Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প477 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১৫. সন্ধ্যা মিলিয়ে গেল

    সন্ধ্যা মিলিয়ে গেল, তবু নীলু জানত্বে পারল না, ভালো খবরটি কি? ম্যারাথন বোর্ড মীটিং হচ্ছে। চারটার পর তিন বার চা দেওয়া হয়েছে ভেতরে। ক্যান্টিন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, শেষ বারের চা আনতে হল বাইরে থেকে। ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে মীটিং চলবে রাত নটা-দশটা পৰ্যন্ত।

    নীলু অস্বস্তি বোধ করতে লাগল। বাসায় বলে আসা হয় নি। সবাই নিশ্চয়ই চিন্তা করবে। কিন্তু মীটিংয়ের মাঝখানে চলে যাওয়া যায় না। কেউই যায় নি। আজ বোনাস ঘোষণা হবার কথা। এ বছর কোম্পানি দু কোটি টাকার কাছাকাছি লাভ করেছে। বড়ো রকমের বোনাস হবার কথা। একটা গুজব শোনা যাচ্ছে, চার মাসের বেসিক পে বোনাস হিসেবে দেওয়া হবে। গুজবটা এসেছে খুব উঁচু লেভেল থেকে, সত্যি হলেও হতে পারে।

    সত্যি হলেও অবশ্যি নীলুর কোনো লাভ নেই। যাদের চাকরি এক বছরের কম, তারা বোনাস পাবে না-নিয়ম নেই। নীলুর চাকরির এক বছর হতে এখনো তিন মাস বাকি। সবাই বোনাস পাবে, নীলু পাবে না। ভাবতে একটু খারাপ লাগে। টাকাটা পেলে সে টিভি কিনে ফেলত। বাসার সবাইকে দারুণ একটা চমক দেওয়া যেত।

    রাত আটটায় নীলুর টেলিফোন এল। রফিক টেলিফোন করেছে।

    হ্যালো ভাবী? ব্যাপার কী, এত দেরি!

    বোর্ড মীটিং হচ্ছে।

    বোর্ড মীটিং করবে ডিরেক্টররা। তুমি চুনোপুটি, তুমি বসে আছ কেন?

    আমি একা না। সবাই অপেক্ষা করছে।

    এত রাতে বাসায় ফিরবে কীভাবে? এটা নীলু ভাবে নি। বাসায় ফেরা একটা সমস্যা হবে। দশটা পর্যন্ত অবশ্যি বাস চলাচল করে। বাসে করে ফিরে যেতেও ঘণ্টাখানিক লাগবে।

    হ্যালো ভাবী।

    বল

    তুমি অপেক্ষা কর আমার জন্যে। আমি নিতে আসছি, এক্ষুণি রওনা দিচ্ছি।

    ঠিক আছে। তোমার ভাই এসেছে?

    হ্যাঁ, এসেছে। তুমি এখনো ফেরনি শুনে ভাম হয়ে আছে। আজ মনে হয় গরম বক্তৃতা দেবে। ভাবী, আমি রাখলাম।

    নীলু টেলিফোন নামিয়ে রাখার সঙ্গে সঙ্গে খবর পাওয়া গেল মীটং শেষ হয়েছে। বড়োসাহেব মঞ্জর হোসেন ডেকেছেন সবাইকে।

    মজ্বর হোসেন সাহেবের মুখ অস্বাভাবিক গম্ভীর। এই মুখ দেখে ভরসা হয় না, কোনো ভালো খবর আছে। কিন্তু সত্যি সত্যি ভালো খবর ছিল। বড়ো সাহেব নীরস ভঙ্গিতে খবরগুলি দিলেন।

    কোম্পানি এ বছর খুব ভালো বিজনেস করেছে। কোম্পানির পলিসি মতো লাভের একটি ভালো অংশ কর্মচারীদের জন্যে ব্যয় করা হবে। সবাই এবার স্পেশাল বোনাস পাবে। সেটা হচ্ছে চার মাসের বেসিক পে। আমাদের এখানে দু জন আছেন, যাদের চাকরির মেয়াদ এক বছর হয় নি। আইন অনুযায়ী তাঁরা বোনাস পেতে পারেন না, তবে এ বছর তাঁদেরকেও বোনাস দেবার সুপারিশ করা হয়েছে।

    কর্মচারীদের বাসস্থান নিমাণের একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এবং মেডিক্যাল এ্যালাউন্স বাড়ানোর সুপারিশও করা হয়েছে। মেডিক্যাল এ্যালাউপের ব্যাপারটি যাবে ফাইন্যান্স কমিটিতে।

    তুমুল হাততালির মধ্যে বক্তৃতা শেষ হল। মঞ্জর সাহেব নীলুকে হাত ইশারা করে ডাকলেন, আপনি একটু আমার কাছে আসুন।

    নিশ্চয়ই সুখবরটা বলা হবে। নীলুর বুক টিপটপ করতে লাগল।

    বসুন।

    নীলু বসল।

    আপনার জন্যে একটা ভালো খবর আছে। কোম্পানি এ বছর আপনাকে সুইডেনে টেনিংয়ের জন্যে সিলেকট করেছে। ছ মাসের ট্রেনিং বিজনেস ম্যানেজমেন্টের উপর টেনিংটা হবে। কাল সকালে আপনাকে কাগজপত্র দেব। টেনিং পিরিয়ডে থাকা-খাওয়ার খরচ ছাড়াও প্রতি মাসে দু শ পঞ্চাশ ইউ এস ডলার পাবেন হাত খরচ।

    নীলু মৃদুস্বরে বলল, থ্যাংক ইউ স্যার।

    থ্যাংকস্ দেবার কিছু নেই। সুযোগটা আপনি পেয়েছেন আপনার নিজের যোগ্যতায়। খুব অল্প সময়ে আপনি কাজের নেচার পিক আপ করেছেন এবং চমৎকারভাবে করেছেন। এ্যানুয়েল রিপোর্টটাও আপনি ভালো তৈরি করেছেন।

    আনন্দে নীলুর চোখ ভিজে উঠতে শুরু করল। নীলু নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করল। ভদ্রলোকের সামনে কেঁদে ফেললে লিজার ব্যাপার হবে।

    রাত হয়ে গেছে তো, আপনি যাবেন কীভাবে?

    আমাকেনিতে আসবে স্যার।

    বাসা কোথায় আপনার?

    কল্যাণপুর।

    সে তো অনেক দূর। যাতায়াত করেন কীভাবে?

    বাসে আসি স্যার।

    কোম্পানি শিগগিরই একটা মাইক্রোবাস কিনবে। যাতায়াতের প্রবলেম তখন অনেকটা দূর হবে।

    বড়োসাহেব উঠে দাঁড়ালেন।

    আপনাকে কখন নিতে আসবে?

    কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে স্যার।

    দরকার হলে আমি একটা লিফট্‌ দিতে পারি।

    থ্যাংক ইউ স্যার। আমার দরকার নেই।

    রফিক এসে পড়ল কিছুক্ষণের মধ্যে। চোখ বড়ো বড়ো করে বলল, বাড়িতে পৌঁছানো মাত্র আজ একটা ফাইটিং চিত্র হবে। ভাইয়া আগুন খেয়েলাফাচ্ছে।

    দেরি হয়েছে বলে?

    হুঁ।

    তার দেরি হয় না? সেও তো প্রায়ই রাত এগারটার দিকে বাড়ি ফেরে।

    পুরুষ এবং মহিলার মধ্যে একটা ডিফারেন্স আছে না? মহিলাদের বাড়ি ফিরতে হবে সূর্য ডোবার আগে।

    কেন?

    আমি জানি না কেন। এটাই নিয়ম। চল ভাবী, রওনা হওয়া যাক।

    নীলু বলল, কিছু মিষ্টি কিনতে চাই রফিক। দেরি যখন হয়েই গেছে, আরেকটু হোক।

    মিষ্টি কেন?

    তোমার ভাইয়ার রাগ কমানোর জন্যে।

    বলতে বলতে নীলু হেসে ফেলল।

    মাই গড, তোমার প্রমোশন হয়েছে নাকি! বিগ বস?

    না, সেসব কিছু না। বলব তোমাকে, চল রিকশা নিই। নিউ মার্কেট পর্যন্ত রিকশায় যাব। নিউমাকেট থেকে বেবিট্যাক্সি নেব।

    দারুণ ঠাণ্ডা পড়েছে। হুঁ-হু করে শীতের হাওয়া বইছে। সাড়ে আটটা বাজে, কিন্তু রাস্তাঘাট জনশূন্য। রফিক বলল, এত বড়ো শহর ঢাকা, কিন্তু এখনো কেমন গ্রামের ছাপ দেখিছ? আটটা না বাজতেই লোকজন বাতি নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।

    নীলু কিছু বলল না। তার কেন জানি বড়ো ভালো লাগছে।

    প্রেসক্লাবের সামনে এসেই রফিক বলল, এক মিনিট ভাবী, একটু দেখে যাই।

    কী দেখবো?

    কয়েকটি ছেলে চাকরির জন্যে আমরণ অনশন শুরু করেছে। এদের একটু দেখে যাই। তুমিও আস, এক মিনিট লাগবে।

    ছ-সাত জন ছিল দিনে, এখন দেখা গেল তিন জনকে। কম্বল মুড়ি দিয়ে পড়ে আছে। এক জনের এর মধ্যে ঠাণ্ডা লেগে গেছে। ঘন ঘন নাক ঝাড়ছে। আশেপাশে কোনো লোকজন নেই। একটি নীল শাড়ি পরা অসম্ভব রোগা মেয়ে টুলের উপর বসে আছে শুকনো মুখে। অনশনকারীদের কারোর স্ত্রী হবে। এই মেয়েটিও নিশ্চয়ই না–খেয়ে আছে।

    রফিক বলল, কী ভাইসব, কেমন আছেন?

    কেউ কোনো জবাব দিল না।

    আপনি তো দেখি একেবারে সর্দি লাগিয়ে বসে আছেন। দেখেন, শেষে নিউমোনিয়া-টিউমোনিয়া বাধিয়েবসবেন।

    রোগা মেয়েটি বিড়বিড় করে কী যেন বলল। সে তাকিয়ে আছে নীলুর দিকে। তীক্ষ্ণ ও তীব্র দৃষ্টি। নীলুর অস্বস্তি লাগছে। রফিক বলল, আপনারা কেউ সিগারেট খাবেন? সিগারেটে অনশন ভঙ্গ হয় না। খাবেন কেউ? আমার কাছে ভালো সিগারেট আছে। তিন জনের মধ্যে শুধুমাত্র সর্দিতে কাতর লোকটিই হাত বাড়াল।

     

    তারা বাসায় পৌঁছল রাত নটা কুড়িতে। নীলু যেমন ভেবেছিল, তেমন কিছুই হল না। শফিক বসার ঘরে বসে পত্রিকা পড়ছিল। সে চোখ তুলে এক বার তাকাল, তারপর আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ল পত্রিকা নিয়ে।

    মনোয়ারা কোনো কথাই বললেন না। হোসেন সাহেব শুধু বললেন, এ-রকম দেরি হলে আগে থেকে বলে যেও মা। যা দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। ঢাকা শহর দুষ্ট লোকে ভরে গেছে। রাজধানীগুলিতে যা হয়! সমস্ত দেশ থেকে আজেবাজে লোকেরা ভিড় করে রাজধানীতে।

    টুনী ঘুমিয়ে পড়েছে। কিছুক্ষণ আগেই বোধহয় ঘুমিয়েছে। শাহানা মশারি খাটাচ্ছে। নীলু নিচু হয়ে টুনীর গালে চুমু খেল। ঘুমের ঘোরেই টুনী হাত দিয়ে ধাক্কা দিল মাকে। দেরিতে ফিরে আসা মাকে সে যেন গ্রহণ করতে পারছে।

    শাহানা বলল, টুনী আজ খুব বিরক্ত করেছে।

    তাই নাকি?

    হ্যাঁ। বিকেল থেকেই খুব কান্নাকাটি শুরু করেছে, মার কাছে যাব, মার কাছে যাব। তারপর ভাইয়া এল। তুমি তখনো ফের নি দেখে সেও রেগে গেল।

    ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ফেলল। শাহানা বলল, ভাইয়া বিকেলে চা-টা খায় নি। তখন থেকে পত্রিকা নিয়ে বসার ঘরে বসে আছে। আমাকে শুধু শুধু একটা ধমক দিল।

    কেন?

    গ্লাসে পানি ঢালতে গিয়ে পানি ফেলে দিয়েছিলাম।

    নীলু বেশ অবাক হল। শফিক কখনো ছোটখাট কিছু নিয়ে মাথা ঘামায় না। অন্য কোনো কারণে কি তার মেজাজ খারাপ হয়েছে? অফিসে কোনো ঝামেলা হয়েছে নাকি?

    শাহানা বলল, তোমাকে ভাইয়া কিছু বলেছে?

    না।

    নিৰ্ঘাত বলত। কবির মামা এসেছেন তো, তাই নিজেকে চেক করেছে।

    কবির মামা এসেছেন নাকি?

    হুঁ। আটটার সময় এসেছেন। শুয়ে আছেন, শরীর ভালো না।

    এবারও কি হেটে এসেছেন?

    না, হেঁটে আসেন নি। রিকশা করেই এসেছেন। তবে কাহিল। কবির মামা বেশি দিন আর বাঁচবে না।

    নীলু কাপড় বদলে কবির মামার সঙ্গে দেখা করতে গেল। তিনি বাতি নিভিয়ে শুয়েছিলেন। নীলুকে ঢুকতে দেখেই উঠে বসলেন।

    কেমন আছেন মামা?

    ভালোই আছিরে বেটি। থাক থাক, সালাম লাগবে না। শরীরটা ভালো তো মা?

    জ্বি, ভালো। আমার চিঠি পেয়েছিলেন?

    হ্যাঁ, পেয়েছি। চিঠিতে তুমি মা দুটা সাধারণ বানান ভুল করেছ। এটা ঠিক না। বিশদ বানান লিখেছি স দিয়ে। তারপর মুহূর্ত বানানও ভুল।

    নীলু লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসল।

    চিঠিপত্র লেখার সময় হাতের কাছে ডিকশনারি রাখবে। ডিকশনারি আছে না ঘরে?

    আছে মামা।

    গুড। কোনটা আছে, আধুনিক না সংসদ অভিধান?

    নীলুনা জেনেই মাথা নাড়ল। কবির মামা বললেন, রাতে শোবার সময় ডিকশনারিতে বানান দুটা দেখে নিও মা।

    জ্বি আচ্ছা, দেখব। আপনি খাওয়াদাওয়া করেছেন?

    না, রাতে আর কিছু খাব না। শরীরটা আগের মতো নেই। পরিশ্রম করতে পারি না।

    না খেলে তো শরীর আরো খারাপ করবে।

    এটা ঠিক না। মাঝেমধ্যে খাওয়াদাওয়া বন্ধ করলে শরীরের বিশ্রাম হয়। সবাই তো বিশ্রাম চায়।

    নীলু ঘুমুতে গেল অনেক রাতে। শফিক তখনো জেগে। নীলুর জন্যেই অপেক্ষা করছে বোধহয়। শোবার ঘরের প্রাইভেসিতে কিছু কড়া কড়া কথা শোনাবে। নীলু একটা পিরচে দুটি সন্দেশ এবং এক গ্লাস পানি নিয়ে ঘরে ঢুকল। মৃদুস্বরে বলল, মিষ্টি খাও।

    না।

    খাও না। একটা অন্তত খাও।

    শফিক একটি মিষ্টির খানিকটা ভেঙে মুখে দিল। নীলুকে অবাক করে

    দিয়ে সহজ স্বরে বলল, বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়। রাত হয়েছে।

    নীলু বাতি নিভিয়ে দিল। শফিককে কি আজ রাতেই তার সুইডেনের ব্যাপারটা বলা উচিত? দু জন শুয়ে আছে। পাশাপাশি। হাত বাড়ালেই একে অন্যকে ছুঁতে পারে। তবু দু জন কী দু প্রান্তেই না বাস করে! নীলু মৃদুস্বরে ডাকল, এ্যাই, ঘুমোচ্ছ?

    না।

    আজ আমাদের বোর্ড মীটিং হল। আমাদের সবাইকে চারটা বোনাস দিয়েছে।

    ভালোই তো।

    নীলুর মন খারাপ হয়ে গেল। বিন্দুমাত্র উৎসাহ নেই শফিকের গলায়। ভদ্রতা করেও অন্তত দুএকটা কথা বলতে পারত। নীলু খানিকক্ষণ ইতস্তত করে বলল, আমার আর একটা ভালো খবর আছে।

    কি?

    আমাকে ওরা টেনিং-এ সুইডেনে পাঠাচ্ছে। ছ মাসের টেনিং।

    কবে সেটা?

    মার্চে কিংবা এপ্রিলে! আমি ঠিক জানি না।

    শফিক আর কোনো কথা বলল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার নিঃশ্বাস ভারি হয়ে এল। এক জন সুখী মানুষের নিশ্চিন্ত ঘুম। ঘুমের মধ্যেই সুন্দর সুন্দর সব স্বপ্ন দেখবে সে।

    আজ রাতে নীলুরও স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছা করছে; কোনো এক দূর দেশের স্বপ্ন। যে দেশে দুঃখ নেই, অভাব নেই, ক্ষুধা নেই; যেখানে চাকরির জন্যে কেউ আমরণ অনশন করে না। স্ত্রীরা বাড়ি ফিরতে দেরি করলেই স্বামীদের মুখ অন্ধকার হয় না।

    সেই দেশের আকাশ এদেশের আকাশের চেয়েও অনেক বেশি নীল। গাছপালা অনেক বেশি সবুজ।

     

    কবির মামা রফিককে নিয়ে বের হয়েছেন।

    তাঁর হাতে প্রকাণ্ড জাবদা খাতা। ছাত্রদের নাম-ঠিকানা সেখানে লেখা, প্রথমে যাবেন নীলক্ষেতে-ইউনিভার্সিটি কোয়ার্টার। মুকসেদ আলি থাকেন সেখানে। বোটানির এসোসিয়েট প্রফেসর। রফিকের সঙ্গে যাবার কোনো ইচ্ছা ছিল না। মানুষের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে চাঁদা তোলার কোনো অর্থ হয় না। তাছাড়া কেউ দেবেও না কিছু নিজেদেরই চলে না, চাঁদা দেবে কী!

    কিন্তু তবু সঙ্গে যেতে হল। কবির মামা নিউ মার্কেটে বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করলেন। রফিক গম্ভীর গলায় বলল, চাঁদা তোলার ব্যাপারটা কি মামা হেটে হেটে করা হবে?

    হ্যাঁ। আপত্তি আছে?

    আছে।

    তোর জন্যে মোটরগাড়ি লাগবে?

    পেলে ভালো হত, আপাতত একটা রিকশা হলেই চলবে।

    টাকা যেটা উঠবে, সেটা তো রিক্সা ভাড়াতেই চলে যাবে।

    রিক্সা ভাড়া আমি দেব।

    তুই দিবি কোত্থেকে? তুই তো এখনো সিন্দাবাদের ভূতের মতো ভাইয়ের ঘাড়ে বসে আছিস।

    সেটা নিয়ে এখন কোনো আগুমেন্টে যেতে চাই না। শুধু এইটুকু অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, হাঁটাহাঁটি সম্ভব না।

    যা, তুই চলে যা আমি একাই পারব।

    রফিক গেল না! মুখ আমশি করে আসতে লাগল পাশাপাশি। আল সাহেবকে বাসায় পাওয়া গেল। ভদ্রলোক স্যারকে দেখে যো-পরিমাণে উৎসাহিত হলেন, স্যারের নীলগঞ্জ প্রজেকটের কথা শুনে ঠিক সে-পরিমাণ নিরুৎসাহিত হয়ে পড়লেন।

    আপনি একা কতটুকু করবেন স্যার?

    একা কোথায়? তোমরা সবাই আছ আমার সঙ্গে। আছ না? তাছাড়া পৃথিবীর অনেক বড়ো বড়ো কাজ একা একাই করা হয়েছে।

    বহু টাকা পয়সার ব্যাপার স্যার।

    টাকাপয়সার ব্যাপার তো আছেই। তুমি কত দেবে বল? কবির মামা খাতা খুলে ফেললেন।

    তোমাকে দিয়েই শুরু।

    ভদ্রলোক শুকনো গলায় বললেন, মাসের প্রথম দিক ছাড়া তো স্যার আমার পক্ষে সম্ভব না। ইউনিভার্সিটির মাস্টারদের মাসের প্রথম দিকে কিছু টাকা পয়সা থাকে, তারপর নুন নাই পান্তাও নাই অবস্থা।

    মাসের প্রথম দিকে আসব?

    আপনার আসার স্যার দরকার নেই। ঠিকানা রেখে যান। আমি কিছু পাঠিয়ে দেব।

    তোমার কথাবার্তা শুনে কিন্তু মনে হচ্ছে না তুমি পাঠাবে। মনে হচ্ছে তুমি চেষ্টা করছি আমাকে বিদায় করতে।

    মুকসুদ আলি সাহেবের চোখ-মুখ লাল হয়ে গেল। রফিক দারুণ অস্বস্তিবোধ করল। কবির মামার কথাবার্তার কোনো মাত্রা নেই। যা মনে আসছে বলে ফেলছেন। এই যুগে মনের কথা সব সময় বলা যায় না। চেপে রাখতে হয়।

    মুকসুদ, আমি উঠলাম। মাসের প্রথম দিকে আবার আসব। আমি হচ্ছি। কচ্ছপ, যেটা কামড়ে ধরি, সেটা ছাড়ি না। ইউনিভার্সিটির মাস্টারদের মধ্যে আমার আর কোনো ছাত্র আছে?

    ঠিক বলতে পারলাম না।

    একটু খোঁজ করবে। আর শোন, বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে আমার প্রজেকটের কথা বলবে। সবাই তো আর তোমার মতো না। কেউ কেউ উৎসাহিত হবে।

    আমি বলব।

    নীলক্ষেত থেকে কবির মামা গেলেন মতিঝিলে। তিন-চার জন ছাত্রের নাম-ঠিকানা আছে। তাদের মধ্যে এক জনকে শুধু পাওয়া গেল। সেই ছাত্র স্যারকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠল। স্যারের কথাবার্তা শুনে ফ্যাকাসে হয়ে গেল। আমতা-আমতা করে বলল, এত বড়ো কাজ কি স্যার প্রাইভেট সেকটরে হয়? সরকারি সাহায্য ছাড়া এটা সম্ভব না।

    প্রথমেই যদি তুমি ধরে নাও সম্ভব না, তাহলে আর সম্ভব হবে কীভাবে?

    আবেগতাড়িত হয়ে স্যার অনেকে অনেক প্রোগ্রাম নেয়। সোনার বাং করতে চায়। তা কি আর হয়?

    হবে না কেন?

    ছাত্রটি মৃদুস্বরে বলল, চা খান স্যার। আপনি রেগে যাচ্ছেন।

    তুমি বেকুবের মতো কথা বলবে, আমি রাগতেও পারব না।

    আমি স্যার প্র্যাকটিক্যাল প্রবলেমগুলির দিকে আপনার দৃষ্টি ফেরাতে চাচ্ছি।

    কাজে নামার আগেই তুমি প্রবলেমের কথা ভাবতে শুরু করেছ? আমার ছাত্র থাকাকালীন তো তুমি এতটা বোকা ছিলে না! সেই সময় তো তোমার কিছু বুদ্ধিসুদ্ধি ছিল।

    রফিক, কবির মামার কথাবার্তায় স্তম্ভিত। বলে কী এ লোক! ছাত্রটি অবশ্যি মোটামুটি ভদ্র ব্যবহারই করল। চা কেক—টেক আনিয়ে খাওয়াল এবং ফিরে আসার সময় পাঁচ শ টাকার দুটি চকচকে নোট দিল। এটা ছিল একেবারেই অপ্রত্যাশিত। রফিক ধরেই নিয়েছিল, এই লোকের কাছ থেকে কিছু পাওয়া যাবে না। মুখ শুকনো করে বলবে, পরে এক দিন আসুন, দেখি কিছু করা যায়। কিনা।

    সে-সব না বলে বলল, সামনের মাসে আসেন এক বার, দেখি আর কিছু করা যায় কিনা।

    করা যায় কিনা বললে তো হবে না। করতেই হবে।

    রাস্তায় নেমেই রফিক বলল, চল মামা, বাড়ি যাওয়া যাক। এক দিনে তো রোজগার ভালোই হল।

    কবির মামা চোখ কপালে তুলে বললেন, এখনই বাড়ি যাবি কী!

    আরো ঘুরবে?

    ঘুরব না মানে? কাজটা সহজ ভাবছিস তুই?

    আগামীকাল থেকে নতুন উদ্যমে শুরু করলে কেমন হয়?

    তোর কাজ থাকলে তুই চলে যা।

    দুপুর হয়ে গেছে, খাওয়াদাওয়া করবে না? তাছাড়া এখন লাঞ্চ টাইম, কাউকে পাবে না। তারচে চল খানাপিনা করা যাক।

    কোথায় খাবি?

    সস্তার একটা হোটেল আছে সেগুনবাগানে, সেখানে যেতে পারি। কিংবা তুমি চাইলে ভাবীর অফিসে গিয়েও খেতে পারি। ভাল ক্যান্টিন আছে।

    চল যাই সেখানে।

    তবে মামা সেখানে না যাওয়াই ভালো।

    কেন?

    আমি তো বলতে গেলে রোজ দুপুরে খাচ্ছি। সেখানে। এখন তোমাকে নিয়ে গেলে অফিসের লোকজন ভাববে পুরো ফ্যামিলি এনে পার করে দিচ্ছে।

    চল তাহলে, সেগুনবাগানের দিকেই যাই।

    একটা রিকশা নেয়া যাক, কী বল?

    নে একটা।

    সেক্রেটারিয়েটের কাছে এসে রিকশা থেকে নেমে যেতে হল। মিছিল বের হয়েছে একটা। আকাশ ফাটানো গর্জন উঠছে, গণতন্ত্র চাই, গণতন্ত্র চাই! কবির মামা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললেন, স্বাধীন দেশে গণতন্ত্রের জন্যে মিছিল বের করতে হচ্ছে, এরচে লজ্জার ব্যাপার আর কী হতে পারে?

    রফিক কিছু বলল না। কবির মামা বললেন, মিছিলটা কাদের?

    রফিক বিরক্ত হয়ে বলল, মানুষদের মিছিল, আবার কাদের? তুমি কি মামা মিছিলে ভিড়ে যাবে নাকি? খাবে না?

    হুঁ, খাব।

    তাহলে দাঁড়াও, মিছিল চলে যাক।

    চল খানিকটা যাই। প্রেসক্লাবের সামনে বেরিয়ে পড়লেই হবে।

    রফিকের বিরক্তির সীমা রইল না। সে ইচ্ছা করেই পিছিয়ে পড়ল! সিগারেট খাওয়া দরকার। দীর্ঘ সময় বিনা সিগারেটে চলেছে। বুক ব্যথা করছে এখন। মিছিল এগোচ্ছে খুব শ্লথ গতিতে। লক্ষণ ভালো নয়। নিরীহ ধরনের এইসব মিছিল মাঝে মাঝে ভয়াবহ চরিত্র নেয়। এটিও হয়তো নেবে। রফিক সিগারেটে টান দিয়ে শ্লোগানে গলা মেলোল, বাঁচতে চাই, বাঁচতে চাই। বাচার মতো বাঁচতে চাই।

    কবির মামা ক্লান্ত মুখে প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। অনশন করা ছেলে তিনটি এখনো আছে। নীল শাড়ি পরা মেয়েটিও আছে। আশেপাশে আর কেউ নেই। যেন এই ব্যাপারটিতে কারো কোনো উৎসাহ নেই।

    দেখেছিস? চাকরির দাবিতে অনশন করতে হচ্ছে। কী সর্বনাশের কথা!

    রফিক কিছু বলল না।

    কবির মামা বললেন, বাথরুমে যাওয়া দরকার।

    বাথরুম কোথায় পাবে এখানে? বসে যাও রাস্তার পাশে।

    কী যে কথাবার্তা তোর!

    তাহলে যাও প্রেসক্লাবে, গিয়ে বল, আমি নীলগঞ্জের প্রভাতী পত্রিকার সম্পাদক। আমাকে একটু পেচ্ছাব করার সুযোগ দিন।

    কবির মামা বিরক্ত হয়ে এগিয়ে গেলেন প্রেসক্লাবের দিকে। রফিক গোল নীল শাড়ি পরা মেয়েটির কাছে।

    অনশনের আজ কত দিন?

    ছয় দিন।

    বলেন কী?

    বিছানায় শুয়ে থাকা মানুষ তিন জন চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাচ্ছে। মেয়েটি বলল, আপনি কি কাগজের লোক?

    না। আমিও এক জন বেকার। শোনেন ভাই, আপনারা কেউ সিগারেট খাবেন? ভালো সিগারেট আছে আমার কাছে, খেতে পারেন।

    মেয়েটি বলল, আপনি বেকার, ভালো সিগারেট পেলেন কোথায়?

    আমার ভাবী প্রেজেন্ট করেছে। আপনি কে?

    আমার নাম রীতা।

    এদের মধ্যে আপনার কেউ আছে?

    আমার ছোট ভাই আছে।

    কোন জন?

    মেয়েটি আঙুল দিয়ে দেখাল। এই লোকটিই বোধহয় কাল রাতে সিগারেট নিয়েছিল। রফিক বলল, কী নাম ভাই আপনার?

    ফরহাদ।

    কষ্ট হচ্ছে খুব?

    লোকটি জবাব দিল না!

    সিগারেট নেবেন?

    না।

    কবির মামা আসতে দেরি করছেন। তাঁর বড়ো বাথরুমে পেয়েছে কিনা কে জানে। রফিক আরেকটি সিগারেট ধরাল। নীল শাড়ি পরা রোগা মেয়েটি কি কিছু খেয়েছে? রফিক মনে-মনে ভাবল, মেয়েটিকে যদি বলা হয়, আসুন আপনি আমাদের সঙ্গে চারটা ভাত খান, তাহলে সে কি আসবে? মনে হয় না। মেয়েদের আত্মসম্মান খুব বেশি।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএকটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    একটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }