Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প122 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০২. একেক বছর একেক রকম হয়

    একেক বছর একেক রকম হয়।

    গত বছর বৃষ্টিই হয় নি। বড় বড় পুকুর শুকিয়ে গেছে। টিউবওয়েলে পানি উঠে না। এ বছর আগেই বর্ষা নেমে গেল। জ্যৈষ্ঠ মাসেও সারাদিন বৃষ্টি, ঠাণ্ডা-ঠাণ্ডা আবহাওয়া। আম কাঁঠাল পাকা বন্ধ। গরমই পড়ে নি আম কাঁঠাল পাকবে কি? অসময়ের বৃষ্টির পানিতে মাগরা নদী ফুলে ফেঁপে উঠল। গভীর রাতে ঘুম ভাঙলে নদীর হাসি শোনা যায়। হিহি হোহো করে নদী হাসে। নদীর হাসি খুব খারাপ। যে বছর নদী হাসে, সেই বছর ভয়ংকর কিছু হবেই। ভৈরব থেকে রেলের ইঞ্জিনিয়াররা একদিন মাগরা ব্রিজ দেখতে এলেন। সুতা ফেলে কি সব মাপজোখ করলেন। তাদের মুখ গম্ভীর হয়ে গেল। তারপর থেকে নিয়ম হল। কোনো ব্রিজ সরাসরি মগরা ব্রিজে উঠবে না। ব্রিজে উঠার আগে থামবে। হুইসাল দেবে। একজন পয়েন্টসম্যান সবুজ পতাকা দেখাবে, কিংবা সবুজ বাতি জ্বালাবে। তখনি ট্রেন ব্রিজে উঠবে। নান্দাইল রোড স্টেশনের পয়েন্টসম্যান আব্দুর রহমান চাচা এই খবর শুনে খুবই রেগে গেলেন। চিৎকার, চেঁচামেচি, খারাপ গালাগালি—রেলের সাহেবের মারে আমি….।

    বাবা শান্তগলায় বললেন, খারাপ গালাগালি দেবে না। রেল সাহেবের মা নিশ্চয়ই বেঁচে নেই। আর বেঁচে থাকলেও তিনি একজন সম্মানী বৃদ্ধা মহিলা। তাছাড়া তিনি কোনো দোষও করেন নি। তাকে নিয়ে নোংরা কথা বলা ঠিক না। রেলের ডিসিসান তোমার যদি পছন্দ না হয়, চাকরি ছেড়ে দাও।

    রহমান চাচা লাফ ঝাঁপ দিতে দিতে বললেন, চাকরি তো ছাড়বই। চাকরির মারে আমি….. এই বৃষ্টি বাদলার দিনে আমি দোষ লাগা পুলের উপর একলা বইস্যা থাকব। আর জিন ভূতে আমারে গলা টিপ্যা মারব। আমার অত গরজ নাই। রেলের চাকরির মারে….।

    অনেক লাফ ঝাঁপ দিলেও সন্ধ্যার আগে আগে রহমান চাচা গামবুট পরে রেলের লণ্ঠন নিয়ে রওনা হলেন। গামবুট জোড়া বাবার। গত বর্ষায় কিনেছিলেন। বাবার ধারণা কেনার পরপরই এক সাইজ ছোট হয়ে গেছে। পরার পর আঙুল বেঁকে থাকে। গামবুট জোড়া তিনি রহমান চাচাকে দিয়ে দিয়েছেন। রহমান চাচার পায়ের পাতা বাবার পায়ের পাতার চেয়েও লম্বা। গামবুট পরার পর তার পায়ের সব কটা আঙুল নিশ্চয়ই বেঁকে থাকে। তবে তাতে তার অসুবিধা হয় না।

    মগরা ব্রিজের সামনে এই প্রথম ফ্লাগ ম্যান বসানো হচ্ছে। কাজেই বাবা রহমান চাচার সঙ্গে গেলেন। রহমান চাচাকে জায়গা মতো বসিয়ে তিনি চলে আসবেন। বাবা তাকে অনেক সান্ত্বনার কথাও বললেন—একা একা বসে গাঁজা খাবি। অসুবিধা কী? ট্রেন পার করিয়ে দিয়ে ইস্টিশনে এসে লম্বা ঘুম দিবি। হাঁটাচলা করায় তোর স্বাস্থ্যটাও ভালো থাকবে। গাঁজা খেয়ে শরীরটার তো বারোটা বাজিয়েছিস।

    বর্ষা শুরু হবার পর থেকে বাবাকে স্টেশনঘরে ঘুমুতে হচ্ছে। ঘরে থাকার জায়গা নেই। মা বেশ কিছুদিন হল বাবাকে ঘরে থাকতে দিচ্ছেন না। বাবার সঙ্গে কথাও বলছেন না। গরমের সময় হলে বাবা বারান্দায় শুয়ে থাকতে পারতেন। ঘোর বর্ষায় সেটা সম্ভব না। ভাইয়া আবার পরীক্ষা দিচ্ছে বলে সারারাত জেগে পড়ে। ঘুম কাটাবার জন্যে মাঝে মাঝে তাকে বিড়ি খেতে হয়। সিগারেটে ঘুম কাটে না। বিড়িতে লম্বা টান দিলে ঘুম কাটে। কাজেই তার ঘরে সে বাবাকে ঢুকতে দেবে না। রাতে ভাত খাবার পর বাবা পান মুখে দিয়ে ইস্টিশনঘরের দিকে রওনা হন। যেন অনেক দূর দেশে দীর্ঘদিনের জন্যে চলে যাচ্ছেন। কবে ফিরবেন তাও অনিশ্চিত, এমন ভঙ্গিতে সবার সঙ্গে কথাবার্তা বলেন।

    ভাইয়ার ঘরে উঁকি দিয়ে বলেন, পড়াশোনা ঠিকমতো হচ্ছে তো। আগে ভাগে বর্ষা নামায় তোর জন্যে ভালো হয়েছে। গরম কমেছে।

    ভাইয়া বাবার কোন কথার জবাব দেয় না। কথার মাঝখানে বই এর পাতা উল্টাতে থাকে। তার ভাবটা এ রকম যেন পড়াশোনার মাঝখানে কথা বলায় সে খুবই বিরক্ত।

    বাবা এই ঘর শেষ করে যান মার ঘরে। হারিকেন নামিয়ে মার ঘরের খাটের নিচে অনেকক্ষণ উঁকি ঝুঁকি দেন। সাপ খুঁজেন। প্রতি বর্ষায় মার ঘরে একবার না একবার সাপ বের হয়। এবারের বর্ষায় এখনো বের হয় নি। তবে বের হবে এটা প্রায় নিশ্চিত। সাপ খোঁজার ফাঁকে ফাঁকে মার সঙ্গে তার নিশ্চয়ই কোনো কথাবার্তা হয়। কি কথাবার্তা হয় আমি জানি না কারণ দুজনই কথা বলেন খুব নিচু গলায়।

    মার ঘর শেষ করার পর বাবা যান রহিমা ফুপুর ঘরে। এই সময় বাবার মেজাজ বেশ ভালো থাকে। তাঁর হাসির শব্দও মাঝে মাঝে শোনা যায়। কুসুম আপুর সঙ্গেও তিনি উপদেশমূলক কিছু কথাবার্তা বলেন। কারণ কুসুম আপুও এবার এস এস সি পরীক্ষা দিচ্ছে। যারা এস এস সি পরীক্ষা দেয় তাদেরকে সব সময় উপদেশ দেয়াই নিয়ম। কুসুম আপুর সঙ্গে কথা বলার সময় বাবার গলা অতিরিক্ত কোমল হয়ে যায়।

    পড়াশোনা কেমন হচ্ছে রে মা?

    ভালো।

    একটা কথা খেয়াল রাখবি। সারারাত জেগে পড়বি না। ছেলেরা সারারাত জেগে পড়লে কোনো সমস্যা নাই। সেটাই নিয়ম। কিন্তু মেয়েরা সারারাত জেগে পড়লে সমস্যা।

    কী সমস্যা?

    মুখের জ্যোতি কমে যায়।

    ছেলেদের জ্যোতি কমে না। মেয়েদের কমে কেন?

    ছেলে মেয়ে সবারই জ্যোতি কমে। ছেলেদের জ্যোতি কমলে কিছু যায় আসে না। মেয়েদের জ্যোতি কমলে যায় আসে। মেয়েদের আসল সম্পদ হল তাদের মুখের জ্যোতি।

    আপনি কী সব অদ্ভুত কথা যে বলেন চাচা।

    আমার নিজের কথা না। ময়—মুরুব্বীর কথা।

    এগুলি মোটেই কোনো ময়—মুরুব্বীর কথা না। আপনার নিজের কথা। আপনি স্টেশনে একা একা জেগে থাকেন আর অদ্ভুত অদ্ভুত সব কথা বানান।

    বাবার নিশ্চয়ই স্টেশন ঘরে একা ঘুমুতে ভালো লাগে না। তিনি নানান অজুহাতে দেরি করতে থাকেন। সবার সঙ্গে কথা শেষ হবার পর বারান্দায় এসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। এই সময় আমিও বারান্দায় চলে আসি। কারণ তখন খুব মজার একটা ঘটনা ঘটে। মজার ঘটনা সবদিন ঘটে না। মাঝে মধ্যে ঘটে। আমাদের বাসার সামনে দক্ষিণ দিকে কিছু নিচু জায়গা আছে। বর্ষার পানিতে জায়গাটা ড়ুবে গেছে। প্রায় হাঁটুপানি। স্টেশনে যাবার পথে বাবা শুকনো জায়গা ছেড়ে হঠাৎ পানিতে নেমে যান। হারিকেন হাতে নিয়ে ছপছপ শব্দে এ মাথা ও মাথা হাঁটেন। রাজ্যের ব্যাঙ তখন বাবাকে ঘিরে লাফালাফি করতে থাকে। কোনো কোনো সাহসী ব্যাঙ লাফ দিয়ে এসে বাবার গায়ে পড়ে। তিনি মনে হয় খুব মজা পান। কারণ আমি বারান্দা থেকে বাবার চাপা গলার হাসি শুনি। বাবার গলার হাসির শব্দ ব্যাঙের ডাকের মতো শোনা যায়। ব্যাঙের রাজত্বে বাবাকে লম্বা একটা ব্যাঙ বলে মনে হয়।

    বারান্দায় বাবার সঙ্গে আমারো কিছু কথা হয়। বাবা সংকুচিত গলায় প্রায় অনুরোধের মতো করে বলেন, কিরে আমার সাথে ইস্টিশনঘরে ঘুমুতে যাবি? সিন্দুকের উপর নতুন তুলার তোষক দিয়েছি। শিমুল তুলা। মনে হবে বাতাসের উপর ঘুমুচ্ছিস। আরামের ঘুম হবে। এক ঘুমে রাত কাবার। হিসি করার জন্যেও ঘুম ভাঙবে না।

    আমি বলি, না।

    না কেন? বাপ-ব্যাটায় গল্প করতে করে ঘুমাব। অসুবিধাটা কী?

    অসুবিধা কিছুই নেই। বাবার সঙ্গে ঘুমনো আমার জন্যে আনন্দময় ঘটনা। কিন্তু আমি রাজি হই না মাকড়শার ভয়ে। বর্ষাকাল হল মাকড়শাদের ডিম পাড়ার কাল। আশেপাশের যত মাকড়শা আছে সব পেটে ডিম নিয়ে। ইস্টিশনঘরে চলে এসেছে। একটা মাকড়শা ভাতের থালার মতো বড়। চোখ নীল রঙের। অন্ধকারে জ্বলে। এই মাকড়শাটা সোজাসুজি হাঁটে না, কেমন হেলে দুলে হাঁটে।

    আব্দুর রহমান চাচাকে মাকড়শাটা দেখিয়ে দিলাম। তিনি গলা নামিয়ে ফিস ফিস করে গোপন সংবাদ দেবার ভঙ্গিতে বলেছেন, বাবা এইটা মাকড় না। এর নাম ধোকড়। অন্য জাত। এরার শইল্যে সামান্য বিষ আছে।।

    আমি অনুরোধের ভঙ্গিতে বলেছিলাম, কী ভয়ংকর দেখতে। মেরে ফেলেন না।

    রহমান চাচা উদাস ভঙ্গিতে বলেছেন, আমি নিরুপায়। তুমি কেন রেলের বড় সাহেব হুকুম দিলেও মারতে পারব না। আমরা ইসলাম ধর্মের মানুষ। ইসলাম ধর্মে মাকড় মারা নিষেধ। কঠিন নিষেধ। মুসলমান না হইয়া আমি যদি হিন্দু হইতাম মাকড় মাইরা সাফ কইরা দিতাম। হিন্দু ধর্মে সাপ মারায় দোষ আছে, মাকড় মারায় নাই। একেক ধর্মে একেক ব্যবস্থা।

    আমাদের ধর্মে নিষেধ কেন?

    একবার একটা মাকড়শা গুহার মুখে জাল বানাইয়া নবিজির জীবন রক্ষা করেছিল। এই জন্য মাকড়শা মারা নিষেধ। গল্পটা শুনতে চাও?

    চাই।

    তা হইলে বস। কুলি কইরা আসি। গাঁজা খেয়েছি। মুখে দুর্গন্ধ। মুখে দুর্গন্ধ নিয়া নবিজির বিষয়ে কোনো গল্প করলে নেকির বদলে তিনটা বদি লেখা হয়।

    রহমান চাচা কুলি করতে গেলেন। আর ফিরে এলেন না। ফিরে আসার কথাও না। কোন কিছুই তাঁর বেশিক্ষণ মনে থাকে না। তাঁর মাথা আগেই আউলা ছিল। একা একা রাতে বিরাতে মগরা ব্রিজের কাছে বাতি নিয়ে বসে। থাকার জন্যে তাঁর মাথা দ্রুত আউলা হচ্ছে। একদিন আমাকে ডেকে গলা নিচু করে বললেন, আবুটার বাড়ি শ্রীহট্ট।

    আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, কার বাড়ি শ্রীহট্ট?

    রহমান চাচা ফিস ফিস করে বললেন, ঐ যে একটা পুলা মগরা ব্রিজের লাইনের উপরে বইস্যা থাকে। তার বাড়ি এই অঞ্চলে না। বাড়ি শ্রীহট্ট।

    কে বলেছে আপনাকে?

    সে নিজেই বলেছে। প্রথম দিকে পুলাটারে বড়ই ভয় পাইতাম। পরে চিন্তা করলাম ভয় পাইয়া আমার লাভটা কী? এখন তার সাথে টুকটাক কথা হয়।

    সত্যি?

    আমি কি তোমার সঙ্গে মিথ্যা বলতেছি? তোমার সাথে মিথ্যা বললে আমার ফয়দা কী? মিথ্যা কইলে আমার বেতন পঞ্চাশ টেকা বাড়ব না ডিউটি কমবে?

    ছেলেটার সাথে কী কথা হয়?

    বললাম না, টুকটাক কথা। সেও কম কথা কয়, আমিও কম কথা কই। অধিক কথা বলার তো কোনো সার্থকতা নাই।

    ছেলেটার নাম কী?

    নাম জিজ্ঞেস করেছিলাম। নাম বলে না। নাম জিগাইলে খলবলাইয়া হাসে।

    আর কী করে?

    ভেংচি দেয়। পুলাপাইন্যা ভেংচি। মইরা সে ভূত হইছে কিন্তুক পুলাপাইন্যা স্বভাব যায় নাই। পুলাপান ভূত। রেল লাইনের পাথর ঢিল দিয়া নদীতে ফেলে। রেল কোম্পানির ক্ষতি, আমি আবার সেই কোম্পানির নোকর। শেষে একদিন দিলাম ধমক। বললাম, পাথর ফেলবা না এতে লাইন দুর্বল হয়।

    ধমক শুনে সে কী করল?

    পাথর ফেলেন বন্ধ করছে। আসল কথা হইল বুঝাইয়া বলা। মানুষের যেমন বুঝাইয়া বললে শুনে, ভূত প্রেতরেও বুঝাইয়া বললে শুনে।

    মানুষের মাথা হঠাৎ আউলা হয় না। আস্তে আস্তে আউলা হয়। আব্দুর রহমান চাচার মাথা আউলা হতে শুরু করেছে। কোন একদিন পুরোপুরি আউলা। হয়ে যাবে। তখন ভয়ংকর কিছু ঘটবে।

    বাবার ধারণা সব মানুষের মাথায় আউলা গাছের বীজ পোঁতা থাকে। সেই বীজ থেকে ছোট্ট চারা বের হয়। চারা বের হওয়া মাত্র গাছ উপড়ে ফেলে দিতে হয়। অনেকেই সেটা করে না। তারা নানান যত্ন আত্তি করে। চারা গাছ দেখতে দেখতে বড় হয়ে যায়। তারা আউলা হয়ে যায়। আউলা গাছের বীজেরও আবার নানান ধরণ। কোনো কোনো বীজ থেকে আদর যত্ন ছাড়াই চারা হয়। দেখতে দেখতে সেই চারা গাছ ডালপালা ছড়িয়ে ঝাকড়া গাছ হয়ে যায়।

    টগর বুঝলি খুব সাবধান। আউলা গাছের বীজ থেকে চারা গজাচ্ছে কি না খেয়াল রাখবি। শুধু নিজেরটা খেয়াল রাখলে হবে না। অন্যেরটাও খেয়াল। করতে হবে। তোর কি মনে হয় এই বাড়ির কারো কারো মাথায় আউলা গাছের বীজ আছে?

    কুসুম আপুর মাথায় আছে।

    বুঝলি কী করে?

    আমার মনে হয়।

    প্রমাণ ছাড়া এইভাবে কথা বলা ঠিক না। তোর কাছে প্রমাণ আছে রে ব্যাটা?

    না।

    বাবাকে যদিও বলেছি প্রমাণ নেই—আসলে কিন্তু আছে। যে রাতে ঝুম বৃষ্টি হবে সেই রাতে কুসুম আপু অবিশ্যিই ভেতরের বারান্দায় গোসল করবে। সেই গোসল খুবই রহস্যময়। কারণ কুসুম আপু যখন গোসল করে তখন রহিমা ফুপুর চাপা কাঁদো কাঁদো গলা শোনা যায়, ছিঃ কুসুম। ছিঃ।

    কুসুম আপু শান্ত গলায় বলে, এত ছিঃ ছিঃ করবে না। ছিঃ বলার মতো কিছু করছি না।

    রহিমা ফুপু বলেন, কী কেলেংকারী! কেউ যদি দেখে।

    অন্ধকারে দেখবে কী করে? মানুষের চোখে কি টর্চ লাইট ফিট করা?

    তখন রহিমা ফুপুর সত্যিকার কান্না শোনা যায়। রহিমা ফুপু কাঁদেন, কুসুম আপু তাঁকে চাপা গলায় ধমকান।

    খবরদার মা। ফিঁচফিঁচ করবে না। যদি এরকম ফিঁচফিঁচ কর তাহলে ভিতরের বারান্দায় গোসল না করে বাইরে গোসল করব। সত্যি করব।

    ফুপুর কান্না থেমে যায়।

    যে সব মেয়ের মাথায় আউলা গাছের বীজ থেকে চারা হয়ে গেছে শুধু তারাই এমন রহস্যময় গোসল করতে পারে।

    কুসুম আপু এ বছর পরীক্ষা দিচ্ছে কিন্তু দেখে মনে হয় না পড়াশোনা খুব হচ্ছে। তার প্রধান কাজ ভাইয়াকে বিরক্ত করা। ভাইয়া অন্য সবার মতো পড়ে না, একটু অন্যরকম করে পড়ে। তার পড়া হল মুখস্থ করে পড়া। কখগ একটি সমকোণী ত্রিভুজ। এই বাক্যটা সে কুড়িবার পড়বে। তারপর খাতায় লিখবে ঠিকমতো মুখস্থ হয়েছে কিনা দেখার জন্যে। তারপর সে শুরু করবে পরের বাক্যটা।

    কখ এবং কগ তাহার দুইটি বাহু।

    কখ এবং কগ তাহার দুইটি বাহু।

    কখ এবং কগ তাহার দুইটি বাহু।

    জ্যামিতির একটা সম্পাদ্য মুখস্থ করতে তার এক রাত লাগে। মুখস্থ করার সময় হুটহাট করে তার ঘরে কেউ ঢুকলে মুখস্থ জিনিস সব এলোমেলো হয়ে যায়। কুসুম আপু এই কাজটাই করে। হুট করে ঘরে ঢুকে সব এলোমেলো করে দেয়।

    এ বছর না কি A Village Fair রচনাটা আসবেই। তিনরাত ধরে ভাইয়া রচনা মুখস্থ করছে। দুই রাতেই তার একটা রচনা মুখস্থ হয়। কুসুম আপুর জন্যেই তিন রাতেও কিছু হচ্ছে না। চোখ বন্ধ করে ভাইয়া রচনা মুখস্থ করা শুরু করতেই কুসুম আপু সাড়া শব্দ করে দরজার সামনে দিয়ে হাঁটাহাঁটি করা শুরু করে। পরশু রাতেও করেছে। গতকাল রাতেও করেছে। রঞ্জু ভাইয়া বিরক্ত হয়ে বলল, ডিসটার্ব করিস কেন?

    কুসুম আপু অবাক হয়ে বলল, ডিসটার্ব কী করলাম?

    এই যে একশবার দরজার সামনে দিয়ে যাচ্ছিস আসছিস ডিসটার্ব হচ্ছে না?

    তোমার পড়া তুমি পড়বে। ডিসটার্ব হবার কী আছে? পড়ায় মন থাকলে তোমার মাথায় অন্য কিছুই ঢুকত না। কে হাঁটছে, কে কাশছে বুঝতেই পারতে না। তোমার পড়ায় মন নেই। তুমি গত বছর ফেল করেছ। এ বছরও ফেল করবে।

    আমার ফেল আমি করব। তুই কথা বলার কে?

    আমি কথা বলার কেউ না। এবার ফেল করলে আমি তোমাকে রূপার একটা মেডেল দেব। মেডেলে লেখা থাকবে–

    আখলাক হোসেন
    ফেলকুমার

    আমি বুঝতে পারছি ভাইয়া অসম্ভব রেগে যাচ্ছে। রাগ সামলাবার চেষ্টা করছে, পারছে না। বাবার কাছে শুনেছি ছোট বেলায় রেগে গেলেই ভাইয়া চিৎকার করে কাঁদত। এখন কাঁদে না। তবে চোখে পানি টলটল করে। ভাইয়ার রাগ চোখের পানি দেখে সবাই বুঝে ফেলে, শুধু কুসুম আপু মনে হয় বুঝতে পারে না। সে ভাইয়ার রাগ আরো বাড়ানোর চেষ্টা করে।

    কুসুম আপু ভাইয়ার চোখের পানি সম্পূর্ন অগ্রাহ্য করে বিছানায় বসতে বসতে বলল, তারপর ফেল কুমার, ইংরেজি রচনা কয়টা মুখস্ত হয়েছে?

    একটা।

    কোনটা, A Village Fair?

    হুঁ।

    পুরোপুরি মুখস্থ হয়েছে?

    একটু বাকি আছে।

    তোমার কাছ থেকে শুনে শুনে A Village Fair রচনা এ বাড়ির সবার মুখস্থ হয়েছে। একশ টাকা বাজি টগরও এই রচনা মুখস্থ বলে দেবে। আমাদের বাসায় যে কালো একটা বিড়াল আসে। ঐ বিড়ালটারও রচনাটার প্রথম ছয় লাইন মুখস্থ।

    তোর ফালতু কথা শেষ হয়েছে? কথা শেষ হলে যা।

    ফালতু কথা শেষ হয়েছে। কাজের কথা বাকি আছে।

    কাজের কথাটা কী?

    তুমি আমার চুল কেটে দিতে পারবে? লম্বা চুলের জন্যে গরম লাগে ঘুমাতে পারি না। গোসল করলে চুল শুকায় না বিশ্রী লাগে।

    এত সুন্দর লম্বা চুল কেটে ফেলবি?

    হুঁ কেটে ফেলব।

    ভাইয়া বই বন্ধ করে কুসুম আপুর দিকে তাকাল এবং শান্ত গলায় বলল, কুসুম তুই ঢং করছিস কেন? চুল তুই কোনোদিন কাটবি না। লম্বা চুল তোর নিজের খুব পছন্দের। ঢং করার দরকার কী?

    ঢং করছি না। আমি আজ রাতেই চুল কাটব। তুমি কেটে না দিলেও আমার কেটে দেবার লোক আছে। টগর কেটে দেবে। কি রে টগর চুল কেটে দিবি না?

    আমি বললাম, না।

    কুসুম আপু বলল, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে না বল। অন্য দিকে তাকিয়ে না বলছিস কেন?

    আমি কুসুম আপুর চোখের দিকে তাকিয়ে না বলতে যাব তার আগেই রহিমা ফুপুর কাশির শব্দ শোনা গেল। এই কাশির অর্থ তিনি জেগে আছেন। মেয়ে কোথায় যাচ্ছে কী করছে খেয়াল রাখছেন। কেশে কেশে তিনি মেয়েকে অনুসরণ করেন।

    কুসুম আপু দরজার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল, কাশছ কেন মা? ফুপু ক্ষীণ গলায় বললেন, কাশ হয়েছে।

    কুসুম আপু বলল, তোমার সর্দি কাশি কিছুই হয় নি। তুমি আশে পাশেই আছ এটা জানান দেবার জন্যে তুমি কাশছ। পাহারা দেবে না মা। খবর্দার পাহারা দেবে না। যাও ঘুমাতে যাও। যাও বললাম।

    চিৎকার করিস না। তোর ফুপুর ঘুম ভেঙ্গে যাবে।

    তুমি যদি দরজার পাশ থেকে না যাও আমি এমন চিঙ্কার দেব যে বাজার থেকে লোক ছুটে আসবে।

    যাচ্ছি, তুই সব সময় এরকম করিস কেন?

    কুসুম আপু বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। খপ করে আমার হাত ধরে বলল, এই টগর আমার সঙ্গে আয় তো।

    আমি ভীত গলায় বললাম, কোথায় যাব?

    আমি যেখানে নিয়ে যাব সেখানে যাবি।

    ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে ভীত গলায় বলল, যেতে বলছে যা। এমন শক্ত হয়ে বসে আছিস কেন?

    কুসুম আপু আমাকে নিয়ে তার নিজের ঘরে ঢুকল। ভেতর থেকে দরজার ছিটকিনি দিয়ে দিল। আমি লক্ষ করলাম তার শরীর কাঁপছে। নিশ্চয় রাগে কাঁপছে। এত রাগ করার মতো কোনো ঘটনা তো ঘটে নি। কুসুম আপু আমার দিকে তাকাল। হাসল। তারপর খুবই স্বাভাবিক গলায় বলল, টেবিলের ড্রয়ারে একটা কাঁচি আছে। কাঁচিটা নিয়ে আমার চুল কেটে দে। কচকচ করে কাটবি। চুল কাটার কচকচ শব্দ শুনতে খুব ভালো লাগে। পারবি না?

    আমি ভীত গলায় বললাম, পারব না।

    অবশ্যই পারবি। আমি যা বললাম তোকে শুনতে হবে।

    শুনতে হবে কেন?

    কারণ আমি কোনো সাধারণ মেয়ে না। আমার শরীরে একটা বিশেষ চিহ্ন আছে। এই চিহ্ন যে সব মেয়েদের থাকে পৃথিবীর সব পুরুষরা তাদের কথা শুনে।

    বিশেষ চিহ্নটা কী?

    বুকের ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় একটা লাল তিল। দেখতে চাস?

    আমি কিছু বললাম না। চোখ নামিয়ে নিলাম। কুসুম আপুর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে লজ্জা লাগছে।

    মুখে না বললেও তুই যে দেখতে চাস এটা আমি তোর চোখ দেখেই বুঝতে পারছি। আচ্ছা যা তোকে তিলটা দেখাব। আজ না। অন্য আরেকদিন। কিন্তু খবর্দার, শুধু তিলটাই দেখবি। অন্যকিছু দেখবি না। অন্য কোনো দিকে যদি চোখ যায় তাহলে আমি কিন্তু কুরুশ কাটা দিয়ে তোর চোখ গেলে দেব। নে এখন আমার চুল কাটতে শুরু কর। খবর্দার হাত কাঁপাবি না।

    কুসুম আপু কাঁচি এনে আমার হাতে দিল। আমি চুল কাটছি। বন্ধ দরজার ওপাশ থেকে রহিমা ফুপু বলছেন, দরজা বন্ধ কেন? এই কুসুম দরজা বন্ধ কেন? দরজা বন্ধ করে তুই কী করছিস?

    যে সুন্দর সে সব সময়ই সুন্দর। মাথা ভর্তি চুল থাকলেও সুন্দর, চুল না থাকলেও সুন্দর। চুল কাটার পর কুসুম আপুকে কী সুন্দর যে লাগছে। আমি তাকিয়ে থাকি আর অবাক হই। কুসুম আপুর মুখ আগে লম্বা টাইপ ছিল। চুল কাটার পর মুখটা গোল হয়ে গেছে। চোখগুলি হয়ে গেছে টানা টানা। আমার ধারণা সবার কাছেই কুসুম আপুকে সুন্দর লাগছে। শুধু রহিমা ফুপুর লাগছে না। তিনি মেয়ের দিকে তাকালেই মুখ কাঁদো কাঁদো করে বলেন—মেয়েটাকে বান্দরের মতো লাগছে। ছিঃ ছিঃ কী সর্বনাশ। দুই দিন পরে আমি মেয়ের বিয়ে দিব। কোমর পর্যন্ত চুল আসতে লাগবে দশ বছর। আমার কী সর্বনাশ হয়ে গেল।

    কুসুম আপু তার উত্তরে ঝগড়া করে না। খিল খিল করে হাসে এবং বলে, তোমার সর্বনাশ হবে কেন। আমার বিয়ে না হলে আমার সর্বনাশ। তোমার কী?

    চুল ছোট করার পর কুসুম আপুর রাগও মনে হয় পড়ে গেছে। পড়ায় মন বসেছে। এখন আর ভাইয়ার সঙ্গে ঝগড়া করে না। রাতে বৃষ্টি নামলে অদ্ভুত গোসলও করে না। অনেক রাত পর্যন্ত দরজা বন্ধ করে পড়াশোনা করে। দরজা বন্ধ থাকে বলে রহিমা ফুপু ঘুমাতে যেতে পারেন না। বারান্দায় চৌকির উপর বসে থাকেন। হঠাৎ হঠাৎ মা তাকে তার ঘরে ডেকে নিয়ে যান। খুব নিচু গলায় দুজনের মধ্যে কথা হয়। নিশ্চয়ই বিশেষ কোনো কথা, কারণ তাদের কথা শেষ। হবার পর রহিমা ফুপু ঘর থেকে কাঁদতে কাঁদতে বের হন। মা নিজেও কাঁদতে থাকেন। এবং হুট করে তাঁর আধকপালী মাথা ব্যথা শুরু হয়। মা কাউকে। চিনতে পারেন না।

    মার হাসি কান্না কোনোটাকেই আমরা তেমন গুরুত্ব দেই না। খুব ছোট বেলা থেকেই দেখছি মা কারণ ছাড়াই হাসেন। আবার কারণ ছাড়াই কাঁদেন। তার মানে এই না যে তার মাথার ঠিক নেই। সব মানুষ এক রকম হয় না। একেক মানুষ হয় একেক রকম।

    মে মাসের ২৮ তারিখ থেকে এস এস সি পরীক্ষা শুরু হবে। প্রথম দিনে বাংলা। ভাইয়ার পরীক্ষার প্রিপারেশন শেষ। শুধু বাকি ছিল নিন্দালিশের পীর সাহেবের নিজের হাতের লেখা তাবিজ। এই তাবিজও যোগাড় হয়েছে। এই তাবিজের নিয়ম হল যেদিন পরীক্ষা শুরু হবে সেদিন ফজরের নামাজের পর তাবিজটা ডানহাতের কজিতে পরতে হবে। পড়ার সময় তিনবার বলতে হবে— রাব্বি জেদনি এলমান। এর অর্থ হে রব তুমি আমাকে জ্ঞান দাও। যে কদিন তাবিজ বাঁধা থাকবে সে কদিন ফজরের নামাজ কাজা করা যাবে না, মিথ্যা কথা বলা যাবে না, চুল নখ কাটা যাবে না। শেষ পরীক্ষা হয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে স্রোতস্বিনী নদীতে তাবিজটা ফেলে দিতে হবে। তাবিজ ফেলার পরও সব শেষ না। কিছু কাজ বাকি, মাথা কামিয়ে সেই চুলও ঠিক তাবিজ যেখানে ফেলা হয়েছে সেখানে ফেলে দিতে হবে। মাথার কাটা চুল পানিতে ড়ুবে গেলে উদ্দেশ্য সফল ধরে নিতে হবে। আর চুল যদি পানিতে ভেসে থাকে তাহলে সর্বনাশ।

    নিন্দালিশের পীর সাহেব সবাইকে এই তাবিজ দেন না। পীরসাহেবের এক মুরিদের হাতে পায়ে ধরে ভাইয়া তাবিজ জোগাড় করেছে। পরীক্ষা নিয়ে ভাইয়ার মনে সামান্য দুঃশ্চিন্তা ছিল। তাবিজ পাওয়ার পর দুঃশ্চিন্তা দূর হয়েছে।

    ভাইয়ার সিট পরেছে আঠারো বাড়ি হাই স্কুলে। ভাইয়ার ধারণা এটাও আল্লাহপাকের খাস রহমত। আঠারো বাড়ির সেন্টার নকলের জন্যে খুবই বিখ্যাত। এই সেন্টারের শিক্ষকরাও নকলের ব্যাপারে সাহায্য করেন। হঠাৎ কোনো ম্যাজিস্ট্রেট চলে এলে শিক্ষকরা ছুটে গিয়ে ছাত্রদের খবর দেন। যে যার বই খাতা যাতে লুকিয়ে ফেলতে পারে।

    এমন সুযোগ সুবিধার পরেও কী যে হল—পরীক্ষার ঠিক আগের দিন–২৭শে মে, ভাইয়া আমাকে ডেকে শিমুল গাছের নিচে নিয়ে গেল। গলা নিচু করে বলল, সিদ্ধান্ত নিয়েছি পরীক্ষা দিব না।

    আমি কিছু বললাম না। তাকিয়ে রইলাম।

    পরীক্ষা দিয়ে লাভ নাই। মাথার ভেতর সব আউলা হয়ে গেছে। ধর পরীক্ষা দিয়ে যদি পাশও করি—তিন ডাণ্ডার পাশ হবে। তিন ডাণ্ডা বুঝিস তো থার্ড ডিভিশন। এদিকে কুসুম পাবে ফার্স্ট ডিভিশন। এক ডাণ্ডা! লজ্জার ব্যাপার।

    হুঁ?

    এরচে পরীক্ষা না দেয়া ভালো। ঠিক কি না তুই নিজেই বল।

    ঠিক।

    আমি তো থাকব না। তুই খবরটা সবাইকে দিবি।

    তুমি যাচ্ছ কোথায়?

    এখনো কিছু জানি না। সাইকেল নিয়ে বের হই। সাইকেলের চাক্কা যে দিক যাবে-আমিও যাব সেই দিকে।

    ভাইয়ার সাইকেলের ক্যারিয়ারে কাপড়ের একটা ব্যাগ। হ্যান্ডেলে আরেক ব্যাগ। পানির একটা বোতল। ভাইয়ার মাথায় ক্রিকেট খেলোয়াড়দের টুপির মতো টুপি। তাকে দেখাচ্ছে ভূপর্যটকের মতো। শার্টের পকেট থেকে সানগ্লাস বের হয়ে আছে। আমি বললাম, তুমি ফিরবে কবে?

    ভাইয়া উদাস গলায় বলল, কিছুই জানি না। নাও ফিরতে পারি।

    আমি তাকিয়ে আছি। ভাইয়া সাইকেল নিয়ে রেল লাইনের পাশের রাস্তায় পায়ে চলা পথে উঠে পড়ল। দৃশ্যটা দেখতে এত ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে এই সাইকেল চলতেই থাকবে। কোনোদিন থামবে না। ভাইয়া একবার পেছনে ফিরে হাসল। সেই হাসিটাও এত সুন্দর। সুখী মানুষের হাসি।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleউড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    একটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }