উষার দুয়ারে – ২০
২০.
মানিক মিয়া বললেন, ‘মুজিব, আর তো পারি না। ইত্তেফাক তো বন্ধ করে দিতে হয়!’
ইত্তেফাক অফিসে মানিক ভাইয়ের টেবিলের সামনে বসে আছেন মুজিব।
টেবিলের ওপরে নানা কাগজের স্তূপ। পাশে দৈনিক পত্রিকা ফাইল করে রাখা। প্রুফ দেখছেন মানিক মিয়া। কালির গন্ধ। তুঁত মেশানো আঠার গন্ধ।
শেখ মুজিব তাঁর চশমাটা খুললেন। তাঁর কপালেও দুশ্চিন্তার ভাঁজ। সাপ্তাহিক ইত্তেফাক খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সারা দেশ থেকে আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতা-কর্মীরা চিঠি লেখেন মুজিবের কাছে, ইত্তেফাক পাঠাইয়া দিবেন। মানিক মিয়ার মুসাফিরের কলাম দারুণ জনপ্রিয়। এই অবস্থায় ইত্তেফাক বন্ধ হয়ে গেলে খুবই মুশকিল হবে।
মুজিব বললেন, ‘আমি তো টাকাপয়সা জোগাড়ের কোনো উপায় করতে না পেরে শেষ ভরসা হিসাবে সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে টেলিগ্রাম করেছিলাম। লিখেছিলাম, অয়্যার টু থাউজান্ড ইত্তেফাক স্পেশাল অ্যান্ড অর্গানাইজেশন আদারওয়াইজ আনডান।’
মানিক মিয়া জিগ্যেস করলেন, ‘সেই টেলিগ্রামের কোনো জবাব পেয়েছ?’ ‘জি না। এখনো পাই নাই।’
‘তাইলে উপায়। যত সার্কুলেশন বাড়তেছে, তত খরচ বাড়তেছে। নিউজপ্রিন্ট কেনার টাকা নাই। সামনে ঈদ। একটা ঈদ স্পেশাল সাপ্লিমেন্ট বের করা উচিত।’
‘নিশ্চয়ই। দেখি, আমি সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে চিঠি লিখতে বসি।’
.
ইত্তেফাক অফিসে বসেই চিঠি লিখতে বসলেন মুজিব।
ইংরেজিতে লিখতে হয় সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে। তিনি বাংলা পড়তে পারেন না। তবে বাংলায় বক্তৃতা করতে পারেন।
প্রেরক:
শেখ মুজিবুর রহমান
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ
৯৪ নবাবপুর রোড, ঢাকা
প্ৰতি :
এইচ. এস. সোহরাওয়ার্দী, বার এট ল
১৩, কাচারী রোড, করাচি
জনাব,
আমার দুঃখ বেশ কিছু দিন হলো আমি আপনার কোনো চিঠি পাই নাই। সাংগঠনিক কাজ সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলেছে। জনাব আতাউর রহমান খান ও আমি উত্তরবঙ্গে ঝটিকাসফর শেষে গতকাল ঢাকা পৌঁছেছি। জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে।
একটাই প্রতিবন্ধকতা। তা হলো অর্থের অভাব। পাটের দাম কম হওয়ায় সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া যাচ্ছে না।
ইত্তেফাক চলছে, তবে কাগজটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে বিশেষ সংখ্যা বের করা দরকার। তার মানে হলো অতিরিক্ত খরচ। স্বাধীনতা দিবস সংখ্যা বের করা হয়েছিল, কিন্তু সামনে ঈদ, ঈদসংখ্যা বের করতে হবে ৩১ আগস্টে। এটা যদি আমরা বের না করি, তাহলে প্রচারসংখ্যা কমে যাবে, কারণ অন্য পত্রিকাগুলো সবাই ঈদের বিশেষ সংখ্যা করবে। কিন্তু এ জন্য যে অতিরিক্ত টাকা লাগবে, তার কোনো সংস্থান আমাদের কাছে নাই। যদি আপনি আমাদের উদ্ধারে এগিয়ে না আসেন, তাহলে কেবল ঈদসংখ্যা বের করা যাবে না, তা নয়, পুরো পত্রিকাটাই মুখ থুবড়ে পড়বে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে এটা আমাদের একমাত্র দুর্বল অঙ্গ।
শহীদ সাহেব, আপনি জানেন কখনো ব্যক্তিগত অসুবিধার জন্য আপনার দ্বারস্থ হই নাই, এবং আমরাও আপনার অসুবিধার কথা জানি।
আমি এরই মধ্যে আপনাকে টেলিগ্রাম পাঠিয়েছি (কপি সংযুক্ত করলাম)। দয়া করে যেভাবেই হোক ব্যবস্থা করুন। না হলে আমাদের সব প্রয়াস জলে যাবে। আমরা হতাশায় নিমজ্জিত হব। আপনি জানেন, একটা বছর কত কষ্ট করে ইত্তেফাক বের করা হচ্ছে। এটা আমার শেষ আবেদন, এটাকে আপনি গুরুত্বের সঙ্গে নিন। আপনি আতাউর রহমান সাহেব অথবা মানিক ভাই বরাবর টাকা পাঠাতে পারেন।
মুজিবুর রহমান
মানিক ভাইকে চিঠিটা দেখালেন তিনি। মানিক ভাই চিঠিটা খামে ভরে দিলেন। মুজিব ওপরে সোহরাওয়ার্দী সাহেবের ঠিকানা লিখলেন।
একজন পিয়নের হাতে চিঠিটা দিলেন মানিক ভাই।
মুজিব পকেট থেকে খুচরা পয়সা বের করে দিয়ে বললেন, ‘এখনি ডাক ধরাও।’
২১.
মহিউদ্দিন আহমদ বিস্মিত, চিন্তিত। শেখ মুজিব এটা কী করলেন? কেনই বা করলেন?
মহিউদ্দিনের বাড়িতে এসেছেন মুজিব। তাঁর সঙ্গে দুজন অচেনা লোক। মুজিব বললেন, ‘মহিউদ্দিন, তুই কিছু মনে করিস না। তোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই। এনারা দুইজনই পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের লোক। এই ভদ্রলোক আমার ওপরে নজর রাখেন। আর ওনার ওপরে দায়িত্ব পড়েছে তোর ওপরে নজর রাখার। তোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য এনেছি। এই দুজনই আমার লোক। এদেরকে অবিশ্বাস করার কিছু নাই। আর আমাদের লুকানোরই বা কী আছে। আমরা কোথায় যাই, কার কাছে যাই, কী বলি, তা সরকারকে রিপোর্ট করে। তাতে একটা লাভ হয়, আমি সরকারের বিরুদ্ধে যা যা বলি, ওরা সব রিপোর্ট করে দেন ওপর মহলে। আমার সরকারবিরোধী বক্তব্য সরকারের কাছে পৌঁছে যায়। আমিও তো চাই, আমার কথা সরকারের কান পর্যন্ত পৌঁছাক।’
মহিউদ্দিন আহমদ খুবই বিব্রত বোধ করছেন। তাঁর মনে শঙ্কা, সন্দেহ ও বিরক্তি। এসবির (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) লোকের কাজ এসবির লোক করবে, আমাদের কাজ আমরা করব। কিন্তু তাই বলে গোয়েন্দা বিভাগের লোককে বাড়ির বৈঠকখানায় বসতে দিতে হবে নাকি।
এসবির লোকটি মহিউদ্দিনকে ছায়ার মতো অনুসরণ করেন। তাঁর বাড়ির সামনে ঘোরাঘুরি করেন। মহিউদ্দিনের খুবই অস্বস্তি লাগে। তিনি এখন কী করবেন।
তিনি এক কাজ করলেন। তক্কে তক্কে থাকলেন, এসবির লোকটা কখন সরে যায়! হাজার হোক, মানুষ তো, স্নানাহার ইত্যাদি প্রয়োজনে তাকে কখনো না কখনো আড়ালে যেতেই হবে। এমনি এক সুযোগে মহিউদ্দিন সোজা চলে গেলেন সদরঘাট। উঠে পড়লেন বরিশালের জাহাজে।
কয়েক দিন বরিশালে থেকে তিনি ফিরে এলেন ঢাকায়। নিজের বাড়িতে এসে উঠলেন আবার। এসবির ভদ্রলোক সোজা ঢুকে পড়লেন মহিউদ্দিনের বৈঠকখানায়। বললেন, ‘আপনি আমাকে না বলে বরিশাল গিয়েছিলেন কেন? আমি তো আপনার বিরুদ্ধে উল্টো রিপোর্ট দিতে পারি?’
মহিউদ্দিন বললেন, ‘আমি কোথায় যাব না যাব, তোমাকে বলে যেতে হবে নাকি? তোমার কাজ তুমি করো, আমার কাজ আমি করব।
সন্ধ্যাবেলা। বিকালে বৃষ্টি হয়েছে, এখন আকাশ পরিষ্কার। আকাশে মেঘের গায়ে লাল আভা। মহিউদ্দিন বসে আছেন বারান্দায়। শেখ মুজিব এসে হাজির। বললেন, ‘চল, মওলানা ভাসানীর সঙ্গে দেখা করে আসি। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।’
‘উনি তো বন্দী অবস্থায় হাসপাতালে?’
‘হ্যাঁ। জেলখানায় শরীর খারাপ হয়ে পড়ছিল। মেডিকেল হাসপাতালে নিয়া আসছে। আমি তাঁকে কেবিনে রাখছি। খরচ আমরা চাঁদা তুলে দিই।’
‘যার যে, পেছনে তো ফেউয়ের মতো যাবে দুই এসবির লোক। বন্দীকে হাসপাতালে দেখতে গেলে যদি রিপোর্ট করে দেয়?
মুজিব বললেন, ‘তাতে আমার কোনো ক্ষতি হবে না। ক্ষতি হবে ওখানে ডিউটিরত পুলিশদের। ওদের শাস্তি হতে পারে।’
‘তাহলে কী করবা?’
‘দেখা যাক কী করা যায়? একটা কৌশল করতে হবে।’
.
মুজিব আর মহিউদ্দিন হাঁটছেন। পেছনে পেছনে হাঁটছে দুই এসবির কর্মী। তারা একসময় পান-সিগারেটের দোকানে একটু থামল। মুজিব সঙ্গে সঙ্গে ঢুকে পড়লেন শাঁখারীপট্টির এক সরু গলিতে। মহিউদ্দিনও তাঁকে অনুসরণ করলেন।
তারপর দুজনে প্রাণপণে দৌড়াতে লাগলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই পেয়ে গেলেন একটা রিকশা। রিকশায় উঠে মুজিব হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, ‘ভাই আমাদেরকে একটু ঢাকা মেডিকেল হসপিটালে নাও তো।’
হাসপাতালে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত নেমে এল। তিনতলার কেবিনে রাখা হয়েছে ভাসানীকে। তারা সিঁড়ি বেয়ে উঠলেন F
কেবিনের সামনে পুলিশ ও কারারক্ষী। তারা সবাই ঝিমোচ্ছে। মুজিব ও মহিউদ্দিন সন্তর্পণে ঢুকে পড়লেন কেবিনের ভেতরে।
ভাসানী বলে উঠলেন, ‘কে, কে?’
মুজিব বললেন, ‘আমি শেখ মুজিব।
মহিউদ্দিন বললেন, আমি মহিউদ্দিন।’
ভাসানী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, ‘তোমরা এসেছ?’
মুজিব বললেন, ‘মহিউদ্দিনকে নিয়া আসলাম হুজুর, ওকে তো আওয়ামী লীগের লোকেরা মানতে চায় না। ছাত্রলীগ আমাকে সংবর্ধনা দিল জেলমুক্তি উপলক্ষে, মহিউদ্দিন সেখানে উপস্থিত ছিল, তাকে ছাত্রলীগের ছেলেরা বক্তৃতা করতে দেয় নাই, এই জন্য নিয়া আসলাম, আপনি ওকে বলে দেন ও যেন মন খারাপ না করে।’
ভাসানীর চোখে জল, তিনি বললেন, ‘আমি তো মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধ, আমার বয়স হইছে, তোমরা তরুণ, ভবিষ্যৎ তোমাগো হাতে। তোমরা একলগে কাজ করবা। এইটাই তো আমি চাই।’
মুজিব আর মহিউদ্দিনের চোখও ছলছল করে উঠল 1
মওলানা ভাসানীকে তাঁরা কখনো ভেঙে পড়তে দেখে নাই। আজ এই অসুস্থতা তাঁকে মানসিকভাবে পর্যুদস্ত করে ফেলেছে। তিনি মৃত্যুর কথা ভাবছেন।
মুজিব বললেন, ‘হুজুর, ইনশাল্লাহ, আপনি আরও অনেক দিন বাঁচবেন বাংলাকে জালিমদের হাত থেকে মুক্ত না করা পর্যন্ত আপনার মুক্তি নাই।’
২২.
ফজলে লোহানী খানিক চিন্তিত। তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। গুন্ডা লাগিয়ে মার দেওয়া হবে।
তিনি এক কাপ চা সামনে রেখে কাপের হাতলে পেনসিল দিয়ে বাড়ি দিচ্ছেন। চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, তাঁর খেয়াল নাই।
তাঁর সামনে বসে আছেন মুস্তাফা নূরউল ইসলাম। এই তরুণের আগমন দিনাজপুর থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
তরুণ কবি, সাংবাদিক, লেখক ফজলে লোহানী সম্পাদনা করেন একটা পত্রিকা—নাম অগত্যা।
মুস্তাফা নূরউল ইসলাম এই পত্রিকায় ধারাবাহিক উপন্যাস লিখছেন, শিরোনাম ভান্টু উবাচ।
মুস্তাফা নূরউল ইসলাম বললেন, ‘মার দিতে যদি চেয়ে থাকে, তারা যে খুব অপ্রত্যাশিত কাজ করেছে, তা তো নয়। মুসলিম লীগ এখন তো গুন্ডানির্ভর দল। আর আমরা যা লিখি, তা তো মার খাওয়ার মতোই।’
‘তাই বলে মার তো আর খাওয়া যায় না।’ ফজলে লোহানী বললেন।
‘মার দিতে পারবে না, কারণ আমাদের অফিসটা ১০৫ ইসলামপুর, লায়ন সিনেমার গলিতে। না, কোনো লায়ন এসে গর্জন করে উঠে আমাদের বাঁচাবে, সে আশা করছি না।
ফজলে লোহানী বললেন, ‘বাঘের হুংকার আর সিংহের গর্জন, তাই তো কথাটা? নাকি উল্টাটা? আর হাতির ডাককে বলে…’
মুস্তাফা বললেন, ‘বৃংহিত, ঘোড়ার ডাক হ্রেষা। কথা তা নয়। কথা হলো আমরা তো আছি কাদের সরদারের পক্ষপুটে। আমাদেরকে ঘাঁটাতে গুন্ডারা সাহস পাবে না। তবে আমরা যা লিখেছি, প্রহার কিন্তু আমাদের প্রাপ্য।’
মুস্তাফা মৃদু মৃদু হাসেন। ‘আমার কি এক কাপ চা জুটবে না?’
অগত্যায় খুব ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ ছাপা হয়, যদিও সাহিত্যও থাকে। লিয়াকত আলীর নাম এই পত্রিকায় ছাপা হয় ‘লিয়াকৎ আলী’। কবি গোলাম মোস্তফার পাকিস্তানপ্রীতি উচ্চনিনাদে পর্যবসিত, তাই তার নাম ‘গোলমাল মোস্তফা। আশরাফ সিদ্দিকী তাই এই পত্রিকায় ‘অশ্রাব্য সিদ্দিকী’।
শামসুর রাহমান, হাসান হাফিজুর রহমান, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, আলাউদ্দিন আল আজাদ, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, আতাউর রহমান, সাইয়ীদ আতীকুল্লাহ, সৈয়দ শামসুল হক, আনিসুজ্জামানও এসে জুটেছেন এই অগত্যার দলে। প্রথম সংখ্যায় ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর প্রবন্ধ পর্যন্ত ছাপা হয়েছে। আনিস চৌধুরী, তাসিকুল আলম খাঁ খুবই সক্রিয়।
অগত্যার চিঠিপত্র বিভাগে ছাপা হয়েছে :
কার্টুন কাহাকে বলে?
–খাজা নাজিম উদ্দিনের ভালো পোর্ট্রেটকে।
লাইট মোর লাইট বলিয়া কে চেঁচাইয়াছিল?
—ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাইয়ের এক অন্ধ দারোয়ান। ঢা
কার ‘ডাম এন্ড ডেফ’ স্কুল কি উঠে গেছে?
-–না, উঠে ইডেন বিল্ডিং (সচিবালয়) এ গেছে।
মুসলিম লীগে যোগ দিতে হলে কী কী কোয়ালিফিকেশনের দরকার?
—আপনাকে লিয়াকত আলীর মতো সত্য কথা বলতে হবে, ফজলুর রহমানের মতো বাঙালিদেরকে আদর করতে হবে, খুরোর মতো বুদ্ধিমান হতে হবে, খাজা শাহাবুদ্দিনের মতো বিদ্যাদিগ্গজ হতে হবে, নুরুল আমিনের মতো ছাত্রদের বন্ধু হতে হবে, আকরম খাঁর মতো পরহেজগার হতে হবে।
‘পাগলে কিনা বলে’ এ কথা এখন সবচেয়ে কার ওপরে বেশি প্রযোজ্য?
—ঠিক বলতে পারব না। তবে আমেরিকায় লিয়াকত আলী খাঁ ইদানীং কিছুই বলেননি কিন্তু।
আজাদ পাকিস্তানের ট্রেনে এখনো কেন ‘আপনা টিকট আপনা খরিদো। মালকা উপর নজর রাখো; চোর, জুয়াচ্চোর ঔর পাকিটমার নজদিগ হৈ’ এই কথাগুলো লেখা থাকে?
—এমএলএ-রা মাঝে মাঝে যাতায়াত করেন কিনা।
অল ইন্ডিয়া রেডিওর নাম রাখা হয়েছে ‘আকাশবাণী’। পাকিস্তান রেডিওর নাম কী রাখা উচিত?
—গায়েবী আওয়াজ।
একজন ভদ্রমহিলা একটা মাসিক পত্রিকা বের করেন। তাকে নিয়ে প্রশ্ন ছাপা হয়েছে, তার মাসিক অনিয়মিত কেন?
.
মুস্তাফা পত্রিকার ফাইল ঘেঁটে এইসব পড়ছেন, আর আপন মনেই হেসে উঠছেন।
ফজলে লোহানী বললেন, হাসো কেন?
‘মার খেলেও জিনিস আমরা ভালো করছি,’ মুস্তাফা বললেন। চা এসে গেছে। চায়ে দুধের সর ভাসছে।
তিনি একুশে ফেব্রুয়ারির পর প্রকাশিত সম্পাদকীয়টা পড়লেন, ‘সহস্র বর্ষের ভাব ভাবনায় যে ভাষা পুষ্ট, প্রেম আর সঙ্গীতে যে ভাষা মাধুর্যমণ্ডিত, লোককলা বিকাশে ও সংস্কৃতি বিকাশে যে ভাষা সম্ভারপূর্ণ, কোটি কোটি জাগ্রত মানবসন্তানের সে ভাষা আপন প্রাণ-প্রাচুর্যে অক্ষয়, শাশ্বত। সে জীবন্ত ভাষার মৃত্যু নাই।’
.
ব্যাঙ্গমা ও ব্যাঙ্গমি তাদের আমগাছের শাখা থেকে উড়ে আকাশে পাখা মেলে। তারা গানের সুরে বলতে থাকে, ‘বাংলা ভাষার মৃত্যু নাই। বাংলা ভাষার মৃত্যু নাই।’
তাদের সঙ্গে কণ্ঠ মেলায় কয়েকটা শালিক, তিনটা দোয়েল, দুটো ফিঙে আর একঝাঁক চড়ুই।
‘বাংলা ভাষার মৃত্যু নাই।’
.
নিচে বসা হাফপ্যান্ট পরা কয়েকজন পুলিশ সচকিত হয়ে ওঠে। স্লোগান আসছে কোথা থেকে?
২৩.
লুৎফর রহমান সাহেব বললেন, ‘আবার টাকা চায়? সে করতিছেটা কী। নাসের তো খুলনা থেকে মাঝেমধ্যে টাকা পাঠায়। আর সে বড় ছেলে। দুটো বাচ্চা আছে। তার কোনো দায়দায়িত্ব নাই? তাকে বললাম, ল পড়ো। অ্যাডভোকেট হও। যারা রাজনীতি করে সবাই তো অ্যাডভোকেট। সোহরাওয়ার্দী সাহেব, ফজলুল হক সাহেব, আতাউর রহমান খান সাহেব—সবাই তো উকিল। খোকা তো আমার কথা শুনল না। রাজনীতি কইরে বেড়াচ্ছে। বেড়াক। তাইলে বারবার খালি টাকার জন্য আসে কেন? ওরে কয়ে দাও, এবার আমি টাকা দিতে পারব না।’
সায়রা বেগম বললেন, ‘তুমিই তো সব সময় ওকে টাকাপয়সা দিয়ে এসেছ। আজকে হঠাৎ করে এইসব বললে চলবে? নিশ্চয় খোকা বড় ঠেকায় পইড়েছে। তা না হলে বরিশাল থেকে এইভাবে ছুইটে আসে?’
শেখ মুজিব বেরিয়েছেন পুরো দেশে সংগঠন গড়ে তোলার অভিযানে। আতাউর রহমান খানকে সঙ্গে নিয়ে সফর করেছেন উত্তরবঙ্গ। প্রতিটা জেলায় আওয়ামী মুসলিম লীগের কমিটি গঠন করার উদ্দেশ্যে তাঁদের এই সফর। শুধু জেলায় নয়, মহকুমা শহরেও তাঁরা কমিটি দাঁড় করিয়ে দিয়ে এসেছেন। কোথাও বিপুল লোকসমাগম করে সভা হলো, কমিটি হলো, কোথাও আবার লোকসমাগম হয়েছে, কিন্তু মাইক্রোফোনের ব্যবস্থা নাই, খালি গলায় ভাষণ দিতে হলো মুজিব আর আতাউর রহমান খানকে।
আরেক সহসভাপতি আবদুস সালাম খান একধরনের প্রতিযোগিতায় ভোগেন আতাউর রহমান খানের সঙ্গে। মুজিবকে ডেকে একদিন বললেন, ‘আমি হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট, আর আতাউর রহমান খান জজকোর্টের অ্যাডভোকেট, আমি বয়সে তাঁর চেয়ে বড়, তুমি আমাকে সভাপতির কাজ না দিয়ে আতাউর রহমান সাহেবকে কেন দাও?’
মুজিব তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, ‘খান সাহেব ঢাকায় আগে থেকে আছেন, আপনি নতুন এসেছেন, আস্তে আস্তে কর্মীরা আপনার পরিচিত হোক, আপনাকেই বেশি বেশি করে সভাপতিত্ব করতে দিব।’
ওয়ার্কিং কমিটির সভায় তাই একবার আতাউর রহমান খান সভাপতিত্ব করেন, আরেকবার করেন আব্দুস সালাম খান। উত্তরবঙ্গে আতাউর রহমান গেছেন, কাজেই দক্ষিণবঙ্গে মুজিবের সফরসঙ্গী হলেন সালাম খান।
বরিশাল সফর শেষে মুজিব চলে এসেছেন টুঙ্গিপাড়ায়।
হাসু তার কোল দখল করে ফেলল। এবার কামালও আব্বাকে চিনতে পারছে। সে-ও আরেক কোলে এসে উঠল।
রেনু বললেন, ‘তুমি এসেছ, এটাই আমার কাছে বড় কথা। কিছু টাকা আমি জোগাড় করে রেখেছি। তোমাকে দিব। তুমি চিন্তা কোরো না।’
শেখ মুজিব রেনুর মুখের দিকে তাকালেন। এই মেয়েটি সর্বংসহা হয়ে জন্মেছে। যত দুঃখকষ্ট সব নীরবে মুখ বুজে সহ্য করে চলেছে।
মুজিব বললেন, ‘আমার তো কোনো বাজে খরচ নাই। একটাই বাজে খরচ, সে হলো সিগারেট। তবে এইবার সিগারেটটাও ছেড়ে দিব।’
শেষ পর্যন্ত লুৎফর রহমান সাহেব টাকা দিলেন ছেলের হাতে। বললেন, ‘বেশি দিতে পারলাম না।’
মুজিব বললেন, ‘যা দিয়েছেন, তাই অনেক, আব্বা।’
লুৎফর রহমান বললেন, ‘তুমি কিছু মনে কোরো না। যা বলি, তোমার ভালোর জন্যই বলি। আমার নিজের কোনো কিছু চাইনে। তোমার ছেলেমেয়েরা বড় হচ্ছে। এখন তো আর গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়ালে চলবে না।’
মুজিব বললেন, ‘আমি আওয়ামী লীগটা একটু গুছায়ে নেই। মওলানা ভাসানী আর শামসুল হক সাহেব মুক্তি পেয়ে গেলে আমি আর পার্টির পিছনে এত সময় দিব না। তখন একটা কিছু করব।
লুৎফর রহমান সাহেব হেসে বললেন, ‘তুমি কোনো দিনও পার্টির পিছনে সময় না দিয়ে থাকতে পারবা না। ঠিক আছে। যা করতিছ, ভালোভাবে কোরো।’
.
বিদায়বেলা সব সময়ই করুণ হয়। হাসু ছাড়তে চায় না। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কামাল। এবার সে-ও তার হাত ধরে ঝুলে পড়তে চায়।
মুজিব দুজনকেই কোলে তুলে নিলেন। চুমু দিলেন
রেনু মুখখানা হাসি হাসি করে বিদায় দিচ্ছেন। কিন্তু তার চাহনিতেই যেন করুণ একটা মিনতি ঝরে পড়ছে।
আব্বা আম্মাকে কদমবুসি করে মুজিব নৌকায় উঠলেন। বাচ্চা দুটোকে ধরে রইলেন রেনু।
মাঝি নৌকার বাঁধন খুলল।
নৌকা চলতে শুরু করল।
মুজিবের মনে হলো, আব্বার সঙ্গে ফুটবল খেলেছেন তিনি। আব্বার দলের সঙ্গে তাঁর দলের ফুটবল ম্যাচও হয়েছে। আর মনে পড়ল আব্বার অসুস্থতার সেই দিনটার কথা, যেদিন মুজিবের উপস্থিতি মৃত্যুপথযাত্রী আব্বাকে ফিরিয়ে এনেছিল যমের দুয়ার থেকে।
শরতের অপরাহু। খাল জলে ভরা। এখন জোয়ার। নৌকা চলছে তরতরিয়ে। আকাশ রোদে ঝলমল করছে। আর আকাশে সাদা মেঘ।
.
আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি
তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী!…
মুজিব বিড়বিড় করতে লাগলেন। বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দ সেই অনুচ্চ কণ্ঠ আবৃত্তির সঙ্গে যেন তাল মেলাচ্ছে।
২৪.
কবি আহসান হাবীব থাকেন মাহুতটুলীতে। ঠাঁটারীবাজারে ৮৭ বামাচরণ চক্রবর্তী রোডের বাড়ি থেকে প্রায়ই আনিসুজ্জামান চলে যান কবির বাড়িতে।
আনিসুজ্জামান তাঁকে চেনেন অন্তত ছয় বছর আগে থেকে। তখন হয়তো আনিসুজ্জামানের বয়স ৯। কীভাবে যে তাঁর সঙ্গে কবির পরিচয়, তিনি মনেও করতে পারেন না।
আনিসুজ্জামানরা ছিলেন কলকাতায়। আহসান হাবীবও। তিনি কলকাতা বেতারে কাজ করতেন। ছোটদের অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। আর দৈনিক ইত্তেহাদ-এর তিনি ছিলেন সাহিত্য সম্পাদক। আবার ইত্তেহাদ-এর ছোটদের পাতা মিতালী মজলিসের পরিচালক হিসাবে সবাই তাঁকে ডাকত মিতাজি বলে। আনিসুজ্জামানও তা-ই ডাকতেন।
আহসান হাবীব থাকতেন আনিসুজ্জামানদের কলকাতার বাসার পেছনেই একটা বাসায়। ওই বাসায় আরও দুজন সাংবাদিক থাকতেন।
আহসান হাবীবের কলকাতার বাসাতেই অনেক বার গেছেন আনিসুজ্জামান। আর যেতেন ইত্তেহাদ অফিসে। কবি নিজের কবিতা কিশোর আনিসুজ্জামান ও তাঁর সঙ্গী কমলকে পড়ে শোনাতেন। কখনো ডাকে আসা কোনো কবিতা তাঁদের হাতে ধরিয়ে বলতেন, দেখো তো কবিতাটা তোমার কেমন লাগে। কবির কবিতা আর ছড়া শুনে কিশোর দুজন মুগ্ধ হয়ে যেত। কবির বিয়ের বরযাত্রীও হয়েছিল এই দুই কিশোর। হাফপ্যান্ট পরা আনিসুজ্জামান কবিকে বলতেন, ‘আপনার ‘হকনামভরসা’ আর ‘একরারনামা’ কবিতা দুটো সবচেয়ে ভালো।’
‘আর তোমাদের জন্য লেখা “ভেংচি”?’
‘ওটাও খুবই ভালো।
কবি আহসান হাবীব প্রসন্নভাবে হাসতেন। সেই হাসিতে প্রশ্রয় থাকত, থাকত খানিকটা মুগ্ধতাও।
.
কবির প্রথম কবিতার বই রাত্রিশেষ প্রকাশের ঘটনার সাক্ষী আনিসুজ্জামান। আহসান হাবীব বললেন, ‘জানো, রাত্রিশেষ বইয়ের কভার কে আঁকছেন?’
‘কে?’
‘জয়নুল আবেদিন।
তারপর একদিন আহসান হাবীব চলে এলেন বালক আনিসুজ্জামানের বাসায়। হাতে সেই রাত্রিশেষ-এর জয়নুল-অঙ্কিত প্রচ্ছদ। আনিসুজ্জামানের মনে হলো, বেশি কালো।
বলেও ফেললেন সেই কথা। কবি মৃদু হাসলেন।
এখন আইএ ক্লাসে পড়েন আনিসুজ্জামান। থাকেন ঢাকায়। কলকাতার দিনগুলোতে দেখা তার শৈশবের সেই নায়ক আহসান হাবীব এখনো তাঁর চোখে নায়কই।
এখন ঢাকায়, মাহুতটুলীতে কবির বাসায় গেছেন ১৫/১৬ বছর বয়সী আনিসুজ্জামান।
কবি বললেন, ‘আমার একজন সহকারী দরকার। আমার দ্বিতীয় কবিতার বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরির কাজে যে সাহায্য করতে পারবে। নকলনবিশিই প্রধান কাজ। তবে এর বাইরেও টুকটাক কাজ করতে হতে পারে। পারিশ্রমিক খুব সামান্য।’
আনিসুজ্জামান বললেন, ‘হাবীব ভাই, আপনার কবিতার বইয়ের কাজ আমি বিনা পারিশ্রমিকেও করে দিতে রাজি আছি।’
আনিসুজ্জামান কবির বাসায় যান সপ্তাহে চার দিন। মাসোহারা ১০ টাকা। পাণ্ডুলিপি নকল করেন। তাঁর পছন্দের কবিতা কবি যখন বাদ দিয়ে দেন, তখন আপত্তি করেন।
এর মধ্যে আনিসুজ্জামান পড়ে গেলেন জ্বরে।
কবির বাড়িতে আর যাওয়া হয় না।
জ্বর ছাড়তে না ছাড়তেই বন্ধুরা এসে ধরে বসল, মানসী সিনেমা হলে চল, সিনেমা দেখতে।
আনিসুজ্জামান গেলেন মানসী হলে।
তার এক দিন পর কবির বাড়িতে উপস্থিত হলেন তিনি।
কবি বললেন, ‘এ কদিন আসোনি কেন?’
‘জ্বর হয়েছিল হাবীব ভাই,’ বললেন আনিসুজ্জামান।
তোমাকে পরশু দিন মানসী হলে দেখলাম বলে মনে হলো!’
‘জি।’
তিনি আর কিছু বললেন না। আনিসুজ্জামানও আর আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে পারেন না। একসঙ্গে যে দুটোই ঘটা যে সম্ভব, এটা এখন কবিকে তিনি
কেমন করে বোঝাবেন?
এরপর কাজের আনন্দ গেল চলে। নিয়ম করে কবির বাড়ি যান, কবিতা নকল করেন, কিন্তু কাজে যে মন নাই, সেটা বেশ বুঝতে পারেন কবি।
আহসান হাবীব বললেন, ‘তোমার বোধ হয় ব্যস্ততা বেড়েছে। এখন সময় করতে একটু কষ্ট হচ্ছে!”
‘জি।’
এরপর মাসোহারার বিনিময়ে কাজের চুক্তি গেল টুটে। এরপর কবির বাড়িতে অনেকবারই গেছেন আনিসুজ্জামান, কিন্তু কাজের উপলক্ষে নয়।
আনিসুজ্জামান ওই অল্প বয়সেই যোগ দিয়েছেন পাকিস্তান সাহিত্য সংসদে। তার সভাপতি কাজী মোতাহার হোসেন। একবার সাহিত্য সংসদে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য নিয়ে আলোচনা হবে। কাজী সাহেবের কাছে তরুণেরা গেলেন সভাপতিত্ব করার অনুরোধ জানাতে। কাজী সাহেব জিগ্যেস করলেন, ‘সুকান্ত কে?’
তখন আনিসুজ্জামান তাঁকে সুকান্তের কবিতার বই দিয়ে এলেন।
নির্দিষ্ট দিনে কাজী সাহেব তাঁর ছেলের শার্ট গায়ে দিয়ে এলেন সভাপতিত্ব করতে। ওপরের বোতামঘরে নিচের বোতাম লাগানো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিজ্ঞানী লেখক কাজী সাহেবের ভুলোমনের কথা কিংবদন্তিতুল্য। তিনি নিজের বাড়ির অবস্থান ভুলে গিয়ে পাড়ার রাস্তায় কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে লোকজনকে জিগ্যেস করেছেন, কাজী মোতাহার হোসেনের বাড়ি কোনটা? লোকেরা দেখিয়ে দিলে তিনি নিজের বাড়ি খুঁজে পেয়েছিলেন, এই গল্প তখন প্রচলিত ছিল।
সভাপতির ভাষণে কাজী সাহেব বললেন, ‘এই সভার আগে আমি সুকান্তের নাম শুনিনি। আমার ছেলে কাজী আনোয়ার হোসেনকে জিগ্যেস করলাম। সে বলল, সুকান্ত একজন কবি। এমনকি তার লেখা গানও আছে। ছেলেই আমাকে দুটো গান গেয়ে শোনাল। তারপর আমি এদের সংগ্রহ করে দেওয়া তার একটা কাব্যগ্রন্থও পড়লাম। কিছুকাল আগে আমি ভাঙা তলোয়ার নামে একটা কাব্য পড়েছিলাম। সুকান্তর কবিতা পড়ে মনে হলো, এ ভাঙা তলোয়ার নয়।
আরও পরে আরেকটা অনুষ্ঠানে আনিসুজ্জামানকে দেখিয়ে কাজী সাহেব বললেন, ‘এদের একটা সাহিত্য সংগঠন আছে। তারপর শুধালেন, এই, কী যেন নাম তোমাদের সংগঠনের?’
‘পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ,’ বললেন আনিসুজ্জামান। কিন্তু বলতে পারলেন না, ‘স্যার, আপনিই আমাদের সংসদের সভাপতি!’