Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ইট’স কমপ্লিকেটেড – খাদিজা মিম

    খাদিজা মিম এক পাতা গল্প477 Mins Read0

    ইট’স কমপ্লিকেটেড – ২৫

    ২৫

    গরম গরম সবজি পাকোড়া একের পর এক মুখে পুড়ছে অমিত। বড্ড ফুরফুরে মেজাজে আছে সে। বিকেলের আগ পর্যন্ত যে বিষণ্ণতা তাকে ঘিরে রেখেছিল, তার ছিঁটেফোঁটাও আপাতত অমিতের মাঝে দেখা যাচ্ছে না। পাশেই নবনী বসে ফোনে কার সঙ্গে চ্যাট করছে। পাকোড়া চিবুতে চিবুতে অমিত বললো,

    — “খাচ্ছো না কেন?”

    — “হুম।”

    — “কী হুম হুম? ফোনের ভেতর একদম ঢুকে গেছ। ফোনের ভেতর কে আছে? তোমার সামি?”

    চোখ তুলে মুচকি হাসলো নবনী।

    — “ব্লাশ করছো! নতুন বউ তুমি যে বরের নাম শোনা মাত্রই ব্লাশ করতে হবে?”

    — “হ্যাঁ নতুনই তো। আমার বিয়ে হয়েছে সবে দুইমাস হলো।”

    — “আমার কপালটাই মন্দ। প্রেমিকাও আমার না, বউও আমার না। দুজনই আরেক ব্যাটা নিয়ে বিজি। আর আমি হলাম কাবাবের হাড্ডি।”

    — “সারাদিন পাখির বাচ্চার জন্য কান্নাকাটি করলে হাতির বাচ্চা তো আরেক ব্যাটা নিয়ে বিজি হবেই।”

    — “ইশ্! দোষ এখন সব আমার। বয়স চৌদ্দ পেরোনোর আগেই সামির প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া শুরু করেছো, সেই কথা কে বলবে?”

    — “নুডলস হাতে যারা প্রপোজ করে তাদের ফিরিয়ে দিতে নেই। এমন সুবুদ্ধিসম্পন্ন প্রেমিক বুকে আগলে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।”

    — “ট্রাস্ট মি নবনী, তোমার গল্প শুনে মন খারাপ গায়েব হয়ে গেছে আমার। সেই সঙ্গে খুব হিংসেও হচ্ছে। এমন মিষ্টি একটা প্রেমের গল্প আমার কেন নেই? আমি সামির সঙ্গে দেখা করতে চাই। চাই মানে চাই। উনাকে বাসায় দাওয়াত করো কিংবা রেস্টুরেন্টে, সেটা তোমার খুশি। তোমরা দুজন পাশাপাশি বসবে, আমি তোমাদের দেখবো। চোখের শান্তি হবে আমার জন্য। জলদি করে একটা ডেট ফিক্সড করে ফেলো তো!”

    রান্নাঘরের দরজায় নাতাশা দাঁড়িয়ে আছে। হতবাক হয়ে শুনছে অমিতের কথা। কোত্থেকে আসবে সামি? কিভাবে আসবে? গল্পের শেষটা কি তার জানা নেই?

    ২৬

    রাত আড়াইটা। চপিংবোর্ডে খটখট শব্দ তুলে ক্যাপসিকাম কাটছে অমিত। নুডলস রান্না করবে সে। এইরাতে নবনী ঘুম থেকে উঠে এল পানি খেতে। কিচেন থেকে আওয়াজ পেতেই ঘুম ঘুম চোখে সেদিকে উঁকি দিলো নবনী। ডাইনিং থেকে এক গ্লাস পানি খেয়ে চলে এল রান্নাঘরে। নবনীকে দেখে কাজ থামালো অমিত।

    — “এত রাতে উঠে এলে যে!”

    — “পানি খেতে এসেছি। আপনি এতরাতে এসব কাটছেন কেন?”

    — “নুডলস রান্না করব।”

    — “খুব খারাপ আপনি। বাসার সব ঘুমাচ্ছে, আর আপনি একা একা নুডলস রেঁধে খাবেন। আমাদের সঙ্গে শেয়ার করার ভয়ে এতরাতে রান্না করছেন, তাই না?”

    — “ধুর! ঘুম আসছিল না। অস্থির লাগছিল খুব। ভাবলাম কিছু একটা করি। তুমিই তো বললে সেদিন নিজেকে ব্যস্ত রাখতে।”

    — “অস্থির লাগছে কেন? মুনিয়ার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে?”

    — “হুম। অনেকদিন কথা হয় না। নিয়ম করে দিনে অন্তত দশবার কল করার

    অভ্যাস আমার।

    — “বহু বছরের অভ্যেস। মুছে যেতে সময় লাগবে। ভালোবাসাও মোছেনি, রয়ে গেছে মনের কোণে। সে তো বারবার হাতছানি দিয়ে ডাকবেই।”

    — “তোমাদের মাঝে ঝগড়া হয়?” —

    — “হয়।”

    — “কথা বন্ধ থাকে?”

    — “থাকে।”

    — “তারপর? কে আগে স্যরি বলো?”

    — “দু’জনই। একতরফা ব্যাপারটা আমাদের মাঝে নেই। ডমিনেটিং বিহেভিয়ার আমাদের কারোরই পছন্দ না। ঝগড়া হয়, ঝগড়ার মাঝে হাসাহাসিও হয়, তারপর দু’জন দু’জনকে স্যরি বলা। কখনো যদি খুব রেগে যাই দু’জনই খুবজোর একবেলা কথা বন্ধ। তারপর ও আমাকে কিংবা আমি ওকে কল করে বলি, চলো মিট করি। গো ধরে বসি থাকি না- আমি কেন স্যরি বলবো? ওকেই স্যরি বলতে হবে, ওকেই রিকুয়েস্ট করতে হবে।”

    — “ব্যস? একবেলা বাদেই সব সমাধান?”

    — “হ্যাঁ। আর কী হবে? ভালোবাসি দু’জন দু’জনকে। রাগ তো কেয়ামত পর্যন্ত পুষে রাখা যাবে না, তাই না?”

    — “তোমাদের এই ব্যাপারটা ভাবলেই আমার এত শান্তি শান্তি লাগে! কত আন্ডারস্ট্যান্ডিং তোমাদের মাঝে! কতটা রেসপেক্ট করো দু’জন দু’জনকে। রিলেশন এমনই হওয়া উচিত। কিন্তু সবার ভাগ্যে এমন মেলে না। তুমি যাকে ভালোবাসো সে তোমার ভালোবাসা বুঝতে পারছে, রেসপেক্ট করছে এটা বিশাল ব্যাপার।”

    — “আপনি বোঝেন?”

    — “জানি তো এখন আমাকে খুব খোঁচাবে।”

    — “জানি খুব অনধিকার চর্চা হয়ে যাচ্ছে। আপনার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এতটাও বলার অধিকার আমি রাখি না। তবুও বলছি, চাচী আপনাকে ভীষণ মিস করে।”

    — “আমি করি না?”

    — “দেখতে পাচ্ছি না। কী করে বলবো?”

    — “মাকেও আমি ভীষণ মিস করি নবনী। মুনিয়ার সঙ্গে রিলেশনশিপে যাওয়ার আগে মা ছিল আমার বেস্টফ্রেন্ড। পুরো পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ভালো আমি মাকেই বেসেছি। মায়ের সঙ্গে আমি কতটা ক্লোজ ছিলাম সেসব কাউকে এক্সপ্লেইন করা পসিবল না।”

    — “জানি আমি একটু আধটু। চাচী বলেছে আমাকে। তাইতো বারবার অনধিকার চর্চা করছি।”

    — “মায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা কেমন নষ্ট হয়ে গেল!”

    — “চাচীর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেন খারাপ হবে সেটাই ভেবে পাই না। যদি চাচী সম্পর্কটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতো তাহলে হয়তো ভেবে নিতাম সে কারণে সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু চাচী খুব ব্রড মাইন্ডেড, আপনি নিজেই বললেন। তবুও কেন এই দূরত্ব?”

    — “শুরুটা অকারণে বলতে পারো। মুনিয়ার সঙ্গে রিলেশনের পর থেকেই আম্মুর কাছ থেকে আমি দূরে সরে এলাম। এমনকি আমি রিলেশনে আছি সেটাতো আম্মুকে সবার আগে বলা উচিত ছিল। তাও হাইড করলাম। কেন জানি না আম্মুকে আমার কল দিতে ইচ্ছে হতো না। সারাদিনে একবারও না।”

    — “মুনিয়ায় মোহাবিষ্ট ছিলেন।”

    — “এক্সাক্টলি। শুধু আমার মা না, বন্ধুদের সঙ্গেও আমার বিশাল দূরত্ব চলে এল। ওরা কল করতো, রিসিভ করতাম না। মিট করতে চাইতো, মিথ্যা বাহানায় ক্যান্সেল করতাম। এমনকি আমি বাসায়ও যাই না চারবছর যাবৎ। কোরবানি ঈদে ঠেলেঠুলে হয়তো আব্বু আমাকে চট্টগ্রাম নিয়ে যায়। কিন্তু বাকি সময় ঢাকাতেই থাকি। আত্মীয়দের কোনো অনুষ্ঠান সহজে আমি এটেন্ড করি না। আমার ছোটবেলার বন্ধু সাব্বিরের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই দুইবছর ধরে। একই সঙ্গে বেড়ে উঠেছি আমরা। ইন্টার পর্যন্ত একসঙ্গে দুপুরের খাবার খেয়েছি। কখনো ও আমার বাসায় লাঞ্চ করতো, কখনো আমি ওর বাসায় করতাম। পাশাপাশি বাড়ি আমাদের। অনার্সে ও ঢাকায় চলে এল, আমি রয়ে গেলাম চট্টগ্রাম। তবুও আমাদের বন্ধুত্বে তিল পরিমাণ ঘাটতি হয়নি। মুনিয়ার সঙ্গে রিলেশন হওয়ার পর বেচারা দুইবছর বারবার আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইতো, সময় নিয়ে কথা বলতে চাইতো, আমি সময় দিতাম না। ও ভীষণ রাগ করতো। বলতো, তুই অনেক দূরে চলে যাচ্ছিস। ওর এই কথায় কি রাগ হতো আমার! মনে মনে বকতাম, শালা তুই কি আমার গার্লফ্রেন্ড?”

    — “সেসব জের ধরেই কি আর বন্ধুত্ব টেকেনি?”

    — “ওর বিয়ে ছিল। বারবার কল করছিল আমি যেন অন্তত তিনদিন আগে উপস্থিত থাকি।”

    — “যাননি?”

    — “কী করে যাবো? মুনের বার্থডে ছিল।”

    — “বিয়ের দিন?”

    — “হ্যাঁ।”

    — “সর্বনাশ! মুনিয়ার বার্থডে ফেলে মুনিয়ার প্রেমিক যাবে নাকি কোথাও?”

    — “হ্যাঁ তাই তো যাইনি আমি। গাড়িতে উঠার আগ অব্দি ও আমাকে কল করেছে। আমি রিসিভ করিনি। সৌমিক বলেছে, সাব্বিরের এত মন খারাপ আগে কেউ কখনো দেখেনি। সেইবারই শেষ। আর কখনো যোগাযোগ হয়নি আমাদের।”

    — “আপনি চেষ্টা করেননি?”

    — “তখন করিনি। সত্যি বলতে তখনও রিয়েলাইজই করিনি আমি একটা অন্যায় করেছি। প্রায় এক সপ্তাহ পর আমার মনে হলো ওকে একটা কল করা উচিত। করেছিলাম, ও আমাকে ব্লক করে রেখেছে। সব বন্ধুদের সঙ্গেই আমার এখন দূরত্ব। দূরত্বটা শুধু যোগাযোগের অভাবে না, আরো একটা ঘটনা আছে। মুন যখন আমাকে এভয়েড করে নতুন সব ছেলেদের মেলামেশা শুরু করলো, আমার পরিচিত সবার চোখেই পড়তে লাগলো। বিশেষ করে বন্ধুদের। ওরা আমাকে বারবার বোঝাতো মুন ভালো না। সেল্ফ রেসপেক্ট বিসর্জন দিয়ে ওর সঙ্গে রিলেশন কন্টিনিউ করার মানে হয় না। মুনকে নিয়ে বিভিন্ন বাজে কথা বলতো। তবে লিমিট ক্রস করতো না কেউই। কিন্তু আমার শুনতে অসহ্য লাগতো। আম্মুর সঙ্গেও আমার দূরত্ব আরো বেশি বাড়লো ঐ একই কারণে। আম্মু, অনি, আব্বু, ফ্রেন্ড সার্কেল এদের সবাইকে আমার বিষের মতন লাগতো। অথচ এই মানুষগুলোর সঙ্গে জীবনের সবচাইতে সুন্দর মুহূর্তগুলো আমি কাটিয়েছি।”

    — “তারপর মুনিয়া এসে সব তছনছ করে দিলো?”

    — “হ্যাঁ।”

    — “অবলীলায় মুনিয়াকে ব্লেইম করছেন। নিজের দোষটা কে দেখবে? বন্ধু আপনার, মা-বাবা আপনার, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখার দায়ও আপনার। প্রেম জীবনে আসবেই, তাই বলে বাকি সম্পর্ক থেকে সরে আসার কোনো যুক্তি নেই। আপনি আপনার পৃথিবীটা এত বেশি ছোট করে ফেলেছেন যে আপনিই সেখানে আর নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না।”

    — “হ্যাঁ তা ঠিক। দোষ আমারই ছিল। মুন আমাকে বিট্রে করছে তা তো আমার চোখের সামনেই ছিল। তবুও আমি মানতে চাইনি, দেখতে চাইনি। সত্য বলার দায়ে ওদেরকেই খারাপ ভেবেছি।”

    — “পৃথিবীতে কোনোকিছুই স্থায়ী না। ভালোবাসা, ঘৃণা, দূরত্ব, মায়া সবকিছুর অন্ত আছে। দূরত্ব মিটিয়ে নিন। সুন্দর স্মৃতির মানুষগুলোকে বুকের কাছে আগলে রাখুন। জীবন সহজ হবে।

    — “তুমি সেদিন ছাদে বলেছিলে আমি কারো ভালোবাসার মূল্য দেইনি, তাই মুনও দেয়নি। ফিরে এসে আমি অনেক ভেবেছি, জানো? একটা সম্পর্কে ডুবে কত কী হারালাম। আমি তো সবই হারিয়ে ফেলেছি নবনী। সুখ কোথায় আমার জীবনে? আম্মু কোথায়? আমার সেই পুরোনো বাসা কোথায়? অনির সঙ্গে আমার আন্ডারস্ট্যাডিং কোথায়? আমার প্রতি ওর অধিকার কোথায়? আমার বন্ধু-বান্ধব, দলবেঁধে আমাদের পাহাড়ে সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানো, সেসব কোথায় হারালাম আমি? মুন আমার কাছ থেকে সরে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত দুই বছর কেটে যাচ্ছে, সুখ কী, আমি ভুলে গেছি। স্বেচ্ছায় জীবন নরক করেছি আমি।”

    — “বললাম তো দূরত্ব মিটিয়ে নিন। জীবন আপনার আবারো স্বর্গ হোক।”

    — “এত সহজ?”

    — “খুব জটিলও না।”

    — “কোন মুখে দাঁড়াবো? আম্মু আর সাব্বিরকে আমি অনেক বেশি মিস করছি। কিন্তু কল করার সাহস পাচ্ছি না।”

    — “কল করার কী প্রয়োজন? বাসায় চলে যান।”

    — “পাগল তুমি? কল করে কথা বলতেই লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছি আর তুমি বলছো বাসায় যেতে!”

    — “বোকার মতো ভাবছেন, সবকিছু আরো জটিল করছন। ঐটা আপনার নিজের বাসা যেখানে আপনি বড় হয়েছেন। ঐ বাসায় আপনার চেয়ে বেশি অধিকার আর কার আছে, বলুন তো? নেক্সট উইক চট্টগ্রাম যাচ্ছেন না? কাজ শেষে বাসায় চলে যাবেন। চাচীকে একবার জড়িয়ে ধরবেন শুধু। স্যরিও বলতে হবে না। দেখবেন সবকিছু ঠিক আগের মতো হয়ে গেছে। চাচী আপনার অপেক্ষায় আছে। ঠিক আগের মতই অসীম ভালোবাসা নিয়ে। ফিরে যান মায়ের কাছে, মা সবটা আবার সহজ করে দেবে।”

    — “সত্যিই এত সহজ?”

    — “আমি যতটা বলছি তারচেয়ে আরো বেশি সহজ।

    — “আর সাব্বির? আমার সব বন্ধু বান্ধব, অনি, আব্বু?”

    — “অনি আপনার ঘরেই আছে। ও আপনাকে ভীষণ ভালোবাসে। আপনার শত তেলেসমাতি দেখেও ভালোবাসা কিন্তু কমেনি। চাচার বেলায়ও তাই। ওরা আপনাকে নিয়ে ভীষণ কনসার্নড। এত ভাববেন না। যত ভাববেন তত জটিল হবে। অনিকে নিয়ে ঘুরতে যান, গল্প করুন, মুভি দেখুন, মনের ভেতর কী চলছে, শেয়ার করুন। একদিনে তো আর সব হবে না। ধীরে ধীরে সব আগের মতো হয়ে যাবে। আপনি শুধু এক পা এগিয়েই দেখুন। আর রইলো কথা সাব্বিরের। সেটাও হয়ে যাবে। আছি তো আমি আরো পাঁচমাস। দেখবেন টুপ করে একদিন আপনার বন্ধু চলে আসবে আপনার সামনে।”

    — “ও খুব জেদী।”

    — “হ্যাঁ, হ্যাঁ দেখা যাবে তখন। মনের ভেতর এত সংশয় রাখলে কিছুই ঠিক হবে না। সব ঝেড়ে ফেলুন, নতুন করে ঝুলিভর্তি ভালোবাসা কাছের মানুষগুলোকে উপহার দিন। এভ্রিথিং উইল বি ফাইন। অনেক অনেক জ্ঞান দিয়েছি, আমার এবার ঘুমাতে হবে। আপনার রান্নাও দেখছি শেষ। খেয়ে জলদি করে ঘুমাতে যান।”

    — “তুমি খাবে না? তোমার জন্যই তো বেশি করে রান্না করলাম।”

    — “উহুম।”

    — “নুডলস না তোমার ফেভারিট?”

    — “হ্যাঁ। কিন্তু এত রাতে খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। আপনি খান। এতটা না খেতে পারলে রেখে দিন। আমি সকালে গরম করে খেয়ে নেবো। গুড নাইট

    নবনী পা বাড়ালো নিজের ঘরে। পেছন থেকে নিচুস্বরে ডাকলো অমিত,

    — “নবনী…”

    — “হ্যাঁ?”

    — “যার সঙ্গে আমরা আমাদের সবচাইতে গোপন কথাগুলো শেয়ার করি, সেই মানুষটা যদি আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপারে মন্তব্য করে, কথা বলে, সেটা কিন্তু অনধিকার চর্চা না। যদিও আমরা কাজিন, কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা বোধহয় বন্ধুত্বেরই। কী সহজে দুজন দুজনের ফিলিংসগুলো, নিজেদের গল্পগুলো শেয়ার করছি। শুধু কাজিনের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলে হয়তো এতকিছু শেয়ার করা হতো না। ধরে নাও আমি তোমার বন্ধু। নির্দ্বিধায় তুমি আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে যা ইচ্ছে বলতে পারো। আমি কখনোই কিছু মনে করবো না।”

    — “আপনার কথা ঠিক ফেলে দেয়া যাচ্ছে না। বন্ধুর মতই মেলামেশা চলছে আমাদের।”

    — “ব্যাপারটা আরেকটু সহজ করি?”

    — “হ্যাঁ করুন না।”

    — “প্লিজ ব্যাপারটা অন্যভাবে নিও না। আমার একটা নাম আছে। সবসময় শুনছেন, এই যে বলে ডাকাডাকি করো। কেমন না বলো? নাম ধরেও ডাকো না, ভাইয়া বলেও ডাকো না।”

    মুখে ওড়না চেপে সজোরে হেসে উঠলো নবনী। ভ্রু কোঁচকালো অমিত।

    — “হাসছো কেন?”

    — “ভাইয়া ডেকে অভ্যস্থ হলে বিপদ। রিলেটিভ বা অন্য কারো সামনে যদি ভাইয়া ডেকে ফেলি! সবাই বলবে না হাজবেন্ডকে ভাই কেন ডাকছে? আপনি চাইলে ভাইয়া ডাকতে পারি।”

    — “আমিও চাচ্ছি না ভাইয়া-টাইয়া ডাকো। চার বছরের ডিফারেন্সই তো। আহামরী কিছু না। তুমি আমাকে নাম ধরে ডাকলেও খারাপ শোনাবে না।”

    — “অমিত ডাকতে হবে?”

    — “প্লিজ! আমার খুব উইয়ার্ড ফিল হয়। আমার দাদী আমার দাদাকে এভাবে শুনছেন, এই যে বলে ডাকতো।”

    — “আসলে কেমন ফিল পান, বলুন তো? আমাকে বউ বউ মনে হয়?”

    আবারও হাসতে লাগলো নবনী। ইতস্তত হয়ে মুচকি হেসে অমিত বললো,

    — “ধুর!”

    — “আচ্ছা ডাকবো, অমিতই ডাকবো।

    — “তুমি করে বলতে পারো, কিংবা তুই। বন্ধুই তো আমরা তাই না?”

    — “তুমি ঠিক আছে। ওসব তুই টুই আমার দ্বারা হবে না।”

    — “কাল সকালে কারখানায় যাচ্ছো তো, তাই না?”

    — “হ্যাঁ।”

    — “ড্রপ করে দেবো।

    — “ওকে, গুড নাইট।”

    .

    খাটের উপর বসে পা দোলাচ্ছে সামি। নবনী দরজা লক করতেই সামি বললো,

    — “অতঃপর ঘটা করে বন্ধুত্বের শুরু।”

    — “হ্যাঁ।”

    — “খারাপ সময়ে ছেলেটার একটা বন্ধু সত্যিই দরকার ছিল যার সঙ্গে সব কথা শেয়ার করা যায়। নয়তো এখনকার মানুষগুলোর জীবনের প্রতি মায়া মমতা আছে নাকি? কখন কোন অঘটন ঘটিয়ে বসে কে জানে!”

    — “হ্যাঁ খুব ডিপ্রেসড ছিল। অবশ্য এখনো আছে। তবে আগের চেয়ে বেটার।”

    — “কতবছর পর তোমার নতুন কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব হলো?”

    — “অনেক বছর। অনার্সে ভর্তি হলাম যে বছর তখন বন্ধু বান্ধব পেলাম কয়েকজন। এরপর আর কারো সঙ্গে ফ্রেন্ডশিপ হয়নি।”

    — “অলমোস্ট এক যুগ!”

    — “হ্যাঁ।”

    — “বেশ হলো কিন্তু বলো? এই বুড়ি বয়সে বন্ধু পাওয়া যায় নাকি?”

    — “বুড়ি বলছো কাকে?”

    — “অবশ্যই তোমাকে।”

    — “আমাকে দেখলে এখনো টুয়েন্টি মনে হয়।”

    — “কে বললো? তোমার ফেসবুকের রোমিও?”

    — “সবাই আমার কদর বোঝে। তোমার কাছেই শুধু দাম পেলাম না।”

    — “এই তো বুড়ি হওয়ার লক্ষ্মণ। ঘর সংসার করতে করতে বুড়ি হয়ে যাওয়া মহিলারা শেষ বয়সে হাজবেন্ডকে এসব বলে।”

    — “ধুর ছাই। যাও সরো। ঘুমাবো আমি।”

    — “সামি সামি করে ডেকে ডেকে ঐ দূর আকাশ থেকে পৃথিবীর বুকে টেনে নিয়ে এসেছো। আর এখন বলছো দূর হতে? তা হবে না ললনা। আমি আছি, আমি থাকবো। নবনীর সঙ্গে সামি ছায়া হয়ে থাকবে আজীবন।”

    ২৭

    অফিস থেকে ঘরে ফিরতেই অমিতের নাকে বিরিয়ানির ঘ্রাণ ঠেকলো। এ তো মায়ের হাতের কাচ্চির ঘ্রাণ! মা এসেছে? চমকে উঠলো অমিত। তড়িঘড়ি করে জুতোগুলো শু-র‍্যাকে তুলে রেখে পা বাড়ালো ভেতরের দিকে। ডাইনিংরুমে আড্ডার আসর জমেছে। হাত নাড়িয়ে বরাবরের মতো রসিক কায়দায় গল্প শোনাচ্ছেন অমিতের বাবা। সারাদিনের কঠিন খাটাখাটুনি শেষে বাসায় ফিরে এমন সারপ্রাইজ মিলে যাবে ভাবতে পারেনি অমিত। ক্লান্তি সব মুহূর্তেই কোথায় যেন পালালো! মনের ভেতর অদ্ভুত আনন্দ লাগছে। একদম ছোট বেলার মতন। কিন্ডারগার্টেনে পড়ার সময় স্কুল শেষে মা-বাবাকে দেখলে যেমনটা হতো, ঠিক তেমন।

    ছেলেকে দেখা মাত্রই স্ত্রীকে চিৎকার করে ডাকতে লাগলেন এরশাদ সাহেব,

    — “শামীমা? এ্যাই শামীমা, দেখো তোমার ছেলে এসেছে!”

    তড়িঘড়ি করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন শামীমা। একগাল হেসে বললেন,

    — “এসেছিস! যা, যা ফ্রেশ হশে আয়। কাচ্চি রান্না প্রায় শেষদিকে। গরম গরম এখনি বেড়ে দিচ্ছি টেবিলে।”

    মাকে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল অমিত। কিসের জড়তা যেন এসে বারবার আটকায় তাকে। মায়ের সঙ্গে এত দূরত্ব কেন চলে এল তার?

    মাথা হেলিয়ে নিজের রুমে চলে গেল অমিত। পেছন পেছন গেল নবনীও। গায়ের জ্যাকেট খুলতে খুলতে অমিত বললো,

    — “কিছু বলবে নবনী?”

    — “চাচা-চাচীর সঙ্গে কথা বলোনি কেন?”

    — “জানি না।”

    — “জানি না মানে? উনারা বাসায় এসেছেন, এটলিস্ট কেমন আছো সে কথা তো জিজ্ঞেস করতে পারতে।”

    — “হুম পারতাম। খুব সহজ এবং স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু কেমন কঠিন হয়ে গেছে আমার জন্য।

    — “উনারা তোমার মা-বাবা। হ্যাঁ কথা কাটাকাটি হয়েছে উনার সঙ্গে,

    কমিউনিকেশন গ্যাপ ছিল তাই হয়তো আন্তরিকতা আগের মতন নেই। কিন্তু যে কারণে এতকিছু হয়েছে সেই কারণটাই তো এখন আর নেই। তাহলে এই দূরত্বটুকু এবার তোমার মিটিয়ে নেয়া উচিত না? দেখো, ভুল কিন্তু তোমারই ছিল। চাচা চাচীর কোনো দোষ আমি দেখি না। তবুও সবকিছু ভুলে উনারা বারবার কাছে টানতে চাইছে, আগলে রাখতে চাইছে। তুমি কেন এখনও দূরেই সরিয়ে রাখছো নিজেকে?”

    — “গিল্ট ফিল হচ্ছে খুব।”

    — “বলেছিলাম চাচীর সঙ্গে আবার কখনো দেখা হলে উনাকে জড়িয়ে ধরবে। মুখ ফুটে কিচ্ছু বলতে হবে না তোমার, দেখবে এমনি এমনি সব ঠিক হয়ে গেছে। বলেছিলাম কি না বলো?”

    — “হুম।

    — “তাহলে একবার জড়িয়ে ধরোনি কেন উনাকে?”

    — “আব্বু-আম্মুকে দেখে খুব খুশি হয়েছি। বহুদিন উনাদের আমার বাসায় দেখে এতখানি খুশি হইনি। কেন যেন মনে হচ্ছিল পুরোনো সময়ে ফিরে গেছি। কিন্তু আম্মুকে জড়িয়ে ধরা কিংবা আগের মতো সবকিছু গুছিয়ে নেয়া এতটাও সহজ হবে না নবনী।”

    — “লাগবা বাজি?”

    — “কিসের বাজি?”

    — “সব ঠিক হয়ে যাবে। জাস্ট কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। একবার সবকিছু ভুলে চাচীকে জড়িয়েই দেখো।”

    — “পারবো না আমি।”

    — “অমিত প্লিজ!

    — “আমার দিকটা একটু বোঝার চেষ্টা করো।

    — “বুঝেছি। বুঝে শুনেই বলছি।”

    অমিতের হাত চেপে ধরলো নবনী। বললো,

    — “চলো, আর কোনো কথা হবে না।”

    নবনীকে আর বারণ করতে ইচ্ছে হচ্ছে না অমিতের। মনে ভীষণ দ্বিধার সঙ্গে লড়তে লড়তে সে চলে গেল ডাইনিংরুমে। মা টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। পেছন থেকে একবার মৃদু স্বরে ডাকলো অমিত, “আম্মু…”

    শামীমা পেছন ফিরতেই চোখ শক্ত করে বুজে মাকে জড়িয়ে ধরলো অমিত। হঠাৎ যেন এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল এই ঘরের সবকিছু। খানিকবাদে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন শামীমা। ভাঙা স্বরে স্বামীকে বলতে লাগলেন,

    — “অমিতের আব্বু, তুমি দেখতে পাচ্ছো? আমার বাচ্চাটা আমাকেই বেশি পছন্দ করে। এই দেখো, তোমাকে জড়িয়ে না ধরে আমাকে ধরলো।”

    চোখ ভিজে এল এরশাদ সাহেবের। কৃতজ্ঞ ভরে তাকিয়ে রইলেন নবনীর দিকে। ওপাশ থেকে নবনীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো অনি। ফিসফিসিয়ে বললো,

    — “থ্যাংকিউ আপু। তুমি আম্মুকে আজ কতটা দিলে, তা তুমি জানো না।”

    .

    নবনীকে দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে শামীমা। তার কাঁধে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন তিনি। চাচীকে পরম মমতায় আগলে রেখেছে নবনীও। মৃদু স্বরে সে স্বান্তনা দিতে লাগলো,

    — “আপনার তো খুশির দিন চাচী। কাঁদছেন কেন, বলুন তো?”

    নবনীর প্রত্যুত্তরে কিছু বললো না শামীমা। নিজের গলা থেকে সোনার চেইন খুলে নবনীর গলায় পরিয়ে দিচ্ছেন তিনি।

    — “এটা আমাকে কেন দিচ্ছেন চাচী?”

    — “হতে পারে এটা পুরাতন কিন্তু আমার কাছে এর মূল্য অনেক। আমার দাদীর চেইন ছিল এটা। আমার জন্মের পর দাদী নিজের গলা থেকে খুলে আমার গলায় পরিয়ে দিয়েছিল। খুব যত্নে রেখেছি এতগুলো বছর। আজ থেকে এটা তোমার।”

    — “কেন চাচী? আমার লাগবে না এটা।”

    — “পছন্দ হয়নি?”

    — “অবশ্যই পছন্দ হয়েছে। কিন্তু এটা আপনার দাদীর দেয়া উপহার। আমাকে কেন দিচ্ছেন, বলুন তো?”

    — “আমার ছেলে কতগুলো বছর পর আমাকে কাছে টেনে নিলো জানো! সবটাই হয়েছে তোমার জন্য। আমি কতটা কষ্টে এই ক’টা বছর পার করেছি তা কেউ কখনো জানবে না, বুঝবে না। যেই সন্তানকে বুকে আগলে বড় করেছি, সেই সন্তান আর আমার মাঝে যোজন যোজন দূরত্ব দখল করে নেবে, এই কষ্ট সহ্য করা ভীষণ দায়। তোমার কাছে আমি ঋণী নবনী। আমার সবকিছু তোমাকে দিয়ে দিতেও আমি দ্বিতীয়বার ভাববো না। আমার সবকিছু দিয়েও তোমার ঋণ শোধ হবে না। “কিসব ভাবছেন আপনি! আমি অমিতকে একটুখানি বুঝিয়েছি শুধু। আর তো কিছু না! বাকিটা অমিত নিজেই করেছে।”

    — “অতশত বুঝি না আমি। তুমি এটা রাখছো ব্যস। তোমার জন্মদিন কাল, এমনিতেও কিছু একটা গিফট করতাম — “চাচা তো দিলোই।”

    — “চুপ থাকো মেয়ে। ভালোবেসে দিয়েছি, রাখো এটা।”

    — “এটা কিন্তু না দিলেও চলতো।”

    — “ধুর ছাই! একই কথা বারবার বলেই যাচ্ছো। কাল তোমার বাসায় গিয়েই ভাবীকে বলবো, মেয়েকে ভালোবাসার কদর করতে শেখাননি কেন?”

    হেসে ফেললো নবনী।

    — “ভাবী বলছিল কাল সকালেই যেন আমরা চলে যাই। এক কাজ করো, তুমি কাল কারখানা বন্ধ রাখো। আমাদের সঙ্গে তুমিও সকালে চলো।”

    — “না চাচী, কাল আমার প্রোডাক্ট ডেলিভারি করতে হবে। দেশের বাইরে যাবে অর্ডারগুলো। ভালোয় ভালোয় এসব কারখানা থেকে বিদায় করতে পারলে আমি বাঁচি। এরপর পুরো তিনদিন ছুটি নেবো। কারখানায় কোনো কাজ হবে না। খুব স্ট্রেসে আছি এই অর্ডারগুলো নিয়ে। বিকেল নাগাদ আমার সব কাজ হয়ে যাবে। ফ্রেশ হয়ে চলে আসবো সন্ধ্যার আগেই।”

    — “অমিতেরও নাকি কাল কাজ আছে। সন্ধ্যার আগে ফিরতে পারবে না।”

    — “হ্যাঁ বললো আমাকে। আমি আর অমিত একসঙ্গেই যাবো নাহয়।”

    — “আচ্ছা, উঠি তাহলে আমি। তুমি ঘুমাও।”

    নবনী দরজা বন্ধ করতেই পেছন থেকে সামীর কন্ঠ পেলো।

    — “আজকের দিনটা আমার জন্য ব্লেসিং। উপরওয়ালা এই তার ছেঁড়াটার একটা সুন্দর গতি করবে বলে তোমাকে আমার করে পাঠালো এই পৃথিবীতে। তুমি আমার মা-বাবার জন্যও ব্লেসিং। আমাকে বেঁধে রাখার ক্ষমতা কারো নেই একমাত্র তুমি ছাড়া। তোমার সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ার পর মা-বাবা রীতিমতো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। মা আর আপু সবসময় বলতো, নবনী বাঁদর মানুষ করতে জানে। আমাকে তাবিজ কবজ করেছিলে কি না কে জানে? নয়তো আমার মতো বনে বাদারে ঘুরে বেড়ানো ছেলে, সব ছেড়ে তোমার কথায় উঠবস কেন করবো? সে যাই হোক, আসল কথা বলি। শুভ জন্মদিন বাঁদর মানুষ করা মায়াবতী। আমার রোদ্দুর হয়ে হাজার বছর বেঁচে থাকো আমাদের ভালোবাসা বাঁচিয়ে রাখো।”

    মুচকি হাসলো নবনী। গায়ের জামা খুলে, আলমারি থেকে নীল শার্টটা বের করে গায়ে জড়িয়ে বোতাম লাগাতে লাগাতে বললো,

    — “বয়স ত্রিশ হলে মা-বাবা মেয়ের বয়স রাখঢাক করে। আর আমার আব্বু-আম্মু ঢাকঢোল পিটিয়ে আয়োজন করছে।”

    — “বাসায় গরুর রেজালা হবে কাল? অবশ্যই মেন্যুতে থাকা চাই। আন্টির রেজালা যা হয় না!”

    — “সামি…”

    — “হুম?”

    — “মায়ের হাতের রেজালা তোমার কত প্ৰিয় ছিল!”

    — “এখনও আছে।

    • ……………….

    — “উফ্ নবনী! আবারও কাঁদছো তুমি!”

    — “আমার বার্থডে সেলিব্রেট হবে অথচ আব্বু-আম্মু তোমাকে ইনভাইট করবে না এমন হয়েছে কখনো? তুমি চলে যাওয়ার পর আমাদের বাসায় কোনোকিছুই আর ওভাবে সেলিব্রেট করা হয় না। না আমার আর নাতাশার বার্থডে, না আব্বু-আম্মুর অ্যানিভার্সারি। এবার কী মনে করে যে আব্বু-আম্মু সেলিব্রেট করতে চাইছে, কে জানে!”

    — “করুক না নবনী। একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গেছে তা কি কেউ বদলাতে পারবে? তাই বলে তো সুখ, আনন্দ সব বিসর্জন দেয়া যাবে না, তাই না?”

    — “তুমি চলে গেছ তাই জানো না আমরা কী হারিয়েছি। যদি আমি তোমাকে

    মাঝপথে একা ফেলে চলে যেতাম, পারতে এভাবে বলতে?”

    — “আমি আগেই বলেছি এই দিনটা আমার জন্য ব্লেসিং। কেন এসব বলে আমার মন খারাপ করছো, বলো তো? কোথায় উইশ করেছি, তুমি আমাকে একটুখানি জড়িয়ে ধরে মিষ্টি করে থ্যাংকস জানাবে। তা না! কেঁদেটেদে পরিবেশটাই ভারী করে দিলে। ধুর!”

    সামির দিকে একহাত বাড়িয়ে দিলো নবনী। গালে নবনীর হাত মিশিয়ে মুখোমুখি বসলো সামি। আহ্লাদী হয়ে বললো,

    — “চোখের সামনে দুই বেণী ঝুলিয়ে এক্কাদোক্কা খেলা নবনী ভাসছে। এই তো সেদিনের কথা গায়ের ওড়নাটাও ঠিকমতো সামলাতে জানতে না। আন্টি কী চোখ রাঙাতো! মাঝেসাঝে আমি দূর থেকে ইশারা করতাম, ওড়না ঠিক করো। প্রতি জন্মদিনে একটা টেডি বিয়ারের জন্য বাসায় কী হুলস্থুলটাই না করতে! ঘরে মানুষের চেয়ে বেশি ছিল টেডিবিয়ার। সেই ছোট্ট নবনীর নাকি ত্রিশ হয়ে গেছে, ভাবা যায়! কবে পেরোলো এত সময়? কবে এত বড় হয়ে গেলে তুমি? কিছুই তো টের পেলাম না।”

    — “খুব দ্রুত বুড়ি হয়ে যাচ্ছি, তাই না?”

    — “কই? আমি তো এখনো সেই চৌদ্দ বছরের নবনীকেই দেখি। এ্যাই নবনী, বেণী করো তো! কতদিন হয়ে গেল দুই বেণীতে তোমাকে দেখি না।”

    — “দেখবে? আচ্ছা পাঁচ মিনিট সময় দাও।” ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল বাঁধছে নবনী। হঠাৎ দরজায় টোকার শব্দ পেতেই অবাক হলো সে, এত রাতে কে এসেছে?

    — “দরজার ফাঁকে দিয়ে দেখলাম আলো জ্বলছে। বুঝলাম জেগে আছো, তাই এসেছি। বিরক্ত করলাম?”

    দরজা খুলতেই জিজ্ঞেস করলো অমিত। মুচকি হেসে নবনী বললো,

    — “বিরক্ত না, একটুখানি অবাক হয়েছি। এতরাতে কি মনে করে এলে?”

    — “ভেতরে আসি?”

    — “হ্যাঁ, হ্যাঁ আসো না!”

    নবনীর দিকে র‍্যাপিং পেপার মোড়ানো একটা বক্স এগিয়ে দিলো অমিত।

    — “ও বাবা! তুমি দেখছি গিফট নিয়ে এসেছো আমার জন্য।”

    — “বার্থডেতে গিফট দেবো না?”

    — “কী এটা?”

    — “খুলে দেখো।”

    তাড়াহুড়ো করে বক্স খুললো নবনী। ভেতরে মোবাইল সেট। নবনীর কপালের মধ্যখানে কয়েকটা ভাঁজ।

    — “এটা কেন?”

    — “কী দেবো, কী দেবো ভাবছিলাম। ভাবলাম যেটা আমি নষ্ট করেছি সেটাই কিনে দেই।”

    — “কোনো প্রয়োজনই ছিল না অমিত। স্যরি, তোমার গিফট দেখে খুব একটা খুশি আমি হতে পারিনি। এত এক্সপেন্সিভ গিফটের কোনো মানেই হয় না। একটু আগে চাচীও আমাকে গোল্ড চেইন দিয়ে গেল। চাচা দুইটা জামদানী গিফট করলো। কী শুরু করলে তোমরা, বলো তো?”

    — “আব্বু-আম্মুর কথা আমি জানি না। আমার বান্ধবীর বার্থডেতে আমি তাকে যা খুশি গিফট করতেই পারি।”

    — “পারো কিন্তু এটা আমার পছন্দ হয়নি। আমার মোবাইল আরো একটা তো আছে, তাই না? সেদিন তুমি স্ট্যাবল ছিলে না, কী থেকে কী করেছো নিজেও জানো না। তাই বলে মোবাইল ফিরিয়ে দিতে হবে?”

    — “এক্সপেন্সিভ গিফটের পেছনে অবশ্য একটা কারণ আছে।”

    — “কী?”

    — “এক্সট্রা কেক, বিরিয়ানি খাওয়ার লোভে করেছি।”

    হেসে ফেললো নবনী। বললো,

    — “কোন ফ্লেভার তোমার পছন্দ বলো? আজ তোমার পছন্দে কেক কেনা হবে। “বাটারস্কচ।”

    — “আমি সকালেই নাতাশাকে বলে দেবো।”

    — “এবার বলো তোমার গায়ের এই ঢিলেঢালা শার্টটা কার?”

    — “ওহ্, এটা? এটা তো সামির।”

    — “ওর শার্ট তুমি কোথায় পেলে?”

    — “রেখে দিয়েছি আমার কাছে। মাঝেমধ্যে এটা পরে ঘুমাই।”

    — “এত প্রেম নবনী? প্রেমিকের বদলে শার্ট গায়ে দিয়ে তাকে ফিল করতে চাও? আর কী কী করো? শার্টে চুমু টুমু খাও?” মুখ চেপে হাসছে অমিত।

    — “অমিত!”

    — “দেখি, দেখি গাল লাল হয়ে গেলো নাকি!”

    — “গিফট দেয়া শেষ, এবার ঘরে যাও।”

    — “শার্টের সঙ্গে রোমান্স না করে জ্বলজ্যান্ত মানুষটার সঙ্গে রোমান্স করলেই তো পারো। কোথায় আছেন ভদ্রলোক? প্রেমিকার জন্মদিনে আসবে না দেখা করতে? একটুখানি জড়িয়ে ধরতে?”

    — “আসবে বোধহয়।”

    — “বোধহয় আবার কী? তোমার বার্থডে অথচ তোমরা মিট করবে না? রেডি হও, তোমাকে এক্ষুনি নিয়ে যাবো তার কাছে।”

    — “না। ওসবের প্রয়োজন নেই।”

    — “মিস করছো তাকে। তার শার্ট গায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছো। আস্ত মানুষ রেখে শার্ট গায়ে কেন ঘুরতে হবে তোমার? তার বাসার ঠিকানা বলো, চলো আমার সঙ্গে।

    — “ও নেই।”

    — “কোথায় আছে?”

    — “জরুরি কাজে ঢাকার বাইরে গেছে।”

    — “ধুর! এমনই হয় জানো! আমার বেলায়ও এমন হতো। মুনের বার্থডেতে রাজ্যের সব জরুরি কাজ আমার মাথায় নাচানাচি করতো। কী কষ্টে সময় বের করতাম! যাক সেসব কথা। মন খারাপ করো না। সামি ফিরে এলে দু’জন মিলে দূরে কোথাও বেরিয়ে এসো।”

    — “হুম।”

    — “আমি যাই।”

    — “কাল আমরা দুজন কিন্তু একসঙ্গে বেরোচ্ছি।”

    — “হ্যাঁ, হ্যাঁ মনে আছে আমার।”

    ২৮

    খাটের উপর বড্ড আয়েশে হেলান দিয়ে বসে আছেন জামিলা বেগম। তার ঘরে বসেছে আড্ডার আসর। সন্ধ্যার আপ্যায়ন পর্ব শেষে সবাই এসেছে তার ঘরে। খাট, চেয়ার, ফ্লোর যে যেখানে জায়গা পেয়েছে সেখানেই বসে পড়েছে। তার ঠিক পাশেই বসে আছে অমিত। তিনি নিজেই হাত টেনে এনে নাতিন জামাইকে পাশে বসিয়েছেন। খাট বরাবর ড্রেসিং টেবিলে আপাদমস্তক দেখা যাচ্ছে অমিতকে। সেখানেই গল্পের ফাঁকে ফাঁকে বারবার অমিতকে দেখছেন জামিলা বেগম। নাতিনের শ্বশুর-শাশুড়ির হাসি তামাশা দেখছেন, লক্ষ্মী মেয়ের মতন ভাইয়ের শ্বশুরবাড়িকে নিজের বাড়ি ভেবে ঘুরঘুর করা অনিকে দেখছেন। মনে তার অদ্ভুত প্রশান্তি ছেয়ে যাচ্ছে। অমিতকে সামনাসামনি না দেখে, দু’দন্ড কথা না বলেই একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। এখন মনে হচ্ছে সিদ্ধান্তে কোনো ত্রুটি হয়নি। অমিতকে কী মানিয়েছে তার নাতনীর পাশে! দেখতে শুনতে, যোগ্যতায়, আচার ব্যবহারে কোনদিক থেকে কম যায়? এত রসিক মেজাজের শ্বশুরকূল, অকারণ দাম্ভিকতা নেই। কী সহজ সরল লোকগুলো! এরচেয়ে ভালো সম্বন্ধ আর হতো নাকি নবনীর জন্য? আজ কতগুলো বছর বাদে এই ঘরে আবারও গল্প জমেছে। শেষ আড্ডার আসর বসেছিল নবনী-সামির বিয়ের দুই সপ্তাহ আগে। দু- পক্ষ যেদিন তারিখ ঠিক করবে বলে একসঙ্গে বসেছিল সেদিন। সেদিনই হয়েছিল এই বাসায় শেষ আনন্দে মেতে উঠা কোনো আসর। তারপর সেই ঝড়ের পর সবকিছু কেমন থমকে গিয়েছিল। আজ এতবছর বাদে যেন এই ঘর ফের প্রাণ ফিরে পেয়েছে। অতীত বর্তমান সবকিছু ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ জামিলা বেগমের মনে পড়লো নবনীর কথা। কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে মনে মনে গালি দিতে লাগলেন তিনি। আজকের এই বিশেষ দিনেও কেন কাজের বাহানায় কারখানায় যেতে হবে তার? নানী শাশুড়ির বিরক্তি চোখ এড়ায় না অমিতের। খানিকটা কাছে ঝুঁকে নিচুস্বরে জানতে চাইলো,

    — “খুব চেঁচামেচি হচ্ছে। বিরক্ত হচ্ছেন আপনি?

    — “না গো নাতি। কী যে কও না! আমার তো চিল্লাপাল্লা ভাল্লাগে। মেজাজ গরম হইতাছে আমার ঘরের ঢিঙ্গির উপ্রে।”

    জামিলা বেগমের গা ঘেঁষে বসে আছে নাতাশা। নানীর অভিযোগে নাতাশা আহ্লাদী হয়ে বলতে লাগলো,

    — “রাগ করো কেন নানী? ইমার্জেন্সি ছিল বলেই তো গেল। চলে আসবে দশ মিনিটের ভেতর।

    — “সাফাই গাইবি না। ও খুব অন্যায় করছে। বাসায় সব মেহমান। অমিত কখনো আইছে এই বাসায়? নবনীর উছিলায়ই তো আইলো। ওর কি উচিত হইছে অমিতরে রাইখা, ওর জন্মদিনের আয়োজন রাইখা গায়েব হইয়া যাওয়া?”

    — “আমরা কিছুই মনে করছি না নানী। আপনি রিল্যাক্স থাকুন তো!”

    — “ওরে বারবার কইছি বিকালের মধ্যে সব কাজ শেষ করবি।”

    — হ্যাঁ, নবনীও চাইছিল আজ বিকালেই কারখানা বন্ধ করতে। শেষ সময়ে এসে কী নাকি ঝামেলা হলো। কাল রাতে শিপমেন্ট, আজই সব শেষ করতে হবে। চলে আসবে ও। বলেছে আমাকে, কাজটা দেখিয়েই চলে আসবে।”

    — “নাহ্, তুমি যাই কও নাতি আমার ওসবে মন ভরবো না। ঘরে কত আনন্দ হইতাছো, ও থাকবো না ক্যান? ঐ নাতাশা, নবনীরে কল দে তো?”

    — “লাগবে না আমিই দিচ্ছি।” বলে ফোন হাতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল অমিত পাশেই বাতি নেভানো ঘরটায় কথা বলতে বলতে ঢুকে গেল সে। খানিক বাদে পেছন পেছন এল নাতাশাও। ঘরের বাতি জ্বালিয়ে দিতেই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো অমিত। বললো,

    — “আসছে। রাস্তায় আছে।”

    — “অহ! বেশিক্ষণ লাগবে না তাহলে।”

    — “উহুম।”

    বেরিয়ে যাবার সময় থমকে দাঁড়ালো অমিত। দরজার এপাশের দেয়ালে নবনীর বাঁধাই করা ছবি। বেবি পিংক জামদানীতে বউ সেজে কী সুন্দর হাসছে মেয়েটা! পাশেই বসে আছে এক সুদর্শন। নবনীর চোখে চোখ রেখে আংটি পরিয়ে দিচ্ছে। ছবির দিকে তাকিয়ে হাসছে অমিত, অদ্ভুত এক ভালো লাগা লেপ্টে আছে তার হাসিতে, চোখে। আরো কিছুটা কাছে এগিয়ে অমিত বললো,

    — “এটা সামি, তাই না নাতাশা?”

    — “হুম।”

    — “আমি এই প্রথম দেখছি উনাকে। এটা নবনীর রুম?”

    — “হ্যাঁ।”

    — “এটা ওদের এনগেজমেন্টের ছবি?”

    — “হ্যাঁ।”

    — “নবনী তো একদম বউ সেজে বসে আছে। কী মিষ্টি দেখাচ্ছে ওকে! দেখে

    একদম বোঝার উপায় নেই এটা এনগেজমেন্টের ছবি।”

    — “সামি ভাইয়া বলেছিল এভাবে সাজতে। কোন নাটকে নায়িকাকে দেখেছিল, সেই থেকে উনার খুব শখ হচ্ছিল আপুকে এই সাজে দেখার।”

    — “খুব মানিয়েছে ওকে।

    • ………………..

    — “কিউট দেখাচ্ছে দুজনকে। তুমি জানো উনার গল্প শুনে কী দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে উনাকে! নবনীকে কবে থেকে বলছি বাসায় একদিন ডিনারে উনাকে ইনভাইট করো। ও কথাই শোনে না। বললাম, তুমি বলতে না চাইলে আমার সঙ্গে কথা বলিয়ে দাও। আমি উনাকে আসতে বলি। তোমার বোন সেটাও করে না। নানী যখন কল করে বললো আজ রাতের কথা, তখন ভেবেছিলাম এখানে আসলে উনার সঙ্গে দেখা হবে নিশ্চয়ই। কোথায় আর হলো! ভদ্রলোক কি কাজে নাকি ঢাকার বাইরেই চলে গেছে!”

    • ………………..

    — “আচ্ছা নাতাশা, সামির নাম্বার আছে না তোমার কাছে? দাও দেখি, কল দাও একটা। আমি কথা বলবো।

    মাথা নিচু করে কাঁপা স্বরে নাতাশা বললো,

    — “নেই।

    — “কী হলো? কাঁদছো নাতাশা?”

    — “সামি ভাইয়া নেই। উনি মারা গেছে আট বছর হলো।”

    মুখে হাত চেপে ডুকরে কেঁদে উঠলো নাতাশা। স্তব্ধ হয়ে নাতাশার দিকে তাকিয়ে রইলো অমিত। এক মুহূর্তেই মাথাটা কেমন ফাঁকা হয়ে গেল! এই ঘর, সামি, নবনী, ওদের দু’জনের ছবি, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নাতাশা সবকিছু মিলিয়ে কেমন ঘোর লাগছে। টাল সামলাতে না পেরে বিছানায় বসে পড়লো অমিত। নাতাশাকে খুঁটে খুঁটে দেখছে অমিত। ও কি সত্যিই কাঁদছে? মিথ্যে বলছে না তো? তবে কি নবনীর বলা সমস্ত কিছু মিথ্যে ছিল? কেন? ও কেন মিথ্যে বললো? নবনীর কন্ঠস্বর কানে ঘন্টার মতো বেজে চলছে, নবনীর মিষ্টি ভালোবাসার গল্পটা কপূরের মতো মাথার ভেতর থেকে উড়ে যাচ্ছে। জোরপূর্বক নিজেকে খানিকটা ধাতস্থ করে বলতে লাগলো অমিত,

    — “নাতাশা মজা করছো না তো?”

    — “এতটা নোংরা তামাশা কেন করবো?”

    — “কিভাবে সম্ভব! উনি মারা গেছে! হতেই পারে না। নবনী নিজে আমাকে বলেছে উনার সঙ্গে ওর কথা হয়, দেখা হয়। এই তো গত পরশুর কথা বলি, আমাকে ও বলছিল সামির সঙ্গে কী কথা হলো। অনেক অনেক কথা আছে নাতাশা। সামি মৃত কী করে হয়? ও বেঁচে আছে। তুমি অকারণে মিথ্যা কেন বলছো?”

    — “আমি কেন মিথ্যা বলবো বলুন তো?”

    — “সেই’ই তো! মিথ্যেমিথ্যি এত বাজে কথা বলে কেউ? তাহলে কে বলেছে? নবনী? ও কেন মিথ্যা বললো আমাকে?”

    — “বড় একটা সমস্যা আছে ভাইয়া।”

    — “মানে?”

    দরজায় কলিংবেলের আওয়াজ পেতেই তড়িঘড়ি করে চোখ মুছলো নাতাশা। ভাইয়া এই ব্যাপারে আপাতত কোনো কথা হবে না। আপু চলে এসেছে। আমরা ওর সামনে আজ কিছু বলবো না প্লিজ! কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো নাতাশা। স্তব্ধ হয়ে তখনও নবনীর ঘরেই দাঁড়িয়ে রইলো অমিত ফ্রেশ হবে বলে নিজের ঘরে আসতেই অমিতের মুখোমুখি হলো নবনী। মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস বললো,

    — “আমার বাসায় এই প্রথম এলে অথচ তোমাকে আমি সময়ই দিতে পারলাম না। কতটা সময় অপেক্ষা করতে হলো! স্যরি।”

    — “সামি কোথায় নবনী?”

    — “ঢাকার বাইরে। বললাম না গতকাল?”

    নবনীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অমিত। কী স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে দিলো কথাটা! এতটা স্বাভাবিক কি মিথ্যে বলার মুহূর্তে থাকা সম্ভব?”

    — “কী ব্যাপার? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? কোনো সমস্যা?”

    নবনীর প্রত্যুত্তরে কিছু বললো না অমিত। নিশ্চুপ ঘর থেকে বেরিয়ে এল সে। জামিলা বেগমের ঘর দুই পরিবারের সদস্যদের আড্ডায় সরগরম। খাটের এক কোনায় চুপচাপ বসে আছে অমিত। এত হাসি আনন্দ কোনোকিছুই তার কানে পৌঁছাচ্ছে না। কানে শুধু এক নাগাড়ে বেজে চলছে নবনীর শোনানো সেই গল্পটা, যেই গল্পে সামি আছে, সামির পাগলামি আছে, অসীম ভালোবাসা আছে, একগাদা মিষ্টি মুহূর্ত আছে, সামি আজও বেঁচে আছে। কেন মিথ্যা বললো নবনী? মেয়েটাকে খুব বিশ্বাস করেছিল সে। খুব কাছের বন্ধু ভাবতে শুরু করেছিল। বন্ধুত্ব গাঢ় হতে না হতেই এতবড় মিথ্যাটা জানতে হলো তার! কেন করলো এমন? তাকে ঐ বাজে সিচুয়েশন থেকে বের করে আনতে এমন মিথ্যা গল্প সাজালো? নাকি তার সঙ্গে সংসার করতে চায় না বলে? আচ্ছা গল্পটার কতটুকু সত্যি কতটুকু মিথ্যা? আরও কতশত প্রশ্ন, দ্বিধা পাল্লা দিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে অমিতের মনে।

    .

    নবনী জামা বদলে, একটু করে সেজে এল জামিলা বেগমের ঘরে। নানীর পাশে বসা মাত্রই নবনীর কান টেনে ধরলেন তিনি।

    — “তোর অনুষ্ঠানে তুই নাই। এইডা কিছু হইলো? অমিত এই প্রথম আইলো বাসায়। তোর উচিত ছিল নিজে তদারকী কইরা ওরে নাস্তা পানি দেয়া। অসামাজিক হইতাছোস দিনদিন!”

    — “আমি ভাবলাম এত হ্যান্ডসাম নাতি পেয়ে তুমিই লাফাতে লাফাতে আপ্যায়ন করবে। তুমি যে আমার আশায় বসে থাকবে কে জানতো?”

    — “ইশ্! আমার চোখে তোর নানারে ছাড়া আর কাউরে লাগে না।”

    — “যাহ্! অমিত, তোমার এই রূপ বৃথা। জামিলাকে কাবু করতে পারলে না!”

    নবনীর কথায় মেকি হাসলো অমিত। জামিলা বেগম বললেন,

    — “অনেক সময় পার হইছে। চলো সবাই, বসার ঘরে যাই। নবনী কেক কাটুক।” সবার শেষে ঘর থেকে বেরুলো অমিত। এই আয়োজনে বিন্দুমাত্র মন বসছে না তার। নবনী মিথ্যা বলেছে সেই কথাই প্রতি মুহূর্তে প্রচন্ড যন্ত্রণা দিচ্ছে তাকে। এখান থেকে এক্ষুনি, এই মুহূর্তে চলে যেতে পারলে ভালো হতো। অমিত ড্রইংরুমে যেতেই শিপন অমিতকে টেনে দাঁড় করালো নবনীর পাশে। বললো,

    — “তোমরা কাজিনরা একসঙ্গে কেক কাটো। এই অনি নাতাশা, তোমরাও পাশে গিয়ে দাঁড়াও।”

    অমিতকে সেই কখন থেকে দেখছে নবনী। কেকের উপর ছুরি চালাতে চালাতে নিচু স্বরে সে জিজ্ঞেস করলো,

    — “তুমি আপসেট কেন?”

    — “কই?”

    — “দেখছি আমি তোমাকে।”

    — “এত বুঝো আমাকে?”

    অমিতের মুখে কেক তুলে দিয়ে নবনী বললো,

    — “এই কয়দিনে চেহারা দেখে তোমার মন ভালো না খারাপ অন্তত এতটুকু বুঝতে শিখেছি।”

    নবনীর চোখে তাকাতেও হাসফাস লাগছে অমিতের। দ্রুত ওর পাশ থেকে সরে এল সে। নবনীর বাবাকে ডেকে বললো,

    — “চাচা, অফিস থেকে কল এসেছিল। আমাকে আজই চট্টগ্রাম যেতে হবে। আমি আজ তাহলে আসি। অন্য কোনোদিন আবার আসবো নাহয়।”

    অবাক হয়ে সমস্বরে নবনী আর শামীমা বলে উঠলো,

    — “আজ কেন?”

    — “জরুরি কাজ আছে। নয়টার বাস। একঘন্টার ভেতর বের হতে হবে।”

    — “এটা কেমন কথা অমিত? আজ আমার বার্থডে। তুমি বলেছিলে সব কাজ সেরে আসবে।”

    — “হঠাৎ কাজ পড়ে গেল। যেতেই হবে।”

    — “কোথাও যাওয়া চলবে না। রাতে খেয়ে আমরা একসঙ্গে বাসায় ফিরবো। তুমি কাল সকালে যাচ্ছো চট্টগ্রাম।”

    — “তুমিও বলেছিলে সব কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় আমার সঙ্গে এই বাসায় আসবে। আসোনি। কাজ সেরে এতক্ষণে ফিরলে। আমি কিছু বলেছি তোমাকে?”

    নীতু অমিতের কাঁধে হাত রেখে বললেন,

    — “বাবা তুমি কি রাগ করে চলে যাচ্ছো?”

    — “না চাচী। কী যে বলেন না! রাগ কেন করবো? ওর ব্যস্ততা থাকতেই পারে। আমি ওর ব্যাপারটা বুঝেছি, তাহলে ও কেন আমারটা বুঝবে না?”

    ছেলের উপর কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলেন এরশাদ সাহেব।

    — “নবনীর আগামীকালই শিপমেন্ট। তাই ও আজ গিয়েছে। তোর তো আর কাল প্রোগ্রাম না। দেখ না অফিসে কথা বলে? আমরাও যাচ্ছি কাল সকালে। কাল আমাদের সঙ্গেই নাহয় চলে যাস।

    — “না আব্বু, আজই যাবো। সঙ্গে অফিস কলিগও যাবে দুজন। ডিসিশন ফাইনাল হয়ে গেছে।

    — “কাজ পড়ে গেছে যেহেতু, যাও। কিন্তু না খেয়ে যাওয়া যাবে না। খেয়ে তারপর যাও। নীতু, টেবিলে জলদি খাবার দাও।

    .

    শফিক সাহেব এসে হাত টেনে অমিতকে ডাইনিংরুমে নিয়ে বসালেন। মা আর কাজের মেয়ের সঙ্গে টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে নবনী। সমস্ত মনোযোগ ওর পড়ে আছে অমিতের দিকেই। এত বিষণ্ন কেন দেখাচ্ছে ওকে? কারখানা থেকে ফিরতে দেরী হলো তাই? এই সামান্য ব্যাপার ধরে রাখার মতো ছেলে সে না। তবে কি মুনিয়া সংক্রান্ত কিছু?

    ২৯

    অনির ঘরের বারান্দায়, দোলনায় বসে দোল খাচ্ছে নবনী। মোবাইল স্ক্রিন কিছুক্ষণ পরপরই অন করে চেক করছে সে। অমিতের কল কিংবা ম্যাসেজ কিছুই আসেনি গত তিনদিনে। অন্য সময়গুলোতে সারাদিনে একবার অন্তত কথা হয়, মেসেঞ্জারে কয়েকদফা চ্যাট হয়। অথচ এইবার ঢাকার বাইরে আছে তবুও একটা ম্যাসেজ দেয়নি। এই তিনদিনে কতবার কল করলো তবুও একবারও কল রিসিভ করেনি সে। কেন এমন করছে সে? কী নিয়ে এত অভিমান তার?

    চা হাতে পেছনে এসে দাঁড়ালো অনি।

    — “আপু চা নাও।”

    চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে নবনী বললো,

    — “আমার খুব অস্থির লাগছে জানো?”

    — “দেখেই বুঝা যাচ্ছে।”

    — “অমিত কী নিয়ে রাগ করলো সেটাই খুঁজে পাচ্ছি না।”

    — “জিজ্ঞেস করেছিলাম আমি, কিছু না বলেই কল কেটে দিলো।”

    — “মান অভিমান হয়েছে ভালো কথা। অন্তত আমাকে বলুক কী নিয়ে এত রাগ ওর! না বললে বুঝবো কেমন করে কী হয়েছে? এভাবে রাগ পেলে পুষে রাখার কোনো মানে হয়?”

    — “ভাইয়ার প্রোগ্রাম দুইদিন পরই শেষ। তারপর দিনই হয়তো ফিরে আসবে। আসুক ও। তারপর মাথায় দু’টো বাড়ি মেরে জিজ্ঞেস করো কেন এমন করছে?”

    — “এক কাজ করি চলো।”

    — “কী?”

    — “চলো আমরা চট্টগ্রাম যাই।”

    — “সত্যি? যাবে তুমি?”

    — “হ্যাঁ। আগামী ১০-১২ দিন আমার হাতে খুব একটা কাজ নেই। যা আছে

    ওয়ার্কাররা দেখে নিতে পারবে। নাতাশা ফ্রী আছে। তোমারও পরীক্ষা মাত্রই শেষ হলো। চাচী খুব করে বলে ওখানে যেতে, চলো গিয়ে ঘুরে আসি। অমিতকেও একটুখানি শায়েস্তা করে আসি। খুব স্ট্রেস দিচ্ছে ছেলেটা আমাকে!”

    — “আম্মুকে এক্ষুনি কল করে বলছি আমি। কবে যাচ্ছি আমরা বলো?”

    — “কাল সকালে?”

    — “আজ রাতেই চলো।”

    — “না, না! গোছগাছের একটা ব্যাপার আছে না? কাপড় আয়রন করতে হবে। এই কয়দিনে স্কিনের কোনো যত্নই করা হয়নি। অবস্থা শোচনীয়! আজ পার্লারে গিয়ে ফেসিয়াল, পেডিকিওর মেনিকিওর করে আসি। চলো তুমিও আমার সঙ্গে। নাতাশাকে আসতে বলি। একসঙ্গে রাতে ডিনার করে বাসায় ফিরবো।”

    *****

    — “ভাইয়া আপনিই তো বললেন স্টেজ ব্যাকগ্রাউন্ড যেন হোয়াইট হয়!

    — “আমি কখন বললাম? এটা ব্লু হওয়ার কথা ছিল। প্ল্যানিংয়ে লেখা আছে ব্লু। আমি কেন তোমাকে হোয়াইট বলবো?”

    — “আপনি বলেছেন আউটডোর স্টেজ ব্লু হবে, ইনডোর হোয়াইট।”

    — “অসম্ভব!”

    পেছন থেকে কলিগ নাহিয়ান এসে অমিতকে টানতে টানতে নিয়ে বসালো চেয়ারে। এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বললো,

    — “এটা খাও।”

    এক নিঃশ্বাসে পুরো এক গ্লাস পানি শেষ করলো অমিত। দীর্ঘশ্বাস ফেলে গা এলিয়ে বসলো সে। অমিতের কাঁধ হাত রেখে নাহিয়ান বললো,

    — “কখন থেকে ডাকছি, শুনছোই না! তর্ক করেই যাচ্ছো।’

    — “ও ভুল করেছে তবুও কেন আমার দোষ দিচ্ছে?”

    — “ভুলটা তোমারই ছিল।”

    — “মানে? আমি বলেছি ওকে?”

    — “হ্যাঁ। আমি তখন সামনেই ছিলাম।”

    — “শিট!”

    — “কী হয়েছে বলো তো? এত রেস্টলেস হয়ে আছো কেন? কোনো সমস্যা?”

    — “জানি না।”

    — “তুমি কাজে এত ভুল করো না। এসেছো পর থেকে কিছু না কিছু ভুল করছোই।

    লাস্ট মোমেন্টে কোনো মেজর মিসটেক হয়ে গেলে চলবে?”

    — “খুব দ্বিধায় আছি। কিচ্ছু ভালো লাগছে না আমার।”

    — “দ্বিধার সমাধান হলো কথা বলা। যাকে নিয়ে, যা কিছু নিয়ে দ্বিধায় আছো তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলে মিটিয়ে নাও। যদি তার সঙ্গে কথা বলতে না পারো তাহলে অন্য কারো সঙ্গে কথা বলো, যার সঙ্গে কথা বললে একটা সমাধান পাওয়া যাবে।”

    মোবাইল বাজছে অমিতের। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো মুনিয়ার নাম। মনের ভেতর চলতে থাকা তোলপাড় যেন দ্বিগুন হলো। গতকাল রাত থেকে এই পর্যন্ত ছয়বার কল করেছে মেয়েটা। বহু কষ্টে রিসিভ অপশন টাচ করা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে সে। একদিকে নবনীর মিথ্যে আজ তিনদিন ধরে তাকে এলোমেলো করে রেখেছেই। অন্যদিকে যোগ হয়েছে মুনিয়ার কল। মুনিয়াকে বারবার ফিরিয়ে দেয়া বড্ড কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এতবার কল করার মানুষ মুনিয়া না। কোনো জরুরি প্রয়োজন আছে কী? তবে কি একবার মুনিয়ার কল রিসিভ করা উচিত?

    *****

    — “তুই কাল ঘুম থেকে জেগেই পুরো বাসায় ঝাড়া-মোছা করবি।”

    — “ঐটাতো ডেইলিই করি।”

    — “আরো ভালোভাবে করবি। আমার ঘর ঝকঝকে, তকতকে দেখতে চাই। সব রুমের চাদর, পর্দা বদলে দিবি। সোফায় নতুন কাভারগুলো দিবি।”

    — “আইচ্ছা।”

    বাজারের লিস্ট করতে করতে স্ত্রীকে আড়চোখে দেখছেন এরশাদ সাহেব। আনন্দে আটখানা হয়ে কী থেকে কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। একটু পরপরই একটা করে কাজ বের করছে আর বলছে, উফ! জলদি শেষ করতে হবে। কাল আমার ছেলের বউ আসছে। স্ত্রীর এমন পাগলামিতে বড্ড আনন্দ পাচ্ছেন এরশাদ সাহেব। কতগুলো বছর বাদে শামীমাকে এত খুশি দেখছেন ঠিক মনে পড়ছে না। মাঝের কয়েক বছর ছেলেটাকে নিয়ে কত পেরেশানিই না গেল! এই বাসা থেকে হাসি আনন্দ সব যেন উধাও হয়ে গিয়েছিল। স্বামী-স্ত্রী দু’জনই অপেক্ষায় ছিলেন একটা চমৎকার হোক। দীর্ঘ অপেক্ষা বাদে মিরাকেল হয়েই গেল, নবনী নামক মিরাকেল!

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান – মরিস বুকাইলি
    Next Article বাতাসে গুনগুন – খাদিজা মিম

    Related Articles

    খাদিজা মিম

    রুদ্র – খাদিজা মিম

    August 6, 2025
    খাদিজা মিম

    বাতাসে গুনগুন – খাদিজা মিম

    August 6, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.