Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ইগনাইটেড মাইন্ডস – এ পি জে আবদুল কালাম

    এ পি জে আবদুল কালাম এক পাতা গল্প135 Mins Read0

    ১. স্বপ্ন ও বাণী

    ১. স্বপ্ন ও বাণী

    Dream, Dream, Dream
    Dream transformin to thoughts
    And thoughts result in action.

    ২০০১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। ঝাড়খণ্ডের রাঁচি থেকে হেলিকপ্টার যোগে বোকারো যাচ্ছিলাম। ল্যান্ড করার ঠিক পূর্ব মুহূর্তেই আমাদের কপ্টারটি ক্র্যাশ করলো। যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে কপ্টারটি বিকট শব্দে ভূমিতে আঘাত করলো। অলৌকিকভাবে কপ্টারের সবাই সেদিন প্রাণে বেঁচে গেলাম। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, এ ঘটনা সত্ত্বেও আমি পূর্বনির্ধারিত কাৰ্যসূচী অনুযায়ী, বোকারোতে ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গেলাম।

    .

    রাতে শারীরিক ও মানসিক আঘাত উপশমের জন্য একদল ডাক্তার আমাকে নিদ্রা উদ্রেককারী ওষুধ দিয়ে গেল। সাধারণত আমি রাত একটায় ঘুমাই। সেদিন ঘুমের ওষুধের কারণে তার কয়েক ঘণ্টা আগেই ঘুম এসে গেল। সাধারণত ঘুম থেকে উঠি ভোর ৬টায়। সেদিন উঠলাম সাড়ে আটটারও পরে। ওইদিন রাতে আমার কেমন জানি বিক্ষিপ্ত নিদ্রা হয়েছিল। ঘুমের মধ্যেই আমার বারবার মনে হচ্ছিল, এই যে মানব সম্প্রদায়, আশরাফুল মাখলুকাত এই মানুষ কেন হানাহানি করে এত ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়? আমার কল্পনায় আমি যেন পাঁচজন সর্বাপেক্ষা শুদ্ধ চরিত্রের মানুষের কথোপকথন শুনতে পাচ্ছিলাম। তাদের ওই কথোপকথনের মধ্যে আমি আমার প্রশ্নের জবাব খুঁজছিলাম। আমার তখনকার সেই কল্পনার জগৎটা ছিল স্বপ্নের চেয়েও বেশী উজ্জ্বল, আরও বাস্তবময়। আমি দেখলাম আমি যেন সহস্ৰমাইলব্যাপী উষর মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে। আমার চারপাশে ধু ধু বালি। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। গলে পড়া জোৎস্নায় সমস্ত মরুভূমি যেন এক স্নানোৎসবে মেতে উঠেছে। আমি দেখলাম ওই ধবল জ্যোৎস্নার মধ্যে পাঁচটি পবিত্র মানুষ মহাত্মা গান্ধী, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, সম্রাট অশোক, আব্রাহাম লিঙ্কন এবং খলিফা ওমর। তারা বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে আছেন? জোৎস্নার মধ্যে দাঁড়ানো মানুষগুলোর শ্বেতশুভ্র বসন এলোমেলো বাতাসে উড়ছে।

    সম্রাট অশোকের পাশে খর্বাকৃতির বামনের মত দাঁড়ালাম আমি। দিগ্বিজয়ী মহাপরাক্রমশালী সম্রাট অশোক। দুই ধরনের জীবন যাপন করতেন অশোক। একটি নিষ্ঠুর অভিযাত্রীর জীবন, আরেকটি হলো করুণাময় এক স্নেহশীল শাসকের জীবন। যে মুহূর্তে আমি অশোকের পাশে দাঁড়ানো সে সময় তিনি সবেমাত্র রাজ্যজয় করে ফিরেছেন। কিন্তু সে জয় এসেছে বহুমূল্যের বিনিময়ে। সদ্য অধিকৃত কলিঙ্গ রাজ্য জয় করতে ৩ লাখ সৈনিকের প্রাণহানি হয়েছে, আহত হয়েছে আরও ৩ লাখ। আমি দেখলাম উপস্থিত সবাই অশোকের দিকে চেয়ে আছেন। সম্রাট হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন। শরীর থেকে বর্ম আর মাথার মুকুট খুলে ফেললেন। তার সারা মুখ বিবর্ণ, মৃত্যুর বিষণ্ণতা তার চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি আকাশের দিকে চাইলেন। তিনি দেখলেন, ঈশ্বরের নিস্তব্ধ পৃথিবীতে উঁকি দিচ্ছে প্রশান্ত পূর্ণিমার চাঁদ। ঈশ্বরের আশীর্বাদ এই স্বর্বংসহা জননীরূপী ধরিত্রীর বুকে গলে গলে পড়ছে। তিনি এবার নিচে তাকালেন– দেখলেন, ধরীত্রীবক্ষে তিনি কী ভয়ানক শোণিত স্রোত বইয়ে দিয়েছেন, কী বীভৎস রক্তসাগর বয়ে চলেছে তার চারপাশে।

    সেই অপূর্ব সুন্দর আর বীভৎস নারকীয় মুহূর্তে, সেই রজতশুভ্র জ্যোত্সাময়ী ও বিষাদক্লিষ্ট ক্ষণে বিশ্বপ্রকৃতি যেন কথা বলে উঠলো। জন্ম হলো অহিংস ধর্ম। সম্রাট অশোক সে মুহূর্তে কম্পিত ও অবনত মস্তকে ঈশ্বরের নির্দেশ আঁকড়ে ধরলেন। শেষ দিন পর্যন্ত মানব অহিংসার মন্ত্রে মানবপ্রেমের কথা প্রচারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেন। অশোকের পাশে দাঁড়িয়ে আমি শিউরে উঠলাম। আমি বোবা বিস্ময়ে ভাবছিলাম, কেন এই কলিঙ্গ যুদ্ধ? মহাত্মা গান্ধী আর আব্রাহাম লিংকনের এই গুপ্তহত্যা কার জন্য? তাদের মত আর কত কত মানুষ মারা যাচ্ছে তা কেন? ঈশ্বরের সৃষ্টিতত্ত্বে কি তাহলে কোন ভুল ছিল? না কি দ্বিতীয় প্রজন্মে প্রয়োজনে মানবজাতি নিজেরা নিজেদের ধ্বংস করছে?

    সেই নন্দিত নিস্তব্ধতা ভেঙে মহাত্মা কথা বলে উঠলেন, বন্ধুরা! আমরা যে স্বর্গীয় বাণী শুনতে পাচ্ছি, সে বাণী সৃষ্টির বাণী। যেহেতু পৃথিবী নামক এ গ্রহটি আমাদের, সেহেতু পৃথিবীর তাবৎ মানবসম্প্রদায়ের কাছে আমরা এ বাণী ছড়িয়ে দিতে পারি যাতে ভিন্ন জাতির, ভিন্ন ধর্মের আর ভিন্ন ভাষার মানুষ এক সংগে শান্তির সংগে বসবাস করতে পারে।

    মহান ঈশ্বর আমাদের যা কিছু অনুপম আর কল্যাণকর তা দিয়েছিলেন আমাদের কাজের উপহার হিসেবে। আমরা মানবতার জন্য সে সব উপহার রেখে এসেছি। কিন্তু আমাদের সেই বার্তা, সেই বাণী কি এখন কাজ করছে? পৃথিবীতে কি এখন কোন শান্তির বাণী অথবা মতবাদ আছে? স্বর্গীয় সৌন্দর্য মানবাত্মায় প্রবেশ করবে আর মানুষের দেহ ও মনে প্রশান্তি প্রস্ফুটিত হয়ে উঠবে করা হয়। চোখ তুললেন সম্রাট অশোক। বললেন, বন্ধুরা, এতদিনে একটা মন্ত্রই আমি বুঝেছি। অশান্তি ছড়িয়ে কখনও বিজয়ী হওয়া যায় না। শান্তিরাজ্য স্থাপনই প্রকৃত বিজয়।

    .

    খলিফা ওমর বললেন, জেরুজালেমে পা রাখার পরই আমি জেনেছি জগতের সকল মানুষ সমান। নিজের পথে অন্যকে পরিচালিত করতে কাউকে তুমি জোর করতে পার না। তুমি ততটুকুই পাবে যা তুমি অর্জন করতে পারবে। আল্লাহই একমাত্র শ্বাশত সার্বভৌমত্ত্বের মালিক।

    খলিফা ওমর কখনও তার খেলাফতকে কোন বিশেষ পদাধিকার বলে বিবেচনা করেননি। তার কাছে সরকার ছিল এক পবিত্রতম আমানত। সে আমানতের খেয়ানত এড়াতে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে গেছেন।

    .

    এবার আইনস্টাইনের পালা। তিনি বললেন, আজ আমার বন্ধু ওয়ার্নার হিন্সেনবার্গের কথাই বার বার মনে পড়ছে। ওয়ার্নার বলেছিলেন, আপনারা সবাই জানেন পশ্চিমারা সুবিশাল আর অমিত সৌন্দর্যদীপ্ত এক জাহাজ বানিয়েছে। জগতের সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে সে জাহাজে। কেবল একটি জিনিস হারিয়ে গেছে, আর তা হলো কম্পাস। নাবিক জানে না তারা কোথায় চলেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধী আর তাদের মতানুসারীদের কাছে রয়েছে সেই কম্পাস। এই কম্পাস কেন মানবতা নামের সেই জাহাজে প্রতিস্থাপিত হবে না যাতে পূর্ব আর পশ্চিম একই সংগে উভয়ের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে বুঝতে পারে?

    মহাত্মা গান্ধীর মত সাদামাটা জীবন যাপনকারী দাসপ্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার যোদ্ধা মহান আমেরিকান নেতা আব্রাহাম লিংকন এবার মন্ত্রসপ্তক কণ্ঠে বলে উঠলেন, একটি কথাই আমি বলতে চাই, পারিবারিক উন্নয়ন ও সুসম্পর্কের মাঝেই সুখ আর শান্তি লুকিয়ে আছে। ঈশ্বরের আশীর্বাদ মানুষকে প্রশান্তি দেয়। পৃথিবীতে উত্তম জীবন যাপনের জন্য সুখ আর প্রশান্তি দুই অপরিহার্য বিষয়। আমরা যখন নিজেদের মূল্যবোধ ভুলে সম্পদ আর ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে যাই তখনই মানুষে মানুষে, জাতিতে জাতিতে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। কিন্তু অবশ্যই আমাদের নিজেদেরকেই প্রশ্ন করতে হবে, মনুষ্যবিবেকের কাজ কী? এটা কি রাজনৈতিক চিন্তার অংশ, না কি বৈজ্ঞানিক চিন্তার অংশ, না কি এ বিবেক শুধুই ধর্মতাত্ত্বিক দর্শনের খণ্ডিত অংশ? প্রতিদিনের ব্যস্তজীবনের আধ্যাত্মিক মনস্তত্ত্বে মনুষ্য বিবেক কতটা গ্রহণযোগ্য?

    .

    মহাত্মা গান্ধী মহামতি অষ্টবক্রর বাণী শোনালেন, হে আমার সন্তানগণ! এই সহস্র উপাদানবেষ্টিত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অবিচ্ছেদ্য উপাদান তুমিও। তুমি তোমার বিবেকের বিষয়ে সতর্ক থাক। কোনটা গ্রহণীয় কোনটা বর্জণীয় তা তোমার বিবেকই তোমাকে নির্দেশ করবে। এসো এই নশ্বর জীবন শান্তি আর স্বাচ্ছন্দ্যে ভরে তুলি। ধ্বংস আর সংঘাত ভুলে যাই।

    এবার পাঁচজন সমস্বরে বললেন,

    এই গ্রহের কাছে এই আমাদের বার্তা– আমরা যা কিছু করি, যে মতাবলম্বী হই তা যেন মানবতার জন্য কল্যাণকর হয়।

    .

    ঘুম থেকে উঠে সকালে চা খেয়ে গত রাতের স্বপ্নের কথা ভাবছিলাম।

    যদি আরও উঁচুতে থাকতে হেলিকপ্টারটি বিকল হয়ে যেতো? আমার ওই দুর্ঘটনা ঘটার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে একজন উদীয়মান নেতা আর এক ঝাঁক তরুণ সাংবাদিক নিয়ে আরেকটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। আরোহী সবাই মারা পড়ে। সৌভাগ্যবশত আমি বেঁচে গেছি আর রাতের এক বিক্ষিপ্ত স্বপ্ন আমাকে কী এক বার্তা জানিয়ে গেল। আমি আনমনা হয়ে উঠি। এখন আমি কী করব? আমার আসলে কী করা উচিত?

    আমি জানালার বাইরে তাকালাম। বেশ বেলা হয়েছে। ঝিরঝির বাতাস বইছে। প্রকৃতির কাছেই আমার থাকতে বেশী ভাল লাগে। প্রকৃতিই আমার প্রকৃত বন্ধু। প্রতিদিন একটি আমগাছকে প্রকৃতির প্রতীক হিসেবে দেখি, যে গাছের ডাল মানুষ ভাঙে, পাতা মুড়ে নেয়। অথচ সে শ্রান্ত পথিককে ছায়া দিয়ে যায়। ক্ষুধার্তকে সুমিষ্ট ফলের আস্বাদে ক্ষুধামুক্ত প্রাণবন্ত করে তোলে। রামেশ্বরম, থুম্বা আর চণ্ডিপুরের সাগরসৈকত, পোখরানের মরুভূমি, হায়দরাবাদের বিস্তৃর্ণ আর বিশালকায় প্রস্তর ক্ষেত্র–যেখানেই আমি গেছি সবখানে প্রকৃতির প্রত্যক্ষ উপস্থিতি টের পেয়েছি। এরা সবাই আমাকে সেই স্বর্গীয় শক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে শক্তিই সমস্ত সৃষ্টির আধার।

    .

    নিদ্রাভঙ্গের পর এই স্বপ্নদৃশ্য আমার মগজে স্থির হয়ে রইল। আমি জানি বিশ্ব ইতিহাস আমাদের দেখিয়েছে সত্য আর ন্যায়ের শক্তিমানুষের জীবনকে সুখী আর স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোেলার জন্য কিভাবে সংগ্রাম করেছে। এই ইতিহাসই আমাদের দেখিয়েছে এই মানুষের হাতেই কী ভয়ঙ্কর বিধ্বংসী শক্তি রয়েছে। গান্ধীর মত বহু সাধক ও মুনিঋষি আমরা পেয়েছি যারা এক মহান ত্যাগের জীবন কাটিয়ে গেছেন। পাশাপাশি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরমাণু-বোমার আঘাতে নগর বসতি ধ্বংস হয়ে কোটি কোটি মানুষকেও আমরা মরতে দেখেছি।

    বসনিয়ার যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ মরতে দেখেছি। ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষে অগনিত মানুষ মরেছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের বিশ্ববাণিজ্যভবন সন্ত্রাসীদের অভিনব হামলায় ধ্বসে যেতে দেখেছি। আমাদের এই ভারতের ভূগোলে একটি বহুজাতিক কোম্পানীর অসাবধানতার কারণে সংঘটিত গ্যাস বিস্ফোরণে ৩০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। কাশির উপত্যকায় চলমান সংঘর্ষে নিহত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।

    ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর পার্লামেন্ট ভবনে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে দেশকে নিষ্ক্রিয় করতে চেয়েছিল। এ সংঘাতের শেষ কোথায়? আমাদের নিজেদের ধ্বংস করতেই কি আমরা ক্রমাগত ধ্বংসের পথে যাচ্ছি?

    না, এই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মুক্তির জন্য আমাদের চূড়ান্ত সমাধানের পথ এখনই খুঁজতে হবে।

    .

    কয়েক বছর আগে দি ট্রি অব লাইফ বা জীবনবৃক্ষ শিরোনামে একটি কবিতা লিখেছিলাম–

    আমার সৃষ্টির মাঝে মানুষ তুমিই তো সেরা
    তুমিই থাকবে বেঁচে, বাঁচবে তুমি
    যতক্ষণ তুমি যুথবদ্ধ, ততক্ষণ ক্রমাগত দিয়ে যাবে তুমি
    সুখে আর দুঃখে
    আমার শ্রদ্ধা জন্মাবে তোমার আত্মায়
    ভালোবাসা অনাদি এক স্রোতবহমান ধারা
    সেই তো চূড়ান্ত লক্ষ দীপ্ত মানবতার–
    হররোজ, প্রতিদিন দেখ সেই জীবনতরু
    মানুষ, তুমি সৃষ্টির সেরা
    জানো আরো জানো, তুমি নিজেকে জানো।

    মহাকালের বিভিন্ন সময়ে, পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে জন্ম নেওয়া ক্ষণজন্মা পাঁচ পুরুষোত্তমকে আমি স্বপ্নে আবিষ্কার করেছি। এই আধুনিক বিশ্বে খুব কম মানুষের দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে যারা প্রকৃত মানব মনের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করতে পারেন। একবার একটি ছোট শিশু আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল আমি মহাভারত পড়েছি কিনা, আর যদি পড়ে থাকি তাহলে এর কোন চরিত্রটি আমার ভাল লেগেছে। মহাভারতের বহুমুখী মহাকাব্যিক চরিত্রগুলো মানব প্রকৃতির বিভিন্ন দিকের প্রতিনিধিত্ব করে। ভালো ও মন্দ দুটোরই প্রতিনিধিত্ব করে ওই চরিত্রগুলো। আমি শিশুটিকে বললাম, মহাভারতের বিদুর চরিত্রটি আমাকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করেছে।

    এই চরিত্রটি রাজ্য পরিচালকের ভুল ও অন্যায় কর্মকাণ্ডের বিরোধীতা করার সাহস দেখিয়েছে এবং যখন অধর্মের উৎপীড়নের কাছে সকলে নতিস্বীকারে উদ্যত হয়েছিল তখন বিদুরই তাদের মতের বাইরে যাবার সাহস দেখিয়েছে।

    আজ আমাদের রাষ্ট্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে একজন বিদুরকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এমন আলোকিত মানুষের অস্তিত্ব কল্পনা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এমন আলোয় আলোকিত হওয়ার আশাও আজ দুরাশায় পর্যবসিত হয়েছে। আমাদের সামাজিক ও প্রাত্যহিক জীবনে হতাশাই প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। আমি বুঝতে পারি তুচ্ছ আর হীন আলোচনা, অহমিকা, ক্রোধ, লোভ, ঈর্ষা, হিংস্রতা, লালসা, ভয়, উদ্বিগ্নতা, মোহ আমার ভেতরে এক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যায়।

    .

    আমার জীবনের প্রধানতম লক্ষ্য ভারতের ছোট ছোট শিশুদের মধ্যে সত্যিকার ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটাতে সহায়তা করা, আমার সমস্ত কাজ এমন কি আমি নিজেও নিজেকে একাজে সমর্পন করেছি। আমার সব সায়েন্টিফিক ক্যারিয়ার, আমার বিশেষজ্ঞদল, আমার পুরস্কার-সম্মাননা সব এ লক্ষ্যের কাছে গৌণ। শিশুদের উজ্জ্বলতায় আমার সমস্ত সত্তা বিলীন করতে, তাদের আনন্দময় রাজ্যে আত্মসমর্পণ করতেই আমার যাবতীয় প্রত্যাশা পূর্ণতা পায়।

    একজন মানুষকে সারাজীবনে কয়েকটি পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। ড. ওয়াইন ডব্লিউ ডায়ার তার মেনিফেস্ট ইয়োর ডেস্টিনি বইতে মানবজীবনকে চারটি ভাগে ভাগ করেছেন। তার ভাষায় জীবনের এই চারটি স্টেজ হলো অ্যাথলেট স্টেজ বা ক্রীড়াণক পর্যায়। ওয়ারিওর স্টেজ বা সগ্রামী পর্যায়, স্টেটসপার্সন স্টেজ বা দায়িত্বপ্রধান পর্যায় এবং স্পিরিট স্টেজ বা আধ্যাত্মিক তেজস্বী পর্যায়। আমার মনে হয় একটি জাতি ও মানুষের মত পরিবর্তনমূলক। আমি এ সাদৃশ্যটাকেই শিশুদের কাছে ব্যাখ্যা করি।

    প্রথমত, অ্যাথলেট স্টেজে একটি জাতি সংগ্রাম ও সংঘাত থেকে মুক্ত থাকে। এই সময়টা জাতীয় কৃতিত্ব প্রদর্শন ও সাফল্য অর্জনের সময়। এ বিষয়টির প্রতিফলন ঘটেছে জাপান, সিংগাপুর ও মালয়েশিয়ায়।

    .

    জাতি যখন এ পর্যায় অতিক্রম করে, স্বাভাবিকভাবেই সে সগ্রামী পর্যায় বা ওয়ারিওর স্টেজে প্রবেশ করে। অর্জিত সাফল্য সামনে নিয়ে ওই গর্বিত জাতি তখন অন্যদের মধ্যে প্রাধান্য বিস্তারের জন্য সংগ্রাম শুরু করে। হয়তো তার জন্য তাকে অন্য জাতির ওপর অভিযানও চালাতে হয়। দম্ভ ও অহমিকা তখন হয়ে ওঠে ওই জাতির চালিকা শক্তি। এ পর্যায়ে এসে সে জাতির মানুষ অন্যদের সংগে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নামে এবং দ্রুত সাফল্য অর্জনের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ব্যক্তি ক্ষেত্রে এ পর্যায়টি ডায়ারের মতে উদ্বেগের সৃষ্টি করে। নিজের প্রাধান্য অন্যকে মেনে নিতে বাধ্য করাই এ পর্যায়ের মূল প্রতিপাদ্য হয়ে ওঠে।

    .

    এর পরেই আসে স্টেটস্পার্সন স্টেজ বা বড়ভাইসুলভ পর্যায়। এ পর্যায়ে আত্মঅহমিকা নিয়ন্ত্রণ করে একটি দেশ একটি গাম্ভীর্যপূর্ণ পরিণতি লাভ করে এবং তার নেতৃত্বসূলভ আচরণকে অন্য দেশ ও সমাজের কাছে স্বাভাবিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে। বড়ভাইসূলভ এ পর্যায়ের জাতিটি সত্যিকার অর্থে সফল ও স্বয়ংসম্পূর্ণ, কিন্তু তার শক্তি প্রদর্শনের মোহ কমে না। তার উদ্ধত কার্যক্রম অন্যদের আরো ভালো কিছু অর্জনের শক্তি যোগায়। মহাশক্তিধর সোভিয়েত ইউনিয়ন কিছু দেশে তার উন্নয়নমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে সহায়তা করেছিল।

    ব্যক্তি ও জাতির উভয় ক্ষেত্রেই সংগ্রামী পর্যায় থেকে বড়ভাইসুলভ পর্যায়ে উত্তরণ সম্মানজনক কিন্তু এ পর্যায়ের ক্ষমতা ব্যবহার খুবই কঠিন।

    .

    কিন্তু এই বড়ভাইসুলভ পর্যায়ের ওপরেও আরেকটি পর্যায় রয়েছে। এ পর্যায়ে একটি দেশ তার সত্যিকার ক্ষমতাসীমা সম্পর্কে সজাগ হয়। এ পর্যায়ে এসে সব দিক থেকে উন্নত দেশটির মধ্যে পরিণত প্রাজ্ঞতা জন্ম নেয়। দেশটি বুঝতে পারে পৃথিবী কেবল কোন নির্দিষ্ট একটি দেশের সম্পদ নয় বরং এ পৃথিবী সব দেশের সকল মানুষের। তখন দেশটি বিশ্বমানবতার প্রতি দায়িত্বপালনে ব্রতী হয়। এ পর্যায়ে উপলব্ধির পর্যায় বলা যেতে পারে এবং ভারত সে পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে।

    .

    আমার তেতাল্লিশ বছরের কর্মজীবনে আমি বহুবার প্রতিষ্ঠান বদল করেছি। কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে নতুন ভাবনার সৃষ্টি হয়। নতুন ভাবনা অভিনব কাজের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

    ২০০১ সালের ১৫ আগস্ট আমি কার্যক্ষেত্র পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীকে আমার সিদ্ধান্ত জানালাম। উনি আমাকে আবার ভেবে দেখতে বললেন। দায়িত্ব থেকে কিছুদিন মুক্ত থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম তার কাছে কিন্তু তিনি আমাকে অবশেষে ছাড়লেন না।

    .

    একজন রকেট চালক হিসেবেও আমি ধারাবাহিক পর্যায়গুলো অতিক্রম করেছি। ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান আই এস আর ও (ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অরগানাইজেশন) তে কাজ করেছি। ১৯৮০ সালে ভারত প্রথমবারের মত সফলভাবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করে এবং কক্ষপথে রোহিনী স্যাটেলাইট প্রতিস্থাপন করে বিশ্বের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ স্পেস ক্লাবের সদস্য হয়। এসএলভি-৩ এর ওই মিশনে আমি প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। আমাদের সেই সকল অভিযান জাতিকে স্যাটেলাইট প্রতিস্থাপক প্রযুক্তি অর্জনের গৌরব উপহার দিয়েছিল। স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণ, গাইডেন্স, জেট ইঞ্জিনের দ্বারা প্রচালন এবং বায়ু গতিবিদ্যার বিষয়েও ওই অভিযান আমাদের অভিজ্ঞ করে তোলে। এছাড়া বিভিন্ন রকেট সিস্টেম ডিজাইনেও এ অভিযান সহায়তা করেছে। সর্বোপরি আর অ্যান্ড ডি ল্যাবরেটরি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তথ্য প্রযুক্তি সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়নের এ প্রজেক্টটি সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রেখেছে।

    আজ তারা বিভিন্ন স্পেস ও প্রতিরক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। আমার শ্রদ্ধেয় তিন গুরু ড. বিক্রম সারাভাই, অধ্যাপক সতীশ ধাওয়ান এবং ড. ব্ৰহ্ম প্রকাশ-এর কাছ থেকে আমি নেতৃত্বের শিক্ষা পেয়েছিলাম। এসময় আমি ছিলাম শিক্ষানবীশ। এটাই ছিল আমার অ্যাথলেট স্টেজ।

    .

    আমার দ্বিতীয় পর্যায় ধরা যেতে পারে ১৯৮২ সাল থেকে, যখন আমি ডিআরডিও (ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন)তে যোগ দেই।

    ডিআরডিওতে যোগদানের মধ্য দিয়ে দুটি স্ট্র্যাটেজিক মিসাইলের ডিজাইন করা, এর তৈরী পদ্ধতির উন্নয়ন ঘটানো, উৎপাদন এবং তা উৎক্ষেপণের যাবতীয় কাজে যুক্ত থাকার সৌভাগ্য হয় আমার। এই দুটি সুকৌশলী ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি কোনওদিন কোন দেশকেই দেওয়া হবে না, তা সে যতই বন্ধুপ্রতীম দেশ হোক না কেন। এসময়ে আরও তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র গবেষণাগার ও স্থাপনা তৈরী হয়। এর মধ্যে হায়দ্রাবাদে আরডিও (রিসার্চ সেন্টার ইমারত) নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান নির্মিত হয়।

    আর দুটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপিত হয় বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী চণ্ডিপুরে। এ দুটি পরীক্ষা কেন্দ্রের একটি চণ্ডিপুরের প্রাণকেন্দ্রে, আরেকটি হল চণ্ডিপুর এলাকাভুক্ত একটি দ্বীপে। এই তিনটি প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হওয়ায় ভারত প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে শক্তিশালী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। উপরন্তু ভারতের এই গবেষণাগার ও একাডেমিক প্রতিষ্ঠান থেকে বেশ কিছু জটিল প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয় যা এমটিসিআর (মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রিগাইম) ও এনপিটি (ননপ্রলিফারেশন ট্রিটি)র চাপ থেকে ভারতকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। আমার অধীনস্থ ওই মিসাইল টিম আইসিবিএম (ইন্টারন্যাশনাল ব্যালিস্টিক মিসাইল) সহ বিশ্বের সর্বাধুনিক যেকোনও ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র বানাতে সক্ষমতা অর্জন করে।

    .

    এ পর্যায়ে এসে আমাকে অনেক সফলতা ও ব্যর্থতার পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। ব্যর্থতা থেকে আমি শিক্ষা নিয়েছি। আবার সাহস নিয়ে সেই ব্যর্থতার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি। এটি ছিল আমার দ্বিতীয় পর্যায় যা আমাকে ব্যর্থতা সামলানোর মত জটিল ও কঠিন শিক্ষা দিয়েছিল।

    আমার জীবনের তৃতীয় পর্যায় শুরু হয় তখন যখন আমি ভারতের পারমাণবিক অস্ত্রপ্রযুক্তি অর্জনের মিশনে যোগ দিই। ডিএই (ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাটমিক এনার্জি) এবং ডিআরডিওর সাথে পার্টনারশীপ করে ও সশস্ত্র সেনাবাহিনীর প্রহরায় ভারতের নিউক্লিয়ার মিশন শুরু হয়েছিল। আজ সে মিশন সফলভাবে শেষ হয়েছে।

    যাহোক, কচিকাঁচা শিশুরা যখন আমাকে জিজ্ঞেস করে, গত চল্লিশ বছরে সংঘটিত কোন ঘটনা আপনাকে সবচে বেশী আনন্দ দিয়েছে? তখন তাদের বলি, আমি সবচে খুশি হই তখন যখন দেখি হৃদরোগীরা তাদের ধ্বমনীতে কেআর করোনারী স্টেন্ট সঞ্চালন করে সুস্থ্য বোধ করছে অথবা পঙ্গু শিশুরা এফআরও (ফ্লোর রিঅ্যাকশন অর্থোসিস) ক্যালিপারের সাহায্যে তাদের চলাফেরার কষ্ট কিছুটা লাঘব করছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই দুটি উপাদানই এসেছে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি থেকে।

    এ পর্যায়ে এসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়াধীন আমি একটানা আট বছর টিআইএফএসি (টেকননালজি ইনফরমেশন, ফোরকাস্টিং অ্যাণ্ড অ্যাসেসমেন্ট কাউন্সিল)র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। এ সময়ে ২০২০ সালের সম্ভাব্য প্রযুক্তির কথা মাথায় রেখে আমরা বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মরত ৫ হাজার বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদের মধ্য থেকে ৫শ বিশেষজ্ঞ বাছাই করে একটি টিম গঠন করি। পরবর্তীতে ভারতের প্রযুক্তি ক্ষেত্র ও জাতীয় প্রতিরক্ষার যৌথ উদ্যোগে ইণ্ডিয়া মিলেনিয়াম মিশনস (আইএমএম ২০২০) এর উত্থান ঘটে। ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে ভারত সরকারের প্রধান বিজ্ঞান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ করার পর আমার প্রধান কাজ ছিল সরকারের কাছে আইএমএম-২০২০ এর কর্মপরিকল্পনা ব্যাখ্যা করা। এ পরিকল্পনাটি ছিল মূলত ভারতকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার রোডম্যাপ। পাশাপাশি শিক্ষা, কৃষি ও পল্লী উন্নয়নও বর্তমান উন্নয়ন ধারায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। আমি দায়িত্বে থাকাকালে সরকারের অনুমোদনের জন্য কেবিনেটে একটি প্রযুক্তি বিষয়ক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। আমার জীবনের এই তৃতীয় পর্যায়ে অনুমোদনপ্রাপ্ত ওই কর্মপরিকল্পনার সহায়তায় অভ্যন্তরীণ প্রযুক্তি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে যা আমাদের সামাজিক চাহিদা পূরণেও যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।

    ২০০১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পর আমি বুঝতে পারি আমি মানব জীবনের তৃতীয় পর্যায়ের পরিপাক অবস্থানে এসে পৌঁছেছি। আমার এ ধারণা আরও পোক্ত হল মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন ২ অক্টোবর যেদিন আমি কেরালার কোল্লামে অবস্থিত মাতা অমৃতানন্দময়ীর আশ্রম পরিদর্শন করলাম। মাতা ওই সময় প্রজ্ঞাবান ও ধীশক্তি সম্পন্ন ভবিষ্যত নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় আধ্যাত্মবাদ ও দর্শনের সন্নিবেশ ঘটানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

    ২০০১ সালের ১২ অক্টোবর, আমার ৭০তম জন্মদিনের মাত্র ৩দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি পদত্যাগের আবেদন করি। তিনি অনুমতি দিলেন না। আমি মেনে নিলাম।

    যাহোক এখন আমি ভারতের বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করছি নিয়মিতই। বহু প্রদেশের বহু স্কুলে বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম ও ত্রিপুরা ছাড়াও ঝাড়খণ্ড ও তামিল নাড় র স্কুলগুলোতে অজস্র শিক্ষার্থীর মধ্যে আমি প্রায়ই বক্তব্য দিই। তামিল নাড়ু তে কিছুদিন আগে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর উদ্দেশ্যে আমি ভাষণ দিয়েছিলাম। আমি খেয়াল করে দেখেছি ছোট ছোট শিশুকিশোরদের সংগে আমার মেজাজ ভালো মেলে। আমি তাদের কল্পনার সংগে শেয়ার করতে পারি। সবচে বড় কথা হলো তাদের সংগে কথোপকথনের মাধ্যমে আমি তাদের ভেতরে বিজ্ঞানের প্রতি গভীর আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারি। এই গভীর আগ্রহই তাদেরকে ভবিষ্যতের উন্নত ভারত গড়তে সহায়তা করবে।

    আজ জীবন সায়াহ্নের কাছাকাছি এসে মনে হচ্ছে, আমি কি মানবজীবনের চতুর্থ পর্যায়ে যেতে পারব? আমি আদৌ সফল হতে পারবো? এর উত্তর আমি জানি না। কিন্তু একটি বিষয় আমি ভালো করেই জানি, বড় হবার স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতির চেয়ে বড় শক্তি স্বর্গে-মর্তে কোথাও নেই। স্বপ্ন হলো এমন এক অমিত শক্তির আধার যা হৃদয়ে ধারণ করার সংগে সংগে মানুষের বস্তু জগৎ ও আধ্যাত্মিক জগত সক্রিয় হয়ে ওঠে।

    বিগত কয়েক বছর ধরেই গবেষণা ও শিক্ষকতা করার নেশা আমার মাথায় ভর করেছে। এ কারণেই বারবার বিভিন্ন স্কুলে শিশুদের কাছে ছুটে যাই। সৃষ্টির উল্লাসে তরুণ প্রজন্ম মেতে উঠেছে, ভাবলেই এক শিহরণ অনুভব করি আমি। আগামী দিনের জাতি গঠনের এই প্রচণ্ড শক্তিগুলো যাতে সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে তার জন্য বয়স্কদের কাঁধে কত দায়িত্ব। তাদের পরিচর্যায় আমাদের ভাবতে হবে। ভাবতে হবে কী করে অতীতের ভুল ত্রুটিগুলো আবার শুধরে নেওয়া যায়।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleলার্নিং হাউ টু ফ্লাই : লাইফ লেসন্‌স ফর দি ইয়ুথ – এ পি জে আবদুল কালাম
    Next Article উইংস অব ফায়ার – এ পি জে আবদুল কালাম

    Related Articles

    এ পি জে আবদুল কালাম

    উত্তরণ : শ্রেষ্ঠত্বের পথে সকলে – এ পি জে আবদুল কালাম

    July 15, 2025
    এ পি জে আবদুল কালাম

    সন্ধিক্ষণ : প্রতিকূলতা জয়ের লক্ষ্যে যাত্রা – এ পি জে আবদুল কালাম

    July 15, 2025
    এ পি জে আবদুল কালাম

    উইংস অব ফায়ার – এ পি জে আবদুল কালাম

    July 15, 2025
    এ পি জে আবদুল কালাম

    লার্নিং হাউ টু ফ্লাই : লাইফ লেসন্‌স ফর দি ইয়ুথ – এ পি জে আবদুল কালাম

    July 15, 2025
    এ পি জে আবদুল কালাম

    টার্নিং পয়েন্টস : এ জার্নি থ্র চ্যালেঞ্জেস – এ.পি.জে. আবদুল কালাম

    July 15, 2025
    এ পি জে আবদুল কালাম

    মাই জার্নি : স্বপ্নকে বাস্তবতা প্রদান – এ পি জে আবদুল কালাম

    July 15, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.