প্রতীক্ষিত মাসীহ সম্পর্কে খৃস্টানদের বিশ্বাস
বাইবেলের পুরাতন ও নতুন নিয়মে বিশ্বাসী খৃস্টানরা হাইকালকে পবিত্র মনে করে। তাদের দৃষ্টিতে খৃস্টবাদ হচ্ছে ইহুদীদেরই সম্প্রসারণ। তাই পুরাতন নিয়ম অর্থাৎ তাওরাত যেটাকে পবিত্র ঘোষণা করেছে, নতুন নিয়ম অর্থাৎ ইঞ্জিলের অনুসারীদেরও উচিত সেটাকে পবিত্র মনে করা। তারা আরো বিশ্বাস করে, হাইকাল পুনঃনির্মিত হলে, হযরত ঈসা মাসীহ আলাইহিস সালাম ২য় বার দুনিয়ায় আসবেন। তাই হাইকাল তৈরির উদ্দেশ্যে তারা ইহুদীদের সাথে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। তারাও মুসলমানদের মসজিদে আকসা এবং সাখবাকে ধ্বংস করে সে স্থানে হাইকাল নির্মিত হলে খুশি হয়। কেনান, তাদের ধারণা হচ্ছে, তখন ইহুদীরা খৃস্টধর্মে প্রবেশ করবে এবং সবাই খৃস্টান হয়ে যাবে। অথচ ইহুদীরা প্রথম থেকেই খৃস্টানদের জাতশত্রু। সে জন্য তারা ঈসাকে আলাইহিস সালাম শুলবিদ্ধ করে মারার ষড়যন্ত্র করে। তাদের ধারণা এই যে, তারা ঈসাকে আলাইহিস সালাম হত্যা করেছে। কিন্তু কুরআন বলছে, আল্লাহ ঈসাকে আলাইহিস সালাম ঐ ষড়যন্ত্র থেকে উদ্ধার করেছেন এবং তাঁকে তারা হত্যা করতে পারে নি।
উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে পার্থক্য হল, মসীহর আগমন ১ম না ২য় তা নিয়ে। কিন্তু মাসীহর আগমনের ব্যাপারে তাদের মধ্যে কোন মতপার্থক্য নেই। যাই হোক, খৃস্টানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, মাসীহর আগমনের আগে তিনটি বিষয় অবশ্যই ঘটবে। সেগুলো হচ্ছে- ১. ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, ২. জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী বানানো এবং ৩, হাইকাল পুনঃনির্মাণ করা। এগুলো হওয়ার পর মাসীহ ঈসার আগমন ঘটবে। একজন আমেরিকান লেখিকা বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ লক্ষ খৃস্টান প্রটেস্ট্যান্ট তাওরাতের বক্তব্যের আলোকে বিশ্বাস করে যে, দুনিয়ার সময় শেষ এবং মহাপ্রলয় নিকটবর্তী। এই প্রটেস্ট্যাদের নিজস্ব বেতার ও টেলিভিশন কেন্দ্র আছে এবং মার্কিন কংগ্রেসেও তাদের বহু সদস্য আছে। তারা এই বিশ্বাস অহরহ প্রচার করে বেড়াচ্ছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রের উন্নয়নে বিশ্বাসী। এমনকি তাদের দাবী আর্থিক সংকট থাকলেও বাজেটে পারমাণবিক কর্মসূচীর জন্য বিরাট বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। উদ্দেশ্য হল, এর মাধ্যমে মাসীহর আগমন সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা প্রমাণ করা অর্থাৎ উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হলে ঈসা মাসীহ আসবেন। এভাবে হারমাজদু দিবস উপস্থিত হবে। ঐ খৃস্টানদের দৃষ্টিতে, একটি চূড়ান্ত যুদ্ধ আসন্ন এবং তা মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে ফিলিস্তিনেই সংঘটিত হবে। তাদের ও ইহুদীদের লক্ষ্য এক ও অভিন্ন। ঐ খৃস্টানদের কিছু সংস্থা মুসলমানদের মসজিদে আকসা ও সারা ধ্বংস করে সেখানে হাইকাল নির্মাণের উদ্দেশ্যে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। মার্কিন মিশনারী ওয়েন বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি, ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং জেরুসালেমকে এর রাজধানী করার পর শুধুমাত্র হাইকাল পুনঃনির্মাণ বাকী আছে। এর ফলে, মাসীহ আলাইহিস সালাম এর আগমন ঘটবে। ইহুদীরা খৃস্টানদের সহযোগিতায় মুসলমানদের মসজিদে আকসা ভেঙে সেখানে হাইকাল তৈরি করবে। কেননা, ইঞ্জিল এ কথাই বলে। ইহুদী সন্ত্রাসবাদীরা মুসলমানদের পবিত্র স্থানকে উড়িয়ে দেবে এবং ধর্মযুদ্ধে অংশ গ্রণের জন্য মুসলমানদেরকে উস্কানি দেবে। এর ফলে মাসীহ আসবেন এবং তাতে হস্তক্ষেপ করবেন। আমরা বিশ্বাস করি যে, তৃতীয় হাইকাল নির্মিত হওয়া উচিত।” হারমাজদু বা মাজদু দিবসের প্রতি বিশ্বাস খৃস্টান ও ইহুদীদের যৌথ বিশ্বাস হল, ভাল ও মন্দ শক্তির মধ্যে একদিন সংঘর্ষ অনিবার্য। সেই দিনের সংঘর্ষ হবে, ইতিহাসের সর্ববৃহৎ সংঘর্ষ। ঐ সংঘর্ষ ফিলিস্তিনে সংঘটিত হবে যা তেলআবিব থেকে ৫৫ মাইল দূরে, হাইফা থেকে ২০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে এবং ভূ-মধ্যসাগরের তীর থেকে ১৫ মাইল দূরে অবস্থিত। ইহুদী এবং খৃস্টানদের একটা অংশ আরো বিশ্বাস করে যে, ২শ’ মিলিয়ন সৈন্য চূড়ান্ত লড়াইয়ে মাজদুতে হাজির হবে। মাজদুকে আরমাগেদ্দনও বলা হয়।
পবিত্র স্থান হাইকাল পুনঃনির্মাণ ও মাসীহর আগমন এবং মাজদু দিবসের ব্যাপারে ইঞ্জিলে বিশ্বাসী খৃস্টানদের ধারণা হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যে কখনও সঠিক শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। এমন কি মাসীহর আগমন ছাড়া বিশ্বের কোথাও শান্তি কায়েম হতে পারে না। তিনি আসার পর জেরুসালেমে হযরত দাউদের আসনে বসবেন এবং ইসরাইলের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন। মূলতঃ ইহুদী ও খৃস্টানরা তাওরাতে বর্ণিত ঐ ঘটনার প্রতি বিশ্বাসী। তালমুদ হারমাজদু যুদ্ধের বিষয়ে বলেছে, চূড়ান্তভাবে ইহুদী শাসন প্রতিষ্ঠার আগে তাদের সাথে অন্যান্য জাতির যুদ্ধ হবে। যার ফলে, বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ধ্বংস হয়ে যাবে। যুদ্ধে ইহুদীরা জয়ী হবে এবং জয়লাভ করার পর ৭ বছর ব্যাপী বিজিত অস্ত্রশস্ত্র জ্বালাবে। তখন বনি ইসরাইলের শত্রুদের দাঁত গজাবে এবং তা মুখ থেকে ২২ গজ পরিমাণ লম্বা হবে। প্রখ্যাত মার্কিন খৃস্টান পাদ্রী জিমি সুগার্ট, ১৯৮৫ খৃস্টাব্দের ২২ শে সেপ্টেম্বর, মাজদু দিবসের যুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এক টেলিভিশন ভাষণ দেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানও বিভিন্ন সময় একই মত প্রকাশ করেছেন। ১৯৮৫ সালে সান রিগো ম্যাগাজিন, ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যপ্রধান জেমস মিলসের এক প্রবন্ধ প্রকাশ করে। তাতে তিনি মাজদু দিবসের যুদ্ধ ও মাসীহর আগমন সম্পর্কে একই মতামত ব্যক্ত করেন।