Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প477 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১২. দুপুরবেলা পিওন

    দুপুরবেলা পিওন একটি রেজিস্ট্রি চিঠি দিয়ে গেছে।

    খামের উপর লেখা-নীলুফার ইয়াসমিন। ইংরেজিতে টাইপ করা ঠিকানা। নীলু খুবই অবাক হল। কে তাকে রেজিস্ট্রি চিঠি দেবো? বিয়ের আগে এরকম চিঠি আসত। আজেবাজে সব কথার চিঠি–তোমাকে আজ দেখলাম কলেজে যাচ্ছ যেন কোনো রাজকন্যা পথ ভুলে এসেছে। জান, তোমার কথা ভেবে ভেবে রাত্রে আমার ঘুম হয় না। রাত জেগে জেগে জীবনানন্দ দাশের কবিতা পড়ি-চুল তার কবেকার। এই চিঠিও সে-রকম কিছু নাকি?

    নীলু ভয়ে ভয়ে খাম খুলল। ইংরেজিতে টাইপ করা একটা চিঠি। মার্কস এণ্ড ফিশার-এর জেনারেল ম্যানেজার লিখেছেন, তোমাকে জানানো যাচ্ছে যে, মার্কস এণ্ড ফিশার-এর পারচেজ ডিভিশনে জুনিয়র এ্যাপ্রেনিটিস অফিসার হিসেবে তোমাকে নিয়োগপত্র দেয়া হচ্ছে। চাকরির শর্তাবলী নিম্নরূপ। শর্ত পছন্দ হলে অগাষ্টি মাসের প্রথম সপ্তাহে তোমাকে কাজে যোগ দেবার জন্যে অনুরোধ করা হচ্ছে।

    সহজ ইংরেজি, অর্থ না বোঝার কিছু নয়, তবু নীলুর মাথায় কিছু ঢুকছে না। সে পরপর চার বার চিঠিটা পড়ল। মার্কস এণ্ড ফিশারে চাকরির জন্যে সে কোনো দরখাস্ত করে নি। মার্কস এণ্ড ফিশার কেন, কোথাও করে নি! বন্যার চাপাচাপিতে সে তার মামার কাছে গিয়েছিল। চাকরির চেষ্টা বলতে এইটুকুই বন্যা অবশ্যি এক দিন এসে সাদা কাগজে তার দস্তখত নিয়ে গেছে। সার্টিফিকেট মার্কশীট নিয়েছে ফটোকপি করবার জন্যে! কোথায় কোথায়, নাকি পাঠাবে। তাই দেখেই চাকরি হয়ে যাবে? ইন্টারভ্যু টিন্টারভ্যু কিচ্ছু লাগবে না? বাংলাদেশ এ রকম সোনার দেশ হয়ে গেছে?

    নাকি কোনো রহস্য আছে এর মধ্যে। হয়তো এই নীলুফার ইয়াসমিন সে নয়, অন্য কেউ। ভুল ঠিকানায় এসেছে। কিংবা ফাঁদ-টাব্দ পেতেছে। কেউ; সে জয়েন করতে যাবে, অমনি তাকে ধরে নিয়ে পাচার করে দেবে পাকিস্তানে কিংবা সিঙ্গাপুরে। গতকালের পত্রিকাতেই আছে, দশটি মেয়েকে পাচার করেছে পাকিস্তানে। ধরা পড়ে তারা এখন আছে লাহোরের এজেল-হাজতে। একটি মেয়ের ছবিও ছাপা হয়েছে। কেমন বৌ-বৌ চেহার দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে করে। রুমা নাম।

    সারাটা দুপুর নীলুর কাটল অস্বস্তিতে। চিঠিটা কাউকে দেখানো যাচ্ছে না। বাসায় রফিক অবশ্যি আছে! তাকে এখনি কিছু বলা ঠিক হবে না হেৈ চেঁচামেচি শুরু করবে। ব্যাপারটা পুরোপুরি না জেনে কাউকে কিছু না বল। ভালো। বন্যাকে টেলিফোন করা যায় অবশ্যি! সে সবচে ভালো বলতে পারবে রশীদ সাহেবের বাসায় নতুন টেলিফোন এসেছে। বন্যার টেলিফোন নাম্বারও লেখা আছে। কিন্তু দুপুরবেলায় বেরুতে গেলেই মনোয়ারা হাজারটা প্রশ্ন করবেন, কোথায় যাচ্ছ? কেন যাচ্ছ? দরকারটা কী?

    তবে মনোয়ারা খাওয়াদাওয়া শেষ হলেই ঘুমুতে যাবেন। সেই সময় যাওয়া যায়। নীলুতার শাশুড়ির ঘুমের জন্যে অপেক্ষা করতে লাগল।

    বন্যাকে পাওয়া গেল। মার্কস এণ্ড ফিশারের কথা শুনেই বলল, সেই অফিসেই তো তোকে নিয়ে গিয়েছিলাম। মামার অফিস। নামটাও মনে নেই? গাধা নাকি তুই?

    জয়েন করব?

    করবি না। মানে! এত ঝামেলা শুধু শুধু করলাম? কত বার যে আমি মামার কাছে গিয়েছি, সেটা আমি আমি আর মামা জানে।

    আমার কেন জানি শুধু ভয়-ভয় লাগছে।

    ভয়-ভয় লাগার কী আছে। এর মধ্যে?

    অফিসের চাকরি, পারব টারব না, সবার বকা খাব।

    বাজে কথা বলিস না। চড় খাবি।

    বাসার সবাই কীভাবে নেবে, কে জানে।

    যেভাবে ইচ্ছানিক। কিছুই যায়-আসে না।

    শাশুড়ি হয়তো রেগে যাবেন।

    বেতন পেয়ে তাঁকে একটা গরদের শাড়ি কিনে দিস, দেখবি সব রাগ জল হয়ে গেছে। উঠতে-বসতে তখন শুধু বৌমা বৌমা করবে।

    বন্যা খুব হাসতে লাগল। এটা কোনো হাসির ব্যাপার না। হয়তো শেষ পর্যন্ত শফিকই বলে বসবে-এত ছোট বাচ্চাকে রেখে চাকরি করবে কী? ওকে কে দেখবে? তাছাড়া সে রাজি হলেও নীলু কি পারবে টুনীকে রেখে অফিস করতে?

     

    রফিক বাসায় ফিরল নটার দিকে। তার মনটন ভালো নেই। চাকরির ব্যাপারে এক জনকে ধরার কথা ছিল। ধরা যায় নি। এক্ষুণি আসবেন এক্ষুণি আসবেন করে ওরা তাকে তিন ঘণ্টা বসিয়ে রেখে বলেছে, আজ মঙ্গলবার, খেয়ালই ছিল না। মঙ্গলবার তিনি তো আসেন না। আপনি ভাই মঙ্গলবার ছাড়া অন্য যে কোনো দিন আসেন। রফিক বহু কষ্টে রাগ সামলে বলেছে, আমি কাল আসব। কাল গেলেও লাভ হবে না। তবু যেতে হবে, কারণ এই লোক এক জন মন্ত্রীর ফুপাতো ভাই। তাকে ধরে মন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছতে হবে।

    রফিক বাসায় ফিরেই খেতে বসল। তার খুব খিদে পেয়েছে।

    ডাল আর আলুভাজা? অত্যন্ত উচ্চমানের খাবার দেখছি ভাবী।

    নীলু বলল, বাজার হয় নি। আজ।

    একটা ডিম ভেজে নিয়ে এস।

    ডিম নেই ঘরে। থাকলে ভেজে দিতাম।

    রফিক প্লেট সরিয়ে উঠে দাঁড়াল।

    এইসব ফালতু জিনিস আমার পক্ষে খাওয়া সম্ভব না।

    না খেয়ে থাকবে?

    হ্যাঁ। খাবার যা দিয়েছ, সেটা খাওয়া আর না-খাওয়া সমান।

    নীলু আর কিছু বলল না। রফিকের মধ্যে এই ছেলেমানুষিটা আছে। এই বয়সে খাবার নিয়ে রাগ করে কেউ?

    মুল্লায়ার এসে বললেন, রফিক কি না–খেয়ে চলে গেল বৌমা?

    জ্বি।

    জানোই তো, সে এসব আজেবাজে খাবার খেতে পারে না। একটা ডিম এনে রাখলে না কেন?

    কাকে দিয়ে আনাব বলেন? বাবার পায়ে ব্যথা, শুয়ে আছেন। ও এখনো অফিস থেকে ফেরে নি।

    মনোয়ারা বিরক্ত হয়ে বললেন, কী মুখে মুখে তর্ক করছ? আনিস ছোঁড়াটাকে বললেই তো এনে দেয়! চেষ্টা থাকলে একটা উপায় হয়। সেই চেষ্টাটাই তো নেই।

    নীলু কিছু বলল না। মনোয়ারার মেজাজ চড়তে লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ল রফিকের উপর, সম্রাট জাহাঙ্গীর। মোঘলাই খানা ছাড়া খেতে পারেন না। পরের উপর খাওয়া তো, টের পায় না। নিজের রোজগারে যখন খাবে, তখন বৌমা, তুমি দেখবে আলুভর্তা দিয়ে সোনামুখ করে ভাত খাচ্ছে। শাহানশাহর জন্যে দুপুর-রাতে গিয়ে ডিম কিনে আনতে হবে। কি আমার ডিম খানেওয়ালা।

    নীলুমৃদুস্বরে বলল, মা, ও শুনবে।

    শুনলে শুনবে। আমি কি ওর রাগের তোয়াক্কা করি? কান ধরে বের করে দেব না? চাকরি-বাকরি না পেয়ে তেল বেশি হয়ে গেছে। তেল কমানো দরকার।

     

    রফিক শোবার আয়োজন করছে। নীলু এসে দরজার পাশে দাঁড়াল, ঘুমিয়ে পড়েছ রফিক?

    না।

    আসব ভেতরে?

    ইচ্ছে করলে আসতে পার।

    নীলু ভেতরে ঢুকল। রফিকের মুখ অস্বাভাবিক গভীর। মনোয়ারার কাটা কাটা কথা নিশ্চয়ই কানে গিয়েছে। নীলু বলল, খিদে নিয়ে ঘুম আসবে না। ভাত দিয়েছি, খেতে আসি। রফিক জবাব দিল না।

    তোমার বিখ্যাত ডিম ভাজাও আছে। আনিসকে পাঠিয়ে ডিম আনানো হয়েছে। কেন এমন ছেলেমানুষি কর রফিক? এস, প্লীজ।

    রফিক খাবার ঘরে এল কোনো রকম আপত্তি না করেই। নীলু খেতে বসিল রফিকের সঙ্গে।

    তুমি খাও নি?

    না।

    রফিক হালকা গলায় বলল, সব সময় এমন ভালো মেয়ে সাজতে চাও কেন ভাবী? আমার জন্যে অপেক্ষা করার দরকার ছিল না।

    নীলু কিছু বলল না! রফিক গম্ভীর গলায় বলল, ধর, আমি যদি রাতে না খেতাম, তুমিও কি না-খেয়ে থাকতে?

    কি জানি। জানি না।

    না-না, বলতে হবে তোমাকে।

    আমার প্রচণ্ড খিদে লেগেছে, আমি খেয়ে নিতাম।

    দ্যান্টুস গুড। বাঙালি মেয়েদের একটা প্রবণতাই হচ্ছে ভালোমানুষির ভান করা। ভান আমি দু চোখে দেখতে পারি না। তোমার মধ্যেও প্রচুর ভান আছে।

    আছে নাকি?

    অফকোস আছে। থাকতেই হবে।

    নীলু। প্রসঙ্গ পান্টে মুদ্রস্বরে বলল, একটা খবর আছে রফিক?

    খারাপ খবর, না ভালো খবর?

    বুঝতে পারছি না।

    বল শুনি।

    আমি একটা চাকরি পেয়েছি;

    কী পেয়েছ?

    চাকরি। মার্কস এণ্ড ফিশারে জুনিয়র এ্যাপ্রেনটিস অফিসার। বেসিক পে ষোল শ টাকা। হাউস রেন্ট আছে, মেডিকেল আছে, যাতায়াতের জন্যে এ্যালাউন্স আছে।

    ঠাট্টা করছি তুমি?

    না, ঠাট্টা না। খাওয়া শেষ কর এ্যাপিয়েন্টমেন্ট লেটার দেখাচ্ছি। রফিক অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।

    সত্যি বলছি তো ভাবী?

    হ্যাঁ। আজই পেয়েছি। কাউকে বলি নি এখনো?

    ভাইয়াকেও না?

    না। তাকে বলব ভেবেছিলাম, সে এসেই শুয়ে পড়েছে; তার শরীর ভালো না! ঘুমুচ্ছে বোধহয়?

    ভাইয়াকে ডেকে তোল এবং খবরটা দাও, দেখবে সে চাঙ্গা হয়ে উঠবে।

    নীলু চুপ করে রইল। রফিক বলল, ভাইয়ার জন্যে এটা যে কী পরিমাণ রিলিফ হবে, তা তুমি বুঝতে পারিছ না। ভয়ে আধমরা হয়ে আছি। ভাইয়াকে খবরটা দাও, দেখবে সে তোমার কোমরে ধরে ওরিয়েন্টাল ড্যান্স দেবে।

    নীলু হেসে ফেলল। রফিক বলল, এখন থেকে ভাবী আমার চাকরি না। হওয়া পর্যন্ত প্রতি মাসে দুশ টাকা করে হাতখরচ দেবে। তোমার নিজের বেতনের টাকা থেকে দেবে। আমার অবস্থা টাইট।

     

    শফিক জেগেই ছিল। নীলু দেখল টুনীকে সরিয়ে একপাশে দেয়া হয়েছে। শফিক তার পাশে নীলুর জন্যে জায়গা রেখেছে। নীলু একটি দীর্ঘশ্বাস চাপার চেষ্টা কুরল। সমস্ত ব্যাপারটার মধ্যে অপমান এবং অবহেলা আছে। আজ রাতে শফিকের নীলুকে প্রয়োজন, কাজেই টুনীকে একপাশে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আগামীকাল এই প্রয়োজন হয়তো থাকবে না, টুনী ঘুমুবে দু জনের মাঝখানে।

    শফিক বলল, কটা বাজে?

    বারটা দশ। ঘুমুও নি এখনো?

    ঘুমিয়েই ছিলাম, হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল।

    শফিক নীলুকে তার কাছে টানল। নীলু মৃদুস্বরে বলল, আমি একটা চাকরি নিলে কেমন হয়?

    হঠাৎ চাকরির কথা বলছ কেন?

    বল না কেমন হয়? অনেকগুলি বাড়তি টাকা আসে সংসারে। যা অবস্থা!

    শফিক হালকা গলায় বলল, চাকরিটা তোমাকে দেবে কে? বাজারের অবস্থা তো জানি না। রফিককে দেখছি না। এম. এ. পাশ করে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে।

    নীলু বলল, আচ্ছা ধর, যদি পাই তাহলে?

    তাহলে কী?

    তাহলে কি চাকরিটা নেব?

    তোমার শাখা হলে নেবে।

    শখ বলছি কেন, এটা কি প্রয়োজন না?

    শফিক কিছু বলল না। চাকরির প্রসঙ্গে কথা চালিয়ে যেতে তার ইচ্ছা :ाgछ না।

    তারা বাতি নিভিয়ে ঘুমুতে গেল একটার দিকে। বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে। স্বামঝম শব্দ হচ্ছে বৃষ্টির। এ বৎসর বর্ষা নেমেছে ভালো।

    নীলু, টুনীকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে বলল, আমি কিন্তু চাকরি একটা পেয়েছি। মার্কস এণ্ড ফিশারে। আমার এক বন্ধু বন্যা-সে জোগাড় করে দিয়েছে।

    শফিক কিছু বলল না। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল শুধু।

    আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে জয়েন করবার কথা। জয়েন করব?

    চাকরি পেয়েছ এই কথাটা আগে বললেই পারতে, এত ভণিতা করছিলে কেন?

    তোমার কি ইচ্ছা না, আমি চাকরি করি? ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো ব্যাপার না। চাকরি করতে চাও করবে। ভণিতা করবে না। মেয়েলি ভণিতা আমার ভালো লাগে না।

    মেয়েমানুষ, মেয়েলি ভণিতাই তো করব।

    আর কোনো কথা হল না। রাত বাড়তে লাগল। ঝমঝম বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে। প্রচণ্ড শব্দে বাজ পড়ল কাছেই। ছোট্ট টুনী ঘুমের মধ্যেই চমকে উঠল। নীলু তাকে কাছে টেনে নিল। মনে মনে বলল, পৃথিবীতে কেউ যদি আমাকে ভালো না বাসে তাতে কোনো ক্ষতি নাই। তুই ভালোবাসবি। লক্ষ লক্ষ মানুষের ভালোবাসার আমার দরকার নেই। এক জনের ভালোবাসা পেলেই হবে।

    নীলুর ঘুম আসছে না। সমস্ত শরীরে ক্লান্তি, অথচ চোখে ঘুম নেই। নীলু মনে-মনে মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে লাগল, বুঝলি টুনী, আমি খুব এক জন অসুখী মানুষ। বাইরে থেকে সেটা কেউ বুঝতে পারে না। সবাই ভাবে-বাহ্, নীলু, মেয়েটা তো খুব সুখী হয়েছে। স্বামী কন্যা শ্বশুর শাশুড়ি নিয়ে কী চম ৎকার মিলেমিশে আছে। এ-রকম সুখ কিন্তু আমি চাই নি রে পাগলি। আমি অন্য রকম সুখ চেয়েছিলাম। এমন এক জন স্বামী চেয়েছিলাম, যে সব সময় তার পাশে আমার জন্যে জায়গা রাখবে। শুধু বিশেষ বিশেষ রাতে রাখবে না।

     

    আজ নীলুর একটি বিশেষ দিন। চাকরিতে যোগ দেবার তারিখ। সাড়ে নটায় শফিক বলল, এস খেয়ে নিই। নীলুর লজ্জা করতে লাগল। সে বলল, তুমি খেয়ে নাও।

    খাবে না?

    ইচ্ছা করছে না। ক্যান্টিনে কিছু খেয়ে নেব।

    খেতে বসল শফিক একাই। নীলু বসল। তার সামনের চেয়ারো মনোয়ারা খাবার এগিয়ে দিচ্ছেন, তাঁর মুখ গভীর। তিনি নীলুর দিকে এক বারও তাকাচ্ছেন না। শফিক বলল, এখানে বসে আছ কেন? তৈরী হও।

    নীলু তৈরী হয়েই ছিল। তবু উঠে পড়ল। হোসেন সাহেব শোবার ঘরে বসে পত্রিকা দেখছিলেন। নীলুকে ঘরে ঢুকতে দেখে হাসিমুখে তাকালেন, তৈরি নাকি মা?

    হ্যাঁ।

    নীলু পা ছুঁয়ে সালাম করল। হোসেন সাহেব দরাজ গলায় বললেন, ফি আমানুল্লাহ মা। ফি আমানুল্লাহ।

    নীলু একটু ইতস্তত করে বলল, বাবা, আমার এই চাকরি করতে যাওয়া নিয়ে আপনার কি কোনো আপত্তি আছে?

    হোসেন সাহেব অবাক হয়ে বললেন, আপত্তি থাকবে কেন?

    মা বোধহয় খুব একটা পছন্দ করছেন না।

    এখন না করলেও পরে করবে।

    ওনার উপর অনেক ঝামেলা পড়বে।

    সহ্য হয়ে যাবে। তাছাড়া টুনী তো বিরক্ত করে না। আমি দেখব টুনীকে।

    যাই তাহলে বাবা।

    যাও মা। দশ বার ইয়ামুকাদ্দেমু পড়ে, ডান পা আগে ফেলে ঘর থেকে বেরবে।

    মনোয়ারা শেষ পর্যন্ত গম্ভীর হয়েই রইলেন। বৌয়ের চাকরির ব্যাপারটি তিনি গোড়া থেকেই অপছন্দ করে এসেছেন। শফিককে বেশ কয়েক বার বলেছেনও। কিন্তু শফিক কোনো উত্তর দেয় নি। যেন এ ব্যাপারে তার কোনো রক্তব্য নেই। কিছু জিজ্ঞেস করলে শফিক এমন ভাব করে, যেন এর উত্তর দেয়াটা জরুরি নয়। গতকাল রাতেই তিনি শফিককে ডেকে বললেন, আমি এই বয়সে সংসার সামলাব কী করে? শফিক হাই তুলে বলেছে, অসুবিধা হবে না। কাজের একটা লোক তো আছে।

    ঐ লোককে আমি এক্ষুণি বিদায় করব।

    কেন?

    এত বড় একটা জোয়ান কেউ রাখে। বাসায়? কোন দিন সবাইকে খুন করে জিনিসপত্র নিয়ে ভাগবে।

    ওকে তাড়ালে তোমারই অসুবিধা হবে মা?

    হোক অসুবিধা।

    মনোয়ারা কাজের লোকটিকে সত্যি সত্যি বিদায় করে দিলেন। এতেও শফিক কিছু বলল না। ছেলেদের সংসারে থাকার কাল কি তাঁর শেষ হয়েছে? বোধহয় হয়েছে।

     

    রফিক অফিস পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গেল। সে তার স্বভাবমতো বকবক করছে। নীলুর কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছে না, তবু বলতে হচ্ছে। রফিক সঙ্গে থাকলে কথা না-বলে থাকা মুশকিল।

    কি ভাবী, গুমি হয়ে আছ কেন? আজকে তোমার খুশির দিন। আনন্দ-ফুর্তি কর।

    কী আনন্দ-ফুর্তি করব?

    গান-টান গাও।

    কী যে পাগলের মতো কথা বল।

    আমি হলে তাই করতাম। রিক্সায় যেতে যেতে গান ধরতাম, কী আনন্দ চারিধারে কী আনন্দ চারিধারে!,

    টুনীকে ছাড়া এতক্ষণ থাকতেই পারব না।

    খুব পারবে। আর এত ভয় পাচ্ছি কেন? আমরা সবাই দেখব। চোখে-চোখে রাখব।

    সারা দিন তো তোমার দেখাই পাওয়া যায় না। তুমি আবার চোখে-চোখে কি রাখবো?

    আমি না রাখলেও অন্যরা রাখবে।

    রফিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে নেমে গেল। মতিঝিল পর্যন্ত তার যাবার কথা, কিন্তু সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে এমনভাবে লাফিয়ে গাড়ি থেকে নামল, যেন খুব জরুরি কোনো কাজের কথা হঠাৎ মনে পড়েছে। অথচ তেমন কোনো কাজই নেই। রাস্তায় হাঁটা। এই হাঁটার মধ্যেই পরিচিত, অর্ধ-পরিচিত কারের সঙ্গে দেখা হওয়া।

    এ্যাই, রফিক না?

    হুঁ।

    চিনতে পারছিস?

    না।

    বলিস কি, আমি ইয়াসিন। কলেজে তোর সঙ্গে পড়তাম।

    ও ইয়াসিন। আছিস কেমন?

    ভালো। এখন বিটিসিতে আছি।

    গুড।

    বেতনপত্র মন্দ না। তিনটা বোনাস আছে; আসিস একদিন মোমার এখানে, ফ্রি সিগারেট দেব। খাস তো সিগারেট?

    খাই।

    আসিস তাহলে অফিসে।

    আচ্ছা আসব।

     

    শফিস কোথায়, কি, কিছুই না বলে চলে গেল। ইয়াসিন। অনেক দিনের পুরোনো পরিচিতদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু অবশ্যি আশা করা যায় না। ইউনিভার্সিটির বন্ধুরাই যেখানে দায়সারা গোছের কথা বলা শুরু করেছে! সেদিন করিমের সঙ্গে দেখা। সুন্দর একটি মেয়ে সঙ্গে নিয়ে নিউ মার্কেটে ঘুরছে। হাঁটার ভঙ্গি দেখেই বলে দেয়া যায়, নতুন বিয়ে। সঙ্গের মেয়েটি তাঁরই স্ত্রী, অন্য কারোর নয়, এটা বোঝানোর প্রবল চেষ্টা। গর্বিত দৃষ্টি। রফিক দূর থেকে ডাকল—করিম নাকি?

    করিম অনুৎসাহের সঙ্গে এগিয়ে এল। স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে আসতে পারত, তা এল না। সুন্দরী মেয়েটি ঘাড় কাত করে বইয়ের দোকানে বই দেখতে লাগল।

    কি রে, বিয়ে করেছিস নাকি?

    হুঁ, হুঁট করে হয়ে গেল। কাউকে খবর দিতে পারি নি। তুই আছিস কেমন?

    ভালোই।

    দাড়ি-টাড়ি যেভাবে বড়ো করছিস-দরবেশ হয়ে যাচ্ছিস মনে হয়?

    চেষ্টা করছি।

    চাকরি-বাকরি?

    হবে হবে করছে। যা তুই, তোর বৌ বিরক্ত হচ্ছে।

    করিম প্রায় ছুটে গেল তাঁর পুতুল-পুতুল স্ত্রীর কাছে। সময় বদলে যাচ্ছে। পুরানো বন্ধুত্বের গাঁথুনি আলগা হয়ে যাচ্ছে। আর পাঁচ বছর পর এক জন অন্য জনের মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু বলবে, কেমন, ভালো? ব্যস, ফুরিয়ে গেল।

    দুপুরে রফিক নীলুর খোঁজ নিতে গেল। হাসিমুখে বলল, দেখতে এলাম কাজকর্ম কেমন এগোচ্ছে।

    নীলুর জন্যে ছোটখাট ছিমছাম একটা ঘর। টেবিলের উপর একটা টেলিফোন। রফিক চোখ কপালে তুলে বলল, টেলিফোনও আছে নাকি?

    সবার টেবিলেই আছে। পিবিএক্স। ডিরেকটি লাইন না।

    খুব মালদার পার্টি মনে হচ্ছে।

    নীলুর লজ্জা করতে লাগল।

    কাজকর্ম শুরু করেছ নাকি?

    না। প্রথম দিন কাজকর্ম কিছু নেই। এটা-ওটা শিখছি। দুপুরবেলা ঘুরঘুর করছ কেন, বাসায় গিয়ে খাওয়াদাওয়া কর।

    তোমাদের এখানে খাওয়ার ব্যবস্থা নেই? ক্যাস্টিন–ফ্যান্টিন কি আছে?

    আছে। চল যাই।

     

    ক্যান্টিন দেখে রফিক মুগ্ধ হয়ে গেল। নিচু গলায় বলল, কাজ করলে এইসব বিদেশী ফার্মেই কাজ করতে হয়। তুমি ভাবী আমার জন্যে একটু টুটাই করবে। বস-টসদের ভজিয়ে ভাজিয়ে বলবে আমার কথা।

    ওরা কি আমার কথা শুনবে?

    এখন না শুনুক, বৎসরখানেকের মধ্যেই শুনবে তোমার কাজকর্মে খুশি হয়েই ওরা শুনবে। শুনতেই হবে।

    তোমার ধারণা, আগামী এক বৎসরের মধ্যে তোমার চাকরি হচ্ছে না?

    অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, তাতে সে-রকমই মনে হচ্ছে! অবস্থা সুবিধার না ভাবী।

    হাল ছেড়ে দিচ্ছ নাকি?

    এখনো ছাড়ি নি, ধরেই আছি। তবে ধরে থাকতে থাকতে হাত ব্যথা হয়ে গেছে।

    রফিক উঠে দাঁড়াল। নীলু বলল, যাচ্ছ কোথায় এখন?

    এক বন্ধুর বাসায়।

    এখন কি আর কারো বাসায় যাবার সময়?

    আনএমপ্লয়েডদের সময়-অসময় বলে কিছু নেই।

    তোমার বন্ধুও কি আন এমপ্লয়েড?

    রফিক কোনো জবাব দিল না। সে হেটে হেঁটে চলে এল পুরানো ঢাকায়। শারমিনদের বাসায় যাবার তার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তবু সে কেন জানি দুপুরবেলায় উপস্থিত হল সেখানে। কাজের মেয়েটি বলল, আপা ঘুমাইতেছে। ডাকমু?

    না, কোনো দরকার নেই। আমি অপেক্ষা করব। ঘুম ভাঙলে খবর দিও। পত্রিকা বা ম্যাগাজিন কিছু থাকলে দিয়ে যাও, বসে বসে পড়ি।

    বড়লোকদের বাড়ির কাণ্ডকারখানাই অন্য রকম। কাজের মেয়েটা ন্যাশনাল জিওগ্রাফির লেটেস্ট সংখ্যাটি দিয়ে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যে চা এবং কেকও এসে গেল। চা খেতে খেতে পত্রিকা ওন্টাতে ভালোই লাগছে। চম ৎকার সব ছবি। বিদেশী পত্রিকাগুলি ছবি দেখার জন্যেই বের হয় সম্ভবত। একটি এস্কিমো পরিবারের ছবি দেখে রফিক মুগ্ধ হল। স্বাস্থ্যে সৌন্দর্যে ঝলমল করছে। দেখেই মনে হয়। চমৎকার একটি জীবন এদের। পাস করে চাকরি খুঁজতে হয় না। বাড়ি বানানোর জন্যে জমি কিনতে হয় না। যেখানে পছন্দ সেখানেই বরফের একটা ঘর বানিয়ে নিলেই হল। রাতে তিমি মাছের তেলের বাতি জ্বলিয়ে সবাইকে নিয়ে গল্পগুজব চলবে। বাইরে হুঁ-হু করে বইবে তুষারঝড়। চমৎকার একটা জীবন। রফিক একটি ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলল।

    আরে, তুমি কখন এসেছ?

    এই তো কিছুক্ষণ!

    আমাকে ডাক নি কেন?

    সারা দুপুর ঘুমিয়ে শারমিনের চোখ ভারি হয়ে আছে। এলোমেলো করে পরা শাড়ি, চুল বাঁধা নেই। কিন্তু সব মিলিয়ে দৃশ্যটি এত সুন্দর।

    চা দিয়েছে?

    হুঁ।

    কোনো কাজে এসেছ, না এমনি এসেছ?

    এমনি এসেছি।

    এস আমার সাথে।

    কোথায়?

    আসতে বলছি,আস।

    শারমিন তাকে নিয়ে এল দারোয়ানের ঘরের পাশের ছোট্ট ঘরটিতে। মাটি শুয়ে আছে সেখানে। শারমিনকে ঢুকতে দেখে এক ধরনের ঘড়ঘড় শব্দ করল। শারমিন মৃদুস্বরে ডাকল, মাটি সাহেব। মাটি মাথা তুলে এক বার মাত্র তাকাল, তারপরই মাথা নামিয়ে নিল।

    ও বাঁচবেনা। এই ঘরেই তার শেষশয্যা।

    বলতে বলতে শারমিনের গলা ভারি হয়ে এল। কেঁদে ফেলবে নাকি?

    বেচারার এত কষ্ট হচ্ছে! সারা রাত ঘুমায় না। কাঁদে শুধু।

    রফিক কিছু বলল না। শারমিন নিচু হয়ে মাটির মাথায় হাত রাখল। চাপা। স্বরে বলল, পশুদের সবচে বড়ো কষ্ট হচ্ছে এরা নিজেদের কষ্টের কথা অন্যদের বলতে পারেনা।

    অনেক মানুষও সেটা পারে না।

    বাজে কথা বলবে না। মানুষ ঠিকই পারে। আজ তোমার মনে কোনো কষ্ট হলে সেটা তুমি কাউকে বলবে না?

    সব কষ্টের কথা কি বলা যায়? কিছু কিছু কষ্টের কথা কখনো বলা যায় না।

    শারমিন বলল, মাটি মারা গেলে আমার খুব কষ্ট হবে। আমার বন্ধু কেউ নেই। মাটিই আমার বন্ধু।

    শারমিন উঠে দাঁড়াল। হালকা গলায় বলল, আজ কিন্তু তুমি রাতে খাবে এখানে।

    কেন?

    একা একা খেতে আমার খুব খারাপ লাগে। বাবা চিটাগাং গেছেন, কাল আসবেন। তুমি না এলে সাব্বির ভাইকে আসতে বলতাম।

    উনি আমেরিকায় যান নি?

    সামনের সপ্তায় যাবেন। মামার বাসায় আছেন। সাত দিনের জন্যে এসে বেচারাকে দুমাস থাকতে হল। মায়ের অসুখ।

    তুমি কি তাকে আপনি—আপনি করে বল?

    হুঁ।

    কেন, আপনি বল কেন?

    তুমি বলতে কেমন জানি লজ্জা লাগে।

    উনি কিছু বলেন না। এ নিয়ে?

    খুব একটা বলেন না। হঠাৎ এক-আধা দিন বলেন।

    বাগানে বসে চা খাওয়া গেল না। টিপটপ করে বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। শারমিন বলল, এস, দোতলায় বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখি।

    বৃষ্টির মধ্যে দেখার কী আছে?

    দেখার কিছু নেই? কী বল তুমি!

    আমার মধ্যে এত কাব্য ভাব নেই।

    সন্ধ্যা পর্যন্ত রফিক বারান্দায় বসে রইল। তেমন কোনো কথাবার্তা ওদের মধ্যে হল না। শারমিন কেমন অন্যমনস্ক। কথাবার্তা কিছুই বলছে না। রফিকের হঠাৎ খুব মন খারাপ হল। কেন সে বারবার ঘুরে ঘুরে এখানে আসে? এটা ঠিক না। কেন সে আসবে?

    শারমিন, সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, উঠি।

    খেয়ে যেতে বললাম না?

    না, আজ থাক, অন্য এক দিন।

    আজ অসুবিধা কী?

    রফিক হালকা স্বরে বলল, আজকের রাতটা খুব চমৎকার। তুমি সাব্বির সাহেবকে আসতে বল। দু জনে মিলে খাওয়াদাওয়ার পর বারান্দায় বসে গল্পটল্প কর।

    শারমিন কিছু বলল না। রফিক উঠে দাঁড়াল। অন্য সময় শারমিন আসত তার সঙ্গে সঙ্গে। ড্রাইভারকে বলত পৌঁছে দিতে। আজ সে কিছুই করছে না।

    রফিক ভিজতে ভিজতেই রওনা হল। তার বারবার ইচ্ছা করছিল। পেছনে ফিরে শারমিনকে এক বার দেখতে। কিন্তু সে তাকাল না। মাটি সাহেব কাঁদছে। বৃষ্টির শব্দের সঙ্গে সে কান্না মিশে কেমন অদ্ভুত শোনাচ্ছে। গেটের সদারোয়ান বলল, চলে যাচ্ছেন নাকি সারা?

    হ্যাঁ।

    গাড়ি নিয়ে যান। গাড়ি আছে তো। ড্রাইভার চা খেতে গেছে, ডেকে নিয়ে আসছি।

    ডাকতে হবে না!

    রফিক লম্বা লম্বা পা ফেলতে লাগল। দারোয়ান শ্রেণীর কারোর গলায় এমন শুদ্ধ ভাষা শুনতে ভালো লাগে না। কেন লাগে না? এটা কি অত্যন্ত বাজে ধরনের একটা মানসিকতা নয়? দারোয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে! এর মধ্যে অবাক হবার কী আছে? এরা কি রফিকের এখানে আসা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে?

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএকটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    একটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }