Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ইট’স কমপ্লিকেটেড – খাদিজা মিম

    খাদিজা মিম এক পাতা গল্প477 Mins Read0

    ইট’স কমপ্লিকেটেড – ৪০

    ৪০

    অফিস যাবার সময় লিফটে দেখা হয়ে গেল পাশের ফ্ল্যাটের আফসার সাহেবের সঙ্গে। মানুষ হিসেবে চমৎকার উনি। উনার বাসায় খুব একটা যাতায়াত নেই। রাস্তায়, লিফটে, ছাদে কিংবা নিচের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে প্রায় প্রতিদিনই দেখা হয়, কথা হয়, কখনো কখনো হয় লম্বা কথোপকথন। বরাবরের মতো আজও মিষ্টি হেসে সালাম দিতে ভুলেনি অমিত। আফসার সাহেবও ভীষণ আন্তরিক হয়ে জবাব নিলেন,

    — “ওয়া আলাইকুম আসসালাম। আজ একা যে! বউ কোথায়?”

    — “বাসায়।”

    — “আজ কারখানা বন্ধ?”

    — “বন্ধ না। একটু অসুস্থ, তাই যাবে না।”

    — “কী হয়েছে?”

    — “মাথাব্যথা! বাড়াবাড়ি রকমে কাজের চাপ নেয় মেয়েটা। এত বারণ করি তবুও কেন যে কথা শুনতে চায় না বুঝি না একদম।

    — “বউরা শোনে নাকি আমাদের কথা?”

    হঠাৎ দু’জনই অট্টহাসিতে মাতলো। স্ত্রী সম্পর্কিত স্বল্প গল্প করতে করতে লিফট গ্রাউন্ড ফ্লোরে নেমে এল। লিফট থেকে বেরিয়ে দু’জন দু’জনের পথে পা বাড়ানোর আগে আফসার সাহেব ডেকে বললেন,

    — “নবনীর খেয়াল রেখো। শত হোক একটাই বউ আমাদের, তাদের খেয়াল রাখতে হবে জানপ্রাণ দিয়ে।”

    আবারও হাসতে লাগলেন আফসার সাহেব। এবার আর দাঁড়ালেন না। পা বাড়ালেন আপন গন্তব্যে। অমিতকে ফেলে গেলেন গভীর ভাবনায়। বউ! নবনী তার বউ। একমাত্র। যেভাবেই হোক বউ তো! বিয়েটা তো হয়েছিল। এটা সত্য যেমন তার জন্ম হওয়ার ঘটনা সত্য। জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ এই বিয়েটা। হোক কখনো ছাড়াছাড়ি কিংবা দূরে সরে আসা। হয়েছিল তো বিয়েটা। অস্বীকার তো আর করা যাবে না। বিয়ে যেহেতু সত্য, নবনী তার বউ সে কথাও সত্য। গলা ফাটিয়ে সারাদিন শুধু, তুমি আমার বান্ধবী, তুমি আমার বান্ধবী বললে কি শুধুই বান্ধবী রয়ে যাবে সে? না তো! জোর পূর্বক অক্টোবরের সেই সকালে রমিজ মির্জা তার হৃদয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ নবনীর নামে দিয়ে দিয়েছে। মেয়েটা তখন নিজের আসনটুকু গ্রহন না করলেও এই কয়মাসে স্বস্তি হয়ে পাকাপোক্ত একটা জায়গা করেই নিয়েছে হৃদয়ের মাঝে। মাথায় চট করে প্রশ্ন জাগলো অমিতের, রমিজ মির্জা হৃদয়ের একাংশে ওকে দখল দিয়েছিল। আজ কি সেচ্ছায় নবনীকে হৃদয়ের পুরোটা দেয়া যায়? এক সেকেন্ড সময় না নিয়ে মনের মধ্যে থেকে জবাব এল, হৃদয়ে আর জায়গা বাকি কোথায়? কবেই নবনীর নামে পুরোটা লেখা হয়ে গেছে। জবাব পেতেই এক সেকেন্ডের জন্য হৃৎস্পন্দন বন্ধ হলো বুঝি! চেহারা ফ্যাকাশেবর্ণ হলো মুহূর্তেই। কিসব ভাবছে সে!

    দ্রুত গাড়ির ভেতর বসে পড়লো অমিত। অফিস যেতে হবে। দেরী হয়ে যাচ্ছে! তার চেয়ে জরুরি ব্যাপার এসব হাবিজাবি খেয়াল থেকে নিজেকে দূরে সরাতে হবে। ড্রাইভ করে মেইন রোডে উঠতেই অমিতের চোখ গেলো আফসার সাহেবের দিকে। রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে রিকশার অপেক্ষা করছে লোকটা। তাকে দেখতেই আবারো মনে পড়ে গেল তখন বলা কথাটা, “একমাত্র বউ”। অজান্তেই নবনীকে নিয়ে আবারও ভাবতে বসলো অমিত। তার পরিচিত মানুষেরা নবনীকে ওর নাম ধরে ডাকে কম, অমিতের বউ কিংবা তোমার বউ বলেই সম্বোধন করে বেশি। কাজিনরা জিজ্ঞেস করে, তোমার বউ কেমন আছে? বন্ধুরা বলে তোর বউকে আজ নাস্তায় জম্পেশ এককাপ চা খাওয়াতে বলিস। প্রতিবেশীরা নবনীকে দুই একদিন তার সঙ্গে দেখতে না পেলে জিজ্ঞেস করে, আপনার ওয়াইফকে দেখছি না যে দুইদিন ধরে! আর বড় মামী! নবনীকে কখনো নাম ধরে ডেকেছে বলে মনে পড়ে না। অমিতের বউ তুমি ভালো আছো? অমিতের বউ তুমি খাইছো? এভাবেই ডাকে নবনীকে। প্রথমদিকে ভীষণ বিরক্ত লাগতো অমিতের। সঙ্গে অস্বস্তিও। এখন অস্বস্তি, বিরক্তি কোনোটাই হয় না। বরং অভ্যেস হয়ে গেছে যেন! ভালো লাগে শুনতে। যখন কেউ মেয়েটাকে “তোমার বউ” সম্বোধন করে কিছু জানতে চায়, বলতে চায় তখন সেই মুহূর্তটাতে নবনীকে ভীষণ ব্যক্তিগত মনে হয় অমিতের। মনে হয় যেন, নবনী সবার চেয়ে একটু বেশি আপন। এই পৃথিবীতে নবনীকে একান্ত নিজের বলে দাবি করার অধিকার তার, শুধুমাত্র তার। মনের এই দাবি কিংবা ভালো লাগাটুকু নিয়ে সেভাবে কখনো ভাবা হয়নি অমিতের। আলাদা করে ভাবনায় আসেনি কখনো। অবচেতন মনে আসা এই মিষ্টি খেয়ালের স্থায়িত্ব খুবজোর এক মুহূর্ত অব্দি, তাই হয়তো ভেতরে নাড়া দেয়নি! কিন্তু আজ, একটু আগে আফসার সাহেবের বলা ছোট্ট একটা শব্দ ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিলো তাকে! মনের মাঝে নবনীকে ঘিরে লুকিয়ে থাকা সমস্ত খেয়ালগুলো একে একে ভীড় জমাচ্ছে চোখের সামনে। হরেক অনুভূতিতে দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে অমিত কখনো প্রচন্ড ভালোলাগায় মন ফুরফুরে লাগছে তো কখনো নবনীকে নিয়ে একটুখানি বেশি ভাবার দায়ে মনে মনে লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে সে। অনুভূতির দোটানায় আবার মনে ভয়, দ্বিধাও হচ্ছে যদি নবনী কোনো একভাবে জেনে যায় তাকে ঘিরে অমিতের ভাবনাগুলো, রেগে যাবে না? ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেবে না? হঠাৎ কেমন রাগ হতে লাগলো অমিতের। ইচ্ছে করছে গাড়ি ঘুরিয়ে এক্ষুনি বাসায় ফিরতে। নবনীকে সামনে বসিয়ে বলতে, মিশ্র অনুভূতিতে পিষে যাচ্ছি একদম! ভালো লাগার ঘোরে ডুবে যাবো নাকি ভয়ে মনের দরজা বন্ধ করে রাখবো বুঝতে পারছি না। একটা সমাধান দাও তো জলদি করে। বলো তো, তুমি আমার কী হও? শুধু বান্ধবী নাকি আমার বউ? একমাত্র বউ?

    ৪১

    আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরী হচ্ছে নবনী। হাতে লাল রঙের লিপস্টিকটা নিতেই ভীষণ বিরক্ত হলো সামি। কড়া ধমক দিয়ে বললো,

    — “পাগল তুমি! রেড লিপস্টিক লাগাবে!”

    চেহারা কুঁচকে সামির দিকে তাকালো নবনী। লাল লিপস্টিকে সমস্যা কোথায় ঠিক ভেবে পাচ্ছে না সে।

    — “তুমি সাব্বিরের বাসায় যাচ্ছো ওকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করতে, বেড়াতে না। ঘরে তোমার হাজবেন্ড যখন তখন পটল তুলবে। তুমি বউ হয়ে এমন সময়ে কালারফুল লিপস্টিক কিভাবে লাগাও! লজ্জা নেই তোমার?”

    — “ওহ্ হো! পয়েন্ট! আমার মাথা থেকে একদম বেরিয়ে গিয়েছিল ব্যাপারটা।”

    — “ফোকাস নবনী। মোটামুটি একটা যুদ্ধ সামলাতে যাচ্ছো তুমি।”

    — “মোটামুটি না সামি। পুরোটাই যুদ্ধ।”

    — “অনি বলেছে সাব্বিরকে, কী কারণে যাচ্ছো তোমরা, সেটা?”

    — “না। অনি শুধু বললো ভাইয়া আপনার সঙ্গে দেখা করবো। উনিও রাজি হয়ে গেলেন।”

    — “জলদি করে চুলটা বেঁধে নাও। বিকেলে দেখা করবে বলেছিল। সোয়া চারটা বাজে। ওখানে যেতে যেতে সন্ধ্যা হবে।”

    — “দাঁড়াও না!”

    — “এত ঢঙ করে চুল বাঁধতে হবে না। জাস্ট খোপা করে পাঞ্চক্লিপ আটকাও। উনাকে বুঝাতে হবে সিচুয়েশন ক্রিটিকাল। নয়তো নিয়ে আসতে পারবে না।”

    — “আমরা পারবো তো, তাই না?”

    — “সত্যি কথা গুছিয়ে বলতে হয় না। কিন্তু মিথ্যা কথা বলতে হয় গুছিয়ে, ঠান্ডা মাথায় শান্ত ভঙ্গিতে। সামনেরজন নয়তো কনভিন্স হবে না। সো মাথা ঠান্ডা, হুম?”

    — “হুম।”

    — “অমিতকে একবার জানানো প্রয়োজন ছিল না?”

    — “বার্থডে গিফট বলে কয়ে কে দেয় সামি? আমি অমিতকে সারপ্রাইজ দিচ্ছি। ওর ধারণা ও মরে গেলেও সাব্বির কখনো আসবে না। এতবার বলেও কল করাতে পারিনি। কেন যে এত সংকোচ ওর কে জানে? সাব্বিরের জন্য এত মন খারাপ হয় ওর অথচ সামনে গিয়ে দাঁড়াবে না।”

    — “সেজন্যই বলছি ওকে একবার জানানো উচিত। ধরো সাব্বির কনভিন্স হয়েই গেল, তোমার সঙ্গে ওকে নিয়েও এলে; ওকে দেখে অমিত কিভাবে রিএ্যাক্ট করবে কিংবা সাব্বিরের সঙ্গে যদি ও কথা বলতে সংকোচ করে, তখন? সিচুয়েশনটা বুঝতে পারছো তো? এই মোমেন্টটা অমিতের সংকোচ করার না। সাব্বিরকে টাইট হাগ করে স্যরি বলার। তার উপর সাব্বির বাসায় পা রেখেই টের পেয়ে যাবে তুমি মিথ্যা বলে নিয়ে এসেছো। সিচুয়েশন আরো টাফ হবে তখন।”

    — “ভয় কেন দেখাচ্ছো সামি?”

    মুখ শুকিয়ে এল নবনীর। হতাশ চোখে চেয়ে রইলো সামির দিকে। তার গাল টেনে মিষ্টি হেসে সামি বললো,

    — “ভয় দেখাচ্ছি না বোকা মেয়ে! তোমাকে জাস্ট বলছি কী কী হতে পারে যেন আগেভাগে মেন্টালি প্রিপেয়ার হতে পারো।”

    — “চাচা -চাচী এসেছে তো দুপুরে। আমি একা না, সঙ্গে অনিও আছে। সবাই মিলে বুঝিয়ে শুনিয়ে সাব্বির ভাইয়াকে সামলে নেয়া যাবে হয়তো। আচ্ছা দেখি না কী হয়!”

    — “মোস্ট ইম্পর্ট্যান্টলি অমিত কখন ফিরবে সেটা শিওর হয়েছো তো? সাব্বির যেন বাসায় পা রেখে অমিতকে দেখতে পায়।

    — “হ্যাঁ, হ্যাঁ! ও আজ চলে আসবে পাঁচটার ভেতর। দুপুরে খাওয়ার সময়ও কথা হলো।”

    — “হয়েছে তোমার?”

    — “হ্যাঁ, রেডি।”

    — “এবার দুঃখী দুঃখী চেহারা নিয়ে বেরিয়ে পড়ো।”

    .

    সাব্বিরের ফ্ল্যাটে বসে আছে অনি আর নবনী। মাত্রই এসেছে ওরা দু’জন। সাব্বিরের ওয়াইফ রুমানার সঙ্গে কুশল বিনিময় হতে হতে সাব্বির বেরিয়ে এল নিজের রুম থেকে। অনির একগাছি চুল আঙুলে পেঁচিয়ে টেনে ধরলো সাব্বির। বললো,

    — “এতবছর পর মনে পড়লো আমার কথা?”

    — “লাগছে ভাইয়া!”

    — “লাগুক। তোদের মতন কোল্ড হার্টেড মানুষদের এভাবেই মারা উচিত।”

    — “তুমিও তো কল করোনি আমাকে।”

    অনির চুল ছেড়ে দিলো সাব্বির। চোখ মুখ থেকে মুহূর্তেই প্রাণোচ্ছল হাসি মিলিয়ে গেল তার। বেশ শান্ত ভঙ্গিতে স্ত্রীর পাশে বসলো সাব্বির। অনিকে বললো,

    — “আমার ওয়াইফ ও। পরিচয় হয়েছিস তো, তাই না?”

    — “হ্যাঁ, ভাবিই তো দরজা খুললো।”

    — “সাব্বির এত গল্প করে তোমাদের! খুব খুশি হয়েছি তুমি এসেছো। তোমাদের দেখার খুব ইচ্ছে ছিল। ভাগ্যিস আজ আমার চেম্বার সকালে ছিল। নয়তো তোমার সঙ্গে দেখাই হতো না।”

    — “আপনি ডক্টর?”

    — “হ্যাঁ।”

    — “আচ্ছা উনি কে? উনার পরিচয়টা তো জানলাম না!”

    নবনীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো রুমানা। সাব্বিরও তাকিয়ে রইলো অপরিচিতার পরিচয় জানবার আশায়। অনি কিছু বলার আগেই নবনী বললো,

    — “আমি নবনী। অমিতের কাজিন।

    — “আপনাকে এর আগে দেখিনি কখনো।”

    — “তখন চাচার বাসায় আমার যাতায়াত ছিল না তেমন। তাই দেখা হয়নি আমাদের।”

    — “আচ্ছা! আংকেল আন্টি ভালো আছে রে অনি?”

    — “আছে ভালোই।”

    — “কী করছিস তুই এখন? পড়াশোনা কতটুক আগালো?”

    — “অনার্স করছি। থার্ড ইয়ার।

    — “জানো রুমানা, এই অনিটাকে যখন হসপিটাল থেকে বাসায় নিয়ে আসা হলো তখন আমি ওদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হলুদ তোয়ালেতে মোড়ানো লাল রঙের একটা বাচ্চা! ঐ মুহূর্তটা আমার চোখে ভাসে। মনে হয় যেন এই তো সপ্তাহখানেক আগের ঘটনা। দেখো তো এই মেয়ে নাকি এখন অনার্স থার্ড ইয়ারে! তুই একটু জলদিই বড় হয়ে গেলি অনি।”

    — “সত্যিই সময় খুব বদলায় ভাইয়া। সময়ের সঙ্গে সম্পর্কও বদলায়।”

    চোখ নামিয়ে নিলো সাব্বির। অনির কথার ইঙ্গিত বুঝতে বাকি রইলো না তার। কথার প্রসঙ্গ বদলাতে ব্যস্ত হলো সে। রুমানাকে তাড়া দিতে লাগলো,

    — “কিচেনে গিয়ে দেখো খালার নাস্তা বানানো কতদূর? খালিমুখে গল্প করবে নাকি ওরা?”

    রুমানা উঠতে যাচ্ছিল তখনই বাঁধ সাধলো নবনী।

    — “আপনি বসুন ভাবি। আমরা খাবো না কিছু।”

    — “আমার বাসার গেস্টদের খালিমুখে বিদায় করি না আমি।”

    — “ভাবি সত্যি বলছি, খাওয়ার অবস্থায় আমরা একদম নেই।”

    নবনীর মুখভঙ্গিতে কৌতুহলী হলো রুমানা আর সাব্বির। অনির দিকে তাকালো দু’জনই। কাঁদো কাঁদো মুখ করে মাথানিচু করে বসে আছে ও। ভয় হতে শুরু করলো সাব্বিরের। কোনো সমস্যা হয়েছে কি? জটিল কিছু? সেজন্যই কি এতদিন পর অনির আকস্মিক আগমন? জানতে চাইলো সাব্বির, — “অনি কী হয়েছে?”

    মাথা তুললো না অনি। নিচু করে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ফ্লোরে। নবনী বললো,

    — “চাচা চাচী কেমন আছে জানতে চাইলেন। অথচ ঐ বাসার আপনার সবচেয়ে কাছের মানুষটার কথা জানতে চাইলেন না! কেমন আছে, কী অবস্থায় আছে তা কি একবারও জানতে ইচ্ছে হলো না?”

    — “দেখুন, আপনি হয়তো পুরো ঘটনা জানেন না। আর আমি এই ব্যাপারে কিছু বলতেও চাই না।”

    কড়া কণ্ঠে জবাব দিলো সাব্বির। স্বামীর আচরণে বেশ লজ্জিত রুমানা। তার পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নিচুস্বরে বললো,

    — “বিহেভ! উনি আমাদের গেস্ট সাব্বির।”

    ঠিক শান্ত হতে পারছে না সাব্বির। পুরোনো সব অভিমান রাগ অগ্নিকুন্ড হয়ে জেগে উঠলো স্মৃতিতে। অনি সাব্বিরের পাশে গিয়ে বসলো।

    — “আর কতদিন রাগ করে থাকবে ভাইয়া? দুইবছর হয়ে গেল তোমরা কেউ কারো সঙ্গে কথা বলো না! এমনটা কখনো হবার কথা ছিল?”

    — “শুনেছি একই প্লেটে খেয়ে, এক বিছানায় ঘুমিয়ে একসঙ্গে বেড়ে উঠা আপনাদের। অথচ আজ সেই মানুষটার কথা শুনে এভাবে রাগে ফুঁসছেন! ভালোবাসা, মায়া বন্ধুত্ব সব ফুরিয়ে গেছে!”

    — “আমাকে ব্লেইম করছেন আপনি! আমার ফল্ট? অমিত বলতে পারবে কখনো ওকে আমি প্রায়োরিটি দেইনি? প্রতিদিন একবার হলেও ওকে আমি কল করিনি? আমি যখন ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন নিয়ে এখানে চলে আসি তখনও সব ঠিক ছিল। বিশাল দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও সম্পর্কে তিল পরিমান ভালোবাসার কমতি হতে দেইনি আমরা। ছুটির অপেক্ষায় বসে থাকতাম আমরা। যে যখন সুযোগ পেতাম চলে আসতাম দু’জন দু’জনের কাছে। কখনো অমিত আসতো ঢাকায়, কখনো আমি যেতাম চট্টগ্রাম। ঝগড়া কখনো হয়নি আমাদের। অমিতের সঙ্গে কথা না বলে কিংবা অন্তত ছোট একটা টেক্সট না করে আমি গোটা একটা দিন কাটিয়ে ফেলবো এমনটা হয়নি কখনো। সেই অমিতের অ্যাফেয়ার হলো আর অমনি আমাকে ভুলে গেল! আমাকে! মুনিয়া ওর জীবনে আসার পর কল, টেক্সট, দেখা করা সব কমে গেল। ভাবলাম নতুন নতুন প্রেম হয়েছে গার্লফ্রেন্ডকে সময় দেবে এটাই স্বাভাবিক। আমি জানতাম দিনে অন্তত দশ মিনিট সময় আমাকে দেয়া অমিতের জন্য কোনো ব্যাপারই না। তবুও মনকে মিথ্যে বলতাম, বুঝাতাম। ওর রিলেশনের ছয়মাস পর যোগাযোগটাই বন্ধ করে দিলো। আমি কল করতেই থাকতাম, ও রিসিভ করতো না। আমাদের যোগাযোগ তখন নেমে এল সপ্তাহে এক কিংবা দুইদিনে। আর দেখা? দুই তিনমাসে কোনোরকমে একবার। ও আমাদের মাঝে দূরত্ব টানতে চাইলো কিন্তু আমি টানতে দেইনি। জোর করে টিকিয়ে রাখতে চেয়েছি, একতরফা। কেন জানেন? ও ছাড়া আর কার সঙ্গে আমি আমার কথাগুলো শেয়ার করবো? কে আছে আমার? আমার অনেক বন্ধু আছে। কিন্তু অমিতের মতন কেউ ছিল না আমার। সেই মুহূর্তে আমার বাবা মারা গেল, জব চলে গেল, নতুন বিজনেস শুরু করলাম, রুমানার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হলো। ঐ দেড় বছরে জীবনে কত কী ঘটে যাচ্ছিল, আমার হাজারখানেক কথা ওকে বলার ছিল, আমার কাঁধে ওর হাতটা প্রয়োজন ছিল, আমাকে গাইড করার মতো একটা মানুষ দরকার ছিল। পেয়েছি আমি ওকে? জিজ্ঞেস করুন না অনিকে? ওরা সবাই জানে আমি ভীষণ একরোখা স্বভাবের। আমি কখনো কারো কথা শুনিনি। কিন্তু অমিত এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে একটা কিছু বলুক, আমি ঠিক মেনে নিবো। বলছি না অমিত শুধু আমাকে নিয়ে পড়ে থাকুক, ওর ফার্স্ট প্রায়োরিটি শুধু আমিই হবো। কখনোই আমি এমনটা চাই না। প্রেম জীবনে আসতেই পারে তাই বলে ও আমাকে ভুলে কেন যাবে? আমার বিয়েতে পর্যন্ত ও আসেনি। পুরো বাড়ি আনন্দে মেতে ছিল, ছিলাম না শুধু আমি। কতবার ওকে কল করলাম! আমি কবুল বলার আগেও কল করেছিলাম, ও রিসিভ করেনি। বিয়ের আগের দিন সন্ধ্যায় কথা হয়েছিল ওর সঙ্গে। বারবার বলছিলাম ফ্লাইট ধরে চলে আয়। ও এল না। পরে জানতে পারলাম মুনিয়ার বার্থডে ফেলে আমার বিয়ে এটেন্ড করার কোনো মানেই হয় না। তাই আসেনি। তারমানে আমি আর আমাদের এই সম্পর্কটা পুরোপুরি অর্থহীন। শুধুশুধু একটা অর্থহীন সম্পর্ক টেনে নেয়ার মানে আমি খুঁজে পাইনি তাই যোগাযোগটা এপাশ থেকে আমিও চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছি। শুধু আমার সঙ্গে কেন? মুনিয়া বাদে পৃথিবীর সব সম্পর্ক ওর কাছে তুচ্ছ। অমিত কখনো এতটা বিশ্রীরূপ নেবে আমি ভাবতে পারিনি। এবার বলুন তো ফল্ট আমার? ও কেমন আছে এই কথাটা কি আমার আপনাকে জিজ্ঞেস করা উচিত?”

    — “দেখুন আমি সব জানি, অমিত বলেছে আমাকে। ও কখনো আপনাকে ব্লেইম করেনি। পুরো দোষটা নিজের কাঁধে নিয়েছে।”

    — “আচ্ছা! আমাকে নিয়ে কথা বলার সময় আছে ওর!”

    — “বেচারা খুব মন খারাপ করে আপনার কথা ভেবে। এই তো দুই চারদিন আগের কথা, আপনার গল্প করতে গিয়ে ওর চোখ ভিজে যাচ্ছিল।”

    — “হ্যাঁ ভাইয়া! অমিত ভাইয়া খুব কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু তোমাকে একটা কল করার সাহস পাচ্ছে না। তোমাদের বন্ধুদের বলেছিলাম তোমার সঙ্গে একটু কথা বলতে। ওদের নাকি তুমি অমিত ভাইয়াকে নিয়ে একটা শব্দও বলতে দাওনি!”

    — “কেন দিবো? অমিত কে? কী হয় আমার?”

    — “এমন করো না প্লিজ! ভাইয়া অনুশোচনায় দিন কাটাচ্ছে। তুমি চলো বাসায়। যা কিছু হয়েছে মিটিয়ে নাও।”

    — “তুই এজন্যই এসেছিস আমার বাসায়?”

    — “হ্যাঁ।”

    — “রুমানা ওদের নাস্তা দাও। নাস্তা করে বাসায় ফিরতে বলো।”

    রুমানার ভীষণ রাগ হলো। এতক্ষণ বারবার কানের কাছে বসে বলছিল, “আস্তে সাব্বির। শান্ত হও। ধীরে কথা বলো”। এবার তারও বিরক্ত ধরে এল। আদর সোহাগ করে আর কিছুই বুঝাতে ইচ্ছে হচ্ছে না। ধমক দিলো সাব্বিরকে।

    — “বিয়ের পর থেকে দেখছি এই ইস্যুটা নিয়ে তুমি কতটা আপসেট! তুমি বলতে পারবে সাব্বির, তোমার বন্ধুকে ভুলে গেছ কিংবা ওর প্রতি আর কোনো মায়া অবশিষ্ট নেই? কতবার বলেছি রাগ পুষে রাখতে হয় না। যা তোমাকে কষ্ট দেয় সেটা কেন বছরের পর বছর মনে ধরে বসে থাকতে হবে? একটা মানুষ তার অন্যায় বুঝতে পেরেছে, স্যরি বলতে চাইছে এটাই অনেক। তাকে সুযোগ দাও। অনুশোচনা থেকে তাকে মুক্তি দাও, নিজেও ক্ষোভ থেকে মুক্ত হও।”

    — “প্লিজ ভাইয়া!”

    — “যাবো না আমি কোথাও। ও একবার কেন? হাজারবার স্যরি বললেও ওর জন্য কোনো ক্ষমা নেই।”

    — “কতবার বুঝাবো তোমাকে! এসব রাগ, অভিমান কমাও। দিজ অল আর নট গুড ফর ইউর মেন্টাল কন্ডিশন!”

    — “সবসময় ডাক্তারি ঝেড়ো না রুমানা! আমি তোমার পেশেন্ট না। যাবো না বলেছি ব্যস! ওর সঙ্গে আমার আর কোনো কথা অবশিষ্ট নেই।”

    — “কিন্তু অমিতের কত কী বলার আছে আপনাকে! মৃত্যুর আগে এই সুযোগটুকু ওকে দিবেন না?”

    চমকে উঠলো সাব্বির-রুমানা। মৃত্যুর আগে মানে? এসবের মাঝে মৃত্যু এল কোত্থেকে? সাব্বির ব্যস্ত হলো জানতে। একরাশ মন খারাপ নিয়ে নবনী জানালো,

    — “অমিত অসুস্থ ভাইয়া। যে কোনো সময় কিছু একটা…”

    — “কিছু একটা মানে কী! কী হয়েছে?”

    — “মুনিয়ার সঙ্গে ঝগড়া করে ছাদ থেকে লাফ দিয়েছে। সুইসাইড এটেম্পট! মাথায় সিরিয়াস ইনজুরি হয়েছে। হাফবডি প্যারালাইজড।”

    — “অমিতের এতকিছু… আমাকে কেউ কিছু বলেনি কেন? কবে হলো?”

    — “চারদিন আগে। ডক্টর বলেছে বাঁচবে না। যতদিন রিজিক আছে থাকবে তারপর ফুটুস।”

    প্রচন্ড সন্দেহ নিয়ে নবনীর দিকে তাকিয়ে আছে রুমানা। তার চোখে সন্দেহ দেখতেই চোখ নামিয়ে নিলো নবনী। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে বললো,

    — “আমি আর বলতে পারছি না। কান্না পাচ্ছে। বাকিটা অনি বলুক।”

    — “কাঁদতে কাঁদতে আমাদের চোখের পানি শুকিয়ে গেছে ভাইয়া। মেনে নিয়েছি আমার ভাইয়ের এই নির্মম ভাগ্য! ওর শেষ ইচ্ছেগুলো পূরণ করছি। তোমাকে একবার দেখতে চেয়েছিল। খুব আশা নিয়ে এসেছিলাম। যাকগে, যেতে চাও না কী আর করা! ভাইয়াকে গিয়ে বলবো তোমার সঙ্গে দেখা হয়নি। বেচারা সত্যিটা জানলে ভীষণ কষ্ট পাবে।”

    — “আমি বলেছিলাম ঐ মেয়েটা অমিতকে শেষ করে ফেলবে। হলো তো! আমার কথাই সত্যি হলো।”

    বাচ্চাদের মতন ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো সাব্বির। চোখ মুছতে মুছতে অনিকে বললো,

    — “একবারও আমাকে কল করে জানালি না তুই!”

    — “তুমি আসবে না জানতাম। ভাইয়া খুব জোরাজোরি করছিল গতকাল। আম্মুকে ডেকে বললো ওর সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে, শেষবারের মতো তোমাকে দেখতে চায়। তাই কল করেছিলাম।”

    — “বললেই হলো! কিচ্ছু হবে না ওর। ঢাকার বেস্ট ডক্টর দিয়ে ওর ট্রিটমেন্ট করাবো। প্রয়োজনে দেশের বাইরে নিয়ে যাবো।”

    — “বাঁচার ইচ্ছে নেই বেচারার। মুনিয়াকে হারিয়ে বেঁচে থাকার আগ্রহই মরে গেছে।”

    — “চড় মেরে বাঁচার আগ্রহ ফিরিয়ে আনছি আমি! কোন হসপিটালে আছে? চল এক্ষুনি যাবো আমি।”

    — “হসপিটাল না। বাসাতেই আছে এখন। অমিত ভাইয়া খুব জেদ করছিল মরতে যেহেতু হবেই, বাসাতেই মরবে। এই বাসায় মুনিয়ার স্মৃতি আছে, মুনিয়া না হোক মুনিয়ার স্মৃতি নিয়ে অন্তত সে মরতে চায়।”

    — “ও বললো আর তোরা রাজি হয়ে গেলি!”

    — “কী করবো? খুব জেদ করছিল তো!”

    — “ফালতু কথাবার্তা যত্তসব। রুমানা, যেভাবে আছো সেভাবেই চলো। জামা বদলানোর প্রয়োজন নেই। খামোখা দেরী হবে। অনি তোরা নিচে যা। আমি গাড়ির চাবি নিয়ে নামছি। সিঁড়ি বেয়ে একসঙ্গে নিচে নামছে ওরা তিনজন। হঠাৎ রুমানা বলে উঠলো,

    — “মিথ্যে গল্পটাও ঠিকঠাক সাজাতে পারো না। সাব্বির প্রচন্ড বোকা আর ইমোশনাল। তাই ভুংভাং বুঝিয়ে নিয়ে যেতে পারছো। অন্য কেউ হলে না…”

    স্ট্যাচু হয়ে সিঁড়িতেই দাঁড়িয়ে পরলো নবনী আর অনি। একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। রুমানা হেসে বললো,

    — “রিল্যাক্স! সাব্বিরকে কিছু বলবো না আমি। আমিও চাচ্ছিলাম দুজনের ঝামেলা মিটে যাক। আমার হাজবেন্ড অমিতকে মিস করে ভীষন। প্রতিটা অকেশনে উনাকে ভেবে মন খারাপ করে। এভাবে ওকে দেখতে ভালো লাগে না। হোপফুলি আজ দু’জনের একটা মিমাংসা হয়ে যাবে।”

    ৪২

    বসার ঘরে মা বাবার সঙ্গে বসে সন্ধ্যার চা, নাস্তা আর আড্ডায় ব্যস্ত অমিত। নবনী আজ জলদি ফিরতে বলে নিজেই উধাও হয়ে গেল। বলেছিল আজ দূরে কোথায় নাকি প্রোডাক্টের স্যাম্পল দেখাতে যাবে তাকে নিয়ে। অথচ বাসায় ফিরে দেখলো নবনী নেই। অনিকে নিয়ে মার্কেটে গেছে আর সেই ক্লাইন্টের অফিসে যাওয়াও নাকি ক্যান্সেল। একটু আধটু মেজাজ খারাপ হচ্ছে নবনীর উপর। নাকে-মুখে বিকেলের মধ্যে সব কাজ সেরে বাসায় ফিরে এসেছে শুধু ওর জন্য। নয়তো সে এত কাজের প্রেশার নিতো নাকি? আরাম করে ধীরে সুস্থে কাজ করা যেত। বাসার কলিংবেল বাজছে। হাতের চা টেবিলে রেখে, দরজা খুললো অমিত। দরজার এপাশে ওপাশে স্তব্ধ হয়ে দুই বন্ধু একে অন্যের দিকে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলো সাব্বির,

    — “তুই সুস্থ আছিস!”

    ঘাড় ফিরিয়ে অনি নবনীর দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো সে।

    — “তোমরা আমাকে মিথ্যে বলেছো?”

    সাব্বিরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নবনী আর অনি জোর করে তাকে ঘরে টেনে আনলো। রুমানা তড়িঘড়ি করে ঘরে ঢুকে দরজা আটকে দাঁড়ালো সামনে। এরশাদ সাহেব হেসে বললেন,

    — “ওরে নবনী! কান্ড দেখছি সত্যিসত্যিই ঘটিয়ে ছাড়লে। আমি ভেবেছিলাম পাগলা ষাড়টাকে বাসায় কোনোভাবেই আনতে পারবে না।”

    অমিত অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো নবনীর দিকে। গতসপ্তাহে সাব্বিরের প্রসঙ্গ উঠতেই মেয়েটা বলেছিল, আমি তুড়ি বাজিয়ে সব ঠিক করে ফেলতে পারি তোমার বন্ধু আর এমন কী! এটাকেও তোমার সামনে এনে হাজির করে ফেলবো। অমিত স্বপ্নেও কখনো ভাবেনি নবনী সেদিনের কথাগুলো সত্যি ঘটাবে। কিংবা এখন চোখের সামনে যা কিছু ঘটছে সেটাও সত্যি বলে মানতে ইচ্ছে হচ্ছে না। অমিতের কাঁধে ধাক্কা দিয়ে নবনী বললো,

    — “অমিত, গাধার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন?”

    — “হ্যাঁ? দাঁড়াবো না?”

    — “বন্ধুকে পেয়ে হুঁশ জ্ঞান সব হারালে নাকি? পুরো দুইসপ্তাহ প্ল্যান করে, কত মিথ্যে নাটক করে তোমার বন্ধুকে ধরে এনেছি, জানো?”

    — “ছাড়ুন আমাকে! চিটারের দল! ওর মতন ফালতু ছেলেপেলের ফ্ল্যাটে আমি এক মুহূর্তও দাঁড়াবো না।”

    সাব্বির চেঁচাচ্ছে। তার চেঁচামেচিতে ঘোর কাটলো অমিতের। এগিয়ে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সাব্বিরকে। প্রাণপণে নিজেকে ছাড়াতে চাইছে সাব্বির।

    অমিত মিনতি করতে লাগলো,

    — “মাফ করে দে না ভাই!”

    — “কিসের মাফ? তুই মাফ পাওয়ার উপযুক্ত?”

    — “তোর চোখ ভেজা কেন সাব্বির? নবনী কী বলেছে তোকে? আমি অসুস্থ?”

    — “কে এই মেয়ে? কিসব বলে টলে আমাকে নিয়ে এল। আর অনি! এত মিথ্যুক সবাই!”

    — “চোখ ভেজা কেন বললি না তো?”

    — “জানি না। ছাড় আমাকে তুই।’

    — “ক্ষমা না করা পর্যন্ত ছাড়ছি না।”

    — “আমার ক্ষমায় কী আসে যায় তোর? আমি তোর কেউ না।”

    বলতে গিয়ে গলা কেঁপে উঠলো সাব্বিরের। বন্ধুর অভিমানের আঁচ স্পষ্ট টের পাচ্ছে অমিত। চোখের কোণ ভিজে উঠলো তার। কাঁপাস্বরে বললো,

    — “আমরা কি শুধু বন্ধু ছিলাম কখনো? ভাই আমরা। ভুল হয়ে গেছে আমার। কী করবি এখন বল? চিরতরে মুছে ফেলবি আমাকে? পারবি? পেরেছিস এই দুই বছরে? কষ্ট হয়নি আমার জন্য? আমাকে এখনও আগের মতই ভালোবাসিস। নয়তো এভাবে ছুটে আসতি আমাকে দেখতে?”

    — “আমি মুছতে জানি না অমিত, তুই জানিস। মুছেই তো ফেলেছিস আমাকে।”

    — “কই মুছে ফেললাম! তোর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে হতো খুব। কতবার তোর নাম্বারে ডায়াল করতে গিয়েও করিনি। তোর বাসার নিচ থেকে ফিরে এসেছি কতবার!”

    — “মিথ্যা বলবি না একদম! আমি জানি আমাকে কখনোই মনে পড়ে না তোর।”

    সাব্বিরের অভিযোগে সমস্বরে বাঁধ সাধলো নবনী আর শামীমা।

    — “ভুল! আমার ছেলে তোমাকে খুব মিস করে।”

    — “হ্যাঁ করেই তো। এইতো গেল সপ্তাহেও আপনার কথা বলতে গিয়ে কেঁদেই ফেললো।”

    রুমানা এসে সাব্বিরের হাতজোড়া অমিতের পিঠে জড়িয়ে দিলো।

    — “বন্ধু স্যরি বলছে তোমাকে। সম্পর্কটা আবারও আঁকড়ে ধরতে চাইছে। তুমিও আঁকড়ে ধরো সাব্বির। রাগ পুষে কী লাভ হবে বলো তো!”

    — “লাভ হবে। ও আমার সঙ্গে যেমন আচরণ করেছে ওকে আমি ফিরিয়ে দিলে শান্তি পাবো।”

    — “বাচ্চাদের মতন বিহেভ করছো!”

    — “অমিত যখন আমার সঙ্গে মিসবিহেভ করলো তখন কেউ ওকে কিছু বলেনি কেন? আজ আমি রাগ করেছি বলে সবাই মিলে আমাকে জোর করছো। কেন? আমি কষ্ট পাইনি? ও কেন আমাকে অকারণে কষ্ট দিলো? জিজ্ঞেস করো ওকে? কেন যোগাযোগ করতে চাইলো না? কেন আমার বিয়েতে এল না? দুইবছর আমাদের যোগাযোগ নেই। কেন ও এল না আমার অভিমান ভাঙাতে?”

    — “বহুবার চেয়েছি যোগাযোগ করতে। বিশ্বাস কর! সাহস হয়নি তোর সামনে দাঁড়ানোর।”

    — “কেন সাহস হয়নি? খেয়ে ফেলতাম তোকে?”

    — “কোন মুখে দাঁড়াতাম তোর সামনে? পথ খোলা রাখিনি তো আর!”

    — “আমার কাছে আসার পথ আমি তো কখনো বন্ধ করিনি।”

    — “বন্ধুদের দিয়ে কথা বলাতে চেয়েছিলাম, তুই সুযোগই দিসনি।”

    — “ওরা কেন তোর আর আমার ব্যাপারে কথা বলবে? আমাদের ব্যাপারে কথা বলবো শুধু আমরা দু’জন। একটাবার আমার সামনে এসে দাঁড়ালি না কেন তুই?”

    — “দাঁড়ালে ক্ষমা করে দিতি?”

    — “তোর প্রতি আমার অভিমান জমেছে অমিত। ক্ষমার প্রসঙ্গ এখানে নেই। শুধু একবার আমার সামনে এসে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেই চলতো, কেমন আছিস। আমি ভেবেছিলাম তুই আসবি। অপেক্ষায় ছিলাম। অথচ তুই এলি না। আর আমার অভিমান বেড়েই গেল।

    — “এখন তো দাঁড়িয়ে আছি তোর সামনেই, এবার মাফ করে দে আমাকে! আর কক্ষনো তোকে ইগনোর করবো না।”

    অমিতকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো সাব্বির। নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে দুই বন্ধু। শামীমা আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছছেন। অমিতের মতন সাব্বিরও তার ছেলে। কখনো ওকে আলাদা চোখে দেখেছেন নাকি! কতদিন বাদে আজ থেকে তার দুই ছেলের সম্পর্ক আবারও আগের হবে। এতগুলো দিনে তিনি যা করতে পারেননি, নবনী মাত্র আধঘন্টায় করে দেখালো। ছেলে তার নিশ্চয়ই কোনো পূণ্য করেছে! নয়তো এমন বউ কেমন করে পেলো? ঐ ডাইনির কাছ থেকে মুক্তিই বা কেমন করে মিললো?

    পুরো ঘরে নিঃস্তব্ধতা। দুই বন্ধুর নাক টানার শব্দ শোনা যাচ্ছে শুধু। উপস্থিত সবাই ভীষণ আবেগি হয়ে ওদের দেখছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রুমানা বলে উঠলো,

    — “তুমি কি শুধু কাঁদবেই? বাসার বাকি সদস্যদের সঙ্গে আমার পরিচয় করাবে না?”

    হাসলো সাব্বির। একহাতে রুমানাকে কাছে জড়িয়ে বললো,

    — “এই দ্যাখ, আমার ওয়াইফ রুমানা।”

    — “কত গল্প যে শুনেছি আপনার! আপনি কী পছন্দ করেন, কী অপছন্দ করেন সব মুখস্থ আমার। জিজ্ঞেস করলে এক্ষুনি ফটফট করে বলে দিতে পারবো।”

    — “আর আমি ভেবেছিলাম সাব্বির হয়তো আমার নামই উচ্চারণ করে না।”

    চাচা-চাচীর মাঝে আসন পেতে বসতে বসতে নবনী বললো,

    — “মানুষকে ভুলভাল বুঝা ছাড়া তোমার জীবনে আর আছে কী, বলো! তিলকে মনে মনে তাল বানানো তোমার অভ্যেস। ঝামেলা খুব ভালোই লাগাতে পারো। অথচ সমাধান করতে পারো না। নবনীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এরশাদ সাহেব। বললেন,

    — “সমাধান সব তুমি করে দিচ্ছো। অমিতের আর সেসব ভেবে কাজ কী! এখন থেকে ঝামেলা বাঁধিয়ে তোমার কাছে ছুটে যাবে সমাধানের জন্য দেখো।”

    শামীমা অনিকে ডেকে বললেন,

    — “অনি, কিচেনে চল। রাতের রান্নাটা সেড়ে ফেলি। ছেলের বউ আজ প্রথম বাসায় এসেছে। স্পেশাল আয়োজন হবে ওর জন্য।”

    নবনী উঠে রুমানার হাত টেনে ধরলো।

    — “চলুন। আপনি ডাইনিংরুমে বসবেন। আমরা ওদিকে কাজ করতে করতে আপনার সঙ্গে গল্প করবো। ওরা দুই বন্ধু অমিতের ঘরে বসে গল্প করুক।”

    অমিতের ঘরে ঢুকেই সাব্বির জিজ্ঞেস করলো,

    — “মেয়েটা কে রে অমিত? কেমন কাজিন তোর? আগে কখনো দেখিনি তো!”

    তড়িঘড়ি করে দরজা আটকে নিলো অমিত। নিচুস্বরে বললো,

    — “নবনী আমার ওয়াইফ।”

    বিছানায় ধুপ করে বসে পড়লো সাব্বির। রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো অমিতের দিকে। হাসলো অমিত,

    — “বিশ্বাস হচ্ছে না তোর?”

    — “না!”

    — “সত্যিই ও আমার ওয়াইফ।”

    — “তুই বিয়ে করলি কবে?”

    — “গেল বছর অক্টোবরে।

    — “তুই অন্য কাউকে বিয়ে করেছিস এই কথাটা এখন আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?”

    — “হ্যাঁ!”

    — “আর ঐ মেয়েটা?”

    — “মুনিয়া?”

    — “হ্যাঁ। আঠার মতো লেগেছিলি যার সঙ্গে তাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে! ব্যাপারটা ঠিক হজম হলো না। পুরো ঘটনাটা বল তো আমাকে।”

    *****

    মোবাইলে একের পর এক ছবিগুলো সোয়াইপ করে দেখছে অমিত। আজ তার জন্মদিন। এবারের জন্মদিন খুব স্পেশাল। কারণটা নবনী। জন্মদিন উপলক্ষে অমূল্য কিছু গিফট করে দিলো মেয়েটা। কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি তার জীবনে একটা মেয়ে আসবে আর সেই মেয়েটা তার জন্মদিনের ঠিক আগের সন্ধ্যায় হারানো বন্ধুকে ফিরিয়ে দেবে তার কাছে। অসম্ভব ব্যাপারটা কী করে সম্ভব করে ফেললো কে জানে! পুরো চারবছর পর আজ বারোটায় ফ্যামিলি আর সাব্বিরকে নিয়ে কেক কাটা হলো তার। মুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের পর পরিবারের সঙ্গে রাত বারোটায় আর কেক কাটা হয়নি। জন্মদিনের প্রথম প্রহর কাটতো মুনিয়ার বাসায়। মায়ের শত অনুরোধেও কাজ হতো না। মুনিয়াই যে গোটা পৃথিবী হয়ে ছিল তখন! কতগুলো বছর বাদে সেই পুরোনো মিষ্টি মুহূর্ত জীবনে ফিরে এসেছে শুধুমাত্র নবনীর জন্যে। এইযে ক্যামেরাবন্দী হাসিখুশি মুহূর্তগুলো সব নবনীর তোলা। সবার ছবি তুলতে গিয়ে শেষমেশ নবনীর আর ছবি তোলা হলো না তার সঙ্গে! আফসোস হচ্ছে অমিতের। একটা ছবি কেন নেই ওর সঙ্গে? কাল বড় করে আয়োজন হবে বাসায়। তবুও তো! আজকের রাতটা অনেক বেশিই স্পেশাল ছিল। এই রাতে দুজনের একটা ছবি অবশ্যই থাকা উচিত! ঘড়িতে একবার তাকালো অমিত। রাত আড়াইটা বাজে। সাব্বির বাসা থেকে বেরিয়েছে আরো দেড় ঘন্টা আগে। এতক্ষণে কি নবনী ঘুমিয়ে গেছে? যাবে একবার ওর ঘরে? অনেককিছু ভাবতে ভাবতে হঠাৎ অমিতের মনে হলো, নবনী ঘুমাক! তাতে কী? ঘুম থেকে জাগিয়ে আজ ছবি তুলবে সে।

    .

    বারান্দায় বসে কেক খাচ্ছে নবনী। নবনীর পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে সামি। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। নবনী অবশিষ্ট পুরোটা কেক মুখে পুড়ে বললো,

    — “খাবোই। জীবন আছে যতক্ষণ খেতে থাকবো ততক্ষণ।”

    — “তিন পিস কেক খেয়েছো আজ। তুমি এখন ত্রিশ নবনী! এসব কেক, অয়েলি ফুড একটু কন্ট্রোল করো। কখন আবার কলেস্টেরলের, হাই বিপি, ডায়বেটিস ধরা পড়ে কে জানে!”

    — “পড়ুক। ফুটুস করে মরে যাবো। তারপর তুমি আর আমি আকাশে উড়ে উড়ে বেড়াবো। কষ্ট করে এতদূর থেকে আমার জন্য আসতে হবে না। বারান্দা দিয়ে হু হু করে ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে ঘরে। নবনীর গায়ে শুধু সামির পুরোনো নরম হয়ে যাওয়া নীল রঙের শার্ট। ওর হাত-পা এতক্ষণে ঠান্ডা হয়ে গেছে নিশ্চয়ই! কমফোর্টার হাতে নিতে গিয়েও থেমে গেল অমিত। সামির সঙ্গে ব্যস্ত নবনী। নিচুস্বরে গল্প করছে, হাসছে। ভালোবাসার মানুষটার সঙ্গে ওর একান্ত মুহূর্তে বিরক্ত করার অধিকার কি তার আছে? নবনী দিয়েছে তাকে সেই অধিকার? বিষন্ন চোখে নবনীকে দেখছে অমিত। কান পেতে শুনছে ওর নিচুস্বরে কথোপকথন।

    *****

    — “আচ্ছা! সেজন্যই তখন নবনী চমকে গিয়েছিল।

    আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখে নাইটক্রিম মাখতে মাখতে বললো রুমানা। গালে হাত রেখে ভ্রু কুঁচকে বসে আছে সাব্বির। দীর্ঘ একঘন্টা যাবৎ এভাবেই ভ্রু কুঁচকে আছে সে। অমিত-নবনীর গল্পটা রুমানাকে শোনাবার সময় একবারের জন্যও চেহারা স্বাভাবিক হয়নি তার। রুমানার কথা শুনে সাব্বির জিজ্ঞেস করলো, – “কখন? কেন?”

    — “আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমি গাইনি স্পেশালিষ্ট কি না। বললাম আমি সাইকিয়াট্রিস্ট। শোনা মাত্র ওর চেহারার রঙ উড়ে গেল।”

    — “হ্যাঁ তোমরা হলে ওর কাছে টেরোরিস্ট।”

    — “টেরোরিস্ট! আরেকটু ভালো উদাহরণ দেয়া যেত না সাব্বির?”

    — “এ্যাই রুমানা!

    — “কী?”

    — “তুমিই তো সাইকিয়াট্রিস্ট! নবনীর ট্রিটমেন্ট তুমি কেন করছো না?”

    — “বলেছো করতে?”

    — “এখন তো বলছি।”

    — “অবশ্য তোমার কথা শুনতে শুনতে আমিও মনে মনে ভাবছিলাম ওর ট্রিটমেন্ট আমি করবো। তবে সরাসরি না”।

    — “তাহলে?”

    — “ট্রিকস ফলো করতে হবে। প্ল্যান আছে একটা।”

    — “এরমধ্যে প্ল্যানও করে ফেললে?”

    — “আহামরি কিছু না। তবে সাবধান থাকতে হবে এই যা! একবার নবনী কিছু টের পেয়ে গেলে আর কখনো ও নিজের ফ্যামিলি মেম্বারদের ট্রাস্ট করবে না। বাসা ছেড়ে চিরতরে চলেও যেতে পারে।”

    — “ঝামেলা!”

    — “শারীরিকভাবে অসুস্থ মানুষদের সুস্থ করতে যতটা যত্ন, শ্রম দিতে হয় মানসিক রোগীর ক্ষেত্রেও তাই। তবে এক্ষেত্রে ফ্যামিলি মেম্বারদের ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হয় বেশি।”

    — “প্ল্যান কী?”

    — “আজ নবনী একটু অসুস্থ ছিল। খেয়াল করেছো?”

    — “না তো!”

    — “কথা বলছিল আমাদের সঙ্গে। খেয়াল করলাম ও জোর করে চোখ টেনে রাখছে। অস্থির লাগছিল একটু। জিজ্ঞেস করলাম সমস্যা কী? তখন ও বললো, মাথা ঘুরাচ্ছে। অনি, আন্টি আংকেল বারবার বলছিল ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়তে। ও গেল না। এরপর আন্টি আর অনি ওকে নিয়ে অভিযোগের ঝুলি খুলে বসলো। মাথা ঘুরানো, মাথাব্যথা, ব্যাকপেইন, হাঁটুতে ব্যথা ওর কমন প্রবলেম। প্রায়ই বেশ ভুগতে হয় ওকে। তবুও ও রেস্ট নিতে চায় না, খেতে চায় না। পাগলের মতন কাজ করতেই থাকে। বহুবার ডক্টরের কাছে নিতে চেয়েও ওকে নেয়া যায়নি। মোটকথা নবনী পুরোপুরি সুস্থ না, টুকটাক সমস্যা ওর আছে। ধরো কিছু ভিটামিন আর ক্যালসিয়াম ওর প্রয়োজন। ওকে আমি আমার ফ্রেন্ড রিয়াজের চেম্বারে পাঠাবো। মানে অমিত কিংবা আন্টি ওকে নিয়ে যাবে। রিয়াজের সঙ্গে আগেই নবনীর কন্ডিশন ডিসকাস করে রাখবো। রিয়াজকে বলবো কয়েকটা ভিটামিন প্রেসক্রাইব করে দিতে। অমিত ভাইয়া মেডিসিনগুলো বদলে ফেলবে। মানে ট্যাবলেটগুলো ফেলে বোতলের ভেতর আমার প্রেসক্রাইব করা মেডিসিনগুলো রেখে দিবে।”

    — “রুমানা, কী সলিউশন দিলে! বেচারা অমিত বউ নিয়ে কি টেনশনে আছে। আইডিয়া শুনে খুশি হয়ে যাবে একদম!”

    — “উনার সঙ্গে আমার কথা বলতে হবে। নবনীর কন্ডিশন উনি ভালো বলতে পারবে আমাকে। ওর আগের প্রেসক্রিপশনগুলোও লাগবে।

    — “সব হয়ে যাবে। তুমি শুধু বলো সুস্থ হতে কতদিন সময় লাগবে?”

    — “আমি আমার বেস্ট ট্রাই করবো। দেখা যাক কী হয়! আমি মেডিসিন দিতে পারবো। নবনীর সঙ্গে দেখা হলে কাউন্সেলিং করাতে পারবো। কিন্তু সেটা তো রেগুলার না আবার সরাসরি সামির প্রসঙ্গে কিছু বলতে পারবো না। সো, অমিত আর বাসার অন্যান্য মেম্বারদের সেভাবে টেক কেয়ার করতে হবে।’

    — “করবে। অমিতের হাবভাব যা বুঝলাম হি ইজ ইন লাভ। নবনী ওর মাঝে বিশাল একটা অংশ দখল করে নিয়েছে। নবনী ওর জন্য কী কী করেছে, নবনী মানুষ হিসেবে কেমন সেসব নিয়ে কথা বলার সময় আমি দেখছিলাম অমিতকে। আমি আলাদা কিছু খুঁজে পাচ্ছিলাম ওর চোখে।”

    — “খুব স্বাভাবিক। একজন তোমাকে ভেঙে গুড়িয়ে দিলো আর সেই মুহূর্তে অন্য কেউ এসে তোমাকে কুড়িয়ে নিয়ে আবার জোড়া লাগালো, তার প্রতি দুর্বলতা অসম্ভব কিছু তো না! নবনী মেয়ে হিসেবে চমৎকার। ওর সঙ্গে কথা বলে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। ইনফ্যাক্ট আমার আজকের দিনটা খুব ভালো কেটেছে ওর সঙ্গে গল্প করে। অমিতের সঙ্গে নবনী আরো অনেক ক্লোজ। তার উপর মেয়েটা ওর বিয়ে করা বউ। ভালোবাসা তো হবারই ছিল।”

    — “ঐ বুড়ো লোকটা যদিও একটা ক্রাইম করেছে কিন্তু অসম্ভব রকমে ভালো কাজ করেছে। নয়তো মুনিয়া ডাইনিটার কাছ থেকে অমিতের রেহাই ছিল না। নবনীর মতন কিউট আর কেয়ারিং বউ পেতো না।”

    — “রাবিশ! ডাইনি কী, সাব্বির? কেমন ভাষা এসব?”

    — “ও সত্যিই ডাইনি, রুমানা। মুনিয়া কেমন অসভ্য তা জানা নেই তোমার।”

    — “জানি। তোমাকে কতবার বলেছি এসব ভাষা ব্যবহার না করতে।”

    — “ধুর! থাকো তুমি তোমার ভাষা নিয়ে। আমি অমিতকে কল করে তোমার সলিউশন জানাই।”

    ৪৩

    বন্ধু, অমিতের অফিস কলিগ প্রতিবেশী আর খুব কাছের পাঁচ সাতজন আত্মীয় মিলে পঞ্চাশ জনের আয়োজন হয়েছে আজ বাসায়। রান্নাবান্না সব অমিতের মা, শাশুড়ি আর মামী শাশুড়ি মিলে সেরে ফেলেছে। ঘর গোছানো, বসার ঘরে বার্থডে ডেকোরেশন, রান্নার কাজে সাহায্য এসব করেছে নবনী, অনি আর নাতাশা।

    অফিস থেকে আজ একটু জলদিই বেরিয়েছিল অমিত। পাঁচটা নাগাদ বাসায় ফিরে দেখলো সমস্ত আয়োজন শেষ। বসার ঘরটা ঘুরে ঘুরে দেখছে অমিত। নবনীর বাবা অমিতকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন,

    — “অমিত, পছন্দ হয়নি ডেকোরেশন? মেয়েদের বলবো চেঞ্জ করতে?”

    হাসলো অমিত।

    — “পঁয়ত্রিশ হয়ে গেছে আমার! এই বয়সে এভাবে ঘর সাজিয়ে কে বার্থডে করে?”

    পায়েস খেতে খেতে এরশাদ সাহেব বললেন,

    — “পছন্দ হয়েছে কি না সেটা বল?”

    — “অবশ্যই হয়েছে। মনে হচ্ছে যেন ছোটবেলায় ফিরে গেছি আমি! চট্টগ্রামের আগের বাসাটার ফিল পাচ্ছি আব্বু। চোখে ভাসছে সবকিছু।”

    — “খুশি খুশি লাগছে না?”

    — “অনেক!”

    — “তোমার খুশি দ্বিগুন করতে আমার মেয়ে দারুণ একটা সারপ্রাইজ রেখেছে তোমার জন্য।

    — “আর কত সারপ্রাইজ দিবে ও আমাকে?”

    — “গাধা! জিজ্ঞেস কর কী সারপ্রাইজ?”

    — “কী?”

    — “পরে দেখাচ্ছি। আগে কিচেনে আয়। দেখ তোর মা, চাচী আর শিপনের বউ মিলে কত কী রান্না করেছে। গরুর মাংসটা যা বানিয়েছে না ভাবী!”

    শফিক সাহেব মুখ উজ্জ্বল করে বলতে লাগলেন,

    — “আমার বউয়ের হাতের বিফ রান্না বরাবরই বেস্ট! নীতুর মতন বিফ কেউ রাঁধতেই পারে না।”

    বাবার ছেলেমানুষীতে হাসলো অমিত।

    — “তুমি অলরেডি খেয়েও নিলে আব্বু?”

    — “শুধু আমি একা খেয়েছি নাকি? তোর চাচাও খেয়েছে। জিজ্ঞেস কর?”

    — “আশ্চর্য! তুই শিপনের নাম বলছিস না কেন এরশাদ? ও খায়নি?”

    — “হ্যাঁ ঐ তো! শিপনও ছিল। যাই হোক, তোর মা, চাচীদের কিছু বলিস না।”

    — “তোমরা চুরি করে খেয়েছো!”

    — “নিজের ঘর থেকে খেলে সেটা চুরি হয় না বাবা। বুঝতে চেষ্টা কর ব্যাপারটা!”

    — “ছেলেকে কিচেনে নিয়ে যা না এরশাদ! ওকেও বাটিতে তুলে দে দুইপিস। ছেলেকে খুশি রাখ। কূটনীতি বুঝতে হবে তো, তাই না!”

    — “তুই আয় আমার সঙ্গে। সব কয়টা আইটেম একটু করে টেস্ট কর। তারপর তোকে সারপ্রাইজ দেখাচ্ছি।”

    অমিতের হাত টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছেন এরশাদ সাহেব। অমিত বললো,

    — “আমি এখন কিছু খাবো না। আগে বলো কী সারপ্রাইজ?”

    — “খাবি না? সিওর? এত মজার খাবার মিস করবি?”

    — “পরে খাওয়া যাবে। আগে সারপ্রাইজ দেখি।”

    ফ্রিজের সামনে এসে দাঁড়ালেন এরশাদ সাহেব। ভেতর থেকে বড় কেকবক্সটা বের করে বললেন,

    — “খুলে দেখ।”

    বক্স খুলতেই আনন্দে চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো অমিতের।

    — “মাই গড! এটা কোথায় পেলো নবনী?”

    — “আমাকে জিজ্ঞেস করলো অমিতের সবচেয়ে মেমোরেবল বার্থডে কোনটা ছিল? বললাম তোর দশ বছরের জন্মদিনের কথা। পুরো পার্টিটা খুব এনজয় করেছিলি তুই। সবচেয়ে বেশি গল্প করিস ঐ বার্থডে পার্টির। আর কেকটা তোর ভীষণ পছন্দ ছিল।”

    — “হ্যাঁ। আমার সবচেয়ে প্রিয় কেক!”

    — “আর কী! ছবি নিয়ে চলে গেল কেকের দোকানে এক সপ্তাহ আগে। অর্ডার দিয়ে এসেছিল আজকের জন্য।”

    — “শি ইজ দ্য বেস্ট গার্ল আই হ্যাভ এভার মেট আব্বু! কী কী যে করছে না আমার জন্য! কোনদিন দেখবো আকাশের চাঁদ তারাও এনে হাজির করেছে আমার সামনে। ইনসেইন! শি ইজ টোটালি ইনসেইন!”

    — “সেজন্য তোর মা আর আমি বলি মেনে নে এই বিয়েটা। ওর চেয়ে বেটার আর কাউকে পাবি না।”

    — “নাহ্! এবার মনে হচ্ছে সত্যিই বেঁধে রাখতে হবে ওকে। চলে যেতে দিলে খুব লস হয়ে যাবে।”

    একসঙ্গে হেসে উঠলো দু’জন। একটুখানি দূরে দাঁড়িয়ে আছেন শফিক সাহেব। হাসছেন তিনিও। স্বস্তির হাসি। তার অমূল্য রত্নকে এই ছেলেটা চিনতে পেরেছে। বহুবছর আগে মায়ের কাছে শুনেছিল, রত্নের কদর সবাই করতে জানে নাকি! যে জানে সে নিজেও অমূল্য।

    অমিত বারবার প্রমাণ করছে তার অমূল্য রত্ন মন্দ হাতে সোপর্দ হয়নি। মেয়ের বাবা হিসেবে এ যে পরম প্রাপ্তি!

    কেকটা আবার সযত্নে তুলে রেখে অমিত তার বাবাকে জিজ্ঞেস করলো,

    — “নবনী কোথায় আব্বু?”

    — “লেডিস পার্টি সব সাজগোজে ব্যস্ত। আপাতত কাউকে ডাকাডাকি করিস না। তুই ঘরে যা, ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নে। ততক্ষণে ওদেরও হয়ে যাবে।”

    পুরো ঘরময় মানুষ। তাদের কথার শব্দে অমিতের ফ্ল্যাট সরগরম। বাসায় আজ মাছের বাজার বসেছে যেন। সবাই চলে এসেছে। এখনো এসে পৌঁছায়নি বড় মামার পরিবার আর সাব্বির-রুমানা। ওদের জন্যই এখনো কেক কাটা হচ্ছে না। ওদিকে নবনীও এখনো এদিকটাতে আসছে না। বাসার সব মহিলারা রেডি হয়ে এদিক ওদিক ঘুরঘুর করছে। অথচ যাকে দেখবে বলে ক্ষণে ক্ষণে সে অস্থির হয়ে উঠছে তাকেই দেখতে পাচ্ছে না। বন্ধুদের আড্ডা ছেড়ে নবনীর রুমের দিকে গেল অমিত। রুমে পা রাখতেই এক মুহূর্তের জন্য হার্টবিট মিস হলো বোধহয়! নবনী শাড়ী পরেছে! ওয়াইন কালার জামদানী। সঙ্গে ন্যুড মেকআপ। কপালে ছোট্ট টিপ। হাতভরা কাঁচের চুড়ি। কানে গতমাসে তার গিফট করা কুন্দনের ইয়াররিং। খোপায় ফুল বাঁধা নিয়ে যুদ্ধ চলছে ওর। অমিত এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই রইলো নবনীর দিকে। এই প্রথম শাড়ী পরলো নবনী। বিয়ের দিনও পরেছিল কিন্তু ওর দিকে ঠিকঠাক চোখ তুলে তাকানোই হয়নি।এক হিসেবে আজ নবনীকে প্রথম শাড়ী পরতে দেখা। শাড়ীতে নবনীকে এত অসাধারণ লাগে, তাহলে রোজ কেন শাড়ী পরে না মেয়েটা?

    — “বেকুবের মতন তাকিয়ে আছো কেন অমিত? দেখতে পাচ্ছো না ফুল আটকাতে পারছিনা? আসো, হেল্প করো আমাকে।”

    অমিতকে ধাক্কা দিয়ে হুরমুর করে ঘরে ঢুকলো অনি। তড়িঘড়ি করে ড্রেসিং টেবিল থেকে জুয়েলারী বক্সগুলো বের করছে সে। অনিকে দেখতে পেয়ে নবনী বললো,

    — “থাক লাগবে না, অনি করে দিবে। আমার ফুলটা ঠিক করে দাও তো অনি।”

    — “ভাইয়াকে বলো। আমার কানের জিনিসের বড় পাথরটাই পড়ে গেছে। অন্য একটা ম্যাচিং জুয়েলারী খুঁজতে হবে।”

    অমিতকে আবার ডাকার আগে সে নিজেই নবনীর কাছে এল। প্ৰায় গা ঘেঁষে দাঁড়ালো নবনীর। খোপার ফুলে ক্লিপ আটকে দিতে দিতে, আয়নায় নবনীর চোখে চোখ রেখে নিচুস্বরে বললো,

    — “আঁর তুন তোয়াঁর লাই বড় মায়া লাগে। এই দে আঁই তোয়াঁরে হারাক্ষণ খইথে থাখি দে তুই আঁর বান্ধবী হইলেও আদতে বান্ধবী ন। আঁত্তুন তোয়ারে হেয়াত্তুন বেশ ভাইবতু মনে অয়। তোয়াঁর খথা চিন্দে গইরলে আঁই হারাক্ষণ বেদিশা থাখি তোয়াঁর লাই দে মায়া লাগের, বেদিশা লাগের, হিয়িনুর নাম কী দিতাম আঁই? আঁই কি তইলে তোয়াঁরে পিরিত গরি ফেলাই?”

    জুয়েলারী খোঁজাখুঁজি বাদ দিয়ে অমিতের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে রইলো অনি। চোখে মুখে তার বিস্ময়ের হাসি। নবনী চেহারা কুঁচকে তাকিয়ে রইলো অমিতের দিকে। চোখের ভাষায়, ঠোঁটের হাসিতে দুষ্টুমির আনাগোনা।

    — “তুমি আমাকে কী বললে অমিত?”

    — “খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু।”

    — “আমি চট্টগ্রামের ভাষা বুঝি না। তার উপর নাকে বাজিয়ে মিনমিন করে কিসব বললে। শুনিইনি ঠিকঠাক।”

    — “জানি তো বুঝো না।

    — “তাহলে বললে কেন এভাবে?”

    — “যেন বুঝতে না পারো তাই।”

    — “ফাজলামি করো? কী বলেছো আমাকে? এ্যাই অনি? অমিত কী বলেছে আমাকে? বদনাম করেছে আমার নামে?”

    — “আমি শুনিইনি কিছু।”

    — “ভাইবোন একজোট হয়েছে দেখো! তোমার মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে তুমি শুনেছো সবটা। স্ট্যাচু হয়ে কেমন তাকিয়ে দেখছো অমিতকে! বলো, ও কী বলেছে আমাকে?”

    — “আমি কিচ্ছু জানি না আপু।”

    এক প্রকার দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল অনি। কোমরে হাত রেখে নবনী অমিতকে শাসাতে লাগলো,

    — “অনি ওভাবে পালিয়ে গেল কেন? কী বলেছো আমাকে? অশ্লীল কিছু? অনি সে কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছে?”

    ঘর কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো অমিত। নবনীর গালে আলতো চড় মেরে বললো,

    — “বাইরে চলো। গেস্ট সব চলে এসেছে।”

    ড্রইংরুমে এসে বসলো অমিত। গেস্ট সবাই উপস্থিত। তার এই ফ্ল্যাটটা আজ হাসি আনন্দে মেতে উঠেছে। বন্ধু, আত্মীয়, পরিচিত মুখগুলোর আজ যেন মিলনমেলা চলছে। সত্যিই সেই ছোট্টবেলা বুঝি ফিরে এসেছে। ঐ তো ডাইনিংরুমে দাঁড়িয়ে বড় মামির সঙ্গে কথা বলছে যে অসম্ভব সুন্দরী মেয়েটা, ও বোধহয় একটা পরী এইযে জীবনটা কেটে যাচ্ছে পূর্ণতায় আর ষোলো আনা সুখে সবকিছুর পেছনে তো এই মেয়েটাই। সাধারণ মানবী হয়ে কখনো কাউকে পূর্ণ করা সম্ভব? ষোলো আনা সুখ দেয়া সম্ভব?

    সোফা ছেড়ে ডাইনিংরুমের দিকে গেল অমিত। ও ঘরে মা, চাচী, নানী শাশুড়ি, দুই মামী, বন্ধুর বউ আর প্রতিবেশী আন্টিদের আড্ডা চলছে। বড় মামীর সঙ্গে কথার মাঝে হঠাৎ নবনীকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরলো অমিত

    — “তুমি আমার উইশ মেকার নবনী। যেই আনন্দগুলো ফিরে পাবো বলে ভাবিনি, আফসোস হতো খুব ঠিক সেগুলোই এক এক করে হাজির করছো। তোমাকে আমার থ্যাংকস বলা উচিত হবে না। তুমি যা কিছু করছো আমার জন্য থ্যাংকস শব্দটা খুব ছোট্ট হয়ে যাবে। অনেক কিছু বলার আছে তোমাকে। কিন্তু কী বলবো, কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না। জটিল লাগছে খুব। তুমি বুঝে নিও প্লিজ!” অমিতের পিঠে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে নবনী,

    — “আচ্ছা বুঝে নিলাম।”

    .

    অনুষ্ঠান শেষে সবাই ফিরে গেছে। রয়ে গেছে শুধু নবনীর পরিবার। বাসার নিচে দাঁড়িয়ে নবনীর ট্রিটমেন্টের পুরোনো ফাইলগুলো রুমানার হাতে দিয়ে, ওর সব সমস্যাগুলো বুঝিয়ে বলছেন শফিক সাহেব। বলতে বলতে গলা ধরে আসছে তার বারবার। পুরোনো সেই বিভীষিকার দিনগুলো মনে পড়লেই ভয় আর অসহ্য যন্ত্রণায় গলা কেঁপে উঠে তার। কখনোবা চোখ ভিজে যায়। যথাসম্ভব সেইসব স্মৃতি ভুলে থাকারই চেষ্টা করেন তিনি। আজ মেয়ের খাতিরে পুরোনো স্মৃতিচারণ করতে হচ্ছে তার। পুরোটা সময় শ্বশুরের হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিল অমিত। ছাড়েনি এক মুহূর্তের জন্য। ফাইলগুলো নিয়ে রুমানা চলে যাবার আগে শফিক সাহেবকে আশ্বস্ত করে গেল,

    — “মন খারাপ করবেন না আংকেল। ও সুস্থ হয়ে যাবে, হয়তো সময়টা দীর্ঘ হবে। আমাদেরকে ধৈর্য্য রাখতে হবে। আমার ইন্সট্রাকশন ফলো করতে হবে।” রুমানা আর সাব্বির চলে যাবার পর শফিক সাহেবকে উপরে পাঠিয়ে দিলো অমিত, নিচে রয়ে গেল সে। সিগারেট শেষ। সামনের দোকান থেকে সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে বাসায় ফিরছিল সে। তখনই সামনে এসে দাঁড়ালো পরিচিত সেই গাড়ি। নেমে এলো মুনিয়া। মুখে বাঁকানো হাসি। অমিতের দিকে সাদা গোলাপের তোড়া এগিয়ে দিয়ে বললো,

    — “হ্যাপি বার্থডে অমিত!”

    — “তুমি এখানে?”

    — “ফুলের তোড়াটা ধরো!”

    — “এটা কেন?”

    — “কেন আবার? তোমার জন্য। শুটিং ছিল নরসিংদীতে। সেখান থেকে সোজা চলে এলাম তোমার কাছে। কোথাও দাঁড়িয়ে গিফট খুঁজতে গেলে আরো দেরী হয়ে যেত। অলরেডি রাত বেশ বেড়েছে। ভাবলাম হোয়াইট রোজেস তোমার ফেভারিট। যাওয়ার পথে পেয়েও যাবো, তাই নিয়ে নিলাম। এবার ধরো ফুলটা।”

    — “নিবো না আমি। কেন এসেছো এখানে?”

    — “তুমি আমাকে ইনসাল্ট করছো অমিত!”

    — “যদি ভাবো ইনসাল্ট করছি, তবে তাই।”

    — “এমন উইয়ার্ড বিহেভ করার মানে কী?”

    — “যার সঙ্গে আমার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেছে; আন্তরিকতা, মায়া, শ্রদ্ধাবোধ কিছুই আর বাকি নেই, তার সঙ্গে আমি উইয়ার্ড বিহেভ করবো, সেটাই স্বাভাবিক।”

    — “দেখো, রিলেশনশিপে ঝগড়া হবে, এটা খুব স্বাভাবিক। তার মানে তো এই না একেবারে ছেড়ে চলে যেতে হবে।

    — “ছাড়তে তুমি চেয়েছিলে। দুই বছর ধরেই চেয়ে আসছো। আমিই তোমার পা ধরে এতগুলো দিন রিলেশন টিকিয়ে রেখেছি। আর কী বললে? ঝগড়া? শুধু ঝগড়া হয়েছে আমাদের মাঝে? কী না বলেছো আমাকে? কী না করেছো তুমি?”

    — “আমার রাগ বেশি জানো না? রেগে গেলে একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করি।”

    — “রেগে গেলে মানুষ চিৎকার করে, ভাঙচুর করে। গালি দেয়। কিন্তু প্রেমিক থাকা সত্ত্বেও অন্য ছেলের সঙ্গে রিলেশনে জড়ায় না। তুমি জড়িয়েছো। একাধিক ছেলের সঙ্গে জড়িয়েছো।”

    — “ওরা আমার ফ্রেন্ড। কতবার বলেছি তোমাকে!”

    হাতের মোবাইল থেকে দ্রুত মুনিয়ার ছবি খুঁজে বের করলো অমিত। ওর চোখের সামনে স্ক্রিন তুলে বললো,

    — “বন্ধুকে পাবলিক প্লেসে লিপকিসও করা যায়, তাই না?”

    আকাশ যেন মাথার উপর ভেঙে পড়লো মুনিয়ার। চোখ বড় করে বললো,

    — “তুমি এটা কোথায় পেলে?”

    — “আজ নাহয় প্রমাণ সহ পেয়েছি। এর আগেও তুমি অনেকের সঙ্গে রিলেশনে ছিলে। সব আমার কানে এসেছে, তবুও বারবার তোমাকে বুঝিয়েছি এসব বাদ দাও। ফিরে এসো আমার কাছে। তুমি আসোনি। যা খুশি করে বেড়িয়েছো।”

    — “আমি এত খারাপ জানতে যেহেতু তখন ছেড়ে যাওনি কেন? এখন কেন যাচ্ছো? ছেড়ে যাওয়ার কারণটা কী, বলো তো? আমি শাহরিয়ারকে কিস করেছি সেটা নাকি তোমার জীবনে নতুন মানুষ এসেছে তাই?”

    — “তুমি যেটা ভেবে নাও।”

    অমিতের খামখেয়ালিতে ভরা উত্তরে মুনিয়ার মেজাজ খারাপ হচ্ছে খুব। চিৎকার করতে গিয়েও থেমে গেল সে।

    — “তোমার সঙ্গে ঐ মেয়েটা কে, যাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াও?”

    — “বউ।”

    — “আচ্ছা! আমার কল রিসিভ না করার কারণ তাহলে তোমার বউ? যেই ছেলেটা আমার পিছু ছাড়েনি কখনো সেই ছেলেটা আমাকে এত ইগনোর কিভাবে করছে, এটাই ভেবে পাচ্ছিলাম না আমি। ঘরে বউ এসেছে তাই কল রিসিভ করে কথা বলার সাহস হচ্ছে না।

    — “সাহস না, রুচি হচ্ছে না।”

    — “আমাকে ছাড়া মরে যাবে, বাঁচবে না আরো কত কী! এখন বেঁচে আছো কেমন করে? আবার বিয়েশাদীও করে নিয়েছো। বাহ্!”

    — “আমার চেহারা দেখতে চাও না, কন্ঠ শুনতে চাও না এখন কেন একের পর এক কল করেই যাচ্ছো? এত রাতে কেন আমার বাসার সামনে এসে হাজির হয়েছো?”

    — “কজ আই ওয়ান্ট ইউ ব্যাক ইন মাই লাইফ।”

    — “বাসায় যাও। রাত হয়েছে। আমার ওয়াইফ অপেক্ষা করছে আমার জন্য।”

    বাসার দিকে অমিত পা বাড়াতেই ওর পথ আটকালো মুনিয়া।

    — “দাঁড়াও তুমি। অমিত, যা হওয়ার হয়ে গেছে। এতদিনের সম্পর্ক আমাদের, এভাবে ভেঙে দেয়ার মানে হয় না। আমি তোমাকে খুব মিস করছি। প্লিজ রিলেশনটা আমরা আবার কন্টিনিউ করি। কেউ জানবে না এই ব্যাপারে।”

    — “তুমি আমাকে ভালোবাসো?”

    — “অফকোর্স আই ডু।”

    — “তোমার এই উত্তরটার জন্য কষে একটা চড় লাগাতে ইচ্ছে করছে। এই এলাকায় আমি পরিচিত মুখ, রাত বিরাতে একটা মেয়েকে চড় মেরে এলাকায় সাড়া ফেলতে চাই না। তুমি আমাকে কখনো ভালোবাসোনি। তোমার সাময়িক মোহ ছিলাম আমি। আর এখন ফিরে আসার যে নাটকটা করছো সেটা ভালোবাসা থেকে না, জেলাসি থেকে করছো। আমি মুভ অন করেছি, তোমার পেছন পেছন ঘুরছি না, আমার জীবনে নতুন মানুষ এসেছে, এটা তুমি মানতে পারছো না। তোমার মতন একটা নরকের কীট, ছোটলোক, বিষাক্ত জিনিসকে আমি আমার জীবনের কোথাও চাই না। কোনোভাবেই না। বিদায় হও এখান থেকে।”

    .

    ফুলের তোড়াটা পায়ে ফেলে সজোরে লাথি মেরে দূরে সরিয়ে দিলো অমিত। দ্রুত পায়ে চলে গেল এখান থেকে। প্রচন্ড অপমান আর রাগে দাঁতে দাঁত চেপে রইলো মুনিয়া। পুরো চেহারা লালবর্ণ ধারণ করেছে তার। কাঁদছে সে।

    ৪৪

    সোফার দুই মাথায় দুইজন গাল ফুলিয়ে বসে আছে। তাদের মাঝে এসে বসলো নাতাশা। হতাশ ভঙ্গিতে বললো,

    — “তোমরা এই বুড়ো বয়সে স্কুলের বাচ্চাদের মতো জেদ করবে?”

    তেড়ে উঠলো নবনী।

    — “তুই বুড়ো বলছিস কাকে?”

    — “দু’জনকেই।”

    — “খবরদার আমাকে বুড়ো বলবি না! আর বাচ্চাদের মতো বিহেভ অমিত করছে। সামান্য একটা ব্যাপারে কথা বলা বন্ধ করলো কেন? কখন থেকে ট্রাই করছি কথা বলার অথচ মুখে তালা এঁটে আছে।”

    — “এবার আমি অমিত ভাইয়ার সাপোর্টে।”

    নাতাশার দিকে নবনী চোখ বড় করে তাকালো। তার কপট রাগকে পাত্তাই দিলো না নাতাশা! অমিতের কাছাকাছি সরে গিয়ে বসলো সে।

    — “ভাইয়া ঠিকই তো বলছে। নিজেকে দেখেছো আয়নায় খেয়াল করে? তোমার চোখে মুখে স্পষ্ট বুঝা যায় তুমি অসুস্থ। এখন নাহয় খুব একটা প্রবলেম হচ্ছে না। শরীরের উপর জোর খাটিয়ে সামলে নিতে পারছো। অসুখ-বিসুখ একটু একটু করেই বাড়তে থাকে। তারপর যখন বিছানায় পড়বে তখন নিশ্চয়ই তোমার ভালো লাগবে না? আমাদেরও লাগবে না আপু। আমাদেরও কষ্ট হবে।”

    নাতাশার কথার পিঠে মুখ খুললো অমিত। অভিমানে ভার হয়ে এল তার কন্ঠ।

    — “ওসব ওকে বলো না নাতাশা। বলে লাভ নেই। আমাদের টেনশনে ওর কিছুই আসে যায় না।

    — “আমি কখন বললাম অমিত?”

    — “নাতাশা ওকে বলো আমি ওর সঙ্গে কথা বলছি না।”

    নাতাশাকে ঠেলে সোফা থেকে সরিয়ে দিলো নবনী। অমিতের কাছে গিয়ে বসলো সে।

    — “ঢঙ করো? আমার সঙ্গে সরাসরি কথা বললে সমস্যা কী?”

    — “যার কাছে আমার কথার দাম নেই তার সঙ্গে আমার কোনো কথাও নেই। “সামান্য মাথা ঘুরানো নিয়ে ডক্টরের কাছে যাবো?”

    — “শুধু মাথা ঘুরানো না। তোমার আরো প্রবলেম আছে। যাকগে, সেসব বলে লাভ নেই। করো তোমার যা খুশি

    — “তুমি কি আমার সঙ্গে এভাবেই কথা বলবে?”

    — “তোমার সঙ্গে আমি আর কোনো কথাই বলবো না। আজকের ঘটনা আমি মাথায় সযত্নে তুলে রাখবো। আর কখনো যেন আমার কেয়ার কেউ করতে না আসে।” অমিতের পাগলামিতে হার মানলো নবনী। চেহারা কুঁচকে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

    — “যতই চাই ওষুধপত্র থেকে দূরে থাকবো, হয় না কিছুতেই। ভালো লাগে না এসব ছাতার মাথা গিলতে। চেম্বার কোথায়? এপোয়েনমেন্ট কখন?” নবনীর দিকে মুচকি হেসে ঘাড় ফেরালো অমিত,

    — “যাবে?”

    — “তো আর কী করবো? বসে বসে তোমার গাল ফোলানো দেখবো?”

    .

    এক দৃষ্টিতে প্রেসক্রিপশনে তাকিয়ে আছে নবনী। ডক্টর রিয়াজুল ইসলাম ফটফট করে কিসব যেন লিখছে কাগজে। শত চেষ্টায়ও বুঝতে পারছে না নবনী। মনে হচ্ছে যেন কাগজের উপর কালো পিঁপড়া বসে আছে। প্যাড থেকে একটানে কাগজটা ছিঁড়ে অমিতের হাতে ধরিয়ে দিলো ডক্টর রিয়াজুল। বললো,

    — “মেডিসিনগুলো ঠিকঠাক খেতে হবে। একমাস পর আবার আসবেন।” বিরক্ত হলো নবনী,

    — “আবার আসতে হবে?”

    — “হ্যাঁ। সুস্থ হতে চান তো নাকি?”

    — “আমি খুব বেশি অসুস্থ তো না!”

    — “কতদিন ধরে সমস্যা পেলে পুষে রেখেছেন হিসেব আছে? রোগ বালাই তো এভাবেই বাড়ে। এতটাও হেলাফেলা করা উচিত না। এখন পর্যন্ত অনেক পেশেন্ট আমি পেয়েছি যারা বহুবছর সামান্য অসুস্থতা ভেবে রোগ পুষে রেখেছে। পরে টেস্ট করে জানা গেল তারা দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছে। এদের মাঝে কেউ মারা গেছে আবার কেউ দুই আড়াইবছর ধরে চিকিৎসা করে যাচ্ছে। পুরোপুরি সুস্থ হয়তো উনারা আর কখনোই হবে না। অবহেলায় মরণব্যাধিও হয়। তাই সাবধান!”

    — “ভয় দেখিয়ে দিচ্ছেন কিন্তু!”

    — “ভয় পাওয়া উচিত। নয়তো সাবধান হবেন কিভাবে?”

    — “বুঝেছো এবার কেন ধরে বেঁধে নিয়ে এসেছি?”

    বোকা বোকা চোখে অমিতের দিকে তাকিয়ে রইলো নবনী। কিসব শুনছে সে! ছোট ছোট সমস্যা থেকে সত্যিই মানুষ মরে যায়? মরে যাওয়াটা ঠিক সমস্যা না, তবে বছরের পর বছর চিকিৎসা করে যাওয়া সমস্যাই বটে। বিশাল সমস্যা!

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান – মরিস বুকাইলি
    Next Article বাতাসে গুনগুন – খাদিজা মিম

    Related Articles

    খাদিজা মিম

    রুদ্র – খাদিজা মিম

    August 6, 2025
    খাদিজা মিম

    বাতাসে গুনগুন – খাদিজা মিম

    August 6, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.