Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আশাপূর্ণা দেবী – সাহিত্যের সেরা গল্প

    লেখক এক পাতা গল্প213 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    দেবাঃ ন জানন্তি – আশাপূর্ণা দেবী

    দেবাঃ ন জানন্তি

    সিঁড়িতে উঠতে উঠতেই চিঠিখানা প্রায় শেষ করে আনেন ভদ্রলোক। অনেকটা লোভী ছেলেরা যেমন মিষ্টান্ন হাতে পড়লেই গলাধঃকরণ করে বাঁচে।

    আমাদের ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের বর্তমান অবস্থাটা লোভী ছেলের মতো হলেও, পরে ‘হায় ফুরিয়ে গেল’ বলে আক্ষেপ করবার কারণ নেই। একবার চোখ বুলিয়ে নিয়েই সিঁড়ির পাশে ফেলে দেওয়ার মতো চিঠি এ নয়। দুবার পড়া চলে! দুশোবার পড়লেই বা কে আটকায়।

    সিঁড়িতে উঠতে উঠতে তাড়াতাড়ি চোখ বুলিয়ে নেওয়াটা চিত্ত-চাঞ্চল্যকে কিছু প্রশমিত করে আনা মাত্র।

    পর্দায় ছবি ফোটবার আগে আখ্যানভাগটুকু জেনে নিলে কি ছবির নূতনত্ব হ্রাস পায়? কমে যায় কিছু? অতএব ইঞ্জিনিয়ার সাহেব ঘরে এসে ভৃত্যের সাহায্যে বাইরে ব্যবহৃত বাড়তি পোশাকগুলো টান মেরে ফেলে দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যকর পোশাকের মধ্যে প্রবিষ্ট হন। পাখার রেগুলেটারটাকে শেষ পর্যন্ত ঠেলে দেন, ধীরে-সুস্থে একখানা আরামকেদারায় বসে নূতন উৎসাহে পড়া চিঠিখানা চোখের সামনে মেলে ধরেন।

    চিঠিখানা বিস্ময়কর, অপ্রত্যাশিত। একেবারেই পাওয়ার কথা ছিল না। কালই তো এসেছে একটা। চার পৃষ্ঠা ব্যাপী সুললিত চিঠির মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা পরেই কার এত আশা থাকে আরো সাত পৃষ্ঠার জন্যে?

    কিন্তু চমৎকার চিঠি লেখে চিত্রা। ভাবের উচ্ছ্বাসে ফেনিয়ে তোলা প্রচলিত প্রেমপত্র নয়, সহজ স্বচ্ছ অনাড়ম্বর মনোনিবেদন। চিঠির ভিতরে ও যেন মুখোমুখি বসে কথা বলে। লাইনের ফাঁকে ফাঁকে যেন উঁকি মারে ওর কৌতুকোজ্জ্বল মুখখানি।

    টুকরো টুকরো ছোট ছোট দু’চারটে খবর…সরস করে বলা অবান্তর সব কথা। চিত্রাদের কলেজ লাইব্রেরিতে না কি রবীন্দ্রনাথের একটি ফুলসাইজ ফটো টাঙানো হয়েছে…… রবীন্দ্র স্মৃতিরক্ষা সম্বন্ধে একটি প্রস্তাব তোলা হয়েছে মেয়েদের মধ্যে, সেই বিষয়ে কিছু আলোচনা আছে বিকেল পাঁচটায়, যথাসময়ে উপস্থিত না হলেই নয়।……নূতন যে লেকচারার ভদ্রলোক এসেছেন তার সদাবিব্রত মেয়েলী ভাবটা কি রকম কৌতুকাবহ, চিত্রার প্রতি প্রফেসর এম. তালুকদারের পক্ষপাতিত্ব নিয়ে মেয়েরা জ্বালিয়ে মারছে তাকে! আসল খবরটার খবর কেউ রাকে না কি না! বলে দেবে না কি চিত্রা? জানিয়ে দেবে সকলকে মনের গোপন কথাটা? দূর ছাই; ভারী দায় পড়েছে—মরুক ওরা, করুক যত খুশি ঠাট্টা, যত পারে। চিত্রা ও সবের মধ্যে নেই।

    সত্যি, কাল কলেজ থেকে ফিরে পর্যন্ত মনটা বেজায় খারাপ হয়ে আছে, কিচ্ছুটি ভালো লাগছে না। আচ্ছা, এত পড়েই বা কি হবে বলতো? কি যে ঝোঁক তুমিই জানো, এম এসসি পাস করেনি অথচ বিয়ে করেছে এ রকম মেয়ের দৃষ্টান্ত দুর্লভ নয়। অনেক নজীর আছে আমার কাছে, বুঝেছ? তোমার কি মনে হয় সেই সব ফিজিক্স কেমিস্ট্রি জ্ঞানশূন্য বৌদের নিয়ে বেচারা স্বামীদের জীবন দুর্বহ? তোমার রয়েছে অর্ডার—ফার্স্ট ক্লাশ ফার্স্টের জন্যে, কিন্তু শুনলে হয়তো চমকেই উঠবে তুমি, সেই লোভনীয় পাকা ফলটির ওপর তিলমাত্র মোহ নেই আমার। লাস্ট ক্লাশ লাস্ট হলেও ক্ষুণ্ণ হব না। নির্বেদ অবস্থা। হাসছ? হাসো যত খুশি, সত্যি কথা স্বীকার করবার মতো সৎসাহস আমার আছে। তুমি এখানে থাকতে শুকনো পুঁথির পাতা চিবিয়ে যে পরিমাণ উৎসাহ বোধ করতাম সেটা আর পাচ্ছি না। সবই যেন কেমন নীরস অর্থহীন। আর অর্থ কি সত্যিই কিছু আছে? বয়স বাড়ছে, পরমায়ু কমছে, শুভক্ষণকে ঠেকিয়ে রেখে লাভ কি? মেয়েদের স্বভাবগত লজ্জাশীলতা ত্যাগ করে বলতে বাধ্য হচ্ছি তোমায়,স্পষ্টই বলছি ছুটির দরখাস্ত কর! ভালো লাগে না আর এত দূরে পড়ে থাকতে। ন’শো সাতান্ন মাইলের ব্যবধান উঃ। রামগিরি পর্বত থেকে অলকাপুরী কতদূর ছিল? এর চাইতে বেশি কি?

    কোন রঙের গাড়ি পছন্দ আমার জানতে চেয়েছ কেন? আবার বদলাচ্ছ না কি? এই তো কিনলে সেদিন। আমার পছন্দমাফিক কিনে হবেই বা কি? আমার চরণস্পর্শে ধন্য হওয়া পর্যন্ত টিঁকবে তো গাড়িটা? হয়তো তার আগেই বেচারার অন্ন উঠবে তোমার কাছ থেকে।

    তোমার ‘ইনোসেন্ট গার্ল’ কোকিলাবাঈয়ের খবর কি? এবারের চিঠিখানার অর্ধেকটাই তো সেই ‘হরিণ শিশুর মতো সরল চঞ্চল আশ্চর্য মেয়েটির’ কথায় ভরিয়েছ। বয়সটা সত্যিই দশ বারো, না কি? সন্দেহ হয় যে। চুপি চুপি বলব একটা কথা? আসল ব্যাপারটা হচ্ছে, প্রকৃতির রাজ্যে অনিয়ম নেই। আইনকানুন কড়া। আমরা মানতে না চাইলেও সে তার খাজনা আদায় করে নেবেই ঠিক সময়।

    বয়সের গুণে বাৎসল্য রসের সঞ্চার হয়েছে, অস্বীকার করে এড়িয়ে যাবার উপায় নেই সে কথা, এবং এটাও ঠিক, যথাসময়ে, অর্থাৎ আমাদের বাবা মা-র আমল মাফিক ‘যথাসময়ে’ যথাকর্তব্যটা সেরে রাখলে এতদিনে দশ-বারো না হোক সাত-আট বছরের মেয়ে একটা তোমারই থাকতে পারত। পারত না? কি বল?

    যাকগে বাজে কথা। এবার কলম রেখে বীণাপাণিকে উঠতে হয়। পাঁচটায় সভা বসবে বলেছে, সাড়ে চারটে তো বাজল প্রায়, কি যে করি! ছুটোছুটি করা পোষায় না আর। হাসির কথা জানো, মেয়েগুলো আমাকে এক বক্তা ঠাউরে বসে আছে। কী মুশকিল বল তো? রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে কি-ই বা বলতে পারি আমি? কতটুকুই বা বলব? ক্ষমতা কোথায়? সাহসই বা কই? এরা কিন্তু নাছোড়। যাকগে, উঠি তো।

    ছুটির ব্যবস্থা করতে ভুলো না কিন্তু, দেরি করলে বারবার বলব না তা’বলে।

    ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের ভাবসমুদ্রে একটি বড়গোছের ঢিল পড়ল।

    খোলা চিঠির ওপর একটি পাতাসুদ্ধ গোলাপ এসে পড়েছে জানালার পথে। কে? কার কাজ? কার এত সাহস হওয়া সম্ভব? কোকিলা ভিন্ন? কোকিলাই একমাত্র পারে এমন, যখন তখন ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের ঘরে এসে হানা দিতে। বাপের ওপরওয়ালার ঘরে।

    যদিও কোকিলা বাঙলা ভাষায় অনভিজ্ঞা এবং সাহেব গুজরাটি ভাষায় অজ্ঞ, তথাপি এই দুটি অসমবয়সী বন্ধুর মধ্যে অসুবিধাকর কিছু নেই। ভাঙা হিন্দি ও আধা ইংরেজি দিয়েই যথেষ্ট কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়। আর যে রকম মহোৎসাহে ভাষা শিক্ষার আদানপ্রদান চলছে, ব্যবধান বেশিদিন থাকবে বলে মনেও হয় না।

    ওভারসিয়ার লোকটা ভালোমানুষ, মেয়ের এই যথেচ্ছ গতিবিধিতে শঙ্কিত হয়, তিরস্কার করে, কিন্তু তিরস্কারে কে কবে আকাশের পাখির গতিরোধ করতে পেরেছে?

    ‘সাহাবে’র ঘরে আকর্ষণ কত? সারা পৃথিবীর খবর আসে তাঁর ঘরে বেতার যন্ত্রের তার বেয়ে, গ্রামোফোনের নিত্য নূতন রেকর্ড আসে, ভালো ভালো ছবির বই আসে, আর আসে স্নেহের প্রশ্রয়, টফি চকোলেট লজেন্স বিস্কিট প্রভৃতি রসনা-তৃপ্তিকর বস্তুর মূর্তি ধরে।

    অতএব?

    ফুলটা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে গুপ্তসাহেব মুহূর্তের জন্যে একবার চমকে ওঠেন, পরক্ষণেই নিশ্চিত সুরে বলেন, এই কোকিলা?

    ঘাড় গুঁজে হাসি চাপতে চাপতে কেকিলাবাঈ এসে হাজির হয়, আর প্রায় পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে আরো গুটিকয়েক ফুল ফুলদানিতে সাজাতে থাকে।

    চমৎকার গোলাপ ফুল ফোটে ওদের বাড়িতে, এ বাড়িতে তার সৌরভ এসে পৌঁছায় প্রায় রোজই।

    চিঠির শেষটুকু মুলতুবি রেখে গুপ্তসাহেব নবাগতা বান্ধবীটিকে আপ্যায়ন করে বসান, আর উঠে গিয়ে আলনায় ঝোলানো সদ্য পরিত্যক্ত কোটটার পকেট থেকে মূর্তিমতী আপ্যায়নকে বাইরে টেনে এনে তার হাতে সমর্পণ করেন।

    রসনার কাজ দুটি, কথা বলা আর খাওয়া, একসঙ্গে দুটোই চালাতে পারলে জমে মন্দ নয়। অতএব আলাপটা ভালোই জমল বলা যায়। যদিও কথাবার্তা চলছিল কতকটা উভয়পক্ষের নবলব্ধ জ্ঞানের সাহায্যে আর বাকিটা ইংরেজিতে তবুও বাঙলায় অনুবাদ করে নেওয়া ভালো।

    ওরা ব্যাকরণের ওপর যথেচ্ছ অত্যাচার করতে পারে, চোখ রাঙাবার কেউ নেই। লেখকের পক্ষেই মুশকিল। লেখক হতে হলে অবশ্য সর্বজ্ঞ হওয়াই রীতি, কিন্তু তাই বলে তার গুজরাটি ভাষায় দখল থাকবে অথবা ভেবেচিন্তে ভুল ভুল বাঙলা লিখতে হবে তাকে এতটা আশা করা অবিচার নয় কি? আবার ভুল ধরে চোখ রাঙাতে গেলেও লোকে ছাড়ে না!

    কাজেই লেখকের শ্রম বাঁচাতে আর পাঠকের সুবিধার্থে গুপ্তসাহেব গুজরাটি বালিকাকে পরিষ্কার বাঙলায় প্রশ্ন করেন, কাল আসনি যে?

    তদুত্তরে নিখুঁত বাঙলায় উত্তর আসে, কাল মামার বাড়ি গিয়েছিলাম। মামা আসতে দিল না, দিদিমা মানা করল। আজ সকালে এলাম।

    ও, মামার বাড়ির আদর খেতে যাওয়া হয়েছিল? বেশ বেশ। কি খেলে মামার বাড়ি?

    প্রকাণ্ড এক হাতি, ইয়া বড় এক ঘোড়া।

    বটে না কি? দুষ্টু মেয়ে, ইয়া বড় এক সায়েবের সঙ্গে ঠাট্টা? এর শাস্তি কি জানো?

    কি জানি। বোধ হয় কানমলা।

    উঁহু হল না। ওঠ, যাও, ওই চেয়ারটায় বস গিয়ে—আঙুল দিয়ে পিয়ানোটা দেখিয়ে দেন ভদ্রলোক। হাসতে হাসতে তীরবেগে উঠে যায় মেয়েটা, বাদ্য-যন্ত্রটার উপর যথেচ্ছ নির্দয়তা শুরু করে দেয়। জ্বালাতন করবার এই একটা নিজস্ব প্রথা আছে ওর।

    আঃ কোকিলা কি হচ্ছে? ভাঙবে বাজনাটা? জিনিসের মালিক এরপরে আস্ত রাখবে না তোমায়।

    মুহূর্তের জন্যে ললিতকলার চর্চা স্থগিত রেখে সন্দিগ্ধ প্রশ্ন করে কোকিলা, কে মালিক?

    কেন, আমার বৌ?

    ও, বৌ?

    এর পর এত অপর্যাপ্ত হাসতে থাকে মেয়েটা, যা কেবল তার দ্বারাই সম্ভব। যেন ‘বৌ কথাটা নিতান্তই হাস্যকর, অসম্ভাব্য’।

    ভারী মিষ্টি ঠেকে এই চাপল্য চঞ্চলতা। কি স্বচ্ছ অনাবিল!

    বাঙলাদেশের হাওয়ায় বড় অল্পে পেকে ওঠে মেয়েগুলো, বারো বছরেই গিন্নি হয়ে বসে থাকে। কই, পারুক দিকি ওর মতো এত হাসতে, দুষ্টুমি করতে?

    ছটফটে মেয়ে পিয়ানো ছেড়ে তখুনি উঠে এসে রেডিওর চাবি খোলে।

    ইত্যবসরে গুপ্তসাহেব চিঠিখানা শেষ করে নিতে বসেন।

    দু-চারবার তার নিমগ্ন মূর্তির দিকে চেয়ে কোকিলা রেডিও বন্ধ করে দিয়ে সরে আসে, চেয়ারের হাতার ওপর ঝুঁকে পড়ে বলে, কার চিঠি?

    আমার বৌয়ের।

    আবার বৌ? আর একপালা হাসবার সুযোগ ঘটে যায় কোকিলার।

    অত হাসি কেন? বৌ থাকতে পারে না আমার?

    ইস, বিয়েই হয়নি।

    এইবার হবে।

    ধ্যেৎ।

    বা রে মেয়ে, এতে অবিশ্বাসের কি আছে? এই দেখ আমার বৌয়ের ছবি। টেবিলের ড্রয়ার টেনে একখানি ফটো বের করে ধীরে ধীরে টেবিলের ওপর রাখেন ভদ্রলোক।

    আসল কথা মন যখন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে, সবটা নিজের ভিতর আবদ্ধ রাখা কঠিন হয়। কিছু প্রকাশ না করে থাকতে পারে না মানুষ। হোক কোকিলা ছেলেমানুষ, ভিন্ন জাতি, ভিন্ন ভাষী, তবু উপযুক্ত লোকের অভাবে এর কাছেও কথা বলে সুখ আছে।

    অপ্রয়োজনীয় কথা। হৃদয়োচ্ছ্বাসের অভিব্যক্তি মাত্র।

    চাপল্য সংবরণ করে কোকিলা বিনীত প্রশ্ন করে, কার ছবি?

    বললাম তো, বৌয়ের।

    এবার আর হাসে না কোকিলা, বৌকে আর অবিশ্বাস করবার কি হেতু আছে? হাতে হাতেই প্রমাণ রয়েছে যখন।

    চশমার ভিতর থেকে দুটি কৌতুকস্মিত উজ্জ্বল চোখ যেন তারই মুখের দিকে চেয়ে আছে। কে বলবে ফটো, জীবন্ত দৃষ্টি একেবারে। প্রশস্ত মসৃণ ললাট, বুদ্ধিদীপ্ত মুখ। স্বভাবসিদ্ধ কোঁকড়ান এলোমেলো চুল। হ্যাঁ, বৌ বলে দেখাবার মতো চেহারাখানা বটে।

    নিবিষ্টচিত্তে বেশ কিছুক্ষণ দেখে নিয়ে ফ্রেমে বাঁধা ফটোটা টেবিলে হেলিয়ে দিতে দিতে কোকিলা ভারিক্কী চালে বলে, বেশ বৌ।

    পছন্দ হয়েছে তো? হুঁ। অনেক অনেক লেখাপড়া করেছে কি না তাই বিয়ে হয়নি এতদিন, এইবার ছুটি নিয়ে যাব বিয়ে করে বৌ নিয়ে আসব, আর বিয়ে বাড়ির মণ্ডা নিয়ে আসব তোমার জন্যে, কেমন? বাঙলা দেশের মণ্ডা।

    আমরা বাঙলার জিনিস খাই না। গম্ভীর উত্তর।

    খেয়ে দেখলে ভুলতে পারবে না, বুঝলে?

    মিঠাইয়ের প্রসঙ্গে যে বিশেষ উৎসাহ বোধ করে কোকিলা, এমন মনে হয় না। বাড়ি ফিরতে দেরি হলে বকুনি খেতে হবে জানিয়ে তাড়াতাড়ি চলে যায়।

    গুপ্তসাহেবও অবশ্য অন্যদিনের মতো আটকাবার চেষ্টা করেন না, মনে মনে ছুটির দরখাস্তের খসড়াটা ভাঁজতে থাকেন। অভিমানিনী চিত্রা ‘বারবার বলবে না’ শাসিয়েছে। বাস্তবিক নিজেরও আর ভালো লাগে না। সত্যই বটে বয়স বেড়ে চলেছে। সামান্য খেয়ালের বশে হৃদয়কে দিনের পর দিন বঞ্চিত রেখে লাভ কী? উপবাসী প্রেম ভিক্ষাপাত্র হাতে নিয়ে দুয়ারের বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকবে? ম্লান হয়ে পড়বে দুঃসহ প্রতীক্ষায়? জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনগুলি ক্ষয় হতে থাকবে কাগজের গায়ে দুটো কালির আঁচড় টেনে টেনে?

    সুদীর্ঘ ছুটির অবসানে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব ‘মিঠাই’ না হোক বৌ নিয়ে ফিরে এলেন। পূর্বাহ্ণে খবর দেওয়া ছিল, ওভারসিয়ার ভদ্রলোক মাথায় স্পেশাল এক পাগড়ি বেঁধে ধোপদুরস্ত পোশাকে সসম্ভ্রমে নবদম্পতিকে অভ্যর্থনা করতে স্টেশনে এসেছেন। নিম্নতম কর্মচারীদের মধ্যে আরও অনেকেই এসেছেন।

    সস্মিত হাস্যে সকলের মুখের ওপর চোখ বুলিয়ে নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব ওভারসিয়ারকে ব্যগ্র প্রশ্ন করেন, কোকিলা আসেনি?

    না, আসতে চাইল না, তার শরীর অসুস্থ।

    তাই না কি? কী অসুখ করেছে বেচারার?

    না না, এমন কিছু নয়। মাথা ধরেছে না কি!

    ওঃ দুষ্টুমি? আচ্ছা, তার মাথাধরা সারিয়ে দিচ্ছি।—বলে সুসজ্জিতা নবপরিণীতাকে নিয়ে নিজের মোটরে উঠে বসেন গুপ্তসাহেব।

    গুছিয়ে বসেই চিত্রা প্রশ্ন করে, স্টেশন থেকে বাড়ি কতদূর?

    মিনিট আষ্টেক। একটু ঘুরে কোকিলাকে তুলে নিয়ে যাব ওদের বাড়ি থেকে।

    কোকিলা কোকিলা করে গেলে যে—

    সত্যি, ভারী ভালো লাগে ওকে আমার, চমৎকার মেয়ে, কী সুন্দর যে গান গায় দেখো, ওর জন্যে তোমার একলা থাকার কষ্টটা অর্ধেক লাঘব হয়ে যাবে।

    মুখ টিপে হেসে চিত্রা বলে, একলা মানে? তুমি কি ফাউ?

    আরে আমি তো বারো আনা সময়ই বাইরে।

    থাকতে দিলে তো?

    বাজার খারাপ, বুঝেছেন মহাশয়া, এ যুগে প্রিয়ার চাইতে পেটের ধান্দা বড়।

    সেটা তোমাদের মতো যন্ত্রদানবদের।

    কথায় কথায় যেন নিমিষের মধ্যে গাড়িখানা ওভারসিয়ারের বাংলোর সামনে এসে পড়ে। কোকিলার দাদা বাইরের দিকেই ছিল, তটস্থ ভাবে এসে দাঁড়ায়। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব কোকিলাকে ডেকে দেবার জন্যে অনুরোধ জানান, নববধূর অভ্যর্থনার জন্যে ননদিনী হিসাবে নিয়ে যাবেন তাকে কয়েক ঘণ্টার মেয়াদে।

    ছেলেটা একগাল হেসে ছুটে ভেতরে ঢুকে যায়। অল্পক্ষণ পরে দাদার পিছন পিছন কোকিলার মূর্তি নজরে পড়ে। আশ্চর্য হতে হয় গুপ্তসাহেবকে, সেই শিশুসুলভ চাঞ্চল্য কোথায় গেল মেয়ের? অনিচ্ছামন্থর গতি, বেশ বোঝা যাচ্ছে ভাইয়ের তাগিদের জোরেই এসেছে।

    অথচ গুপ্তসাহেবের ধারণা ছিল অন্যরকম। বৌ দেখে হাসবে লাফাবে ছুটোছুটি করবে, কথার চোটে চিত্রা বেচারাকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলবে সেইটেই তো সঙ্গত, স্বাভাবিক। তার বদলে এমন বিরস গম্ভীর মুখ কেন?

    এই ক’দিনে এমন কি বয়স বেড়ে গেল তার? যুবতী সুলভ ঈর্ষাকুটিল দৃষ্টি পেল কোথায়? কেনই বা? তবু মুখ এবং হাত বাড়িয়ে আমন্ত্রণ করেন, কই এসো। বৌ এনেছি, কিন্তু ‘মিঠাই’ আনা হয়নি। রাগ করতে পাবে না।

    ঈষৎ ঘাড় বেঁকিয়ে একই ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে কোকিলা, না দেয় উত্তর, না করে আসবার চেষ্টা।

    কি আসবে না?

    শরীর ভালো নেই। মাথা ধরেছে।

    ও বাবা, ছোট্ট মানুষটির আবার মাথা ধরা কি?

    কোকিলা উত্তর দেবার আগেই সহসা চিত্রার অসহিষ্ণু স্বর বেজে ওঠে, দয়া করে আমায় আগে বাড়ি পৌঁছে দিলে ভালো হয় না কি? চার দিনের ট্রেন জার্নি খুব সামান্য নয়, সেটা ভাবা উচিত ছিল তোমার।

    চকিত চমকিত গুপ্তসাহেব মিসেসের মুখের দিকে চেয়ে দেখেন, প্রশস্ত মসৃণ ললাটে বিরক্তির ছায়া। অতএব বাস্ত-চিত্তে পুনর্বার গাড়িতে স্টার্ট দিতে হয়। বাকী সময়টুকু অসুস্থতার অজুহাতে একটি কথাও উচ্চারণ করে না চিত্রা।

    বাধ্য হয়ে গুপ্তসাহেবকেও মৌন থাকতে হয়।

    বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষণ বলে খ্যাতিসম্পন্ন ভদ্রলোক অবাক হয়েই অ-বাক বনে বসে থাকেন। বাস্তব জগতে যন্ত্রপাতি কব্জা স্ক্রু নিয়েই কারবার তাঁর, তার তথ্য মুখস্থ। মনোজগতে কার যে কি কারণে কোন স্ক্রুর প্যাঁচটা আলগা হয়ে পড়ে অথবা এঁটে বসতে চায়, এ তাঁর বুদ্ধির অগম্য।

    এ যাবৎ কোম্পানির অনেক জটিল সমস্যার সমাধান করে আসছেন তিনি, কিন্তু এখন বুঝে উঠতে পারেন না, হাস্যময়ী চিত্রা সহসা অকারণে এমন চটে উঠল কেন? শিশুস্বভাব কোকিলারই বা এমন স্বভাব বহির্ভূত ব্যবহারের অর্থ কি? অসমবয়সের দীর্ঘ ব্যবধানযুক্ত দুটি মেয়ের মধ্যে পরিচয়ের পূর্বেই বিদ্বেষ ঘটল কেমন করে?

    কি কারণ থাকতে পারে? কিছু থাকা সম্ভব না কি?

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসেপিয়েন্স: এ ব্রিফ হিস্টোরি অফ হিউম্যানকাইন্ড – ইউভাল নোয়া হারারি
    Next Article ১০টি কিশোর উপন্যাস – আশাপূর্ণা দেবী

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }