপর তিনি নারবোন অধিকার করে তাকে এক বিশাল কেল্লায় পরিণত করেন এবং বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র এখানে রক্ষিত হয়। কিন্তু পরবর্তী বছর তুলতে তার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তুর্ল একুইটেনের ডিউক ইউডিসের রাজধানী ছিল; তার প্রবল প্রতিরোধে মুসলিম বাহিনী পরাভূত হয়। এই সগ্রামে আস-সামাহ্ শহীদ হন। এইরূপে একজন জার্মান রাজপুত্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে এক উল্লেখযোগ্য বিজয় লাভ করেন। পিরেনীজের ওপারে মুসলমানদের পরবর্তী অভিযান সফল হয় নাই।

    আস-সামাহ্’র পর আব্দুর-রহমান ইবনে আবদুল্লাহ আল-গাফিকী স্পেনের শাসনকর্তা হন। তিনি উত্তর অঞ্চলে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ অভিযান করেন। ৭৩২ খৃস্টাব্দের বসন্তকালের প্রথম ভাগে আব্দুর রহমান পশ্চিম পিরেনীজের পথে অগ্রসর হন। গারোন নদীর তীরে তিনি ডিউক ইউসিকে পরাজিত করেন–বোর্দো আক্রমণ করে এর গীর্জাসমূহে আগুন লাগিয়ে দেন এবং পয়টিয়ারস্ হয়ে ট্ররস-এর প্রান্তভূমিতে গিয়ে হাজির হন। গলুদের ধর্ম পুরুষ সেন্ট মার্টিনের মাজার হিসেবে টুস গলদের একপ্রকার ধর্মীয় রাজধানী ছিল। এখানে উৎসর্গীকৃত ঐশ্বর্যরাশিই নিঃসন্দেহ রকমে আক্রমণকারীর পক্ষে প্রধান আকর্ষণ ছিল।

    এখানে টুস এবং পয়টিয়াস-এর মাঝখানে ক্লেইন ও ভিয়েন-এর সঙ্গমস্থলে চার্লস মার্টেল আবদুর রহমানের সম্মুখীন হলেন। চার্লস মেরোভিজীয়ান দরবারের প্রাসাদ মেয়র ছিলেন। ইউডিস তার সাহায্য চেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে চার্লস মার্টেল’ (হাতুড়ীওয়ালা) উপাধি লাভ করেন। এই উপাধি হতেই বোঝা যায় যে, চার্লস অসম সাহসী যোদ্ধা ছিলেন। তিনি এর আগে অনেক শত্রু দমন করেন। ইউডি ইতিপূর্বে একুইটেইনে স্বাধীনভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন; চার্লস তাকে উত্তরাঞ্চলে ফিরিঙ্গীদের প্রভুত্বকে নামতঃ স্বীকার করতে বাধ্য করেন। চার্লস হেরিস্টলের পেপিনের জারজ সন্তান ছিলেন। নামে না হলেও কার্যতঃ তিনি রাজ-শক্তি পরিচালনা করতেন।

    চার্লসের ফিরিঙ্গী সৈন্যদলের বেশীরভাগই ছিল পদাতিক। তাদের গায়ে ছিল নেকড়ে বাঘের চামড়া আর জটাযুক্ত বারী মাথা হতে কাঁধের উপর দিয়ে নিচের দিকে ঝুলে পড়েছিল। দীর্ঘ সাতদিন পর্যন্ত আবদুর রহমানের অধীনে আরব-বাহিনী আর চার্লসের অধীনে ফিরিঙ্গী সৈন্যদল সামনা সামনি দাঁড়িয়ে রইল। ছোট ছোট হাতাহাড়ি লড়াই চলতে লাগল। অবশেষে ৭৩২ সালের অক্টোবর মাসের এক শনিবার আরব নেতা অগ্রণী হয়ে আক্রমণ করলেন। ময়দান যখন যোদ্ধাদের হুঙ্কারে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠল, তখন ফিরিঙ্গী যোদ্ধারা এক ফাঁপা চতুষ্কোণ তৈরি করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দুর্ভেদ্য দেয়ালের মত (একজন ইউরোপীয় ঐতিহাসিকের ভাষায় এক অনমনীয় বরফখণ্ডের মত) দাঁড়িয়ে গেল। শত্রুদের অশ্বারোহী সৈন্যরা সে দেয়ালে প্রহত হয়ে ফিরে যেতে লাগল। ফিরিঙ্গী সৈন্য স্ব-স্থান হতে বিচ্যুত না হয়ে আক্রমণকারীদিগকে কেটে টুকরা টুকরা করতে লাগল। আবদুর রহমান নিজেও তাদের হাতে নিহত হলেন। অবশেষে রাত্রির অন্ধকার নেমে এল। শত্রুরা নিজ নিজ শিবিরে ফিরে গেল।

    রাত্রি প্রভাতে শত্রু-শিবিরের নিস্তব্ধতা দেখে চার্লস সন্দেহ করলেন যে, শক্ররা কোথাও চুপচাপ ওঁত পেতে বসে আছে। তিনি খোঁজ নিতে গুপ্তচর পাঠিয়ে দিলেন। দেখা গেল, রাত্রির অন্ধকারে আরবরা নিরবে শিবির ত্যাগ করে উধাও হয়ে গেছে। চার্লস জয় লাভ করলেন। পরবর্তীকালের কাহিনী প্রিয় লোকেরা পয়টিয়ার্স বা টুস-এর এই যুদ্ধকে নানা গল্প-গুজবে সজ্জিত করে এর ঐতিহাসিক গুরুত্বকে বহুগুণে অতিরঞ্জিত করেছে। খৃস্টানদের পক্ষে এ ছিল তাদের চির-শকদের সামরিক-ভাগ্যে ভাটার শুরু। গিবন ও তার পরবর্তী ঐতিহাসিকেরা বলেন যে, এই দিন আরবদের জয়লাভ ঘটলে আজ লণ্ডন ও প্যারিসে গীর্জার স্থলে দেখা যেত মসজিদ, আকত্সফোর্ড ও অন্যান্য জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রে বাইবেলের বদলে ব্যাখ্যাত হত কোরআন। কতিপয় আধুনিক ঐতিহাসিকের মতে টুসের যুদ্ধ এক চরম ভাগ্যনিয়ন্ত্রক ঘটনা।

    প্রকৃতপক্ষে, টুসের লড়াই কোন কিছুই চূড়ান্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করে নাই। আরব-বার্বার তরঙ্গ প্রায় হাজার মাইল দূরস্থ ব্রিাটার হতে যাত্রা শুরু করে এখন এক স্বাভাবিক নিশ্চল অবস্থায় এসে পৌঁছেছিল। এ তরঙ্গ তার গতি হারিয়ে ফেলেছিল; এর শক্তি নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। বার্বার-আরবের মধ্যে জাতিগত বিদ্বেষ, আভ্যন্তরীণ গোলযোগ এবং পরস্পর হিংসা আবদুল রহমানের সৈন্যদলকে দুর্বল করতে শুরু করেছিল। আরবদের মধ্যেও মনোভাব ও উদ্দেশ্যের ঐক্য ছিল না। একথা সত্য যে, এই দিকে মুসলমানের আক্রমণ রুদ্ধ হল, কিন্তু অন্যান্য দিকে তাদের আক্রমণ চলতেই লাগল। উদাহরণস্বরূপ, ৭৩৪ সালে তারা এভিগ্নন অধিকার করল; এর নয় বছর পর তারা লিয়ন্স লুণ্ঠন করল এবং ৭৫৯ সাল পর্যন্ত তারা নারূবন নিজ দখলেই রাখল। টুরূসের এই পরাজয় যদিও আরবদের গতিরোধের বাস্তবিক কারণ ছিল না, তথাপি বিজয়ী মুসলিম বাহিনীর আগমনের শেষ সীমারেখা এই পরাজয় দ্বারা নির্ধারিত হল।

    ৭৩২ খৃস্টাব্দে মহানবীর মৃত্যুর প্রথম শতক। তাঁর অনুগামীরা এখন এক বিপুল সাম্রাজ্যের বিজেতা। এ সাম্রাজ্য বিস্কে উপসাগর হতে সিন্ধু ও চীনের সীমান্ত পর্যন্ত এবং আরল সাগর হতে নীলনদের উপরাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। দামেস্ক ছিল এই মহান সাম্রাজ্যের রাজধানী। শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ছিল উমাইয়াদের সুরম্য প্রাসাদ। এইখানে দাঁড়ালে নজরে পড়ত শস্য-শ্যামলা সমতলভূমির অপূর্ব বিথার; তার দক্ষিণ সীমা ছিল বরফের পাগড়ী পরিহিত মাউন্ট হারুমন। উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা মুয়াবীয়াই এ প্রাসাদের নির্মাতা ছিলেন। এর সন্নিকটে অবস্থিত ছিল উমাইয়া মসজিদ। খলীফা ওলীদ নতুন করে এ মসজিদকে সুসজ্জিত করেন এবং ভাস্কর্য-শিল্পের সেই অপূর্ব মণিতে পরিণত করেন, যা আজো সৌন্দর্য-পিয়াসীদের আকর্ষণ করে। দর্শন দেওয়ার কামরায় অত্যন্ত দামী কারুকার্যখচিত গালিচায় ঢাকা একটি চতুষ্কোণ চৌকি থাকত। এই-ই ছিল খলীফার সিংহাসন। উৎসব উপলক্ষে দোলায়মান ঝলমল পোশাকে তিনি এই সিংহাসনের উপর আসন করে বসতেন। তার দক্ষিণে তার পিতৃবংশীয়রা নিজ নিজ বয়স অনুযায়ী দাঁড়িয়ে থাকতেন; তাঁর বাম পাশে দাঁড়াতেন তাঁর মাতৃবংশীয়রা। দরবারী, কবি ও দরখাস্তকারীরা দাঁড়াতেন পেছনে। অধিকতর আনুষ্ঠানিক উৎসব সম্পাদিত হত উমাইয়া মসজিদে। উমাইয়া মসজিদ আজো পৃথিবীর মহত্তম উপাসনালয়ের অন্যতম। এমনি একটি উৎসবেই খলীফা ওলীদ নিশ্চয়ই স্পেন বিজয়ী মুসা ও তারিককে তাদের বন্দী ও ঐশ্বর্য-সহ অভ্যর্থনা করেছিলেন। ইসলামের আগমন তার শেষ সীমায় এবং ইসলামের প্রথম শাসক-বংশের গৌরব-মহিমা উচ্চতম শিখরে পৌঁছেছিল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার
    Next Article দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.