উষার দুয়ারে – ৪০
৪০
শেখ মুজিবের নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জ। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়াহিদুজ্জামান। পূর্ব বাংলার সেরা ধনীদের একজন। তাঁর নিজের লঞ্চ, নিজের স্পিডবোট; সাইকেল, মাইক্রোফোনের তো কোনো ইয়ত্তা নাই। তাঁর নিযুক্ত কর্মীসংখ্যাও কম নয়।
শেখ মুজিবের নির্বাচনী রসদ সাকল্যে একটা মাইক্রোফোন। দুইটা সাইকেল। গোপালগঞ্জ আর কোটালীপাড়া থানা মিলে তাঁর নির্বাচনী এলাকা। রাস্তাঘাট নাই বললেই চলে। নদীনালা খালবিলে ভরা। মুজিবের নিজের পরিবারের কয়েকটা দেশি নৌকা আছে। এই নিয়েই মুজিব নেমে পড়লেন নির্বাচনী প্রচারাভিযানে।
গোপালগঞ্জের লোকেরা তাঁকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসে। তিনি নামার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে ঘিরে ধরল মানুষ। নিজেদের সাইকেল নিয়ে এসে পড়ল স্বেচ্ছাসেবক কর্মিবাহিনী।
তিনি কয়েকটা জনসভায় বক্তৃতা করলেন। মানুষের যে সাড়া পেলেন, তাতে বুঝলেন, ওয়াহিদুজ্জামান শোচনীয়ভাবে হারতে যাচ্ছেন।
মুজিব যেখানেই যাচ্ছেন, লোকজন শুধু তাঁকে ভোট দেবার অঙ্গীকার প্রকাশ্যে ব্যক্ত করছে, তা-ই নয়; তারা তাঁকে জোর করে বসিয়ে সামনে পানদানিতে রাখছে পান আর কিছু টাকা, নজরানা। নিতেই হবে। এ হলো শেখ মুজিবের জন্য মানুষের উপহার। তারা তাঁকে নির্বাচনী খরচ জোগাতে চাইছে। ওয়াহিদুজ্জামানের টাকা বেশি। মুজিবের টাকা নাই। টাকার অভাবে মুজিব যেন হেরে না যান। গরিব মানুষ, সাধারণ মানুষ নিজের পকেটের টাকা বের করে পানদানিতে রেখে মুজিবকে বাধ্য করছে তা গ্রহণ করতে।
একজন বৃদ্ধা দাঁড়িয়ে আছেন পথের ধারে। মুজিব ছুটছেন এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি, পথে সবার সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন। গ্রামের মেয়েরা তাঁকে বিশেষভাবে দেখতে চায়, গ্রামের মানুষ বলে, ‘অন্দরে চলেন, মহিলারা আপনেরে একটু দেখতি চায়, বাবা।’
এর মধ্যে একজন বৃদ্ধার ডাক, ‘বাবা, মুজিবর, বাবা মুজিবর, একটু শুইনে যাও বাবা।’ পরনে শতচ্ছিন্ন বস্ত্র, সমস্ত শরীর মলিন, মুখে বলিরেখা, চুল যেন পাটের আঁশ, চোখ কোটরাগত, চোখের নিচে শুকনো অশ্রু আর ধূলিবালি মিলে পিঁচুটির দলা। তিনি তার শীর্ণ হাত তুলে মুজিবকে ডাকছেন, ‘বাবা, মুজিবর।’
‘কী মা?’
‘একটু ঘরের ভেতরে এসো, বাবা। ভাঙা ঘর। বুড়ি মানুষ। একলা থাকি, বাবা। তোমারে যে বইসতে দিব বাবা, আমার তো সাধ্য নেই। তবু তুমি যদি একটু আসো।’
মুজিব তার পর্ণকুটিরে ঢুকলেন। রোদে রোদে ঘুরছেন, ঘরের ভেতরটার ছায়া তার শরীর একটুখানি জুড়িয়ে দিল।
বৃদ্ধা বললেন, ‘কী দিই তোমারে, কী দিই সোনামুখে, একটুখানি দুধ রাখছি বাবা। বসে একটু খেয়ে নাও।
মুজিব বসে দুধটুকু পান করলেন।
বৃদ্ধা তার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করছেন। তারপর আঁচলের গিঁট খুলে একটা সিকি বের করে দিয়ে বললেন, ‘বাবা, আমার সাধ্য থাকলে আরও কিছু দিতাম। এই আমার সব।
মুজিব কয়েকটা টাকা পকেট থেকে বের করে বৃদ্ধার দিকে বাড়িয়ে দিলেন। বললেন, ‘মা, আপনি দোয়া করবেন। আপনি আমার জন্য যা করেছেন, আমি সারা জীবন মনে রাখব।’ মুজিবের চোখ দিয়ে দরদর করে অশ্রুপাত হতে লাগল।
বৃদ্ধা মুজিবের টাকা তো নিলেনই না, তবে তাঁর দেওয়া সিকিটা তাঁকে গ্রহণ করতে হলো।
মুজিব মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন, ‘যে মানুষ আমারে এত ভালোবাসে, সেই মানুষেরে ধোঁকা আমি দিতে পারব না।
এইভাবে এক টাকা, আট আনা করে শেখ মুজিবের পকেটে জনসাধারণের দেওয়া পাঁচ হাজার টাকা জমে গেল।
এত ভালোবাসা, এত সাড়া! তবু মুজিবের মনে শঙ্কা, জিতবেন তো!
এর কারণ, মুজিবের নিজের ইউনিয়নের বিখ্যাত আলেম ও সুবক্তা শামসুল হক সম্প্রতি মুসলিম লীগে যোগ দিয়েছেন। স্পিডবোটে চড়ে তিনি গ্রামের পর গ্রামে যাচ্ছেন। আর ফতোয়া দিচ্ছেন, নৌকায় ভোট দিলে ইসলাম শেষ হয়ে যাবে, ধর্ম থাকবে না। শামসুল হক সাহেবকে শেখ মুজিব নিজেই খুব শ্রদ্ধা করেন। তাঁর সঙ্গে তাঁর খুবই ভালো সম্পর্ক। তিনি যখন ফতোয়া দিচ্ছেন, তখন হতাশ না হয়ে উপায় কী? শুধু শামসুল হক সাহেব নন, শর্ষিনার পীর, বরগুনার পীর, শিবপুরের পীর, রহমতপুরের শাহ সাহেব—সবাইকেই জড়ো করতে পেরেছেন দেশের সবচেয়ে বড়লোকদের একজন ওয়াহিদুজ্জামান। পীর সাহেবদের পেছনে তাঁদের তালেবে এলেমরা ছুটছে। কারও কোনো বিশ্রাম নাই। শেখ মুজিবকে হারাতেই হবে। একদিকে টাকা, একদিকে পীরদের অবিরাম ফতোয়া। যদি ইসলাম বাঁচাতে চাও, মুসলিম লীগকে ভোট দাও। তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হলেন সরকারি কর্মচারীরা। ঢাকা থেকে এলেন পুলিশের প্রধান, পরিষ্কারভাবে কর্মচারীদের নির্দেশ দিলেন, মুসলিম লীগকে সমর্থন করুন। জেলার ম্যাজিস্ট্রেটই শুধু বললেন, আমি সরকারি কর্মচারী, আমি তো প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করতে পারব না। তাঁকে বদলি করে দেওয়া হলো। তাঁর বদলে যে জেলা ম্যাজিস্টেট এলেন, তিনি প্রকাশ্যে বক্তৃতা করে বেড়াতে লাগলেন মুসলিম লীগের পক্ষে। শুধু কি তাই, তিনি ভোটকেন্দ্র এমনভাবে স্থানান্তর করতে লাগলেন, যাতে ওয়াহিদুজ্জামানের সুবিধা হয়।
ঢাকায় সোহরাওয়ার্দীর কাছে খবর গেল। মুজিবের বিরুদ্ধে সরকার, পীর সাহেবেরা সবাই মিলে একজোট হয়ে লেগে পড়েছে। তিনি চলে এলেন গোপালগঞ্জে। দুটো জনসভায় ভাষণ দিলেন। মওলানা ভাসানীও এলেন। একটা সভা করলেন।
এবার সরকার মুজিবের কর্মী ও নেতাদের গ্রেপ্তার করতে আরম্ভ করল। এক ইউনিয়নেই আটক করা হলো ৪০ জন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে।
এদিকে শুধু নিজের আসনের দিকে দেখলে হবে না, আশপাশের জেলাতেও তো যেতে হবে অন্য প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারাভিযানে অংশ নিতে। মুজিব তাও গেলেন।
৪১.
তাজউদ্দীন আহমদ ভোট নিয়ে এত চিন্তিত নন। তাঁর বয়স কেবল ২৯। এর মধ্যে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। আবার ভর্তি হয়েছেন আইন ক্লাসে। ভোটের প্রচারাভিযানে বের হন, বাজারে বাজারে যান, হাটে যান, লোকের সঙ্গে কথা বলেন, যুক্তফ্রন্টকে ভোট দিতে আহ্বান জানান মানুষকে। আবার ট্রেনে চড়ে ঢাকা চলে আসেন, আইন বিভাগের ক্লাসে যোগ দেন। সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমাও দেখেন।
তিনি বড় নেতা নন। অন্যের নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে তাঁকে বক্তৃতা করতে হয় না। কিন্তু তিনি জানেন, নিজের এলাকায় তিনি জনপ্রিয়। তিনি এই ২৯ বছর বয়স পর্যন্ত নিয়মিত তাঁর বাড়িতে গেছেন, এলাকার প্রতিটা সমস্যায় লোকে তাঁকে পাশে পেয়েছে। এর ওপরে আছে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে নির্বাচনী হাওয়া।
কিন্তু একটা দুশ্চিন্তা আছে। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক পুরোনো বড় নেতা ফকির আবদুল মান্নান।
মওলানা ভাসানী চললেন তাজউদ্দীনের নির্বাচনী এলাকায়।
রাজেন্দ্রপুর রেলওয়ে স্টেশনের পর ঘন গজারিবন। সেই বনের ভেতর দিয়ে একচিলতে একটা কাঁচা রাস্তা। সাইকেল নিয়ে পথ চলা সহজ। কিন্তু ভাসানী যাবেন কীভাবে? তাজউদ্দীনের নিকটাত্মীয়দের হাতি আছে। চাইলেই হাতি তিনি পেয়ে যান। এর আগেও তিনি একবার দুটো হাতিতে চড়ে শিকারে বেরিয়েছিলেন ঢাকা থেকে আসা বকু করিম সাহেবকে নিয়ে।
মওলানা ভাসানী কাপাসিয়া চলেছেন হাতির পিঠে চড়ে।
প্রতিপক্ষ ভয় পেয়ে গেল। মওলানা ভাসানী যদি তাজউদ্দীনের পক্ষে জনসভায় ভাষণ দেন, তাহলে তো পরাজয় নিশ্চিত।
যে-করেই হোক, মওলানা ভাসানীর আগমন প্রতিহত করতে হবে।
কী করে করা যায়?
হাতি খুব ভয় পায় আগুনকে।
মওলানা ভাসানী চলেছেন গজেন্দ্রগমনে। হাতির পিঠে তাঁর সঙ্গে বসে আছেন তাজউদ্দীন। আর আছে মাহুত। তার হাতে অঙ্কুশ।
তাজউদ্দীন বললেন, হুজুর, যত মৌলভি সাহেব, পীর সাহেব, খারিজি মাদ্রাসার ছাত্র, সবাই তো একজোট, সবার তো এক রা। যুক্তফ্রন্টকে ভোট দিলে বিবি তালাক হয়ে যাবে। যুক্তফ্রন্ট ইন্ডিয়ার দালাল। নৌকায় ভোট দিলে ইসলাম খতম হয়ে যাবে।
মওলানা ভাসানী বললেন, ‘কইতে দেও। কইতে দেও। খালি ভোটের দিনটা আইতে দেও। ভোট হোক। ভোট গোনা হোক। দেইখো কী হয়। মুসলিম লীগ টাকাপয়সা ছিটাইতেছে। মানষে দুই চারটা টাকা পাইয়া দুই চার কথা কইতেছে। ভোটের দিন হেরাও মুসলিম লীগেরে ভোট দিতে পারব না।’
তাঁরা ঘন বনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। বসন্তের বাতাস বইছে। হঠাৎ হাতি চঞ্চল। মাহুত আতঙ্কিত। বনের মধ্যে আগুন দিল কে? সূর্যনারায়ণপুর জায়গাটার নাম। আগুন জ্বলছে। ধোঁয়া উঠছে পথের দুধারের গাছে। আর তো হাতি যাবে না। না গেলে উপায়টাই বা কী? মওলানা ভাসানীর নাম করে মাইকিং করা হয়েছে। আজকের জনসভায় তিনিই প্রধান বক্তা। ভাসানীর নাম শুনলেই হাজার হাজার মানুষ জড়ো হবে।
তাজউদ্দীন বললেন, ‘আগুন লাগা জায়গাটা কোনোমতে পার করে ফেলো।’
মাহুত হাতিকে সামনে এগিয়ে নিতে চাইল। হাতি কিছুতেই আগুনের মধ্যে যাবে না। সে দিশেহারা হয়ে ছুটতে লাগল। মাহুতের কোনো নিয়ন্ত্রণই নাই হাতির ওপরে।
মওলানা ভাসানী ও তাজউদ্দীন ছিটকে পড়ে গেলেন হাতির পিঠ থেকে।
কিন্তু কী আশ্চর্য, দুজনেই অক্ষত রইলেন পুরোপুরি।
হাতি ছেড়ে দিয়ে দুজনে হাঁটাপথে রওনা হলেন। সাইকেল নিয়ে ছুটল কর্মীরা। মোষের গাড়ি আনতে। ততক্ষণে আগুন নিভে গেছে।
মওলানা ভাসানী আবার হাতির পিঠে আরোহণ করলেন। হাতিতে চড়েই তারা হাজির হলেন জনসভাস্থলে।
সারা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ল, মুসলিম লীগাররা মওলানা ভাসানী ও তাজউদ্দীন আহমদকে হত্যা করতে চেয়েছিল।
জনতা স্লোগান ধরল, তোমার আমার মার্কা, নৌকা নৌকা।
৪২
সোহরাওয়ার্দীকে যেতে হলো মোশতাককে দোয়া করার জন্য। তাও মোশতাকের নির্বাচনী এলাকার পাশে এলাকায়।
সোহরাওয়ার্দী একটা চা-চক্রে দাওয়াত করেছেন দাউদকান্দির নেতা- মাতব্বরদের। সবাই এসেছেন সেই চা-চক্রে। খন্দকার মোশতাকও উপস্থিত। সোহরাওয়ার্দী সবার খোঁজখবর নিচ্ছেন। সবার হাতে চায়ের কাপ এগিয়ে দিচ্ছেন। তাঁকে কেন এখানে আসতে হলো, সে কথা মনে করে আপন মনে হাসছেন। মোশতাকও ভাবছেন, ভাগ্যিস বুদ্ধি করে সেদিন মুজিবকে ধরেছিলাম।
ঘটনা এই : মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে ঢাকায় ফিরে এসেছেন মুজিব। এসে দেখলেন, আওয়ামী লীগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা মনোনয়ন পান নাই। চট্টগ্রামের এম এ আজিজ পান নাই, খোন্দকার মোশতাকের মতো জেলখাটা কর্মীও নমিনেশন পান নাই।
মোশতাক ধরে বসলেন মুজিবকে। ‘মুজিব, তুমি থাকলা না। আমি নমিনেশন পাইলাম না। কিন্তু ইলেকশন করবই। স্বতন্ত্র থেকে।’
মুজিব বললেন, ‘নৌকা মার্কার যে জোয়ার এসে গেছে, তাতে কি আর স্বতন্ত্র থেকে করলে জিতবা?’
মোশতাক বললেন, ‘তোমার লিডাররে বলো আমার এলাকায় গিয়া আমারে সাপোর্ট দিতে।’
মুজিব বললেন, ‘সেটার তো নিয়ম নাই। আমরা অঙ্গীকার করেছি, কেন্দ্রীয় নেতারা কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষ নিবে না। তাদের জন্য ভোট চাবে না।’
মোশতাক বললেন, ‘তবু তুমি নিয়া চলো আমাকে লিডারের কাছে। তুমি বললে তিনি না করতে পারবেন না।’
মুজিব গেলেন সোহরাওয়ার্দীর কাছে, সঙ্গে খোন্দকার মোশতাক, গিয়েই মুজিব উচ্চ স্বরে বলতে লাগলেন, “লিডার, এটা আপনারা কী করলেন! মোশতাক কী করে নমিনেশন পায় না। সে আমাদের জয়েন্ট সেক্রেটারি ছিল। জেল থেকে কেবল বার হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী বললেন, ‘এখন তো আর বলে কোনো উপায় নাই। নমিনেশন পেপার তো সাবমিট হয়ে গেছে।’
মুজিব বললেন, ‘ও তো স্বতন্ত্র হিসাবে নমিনেশন সাবমিট করেছে।’
মোশতাক সোহরাওয়ার্দীর হাত ধরে বললেন, ‘স্যার, আপনাকে আমার এলাকায় যেতে হবে। আপনার পাশে দাঁড়ায়া থাকব। আপনি পরিচয় করায়া দিবেন।’
সোহরাওয়ার্দী বললেন, “তা করতে হামি পারব না। তবে যেটা পারব, তোমার পাশের কন্সটিটুয়েন্সিতে যাব।
‘আচ্ছা, আপনি চলেন। আপনার পাশে যদি একটু দাঁড়াতে পারি, তাহলেই হবে।’
সোহরাওয়ার্দী গেলেন মোশতাকের আসনের পাশের এলাকায়।
সেখানে দাউদকান্দি এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দাওয়াত করলেন চা- চক্রে। সেখানেই তিনি মোশতাককে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। বললেন, ‘ওকে আমরা নমিনেশন দিতে পারি নাই। কৃষক শ্রমিক পার্টিকে দিতে হলো। ওর জন্য আমার দোয়া আছে। আপনারাও দোয়া করবেন।’
৪৩.
নির্বাচন হলো কয়েক দিন ধরে। ১৯৫৪-এর বসন্ত যেন মধুর দক্ষিণা বাতাস বইয়ে দিতে লাগল পূর্ব বাংলায়।
গ্র্যাজুয়েটস স্কুল, ঢাকা। সন্ধ্যা নামছে আকাশে আবির ছড়িয়ে। উজ্জ্বলতা চারদিকে। কনে-দেখা হলদে আলোয় ঝলমল করছে সব। সোহরাওয়ার্দী দাঁড়িয়ে আছেন একটা দেয়ালে ঠেস দিয়ে। তাঁর গায়ে গেরুয়া পাঞ্জাবি, পরনে সাদা পায়জামা। তাঁকে খুব ক্লান্ত কিন্তু পরিতৃপ্ত দেখাচ্ছে। কমলা রোদ এসে পড়েছে তাঁর চুলে। তাঁকে দেখাচ্ছে একটা পিতলের ভাস্কর্যের মতো।
সাংবাদিকেরা তাঁকে এটা-ওটা প্রশ্ন করতে লাগল।
তিনি বললেন, ‘হামার মনে হয় মুসলিম লীগ অ্যাসেম্বলিতে নিজেদের গ্রুপ বানাতে পারবে না। গ্রুপ বানাবার জন্য দরকার হয় ১০ জন মেম্বার। আমার হিসাব বলে, ওরা ৯টার বেশি সিট পাবে না।’
ফল বেরোতে সময় লাগল। ৯-১০ মার্চ ভোট হয়েছে, ফল বেরোল ১৮ মার্চ। ২৩৭টা মুসলিম আসন। দেখা গেল, মুসলিম লীগ পেয়েছে নয়টি আসন। সোহরাওয়ার্দীর হিসাব কাঁটায় কাঁটায় মিলে গেল।
যুক্তফ্রন্ট পেল ২২৮টি।
দৈনিক ইত্তেফাক অফিস। সবে সন্ধ্যা পেরিয়েছে। অফিসের সামনে জনতার বিশাল ভিড়। তারা উদ্গ্রীব, উৎফুল্ল, উৎকর্ণ। সবার মধ্যে একটা বিষয়ে কৌতূহল। প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিনের কী খবর? তিনি কি জিতেছেন, নাকি হেরে গেছেন?
একটা ফোন এল ইত্তেফাক অফিসে। ফোন করেছেন ময়মনসিংহের টেলিফোন অপারেটর নিজেই। ‘শুইনছেন, ময়মনসিংহের ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট ফুন করছিলেন চিফ সেক্রেটারি ইসহাক সাহেবের কাছে, নুরুল আমিন হাইরা গেছে।’
এই খবর একজন জানিয়ে দিল ইত্তেফাক অফিসের সামনে সমবেত জনতাকে। অমনি উল্লাসে ফেটে পড়ল সমবেত মানুষগুলো।
ভিড় বাড়তেই লাগল। ইত্তেফাক অফিসের অদূরেই ফজলুল হকের বাড়ি। সেই বাড়ির সামনেও ভিড়।
মধ্যরাতে একটা ছাত্র মিছিল বেরোল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে। খড়ম মিছিল। ছাত্রেরা দুই হাতে দুটো খড়ম নিয়ে বাজাতে বাজাতে শহর প্রদক্ষিণ করল। মুখে তাদের জারি গান।
ইত্তেফাক-এর বার্তা সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেন মিটি মিটি হাসছেন। গুনগুন করে গান গাইছেন। তাঁকে এত উল্লসিত দেখতে রিপোর্টারদেরও খুব ভালো লাগছে।
এই সময় নুরুল আমিনের পরাজয়ের খবরটি লিখে একজন রিপোর্টার তাঁর সামনে রাখল।
রিপোর্টার শিরোনাম দিয়েছেন : নুরুল আমিন ধরাশায়ী।
সিরাজুদ্দীন হোসেন রিপোর্টটা হাতে পেয়ে চোখ রাখতেই গম্ভীর হয়ে গেলেন।
সিরাজ ভাই কি নুরুল আমিনের পরাজয়ে মন খারাপ করলেন? তা কেন হবে? তিনি তো একটু আগেও গুনগুন করে গান গাইছিলেন।
সিরাজুদ্দীন হোসেন হেডলাইনটা কেটে নতুন একটা হেডলাইন দিলেন।
‘পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক আকাশ থেকে অশুভ নক্ষত্রের কক্ষচ্যুতি।’ হেডলাইনটা দিয়ে তারপর তার মুখে হাসি ফুটে উঠল।
পরদিন এটা ইত্তেফাক-এ ব্যানার হেডলাইন হিসেবে প্রকাশিত হলো।
প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিন পরাজিত হলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক খালেক নেওয়াজের কাছে।
কাপাসিয়ার ভোট গণনা শেষ হয়েছে রাত আটটায়। তাজউদ্দীন আহমদ ভোট গণনা দেখতে গিয়েছিলেন তিনটার দিকে, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অফিসে I নিজের ভোট গোনা শেষ হওয়ার আগেই বের হয়ে এসেছেন। আগের দিন বিকালে ক্লাস করেছেন। সেকেন্ড শো সিনেমা দেখেছেন লায়ন হলে, ছবির নাম শিবশক্তি। বাড়ি ফিরেছেন রাত সাড়ে ১২টার পরে। আজকে রাত আটটায় যখন ফল ঘোষিত হলো, দেখা গেল, তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন। তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৩৯ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মুসলিম লীগের সম্পাদক ফকির আবদুল মান্নান পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৭২ ভোট, তখন তাকে ছাত্রযুব কর্মীরা টেনে নিয়ে গেল মিছিলে। বাবুবাজার ব্রিজ পর্যন্ত মিছিল গেল, ফিরে এল সিমসন রোডে যুক্তফ্রন্ট অফিসে।
সোহরাওয়ার্দী, আতাউর রহমান খান, কাদের সর্দার, কফিলউদ্দিন চৌধুরী, কামরুদ্দীন আহমদের সঙ্গে দেখা করলেন তাজউদ্দীন।
তারপর আবার মিছিল তাঁকে সঙ্গে নিয়ে চলল নবাবপুর সড়ক ধরে ফজলুল হক হলে, সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল হয়ে এসএম হলে। রাত সাড়ে ১২টায় শেষ হলো মিছিল।
.
শেখ মুজিব ঢাকা ফিরছেন। নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত স্টিমার। তারপর ট্রেন।
ট্রেন চলছে। ঝিকঝিক ঝিকঝিক। স্টিম ইঞ্জিনের ট্রেন। শেখ মুজিবের সঙ্গে কয়েকজন কর্মী। তাঁর মনে প্রশ্ন, ক্ষমতাসীন দলের এত বড় ভরাডুবি পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোথাও কখনো হয়েছে কি না! বাঙালিরা রাজনীতির জ্ঞান রাখে। তারা রাজনীতিসচেতন। এবারের ভোটেও তা-ই প্রমাণিত হয়ে গেল। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান ইস্যুতেও বাঙালি একই রকমভাবে রাজনীতি-সচেতনতার প্রমাণ রাখতে পেরেছিল।
ইসলাম শেষ হয়ে গেল, আওয়ামী লীগ কাফেরের দল, মুসলিম লীগ হলো মসজিদ, ইমাম বদলানো যায়, মসজিদ ভাঙা যায় না, যারা মুসলিম লীগ ভেঙেছে তারা কাফের—কত কী বলল এই মুসলিম লীগাররা।
বাংলার মানুষ ভোট দেবার সময় এদের কোনো কথাকেই পাত্তা দিল না।
কত বাঘা বাঘা মুসলিম লীগ নেতা পরাজিত হয়েছেন।
আবার নির্বাচনের আগে মুসলিম লীগ চেষ্টা করেছে বাঙালি-অবাঙালি বিভাজন সৃষ্টি করতে। চন্দ্রঘোনায় কর্ণফুলী কাগজের কলে অবাঙালি কর্মকর্তাদের বলা হলো, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে অবাঙালিদের থাকতে দেওয়া হবে না বাংলায়।
মুজিব ভাবছেন, তাদের আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মী আছে, যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তারা জানে, সমাজতন্ত্রই মুক্তির একমাত্র পথ। তারা জানে, ধনতন্ত্র মানেই শোষণ। আর যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারা কোনো দিন কোনো রকমের সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে না। তাদের কাছে মুসলমান, হিন্দু, বাঙালি, অবাঙালি সকলেই সমান। শোষক শ্রেণীকে তারা পছন্দ করে না।
রেনুর কথাও মনে পড়ে। রেনু সন্তানসম্ভবা। এবার আসার সময় কেমন ছলছল চোখে তাকাচ্ছিল। মুজিবের ব্যস্ততা আরও বেড়ে যাচ্ছে, সেটা তিনি অনুভব করেছেন। হাসিনা আর কামাল তো নৌকা নৌকা করে বাড়িময় দৌড়াদৌড়ি করছিল। আব্বা খুব খুশি হয়েছেন। তিনি ইলেকশনের ফল শুনে মুজিবকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। আর ছাড়তেই চাচ্ছিলেন না। তাঁর চোখে ছিল জল।
তিনি বলেছিলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম, তুমি উকিল হও। আইন পড়ো। এবার তুমি আইন পরিষদের মেম্বার হলে। আইন তোমরাই রচনা করবে। এটা কম কথা নয়।’
.
ফুলবাড়িয়া স্টেশনে ট্রেন থামল। শেখ মুজিব নামলেন। বিপুলসংখ্যক ছাত্রজনতা তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিল আর তাঁর সঙ্গে চলল মিছিল করতে করতে। নবাবপুর রোডের আওয়ামী লীগ অফিসে গেলেন তিনি। সোহরাওয়ার্দী ছিলেন সেখানে, তাঁকে দেখে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন। ‘তোমাকে নিয়েই চিন্তিত ছিলাম’—সোহরাওয়ার্দী বললেন। মুজিব হেসে বললেন, ‘আপনি কিন্তু আমার বাড়িতে বলে এসেছিলেন তোমার জয় সুনিশ্চিত।
শেখ মুজিবের কাছে হেরে গেছেন ওয়াহিদুজ্জামান।
আর সোহরাওয়ার্দীর দোয়ার বদৌলতে জয়লাভ করলেন খন্দকার মোশতাক।
তার প্রতিদানও তিনি দিলেন। তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগকে সমর্থন না দিয়ে সমর্থন দিতে লাগলেন কৃষক শ্রমিক পার্টিকে (কেএসপি)। কেএসপি তাঁকে চিফ হুইপ বানিয়ে দিল
৪৪.
সোহরাওয়ার্দী মুজিবকে আলাদা করে ডেকে নিয়েছেন। বললেন, ‘হামার কথা মন দিয়ে শোনো। ‘
মুজিব বললেন, ‘লিডার, আমি কখনোই আপনার অবাধ্য হই নাই। আপনি বলেন।
‘তোমাকে হামি পার্লামেন্টে ডেপুটি লিডার বানাব। তুমি মন্ত্রী হতে চাবা না।’
‘আমি তো মন্ত্রী হতে চাই না, স্যার।’
‘তুমি বয়সে ছোট। পার্লামেন্টে তোমার কোনো অভিজ্ঞতা নাই। এ কে ফজলুল হক লিডার হবেন। তুমি তাঁর সঙ্গে থেকে সব শিখবা। তাঁকে তোমার লাইনে রাখবা। আওয়ামী লীগের যে আদর্শ, যে কমিটমেন্ট সেইটা থেকে যেন হক সাহেব সরে যেতে না পারেন, সেইটা তুমি দেখবা
‘ঠিক আছে স্যার। তবে আওয়ামী লীগ তো পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। আমাদের আসন ১৪৩, কৃষক শ্রমিক পার্টি ৪৮। মাইনরিটি দল থেকে কী করে লিডার হবে, এইটা আওয়ামী লীগের কর্মীদের কী করে বোঝাব?’
না না। সবাই বুঝবে। এ কে ফজলুল হক যে লিডার, এইটা পুরা দেশ জানে আর মানে। ৮১ বছর বয়সী একটা মানুষ। তাঁকে মানতে হবে।’
‘জি স্যার। আপনি যা বলবেন। আমি আসলে মন্ত্রী হতে চাই না। অনেক যোগ্য প্রার্থী আছে। তাদের মধ্য থেকে দেখেশুনে মন্ত্রী করেন। আমি পার্টির কাজ করতে চাই।’
.
আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি দলের সভা বসেছে। সোহরাওয়ার্দী আর ভাসানী দুজনেই উপস্থিত।
সোহরাওয়ার্দী সাহেব বললেন, ‘দেশের মানুষ হক সাহেবকে লিডার মেনে ভোট দিয়েছে। আপনারাও ভোট চেয়েছেন, তিনিই প্রধানমন্ত্রী হবেন, এই কথা বলে। এখন আর কোনো রকমের বেইমানি করা যাবে না। তাঁকেই লিডার নির্বাচন করা হবে।’
রংপুরের খয়রাত হোসেন বললেন, ‘বিনা শর্তে হক সাহেবকে লিডার করলে তিনি কী করবেন না করবেন তার কোনো ঠিকঠিকানা নাই। অতীতে এই ধরনের উল্টাপাল্টা কাজ তিনি অনেক করেছেন। আমরা এক কাজ করি। লিডার নির্বাচনের আগেই হক সাহেবের মন্ত্রিসভায় কে কে থাকবেন, সেটার তালিকা ও পোর্টফলিও ঠিক করে হক সাহেবের স্বাক্ষর নিয়ে রাখি। গভর্নরের কাছে সেই চিঠি যাবে। তারপর আমরা হক সাহেবকেই নির্বাচিত করি।’
সোহরাওয়ার্দী বললেন, ‘না না, এটা হবে খুবই ক্ষুদ্র মনের কাজ। অতীতে তিনি যা-ই করে থাকুন না কেন, এই বৃদ্ধ বয়সে তিনি ভুল করবেন না।’
সোহরাওয়ার্দীর কথায় অনেকেই আশ্বস্ত হলো, যারা হলো না, তারা কথা বাড়াতে চাইল, সোহরাওয়ার্দী ধমক দিয়ে তাদের বসিয়ে দিলেন 1
তারপর বসল যুক্তফ্রন্টের সভা।
মওলানা ভাসানী সভাপতিত্ব করলেন।
সর্বসম্মতিক্রমে ফজলুল হক লিডার নির্বাচিত হলেন। তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখলেন সোহরাওয়ার্দী।
মওলানা ভাসানী মোনাজাত পরিচালনা করলেন।
.
মন্ত্রী কারা হবেন, তা নির্ধারণের জন্য ফজলুল হকের বাড়িতে বসলেন তিন নেতা—হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দী।
সেই সভাতেই মনোমালিন্য দেখা দিল। প্রথমেই ফজলুল হক বললেন, ‘আমার একটা কথা আছে। আপনাদের আওয়ামী লীগ থেকে যাকেই মন্ত্রী করতে চান না কেন, শেখ মুজিব যেন মন্ত্রী না হয়। আমি তাকে মন্ত্রী করব না।’
শেখ মুজিব মন্ত্রী হতে চান না।
কিন্তু আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল, তারা কাকে মন্ত্রী করবে না করবে, সেটা তাদের ব্যাপার। এটা নিয়ে ফজলুল হক কথা বলতে পারেন না। ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দী বললেন, ‘তাহলে আমাদেরও একটা কথা আছে। আপনি আপনার ভাগনে নান্না মিয়াকে মন্ত্রী করতে পারবেন না।’
‘এটা তো আপনারা বলতে পারেন না,’ ফজলুল হক বললেন।
ঘোরতর অচলাবস্থা দেখা দিল। আর শেখ মুজিবের পক্ষে রাস্তায়, ফজলুল হকের বাড়ির সামনে ছাত্রজনতা মিছিল করতে লাগল।
যুক্তফ্রন্ট আবার বুঝি ভেঙে যায়!
ফজলুল হকের প্রস্তাব : ‘মন্ত্রী হবেন পাঁচজন। আওয়ামী লীগের দুইজন, আতাউর রহমান খান এবং সালাম খান। পরে আরও পাঁচজনকে নেওয়া হবে।’
আওয়ামী লীগ বলল, ‘হয় পুরো মন্ত্রিসভা করেন, তা না হলে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী দরকার নাই। আপনি বাকি তিনজনকে নিয়ে শপথ নেন।’
তা-ই হলো।
কৃষক শ্রমিক পার্টির আবু হোসেন সরকার, সৈয়দ আজিজুল হক (নান্না মিয়া) আর নেজামে ইসলামীর আশরাফউদ্দিন চৌধুরী শপথ নিলেন মন্ত্রিত্বের।
গভর্নর হাউসের সামনে তখন মিছিল হচ্ছে, ‘স্বজনপ্রীতি চলবে না’, ‘কোটারি করা চলবে না’।
মিছিলের সামনে পড়লেন ফজলুল হক। তিনি গভর্নর ভবন থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। গাড়ির জানালা দিয়ে তিনি মুখ বের করে বললেন, “কিসের স্বজনপ্রীতি?’
‘আপনি নান্না মিয়াকে মন্ত্রী বানিয়েছেন?’
‘নান্না মিয়া কি এমএলএ হয় নাই?’
‘তা হয়েছেন। কিন্তু তিনি তো আপনার ভাগনে।’
‘আমার ভাগনে বলে কি সে পচে গেছে?’
বিক্ষোভকারী ছাত্ররা এই প্রশ্নের উত্তর হঠাৎ করে খুঁজে পেল না। ফজলুল হক তাঁর বাড়ির দিকে চলে গেলেন।
.
সোহরাওয়ার্দী চলে গেলেন করাচি
সেখানে গিয়ে এত দিনের পরিশ্রম আর অনিয়মের মাসুল তাকে গুনতে হলো। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন।