উনিশে ডিসেম্বর মরশুমের শীতলতম রাত – ৫
৫
মাসখানেক হল সুরজিৎ বদলি হয়েছে। মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের চক্রবর্তী বাড়ি এখন যেন আরও খালি খালি। বন্দনার বাপের বাড়িতেও এমন কেউ নেই, যাকে এনে এখানে রাখবে। এদিকের আত্মীয় স্বজনও যারা আছে, সবাই দূরে দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আর তাছাড়া নিজেদের বাড়ি, ঘর সংসার ফেলে আজকাল আর কেউ কারোর বাড়িতে গিয়ে স্রেফ সঙ্গ দানের জন্য থাকতে চায় না। কাজেই বন্দনাকে একলা হাতে সবদিক সামলে নিতে হচ্ছে। বলাইয়ের হাবভাব এখন অনেকটা স্বাভাবিক এটাই যা বাঁচোয়া। সে আর ছবিও আঁকে না, এটা একদিকে যেমন দুঃখের, অন্যদিকে স্বস্তির। অন্তত বন্দনার তো তাই-ই মনে হয়।
বলাই এখন আর আঁকতে পারে না এই কথাটা মনে পড়লেই মাঝে মাঝে তার মনে হয়, ওকে একটা আঁকার স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া দরকার, এমন আঁকার হাত হুট করে নষ্ট হয়ে যাবে, এটা মেনে নিতেও কষ্ট হয়। কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ে, স্বর্গত শ্বশুর মশাইয়ের কথাগুলো। তিনি বলতেন, “ধরাবাঁধা পথে, দাদুভাইকে আঁকা শেখানোর দরকার নেই। ওর যা আছে, রক্তে আছে। কবিতা লেখার মতো ছবি আঁকাও কাউকে বেঁধে শেখানো যায় না। ওকে শেখাতে গেলে ওর সহজাত ক্ষমতাটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।” এই চিন্তা করে বলাইকে এখনও আঁকার স্কুলে দেওয়া হয়নি।
সে স্কুলে যায়, আর বাড়ি ফিরেই নিজের ঘরে বসে থাকে, কখনও বই নিয়ে, কখনও কম্পিউটারের সামনে। কথাবার্তা বরাবরই সে কম বলে। স্কুলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানেও অধিকাংশ সময়ে তাকে চুপ করে বসে থাকতেই দেখা যায়। বন্ধুবান্ধব বেশি নেই তার, যে দু-একজন আছে তারাও ওকে বেশি ঘাটাতে যায় না। কেন এমন হয়, এর উত্তর বন্দনার কাছেও নেই। কবে এই অবস্থা স্বাভাবিক হবে, আদৌ হবে কিনা, তাও সে জানে না। সুরজিৎকে বললেই, সে বলে— “বাবার মৃত্যুটা খুব সামনে থেকে দেখেছে তো, সেটা হয়তো ও মেনে নিতে পারে না আজও। তাই ওরকম করে। ওকে তুমি আরও সময় দাও বন্দনা, দেখবে আসতে আসতে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”
কিন্তু মায়ের মন, ছেলের সবকিছুতেই আশঙ্কার কালো মেঘ দেখতে পায়। তাই সব কাজকর্মের ফাঁকে যখনই এসব কথা মনে পড়ে, তখনই মনটা ভীষণরকম খারাপ হতে শুরু করে তার। আরও একটা ব্যাপারে এখনও তার মনের ভিতর চাপা অস্বস্তি রয়ে গেছে, পলাশপুর, এই জায়গাটা নিয়ে। কেন এই অস্বস্তি সে নিজেই আজও জানে না। কিন্তু নামটা সুরজিতের মুখে শোনার পর থেকেই অস্বস্তিটা আছে, রয়ে গেছে।
ওদিকে সুরজিৎ তখন পলাশপুরে নিজেকে খানিকটা গুছিয়ে নিয়েছে বা বলা ভালো, গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এককথায় বলতে গেলে পলাশপুর ঝাড়খণ্ডের এক প্রত্যন্ত গ্রাম। কাছাকাছি বড় শহর বলতে গিরিডি। তাও প্রায় মাইল পঞ্চাশের পথ। দিনে গোটা পাঁচেক লোকাল ট্রেন যাতায়াত করে। আর গিরিডি থেকে দিনে দুটো বাস যায় পলাশপুর আসার। এছাড়া আর যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই।
একটা দোচালা একতলা বাড়িকে সরকারি বাংলোর তকমা দিয়ে সেখানেই সুরজিতের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা একটা বিরাট সেকেলে অট্টালিকার সামনের অংশ। এটুকুই বাসযোগ্য, পিছনে জঙ্গল আর মূল বাড়ির ভাগ্নাংশ।
ঢালাই করা অট্টালিকা এখানে প্রায় নেই বললেই চলে। প্রচুর গাছ পালা, একটা ছোট শুকনো নদী আর দূরের দিগন্তে অনুচ্চ পাহাড়ের সারি।
বসন্তকালে পলাশ ফুল পড়ে গোটা গ্রাম লাল হয়ে যায়। তাই এই জায়গার নাম পলাশপুর। পশ্চিমাঞ্চলের এই সব এলাকা একসময় বাঙালিদের বড় প্ৰিয় ছিল। স্বাস্থ্য উদ্ধারের আশায় অনেকেই এখানে এসে মাসের পর মাস কাটিয়ে যেত। অনেক বাঙালি বাড়ি করে চলে এসেছিল এসব এলাকায়। সেসব বাড়ি আজও আছে, তবে দেখভালের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে।
সুরজিৎকে আপাতত মাস ছয়েক থাকতে হবে এখানে। পুরো এলাকা সার্ভে করে তার রিপোর্ট দাখিল করতে হবে অফিসে।
তার মতো শহুরে লোকের পক্ষে এখানে থাকাটা বেশ অশান্তির। দিনের বেশির ভাগ সময়ে ইলেকট্রিসিটি নেই। আর থাকলেও ভোল্টেজের এমন অবস্থা যে পাখার দিকে তাকিয়ে থাকলে বোঝা যাবে পাখা ঘুরছে, তবে তার হাওয়া বিশেষ গায়ে লাগে না। বাল্বের অবস্থাও প্রায় একই। ইদানীং একটা মোবাইলের টাওয়ার বসানো হয়েছে বটে, তবে তার নেটওয়ার্ক সিগন্যাল পেতে গেলে হাপিত্যেশ করে বসে থাকতে হয়। ইন্টারনেটের কথা তো আর না বলাই ভালো। আধমরা দামি ফোনটা হাতে নিয়ে অসহ্য অস্থিরতায় ঘরবার করতে থাকে সুরজিৎ।
গ্রামের পরিধি ছোটো। যে ক’ঘর লোকজন এখানে বাস করে, সবাই সবাইকে চেনে, সবার মধ্যে ভারি মিলমিশ। এই একটা ব্যাপার সুরজিতের বেশ লাগে। এই লোকজনের মধ্যে বেশিরভাগই অশিক্ষিত আর গাঁইয়া, শুধু দু-একজন ছাড়া। এখানকার মাটি পাথুরে, বেশির ভাগটাই চাষের অযোগ্য। তবে কোনো কোনো জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে চাষ বাস হয়। এছাড়া এদের আর-একটা পেশা হল মদ তৈরি। এখানকার গাছের এক বিশেষ ফল থেকে একরকম মদ তৈরি করে বাড়ির মেয়ে বউরা। এই মদের নাকি বিহার-উত্তর প্রদেশে বিশাল বাজার। দেশের বাইরেও রপ্তানি হয়।
গ্রামে থাকার মধ্যে আছে, একটা শিব মন্দির, একটা ভাঙাচোরা স্কুল, একটা ছোট স্বাস্থ্যকেন্দ্র আর একটা পুলিশ আউটপোস্ট। মাস কয়েক যেতে না যেতেই জায়গাটা যেন একটু একটু করে ভালো লাগতে শুরু করেছে সুরজিতের। অভ্যাস মানুষকে আসতে আসতে বদলে ফেলে। মনন ও রুচির পরিবর্তন ঘটিয়ে দেয়। এই একমাসে শহুরে জীবনের ফেলে আসা চাহিদাগুলো কেমন যেন কমে যেতে থাকে তার কাছে। একসময় সুরজিৎ খেয়াল করে, এখানকার ছোট ছোট পাওয়াগুলোকে ভালোবাসতে শুরু করেছে সে। এখানকার মানুষজনগুলো এত সাধাসিধে, এত ভালো, গ্রামে এসে না থাকলে সে কখনও জানতে পারত না। এখানে সবাই ওকে সরকারিবাবু বলে ডাকে। সরকারের প্রতিনিধি হয়ে যেহেতু সে এসেছে, তাই সবাই একটু বেশিই খাতির করে তাকে। কারোর বাগানের ফল, কারোর ক্ষেতের টাটকা সবজি, কারোর বাড়ির মোষের ঘন দুধ সব সকাল সকাল এসে হাজির হয় কোয়ার্টার বাংলোর দালানে। বারণ করেও লাভ নেই, এটা তারা করবেই। এটা করতে পেরে মানুষগুলো যেন বর্তে যায়। এই ব্যাপারগুলোও সুরজিতের প্রথম প্রথম খুব অস্বস্তি লাগলেও এখন অনেকটা সয়ে গেছে।
সকালবেলা কোয়ার্টার বাংলোর দালানে বসে এসবই আলোচনা হচ্ছিল সুরজিৎ আর হারাধনবাবুর মধ্যে। হারাধন মুখার্জী। এই গ্রামের একমাত্র বাঙালি অধিবাসী। উনিও কলকতার বাসিন্দা। ভবানীপুরের নিজের বাড়ি ছেড়ে এখানে এসে রয়েছেন। এই লোকটাকে কাছে পেয়ে সুরজিৎ যেন প্রাণে বেঁচে গেছে। ওঁর গায়েও শহুরে গন্ধ রয়েছে যে। সুরজিৎ তখন এই গণ্ডগ্রামের প্রবাস জীবনে শহুরে মানুষের দেখা পেয়ে ধন্য। হারাধনবাবু অবিশ্যি খুব ভালো মানুষ। কয়েকদিনের মধ্যেই সুরজিৎকে আপন করে নিয়েছেন। দিনে অন্তত দু’বার তাঁর সরকারি মশাইয়ের মুখ দেখা চাই-ই চাই।
হারাধন বাবু অবশ্য ওর মতো ঠেলায় পড়ে এখানে আসেননি। এসেছেন নিজের মর্জিতে। কী একটা ব্যাপার নিয়ে উনি রিসার্চ করছেন, লেখালিখি করছেন। সেই তথ্য সংগ্রহের জন্য সারা দেশ নাকি এরকম ঘুরে বেড়ান। এখন মাসখানেক হল এই পলাশপুরে এসে রয়েছেন। বটতলার পিছনে হনুমান মন্দিরের পাশে এক চালা কুঁড়ে ঘরে থাকেন তিনি। চেহারা দেখে বয়স আন্দাজ করা কঠিন। মাথায় একরাশ ধবধবে পাকা চুল, চোখে পুরোনো দিনের মোটা ফ্রেমের হাই পাওয়ারের চশমা। বয়স সত্তরের উপর তো বটেই, কিন্তু চেহারায় আর মেরুদণ্ডের ঋজুতায় তার ছাপ পড়েনি। সারাদিন ঘরে বইপত্তরে মুখ গুঁজে বসে থাকেন, আর লেখালিখি করেন। ভোর বেলা আর বিকাল বেলা বেড়াতে বেরোন। রোজ সেই দুই সময়ে এসে সুরজিতের সঙ্গে খেজুর করে যান।
সুরজিৎ এখানে আসার পরের দিনই সেই ভদ্রলোক যেচে আলাপ করতে এসেছিলেন। বিদেশ বিভূঁইয়ে এসে বাঙালির সঙ্গ, আর কার না ভালো লাগে! তাই আলাপ জমে উঠেছিল। সেই থেকে রোজই সকালে হাঁটতে হাঁটতে তিনি সুরজিতের কোয়ার্টারে চলে আসেন। চা জলখাবার খেতে খেতে নানা বিষয়ে গল্প আড্ডা হয়, তারপর যে যার কাজে বেরিয়ে পড়ে।
আজ গল্প হচ্ছিল এই পলাশপুরে এককালে অনেক বাঙালির বাস ছিল, তাই নিয়ে। রামবিলাস বলে এক গাঁজা খোর, পাগলাটে ছোকরা এই কোয়ার্টার বাংলো দেখভাল করে। সে দালানে এসে দুকাপ চা আর কিছু খাবার রেখে চলে গেল।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সুরজিৎই প্রথমে বলল, “আচ্ছা হারাধন বাবু, আপনি তো এই জায়গাটা নিয়ে অনেক পড়াশুনো করেছেন, এখানে তো একসময় অনেক বাঙালি ছিল তাই না?”
হারাধনবাবু একটু আগে এক টিপ নস্যি নিয়েছিলেন। ঝোলা পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে বার কয়েক নাকটা রগড়ে নিয়ে বললেন, “না ভাই, আমি ঠিক এই জায়গাটা নিয়ে পড়াশুনো করছি না, তবে যেটা নিয়ে করছি, তার সঙ্গে এই জায়গাটা বিশেষ ভাবে জড়িত। তাই এখানে আসতে হয়েছে আমায়।
সুরজিৎ মাথা নেড়ে চায়ে চুমুক দেয়।
হারাধনবাবু বলে চলেন, “তুমি ঠিকই বলেছ, এইসব জায়গা একসময় বাঙালিদের খুব প্ৰিয় ছিল। স্বাস্থ্য উদ্ধারের আশায় অনেক বাঙালি তখন এখানে এসে থাকত। তাদের অনেকেই আর ফেরত যায়নি, অগাধ টাকার বেশ খানিকটা খরচ করে এখানে বাড়ি বানিয়ে তারা স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করেছিল। তুমি এখানকার পাড়াগুলোর নাম খেয়াল করলেই দেখতে পাবে, সব নামেই বাংলার ছাপ। পলাশপুর নামটাও তো বাঙালিদের দেওয়া। ত্রিশ-বত্রিশ থেকে শুরু করে পঞ্চাশ-ষাট সাল পর্যন্ত, এই এলাকার কিন্তু ভালোই রমরমা ছিল। এখনকার মতো ম্যাদামারা ছিল না মোটেই। বড় স্কুল ছিল, বিশাল দুর্গামণ্ডপ ছিল, দো তলা, তিন তলা বড় বড় সব অট্টালিকা ছিল। বিলাস প্ৰিয় বাঙালিরা বাগান বাড়ি তৈরি করেছিল একের পর এক। সেসব বাড়ির দেওয়াল আর তার ভগ্নাবশেষে এখনও এখানকার এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এই যেমন ধরো এই বাড়িখানা… এই বলে হারাধনবাবু এই কোয়ার্টার বাংলোর দিকে ইঙ্গিত করলেন।
সুরজিৎ অবাক হয়ে জানতে চাইল, এই বাড়িটা কী?
— এটাও তো এককালে এক ডাকসাইটে বাঙালি জমিদারের বাগানবাড়ি ছিল। বহুবছর একভাবে পড়ে ছিল, চারপাশে আগাছার জঙ্গল হয়ে গেছিল। তুমি যে দুটো ঘর নিয়ে থাকো, ও-দুটো তো একদম বাড়ির সামনের অংশ, হালে মেরামত করে বাসযোগ্য করে তোলা হয়েছে। পিছন দিকে জঙ্গল সরিয়ে আর ক’পা হেঁটে গেলেই দেখতে পাবে মূল বাড়িটা। এখন অবশ্য বাড়ির কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। ভাঙাচোরা অবস্থা, নেহাৎ সেকেলে মজবুত বাড়ি বলে এখনও পুরোপুরি ধসে যায়নি এই যা।
এই বলে হারাধনবাবু একটু থামলেন। তারপর বললেন— আপনি তো এত দিন আছেন হেতায়, বাড়ির পিছন দিকটা গেছেন কখনও?
সুরজিৎ দুদিকে মাথা নেড়ে না বলে। আর মনে মনে ভাবে, ওকে সুখে থাকতে কি ভূতে কিলিয়েছে? যে খামোখা মরতে, ওই আগাছার জঙ্গল ঠেলে বাড়ির পিছনে পা দেবে?
হারাধনবাবু বললেন— ঠিক আছে, একদিন দুজনে মিলে দেখতে যাব না হয়।
সুরজিৎ ঠিক বুঝে পেল না, বাড়ির পিছনের অংশে ওই পোড়োবাড়ি দেখতে যাওয়ার কী এমন দরকার আছে? কিন্তু মনে এলেও এই কথাটা ঠিক বলে উঠতে পারল না। একজন সত্তর বছরের বুড়ো যদি উৎসাহ নিয়ে সেখানে যেতে চান, তার মতো যুবকের পক্ষে পিছিয়ে আসাটা বেশ লজ্জার হয়ে যাবে। অগত্যা মাথা নেড়ে সায় দিল সে।
কথা বলতে বলতে সুরজিৎ এতক্ষণ খেয়াল করেনি, বাগানের পিছনে দরমার বেড়ার আড়ালে রামবিলাস এতক্ষণ আড়ি পেতে তাদের কথা শুনছিল। আশ্চর্য! কী এমন কথা এখানে বলা হচ্ছে যে লুকিয়ে লুকিয়ে তা শুনতে হবে। সুরজিৎ ওদিকে একবার তাকাতেই ত্রস্ত কাঠবেড়ালির মতো সুরুৎ করে সে পিছনে ঘরে সেদিয়ে গেল। এই চাকরটার হাবভাব কেমন যেন অস্বস্তিকর। সুরজিৎ সেটা আগেও খেয়াল করে দেখেছে। কথাবার্তা কেমন অদ্ভুত, এমনকি চোখের চাহুনিটাও ঠিক স্বাভাবিক না। এতদিন সুরজিৎ ভাবত হয়তো সারাদিন গাঁজার নেশা করে থাকে বলে, এরকম লাগে। কিন্তু না, আজকের এই আচরণ বেজায় সন্দেহজনক। এরকমভাবে লুকিয়ে আড়ি পাতার মানে কী?
কথা বলতে বলতে অনেক দেরি হয়ে গেল, এখন উঠি সরকারিবাবু, ওবেলা আবার আসবখন। এই বলে হারাধনবাবু, বাইরের দিকে হাঁটা লাগালেন।
সুরজিৎও স্নান সারবে বলে ভিতরে গেল।
সারাদিন অফিসের কাজকর্মের ফাঁকে ফোঁকরে যখনই সে আনমনা হয়েছে তখনই মনে পড়েছে রামবিলাসের কথা, ওর অদ্ভুত হাবভাবের কথা।
কাজের শেষে বাড়ি ফিরতে বেশ দেরিই হয়ে গেল সুরজিতের। রোজ আরও আগে ঘরে ফেরে সে। আজ একটু দেরি হল স্টেশন ঘুরে আসতে হল বলে। এখানে স্টেশনের পাশে একটা দোকানেই একমাত্র সুরজিতের পছন্দের ব্রান্ডের সিগারেট পাওয়া যায়। তার আর স্টক ছিল না, কাজেই সিগারেট কিনে প্রায় মাইল দেড়েক হেঁটে ঘরে ফিরতে ফিরতে সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। ঘরে ঢুকতেই সে দেখে হারাধনবাবু যথারীতি সহাস্য মুখে দালানের চেয়ারে বসে আছেন।
— সেকি! আপনি কতক্ষণ? সদর পেরিয়ে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতেই প্রশ্নটা করে ফেলল সুরজিৎ।
হারাধনবাবুর হাতে কিছু একটা পত্রিকা ধরা ছিল, যেটা উনি এতক্ষণ পড়ছিলেন, ওটা ব্যাগে ঢুকিয়ে রেখে বললেন— “এই মিনিট পনেরো। আপনার জন্য বসে আছি, এক পেয়ালা চা খাব বলে, সকাল সন্ধ্যেয় আপনার এখানে চা-টা না খেলে যে দিনই খারাপ যায় মশাই।” বলেই হো হো করে হেঁসে উঠলেন সদা আলাপী মানুষটা।
সুরজিৎ তড়িঘড়ি স্নান সেরে দাওয়ায় এসে বসল। ততক্ষণে রামবিলাস দু’কাপ চা আর এক প্লেট চানাচুর এনে সামনের ছোটো বেতের টেবিলটার উপর রেখে গেছে।
রামবিলাস, অদ্ভুত আর পাগলাটে হলেও, ব্যাটার রান্নার হাত বেশ ভালোই। চা-টাও ভালোই বানায়। খেয়ে যেন ক্লান্তি দূর হল সুরজিতের। সবে আমেজ করে কাপে দু’কাপ চুমুক দিয়েছে, এমন সময় হারাধন বাবুর আবার সেই বেমক্কা প্রশ্ন— “তারপর ভেবে কী ঠিক করলেন? বাড়ির ভিতরে যাবেন নাকি?”
সুরজিৎ একটু চমকেই গেছিল হয়তো, তারপর মনের ভাব সামলে নিয়ে সে বলল— “বেশ তো, যাব’খন। একদিন।”
সুরজিতের কাছে হারাধনবাবু হলেন দুঃসময়ের বন্ধু। এই অজ্ঞাতবাসে ওঁর মতো একজন মানুষকে পাশে পেয়ে সুরজিৎ যে মনে-প্রাণে বেঁচে গেছে, তা সে ভালো মতোই জানে। বয়সের ব্যবধানটা এক্ষেত্রে বড় কথা না। বড় কথা হল, মানুষটা এই বয়সের ব্যবধানটুকু যেন বুঝতেই দেন না। এত নিবিড়ভাবে খুব কম লোকই মিশতে পারে। আর শুধু তাই-ই নয়, লোকটার সঙ্গে কথা বলেও শান্তি আছে। পুঁথিগত শিক্ষা তো আছেই, একসময় যে ভালো স্টুডেন্ট ছিলেন, তাও আর বলে দিতে হয় না। এছাড়া নানা বিষয়ে প্রচুর পড়াশুনো আছে, নানা জায়গায় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আছে, সব মিলিয়ে লোকটার সঙ্গে দুটো কথা বলে শান্তি আছে যেন। এই পাণ্ডব বর্জিত জায়গায়, যেখানে মোবাইল ফোন পর্যন্ত আধমরা, ইন্টারনেট নেই, টিভি নেই, বেঁচে থাকার সব শহুরে আধুনিক রসদই যেখানে অনুপস্থিত, সেখানে এই হারাধনবাবুর মতো মানুষের দেখা পাওয়া তো দেব দর্শনের সামিল। কাজেই এই মানুষটাকে কোনোভাবেই চটাতে চায় না সুরজিৎ। সব দিক ভেবে সে বলে— “রবিবার যাওয়া যাক বরং। আপনি সারাদিন এখানেই থেকে যাবেন। একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া হবে। হারাধনবাবুর এই প্রস্তাবে কোনো আপত্তি নেই।
চায়ের শেষ চুমুকটুকু গলায় ঢেলে সুরজিৎ বলল— “তবে কী বাড়িটা তো বেজায় বিপজ্জনক, তাই একটু ইয়ে… মানে…
— বিপজ্জনক? সেকি মোয়াই?
— বিপজ্জনক নয়?
হারাধনবাবু এক টিপ নস্যি নিয়ে বারদুয়েক সশব্দে হেঁচে নিয়ে তারপর বললেন— “আপনি কী ভূতের ভয় পাচ্ছেন নাকি?”
সুরজিৎ কথাটাকে হেঁসে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বলে— “না না আমি এমনিই বলছিলাম আর কী! বাড়ির ওদিকটার যা অবস্থা, সাপখোপ…”
সুরজিৎকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই হারাধনবাবু বলে ওঠেন— “চিন্তা নেই সেসবের ব্যবস্থা আমি করেই যাব।”
অগত্যা আর রাজি না হওয়ার কোনো ন্যায্য কারণ থাকতে পারে না। আর ভূতের ভয় কথাটা উচ্চারণ করতে সুরজিতের পৌরুষে বাঁধছে।
সুরজিতের মনের কথাটা খানিকটা আন্দাজ করে নিয়েই হারাধন বাবু বলে ওঠেন— “অলৌকিক কোনো কিছুকে ভয় পাবেন না মশাই, বরং আগ্রহী হয়ে বুঝতে চাইবেন, তাহলেই দেখবেন সব ভয় কেটে গেছে। আর আপনাকে দেখে তো খুব একটা ভীতু বলে মনে হচ্ছে না, যে বাড়িতে আপনি রাত্রি বাস করছেন, সেখানে থাকাটাও কিন্তু যথেষ্ট সাহসের।”
সুরজিতের বুকে হাতুড়ি পিটতে থাকে। সে বেতের চেয়ারটাকে সরে এনে হারাধনবাবুর আরও পাশে এসে বসে আর নীচু গলায় জিজ্ঞাসা করে— “কেন বলুন তো? আপনি কি কিছু জানেন এ-বাড়ি সম্পর্কে? আপনি তো আমার আগে এসেছেন পলাশপুর। কোথাও কিছু শুনেছেন-টুনেছেন নাকি?”
হারাধন বাবু উঠে দাঁড়িয়ে গোটা দালানটা একবার পায়চারি করে নেন। তারপর আবার এসে বসেন। সুরজিৎ বুঝতে পারে, হারাধনবাবু নিশ্চয় এ-বাড়ি সম্পর্কে কিছু একটা জানেন। সে নিজেও এখানে এসে থেকে কেমন যেন একটা অস্বস্তি বোধ করছে। ঠিক কেন এই অস্বস্তি তা সে জানে না, কিন্তু কিছু একটা মনের মধ্যে হচ্ছে, যা কাউকে বলে বোঝানো যায় না।
হারাধনবাবু গলার স্বরটাকে একদম খাদে নামিয়ে এনে বললেন— “তার আগে আপনি বলুন তো এখানে এসে ইস্তক আপনার কিছু অসুবিধা হয়েছে কিনা? আপনি নিজে কিছু টের পেয়েছেন কিনা?”
সত্যি কথা বলতে কি, এই সে নিজেই এতদিন হারাধনবাবুকে বলার চেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু ঠিক কীভাবে যে কথাটা পাড়বে সেটাই বুঝে উঠতে পারছিল না। এখন উনি নিজেই প্রসঙ্গটা তোলায়, সুরজিতের কাজটা অনেক সহজ হয়ে গেল।
হারাধনবাবু এ প্রশ্নের উত্তরে সুরজিৎ যা বলল তা অনেকটা এরকম— এখানে আসার দিন সাতেকের মধ্য থেকেই, ওইরকম একটা অস্বাভাবিক অস্বস্তি টের পেয়েছিল সুরজিৎ। শুধু রাতবিরেতেই না, দিনেদুপুরে এমন সব অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ হয়, এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কাণ্ড ঘটে, সহজ সরলভাবে যার কোনো ব্যাখ্যা মেলে না। সুরজিৎ ঠান্ডা মাথায় বহুবার নিজেকেই নিজে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু সব কিছুকেই মনের বিভ্রম বলে উড়িয়ে দিতে পারেনি। এই যেমন দু-তিন দিন আগে ঘটা একটা ঘটনা— বেলা সাড়ে নটা কী দশটা মতো হবে হয়তো। সুরজিৎ সবে স্নান-টান সেরে অফিসের কাজে বেরোবে বলে তৈরি হচ্ছে। এমন সময় ছাদের উপর হঠাৎ ঝন-ঝন করে কাচ ভাঙার মতো শব্দ। চমকে উঠে ঘরের বাইরে এসে দাঁড়ায় সে। রামবিলাসের নাম ধরে বার কয়েক ডাকে, কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায় না। হঠাৎই তার মনে হয়, আওয়াজটা এসেছে ছাদ থেকে। আসার পর একবারই ছাদে উঠেছে সে। বিশাল বড় ছাদ। এত বড় ছাদ সুরজিৎ আগে কখনও দেখেনি। ছাদের পরিধি দেখলে মনে হয় আস্ত একটা ফুটবল খেলার মাঠ ঢুকে যাবে তার মধ্যে। গোটা বাড়ির ছাদ একসঙ্গে জুড়ে আছে, কিন্তু মাঝের বেশ কিছু অংশ ধসে পড়ে আছে। সামনের অংশে একটা পুরোনো সিঁড়ি আছে, তাই দিয়ে তড়িঘড়ি ছাদে উঠে এল সুরজিৎ। ছাদের দরজা খুলে ছাদে গিয়ে দাঁড়াল। আশ্চর্য! কেউ কোথাও নেই। সবকিছুই স্বাভাবিক। স্পষ্ট ভারী কোনো কাচ ভাঙার শব্দ শুনেছিল সে, আর সেটা শুনেছিল এই ছাদের উপরেই। কিন্তু তাজ্জবের ব্যাপার এই যে ছাদের উপর ভাঙা কাচের কোনো চিহ্নই নেই। কয়েক মিনিট আগে সেই শব্দ স্পষ্ট শুনেছে, কান ফাঁটা সেই শব্দের সঙ্গে এক ঝাঁক পাখির ডানা ঝটপট করার শব্দও কানে এসেছে। তাহলে?
ছাদে এসে কোথাও কিছু দেখতে না পেয়ে সুরজিৎ কেমন যেন বোকা বনে গেল। বাগানের আম গাছটা ছাদের অনেকখানি জায়গা জুড়ে তার মাথা বিস্তার করে রেখেছে। হওয়ার দাপটে সেও যেন সুরজিৎকে দেখে মাথা নেড়ে নেড়ে নিঃশব্দে হাসছে।
মনের মধ্যে একগাদা জিজ্ঞাসা নিয়ে, আর কপালে গভীর ভাঁজ নিয়ে সুরজিৎ যখন ছাদে থেকে নামতে যাবে, হঠাৎ তার খেয়াল হল, রামবিলাস কোথায়? সে তো রান্না ঘরেই ছিল, সে কি তবে এই শব্দ শুনতে পায়নি? পেলে তো আসার কথা? এ-কথা ভাবতে ভাবতেই ছাদের দরজায় খিল দিতে গিয়ে আবার সাংঘাতিক রকম চমকে ওঠে সে। সিঁড়ির কাছে এসে সবে দরজা বন্ধ করতে যাবে, হঠাৎ ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখে রামবিলাস ছাদের উপর দাঁড়িয়ে। সেই উস্কোখুস্কো চুল, সেই ভাটার মতো জ্বলজ্বলে চোখ, সেই অদ্ভুত চাহুনি। স্থির-অবিচল, আর অপলক দৃষ্টিতে সে সুরজিতের দিকেই তাকিয়ে আছে।
মনের মধ্যে বেমক্কা আঘাত লাগে সুরজিতের। একটু আগেও রামবিলাস ছাদের উপর ছিল কি?
সিঁড়ির দরজা তো এতক্ষণ ভিতর দিয়ে বন্ধ ছিল, তাহলে রামবিলাস তার আগে ছাদে এল কীভাবে? তবে কি বাড়ির পিছন দিক দিয়েও ছাদে ওঠার কোনো পথ আছে? কিন্তু একটু আগে সুরজিৎ ছাদে ওকে দেখতে পেল না কেন? তবে কি…?
রামবিলাস সুরুৎ করে ছাদ পেরিয়ে সিঁড়ির মুখে এসে দাঁড়াল, সুরজিৎ জিজ্ঞাসা করে সে কাচ ভাঙার বীভৎস আওয়াজটা পেয়েই এসেছে কিনা।
রামবিলাস কোনো উত্তর দেয় না, সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় খ্যাসখ্যাসে গলায় বলে— “খানা লাগা দিয়া বাবু! আইয়ে!”
হারাধনবাবু, উঠে দাঁড়িয়ে আবার পায়চারি শুরু করেছে। চারপাশে অন্ধকার নেমে গেছে ঝুপ করে। যথারীতি রোজের মতো আজও ইলেকট্রিসিটি নেই। কখন আসবে, আদৌ রাতে আর আসবে কিনা কেউ জানে না। রামবিলাস একটা তেলচটা কেরোসিনের বাতি রেখে গেছে বেতের টেবিলটার উপর। মৃদু হওয়ার ধাক্কায় সেই আলো মাঝে মাঝে কেঁপে কেঁপে উঠছে, আর ওই সঙ্গে কেঁপে উঠছে, দালানের দেওয়ালে পড়া সুরজিৎ আর হারাধনবাবুর বিকৃত ছায়া দুটো।
হারাধনবাবু আরও বেশ কিছুক্ষণ একমনে পায়চারি করে চললেন। সুরজিৎ বেশ বুঝতে পারছে, উনি কিছু একটা নিয়ে খুব গভীরভাবে ভাবছেন।
কিছুক্ষণ পর সুরজিৎ বলল— “এবার আপনি বলুন? এ-বাড়ি সম্পর্কে আপনার কেন এত কৌতূহল? আপনি কিছু শুনেছেন কি?”
— হ্যাঁ শুনেছি। বেশ গম্ভীর স্বরে বললেন হারাধনবাবু।
একটা প্যাঁচা বিচ্ছিরি কর্কশ স্বরে ডেকে ডানা ঝাঁপটে উড়ে গেল বাড়ির পশ্চিমদিকে।
সুরজিৎ উৎকর্ণ।
হারাধনবাবু বললেন— “এই বাড়ির অনেক ইতিহাস আছে সরকারিবাবু। এ-বাড়ির কথা, আমি আজকে থেকে না, অনেকদিন আগে থেকেই শুনেছি। আর শুনেছি বলেই নিজের চোখে দেখতে এসেছি।”
সুরজিৎ ঢোক গেলে— “এই সেরেছে! কী শুনেছেন? ভূতের বাড়ি নাকি?”
হারাধনবাবু মৃদু হেঁসে বললেন— “ভূত তো অলৌকিক, কিন্তু ইতিহাস লৌকিক। ইতিহাসকে এড়িয়ে চলা যায় সরকারিবাবু, কিন্তু মাড়িয়ে চলা যায় না।“
সুরজিৎ বলল— “তার মানে এই বাড়ির জন্যই আপনি কলকাতা ছেড়ে এদ্দুর এসে রয়েছেন?”
হারাধনবাবু মাথা নেড়ে সায় দেন। — “এসে তো শুনলাম এ বাড়ি নাকি সরকার কোয়ার্টার বাংলোর জন্য নিয়ে নিয়েছে। সরকারি অফিসারবাবু কিছু দিনের মধ্যে আসবেন। সরকারের অনুমতি ছাড়া নাকি এর ভিতর ঢোকা যাবে না। বুঝুন দেখিনি, এই তো বাড়ির ছিরি, কী এমন সাত রাজার ধন মণিমানিক্য পোতা আছে, যে ঢুকতে গেলে অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু কী করি, নিয়ম বড় বালাই। অগত্যা অপেক্ষা করলাম সরকারিবাবুটি কবে আসবেন, সেই জন্য। রোজ খোঁজ নিই, দারোয়ানকে জিজ্ঞাসা করি, আজ আসবেন, কাল আসবেন করে দিন কাটে। অবশেষে একদিন আপনি এলেন। আপনার সঙ্গে আলাপ করলাম। আপনি আমার স্বজাতি, বিনয়ী, নিতান্ত ভদ্রলোক। বুঝলাম আপনি আমার অনুরোধ ঠিকই রাখবেন।”
— হ্যাঁ! কিন্তু অনুরোধটা কী? ফুট কাটল সুরজিৎ।
— এমন কিছু না, চাঁদের আলোয় এই গোটা বাড়িটা একটু ঘুরে টুরে দেখা।
সুরজিৎ অবাক হয়ে বলে— “কিন্তু এই ভাঙাচোরা, সেকেলে বাড়িটাতে দেখবার মতো আছেটাই বা কী?”
হারাধনবাবু কোনো উত্তর দেন না। অল্প হাসেন শুধু। তারপর বলেন, “সব কিছু জানতে গেলে, যে আপনাকে আজ থেকে প্রায় সাত-আট দশক পিছনে ফিরে যেতে হবে। জানতে হবে, আমি ঠিক কী নিয়ে রিসার্চ করছি? কোন অজানা রহস্য আজও লুকিয়ে আছে এই অট্টালিকার চার দেওয়ালের ফাঁকে ফোঁকরে।”
ঠান্ডা শিরশিরে হাওয়ায় সুরজিতের গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। অদম্য কৌতূহল নিয়ে সে বলে— আমি সব জানতে চাই, আপনি বলুন হারাধনবাবু। আমি সব শুনব।
হারাধনবাবু হাতঘড়িটাকে আলোর কাছে মেলে টাইমটা দেখে নেন, তারপর বলেন— আজ থাক সরকারিবাবু। অনেক রাত হল। এখন এসব কথা বলার সময় না। অনেক কথা, কাল হবেখন।
অনেক সেধেও সে রাতে হারাধনবাবুর মুখ থেকে ওই বিষয় নিয়ে আর কিছুই বের করা যায় না। আর খানিক গল্পগুজব করে উনি উঠে পড়েন।
সে রাতে তাড়াতাড়ি রাতের খাবার সেরে শুয়ে পড়ে সুরজিৎ। কিন্তু মাথার মধ্যে রক্ত চলাচল বেড়ে গেছে, সহজে ঘুম আসতে চায় না।
রামবিলাসটা আস্ত ভূত, গাঁজা খেয়ে দাওয়ায় শুয়ে দিব্যি নাক ডেকে ঘুম দিচ্ছে।