Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ইট’স কমপ্লিকেটেড – খাদিজা মিম

    খাদিজা মিম এক পাতা গল্প477 Mins Read0

    ইট’স কমপ্লিকেটেড – ৪৫

    ৪৫

    আজ সারাদিন অফিসে যেমন কাজের চাপ ছিল তেমনি মুনিয়ার বাড়াবাড়িটাও ছিল অনেক বেশি। শেষ দেখা হয়েছিল তার জন্মদিনে, এরপর আর কল করেনি। দুইদিন টেক্সট করেছিলো শুধু। আজ গোটা দিনে মুনিয়ার অনবরত ফোনকল আর ম্যাসেজে চরম বিরক্ত সে। তার নাম্বার দু’টো ব্লক করেও কোনো কাজ হয়নি। অন্য নাম্বার থেকে একের পর এক কল করেই গেছে। বাধ্য হয়ে সন্ধ্যার পর অফিস থেকে বেরিয়ে মুনিয়াকে শাসাতে হলো অমিতের। চার বছরের পরিচয়ে এই প্রথম মুনিয়ার সঙ্গে এতটা বাজে ব্যবহার করলো অমিত। মুনিয়া ওপাশ থেকে নীরবে শুনেছে শুধু। এরপর আর কল আসেনি মুনিয়ার নাম্বার থেকে। অফিসের কাজগুলো শেষ করে এক সেকেন্ডও দেরী না করে বাসায় চলে এল অমিত। মুনিয়া আর অফিসের কাজের চাপাচাপিতে অসহ্য রকম মাথা ধরেছে। গরম পানিতে গোসল সেরে ঘন্টাখানেক শুয়ে থাকলেই মাথাব্যথা কমে যাবে।

    অন্যসব দিনের মতো আজ বাসায় ফিরে কারো গলার আওয়াজ শুনতে পেলো না অমিত। সোফায় গা এলিয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করলো,

    — “বাসায় নেই কেউ?”

    — “না। সব দল বেঁধে মার্কেটে গেছে।”

    — “আচ্ছা! কখন গেল? নবনী বলেনি তো কিছু।”

    — “খেয়াল ছিল না হয়তো।”

    — “হতে পারে।”

    বাসার কলিংবেল বাজছে। এরশাদ সাহেব যাচ্ছিলেন দরজা খুলতে, অমিত তাকে ইশারায় থামিয়ে দিলো। দরজা খুলতেই দেখতে পেলো মুনিয়া দাঁড়িয়ে আছে। কালো বোরকা গায়ে, মাথায় পেঁচানো কালো স্কার্ফ। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। মুখে মাস্ক। চেহারায় নেই কোনো মেকআপের ছোঁয়া। কেউ দেখলে চিনবেই না এটা অভিনেত্রী মুনিয়া। ইচ্ছে করেই এভাবে এসেছে হয়তো! কিন্তু কেন এসেছে? তীব্র বিতৃষ্ণায় চেহারা কুঁচকে গেল অমিতের। রাগটা যেন এবার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। না চাইতেও মাথার ভেতর বিশ্রী সব গালি ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই বুঝি মুখ ফসকে বেরিয়ে আসবে সব!

    — “তুমি আমার বাসায় কেন এসেছো?”

    — “আমি ছাড়া আর কে আসবে অমিত? তোমার বাসায় সবচেয়ে বেশি অধিকার তো আমারই, তাই না?”

    দরজার ওখান থেকে কথা ভেসে আসছে। সোফা ছেড়ে উঠে গেলেন এরশাদ সাহেব। দরজার কাছে যেতেই দেখতে পেলেন মুনিয়া এসেছে। অমিতের বাবার সঙ্গে এর আগে কখনো দেখা হয়নি মুনিয়ার। ছবি দেখেছিল, সেই চেহারা এখনো মনে আছে। এরশাদ সাহেবকে দেখতেই মুনিয়া চিনে নিলো ইনিই অমিতের বাবা। তাকে উদ্দেশ্য করে মুনিয়া বললো,

    — “আমাকে আপনি চেনেন না বোধহয়। কিন্তু আমি আপনাকে চিনি।”

    — “তোমাকে আমার বাসার সবাই চেনে। তোমার আর অমিতের মাঝে কী সম্পর্ক ছিল, কতটুকু ছিল সবটাই আমাদের জানা। তা তুমি হঠাৎ এখানে কী মনে করে?”

    — “ভেতরে এসে কথা বলি?”

    কথার জবাব না দিয়ে ভেতরে চলে গেলেন এরশাদ সাহেব। প্রচন্ড অপমান বোধ হওয়া সত্ত্বেও চুপ করে রইলো মুনিয়া। অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো অমিতের দিকে।

    — “তোমাকে আমি বলিনি আর কখনো আমার সঙ্গে যোগাযোগ না করতে?”

    এগিয়ে এসে অমিতের হাত ধরলো মুনিয়া। অমিত যতই ছাড়াতে চাইছে ততই মুনিয়া আরো চেপে ধরছে।

    — “হাত ছাড়ো আমার। এখানে দাঁড়িয়ে কোনো সিন ক্রিয়েট করবে না বলে দিচ্ছি।”

    চিৎকার করে উঠলো মুনিয়া,

    — “সিনক্রিয়েটের দেখেছো কী? আমার পা ধরে বসে থাকতে সারাক্ষণ। আর এখন আমার সঙ্গে এটিটিউড দেখাচ্ছো?”

    — “চিৎকার কেন করছো? তোমার মান-সম্মান না থাকতে পারে। আমার আছে।”

    — “আমাকে ফেলে অন্য মেয়েকে বিয়ে করে সুখে থাকবা আর আমি তোমাকে এমনি এমনি থাকতে দিবো? কোথায় তোমার বউ? ডাকো ওকে। সেও একটু জানুক তোমার বিছানায় ওর আগে আমি শুয়েছি।”

    — “মুনিয়া! ভেতরে আমার বাবা বসে আছে।”

    — “শুনুক। তার ছেলে লুকিয়ে লুকিয়ে বিয়ে ছাড়া আমার সঙ্গে দুইবছর সংসার করেছে সেটা তার জানার প্রয়োজন আছে না? আমাকে ইগনোর করো তুমি? আমাকে?”

    পাশের দুই ফ্ল্যাট থেকে প্রতিবেশীরা বেরিয়ে এসেছে চিৎকার শুনে। লজ্জায় মাথা নুয়ে আসছে অমিতের। নিচুস্বরে মুনিয়াকে অনুরোধ করতে লাগলো সে,

    — “তুমি প্লিজ যাও এখান থেকে। আমরা কাল মিট করবো বাইরে।”

    — “এই কথাটা সেই কবে থেকে বলছি তোমাকে? পাত্তাই দাওনি। এখন কেন দিচ্ছো? মানুষজন তোমার আমার কথা জেনে যাবে, তাই?”

    — “মুনিয়া প্লিজ!”

    — “ইশ্! লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছো তাই না? যখন আমার সঙ্গে একই বাসায় ছিলে, আমার হাজার বারণ সত্ত্বেও শ্যুটিং সেটে, আমার বাসায়, রিলেটিভদের সামনে নির্লজ্জের মতন দাঁড়িয়ে থাকতে, গার্লফ্রেন্ড বলে সারা দুনিয়া পরিচয় দিয়ে বেড়াতে, পাবলিক প্লেসে কিস করতে, তখন লজ্জা লাগতো না? পাবলিক প্লেসে তুমি আমার বয়ফ্রেন্ড বলে বলে কম সিন ক্রিয়েট তো করোনি! অথচ তোমার প্রতিবেশীর সামনে নিজের মান সম্মান বাঁচানোর জন্য কত চেষ্টা তোমার! আসলে আড়াল করতে চাও কার কাছ থেকে, বলো তো? জানামতে লোকের তোয়াক্কা কখনো তুমি করোনি। আজও করার কথা না। ভয় কি তাহলে বউ নিয়ে? লোকের কাছে তোমার বউ সব জেনে যাবে, এটাই তো ভয়?”

    লিফটের দরজায় চোখ গেল অমিতের। তার দরজার সামনে মোটামুটি ভীড় জমে গেছে। ভীড়ের ফাঁকে দেখা যাচ্ছে নবনী দূরেই দাঁড়িয়ে আছে। সঙ্গে আছে মা আর ছোটবোন। নবনী বুঝার চেষ্টা করছে পুরো ব্যাপারটা। বুঝে গেছেও হয়তো। মুনিয়া তো আর আস্তে কথা বলছে না। গলা ফাটিয়ে পুরো বিল্ডিং জানান দিচ্ছে। সব কিছু ছাপিয়ে অমিতের মনে শুধু জেঁকে ধরেছে নবনীর ভয়। কী ভাবছে ও? অমিত ভীষণ খারাপ? চোখ তুলে তাকাতে পারবে আর কোনোদিন নবনীর চোখে? ভীড় ঠেলে অনেকটা তেড়ে এল নবনী। অমিতের পাশে দাঁড়িয়ে শীতল কণ্ঠে বললো,

    — “হাত ছাড়ো।”

    — “কোথায় ছিলে এতক্ষণ? তোমাকেই তো খুঁজছিলাম।”

    নবনীকে মুখোমুখি পেয়ে মুনিয়া যেন বহু আকাঙ্খিত বস্তুটা পেলো। ভীষণ আনন্দ হচ্ছে তার। স্ত্রীর সামনে প্রেমিকা হাত ধরে টানাটানি করছে সেটা নিশ্চয়ই জগতের যেকোনো পুরুষের কাছে সাক্ষাৎ যমদূতের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার সমান। এই মুহূর্তটা, ঠিক এই মুহূর্তটার জন্যই তো অপেক্ষা করছিল সে। হাতের ব্যাগগুলো ফ্লোরে রেখে অনি তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। হাতে তার মোবাইল, ক্যামেরা অন করা। ভিডিও করছে সে। মেজাজ খারাপ হলো মুনিয়ার। এসব বাড়তি ঝামেলা আবার কেন? অনিকে ধমকে বললো,

    — “ক্যামেরা অফ করো। অশিক্ষিত কুলি মজুরদের মতন যখন তখন শুধু ভিডিও করা!”

    মুনিয়ার কথায় পাত্তা দিলো না কেউই। নবনী আবারও বললো,

    — “অমিতের হাতটা ছাড়ো।”

    — “ধরেছি কি আজ প্রথম? জিজ্ঞেস করো না তোমার হাজবেন্ডকে? আরো বহুবছর আগেই এই হাত আমি ধরেছি।”

    — “বেশ করেছো। এবার ছাড়ো।”

    জিহ্বায় টাক করে শব্দ তুলে, ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানালো মুনিয়া। এক ধাক্কায় মুনিয়াকে সরিয়ে অমিতকে ছাড়িয়ে নিলো নবনী। মাথায় রক্ত চড়ে যাচ্ছে তার। দাঁতে দাঁত চেপে নবনী বললো,

    — “এটা আমার হাজবেন্ড। তুমি ওর অতীত, আমি ওর বর্তমান। ওকে যেই মহিলা পৃথিবীতে এনেছে সেই মহিলা ওর উপর সমস্ত অধিকার আমাকে দিয়েছে। ওর হাত কে ধরবে, কে ধরবে না সেটা ডিসাইড করবো আমি। বারণ করা সত্ত্বেও অন্য মেয়ের হাজবেন্ডের হাত তুমি ধরে রাখো কোন সাহসে? তোমার এই অসভ্য আচরণের জন্য সিঁড়ি ভর্তি মানুষের সামনে কানের নিচে এবার কষে একটা চড় লাগাই আমি?”

    — “অমিত এডাল্ট। ওর ডিসিশন ও একাই নিবে। ওর ডিসিশনগুলো তুমি নেয়ার কে? আর ওর মা-ইবা কে ওর দায়িত্ব তোমাকে দেবার? অমিত কি বাচ্চা? আর তুমি বেবিসিটার?”

    — “হাতে পায়ে লম্বা হলেই তো আর এডাল্ট হওয়া যায় না। বুদ্ধি-সুদ্ধিও থাকা চাই। ওসব কিছু তো নেই তোমার এক্স বয়ফ্রেন্ডের। থাকলে ব্রেকআপের এতদিন পর তুমি ওর বাসায় এসে ওকে এভাবে ঝামেলায় ফেলতে পারতে না। তোমার এত টর্চারের পরও তোমাকে ভালোবেসে মরতে চাইতো না। কবেই তোমাকে লাথি মেরে চলে আসতো।

    — “ওহ! স্যাড। তোমার হাজবেন্ডের ভালোবাসা এখনো পাওনি বুঝি? এখনো অমিত আমার জন্য মরে যায়?”

    এতকিছু মাথায় আর কুলাচ্ছে না অমিতের। বহুদিন পুষে রাখা মুনিয়ার সমস্ত অবহেলা রাগ হয়ে চড়ছে মাথার ভেতর। এতদিনে যা সে করেনি, হুট করেই দুই সেকেন্ডের সিদ্ধান্তে তা করে ফেললো অমিত। একটানে মুনিয়ার মাস্ক টেনে ছিঁড়ে ফেললো, স্কার্ফ খুলে নিলো। চশমা ছুঁড়ে মারলো ফ্লোরে। গা বাঁচানোর ন্যূনতম সময়টুকু পেলো না মুনিয়া। তড়িঘড়ি করে স্কার্ফটা ফ্লোর থেকে তুলতে চাইলে, অমিত পা দিয়ে চেপে রাখলো সেটা।

    — “মুখ ঢেকে আর কতক্ষণ? সবাই দেখুক কার সঙ্গে আমার প্রেম ছিল?” প্রতিবেশীদের মাঝে ফিসফাস শুরু হলো। মুনিয়া মাথা নিচু করে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে মুখ ঢাকার। চাইলেও এখান থেকে বেরোতে পারছে না মুনিয়া। অমিতের মা, পাশের আর সামনের ফ্ল্যাটের ভাবীরা দু’পাশ থেকে ঘিরে রেখেছে ওকে। নবনীর কাঁধ জড়িয়ে ধরলো অমিত। বললো,

    — “তোমাকে আমি পাগলের মতন ভালোবেসেছিলাম মুনিয়া। মফস্বল থেকে উঠে আসা, এই শহরের আলো বাতাস না চেনা মেয়ে ছিলে তুমি। সেই মুনিয়া আক্তারকে আমি ঘষে মেজে আজকের সাবরিন মুনিয়া তৈরী করেছি। তোমার ক্যারিয়ার আমি গড়েছি। কোনো প্রবলেম তোমাকে ফেইস করতে দেইনি। মাসের খরচ, পড়ার খরচ, বাসা ভাড়া, তোমার ফ্যামিলিতে প্রতিমাসে গিফটস পাঠানো- কী না করেছি আমি? আমি শুধু তোমাকে চেয়েছিলাম, একটা সংসার চেয়েছিলাম তোমার ভালোবাসা চেয়েছিলাম। অনেক কিছু কি চেয়েছি আমি? চাইনি তো! বিনিময়ে তুমি কী করলে? অবহেলা আর অপমানে বিষিয়ে তুললে আমার জীবনটা। আমি থাকা সত্ত্বেও কত কত বয়ফ্রেন্ড তোমার! আজ পুলক তো কাল শাহরিয়ার। পরশু আবার অন্য কেউ। সব জেনেও তোমাকে চেয়েছি। ভালোবাসা ছাড়তে পারিনি আমি। তুমি জানতে আমি পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছি, তবুও! আমাকে মরার জন্য ছেড়ে দিলে। আমার একটা খোঁজও তোমার নিতে ইচ্ছে হয়নি। ভিডিও দেখেছি আমি, শাহরিয়ারের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে বসে তুমি কী গভীর চুমুতে ওর গায়ে মিশে যাচ্ছিলে। আমি বোধহয় মরে যেতাম সেদিনই। এই যে মেয়েটাকে দেখছো, ও আমাকে মরতে দেয়নি। উপরওয়ালা ওকে পাঠিয়েছে আমাকে সামলে রাখার জন্য, যেন তোমার মতো একটা অমানুষের জন্য চিরতরে বিলীন না হয়ে যাই। কারো যত্ন কিংবা আগলে রাখার মর্ম তুমি বুঝো না। সম্মান করতে জানো না। আমি জানি। যার জন্য আজ আমি সুস্থ সবল দাঁড়িয়ে আছি তাকে আমি ভালোবাসবো না মুনিয়া? এটা কেমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে নবনীকে? আমি ওকে ভালোবাসি। কতটা বাসি তা আমি নিজেও জানি না। শুধু জানি, নবনীই আমার সব। যতদিন ও আমার হয়ে আছে ততদিন আমিও আছি। যেদিন জানবো ও আমার নেই সেদিন থেকে আমিও আর থাকবো না। বিলীন আমি হবোই। পৃথিবীর কারো ক্ষমতা থাকবে না আমাকে ফেরাবার। মাথা নিচু করে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে মুনিয়া। ওর কান্নার কারণ স্পষ্ট করে কেউ বুঝতে পারছে না। মায়াও হচ্ছে না একদম। ঘৃণা হচ্ছে শুধু। অমিত এই এ্যাপার্টমেন্টের পরিচিত মুখ। সবার পছন্দেরও বটে। আজ পর্যন্ত মন্দ কিছু ওর মাঝে কেউ দেখেনি। ভদ্র ছেলেটার সঙ্গে প্রতারণা করার পর আজ আবার তার সংসার ভাঙতে চাওয়ার দায়ে উপস্থিত সবাই ভীষণ বিরক্ত মুনিয়ার উপর। এখানে অনেকেরই প্রিয় অভিনেত্রী ছিল মুনিয়া। আজ থেকে তার নামটা ঘৃণার লিস্টে তোলা থাকবে।

    — “অমিতকে তুমি একবার জেলে পাঠিয়েছিলে, তাই না?”

    নবনীর প্রশ্ন মুনিয়া চমকে উঠলো। অমিত এসবও বলেছে ওয়াইফকে!

    — “সেদিন তুমি মিথ্যা মামলা দিয়েছিলে অমিতের নামে। কিন্তু আজ যদি আমি তোমার নামে একই মামলা করি সেটা মিথ্যা হবে না। এখানে আমাদের প্রতিবেশীরা আছে, মোবাইলে এভিডেন্স আছে। তোমার ক্যারিয়ার চিরতরে ডোবাতে সময় লাগবে না আমার। এতগুলো দিনে মিডিয়াতে যে খ্যাতি কামাই করেছো, সেটা এই পাঁচ-সাত মিনিটের ভিডিওর বিনিময়ে হারিয়ে ফেলো না। নিজের ক্যারিয়ার বাঁচাতে চাইলে এক্ষুনি যাও এখান থেকে। আর কখনো যেন তোমাকে অমিত কিংবা আমার আশপাশে না দেখি।”

    ভীড় ঠেলে এক নিঃশ্বাসে দৌড়ে চলে গেল মুনিয়া।

    ৪৬

    প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলাপ শেষ করে একে একে ঘরে ফিরছে অমিতের বাসার সদস্যরা। সবশেষে পা রাখলো নবনী। অমিত আলাদা করে নবনীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ খুঁজছিল সেই কখন থেকে! নবনী ফ্ল্যাটের দরজা আটকানো মাত্রই অমিত তার হাত ধরতে চাইলো। সঙ্গে সঙ্গে একলাফে পেছনে সরে গেল নবনী,

    — “দূরে থাকো।”

    অমিত ঠিক এই ভয়টাই করছিল। কেন যেন পুরো ঘটনা চলাকালীন সময়টাতে বারবার মনের ভেতর ডাকছিল নবনী ব্যাপারটা ভালোভাবে নিবে না। রিএ্যাক্ট করবে। নবনী পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাইছিল, অমিত এসে পথ আটকালো।

    — “তুমি রেগে আছো কেন নবনী?”

    — “তোমার মতো নির্লজ্জ, আত্মসম্মানহীন মানুষ আমি আর একটাও দেখিনি অমিত! রুচি হচ্ছে না তোমার সঙ্গে কথা বলার।”

    — “আশ্চর্য নবনী! এসব কেন বলছো সেটা আগে বলো?”

    — “মুনিয়াকে এত প্রশ্রয় কেন দিলে তুমি?”

    — “প্রশ্রয় কোথায় দিলাম?”

    — “ও এসেছে ভালো কথা। ও একটা বিশ্রী মেয়ে, যা তা কান্ড করাই ওর অভ্যেস। তুমি কেন দরজা খুলে দাঁড়িয়ে রইলে? ওকে কথা বলার সুযোগ দিলে? তোমার কি উচিত ছিল না ওর মুখের উপর দরজা আটকে সিকিউরিটি গার্ডকে কল করা? তার উপর তোমার হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিল! হাতটা কি ছাড়িয়ে নেয়া যায়নি?”

    — “আমি চাইছিলাম আপোষে কথা বলে বিদায় করতে। গার্ডকে কল করলে ও পুরো অ্যাপার্টমেন্ট চিৎকার করে মাথায় তুলতো। আর হাত ছাড়াতে চাইনি কে বললো? চেয়েছি। সেজন্যই আরো চেঁচামেচি করছিল।”

    — “চেঁচামেচি করুক। তাতে কী? তাই বলে ওকে হাত ধরে রাখতে দিবে? আর এমনিতেও কি চিৎকার ও করেনি? কী না শোনাচ্ছিলো তোমাকে! তুমিও গাধার মত মিনমিন করে কথা বলছো ওর সঙ্গে। কষে একটা চড় কেন লাগাওনি?”

    — “বললেই হলো নবনী? হুট করে একটা মেয়েকে চড় মারবো কিভাবে? আর আমি বুঝিনি বাসা পর্যন্ত এসে ও এভাবে সিনক্রিয়েট করবে। মাথা কাজ করছিল না তখন। ওকে কী বলবো, কিভাবে সামলাবো বুঝতে পারছিলাম না।”

    — “হ্যাঁ সেটাই। তোমার এত আদর ভালোবাসার মুন চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, ওর কথার বিপরীতে বলার সাহস আছে নাকি তোমার? মুন কষ্ট পাবে না? কতদিন পর ওর হাতের মুঠোয় তোমার হাত, ওর স্পর্শ লেগেছে গায়ে। হাত কি আর ছাড়াতে ইচ্ছে হবে?”

    — “নবনী! কিসব ভাবছো তুমি?”

    — “ভুল ভেবেছি?”

    — “অযথা সন্দেহ করছো। ওর প্রতি আমার আর কিছুই নেই!”

    — “অযথা কিছুই করছি না।”

    — “আমরা বসি। ঠান্ডা মাথায় আমার কথাগুলো শুনো।”

    — “বললাম না তোমার মতো নির্লজ্জের সঙ্গে কথা বলার রুচি আমার হচ্ছে না। সরো সামনে থেকে।”

    অমিতকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল নবনী। বসার ঘরে এতক্ষণ নীরব দর্শক হয়ে পুরো ঝগড়াটা দেখলো অমিতের মা, বাবা, বোন। তাদের চোখে চোখ পড়তেই হেসে ফেললো অমিত। মায়ের পাশে গা ঘেঁষে বসলো।

    — “তোমাদের আদরের বউয়ের ঝাঁঝ দেখলে?”

    — “দেখলাম।”

    — “একটুখানি আমার হয়ে কথা বলা উচিত ছিল না তোমাদের?”

    — “না।”

    — “আমার চেয়ে নবনী এখন বেশি আদরের, তাই না?”

    — “অবশ্যই।”

    হাসতে হাসতে এরশাদ সাহেব বললেন,

    — “নবনী ঠান্ডা মেজাজের বলে পার পেয়ে গেলি। তোর মায়ের মতন কেউ কপালে জুটলে রক্ষা ছিল না। বাসার জিনিসপত্র সব ভেঙে গুড়িয়ে দিতো। তোকেও বাদ রাখতো না।”

    — “একদম ঠিক। নবনীর উচিত ছিল তোকে আরো দু’টো কথা শুনিয়ে যাওয়া।”

    — “আম্মু, তুমি শুনেছো ও তখন বলছিল, আমার হাজবেন্ডের হাত কেন ধরলে?”

    — “হ্যাঁ।”

    — “এভাবে অধিকার নিয়ে কখনো ও আমাকে হাজবেন্ড বলেনি। খুব জোর র‍্যান্ডমলি মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছে হাজবেন্ড পরিচয়ে। তাও হয়তো দুই তিনবার। কিংবা ধরো মুনিয়ার ব্যাপারটা নিয়ে ও যেভাবে রিএ্যাক্ট করছে সেটাও নরমাল কিছু না। সন্দেহ, অধিকার এসব তো ভালোবাসা থেকেই আসে, তাই না? তোমারও কি মনে হয়, শি লাভস মি?”

    ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন শামীমা,

    — “তোকে কেউ ভালো না বেসে থাকতে পারে?”

    ভ্রু কুঁচকালো অমিত, — “উফফ আম্মু! সবার ভালোবাসার মতন না। আলাদা কিছু।”

    — “হ্যাঁ আলাদাই তো! আমারও মনে হয় তেমনটাই। তোর বাবাও গতকাল বলছিল।”

    মাথা দোলালো অনি,

    — “তোমাদের মনে হয় শুধু? আমি কিন্তু সিওর। নাতাশা আপুও। নয়তো তোমার গাধা ছেলেকে খুশি করার জন্য এত এফোর্ট কে দেয়?”

    — “পুরো পৃথিবীর মানুষ বুঝে যাচ্ছে, শুধু নবনী ছাড়া।

    — “ওকে সময় দে অমিত। কিছুটা সুস্থ অন্তত হোক। তাড়াহুড়ো করিস না। এখন যে সময়টা পার করছিস, সেটা এনজয় কর। এই যে লুকিয়ে লুকিয়ে ওকে দেখছিস, বাসায় ফিরে ওকে দেখতে না পেলে অস্থির হয়ে উঠিস, রাতে দুই একবার ঘুম থেকে জেগে ওর ঘরে উঁকি দিয়ে ওকে দেখে আসিস, ওকে ভালোবাসিস সেই কথা কখন না ও জেনে যায় সেই ভয়ে কত কথা বলতে গিয়েও আর বলা হয় না, এই সবকিছু তোর আবেগের ঝুলিতে সুন্দর স্মৃতি হয়ে থাকবে। সংসার যখন শুরু হয়ে যাবে তখন এই ব্যাপারগুলো আর থাকবে না। বিয়ের আগে ওর সঙ্গে প্রেম করার সুযোগ পাসনি। এবার নাহয় নবনী ওর মনের খবর টের পাওয়ার আগে ছোট্ট একটা প্রেমের গল্প তোদের হোক। সমস্যা শুধু একটাই তুই জানিস ভালোবাসা দু’পক্ষেই আছে। কিন্তু নবনী জানেনা। এইতো! সময় হলে নবনী নিজেই বুঝে নেবে ওর মনের খবর। এত ভাবিস না!”

    — “বুঝলাম। কিন্তু অকারণে ভুলভাল বুঝে গাল ফুলিয়ে আছে তার কী হবে?”

    পা দোলাতে দোলাতে বিজ্ঞ ভঙ্গিতে এরশাদ সাহেব বললেন,

    — “সংসারে সুখী হওয়ার দশটা ফর্মুলার মাঝে একটা হলো অর্ধাঙ্গিনী রেগে গেলে তাকে প্রিয় খাবার খাওয়ানো কিংবা গিফট করা। অবশ্যই এক্সপেন্সিভ কিছু না। লো বাজেটের মধ্যে তার প্রিয় কী আছে সেটা খুঁজে বের করতে হবে। এই ছোট্ট ছোট্ট খুশিগুলো মান অভিমানে বেশি কার্যকর। তবে এখনই না। যাক আরো কিছুক্ষণ। সুযোগ বুঝে ওর সঙ্গে কথা বলে ঝামেলা মিটিয়ে নিস।”

    .

    রাতে খাবার শেষে টিভি দেখছে নবনী। চাচা-চাচী নিজের ঘরে ঘুমুচ্ছে। তার পাশে আছে অনি। গভীর মনোযোগে সিনেমা দেখছে দু’জনে। হঠাৎ নবনীর মুখের সামনে একবাটি ফ্রেঞ্চফ্রাই হাজির হলো। অমিত দাঁড়িয়ে আছে বাটি হাতে। মিষ্টি হেসে বললো,

    — “চিরকুটটা খোলো প্লিজ!”

    বাটির উপর থেকে নবনী হাতে নিলো চিরকুটটা। ছোট ছোট অক্ষরে লিখা আছে, ‘স্যরি আলুখোর।’

    ভেংচি কেটে বাটিটা নিজের হাতে নিলো নবনী। অনি আর সে মিলেমিশে ফ্রেঞ্চফ্রাই খাচ্ছে। নবনীর পায়ের কাছে আসন পেতে বসলো অমিত।

    — “বাটি নিয়েছো। এবার কি আমি ধরে নেবো তোমার রাগ ভেঙেছে?”

    — “একটু একটু।”

    — “একটু একটু আবার কেন? পুরোটাই ভেঙে ফেলো।”

    — “ভাঙাও।”

    — “কী করবো বলো?”

    — “তুমি ঐ অসভ্য মেয়েটাকে বাদ দাও।”

    — “তোমার কেন মনে হচ্ছে আমি এখনো ওকে ভালোবাসি?”

    — “কারণ বলেছি তখন। বারবার বলতে পারবো না।”

    — “সত্যি বলছি নবনী মাথা কাজ করছিল না তখন।”

    — “দেখো অমিত, জানি হয়তো ওকে একেবারে ভুলে যাওয়া একটু কঠিন তোমার জন্য। কিন্তু ভুলতে হবে। নিজের জন্য হলেও অন্তত মন শক্ত করতে হবে। আর কত বুঝাবো তোমাকে? মুনিয়াকে আমি জাস্ট নিতে পারি না। ও একটা মাথাব্যথা।”

    মুনিয়ার কথা বলতে গিয়ে অস্থির হয়ে উঠলো নবনী। অমিতের ভালো লাগছে নবনীর এই অস্থিরতাটুকু দেখতে। তার পাশে অন্য মেয়েকে নবনী সহ্য করতে পারছে না তবুও কেন একটু হলেও মেয়েটা বুঝে না সামনে বসা এই মানুষটাকে সে আজকাল একান্ত নিজের মানুষ বলে ভাবতে শুরু করেছে।

    নবনীর চোখে চোখ রাখলো অমিত।

    — “সেই কবেই ভুলে গেছি ওকে। আমার মনের কোত্থাও নেই ও। একবার চোখের দিকে ভালোভাবে তাকিয়েই দেখো না! দেখো তো এই চোখে কাকে খুঁজে পাও?” খুব একটা সময় অমিতের চোখে তাকিয়ে রইতে পারলো না নবনী। অমিতের চোখের ভাষা আজ এত অচেনা লাগছে কেন? পড়তে গিয়ে নিঃশ্বাস ধরে আসছে। এত মায়া কেন আজ ঐ চোখজোড়ায়? তার গভীর চাহনীর মাঝে ডুবে যাবার ঠিক আগ মুহূর্তে নবনী নিজের লাগাম টেনে ধরলো। চোখ সরিয়ে নিলো টিভির স্ক্রিনে। বড্ড অপ্রস্তুত দেখাচ্ছে ওকে। হাসলো অমিত। সে জানে নবনীর চোখ সরিয়ে নেয়ার কারণ। নবনীর চোয়াল চেপে নিজের দিকে ফেরালো অমিত। বললো, — “চোখ সরিয়ে নিলে যে! খুঁজে দেখবে না আমার চোখে কাকে খুঁজে পাও?”

    — “আমি কারো চোখ পড়তে জানি না।

    — “আমার মন পড়তে জানো অথচ চোখ পড়তে জানো না?”

    — “তোমার মন, চোখ সব কেন পড়তে হবে আমাকে? আমি কি তোমার প্রেমিকা?”

    — “সিঙ্গেল আছি। চাইলে আমার প্রেমিকা হতে পারো।”

    — “তোমার মতো গাধার সঙ্গে প্রেম করবো আমি?”

    — “গাধারা জীবন বাজি রেখে ভালোবাসতে জানে।”

    — “জীবন বাজি রেখে ভালো কতজনই বাসতে জানে। প্রকৃতির নিয়ম বদলে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে ক’জন বলো তো? আমার মানুষটা কিন্তু ভালোবেসে ঠিক তা-ই করে ফেললো।”

    — “সত্যিই! এতখানি ভালোবাসতে জানলে হয়তো আমার মানুষটা আমার চোখের ভাষা বুঝতে পারতো। তাকে দূর থেকে ভালোবেসে মরতে হতো না। আমাকে কাছে টেনে, দু’বাহুর মাঝে বন্দী করে ভালোবাসার উষ্ণতায় বাঁচিয়ে রাখতো আমাকে।”

    অনি চেয়ে রইলো অমিত, নবনীর দিকে। অমিত এখনো চেয়ে আছে নবনীর চোখে। ঠোঁটের কোণে হাসি লেগে আছে এখনো। চঞ্চলতা হারিয়ে বিষণ্নতা জড়িয়ে আছে হাসিজুড়ে। সামনে বসা মেয়েটাকে একান্ত নিজের করে পাওয়া সত্ত্বেও নিজের বলে দাবি না করতে পারার যন্ত্রণা কেমন তা জানা নেই অনির। তবুও এই বিষণ্ণ হাসি, চাহনিতে মন বড্ড খারাপ করছে তার। অমিতের মতন সেও চেয়ে রইলো নবনীর দিকে। ও কি বুঝতে পারছে অমিতের হাসির মাঝে লুকিয়ে থাকা বিষণ্ণতা? বুঝতে পারছে ঐ নিষ্পলক চোখজোড়া কী বলতে চাইছে তাকে?

    অমিতের হাত টেনে নিজের পাশে বসালো নবনী। অমিতের চোখজোড়ায় আজ কোথাও মুনিয়াকে খুঁজে পাচ্ছে না নবনী। চোখজোড়া হন্যে হয়ে একটুখানি আশ্রয় চাইছে, ভালোবাসা চাইছে। কিন্তু কার কাছে?

    — “তোমাকে আজ খুব কনফিউজিং লাগছে। কী চাইছো, কী বলছো বুঝতে পারছি না একদম। ভালোবাসা চাইছো অথচ তোমার মাঝে মুনিয়াকে খুঁজে পাচ্ছি না আমি। মুনিয়া ছাড়া আর কার কাছে ভালোবাসা চাইবে তুমি? জীবনে ভালোবেসেছো ঐ একজনকেই। আমি ভুল ভাবছি নাকি সঠিক ভাবছি তা-ও বুঝতে পারছি না। ঠিক করে বলো তো অমিত কী হয়েছে?”

    — “তুমি আমার স্যরি একসেপ্ট করেছো?”

    — “ধুর! তখন একটু মেজাজ খারাপ হয়েছিল, এই যা। জনম জনম ধরে রাগ পুষে রাখবো নাকি?”

    — “ওহ! রাগ নেই আর? এতক্ষণ ভং ধরে বসেছিলে? অকারণে এত খাটাখাটুনি করে আলু ভাজলাম। টাইম ওয়েস্ট!”

    — “প্রসঙ্গ পাল্টাবে না অমিত। বলো কী হয়েছে?”

    সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো অমিত। চলে যাবার আগে বলে গেল,

    — “বলবো না নবনী। আসলে আমি বলতে পারবো না। প্রতিটা সম্পর্কে সীমাবদ্ধতা থাকে। ধরে নাও কারণটা ঠিক তেমন কিছু।”

    ৪৭

    অনেকদিন পেরিয়ে গেল নিজের বাসায় যাওয়া হয়নি নবনীর। আজ দুপুরে নানী কলে বলছিল, “শীত চইলা গেল, এইবার বাসায় পিঠার আয়োজন খুব একটা হয় নাই। তুই নাই তাই কিছু করতেও মন চায় না।”

    হঠাৎ বাসার জন্য মনটা কেমন ছটফট করে উঠলো। তক্ষুনি কারখানায় বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো নবনী, আজই বাসায় যাবে সে। সপ্তাহখানেক বেড়িয়ে আসবে ওখান থেকে। আজ কারখানার সবাইকে বিকেলেই ছুটি দিয়েছে নবনী। বাসায় ফিরে ব্যাগ গুছাতে বসে গেছে।

    তিনদিনের গভ: ইভেন্ট শেষে গতকাল রাতে বাসায় ফিরেছে অমিত। টানা দশদিন কাজের চাপে বাসায় ফেরা হয়নি ঠিকঠাক। দশদিনে প্রথম চারদিন শেষ রাতে বাসায় ফিরে, সকাল আটটা না বাজতেই আবার ছুটতে হয়েছে অফিেেস। শেষ ক’টাদিন শুধু জামাকাপড় পাল্টাতে বাসায় ফেরা হয়েছে। আজ অফিসে খুব একটা কাজের চাপ ছিল না। বিকেলে নবনী টেক্সটে জানালো, ‘বাসায় ফিরছি’। কতগুলো দিন পেরিয়ে গেছে নবনীর মুখোমুখি বসে লম্বা কথোপকথনের। মনটা কেমন করছিল নবনীর জন্য। আজ সুযোগ পেয়ে আর এক মুহূর্তও দেরী করলো না অমিত। বেরিয়ে পরলো অফিস থেকে।

    .

    অনি দাঁড়িয়ে আছে নবনীর ঘরের দরজায়। গোছগাছ দেখছে নবনীর। ছোটব্যাগটাতে ঠেলেঠুলে কাপড় ঢুকাতে ঢুকাতে নবনী বললো,

    — “তুমিও চলো না আমার সঙ্গে।

    — “ইচ্ছে তো করছে। কিন্তু ইম্পরট্যান্ট ক্লাস আছে আমার।”

    — “আমাদের ওখান থেকে ক্লাসে যেও।”

    — “কোথাও বেড়াতে গিয়ে ক্লাসে যেতে ভালো লাগে না।”

    — “নাতাশারও ক্লাস আছে। দু’জনে মিলে সকালে বেরিয়ে যাবে। দুপুর নাগাদ ফিরে আসবে দু’জন। তারপর আমরা বাসায় খুব মজা করবো। চলো না আমার সঙ্গে?”

    দরজায় কলিংবেল বাজছে। নবনীর কথার জবাব না দিয়েই অনি ছুটলো দরজা খুলতে। অমিত এসেছে। হাতে আইসক্রিমবক্স আর রামেন। আজ রাতে নিশ্চয়ই মুভি দেখার প্ল্যান আছে তার! কিন্তু রামেন খাওয়ার মানুষ যে চলে যাচ্ছে একটু পরই, সে কথা কি জানা নেই তার? অনি দরজা আটকে জিজ্ঞেস করলো, — “নবনী আপু বাসায় চলে যাচ্ছে এক সপ্তাহের জন্য, তুমি জানো না?”

    ভ্রু কুঁচকে অবাক চোখে অনির দিকে তাকালো অমিত। হাতের প্যাকেটগুলো ডাইনিং টেবিলের উপর রেখে নবনীর ঘরে গেল। খাটের উপর কাপড় বোঝাই ব্যাগ রাখা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নবনী সাজতে ব্যস্ত। মেজাজ খারাপ হলো অমিতের।

    — “নবনী…”

    অভিমান জড়ানো কণ্ঠে নবনীকে ডাকলো অমিত। ঘাড় ফেরালো নবনী।

    — “রেগে আছো কেন?”

    — “তুমি বাবার বাসায় যাচ্ছো আমাকে জানাওনি কেন?”

    হাসলো নবনী।

    — “যেমন করে রাগী রাগী গলায় জেরা করছো, একদম বর বর লাগছে তোমাকে।”

    — “ফাজলামি রাখো।”

    — “বলতাম তো! বেরোবার আগে অবশ্যই কল করে বলতাম আমার বাসায় যাচ্ছি।”

    — “আমি দশদিন বাসায় ছিলাম না। এতদিন পর বাসায় ফিরেছি অথচ তুমি চলে যাচ্ছো!”

    — “বাসার সবার জন্য মন খারাপ লাগছে। কতদিন বাসায় গিয়ে থাকি না! আব্বু আম্মুর সঙ্গে দেখা হয়না একসপ্তাহ পেরিয়ে গেছে।”

    — “সবার জন্য মন খারাপ হয় তোমার। হয় না শুধু আমার জন্য। এইযে আমি দশদিন বাসায় সময় দিতে পারিনি, একবারও মন খারাপ হয়েছে তোমার?”

    — “হয়েছে তো!”

    — “মিথ্যুক! মন খারাপ হলে যাওনি কেন আমার সঙ্গে দেখা করতে?”

    — “তুমি ব্যস্ত ছিলে। তাই বিরক্ত করিনি।”

    — “অযুহাত দেখিও না নবনী! চট্টগ্রামে আমি এরচেয়ে বেশি ব্যস্ত ছিলাম। তবুও জোর করে আমার সঙ্গে দেখা করেছো, রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেছ। যাওনি? তুমি ভালোই জানো আমার শত ব্যস্ততায় তুমি কল করলে কিংবা দেখা করতে চাইলে আমি বিরক্ত হই না।”

    — “তুমি এত রেগে গেলে কেন বলো তো?”

    — “আমি আজ মুভির প্ল্যান করেছিলাম। রামেন, তোমার ফেভারিট ফ্লেভারের আইসক্রিম কিনেছি ফেরার পথে। আগে জানলে আমি বাসায়ই ফিরতাম না।”

    — “একেবারে চলে যাচ্ছি? ফিরছি তো আবার! তখন লেট নাইট মুভি হবে।

    — “কবে ফিরবে তুমি?”

    — “এক সপ্তাহ থাকবো।”

    — “থেকে যাও ওখানেই। ফেরার প্রয়োজন নেই।”

    — “নাহ! আরো একমাস থাকতে হবে। তারপর তোমাকে টাটা বাই বাই।’ বুকের ভেতর ধুক করে উঠলো অমিতের। মাত্র একমাস হাতে আছে! তারপর? চলে যাবে নবনী? এই বিয়েটা, সম্পর্কটা ভেঙে যাবে চিরতরে? অস্থির হয়ে উঠলো অমিত। চেহারা ফ্যাকাশে হলো মুহূর্তেই। অযথা গালে, কপালে হাত ঘষে চোখে মুখে ফুটে উঠা ভয় আড়াল করতে লাগলো অমিত। কথার প্রসঙ্গ পালটে বললো,

    — “রেডি তুমি?”

    — “এইতো আর দুই মিনিট।” — তুমি নেমে এসো। আমি ব্যাগ নিয়ে নামছি।”

    — “শোনো না? অনিকে বলছিলাম আমার সঙ্গে যেতে। রাজি হচ্ছে না। জরুরি ক্লাস আছে বললো। এক কাজ করো, তুমি চলো আমার সঙ্গে। বেড়িয়ে আসবে কিছুদিন তুমি গেলে অনি আর আপত্তি করবে না।”

    — “না, কাজ আছে আমার।”

    — “তোমার শুধু কাজই থাকে অমিত! সারাজীবন বাসা আর অফিস করেই কাটিয়ে দিবে? এত কাছে আমাদের বাসা। আব্বু-আম্মু কত করে যেতে বলে তোমাকে অথচ তুমি যেতেই চাও না!”

    — “গতমাসেও গেলাম। পুরো বাসাসুদ্ধ লোক দুইরাত ছিলাম ওখানে।”

    — “গতমাসে গেলে এইমাসে যাওয়া যাবে না এমন নিয়ম আছে কোথাও? তোমার

    আসলে যাওয়ার ইচ্ছে নেই। একমাস পর আমি চলে গেলে তুমি বোধহয় আমার সঙ্গে আর যোগাযোগই রাখবে না।”

    গলার মাঝ বরাবর শক্ত কী যেন আটকে আছে। দম বন্ধ লাগছে অমিতের। কী আটকে আছে ওখানে? কষ্ট নাকি ভয়? বারবার কেন ওভাবে বলছে মেয়েটা? ও কি জানে এই কঠিন কথাটা মেনে নেবার ক্ষমতা তার একদম নেই? বিচ্ছেদ ভয় কতটা অসহায় করে দিচ্ছে তাকে? আর এক মিনিটও এখানে দাঁড়ালো না অমিত। খাটের উপর থেকে ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। যাবার সময় বলে গেল, — “আমি গাড়িতে আছি। তুমি এসো।

    ৪৮

    সাব্বিরের বাসায় বেলকনিতে বসে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে অমিত। খুব যত্নে হরেক রকম গাছ, বিভিন্ন ডিজাইনের মিরর, ছোট্ট দুটো বুকশেলফ, ফেইরি লাইট, বেতের মোড়া আর শতরঞ্জিতে বেলকনিটা সাজিয়েছে রুমানা। এই বাসায় বেড়াতে আসা প্রতিটা মানুষ প্রশংসা করে রুমানার সাজানো বেলকনির। কেউ কেউ বলে এখানে এলে নাকি মন ভালো হয়ে যায়। বন্ধুর খারাপ মনটা ভালো করতে এখানে নিয়ে এল সাব্বির। সঙ্গে তার নিজের হাতে তৈরী এককাপ কফি। অমিতের ভীষণ পছন্দ, সেই স্কুল জীবন থেকে! অমিতকে অনবরত কত কী বলছে, বোঝাচ্ছে সাব্বির। অথচ সেদিকে তার মনই নেই। কানে বোধহয় কোনো কথাই পৌঁছাচ্ছে না। সাব্বির দেখছে অমিতের অন্যমনস্কতা তবুও একনাগাড়ে বলেই চলছে। দরজায় দাঁড়িয়ে দুই বন্ধুকে দেখছে রুমানা। একজনের বিষণ্নতা, অন্যজনের বিষণ্নতা দূর করার প্রাণান্তকর চেষ্টা। লম্বা নিঃশ্বাস নিলো রুমানা। এক বোউল চওমিন ছোট্ট রাউন্ড টেবিলটার উপরে রেখে বললো,

    — “আলাদা প্লেটে নেয়ার প্রয়োজন নেই। চলো আজ তিনজন একসঙ্গে খাই।”

    ঘাড় ফিরিয়ে একবার বাটির দিকে তাকালো অমিত। দু’পাশে মাথা নাড়িয়ে বললো,

    — “খাও তোমরা। আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।’

    — “তোকে ছাড়া খাবো নাকি আমি!”

    — “আমার গলার ভেতর কী যেন আটকে আছে। বুকের ভেতরটা ফাঁকা লাগে। নিঃস্ব হওয়া অনুভূতি।”

    — “এত কেন ভাবছো, বলো তো? নবনী এখনো আছে তোমার সঙ্গে।

    — “ও নেই রুমানা। কখনোই আমার ছিল না। আমিই হয়তো ভুল ভেবেছি ওর বন্ধুত্বকে ভালোবাসা ভেবে।”

    — “ওর ট্রিটমেন্ট চলছে খুব বেশিদিন পেরোয়নি কিন্তু! কোনো কোনো কেইসে পেশেন্ট সুস্থ হতে তিন-চার বছরও সময় নেয়। আর নবনীর মাত্র দেড়মাস চলছে।”

    — “ও আজও বলছিল আমাদের সম্পর্কটার আর একমাস বাকি। তারপর চলে যাবে ও। একমাস কি খুব বেশি সময়? চোখের পলকে চলে যাবে। কী করব তখন? জোর করে বেঁধে রাখবো নবনীকে?”

    — “একমাস খুব বেশি সময় না হলেও, কম কিন্তু না। পজিটিভলি ভাবো না অমিত! দেড়মাসে নবনীর ইমপ্রুভমেন্ট খেয়াল করেছো একবার?”

    — “হুম।”

    — “বলো তো কী কী?”

    — “ওকে এখন আমরা সহজে একা সময় কাটাতে দেই না। অনি রাতে থাকে ওর সঙ্গে। ম্যাক্সিমাম টাইম অনেক রাত পর্যন্ত আমিই ওর ঘরে বসে থাকি। গল্প করি, গান শুনি একসঙ্গে। ও কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ে। সামির সঙ্গে খুব একটা কথা বলতে দেখি না। অনি বললো গত একসপ্তাহে একবারও ওকে কথা বলতে দেখেনি। সামিকে নিয়ে গল্প করে তবে আগের মতন না। অতীতের কোনো গল্পই নবনীকে খুব একটা করতে দেখি না। ও শুধু বর্তমান নিয়ে কথা বলে, ভবিষ্যৎ নিয়ে বলে। আমাকে জানতে চায়, শুনতে চায়। কোথায় যাচ্ছি, কী করছি, কেন করছি। আমার পাস্ট লাইফ, চট্টগ্রামের বাসায় থাকার সময়কার গল্প খুব ইন্টারেস্ট নিয়ে শুনতে চায়। এতরাত পর্যন্ত আমি ওর ঘরে বসে থাকি, ও ঘুমে টলতে থাকে তবুও কখনো বলে না তুমি চলে যাও। মন দিয়ে শোনে আমাকে।

    — “দ্যাটস দ্য পয়েন্ট অমিত! তুমি কি একবারও রিয়েলাইজ করতে পারছো না শি ইজ ফলিং ফর ইউ?”

    — “বন্ধুর বাইরে এক বিন্দুও নবনী আমাকে ভাবে না। আমার খারাপ সময়টাতে ও আমাকে আগলে রেখেছিল। আমার সমস্ত মনোযোগ ঢেলে তখন ওকে আমি শুনতাম। ভালো লাগতো শুনতে। তখন আমিও নবনীকে বন্ধুর বাইরে আর কিছুই ভাবতাম না। নবনীর বেলায় হয়তো ঠিক তাই হচ্ছে।”

    — “শুনতে শুনতেই তো ওকে ভালোবেসেছো। বাসোনি? নবনীর বেলায় কি এমন হতে পারে না?”

    — “নবনী সামিকে কতটা ভালোবাসে তুমি হয়তো এখনো রিয়েলাইজ করতে পারোনি।’

    — “রুমানার কথাটা বুঝতে ট্রাই কর। তুই কি ভালোবাসার শুরুতেই বুঝতে পেরেছিলে ইউ আর ইন লাভ উইথ হার? বুঝিসনি। নবনীও রিয়েলাইজ করতে পারছে না।”

    — “উহুম। কোনো দ্বিধা ছাড়াই নবনী বলে দিলো একমাস পর ও চলে যাবে। যদি ভালোবাসতো একবারও কি আমার মতো কষ্ট ওর হতো না? বলতে গিয়ে গলায় কথা আটকে যেত না?”

    — “আচ্ছা ধরে নিলাম নবনী তোমাকে ভালোবাসে না। তাই বলে তুমিও হাল ছেড়ে দিবে? থাকতে পারবে নবনীকে ছাড়া?”

    অসহায় চোখে রুমানার দিকে তাকালো অমিত।

    — “নবনী আমাকে ছেড়ে চলে গেলে কী করবো আমি নিজেও জানি না।”

    — “যাকে ছাড়া একদিনও তুমি ভাবতে পারো না তাকে কেন এত সহজেই যেতে দিবে? গল্পের শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবে না ওকে আঁকড়ে রাখার?”

    — “ওকে জোর করে ধরে রাখতে পারবো? সম্ভব? অন্য দশটা মেয়ের মতন ওর মেন্টাল কন্ডিশন নরমাল হলে আমি ওকে জোর করেই নিজের কাছে রেখে দিতাম।”

    — “জোর করতে বলিনি, যা হওয়ার স্বাভাবিকভাবেই হবে। তুমি প্লিজ ধৈৰ্য্য রাখো।”

    — “দেখ অমিত, যতটা তুই ভাবিস নবনীর কাছে অতটাও ইম্পরট্যান্ট না কিংবা ও তোকো আলাদাভাবে ট্রিট করে না। এটা কিন্তু তোর ভীষণ ভুল।”

    — “তুমি একটা ব্যাপার কখনো খেয়াল করেছো, অমিত? সামিকে নবনী যেভাবে ট্রিট করতো এক্সাক্টলি সেইম ওয়েতে তোমাকেও ট্রিট করে। ততটাই আপন ভাবে। আমি ওর ফ্যামিলি মেম্বারদের কাছে যতটা শুনেছি আমার তাই মনে হলো। সামির ইন্সিডেন্টের পর নবনী কারো সঙ্গে এতটাও ক্লোজ হয়নি। তুমি ভাবো নবনীর প্রতি তুমিই শুধু ডিপেন্ডেড? ভুল ভাবো অমিত। নবনীও তোমার প্রতি ডিপেন্ডেড,,যতটা ও সামির প্রতি ছিল, ঠিক ততটা। সামি আর নবনী খুব গল্প করতো। প্রতিদিনের ছোট ছোট ব্যাপারগুলোও শেয়ার করতো যেগুলো শেয়ার না করলেও চলে। ছোট ছোট ডিসিশন থেকে শুরু করে বড় ডিসিশন দু’জন ডিসকাস করতো। ঠিক একই কাজ নবনী তোমার সঙ্গে করে যা অন্য কারো সঙ্গে করে না। অন্য দশটা এ্যাফেয়ার যেমন হয় সামির সঙ্গে ওর রিলেশন তেমনটা না। তুমি নিজেও প্রেম করেছো। অলমোস্ট সব কাপলদের রিলেশন, এটাচমেন্ট এমনই হয়। বাট নবনী আর সামির ব্যাপারটা একবার খেয়াল করে দেখো সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা গল্প। দুজন দু’জনের ইনার পিস। একচুয়াল সোলমেট যাকে বুঝায়। ফিজিক্যাল অ্যাট্রাকশন কিংবা সাংসারিক খুব বেশি চাওয়া-পাওয়া কিছু ছিল না ওদের মাঝে। জাস্ট ভালোবাসা আর মানসিক স্বস্তি ছাড়া আর কিছুই ওদের চাওয়া ছিল না। ইট অল ওয়াজ হার্ট টু হার্ট কানেকশন। রিলেশন ডেপ্‌থ বুঝতে পারছো তো?”

    — “আমার চেয়ে বেশি আর কে বুঝবে ওকে?”

    — “তুমি ওর কতটা জুড়ে আছো সেটা কেন বুঝতে পারছো না অমিত?” রুমানার দিকে নিশ্চুপ চেয়ে রইলো অমিত। ওর কথা একদম বিশ্বাস হচ্ছে না। তাকে স্বান্তনা দিতেই হয়তো গাঁজাখুরি গল্প সাজাচ্ছে। অমিতের চোখের ভাষা বুঝতে বাকি রইলো না রুমানার। হাসলো সে।

    — “তুমি আমাকে বিশ্বাস করছো না।”

    — “একদম না।”

    — “সাব্বির এখন কল করে বলুক তুমি আপসেট, কিছু একটা নিয়ে খুব টেনশনে আছো। দেখো কিভাবে উড়ে চলে আসবে তোমার কাছে।”

    — “সবসময়ই আসে। আমার ভয়েস টোন একটু লো হলেই হলো। বাইরে আমাকে নিয়ে হাঁটতে বের হয়, চকলেট কিনে দেয়, মন ভালো না হওয়া পর্যন্ত নাছোড়বান্দার মতো পেছনে লেগে থাকে আমাকে হাসাবে বলে।”

    — “কেন আসে? ভালোবাসে বলেই তো আসে।”

    — “বুঝতে পারছি না কিছুই। আ’ম কনফিউজড!”

    — “এখন হয়তো নবনী নির্দ্বিধায় বলে দিচ্ছে ও চলে যাবে একমাস পর। কিন্তু সময় যখন হয়ে আসবে তোমাকে ছেড়ে যাবার, সত্যি বলছি ও পারবে না। কোনো অযুহাতে ও তোমার কাছে রয়ে যাবে। কিংবা দূরে গেলে হয়তো তোমার জন্য ওর ভালোবাসা অনুভব করবে। গল্প শেষে ও তোমার কাছে ফিরবেই অমিত।”

    — “আর সামি? ওকে ভুলবে না?”

    — “ধৈর্য্য অমিত, ধৈর্য্য! বহুবছর সামিকে ঘিরে নবনীর ধ্যান জ্ঞান ছিল। কতটা ভালোবাসলে একজন মানুষের এই অবস্থা হয় বুঝতে পারছো? চাইলেই সামিকে ও ভুলতে পারবে না। ইনফ্যাক্ট সামিকে ও কখনোই ভুলতে পারবে না। ওর জন্য টান রয়েই যাবে আজীবন।”

    — “সে কথা আমি জানি, মানছিও আমি। বলছি না সামিকে ও চিরতরে ভুলে যাক। কিংবা ওর জন্য আর কখনোই কিছু ফিল না করুক। কিন্তু আমি? আমার কী হবে? আমার সঙ্গে বাকি জীবনটা পাড়ি দিতে সামিকে একপাশে সরাতে হবেই। হয়তো নবনী আমাকে সামির মতো ট্রিট করে কিন্তু সামিকে সরিয়ে ওর মনের ভেতরের জায়গাটা আমাকে ছেড়ে দেয়নি এখনো। আর কখনো দিবে কি না তাও জানি না।”

    — “ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই পয়েন্টে এসে বারবার থামছো।”

    — “পারছি না রুমানা। আমি মহাপুরুষ না। শি ইজ মাই ওয়াইফ, আই লাভ হার। নবনীর সঙ্গে এক্সাক্টলি সেই রিলেশন, ফিলিংস শেয়ার করি যেমনটা সামি করতো। ইটস অল হার্ট টু হার্ট কানেকশন। শি ইজ মাই ইনার পিস। ওর সঙ্গে কথা না বললে, প্রতিদিন অন্তত একবার দেখা না হলে আমার সবকিছু এলোমেলো লাগে। দশদিন হলো নবনীর সঙ্গে বসে আমার কথা হয়নি ঠিকঠাক। এত ব্যস্ত আমি তবুও সময় বের করি পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট কথা বলেছি ওর সঙ্গে। নয়তো আমি শান্ত হতে পারতাম না, কাজ করতে পারতাম না। কিন্তু ঐ পাঁচ দশমিনিটের কথায় আমি স্যাটিসফাইড না। সারাদিন পর নবনীর সঙ্গে আমার লম্বা আলাপ করতে হয়। খুব জরুরি কিছু না। অকারণ কথা, কথার ফাঁকে নবনীর গুনগুন করে সুর তোলা, ওর পাশে বসা এসবকিছুর অভ্যাস হয়ে গেছে আমার। দিনশেষে এই সময়টুকু আমার চাই-ই চাই। টানা দশ দিন আমি ওর সঙ্গে সময় কাটাতে পারিনি। রাইট নাউ আ’ম ফিলিং দ্যাট আমার মাথায় গুলিস্তানের জ্যাম লেগে আছে। অসহ্য লাগছে সবকিছু। নিজেকেও।”

    — “নবনীর পাশাপাশি তোমারও ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন।”

    — “আমার ট্রিটমেন্ট নবনী। ওকে পাইয়ে দাও।”

    — “ও তোমারই আছে। শি ইজ….

    কথার ফাঁকে রুমানা দেখলো অমিতের মুখে হাসি। ফোনের স্ক্রিনে কিছু একটা দেখে হাসছে সে। নবনীর ম্যাসেজ এসেছে নিশ্চয়ই! চওমিন চিবুতে চিবুতে রুমানা বললো,

    — “কী লিখেছে তোমার ওয়াইফ? আই লাভ ইউ বললো?”

    — “মজা করছো?”

    — “দুই সেকেন্ড আগেও দুঃখে মরো মরো অবস্থা। কত কী বুঝাচ্ছি অথচ তোমার মনই ভালো হচ্ছে না। এখন তোমার চেহারায় প্রেম প্রেম হাসি। কেন বলো তো?” রুমানার দিকে মোবাইল এগিয়ে দিলো অমিত, নিজেই পড়ে দেখো

    রুমানা মোবাইল নেবার আগে সাব্বির ছোঁ মেরে অমিতের হাত থেকে ফোন নিয়ে নিলো। স্কুল পড়ুয়া কিশোর বয়সীদের মতন কৌতুহলভরা উচ্ছ্বাস তাদের দু’জনের চোখে মুখে।

    ‘তোমাকে আমার ভীষণ মনে পড়ছে। মনে হচ্ছে কোন সাত সাগর তেরো নদী দূরত্ব আমাদের মাঝে। কেন বলো তো?’

    .

    এক প্রকার লাফিয়ে উঠলো সাব্বির,

    — “দেখেছিস? আমাদের কথা সত্যি হলো তো? তোর কাছ থেকে দূরে গিয়ে নবনী নিজেও থাকতে পারবে না। শি অলসো লাভস ইউ ম্যান!”

    — “আর এটাও শুনে রাখো দুই তিনদিনের ভেতর কোনো না কোনো অযুহাতে নবনী ফিরে আসবে।”

    — “আমি জানি না ও আমাকে ভালোবাসে কি না কিংবা দুই তিনদিনের মাঝে ফিরবে কি না। তবে এতটুকু জানি ওকে দেখার ভীষন ক্রেভিং হচ্ছে। নবনী ম্যাসেজ দিয়ে আমাকে আরেকটুখানি উস্কে দিলো। এবার আমাকে ওর কাছে যেতেই হবে। নয়তো গায়ে জ্বর টর উঠে যেতে পারে। সঙ্গে সঙ্গেই সাব্বিরের বাসা থেকে বেরিয়ে গেল অমিত। এতটা সময় ঠোঁটে হাসি ধরে রাখলেও এখন বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে সাব্বিরকে। তার পিঠে আলতো করে হাত বুলিয়ে রুমানা জিজ্ঞেস করলো,

    — “হঠাৎ কী হলো? এতক্ষণ তো ভালোই ছিলে।’

    — “অমিতের সামনে কিছু বলতে চাইনি।

    — “কী?”

    — “নবনী থেকে যাবে তো অমিতের সঙ্গে?”

    এক মুহূর্ত চুপ করে রইলো রুমানা। সাব্বির চেয়ে রইলো তার দিকে উত্তরের আশায়।

    — “অবশ্যই ভালো কিছু হবে সাব্বির! এখন পর্যন্ত যা কিছু হচ্ছে সবটাই পজিটিভ, তাই না?”

    — “নবনীকে এই সম্পর্কে থেকে যেতেই হবে। নয়তো অমিতকে সামলানোর ক্ষমতা আমাদের কারো নেই। কিছু একটা করে ফেলবে ও।”

    ৪৯

    অনিকে নিয়ে রাত সাড়ে এগারোটায় নবনীর বাসায় এসে হাজির অমিত। নিজের ঘরে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কানে ইয়ারফোন গুঁজে মেসেঞ্জার কলে কথা বলছিল নবনী। পেছন থেকে নবনীর চোখ চেপে ধরলো অমিত। পাশ থেকে নাতাশা বললো,

    — “বলো তো কে তোমার চোখ ধরে আছে?”

    অমিতের হাতের উপর একবার হাত ছুঁয়েই নবনী চিৎকার করে উঠলো, – “অমিত!”

    নবনীকে নিজের দিকে ফিরিয়ে অমিত বললো,

    — “বুঝে ফেললে! এত জলদি! কিভাবে?”

    — “তোমার হাত ছুঁয়েই বুঝে গেছি।”

    — “তুমি ভাইয়ার হাত ছুঁয়েই বুঝে গেলে আপু? সত্যিই?”

    — “বুঝবো না কেন? অমিতকে আপাদমস্তক মুখস্থ হয়ে গেছে আমার। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ১০০ ছেলের মাঝে ওকে দাঁড় করিয়ে দিলে আমি ঠিক ওকে খুঁজে বের করতে পারবো। তৃপ্ত নয়নে নবনীর চোখে তাকিয়ে আছে অমিত। ঠোঁটে লেগে আছে পরম প্রাপ্তির আনন্দ। অমিতের দিকে চেয়ে রইলো নাতাশা। তার চোখের চাহনিতে, ঠোঁটের হাসিতে স্পষ্ট হওয়া আনন্দটুকু দেখেছে সে। বোনের সামান্য এতটুকু কথাতেই মানুষটা কত কী পেয়ে গেছে যেন! পরম আরাধ্য কারো কাছ থেকে সামান্য প্রাপ্তি কী আকাশ ছোঁয়ার অনুভূতি দেয়?

    — “অনিকে বাসায় একা ফেলে এলে অমিত?”

    — “ওকে সঙ্গে এনেছি। চাচীর সঙ্গে কথা বলছে।’

    — “অনি এসেছে!” খাট থেকে একলাফে নেমে বসার ঘরে ছুটলো নাতাশা। অমিতের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো নবনী।

    — “নাতাশা অনির জন্য পাগল! সারাক্ষণ বসে বসে প্ল্যান করে অনিকে নিয়ে শপিং যাব, অনিকে নিয়ে মুভি দেখবো, অনিকে নিয়ে পিৎজা খাবো, অনিকে নিয়ে দূরে বেড়াতে যাবো। বিরক্ত ধরে আসে আমার অমিত! মাঝেমধ্যে বলতে ইচ্ছে করে, যা ওকে বিয়ে করে ফেল। ওদিকে আমি কারখানায় বসে বসে ভাবি অমিতকে নিয়ে আজ চা খেতে যাবো, অমিতকে নিয়ে অমুক জায়গায় ঘুরতে যাবো, বাসায় ফিরে ঐ মুভিটা দেখবো। কাজ ফেলে আমি এসব ভাবি অমিত! লাফাতে লাফাতে বাসায় চলে এসেছি। এখানে আসার পর মনে হচ্ছে আজ কেন এলাম? কতদিন হয়ে গেলে আমাদের গল্প হয় না, মুভি দেখা হয় না, চা খাওয়া হয় না। আজ একটা মুভি দেখে কাল আসলেই পারতাম। কী সমস্যা বলো তো? তাবিজ করেছো তোমরা আমাদের দুই বোনকে?”

    — “নো বেবি। আই থিংক ইউ আর ইন লাভ উইথ মি।”

    চোখ টিপলো অমিত। ভেংচি কেটে নবনী বললো,

    — “হ্যাঁ মরে যাচ্ছি একদম তোমার জন্য।”

    — “উফ নবনী! বুকের বাঁ পাশে ব্যথা ধরিয়ে দিচ্ছো।”

    — “কাছে এসো। আমার হাতের নরম ছোঁয়ায় তোমার বুকব্যথা ভালো করে দেই।”

    — “নরম ছোঁয়ায় ব্যথা ভালো হয় না নবনী। শিহরন জাগে। জাগাতে চাও?”

    — “ছিঃ!”

    — “নরম ছোঁয়া দিতে চাইলে তুমি আর ছিঃ শোনাচ্ছো আমাকে?”

    — “নরম ছোঁয়ায় কী হয় না হয় আমি এত সব জানি নাকি?”

    — “জানবে কেমন করে? করেছো তো লাউ মার্কা ছেলের সঙ্গে কদু মার্কা প্রেম। আট বছরের প্রেম এমনি এমনি কেটে গেল। প্রেমিকার গায়ে কয়টা তিল আছে, দাগ আছে, কিছুই তার জানা নেই। সামিকে দেখে আমার নিজের ভীষণ আফসোস হয়। মনে মনে ভাবি, আহারে! ওর মতন ভাগ্যটা আমার কেন হলো না? চৌদ্দ বছরের একটা ছোট্ট ওড়না সামলাতে না জানা, সেক্স সম্পর্কে মিনিমাম আইডিয়া না থাকা একটা প্রেমিকা আমারও হতো। বয়স ষোলো পেরোতে পেরোতে প্র্যাক্টিক্যালি সব শিখিয়ে পড়িয়ে নিতাম। গায়ে কয়টা তিল আছে, দাগ আছে সব মুখস্থ করে নিতাম। নিজে আদর, যত্ন করে আরো দুই একটা দাগ এঁকে দিতাম।”

    — “ছিঃ অমিত! ষোলো বছরের একটা মেয়ের সঙ্গে তুমি…”

    — “ঐ বয়সে বড় মামার দুই মেয়ে একটা করে বাচ্চার মা ছিল। ছিঃ বলার কিছু নেই। আসলে তোমার সেক্স নলেজ কম তাই তোমার কাছে ষোলো বছরের মেয়ের সঙ্গে সেক্স ব্যাপারটা উইয়ার্ড লাগছে।”

    — হ্যাঁ তোমার তো খুব নলেজ। আড়াই বছরে প্রেমিকার সঙ্গে সংসার পেতে আরও এক্সপেরিয়েন্স হয়েছে তোমার। তা আমি মূর্খ মানুষ, তুমি আমাকে একটু শিখিয়ে নিলেই পারো।”

    — “এই তো লাইনে এসেছো। বলো কোন চ্যাপ্টার আগে শিখাবো? ব্যাসিক বুঝো তো? আমরা কি ব্যাসিক চ্যাপ্টার আগে পড়বো? প্র্যাক্টিক্যালি শিখাই তোমাকে, কী বলো?”

    হাত জোর করে অমিতকে থামাতে চাইলো নবনী। দুজনেই সজোরে হেসে উঠলো। পাশের ঘর থেকে হাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছেন জামিলা বেগম। চোখভরা নোনাজলে মনে মনে উপরওয়ালার কাছে প্রার্থনা করছেন, এই সম্পর্ক তুমি অটুট রাইখো মালিক। আমার নবনীর জীবন তুমি এলোমেলো করছিলা, এখন সেই জীবন তুমিই গুছায়া দাও। আমাগো আর পরীক্ষা তুমি নিও না।

    .

    বসার ঘরে ঘুমিয়ে আছে ওরা দু’জন। নবনী সোফায়, অমিত ডিভানে। শেষরাতে একবার জেগেছিলেন শফিক সাহেব। তখনও দু’জন বসে মুভি দেখছিল আর ফিসফিস করে গল্প করছিল। আড্ডা, সিনেমা শেষ করে ঘুমিয়েছে হয়তো ভোরের দিকে। ঘড়িতে বেলা দশটা, এখনও জাগেনি ওরা দু’জন। কেউ ওদের ডাকছেও না। বন্ধের দিন তাই অনি-নাতাশারও ভার্সিটি যাবার তাড়া নেই। ঐ দুজনও ঘুমাচ্ছে নাতাশার ঘরে। যথাসম্ভব আওয়াজ ছাড়া কাজ করার চেষ্টা করছেন নীতু। তবুও একটু আধটু শব্দ হয়েই যাচ্ছে আর বারবার জিভ কাটছেন তিনি। তার এক ঘন্টার শব্দহীন পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টায় পানি ঢেলে দিলো দরজার ওপাশে থাকা কেউ একজন। কলিংবেল বাজছে। ডিং ডং শব্দে ঘুম ভাঙলো অমিত, নবনী দু’জনেরই। একবার চোখ মেলে তাকিয়ে বালিশের নিচে আবার মুখ ঢেকে শুয়ে পড়লো অমিত। নবনী কৌতুহলী হয়ে পিটপিট করে চেয়ে রইলো দরজায়। নীতু দরজা খুলতেই চিৎকার করে উঠলো নবনী,

    — “আপুউউ, তুমি!”

    নবনীর চিৎকারে লাফিয়ে উঠে বসলো অমিত। নবনী ছুটে গিয়ে কাকে যেন শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে। অপরিচিত মহিলার গাল বেয়ে পানি ঝরছে। চাচী তার গালে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে অনবরত। উনিও নীরবে কাঁদছে। কে এই অপরিচিতা? এসব ভাবতেই ভাবতেই অমিতের চোখে চোখ পড়লো অপরিচিতার। মিষ্টি হেসে, ভাঙাস্বরে বললো,

    — “তুমি অমিত না?”

    — “জি।”

    — “সামিকে চেনো তো? আমি ওর বোন, সুমনা।”

    — “অহ আপনি!”

    — “নবনী আমার গল্প তোমাকে বলেনি, তাই না?”

    — “না না! আমি আপনাকে চিনি। আপনার ছবি দেখিনি কখনো এই যা! অনেক গল্প করে আপনাকে নিয়ে।”

    — “আমিও চিনি তোমাকে। পুরো বাসাসুদ্ধ লোক তোমাকে নিয়ে গল্প করে। খুব ইচ্ছে ছিল তোমাকে দেখার।”

    — “আপনি আজই দেশে ফিরলেন?”

    — “ফিরেছি গতকাল রাতে। ক্লান্ত ছিলাম তাই আসিনি। সারপ্রাইজ দেবো বলে আগে জানাইনি। তাই আজ সকাল সকাল হাজির হলাম।”

    — “রাখো তো অমিতের সঙ্গে গল্প! আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না তুমি এসেছো।

    কতবছর পর! চলো তো, আমার ঘরে চলো। অনেক কথা জমে আছে তোমার সঙ্গে। সুমনার হাত ধরে টানতে টানতে নিজের ঘরে নিয়ে যাচ্ছে নবনী। সুমনার চোখ আটকে রইলো অমিতের দিকে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখছে তাকে। গায়ের গড়ন, রঙে তার ভাইয়ের সঙ্গে খুব একটা মিল নেই। তবুও বুকের ভেতর মোচড় কাটছে ভীষণ। ভাইকে মনে পড়ছে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান – মরিস বুকাইলি
    Next Article বাতাসে গুনগুন – খাদিজা মিম

    Related Articles

    খাদিজা মিম

    রুদ্র – খাদিজা মিম

    August 6, 2025
    খাদিজা মিম

    বাতাসে গুনগুন – খাদিজা মিম

    August 6, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.