Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    উইলিয়াম শেকসপিয়র রচনা সমগ্র

    উইলিয়াম শেক্সপিয়র এক পাতা গল্প576 Mins Read0

    হ্যামলেট, প্রিন্স অব ডেনমার্ক

    হ্যামলেট, প্রিন্স অব ডেনমার্ক

    এলসিনোর দুর্গ ডেনমার্কের রাজপ্রাসাদের ঠিক লাগোয়। রক্ষী ফ্রান্সিস রাত্ৰিবেলায় পাহারা দিচ্ছিল সেখানে। শীতরাত্রির প্রচণ্ড ঠান্ড পুরু চামড়ার পোশাক ভেদ করে গায়ের চামড়া, মাংস, হাড় সব যেন দীত বসাতে চাইছে, গায়ের রক্ত হিম হবার জোগাড়। রাত্রে পাহারা দেবার ব্যাপারটা খুবই আতঙ্কের হয়ে দাঁড়িয়েছে রুক্ষীদের কাছে। ভীতির কারণ অবশ্য একটাই। কয়েক রাত ধরেই দেখা যাচ্ছে একটা রহস্যময় প্রেতিমূর্তি দুর্গপ্রাচীরে এসে দাঁড়াচ্ছে। সেই মূর্তিটা চুপচাপ তাকিয়ে থাকে রক্ষীদের দিকে। পাহারাদারদের মধ্যে যারা তাকে দেখেছে, তারা সবাই বলছে কী যেন বলতে চায় সেই রহস্যময় প্ৰেত মূর্তিটা, অথচ পারে না। রক্ষীদের কথা অনুযায়ী সেই মূর্তি দেখতে অবিকল প্রাক্তন রাজার মতো—যিনি মারা গেছেন। অল্প কিছুদিন আগে। প্রতি রাতে ঐ প্রেত মূর্তির দেখা পেয়ে, রক্ষীরা ভয় পেয়ে ব্যাপারটা কানে তুলেছে হোরেশিওর। হোরেশিও ছিল মৃত রাজার পুত্র হ্যামলেটের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এই আশ্চর্যজনক খবর শুনে খুবই বিস্মিত হয়েছেন হোরেশিও। রক্ষীদের কথার সত্য-মিথ্যে যাচাই করতে তিনি নিজেই আজ দুর্গে এসেছেন রাতের বেলায় পাহারা দিতে।

    রাতের প্রহর নীরবে গড়িয়ে চলেছে দুর্গের পেটা ঘড়িতে বেজে ওঠা ঘণ্টার আওয়াজের সাথে সাথে। হোরেশিওর উদ্দেশ্য কিন্তু ব্যর্থ হয়নি। শেষ রাতে সেই প্রেতিমূর্তি আবার এসে দাঁড়াল দুর্গপ্রাচীরে। হোরেশিও নিজেও অবাক হলেন হ্যামলেটের পিতা মৃত রাজার আদলের সাথে প্রেতিমূর্তির অবিকল মিল দেখে।

    ঠিক তার পরদিনই তার বন্ধু হ্যামলেটকে সেই রহস্যময় প্রেতিমূর্তির আগমনের কথা জানালেন হোরেশিও। পিতার মৃত্যুকালে হ্যামলেট ছিলেন রাজধানীর বাইরে। বাইরে থেকে ফিরে আসার পর তিনি মায়ের মুখে শুনেছেন যে একদিন দুপুরে তার বাবা যখন বাগানে শুয়ে বিশ্রাম করছিলেন, এক বিষাক্ত সাপ সে সময় দংশন করে তাকে, আর তার ফলেই মারা যান তিনি। বাবার এই অপঘাত মৃত্যুতে হ্যামলেট খুব দুঃখ পেলেন ঠিকই, কিন্তু তার চেয়ে বেশি মানসিক আঘাত পেলেন যখন তার বাবার মৃত্যুর পর কিছুদিন যেতে না যেতেই কাকা ক্লডিয়াস তার বিধবা মা রানি গারট্রডকে বিয়ে করে রাজা হয়ে বসলেন ডেনমার্কের সিংহাসনে। এ ব্যাপারটাকে দেশের লোকেরা খুশি মনে মেনে নিতে না পারলেও ভয়ে তারা মুখ বন্ধ করে রইল। বাবার মৃত্যুর ঠিক পরেই এই বিয়ে আর সিংহাসন অধিকারের ঘটনাকে কিছুতেই মনে-প্ৰাণে বিশ্বাস করতে পারছেন না হ্যামলেট। আবার হদিসও করতে পারছেন না। সত্যিই কী ঘটেছিল। একটা সন্দেহের দোলা! তার বন্ধু হোরেশিও ঠিক এ সময় তাকে শোনালেন সেই প্রেতিমূর্তির নিয়মিত আগমনের কথা। সেই মূর্তিটা নাকি দেখতে ঠিক তার বাবার মতো–কথাটা শুনে হ্যামলেট স্থির করলেন তিনি নিজে দাঁড়াবেন সেই মূর্তির সামনে।

    সেদিন রাত প্রায় শেষের পথে, বন্ধু হোরেশিওর সাথে হ্যামলেট এলেন এলসিনোর দূগে পাহারা দিতে। সেই একই জায়গায় অন্যান্য দিনের মতো দেখা দিল প্রেতিমূর্তিটা। সেটা চোখ পড়ামাত্রই হ্যামলেট চেঁচিয়ে উঠে বললেন, বাবা! ডেনমার্কের রাজা! তিনি চেঁচিয়ে ওঠার সাথে সাথে সেই প্রেতিমূর্তিটা হাত নেড়ে ডাকল তাকে। কিছু বুঝতে না পেরে তিনি তাকালেন হোরেশিওর দিকে। তুমি নিৰ্ভয়ে এগিয়ে যাও, হ্যামলেট, তাকে আশ্বস্ত করে বললেন হোরেশিও, উনি হাত নেড়ে তোমাকে ডাকছেন। মনে হয়। উনি তোমাকে কিছু বলতে চান।

    মোহাচ্ছন্নের মতো পা ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন হ্যামলেট। তাকে অনুসরণ করে কিছুদূর যাবার পর তিনি নিশ্চিত হলেন যে এই প্রেতিমূর্তিটা তার বাবারই। তিনি লক্ষ করলেন যে এই মূর্তিটার পরনে সেই একই পোশাক যা জীবিত অবস্থায় রাজা পরতেন।

    শুভ বা অশুভ, যেরূপ প্ৰেতাত্মাই আপনি হন না কেন, চিৎকার করে বলল হ্যামলেট,  যে রূপেই আপনি আমার কাছে এসে থাকুন, আমি কথা বলতে চাই আপনার সাথে। আমাকে কিছু বলার থাকলে আপনি স্বচ্ছন্দে তা বলুন, রোজ রাত্রে আপনি কেন এভাবে এখানে আসেন?

    চাপা স্বরে জবাব দিল সেই প্রেতিমূর্তি, হ্যামলেট! আমি তোমার নিহত বাবার প্ৰেতাত্মা।

    চিৎকার করে বলে উঠল। হ্যামলেট, নিহত? কী বলছেন আপনি?

    উত্তর দিল প্রেতিমূর্তি, আমার সব কথা আগে শোন। তোমার কাকা ক্লডিয়াসই হত্যা করেছে আমায়। একদিন আমি যখন বাগানে শুয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছিলাম, সে সময় সবার নজর এড়িয়ে হেবোনা গাছের বিষাক্ত রস আমার কানে ঢেলে দেয় ক্লডিয়াস। আর ক্লডিয়াসের ঐ চক্রাস্তে তাকে সাহায্য করেছে আমার স্ত্রী, তোমারই গর্ভধারিণী গারট্রড। এ সব কারণে আমি খুব অশাস্তিতে আছি। হ্যামলেট, তুমি আমার একমাত্র সস্তান। সবকিছু বললাম তোমাকে। এ অন্যায়ের প্রতিবিধান তুমি করো, বিদায়! বলেই অদৃশ্য হয়ে গেল সেই প্রেতিমূর্তি, আর বিস্ময়ে হতবাক হ্যামলেট তখন অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়ল দুর্গের ছাদের ওপরে। জ্ঞান ফিরে এলে তিনি বিশ্বাস করে প্ৰেতাত্মার মুখে শোনা সব কথা জানালেন বন্ধু হোরেশিও আর মার্সোল্লাস নামে এক রক্ষীকে। সেইসাথে এই প্রতিশ্রুতিও তিনি তাদের কাছ থেকে আদায় করলেন যে তারা কাউকে কিছু বলবে না।

    যা দেখলাম আর তোমার কাছে শুনলাম, তা সবই অদ্ভূত, মন্তব্য করলেন হোরেশিও মৃত আত্মা কি কথা বলতে পারে?

    আমাদের অজান্তে এই পৃথিবীতে এমন অনেক কিছু ঘটছে যার কোনও উল্লেখ বা ব্যাখ্যা বইয়ে নেই। হোরেশিওকে জানালেন হ্যামলেট।

    হ্যামলেটের মনে প্রচণ্ড প্রভাব ফেলেছে সে রাতের ঘটনা। একএক বার সে নিজমনে বলছে বাবার প্ৰেতাত্মার মুখে যা শুনলাম তা কি সত্য? সত্যি হলে অবশ্যই এর প্রতিবিধান আমায় করতে হবে, আবার পরীক্ষণেই তার মনে হল, শুধু প্ৰেতাত্মার মুখের কথায় বিশ্বাস করে প্রতিবিধান নেবার মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা কি ঠিক? এর চেয়ে হাতে নাতে যুক্তিগ্রাহ্য কোনও প্রমাণ কি সংগ্রহ করা যায় না যাতে আমি নিশ্চিত হতে পারি। কাকার পাপ সম্পর্কে?

    হ্যামলেট পাগলের মতো হয়ে উঠলেন রাতদিন এ সব কথা ভেবে ভেবে। রাজ্যের বৃদ্ধ মন্ত্রী পলোনিয়াসের একটি ছেলে ছিল, নাম লিয়ার্টিস আর মেয়ের নাম ওফেলিয়া। দেখতে অপরূপ সুন্দরী ছিল ওফেলিয়া; ওফেলিয়া যেমন মনে-প্ৰাণে ভালোবাসত তরুণ হ্যামলেটকে তেমনি হ্যামলেটও ভালোবাসতেন তাকে। রাজ্যের সবাই মেনেইনিয়েছিল যে হ্যামলেটের সাথে ওফেলিয়ার বিয়ে হবে। হ্যামলেটের হাব-ভাব, কথাবার্তায় অস্বাভাবিকতার লক্ষণ দেখা গেছে —সবার মুখে একথা শুনে খুবই চিস্তার মাঝে পড়ে গেলেন পলোনিয়াস। হোক না হ্যামলেট রাজার ছেলে, কিন্তু বাবার মৃত্যুতে যিনি পাগল হতে বসেছেন, সে কথা জেনে কি তার সাথে মেয়ের বিয়ে দেওয়া যায়? আর বিয়ে দিলেও কি তার পরিণতি সুখের হবে? স্বাভাবিক কারণেই এ সব চিস্তা এসে দেখা দিচ্ছে পালোনিয়াসের মনে।

    হ্যামলেট পড়েছেন সমস্যায়। বাবার মৃত্যুর পরও মাকড়সার জালের মতো এক চক্রান্ত যে তাকে ঘিরে ধরছে, সে কথা ঠিকই বুঝতে পেরেছেন তিনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি কাউকে অপরাধী বা ষড়যন্ত্রের সাথে সরাসরি জড়িত বলে ধরতে পারছেন না। শেষে অনেক ভেবে-চিন্তে এ সমস্যা সমাধানের হদিস পেলেন তিনি–রাজা, রানি, পালোনিয়াস, ওফেলিয়া, সবার উপর আড়াল থেকে কড়া নজর রাখা দরকার। খুঁটিয়ে বিচার করা দরকার এদের সবার আচার-আচরণ, কথাবার্তা। আর সেকােজ সেই করতে পারে যাকে কেউ গ্রাহ্যের মধ্যে আনবেন না। অথচ সে সবার উপর নজর রাখতে পারবে। এই ভেবে হ্যামলেট এমন আচরণ করতে লাগলেন যেন তিনি সত্যিই পাগল হয়ে গেছেন। হ্যামলেটের অদ্ভুত আচরণ আর পাগলাটে কথাবার্তা শুনে রাজপ্ৰসাদের অধিবাসীরা সবাই খুব বিপন্ন হলেন। হ্যামলেটের পাগলামো কিন্তু নিছক পাগলামো নয়, অসংলগ্ন কথার ফাঁকে ফাকে তিনি এমন সব সরস অথচ তীক্ষা মন্তব্য ছেড়ে দেন যার খোঁচায় রাজা, রানি, পলোনিয়াস–সবাই তীব্র বেদনা পান মনে। আর ঠিক তখনই তাদের মনে প্রশ্ন জাগে হ্যামলেট কি সত্যিই পাগল হয়ে গেছেন না। এসব নিছক পাগলামির ভান। এটা যদি পাগলামির ভান হয়, তাহলে নিশ্চয়ই তার পেছনে কোনও বদ। উদ্দেশ্য আছে! তাহলে সে উদ্দেশ্যটা কী ধরনের, সে চিন্তাও জেগে ওঠে তাদের মনে।

    হ্যামলেটের এই ধরনের আচরণে সবচেয়ে বেশি ব্যথা পেল তার প্রেমিক ওফেলিয়া। যেমন দেখতে সুন্দর ওফেলিয়া তেমনি সরল তার খোলামেলা মন। কোনও কুটিলতার ছায়া এখনও পর্যন্ত পড়েনি সেখানে। তাই হ্যামলেটের এই অস্বাভাবিক আচরণে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেল ওফেলিয়া তার মনে।

    এভাবেই কেটে যাচ্ছে দিনগুলি। রাজার প্ৰেতাত্মার আর আবির্ভাব হয়নি এলসিনোর দুর্গ প্রাকারে। হ্যামলেট কিন্তু কিছুতেই ভুলতে পারছে না। বাবার মুখ থেকে শোনা সে রাতের হতাশাজনক কথাবার্তাগুলি। তাকে অন্যায়ের প্রতিবিধান করতে বলেছেন বাবার সেই প্রেতিমূর্তি। হ্যামলেট ঠিকই বুঝতে পেরেছেন কাদের অন্যায়ের কথা বলেছেন তার বাবা। কিন্তু তিনি ভেবে পাচ্ছেন না, এক তিনি কী ভাবে সে অন্যায়ের প্রতিবিধান করবেন। অনেক ভেবে শেষমেশ তিনি এক বুদ্ধি বের করলেন। রাজপ্ৰসাদে নাটকের অভিনয় করতে সেসময় শহরে এসে জুটেছে একদল অভিনেতাঅভিনেত্রী। তিনি স্থির করলেন তাদেরই কাজে লাগাবেন রাজা-রানির মনোভাব যাচাই করতে। তাদের সাথে দেখা করে হ্যামলেট বললেন, তিনি একটা নাটক লিখেছেন যা তাদের দিয়ে তিনি অভিনয় করাতে চান রাজপ্রাসাদে। অভিনেতারা সবাই খুশি হল তার কথা শুনে। এতো তাদের কাছে আনন্দের কথা যে যুবরাজের লেখা নাটকে তারা অভিনয় করবেন। অভিনেতারা যে তার লেখা নাটকে অভিনয় করতে রাজি, সে কথা জেনে প্রাসাদে ফিরে এসে হ্যামলেট শুরু করলেন নাটক লিখতে। বিষয়বস্তু যদি জানা থাকে তাহলে কুশীলবদের মুখে সংলাপ বসাতে দেরি লাগে না। আর এক্ষেত্রে বিষয়বস্তু তো আগে থেকেই স্থির হয়ে আছে। বাবার প্ৰেতাত্মার মুখে যে কাহিনি শুনেছিলেন হ্যামলেট, হুবহু তারই আদলে লিখতে হবে নাটক— কীভাবে রাজাকে সরিয়ে সিংহাসন দখল করতে রাজার ছোটো ভাইয়ের সাথে রানির চক্রান্ত, ঘুমন্ত রাজার কানে বিষ ঢেলে তাকে হত্যা করে শূন্য সিংহাসন দখল করা-এ সবই থাকবে নাটকে।

    নাটক লেখা শেষ হলে হ্যামলেট তা পড়ে শোনালেন অভিনেতাদের। নাটকের কাহিনিটা তাদের খুবই পছন্দ হল। তারা চুটিয়ে মহড়া দিতে লাগলেন। মহলা চলতে চলতে নাটকের দিনক্ষণও স্থির হয়ে গেল।

    নাটক অভিনয়ের দিন হ্যামলেট শুরুতেই রাজা রানির খুব কাছে এসে বসলেন। সেখান থেকে পাদপ্রদীপের আলোয় তিনি খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন তাদের হাব-ভাব। নাটক এগিয়ে যাবার সাথে সাথে হ্যামলেট স্পষ্ট বুঝতে পারলেন নতুন রাজা ক্লডিয়াসের মুখখানা কেমন যেন বিবৰ্ণ হয়ে পড়ছে। এর কিছুক্ষণ বাদে বাগানে ঘুমন্ত রাজার কানে বিষ ঢেলে দেবার দৃশ্যটা যখন সামনে এল, তখন আর সহ্য করতে পারলেন না ক্লডিয়াস। আসন ছেড়ে উঠে তিনি চলে গেলেন প্রাসাদের ভেতরে। হ্যামলেটের এও নজর এড়াল না যে তার মা রানি গারটুডিও ভেতরে ভেতরে যথেষ্ট অস্থির হয়ে উঠেছেন। এবার আর কোনও সন্দেহ রইল না হ্যামলেটের মনে যে তার বাবা তাকে যে সমস্ত কথা বলেছেন তা সবই সত্যি। এবার নিশ্চিত হয়ে নাটক দেখতে দেখতে স্থির করলেন হ্যামলেট, অন্যায়ের প্রতিবিধান করার যে প্রতিজ্ঞা তিনি বাবার কাছে করেছেন তা অবশ্যই তাকে পালন করতে হবে। বাবার হত্যাকারীর সাথে তার যে সম্পর্কই থাকুক না কেন, তিনি নিজ হাতে শাস্তি দেবেন তাকে।

    নাটক অভিনয়ের শেষে রাজা ডাকলেন অভিনেতাদের, প্রশংসা করলেন তাদের দলগত অভিনয়ের। সাথে সাথে পারিশ্রমিক ছাড়াও বকশিশ দিলেন তাদের। শেষে রাজা জানতে চাইলেন এই নাটকের রচয়িতা কে। রাজা অবাক হয়ে ভু কুঁচকোলেন যখন তিনি শুনলেন তার ভাইপো হ্যামলেটই লিখেছেন এ নাটক। তিনি খুব ধাক্কা খেলেন। ভেতরে ভেতরে।

    এদিকে দিনে দিনে বেড়েই চলল হ্যামলেটের পাগলামি। রানি এবং মন্ত্রী পালোনিয়াসের সাথে পরামর্শ করে রাজা ক্লডিয়াস স্থির করলেন যে হ্যামলেটকে এ রাজ্যে রাখা মোটেই নিরাপদ নয়। যে করেই হোক, তাকে অন্তত কিছুদিনের জন্য হলেও দেশের বাইরে পাঠাতে হবে। তার মা রানি গারট্রড স্বয়ং দায়িত্ব নিলেন এ কাজের। ক্লডিয়াসের দুর্ভাবনাও কম নয়। হ্যামলেটকে নিয়ে। কারণ যে করেই হোক হ্যামলেট জানতে পেরেছেন যে তিনিই হত্যা করেছেন তার বাবাকে। এ পরিস্থিতিতে যে কোনও সাংঘাতিক ঘটনা ঘটে যেতে পারে। যদি হ্যামলেট দেশে থাকেন।

    মন্ত্রী পালোনিয়াসের লোক এসে হ্যামলেটকে জানাল বিশেষ কারণে রানি গারট্রড দেখা করতে চান তার সাথে। পলোনিয়াস ওদিকে আবার গারট্রডকে বললেন রানি মা! হ্যামলেটের সাথে দেখা করার সময় আপনি খুব স্বাভাবিক আচরণ করবেন। তাকে বলবেন, আপনি আর সইতে পারছেন না তার দুঃখ। আপনার কোনও ভয় নেই, আমি লুকিয়ে থাকব আপনার ঘরের পর্দার আড়ালে। আমার লোক গেছে তাকে খবর দিতে। এখনই এসে যাবেন তিনি, বলেই ঘরের পর্দার আড়ালে লুকোলেন পলোনিয়াস; কিছুক্ষণ বাদে মা মা বলতে বলতে হাজির হলেন হ্যামলেট। মার কাছে জানতে চাইলেন কেন তিনি ডেকে পাঠিয়েছেন তাকে।

    আমি মনে খুব আঘাত পেয়েছি তোমার আচরণে, বললেন রানি, তুমি দুঃখ দিয়েছ বাবার মনেও।

    তা হতে পারে মা বললেন হ্যামলেট, তবে শুধু আমি নই, তুমিও দুঃখ দিয়েছ আমার বাবার মনে। হ্যা, তবে তুমি খুশি করতে পেরেছ দেশের বর্তমান রাজাকে, যিনি আবার তোমার বর্তমান স্বামী।

    তুমি কি আমায় ভুলে গেছ হ্যামলেট? বললেন রানি।

    না! আমি তোমায় মোটেও ভুলিনি, উত্তর দিলেন হ্যামলেট, মহান যিশুর নামে শপথ করে বলছি তোমায় আমি ভুলিনি। তুমি আমার গৰ্ভধারিণী মা, ডেনমার্কের রানি আর এখন আমার বাবার ভাইয়ের স্ত্রী।

    কাঁদো কঁদো গলায় বলে উঠলেন রানি, হ্যামলেট! কেন তুমি এভাবে আমার সাথে কথা বালছ?

    তুমি স্থির হয়ে বসো মা, বললেন হ্যামলেট, আমি একটা দৰ্পণ রাখছি তোমার সামনে। দর্পণ অর্থাৎ তোমার যাবতীয় অন্যায় ও দুষ্কর্মের কথা শোনাব তোমায়। সে সব শুনলেই তুমি বুঝতে পারবে আসল চরিত্রটা কী। সেই সাথে এও বুঝতে পারবে কেন আমি তোমার সাথে এরূপ আচরণ করছি।

    ছেলের কথা শুনে ভয় পেয়ে বলে উঠলেন রানি, তুই কি আমায় হত্যা করতে চাস হ্যামলেট? ওরে কে কোথায় আছিস, আমায় বঁচা।

    রানির আর্তনাদ শুনে পর্দার আড়াল থেকেই বললেন পলোনিয়াস, ভয় নেই রানিমা। পর্দার আড়াল থেকে পুরুষের গলা ভেসে আসছে দেখে হ্যামলেট ধরেই নিলেন যে তার কাকা ক্লডিয়াস লুকিয়ে আছেন সেখানে। একথা মনে হতেই তিনি খাপখোলা তলোয়ার হাতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন পর্দার উপর, যার আড়ালে লুকিয়ে ছিলেন পলোনিয়াস। সজোরে সেই তলোয়ার বসিয়ে দিলেন পলোনিয়াসের বুকে। পলোনিয়াস আর্তনাদ করে লুটিয়ে পড়লেন মেঝেতে, চারিদিক ভেসে যেতে লাগল রক্তে।

    হাঃ হাঃ এই ব্যাপার! আমি তো ভেবেছি পর্দার আড়ালে লুকিয়ে চেচাচ্ছে একটা ইদুর: বলেই পাগলামির ভান করে হাসতে লাগলেন হ্যামলেট। দেখতে দেখতে এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল গেল যে মায়ের সাথে দেখা করতে এসে হ্যামলেট নিজ হাতে হত্যা করেছেন মন্ত্রীকে। এ খবর শুনে ভয়ে থর থর করে কেঁপে উঠল প্রাসাদের সবাই। ভয়ের কারণ একটাই, পাগলামিতে পেয়েছে হ্যামলেটকে। কে বলতে পারে পাগলামোর মুখে তিনি কখন কী করে বসবেন?

    দেশের মানুষ ভালোবাসে হ্যামলেটকে। তাই ইচ্ছে সত্ত্বেও রাজা ক্লডিয়াস এতদিন পর্যন্ত কোনও চেষ্টা করেননি তাকে মেরে ফেলার। তিনি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন যে কোনও ছুতোয় হ্যামলেটকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে তাকে হত্যা করার। আচমকা সে সুযোগ এসে গেল ক্লডিয়াসের হাতে, যখন হ্যামলেটের হাতে মারা গেলেন মন্ত্রী পালোনিয়াস। ভাইপোর জন্য যেন রাতে তার ঘুম হচ্ছে না। এরূপ ভাব দেখিয়ে ক্লডিয়াস পরামর্শ দিলেন তার ভাইপোকে –অকারণে পলেনিয়াসকে হত্যা করে যে অন্যায় তিনি করেছেন, দেশবাসীর মন থেকে তা মুছে ফেলতে গেলে বেশ কিছুদিন তার বিদেশে গিয়ে কাটিয়ে আসা উচিত। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে ইংল্যান্ডই তার পক্ষে আদর্শ জায়গা।

    তার প্রেমিক ওফেলিয়ার বাবা পলোনিয়াস। শুধু এ কারণে তাকে মেরে ফেলার জন্য মনে মনে খুব অনুতপ্ত হ্যামলেট। ওফেলিয়া মনে-প্ৰাণে ভালোবাসে হ্যামলেটকে। সেদিক থেকে কোনও কুটিলতা বা লোকদেখানো ভাব নেই ওফেলিয়ার মনে। শেষ পর্যন্ত সেই হ্যামলেটের হাতেই মারা গেলেন তার বাবা? ওফেলিয়া চোখের জল ফেলতে ফেলতে ভাবে তার বাবার কথা। তার মনকে সে কিছুতেই মানাতে পারে না। হ্যামলেট বুঝতে পারলেন পাগলামোর ভান করতে গিয়ে পলোনিয়াসকে খুন করে তিনি খুবই ভুল করেছেন। এ ভুল শোধরাবার জন্য ক্লডিয়াসের ইচ্ছে মতো ইংল্যান্ডে যাওয়া ছাড়া তার সামনে অন্য কোনও রাস্তা নেই। ক্লডিয়াসকে তিনি জানালেন ইংল্যান্ডে যেতে কোনও আপত্তি নেই তার। ক্লডিয়াস মনে মনে হাসলেন ভাইপোর কথা শুনে। ভাইপোর ইংল্যান্ডে যাবার সব ব্যবস্থাই করে দিলেন ক্লডিয়াস, সেই সাথে তার কয়েকজন বিশ্বস্ত অনুচরকেও সঙ্গে দিলেন। এবার ক্লডিয়াস ব্যবস্থা নিলেন পথের কাঁটা সরাবার। সে সময় ইংল্যান্ড ছিল ডেনমার্কের অনুগত। তিনি একটা চিঠি লিখলেন ইংল্যান্ডের রাজাকে। তাতে লেখা রইল হ্যামলেট ইংল্যান্ডের মাটিতে পা দেবার সাথে সাথেই তিনি যেন তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন। ক্লডিয়াসের যে সমস্ত বিশ্বস্ত অনুচরেরা হ্যামলেটের সাথে যাচ্ছিল, তাদেরই একজনের হাতে চিঠিটা তুলে দিলেন তিনি। কিন্তু একাজে সফল হলেন না। ক্লডিয়াস। জাহাজে করে ইংল্যান্ডে যাবার পথে চিঠিটা হস্তগত হল হ্যামলেটের। চিঠিতে নিজের নামটা কেটে দিয়ে সে জায়গায় পত্ৰবাহক আর তার সঙ্গীর নাম লিখে যথাস্থানে চিঠিটা রেখে দিলেন হ্যামলেট। এদিকে ইংল্যান্ডে পৌঁছাবার আগে মাঝদরিয়ায় একদল জলদসু্য এসে আক্রমণ করল তাদের জাহাজ। জলদসু্যরাও জাহাজে করে এসেছিল। খোলা তলোয়ার হাতে হ্যামলেট বাঁপিয়ে পড়লেন তাদের জাহাজে। যাকে সামনে পেলেন, তাকেই কচুকাটা করলেন। হ্যামলেটের সহগামীক্লডিয়াসের বিশ্বস্ত অনুচরেরা কিন্তু তার বিপদে এগিয়ে এলো না। হ্যামলেটকে একা ফেলে এই ফাকে তারা নিজেদের জাহাজ নিয়ে পালিয়ে গেল। একা একা জলদসু্যদের সাথে লড়াই করে তিনি শেষে বন্দি হলেন তাদের হাতে। তারা আগেই মুগ্ধ হয়েছিল হ্যামলেটের সাহস আর বীরত্ব দেখে। এরপর যখন তারা শুনল যে ডেনমার্কের যুবরাজ হ্যামলেট, তখন তারা নিজেদের জাহাজে চাপিয়ে হ্যামলেটকে নামিয়ে দিল ডেনমার্কের সমুদ্র উপকূলে। তারপর জলদসু্যরা সবাই চলে গেল।

    হ্যামলেট দেশে ফিরে গিয়ে দেখলেন বাবার শোকে তার প্রেমিক ওফেলিয়া সত্যি সত্যিই পাগল হয়ে গেছেন। তিনি শুনতে পেলেন মনের দুঃখে ওফেলিয়া স্নান, খাওয়া-দাওয়া, ঘুম–সবই বিসর্জন দিয়েছে, সময়মতো সে বাড়িতেও যায় না। দিনরাত হয় সে তার বাবার কবরের ওপর পড়ে থাকে, নতুবা আপন মনে গান গেয়ে গেয়ে কবরের চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। তার খুশি মতো আশপাশের গাছ থেকে ফুল পেড়ে কবরের উপর ছড়িয়ে দেয় সে। কেউ কবরখানায় এলে তার হাতে ফুল তুলে দিয়ে বলে, দাও, কবরের উপর ছড়িয়ে দাও। ওফেলিয়ার জন্য খুব অনুতপ্ত হলেও হ্যামলেটের করার কিছু নেই, কারণ তার মতো তিনি নিজেও অসহায়।

    হ্যামলেটেরই সমবয়সি পালোনিয়াসের ছেলে লিয়ার্টিস। সেও হ্যামলেটের মতো ওস্তাদ তলোয়ারের লড়াইয়ে। অল্প কিছুদিন আগে লিয়ার্টিস ফ্রান্সে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে এসে সে শুনল পাগলামোর ভান করে তার বাবাকে হত্যা করেছে। হ্যামলেট আর তার বোন ওফেলিয়া পাগল হয়ে গেছে সেই শোকে। সবকিছু শুনে তিনি হ্যামলেটের উপর বেজায় রেগে গেলেন। সুযোগ বুঝে সে রাগকে আরও উসকিয়ে দিলেন ক্লডিয়াস। তিনি লিয়ার্টিসকে বললেন, তোমার বাবা ছিলেন আমার অনুগত, খুবই বিশ্বস্ত এক মন্ত্রী। তার মৃত্যুর প্রতিশোধ অবশ্যই নিতে হবে। তবেই শান্তি পাবে তাঁর আত্মা। সেই সাথে দেশের মানুষও পরিচয় পাবে তোমার পিতৃভক্তির। মায়ের সামনে পাগলামোর ভান করে অন্যায়ভাবে সে খুন করেছে তোমার বাবাকে। এখন তোমার একমাত্র কর্তব্য হ্যামলেটের অপরাধের জন্য তাকে যথোচিত শাস্তি দেওয়া। তবে মনে রেখ, উত্তেজিত হয়ে কোনও কাজ করতে যেও না, তাতে বিপদের সম্ভাবনা আছে। দেশের মানুষ এখনও ভালোবাসে হ্যামলেটকে। এবার তুমি ভেতরে ভেতরে তৈরি হও প্রতিশোধ নেবার। আর আমার উপর ছেড়ে দাও পুরো ব্যাপারটা, ব্যবস্থা যা করার তা আমিই করব।

    এবার রাজা ক্লডিয়াস এক নতুন মতলব আঁটলেন হ্যামলেটকে হত্যা করার। তিনি আয়োজন করলেন তার রাজ্যের ভেতর এক তলোয়ার প্রতিযোগিতার। হ্যামলেট ও লিয়ার্টিস-উভয়েই ভালো তলোয়ারবাজ হিসেবে পরিচিত ছিলেন দেশের অল্পবয়সি যুবকদের কাছে। ক্লডিয়াস স্থির করলেন হ্যামলেটকে মেরে ফেলতে তার এই খ্যাতিকেই তিনি কাজে লাগাবেন। প্রতিযোগিতায় যে তলোয়ার ব্যবহৃত হয় তার ফলা থাকে ভোঁতা, কিন্তু ক্লডিয়াসলিয়ার্টিসকে বোঝালেন যে তার ও হ্যামলেটের–উভয়ের হাতেই থাকবে ধারালো তলোয়ার, যার ফলা হবে খুবই ছুচোলো। আর লিয়ার্টিসের তলোয়ারের দু-ধারে এবং ফলায় মারাত্মক বিষ মিশিয়ে রাখবেন তিনি। সে বিষ এমনই তীব্র যে তার সংস্পর্শে এলেই মৃত্যু অবধারিত। এছাড়া হ্যামলেটের মৃত্যুকে নিশ্চিত করার জন্য অন্য ব্যবস্থাও তিনি করেছেন বলে জানালেন ক্লডিয়াস। তলোয়ারের আঘাতে যদি হ্যামলেটের মৃত্যু না হয়, তা হলে মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করতে তার জন্য নির্দিষ্ট শরবতের গ্রাসে মিশনো থাকবে বিষ–এ আশ্বাসও তিনি দিলেন। লিয়ার্টিসকে। খেলার ফাকে যখন হ্যামলেটের তেষ্টা পাবে, তখন যাতে বিষ মেশানো শরবত তার হাতে তুলে দেওয়া হয়, সে ব্যবস্থাও করে রাখবেন তিনি।

    পলোনিয়াসের মৃত্যুর জন্য হ্যামলেটের উপর যতই রেগে থাকুক। লিয়ার্টিস, সে কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারছে না তলোয়ার খেলতে খেলতে এভাবে তাকে মেরে ফেলার জন্য ক্লডিয়াসের পরিকল্পনাকে। এ কাজ করতে বিবেকে বাধ্যছে তার। ঠিক সে সময় এক আকস্মিক দুর্ঘটনায় মারা গেল তার প্রিয় বোন ওফেলিয়া। এবার ক্লডিয়াস সুযোগ পেলেন লিয়ার্টিসের মন থেকে বিবেকের বাধা মুছে ফেলার।

    ঘটনাটা এভাবেই ঘটল। পাগল হবার পরেও কিন্তু ওফেলিয়া ভুলতে পারেনি। হ্যামলেটকে। একদিন কেন জানি তার মনে হল ঐ হ্যামলেটের সাথেই বিয়ে হবে তার। কথাটা মনে হতেই সে নিজেকে ফুল-মালায় সাজিয়ে ঐ সাজেই নদীর ধারে হাজির হল। হঠাৎ কী খেয়াল হল তার, নদীর ধারে একটি গাছে উঠল ওফেলিয়া। বাড়িয়ে দেওয়া হাতের মতো গাছের একটি পলকা ডাল এগিয়ে এসেছিল নদীর উপর। ওফেলিয়া সেই ডালে চেপে বসল।

    ওফেলিয়ার ভার সইতে পারল না সেই পলকা ডাল। মাচু করে ভেঙে গেল আর সেই সাথে ওফেলিয়া পড়ে গেল জলে। খরস্রোতা সেই নদীর জলে পড়তে না পড়তেই ওফেলিয়া তলিয়ে গেল অতলে। পরদিন তার মৃতদেহ ভেসে উঠতেই, সবার আগে লিয়ার্টিসের কানে এল সে খবর। নদীর ধারে গিয়ে তিনি দেখলেন যে তার পাগলি বোনের মৃতদেহের পরনে রয়েছে বিয়ের কনে সাজতে–হয়তো বেচারির সাধ হয়েছিল বিয়ের আগে। বিয়ের সাজ কথাটা ভেবে একটা চাপা। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন লিয়ার্টিস।

    রাজধানীতে ফিরে এসে ওফেলিয়ার মৃত্যুর কথা শুনে ভেঙে পড়লেন হ্যামলেট নিজেও।

    হ্যামলেট স্থির করলেন প্রেমিককে সমাধি দেবার সময় তিনি উপস্থিত থাকবেন। বন্ধু হোরেশিওর সাথে দেখা করে তারই সাথে সমাধিস্থলে চলে এলেন তিনি।

    সে সময় কবর খুঁড়তে খুঁড়তে দুজন মজুর আপনমনে ভালোবাসার গান গাইছিল। তা শুনে হোরেশিওর দিকে তাকিয়ে হ্যামলেট বললেন, দেখেছে হোরেশিও, কী আশ্চর্য ব্যাপার! এমন ভালোবাসার গান মানুষ কি কবর খুঁড়তে খুঁড়তে গাইতে পারে।

    হোরেশিও উত্তর দিলেন, বন্ধু! এ খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। ওদের জীবনের বেশির ভাগ কেটে গেছে কবর খুঁড়তে খুঁড়তে। তাই ওরা ভুলে গেছে মৃত্যুশোক বা কবরের অন্ধকারে থাকা বিভীষিকাকে। সাধারণ মানুষের মতো মৃত্যুর ব্যাপারে যদি তাদের কোনও অনুভূতি থাকত, তাহলে এ কাজ তারা কখনই করতে পারত না।

    হ্যামলেট এগিয়ে এসে মাটি-কাটা মজুরদের একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, যে কবরটা খুঁড়ছ তা কি কোনও পুরুষের জন্য?

    এক ঝলক হ্যামলেটের দিকে তাকিয়ে জবাব দিল লোকটি, আজ্ঞে হুজুর, তা নয়।

    তা হলে কি কোনও নারীর জন্য?? জানতে চাইলেন হ্যামলেট।

    লোকটি উত্তর দিলে, না, তাও নয়!

    অবাক হয়ে বললেন হ্যামলেট, তাহলে কার জন্য খুঁড়ছ কবরটা?

    দার্শনিকের মতো জবাব দেয় লোকটি, যার জন্য কবর খুঁড়ছি তার এখন শুধু একটাই পরিচয়মৃতদেহ। তবে একদিন সে ছিল অপরূপ সুন্দরী কমবয়সি এক নারী। তার কথা শেষ হতে হতেই ওফেলিয়ার মৃতদেহ নিয়ে সেখানে হাজির হলেন তার বড়ো ভাই লিয়ার্টিস, সাথে রাজা ক্লডিয়াস আর রানি গারট্রড। দূর থেকে তাদের দেখতে পেয়ে হ্যামলেট আর হোরেশিও পড়লেন কিছুটা দূরে এক সমাধিস্তম্ভে লুকিয়ে।

    ওফেলিয়াকে কবরে শোয়াবার পর উপস্থিত সবাই নিয়মানুযায়ী তার কবরের উপরে ছড়িয়ে দিল তিন মুঠো মাটি। প্রিয় ছোটো বোনটিকে শেষ বিদায় জানাবার সময় নিজেকে আর স্থির রাখতে পারল না লিয়ার্টিস, কান্নায় ভেঙে পড়ল সে। তার সেই বুকফাটা কান্না শুনে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারলেন না হ্যামলেট। ছুটে এসে দাঁড়ালেন লিয়ার্টিসের সামনে। হাত-পা নেড়ে পাগলের মতো অঙ্গভঙ্গি করে লিয়ার্টিসকে বললেন হ্যামলেট, বৃথাই তুমি কান্নাকাটি করছ তোমার বোনের জন্য। তার প্রতি আমার যে ভালোবাসা, তোমার ঐ ভালোবাসা তার কাছে কিছুই নয়। ওফেলিয়ার জন্য তুমি কি একটা গোটা কুমির খেতে পোর? না, তুমি পার না, কিন্তু আমি পারি। তুমি কি কবরের ভেতর তার পাশে শুয়ে থাকতে পারবে? না, তুমি পারবে না, কিন্তু আমি পারি।

    চরম শোকের সেই চরম মুহূর্তে হ্যামলেটের এরূপ ব্যবহারে প্রচণ্ড উত্তেজিত হল লিয়ার্টিস। খাপ থেকে তলোয়ার বের করে সে ছুটে গেল হ্যামলেটের দিকে। সাথে সাথে তার হাত ধরে টেনে তাকে শাস্ত করলেন রাজা ক্লডিয়াস। তিনি লিয়ার্টিসের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন, আঃ লিয়ার্টিস! কী করছ তুমি। জানি তো ওর মাথার ঠিক নেই; হ্যামলেট আর সুস্থ নয়, পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছে। ও। কী লাভ, পাগলের সাথে ঝগড়া করে?? রাজার সম্মান রাখতে লিয়টিস তার তলোয়ার ঢুকিয়ে দিল খাপে, এবার রাজা তাকে বললেন, আমার পরিকল্পনার কথা মনে করে মনকে শাস্ত রাখা লিয়ার্টিস। নিজেকে সংযমী রাখ চরম শোকের মুহূর্তেও।

    দেখতে দেখতে তলোয়ার প্রতিযোগিতার দিন এগিয়ে এল। অবশ্য তার আগেই হ্যামলেট সাক্ষাৎ করেছেন লিয়ার্টিসের সাথে। ওফেলিয়ার সমাধিস্থলে তার আচরণের জন্য তিনি ক্ষমা চেয়েছেন লিয়ার্টিসের কাছে। হয়তো হ্যামলেট এ ব্যাপারে খুব বিলম্ব করায় তিনি আর কিছুইবললেন না তাকে।

     

    সারা রাজ্যের মানুষ এসে ভেঙে পড়েছে হ্যামলেট আর লিয়ার্টিসের তলোয়ারবাজি দেখতে। তারই মাঝে সবার নজর এড়িয়ে তলোয়ারবাজির নিয়ম ভঙ্গ করে দুই প্রতিযোগীর জন্য এমন তলোয়ার রেখেছেন যার দুদিক ক্ষুরের মতো ধারালো আর ফলাটাও চুচোলো। রাজা ক্লডিয়াস তার পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দিতে লিয়ার্টিয়াসের তলোয়ারের দুধারে ও ফলায় তীব্র বিষ মাখিয়ে রেখেছেন তিনি। সে বিষ একবার রক্তে মিশলে মৃত্যু নিশ্চিত। এর পাশাপাশি তিনি হ্যামলেটের জন্য তৈরি করে রেখেছেন বিষ মেশান শরবত। লড়াই করতে করতে হ্যামলেট যখন ক্লান্ত হয়ে পড়বে তখন সেই বিষ মেশান শরবত যাতে তার হাতে তুলে দেওয়া যায় সে ব্যবস্থাও করে রেখেছেন তিনি।

    রাজা ক্লডিয়াস মঞ্চের উপর বসেছেন তার নির্দিষ্ট আসনে, আর রানি গারট্রড বসেছেন তার পাশে। পদমর্যাদা অনুসারে মন্ত্রী, পারিষদ আর সেনাপতিরা বসেছেন তাদের পাশে। রাজ্যের মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়েছে। মঞ্চের সামনে আর দিকে।

    তলোয়ারবাজি শুরু হবার আগে ওফেলিয়ার জন্য হ্যামলেটের মনে জেগে উঠল গভীর অনুতাপ। তিনি লিয়ার্টিসের দু-হাত ধরে বললেন, বন্ধু লিয়ার্টিস, অতীতে আমি যদি কোনও অন্যায় বা ভুল-ত্রুটি করে থাকি, তাহলে এ মুহূর্তে সেসব ভুলে যাও তুমি। মনে রেখ, সেদিনের হ্যামলেট কিন্তু আজকের মতো স্বাভাবিক মানুষ ছিল না, তখন সে ছিল পুরোপুরি উন্মাদ। পুরনো বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে তোমায় বলছি, তুমি ভুলে যাও সে দিনের উন্মাদ হ্যামলেটকে।

    আমার মনে আর কোনও ক্ষোভ নেই তোমার প্রতি, বলল লিয়ার্টিস, আজ থেকে তুমি আর আমি দুজনে আগের মতোই বন্ধু।

    সুরাভর্তি পানপত্রে রাজা ক্লডিয়াস চুমুক দেবার সাথে সাথে দামামা আর ভেরি বেজে উঠল। চারদিক থেকে। তার সাথে তাল দিয়ে শুরু হল দুই পুরনো বন্ধুর তলোয়ারবাজি। এ প্রতিযোগিতার চলিত নিয়ম ছিল, এই প্ৰতিযোগীরা কেউ কাকে আঘাত করবে না। হ্যামলেট খেলতে লাগলেন সে নিয়ম মেনে। কিন্তু লিয়ার্টিসের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। হ্যামলেটকে জোরদার আঘাত করার জন্য মঞ্চ থেকে বারবার তাকে ইশারা করছেন রাজা ক্লডিয়াস। লিয়ার্টিস ভেবে পাচ্ছে না যেখানে নিয়ম মেনে খেলছেন হ্যামলেট, সেখানে সে কী করে নিয়ম ভাঙবে। আর সে ভাবে হ্যামলেটকে আঘাত করতে বিবেকে লাগছে তার। খেলার মাঝে এক সময় লিয়ার্টিসকে কোণঠাসা করে ফেললেন হ্যামলেট, ফলে বিবেকের বাধা ভুলে গিয়ে ক্রমশ উত্তেজিত হতে লাগল লিয়ার্টিস।

    খেলার প্রথম রাউন্ড শেষ হবার পর মার কাছে এসে দাঁড়ালেন। ক্লাস্ত হ্যামলেট। ক্লডিয়াসের দিকে তাকিয়ে বললেন রানি, হ্যামলেট তৃষ্ণাৰ্ত, ওকে শরবত দাও। ঠিক এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন ক্লডিয়াস। সাথে সাথেই তিনি বিষ মেশান শরবতের গ্লাস রানির হাতে তুলে দিলেন। কিন্তু রানি সে গ্লাস হ্যামলেটের হাতে দেবার পূর্বেই বেজে উঠল দ্বিতীয় রাউন্ড শুরুর বাজনা। সাথে সাথেই মার কাছ থেকে ছিটকে এসে হ্যামলেট দাঁড়ালেন খেলার জায়গায়। সেখান থেকে চেঁচিয়ে মাকে বললেন খেলার শেষে তিনি শরবত খাবেন। শুরু থেকে একইভাবে খেলা দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়েছেন রানি। তাই শরবতের গ্লাসটা রাজাকে ফিরিয়ে না দিয়ে তিনি নিজেই কয়েক চুমুকে খেয়ে ফেললেন শরবতটুকু। ক্লডিয়াস স্বপ্নেও ভাবেননি যে এরূপ ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু তখন আর কিছু করার নেই। ক্লডিয়াস একমনে খেলা দেখতে লাগলেন বুকে একরাশ উত্তেজনা নিয়ে।

    দ্বিতীয় রাউন্ড চলার সময় হ্যামলেটকে তাতিয়ে তুলতে ইশারা করলেন ক্লডিয়াস। সাথে সাথেই তলোয়ার দিয়ে হ্যামলেটকে জোর আঘাত করল লিয়ার্টিয়াস।

    বন্ধুকে লক্ষ করে হ্যামলেট বললেন, এ কি করছ? তুমি কি খেলার নিয়ম ভুলে গেছ?

    আমি খুব দুঃখিত–বলল লিয়ার্টিস, উত্তেজিত ছিলাম বলে আমার খেয়াল ছিল না। কিন্তু কিছুক্ষণ বাদেই বিষ মাখানো তলোয়ার দিয়ে হ্যামলেটের গায়ে আবার আঘাত করল লিয়ার্টিস। এবার আর ধৈর্য রইল না হ্যামলেটের। তিনিও তার তলোয়ার দিয়ে জোর আঘাত করলেন লিয়ার্টিসকে।

    হ্যামলেটের শরীর থেকে রক্ত করেছিল। লিয়ার্টিসের আঘাতের পর থেকেই। তার মতলব হাসিল হয়েছে দেখে চেঁচিয়ে বলে উঠলেন, লড়াই থামাও এখনি। কিন্তু লড়াই বন্ধ করার বাজনা বেজে ওঠার আগেই হ্যামলেট তার তলোয়ারের আঘাতে ফেলে দিলেন। লিয়ার্টিসের হাতের তলোয়ার। লিয়ার্টিসের তলোয়ারটা মাটিতে পড়ে যেতেই সেই বিষমাখানো তলোয়ার তুলে নিয়ে হ্যামলেট বসিয়ে দিলেন লিয়ার্টিসের বুকে।

    রানিকে এলিয়ে পড়তে দেখে মঞ্চে উপস্থিত সবাই চেঁচিয়ে ওঠে বললেন, কেঁহুশ হয়ে পড়েছেন রানি। জ্ঞানলোপের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে রানি টের পেলেন যে শরবত তিনি খেয়েছেন, তাতে মেশানো ছিল বিষ। তিনি চেঁচিয়ে বললেন, আমি মারা যাচ্ছি… তোমার শরবতে বিষ মেশানো ছিল হ্যামলেট…আমি চললাম।

    হ্যামলেট অবাক হয়ে তাকালেন তার মার দিকে। ঠিক সে সময় বলে উঠল লিয়ার্টিস, শোন বন্ধু হ্যামলেট, আর কিছুক্ষণ বাদে তুমি আর আমি, দুজনেই চিরকালের মতো ছেড়ে যাব এ পৃথিবী। তোমাকে মেরে ফেলার জন্য রাজা নিজেই বিষ মাখিয়ে ছিলেন আমার তলোয়ারে। আমাদের দুজনের রক্তেই মিশে গেছে সে বিষ। বন্ধু, বিদায়–বলতে বলতে এলিয়ে পড়ল লিয়াটস। সীমাহীন ক্ৰোধে তখন সত্যিই উন্মাদ হয়ে উঠেছেন হ্যামলেট। বিযমাখানো তলোয়ারটা তুলে নিয়ে তিনি এসে দাঁড়ালেন মঞ্চে। কেউ কিছু বোঝার আগেই সে তলোয়ারটা তিনি জোরে বসিয়ে দিলেন ক্লডিয়াসের বুকের ভেতরে।

    তুমিই ছড়িয়েছ এ বিষ! তাই তোমাকে সেটা ফিরিয়ে দিলাম, চেঁচিয়ে বলে উঠলেন হ্যামলেট।

    রাজা, রানি, ক্লডিয়াস-সবাই এখন মৃত্য। যে অন্যায়ের প্রতিবিধান চেয়েছিলেন বাবার প্রেতিমূর্তি, সেটাই করেছেন হ্যামলেট। কিন্তু এবার তার মাথা ঘুরতে শুরু করেছে, টলছে তার পা। হ্যামলেট বুঝতে পারলেন তার মৃত্যু নিকটেই। কিছুক্ষণ বাদেই তিনি মাটিতে ঢলে পড়লেন। সাথে সাথেই ছুটে এলেন তার পুরোনো বন্ধু হোরেশিও। হ্যামলেটের মাথাটা তুলে নিলেন নিজের কোলে।

    শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার আগে কোনও মতে মুখ তুলে বললেন হ্যামলেট, সবাইকে ডেনমার্কের হতভাগ্য যুবরাজের কাহিনি শোনাবার জন্য একমাত্ৰ তুমিই বেঁচে রইলে হোরেশিও।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleডেজার্ট গড – উইলবার স্মিথ
    Next Article Henry VI (Part 1, 2, 3) – William Shakespeare

    Related Articles

    উইলিয়াম শেক্সপিয়র

    Henry IV (Part 1, 2) – William Shakespeare

    July 14, 2025
    উইলিয়াম শেক্সপিয়র

    Henry VI (Part 1, 2, 3) – William Shakespeare

    July 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.