Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আশাপূর্ণা দেবী – সাহিত্যের সেরা গল্প

    লেখক এক পাতা গল্প213 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    পূর্বরাগে রসনার স্থান – আশাপূর্ণা দেবী

    পূর্বরাগে রসনার স্থান

    কিছুদিন আগেও ভয়েল শাড়ীর চলন ছিল, এখন নাই। পয়সা দিয়া কেহই আর কিনিয়া পরে না।

    একদা যাহারা অনেক সাধে ও অনেক সাধনায় চড়া দাম দিয়া কিনিয়া ফেলিয়াছে, তাহারা এখন কাটিয়া কাটিয়া জানালার পর্দা অথবা খুকির ঘাগরা বানাইতেছে।

    ভালই করিয়াছে। ঘরের সৌষ্ঠব ও আর্থিক অপচয় উভয় দিকই রক্ষা হইয়াছে।

    বিবাহের চলন সেদিন পর্যন্ত ছিল; এখন নাই। ভদ্রলোকে কেহই আর বিবাহ করে না।

    কিন্তু একদা যাহারা (সাধে—বা সাধনায়) করিয়া ফেলিয়াছে—তাহাদের সমস্যা গুরুতর, ভয়েল শাড়ীর মত—সহজে মিটিবার নয়।

    হাইকোর্টের উকিল শৈলেন চৌধুরী কোর্ট-ফেরৎ তিন ঘণ্টাকাল এই চিন্তা-সাগরের অথই জলে হাবুডুবু খাইয়াও যখন কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে না পারিয়া মাথা গরম করিয়া ফেলিয়াছেন, উক্ত সাগরে তুমুল তোলপাড় তুলিয়া সামুদ্রিক ঝড়ের মত ঘরে ঢুকিল প্রিয় ভ্রাতুষ্পুত্র ফুলটুশ।

    ‘ঢুকিল’ না বলিয়া প্রবেশ করিল বলিলেই যেন তাহার কতকটা মর্যাদা রক্ষা হয়। দরজায় ধাক্কা মারিয়া, ঘরের সব কয়খানা চেয়ার কাৎ করিয়া, টেবিলটা হাত খানেক ঠেলিয়া দিয়া, তাহারই উপর জাঁকাইয়া বসিয়া অভিমানক্ষুব্ধ দ্রুত উচ্চারণে কহিল—ছোটকা, আমার বিষয় তোমরা তো কই কিছুই ভাবছো না দেখছি!

    উকিল কাকা, উত্তর পাইতে বিলম্ব হইবার কথা নয়; নিজের কেস মুলতুবি রাখিয়া সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেন—ভাবছি না; বলিস কি রে? এই তো সেদিন আশুর দাদাকে বলছিলাম—ওঁদের ওখানে যদি ছোটখাটো একটা লেকচারারের পোস্ট টোস্ট খালি থাকে—

    হাতের সামনে পাওয়া একটা উড পেন্সিলের মাথা নির্মমভাবে চিবাইতে চিবাইতে ফুলটুশ বিরক্তিপূর্ণ তাচ্ছিল্যে কহিল—ধেৎতারি তোমার আশুর দাদার নিকুচি করেছে, ভারি তো কলেজ—চেষ্টা করলে আমাদের কলেজেই একটা পেয়ে যেতে পারি।

    তবে আবার কি—আরাম চেয়ারের বক্ষে নিজের পিঠখানি পুনরায় ঢালিয়া দিয়া শৈলেন্দ্রনাথ নিশ্চিন্তভাবে কহেন—তাহ’লে আর ভাবনা কিসের?

    পেন্সিলটার জীবনলীলা নিতান্তই শেষ হইয়াছে, বেচারাকে দুই হাতের চাপে মট করিয়া ভাঙিয়া ফেলিয়া ফুলটুশ সরোষে কহিল—তাহ’লেই সব হয়ে গেল—যেন, চাকরী ছাড়া জগতে আর কিছু ভাববার নেই!

    ভাবিবার আবার নাই? যথেষ্ট আছে। কিন্তু—সরল বালক! সে তো তোমাদের জন্য নহে। যে অর্বাচীনেরা নিজের পায়ে কুড়ুল মারিয়া বসিয়া আছে, ভাবিয়া মরুক তাহারা।

    খুল্লভাত, ভ্রাতুষ্পুত্রের আরক্তিম মুখ ও দৃষ্টির প্রতি তীক্ষ্ণদৃষ্টি মেলিয়া বিস্মিতভাবে কহিলেন—তুই কি বলতে এসেছিস বল তো! চাস কি?

    যতটা বীরত্ব মনের মধ্যে সংগ্রহ করিয়া আসা হইয়াছিল কার্যক্ষেত্র তাহাকে আর খুঁজিয়া পাওয়া যায় না।

    —আমি অত বলতে পারবো না, ছোট খুড়িমাকে জিজ্ঞেস কোরো—বলিয়া, চেয়ার টেবিল, কোঁচার আগা, দরজার পাপোষ, সব কয়টায় মিলিয়া একটা লণ্ডভণ্ড কাণ্ড করিয়া আবেদনকারীর সবেগে প্রস্থান।

    শৈলেন্দ্রনাথ ভ্রাতুষ্পুত্রের মর্মবেদনার মর্ম একবিন্দুও অনুধাবন করিতে না পারিয়া হতাশভাবে তাকাইয়া থাকেন। সন্ধান করিলে হয়তো ঠোঁটের একপ্রান্তে একতিল হাসির আভাষ মিলিত।

    সুকুমার শিশু! যদি জানিতে—সেই পাষাণ-হৃদয়ার সহিত ছোটকাকার সুদীর্ঘ আটচল্লিশ ঘণ্টাকাল বাক্যালাপ বন্ধ।

    কিন্তু ব্যাপার কি? যাহার জন্য ছোটকার কাছেও ফুলটুশের চক্ষুলজ্জা! এমনটা তো হইবার কথা নয়।

    শ্লেটে রুল টানিয়া দেওয়া ও খাতা বাঁধাইয়া দেওয়া হইতে যে বাৎসল্য স্নেহের শুরু, তাহা আজও সমান আছে। স্কুলের ডিবেটিং ক্লাবের—অথবা সরস্বতী পূজার চাঁদা উচ্চহারে আদায় করিতে হইলে যে ছোটকার কাছে শরণ লওয়াই সর্বাপেক্ষা ফলপ্রসূ সেকথা এতটুকু বয়স হইতেই সে নিজের বুদ্ধিতে বুঝিয়া লইয়াছে।

    গুরুজন-নিষিদ্ধ ডানপিটেমী, খেলাধুলা ইত্যাদির জন্য পারমিশান আদায় করিতে হইলেও ছোটকাকে উকিল নিয়োগ করতে হইত। শখ মিটানোর ব্যয়ভার বহন করিতেই বা ছোটকা ছাড়া গতি কি! চক্ষুলজ্জার বালাই তো কোনো কালেই ছিল না।

    বসিয়া বসিয়া অস্বস্তি হইতে থাকে। নাঃ, অনুসন্ধান আবশ্যক।

    মন্দই বা কি? এই সুযোগে মানভঞ্জনের পালাটাও—।

    কিন্তু চিরাচরিত প্রথায় আড়ম্বরের প্রয়োজন নাই। যেন কিছুই হয় নাই, যেন এইমাত্র গল্প করিয়া আসা হইয়াছে।

    হ্যাঁ, তাই ভাল। যে কথা সেই কাজ—

    আরাম চেয়ারের স্নেহময় বক্ষ ত্যাগ করিয়া অন্তঃপুরাভিমুখে গমন।

    বারে বারে নিজের সম্মান হানি করিবার ইচ্ছা আদৌ ছিল না। দর্পময়ীর দর্প কতদিন অটুট থাকে দেখা যাইতো, কিন্তু ফুলটুশের বিষয় একটা কিনারা করাও দরকার বৈকি! তা ছাড়া আশাসূত্র ক্রমেই ক্ষীণ হইয়া আসিতেছে।

    এই তো—শৈলেন্দ্রনাথ মনের এরূপ শোচনীয় অবস্থায় কোনো প্রকারেই সহজ হইতে পারেন না।

    বড়দা’ সকালে উদ্বিগ্নমুখে তাহার শুষ্কমুখ সম্বন্ধে প্রশ্ন করিয়াছেন, বড়বৌদি নিদ্রাল্পতার খোঁটা দিয়া নেপথ্যে তাহার উত্তর জোগাইয়াছেন। বাহিরে বন্ধুবান্ধব পর্যন্ত তাহার সুস্থতায় সন্দেহ প্রকাশ করিয়াছে।

    অন্নে রুচি নাই, শয্যায় আকর্ষণ নাই, উৎকট একটা অবস্থা।

    অথচ সকল অনর্থের মূল, দিব্য খোস মেজাজে পাড়ার একপাল মেয়ে জুটাইয়া সন্ধ্যা হইতে জমকালো তাসের আড্ডা বসাইয়াছে, যে দেখিয়া সর্বাঙ্গে জ্বালা ধরে। ক্ষণে ক্ষণে তীব্র হাসির আওয়াজ বুকে আসিয়া ছুরির মত বিঁধিতে থাকে। তাহাকেই আবার সাধিতে যাওয়া! নাঃ, ফুলটুশটা আচ্ছা বিপদে ফেলিয়া গেল।

    তাসের আড্ডা সেইমাত্র ভাঙিয়াছে, খেলুড়িগণ স্বস্থানে প্রস্থান করিয়াছে, শুধু ‘অনর্থের মূল’ নিবিষ্টচিত্তে তাসগুলি গুছাইয়া তুলিতেছে।

    শৈলেন্দ্রনাথ আসিয়া ব্যস্তভাবে দ্রুতগতিতে বলেন—এই যে লীলা, রয়েছ এখানে, ওকি, ঘোমটা ফোমটা টানা-টানি করছো কেন? দাদা নয়—আমি, হ্যাঁ ফুলটুশ তোমার কাছে বলেছে কিছু? আমাকে যে কি বললে না বললে বুঝতেই পারলাম না; শেষ অবধি তোমার কাছে জেনে নিতে বলে’ চম্পট দিলে। তুমি জানো কিছু কি চায় ও?

    শৈলেন্দ্রনাথ দম ফেলেন। একদমে অনেকগুলো কথা কহিলে যেন যাচিয়া কথা কহার লজ্জা কতকটা বাঁচে।

    ঘোমটাধারিণীর অবস্থাও বোধ হয় ‘এইবার ডাকিলেই খাইতে যাইব গোছ’—মাথা নাড়িয়া সায় দেয়—জানি।

    হাতে স্বর্গ পান শৈলেন চৌধুরী।

    জানো! কি বলতো? টাকা-কড়ির কিছু—

    উঁহু—ঘোমটা সরাইয়া ফিক করিয়া হাসি—ও বিয়ে করতে চায়।

    বিবাহ করিতে! ফুলটুশ! বিদ্যান-বুদ্ধিসম্পন্ন সুস্থ মস্তিষ্ক ভদ্রসন্তান! পাগল হইল—না ক্ষেপিয়া গেল!

    বল কি—শৈলেন্দ্রনাথ অবিশ্বাসের স্বরে প্রশ্ন করেন।

    আকাশ থেকে পড়ছো কেন! বিয়ে করে না মানুষে?

    মানুষে! হ্যাঁ—তা আগে কোরতো বটে, এখন আর কই করে!

    ভা—রী সেকেলে হয়ে গেছে না?

    হোক সেকেলে—ওর যদি শখ হয় কি বলবার আছে!

    সত্য বটে, কাহারও যদি নিজের ছাগল ল্যাজে কাটিবার শখ হয় বলিবার কি আছে!

    শেষ চেষ্টার মত বলেন শৈলেন্দ্রনাথ—কিন্তু এই যুদ্ধের বাজারে—কী কাণ্ডটাই হচ্ছে চাদ্দিকে—ধরো যে কোনো মুহূর্তে বোমা পড়তে পারে মাথায়; রোজ লক্ষ লক্ষ লোক মারা যাচ্ছে—হাজার হাজার—

    লীলা বাধা দিয়া বলে—রোজ লক্ষ লক্ষ লোক সিনেমাও দেখছে তার সঙ্গে, হাজার হাজার টাকার সিগারেট খেয়ে পোড়াচ্ছে—যুদ্ধের খাতিরে কি বন্ধ আছে শুনি? বিয়ে করলেই যত দোষ!

    না, দোষ আর কি—সনিঃশ্বাসে শৈলেন চৌধুরী উত্তর দেন প্রিয় ভ্রাতুষ্পুত্রের শোচনীয় অধঃপতনে মর্মাহত চিত্তে—তা’ মেয়ে টেয়ে খোঁজ একটা!

    খুঁজতে হবে না—মেয়ে আছে।

    কী সর্বনাশ, প্রেমঘটিত ব্যাপার নহে তো—শৈলেন্দ্রনাথ চমকিয়া ওঠেন স্পষ্ট—কই মেয়ে!

    ‘মৌটুসী’। লীলা উত্তর দেয়।

    মৌটুসী! সে কি জিনিস!

    হাসিয়া গড়াইয়া পড়ে লীলা, সযত্নরক্ষিত গাম্ভীর্যের বাঁধ আর থাকে না—জিনিস কি গো মেয়ে! রজনীবাবুর ছোট মেয়ে চব্বিশ ঘণ্টাই তো আসে, দেখতে পাও না! এই তো এতক্ষণ তাস খেলছিল।

    বটে, রজনীবাবুর ওই কেলে মেয়েটা? কেন আর মেয়ে নেই বাজারে?

    লীলা পরম অমায়িকভাবে বলে—’কেলে’ তা’ বলে’ নয়—তবে ফরসা বলা চলে না এই যা, তা’ সকলেই কি ফরসা হয়!—সঙ্গে সঙ্গে হয়তো বা অজ্ঞাতসারেই নিজের হাত দুইখানির উপর গর্বমিশ্রিত বিনীত দৃষ্টিপাত।

    ‘শত্রুর শেষ রাখিতে নাই’—শৈলেন্দ্রনাথ বিবেচনা করেন, এই সুযোগে মানের গোড়া নির্মূল করিয়া ফেলাই ভাল। বিনয়ের অবতার হইয়া বলেন—বাড়ীর প্রথম বৌ, তোমাদের কাছে এসে দাঁড়াবার যোগ্য হওয়া চাই তো—

    নাঃ, আর কোনো গলদ নাই, লীলা এইবার যে হাসে, সম্পূর্ণ নির্মল সতৃপ্ত হাসি—তোমার যেমন কথা, সবাই বুঝি সমান হয়, তা’হলে জগৎ সুদ্ধু সকলে উকিল হ’ল না কেন?

    ভাগ্যে হয়নি—শৈলেন চৌধুরী অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিপাত করেন—এই সব চব্বিশঘণ্টা আসা-আসি—প্রেমট্রেম কিছু নয় তো!

    পাগল হয়েছো, একতিল তো খুনসুড়ি ছাড়া দেখি না। এ ওকে ‘মৌটুসী’র বদলে ‘রাক্ষুসী’ বলে’ ক্ষ্যাপাবে—ও একে ফুলটুশ না বলে’ বলবে ‘দুরমুস’—ছুতোয়-নাতায় ঝগড়া। ভাবের মধ্যে দেখি ধাঁধার উত্তর বের করবার সময়।

    ধাঁধার উত্তর?—সে কি!

    ওই যে এখন যত রাজ্যের সব ‘শব্দশৃঙ্খল’ না কি হয়েছে তাই জোগাড় করে’ করে’ আনছে—আর আহার নিদ্রা ত্যাগ করে’ দু’জনে এক মনে, এক ধ্যানে তার সমাধান করছে। এমনই চিন্তাকুল ভাব কী যেন পরীক্ষার পড়া তৈরি হচ্ছে। হাসি পায়।

    শৈলেন্দ্রনাথ বিজ্ঞ উকিল জনোচিত মুখে মৃদু মৃদু মাথা নাড়িতেছিলেন, এইবার বলেন, কেসটা অনেকটা বোধগম্য হ’লো, তোমার প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে—উভয়পক্ষে বনিবনা বা সদ্ভাবের একান্ত অভাব, সর্বদা কলহ, মতবিরোধ, সম্ভাষণ—’দুরমুস ও রাক্ষসী’, কেমন! আচ্ছা, এই পর্যন্ত বেশ সরল, কিন্তু এর মধ্যে বিয়ে করবার ইচ্ছের মত জটিল ব্যাপার আসে কোথা থেকে! ভাবিয়ে তুললে—তোমার গিয়ে, কি বলে ওর নাম—’চাটনীতে গরম মসলার মত’ বড় বেখাপ্পা লাগছে না? হঠাৎ কবে কি সূত্রে ইচ্ছেটা প্রকাশ পেলো বল দেখি!

    লীলা সংক্ষিপ্ত ভাষায় প্রাঞ্জল বুঝাইয়া দিবার আর্ট জানে। এককথায় বলে, মৌটুসী ফুলটুশকে জিভ ভেঙিয়েছে—

    শৈলেন চৌধুরী বটতলার উকিল নয়, দস্তুরমত হাইকোর্টের উকিল—কার্যকারণ সম্বন্ধ-নির্ণয় করাই তাঁহার পেশা; কিন্তু জিভ ভেঙচানো ও প্রেমে পড়ার মধ্যে কোনো যোগসূত্র যত ক্ষীণ হোক আবিষ্কার করিতে সক্ষম হইলেন না। ক্লান্তভাবে দেয়ালে মাথা হেলাইয়া ভাবেন। ভাবিতেই থাকেন।

    লীলা ভারী কৌতুক অনুভব করে। হাসিয়া বলে, ভেবে আকুল হ’লে যে! ওদের সেই ‘শব্দশৃঙ্খলে’র কি একটা কথায় দু’জনের বুঝি মতে মেলে নি; ফুলু ওকে ‘মাথায় গোবর ভরা’ বলে ভেঙিয়েছে, মৌটুসী কিছুই না বলে শুধু জিভ ভেঙিয়েছে।

    এতেই আমাদের ফুলুবাবুর দৃঢ় সংকল্প ‘রাক্ষুসী’কে জব্দ করে ছাড়বেন! তা’ পরের মেয়েকে কি করে’ জব্দ করে বল! নিজের কোটে পেলে—

    শৈলেন্দ্রনাথ কপালে ডান হাতখানি ঠেকাইয়া ক্ষুব্ধস্বরে বলেন, হায়, সংসার-কাণ্ডজ্ঞানহীন সরল যুবক! যদি জানতে তোমার ধারণা কতদূর ভ্রমাত্মক—

    লীলা দুই চোখ কপালে তুলিয়া বলে, তার মানে আমরাই তোমাদের দিনরাত জব্দ করি, না?

    আরে আরে পাগল নাকি! কে বলেছে সে কথা—

    আসন্ন রাত্রিকালে—সদ্যস্থাপিত সন্ধিসূত্র ছিঁড়িয়া ফেলিবার মত মূর্খ নহেন শৈলেন্দ্রনাথ, সবিনয়ে বলেন, কী যে বলো! শোনো, দেখো—এখানে তো এখুনি কেউ আসবে না?

    লীলা অভিপ্রায়টা বুঝিতে পারে। আসবেই তো, ওই যে বটঠাকুর আসছেন—বলিয়া দুষ্টু হাসি হাসিয়া সরিয়া পড়ে।

    তা পড়ুক, শৈলেন্দ্রনাথ তাহাতে দুঃখিত নহেন, ধৈর্য ধরিতে জানেন ভদ্রলোক।

    ভাবিতে থাকেন ফুলটুশের জন্য! ভদ্রলোকরা যখন বিবাহ করা প্রায় ছাড়িয়া দিয়াছে, ফ্যাসান নাই বলিলেই চলে—তাহার এ দুর্মতি কেন! বিশেষতঃ এই যুদ্ধের বাজারে—

    তাই যদি প্রেমের খাতির হইত! জব্দ করিবার জন্য বিবাহ করা! একটা ‘কেলে’ মেয়েকে! কিন্তু ভবিষ্যতে?

    নামের মিল থাকিলে যে প্রাণের মিল অনিবার্য এমন কি কথা?

    লাইব্রেরী ঘরে টেবিলময় মোটা মোটা আইন পুস্তক ছড়াইয়া শৈলেন চৌধুরী এক মনে খবরের কাগজের পাতা উল্টাইতেছেন; ছোট্ট একটি মাথা দেখা গেল দরজার ফাঁকে—

    একবার, দুইবার, মাথা হইতে আকণ্ঠ, অবশেষে কণ্ঠস্বর—ছোটকাকা, বাংলা অভিধানখানা দিন না একবার।

    শৈলেন্দ্রনাথ চমকিয়া তাকান, কে রে!

    রজনীবাবুর ছোটমেয়ে। নামটা মনে রাখা দায়।

    আমি! বাংলা অভিধানটা নেবো একবারটি।

    বাংলা অভিধান? তাই তো—শৈলেন্দ্রনাথ ব্যস্ত হইয়া ওঠেন, আমি তো ঠিক জানি না, ফুলটুশ রাখে টাখে, তাকে জিগ্যেস—

    আমি জানি, ওই যে বড় আলমারীর মাথায়, পেড়ে দিন না, হাত যায় না আমার।

    বেশ বোঝা গেল প্রার্থনাকারিণীর এটা নূতন ব্যাপার নহে, হয়তো ঘরে দ্বিতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি না থাকিলে চেয়ার অথবা টেবিলের দ্বারা দৈর্ঘ্যের ত্রুটি পূরণ করিয়া লওয়া চলিত।

    তবে ছোটকাকা নামক ব্যক্তিকে সে বরাবরই এড়াইয়া চলে, নিতান্ত বাধ্য হইয়াই আসিয়াছে, হাতে সেই ‘শব্দশৃঙ্খল’ সম্বলিত কাগজ; সমাধান সহকারীর সহিত বিরোধই এর একমাত্র কারণ।

    ফুলটুশই শত্রুপক্ষের অসুবিধা ঘটাইবার নিমিত্ত অভিধানখানা আলমারীর মাথায় তুলিয়া রাখিয়া গিয়াছে।

    মোটা বইখানা দুই হাতে বাগাইয়া ধরিয়া মৌটুসী ভিতরের দালানে পা মেলিয়া বসে।

    অপর পক্ষ যে কাড়িয়া লইতেও পারে—এ ভয় আছে হয়তো। পর্বতের আড়ালে থাকা মন্দ নয়।

    কিছুক্ষণ পরেই বোধ করি দৈবক্রমেই সেই অবাঞ্ছিত শত্রুপক্ষ আসিয়া উপস্থিত হয়।

    এই যে, বইটি বাগানো হয়েছে? হ্যাংলা আর কাকে বলে—এত অপমানের পরও বই নেয়! ছিঃ।

    মৌটুসী চোখ পাকাইয়া বলে—ফের তুমি লাগতে এসেছ? তোমার কাছে চেয়েছি বই?

    শৈলেন চৌধুরী খবরের কাগজখানা মুখের উপর আড়াল করিয়া ধরেন।

    ফুলটুশ নিতান্ত অবহেলা ভরে তাহার হাতের কাগজটার উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া বলে—কি, সেইটা নিয়ে এখনো ঘোল খাচ্ছিস, গোবর-ভরা মাথা কিনা! আমার তো কবে হয়ে গেছে!

    মৌটুসী দস্তুরমত চঞ্চল হইয়া ওঠে, কিন্তু সহজে খেলো হওয়া যায় না তো! পাল্টা অবহেলার স্বরে বলে, অমনি হয়ে গেছে—বললেই হল। কই, উনিশের পাশাপাশি কি হবে শুনি? ”উপহাস—না উপবাস”।

    এর আবার ভাববার আছে কি? ফুলটুশ বলে—উপহাস—উপহাস—”অনেকের যা সহ্য হয় না”—যেমন তোর।

    বেশ হয় না তো হয় না! ভারী তো বুদ্ধির বড়াই হচ্ছে—এইটা কি হবে বলতে পারো তো বুঝি। এই যে রয়েছে ”স্ত্রীলোকেরা ইহাতে সবিশেষ পটু”, একটা মোটে অক্ষর তো দেওয়া আছে—পারতে আর হয় না।

    ফুলটুশ মুখচোখের ভঙ্গিতে যতদূর সম্ভব অবজ্ঞা ফুটাইয়া বলে, ওটা? ওটা তো ‘কলহ’—এও জানিস না? স্ত্রীলোকেরা যাতে সবিশেষ পটু? ওই বলে’ বলে’ সব জেনে নিচ্ছে রে! হ্যাংলা কোথাকার।

    যৎপরোনাস্তি ত্রুদ্ধ হইয়া ওঠে বেচারা, তীব্রকণ্ঠে কহে, খালি খালি হ্যাংলা বলবে না বলছি, কথা বন্ধ করে’ সেধে সেধে যারা কথা কইতে আসে তাদের কি বলে শুনি! (খবরের কাগজের আড়ালে কর্ণযুগল লাল হইয়া ওঠে) কি বলে দেখাচ্ছি রোস অভিধান খুলে—

    ওই অভিধানই দেখ বসে’ বসে’, মগজে তো গোময় ছাড়া কিচ্ছুটি নেই। উত্তর দেয় ফুলটুশ।

    সঙ্গে সঙ্গে মৌটুসী—হ্যাঁ এটা বোধ করি তাহার মুদ্রাদোষ, কারণে অকারণে, মুহূর্তের জন্য রসনার অগ্রভাগটুকু বাহিরের আলোয় আনিয়া ফেলা।

    এসব ছেলেমানুষী কাণ্ড অবশ্য দেখিবার কথা নয়, হাজার হোক শৈলেন চৌধুরীর একটা পোজিশন আছে তো!

    কিন্তু চোখে পড়িয়া গেলে কি করা যায়!

    খবরের কাগজ হাওয়ায় এলোমেলো হইতে থাকিলে কাহার দোষ!

    কিন্তু—

    এই সুযোগে দ্রুত আর আকস্মিক একটা জটিল সমস্যার মীমাংসা হইয়া যায়।

    মধ্যে মধ্যে বাংলা প্রবন্ধ লেখার অভ্যাস আছে শৈলেন চৌধুরীর—শীঘ্রই, ‘প্রেম রাজ্যে রসনার স্থান” সম্বন্ধে একটি মৌলিক গবেষণাপূর্ণ সুচিন্তিত প্রবন্ধ লিখিবেন বলিয়া স্থির করেন।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসেপিয়েন্স: এ ব্রিফ হিস্টোরি অফ হিউম্যানকাইন্ড – ইউভাল নোয়া হারারি
    Next Article ১০টি কিশোর উপন্যাস – আশাপূর্ণা দেবী

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }