Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প122 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৫. রেলের খুব বড় অফিসার

    রেলের খুব বড় অফিসার আসবেন। মেম্বার নাকি কী যেন বলে। মগরা ব্রিজ নিয়ে কী এক তদন্ত নাকি শুরু হয়েছে। বড় অফিসার সরজমিনে দেখবেন। জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। সকালে এসে সারাদিন থাকবেন, বিকেলে চলে যাবেন। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করবেন। তবে খাওয়া দাওয়া নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হবার কিছু নেই। তিনি সেলুনে করে আসবেন। সেই সেলুনে খাবার ঘর আছে। বাবুর্চি আছে। রান্নাবান্না বাবুর্চি করবে।

    সেলুন আমি আগে কখনো দেখি নি। সেলুন দেখতে পাব সেই উত্তেজনায় আমার অস্থির লাগতে লাগল। যে সাজ-সাজ রব পড়েছে সেটা দেখতেও ভালো লাগছে। রহমান চাচার প্রধান কাজ হয়েছে-ইস্টিশনের চারিদিকের জংলা পরিষ্কার করা। রহমান চাচা লম্বা এক ধারাল বাঁকা দা নিয়ে জংলা সাফ করেন আর বিড় বিড় করে বলেন—লাভ নাই। লাভ লোকসান কিছুই নাই। আমি কাছে গেলে সরু চোখে বলেন, কাছে আসবা না দায়ের কাম করতাছি কাছে আসবা না। যারা দা কুড়ালের কাম করে তারার মাথা ঠিক থাকে না। এই দেখবা গাছ কাটতাছে এই দেখবা মাইনষের মাথা বরাবর কোপ।

    রহমান চাচার কথাবার্তার এখন আর কোনোই ঠিক ঠিকানা নেই। মাথা মনে হয় পুরোপুরিই গেছে। বাবা বলে দিয়েছেন—রেলের সাহেব আসার আগে। আগে রহমানকে দূরে কোথাও পাঠায়ে দিতে হবে। কখন কী বলে ফেলে তার নাই ঠিক।।

    বড় সাহেবের আগমন উপলক্ষে আমাদের বাড়ি ঘরও ঠিক ঠাক করা হচ্ছে। বাড়ির সামনের জংলা সাফ করানো হচ্ছে। বড় সাহেবদের মেজাজ মর্জি তো আগে ভাগে বোঝা যায় না। হঠাৎ হয়তো বলে বসলেন—ইস্টিশন মাস্টার সাহেব, চলুন দেখি আপনার কোয়ার্টার দেখে আসি। বাবা যখন বারহাট্টা স্টেশনের স্টেশন মাস্টার তখন একবার রেলের খুব বড় অফিসার এসেছিলেন। কথা বার্তা নেই হঠাৎ তিনি বললেন, স্টেশন মাস্টার সাহেব চলুন তো আপনি কোথায় থাকেন দেখে আসি। আর এক কাপ চাও খেয়ে আসি। আপনার। বাড়িতে চায়ের ব্যবস্থা আছে না?

    বাবা হাত কচলাতে কচলাতে বললেন, জি স্যার আছে।

    সেই সময় আমাদের বাসায় চা খাবার চল ছিল না। চায়ের কাপ পিরিচ কিছুই নেই।

    মানুষের জীবনে যেমন স্মরণীয় ঘটনা থাকে। বাবার জীবনে স্মরণীয় ঘটনা বুঝি এই একটাই। তিনি কতবার যে কতজনকে এই গল্প বলেছেন—বুঝলেন ভাই সাহেব। মানুষ সাত হাত পানির নিচে যায়। আমি চলে গেলাম পঁচিশ হাত পানির নিচে। বড় সাহেবকে বলেছি চায়ের ব্যবস্থা আছে। উনি বাসায় চলে এসেছেন, সঙ্গে উনার পি. এ. চায়ের জন্যে অপেক্ষা করছেন। আমার ঘরে না আছে চা-চিনি-দুধ, না আছে চায়ের কাপ। আমি এক মনে দোয়া ইউনুস পড়তেছি আর আল্লাহ্ পাককে বলতেছি— আল্লাহ্ পাক আমাকে উদ্ধার কর। শেষে আল্লাহ্ পাক উদ্ধার করলেন। সেই দিন প্রথম বুঝলাম, এক দিলে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ্ বান্দাকে সেই জিনিস দেন। এই দেখেন। ঘটনা বলতে গিয়ে গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেছে। দেখেন হাত দিয়ে দেখেন। … … …..

    বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় সেলুনে করে বড় সাহেব এলেন। সেলুনটা বাইরে থেকে তেমন কিছু না, রেলের কামরার মতো কামরা শুধু জানালায় পর্দা দেয়া। যে বড় সাহেব কামরা থেকে নামলেন, তাঁকে দেখে খুবই হতাশ হলাম। গাট্টাগোট্টা বেটে একজন মানুষ। মুখ ভর্তি পান। চক্রা বা একটা হাফ সার্ট পরেছেন, সেই সার্ট ফুড়ে তার ভুড়ি বের হয়ে আসছে। মানুষ যখন হাটে তখনি শুধু তার ভুড়ি কাঁপে। এই ভদ্র লোকের ভুড়ি সারাক্ষণই কাঁপে। আমি তার ভুড়ির দিকেই তাকিয়ে রইলাম।

    খুব যারা বড় সাহেব তারা কখনো রাগী হন না। রাগ হলেও এরা রাগ চেপে মুখ হাসি-হাসি করে রাখে। ইনি সেলুন থেকে নেমেই রাগারাগি হই-চই করতে লাগলেন। কার উপর রাগ করছেন সেটাও পরিষ্কার না। একবার মনে। হচ্ছে তার সঙ্গে যারা এসেছেন তাদের উপর রাগ করছেন, আবার মনে হচ্ছে স্টেশনে তার সামনে যারা দাঁড়িয়ে আছেন তাদের উপর রাগ করছেন। কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। আমি রহমান চাচার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। রহমান চাচা গলা নামিয়ে ফিস ফিস করে বললেন, মদ খাইতে-খাইতে আইছে তো। মদ মাথাত উইঠ্যা এই সমস্যা। এখন কী করে কিছুই ঠিক নাই। গাঞ্জার নিশা এই জন্যই সেরা নিশা। গাঁজা খাইয়া কেউ উল্টা পাল্টা কিছু করছে এইটা কোনোদিন শুনবা না।

    আমি বললাম, মদ খেতে খেতে এসেছে কে বলল?

    রহমান চাচা গলা আরো নামিয়ে বললেন, চেহারা দেইখ্যা বোঝা যায়। কালা মানুষ, লাল টুকটুক ভাব ধরেছে দেখ না। আর সেলুন কারে কেউ আইব কিন্তু মদ খাইব না এই জিনিস আমি আমার জন্মে দেখি নাই। রেলে কাম করতেছি কম দিন হয় নাই। সেলুন কারের অনেক হিস্টোরি জানি। একবারের। ঘটনা শোন—ছিঃ ছিঃ খুবই শরমের হিস্টোরি। থাউক আইজ না। আরেকটু শেয়ানা হও তখন বলব।

    রহমান চাচাকে আজ অদ্ভুত দেখাচ্ছে। বড় সাহেব আসা উপলক্ষে চুল কাটিয়েছেন। ইস্ত্রী করা খাকি সার্ট প্যান্ট পরেছেন। নতুন এক জোড়া কাপড়ের জুতো কেনা হয়েছে। অন্য সময় কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন। আজ পাকা। বেতের লাঠির মতো সোজা। বাবার ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। বাবা খানিকটা কুঁজো হয়ে গেছেন। বাঁ হাত সারাক্ষণ পেটের উপর দিয়ে রেখেছেন বলে তাঁকে খুবই অদ্ভুত দেখাচ্ছে। তিনি বাঁ হাত পেটের উপর দিয়ে রেখেছেন কেন তার কারণটা তখনো জানি না। তাঁর বিনয় প্রকাশের একটা অংশ হতে পারে। কিংবা কোটের একটা বোতাম হয়তো খুলে পড়ে গেছে। পেট ব্যথা করছে। নাতো। কিছু দিন হল হঠাৎ-হঠাৎ বাবার প্রচন্ড পেট ব্যথা হচ্ছে। কে যেন বলেছে চায়ের চামচে দু চামচ কোরামিন খেলে পেট ব্যথা কমে। বাবা নিজে নিজে সেই চিকিৎসাও করছেন। আজকের ঘটনা কী? বড় সাহেব চলে যাবার পর বাবাকে জিজ্ঞেস করে জানতে হবে।

    বড় সাহেবের বিকেলে যাবার কথা। তিনি দুপুর বারোটা পঁচিশ মিনিটে চলে গেলেন। মগরা ব্রিজের কাছে কিছুক্ষণ দাঁড়ালেন। জাপানি ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললেন। তারপর ক্রেনের ড্রাইভার জামশেদকে কানে ধরে কুড়িবার উঠবোস করবার হুকুম দিলেন।

    এই অংশটায় সবাই মজা পেল। সবচে মজা পেলেন বড় সাহেব নিজে। অনেক্ষণ পর তার মুখে হাসি দেখা গেল।

    আঠারোবাড়ি স্টেশনের স্টেশন মাস্টার সাহেব বড় সাহেবের জন্যে কুড়িটা কই মাছ পাঠিয়েছিলেন। এই সময়ে এত বড় কই মাছ পাওয়ার কোনোই কারণ নেই। তিনি কীভাবে যোগাড় করলেন কে জানে। বড় সাহেব যেহেতু চলে গেছেন কুড়িটা কই মাছ আমাদের বাসায় চলে গেছে। আমাকে পাঠানো হল। জাপানি ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসতে। দুপুরে যেন। আমাদের সঙ্গে কই মাছের ঝোল খান। কুসুম আপু বলল, এই আমিও তোর সঙ্গে যাব। একটা ছাতি যোগাড় কর। রোদের মধ্যে হাঁটতে পারবো না। তুই আমার মাথার উপর ছাতি ধরে থাকবি।।

    তোমার যাবার দরকার কী?

    উনার সঙ্গে আমার গোপন কিছু কথা আছে।

    কুসুম আপুকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি। বৃষ্টি হচ্ছে না। আকাশ মেঘলা। তারপরেও আমি কুসুম আপুর মাথার উপর ছাতি ধরে আছি। পথ কাদা হয়ে আছে। আমি বললাম, রেল লাইনের স্লীপারের উপর পা দিয়ে দিয়ে হাঁটবে?

    কুসুম আপু বলল, না। লম্বা-লম্বা পা ফেলা মেয়েদের জন্যে নিষেধ।

    কেন?

    মেয়েদের অনেক ব্যাপার আছে। তুমি বুঝবি না। বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখতো মাথা ছোলা ফেলকুমার বসে আছে কিনা।

    আমি বললাম, হুঁ।

    ফেলকুমার কি সিগারেট টানছে?

    হুঁ।

    খবরদার ওদিকে তাকাবি না। তাকালেই ডাকবে।

    না তাকালেও ডাকবে।

    ডাকুক খবরদার জবাব দিবি না। গট গট করে আমার পেছন পেছন হাঁটতে থাকবি।

    আচ্ছা।

    ভাইয়ার দিকে আমি তাকাচ্ছি না, কিন্তু বুঝতে পারছি ভাইয়া অবাক হয়ে আমাদের দেখছে। এতই অবাক হয়েছে যে সিগারেট টানতে ভুলে গেছে। সিগারেট গেছে নিবে। রহমান চাচার কথা অনুসারে বাইস্যা মাসে সিগারেট হয়ে যায় বিড়ির মতো। একটা টান সামান্য দেরি করে দিলেই সিগারেট যায় নিবে। আমাদের দেখার পর ভাইয়া নিশ্চয়ই সময়মতো সিগারেট টান দেবে না। দেরি হবেই।

    টগর তোরা কই যাচ্ছিস?

    আমি না শোনার ভান করলাম।

    এই টগর এই।

    আমি কুসুম আপুর অন্য পাশে চলে এলাম। ভাইয়া সাইকেলের ঘন্টা বাজাচ্ছে। কুসুম আপু বলল, খবরদার পেছনে তাকাবি না। পেছনে তাকালে খেজুর কাঁটা দিয়ে চোখ গেলে দেব।

    ভাইয়া সাইকেল নিয়ে চলে আসছে।

    আসুক আসলে দেখা যাবে। কথা যা বলার আমি বলব। তুই চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবি।

    ভাইয়া ঝড়ের গতিতে সাইকেল নিয়ে উপস্থিত হল। তার মুখ রাগে থমথম করছে। তাকে ভয়ংকর দেখাচ্ছে। ভাইয়া কুসুম আপুর দিকে তাকিয়ে বলল, কুসুম যাচ্ছ কোথায়?

    কুসুম আপু অবহেলার ভঙ্গিতে বলল, মগরা ব্রিজে।

    ঐখানে কী?

    ঝপাং খেলা খেলব। দুটার সময় চিটাগাং মেইল আসবে। তখন ঝাঁপ দিব।

    পাগল নাকি?

    পাগল হব কী জন্যে। তুমি ঝপাং খেলা খেলতে পার আমি পারি না। আমিও পারি।

    এইসব মেয়েদের খেলা না।

    ছেলেরা যেসব খেলা খেলতে পারে। মেয়েরাও পারে। তবে কিছু কিছু খেলা শুধু মেয়েরা খেলতে পারে। ছেলেরা পারে না।

    কুসুম বাসায় চল।

    না।

    না মানে? তোকে চুল ধরে টেনে নিয়ে যাব। এই টগর আমার সাইকেলটা ধরতো।

    কুসুম আপু হতাশ ভঙ্গিতে বলল, ঝপাং খেলা খেলতে যাচ্ছি না। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব আমাকে আর টগরকে কফি খাবার নিমন্ত্রণ করেছেন। কফি খেতে যাচ্ছি।

    কফি খাবার দাওয়াত করল কেন?

    সুন্দর মেয়ে দেখলে ছেলেদের মাথা ঠিক থাকে না। সুন্দরী মেয়েদের গায়ের বাতাস খাবার জন্যে ছেলেরা করে না এমন জিনিস নাই। তুমি পেছনেপেছনে আসছ কেন? তোমাকে তো আর কফি খেতে বলে নি।

    ভাইয়া সাইকেল হাতে দাঁড়িয়ে পড়ল। আমরা এগিয়ে গেলাম।

     

    জাপানি ইঞ্জিনিয়ার আমাদের দেখে কী করবেন তাই যেন বুঝতে পারছেন। না। প্রতিটা কথা দুবার তিনবার করে বলছেন। অকারণে হাসছেন। দেখার মতো দৃশ্য।

    কুসুম তুমি আসবে চিন্তাই করি নি। ইশ তোমার শাড়িটা কাদায় মাখামাখি। হয়ে গেছে। শাড়িটা ধুয়ে নেবে? দাঁড়াও পানি দিচ্ছি। গুঁড়া সাবান আছে। গুঁড়া সাবান ছিটিয়ে দাও।

    কুসুম আপু বলল, আপনাদের বড় সাহেব এসে কী বলল?

    আর উনার কথা বলবে না। হাফ মেড একটা মানুষ। অকারণে চিঙ্কার চেঁচামেচি। একে শাস্তি। ওকে শাস্তি।

    আপনাকেও নাকি শাস্তি দিয়েছে?

    জাপানি ইঞ্জিনিয়ার হতভম্ব গলায় বললেন, এইসব তুমি কী বলছ। আমাকে শাস্তি দেবে কেন?

    কুসুম আপু নিচু গলায় বলল, চারিদিকে এরকম রটনা। আপনাকে নাকি, আপনাকে নাকি………..

    আমাকে নাকি কী?

    আপনাকে নাকি পঁচিশবার কানে ধরে উঠবোস করিয়েছেন।

    চারিদিকে এই রটনা?

    জি। সেই জন্যেই আপনাকে দেখতে এসেছি। আমি টগরকে বললাম, উনি নিশ্চয়ই খুব মন খারাপ করেছেন। চল উনাকে সান্ত্বনা দিয়ে আসি।

    খুবই ভুল কথা শুনেছ। কথাটা যে তোমরা বিশ্বাস করেছ সেটা ভেবেই আমি অবাক হচ্ছি। উনি শাস্তি দিয়েছেন জমশেদকে। ক্রেনের ড্রাইভার। সে ক্রেনে বসে ছিল। সেখান থেকে পানের পিক ফেলেছে। পিক পড়েছে বড় সাহেবের প্যান্টে। তখন তিনি এই শাস্তি দিয়েছেন।

    অন্যদিন জায়গাটা লোকজনে গমগম করত। আজ পুরোপুরি ফাঁকা। মনে হচ্ছে জাপানি ইঞ্জিনিয়ার ছাড়া আর কেউ নেই। চটের বস্তা পানিতে ফেলার জন্যে বিশ পঁচিশ জন কুলি সব সময় থাকতো। আজ তারাও নেই। কুসুম আপু। বলল, আপনার লোকজন সব কোথায়?

    জাপানি ইঞ্জিনিয়ার চোখ মুখ কুঁচকে বললেন, বিরাট ঝামেলা হয়ে গেছে। বড় সাহেব চলে যাবার পরই জমশেদ বলল, সে চাকরি করবে না। ব্যাগ গুছিয়ে রওয়ানা। তার অপমানের বিচার যদি হয় তাহলেই সে চাকরিতে জয়েন করবে। বিচার না হলে–না। এরা হল লিডার টাইপ লোক। তার দেখাদেখি ফোরম্যান ব্যাগ গুছিয়ে ফেলল। ফোরম্যানের সঙ্গে তিন এসিস্টেন্ট। কাজেই আমি কাজ বন্ধ করে কুলিদের ছুটি দিয়ে দিলাম।

    ব্রিজের কাজ বন্ধ?

    এ ছাড়া উপায় কী? বড় সাহেব যে ভেজাল লাগিয়েছে এই ভাজাল কবে মিটবে কে জানে। সরকারি ব্যাপার তো তদন্ত কমিটি বসবে। মিটিং হবে। ফাইল চালাচালি হবে। সরজমিনে তদন্ত করার জন্যে সেলুন কারে করে রেলওয়ে বোর্ডের মেম্বাররা আসবেন। তদন্ত রিপাের্ট বের না হওয়া পর্যন্ত সব কাজ থাকবে বন্ধ। এবং একদিন ঝুপ করে পুরো ব্রিজ নদীতে পড়ে যাবে। ব্রিজ কেন পড়ল সেই নিয়ে আবার তদন্ত কমিটি বসবে। আবার মিটিং। আবার ফাইল চালাচালি।

    আপনার তো মজাই হল—কাজ নেই।

    কাজ থাকাটাই হল মজার। কাজ না থাকা কোনো মজার ব্যাপার না। কাজ করা মানুষকে একদিন কাজ ছাড়া বসিয়ে রাখ তার মাথা নষ্ট হয়ে যাবে।

    আপনার মাথা কি নষ্ট হয়ে গেছে?

    এখনো যায় নি। তবে যাবে। আজ দুপুরে খাব কী সেটা পর্যন্ত ঠিক নেই। বাবুর্চিও চলে গেছে।

    কুসুম আপু বলল, আজ দুপুরে আমাদের সঙ্গে খাবেন। আপনার কই মাছ। খাওয়ার দাওয়াত। আমরা আপনাকে নিতে এসেছি।

    জাপানি ইঞ্জিনিয়ার হাসি মুখে বললেন, তোমরা নিতে না এলেও আমি তোমাদের বাসায় চলে যেতাম। অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে আমাকে মনে হয় ঘন-ঘন

    তোমাদের ওখানেই খেতে হবে। তোমরা একটু দাঁড়াও আমি কাপড়টা বদলে আসি। কুসুম তাঁবুর ভেতর কেমন দেখা যায় তুমি দেখতে চাও?

    কুসুম আপু বলল, আর একদিন দেখব। আজ না।

    আজ না দেখাই ভালো। খুবই এলোমেলো হয়ে আছে। গুছিয়ে রেখে তোমাকে খবর দেব।

    ইঞ্জিনিয়ার সাহেব তাঁবুর ভেতর ঢুকে গেলেন। আর তখনি চিটাগাং মেইলের হুইসেল শোনা গেল। কুসুম আপু হুইসেল শুনে হঠাৎ খুবই চমকে গেল। তার মুখ চোখ অন্য রকম হয়ে গেল। কুসুম আপু গলা নামিয়ে বলল, টগর শোন, আমার ঝপাং খেলা খেলতে ইচ্ছে করছে। আমি মগরা ব্রিজে উঠছি। খবর্দার ভয় পাবি না।

    ঠিক সময়ে আমি পানিতে ঝাঁপ দেব।

    আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। কুসুম আপুর সঙ্গে এখন কোনো রকম তর্ক করা বৃথা। তাকে দুহাতে ঝাপটে ধরে রাখার চেষ্টা করা যায়। তাতে লাভ হবে না। একা আমি তাকে আটকাতে পারবো না। জাপানি ইঞ্জিনিয়ার পারবেন। আমি ছুটি গেলাম তাঁবুর দিকে।

    কুসুম আপু হেলতে দুলতে ব্রিজের উপরে রেলের স্লীপারে পা রেখে হাঁটছে। বাতাসে তার শাড়ির আঁচল উড়ছে। মাথার চুল উড়ছে। তার মুখ হাসিহাসি। বাঁকের আড়াল থেকে ট্রেন বের হয়ে এসেছে। ট্রেনের ড্রাইভার এখনো দেখতে পায় নি যে ব্রিজের উপর একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখতে পেলে ক্রমাগত হুইসেল দিত।

    জাপানি ইঞ্জিনিয়ার প্রথমে কিছুক্ষণ বুঝতেই পারলেন না যে কুসুম আপু ব্রিজের উপর। হঠাৎ বুঝতে পেরে হতভম্ব গলায় বললেন, কুসুম তুমি কী করছ?

    কুসুম আপু চেঁচিয়ে বলল, কিছু করছি না। হাঁটছি।

    দৌড়ে চলে এসো। দৌড়ে আস।

    না।

    তোমার কি মাথা খারাপ নাকি। এই কুসুম এই।

    কুসুম আপু শব্দ করে হাসল। এখন সে আর রেল স্লিপারে পা দিয়ে হাঁটছে। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন—মেয়েটি পাগল? Insane?

    ট্রেনের ড্রাইভার এখন কুসুম আপুকে দেখতে পেয়েছে। ক্রমাগত হুইসেল বাজিয়ে যাচ্ছে। হুইসেলের সঙ্গে টুনটুন করে ঘন্টাও বাজছে।

    ইঞ্জিনিয়ার সাহেব ভাঙ্গা গলায় ডাকলেন এই–কুসুম! এই!

    কুসুম আপু বলল, আপনি এসে আমাকে নিয়ে যান।

    আমি এতক্ষণ খুব ভয় পাচ্ছিলাম। কুসুম আপু দাঁড়িয়ে পড়ার পর আর ভয় পাচ্ছি না। কারণ কুসুম আপু খুব হিসেব করে দাঁড়িয়েছে। দুটা স্প্যানের ঠিক মাঝখানে। এখান থেকেই নদীতে ঝাঁপ দেয়া নিরাপদ। আপু বার বার নদীর দিকে তাকাচ্ছে এর অর্থ হল—ঝাঁপ দেবার আগে হিসেব করে নেয়া। দুই হাত উঁচু করে রাখার কারণও একটাই। ঝাঁপ দেবার আগে দুহাত উঁচু করতে হয়।

    ট্রেন ব্রিজের উপর উঠে পড়েছে। কুসুম আপুর আর দেরি করা উচিৎ না। কেন দেরি করছে। ঝপাং খেলার নিয়ম হচ্ছে ট্রেনের ইঞ্জিনের দিকে কখনো না তাকানো। ইঞ্জিনের দিকে চোখ পড়লেই নাকি হাত পা শক্ত হয়ে যায়। কুসুম আপু তাকিয়ে আছে ইঞ্জিনের দিকেই।

    এক সময় ইঞ্জিন কুসুম আপুকে আড়াল করে ফেলল, তারপর ব্রিজ পার হয়ে গেল। আমি মগরা নদীর দিকে তাকিয়ে আছি। কুসুম আপুকে দেখতে পাচ্ছি—সাঁতার কেটে তীরের দিকে আসার চেষ্টা করছে। নদীতে প্রবল স্রোত। তার যে বেশ কষ্ট হচ্ছে তা দেখে বোঝা যাচ্ছে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleউড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    একটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }