Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প122 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৪. রঞ্জু ভাইয়া এক সন্ধ্যায় চলে গিয়েছিল

    রঞ্জু ভাইয়া এক সন্ধ্যায় চলে গিয়েছিল, আর এক সন্ধ্যায় ফিরল। সন্ধ্যাবেলায় চেনা মানুষকেই অচেনা লাগে, তাঁকে আরো অচেনা লাগছে। কেমন লোক-লোক দেখাচ্ছে। নাকের নিচে গোঁফ। গাল ভর্তি দাড়ি। মাথার চুলও অনেক বড় হয়েছে। তার চেহারাই যে লোক-লোক হয়েছে তা না, গা দিয়ে কেমন লোক-লোক গন্ধও বের হচ্ছে।

    আমি দেখলাম অচেনা একজন মানুষের সঙ্গে যে ভাবে কথা বলা হয় বাবা তার সঙ্গে ঠিক সে ভাবেই কথা বলছেন। বাবার গলায় কোনো রাগ নেই। কোনো কৌতূহলও নেই।

    তারপর তুই ফিরলি কী মনে করে? আমি তো ভেবেছিলাম ফিরবি না। আছিস কেমন?

    ভালো।

    দাড়ি কি ইচ্ছা করে রেখেছিস নাকি কামানোর পয়সা নেই?

    ভাইয়া জবাব দিল না। দাড়ি চুলকাতে লাগলেন।

    বাবা বললেন, দাড়িতে উকুন হয়েছে নাকি? টাকা নিয়ে যা, ক্ষৌরি করে আয়। এই চেহারা নিয়ে তোর মার সামনে যাবি না। ভয় পাবে। কয়েকদিন ধরে তার শরীরটা খারাপ করেছে। আর তোর পরিকল্পনাটা কী? এই খানেই। থাকবি না ভূপর্যটনে বের হবি? ভূপর্যটক রমানাথ বিশ্বাস। সাইকেলে বিশ্ব ভ্রমন করেন।

    ভাইয়া ঘাড় সোজা করে দাঁড়িয়ে রইল। বাবা স্টেশন মাস্টারের কোট গায়ে দিতে দিতে বললেন—তোর পড়াশোনা তো হবে না। চেষ্টা করেও লাভ নেই। একটা রিকশা কিনে দেই। সকাল সন্ধ্যা রিকশা টানবি। তোর শরীর তো ভালোই আছে। বাইরে-বাইরে ঘুরে আরো তাজা হয়ে এসেছিস। রোগা পটকা। গরু যেমন ভাটি অঞ্চলের তাজা ঘাস খেয়ে মোটা হয়ে ফিরে। তোকে অবিকল সে রকম লাগছে। রিকশাটানার কাজ ভালো পারবি। কিংবা ইস্টিশনে কুলির কাজও করতে পারিস। বাবা ব্যাটা একই জায়গায় কাজ করব। খারাপ কী?

    বাবার কোনো কথাই কানে যাচ্ছে না এমন ভঙ্গিতে ভাইয়া কলতলায় হাতমুখ ধুতে গেল। আমি ছুটে গেলাম কল চাপতে। ভাইয়াকে এত বেশি অচেনা লাগছে যে আমার খারাপ লাগছে। কাছাকাছি থেকে যদি অচেনা ভাবটা দূর করা যায়।

    রঞ্জু ভাইয়া চোখে মুখে পানি দিতে দিতে বলল, ফিরার কোনো ইচ্ছা ছিল। স্বপ্ন দেখে ফিরলাম। স্বপ্নটা না দেখলে ফিরতাম না।

    কী স্বপ্ন?

    শাদা রঙের একটা হাতির পিঠে মা বসে আছে, গা ভর্তি গয়না। এই স্বপ্নের অর্থ ভালো না। গয়না পরে পালকিতে ওঠা, হাতি-ঘোড়ায় চড়া দেখা খুবই খারাপ।

    ও।

    কুসুম আছে কেমন?

    ভালো।

    কুসুমকেও একদিন স্বপ্নে দেখলাম। মাথার চুল লম্বা হয়ে পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত গেছে। মেয়েদের চুল লম্বা দেখাও খারাপ আবার খাটো দেখাও খারাপ। মেয়েদের মাথা পুরোপুরি কামানো দেখা ভয়ংকর খারাপ। গয়না পরে হাতির পিঠে চড়ার মতো খারাপ। এই ধরণের স্বপ্ন দেখলে সদকা দিতে হয়।

    ভাইয়া কুসুম আপুর সঙ্গে কথা বলতে গেল। কুসুম আপু দরজা বন্ধ করে ঘুমুচ্ছিল। ইদানীং তার ঘুম খুব বেড়েছে। দুপুরে ঘুমুতে যায়—সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুমায়। তার সারারাত ঘুম হয় না বলে এই ঘুমটা নাকি খুব দরকার। কুসুম আপু দরজা খুলল, ভাইয়াকে দেখে একটুও চমকালো না। এমন ভাবে তাকাল। যেন ভাইয়া এই বাড়িতেই ছিল। কোথাও নিরুদ্দেশ হয়ে যায় নি।

    ভাইয়া বলল, আছিস কেমন?

    কুসুম আপু বলল, ভালোই আছি। খারাপ থাকব কেন?

    তোর চুল দেখি আগের মতোই আছে। কাটার পর লম্বা হয় নি।

    লম্বা হবার সুযোগ পায় না। একটু লম্বা হলেই ঘ্যাচ করে আবার কেটে ফেলি।

    চুল লম্বা না হলেও তুই নিজে লম্বা হয়েছিস। এক ইঞ্চি লম্বা অবিশ্যিই হয়েছিস।

    কুসুম আপু হাই তুলতে তুলতে বলল, লম্বা হলে তো ভালোই।

    ভাইয়া কুসুম আপুর খাটে বসতে বসতে বলল, দাড়ি রেখে ফেলেছি। দেখছিস। দাড়ি রাখার হিস্টরিটা শোন-মুরাদনগরে এক পীর সাহেবের বাড়িতে। ছিলাম। পীর সাহেবের দুই ছেলে। পীর সাহেবের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে দুইজন পীরাতি দাবি করে বসেছে। দাফন হয় নাই তারমধ্যে একে অন্যকে লাঠি নিয়ে মারতে যায় এমন অবস্থা। বিরাট দলাদলি। মুরিদানরাও দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। বেশির ভাগ মুরিদান নি-দাড়ি পীরের পক্ষে। নি-দাড়ি বুঝলি তো? দাড়ি নাই। পীর সাহেবের দুই ছেলের একজন মাকুন্দা তার নাম নি-দাড়ি পীর।

    অন্যজনের মুখ ভর্তি সিংহের মতো দাড়ি, সেই জন্যেই নাম দাড়ি পীর।

    কুসুম আপু গল্প শুনে কোনো মজা পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। একটু পর পর হাই তুলছে। গল্পের মাঝখানে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, যাই গোসল করব। বেশি ঘুমিয়েছি তো। শরীর আঠা-আঠা হয়ে আছে। এই আঠার নাম ঘুম-আঠা। ঘুম। আঠায় গা ঘিনঘিন করে।

    খুব মজার কোনো গল্পের মাঝখানে উঠে চলে যাওয়া কুসুম আপুর খুবই পুরানো অভ্যাস। ভাইয়া কুসুম আপুর এই অভ্যাসের সঙ্গে খুবই পরিচিত, তারপরেও ভাইয়া বেশ মন খারাপ করল। আমি বললাম, তারপর কী হয়েছে বল।

    ভাইয়া হতাশ গলায় বলল, আরেক দিন বলব। টায়ার্ড লাগছে। তোদের খবর কী বল?

    খবর ভালো।

    মার শরীর কি বেশি খারাপ নাকি!

    উঁহু বেশি খারাপ না।

    সবাইকে চিনতে পারে?

    হুঁ।

    মার জন্যে মুরাদনগরের পীর সাহেবের তাবিজ নিয়ে এসেছি। আমাবস্যায় পরাতে হবে। পূর্ণিমাতে খুলে ফেলতে হবে।

    কোন পীর তাবিজ দিয়েছে? নি-দাড়ি পীর?

    উঁহু আসল জন। উনার জিন সাধনা আছে। জিনের মাধ্যমে আনায়ে দিয়েছেন। শেষের দিকে আমাকে অত্যাধিক পেয়ার করতেন।

    উনার মৃত্যুর পর জিনগুলির কী হয়েছে?

    পাঁচটা জিন ছিল। সম্পত্তি ভাগের মতো জিন ভাগ করেছেন। দুই ছেলেকে দুটা দুটা করে দিয়েছেন। আর একটাকে আজাদ করে দিয়েছেন। সবচে যেটা ভালো ছিল তাকেই আজাদ করেছেন। তার নাম কফিল।

    তুমি জিন কফিলকে দেখেছ?

    দেখি নাই। তবে কথাবার্তা শুনেছি। খুবই ফ্যাসফ্যাসে গলা। সর্দি-সর্দি ভাব। বাংলায় কথা বলে তারপরও সব কথা বোঝা যায় না।

    মার তাবিজটা কে এনে দিয়েছে? কফিল?

    জানি না। বড় হুজুর শুধু বলেছেন, জিনের মাধ্যমে আনায়েছেন। এর বেশি কিছু বলেন নাই। বড় হুজুর কথাবার্তা খুবই কম বলতেন। তাঁর কথাবার্তা সবই ইশারায়। এক আঙুল তোলা মানে পানি খাবেন। দুই আঙুল তোলার অর্থ পান খাবেন। তিন আঙুল তুললে-তামাক। চার আঙুলে চা, পাঁচ আঙুলে খানা খাবেন। দুই হাতের দশ আঙুল তুললে বুঝতে হবে আজ দিনের মতো কাজকর্ম শেষ। তিনি মরতবায় বসবেন।

    মরতবা কি?

    ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে সাধনা। জিন সাধনা কঠিন জিনিস। চল যাই মাকে দেখে আসি।

    তুমি যাও। আমি যাব না।

    তুই যাবি না কেন?

    চিনতেটিনতে পারে না। খারাপ লাগে।

    মা সন্তানকে চিনতে পারে না, এটা একটা কথা হল। চিনতে ঠিকই পারে। মুখে বলে না।

    ভাইয়া আমাকে সঙ্গে নিয়ে মার ঘরে ঢুকলেন। দরজা জানালা সব বন্ধ বলে ঘর অন্ধকার। ঘরে কেমন ধোঁয়া ধোঁয়া গন্ধ। মনে হচ্ছে ভেজা খড় পুড়িয়ে ধোঁয়া দেওয়া হয়েছে। ধোঁয়া নেই—গন্ধটা আছে। মা শুয়ে ছিলেন, তিনি ধড়মড় করে উঠে বসতে-বসতে বললেন, কে?

    ভাইয়া বলল, মা আমি রঞ্জু।

    মা ক্ষীণ গলায় বললেন, টগরের বাবা ইস্টিশনে গেছেন। আপনে ইস্টিশনে যান।

    ভাইয়া বললেন, মা চিনতে পারছ না। আমি রঞ্জু।

    মা মাথার ঘোমটা দিতে দিতে বললেন, জি আমি চিনতে পেরেছি। আপনে বারান্দায় বসেন। আপনেরে চা দিব।

    ভাইয়া ঘর থেকে বের হলেন। নিচু গলায় বললেন, পীর সাহেবের তাবিজটা দিলেই দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে। শুধু আমাবস্যা কবে এটা খুঁজে বের করতে হবে। লোকনাথ ডাইরেক্টরি পঞ্জিকা লাগবে। আর লাগবে একটা নতুন শাড়ি। নতুন শাড়ি পরায়ে তাবিজটা চুলের গোড়ায় বাঁধতে হবে। যন্ত্রণা আছে।

    ভাইয়া দাড়ি গোঁফ কামাতে নাপিতের কাছে গেলেন। আমিও সাথে গেলাম। অনেক গল্প জমা আছে—এক এক করে সব গল্প শেষ করতে হবে। ভাইয়াকে দেখে আমার খুবই ভাল লাগছে। এত ভালো লাগবে কোনোদিন ভাবি নি।

    ভাইয়া শুধু যে দাড়ি গোঁফ কামাল তা না। মাথাও কামিয়ে ফেলল। মাথা ভর্তি নাকি খুশকি। খুশকির একটাই চিকিৎসা মাথা কামিয়ে ফেলা। মাথা কামানোর সঙ্গে সঙ্গে ভাইয়ার শরীর থেকে লোক লোক ব্যাপারটা চলে গেল। তাকে এখন আর অচেনা লাগছে না। শুধু মনে হচ্ছে অনেক দিন খারাপ। ধরণের জ্বরে ভুগেছিল। জ্বর সেরে শিং মাছের ঝোল দিয়ে পথ্য করছে।

    মাথা কামিয়ে ভাইয়া আমাকে নিয়ে চা খেতে গেল। আগে চাই খেতে পারত না এখন তার নাকি রেস্টুরেন্টে চা খাওয়া অভ্যাস হয়ে গেছে। ঘরের চা। খেতে পারে না। চায়ের অর্ডার দিয়ে গম্ভীর মুখে বলল,

    তোর পড়াশোনার খবর কী রে?

    খবর ভালো।

    স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর একটা দোয়াও শিখে এসেছি। পড়তে বাসার আগে তিনবার বলতে হয়—দোয়াটা কাগজে লিখে এনেছি। এখন থেকে এই দোয়া আমল করবি।

    আচ্ছা।

    আমি আর পড়াশোনা করব না সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পড়াশোনা করলে আমিও এই দোয়া আমল করতাম।

    পড়াশোনা করবে না কেন?

    আমার পড়াশোনার বিষয়ে পীর সাহেব জিনের সাথে সোয়াল জওয়াব করেছেন। জিন বলেছে আমার কপালে লেখা পড়া নাই।

    এখন করবে কী?

    সার্ভিস করব। জিন বলেছে আমার কপালে ভালো সার্ভিস আছে।

    ঐ পীর সাহেবের বাড়িতে সব কিছুই জিনকে জিজ্ঞেস করে হয়?

    সব না গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি জিনকে জিজ্ঞেস করতে হয়। তবে জিন যে সব সময় সত্য কথা বলে তাও না। মিথ্যাও বলে। মানুষ যেমন মিথ্যা বলে জিনও বলে। অনেকের ধারণা ইবলিশ শয়তান ফেরেশতা। এটা সত্য না। পীর সাহেব বলেছেন—ইবলিশ শয়তান হল জিন।

    অনেকদিন পর রাতে ভাইয়ার সঙ্গে ঘুমুতে গেলাম। ভাইয়া সারারাতই গল্প করল। আমার কেন জানি মনে হল সে আসলে অপেক্ষা করছে কুসুম আপুর জন্যে। বাইরে খুট খাট কোনো শব্দ হলেই সে উঠে বসে। আগ্রহ নিয়ে দরজার। দিকে তাকায়। কেউ যখন আসে না তখন বলে—টগর দেখত কুসুম দরজার বাইরে হাঁটাহাঁটি করছে নাকি? আমি দেখে আসি। দরজার বাইরে কেউ নেই শুনে ভাইয়া খুবই অবাক হয়। এমন ভাবে আমার দিকে তাকায় যেন আমার কথা ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না। ভাইয়ার মন ভালো করার জন্যে আমি পীর সাহেবের বাড়ির প্রসঙ্গ তুলি। ঐখানে খাওয়া দাওয়া কি করতে?

    প্রথম দিকে খাওয়া দাওয়ার কষ্ট ছিল। শেষের দিকে হুজুরের সঙ্গে খানা পিনা করতাম। হুজুর কেবল মাছ খেতে পারতেন না। মাছের গন্ধ সহ্য হত না। বাড়িতে মাছ আনা ছিল নিষেধ। মাংসের মধ্যেও সব মাংস খেতেন না। মুরগি খেতেন না। মুরগি নারী জাতির মধ্যে পড়ে এই জন্যে। মোরগ খেতেন। কবুতরের মাংস খেতেন। আর তাঁর পছন্দের জিনিস হল–বাইগুরি।

    বাইগুরিটা কী?

    চড়ুই পাখির মতো পাখি। এক সঙ্গে হুজুরে কেবলার জন্যে পঞ্চাশ ষাটটা রান্না হত। আস্ত পাখি অল্প আঁচে ঘিয়ে ভাজা। পাখিটা মনে হত মাখনের মতো মোলায়েম।

    তুমি বাইগুরি খেয়েছ!

    খাব না কেন? যে সব খাদ্য আল্লাহ্ পাক হালাল করেছেন। সে সব খাদ্য খেলেও পাপ হয়।

    ও আচ্ছা।

    খাওয়া খাদ্য নিয়ে হুজুর কেবলার একটা গল্প আছে। আমার নিজের চোখে দেখা। গল্পটা শুনবি?

    হুঁ।

    কুসুম জেগে থাকলে তাকেও ডেকে নিয়ে আয়–। সেও মজা পাবে। এক গল্প তো তিন চারবার বলতে পারব না। একবারই বলব। যা ডেকে নিয়ে আয়। জেগে আছে কিনা কে জানে। রাত তো কম হয় নাই।

    কুসুম আপু জেগেই ছিল। গল্প শোনার জন্যে তাকে ডাকা হচ্ছে শুনে সে মুখ বাঁকিয়ে বলল, যা ভাগ। পীর সাহেবের বাড়ির জিন-পরীর গল্প শোনার আমার ঠেকা পড়েছে। মাথাছিলাকে ঘুমায়ে পড়তে বল।

    আমি ফিরে এসে মিথ্যা করে বললাম, কুসুম আপু ঘুমায়ে পড়েছে।

    ভাইয়া বিরক্ত গলায় বলল, তাহলে তুমি একাই শোন নিজের চোখে দেখা ঘটনা। অতি চমকপ্রদ। ঘটনাটা হল এক লোক হুজুরে কেবলার জন্যে রান্না করা গোশত নিয়ে এসেছে। হুজুরে কেবলা এই গোশত না খেলে সে মনে কষ্ট পাবে। হুজুর বললেন, বাবা আমি তো মুরগির গোশত খাই না। মুরগি হল মাতা। শ্ৰেণী।

    সেই লোক বলল, মোরগের গোশত।।

    হুজুর বললেন, খাসি মোরগ না তো? খাসি মোরগও আমি খাই না। খাসি মোরগ হল শারীরিক খুঁত বিশিষ্ট প্রাণী।

    লোক বলল, হুজুর পশ্চিমের কাবা ঘর সাক্ষী। খাসি মোরগ না।

    হুজুর বললেন, আচ্ছা নিয়া আসসা। গোশত আনা হল। হুজুরে কেবলা বুকের মাংস ছাড়া কিছু খান না। একটা পিস মুখে দিয়েই থু করে ফেলে দিয়ে বললেন—এটা মুরগির গোশত। মোরগ না। বাবা তুমি কেন আমার সঙ্গে মিথ্যাচার করেছ?

    হুজুরে কেবলা কথা শেষ করেছেন আর তার সঙ্গে সঙ্গে তেলেসমাতি কান্ড। ঐ লোকের শুরু হল শূল বেদনা। কাটা মুরগির মতো ছটফট করে আর বলে—হুজুর আমারে মাফ দেন। আমার শইল জইল্যা যাইতাছে।।

    তারপরে?

    তারপর আর কি? হুজুর পানি পড়ে সেই পড়া পানি তাঁর গায়ে ছিটায়ে দিলেন। সে উঠে বসল। আশ্চার্য ঘটনা না?

    হু আশ্চার্য।

    শেষের দিকে হুজুরে কেবলা আমাকে কি যে পেয়ার করতেন। কোনো মানুষের তাঁর শরীরে হাত দেয়ার নিয়ম ছিল না। শুধু আমি দিতাম। তাঁর ঘুমাবার আগে পিঠ মালিস করতাম। তারও অনেক কায়দা—শুধু আঙুল দিয়ে টিপতে হত। বেশি জোরেও না। আবার বেশি আস্তেও না। উনার পা টিপার অনুমতি পেয়েছিলাম শুধু আমি আর উনার বড় ছেলের ঘরের নাতনী। সালমা। মোসাম্মাত সালমা বানু। ঐ মেয়েরে দেখলে মাথা ঘুরে পড়ে যাবি। কী যে রূপ! পরীস্থানের পরীরও এত রূপ থাকে না।

    কুসুম আপুর চেয়েও সুন্দর?

    খবরদার কুসুমকে এটা বলিস না। মনে কষ্ট পাবে।

    বলব না।

    হুজুরে কেবলার মনে-মনে ইচ্ছা ছিল সালমার সঙ্গে আমার বিবাহ দিবেন। সরাসরি আমাকে কিছু বলেন নাই। আকারে ইঙ্গিতে বলেছেন।

    তোমার ইচ্ছা ছিল না। তাই না?

    বিবাহ কারো ইচ্ছা অনিচ্ছার উপর নির্ভর করে না। পাঁচটা জিনিস আল্লাহ। পাক নিজের হাতে রেখে দিয়েছেন- হায়াত, মউত, রিজিক, ধনদৌলত আর বিবাহ। বিবাহটা আল্লাহর ইচ্ছার উপর। এখানে মানুষের ইচ্ছা বা মানুষের চেষ্টার কোনো দাম নাই। মানুষ নানান ভাবে নিজের পছন্দের মেয়ে বিবাহ করার চেষ্টা করে আর সাত আসমানের উপর বসে আল্লাহ্ পাক মুচকি হাসি। হাসেন আর বলেন—মূখ মানব। তোমাদের তো বলে দিয়েছি বিবাহটা আমি। আমার হাতে রেখে দিয়েছি। তারপরেও এত ফালাফালি করতেছ কেন?

    গল্প করতে করতে ফজরের আজান হল। জুম্মঘর ইস্টিশন থেকে অনেক দূরে, কিন্তু আজান পরিষ্কার শোনা গেল। ভাইয়া বিছানা থেকে নামতে নামতে বলল, ফজরের নামাযটা পড়েই ফেলি। অনেক দিনের অভ্যাস। তুই ঘুমায়ে পড়।

    আমি ঘুমুতে গেলাম না। ভাইয়ার সঙ্গে কল ঘরে গেলাম। ভাইয়া অজু করতে করতে বলল, ফজর ওয়াক্তে ঘুম থেকে উঠে নামায পড়ে কেউ যদি বাইরে হাঁটাহাঁটি করে তাতেও সোয়াব আছে। এই সময় আল্লাহ্ পাক বেহেস্তের। সব দরজা খুলে দেন। বেহেশতি হাওয়া শরীরে লাগে। একবার যাদের শরীরে বেহেশতি হাওয়া লাগে তাদের দোজখ নসিব হয় না।

    ভাইয়া অজু করছে। আমি তার পাশে বসে শরীরে বেহেশতি হাওয়া লাগাচ্ছি। হাওয়াটা খুবই আরামদায়ক—ঠাণ্ডা-ঠাণ্ডা হাওয়া। শরীর সামান্য শিরশির করে।

    আমি হঠাৎ করে বললাম, ভাইয়া কুসুম আপুর কোথায় বিয়ে এটা কি। আল্লাহ্ নির্ধারণ করে রেখেছেন?

    ভাইয়া বললেন, অবশ্যই। এই বিষয়ে মানুষের কোনোই হাত নেই। তুই তার চেয়ে বয়সে কত ছোট কিন্তু আল্লাহ্ পাকের আদেশ থাকলে তোর সঙ্গেও বিবাহ হতে পারে। রহিম বাদশা আর রূপবানের বিবাহ হয়েছিল না। রূপবান ছিল পূর্ণ যুবতী আর রহিম বাদশা দুধের শিশু। রূপবান রহিম বাদশাকে কোলে। নিয়ে বেড়াত।

    আমি বললাম, আবার জাপানি ইঞ্জিনিয়ারের সাথেও কুসুম আপুর বিয়ে হতে পারে তাই না? ভাইয়া হতভম্ব হয়ে বলল, জাপানি ইঞ্জিনিয়ার কে? আমি জবাব দিলাম না। অনেকক্ষণ থেকেই ভাইয়াকে চমকে দিতে ইচ্ছা করছিল। এখন চমকে দিলাম। ভাইয়া গম্ভীর গলায় আবার বলল, জাপানি ইঞ্জিনিয়ারটা কে?

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleউড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    একটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }