ইতি নির্ভয়পুর – ৩৪
৩৪
“নূপুর তুমি কোথায় আছ? জানো পামেলা মিত্র মারা গেছে?” শৌনকের গলার আওয়াজটা কাঁপছে।
নূপুর বলল, “দরজাটা খোলো। আমি তোমার বাড়ির গেটে।”
নূপুর এসে ঘরে ধপ করে বসে বলল, “পামেলা মিত্র কাল রাতেই মারা গেছে। তোমার নাইট ডিউটি ছিল না বলে হয়তো জানতে পারনি। ইনফ্যাক্ট আমিও জেনেছি পরে। কিন্তু শৌনক, এটা অ্যাক্সিডেন্ট নয়, মার্ডার। মৃণাল ঘোষালের কারসাজি বলেই শোনা যাচ্ছে। আমি সুজয়দার বাড়ি গিয়েছিলাম। শুনলাম, ওরা প্ল্যান করেছিল কুন্তলীকে মেরে ফেলার। নীহারের ভ্রূণ নষ্ট করাটাই আসল উদ্দেশ্য ছিল। সুজয়দা বলল, কুন্তলীকে চার্চে রেখে দিয়ে এসেছিল। একটু ভয়ে আছে। বলছিল, ভোটে না দাঁড়ালেই ভালো হত।”
শৌনক বলল, “একটু ওয়েট করো। আমিও যাব সুজয়ের কাছে। ছেলেটা এতটাই সৎ যে, ওকে ভেঙে ফেলা এদের কর্ম নয়। আমায় খবর দিল প্রলয়।”
ব্লু টি-শার্টটা গায়ে গলাতেই নূপুর বলল, “এ কী! ব্লু তো আমার আর তোমার মায়ের প্রিয় রং। যেটা জানার পর তুমি ব্লু পরাই ছেড়ে দিয়েছিলে।”
শৌনক বলল, “এটা সামনে পেলাম তাই পরলাম। কার কোনটা ফেভারিট কালার আমি মনে রাখি না।”
নূপুর হেসে বলল, “তুমি কি একটা কথা জানো ডাক্তারবাবু, গোঁয়াররা প্রেমে পড়লে বোকা হয়ে যায়?”
শৌনক বাইকের চাবিটা পকেটে রাখতে রাখতে বলল, “আর তুমি কি জানো মিস মল্লিক, অত্যন্ত স্মার্ট মেয়েরা প্রেমে পড়লে নাকানিচোবানি নয়, একেবারে ডুবে যায়। তাও ডোবে কাদের হাত ধরে, এই বোকাদের।”
নুপুর কিছু বলার আগেই শৌনক বলল, “তোমার ছবি পাঠিয়েছিলাম কলকাতায়। তারা তো গদগদ হয়ে গেছে। বলছে, এমন সুন্দরী মেয়ের কপালটাই নাকি খারাপ। তাই আমার মতো এমন উড়নচণ্ডী ছেলে জুটল।”
নূপুর বলল, “তো এই যে পচা কপাল আমার, এটার বিহিত কে করবে?”
শৌনক বলল, “এটা কি সার্জারির ব্যাপার? এ তো ভাগ্য। একে বদলাব কী করে?”
নুপুর হেসে বলল, “সৌভাগ্যবানের কপালে কপাল ঘষলে শুনেছি একটু পাল্টায়।”
শৌনক নূপুরের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “এটা দীর্ঘ সিটিং-এর ব্যাপার। একদিনে কি পাল্টানোর জিনিস?” নূপুর কিছু বলার আগেই শৌনক ওর দুই ভ্রুর মাঝে চুমু খেয়ে বলল, “ফার্স্ট সিটিংটা স্টার্ট করলাম। আমার কপালের থেকেও ঠোঁটটা বেশি ভাগ্যবান হবে আশা করি। তাই এটা দিয়েই তোমার সৌভাগ্য বয়ে আনার প্রাথমিক চেষ্টা করলাম আর কি!”
নূপুর লাজুক হেসে বলল, “কতদিন লাগবে বলে মনে হচ্ছে ডক্টর, কী বুঝছেন?”
শৌনক নূপুরকে জড়িয়ে ধরে বলল, “মনে তো হচ্ছে যাবজ্জীবন লাগবে। থাকবে তো?”
নূপুর ওর বুকে মুখ রেখে বলল, “পালানোর উপায় তোমার জানা আছে বুঝি?”
শৌনক বলল, “উঁহু, এমন বাঁধব আষ্টেপৃষ্ঠে, খোলার অবসর পাবে না। কিন্তু নূপুর আমার আসল পরিচয় যদি কোনওদিন জানতে পারো, সেদিন আমায় ঘৃণা করবে না তো?”
নুপুর বলল, “তোমার আসল পরিচয় তুমি শৌনক বসু, নূপুর মল্লিকের উডবি। এখন ফালতু না বকে চলো। সুজয়দা আবার ভোটকেন্দ্রে চলে যাবে। অবশ্য ভোট আদৌ হবে বলে আমার মনে হয় না। যা-ই হোক, আজকের দিনে ওর পাশে একবার দাঁড়ানো উচিত। কারণ ও আমাদের মতোই নির্ভয়পুরকে ভালোবাসে।”
শৌনক বলল, “হ্যাঁ চলো। তুমি সামনে এলে আমার মাথায় বোধহয় কোনও রোম্যান্টিক কবি ভর করে।”