Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025

    আমাদের সাদা বাড়ি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025

    আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আশাবরী – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প120 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৫. কাউকে মারা যেতে দেখেছেন

    আচ্ছা আপনি কি খুব কাছ থেকে কাউকে মারা যেতে দেখেছেন?

    একজন মানুষ মারা যাচ্ছে আর এক গাদা লোক তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। আপনি সেই একগাদা মানুষের একজন–সেই কথা বলছি না। একজন মানুষ মারা যাচ্ছে, আপনি তার হাত ধরে পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। ঘরে আর কেউ নেই। এমন অবস্থা কি আপনার জীবনে হয়েছে?

    আমার হয়েছে।

    সুলায়মান চাচার মৃত্যুর সময় আমি তাঁর পাশে! ঘরে আর কেউ নেই। মৃত্যু মুহূর্তে আমি তাঁর হাত ধরে বসে আছি। ব্যাপারটা ভাল করে গুছিয়ে বলি। চাচার শরীর খুব যখন খারাপ হল তখন তিনি ভাইয়াকে বললেন, তাঁকে কোন একটা ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে দিতে। ভর্তিটা করাতে হবে গোপনে যেন তাঁর তিন মেয়ে কিছুই জানতে না পারে।

    ভাইয়া বলল, সেটা কি ঠিক হবে চাচা?

    খুব ঠিক হবে। ওদের না দেখলে আমি আরো কিছুদিন বেঁচে থাকব। দেখলে আর বাঁচব না। তুমি আমাকে শহর থেকে দূরে কোন ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে দাও। এই কাজটা কর।

    ভাইয়া তাঁকে শহরের একটা ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে দিয়ে এল। সুলায়মান চাচা ক্লিনিকে যাবার আগে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গেলেন। তাঁর বাসার কাজের মানুষ দুজনকে বেতন ছাড়াও এক হাজার করে টাকা দিয়ে বিদেয় দেয়। হল। ওদের বললেন, তোরা দুজনই দু হাতে চুরি করেছিস। সেই অপরাধ ক্ষমা করে দিলাম। আমিও তোদের বকাঝকা যা করেছি তা মনে রাখিস না।

    ভাইয়াকে বললেন, বাড়ি বাবদ তোমার কাছে অনেক টাকা পাওনা। সেগুলি ক্ষমা করে দিলাম। তার বদলে তুমি প্রতিদিন একবার হাসপাতালে আমাকে দেখতে যাবে।

    ভাইয়া বলল, নিতান্তই অসম্ভব। হাসপাতাল আমি সহ্যই করতে পারি না। তাছাড়া প্রতিদিন যে যাব–রিকশা ভাড়া পাবো কোথায়?

    রিকশা ভাড়া আমি দেব। যতবার যাবে কুড়ি টাকা করে রিকশা ভাড়া পাবে।

    নানান ধান্ধায় থাকি চাচা। রোজ যেতে পারব না তবে প্রায়ই যাব। রেনু যাবে।

    আমি যে কোথায় আছি তা যেন ভুলেও প্রকাশ না হয়।

    প্রকাশ হবে না।

    সুলায়মান চাচাকে ঢাকা শহরের মাঝখানে একটা ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে দেয়া হল। উনি গেলেন খুব হাসি মুখে। যেন পিকনিক করতে যাচ্ছেন কিংবা ছুটি কাটাতে যাচ্ছেন। তাঁর ঘরের দরজায় বিশাল তালা লাগিয়ে চাবি আমাকে দিয়ে গেলেন।

    কাউকে চাবি দিবি না। কাউকে না। আমার তিন কন্যাকে তো নয়ই। মনে থাকে যেন।

    সুলায়মান চাচা চলে যাবার পরদিনই তাঁর ছোট মেয়ে এসে আমাদের ঘরের কড়া নাড়তে লাগল। আমি দরজা খুলতেই তিনি বললেন, বাবা কোথায়?

    আমি ভাল মানুষের মত মুখ করে বললাম, জানিনা তো। কিছুই জান না?

    জ্বি–না।

    কি আশ্চর্য কথা! একটা অসুস্থ মানুষ সে যাবে কোথায়?

    হয়ত বেড়াতে গেছেন এসে যাবেন। আপনি অপেক্ষা করুন।

    বিছানা থেকে নামতে পারে না একটা মানুষ সে গেছে বেড়াতে? এসব কি বলছ পাগলের মত।

    ভদ্রমহিলা বিরস মুখে দোতলায় উঠে গেলেন। পেছনে পেছনে উঠলেন তাঁর স্বামী। এই ভদ্রলোকের চেহারা ভালমানুষের মত। শিশু শিশু মুখে এদিকে ওদিকে তাকাচ্ছেন। হাতে সিগারেট। তাঁকে দেখে মনে হল খুব মজা পাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরই ধুম ধুম শব্দ হতে লাগল। বুঝলাম তালা ভাঙ্গা হচ্ছে। সন্ধ্যার মধ্যে বাকি। দুবোনও চলে এলেন। আরো কিছু লোকজন এল। বাড়ি গমগম করতে লাগল। বড় বোন তাঁর স্বামীকে নিয়ে রাত দশটার দিকে আমাদের বাড়ির কড়া নাড়তে লাগলেন। ভাইয়া দরজা খুলে দিল। আমি এবং আপা বারান্দা থেকে তাদের কথাবার্তা শুনছি।

    আমার বাবা কোথায় গেছেন জানেন?

    জানি না।

    মিথ্যা কথা বলছেন কেন? আমাদের আরেক ভাড়াটে ইসমাইল সাহেবের স্ত্রী বললেন–তিনি দেখেছেন আপনি বাবাকে একটা সবুজ রঙের গাড়িতে করে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছেন।

    উনি পুরোপুরি সত্যি বলেন নি। গাড়ির রঙ ছিল নীল, নেভী ব্লু।

    তাহলে যে আপনি বললেন–আপনি জানেন না বাবা কোথায়?

    ঠিকই বলেছি। আমি ভোরবেলায় বেরুচ্ছি–দেখি উনি গাড়িতে। আমাকে বললেন, কোথায় যাবে রঞ্জু? আমি বললাম, সদরঘাট। চাচা বললেন, উঠে আস, আমি তোমাকে গুলিস্তানে নামিয়ে দেব। আমি উঠলাম, গুলিস্তানে নেমে গেলাম।

    বাবা কোথায় যাচ্ছেন জিজ্ঞেস করেন নি?

    জিজ্ঞেস করেছিলাম। উনি বললেন, ভাল দেখে একটা ক্যামেরা কিনতে চান। স্টেডিয়ামের ইলেকট্রনিক্স দোকানগুলিতে ঘুরবেন।

    বাবার বিছানা থেকে নামার শক্তি নেই। আর তিনি কি-না স্টেডিয়ামে ঘুরে ঘুরে ক্যামেরা কিনবেন?

    আমি যা জানি আপনাকে বললাম। তাছাড়া উনি বিছানা থেকে নামতে পারেন না বলে যা বলছেন তাও সত্যি না। হেঁটে হেঁটেই তো গাড়িতে উঠলেন। ধরেও নামাতে হল না।

    আমি আপনার একটি কথাও বিশ্বাস করছি না।

    আপনার কথা শুনে মনে খুব কষ্ট পেয়েছি বললে ভুল বলা হবে। আপনি আমার কথা বিশ্বাস করবেন না এটাই স্বাভাবিক।

    বাবার সঙ্গে কি জিনিসপত্র ছিল?

    আমার কোন কথাই তো আপনি বিশ্বাস করছেন না। শুধু শুধু প্রশ্ন করছেন কেন?

    বলুন উনার সঙ্গে জিনিসপত্র কি ছিল?

    বলতে চাচ্ছি না।

    এবার শোনা গেল ভদ্রমহিলার স্বামীর গলা। মেয়েদের মত চিকন স্বরে তিনি বললেন, আমি অন্য প্রসঙ্গে আপনাকে একটা কথা বলছি। সব ভাড়াটেদেরই বলা হয়েছে, শুধু আপনাকে বলা বাকি। কথাটা হচ্ছে পারিবারিক প্রয়োজনে পুরো বাড়িটা আমাদের দরকার। আপনাকে বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে।

    কবে নাগাদ?

    এক মাসের মধ্যে ছাড়তে হবে।

    সেটা তো ভাই সম্ভব হবে না। প্রথমত মুখের কথায় নোটিশ হয় না। আপনাদের লিখিতভাবে জানাতে হবে। দ্বিতীয়ত, নোটিশ আপনার পাঠালে হবে না। যার বাড়ি তাঁকে নোটিশ দিতে হবে। নোটিশের পরেও তিনি মরে গিয়ে থাকলে ভিন্ন কথা–অবশ্যি তারপরও সমস্যা আছে–কোর্ট থেকে আপনাদের সাকসেসান সাটিফিকেট বের করতে হবে।

    খানিকক্ষণ আর কোন কথাবার্তা শোনা গেল না। ভদ্রলোকের হয়ত ভাইয়ার কথাগুলি হজম করতে সময় লাগছে। সময় লাগাটাই স্বাভাবিক। এমন কঠিন কথার চট করে জবাব দেয়া যায় না। জবাবটা কি হয় শোনার জন্য অপেক্ষা করছি, রেগে আগুন হয়ে একটা কঠিন জবাব দেবার কথা। ভদ্রলোক তা দিলেন। না। তিনি হেসে ফেললেন। হাসতে হাসতেই বললেন, রঞ্জু সাহেব যেসব আইনকানুনের কথা বললেন–তা সবই আমি জানি। তারপরেও বলছি সাতদিনের মৌখিক নোটিশে আপনাকে উচ্ছেদ করা আমার পক্ষে কোন সমস্যাই নয়। সাতদিনও খুব বেশী সময়। যাই হোক শুরুতে আমার স্ত্রী এক মাসের কথা বলেছে। কাজেই একমাসই বহাল রইল। আপনি একমাস পর বাড়ি ছেড়ে দেবেন।

    যদি না ছাড়ি?

    আপনি বুদ্ধিমান লোক। ভুল করবেন বলে মনে হয় না। আচ্ছা ভাই–যাই। এত রাতে বিরক্ত করার জন্যে দুঃখিত।

    ভাইয়া গম্ভীর মুখে ভাত খেতে এল। মা বললেন, কি হয়েছে রে রঞ্জু? ভাইয়া শুকনো গলায় বলল, কিছু হয় নি।

    ঐ ভদ্রলোক তোকে কি বলল? তেমন কিছু বলে নি।

    তেমন কিছু বলেনি তাহলে তুই এমন গম্ভীর হয়ে আছিস কেন? তোর বাবা সম্পর্কে কিছু বলেছে?

    ভাইয়া বিরক্ত গলায় বলল, বাবা সম্পর্কে কিছু বলেনি। তোমার কি ধারণা পৃথিবীর সবাই বাবা সম্পর্কে আলোচনা করে? এইটাই কি তাদের কথা বলার একমাত্র বিষয়?

    তুই রেগে যাচ্ছিস কেন? আমি কি তোর বাবার কথা তুলে কোন অন্যায় করেছি?

    আরে, কোন কথা থেকে কোন্ কথায় আসছ–ন্যায় অন্যায়ের প্রশ্ন আসছে কেন?

    আমি লক্ষ্য করেছি–তোর বাবার বিষয়ে কিছু বললেই তুই রেগে যাস।

    রেগে যাই না মা, বিরক্ত হই। দিনের মধ্যে এক হাজার বার জিজ্ঞেস কর তোর বাবার কোন খোজ পেলি। কি যন্ত্রণা খোঁজ পেলে আমি বলব না?

    তোর বাবার কথা জিজ্ঞেস করা কি অপরাধ?

    ভাইয়া খাওয়া বন্ধ করে, প্লেট ঠেলে উঠে দাঁড়াল। মা শান্ত গলায় বললেন, ভাত খা রঞ্জু। আমি আর কোনদিন তোর বাবার প্রসঙ্গ তুলব না।

    মার কথায় ভুইয়া হকচকিয়ে গেল। আবার চেয়ারে বসল। কিন্তু কিছু খেতে পারল না। অতি অল্প সময়ে খুব বড় ধরনের একটা নাটক আমাদের বাসায় হয়ে গেল। মাকে আমি চিনি–মা আর কোনদিনই বাবার প্রসঙ্গ তুলবে না।

    সে রাতে ভাইয়া সকাল সকাল দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ল। মার ঘরে গিয়ে দেখি মাও শুয়ে পড়েছেন। কয়েকবার ডাকলাম–মা সাড়া দিলেন না। গেলাম আপার ঘরে। আপা বিরক্ত ভঙ্গিতে তাকাল। কিংবা স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই তাকাল কিন্তু আমার কাছে মনে হল খুব বিরক্ত। কারণ ইদানীং সারাক্ষণ সে বিরক্ত ভাব করে ঘরে বসে থাকে।

    আপা তোমার সঙ্গে ঘুমতে হবে।

    কেন?

    ভাইয়া, মা দুজনই দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়েছে। তুমি কি জায়গা দেবে?

    এটা কেমন কথা জায়গা দেব না কেন?

    আমি বিছানায় উঠতে উঠতে বললাম, কি বিশ্রী ব্যাপার হল আপা দেখেছ? ভাইয়া এটা কি করল?

    আপা ঠাণ্ডা গলায় বলল, সবে শুরু। আরো কত খারাপ ব্যাপার হবে দেখবি।

    কি রকম খারাপ ব্যাপার?।

    এতদিনে যখন বাবার খোঁজ পাওয়া যায় নি–আর যাবেও না। ভাইয়া অনেক চেষ্টা চরিত্র করেও চাকরি পাবে না। আমাদের এই বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। মার শরীর খুব খারাপ হবে। নানা রোগ-ব্যাধিতে ভুগবেন কিন্তু মরবেন না। বেঁচে থাকবেন। আশায় আশায় বাঁচবেন। বাবা একদিন ফিরে আসবেন, তাঁর সঙ্গে দেখা হবে এই আশায় বেঁচে থাকা। রেনু। আমাদের সামনে ভয়ংকর সব সমস্যা।

    আমি ক্ষীণ স্বরে বললাম, তুমি কি এসব নিয়ে খুব চিন্তা কর?

    না।

    আপা শোবার আয়োজন করল। বাতি নিভিয়ে দিল। আমি বললাম, মাশারি খাটাবে না? খুব মশা তো।

    মশারির ভেতর আমার ঘুম আসে না। দমবন্ধ লাগে। এই জন্যেই তো একা থাকতে চাই। কাউকে সঙ্গে রাখতে চাই না।

    তোমাকে মশায় কামড়ায় না?

    খুব কম কামড়ায়। ফর্সা মানুষদের মশা কামড়ায় না। তোকে কামড়াবে। আমাকে না। মশাদের সৌন্দর্যবোধ প্রবল …।

    বলতে বলতে আপা হাসল। অনেকদিন পর আমি আপাকে হাসতে শুনলাম। আপা আমার গায়ে হাত রেখে বলল, রেনু তোদের রেখে আমি যদি চলে যাই। তোরা রাগ করিস না।

    আমি চমকে উঠে বললাম, কোথায় যাবে?

    দেশের বাইরে। আমাদের একজন টিচার আছেন যাঁর ভাবভঙ্গি দেখে মনে হয় আমার প্রতি তাঁর খানিকটা আগ্রহ আছে। তিনি স্কলারশীপ নিয়ে বাইরে যাচ্ছেন। আমাকে তাঁর চেম্বারে ডেকে বাইরে যাবার কথা খুব উৎসাহ নিয়ে বললেন। তারপর হঠাৎ আমাদের বাসার ঠিকানা চাইলেন।

    তুমি কি উনাকে পছন্দ কর?

    না।

    একেবারেই না?

    একেবারেই না। কিছু মানুষ আছে যাদের দেখলে মনের উপর অসম্ভব চাপ পড়ে–ঐ লোকটি হচ্ছে সে রকম। এরা কি করে জানিস? এরা খুব হিসেব করে আগায়। বিয়ের ব্যাপারটাই ধর–এরা চায় সবচে সুন্দরী মেয়েটাকে বিয়ে করতে। মেয়ে শুধু সুন্দরী হলে হবে না, পড়াশোনায় ভাল হতে হবে, বাবার প্রচুর টাকা থাকতে হবে।

    উনি তেমন নাও তো হতে পারেন।

    সেই সম্ভাবনা খুব কম। ঐ লোক আমাকে ছাড়াও আমার জানামতে আরে৷ তিনটি মেয়ের ঠিকানা নিয়েছে। তিনজনই রূপবতী। সে এদের প্রত্যেকের বাসায় যাবে। হিসাব নিকাশ করবে। শেষ পর্যন্ত টিকে থাকব আমি।

    তুমি টিকে থাকবে কেন?

    আমার সে রকমই মনে হচ্ছে। আমি কিছু কিছু জিনিস আগে আগে বুঝতে পারি। আর কথা বলতে ভাল লাগছে না, ঘুমুতে চেষ্টা কর।

    চেষ্টা করেও লাভ নেই আপা, আমার সহজে ঘুম আসে না।

    আপা আবার হাসল। আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, হাসছ কেন?

    আপা বলল, যাদের মাথায় রাজ্যের চিন্তা তারা বিছানায় শোয়ামাত্র ঘুমিয়ে পড়ে। প্রকৃতি তাদের ঘুম পাড়িয়ে চিন্তামুক্ত করে। যারা সুখী মানুষ তারাই সহজে ঘুমুতে পারে না। বিছানায় গড়াগড়ি করে।

    তোমাকে কে বলল?

    আমার তাই ধারণা। দেখিস না আমি কেমন চট করে ঘুমিয়ে পড়ি। বাবাও তাই। বাবার ঘুমের সমস্যার কথা কখনো শুনেছিস? শোয়ামাত্র ঘুম। বাবাকে কখনো দেখেছিস ঘুম হচ্ছে না বলে বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করছে?

    না।

    মিলল আমার কথা?

    আমি জবাব দিলাম না। আপা মৃদুলায় বলল–দুলুর কথা ধর। এই মেয়ে কি রাতে ঘুমায়? আমার তো মনে হয় জেগেই কাটায়। অথচ ওর বাংলাদেশে কটা আছে?

    কথা শেষ করে আপা পাশ ফিরল এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমিয়ে পড়ল। আমি সম্ভবত সুখী মেয়ে। জেগে রইলাম। দুলু আপাও জেগে আছে। তাকে আগের রোগে ধরেছে। ক্রমাগত গান বাজিয়ে যাচ্ছে। একই গান–বার বার শুনলে গানটা আর গান থাকে না। মন্ত্রের মত হয়ে যায়। শেষের দিকে মনে হয় কে যেন কানের কাছে মন্ত্র পাঠ করছে :

    যায় দিন, শ্রাবণ দিন যায়
    আঁধারিল মন মোর আশঙ্কায়
    মিলনের বৃথা প্রত্যাশায়
    যায় দিন, শ্রাবণ দিন যায় …

    আমি আধোঘুম আধো জাগরণে মন্ত্রপাঠ শুনতে লাগললাম।

     

    সুখী মেয়েরা রাস্তায় কি ভাবে হাঁটে আপনি জানেন? জানেন না? আমিও জানি না কিন্তু হাঁটতে চেষ্টা করি সুখী মেয়ের মত। ভাব করি যেন হাঁটতে খুব ভাল লাগছে, যা দেখছি তাতেই মুগ্ধ হচ্ছি। কলেজ ছুটি হয়ে গেছে বাসায় বলিনি। ঠিক নটায় তাড়াহুড়া করে বই খাতা সঙ্গে নিয়ে বের হই। বেরুবার আগে মার সামনে যাই। নীচু গলায় বলি–টাকা দিতে পারবে? না পারলে অসুবিধা নেই।

    মা পাঁচ টাকার একটা নেটি এগিয়ে দেন। কোথেকে দেন কে জানে। বেশীর ভাগ দিন এই নোটটা খরচ হয় না। হেঁটে বেড়ালে টাকা খরচ হবে কেন? ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে কোন একটা রেকর্ডের দোকানে ঢুকি। খুব ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলি, সতীনাথের পুরানো গানের একটা ক্যাসেট অতি দ্রুত করে দিতে পারেন? আমার এখনি দরকার। আমি এক্সট্রা পে করতে রাজি আছি। দোকানদার হাই তুলতে তুলতে বলে–এক সপ্তাহের আগে সম্ভব হবে না। হেভী বুকিং।

    বাড়তি টাকা দিলেও হবে না?

    আর্জেন্ট করে দিতে পারি। ডাবল পেমেন্ট। তাও আজ পাবেন না। দুদিন লাগবে।

    আমি অত্যন্ত দুঃখিত হবার ভঙ্গি করে বলি, তা হলে তো হচ্ছে না। আচ্ছা, সতীনাথের ঐ গানটা একটু বাজান তো শুনি–এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকেনাতো মন।

    দোকানদার নিতান্ত অনিচ্ছায় খানিকটা বাজায়। বাজাতে বাজাতে হাই তুলে। ক্যাসেটের দোকানের লোকজন ক্রমাগত হাই তুলে কেন কে জানে। আমি যে কট্রা দোকানে গেছি সব জায়গায় এক অবস্থা–এরা হাই না তুলে কথা বলতে পারে না। কথা বলেও কম। রাণীক্ষেত রোগ হলে মুরগীরা যেমন ঝিম ধরে থাকে এরাও সে রকম। সারাক্ষণ ঝিম ধরে আছে।

    দুপুরের পর হাঁটতে ভাল লাগে না। বাসায় ফিরে আসি। গোসল করে লম্বা একটা ঘুম দেই। সুলায়মান চাচাকে দেখতে যাই না কারণ তাঁর মেয়েরা খোজ পেয়ে গেছে। তারা সারাক্ষণ বাবাকে ঘিরে থাকে। যে দুবার গিয়েছিলাম এমন করে তাকিয়েছে যেন আমি রক্তচোষা ড্রাকুলা। তার বাবার রক্ত খাবার জন্যে আসি।

    হাসপাতালেই সবচে ছোট মেয়েটি আমাকে বারান্দায় ডেকে নিয়ে বলল, বাড়ি ছাড়ার জন্যে আপনাদের এক মাস সময় দেয়া হয়েছিল। মাস প্রায় শেষ হতে চলল। আপনাকে মনে করিয়ে দিলাম। আমার স্মৃতি শক্তি ভাল না।

    আমি বললাম, মনে করিয়ে খুব ভাল করেছেন। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম।

    অন্য তিনজন ভাড়াটের মধ্যে দুজন চলে গেছে। আর একজন যাবে এই শুক্রবারে।

    ও আচ্ছা।

    বাড়িটা আমাদের খুব জরুরী ভাবে দরকার।

    ভাইয়াকে বলব। ঐ তে গার্জিয়নি।

    সুলায়মান চাচাকে দেখতে যেতে ভাল না লাগার আরেকটা কারণ হচ্ছে তিনি এখন কথাবার্তা একেবারেই বলেন না। তাঁর শরীর দ্রুত খারাপ হয়েছে। চোখ গাঢ় হলুদ। নিঃশ্বাস ফেলার সময় অদ্ভুত শব্দ হয়। আমার দিকে এমনভাবে তাকান যেন চিনতে পারছেন না। তবে চলে আসবার সময় মেয়েদের বলেন–রেনুর হাতে কুড়িটা টাকা দাও তো। রিক্সাভাড়া।

    মেয়েরা তৎক্ষণাৎ বলে, দিচ্ছি।

    কিন্তু দেয় না। বরং এমন ভঙ্গি করে যে আমার বলতে ইচ্ছা করে, কিছু দিতে হবে না। আমার কাছে একটা পাঁচ টাকার নোট আছে। আপনি দয়া করে রেখে দিন।

    ডাক্তাররা সুলায়মান চাচার ব্যাপারে জবাব দিয়ে দিয়েছে বলে মনে হয়। তাঁর শরীরের কোন যন্ত্রপাতিই এখন কাজ করছে না। লিভার কাজ করছে না, কিডনি কাজ করছে না, শ্বাসের কষ্ট হচ্ছে। মাথার চুলও উঠতে শুরু করেছে। হাসপাতালে ঢােকার আগে কিছু চুল ছিল। এখন মাথা প্রায় ফাঁকা। কথাবার্তাও অসংলগ্ন। এক প্রসঙ্গ থেকে অন্য প্রসঙ্গে এমন ভাবে যান যে খটকা লাগে।

    ঐ দিন শীত নিয়ে কথা হচ্ছে। শেষ রাতে নাকি তার খুব শীত লাগে। আবার গায়ে চাদর দিলে গরম লাগে।

    এই প্রসঙ্গে বলতে বলতে হঠাৎ বললেন, রেনু তোর বাবা কাজটা ভালই করেছে।

    আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, কোন কাজ?

    এই যে লুকিয়ে আছে। আমার কি ধারণা জানিস? আমার ধারণা উনি কোথাও ঘাপটি মেরে আছেন। বেশী দূরে না, কাছেই। তোদের আশেপাশে যাতে তোদের উপর লক্ষ্য রাখতে পারেন। এক সময় বের হবেন–তোদের চমকে দেবেন।

    আমি অস্বস্তির সঙ্গে বললাম, এই প্রসঙ্গ থাক চাচা। আচ্ছা থাক। তবে আমি কিন্তু ভুল বলছি না। যা বললাম আমার মনের কথা। তোর বাবা যে কাজটা করেছেন–আমার এমন একটা কাজ করার ইচ্ছা সারা জীবন ছিল। করতে পারিনি। সাহসের অভাবে পারিনি। গৃহত্যাগ করা সহজ ব্যাপার না। মহাপুরুষ ছাড়া কেউ পারেন না।

    বাবা গৃহত্যাগ করেন নি। উনি গৃহত্যাগের মানুষ না। খুব ঘরোয়া মানুষ। ব্যবসায়ের কারণে বাইরে যেতেন। যে কদিন বাইরে থাকতেন ছটফট করতেন।

    মানুষকে এত চট করে বোঝা যায় না রে রেনু। মানুষ খুব জটিল বস্তু। গৌতম বুদ্ধও তো সংসারী মানুষ ছিলেন। তাঁর ছিল পরমা সুন্দরী স্ত্রী যশোধারা। চাঁদের মত ছেলে ছিল–রাহুল। ছেলেকে এক মিনিট চোখের আড়াল করতেন না। সেই গৌতম বুদ্ধও কি ঘুমন্ত স্ত্রী-পুত্র রেখে পালিয়ে যাননি?

    বাবা গৌতম বুদ্ধ না চাচা। একজন অতি সামান্য ব্যবসায়ী। যাকে জীবিকার জন্যে সামায়িকভাবে গৃহত্যাগ করতে হত।

    আর একটা ভুল কথা বললি রেনু। সব মানুষের মধ্যেই গৌতম বুদ্ধের বীজ থাকে। সময়মত পানি পায় না বলে বীজ থেকে গাছ হয় না। তুই যখন রাস্তায় হাঁটবি চোখ কান খোলা রেখে হাঁটবি। আমি নিশ্চিত অনেকবার তোর সঙ্গে তোর বাবার দেখা হয়েছে, তুই খেয়াল করিস নি।

    আমি সব সময়ই চোখ কান খোলা রেখে হাঁটতাম। বাবা নিখোজ হবার পর তা আরো বেড়েছে। তাতে কোন লাভ হয় নি। তবে কেন জানি আমার নিজের মধ্যেই একটা ক্ষীণ আশা একদিন পেছন থেকে বাবা ডেকে উঠবেন–কে যাচ্ছে, রেনু না?

    আমি থমকে দাঁড়াব। বাবা হতভম্ব গলায় বলবেন–শাড়ি পরে যাচ্ছিলি, আমি তো চিনতেই পারি নি। শাড়ি পরছিস কবে থেকে?

    অল্পদিন থেকে পরছি। ঘরে পরি না। বাইরে বের হলে পরি।

    সুন্দর লাগছে। আচ্ছা কিনে দেব। ভাল শাড়ি কিনে দেব। চল এখনি কিনে দি। কিছু টাকা সঙ্গে আছে।

    শাড়ি কিনতে হবে না বাবা, তুমি আমার সঙ্গে চল তো।

    কোথায় যাব?

    বাসায়। আবার কোথায়? তোমার যে ঘর বাড়ি আছে এটা কি তোমার মনে নেই?

    হুঁ। ভাল কথা বলেছিস। আসলে ব্যাপারটা কি জানিস…

    আসল ব্যাপারটা কি?

    বাবা বিব্রত ভঙ্গিতে হাসতে থাকেন। আমি তাঁর হাত ধরি। কল্পনা এই পর্যন্ত। মানুষের কল্পনারও সীমা থাকে। আমার তো মনে হয় না কেউ কখনো কল্পনা করে সে উড়তে পারে। আকাশে উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। কল্পনাকেও যুক্তির ভেতর থাকতে হয়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কল্পনাশক্তিও কমতে থাকে। একটা সময় আসে যখন মানুষ কল্পনা করে না। আমার মার বোধ হয় সেই সময় যাচ্ছে। তিনি তাকিয়ে থাকেন শূন্য চোখে। মাঝে মাঝে বিড় বিড় করে কি যেন বলেন। আমি একদিন বললাম, মা তুমি কি বলছ? তিনি বিরক্ত হয়ে বললেন, কই কিছু বলছি না তো।

    আমাদের বড় আপার মৃত্যুদিন গেল গত পরশু। আমরা সবাই খুব আতংকগ্রস্ত ছিলাম মা না জানি কি করেন। তিনি কিছুই করলেন না। নিতান্তই স্বাভাবিক আচরণ করলেন। সব বার শোকের এই তীব্র দিনটিতে বাবা-মা এক সঙ্গে থাকেন। এবার মা একা। এবং তাঁর মধ্যে কোন বিকার নেই। নামাজে অন্য দিনটিতে যতটা সময় দেন, আজও তাই দিলেন। সন্ধ্যার পর বারান্দায় এসে বসলেন। আপাকে বললেন, মীরা আমাকে এক কাপ চা দিবি না। তাঁকে চা দেয়া হল। তিনি চা খেলেন। রাতের খাবারও খেলেন নিঃশব্দে। এর আগে কোনদিন তাঁকে রাতে কিছু খেতে দেখিনি। রাত দশটার দিকে ঘুমুতে গেলেন। আপা আমাকে ডেকে বললেন–তুই মার সঙ্গে ঘুমে। কোন সমস্যা হলে আমাকে ডাকবি। আমি জেগে আছি।

    মা থাকতে দেবে না। দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।

    দরজায় ধাক্কা দিয়ে দেখ

    আমি বন্ধ দরজার পাশে দাঁড়িয়ে বললাম, মা তোমার সঙ্গে ঘুমুব। মা তৎক্ষণাৎ দরজা খুলে বললেন, আয়।

    আমি ঘরে ঢুকলাম, মার পাশে শুয়ে পড়লাম। মা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন–তোর তো কলেজ বন্ধ, তুই সারাদিন কি করিস? আমি হকচকিয়ে গেলাম। ক্ষীণ স্বরে বললাম, কলেজ বন্ধের কথা তোমাকে কে বলল?

    আমি জানি।

    কবে জানলে?

    অনেক দিন আগেই জানি। তুই কি কারো বাসায় যাস?

    না।

    রাস্তায় রাস্তায় হেঁটে বেড়াস?

    হুঁ।

    তোর বাবাকে খুঁজিস?

    আমি জবাব দিলাম না। মা আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, আর হাঁটাহাঁটির দরকার নেই। তোর বাবা ফিরে আসবেন না। উনি জীবিত নেই।

    কি বলছ মা?

    জীবিত থাকলে আজকের দিনে চলে আসত। আজ যখন আসেনি আর কোনদিনও আসবে না। তুই ঘুমো তো রেনু। রোদে ঘুরে ঘুরে কি কালো হয়ে শেছিস। আয়নায় নিজেকে দেখিস না? এখনি তো সুন্দর হওয়ার বয়স!

    মা এমন কোন আবেগের কথা বলছেন না। সহজ স্বাভাবিক কথা। কিন্তু আমার কান্না পেয়ে গেল। আমি নিঃশব্দে কাঁদছি। এমন ভাবে কাঁদছি যেন মা কিছুতেই বুঝতে না পারেন।

    রেনু!

    জি।

    তোর বড় আপার জন্য আমি নিজের হাতে একটা জামা বানিয়েছিলাম। টকটকে লাল সিল্কের জামা। ঐ জামাটা তোর বাবা তার ব্রীফকেসে কাগজ পত্রের নীচে লুকিয়ে রাখে–বছরের মাত্র একদিন গভীর রাতে জামাটা বের কর। হয়। আজ সেই রাত। তোর বড় আপাকে লোকটা কোনদিন দেখে নি–কিন্তু..

    বাদ দাও।

    কত যে কল্পনা ছিল অরুকে নিয়ে। দরিদ্র মানুষ–জিনিসপত্র কিনে বাড়ি টী গোসল দেবার জন্য লাল প্লাস্টিকের গামলা। মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর সব বিলিয়ে দেয়।

    মা, আমি কিছু শুনতে চাচ্ছি না।

    এই যে তোর বাবা নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ায়, ঠিক যে ব্যবসায়ের কারণে ঘুরে বেড়ায় তা কিন্তু না। ঘরে তার মন টিকে না। কিছুদিন ঘরে থাকলেই সে অস্থির হয়ে উঠে। অরু বেঁচে থাকলে–এ রকম হত না। মানুষটা ঘরেই থাকত।

    মা ঘুমাও।

    মা পাশ ফিরলেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লেন।

     

    দুপুরে অনেকক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম।

    ঘুম ভাঙ্গল সন্ধ্যা সন্ধ্যায়। নিজ থেকে ভাঙ্গল না। আপা এসে ধাক্কা দিয়ে তুলল। শংকিত গলায় বলল, তোকে নিতে এসেছে, তাড়াতাড়ি উঠ।

    কে নিতে এসেছে?

    সুলায়মান চাচার বড় মেয়ে। চাচার শরীর খুব খারাপ। তোকে আর ভাইয়াকে নিতে এসেছে। তোদের দেখতে চেয়েছেন। ভাইয়া বাসায় নেই। তুই যা।

    আমি বিছানা ছেড়ে নামলাম। হাত মুখ ধুতে বারান্দায় গিয়ে দেখি সুলায়মান চাচার বড় মেয়ে মোড়ায় বসে আছেন। ব্যাকুল হয়ে কাঁদছেন। আমাকে দেখে ভাঙ্গা গলায় বললেন–তাড়াতাড়ি কর রেনু।

    সুলায়মান চাচা মারা গেলেন ঠিক সন্ধ্যায়। ঘরে তখন শুধু আমি একা। সুলায়মান চাচা ইশারায় সবাইকে চলে যেতে বলেছিলেন। ঘরে কেউ ছিল না। তিনি আমাকে তাঁর কাছে যেতে বললেন। আমি কাছে গেলাম। তাঁর হাত ধরে পাশে দাঁড়ালাম। তিনি কিছু একটা বলতে চাইলেন। বলতে পারলেন না। মৃত্যু সম্পর্কে অনেককে বলতে শুনেছি–মানুষ কখন মারা যায় বুঝা যায় না, এমন কি ডাক্তাররাও ধরতে পারেন না। পরীক্ষা টরীক্ষা করে বলতে হয় রোগী মৃত। আমার ধারণা কথাটা সম্পূর্ণ ভুল। যেই মুহূর্তে সুলায়মান চাচা মারা গেলেন আমি টের পেলাম। তারপরেও অনেকক্ষণ তার হাত ধরে বসে রইলাম। একটা মানুষ কত ভাল ছিল তা টের পাওয়া যায় মৃত্যুর পর। আমি তো খুব বেশী মানুষের সঙ্গে মিশিনি। আমার ক্ষুদ্র জীবনে দেখা সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটি মারা গেলেন আমার চোখের সামনে। আমার কাঁদা উচিত। কাঁদতে পারছি না। দুঃখে হৃদয় অভিভূত হওয়া উচিত। তাও হচ্ছে না। আমি শান্ত ভঙ্গিতে ঘর থেকে বের হয়ে এলাম। ক্লিনিকের বারান্দায় সবাই দাঁড়িয়ে আছে। আমি শান্ত মুখে বললাম, যান, আপনারা ভেতরে যান।

    বড় মেয়ে আগ্রহ নিয়ে বললেন, বাবা কেমন আছেন?

    আমি কিছু না ভেবেই বললাম, ভাল।

     

    ঐ দিন সন্ধ্যা আমার জীবনের একটা বিশেষ সময়।

    কাজেই আমি আপনাকে অনুরোধ করছি এখন যা বলব, খুব মন নিয়ে শোনার জন্য। আমি ক্লিনিক থেকে বের হলাম। রিকশা নিতে যাব–মনে হল–আসার সময় টাকা নিয়ে আসিনি। তাতে অসুবিধা নেই। একটা রিকশা নিয়ে বাসায় যেতে পারি। কিন্তু বাসায় পৌঁছে যদি দেখি–মার কাছে টাকা নেই।

    পথ খুব বেশী না। এক মাইলেরও কম হবে। অনায়াসেই হেঁটে যাওয়া যায়। রাস্তাভর্তি লোকজন। সোডিয়াম লাইট জ্বলছে। অসুবিধা কি? আমি হাঁটতে শুরু করলাম। মগবাজার চৌরাস্তায় পোঁছতেই একজন নিতান্ত অপরিচিত লোক আশাকে পেছন থেকে ডাকল–রেনু, এই রেনু।

    আমি চমকে পেছনে ফিরে দেখি রিকশায় ৩০/৩৫ বছরের এক ভদ্রলোক বসে আছেন। দুহাতে দুটা বাজারের ব্যাগ। পায়ের কাছে ধবধবে শাদা রঙের একটা হাস। ভদ্রলোকের চেহারার বর্ণনা দেই–খুব সাধারণ চেহারা। তবে বড় বড় চোখ। চোখের দিকে তাকালে কাজি নজরুল, কাজি নজরুল মনে হয়। কাজি নজরুল মনে হওয়ার আরেকটা কারণ হচ্ছে তাঁর মাথার চুল লম্বা। ফ্যাশনের লস্য না। অনেকদিন চুল না কাটলে চুল যেমন ঝাকড়া ঝাকড়া হয়ে যায় তেমন। তাঁর গায়ে খয়েরী রঙের সার্ট।

    আমি কাছে এগিয়ে গেলাম। ভদ্রলোক বিরক্ত গলায় বললেন, কি যন্ত্রণায় পড়েছি দেখ তো রেনু। রিকশার চাকা বাস্ট হয়েছে। বাজারের ব্যাগ একটা ফুটো হয়েছে। টপ টপ করে গোল আলু পড়ছে। হাঁস একটা কিনেছি। ব্যাটা ঠিকমত বেঁধে দেয় নি। উড়ে যাবার চেষ্টা করছে। হাঁসটাকে পা দিয়ে চেপে ধরে রাখতে হচ্ছে।

    আমি বললাম, আপনাকে কিন্তু আমি চিনতে পারছি না।

    ভদ্রলোক অবাক হয়ে বললেন, আমাকে চিনতে পারছ না মানে? তুমি রেনু না?

    জ্বি।

    আমি মবিন। মবিনুর রহমান।

    আমি এখনো চিনতে পারছি না।

    বল কি। তুমি কলাবাগানে থাক না?

    জ্বি–না?

    তুমি আউয়াল সাহেবের মেয়ে না?

    জ্বি–না।

    ভদ্রলোক হতভম্ব হয়ে গেলেন। আমি নিজেও বিস্মিত। তিনি যে মেয়েকে চেনেন সে নিশ্চয়ই দেখতে আমার মত। তার নামও রেনু। এমন মিলের কোন মানে হয়?

    ভদ্রলোক বললেন, আমি অসম্ভব রকম লজ্জিত। তুমি কিছু মনে করো না। একবার তুমি বলে ফেলেছি বলেই এখনো বলছি। নয়ত বলতাম না। মাই গড। হোয়াট এ মিসটেক!

    আমি হাসতে হাসতে বললাম, আমি কিছু মনে করি নি।

    ভদ্রলাকে বললেন, আমি যে মেয়ের কথা বলছি–সে দেখতে অবিকল তোমার মত। আমি যে ভুল করেছি সেই ভুল ঐ মেয়েকে যারা চেনে তারা সবাই করবে। তুমি বিশ্বাস কর আমার কথা।

    আপনাকে এত লজ্জায় পড়তে হবে না। আমি কিছু মনে করি নি। আচ্ছা যাই? আপনার হাঁসটা কিন্তু পালিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। ভাল করে চেপে ধরুন।

    আমি হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর এসে একবার পেছনে ফিরলাম। ভদ্রলোক রিকশা থেকে নেমেছেন। হাতে ব্যাগ বা হাঁস কিছুই নেই। তাঁর পলকহীন দৃষ্টি আমার দিকে। তাঁর ভাবভঙ্গি দেখে মনে হল তিনি লজ্জায় পাথর হয়ে গেছেন।

    সেই রাতে আমার একফোঁটা ঘুম হল না। তার কারণ সুলায়মান চাচার মৃত্যু নয়। কারণ পাথরের মত দাঁড়িয়ে থাকা ঐ ভদ্রলোক। সারাক্ষণ ঐ ছবি আমার মনে পড়তে লাগল। শেষ রাতে সামান্য তন্দ্রার মত এল–তখনি ভদ্রলোককে স্বপ্নে দেখলাম। তিনি দুটি রাজহাঁস নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসেছেন। দরজার কড়া নাড়লেন। আমি দরজা খুললাম। ভদ্রলোক বললেন, রেনু দুটা রাজহাঁস নিয়ে এসেছি। দেখ তো পছন্দ হয় কি-না।

    আমি বললাম, আপনি কে? আমি তো আপনাকে চিনতে পারছি না।

    ভদ্রলোক আহত ও অপমানিত গলায় বললেন, কি বলছ তুমি?

    আমি আপনার নামও তো জানি না।

    আমার নাম মবিন। মবিনুর রহমান।

    এই নামে আমি কাউকে চিনি না। প্লীজ আপনি যান তো।

    আচ্ছা যাচ্ছি। হাঁস দুটা রেখে দাও।

    ভদ্রলোক হাঁস দুটা ঘরের ভেতর ছেড়ে দিলেন। তারা প্যাক প্যাক করে সারা ঘরময় ছুটে বেড়াতে লাগল। আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল।

    একজন মধ্যবয়স্ক মানুষ। সন্ধ্যাবেলা বাজার করে ফিরছে। যার চেহারাও আমি সম্ভবত ভাল করে দেখিনি। সামান্য কিছু কথা হয়েছে। আর তাতেই সারারাত আমার ঘুম হল না।

    ভোরবেলা আমি পুরো ব্যাপারটা উড়িয়ে দিতে চেষ্টা করলাম। একটা আলগা কূতির ভাব নিয়ে আসতে চেষ্টা করলাম। টবে আমাদের দুটা গোলাপ গাছ আছে–কাচি নিয়ে গাছ ঘেঁটে দিতে গেলাম। গাছের ডাল কাটতে কাটতে সম্ভবত গুনগুন করে গান গাইলাম।

    আপা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমাকে দেখছিল। সে কঠিণ গলায় বলল, কি হয়েছে রেনু?

    কিছু হয়নিতো।

    তুই খুশী হবার ভান করছিস। কেন?

    আমি রাগী গলায় বললাম, তুমি বেশী বেশী বোঝ, আমি মোটেই খুশী হবার ভান করছি না। কাল সন্ধ্যায় একজন মানুষকে মারা যেতে দেখলাম। অপরিচিত কাউকে না, খুব পরিচিত একজন কে। সারা রাত আমার ঘুম হয় নি। কাজেই আমি এখন কি করছি না করছি তা দেখে তুমি আমার চরিত্র বুঝে ফেলবে কি ভাবে? তুমিতো অন্তর্যামী নও।

    আপা কিছু না বলে ভেতরে চলে গেল। আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল।

    প্রতিদিন আমি কিছুক্ষণের জন্য হলেও ঘর থেকে বের হই। সেদিন বের হলাম না। সারা সকাল পড়ার চেষ্টা করলাম। দুপুরে ঘুমুতে গেলাম। রাতে ঘুম হয়নি। দুপুরে শোয়া মাত্র ঘুম আসার কথা। ঘুম এল না।

    বিকেল চারটার দিকে মনে হল–মবিনুর রহমান সাহেব নামের ভদ্রলোক বাজার করে নিশ্চয় ঐ রাস্তায় ফিরবেন। যদিও পর পর দুদিন বাজার করার কথা না। কিন্তু উনি যেমন ভুলো মনের মানুষ হয়ত কিছু একটা ভুলে আনা হয়নি। আজ আবার আনতে হবে। কিছু কিছু মানুষ আছে বিকেলে বাজার করতে পছন্দ করে। অফিস থেকে সরাসরি কাঁচা বাজারে চলে যায় …। এখন যদি আমি ঘর থেকে বের হই–ভদ্রলোকের সঙ্গে নিশ্চয়ই দেখা হবে।

    শাড়ি পাল্টাচ্ছি। আপা বলল, কোথায় যাচ্ছিস?

    মিতুদের বাসায়।

    এখন মিতুদের বাসায় যাচ্ছিস? সন্ধ্যাতো হয় হয় ফিরবি কি ভাবে?

    মিতুর ছোটমামা পৌঁছে দেবেন। যেতেই হবে। মিতুর জন্মদিন। খুব করে বলে দিয়েছে।

    জন্মদিনে খালি হাতে যাবি?

    উপায় কি?

    তুই কি সত্যি মিতুর জন্মদিনে যাচ্ছিস?

    আমি কঠিন গলায় বললাম, তোমার সন্দেহ হচ্ছে কেন আপা? কেন তোমার মনে হল আমি মিথ্যা কথা বলছি?

    তুই খুব সাজগোজ করেছিস তাই বলছি।

    বন্ধুর জন্মদিনে সাজগোজ করতে পারব না?

    অবশ্যই পারবি। কিন্তু আগেওতো আরো অনেক জন্মদিন হয়েছে। তোকে কখনো সাজতে দেখিনি। আজ একেবারে টিপ পরেছিস।

    আমি টিপ খুলে ফেললাম। আপা বলল, রাগ করিস না। এয়ি বললাম। লালটিপে তোকে সুন্দর লাগছে। আমার কাছে পঞ্চাশটা টাকা আছে। নিয়ে যা। একটা বই টই কিনে দিস। বন্ধুর জন্মদিন। খালি হাতে কেন যাবি।

    আমি গেলাম ঐ রাস্তায়। আধ ঘন্টার মত অপেক্ষা করে ফিরে এলাম। আপা দরজা খুলে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, তুই কি আমাকে কিছু বলবি?

    আমি বললাম, বলব।

    আয় আমার ঘরে আয়।

    আমি সব বললাম কিছুই বাদ দিলাম না। আমার ধারণা ছিল আপা কথা শুনে হেসে ফেলবে। সে হাসল না। আমার হাত ধরে বসে রইল। আমি বললাম, আমার এ রকম হল কেন আপা?

    তুই ব্যাপারটা যত বড় করে ভাবছিস আসলে এটা মোটেই তেমন কোন বড় ব্যাপার না। খুব সামান্য ব্যাপার। ঐ সন্ধ্যায় তোর মনটা ছিল অন্যরকম। কাছ থেকে একজন মানুষের মৃত্যু দেখেছিস। খুব নিঃসঙ্গ বোধ করছিলি। বাড়ির দিকে রওনা হয়েছিস একা একা। যখন তার মনে হচ্ছে–তুই একা তার আশে পাশে কেউ নেই তখন খুব কোমল গলায় একজন ডাকল–রেনু। রেনু।

    ঐ ভদ্রলোকের গলার স্বরে হয়ত বাবার গলার স্বরের খানিকটা মিল ছিল। তুই চমকে উঠলি। তোর সমস্ত শরীর হয়ত ঝন ঝন করে উঠল। তারপর খানিকক্ষণ ভদ্রলোকের সঙ্গে তোর কথা হল। ভদ্রলোক অসম্ভব বিব্রত হলেন। বিব্রত মানুষের উপর এমিতেই আমাদের মমতা বোধ হয়। তোর চরিত্রে মমতার অংশ প্রবল। তুই অনেকখানি মমতা বোধ করলি–এই হচ্ছে ব্যাপার।

    আমি অবাক হয়ে বললাম, তুমি এত গুছিয়ে কি করে বললে?

    আপা হেসে ফেলল। হাসতে হাসতেই বলল, আজ রাতে ভাল করে ঘুমো, ভোর বেলা দেখবি সব ধুয়ে মুছে গেছে। কাল সন্ধ্যায় আর সেজেগুজে ঐ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করবে না।

    আপার বেশির ভাগ কথাই ঠিক হয়। এই কথা ঠিক হল না। ঘটনাটা মোটেই ধুয়ে মুছে গেল না। আমি প্রতিদিন ঐ রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা শুরু করলাম। তবে বিকেলে নয় সকালে। সকালে ভদ্রলোক নিশ্চয়ই অফিসে যাবেন। একদিন না একদিন দেখা হবেই। তিনি চমকে উঠে ডাকবেন–রেনু, এই রেনু। আমি তাঁকে চিনতে পারছি না এই ভঙ্গি করব না। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যাব।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleআসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    আমাদের সাদা বাড়ি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    Our Picks

    আজ চিত্রার বিয়ে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025

    আমাদের সাদা বাড়ি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025

    আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 26, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }