Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আলালের ঘরের দুলাল – টেকচাঁদ ঠাকুর (প্যারীচাঁদ মিত্র)

    টেকচাঁদ ঠাকুর (প্যারীচাঁদ মিত্র) এক পাতা গল্প200 Mins Read0

    ১৪. মতিলাল ও তাহার দলবল একজন কবিরাজ লইয়া তামাশা-ফষ্টি করণ, রামলালের সহিত বরদাপ্রসাদবাবুর দেশ ভ্রমণের ফলের কথা, হুগলী হইতে গুমখুনির পরওয়ানা ও বরদাবাবু প্রভৃতির তথায় গমন।

    বেলেল্লা ছোঁড়াদের আয়েসে আশ মেটে না, প্রতিদিন তাহাদের নূতন নূতন টাটকা টাটকা রং চাই। বাহিরে কোনো রকম আমোদের সূত্র না পাইলে ঘরে আসিয়া মাথায় হাত দিয়া বসে। যদি প্রাচীন খুড়া জেঠা থাকে তবেই বাঁচোয়া, কারণ বেসম্পর্ক ঠাট্টা চলে অথবা জো সো করে তাঁহাদিগের গঙ্গাযাত্রার ফিকিরও হইতে পারে, নতুবা বিষম সংকট –একেবারে চারিদিকে সরিষাফুল দেখে।

    মতিলাল ও তাহার সঙ্গীরা নানা রঙ্গের রঙ্গী হইয়া অনেক প্রকার লীলা করিতে লাগিল কিন্তু কোন্‌ লীলা যে শেষ লীলা হইবে, তাহা বলা বড়ো কঠিন। তাহাদিগের আমোদ-প্রমোদের তৃষ্ণা দিন দিন বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। এক এক রকমের আমোদ দুই-একদিন ভালো লাগে –তাহার পরেই বাসী হইয়া পড়ে, আবার অন্য কোনো রং না হইলে ছট্‌ফটানি উপস্থিত হয়। এইরূপে মতিলাল দলবল লইয়া কাল কাটায়। পালাক্রমে এক একজনকে এক একটা নূতন নূতন আমোদের ফোয়ারা খুলিয়া দিতে হইত, এজন্য একদিন হলধর দোলগোবিন্দের গায়ে লেপমুড়ি দিয়া ভাইলেক সকলকে শিখাইয়া পড়াইয়া ব্রজনাথ কবিরাজের বাটীতে গমন করিল। কবিরাজের বাটীতে ঔষধ প্রস্তুতের ধুম লেগে গিয়াছে – কোনোখানে রসাসিন্ধু মাড়া যাইতেছে –কোনোখানে মধ্যম নারায়ণ তৈলের জ্বাল হইতেছে –কোনোখানে সোনা ভস্ম হইতেছে। কবিরাজ মহাশয় এক হাতে ঔষধের ডিপে ও আর এক হাতে এক বোতল গুড়ুচ্যাদি তৈল লইয়া বাহিরে যাইতেছিলেন, এমন সময়ে হলধর উপস্থিত হইয়া বলিল, রায় মহাশয় ! অনুগ্রহ করিয়া শীঘ্র আসুন –জমিদারবাবুর বাটিতে একটি বালকের ঘোরতর জ্বরবিকার হইয়াছে বোধ হয় রোগীর এখন তখন হইয়াছে তবে তাহার আয়ু ও আপনার হাতযশ –অনুমান হয় মাতব্বর মাতব্বর ঔষধ পড়িলে আরাম হইলেও হইতে পারে। যদি আপনি ভালো করিতে পারেন যথাযোগ্য পুরস্কার পাইবেন। এই কথা শুনিয়া কবিরাজ তাড়াতাড়ি করিয়া রোগীর নিকট আসিয়া উপস্থিত হইলেন। যতগুলিন নববাবু নিকটে ছিল তাহারা বলিয়া উঠিল –আসতে আজ্ঞা হউক, আসতে আজ্ঞা হউক কবিরাজ মহাশয় ! আমাদিগকে বাঁচাউন –দোলগোবিন্দ দশ-পনের দিন পর্যন্ত জ্বরবিকারে বিছানায় পড়িয়া আছে –দাহ পিপাসা অতিশয় –রাত্রে নিদ্রা নাই –কেবল ছট্‌ফট করিতেছে, –মহাশয় এক ছিলিম তামাক খাইয়া ভালো করিয়া হাত দেখুন। ব্রজনাথ রায় প্রাচীন, পড়াশুনা বড়ো নাই –আপন ব্যবসায়ে ধামাধরা গোছ –দাদা যা বলেন তাইতেই মত –সুতরাং স্বয়ংসিদ্ধ নহেন, আপনি কেটে ছিঁড়ে কিছুই করিতে পারে না। রায় মহাশয়ের শরীর ক্ষীণ, দন্ত নাই, কথা জড়িয়া পড়ে, কিন্তু মুখের মধ্যে যথেষ্ট গোঁপ – গোঁপও পেকে গিয়াছে কিন্তু স্নেহপ্রযুক্ত কখনই ফেলিতেন না। রোগীর হাত দেখিয়া নিশ্বাস ত্যাগ করিয়া স্তব্ধ হইয়া বসিলেন। হলধর জিজ্ঞাসা করিলেন – কবিরাজ মহাশয় যে চুপ করিয়া থাকিলেন? কবিরাজ উত্তর না দিয়া রোগীর প্রতি দৃষ্টি করিতে লাগিলেন, রোগীও এক একবার ফেল্‌ ফেল্‌ করিয়া চায় – এক একবার জিহ্বা বাহির করে –এক একবার দন্ত কড়মড় করে –এক একবার শ্বাসের টান দেখায় –এক একবার কবিরাজের গোঁপ ধরিয়া টানে। রায় মহাশয় সরে সরে বসেন, রোগী গড়িয়া গড়িয়া গিয়া তাহার তেলের বোতল লইয়া টানাটানি করে। ছোঁড়ারা জিজ্ঞাসা করিল –রায় মহাশয় ! এ কি ? তিনি বলিলেন –এ পীড়াটি ভয়ানক –বোধ হয় জ্বরবিকার ও উল্বণ হইয়াছে। পূর্বে সংবাদ পাইলে আরাম করিতে পারিতাম, এক্ষণে শিবের অসাধ্য। এই বলিতে বলিতে রোগী তেলের বোতল টানিয়া লইয়া এক গণ্ডুষ তৈল মাখিয়া ফেলিল। কবিরাজ দেখিলেন যে ছ-বুড়ির ফলে অমিত্তি হারাইতে হয়, এজন্য তাড়াতাড়ি বোতল লইয়া ভালো করিয়া ছিপি আঁটিয়া দিয়া উঠিলেন। সকলে বলিল –মহাশয় যান কোথায়? কবিরাজ কহিলেন –উল্বণ ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি হইতেছে বোধ হয়, এক্ষণে রোগীকে এ স্থানে রাখা আর কর্তব্য নহে –যাহাতে তাহার পরকাল ভালো হয় এমতো চেষ্টা করা উচিত। রোগী এই কথা শুনিয়া ধড়মড়িয়া উঠিল –কবিরাজ এই দেখিয়া চোঁ চোঁ করিয়া পিট্টান দিলেন –বৈদ্যবাটীর অবতারেরা সকলেই পশ্চাৎ পশ্চাৎ দৌড়ে যাইতে লাগিল –কবিরাজ কিছুদূর যাইয়া হতভোম্বা হইয়া থ্‌মকিয়া দাঁড়াইলেন –নববাবুরা কবিরাজকে গলাধাক্কা দিয়া ফেলিয়া ঘাড়ে করিয়া লইয়া হরিবোল শব্দ করিতে করিতে গঙ্গাতীরে আনিল। দোলগোবিন্দ নিকটে আসিয়া কহিল –কবিরাজ মামা ! আমাকে গঙ্গায় পাঠাইতে বিধি দিয়াছিলে –এক্ষণে রোজার ঘারে বোঝা –এসো বাবা ! এক্ষণে তোমাকে অন্তর্জলি করিয়া চিতায় ফেলি। খামখেয়ালী লোকের দণ্ডে দণ্ডে মত ফেরে, আবার কিছুকাল পরে বলিল –আর আমাকে গঙ্গায় পাঠাইবে? যাও বাবা ! ঘরের ছেলে ঘরে যাও, কিন্তু তেলের বোতলটা দিয়ে যাও। এই বলিয়া তেলের বোতল লইয়া সকলে রগরগে করিয়া তেল মাখিয়া ঝুপঝাপ করিয়া গঙ্গায় পড়িল। কবিরাজ এই সকল দেখিয়া শুনিয়া হতজ্ঞান হইলেন ! এক্ষণে পালাইতে পারিলেই বাঁচি, এই ভাবিয়া পা বাড়াইতেছেন –ইতিমধ্যে হলধর সাঁতার দিতে দিতে চিৎকার করিয়া বলিল –ওগো কবরেজ মামা ! বড়ো পিত্ত বৃদ্ধি হইয়াছে, পান দুই রসাসিন্ধু দিতে হবে –পালিও না। বাবা ! যদি পালাও তো মামীকে হাতের লোহা খুলিতে হবে। কবিরাজ ঔষধের ডিপেটা ছুঁড়িয়া ফেলিয়া বাপ বাপ করিতে করিতে বাসায় প্রস্থান করিলেন।

    ফাল্গুন মাসে গাছপালা গজিয়ে উঠে ও ফুলের সৌগন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বরদাবাবুর বাসাবাটী গঙ্গার ধারে –সম্মুখে একখানি আটচালা ও চতুষ্পার্শে বাগান। বরদাবাবু প্রতিদিন বৈকালে ঐ আটচালায় বসিয়া বায়ু সেবন করিতেন এবং নানা বিষয় ভাবিতেন ও আত্মীয় লোক উপস্থিত থাকিলে তাহাদিগের সহিত আলাপ করিতেন। রামলাল সর্বদা নিকটে থাকিত, তাহার সহিত বরদাবাবুর মনের কথা হইত। রামলাল এই প্রকারে অনেক উপদেশ পায় –সুযোগ পাইলেই কি কি উপায়ে পরমার্থ জ্ঞান ও চিত্তশোধন হইতে পারে তদ্বিষয়ে গুরুকে খুঁচিয়া খুঁচিয়া জিজ্ঞাসা করিত। একদিন রামলাল বলিল –মহাশয় ! আমার দেশ ভ্রমণ করিতে বড়ো ইচ্ছা যায় –বাটীতে থাকিয়া দাদার কুকথা ও ঠকচাচার কুমন্ত্রণা শুনিয়া তাক্ত হইয়াছি কিন্তু মা-বাপের ও ভগিনীর স্নেহপ্রযুক্ত বাড়ি ছেড়ে যাইতে পা বাধুবাধু করে কি করিব কিছুই স্থির করিতে পারি না।

    বরদা। দেশ ভ্রমণে অনেক উপকার। দেশ ভ্রমণ না করিলে লোকের বহুদর্শিত্ব জন্মে না, নানা প্রকার দেশ নানা প্রকার লোক দেখিতে দেখিতে মন দরাজ হয়। ভিন্ন ভিন্ন স্থানের লোকদিগের কি প্রকার রীতি-নীতি, কিরূপ ব্যবহার ও কি কারণে তাহাদিগের ভালো অথবা মন্দ অবস্থা হইয়াছে তাহা খুঁটিয়া অনুসন্ধান করিলে অনেক উপদেশ পাওয়া যায়; আর নানা জাতীয় ব্যক্তির সহিত সহবাস হওয়াতে মনের দ্বেষভাব দূরে যাইয়া সদ্ভাব বাড়িতে থাকে। ঘরে বসিয়া পড়াশুনা করিলে কেতাবী বুদ্ধি হয় –পড়াশুনাও চাই –সৎলোকের সহবাসও চাই –বিষয়কর্মও চাই –নানা প্রকার লোকের সহিত আলাপও চাই। এই কয়েকটি কর্মের দ্বারা বুদ্ধি পরিষ্কার এবং সদ্ভাব বৃদ্ধিশীল হয় কিন্তু ভ্রমণ করিতে গিয়া কি কি বিষয়ে ভালো করিয়া অনুসন্ধান করিতে হইবে তাহা অগ্রে জানা আবশ্যক, তাহা না জানিয়া ভ্রমণ করা বলদের ন্যায় ঘুরিয়া বেড়ানো মাত্র। আমি এমন কথা বলি না যে এরূপ ভ্রমণ করাতে কিছুমাত্র উপকার নাই –আমার সে অভিপ্রায় নহে, ভ্রমণ করিলে কিছু না কিছু উপকার অবশ্যই আছে কিন্তু যে ব্যক্তি ভ্রমণকালে কি কি অনুসন্ধান করিতে হয় তাহা না জানে ও সেই সকল অনুসন্ধান করিতে না পারে তাহার ভ্রমণের পরিশ্রম সর্বাংশে সফল হয় না। বাঙালীদিগের মধ্যে অনেকে এ দেশ হইতে ও দেশে গিয়া থাকেন কিন্তু ঐ সকল দেশ সংক্রান্ত আসল কথা জিজ্ঞাসা করিলে কয়জন উত্তমরূপে উত্তর করিতে পারে ? এ দোষটি বড়ো তাহাদিগের নহে –এটি তাহাদিগের শিক্ষার দোষ। দেখাশুনা, অন্বেষণ ও বিবেচনা করিতে না শিখিলে একবারে আকাশ থেকে ভালো বুদ্ধি পাওয়া যায় না। শিশুদিগকে এমতো তরিবত দিতে হইবে যে তাহারা প্রথমে নানা বস্তুর নক্সা দেখিতে পায় –সকল তসবির দেখিতে দেখিতে একটার সহিত আর একটার তুলনা করিবে অর্থাৎ এর হাত আছে, ওর পা নাই, এর মুখ এমন, ওর লেজ নাই, এইরূপ তুলনা করিলে দর্শনশক্তি ও বিবেচনাশক্তি দুয়েরই চালনা হইতে থাকিবে। কিছুকাল পরে এইরূপ তুলনা করা আপনা-আপনি সহজ বোধ হইবে তখন নানা বস্তু কি কারণে পরস্পর ভিন্ন হইয়াছে তাহা বিবেচনা করিতে পারিবে, তাহার পরে কোন্‌ কোন্‌ শ্রেণীতে আসিতে পারে তাহা অনায়াসে বোধগম্য হইবে। এই প্রকার উপদেশ দিতে দিতে অনুসন্ধান করণের অভ্যাস ও বিবেচনাশক্তির চালনা হয়। কিন্তু এরূপ শিক্ষা এদেশে প্রায় হয় না এজন্য আমাদিগের বুদ্ধি গোলমেলে ও ভাসা ভাসা হইয়া পড়ে –কোনো প্রস্তাব উপস্থিত হইলে কোন্‌ কথাটা বা সার ও কোন্‌ কথাটা বা অসার তাহা শীঘ্র বোধগম্য হয় না ও কিরূপ অনুসন্ধান করিলে প্রস্তাবের বিবেচনা হইয়া ভালো মীমাংসা হইতে পারে তাহাও অনেকের বুদ্ধিতে আসে না অতএব অনেকের ভ্রমণ যে মিথ্যা ভ্রমণ হয় এ কথা অলীক নহে কিন্তু তোমার যে প্রকার শিক্ষা হইয়াছে তাহাতে বোধ হয় ভ্রমণ করিলে তোমার অনেক উপকার দর্শিবে।

    রামলাল। যদি বিদেশে যাই তবে যে স্থানে বসতি আছে সেই সেই স্থানে কিছুকাল অবস্থিতি করিতে হইবে কিন্তু আমি কোন্‌ জাতীয় ও কি প্রকার লোকের সহিত অধিক সহবাস করিব ?

    বরদা। এ কথাটি বড়ো সহজ নহে –ঠাওরিয়া উত্তর দিতে হবে। সকল জাতিতেই ভালো-মন্দ লোক আছে–ভালো লোক পাইলেই তাহার সহিত সহবাস করিবে। ভালো লোকের লক্ষণ তুমি বেশ জানো, পুনরায় বলা অনাবশ্যক। ইংরেজদিগের নিকটে থাকিলে লোকে সাহসী হয় –তাহারা সাহসকে পূজা করে –যে ইংরাজ অসাহসিক কর্ম করে সে ভদ্রসমাজে যাইতে পারে না কিন্তু সাহসী হইলে যে সর্বপ্রকারে ধার্মিক হয় এমতো নহে –সাহস সকলের বড়ো আবশ্যক বটে কিন্তু যে সাহস ধর্ম জ্ঞান হইতে উৎপন্ন হয় সেই সাহসই সাহস –তোমাকে পূর্বেই বলিয়াছি ও এখনও বলিতেছি সর্বদা পরমার্থ চর্চা করিবে নতুবা যাহা দেখিবে –যাহা শুনিবে –যাহা শিখিবে তাহাতেই অহংকার বৃদ্ধি হইবে। আর মনুষ্য যাহা দেখে তাহাই করিতে ইচ্ছা হয়, বিশেষতঃ বাঙালীরা সাহেবদিগের সহবাসে অনেক ফাল্‌তো সাহেবানি শিখিয়া অভিমানে ভরে যায় ও যে-কিছু কর্ম করে তাহা অহংকার হইতেই করিয়া থাকে –এ কথাটিও স্মরণ থাকিলে ক্ষতি নাই।

    এইরূপ কথাবার্তা হইতেছে ইতিমধ্যে বাগানের পশ্চিম দিক থেকে জনকয়েক পিয়াদা হন্‌ হন্‌ করিয়া আসিয়া বরদাবাবুকে ঘিরিয়া ফেলিল –বরদাবাবু তাহাদিগের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন –তোমরা কে? তাহারা উত্তর করিল –আমরা পুলিশের লোক –আপনার নামে গোমখুনির নালিশ হইয়াছে –আপনাকে হুগলীর ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের আদালতে যাইয়া জবাব দিতে হইবে আর আমরা এখানে গোমতল্লাশ করিব। এই কথা শুনিবামাত্রে রামলাল দাঁড়াইয়া উঠিল ও পরওয়ানা পড়িয়া মিথ্যা নালিশ জন্য রাগে কাঁপিতে লাগিল। বরদাবাবু তাহার হাতে ধরিয়া বসাইলেন এবং বলিলেন –ব্যস্ত হইও না, বিষয়টা তলিয়ে দেখা যাউক –পৃথিবীতে নানাপ্রকার উৎপাত ঘটিয়া থাকে। আপদ্‌ উপস্থিত হইলে কোনোমতে অস্থির হওয়া কর্তব্য নহে–বিপদকালে চঞ্চল হওয়া নির্বুদ্ধির কর্ম, আর আমার উপর যে দোষ হইয়াছে তাহা মনে বেশ জানি যে আমি করি নাই –তবে আমার ভয় কি? কিন্তু আদালতের হুকুম অবশ্য মানিতে হইবে এজন্য সেখানে শীঘ্র হাজির হইব। এক্ষণে পেয়াদারা আমার বাটী তল্লাশ করুক ও দেখুক যে আমি কাহাকেও লুকাইয়ে রাখি নাই। আদেশ পাইয়া পেয়াদারা চারিদিকে তল্লাশ করিল কিন্তু গুমি পাইল না।

    অনন্তর বরদাবাবু নৌকা আনাইয়া হুগলী যাইবার উদ্‌যোগ করিতে লাগিলেন, ইতিমধ্যে বালীর বেণীবাবু দৈবাৎ আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তাঁহাকে ও রামলালকে সঙ্গে করিয়া বরদাবাবু হুগলীতে গমন করিলেন। বেণীবাবু ও রামলাল কিঞ্চিৎ চিন্তাযুক্ত হইয়া থাকিলেন কিন্তু বরদাবাবু সহাস্যবদনে নানা-প্রকার কথাবার্তায় তাহদিগকে সুস্থির করিতে লাগিলেন।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য টাইগার’স প্রে – উইলবার স্মিথ / টম হারপার
    Next Article সুবৰ্ণ সমাধি – ডিউক জন
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    বাঙালনামা – তপন রায়চৌধুরী

    August 20, 2025

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জীবনী – তপন বাগচী

    August 20, 2025

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.