Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ইন্দিরা – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

    উপন্যাস বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এক পাতা গল্প98 Mins Read0
    ⤶

    ইন্দিরা – ২১-২২ (শেষ)

    একবিংশতিতম পরিচ্ছেদ : সেকালে যেমন ছিল

    কালাদীঘির ডাকাইতির পর আমার অদৃষ্টে যাহা ঘটিয়াছিল, স্বামী মহাশয় এক্ষণে আমার কাছে সব শুনিলেন। রমণ বাবু ও সুভাষিণী যেরূপ ষড়‍‍যন্ত্র করিয়া তাঁহাকে কলিকাতায় লইয়া গিয়াছিল, তাহাও শুনিলেন। একটু রাগও করিলেন। বলিলেন, “আমাকে এত ঘুরাইবার ফিরাইবার প্রয়োজনটা কি ছিল?” প্রয়োজনটা কি ছিল, তাহাও বুঝাইলাম। তিনি সন্তুষ্ট হইলেন। কিন্তু কামিনী সন্তুষ্ট হইল না। কামিনী বলিল, “তোমায় ঘানিগাছে ঘুরায় নাই, অমনি ছাড়িয়াছে, এইটুকু দিদির দোষ। আবার আবদা।র নিলেন কিনা, গ্রহণ করব না! আরে মিন্প‍সে, যখন আমাদের আলতাী-পরা শ্রীপাদপদ্মখানি ভিন্ন তোমার জেতের গতিমুক্তি নাই, তখন অত বড়াই কেন?”
    উ-বাবু এবার একটা উতোর মারিলেন, বলিলেন, “তখন চিনিতে পারি নে যে! তোমাদের কি চিনতে জোওয়ায়?”
    কামিনী বলিল, “তুমি যে চিনিবে, বিধাতা তা কপালে লিখেন নাই। যাত্রায় শোন নি? বলে,
    ধবলী বলিল শ্যাম, কে চেনে তোমারে!
    চিনি শুধু কাঁচা ঘাস যমুনার ধারে।|
    পদচিহ্ন খুঁজি তব, বংশী শুনে কাণে।
    ধ্বজবজ্রাঙ্কুশ তায়, গোরু কি তা জানে?
    আমি আর হাসি রাখিতে পারিলাম না। উ-বাবু অপ্রতিভ হইয়া কামিনীকে বলিলেন, “যা ভাই, আর জ্বালাস্ নে! যাত্রা করলি, তার জন্য এই পানের খিলিটা প্যালা নিয়ে যা।”
    কামিনী বলিল, “ও দিদি! মিত্রজার একটু বুদ্ধিও আছে দেখিতে পাই।”
    আমি। কি বুদ্ধি দেখিলি?
    কা। বাবু পানের ঠিলিটা রেখে খিলিটা দিয়েছেন, বুদ্ধি নয়? তা তুই এক কাজ করিস; মধ্যে মধ্যে তোর পায়ে হাত দিতে দিস—তা হলে হাত দরাজ হবে।
    আমি। আমি কি ওঁকে পায়ে হাত দিতে, দিতে পারি? উনি হলেন আমার পতিদেবতা।
    কা। দেবতা কবে হলেন? পতি যদি দেবতা, তবে এত দিন ত তোমার কাছে উনি উপদেবতাই ছিলেন।
    আমি। দেবতা হয়েছেন, যবে ওঁর বিদ্যাধরী গিয়েছে।
    কা। আহা, বিদ্যাকে ধরি ধরি করেও ধরতে পারলেন না! তা দেখ মিত্র মহাশয়, তোমার যে বিদ্যা তাহার সঙ্গে ধরাধরি না থাকিলেই ভাল। সে বিদ্যা বড় বিদ্যা যদি না পড়ে ধরা।
    আমি। কামিনী, তুই বড় বাড়ালি! শেষ চুরি চামারি পর্যন্ত ঘাড়ে ফেলিতেছিস?
    কা। অপরাধ আমার? যখন মিত্র মহাশয় কমিসেরিয়েটের কাজ করেছেন, তখন চুরি ত করেছেন। আর চামারি;–তা যখন রসদ যুগিয়েছেন, তখন চামারিও করেছেন।
    উ-বাবু বলিলেন, “বলুগ গে ছেলেমানুষ। অমৃতং বালভাষিতং।”
    কা। কাজেই। তুমি যখন বিদ্যাধরী শাসিতং, তখন তোমার বুদ্ধি নাশিতং আমি তবে আসিতং— মা ডাকিতং।
    বাস্তবিক মা ডাকিতেছিলেন।
    কামিনী মার কাছ হইতে ফিরিয়া আসিয়া বলিল, “জান, কেন মা ডাকিতং? তোমরা আর দুদিন থাকিতং—যদি না থাকিতং, তবে জোর করে রাখিতং।”
    আমরা পরস্পরের মুখ পানে চাহিলাম।
    কামিনী বলিল, “কেন পরস্পর তাকিতং?”
    উ-বাবু বলিলেন, “ভাবিতং।”
    কামিনী বলিল, “বাড়ী গিয়া ভাবিতং। এখন দুই দিন এখানে খাবিতং, দাবিতং, হাসিতং, খুসিতং, খেলিতং, ধুলিতং, হেলিতং, দুলিতং, নাচিতং, গায়িতং—”
    উ-বাবু বলিলেন, “কামিনী, তুই নাচবি?”
    কা। দূর, আমি কেন? আমি যে শিকল কিনে রেখেছি—তুমি নাচবে।
    উ-বাবু। আমাকে ত আসা পর্যন্ত নাচাচ্চ; আর কত নাচাবে—আজ তুমি একটু নাচবে।
    কা। তা হলে থাকিবে?
    উ-বাবু। থাকিব।
    কামিনীর নাচ দেখিবার প্রত্যাশায় নহে, আমার পিতামাতার অনুরোধে উ-বাবু আর এক দিন থাকিতে সম্মত হইলেন। সেদিনও বড় আনন্দে গেল। দলে দলে পাড়ার মেয়েরা আসিয়া, সন্ধ্যার পর আমার স্বামীকে ঘেরিয়া লইয়া মজলিস করিয়া বসিল। সেই প্রকাণ্ড পুরীর একটা কোণের ঘরে মেয়েদের মজলিস হইল।
    কত মেয়ে আসিল, তার সংখ্যা নাই। কত বড় বড় পটোল-চেরা ভ্রমর-তারা চোখ, সারি বাঁধিয়া, স্বচ্ছ সরোবরে সফরীর মত খেলিতে লাগিল; কত কালো কালো কুণ্ডলী-করা ফণা-ধরা অলকারাশি বর্ষাকালে বনের লতার মত ঘুরিয়া ঘুরিয়া, ফুলিয়া ফুলিয়া, দুলিয়া উঠিতে লাগিল,– যেন কালিয়দমনে কালনাগিনীর দল, বিত্রস্ত হইয়া যমুনার জলে ঘুরিতে ফিরিতেছে—কত কাণ, কাণবালা,চৌদান,মাকড়ি,ঝুমকা,ইয়ার‍রিং,দুল—মেঘমধ্যে বিদ্যুতের মত, কত মেঘের মত চুলের রাশির ভিতরে হইতে খেলিতে লাগিল—কত রাঙ্গা ঠোটের ভিতর হইতে কত মুক্তাপংক্তির মত দন্তশ্রেণীতে কত সুগন্ধি-তাম্বুল চর্বণে কত রকম অধরলীলার তরঙ্গ উঠিতে লাগিল;–কত প্রৌঢ়ার ফাঁদিনথের ফাঁদে কন্দর্পঠাকুর ধরা পড়িয়া, তীরন্দাজিতে জবাব দিয়া নিষ্কৃতি পাইলেন—কত অলঙ্কাররাশিভূষিত সুগোল বাহুর উৎক্ষেপনিক্ষেপে বায়ুসন্তাড়িত পুষ্পিত লতাপূর্ণ উদ্যানের মত সেই কক্ষ একটা অলৌকিক চঞ্চল শোভায় শোভিত হইতে লাগিল, রুণু রুণু ঝুনু ঝুনু শিঞ্জিতে ভ্রমরগুঞ্জন অনুকৃত হইতে লাগিল; কত চিকে চিক চিক; হারে বাহার; চন্দ্রহারে চন্দ্রের হার; মলের ঝলমলে চরণ টল্ো‍মল্! কত বানারসী, বালুচরী, মৃজাপুরী, ঢাকাই, শান্তিপুরে, সিমলা, ফরাসডাঙ্গা–চেলি, গরদ, সূতা—রঙ্গকরা, রঙ্গভরা, ডুরে, ফুর্ফুারে, ঝুর্ঝু রে, বাঁদুরে—তাতে কারও ঘোমটা, কারও আড়ঘোমটা, কারও আধঘোমটা—কারও কেবল কবরীপ্রান্তে মাত্র বসনসংস্পর্শ—কারও তাতেও ভুল। আমার প্রাণনাথ অনেক গোরার পল্টন ফতে করিয়া ঘরে টাকা লইয়া আসিয়াছেন—অনেক কর্ণেল, জান‍‍রেলের বুদ্ধিভ্রংশ করিয়া, লাভের অংশ ঘরে লইয়া আসিয়াছেন—কিন্তু এই সুন্দরীর পল্টন দেখিয়া, তিনি বিশুষ্ক—বিত্রস্ত। তোপের আগুনের স্থানে নয়নবহ্নির স্ফূর্তি-কামানের কালকরালকুণ্ডলীকৃত ধূমপুঞ্জের পরিবর্তে এই কালকরালকুণ্ডলীকৃত কমনীয় কেশকাদম্বিনী, বেওনেটের ঠন্ঠ্নির পরিবর্তে এই অলঙ্কারের রুণরুণি; জয়ঢাকের বাদ্যের পরিবর্তে আলতা-পরা পায়ে মলের ঝম্ঝেমি! যে পুরুষ চিলিয়ানওয়ালা দেখিয়াছে—সেও হতাশ্বাস। এ ঘোর রণক্ষেত্রে তাঁহাকে রক্ষা করিবার জন্য, তিনি আমাকে দ্বারদেশে দেখিতে পাইয়া ইঙ্গিতে ডাকিলেন—কিন্তু আমিও শিখ সেনাপতির মত, বিশ্বাসঘাতকতা করিলাম—এ রণে তাঁহার সাহায্য করিলাম না।
    আমরা পরস্পরের মুখ পানে চাহিলাম।
    কামিনী বলিল, “কেন পরস্পর তাকিতং?”
    উ-বাবু বলিলেন, “ভাবিতং।”
    কামিনী বলিল, “বাড়ী গিয়া ভাবিতং। এখন দুই দিন এখানে খাবিতং, দাবিতং, হাসিতং, খুসিতং, খেলিতং, ধুলিতং, হেলিতং, দুলিতং, নাচিতং, গায়িতং—”
    উ-বাবু বলিলেন, “কামিনী, তুই নাচবি?”
    কা। দূর, আমি কেন? আমি যে শিকল কিনে রেখেছি—তুমি নাচবে।
    উ-বাবু। আমাকে ত আসা পর্যন্ত নাচাচ্চ; আর কত নাচাবে—আজ তুমি একটু নাচবে।
    কা। তা হলে থাকিবে?
    উ-বাবু। থাকিব।
    কামিনীর নাচ দেখিবার প্রত্যাশায় নহে, আমার পিতামাতার অনুরোধে উ-বাবু আর এক দিন থাকিতে সম্মত হইলেন। সেদিনও বড় আনন্দে গেল। দলে দলে পাড়ার মেয়েরা আসিয়া, সন্ধ্যার পর আমার স্বামীকে ঘেরিয়া লইয়া মজলিস করিয়া বসিল। সেই প্রকাণ্ড পুরীর একটা কোণের ঘরে মেয়েদের মজলিস হইল।
    কত মেয়ে আসিল, তার সংখ্যা নাই। কত বড় বড় পটোল-চেরা ভ্রমর-তারা চোখ, সারি বাঁধিয়া, স্বচ্ছ সরোবরে সফরীর মত খেলিতে লাগিল; কত কালো কালো কুণ্ডলী-করা ফণা-ধরা অলকারাশি বর্ষাকালে বনের লতার মত ঘুরিয়া ঘুরিয়া, ফুলিয়া ফুলিয়া, দুলিয়া উঠিতে লাগিল,– যেন কালিয়দমনে কালনাগিনীর দল, বিত্রস্ত হইয়া যমুনার জলে ঘুরিতে ফিরিতেছে—কত কাণ, কাণবালা,চৌদান,মাকড়ি,ঝুমকা,ইয়ার‍রিং,দুল—মেঘমধ্যে বিদ্যুতের মত, কত মেঘের মত চুলের রাশির ভিতরে হইতে খেলিতে লাগিল—কত রাঙ্গা ঠোটের ভিতর হইতে কত মুক্তাপংক্তির মত দন্তশ্রেণীতে কত সুগন্ধি-তাম্বুল চর্বণে কত রকম অধরলীলার তরঙ্গ উঠিতে লাগিল;–কত প্রৌঢ়ার ফাঁদিনথের ফাঁদে কন্দর্পঠাকুর ধরা পড়িয়া, তীরন্দাজিতে জবাব দিয়া নিষ্কৃতি পাইলেন—কত অলঙ্কাররাশিভূষিত সুগোল বাহুর উৎক্ষেপনিক্ষেপে বায়ুসন্তাড়িত পুষ্পিত লতাপূর্ণ উদ্যানের মত সেই কক্ষ একটা অলৌকিক চঞ্চল শোভায় শোভিত হইতে লাগিল, রুণু রুণু ঝুনু ঝুনু শিঞ্জিতে ভ্রমরগুঞ্জন অনুকৃত হইতে লাগিল; কত চিকে চিক চিক; হারে বাহার; চন্দ্রহারে চন্দ্রের হার; মলের ঝলমলে চরণ টল্ো‍মল্! কত বানারসী, বালুচরী, মৃজাপুরী, ঢাকাই, শান্তিপুরে, সিমলা, ফরাসডাঙ্গা–চেলি, গরদ, সূতা—রঙ্গকরা, রঙ্গভরা, ডুরে, ফুর্ফুারে, ঝুর্ঝু রে, বাঁদুরে—তাতে কারও ঘোমটা, কারও আড়ঘোমটা, কারও আধঘোমটা—কারও কেবল কবরীপ্রান্তে মাত্র বসনসংস্পর্শ—কারও তাতেও ভুল। আমার প্রাণনাথ অনেক গোরার পল্টন ফতে করিয়া ঘরে টাকা লইয়া আসিয়াছেন—অনেক কর্ণেল, জান‍‍রেলের বুদ্ধিভ্রংশ করিয়া, লাভের অংশ ঘরে লইয়া আসিয়াছেন—কিন্তু এই সুন্দরীর পল্টন দেখিয়া, তিনি বিশুষ্ক—বিত্রস্ত। তোপের আগুনের স্থানে নয়নবহ্নির স্ফূর্তি-কামানের কালকরালকুণ্ডলীকৃত ধূমপুঞ্জের পরিবর্তে এই কালকরালকুণ্ডলীকৃত কমনীয় কেশকাদম্বিনী, বেওনেটের ঠন্ঠ্নির পরিবর্তে এই অলঙ্কারের রুণরুণি; জয়ঢাকের বাদ্যের পরিবর্তে আলতা-পরা পায়ে মলের ঝম্ঝেমি! যে পুরুষ চিলিয়ানওয়ালা দেখিয়াছে—সেও হতাশ্বাস। এ ঘোর রণক্ষেত্রে তাঁহাকে রক্ষা করিবার জন্য, তিনি আমাকে দ্বারদেশে দেখিতে পাইয়া ইঙ্গিতে ডাকিলেন—কিন্তু আমিও শিখ সেনাপতির মত, বিশ্বাসঘাতকতা করিলাম—এ রণে তাঁহার সাহায্য করিলাম না।
    যমুনা ঠাকুরাণী “মহিষী” শব্দের অর্থবোধে যেমন পণ্ডিতা, “পুলিন” শব্দের অর্থবোধেও সেইরূপ। তিনি ভাবিলেন, আমি বুঝি কোন পুলিনবিহারীর কথার ইঙ্গিত করিয়া তাঁহার অকলঙ্কিত সতীত্বের-(অকলঙ্কিত তাঁহার রূপের প্রভাবে)—প্রতি কোনপ্রকার ইঙ্গিত করিয়াছি। তিনি সক্রোধে বলিলেন, “এর ভিতর পুলিন কে লো?”
    কাজেই আমারও একটু রঙ্গ চড়াইতে ইচ্ছা হইল। আমি বলিলাম, “যার গায়ে পড়িয়া যমুনা রাত্রিদিন তরঙ্গভঙ্গ করে, বৃন্দাবন তাকে পুলিন বলে।”
    আবার তরঙ্গভঙ্গে সর্বনাশ করিল,–যমুনা দিদি ত কিছু বুঝিল না, রাগিয়া বলিল, “তোর তরঙ্গ ফরঙ্গকেও চিনি নে, তোর পুলিনকেও চিনি নে, তোর বেন্দাবনকে চিনি নে। তুই বুঝি ডাকাতের কাছে এত সব রঙ্গরসের নাম শিখে এসেছিস?”
    মজলিসের ভিতর রঙ্গময়ী বলিয়া আমার একজন সমবয়স্কা ছিল। সে বলিল, “অত ক্ষেপ কেন যমুনা দিদি! পুলিন বলে নদীর ধারের চড়াকে। তোমার দু ধারে কি চড়া আছে?”
    চঞ্চলা নামে যমুনা দিদির ভাইজ, ঘোমটা দিয়া পিছনে বসিয়াছিল, সে ঘোমটার ভিতর হইতে মৃদু মধুর স্বরে বলিল, “চড়া থাকিলেও বাঁচিতাম! একটু ফরসা কিছু দেখিতে পাইতাম। এখন কেবল কালো জলের কালিন্দী কল কল করিতেছে।”
    কামিনী বলিল, “আমার যমুনা দিদিকে কেন তোরা অমন করে চড়ার মাঝখানে ফেলে দিতেছিস!”
    চঞ্চলা বলিল, “বালাই! ষাট! ঠাকুরঝিকে চড়ার মাঝখানে ফেলে দেব কেন? ওঁর ভাইয়ের পায়ে ধরে বলব, যেন ঠাকুরঝিকে মেঠো শ্মশানে দেন।”
    রঙ্গময়ী বলিল, “দুটোতে তফাৎ কি বৌ?”
    চঞ্চলা বলিল, “শ্মশানে শিয়াল কুকুরের উপকার;–চড়ায় গোরু মহিষচরে—তাদের কি উপকার?” মহিষ কথাটা বলিবার সময়ে, বৌ একবার ঘোমটা তুলিয়া ননদের উপর সহাস্যে কটাক্ষ করিল।
    যমুনা বলিল, “নে, আর এক-শবার সেই কথা ভাল লাগে না। যদের মোষ ভাল লাগে, তারাই এক-শবার মোষ মোষ করুগ গে।”
    পিয়ারী ঠান‍‍দিদি কথাটায় বড় কাণ দেন নাই—তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “মোষের কথা কি গা?” কামিনী বলিল, “কোন্ দেশে তেলিদের বাড়ী মোষে ঘানি টানে, সেই কথা হ’চ্ছে।”
    এই বলিয়া কামিনী পলাইল। বার বার সেই তেলি কথাটা মনে করিয়া দেওয়াটা ভাল হয় নাই—কিন্তু কামিনী কুচরিত্রা লোক দেখিতে পারিত না। পিয়ারী ঠান‍দিদি, রাগে অন্ধকার দেখিয়া আর কথা না কহিয়া উ-বাবুর কাছে গিয়া বসিল। আমি তখন কামিনীকে ডাকিয়া বলিলাম, “কামিনী! দেখ‍‍সে আয় লো! এইবার পিয়ারী কৃষ্ণ পেয়েছেন।”
    কামিনী দূর হইতেই বলিল, “অনেকদিন সময় হয়েছে।”
    তার পর একটা সোরগোল শুনিলাম। আমার স্বামীর আওয়াজ শুনিতে পাইলাম—তিনি একজনকে হিন্দিতে ধমকধামক করিতেছেন। আমরা দেখিতে গেলাম। দেখিলাম, একজন দাড়িওয়ালা মোগল ঘরের ভিতর প্রবেশ করিয়াছে; উ-বাবু তাহাকে তাড়াইবার জন্য ধমকধামক করিতেছেন, মোগল যাইতেছে না। কামিনী তখন দ্বার হইতে ডাকিয়া বলিল, “মিত্র মহাশয়! গায়ে কি জোর নেই?”
    মিত্র মহাশয় বলিলেন, “আছে বই কি?”
    কামিনী বলিল, “তবে মোগল মি‍ন্‌সেকে গলা ধাক্কা দিয়া ঠেলিয়া দাও না।”
    এই বলিবা মাত্র মোগল ঊর্ধ্বশ্বাসে পলায়ন করিল। পলায়ন করিবার সময় আমি তাহার দাড়ি ধরিলাম—পরচুলা খসিয়া আসিল। মোগল বলিল, “মরণ আর কি! তা এ বোকাটি নিয়ে ঘর করিবি কি প্রকারে?” এই বলিয়া সে পলাইল। আমি দাড়িটা ছুঁড়িয়া ফেলিয়া যমুনা দিদিকে উপহার দিলাম। উ-বাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, “ব্যাপার কি?”
    কামিনী বলিল, “ব্যাপার আর কি? তুমিই দাড়িটা পরিয়া চারি পায়ে ঘাসবনে চরিতে আরম্ভ কর।”
    উ-বাবু বলিলেন, “কেন, মোগল কি জাল?”
    কা। কার সাধ্য এমন কথা বলে! শ্রীমতী অনঙ্গমোহিনী দাসী কি জাল মোগল হইতে পারে! আসল দিল্লীর আমদানি।
    একটা ভারি হাসি পড়িয়া গেল। আমি একটু মন:ক্ষুণ্ণ হইয়া চলিয়া আসিতেছিলাম, এমন সময়ে পাড়ার ব্রজসুন্দরী দাসী একখানি জীর্ণ বস্ত্র পরিয়া একটি ছেলে কোলে করিয়া উ-বাবুর কাছে গিয়া দু:খের কান্না কাঁদিতে লাগিল। “আমি বড় গরীব; খেতে পাই না; ছেলেটি মানুষ করিতে পারি না।” উ-বাবু তাহাকে কিছু দিলেন। আমরা দুইজনে দ্বারের দুই পাশে। সে যখন দ্বার পার হয়, কামিনী তাহাকে বলিল, “ভাই ভিখারিণি! জান ত বড় মানুষের কাছে কিছু ভিক্ষা পাইলে দ্বারবান‍দের কিছু ঘুস দিয়ে যেতে হয়?”
    ব্রজসুন্দরী বলিল, “দ্বারবান কে?”
    কা। আমরা দুইজন।
    ব্র। কত ভাগ চাও?
    কামিনী। পেয়েছ কি?
    ব্র। দশটি টাকা।
    কা। তবে, আমাদের আট টাকা আট টাকা ষোল টাকা দিয়া যাও।
    ব্র। লাভ মন্দ নয়!
    কা। তা বড় মানুষের বাড়ীর ভিক্ষায় লাভালাভ ধরিতে গেলে চলিবে কেন? সময়ে অসময়ে ঘর থেকেও কিছু দিতে হয়।
    ব্রজসুন্দরী বড় মানুষের স্ত্রী। ধাঁ করিয়া ষোল টাকা বাহির করিয়া দিল। আমরা সেই ষোল টাকা যমুনা ঠাকুরাণীকে দিলাম, বলিলাম, “তোমরা এই টাকায় সন্দেশ খাইও।”
    স্বামী বলিলেন, “ব্যাপার কি?”
    ততক্ষণে ব্রজসুন্দরী ছেলে পাঠাইয়া দিয়া, বানারসী পরিয়া আসিয়া বসিলেন। আবার একটা হাসির ঘটা পড়িয়া গেল।
    উ-বাবু বলিলেন, “এ কি যাত্রা নাকি?”
    যমুনা বলিল, “তা না ত কি? দেখিতেছ না, কাহারও কালিয়দমনের পালা, কারও কলঙ্কভঞ্জনের পালা, কারও মাথুর মিলন,–কারও শুধু পালাই পালাই পালা।”
    উ-বাবু। শুধু পালাই পালাই পালা কার?
    য। কেন কামিনীর! কেবল পালাই পালাই তার পালা।
    কামিনী কথায় সকলকে জ্বালাইতে লাগিল; পান, পুষ্প, আতর বিলাইয়া সকলকে তুষ্ট করিতেছিল। তখন সকলে মিলিয়া তাহাকে ধরিল, বলিল, “তুই যে বড় পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিস লা?”
    কামিনী বলিল, “পালাব না ত কি তোমাদের ভয় করি না কি?”
    মিত্র মহাশয় বলিলেন, “কামিনী! ভাই, তোমার সঙ্গে কি কথা ছিল?”
    কা। কি কথা ছিল, মিত্র মহাশয়?
    উ-বাবু। তুমি নাচিবে।
    কা। আমি ত নেচেছি।
    উ। কখন নাচলে?
    কা। দুপুরবেলা।
    উ। কোথায় নাচলি লো?
    কা। আমার ঘরের ভিতর, দোর বন্ধ করে।
    উ। কে দেখেছে?
    কা। কেউ না।
    উ। তেমনতর ত কথা ছিল না।
    কা। এমন কথাও ছিল না যে, তোমাদের সমুখে আসিয়া পেশওয়াজ পরিয়া নাচিব। নাচিব স্বীকার করিয়াছিলাম, তা নাচিয়াছি। আমার কথা রাখিয়াছি। তোমরা দেখিতে পাইলে না, তোমাদের অদৃষ্টের দোষ। এখন আমি যে শিকল কিনিয়া রাখিয়াছি, তার কি হবে?
    কামিনী যদি নাচের দায়ে এড়াইল, তবে আমার স্বামী গানের জন্য ধরা পড়িলেন। মজলিস হইতে হুকুম হইল, তোমাকে গায়িতে হইবে। তিনি পশ্চিমাঞ্চলে রীতিমত গীতবিদ্যা শিখিয়াছিলেন। তিনি সনদী খিয়াল গায়িলেন। শুনিয়া সে অপ্সরোমণ্ডলী হাসিল। ফরমায়েস করিল, “বদন অধিকারী, কি দাশু রায়।” তাতে উ-বাবু অপটু। সুতরাং অপ্সরোগণ সন্তুষ্ট হইল না।
    এইরূপে দুই প্রহর রাত্রি কাটিল। এ পরিচ্ছেদটা না লিখিলেও লিখিলেও পারিতাম। তবে এ দেশের গ্রাম্য স্ত্রীদিগের জীবনের এই ভাগটুকু এখন লোপ পাইয়াছে বলিয়া আমার বিশ্বাস। লোপ পাইয়াছে, ভালই হইয়াছে; কেন না, ইহার সঙ্গে অশ্লীলতা, নির্লজ্জতা, কদাচিৎ বা দুর্নীতি, আসিয়া মিশিত। কিন্তু যাহা লোপ পাইয়াছে, তাহার একটি চিত্র দিবার বাসনায়, এই পরিচ্ছেদটা লিখিলাম। তবে জানি না, অনেক স্থানে এ কুরীতি লোপ না পাইয়াও থাকিতে পারে। যদি তাহা হয়, তবে যাঁহারা জামাই দেখিতে পৌরস্ত্রীদিগকে যাইতে নিষেধ করেন না, তাঁহাদের চোখ কাণ ফুটাইয়া দেওয়া প্রয়োজনীয়। তাই ধরি মাছ, না ছুঁই পানি করিয়া, তাঁহাদের ইঙ্গিত করিলাম।

    দ্বাবিংশতিতম পরিচ্ছেদ : উপসংহার

    আমি পরদিন স্বামীর সঙ্গে শিবিকারোহণে শ্বশুরবাড়ী গেলাম। স্বামীর সঙ্গে যাইতেছি, সে একটা সুখ বটে, কিন্তু সেবার যে যাইতেছিলাম, সে আর একপ্রকারের সুখ। যাহা কখন পাই নাই, তাই পাইবার আশায় যাইতেছিলাম; এখন যাহা পাইয়াছিলাম, তাই আঁচলে বাঁধিয়া লইয়া যাইতেছিলাম। একটা কবির কাব্য, অপরটা ধনীর ধন। ধনীর ধন কবির কাব্যের সমান কি? যাহারা ধনোপার্জন করিয়া বুড়া হইয়াছে, কাব্য হারাইয়াছে, তাহারাও একথা বলে না। তাহারা বলে, ফুল যতক্ষণ গাছে ফুটে, ততক্ষণই সুন্দর; তুলিলে আর তেমন সুন্দর থাকে না। স্বপ্ন যেমন সুখের, স্বপ্নের সফলতা কি তত সুখের হয়? আকাশ যেমন বস্তুত: নীল হয়, আমরা নীল দেখি মাত্র, ধন তেমনই। ধন সুখের নয়, আমরা সুখের বলিয়া মনে করি। কাব্যই সুখ। কেন না, কাব্য আশা, ধন ভোগমাত্র। তাও সকলের কপালে নয়। অনেক ধনী লোক কেবল ধনাগারের প্রহরী মাত্র। আমার একজন কুটম্ব বলেন, “ত্রেজুরি গার্ড।”
    তবু সুখে সুখেই শ্বশুরবাড়ী চলিলাম। সেখানে, এবার নির্বিঘ্নে পৌঁছিলাম। স্বামী মহাশয়, মাতাপিতার সমীপে সমস্ত কথা সবিশেষ নিবেদন করিলেন। রমণ বাবুর পুলিন্দা খোলা হইল। তাঁহার কথার সঙ্গে আমার সকল কথা মিলিল। আমার শ্বশুর শাশুড়ী সন্তুষ্ট হইলেন। সমাজের লোকেও সবিশেষ বৃত্তান্ত জানিতে পারিয়া, কোন কথা তুলিল না।
    আমি সকল ঘটনা বিবৃত করিয়া, সুভাষিণীকে পত্র লিখিলাম। সুভাষিণীর জন্য সর্বদা আমার প্রাণ কাঁদিত। আমার স্বামী আমার অনুরোধে রমণ বাবুর নিকট হারাণীর জন্য পাঁচ শত টাকা পাঠাইয়া দিলেন। শীঘ্রই সুভাষিণীর উত্তর পাইলাম। উত্তর আনন্দ-পরিপূর্ণ। সুভাষিণী, র-বাবুর হস্তাক্ষরে পত্র লিখিয়াছিল। কিন্তু কথাগুলা সুভাষিণীর নিজের, তাহা কথার রকমেই বুঝা গেল। সে সকলেরই সংবাদ লিখিয়াছিল। দুই একটা সংবাদ উদ্ধৃত করিতেছি। সে লিখিতেছে,
    “হারাণী প্রথমে কিছুতেই টাকা লইবে না। বলে, আমার লোভ বাড়িয়া যাইবে। এটা যেন ভাল কাজই করিয়াছিলাম, কিন্তু এ রকম কাজ ত মন্দই হয়। আমি যদি লোভে পড়িয়া মন্দেই রাজি হই? আমি পোড়ারমুখীকে বুঝাইলাম যে, আমার ঝাঁটা না খাইলে কি তুই এ কাজ করিতিস? সবার বেলাই কি তুই আমার হাতের ঝাঁটা খেতে পাবি? মন্দ কাজের বেলা কি আমি তোকে তেমনই তোর সুধু মুখে ঝাঁটা খাওয়াইব? দুটো গালাগালিও খাবি না কি? ভাল কাজ করেছিলি, বখশিশ নে। এইরূপ অনেক বুঝান পড়ানতে সে টাকা নিয়াছে। এখন নানারকম ব্রত নিয়ম করিবার ফর্দ করিতেছে। যতদিন না তোমার এই সংবাদ পাওয়া গিয়াছিল, ততদিন সে আর হাসে নাই, কিন্তু এখন তার হাসির জ্বালায় বাড়ীর লোক অস্থির হইয়াছে।”
    পাচিকা ব্রাহ্মণ ঠাকুরাণীর সংবাদ সুভাষিণী এইরূপ লিখিল, “যে অবধি তুমি তোমার স্বামীর সঙ্গে গোপনে চলিয়া গিয়াছ, সে অবধি বুড়ী বড় আস্ফালন করিত, বলিত, ‘আমি বরাবর জানি, সে মানুষ ভাল নয়। তার রকমসকম ভাল নয়। কত বার বলেছি যে, এমন কুচরিত্র মানুষ তোমরা রেখ না। তা, কাঙ্গালের কথা কে গ্রাহ্য করে? সবাই কুমুদিনী কুমুদিনী করে অজ্ঞান।” এমনই এমনই আরও কথা। তার পর যখন শুনিল যে, তুমি কাহারও সঙ্গে যাও নাই, আপনার স্বামীর সঙ্গে গিয়াছ, তুমি বড়মানুষের মেয়ে, বড়মানুষের বৌ—এখন আপনার ঘর বর পাইয়াছ, তখন বলিল, ‘আমি ত বরাবর বলচি মা যে, সে বড় ঘরের মেয়ে, ছোট ঘরে কি আর অমন স্বভাব চরিত্র হয়? যেমন রূপ, তেমনই গুণ, যেন লক্ষ্মী! সে ভাল থাকুক মা! ভাল থাকুক! তা, হা দেখ বৌদিদি! আমাকে কিছু পাঠাইয়া দিতে বল’|”
    গৃহিণী সম্বন্ধে সুভাষিণী লিখিল, “তিনি তোমার এইসকল সংবাদ পাইয়া আহ্লাদ প্রকাশ করিয়াছেন, কিন্তু আমাকে ও র-বাবুকে কিছু ভর্ৎসনাও করিয়াছেন। বলিয়াছেন, ‘সে যে এত বড় ঘরের মেয়ে, তা তোরা আমাকে আগে বলিস নে কেন? আমি তাকে খুব যত্নে রাখিতাম।’ আর, তোমার স্বামীরও কিছু নিন্দা করিয়াছেন, বলিয়াছেন, ‘হোক তাঁর পরিবার, আমার অমন রাঁধুনীটা নিয়ে যাওয়া তাঁর কিছু ভাল হয় নাই’|”
    কর্তা রামরাম দত্তের কথা সুভাষিণীর নিজ হাতের হিজিবিজি। কষ্টে পড়িলাম যে, কর্তা গৃহিণীকে কৃত্রিম কোপের সহিত তিরস্কার করিয়া বলিয়াছিলেন, “তুমি ছলছুতা করিয়া সুন্দর রাঁধুনীটাকে বিদায় করিয়া দিয়াছ।” গৃহিণী বলিলেন, “খুব করিয়াছি, তুমি সুন্দরী নিয়ে কি ধুইয়া খাইতে?” কর্তা বলিলেন, “তা কি বলতে পারি। ও কালো রূপ আর রাত দিন ধ্যান করিতে পারা যায় না|” গৃহিণী সেই হইতে শয্যা লইলেন, আর সেদিন উঠিলেন না। কর্তা যে তাঁহাকে ক্ষেপাইয়াছেন, তাহা তিনি কিছুতেই বুঝিলেন না।
    বলা বাহুল্য যে, ব্রাহ্মণ ঠাকুরাণী ও অন্যান্য ভৃত্যবর্গের জন্য কিছু কিছু পাঠাইয়া দিলাম।
    তার পর সুভাষিণীর সঙ্গে আর একবার মাত্র দেখা হইয়াছিল। তার কন্যার বিবাহের সময়ে বিশেষ অনুরোধে, স্বামী মহাশয় আমাকে লইয়া গিয়াছিলেন। সুভাষিণীর কন্যাকে অলঙ্কার দিয়া সাজাইলাম—গৃহিণীকে উপযুক্ত উপহার দিলাম—যে যাহার যোগ্য, তাহাকে সেইরূপ দান ও সম্ভাষণ করিলাম। কিন্তু দেখিলাম, গৃহিণী আমার প্রতি ও আমার স্বামীর প্রতি অপ্রসন্ন। তাঁর ছেলের ভাল খাওয়া হয় না, কথাটা আমায় অনেকবার শুনাইলেন। আমিও রমণ বাবুকে কিছু রাঁধিয়া খাওয়াইলাম। কিন্তু আর কখন গেলাম না। রাঁধিবার ভয়ে নয়; গৃহিণীর মনোদু:খের ভয়ে।
    গৃহিণী ও রামরাম দত্ত অনেক দিন হইল স্বর্গারোহণ করিয়াছেন। কিন্তু আর যাওয়া ঘটে নাই। আমি সুভাষিণীকে ভুলি নাই। ইহজন্মে ভুলিব না। সুভাষিণীর মত এ সংসারে আর কিছু দেখিলাম না।

    ⤶
    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবিষবৃক্ষ – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
    Next Article যুগলাঙ্গুরীয় – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

    Related Articles

    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    চলিত ভাষার বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

    যুগলাঙ্গুরীয় – বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (চলিত ভাষায়)

    May 7, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }