Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প477 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১৭. শফিক অফিসে এসে শুনল

    শফিক অফিসে এসে শুনল, বড়োসাহেব সকাল আটটায় এসেছেন, কয়েক বার শফিকের খোঁজ করেছেন। তাঁর মেজাজ অবশ্যি ভালো। অন্য দিনের মতো চেঁচামেচি করছেন না। শফিক ঘড়ি দেখল, দশটা চল্লিশ। আজ তার অফিসে আসতে দেরি হল। এটা সে কখনো করে না। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, যে দিন সে দেরি করে আসে, বেছে বেছে সুরেনসেন ঠিক সেদিনগুলিতেই আসে।

    স্যার, মে আই কাম ইন?

    কাম ইন। কেমন আছ শফিক?

    ভালো।

    আজকের ওয়েদার কেমন চমৎকার, লক্ষ করেছ? ব্ৰাইট সানশাইন। কুল ব্রিজ।

    শফিক ব্যাপার কিছু পারল না। বাতাসে কোনো মিষ্টি গন্ধ নেই,

    কাজেই বড়ো সাহেব প্রকৃতিস্থই আছেন। সকালবেলার চমৎকার ওয়েদার নিয়ে তাঁর কাব্যভাবের কোনো কারণ নেই। আজকের সকাল অন্য দিনের সকালের মতোই। আলাদা কিছু নয়।

    শফিক।

    বলুন স্যার।

    তুমি কি আমার প্রসঙ্গে কোনো গুজব শুনেছি? আমাকে নিয়ে দুটি গুজব প্রচলিত। একটি হচ্ছে, তোমাদের অফিসের একটি মেয়েকে বিয়ে করে ফেলছি। আমি এই গুজবটির কথা বলছি না। আমি বলছি অন্য গুজবটির কথা।

    না স্যার, আমি কিছু শুনি নি।

    ঠিকই শুনেছ। এখন প্রিটেণ্ড করছি। তাতে অবশ্যি কিছুই যায় আসে না।

    শফিক চুপ করে রইল। বড়োসাহেবের কথাবার্তা হেঁয়ালির মতো লাগছে।

    আমাকে হেড অফিস জানিয়েছে যে তারা মনে করছে। আমি এখানকার কাজকর্ম ঠিকমতো চালাতে পারছি না। কাজেই তারা আমার এক জন রিপ্লেসমেন্ট পাঠাচ্ছে।

    কবে?

    এই সপ্তাহেই। তোমার জন্যে যে সুপারিশ আমি করেছিলাম, সেটিও বাতিল হয়েছে। কাজেই তুমি ফিরে যাবে তোমার আগের জায়গায়।

    শফিক সিগারেট ধরাল। সুরেনসেন শান্ত স্বরে বলল, আমার ব্যাপারে ওদের ডিসিশন ঠিকই আছে। আমি মোটামুটি একটি অপদার্থ। কিন্তু তোমার ব্যাপারে ওরা ভুল করল। আমি খুবই দুঃখিত। ঠিক আছে, তুমি এখন যাও। আমি চার্জ হ্যাণ্ডওভার করব, তার জন্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করতে সাহায্য কর।

    শফিক দীর্ঘ সময় তার ঘরে চুপচাপ বসে রইল। সুরেনসেনের বদলে অন্য কেউ এলে ভালো হবারই কথা। এখানকার এ্যাডমিনিসটেশন অত্যন্ত দুর্বল। প্রায় এগারটার মতো বাজে, এখনো অফিসের সব কর্মচারী এসে উপস্থিত হয় নি। কর্মচারীদের আনা-নেয়ার জন্যে কোনোগাড়ি নেই। অথচ গাড়ির স্যাংশন হয়ে আছে দু বছর আগে। অত্যন্ত জরুরি ছাপ মারা ফাইলগুলিও সে ফেলে রাখবে সপ্তাহের পর সপ্তাহ। তার মুড আসছে না, কিংবা মাথা ধরেছে। কিংবা এই ব্যাপারটি নিয়ে সে আরো চিন্তা-ভাবনা করতে চায়।

    কিন্তু তবুও সুরেনসেন এক জন ভালো মানুষ। জগতের বেশির ভাগ অপটু মানুষরা সাধারণত ভালো মানুষ হয়ে থাকে, এর কারণ কি? নিজের অক্ষমতাকে ভালোমানুষী দিয়ে আড়াল করে রাখার একটা চেষ্টা কি?

    সিদ্দিক সাহেব এসে ঢুকলেন। হাসি-হাসি মুখ। যেন এইমাত্র মজার কিছু ঘটে গেছে।

    কী শফিক সাহেব, সকালবেলাতেই মুখ এমন গম্ভীর কেন? বড়ো সাহেবের খবরে আপসেট নাকি?

    কিছুটা তো আপসেট বটেই।

    যাকে নিয়ে আপসেট, সে কিন্তু সুখেই আছে। সকালে এসে গুনগুন করে গান গাইছে। আসলে বাংলাদেশ থেকে বেরুতে পেরে ব্যাটা খুশি।

    তাই কি?

    তাই। নয়তো এতটা ফুর্তি হবার কথা না। বেল টিপুন, চা দিতে বলুন। আপনি কি অফিশিয়াল অর্ডার পড়ে দেখেছেন?

    না।

    আছে আমার সঙ্গে। চা খাবার পর পড়ে দেখবেন।

    শফিক ব্যাপারটা বুঝতে পারল না। অফিস অর্ডার সিদ্দিক সাহেবের কাছে যাবে কেন?

    বুঝলেন শফিক সাহেব, এবার আমরা অফিস এ্যাডমিনিসটেসন টাইট করব। আপনার ফুল কো-অপারেশন দরকার। আমাদের নিজেদের সারভাইভেলের জন্যেই এটা দরকার। অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, এতে কোম্পানি বিজনেস গুটিয়ে ফেলবে। বিদেশী কোম্পানিগুলি এদেশে আসে কাঁচা পয়সা নিতে। ভ্যাকেশন কাটাতে তো আসে না। এদের পয়সা তৈরির সুযোগ করে দিতে না পারলে তো আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, কী বলেন?

    শফিকের কাছে ব্যাপারটা স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। হেড অফিস সিদ্দিক সাহেবের প্রমোশন দিয়েছে। অফিস অর্ডার তাঁর কাছে যাবার রহস্য হচ্ছে এই।

    শফিক সাহেব।

    বলেন।

    বড়োসাহেবের একটা জমকাল ফেয়ারওয়েল দেবার ব্যবস্থা করা যাক। এই দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। ছোটখাট একটি ফাংশান, তারপর ডিনার। ফাংশান সবাই এ্যাটেণ্ড করবে, ডিনার শুধুমাত্র অফিসারদের জন্যে। এবং সবার তরফ থেকে তাঁকে আমরা একটা গিফটও দিতে চাই। কী দিলে ভাল হয় সেটা নিয়েও একটু চিন্তা করবেন। বাংলাদেশের ল্যাণ্ডস্কেপের উপর একটা অয়েলপেইন্টিং পাওয়া যায়। কিনা দেখতে হবে। আপনার চেনা-জানা কেউ আছে আটিস্ট?

    না।

    আমি অবশ্যি দু-এক জনকে চিনি। দেখব কি করা যায়।

    সিদ্দিক সাহেব প্ৰায় এক ঘণ্টার মতো বসলেন। তিনি সম্ভবত এই হঠাৎ আসা প্রমোশনের খবরে শফিকের কাছে লজ্জিত বোধ করছিলেন। লজ্জা ঢাকার জন্যেই বাসা।

     

    শাহানাদের কলেজ আজ দুপুরবেলা ছুটি হয়ে গেল। ফাষ্ট্র। ইয়ারের একটি মেয়ে কুমিল্লা যাচ্ছিল বাবা-মার সঙ্গে। এ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। মারা গেছে তিন দিন আগে। খবর পাওয়া গেছে আজ। সেজন্যেই ছুটি এবং শোকসভা।

    শোকসভায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হল। ভাইস-প্রিন্সিপ্যাল সাহেব বক্তৃতা দিলেন। যার ভাবাৰ্থ হচ্ছে, সংসার অনিত্য, জনিলে মরিতে হবে। ভাইস প্রিন্সিপ্যাল সাহেবের লম্বা বক্তৃতা দেয়ার বদঅভ্যাস আছে। সুযোগ পেয়ে তিনি প্রায় পঞ্চাশ মিনিট কথা বললেন। খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার।

    শাহানার সবচে প্রিয় বান্ধবী মিলি, ফিসফিস করে বলল, আগে আগে ছুটি হয়ে লাভটা কি হল? সেই তো সাড়ে বারটা বাজিয়ে ফেলেছে।

    শাহানা বলল, এখন দেখবি লীনা আপা বক্তৃতা দেবে।

    সর্বনাশ হবে তাহলে। লীনা। আপা ঝাড়া দু ঘণ্টা বলবে!

    ওদের আজ নিউ মার্কেটে যাবার কথা। লীনা। আপা ডায়াসে গেলে সেটা সম্ভব হবে না। শাহানা অস্বস্তি নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। সম্ভবত আজ আপা কিছু বলবে না। ঘন ঘন ঘড়ি দেখছেন। তাঁরও নিশ্চয়ই কোথাও যাবার কথা। হলভর্তি ছাত্রী মুখ শুকনো করে বসে আছে। শোকসভা না হয়ে অন্য কিছু হলে এতক্ষণে স্যাণ্ডেল ঘষাঘষি শুরু হত। আজ তা করা যাচ্ছে না। দুঃখী-দুঃখী মুখ করে সবাই বসে আছে।

    শাহানার মন খারাপ করিয়ে লীনা আপা বক্তৃতা দিতে উঠলেন। কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের মানসী কাব্যগ্রন্থে একটি কবিতার…

    শাহানা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলল। সূচনা দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা একটা লম্বা ব্যাপার হবে। অথচ যে মেয়েটি মারা গেছে তাকে এই আপা হয়তো চেনেনও না। কিন্তু কত ভালো ভালো কথা বলা হবে! এমনভাবে সবাই বলবে, যেন ঐ মেয়েটির মতো ভালো মেয়ে পৃথিবীতে জন্মায় নি। এবং তার মৃত্যুতে সবার একটা বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। কোনো মানে হয়? শাহানার ঐ মেয়েটির উপর রাগ লাগতে লাগল। কী দরকার ছিল তার কুমিল্লা যাবার?

    শাহানা সময় কাটানোর জন্যে অন্য কিছু ভাবতে চেষ্টা করল। এই কাজটা সে খুব ভালো পারে। ক্লাসে কোনো লেকচার যখন তার পছন্দ হয়। না, তখন স্যারের দিকে তাকিয়ে থেকে সম্পূর্ণ অন্য জিনিস নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে পারে। বেশ লাগে তার।

    শাহানা ভাবতে লাগল বাসায় ফিরে গিয়ে কী করবে। করার কিছুই নেই। এমন নিরানন্দ জীবন। কিছুক্ষণ পড়াশোনা, টিভি দেখা, রাতের পর ঘুমানো, ব্যস। দিনের পর দিন একই রুটিন। এতটুকুও ভালো লাগে না, প্রায়ই ইচ্ছা করে কোথাও পালিয়ে যেতে। ছেলে হয়ে জন্মালে সে নিশ্চয়ই পালিয়ে যেত। মেয়ে হয়ে পালিয়ে যাওয়াও সম্ভব না। পত্রিকা খুললেই সেয়েদের নিয়ে এমন সব আজেবাজে খবর দেখা যায়। এসব খবর শাহানার পড়তে ভালো লাগে না। কিন্তু মা আবার বেছে বেছে সেই খবরগুলিই ভাবীকে পড়ে শোনাবেন।

    বৌমা, শুনে যাও, কী লিখেছে। মানুষ আর মানুষ নেই। জানোয়ার হয়ে গেছে। ফরিদপুরের নবগ্রামে তিন জন যুবক কর্তৃক এগারো বৎসর বয়েসী। কুলসুমকে…

    এসব খবর কি জোরে জোরে পড়ে শোনানের জিনিস? কিন্তু মাকে বলবে কে? যতই দিন যাচ্ছে, মা ততই অন্য রকম হয়ে যাচ্ছে! কী বাজে স্বভাব যে তার হচ্ছে অবশ্যি এখন তার সঙ্গে মা খুব ভালো ব্যবহার করছে। যে মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে, তার সঙ্গে হয়তো খারাপ ব্যবহার করার নিয়ম নেই। আগে টুনীকে নিয়ে ছাদে গেলে এক শ বার জবাবদিহি করতে

    ছাদে গিয়েছিলি কেন?

    দিনের মধ্যে দশ বার ছাদে যাওয়া লাগে কেন?

    খবরদার, আর যেন না দেখি। এত বড়ো মেয়ে ছাদে ঘুরঘুর করবে: কেন? ছাদ কি হাওয়া খাবার জায়গা?

    এখন মা কিছুই বলে না। কয়েক দিন আগে কলেজ থেকে ফেরবার সময় গলির মাথায় আনিস ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। দু জন কথা বলতে বলতে আসছে। মা ব্যাপারটা বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখল। এই নিয়ে কিছুই বলল না। অন্য সময় হলে এক লক্ষ প্রশ্ন করত।

    কী কথা হল আনিসের সাথে? হাত নেড়ে নেড়ে এমন কী কথা?

    তোকে কত বার বলব, আগ বাড়িয়ে আলাপ জমাতে যাবি না?

    হাসতে হাসতে দেখি ভেঙে পড়ে যাচ্ছিলি। রাস্তার মধ্যে কেন এমন হাসাঁহাসি? ভদ্রলোকের মেয়ে না। তুই?

    বিয়ে ঠিক হয়ে যাবার কিছু ভালো দিকও আছে। স্বাধীনতা আসে। কত দিন থাকবে এই স্বাধীনতা কে জানে। বিয়ের পর কী হবে, এসব নিয়ে শাহানা কখনো ভাবে না। ভাবতে ভালো লাগে না। যা হবার হোক, তখন দেখা যাবে। তবে শাহানা নিশ্চিত যে লোকটির সঙ্গে তার বিয়ে হবে, সে ভালোই হবে। ছ্যাবলা ধরনের হবে না। সে-রকম হলে শাহানার সঙ্গে বারবার দেখা করত। চিড়িযাখানায় নিয়ে যেতে চাইত। চাইনীজে নিয়ে যেত। প্রেম প্রেম একটা খেলা চলত। সবকিছু ঠিকঠাক করবার পর প্রেমের অভিনয়। এই ছেলে এসব কিছুই করে নি। এই একটি কারণে শাহানা তার উপর কৃতজ্ঞ। শাহানা ঠিক করে রেখেছে, বিয়ের প্রথম রাতেই এজন্যে সে তার স্বামীকে ধন্যবাদ দেবে।

    ওদের বাড়ি থেকে এক বার বিরাট এক গাড়ি এসে উপস্থিত। বাচ্চারা সবাই চিড়িয়াখানায যাবে। তাদের ইচ্ছা শাহানাকে নিয়ে যাবার। শাহানা কি পারবে যেতে? তার যাবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না। মার জন্যে যেতে হল। সাজসজ্জা করতে হল। চুল বাঁধতে হল। শাহানা ধরেই নিয়েছিল, চিড়িয়াখানাটা উপলক্ষ মাত্র। আসলে ও তার সঙ্গে ঘুরতে-টুরতে চায়। কিন্তু ও ছিল না। বাচ্চারাই গিয়েছে দল বোধে।

    মাঝে মাঝে শাহানার মনে হয়, ওর মধ্যে শাহানার প্রতি একটা অবহেলার ভাব আছে। নয়তো বিয়ে ছ মাস পিছিযে দেবার প্রস্তাবে ছেলের আত্মীয়স্বজনরা কেউ রাজি হল না। কিন্তু ছেলে রাজি হয়ে সবাইকে রাজি করাল। এসব খবর অবশ্যি খিলগাঁর মামার কাছ থেকে পাওয়া। তাঁর সব খবর বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি বানিয়ে বানিয়ে প্রচুর কথা বলেন।

    লীনা। আপার বক্তৃতা প্ৰায় শেষ পর্যায্যে। তিনি আধা ঘণ্টা বক্তৃতা দিলেন। চিবিয়ে চিবিয়ে কথা। দুই মিনিট পর পর রবীন্দ্রনাথ এই বলেছেন।–মহামতি বালজাক এই বলেছেন। আগে জানলে কে আসত শোক সভায়?

     

    শাহানার বাসায় ফিরতে ফিরতে তিনটা বেজে গেল। বাসায় কেউ নেই, শুধু শফিক বসে আছে বসার ঘরে।

    ওরা কোথায় ভাইয়া?

    খিলগাঁয়।

    তুমি আজ এত সকাল-সকাল যে?

    এসে পড়লাম একটু আগে আগে।

    শরীর খারাপ নাকি?

    না, শরীর ভালোই আছে।

    আজ আমাদেরও সকাল সকাল ছুটি হয়েছে। ফার্স্ট ইয়ারের একটা মেয়ে মারা গেছে—এজন্যে ছুটি।

    কীভাবে মারা গেল?

    জানি না। এ্যাকসিডেন্ট না কি যেন হয়েছিল।

    শাহানা কাপড় বদলাতে গেল। বাড়িটা ফাঁকা বলেই কেমন অচেনা লাগছে। মনে হচ্ছে অন্য কোনো মানুষের বাড়ি। আর খিলগীয় যখন গিয়েছে, তখন রাত দশটা—এগারটার আগে ফিরবে না। শাহানার দারুণ মন খারাপ হয়ে গেল।

    শাহানা, শাহানা।

    কী ভাইয়া?

    চা বানাতে পারিস?

    পারব না কেন, তুমি আমাকে কী ভাব?

    বানা এক কাপ চা।

    শাহানা অত্যন্ত উৎসাহে চা বানাতে গেল। রান্নাঘরে যাবার সে কোনো সুযোগ পায় না। মনোয়ারার কঠিন নিষেধ আছে। বিয়ের অ্যাগে রান্নাঘরে যাওয়া যাবে না। আগুনের আঁচে গায়ের রঙ নষ্ট হয়। রান্নাবামা যা শেখার বিয়ের পর শিখলেই হবে। त्रि শফিক চায়ের কাপ নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াল। শাহানা এল তার পিছু পছু।

    তোর গোলাপ গাছে অনেক ফুল ফুটেছে রে শাহানা।

    শাহানা হাসল। গাছের প্রসঙ্গে কেউ কোনো কথা বললেই শাহানার বড়ো ভালো লাগে।

    তোর গাছগুলি তুই শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাবি, না রেখে যাবি আমাদের ଐChi?

    কী যে তুমি বল ভাইয়া!

    শাহানার লজ্জা করতে লাগল। ভাইয়া গভীর ধরনের মানুষ, ঠাট্টা-তামাশা কখনো করে না। কিন্তু শাহানা লক্ষ করেছে, বিয়ের প্রসঙ্গে সে মাঝে মাঝে হালকা কথাবার্তা বলে।

    কয়েক দিন আগে তারা খেতে বসেছে। খাবার তেমন কিছু নেই। ভাইয়া হঠাৎ বলল, এত বড়ো লোকের স্ত্রী এক জন খেতে বসেছে, আর এই খাওয়া! শাহানার লজ্জায় মরে যাবার মতো অবস্থা। সবাই খুব হাসাহাসি করল। বাবার হাসি তো আর থামেই না। শেষটায় বিষম খেয়ে ফেললেন।

    আজ শফিকের মুখ অন্ধকার হয়ে আছে। একটু আগে সে ঠাট্টা করেছে। কিন্তু তাকে দেখে মনে হচ্ছে তার মন পড়ে আছে। অন্য কোথাও। শফিক বলল, তোর ভাবী কখন আসে?

    পাঁচটার মধ্যে এসে পড়ে। চারটা পর্যন্ত অফিস। ওদের গাড়ি এসে দিয়ে যায়।

    গাড়ি এসে দিয়ে যায়? জানতাম না তো। আমাকে তো কিছু বলে নি!

    এই মাস থেকেই নিয়ে যাচ্ছে, দিয়ে যাচ্ছে।

    শাহানার মনে হল, শফিক আরো গম্ভীর হয়ে গেছে। এতে তো হবার কথা, গভীর হবে কেন? শাহানা বলল, ভাইয়া, আমি একটু ঘুরে আসি।

    কোথায় যাবি?

    ছাদে।

    ছাদ ফাঁকা। শাহানার মনে হচ্ছিল, আনিস ভাইকে তার ঘরে পাওয়া যাবে। কিন্তু ঘর তালাবন্ধ। কাপড় শুকোবার দড়িতে ধবধবে সাদা রঙের কয়েকটা কবুতর। এদের পোষ মানানো হচ্ছে ম্যাজিকে লাগবে। শাহানা কবুতরের খাঁচায় হাত রাখতেই একটি কবুতর ঘাড় বাঁকিয়ে তার হাতে ঠোকর দিল। এই বুঝি পোষ্যমান কবুতরের নমুনা!

    শাহানা একা এক ছাদে হাঁটতে লাগল। শীত লাগছে। ঠাণ্ডা বাতাস দিচ্ছে। কেমন মন খারাপ করিয়ে দেবার মতো একটা সন্ধ্যা নামছে। কোনো রকম কারণ ছাড়াই শাহানার চোখ ভিজে উঠতে শুরু করেছে। খাচার কবুতরগুলি আগ্রহ নিয়ে তাকে দেখছে।

    ছাদ থেকেই দেখা গেল। রফিক আসছে। সে চার দিনের জন্যে যশোর গিয়েছিল। কেন গিয়েছিল, কী, কাউকে বলে যায় নি। চাকরির কোনো ব্যাপার হবে বোধহয়। আজকাল চাকরির ব্যাপারে সে কারো সঙ্গে কথা বলে না। শাহানা নিচে নেমে এল। রফিক তার দিকে তাকিয়ে হাসল। কেমন রোগা লাগছে রফিককে।

    কেমন আছেন শাহানা বেগম?

    ভালো আছি। তুমি কেমন?

    ভালোই।

    কেমন খুশি-খুশি লাগছে তোমাকে। চাকরি-টাকরি কিছু হয়েছে?

    না। আমার ঐসব হবে না। বিজনেস করব ঠিক করেছি। বাসায় কেউ নেই নাকি?

    না। খিলগাঁয়ে গিয়েছে। ভাবী এখনো ফেরেনি।

    চট করে চা বানা। খুব কড়া করে। হাই পাওয়ারড্‌ টী দরকার। কেউ কি আমার খোঁজ করেছিল?

    না কারোর খোঁজ করার কথা?

    উঁহু।

    নীলু আজও ফিরতে দেরি করছে। সন্ধ্যা মিলিয়ে গেছে-সাড়ে ছটা বাজে। এতটা দেরি করার কথা না। শফিক শাহানাকে বলল, তোর ভাবী কি দেরি হবার কথা কিছু বলে গেছে?

    না।

    প্রায়ই কি সন্ধ্যা পার করিয়ে আসে?

    না। বীণাদের বাসা থেকে অফিসে টেলিফোন করে দেখব?

    দরকার নেই।

    শাহানা বলল, আরেক কাপ চা বানিয়ে দেব ভাইয়া?

    না।

    শফিকের সিগারেট শেষ হয়ে গিয়েছে। কোনো কাজের মানুষ নেই বাড়িতে। রফিককে বললে সে এনে দেবে। বলতে ইচ্ছা করল না। শফিক নিজেই চাদর গায়ে দিয়ে বেরুল। শাহানা বলল, যাচ্ছ কোথায় ভাইয়া?

    সিগারেট কিনব।

    আমিও আসি তোমার সাথে?

    আয়।

    সারাটা পথ শাহানা কথা বলতে বলতে যাচ্ছে। শফিক হাঁটছে। অন্যমনহঙ্ক ভঙ্গিতে। শাহানা কী বলছে, তার কানে যাচ্ছে কিনা সন্দেহ। সে অবশ্যি হ্যাঁ হুঁ দিয়ে যাচ্ছে।

    ভাবীর সঙ্গে তুমিও চলে যাও না কেন সুইডেনে। সে যা এ্যালাউন্স পাবে তাতে তোমরা দু জন দিব্যি থাকতে পারবে। আমরা রাখব টুনীকে। কোনোই অসুবিধা হবে না। তা ছাড়া টুনী তো রাতে থাকে। বাবার সাথে। তোমাদের জন্যে সে খুব কাঁদবে-টাদৈবে বলে মনে হয় না। আসবার সময় তার জন্যে একগাদা খেলনা নিয়ে আসবে। শোন ভাইয়া, বিদেশে ডিল হাউস বলে একটা খেলনা পাওয়া যায়। যা সুন্দর। চমৎকার একটা বাড়ি। সব রকম আসবাবপত্র আছে। এমনকি বাথরুমে বেসিন, কমোড সব আছে। ঐ একটা নিয়ে আসবে।

    শফিকের মনে হল, শাহানা মানসিক দিক দিয়ে এখনো বড় হয় নি! ছোটই রয়ে গেছে। হুঁট করে তার বিয়ে ঠিক করাটা বোধহয় ভালো হয় নি।

    ভাইয়া, সিগারেট কিনেই কি তুমি বাসায় চলে আসবে?

    হ্যাঁ, কেন?

    চল না। ঐ বাসষ্ট্যাণ্ড পর্যন্ত যাই।

    সেখানে কী?

    ভাবীর মাইক্রোবাস সেখানে থামে। তাবী বাস থেকে নেমেই আমাদের দেখবে। খুব অবাক হবে। যাবে ভাইয়া?

    চল যাই।

    দু জনে হাঁটতে শুরু করল। শাহানা মৃদুস্বরে বলল, তোমাকে একটা গোপন খবর দিতে পারি ভাইয়া!

    কী খবর?

    খুবই গোপন। কাউকে কিন্তু বলতে পারবে না।

    গোপন খবর হলে না-বলাই তো ভালো। গোপন খবর তো বলে দেয়ার জন্যে না।

    শাহানা চুপ করে গেল। ভাইয়ার সঙ্গে অন্য কোনো মানুষের কোনো মিল নেই। অন্য কেউ হলে বলত, কাউকে বলব না, খবরটা কী বল। ভাইয়া সেটা বলবে না। শাহানার খুব ইচ্ছা করছে খবরটা বলে। ভাবী সতের শ টাকা দিয়ে একটা ঘড়ি কিনেছে শফিকের জন্যে। ম্যারেজ এ্যানিভারসারি উপলক্ষে সেটা শফিককে দেওয়া হবে। এই হচ্ছে খবর।

    ঘড়ি কেনার সময় নীলু শাহানাকে নিয়ে গিয়েছিল। শাহানা অবাক হয়ে বলেছিল, এত দাম দিয়ে ঘড়ি কিনবে! নীলু লাজুক হেসে বলেছে, ওকে ভালো কিছু দিতে চাই।

    কিন্তু ভাইয়া তো তোমাকে কখনো কিছু দেয় নি।

    কোত্থেকে দেবে? ওরা কি টাকা আছে?

    টাকা থাকলেও দিত না। এসব দিকে তার কোনো নজরই নেই। কথাটা খুবই সত্যি। গত ম্যারেজ এ্যানিভারসারিতে নীলু, দুপুরবেলা শফিকের অফিসে উপস্থিত হল। শফিক অবাক হয়ে বলল, কী ব্যাপার, তুমি! নীলু হেসে বলেছে, এমনি দেখতে এলাম কী করছ।

    শুধু শুধু আসবে কেন? নিশ্চয়ই কোনো কাজ আছে। টুনীকে কার কাছে রেখে এসেছ?

    কার কাছে আর রাখব, মার কাছে। তুমি কি আজ ছুটি নিতে পার?

    কেন?

    খিদে লেগেছে খুব। কোনো একটি রেস্টুরেন্টে বসে লাঞ্চ খাওয়া যেত। আজকের তারিখটা তোমার মনে নেই, তাই না?

     

    তারা প্ৰায় আধা ঘণ্টার মতো দাঁড়িয়ে রইল। নীলুর বাস এল না। শফিক বলল, চল যাই, ঠাণ্ডা লাগছে।

    একটু দাঁড়াও ভাইয়া, এসে পড়বে।

    শফিক কোনো জবাব না দিয়ে হাঁটতে শুরু করল। শাহানা বলল, আর একটুখানি থাকি না ভাইয়া। আমার মনে হচ্ছে পাঁচ-দশ মিনিটের মধ্যে এসে পড়বে।

    আসুক। দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে না।

    এল নটার একটু আগে। তাদের এক কলিগ অফিস ছুটির আগে

    আগে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল। অফিসের মিনিবাসে করে তাকে শেরে বাংলা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। অন্য সবাইও গিয়েছে সেখানে। ডাক্তাররা বললেন, হাট এ্যাটাক। ভদ্রলোকের এখনো জ্ঞান ফেরে নি। তার স্ত্রী এবং দুটি ছেলে হাসপাতালে এসে খুব কান্নাকাটি করছে।

    শফিক কোনো রকম উৎসাহ দেখাল না। ঠাণ্ডা গলায় বলল, খবর তো দেবে।

    কীভাবে দেব খবরটা? সারাক্ষণ তো হাসপাতালে ছিলাম।

    তুমি তো হাসপাতালে থেকে কিছু করতে পারছিলে না। শুধু শুধু আমাদেরকে দুশ্চিন্তায় ফেললে।

    এক জন কলিগের এত বড়ো দুঃসময়ে আমি যাব না?

    শফিক গম্ভীর গলায় বলল, তৰ্ক পরে করবে, এখন দেখ খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা যায়। কিনা। রান্নাবান্না কিছুই তো হয় নি।

    নীলুর প্রচণ্ড মাথা ধরেছিল। সে মাথাধরা নিয়েই রান্নাঘরে ঢুকল। শাশুড়ি খাওয়াদাওয়া শেষ করে ফিরবেন। কিনা কে জানে।

    দুপুরের তরকারি নেই। রাতের বেলার জন্যে কী রাঁধবে, নীলু ভেবে পেল না। রফিককে ডিম কিনে আনার জন্যে পাঠাতে হবে।

    রফিক ঘর অন্ধকার করে শুয়ে আছে। নীলু ডাকতেই সে ক্লান্তস্বরে বলল, ভাবী, আমার জ্বর। হঠাৎ করে জ্বর এসে গেছে। বিশ্বাস না হলে কপালে হাত দিয়ে দেখ।

    নীলু আনিসের খোঁজে ছাদে গেল। আনিস ছিল না! নীলু ফিরে এল মন খারাপ করে। ডাল-ভাতই খেতে হবে। রান্নাঘরে ঢুকতে ইচ্ছা করছে না, খুব ক্লান্তি লাগছে। নীলু, শাহানাকে ডেকে বলল, তুমি রফিকের পাশে বসি, মাথায় হাত-টাত বুলিয়ে দাও। ওর জ্বর।

    শাহানার ইচ্ছা করছিল নীলুর সঙ্গে গল্প-টল্প করে। কিন্তু সে গেল রফিকের ঘরে। জ্বরে সত্যি সত্যি রফিকের গা পুড়ে যাচ্ছে। শাহানা বলল, চুল টেনে দেব? রফিক বলল, চুল ধরে টানাটানি করার কোনো দরকার নেই। তুই নিজের কাজে যা।

    জ্বরের সময় কোনো একটা কথা কানে গেলে সেটা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। চুল টানার ব্যাপারটা রফিকের মাথায় ঘুরতে লাগল। তার মনে হতে লাগল। তিন-চার জন অল্পবয়েসী মেয়ে একঘেয়ে গলায় তার কানের

    কাছে চেঁচাচ্ছে–

    চুল টানা, বিবিয়ানা
    সাহেব বাবুর বৈঠকখানা।
    সাহেব বলেছে যেতে
    পান সুপারি খেতে
    পানের ভেতর মৌরি বাটা।
    ইস্ক্রুপের চাবি আঁটা।।
    চুল টানা বিবিয়ানা
    চুল টানা বিবিয়ানা।

    হোসেন সাহেবরা এলেন রাত এগারটায়। সে-সময় রফিকের মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে। গ্রিন ফার্মেসির ডাক্তার অজয় বাবু চিন্তিত মুখে বসার ঘরে বসে আছেন। আনিস আছে, রশিদ সাহেব আছেন। জ্বর উঠেছে এক শ পাঁচ পর্যন্ত। রফিক বিড়বিড় করে ছড়াজাতীয় কী যেন বলছে। শাহানার বুক ধড়ফড় করছে। একি কাণ্ড! সুস্থ মানুষ। এসে চা খেল, গোসল করল আর ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে আকাশ-পাতাল জ্বর! মনোয়ারা কাঁদতে শুরু করলেন। হোসেন সাহেবের মুখ শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেল। অজয় বাবু বললেন, ভয়ের কিছু নাই, জ্বর রেমিশন হবে। অস্থির হবার কিছু নাই।

    রাত তিনটার দিকে রফিকের জ্বর অনেকখানি কমল। সে উঠে বসে ལྟ་ স্বরে বলল, কিছু খেতে— টোতে দাও ভাবী। মুড়ি ভেজে আন ঝাল দিয়ে।

    নীলু ঘুমুতে গেল রাত চারটার দিকে। শফিক তখনো জেগে আছে। নীলু ক্লান্ত স্বরে বলল, ঘুমুবে না?

    রাত তো বেশি বাকি নেই, ঘুমিয়ে কী হবে?

    আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না।

    শুয়ে পড়।

    নীলু শুয়ে পড়ল। টুনী আজ তাদের সঙ্গে ঘুমিয়েছে। অনেক বড়ো হয়ে গেছে মেয়েটা। দেখতে দেখতে কেমন বড়ো হয়ে যাচ্ছে। নীলু টুনীকে বুকের কাছে টেনে আনল। টুনী ঘুমের মধ্যেই মাকে জড়িয়ে ধরল। আহা, সারা দিন দেখা হয় নি মেয়েটিকে। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করেছে কিনা কে জানে। কেমন রোগা— রোগ লাগছে হাত-পা। কপালের কাছে লাল একটা দাগ, ফুলে উঠেছে। পড়ে গিয়ে ব্যথাট্যাথা পেয়েছে নিশ্চয়ই। নীলু চুমু খেল কপালের কাটা দাগে।

    শফিক বাতি নিভিয়ে ঘুমুতে এল। নীলু বলল, টুনী কেমন ব্যথা পেয়েছে দেখেছ? কপাল ফুলে উঠেছে।

    শফিক কিছু বলল না। নীলু বলল, আরেকটু হলে চোখে লাগত।

    যাদের বাবা-মা দুজনেই ব্যস্ত তাদের ছেলেমেয়েরা অবহেলার মধ্যেই বড়ো হবে। এটা নিয়ে দুঃখ করা ঠিক না। তুমি ঘুমাও।

    নীলু মৃদুস্বরে বলল, আমার চাকরিটা তোমার পছন্দ না, তাই না?

    শফিক চুপ করে রইল।

    বল, তোমার কি ইচ্ছা না। আমি চাকরি করি?

    শফিক শান্ত স্বরে বলল, আমার কাছে মনে হয়, পরিবারের প্রতি মেয়েদের দায়িত্ব অনেক বেশি।

    সেই দায়িত্ব আমি পালন করছি না?

    রাত-দুপুরে এ নিয়ে তর্ক করতে ভালো লাগছে না।

    তর্ক না। তোমার মতামতটা শুনি।

    মতামত তো দিলাম। টুনী বড়ো হচ্ছে অযত্ব অবহেলায়। যার ফল হিসেবে তার মানসিক বিকাশ অন্যসব শিশুদের মতো হবে না।

    টুনীর মানসিক বিকাশ হচ্ছে না?

    আমি ইন জেনারেল বলছি। চাকরিজীবী মহিলার কাছে ঘর-সংসারের চেয়ে তাদের ক্যারিয়ারই প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। অফিসের এক জন কলিগের অসুস্থতা তার কাছে বিরাট ব্যাপার মনে হয়। যেমন তোমার উদাহরণটাই ধরা যাক।

    আমার কী উদাহরণ?

    সুইডেনের ব্যাপারটায় তুমি কী রকম উল্লসিত হয়ে উঠলে। এক বারও ভাবলে না, এই ছয় মাস টুনী কীভাবে থাকবে।

    ভাবি নি তোমাকে কে বলল?

    ভাবলেও সেটাকে তেমন গুরুত্ব দাও নি। পাসপোর্ট করা, এই করা সেই করাতেই ব্যস্ত।

    তুমি চাও না। আমি যাই?

    শফিক, জবাব দিল না।

    বল তুমি চাও না?

    না।

    চাকরি করি, তাও চাও না?

    আমি না-চাইলেই তুমি ছেড়ে দেবে? তা পারবে না। এক বার যখন ঢুকেছ, সেখান থেকে কিছুতেই বেরুতে পারবে না। সংসার যদি ভেসে যায়, তাতেও না।

    এতটা নিশ্চিত হয়ে কথা বলছি কীভাবে?

    নিশ্চিত হয়ে বলছি, কারণ আমি জানি। যে মেয়ে চাকরি করে, সে কিছু পরিমাণে স্বাধীন। সেই স্বাধীনতা কোনো মেয়েই ছাড়বে না। সে সংসার ছেড়ে দেবে, কিন্তু স্বাধীনতা ছাড়বে না।

    মেয়েরা স্বাধীন হোক, সেটা তুমি চাও না?

    শফিক বলল, যথেষ্ট তর্ক হয়েছে, এখন ঘুমুতে যাও।

    নীলু ঘুমতে পারল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফজরের আজান শোনা গেল। ভোর হচ্ছে। শুরু হচ্ছে আরেকটি দিন। এই দিন অন্যসব দিনের মতো নয়। এটি একটি বিশেষ দিন। এই দিনে সাত বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছিল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএকটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    একটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }