Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প115 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৮. বশির মোল্লা মাছ খেতে পারেন না

    বশির মোল্লা মাছ খেতে পারেন না। মাছের গন্ধে তার বমি আসে। শরীর গুলাতে থাকে। মাঝে মধ্যে জোর করে খেয়ে দেখেছেন খাওয়ার পর পর সারা শরীরে চাকা চাকা কী যেন হয়। চুলকানি হয়। সিলেটে ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। ডাক্তার বলল, মাছ খাবেন না। মাছে আপনার এলার্জি। বশির মোল্লা বললেন, শরীরে চাকা চাকা হওয়া কি এলার্জি? তাহলে তো আমার মেয়ে-মানুষেও এলার্জি আছে। নতুন কোনো মেয়ে-মানুষের কাছে গেলেও আমার শরীরে চাকা চাকা কী যেন হয়। চুলকানি হয়। সেই চুলকানি কমতে এক-দুই দিন লাগে। শরীরে তিসির তেল মালিশ করতে হয়।

    ডাক্তার কিছু বলল না। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।

    কেউ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলে বশির মোল্লার ভালো লাগে। আবার কেউ ভয় পেয়ে তাকিয়ে থাকলেও ভালো লাগে। বিস্মিত মানুষ এবং ভীত মানুষ–দুই ধরনের মানুষই তার দেখতে ভালো লাগে। কোন ধরনের মানুষ দেখতে বেশি ভালো লাগে এখনো তিনি বুঝে উঠতে পারেন নি।

    সুনামগঞ্জ থেকে একবার এক ফিসারিজের অফিসার জলমহল দেখতে তার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলেন। অল্পবয়স্ক রূপবতী স্ত্রী। হাতে ক্যামেরা। যা দেখছে লাফালাফি করে তারই ছবি তুলছে। ফিসারিজ অফিসারের নাম রকিবউদ্দিন। স্ত্রীর সাথে তিনিও লাফালাফি করছেন। স্ত্রীর শাড়ির পাড়ে কাদা লেগেছে। রকিব উদ্দিন নিজেই সাবান দিয়ে শাড়ির পাড় ধুচ্ছেন। তবে স্ত্রীকে নিয়ে লাফালাফি ঝাপাঝাপি করলেও তালে ঠিকই আছে। এরই মধ্যে এক ফাঁকে ঘুসের টাকাটা দিয়ে দিতে বলেছেন। মাসের এক-দুই তারিখে টাকাটা পৌঁছে দেয়া হয়। এবার তিনি নিজেই হাতে হাতে নিয়ে যাবেন। এবং ফেরার পথে একটা বড় রুই মাছ,

    একটা বোয়াল মাছ এবং এক কলসি কৈ মাছ দিয়ে দিতে বলেছে।

    বশির মোল্লা বললেন, বিশাল সাইজের পাবদা আছে। কিছু পাবদাও নিয়ে যান।

    রকিবউদ্দিন বললেন, পাবদা আমার স্ত্রী খায় না। মাছের ব্যাপারে সে খুব চুজি।

    ম্যাডাম না খেলে না খাবেন। আপনি খাবেন। পাবদার সাইজ দেখার মতো। এক একটা এক হাত লম্বা। কিছু দিয়ে দেই?

    রকিবউদ্দিন যেন নিতান্তই অনিচ্ছায় বললেন, তাহলে দেন।

    বড় মাছ একটা করে দিতে বলেছেন, দুটা করে দিয়ে দিলাম। একটা করে মাছ দেওয়া ঠিক না। অলক্ষণ।

    এত মাছ করব কী?

    নিজে খাবেন। আত্মীয়স্বজন পাড়া প্রতিবেশীকে দিবেন।

    অত্যন্ত আনন্দিত মুখে রকিবউদ্দিন নৌকায় উঠতে যাবেন, বশির মোল্লা বলল, স্যারের সঙ্গে একটু প্রাইভেট টক ছিল।

    রকিবউদ্দিন বললেন, বলুন কী ব্যাপার?

    বশির মোল্লা বললেন, স্যারের স্ত্রী মাশাল্লাহ সুন্দরী।

    রকিবউদ্দিন চোখ সরু করে তাকালেন। তাঁর মুখের চামড়া সামান্য শক্ত হয়ে গেল। হঠাৎ তাঁর স্ত্রীর প্রসঙ্গ কেন এলো ভদ্রলোক বুঝতে পারছেন না।

    বশির মোল্লা গলা নিচু করে বললেন, আমি মনস্থির করেছি আপনাদের দুজনকে আজ রাতে আমার বাংলোবাড়িতে রেখে দেব। দোতলা বাড়ি। জেনারেটর আছে। ফ্যান বাতি সবই চলে। আপনি থাকবেন একতলায়। ম্যাডামকে নিয়ে আমি থাকব দুতলায়।

    রকিবউদ্দিন হতভম্ব গলায় বললেন, তার মানে? তার মানে কী?

    বশির মোল্লা গলা আরো নিচু করে বললেন, মানে তো পরিষ্কার। এরচে পরিষ্কার আর কীভাবে বলি? এরচে পরিষ্কার করে বললে শুনতে খারাপ লাগবে। আমার অবশ্যি বলতে অসুবিধা নাই। আমি মেছুয়া মানুষ। আমি ভালো-মন্দের ধার ধারি না।

    রকিবউদ্দিন কঠিন দৃষ্টিতে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছেন। তিনি সঙ্গে করে যে দুজন পিয়ন এনেছিলেন, তাদের খুঁজছেন। তবে তার হাত-পা কাঁপতে শুরু করেছে। বশির মোল্লা বললেন, আপনার দুই পিয়নকে সকালে নৌকায় করে মাছ দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি।

    রকিবউদ্দিন রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, আপনি নিজেকে কী ভাবেন? দেশে আইন-কানুন নাই?

    বশির মোল্লা বললেন, ভাটি অঞ্চলে আমিই আইন, আমিই কানুন। আমি কী বলি শুনেন। ঝামেলা না করলে আপনের জন্যে ভালো। ঝামেলা করলেও জিনিস একই হবে। মাঝখান থেকে আপনার ক্ষতি। সুনামগঞ্জে খবর যাবে হাওর থেকে ফেরার সময় নৌকাডুবি হয়ে ফিসারিজ অফিসার এবং তার স্ত্রী মারা গেছে। হাওরে নৌকাডুবি কোনো ব্যাপারই না।

    রকিবউদ্দিন কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, আপনি এইসব কী বলছেন? কী বলছেন?

    বশির মোল্লা বললেন আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। আমি, আপনি আর ম্যাডাম এই তিনজন ছাড়া ঘটনা আর কেউ জানবে না। কাতল মাছের নামে ওয়াদা করতেছি। ভাটি অঞ্চলের সবাই জানে বশির মোল্লা যখন মাছের নামে ওয়াদা করে তখন ওয়াদা রাখে।

    নৌকা থেকে রকিবউদ্দিনের স্ত্রী হাসি মুখে চেঁচিয়ে বলল, এই তোমরা দুজন গুটুর গুটুর করে কী আলাপ করছ? দুজন একটু ডান দিকে আস। আমি ছবি তুলে রাখি। সুন্দর কম্পোজিশন। এখান থেকে ব্যাকগ্রাউন্ডে হাওরটা এত সুন্দর লাগছে!

    বশির মোল্লা বললেন, স্যার, ম্যাডাম আমাদের ডানে সরতে বলেছেন। ছবি তুলতে তুলতে মন ঠিক করেন আমার প্রস্তাবে রাজি না অরাজি।

    রকিবউদ্দিন জায়গা থেকে নড়তেও পারছেন না, জবাবও দিতে পারছে না। আতঙ্কিত এবং বিস্মিত চোখে বশির মোল্লার দিকে তাকিয়ে রইলেন। বশির মোল্লা লক্ষ করল রকিব উদ্দিনের মুখ থেকে অতি দ্রুত বিস্ময় দূর হচ্ছে। আতঙ্ক বাড়ছে। আতঙ্কিত হলে একেক মানুষের চোখ একেক রকম হয়ে যায়। কারো চোখ অক্ষ্মিকোঠারে ঢুকে যায়। আবার কারো চোখে অক্ষ্মিকোঠর থেকে বের হয়ে আসে। রকিবউদ্দিনের চোখ বের হয়ে আসছে। বশির মোল্লা মুগ্ধ হয়ে এই দৃশ্য দেখছেন। বশির মোল্লা তার জীবনে এত আতঙ্কিত হতে কাউকে দেখেন নি। এখনো কোনো কারণে মন টন খারাপ থাকলে রকিবউদ্দিনের আতঙ্কিত মুখের ছবিটা মনে করার চেষ্টা করেন। তার বড় ভালো লাগে।

     

    আজ বশির মোল্লার মন ভালো। প্রধান কারণ ঠাণ্ডা লেগে সর্দির মতো হয়েছে। সর্দিতে নাক বন্ধ। কোনো কিছুরই ঘ্রাণ পাচ্ছেন না। কাজেই আজ মাছ খেতে পারবেন। গন্ধ কোনো সমস্যা হবে না। বাইন মাছ এনে রান্না করতে বলেছেন। লঞ্চের বাবুর্চি ঝোল ঝোল করে বাইন মাছ খুব ভালো রান্না করে। বাইন মাছের সন্ধানে লোক গেছে।

    আরো একটি বিশেষ কারণে বশির মোল্লার মন ভালো সার্কাসের ছোট মেয়েটিকে তিনি কাছ থেকে দেখেছেন। দড়ির উপর অনেক দূর থেকে দেখে মেয়েটাকে যত সুন্দর লেগেছে, কাছ থেকে আরো বেশি সুন্দর লেগেছে। সাধারণত উল্টা হয়। দূর থেকে যাদের সুন্দর লাগে, কাছে আর সুন্দর লাগে না। গতকাল মেয়েটার গলায় সোনার মেডেল পরিয়ে হাতে দশ হাজার টাকা দিতে দিতে বললেন তোমার নাম কী গো? মেয়েটা হেসে দিয়ে বলল–নাম তো জানেন। আবার কেন জিজ্ঞেস করছেন? বশির মোল্লা বললেন, প্রত্যেকে তার নিজের নামটা মধুর করে বলে। তুমি কত মধুর করে বলো এটা শোনার জন্যে নাম জিজ্ঞেস করলাম। মেয়েটা তার কাছ থেকে এ ধরনের কথা শুনবে বলে আশা করে নি। মেয়েটার চোখের উপর দিয়ে বিস্ময় ঝিলিক মেরে গেল। বিস্ময়টা বশির মোল্লার ভালো লাগল। এই মেয়ে আশেপাশে থাকলে তার বিস্মিত চোখ ঘনঘন দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে। তিনি এখন তার চারপাশে ভীত চোখ দেখেন। বিস্মিত চোখ দেখেন না।

    বশির মোল্লা ঘড়ি দেখলেন। এগারোটা বাজে। আকাশ মেঘলা। বৃষ্টি বাদল হবে বলে মনে হয়। গা ভর্তি ঘামাচি হয়েছে। বৃষ্টিতে না ভিজলে ঘামাচি দূর হবে না। অবশ্যি ঘামাচির একটা উপকারিতা আছে। নখ দিয়ে কেউ যখন ঘামাচি মারে তখন খুবই আরাম লাগে। গা ভর্তি ঘামাচি নিয়ে তিনি বসে আছেন। তাকে ঘিরে তিন বোন বসে আছে। ঘামাচি মারছে। ভাবতেও ভালো লাগছে। পৃথিবীর কোনো মেয়ের সঙ্গে কোনো মেয়ের মিল থাকে না। কাজেই তিন বোন তিনভাবে ঘামাচি মারবে। সবচে ভালো করে যে ঘামাচি মারবে তাকে আধাভরি ওজনের একটা মেডেলও দেয়া হবে। মেডেলে লেখা থাকবে–ঘামাচি রানী।

    বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে শুরু করেছে। বশির মোল্লা বৃষ্টিতে ভেজার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে লঞ্চে নিজের ঘরে বসে রইলেন। তার গায়ে কোনো কাপড় নেই। ঘিয়া রঙের একটা চাদর কোমরের কাছে ফেলে রাখা। ইদানীং তার সমস্যা হয়েছে কাপড় গায়ে রাখতে পারেন না। গা কুটকুট করে। সমস্যাটা আগে গরমের সময় হতো। এখন সারা বছরই হয়। বাইরে ঘোরাঘুরি করা এই কারণেই দ্রুত কমে আসছে। তিনি বেশির ভাগ সময়ই নিজের ঘরে বসে থাকেন। কোমরের কাছে পাতলা চাদর দেয়া থাকে। সব সময় যে থাকে তাও না। বেশির ভাগ সময়ই থাকে না। আজ চাদরে নিজেকে খানিকটা ঢেকে রেখেছেন কারণ সার্কাসের ম্যাজেশিয়ান ব্যাটাকে আসতে বলেছেন। তিনি তার কাছ থেকে ভেতরের সংবাদ কিছু সংগ্রহ করবেন। মোটামুটি ভাবে যা জানার সবই জানা হয়েছে। তারপরেও ভেতরের কিছু খবরাখবর দরকার। তৈয়ব নামের ম্যানেজার অতিরিক্ত চালাক। তার চালাকি সামলে দিতে হলেও ভেতরের কিছু তথ্য দরকার। তৈয়বের পেছনে তিনি সর্বক্ষণের জন্যে একজন লোক লাগিয়ে রেখেছেন। সেই লোক যে খবর দিয়েছে তা বিস্ময়কর। তৈয়ব দুটা সাতটনি ট্রাক ভাড়া করেছে। ট্রাক দুটা রাত একটায় সার্কাসের মাঠে যাবে। দলবল নিয়ে পালিয়ে যাবার মতলব না তো? এদিকে মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে আরো সাত দিন সার্কাস চলবে। তৈয়ব কোনো একটা চাল চালার চেষ্টা করছে। চালটা বশির মোল্লা ধরার চেষ্টা করছেন। তিনি রাগ করছেন না, আবার বিরক্তও হচ্ছেন না। বরং মজা লাগছে। বুদ্ধির খেলা খেলতে তাঁর সব সময় ভালো লাগে। সমস্যা একটাই–বুদ্ধির খেলা খেলার মতো মানুষের সঙ্গে তার দেখা আজকাল হয় না।

    পৃথিবীতে চার রকমের খেলা আছে—

    ১. জ্ঞানের খেলা

    ২. বুদ্ধির খেলা

    ৩. টাকার খেলা।

    ৪. সাপের খেলা।

    এরমধ্যে সবচে সহজ খেলা টাকার খেলা। এই খেলা নির্ভর করে টাকার পরিমাণের উপর। যার যত বেশি টাকা এই খেলা সে তত ভালো খেলে। সবচে কঠিন খেলা হলো বুদ্ধির খেলা। কঠিন খেলা বলেই এই খেলায় আনন্দও বেশি।

    সার্কাসের ম্যাজেশিয়ান মতিন চলে এসেছে। বশির মোল্লা তাকে সরাসরি তার পর্দায় ঢাকা খাস কামরায় ডেকে পাঠালেন। তার কোমরে ফেলে রাখা ঘিয়া রঙের চাদরটা দূরে সরিয়ে দিলেন। মতিন বাবাজি ম্যাজিক দেখিয়ে লোকজনদের চমকে দেয়। তিনিও ব্যাটাকে চমকে দেবেন। ম্যাজিক ছাড়াই চমক। ব্যাটা ঘরে ঢুকেই দেখবে কুচকুচে কালো দুই মনি এক নেংটা বাবা গম্ভীর মুখে বসে আছে। যে ম্যাজিক দেখিয়ে লোকজনের চোখ কপালে তুলে দেয় তার নিজের চোখ কপালে উঠে যাবে। ম্যাজিশিয়ান মতিনের চোখ সত্যি সত্যি কপালে উঠে গেল। বশির মোল্লা নরম গলায় বললেন–ভাই, কিছু মনে করবেন না। গরম বেশি পড়ছে। এই জন্যে নেংটা হয়ে বসে আছি। বৃষ্টি পড়া অবশ্য শুরু হয়েছে। আবহাওয়া ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। ঠাণ্ডা হলেই গায়ে চাদর দিব। আপনার অসুবিধা হলে নিচে তাকাবেন না। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলেন। আপনার নাম যেন কী?

    প্রফেসর মতিন। যাদু সম্রাট প্রফেসর মতিন।

    যাদু সম্রাট কবে হয়েছেন? কেউ বানিয়েছে না নিজে নিজে হয়েছেন? সকালে ঘুম ভাঙার পরে সবাইরে ডেকে বললেন আমি যাদু সম্রাট।

    মতিন মেজাজ খারাপ করে তাকিয়ে আছে। লোকটা কেন তাকে ডেকে পাঠিয়েছে, কেনই বা নেংটা হয়ে বসে আছে–কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।

    যাদু সম্রাট, দাঁড়ায়ে আছেন কেন? বসেন। না-কি নেংটা মানুষের সঙ্গে বসতে অসুবিধা আছে?

    মতিন বিরক্ত গলায় বলল, আমার কাজ আছে। কী জন্যে ডেকেছেন বলেন।

    বশির মোল্লা ঘিয়া রঙের চাদর দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললেন–এত টাকা খরচ করে সার্কাসের দলটা কিনলাম। তাদের লোকজন কেমন জানার কাজেই আপনাকে ডেকেছি।

    যাদু সম্রাট প্রফেসর মতিনের মুখ হা হয়ে গেল। বশির মোল্লা আড় চোখে মতিনের দিকে তাকিয়ে আছেন। যাদু সম্রাটের বিস্মিত মুখ দেখতে ভালো লাগছে। মিথ্যা কথাটা এই গাধা ম্যাজিশিয়ান ধরতে পারছে না। সত্যি ভেবে নিয়েছে। বশির মোল্লা হাই তুলতে তুলতে বললেন, সার্কাসের দলটার যে হাত বদল হয়েছে তা জানেন না?

    না।

    তৈয়ব কিছু বলে নাই?

    না। ম্যানেজার সাহেব অবশ্য কখনো কিছু বলেন না। আপনি কি সত্যই স্বাধীন বাংলা সার্কাস কিনেছেন?

    হুঁ।

    কত টাকা দিয়ে কিনেছেন?

    কত টাকা দিয়ে কিনেছি সেটা তোমাকে বলব কেন? তুমি আমার কর্মচারী, এর বেশি কিছু তো না। তোমার সঙ্গে কিছুক্ষণ আপনি আপনি করেছি। এখন থেকে আর করব না। আমি আমার কোনো কর্মচারীর সঙ্গে আপনি আপনি করি না। এখনো দাঁড়ায়ে আছ কেন? বসো।

    যাদু সম্রাট বসল। বশির মোল্লা গলা নামিয়ে বললেন, সার্কাসের ভেতরের খবর কিছু দাও দেখি।

    মতিন শুকনো গলায় বলল, ভেতরের কোন খবর?

    মেয়ে তিনটা সম্পর্কে বলো। এরা কি বাইরে ভাড়া খাটে?

    মতিন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। বশির মোল্লা বললেন, সার্কাসের কোনো লোকের সঙ্গে মেয়েগুলির লটপটি আছে?

    মতিন তাকিয়ে আছে। কী বলবে কিছুই তার মাথায় আসছে না। কী অদ্ভুত মানুষ। এই মানুষটা কি সত্যি সত্যি সার্কাস কিনে নিয়েছে?

    বশির মোল্লা বললেন, যাদু সম্রাট, তোমার পয়সা গিলে খাওয়ার ম্যাজিকটা কী ভাবে কর? পয়সা হাতের তালুতে লুকায়ে রাখ?

    জি।

    কীভাবে লুকায়ে রাখ আমাকে শিখায়ে দাও।

    একদিনে শিখা যাবে না। পামিং বছরের পর বছর শিখতে হয়। আমি ওস্তাদের কাছে পামিং শিখেছি চার বছর।

    তুমি বেকুব মানুষ। তোমার তো সময় বেশি লাগবেই। আমি তো তোমার মতো বেকুব না। আমি তাড়াতাড়ি শিখব। পয়সা কীভাবে লুকায় শিখাও দেখি।

    বশির মোল্লা তার থাবার মতো হাত মেলে ধরলেন।

     

    সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বশির মোল্লা একা একা তার ঘরেই বসা। ঠিক আগের জায়গাতেই বসা। তিনি হাতের তালুতে পয়সা নিয়ে পামিং প্র্যাকটিস করেই যাচ্ছেন। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে এর কৌশল এখন তার আয়ত্বে। মাঝে মধ্যে হাতের তালু থেকে পয়সা খসে যাচ্ছে, তবে বেশির ভাগ সময় লেগে থাকছে। পয়সা গিলে খাওয়ার খেলাটা বশির মোল্লা এখন ইচ্ছা করলেই দেখাতে পারবে। তার খেলা যাদু সম্রাট মতিনের মতো ভালো না হলেও খুব খারাপ হবে না।

    বশির মোল্লা অপেক্ষা করছেন। তৈয়বের জন্যে অপেক্ষা। তৈয়বকে এখানে আসার জন্যে কোনো খবর পাঠানো হয় নি, তবে সে যে আসবে এটা নিশ্চিত। যাদু সম্রাট মতিন সার্কাস বিক্রির খবর ছড়িয়ে দেবে। তৈয়বের মতো বুদ্ধিমান লোক এই ধরনের গুজবের রহস্য ধরতে পারবে না তা হয় না। সে আসবেই। সে যদি বুদ্ধিমান হয় মেয়ে তিনটাকে সঙ্গে নিয়ে আসবে। বিনয়ী গলায় বলবে–স্যারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। তিনবোনকে সঙ্গে আনলাম। স্যার। বলেছিলেন এদের সঙ্গে কথা বলতে চান। আর যদি তৈয়বকে যতটা বুদ্ধিমান মনে করা হয়েছে ততটা বুদ্ধিমান সে না হয় তখন সে কী করবে?

    ঘর অন্ধকার। বশির মোল্লা নিবিষ্ট মনে হাতের তালুতে পয়সা লুকানোর প্র্যাকটিস করে যাচ্ছেন।

     

    মাগরেবের আজানের পর পরই তৈয়ব আলী ভিজতে ভিজতে এমভি সওদাগর লঞ্চে উঠে এলো। তার মুখ শান্ত। চলাফেরায় কোনো জড়তা নেই।

    বশির মোল্লা আনন্দিত গলায় বললেন, তৈয়ব আস। আস। তোমার জন্যে অপেক্ষা। আমার দিকে তাকায়ে দেখ পুরোপুরি নেংটা হয়ে অপেক্ষা করছি। হা হা হা।

    তৈয়ব বশির মোল্লার সামনে বসেছে। তার চোখে-মুখে কোনো বিকার নেই। তাকে দেখে মনে হচ্ছে নেংটা পুরুষ মানুষের সামনে বসে তার অভ্যাস আছে।

    বশির মোল্লা বললেন, তুমি যে চলে এলে আজ তোমাদের খেলা নাই।

    তৈয়ব বলল, আজ একটু দেরিতে শুরু হবে। রাত আটটায়।

    রাত আটটায় কেন?

    শেষ শো, এই জন্যে রাত আটটা।

    মাইকে বলছিল আরো এক সপ্তাহ চলবে।

    তৈয়ব বলল, একটা ঝামেলা হয়ে গেল।

    বশির মোল্লা আগ্রহী গলায় বললেন, কী ঝামেলা?

    আমাদের মালিক হারুন সরকার মারা গেছেন।

    বলো কী? কখন মারা গেলেন?

    বিকেলে।

    উনার ওয়ারিশান কে?

    উনি বিবাহ করেন নাই। উনার আত্মীয়স্বজন কেউ নাই।

    তাহলে সার্কাসের মালিকানা এখন কার?

    তৈয়ব জবাব দিল না। পাঞ্জাবির পকেট থেকে সিগারেট বের করে সিগারেট ধরাল। বশির মোল্লা বললেন, আমার ধারণা সার্কাস এখন তোমার হাতে। আমার ধারণা কি ঠিক আছে?

    তৈয়ব সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল, সার্কাস আগে আমিই দেখতাম, এখনো আমি দেখব। তবে সার্কাসের মালিকানা আমার না। হারুন সরকার সার্কাসের মালিকানা তিনবোনকে দিয়ে গেছেন।

    বশির মোল্লা বললেন, কেন?

    তৈয়ব বলল–কেন সেটাই তো আমি জানি না। হারুন সরকার জানতেন। উনাকে জিজ্ঞেস করে এখন আর জানা যাবে না। তবে মেয়ে তিনটাকে খুব ছোটবেলায় উনি নিয়ে এসেছিলেন। খুবই আদর করতেন।

    মেয়েরা জানে যে সার্কাসের মালিকানা তাদের?

    না জানে না। এখনো কিছু বলি নাই।

    অতি উত্তম কাজ করেছ। সার্কাস যে উনি দিয়ে গেছেন–মুখে মুখে। দিয়েছেন না-কি কাগজপত্র আছে?

    স্ট্যাম্প পেপারে দলিল করে দিয়েছেন।

    দলিল তোমার কাছে?

    জি।

    সঙ্গে আছে?

    না সঙ্গে নাই।

    বশির মোল্লা সিগারেটের জন্য তৈয়বের কাছে হাত বাড়ালেন। তৈয়ব তাকে সিগারেট দিল। বশির মোল্লা সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললেন, দলিল ছিড়ে ফেল।

    তৈয়ব বলল, এই কাজ তো আমি করব না। আমি যার নুন খেয়েছি মরার আগের দিনও তার গুণ গাইব। আপনি যদি সার্কাস কিনতে চান তাহলে এই তিনবোনের সঙ্গে কথা বলতে হবে।

    বশির মোল্লা সিগারেট হাতে একদৃষ্টিতে তৈয়বের দিকে তাকিয়ে আছে। তৈয়ব বলল, আপনি এইভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন যেন আমার মতো মানুষ আগে দেখেন নাই।

    বশির মোল্লা জবাব দিলেন না। চোখ ফিরিয়ে নিলেন না। তৈয়ব বলল, আপনার বিরাট ব্যবসা-বাণিজ্য। অনেক লোকজন আপনার জন্যে খাটে। এদের মধ্যে আমার মতো দুই চারজন অবশ্যই আছে। যারা মালিকের জন্যে জীবন দিয়ে দিবে। আছে না?

    হুঁ আছে।

    স্যার আমি উঠি?

    বশির মোল্লা জবাব দিলেন না। তৈয়ব বলল, মালিকানা বদলের পর আজ প্রথম শো। স্যার যদি সময় হয় চলে আসবেন। আপনার জন্যে একটা পাস নিয়ে এসেছি। তৈয়ব আলী পাঞ্জাবির পকেট থেকে পাস বের করল। বশির মোল্লা হাত বাড়িয়ে পাস নিল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    একটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }