Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ইমদাদুল হক মিলনের বিবিধ রচনা

    ইমদাদুল হক মিলন এক পাতা গল্প213 Mins Read0

    আসলে কী ঘটেছিল

    এই বাড়ির কাজের লোকটির নাম বারেক।
    তিরিশ একত্রিশ বছর বয়স। এখনও বিয়ে করেনি। রোগা পটকা কেংলা ধরনের। চেহারায় মিষ্টতা আছে, চোখ দুটো সুন্দর। এক বালতি পানি এনে দরজার বাইরে একপাশে রাখল সে। সন্ধ্যা প্রায় হয়ে আসছে। তবু বালতি ভরা টলটলে পরিষ্কার পানিটা দেখতে পেলাম। বারেককে জিজ্ঞেস করলাম, এখানে এভাবে বালতি ভরা পানি রাখলে কেন?
    বারেক কী রকম একটু রহস্যময় ভঙ্গিতে হাসল। গ্রামের লোক হলেও কথা সে মোটামুটি শুদ্ধভাষায় বলে। শুধু দুয়েকটা শব্দের গণ্ডগোল হয়। বিক্রমপুরের মানুষ বলে এলাকার দুয়েকটা শব্দ শুদ্ধভাষার মধ্যে ঢুকে যায়।

    এখনও ঢুকল। ‘এমতেই রাখলাম।’
    বুঝলাম, ‘এমতেই’ মানে এমনি। বললাম, এমনি এমনি এক বালতি পানি সারারাত এখানে থাকবে?

    বারেক আবারও সেই হাসিটা হাসল। থাকলে অসুবিধা কী? পানি অনেক দরকারি জিনিস। কত সময় কত কাজে লাগতে পারে। এই ধরেন রাত্রে আপনার পাও ধোয়ার দরকার হইল, হাতমুখ ধোয়ার দরকার হইল, তখন কষ্ট কইরা চাপকলের ওইখানে না গিয়া এই বালতির পানি দিয়াই কাজটা আপনে সারলেন।

    আমার ওসবের দরকার হবে না। আমার ঘুম খুব গভীর। শুয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে যাই। একঘুমে রাত শেষ করি। সকাল সাতটার আগে ঘুম ভাঙে না।

    নতুন জাগায় একটু অসুবিধা হইতে পারে।

    কিসের অসুবিধা?

    ঘুমের। অনেক মানুষ আছে জায়গা বদল করলে, বিছানা বদল করলে সহজে ঘুমাইতে পারে না। আপনে অনেকদিন পর নানারবাড়িতে বেড়াইতে আসছেন। এখানে ঢাকা শহরের মতন ঘুম আপনের নাও হইতে পারে।

    ঘরে ঢুকে পুরনো আমলের পালঙ্কে পা ঝুলিয়ে বসলাম।

    আমার নানাবাড়ি গ্রাম এলাকার বিশাল বনেদী এক বাড়ি। বাইরের দিকে একতলা পুরনো একটা দালান। সেটাকে বলে কাছারি ঘর। লোকজন এলে ওই ঘরে বসে। তারপর ভেতরবাড়ি। ভেতরবাড়ির চারদিকে চারটা বড় বড় টিনের ঘর। মাঝখানে মাঠের মতন বিশাল উঠোন। পুনুখালা আর বাড়ির বহুকালের পুরনো ঝি রহিমা যে ঘরটায় থাকে তার পাশেই রান্নাঘর। নানা নানী মারা যাওয়ার আগেই বিধবা হয়েছেন পুনুখালা। তাঁর একটা মাত্র মেয়ে। সেই মেয়ে থাকে অস্ট্রেলিয়ায়। স্বামী স্ত্রী দুজনেই সিডনিতে ভাল চাকরি করে। আমার কোনও মামা নেই বলে মা আর পুনুখালা এখন এই বাড়ির মালিক। মা তো ঢাকাতেই থাকেন, পুনুখালা থাকেন এই বাড়িতে। দুচার বছরে এক আধবার মা হয়তো আসেন। মার সঙ্গে আমিও এসেছি কয়েকবার। একা কয়েকদিন পুনুখালার কাছে থাকার জন্য এই প্রথম এলাম। আমার এমবিএ শেষ হয়েছে কদিন আগে। এখন কিছুদিন অলস সময় কাটাবো। তারপর চাকরি বাকরিতে ঢুকবো। মা বললেন, যা তোর খালার কাছ থেকে বেড়িয়ে আয়। চলে এলাম।

    এতবড় বাড়িটায় তিনজন মাত্র মানুষ। পুনুখালা রহিমা আর বারেক। আজ আমি এলাম বলে লোক হয়েছে চারজন। দুপুরবেলা এসে পৌঁছাবার পর দিনমজুর ধরনের কয়েকজন পুরুষ মহিলা দেখেছি। তারা কেউ গোলাঘরের কাজ করছিল, উঠোনের রোদে ধান শুকিয়ে বস্তায় ভরছিল। কেউ কেউ কাজ করছিল বাড়ির পেছন দিককার সবজি বাগানে। বড় পুকুরটার পারেও আরেকটা সবজি বাগান, সেখানেও কাজ করছিল কয়েকজন। সন্ধ্যার আগে আগেই যে যার কাজ শেষ করে চলে গেছে। এখন বাড়িটা একেবারেই নির্জন।

    milon_ki_ghoechilo_2.jpg বিকেলবেলা বারেককে নিয়ে পুরো বাড়ি ঘুরে দেখতে দেখতে আমার মনে হয়েছে বাড়িটা আসলে একটা খামারবাড়ি। ফার্ম হাউজ। বনজ ফলজ আর ঔষধি গাছে ভর্তি। নানা প্রকারের সবজি ফলছে বাগানে। পুকুরগুলো ভরে আছে মাছে। শুধু একটা জিনিসই নেই, গরু। বাড়িতে গরু নেই। পুনুখালা গরু পছন্দ করেন না। গোবরের গন্ধে তাঁর বমি আসে।

    আমি আবার গরু খুব ভালবাসি। বাবার বন্ধু আরেফিন আংকেলের একটা গরুর খামাড় আছে ময়মনসিংহের ফুলপুরে। একবার সেই খামার দেখতে গিয়েছিলাম। গরুগুলোকে যা ভাল লেগেছে! সবচে’ ভাল লেগেছে গরুদের পানি খাওয়া দেখতে। গামলায় মুখ দিয়ে অদ্ভুত এক শব্দে পানি খাচ্ছিল। সেই শব্দটা এখনও কানে লেগে আছে।

    আহা এই বাড়িতে যদি দুয়েকটা গরু থাকতো তাহলে গরুদের পানি খাওয়াটা আবার দেখতে পেতাম। অদ্ভুত সেই শব্দটা শুনতে পেতাম।

    এই বাড়িতে পল্লীবিদ্যুৎ আছে। কিন্তু রাত নটার পর থাকে না। এজন্য সাড়ে আটটা পৌনে নটার মধ্যে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই শুয়ে পরে।
    আজও তাই হলো।

    milon_ki_ghoechilo_3.jpg পুনুখালা বললেন, তুই দক্ষিণের ঘরে থাক বাবা। ওই ঘরের পালঙ্কটা সুন্দর। তোর নানা শুতেন। নানার খাটে নাতী শুলে ঘুম ভাল হবে। বারেকও থাকবে তোর সঙ্গে।

    আমার একা ঘরে ঘুমানোর অভ্যাস। বারেক সঙ্গে থাকবে শুনে একটু গাঁইগুই করলাম। আমি একাই থাকতে পারবো খালা। বারেক অন্যঘরে ঘুমাক।

    খালা বললেন, বারেক রোজ রাতেই ওই ঘরে ঘুমায়। ও ঘুমাবে মেঝেতে আর তুই পালঙ্কে। অসুবিধা কী? এত নির্জন বাড়ি, রাতে যদি ভয় পাস?

    ভয় পাবে কেন?

    ভূতের ভয় পেতে পারিস।

    আমি ভূতে বিশ্বাস করি না। ভূতের ভয় আমার নেই। ঠিক আছে তুমি যখন বলছ বারেক থাক আমার সঙ্গে। অসুবিধা নেই।

    milon_ki_ghoechilo_4.jpg পালঙ্কে উঠে বসেছি, বারেক মেঝেতে তার বিছানা মাত্র শেষ করেছে, পল্লীবিদ্যুৎ চলে গেল। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভরে গেল ঘর। বারেক বলল, দেখছেন অবস্থা? কী রকম অন্ধকার!

    আমার ভালই লাগছে।

    বলেন কী? এই রকম অন্ধকার আপনের ভাল লাগতেছে?

    হ্যাঁ। কারণ আমি এখনই শুয়ে পড়ব, আর শোয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘুম। ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঘুম খুব জমে।

    তয় জমাইয়া ঘুম দেন। রাত্রে যদি ঘুম ভাঙ্গে, যদি কোনও দরকার হয়, ডাইকেন আমারে।

    মনে হয় দরকার হবে না।

    বারেক কথা বলল না। মৃদু শব্দে হাসল।
    শুয়ে পড়তে পড়তে বললাম, হাসছ কেন?

    এমতেই হাসছি।

    ঠিক আছে। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম বারেক। গুড নাইট।

    বারেকও এসব আধুনিক কায়দা জানে। সেও বলল, গুড নাইট।

    রাত দুপুরে ঘুম ভেঙে গেল। ঘুমের ভেতর থেকেই কী রকম একটা শব্দ পাচ্ছিলাম, অচেনা একটা গন্ধ এসে লাগছিল নাকে। ঘুম ভাঙার পর টের পেলাম শব্দটা আসছে দরজার বাইরে থেকে। চব চব, চব চব এইরকম শব্দ। কোনও একটা জন্য যেন পানি খাচ্ছে।
    milon_ki_ghoechilo_5 কয়েকটা মাত্র মুহূর্ত, শব্দটা চিনে ফেললাম। আরে, এ তো গরুর পানি খাওয়ার শব্দ! আরেফিন আংকেলের ফুলপুরের খামারে গরুদের পানি খাওয়ার শব্দ পরিষ্কার মনে আছে আমার। ঠিক এইরকম শব্দ। গন্ধটা চিনতেও দেরি হলো না। গরুর গায়ের গন্ধ। দরজার বাইরে বালতিতে যে পানি সন্ধ্যাবেলা রেখেছিল বারেক সেই পানি গরুতে খাচ্ছে। অনেকক্ষণ ধরে খাচ্ছে। খাওয়া যেন থামছেই না।

    কিন্তু এই বাড়িতে তো গরু নেই। গরু নামের জন্যটা দুই চক্ষে দেখতে পারেন না পুনুখালা। গোবরের গন্ধে তাঁর বমি আসে। তাহলে এত রাতে কোত্থেকে এলো গরু? কাদের গরু এত রাতে এই বাড়িতে এসে বারেকের রাখা বালতিভরা পানি খাচ্ছে? তাছাড়া গরু খুবই দামি প্রাণী। গৃহস্থরা গরু খুবই যত্নে গোয়াল ঘরে বেঁধে রাখে রাত্রে। কেউ কেউ রাত জেগে পাহারা দেয়। গরু চোরের অভাব নেই দেশগ্রামে। শুনেছি চান্স পেলেই গৃহসে’র গোয়াল থেকে গরুচুরি করে গ্রামের হাট বাজারে বিক্রি করে দেয় গরুচোরগুলো। কসাইদের কাছে বিক্রি করে দেয়, যাতে মুহূর্তেই চামড়া বিক্রি হয়ে যায় ট্যানারিঅলাদের কাছে, কেজি দরে মাংস বিক্রি হয়ে যায় খদ্দেরদের কাছে। বিক্রমপুর এলাকায় গরুর নাড়িভূড়িকে বলে ‘আতড়ি উঝুড়ি’। সেই জিনিসও পরিষ্কার করে, তেল মশলা দিয়ে রান্না করে খায় অনেকে। খুবই নাকি টেস্টি জিনিস। গরুর হাড়মাথাও আজকাল ফেলনা জিনিস না। টোকাইরা কুড়িয়ে নিয়ে হাড্ডিঅলাদের কাছে বিক্রি করে দেয়। সেই জিনিস চালান হয়ে যায় বিদেশে। গরুর হাড্ডি শুকিয়ে পাউডার করে সেই পাউডার থেকে তৈরি হয় সিরামিকসের প্লেট পেয়ালা। আর দুধ এবং মাংসের জন্য গরু, হালচাষের জন্য গরু, সবমিলিয়ে গরু হচ্ছে অপরিসীম প্রয়োজনীয় এক প্রাণী।

    এইরকম প্রয়োজনীয় দামি প্রাণী কোন বাড়ির গোয়াল থেকে ছুটে এসে রাত দুপুরে আমার নানাবাড়ির পানি খাচ্ছে?
    গরুর পানি খাওয়ার শব্দটা তখনও সমানে চলছে। শব্দের সঙ্গে গায়ের গন্ধটাও ঘরে এসে ঢুকছে। একটু যেন গোবরের গন্ধও পাওয়া যাচ্ছে। তার মানে পানি খাওয়ার ফাঁকে ওই কাজটাও সেরে নিচ্ছে গরুটা।
    ইস পুনুখালা নিশ্চয় সকালবেলা খুব বিরক্ত হবেন। গোবরের গন্ধে তার বমি হয়ে যেতে পারে।

    আস্তে করে বারেককে ডাকলাম। বারেক।

    বারেক সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল। জ্বি।

    তার মানে গরুর পানি খাওয়ার শব্দে বারেকেরও ঘুম ভেঙে গেছে।

    শুনতে পাচ্ছ?

    জ্বি পাইতেছি।

    এত রাত্রে গরু এলো কোত্থেকে? কাদের বাড়ির গরু এসে বালতির পানি খেয়ে যাচ্ছে। গোবরের গন্ধও পাচ্ছি। আমরা কি উঠবো? দুজনে মিলে গরুটা তাড়াবো?

    বারেক ভয়র্ত গলায় বলল, আপনের কি মাথা খারাপ হইছে? চুপচাপ শুইয়া থাকেন। কথাও বইলেন না।

    কেন?

    সকালবেলা ঘটনা আপনেরে বলবো।

    আমাদের কথাবার্তার শব্দেই কী না কে জানে, হঠাৎ পানি খাওয়ার শব্দটা বন্ধ হলো, আর পানির বালতিটা যেন উল্টে পড়ল। গরুটাও যেন দৌড়ে চলে গেল। তার ভারী শরীরের দৌড়ে মৃদু একটা কাঁপন লাগল মাটিতে, পালঙ্কে শুয়েও সেটা টের পেলাম আমি। বাড়ির পাশ দিয়ে ট্রেন কিংবা ভারী ট্রাক চলে গেলে মাটি যেমন কাঁপে ঠিক তেমন করে কাঁপলো পালঙ্ক।

    সকালবেলা আমাকে ডেকে তুললো বারেক। ওঠেন ওঠেন, মজার একটা কারবার দেখাই আপনেরে।

    উঠলাম। বারেকের সঙ্গে দরজা খুলে বেরুলাম।

    বারেক বলল, দেখেন, বালতির দিকে চাইয়া দেখেন।

    ঘুম ভাঙা চোখে বালতির দিকে তাকালাম। তাকিয়ে বড় রকমের একটা ধাক্কা খেলাম। চোখ কচলে আবার তাকালাম। না, দৃশ্য বদলায়নি! দৃশ্য একই। বালতিভরা পানি ঠিকই আছে। এক ফোটাও কমেনি। বারেক যেভাবে রেখেছিল ঠিক সেইভাবে আছে বালতি, সেইভাবেই আছে পানি। মাঝরাতে গরুতে তাহলে খেল কী? এতক্ষণ ধরে পানি খাওয়ার শব্দ পেলাম, ওই নিয়ে বারেকের সঙ্গে কথা বলল। আমাদের কথাবার্তার শব্দে বালতি উল্টে দিয়ে ছুটে গেল গরুটা সেই শব্দও পেলাম। আর এখন দেখছি সবই ঠিক আছে। বালতি আছে বালতির জায়গায়, পানি ভরা আছে আগের মতোই। ব্যাপার কী?

    আমি তারপর গোবর খুঁজলাম। গোবরের গন্ধ যে পেয়েছিলাম সেই বস্তুটাই বা উধাও হয়ে গেল কোথায়? কোনও চিহ্নই তো নেই।

    কাল সন্ধ্যার সেই রহস্যময় হাসিটা হাসল বারেক। বুঝলেন কিছু?

    ফ্যাল ফ্যাল করে বারেকের দিকে তাকালাম। মাথা নাড়লাম। না, কিছুই বুঝলাম না। সবই দেখি ঠিক আছে। মাঝরাতে অতক্ষণ ধরে গরুটায় তাহলে খেল কী? শব্দ পেলাম, গরুর গায়ের গন্ধ, গোবরের গন্ধ সবই পেলাম। দৌড়ে চলে যাওয়ার শব্দও পেলাম। আর এখন দেখি বালতিভরা পানি যেমন ছিল তেমনই আছে। গোবরের চিহ্নও নেই।

    কোথা থেকে থাকবে? গরু বলে কোনও জিনিস তো আসে নাই।

    তাহলে কী এসেছিল? বারেক, তুমি আমার সঙ্গে ফাজলামো করো না। গরুর পানি খাওয়ার শব্দ আমার চেনা। গা এবং গোবর দুটোর গন্ধই চেনা। বালতি উল্টে দৌড়ে চলে যাওয়ার শব্দ আমি পেয়েছি। তুমিও পেয়েছ। এত কিছুর পর বলছ গরু বলে কোনও জিনিস আসেনি। তাহলে কী এসেছিল? আমার মনে হয় তুমি কিছু একটা চালাকি করেছ।

    বারেক বিস্মিত চোখে তাকাল। আমি কী চালাকী করবো?

    নিশ্চয় আমার ঘুম ভাঙার আগে উঠে চাপকল থেকে বালতি ভরে পানি এনে রেখেছ, গোবর পরিষ্কার করে রেখেছ।
    সেইটা কইরা আমার লাভ কী? দরজা খুইলা ঘর থেকে বাহির হইলে সেই আওয়াজ আপনে পাইতেন। চাপকল থেকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে কেন এত কষ্ট করে পানি আনতে যাবো আমি? অন্ধকারে গোবরই বা পরিষ্কার করবো কীভাবে? রাত্রে এই কাজগুলি সারবার কোনও দরকার নাই। দরকার থাকলে সকালবেলা সারবো। আমারে তো কেউ তাড়া দেয় নাই।

    বারেকের কথায় যুক্তি আছে। ঠিকই তো। বারেক কেন অন্ধকার রাতে ঘর থেকে বেরিয়ে এসব কাজ সারতে যাবে? কাজটা তো এমন কিছু জরুরি না।

    বললাম, তাহলে ব্যাপারটা কী?

    বারেক গম্ভীর গলায় আবার সেই কথাটা বলল। গরু বলে কোনও জিনিস আসে নাই।

    তাহল কী এসেছিল?

    আপনে বোঝেন নাই?

    না।

    এত সহজ জিনিসটা বুঝতাছেন না?

    এবার গা কাঁটা দিয়ে উঠল আমার। গলা কেমন শুকিয়ে এলো। ঢোক গিলে বারেকের দিকে তাকালাম।

    বারেক বলল, যদি সত্য সত্যই গরু হইতো তাহলে আপনের কথায় আমি রাজি হইতাম। দুইজনে বাহির হইয়া গরুটা তখনই তাড়ায়া দিতাম। আমার হাতের কাছে ম্যাচ থাকে, হারিকেন থাকে। হারিকেন জ্বালাইয়া দুইজনে বাহির হইলে গরু তাড়ানো কঠিন কোনও কাজ ছিল না। আর একটা কথা হইল, এই বাড়িতে গরু নাই, গরু ঢুকবারও কোনও পথ নাই। বাড়ির চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া। নানান পদের সবজির চাষ হয় বাড়িতে। গরু ছাগল ঢুকলে ক্ষেতের সবজি বিনাশ কইরা ফালাইবো। সামনের দিককার গেটটাও রাত্রে বন্ধ করি আমি নিজহাতে। তাহলে গরু আসবে কোথা থেকে?

    শুকনো গলায় বললাম, তাহলে কী এসেছিল?

    যে এসেছিল সে মাঝে মাঝেই আসে। কোনও রাতে আমি টের পাই, কোনও রাতে পাই না। তবে সে পানি খাইতে খুবই ভালবাসে। আর তিনাদের পানি খাওয়া আজব রকমের। পানি খাইবেন ঠিকই কিন্তু সেই পানি ফুরাইবো না। তিনার জন্য পানি আমি রোজ সন্ধ্যাবেলাই দরজার বাইরে রাইখা দেই। কোন রাত্রে তিনি আসবেন, কোন রাত্রে পানি খাবেন! যদি মুখের কাছে পানি না পান তাহলে আমার উপরে চেইতা যাইবেন। আমি একলা এইঘরে থাকি। যদি ঘরে ঢুইকা…। ঘরে ঢুকবার জন্য তিনাদের কোনও দরজা লাগে না। হাওয়ার সঙ্গে ঢুকবেন, হাওয়ার সঙ্গে বাহির হইবেন।

    ভয়ার্ত গলায় বললাম, ঘটনাটা কি খালা জানেন? রহিমা বুয়া জানে?

    না, কেউ জানে না। আমি কাউরে বলি না। বললে যদি আমার উপরে তিনি চেইতা যান? ভাইজান, আপনেও কেউরে বইলেন না।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅন্তরে – ইমদাদুল হক মিলন
    Next Article শুনছ, কোথাও আছো কি কেউ?

    Related Articles

    ইমদাদুল হক মিলন

    অন্তরে – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    এসো – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    গোপনে – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    দুই বাংলার দাম্পত্য কলহের শত কাহিনী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও ইমদাদুল হক মিলন সম্পাদিত

    July 10, 2025
    ইমদাদুল হক মিলন

    প্রিয় – ইমদাদুল হক মিলন

    July 10, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.