ইতি নির্ভয়পুর – ৩০
৩০
“তুমি কি জানো তোমার আদরের স্ত্রী কী ঘটিয়েছে? আমি খবর পেলাম আমার উকিলের কাছ থেকে।”
পামেলা একটা কপার আর ব্ল্যাকের শাড়ি পরেছে। সঙ্গে নুডলস স্ট্র্যাপ ব্লাউজ। ওর মোম মসৃণ হাত দুটো এখন ঘোষালের বুকের কাছে।
মাত্র দু’পেগেই বেসামাল ঘোষাল পামেলার হাত দুটো জড়িয়ে ধরে বলল, “হাইরোডের ওপরে অতটা জায়গা কনক ওই আদিবাসী ছেলেটাকে দিয়ে দিয়েছে। আসল নাটের গুরু হচ্ছে ওই সুজয়, ওই কনকের মাথায় এসব পার্টি-পলিটিক্স ঢুকিয়েছে।”
পামেলা বলল, “মৃণাল, তুমি এর প্রতিকার চাও?”
পামেলার গলাটাও কাঁপছে। ওর নিজেরও বেশ নেশা হয়েছে।
ঘোষাল লাল লাল চোখে তাকিয়ে বলল, “হাজারবার চাই। কিন্তু সামনে ভোট। এখন যদি সুজয়ের কোনও ক্ষতি করি, তা হলে সবাই বুঝে যাবে, আমাদের কাজ।”
পামেলার ঠোঁটে দুষ্টু হাসি। হাসতে হাসতেই বলল, “এই জন্যই তোমায় আমি এত ভালোবাসি ঘোষাল। তুমি সঠিক দিকে এগোও। না, আমরা সুজয়ের ক্ষতি করব না। করব কুন্তলীর। কুন্তলীকে সরিয়ে দিয়ে সুজয়কে জেলে ভরলেই কেল্লাফতে।”
ঘোষাল লাফিয়ে উঠে বলল, “ব্রিলিয়ান্ট। আমি আছি। যাবজ্জীবনের ব্যবস্থা করো পামেলা ওই সুজয়ের।”
পামেলা বলল, “কিছুই না, তোমায় একটা নম্বরপ্লেট ছাড়া লরি দিতে হবে। তোমার তো ট্রান্সপোর্টের বিজনেস। এমন একটা গাড়ির ব্যবস্থা করো, যার নম্বরপ্লেট নেই। আর অন্য রাজ্যের একটা ড্রাইভার দাও। কুন্তলীকে জাস্ট কিমা বানিয়ে দাও। বাকি সুজয়ের নামে কেস করা থেকে যাবতীয় কিছু আমার দায়িত্ব। তুমি শুধু দেখো ঘোষাল, সুজয়কে আমি জেলের বাইরে বেরোতেই দেব না।”
মৃণাল অ্যালকোহলের মৌতাত কাটিয়ে বলে উঠল, “আজ রাতেই কাজ সারি তা হলে? কিন্তু কুন্তলীকে রাস্তায় ডেকে আনবে কে?”
পামেলা হেসে বলল, “আমার মৃত ভাই নীহার। নীহার ওকে কিছু বলতে চেয়েছিল মারা যাবার আগে, সেটা শুনতেই আসবে কুন্তলী। এই কাজটা করবে সুনীল। এরপর আর আমায় কল করবে না। তোমার ড্রাইভারের সঙ্গে সুনীল কথা বলে নেবে। কোন পথে কুন্তলীকে ডাকবে, সেটাও সুনীল ঠিক করে নিয়ে তোমার ড্রাইভারকে জানিয়ে দেবে।”
ঘোষাল বলল, “আমি তা হলে সুনীলের নম্বরটাই দিয়ে দিচ্ছি ড্রাইভারকে।” ঘোষাল পামেলার গালে একটা চুমু খেয়ে বলল, “কেন তোমার বয়েস হয় না ষোলো, আমার নাইন্টিন? আজ রাতেই কুন্তলী শেষ।”
পামেলা বক্ষলগ্না হয়ে বলল, “তোমার সামনেই ফোনটা করছি।”
পামেলার কাপড় অসংলগ্ন। ঘোষালের হাত ঘুরছে ওর শরীরে। অন্যদিন হলে পামেলা সরিয়ে দিত। কিন্তু আজ নেশাটা বেশ চড়া হয়েছে। শরীরটা অবশ লাগছে। তাই অহেতুক ঘোষালকে বাধা দিল না। পামেলা সুনীলকে ফোন করল। ঘোষালের সঙ্গে তৈরি করা সমস্ত প্ল্যানের ডিটেল বলল।
সুনীল শুনেই লাফিয়ে উঠে বলল, “দারুণ। কিন্তু আমার একটা বক্তব্য আছে। যেহেতু এখানে কুত্তলী আর নীহারের সম্পর্ক নিয়ে একটু কানাঘুষো হয়েছিল, তাই বলছি, তুমি কিন্তু কিছুতেই পুলিশের সন্দেহের তালিকায় থাকবে না। তোমার একটা স্ট্রং অ্যালিবাই তৈরি করে রাখতে হবে। আমি তোমার কিছু হতে দেব না পামেলা।”
পামেলা গদগদ হয়ে বলল, “ওহ সুনীল, লাভ ইউ ডিয়ার।”
সুনীল বলল, “তুমি ঠিক রাত ন’টার সময় প্রাইমারি স্কুলে যাবে। ওখানে তুমি মহিলাদের ভোট দেওয়ার পদ্ধতি শেখাবে।”
পামেলা বলল, “অ্যারেঞ্জ করো প্লিজ। গুড আইডিয়া। কুন্তলী খুনের দায়ে আমরা ফাঁসব না। পামেলা মিত্র নির্দোষ।”
সুনীল বলল, “একদম এটাই চাইছি। আমি সব অ্যারেঞ্জ করে তোমার কল করছি। আর কুন্তলীকেও বলছি, নীহার কলকাতা যাবার দিন তোমার নামে একটা চিঠি দিয়ে গিয়েছিল আমার কাছে। এসে নিয়ে যাও। কিন্তু সুজয়কে কিছু বোলো না।”
পামেলা বলল, “আজ তোমার পছন্দের সাদা চুড়িদার পরছি সুনীল। কেন জানি না, তোমায় বড্ড আদর করতে ইচ্ছে করছে।”
পামেলা গুনগুন করতে করতে চুলটা আঁচড়ে রেডি হল। আগামিকাল ভোট। আজ আর মাইক প্রচার করা যাবে না। কিন্তু মহিলাদের সঙ্গে গল্প করাই যায়। সুন্দর একটা সাদা রঙের চুড়িদার পরল পামেলা। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই নীহারের সন্তান শেষ, ওর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জেলে। উফ, কী যে আনন্দ হচ্ছে পামেলার। ঘোষাল বেরিয়ে গেছে। নেশাটা কাটানোর জন্য এক গ্লাস লেবুর শরবত নিয়ে বসেছে।