Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প122 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৬. বাবা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছেন

    বাবা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছেন। যেন ভাইয়াকে চিনতে পারছেন না। তার চেহারা চেনা চেনা লাগছে। কোথায় দেখেছেন মনে করতে না পারায় একটু যেন বিব্রত।

    ভাইয়াকে অবশ্যি খুবই চেনা লাগছে। মাথায় বারান্দা দেয়া টুপি পরায় ভালো দেখাচ্ছে। ছোলা মাথা ঢাকা পড়েছে। গায়ের খাকি পােশাকটাও খুব। মানিয়েছে। সবচে মানিয়েছে পায়ের লাল রঙের কাপড়ের জুতো। খাকি পােশাক পরার জন্যেই হয়তো ভাইয়া অতিরিক্ত গম্ভীর হয়ে আছে। কারো চোখের দিকে সরাসরি তাকাচ্ছে না। খাকি পােশাক পরা মানুষ কারোর চোখের দিকেই সরাসরি তাকায় না। দুই ভুরুর মাঝখানে তাকায়। এটা আমার কথা না, রহমান চাচার কথা। তিনি যৌবনে আনসার বাহিনীতে ঢুকেছিলেন। সেখানেই নাকি। তাকে শেখানো হয়েছে দুষ্ট লোকজনদের চোখে চোখে না তাকিয়ে দুই ভুরুর মাঝখানে তাকাতে৷

    বাবা চাপা গলায় বললেন—ব্যাপার কী সং সেজেছিস কেন?

    ভাইয়া বলল, সার্ভিস পেয়েছি।

    বাবা বললেন, কোন বেকুব তোকে চাকরি দিল?

    এনজিওর চাকরি।

    চাকরিটা কী?

    গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে স্যানিটারি পায়খানা ফিটিং হবে। তার তদারকি। এ ছাড়াও আরো ডিউটি আছে।

    বাবা ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেললেন। হতাশ গলায় বললেন, শেষ পর্যন্ত্র পাইখানার মিস্ত্রি? আমার কোনো অসুবিধা নাই। অসুবিধা হবে তোর।

    ভাইয়া গম্ভীর গলায় বলল, কী অসুবিধা?

    তোর বিয়ে শাদি হবে না। পাত্রী পক্ষের কাছে খবর যাবে জামাই গু ইঞ্জিনিয়ার। গু ইঞ্জিনিয়ারকে বিয়ে করতে কোনো মেয়ে রাজি হবে না। মেয়েদের মধ্যে শুচিবায়ু বেশি থাকে।

    আমার বিয়ে নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।

    চাকরি যেমন যোগাড় করেছিস, বিয়েরও ব্যবস্থা হয়েছে? আলহামদুলিল্লাহ। দুটা বড় খবর শুধু মুখে দিলি। মিষ্টি কিনে আন। বাতাসা কিনে আন। সবাইকে একটা করে বাতাসা দিবি আর এক ঢোক পানি। গু চাকরিতে এরচে বেশি কিছু খাওয়ানো ঠিক না। লোক হাসবে।

    ভাইয়া বাবার সামনে থেকে চলে গেল।

    বাবা নিজের মনে বিড় বিড় করতে লাগলেন—কত রকম কারিগরের কথা শুনেছি—ঘরের কারিগর, জিলাপির কারিগর, আজ শুনলাম গুয়ের কারিগরের কথা। সেই কারিগর আমার ঘরে বসে আছে। আহা কী আনন্দ। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে আপনার বড় ছেলে কী করে? আমি বুক ফুলিয়ে বলতে পারব, সে গু-কারিগর। তার সব বাণিজ্য গু নিয়ে।

    বাবা আজকাল খুব বেশি কথা বলছেন। একবার কথা বলতে শুরু করলে আর থামেন না। কথা বলেই যান। বলেই যান। একই কথা নানান ভঙ্গিতে বলেন। শেষের দিকে শুনতে খুবই বিরক্তি লাগে। কেরোসিন চিকিৎসার সঙ্গে এর মনে হয় কোনো যোগ আছে। পেটের ব্যথার জন্যে কেরোসিন খাওয়া শুরুর পর থেকেই বাবার কথা বলা বেড়েছে।

    আমি হাতের লেখা লিখছিলাম। বাবা আমার দিকে তাকিয়ে-তাকিয়ে ধমকের ভঙ্গিতে বললেন, চট করে একটা অংক কর। একটা গ্রামে তিনশ লোকের বাস। এরা প্রত্যেকে যদি গড়ে দৈনিক ৫০০ গ্রাম করে পায়খানা করে তাহলে এক মাসে গ্রামে গু এর পরিমাণ কত হবে? ঐকিক নিয়মে কর।

    আমি বললাম, এই অংক করতে হবে কেন?

    তোর ভাইতো আর অংক করতে পারবে না। গু-এর অংক সব তোর করতে হবে।

    এই অংক আমি করব না।

    আচ্ছা যা করিস না।

    আমি বাবার সামনে থেকে উঠে চলে এলাম। বাবা নিজের মনে বিড়বিড় করতে লাগলেন। বিড়বিড় করে কী বলছেন বারান্দা থেকে শুনতে পাচ্ছি না। নিশ্চয়ই গু বিষয়ক কিছুই হবে।

    বাবার কি শরীরের তাল নষ্ট হয়ে গেছে? একটা বয়সের পর মানুষের শরীরের তাল নষ্ট হয়ে যায়। সেই বয়সটা একেক জনের জন্যে একেক রকম। এটা আমার কথা না। জাপানি ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের কথা। জ্ঞানী-জ্ঞানী কথা তিনি আগে বলতেন না। আজকাল বলেন। তিনি এখন ঘরের মানুষ হয়ে গেছেন। ঘরের মানুষ অনেক কিছু বলতে পারে। জ্ঞানের কথা তো বলতেই পারেই। তিনি যে শুধু জ্ঞানের কথা বলেন তা না, প্রাইভেট টিচারের মতো আমার পড়া ধরেন। আবার ধাঁধা জিজ্ঞেস করেন। জটিল সব ইংরেজি ধাঁধা। ঠোঁট গোল করে বলেন—বল দেখি টগর—নয় কেন সাতকে ভয় পায়? চট করে বল why nine is afraid of seven. নয় তো সাতের চেয়ে বড় নয়ের তো সাতকে ভয় পাবার কথা না। দেখি তোমার বুদ্ধি কেমন চট করে বল।

    এ ধরণের ধাঁধা তিনি তখনি জিজ্ঞেস করেন যখন কুসুম আপু আশেপাশে থেকে। জাপানি ইঞ্জিনিয়ারের লক্ষ্য আমি না, কুসুম আপু। কাজেই আমি ধাঁধা নিয়ে মোটেই মাথা ঘামাই না। জাপানি ইঞ্জিনিয়ার খুবই হতাশ হয়ে বলেন, এ কী পারছ না কেন? চেষ্টা করে দেখ। আচ্ছা কুসুম তুমি বল।

    কুসুম আপু হাই তুলতে তুলতে বলল—নয় সাতকে ভয় পায় কারণ নয় খুব ভীতু প্রকৃতির। আপনার মতো।

    আমি ভীতু?

    অবশ্যই ভীতু ঐ দিন ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে আপনাকে ডাকলাম। বললাম, আমাকে হাত ধরে নিয়ে যান। আপনি এসেছিলেন?

    আমি যদি ঐ দিন তোমাকে আনতে যেতাম তাহলে আমিও মারা পড়তাম। তুমিও মারা পড়তে।

    মারা পড়লে পড়তাম। মরার আগে জেনে যেতাম আপনি খুব সাহসী একজন মানুষ। আপনার সম্পর্কে আমার একটা ভালো ধারণা হত।

    এখন কি আমার সম্পর্কে খারাপ ধারণা?

    হ্যাঁ।

    আচ্ছা ঠিক আছে খারাপ ধারণা থাকলে খারাপ ধারণা, এখন ধাঁধার জবাব দাও—why nine is afraid of seven?

    জানি না।

    Because Seven eight nine.

    তার মানে?

    তার মানে eight বানানটা ate কর। Seven ate nine. এখন বুঝতে পারছ। সাত নয়কে খেয়ে ফেলল।

    Very funny তাই না?

    কুসুম আপু মুখ গম্ভীর করে বলল—আপনি শুধু যে ভীতু তাই না, আপনি খানিকটা বোকাও।

    বোকা কেন?

    বোকারাই এই জাতীয় ধাঁধা বলে খুব মজা পায়।

    ও।

    কুসুম আপু প্রতিদিনই জাপানি ইঞ্জিনিয়ার সাহেবকে কঠিন-কঠিন কিছু কথা বলেন। আগে এই সব কথায় ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের মুখ কালো হয়ে যেত। এখন হয় না। তিনি কুসুম আপুর কঠিন কথাগুলি সহজ ভাবেই নেন। বাইরের কেউ হলে তিনি কথাগুলি সহজভাবে নিতেন না। এখন তিনি ঘরের মানুষ।

    তিনি নাকি ইঙ্গিতে জানিয়েছেন কুসুম আপুকে তার খুবই পছন্দ। তার প্ল্যান আরো ছবছর পর বিয়ে করা। কারণ ছবছর পর রেলের কোয়ার্টার পাবেন। তবে কথাবার্তা এখনই পাকা করে রাখা যেতে পারে। রেলের এই চাকরি তার পছন্দ না। তিনি দেশের বাইরে চলে যাবার চেষ্টা করছেন। নানান জায়গায় লেখালেখি করছেন। কোনো একটা যদি লেগে যায় তাহলে কিছুটা আগেই হবে।

    কুসুম আপু তার উত্তরে কি বলেছেন তা জানা যায় নি। আমার ধারণা তিনি শরীর দুলিয়ে খুব হেসেছেন। যে হাসির দুরকম অর্থ করা যায়—প্রথম অর্থ—আমি খুব খুশি এবং দ্বিতীয় অর্থ—এইসব কী হাস্যকর কথা। আমি কোন দুঃখে আপনার মতো বোকাকে বিয়ে করব।

    জাপানি ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোক এখন দুবেলাই আমাদের এখানে খান। দুপুরে টিফিন কেরিয়ারে করে সাইটে তার জন্যে খাবার যায়। রাতে তিনি নিজেই খেতে আসেন। খাওয়া দাওয়ার পর বেশির ভাগ সময়ই রাতে থেকে যান।

    ভাইয়া রাতে বাসায় থাকেন না, তার বন্ধু আজীজের বাসায় ঘুমুতে যান। জাপানি ইঞ্জিনিয়ার আমাকে পাশে নিয়ে ঘুমান। আমাদের দুজনের মাঝখানে তিনি একটা বালিশ দিয়ে রাখেন। গায়ের সঙ্গে গা লাগলে তার নাকি ঘুম হয় না। ভদ্রলোকের ঘুম এমনিতেও কম। প্রায়ই আমি ঘুম ভেঙ্গে দেখি ভদ্রলোক জেগে বসে আছেন। সিগারেট খাচ্ছেন। আমাকে হঠাৎ জেগে উঠতে দেখলে স্বস্থি পান। তখন বেশ আগ্রহ নিয়ে গল্প করেন। বেশির ভাগই ভুত-প্রেতের গল্প।

    তোমাদের বাড়িতে কি ভূতের উপদ্রপ আছে নাকি?

    নাহ্‌।

    আমার তো মনে হয় আছে। মাথার কাছের জানালাটা হঠাৎ দেখলাম আপনা আপনি বন্ধ হল। আবার খুলেও গেল। কোনো বাতাসটাতাস কিছু ছিল না। আচ্ছা ধরলাম বাতাসে বন্ধ হয়েছে। তাহলে খুলল কীভাবে? জানালা খুলতে হলে ঘরের ভেতর থেকে বাতাস বাইরে যেতে হবে। তাই না?

    জি।

    ব্যাপারটা আমি আগেও লক্ষ করেছি। অন্য কোনো জানালা না, মাথার। কাছের এই জানালাটাতেই শুধু এই ঘটনাটা ঘটে। খুব পুরানো বাড়িতে জিন ভূত থাকে, আবার ধর নতুন বাড়িতেও থাকে। ধর তুমি একটা বাড়ি বানালে। বাস করার জন্য প্রথম সেই বাড়িতে উঠলে। তখন অবিশ্যিই বিচিত্র সব জিনিস দেখবে।

    ও।

    আমার ছোট মামা সিরাজগঞ্জে একটা বাড়ি বানিয়ে ছিলেন। ছেলে মেয়ে নিয়ে সেই বাড়িতে উঠলেন। তার পর যে কান্ড শুরু হল—সেটা বললে কেউ বিশ্বাস করবে না। ভয়াবহ। মামাও বাঘা তেঁতুল টাইপ। মামা বললেন—ভূতের আমি কেথা পুড়ি। দেখি ভূত কী করে। পয়সা দিয়ে বাড়ি বানিয়েছি ভূতের থাকার জন্য না। আমার থাকার জন্য। ভূতদের হাউজিং প্রবলেম—বাড়ির পেছনে দুটা শ্যাওড়া গাছ লাগিয়ে দিব। শ্যাঁওড়া গাছে প্রেমসে থাক। টগর গল্পটা শুনছ?

    জি।

    চোখ বন্ধ করে ফেললে যে। ভাবলাম ঘুমিয়ে পড়েছ। একটা জিনিস খেয়াল রাখবে কেউ যখন গল্প করে তখন চোখ বন্ধ করতে নেই। এটা বিরাট বেয়াদবি। এই কাজ আর কখনো করবে না।

    জি আচ্ছা।

    চা খেতে ইচ্ছা করছে। কী করা যায় বলতো। টি ব্যাগ চিনি দুধ সবই আছে। শুধু গরম পানি পেলে কাজ হত।

    গরম পানি কে করবে সবাই তো ঘুমাচ্ছে।

    না সবাই ঘুমাচ্ছে না। কুসুম জেগে আছে। তার হাসির শব্দ শুনেছি। মনে হয় সে তার মার সঙ্গে গল্প করছে।

    কুসুম আপু ঘুমের মধ্যে হাসে।

    আমি যে হাসি শুনেছি সেতা ঘুমের হাসি না। ঘুমের হাসি অন্য রকম। তুমি দরজার কাছে গিয়ে তোমার আপুকে ডাক দিয়ে দেখ সে ঘুমাচ্ছে কিনা। একা যেতে ভয় করলে আমি সঙ্গে থাকব। নো প্রবলেম। যাদের চা খেয়ে অভ্যাস তাদের যদি হঠাৎ চায়ের নেশা চাপে তাহলে ভয়ংকর অবস্থা হয়। চা না খাওয়া পর্যন্ত কিছু ভালো লাগে না। কুসুম ঘুমিয়ে থাকলেও আমাকে চা খেতে হবে। রান্নাঘরে গিয়ে নিজেই চা বানাব। তাতে আমার কোনো সম্মান হানি হবে না। বুঝতে পারছ?

    জি।

    চল চা খাবার ব্যবস্থা করি তারপর আমি আমার ছোট মামার গল্পটা বলব। দারুণ ইন্টারেস্টিং কুসুম শুনতে চাইলে সেও শুনবে। সে ভয় টয় পাবে বলে। মনে হয় না। মেয়েটার মারাত্মক সাহস। মেয়েদের এত সাহসও অবিশ্যি ভালো না। সে যে কীভাবে ব্রিজ থেকে লাফ দিয়ে পানিতে পড়ল এখনো মনে হলে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এই ঘটনা যদি ঢাকায় গিয়ে বন্ধু বান্ধবকে বলি কেউ বিশ্বাস করবে না। এদেরও দোষ দেয়া যায় না। ঘটনা আমি নিজের চোখে দেখেছি তারপরেও আমার নিজেরই বিশ্বাস হয় না।

    কুসুম আপু জেগেই ছিল তবে চা বানানোর জন্য সে বের হল না। রহিমা ফুপু বের হলেন। জাপানি ইঞ্জিনিয়ার খুব সংকুচিত গলায় বলতে লাগলেন, আমি খুবই লজ্জিত আপনাকে কষ্ট দিচ্ছি। নেক্সট টাইম একটা ফ্লাক্স দিয়ে দেব। ঘুমুবার আগে শুধু ফ্লাক্স ভর্তি করে গরম পানি রেখে দেবেন।

    রহিমা ফুপু লম্বা ঘোমটা দিয়ে থাকলেন। একটা কথারও জবাব দিলেন। আমার ধারণা রহিমা ফুপু জাপানি ইঞ্জিনিয়ারকে একেবারেই পছন্দ করেন।। তিনি অবিশ্যি তার অপছন্দের কথা কখনোই বলবেন না।

    আমরা চা খাচ্ছি বারান্দায়। উনার সাথে আমিও খাচ্ছি। চা খেতে আমার ভালো লাগে না, আমার খারাপও লাগে না। শুধু দোকানের চা খেতে ভালো লাগে। জাপানি ইঞ্জিনিয়ার ভূতের গল্প বলছেন এবং একটু পরপরই ভেতরের দিকে তাকাচ্ছেন। তিনি হয়তো ভাবছেন, কুসুম আপু কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে। বেচারার জন্যে আমার মায়াই লাগছে। গল্প করছেন আমার সঙ্গে অথচ তার মন পড়ে আছে অন্য একজনের জন্যে। আমার নিজের ইচ্ছা করছে ডেকে কুসুম আপুকে নিয়ে আসি। তিনজন না হলে ভূতের গল্প কখনো জমে না। ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের গল্পটা খুব ভয়ের না হলেও খারাপ না।

    বুঝলে টগর আমার সেই মামাও ভয়ংকর সাহসী। কুসুমের মতোই সাহসী। ভূত যত উপদ্রপ করে তার জেদ তত বাড়ে। ভূত নানান ভাবে তাকে। বিরক্ত করে। মশারি খাটিয়ে শুতে গিয়েছেন মাঝরাতে দেখা যাবে দড়ি থেকে মশারি খুলে গায়ের উপর ফেলে রাখা হয়েছে। আলনা ভর্তি কাপড় হঠাৎ একদিন দেখা যাবে সব কাপড় ভেজা। কাপড় থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। গোসল করতে লুংগি নিয়ে বাথরুমে ঢুকেছেন। গোসল শেষ করে লুঙ্গি পরতে গিয়ে দেখেন লুঙ্গি নেই। লুঙ্গি দলামচা করে কমোডে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। টগর গল্পটা কেমন লাগছে?

    জি ভালো।

    কুসুম শুনলে মজা পেত।

    আরেক দিন আপাকে শুনাবেন।

    ভূতের গল্প বলার মুড সবদিন আসে না। আজকের রাতটা ভূতের গল্প বলার জন্যে ভালো ছিল। দেখ তো জেগে আছে কিনা। জেগে থাকলে পাঁচ মিনিটের জন্য আসতে বল।

    আমি এখন ডাকতে গেলে রাগ করবে।

    রাগ করলে আমার উপর রাগ করবে। তুমি তো আর ডাকছ না। আমি ডাকছি। গিয়ে বল খুবই জরুরি কিছু কথা বলব।

    আমি নিতান্তই অনিচ্ছার সঙ্গে উঠে দাঁড়ালাম আর তখনি মার ঘর থেকে চাপা চিৎকার ভেসে এল। মনে হচ্ছে কেউ দুহাতে মার গলা চেপে ধরেছে। মা নিঃশ্বাস নেবার জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। যে মার গলা চেপে ধরে আছে মা তাকে ছাড়াবার চেষ্টা করছেন।

    জাপানি ইঞ্জিনিয়ার ধড়মড় করে উঠে দাঁড়ালেন। ভীত গলায় বললেন, কী হয়েছে?

    আমি বললাম, কিছু হয় নি।

    চিৎকার কে করছে। তোমার মা?

    জি।

    দেখে আসতো কী ব্যাপার।

    দেখা যাবে না।

    দেখা যাবে না কেন?

    আমি জবাব দিলাম না। জবাব দিতে ইচ্ছা করল না। মা কেন চিৎকার করছেন সেটা দেখা যাবে না, কারণ মার ঘর তালাবদ্ধ। তালার চাবি বাবার কাছে। গত এক সপ্তাহ ধরে মাকে তালাবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। মার শরীর আগের চেয়ে অনেক বেশি খারাপ করেছে। দিনের বেলা তিনি বেশ স্বাভাবিকই। থাকেন। কারো সঙ্গে কোনো কথাবার্তা বলেন না তবে খাওয়া দাওয়া করেন। খাওয়া শেষ করে ছোট বাচ্চাদের মতো কুণ্ডুলী পাকিয়ে ঘুমুতে যান। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে তিনি অন্য রকম হয় যান। হই চই চিৎকার চেঁচামেচি কিছুই করেন না, শুধু গায়ে কোনো কাপড় রাখতে পারেন না। তাঁর নাকি তখন শরীর জ্বলে যায়। তাঁর ঘরে বালতি ভর্তি পানি থাকে। তিনি সেই পানি মাথায় ঢালেন এবং ঘরের ভেতরই ছোটাছুটি করেন। এ-রকম চলে সারারাত। ফজরের আজানের পর পরই তিনি স্বাভাবিক হয়ে যান। আবার গায়ে কাপড় পরেন। তাঁকে তখন খুবই লজ্জিত মনে হয়।

    জাপানি ইঞ্জিনিয়ার উদ্বিগ্ন গলায় বললেন, টগর খোঁজ নিয়ে আস ব্যাপারটা কী?

    খোঁজ নিতে হবে না।

    এমন ভয়ংকর একজন রোগী ঘরে অথচ তোমরা সবাই কি নির্বিকার।। আমি এর কারণটা বুঝতে পারছি না। পাবনা মেন্টাল হসপিটালের একজন ডাক্তার আছে ডাক্তার আখলাকুর রহমান। আমার ছেলেবেলার বন্ধু। আমরা এক সঙ্গে স্কুলে পড়েছি। কলেজেও একসাথে পড়েছি—ঢাকা কলেজ। ওর বায়োলজি ছিল বলে ও চলে গেল মেডিকেলে। আমার ছিল জিওগ্রাফী। আমি ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। আখলাকের কাছে একটা চিঠি দিয়ে তোমার মাকে পাঠালে সে সব ব্যবস্থা করবে। ঐখানে চিকিৎসা ভালো হয়। তুমি এক কাজ কর, কুসুমকে ডেকে নিয়ে এসো। তার সঙ্গে ডিসকাস করি।

    আমি কুসুম আপুকে ডাকতে গেলাম না। মার ঘরের হই চই খুবই বাড়ছে। এখন মনে হচ্ছে জিনিস ছুঁড়ে দরজায় মারা হচ্ছে কিংবা মা দরজায় মাথা ঠুকছেন। পুরো বাড়িই মনে হয় কাঁপছে।

    রহিমা ফুপু বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন।

    জাপানি ইঞ্জিনিয়ার বললেন, সমস্যাটা কি একটু বলবেন? আমি যদি কোন সাহায্য করতে পারি।

    রহিমা ফুপু শান্ত গলায় বললেন, কোনো সমস্যা নাই। আপনি ঘুমান।

    জাপানি ইঞ্জিনিয়ার খুবই অবাক হচ্ছেন। সমস্যা নেই বললে তো হবে না। বোঝাই যাচ্ছে বিরাট সমস্যা। ঘর দোয়ার ভেঙ্গে ফেলার মতো অবস্থা।

    রহিমা ফুপু আমার দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বললেন, টগর তোর বাবাকে ডেকে নিয়ে আয়। তালা খুলতে হবে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleউড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    একটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }