Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আল আকসা মসজিদের ইতিকথা – এ . এন. এম. সিরাজুল ইসলাম

    এ . এন. এম. সিরাজুল ইসলাম এক পাতা গল্প129 Mins Read0

    ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্ম ও ইহুদী জাতি

    ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্ম

    ১৯৪৮ খৃঃ ১৫ই মে মুসলিম ফিলিস্তিনে বিষফোঁড়া ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে ইহুদীরা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিল এবং তাদের কোন সুনির্দিষ্ট জাতীয় বাসস্থান বা দেশ ছিল না। যে দেশে তারা বাস করতো, তারা সেই দেশেরই নাগরিক ছিল। কিন্তু ১৮৯৭ খৃঃ ইহুদী নেতা ও দার্শনিক থিওডোর হাজ্জল এক আন্তর্জাতিক ইহুদী সম্মেলন আহ্বান করেন। তাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১৫০ জন ইহুদী পণ্ডিত, দার্শনিক ও রাজনীতিবিদ অংশ নেন। সুইজারল্যান্ডের বেসলে অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে ইহুদীদের জন্য একটি স্বতন্ত্র বাসভূমি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ইহুদীরা ফরাসী সেনাপতি নেপোলিয়ান বোনাপার্টের মাধ্যমে প্রথমে সাইপ্রাস, ল্যাটিন আমেরিকা, উগান্ডা কিংবা দক্ষিণ সুদানে একটি ইহুদী রাষ্ট্র কায়েম করার চেষ্টা করে। কিন্তু এতে তারা সফল হতে না পেরে পরে ১৯০৫ খৃঃ বিশ্ব ইহুদী কংগ্রেসের ২য় সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মুতাবিক ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নেয়। তারা প্রথমে তুর্কি সুলতানের অধীন ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সুলতান আবদুল হামিদের কাছে ভূমি কেনার প্রস্তাব করে। কিন্তু সুলতান আবদুল হামিদ এক বিঘত জায়গা দিতেও অস্বীকার করায় তারা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। বৃটেন ছিল তদানীন্তন পরাশক্তি। তখন ইহুদীরা সূর্যদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল বৃটিশ সাম্রাজ্যের দ্বারস্থ হয়। বৃটেন ফিলিস্তিনে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়। ওয়াইজম্যান তার স্মারকে উল্লেখ করেছেন, বেলফোর ছিলেন প্রো টেস্ট্যান্ট খৃস্টান। তিনি বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্ট-তাওরাতে বিশ্বাসী ছিলেন।তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ইহুদীরা পুনরায় ফিলিস্তিনে প্রত্যাবর্তন করবে। তিনি ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আল্লাহর কাছে এর উত্তম বিনিময়ের আশা করেছিলেন। ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বৃহৎ শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং তখন বৃটিশ শক্তি ভংগুর অবস্থার শিকার। তাই ইহুদীরা তাদের কেন্দ্র বৃটেন থেকে আমেরিকায় পরিবর্তন করে এবং মার্কিন প্রশাসন, প্রচারযন্ত্র অর্থনীতির উপর প্রভাব বিস্তারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করে। ক্রমান্বয়ে যুক্তরাষ্ট্র পরাশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর ইহুদীরাও মার্কিন ঘাড়ে সওয়ার হয়ে, বসে এবং মার্কিন কংগ্রেস সিনেট ও হোয়াইট-হাউজের প্রশাসনে জ্বিনের মত প্রভাব বিস্তার করে। তারা নিজেদের স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে সকল কাজ আদায় করে নেয় এবং ইহুদীদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যে কোন চিন্তা ও পরিকল্পনা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বহু দূরে রাখে। এমন কি ইহুদীদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও প্রচার মাধ্যমের সমর্থন ছাড়া কোন দল বা ব্যক্তির পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে কিংবা সিনেটের নির্বাচনে জয়লাভ করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।

    ইসরাইল নামক এই বিষাক্ত সাপটিকে যুক্তরাষ্ট্র দুধ-কলা দিয়ে পুষে যাচ্ছে। ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে যে কোন অন্যায় করে বসতে পারে এবং দুনিয়ার আন্তর্জাতিক মতামতকে উপেক্ষা করতে পারে। এখনও আন্তর্জাতিক ইহুদী সংস্থা বিশ্বের অন্যান্য বৃহৎ শক্তিগুলোকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে বহুমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। তারা ঐ সকল দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রচারমাধ্যম ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন, বৃটেন ও চীনে তাদের এই অপচেষ্টা অব্যাহত আছে। পক্ষান্তরে মুসলমানরা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ বেখবর ও উদাসীন।

    .

    ইহুদী জাতি

    ইহুদীবাদ হচ্ছে হিব্রুদের ধর্ম। হযরত ইয়াকুবের বংশদরদের পরবর্তীতে বনি ইসরাইল বলে আখ্যায়িত করা হয়। এই জাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহ হযরত মূসা আলাইহিস সালাম-কে তাওরাত দিয়ে পাঠিয়েছেন। বনি ইসরাইল পরবর্তীতে ইহুদী জাতি নামে পরিচিত হয়। ইয়াহুদানামক রাষ্ট্রের নামানুসারে বনি ইসরাইল ইহুদী’ নামে পরিচিতি লাভ করে। ব্যাবিলনের শাসক বখতে নসর জেরুসালেম, হাইকালে সুলাইমানী এবং তাওরাত ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে, ইহুদীরা ব্যাবিলনের উপর বিজয় লাভকারী পারস্য সম্রাট আরতাখসাসনার কাছে ওজাইরের নেতৃত্বে ব্যাবিলনে বন্দী ইহুদীদেরকে জেরুসালেম ফেরত পাঠানোর আবেদন জানায়। মূল তাওরাত ধ্বংস হওয়ার পর ওজাইর ব্যাবিলনে বসে তাওরাত পুনরায় লিপিবদ্ধ করেন। ফলে, মূল তাওরাত আর সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। ব্যাবিলনের কিসসা-কাহিনী ও কিংবদন্ত তাওরাতের মূলন্ত প্রতিপাদ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

    গোস্তাব লোভন তাঁর প্রাথমিক সভ্যতায় ইহুদী ’ নামক বইতে লিখেছেন, পবিত্র তাওরাত গ্রন্থের কাহিনীসমূহ কালদানী কিংবদন্তী থেকে সংযোজন করা হয়েছে। এগুলো ইতিপূর্বে আশুরীয় গ্রন্থেও লিপিবদ্ধ ছিল। কালদানী কাহিনীগুলো কখনও বাস্তবে সংঘটিত হয়নি। এগুলো হচ্ছে কাল্পনিক। কিন্তু পরবর্তীতে ইসরাইলীরা সেই কাল্পনিক ঘটনাগুলোকে সত্য বলে মনে করতে থাকে। এর মধ্যে শামসুন হিক্লিয়াস ইহুদীর কাহিনী অন্যতম। ওজাইর মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দী ইহুদীদেরসহ পুনঃলিপিবদ্ধ তাওরাত নিয়ে জেরুসালেম ফিরে আসেন। মূসা আলাইহিস সালাম-এর পর ধ্বংসকৃত তাওরাত পুনঃ লিপিবদ্ধ করায় এবং জেরুসালেমে পুনরায় হাইকাল নির্মাণ করার কারণে ইহুদরীরা তাঁকে ‘আল্লাহর ছেলে’ বলে অভিহিত করে। তারা তাকে আজরা বলে ডাকে। তিনি একজন নেকলোক ছিলেন।

    .

    ইহুদীদের ধর্মীয় চিন্তাধারা

    আল্লাহকে মাবুদ মানা সত্ত্বেও তারা গো-বাছুরের পূজা করে। তারা তামার তৈরি সাপকেও পবিত্র মনে করে এবং প্রাচীন ইহুদীরা তার পূজা করত। কেননা, হযরত মূসার হাতের লাঠি আল্লাহর কুদরতে সাপ হয়ে গিয়েছিল। তাদের মাবুদের নাম হচ্ছে ইয়াহওয়া বা যিহোভা। সেই ইলাহ ভুল-ভ্রান্তি করে এবং লজ্জিত হয়। তিনি শুধু বনি ইসরাইলের ইলাহ, অন্যদের নয়। ইহুদীরা মূলত তাওহীদপন্থী ও এক আল্লাহতে বিশ্বাসী। কিন্তু তাওরাত ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর ওজাইর তা লোকদের কাছে শুনে শুনে পুনরায় লিপিবদ্ধ করায় তারা তাকে আল্লাহর সন্তান বলে অভিহিত করে শিকে লিপ্ত হয়। তাদের মতে, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ইসমাঈলকে নয়, ইসহাককেই জবেহ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন। তাদের ধর্মে পুনরুত্থান, অনন্ত জীবন, সওয়াব ও শাস্তি সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য কোন বক্তব্য নেই। তাদের মতে, শাস্তি ও পুরস্কার এই দুনিয়াতেই হবে। সওয়াব হচ্ছে বিজয় এবং শাস্তি হচ্ছে লোকসান, অপমান ও গোলামী। শনিবার মাছ শিকার নিষিদ্ধ ছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় আল্লাহ সংশ্লিষ্ট পাপীদেরকে বানর বানিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। তাদের একটি পবিত্র বাক্স আছে, তাতে আগে মহামূল্যবান জিনিস, দলীল ও পবিত্র কিতাব হেফাজত করা হত।

    হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম ইবাদতের উদ্দেশ্যে যে ঘর তৈরি করেছেন, তা তাদের কাছে পবিত্র এবং এটাকে তারা হাইকালে সুলাইমানী বলে। ইহুদীরা মনে করে, তারা আল্লাহর নির্বাচিত মনোনীত বিশেষ জাতি। ইহুদীদের রূহ আল্লাহর রূহের অংশ বিশেষ। মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, ইহুদী ও অ-ইহুদীর পার্থক্য।

    অর্থাৎ ইহুদীরা মানুষ, আর অন্যরা পশু সমতুল্য। ইহুদী জাতির পক্ষে অন্য জাতির সম্পদ চুরি-ডাকাতি করা ও তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত হারে সুদ খাওয়া বৈধ। তাই তারা বিশ্বব্যাপী সুদী কারবারে লিপ্ত। তারা অন্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে পারে এবং অ-ইহুদীদের সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি পূরণে বাধ্য নয়। কেননা, অইহুদীরা হচ্ছে কুকুর, শুকর ও পর মত। তাদের সাথে নৈতিক মূল্যবোেধ রক্ষার কোন প্রয়োজন নেই। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে ইহুদীদের পবিত্র গ্রন্থ তালমুদের বক্তব্য হল, খৃস্টান ঈসা দোজখের আগুন ও গ্যাসের মাঝে হাবুডুবু খাচ্ছে। তার মা মরিয়ম বান্দারা নামক জনৈক সৈনিকের দ্বারা গর্ভধারণ করে ঈসাকে অবৈধভাবে জন্ম দিয়েছে। তাই খৃস্টানদের গীর্জা আবর্জনা সমতুল্য এবং তাদের ধর্মীয় বক্তারা হচ্ছে ঘেউ ঘেউকারী কুকুর। তাদের মতে, ইয়াকুব আলাইহিস সালাম আল্লাহর সাথে ধস্তাধস্তি করেছিলেন এবং দূত আলাইহিস সালাম মদপান করেছিলেন ও নিজের দুই কন্যার সাথে যেনা করেছিলেন। এছাড়াও আল্লাহর কাছে দাউদ আলাইহিস সালাম ছিলেন মন্দ ব্যক্তি। (নাউজুবিল্লাহ) বিয়ের পরে স্ত্রীকে স্বামীর মালিকানাধীন বিবেচনা করা হয় এবং স্ত্রীর সকল সম্পদের উপর স্বামীর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু পরে তা নিয়ে বহু বিতর্কের পর ঠিক হয় যে, স্ত্রী সম্পদের মালিকানা লাভ করবে বটে, তবে লাভের মালিকানা থাকবে স্বামীর। বিশ বছর বয়সে উপনীত হওয়ার পর বিয়ে না করলে অভিশাপের যোগ্য হয়।

    ইহুদী ধর্মে একাধিক বিয়ে বৈধ এবং তাতে কোন সীমিত সংখ্যা নেই। তবে তাদের মধ্যে সূফীবাদীরা ৪ স্ত্রী পর্যন্ত সংখ্যা সীমাবদ্ধ করে দিলেও অন্যরা ঐ সংখ্যা সীমাহীন রেখেছে। ইহুদীদের মধ্যে ৮টি দল রয়েছে। সেগুলো হচ্ছেঃ

    ১. চরমপন্থী বা কট্টরপন্থীঃ তারা মূলতঃ সূফী ও চিরকুমার।

    ২. সেদকী ও তারা পুনরুত্থান, মিজান, বেহেশত-দোজখ, ফেরেশতা, ঈসা ও তালমুদকে অস্বীকার করে।

    ৩. সাম্প্রদায়িক ও তারা কট্টরপন্থীদের অনুরূপ ও ক্ষমার বিরোধী।

    ৪. ইহুদী ওয়ায়েজ বা বক্তাঃ তারা ওয়াজ-নসীহতকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন।

    ৫. কোরআউন ও তারা তাওরাত ছাড়া অন্য কোন কিছু গ্রহণ করে না এবং তালমুদকেও অস্বীকার করে। ৬. সামেরী সম্প্রদায় ও তারা মূসা, হারুন এবং ইউশা বিন নূনকে ছাড়া আর কাউকে নবী হিসেবে স্বীকার করে না।

    ৭. সাবাঈ দল ও তারা আবদুল্লাহ বিন সাবার অনুসারী। আবদুল্লাহ বিন সাবা ইসলামকে আভ্যন্তরীণ দিক থেকে ধ্বংস করার জন্য ইসলাম গ্রহণ করে এবং মুসলমানদের মধ্যে ফেতনা সৃষ্টি করে। যার ফলে, হযরত উসমানকে শহীদ এবং ইসলামী খেলাফতকে ধ্বংস করা সহজ হয়।

    ৮. হাখামঃ তারা হচ্ছে সর্বোচ্চ ইহুদী আলেম। তারা ধর্মীয় বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে।

    অবিকৃত তাওরাতের অনুসারী সঠিক হিব্রু ইহুদীর কোন অস্তিত্ব কোথাও নেই। বিকৃত তাওরাতের অনুসারী হিসেবে তাদের ধর্মীয় আকীদা-বিশ্বাসও বিকৃত রুচিসম্পন্ন। ইহুদীদের ধর্মীয় দিবসের মধ্যে রয়েছে ১৪-১২ এপ্রিল, ফেরাউনের যুগে মিসর থেকে বনি ইসরাইলের মুক্তি সপ্তাহ পালন। সেদিন মদবিহীন রুটি খেতে হয়।

    ক্ষমা দিবস : ইহুদী সালের ১০ম মাসের প্রথম ৯ দিন রোযা, ইবাদত ও তাওবাহ করার পর ১০ম দিবস হচ্ছে, ক্ষমা দিবস। সেদিন খানা-পিনা বন্ধ রেখে পুরো দিন ইবাদতে কাটিয়ে দিতে হবে। ফলে, অতীতের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যাবে এবং এভাবে নতুন বছরকে স্বাগতম জানানো হয়।

    প্রতিবছর প্রত্যেক ইহুদীকে ২ বার বাইতুল মাকদিস যেয়ারতে যেতে হবে। এবং এটা অত্যন্ত জরুরী।

    প্রত্যেক চান্দ্রমাসের নতুন চাঁদ দেখে আনন্দ প্রকাশ করা। তারা বাইতুল মাকদিসে বিউগল বাজিয়ে এবং আগুন জ্বালিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে।

    শনিবার দিন ছুটির দিন। সেদিন কোন কাজ করা যাবে না। তাদের মতে, আল্লাহ আসমান ও যমীন সৃষ্টির পর শনিবার দিন বিশ্রাম গ্রহণ করেন। তিনি নিজ আরশে পিঠের উপর শুয়ে এক পায়ের উপর আরেক পা রেখে বিশ্রাম করেন।

    .

    ইহুদী চরিত্র

    ইহুদীদের শত্রুতা ও ষড়যন্ত্রের মোকাবিলার জন্য তাদের মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক ও অন্যান্য চারিত্রিক গুণাবলী জানা প্রয়োজন। আল্লাহ কুরআনে ইহুদীদের ঐ সকল গুণাবলী তুলে ধরেছেন। এখন আমরা কুরআনে বর্ণিত ইহুদী চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা করবো।

    ১. কাপুরুষতা ও ইহুদীরা ভীরু ও কাপুরুষ। আল্লাহ বলেন :

    অর্থ ও ‘তারা সবাই মিলেও তোমাদের সাথে লড়াই করবে না হাঁ, সুরক্ষিত জনপদ কিংবা দুর্গের দেয়ালের আড় থেকেই লড়াই করার সাহস করবে। (সূরা হাশর-১৪) তাই বীরত্ব সম্পর্কে ইহুদী দাবী মুসলমানদের কাছে অর্থহীন।

    ২. চুক্তি ভঙ্গ করাঃ ইহুদীরা সর্বদা নবী-রাসূল এবং আল্লাহর সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করেছে। এখন তারা যে কোন চুক্তি ও সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করতে কণ্ঠবোধ করে। স্বার্থপরতা তাদের বৈশিষ্ট্য। তাই তারা জাতিসংঘসহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থার সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাবাবলী প্রত্যাখ্যান করে চলছে। আল্লাহ বলেন,

    অর্থ ও তাদের চুক্তি ও প্রতিশ্রুতিভঙ্গ, আল্লাহর আয়াতের সাথে কুফরী এবং অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করার কারণে আল্লাহ তাদের অন্তরে গোমরাহীর সীল মেরে দিয়েছেন। (সূরা নিসা)

    ৩. পাশবিকতাঃ উপরোক্ত আয়াতে বর্ণিত আল্লাহর প্রিয় নবীদেরকে হত্যা করার জঘন্য তৎপরতা চালিয়ে তারা প্রমাণ করেছে, তাদের স্বার্থের পরিপন্থী যে কোন লোককে হত্যা করা সম্ভব। তারা ২ জন নবীকে হত্যা করেছে এবং আরেকজনকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে ব্যর্থ হয়। তাদের এই পৈশাচিক মনোভাব এখনও বিদ্যমান।

    ৪. অশান্তি ও গোলযোগ সৃষ্টিঃ ইহুদীরা পৃথিবীর দেশে দেশে অশান্তি ও গোলযোগ সৃষ্টি করে। মুসলমান ও খৃস্টানদের মধ্যে ঢুকে কুমন্ত্রণা দিয়ে তাদেরকে বিভিন্ন সমস্যায় নিক্ষেপ করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালায়। আল্লাহ বলেনঃ

    অর্থঃ যখনই তারা যুদ্ধের আগুন জ্বালায়, আল্লাহ তা নিভিয়ে দেন এবং তারা যমীনে ফেতনা-ফাসাদ ও গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। আল্লাহ বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদেরকে ভালবাসেন না।’ (আল মায়িদা)।

    ৫. অন্য ধর্মের প্রতি অসহনশীলতা ও তারা যেহেতু নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ ও আল্লাহর নির্বাচিত উত্তম মানুষ বলে মনে করে, সেহেতু অন্য ধর্ম ও আদর্শের প্রতি তাদের অসহনশীলতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহ বলেন,

    অর্থঃ “ইহুদী ও খৃস্টানরা সে পর্যন্ত আপনার উপর সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্ম ও মিল্লাতের অনুসরণ করেন।

    ৬, মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রুতা ও ইহুদীরা মুসলমানদের সর্বপ্রধান শত্রু মনে করে। পক্ষান্তরে, অন্যদের সাথে তাদের কিছুটা মিত্ৰতা গড়ে ওঠে। আল্লাহ বলেন

    অর্থ : হে নবী, আপনি মানুষের মধ্যে ইহুদী ও মুশরিকদেরকে মুসলমানদের কঠোর শত্রু হিসেবে দেখতে পাবেন।’ (আল মায়িদাঃ ৮২)

    ৭. আল্লাহর প্রতি কলংক আরোপ ও তাদের নির্যাতন, ষড়যন্ত্র ও ফাসাদ থেকে মানুষতো দূরে থাক, স্বয়ং আল্লাহও মুক্ত নন। আল্লাহ বলেন :

    অর্থ ও ইহুদীরা বলে, আল্লাহর হাত বদ্ধ। আসলে তাদের হাতই বদ্ধ; তাদের এই বক্তব্যের জন্য তাদের উপর অভিশাপ। বরং আল্লাহর হাত প্রসারিত ও উন্মুক্ত। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন।

    .

    ইহুদী জাতীয়তাবাদ

    ইসলাম সকল ধর্মের স্বাধীনতার অধিকার স্বীকার করে। তাই ইসলামের সাথে ইহুদী ধর্মের কোন সংঘাত নেই। ইসলামের দৃষ্টিতে, ইহুদী ধর্ম বিকৃত। বিকৃত হলে তারা শেষ নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর অনুসারী হয়ে মুসলমান হয়ে যেত। মুসলমানদের সংঘাত হচ্ছে, সাহ্ইউনী বা যায়নবাদী ইহুদী জাতীয়বাদের সাথে। পূর্ব জেরুসালেমের সাহইউন পাহাড়ের নামানুসারে এই জাতীয়তাবাদের নামকরণ করা হয়েছে। ইংরেজীতে এটাকে Zionism বলে এবং বাংলায় যায়নবাদ’ বলে। ইহুদীবাদ ও যায়নবাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। ইহুদী ধর্মের অনুসারীকে ইহুদী বলা হয়। কিন্তু যায়নবাদের জন্য ইহুদীবাদের অনুসরণ জরুরী নয়। যায়নবাদে বিশ্বাসী অন্য ধর্মের অনুসারীও যায়নবাদী হতে পারে। যায়নবাদের মূলকথা হল, সাইউন পাহাড়ে পুনঃ প্রত্যাবর্তন। তারা ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী। ১৮৯৭ খৃঃ থিওডোর হার্জল বিশ্ব ইহুদী কংগ্রেস গঠন করে সর্বপ্রথম এই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনা করে। বহু অ-ইহুদী যায়নবাদে বিশ্বাসী। এর মধ্যে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, বেলফোর ঘোষণাদানকারী জেমস আর্থার বেলফোর এবং শান্তির মধ্যস্থতাকারী সুইস দূত কাউন্ট বার্নাদোত রয়েছেন। তারা খৃস্টান হয়েও যায়নবাদ বিশ্বাস করতেন। পরবর্তীতে ক্রিশ্চিয়ান যায়নবাদের কারণে আরো বহু লোক যায়নবাদী হয়ে গেছে। যায়নবাদকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।

    ১. রাজনৈতিক যায়নবাদঃ এই নীতির আলোকে মিসরের নীলনদ থেকে ইরাকের ফোরাত নদী পর্যন্ত ইহুদীদের বৃহত্তর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। তাদের মতে, অন্যান্য জাতির সাথে ইহুদীদের বাস করা ঠিক নয়। তাদের জন্য বৃহত্তর ইসরাইল রাষ্ট্র গঠন করতে হবে।

    ২. ধর্মীয় যায়নবাদ : এটি তিনটি মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। সেগুলো হচ্ছে, ক. আল্লাহ খ, আল্লাহর মনোনীত জাতি ও গ, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। এই তিন মূলনীতির উপর যায়নবাদীরা ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগাচ্ছে।

    ৩. আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক যায়নবাদঃ এর মূলে রয়েছে ইহুদীদের মুক্তির শ্লোগান। তারা বিশ্বাস করে, বনি ইসরাইলে এমন একজন নবীর আগমন হবে যিনি তাদেরকে বিচ্ছিন্নতা থেকে রক্ষা করে এক জায়গায় সমবেত করবেন। এটা তাদের একটা মিথ্যা ধারণা ছাড়া আর কিছু নয়। যায়নাবাদকে শুধু ইহুদী জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বলাই ঠিক বরং তাকে বর্ণবাদও (Racism) বলা হয়। তারা কোন অ-ইহুদীর অস্তিত্ব সহ্য করতে রাজী নয়। জেরুসালেমকে মুসলমানদের হাত থেকে উদ্ধার করে তাতে ইহুদী খৃষ্টান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।

    .

    ইহুদীরা আপ্নাহর অভিশপ্ত

    আল্লাহ ইহুদীদের উপর স্থায়ীভাবে লাঞ্ছনা, অপমান ও নির্যাতন নির্ধারিত করে দিয়েছেন। আল্লাহ যুগে যুগে, ইতিহাসের বিভিন্ন অধ্যায়ে তাদেরকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করেছেন। মিসরের ফেরআউন শাইশাক ইসরাইল দখল করে এবং ইহুদীদেরকে তাড়িয়ে দেয়। তারপর ব্যাবিলনের রাজা বখতে নসর জেরুসালেম দখল করে ইহুদীদেরকে বন্দী করে নিয়ে আসে এবং তাদেরকে দাস বানিয়ে রাখে। পরে পারস্য সম্রাট আরতাখসাসনার ইহুদী দাসদেরকে ইসরাইলে ফেরত পাঠান সত্য, কিন্তু তা তখন পারস্য সম্রাটেরই অধীন ছিল। ৬৬ খৃঃ রোমান সম্রাট তাইতুস জেরুসালেম দখল করে এবং ইহুদীদেরকে ব্যাপকহারে হত্যা করে। উপরন্তু ৭০ খৃঃ রোমান বাহিনী হাজার হাজার ইহুদীকে বন্দী করে নিয়ে যায় এবং তাদেরকে দাস বানায়।

    ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মুহূর্তে তারা বিরাট সমস্যার সম্মুখীন হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ইহুদীরা ঐ সময় পর্যন্ত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বাস করে। এটাও তাদের জন্য বিরাট অপমান ছাড়া আর কিছু নয়। যাই হোক, ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদীদের দেশত্যাগ প্রয়োজন। কিন্তু কোন ইহুদী ইসরাইল রাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিল না। তখন ইহুদী নেতারা জার্মানীর নাৎসী নেতা হিটলারের সাথে এক গোপন ইহুদী হত্যা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। যাতে করে, বিশ্বব্যাপী ইহুদীদের মধ্যে ভয়-ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করা যায় এবং তারা ইসরাইলের উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে বাধ্য হয়। চুক্তি অনুযায়ী ৪ লাখ ৫০ হাজার ইহুদীর মধ্যে মাত্র ৭ হাজারকে ইসরাইল পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় এবং অবশিষ্টদেরকে হত্যার নীল নকসা তৈরী করা হয়। হিটলার ইহুদীদেরকে গ্যাস চেম্বারে জড়াে করে গ্যাস বোমা মেরে হত্যা করে। সংখ্যার দিক থেকে এত বিপুল পরিমাণ ইহুদীকে ইতিপূর্বে আর কেউ হত্যা করেনি। এটা যদি আল্লাহর অভিশাপ বা গযব না হয়, তাহলে অভিশাপ আর কাকে বলে? এরপরও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ইহুদীরা ইসরাইলের উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করতে রাজী না হওয়ায় ইহুদী নেতারা বিশ্বের সর্বত্র ইহুদী হত্যার গোপন পরিকল্পনা হাতে নেয়। উদ্দেশ্য একই, আর তা হল তাদের মধ্যে ভয়-ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করা। ইহুদী রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা হার্জল একবার রাশিয়ার ৩য় জার আলেকজান্ডারকে বলেছিলেন, যদি ৬ থেকে ৭ মিলিয়ন ইহুদীকে কৃষ্ণ সাগরে ডুবিয়ে দেয়া সম্ভব হয়, তাতে আমার কোন আপত্তি থাকবে না।

    তাই দেখা যায়, ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা, প্রথম ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী এবং ইহুদী নেতা ডেভিড গুরিওন ইহুদীরা ইসরাইলের হাইফা বন্দরে এসেও জাহাজ থেকে নামতে রাজী না হওয়ায় ইহুদী বোঝাই জাহাজটিকে বোমা মেরে সাগরে ডুবিয়ে দেয়। ইহুদীদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

    অর্থ ও ‘আরো স্মরণ কর, যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, তিনি কেয়মাত পর্যন্ত সব সময় বনি ইসরাইলের উপর এমন লোককে প্রভাবশালী করবেন যারা তাদেরকে নিকৃষ্টতম শাস্তি দান ও নির্যাতন করতে থাকবে।’ (আরাফ-১৬৭) আল্লাহ আরো বলেনঃ

    অর্থ ও তাদের উপর অপমান ও অভাব লাগিয়ে দেয়া হয়েছে এবং তারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও গযবের শিকার হয়েছে। কেননা, তারা আল্লাহর আয়াতের সাথে কুফরী করেছে এবং নবীদেরকে হত্যা করেছে, এটা ছিল তাদের নাফরমানী এবং তারা ছিল সীমালংঘনকারী। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন :

    অর্থ : যারা আল্লাহর আয়াতের সাথে কুফরী করে, নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারীদেরকেও হত্যা করে, তাদেরকে কষ্টদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও। তারাই ঐ সকল লোক যাদের আমল দুনিয়া এবং আখেরাতে ব্যর্থ- বেকার এবং যাদের কোন সাহায্যকারী নেই। মহান আল্লাহ ইহুদীদের ব্যাপারে আরো বলেন :

    অর্থ : তারা মন্দ কাজ থেকে বিরত হয় না, যা তারা ইতিপূর্বে করেছে এবং তারা যা করে, তা কতইনা খারাপ। এই হচ্ছে, ইহুদীদের উপর আল্লাহর গযবের কারণ।

    .

    ইহুদীদের ইসলাম দুশমনী

    ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থে শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর আগমনের সুসংবাদ রয়েছে। অন্যান্য সকল আসমানী কিতাবগুলোতেও সেই একই সুসংবাদ আছে। আগের সকল আম্বিয়ায়ে কেরাম তাদের অনুসারীদেরকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন, শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) যখন নবুয়ত লাভ করবেন তখন আগের সকল ধর্ম বাতিল হয়ে যাবে। তাই তাদেরকে শেষনবী আনীত কিতাব ও জীবন ব্যবস্থার অনুসরণ করতে হবে। তাদের নবী ও আসমানী কিতাবের নির্দেশ অনুযায়ী যুক্তির দাবী ছিল, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর অনুসরণ করে মুসলিম হয়ে যাওয়া। কিন্তু তারা মুসলমান তো হয়ইনি, বরং ইসলাম ও শেষ নবীর বিরুদ্ধে হিংসা ও ক্রোধে জ্বলে-পুড়ে মরতে থাকে। কেননা, তাদের ধারণা ছিল, তাদের কাওম বনি ইসরাইলে শেষ নবীর আগমন ঘটবে। তাই তারা কিছুতেই মক্কার কুরাইশ বংশে আরবী নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর অস্তিত্ব সহ্য করতে পারল না। তারা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে হাজারো যড়যন্ত্র শুরু করে দিল। তাদের সেই ষড়যন্ত্র আজ পর্যন্ত অব্যাহত আছে।

    মুসলমানদের সবচাইতে বড় দুশমন হচেছ ইহুদী সম্প্রদায়। এ সম্পর্কে আল্লাহ কুরআনে মজীদে বলেছেন

    অর্থ ও ‘তুমি মুমিনদের বিরুদ্ধে ইহুদী ও মুশরিকদের কঠোরতম দুশমন হিসেবে দেখতে পাবে।

    এই আয়াতে মুসলমানদের যে ২টা ঘোর শত্রুর কথা আল্লাহ বাতলিয়ে দিয়েছেন, তার মধ্যে প্রথম হচ্ছে ইহুদী, আর দ্বিতীয় হচ্ছে মুশরিক। কুরআন মজীদের বিভিন্ন সূরা ও আয়াতে বনি ইসরাইল তথা ইহুদীদের সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বহু আয়াত নাযিল হয়েছে। কুরআনের মোট ১১৪টি সূরার মধ্যে ৫০টিতেই ইহুদীদের সম্পর্কে সরাসরি এবং পরোক্ষ ইশারা ইঙ্গিতে আলোচনা করা হয়েছে। তাদের সম্পর্কে এত বেশী আলোচনার উদ্দেশ্য হল, মুসলমানগণ তাদের ব্যাপারে যেন যথেষ্ট সতর্ক থাকে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মক্কা থেকে হিজরাত করে মদীনায় যাওয়ার পরপরই একের পর এক ইহুদীদের শক্রতা প্রকাশিত হতে থাকে। তারা শেষ পর্যন্ত ইসলাম, মুসলমান ও শেষ নবীকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র জিহাদে অবতীর্ণ হন এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। মদীনার জীবনের ১ম চতুর্থাংশে তাদের ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদেরকে মদীনা থেকে বহিষ্কার করেন। ইহুদী কবি আবি ইফক নিজ কবিতার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহর বিরুদ্ধে লোকদেরকে উত্তেজিত করতে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার ইসলাম দুশমনীর জন্য তাকে হত্যার নির্দেশ দেন। তারপর ইহুদী কাইনুকা গোত্রকে মদীনা থেকে বহিষ্কার করেন। এই গোত্রটি ইসলামের অসম্মান করে এবং একজন মুসলিম মহিলার ইজ্জত নষ্ট করে। এরপর ইহুদী কবি কাব বিন আশরাফকে হত্যা করা হয়। সেও নিজ কবিতার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও ইসলামের বিরুদ্ধে লোকদের উত্তেজিত করতে থাকে। তারপর ইহুদী বনি নাদীর গোত্র রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) নিজেদের ঘরের দেয়ালের পার্শ্বে বসায় এবং ছাদ থেকে বড় পাথর নিক্ষেপ করে তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এই অপরাধের কারণে তাদেরকেও মদীনা থেকে বহিষ্কার করেন। তারপর আহযাব যুদ্ধে ইহুদী বনি কুরাইজাহ মুসলমানদের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গ করে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়ায় তিনি তাঁদেরকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দান করেন। এইভাবে মদীনা থেকে ইহুদীদেরকে বিতাড়িত করার পর তিনি মদীনার বাইরের ইহুদীদের প্রতি দৃষ্টি দেন। কেননা, বিশৃংখলা ও গোলযোগ সৃষ্টিতে তাদের সক্রিয় ভূমিকা ছিল। তিনি ইসলামের বিরুদ্ধে খায়বারে ইহুদীদের সংগঠক আবু রাফে সালাম বিন আবিল হাকীক নাদারীকে হত্যা করেন। তারপর ইহুদীরা আসীর বিন রাযেমকে আবু রাফের পরিবর্তে নেতা নির্বাচিত করে ইসলামের বিরুদ্ধে পুনরায় সংগঠিত হয়। পরে আসীরকেও হত্যা করা হয়। হোদায়বিয়ার সন্ধির দুইমাস পর খায়বার ও পার্শ্ববর্তী ইহুদী গ্রামগুলো মুসলমানদের দখলে আসে। ইহুদীদের ষড়যন্ত্র এখানে এসেই থেমে যায়নি। পূর্বে নবী হত্যাকারী এই সম্প্রদায় প্রথম পর্যায়ে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে হত্যা করতে চেয়েছিল। কয়েকদফা ব্যর্থ চেষ্টার পর তারা শেষ পর্যায়ে আংশিক সফল হয়। খায়বারে একজন ইহুদী মহিলা একটি বিষমাখা ভেড়া রান্না করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে খেতে দেন। মহিলাটি জানত যে, তিনি উপহার গ্রহণ করেন। তাই সে ঐ ভেড়াটি উপহার দেয়। তিনি একটু খেয়ে খানা বন্ধ করেন এবং বলেন, আমার মনে হচ্ছে তা বিষাক্ত। এই বিষমাখা ভেড়ার গোশত খেয়ে একজন সাহাবী ইনতিকাল করেন। তার নাম হচ্ছে বিশর বিন বারা। রাসূলুল্লাহর (সাঃ) পরবর্তী জীবনে ঐ বিষের প্রতিক্রিয়া দেয়া দেয়। এমন কি মৃত্যুকালীন রোগে তিনি বিষের ক্রিয়া অনুভব করেন। তিনি তখন বিশর বিন বারার বোনকে বলেন, তোমার ভাইয়ের সাথে যে বিষাক্ত খানা খেয়েছি তার ফলে এখন আমার হৃদনালী কেটে গেছে বলে মনে হচ্ছে। সাহাবায়ে কেরামের মতে, তিনি ভেড়ার বিষক্রিয়ার ফলে সাধারণ মৃত্যু নয়, বরং শাহাদাত বরণ করেছেন। এছাড়াও ইহুদী যাদুকর লবীদ বিন আসেম যাদুর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু আল্লাহ তাদের সেই পরিকল্পনা নস্যাত করে দেন। কূপ থেকে যাদু আবিষ্কার করে তা নষ্ট করে দেয়া হয়। ইহুদীরা হচ্ছে এমন এক জাতি, যারা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ নবী-রাসূলদেরকে হত্যা করেছে এবং এ যাবত বিশ্বের সকল যুদ্ধ ও গোলযোগের পেছনে ইন্ধন যুগিয়ে যাচ্ছে। তারা হচ্ছে রক্তপিপাসু জাতি। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন :

    অর্থ : তারা যখন যুদ্ধের আগুন জ্বালায়, আল্লাহ তা নিভিয়ে দেন। তারা যমীনে বিশৃংখলা ও গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করে। আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদেরকে ভালবাসেন না। ইহুদীদের ঐ সকল ষড়যন্ত্র ইতিহাসের কাল অধ্যায়ে লিখিত আছে। রাসূলুল্লাহর (সাঃ) জীবদ্দশায় উল্লেখিত ইহুদী ষড়ন্ত্রের পর ইসলামী খেলাফতের সময়ও তাদের বিষাক্ত ছোবল অব্যাহত থাকে। প্রখ্যাত ইহুদী ষড়যন্ত্রকারী আবদুল্লাহ বিন সাবার প্ররোচনায় মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। যার ফলে, তাদের একটা অংশ হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু কে শহীদ করে। তাদের ষড়যন্ত্রের ফল হিসেবে হযরত আলীর পর ইসলামী খেলাফতের অবসান হয়। তুরস্কের ওসমানী খেলাফতের পতনের জন্য মাদহাত পাশা নামক ইহুদীর ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কামাল আতাতুর্ক ছিল ইহুদীদের প্রতিনিধি। তার হাতে উসমানী খেলাফতের অবসান হয়। অপরদিকে ইহুদী কালমার্ক্স ছিল কুফরী মতবাদের আবিষ্কর্তা। তার তৈরি সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের নির্যাতনে সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশে কোটি কোটি মুসলমান নিগৃহীত হয়েছে। এরপর ইহুদী বিজ্ঞানী ফ্রয়েড মানুষের মধ্যে পাশবিক চিন্তার উন্মেষ ঘটিয়ে ইসলামের মানবিক আদর্শকে চ্যালেঞ্জ করে। ইহুদী সমাজবিজ্ঞানী দূরকায়েম ইসলামের পারিবারিক প্রথার বিরুদ্ধে কলম ধরে সমাজে পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের সমাধি রচনা করতে চেয়েছে। ইহুদী প্রাচ্যবিদ গোল্ড সিহর ওরিয়েন্টালিজম বা প্রাচ্যবিদ্যার জন্ম দিয়ে ইসলামী আদর্শের ক্ষতির ভিত্তি তৈরী করেছে। ইহুদী সামইউল যুইমার মুসলিম বিশ্বে খৃস্টানদেরকে উস্কানি দিয়ে খৃস্টান মিশনারী তৎপরতা শুরু করায়। এর ফলে অনেক মুসলমান খৃস্টান ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। তার লক্ষ্য ছিল ৪ খৃস্টানদেরকে দিয়ে মুসলমানদেরকে শায়েস্তা করা। ইহুদী থিওডোর হার্জল ই হুদী রাষ্ট্র নামে একটা বই লিখে মধ্যপ্রাচ্য সংকট সৃষ্টি করেছে। সেই বইতে ইহুদী রাষ্ট্রের কল্পিত মানচিত্র অংকন করে ইহুদীদেরকে উৎসাহিত করেছে। তার মৃত্যুর পর ইসরাইল নামক যে রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা মুসলমানদের জন্য তথা বিশ্বের শান্তির জন্য হুমিকস্বরূপ।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকবিতাসংগ্রহ – উৎপলকুমার বসু
    Next Article মাই জার্নি : স্বপ্নকে বাস্তবতা প্রদান – এ পি জে আবদুল কালাম
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.