Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প477 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১৯. নীলু খুব লজ্জিত

    তিনি অবাক হয়ে নীলুর দিকে তাকালেন।

    যেন নীলুর কথা ঠিক বুঝতে পারছেন না। নীলু বলল, স্যার, আমি খুব লজ্জিত। শেষ মুহূর্তে জানালাম।

    বড়ো সাহেব বললেন, লজ্জিত হওয়াই উচিত। অন্তত এক মাস আগে জানলেও আমরা অন্য কাউকে পাঠাতে পারতাম।

    নীলু মাথা নিচু করে বসে রইল। বড়োসাহেব বললেন, আপনার সুইডেনে যেতে না পারার পেছনে কারণগুলি কী?

    আমার একটা ছোট বাচ্চা আছে। ও আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না।

    কত ছোট?

    সাড়ে তিন বছর বয়স।

    এই প্রবলেমটা আগে লক্ষ করলেন না কেন?

    আগে ভেবেছিলাম সম্ভব হবে। দেখতে দেখতে ছ মাস কেটে যাবে।

    বড়ো সাহেব যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছেন। নীলু তার মুখ দেখেই সেটা বুঝতে পারছে। কিন্তু তার করার কিছুই নেই।

    টেনিং হবে দুই পর্যায়ে। তিন মাস অফিস ম্যানেজমেন্ট এবং পরের তিন মাস সেলস অ্যাণ্ড প্রমোশন। আপনি না-হয় প্রথম তিন মাসের ট্রেনিংটা শেষ করে চলে আসুন। নাকি সেখানেও অসুবিধা?

    মেয়েদের স্যার অনেক অসুবিধা।

    তিন মাস আপনার বাচ্চাকে দেখবার কেউ নেই? তার দাদী, কিংবা খালা, ফুপু?

    মৃদুস্বরে বলল, আমি একা একা এত দূর যাই এটা আমার স্বামীর পছন্দ নয়।

    আই সি।

    আপনি যদি মনে করেন আমি কথা বললে তিনি কনভিন্সড হবেন, তাহলে আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারি।

    দরকার নেই স্যার।

    নীলু উঠে দাঁড়াল। এখন সাড়ে বারটা বাজে। কিছুক্ষণের মধ্যেই লাঞ্চ ব্রেক হবে। তার আজ আর কাজ করতে ইচ্ছা করছে না। সে ছুটি নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে এল।

    কেন জানি বাসায় যেতেও ইচ্ছা করছে না। আবার একা একা ঘুরে বেড়াতেও ইচ্ছা করছে না। বন্যা তার অফিসে, নয়তো তার বাসায় গিয়ে আড্ডা দেওয়া যেত। অনেক দিন বন্যার সঙ্গে দেখা হয় না। তার অফিসে চলে গেলে কেমন হয়? আগে কোনো দিন যায় নি। ঠিকানা আছে, খুঁজে বেঃ করতে অসুবিধা হবে কেন?

    বন্যা খুবই অবাক হল। দু বার বলল, একা একা খুঁজে বের করলি? তুই তো দারুণ স্মার্ট হয়ে গেছিস? অল্প কিছু দিন চাকরি করেই তোর তো ভালো উন্নতি হয়েছে! তবে ভালোমতো বুদ্ধি খেলাতে পারিস নি। তোর প্রথমে উচিত ছিল টেলিফোন করে দেখা আমি আছি কিনা।

    তোর এখানে আসব, এমন কোনো প্ল্যান ছিল না। হঠাৎ ঠিক করা।

    আর মিনিট দশেক দেরি হলেই আমার সঙ্গে দেখা হত না।

    এই সময় ছুটি হয়ে যায় নাকি তোদের?

    না, ছুটি হয় চারটায়। আজ একটু সকাল-সকাল ফিরছি, বাড়ি দেখতে যাব।

    বাড়ি বদলাচ্ছিস?

    না। ঘরের সঙ্গে বনিবন। একেবারেই হচ্ছে না। আমি আলাদা বাসা নিচ্ছি। তোকে সব বলব। দাঁড়া একটু, বসকে বলে আসি। তুই কিছু খাবি?

    না।

    নীলু অবাক হয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। কী সব পাগলামি যে করছে বন্যা! বনিব্যুনা না হলেই আলাদা বাসা ভাড়া নিতে হবে? তাছাড়া এই শহরে একটি মেয়েকে কেউ বাসা ভাড়া দেবে না। এই শহরে কেন, কোনো শহরেই দেবে না।

    বন্যা নীলুকে নিয়ে রিকশায় উঠল। হালকা গলায় বলল, তোর হাতে সময় আছে তো?

    আছে।

    তাহলে চল আমার সঙ্গে। এক জন কেউ সঙ্গে থাকলে সাহস হয়। নিউ এ্যালিফেন্ট রোডে একটা মহিলা হোস্টেলের খোঁজ পেয়ে গিয়েছিলাম, কম্পাউণ্ডের ভেতর ঢুকেই কেমন গা ছমছম করতে লাগল। সুন্দর সুন্দর সব মেয়েরা ঘুরঘুর করছে। ববক্যাট চুল, ঠোঁটে লিপস্টিক। বেশ ভদ্রঘরের মেয়ে বলে মনে হয়, কিন্তু কেমন একটু খটকা লাগল। হোস্টেলের সুপারিনটেনডেন্টের সঙ্গে কথা বললাম। বিশাল মৈনাক পর্বতের মতো এক মহিলা। প্রথমে বলল সীট আছে। তারপর যখন শুনল আমি একটা এ্যাম্বেসিতে চাকরি করি, তখন বলল সীট নেই।

    তুই কী বললি?

    কিছু বলিনি, চলে এসেছি। জায়গাটা ভালো না।

    নীলু ভয়ে-ভয়ে জিজ্ঞেস করল, এখন কি আবার ঐখানেই যাচ্ছিস নাকি?

    না, আরেকটা মহিলা হোস্টেল আছে। শুনেছি, সেটা ভালো। অনেক চাকরিজীবী মহিলা থাকে। তবে সীট পাওয়া মুশকিল।

    হাসবেণ্ডের সঙ্গে কী হয়েছে, সেটা শুনি।

    রিকশায় বসে বলার মতো কোনো স্টোরি না। নিরিবিলিতে বলব। আর ঐসব শুনে কী করবি?

    হোস্টেল-টোস্টেল খোঁজার চেয়ে ঝামেলাটা মিটিয়ে ফেলা ভালো না? আমি কিছু মেটাব না। ও যদি মেটাতে চায়, মেটাবে। দোষটা ওর, আমার না।

    রিকশাতেই বন্যা নিচু গলায় তার সমস্যার কথা বলতে শুরু করল।

    তোকে তো আগেই বলেছি, আমার চাকরি করাটা ও পছন্দ করে না। মাসখানেক আগে আমাদের এক জন অফিসার বেড়াতে এসেছেন আমার বাসায়। কাটিসি ভিজিট। এতেই তার মুখ গম্ভীর-কেন এসেছে? মহিলা কলিগদের বাসায় ঘুরঘুর করার দরকারটা কী? এইসব। তারপর কী হল শোন। সেই ছেলেটা আরেক দিন এল। আর ওর মাথায় একদম রক্ত উঠে গেল—কেন বারবার আসবে?

    নীলু ক্ষীণস্বরে বলল, সত্যি তো, কেন আসবে বারবার?

    বারবার কোথায় দেখলি? দু বার এসেছে মাত্র। আর আমি কি তাকে বলতে পারি, আপনি আসবেন না। আমার এখানে?

    নীলু চুপ করে রইল। বন্যা গম্ভীর গলায় বলল, তারপর কী হল শোন, ও বলল, তুমি চাকরি ছেড়ে দাও। আমার সঙ্গে যদি থাকতে চাও, তাহলে চাকরি ছাড়তে হবে। তুই কী বললি? আমার রাগ উঠে গেল। আমি বললাম, তুমি এমন কি রসোগোল্লা যে, তোমার সঙ্গে থাকতেই হবে।

    কী সৰ্ব্বনাশ!

    সর্বনাশের কী আছে? সত্যি কথা বললাম। মেয়ে হয়েছি বলে সত্যি কথা বলতে পারব না?

    সত্যি-মিথ্যা এখানে কিছু নেই। তুই তোর বরকে রাগিয়ে দেবার চেষ্টা করেছিলি।

    তা করেছিলাম। ও আমাকে রাগিয়ে দিতে পারবে, আমি পারব না? খুব পারব।

    কত দিন থাকবি আলাদা?

    যা দিন দরকারর হয়, তত দিন থাকব। নিজ থেকে ফিরে যাবার মেয়ে না!

    হোস্টেলে অনেকক্ষণ বসে থাকতে হল। সুপার আসেন পাঁচটায়। সুপার ছাড়া অন্য কেউ কিছু বলতে পারবে না।

    মহিলা হোস্টেলটি বেশ সুন্দর। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। ভেতরের দিকে ফুলের বাগান আছে। কমনরুমটি বিশাল। মেয়ের হৈহৈ করে পিৎপং খেলছে। নীলু অবাক হয়ে দেখল, একটা টেবিল ঘিরে কয়েক জন মেয়ে তাস খেলছে। মেয়েরাও তাঁস খেলে নাকি? রবীন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতিতে মেয়েদের তাস খেলার ব্যাপারটা আছে। বাস্তবেও যে খেলা হয়, নীলুপ্রথম দেখল।

    দেখ বন্যা, তাস খেলছে।

    খেলবে না কেন? এক শ বার খেলবে। জুয়া খেলবে। মদ খেয়ে রাতে বাড়ি ফিরে স্বামীকে ঠ্যাঙাবে। কোনো ছাড়াছাড়ি নেই।

    নীলু হেসে ফেলল। বন্যার স্বভাব-চরিত্রে অনেকখানি পাগলামি এসে ঢুকে যাচ্ছে।

    সুপার এল সাড়ে পাঁচটায়। সুপার মহিলা নয়, পুরুষ। অভদ্র ধরনের লোক। কেউ কিছু বললে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে, যার থেকে ধারণা হয়, লোকটি কারো কোনো কথা শোনে না।

    এখানে কোন সীট নেই দরখাস্ত করলে ওয়েটিং লিস্টে নাম তুলব। ফরম নিয়ে দরখাস্ত করুন। কেন মহিলা হোস্টেলে থাকতে চান, তার কারণ আলাদা একটা কাগজে লিখে সঙ্গে দিন। সীট খালি হলে আপনাকে জানানো হবে।

    কবে নাগাদ খালি হবে?

    তা আমি কী করে বলব? আর খালি হলেই আপনি পাবেন কেন? ওয়েটিং লিস্টে যে প্রথমে আছে, সে পাবে।

    আপনি এত অভদ্রভাবে কথা বলছেন কেন?

    কোন কথাটা অভদ্রভাবে বললাম?

    সারক্ষণই তো ক্যাটক্যাট করে কথা বলছেন।

    হোস্টেল সুপার থমথমে মুখে বেশ কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলল, এ্যাপ্লাই করতে চাইলে ফরম নিয়ে এ্যাপ্লাই করুন। পাশের কামরায় ফরম। আছে।

    নীলুমৃদুস্বরে বলল, করবি এ্যাপ্লাই?

    করব। করব না কেন?

    এখন যাবি কোথায়?

    কোথায় আবার যাব? বাসায় যাব। রোজ একবার খোঁজ নেব সীট খালি হল কিনা।

    নীলু লক্ষ করল, বন্যাকে কেমন যেন ক্লান্ত লাগছে। চোখের নিচে কালি। দেখেই মনে হয়। শরীর বিশ্রামের জন্যে কাতর। বাচ্চা-টাচ্চা হবে না তো? রাস্তায় নেমেই নীলু বলল, তোর কি আর কোনো খবর আছে?

    আর কি খবর থাকবে?

    এই ধর, জনসংখ্যা বৃদ্ধি-বিষয়ক কোনো খবর।

    বন্যা জবাব দিল না। অন্যমনস্কভাবে নিঃশ্বাস ফেলল। নীলু বলল, কী, আছে নাকি?

    জানি না। তুই এখন বাসায় চলে যা। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। যেতে পারবি তো এক একা?

    পারব।

    আয়, তোকে বাসে তুলে দিয়ে আসি।

    বাসে তুলে দিতে হবে না। তুই বাসায় গিয়ে বিশ্রাম কর। তোর বিশ্রাম দরকার।

    বলতে বলতে নীলু রহস্যময় ভঙ্গিতে হাসল। বন্যা বিরক্ত হয়ে বলল, কী যে বাজে কথা বলিস!

    তাহলে তোর কোনো খবর নেই?

    বন্যা এই প্রশ্নের জবাব দিল না। তার মুখ বিষন্ন। এমন একটি সুখের সময়ে কেউ এত বিষণ্ণ থাকে কেন? এমন ছেলেমানুষ কেন বন্যা?

     

    নীলু বাসায় ফিরল সন্ধ্যার পর।

    তার জন্যে বড় ধরনের একটা চমক অপেক্ষা করছিল। নীলুর মা রোকেয়া দুপুরে ঢাকা এসে পৌঁছেছেন। তাঁর সঙ্গে বাবলু, বিলুর ছেলে। নীলু আনন্দের উচ্ছাসে কেঁদেটোদে একটা কাণ্ড বাঁধিয়ে ফেলল। প্রায় সাড়ে তিন বছর পর মার সঙ্গে নীলুর দেখা।

    রোকেয়া নিজেও কাঁদছিলেন এবং কাঁদতে কাঁদতে চেষ্টা করছিলেন মেয়েকে সামলাবার। টুনী এবং বাবলুদূরে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে দৃশ্যটি দেখছে। টুনী কখনো তার মাকে কাঁপতে দেখে নি। তার বিস্ময়ের কোনো সীমা ছিল না। বড়ো মানুষরাও তাহলে এমন করে কাঁদে?

    নীলু ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, রাজশাহী থেকে ঢাকা কত আর দূর মা? তোমার আসতে সাড়ে তিন বছর লাগল?

    রোকেয়া মেয়েকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলেন। কিছুই বললেন না।

    তোমার নাতনীকে দেখেছি মা?

    হুঁ। বড়ো সুন্দর মেয়ে হয়েছে। তোর ননদের মতো রূপসী হবে।

    শাহানা কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল। সে খুব লজ্জা পেল। তোমার কান্না থামাও তো ভাবী। তোমার কান্না দেখে আমার নিজেরও চোখে পানি এসে যাচ্ছে।

    নীলু বাবলুকে কোলে নিয়ে আবার খানিকক্ষণ কাঁদল।

    এই বুঝি বাবলু?

    রোকেয়া বললেন, কোল থেকে নামিয়ে দে। কেউ কোলে নিলেই কাঁদে। নীলু নামাল না। শাহানা বলল, এই ছেলেটা কিন্তু ভারি অদ্ভুত। কোনো কথা বলে না। দুপুরবেলা এসেছে, এখন পর্যন্ত কোনো কথা বলে নি। মাঐমা, ও কি রাজশাহীতেও এ-রকম?

    হ্যাঁ গো মা। কথাবার্তা যা বলে, আমার সঙ্গেই বলে। তাও কানে কানে।

    নীলু হাত-মুখ ধুতে গেল। তার এত আনন্দ লাগছে আজি! মনে হচ্ছে পৃথিবীর মতো সুখের জায়গা আর কিছুই নেই। অসংখ্য দুঃখের মধ্যেও এখানে হঠাৎ হঠাৎ এমন সব সুখের ব্যাপার ঘটে যায় যে সব দুঃখ চাপা পড়ে যায়। বাথরুমে দরজা বন্ধ করে নীলু আবার খানিকক্ষণ কাঁদল।

    রোকেয়াকে এ বাড়ির সবাই বেশ পছন্দ করেন। মনোয়ারা নিজেও করেন। অন্য যে কেউ এ বাড়িতে কিছু দিনের জন্যে থাকতে এলেও তিনি বিরক্তি প্রকাশ করেন, শুধু এই একটি ক্ষেত্রে করেন না। এর মূল কারণ হচ্ছে রোকেয়ার স্বভাব। তিনি কথা বলেন কম। গভীর আগ্রহে অন্যের কথা শোনেন। নিজের কোনো মতামত কখনোই জাহির করেন না। যখন কিছু বলেন, এত আন্তরিকতার সঙ্গে বলেন যে, শুনতে বড়ো ভালো লাগে।

    মনোয়ারা দুপুর থেকে তাঁর সঙ্গে সুখ-দুঃখের অনেক কথা বলেছেন। তার মধ্যে একটা বড়ো অংশ ছিল নীলুর বিরুদ্ধে অভিযোগ।

    এই দেখেন না বেয়ান সাহেব, আমার ঘাড়ে মেয়ে দিয়ে সেই সকালে চলে যায় অফিসে, ফেরে সন্ধ্যা পার করে। ঘরে একটা কাজের মানুষ নেই। আমি একা মানুষ। বয়স তো হয়েছে আমার, না কি বলেন?

    কাজের লোক রাখেন না কেন?

    হাগারের পাগায়ের এক জন কাউকে ধরে আনলেই রাখব নাকি? একটাকে রেখেছিলাম—বেশ কাজের। তারপর এক দিন দেখি নাকি ঝেড়ে সেই হাত তার শার্টে মুছে যেন কিছুই হয় নি এ-রকমভাবে টেবিলে ভাত বাড়তে গেল। এক চড় দিয়ে হারামজাদাকে বিদেয় করেছি।

    বিদেয় করলেন কেন? ভালোমতো বুঝিয়ে দিলেই হত।

    আমার এত সময় নেই বেয়ান সাহেব যে, বসে বসে তাকে শেখাব। যে শেখে না নয় বছরে, সে শেখে না। নব্বুই বছরে। আর ঝামেলা কি একটা? শাহানার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে, জানেন তো?

    জ্বি জানি।

    হুটহাট করে ওর শ্বশুরবাড়ি থেকে লোকজন আসছে। ওদের তো আর টেস্ট বিসকিট দিয়ে চা দেওয়া যায় না, কি বলেন?

    না, তা দেবেন কীভাবে?

    কিন্তু দিতে হয়। লজ্জায় আমার মাথা কাটা যায়। সেই দিন শাহানার এক খালাশাশুড়ি এসেছিলেন। একটা মানুষ নেই ঘরে। চা দিতে গিয়ে দেখি চায়ের পাতা নেই। চিন্তা করেন অবস্থা।

    শাহানার বিয়েটা কবে?

    জুলাই মাসের দশ তারিখে মোটামুটিভাবে ঠিক করা হয়েছে। ছেলের ছোট চাচা থাকেন। হাওয়াই। উনি জুলাই মাস ছাড়া আসতে পারবেন না। আর এটা হচ্ছে ওদের বংশের প্রথম কাজ। ওরা সবাইকে নিয়ে করতে চায়।

    তা তো চাইবেই।

    বিরাট খরচের ব্যাপার, বুঝতেই পারছেন। এদিকে হাত একেবারে খালি। কীভাবে কি হবে, কে জানে? মনে হলেই বুক শুকিয়ে-আসে। ভেবেছিলাম এর মধ্যে রফিকের একটা কিছু হবে, কিছুই হচ্ছে না।

    ইনশাআল্লাহ হবে শিগগির।

    আর হয়েছে। মহা অপদার্থ। ওর কিছুই হবে না।

     

    বাবলু তার অদ্ভুত স্বভাবের জন্যে খুব অল্প সময়েই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। হোসেন সাহেবের মতে বাবলুর মতো গভীর ছেলে তিনি এর আগে দেখেন নি। কোনো কথা নেই, কানাকাটি নেই, ঝামেলা নেই। গভীর আগ্রহে সব কিছু দেখছে। সবই অবশ্যি দূর দূর থেকে। মনোয়ারার ধারণা-ছেলেটা হাবা টাইপ। বুদ্ধিসুদ্ধি নেই। কিন্তু কথাটা সম্ভবত ঠিক নয়। ছেলেটির বুদ্ধি ভালো। শুধু ভালো নয়, বেশ ভালো।

    টুনী তার সঙ্গে ভাব করার খুব চেষ্টা করছে। বাবলু আছে তার সঙ্গে, কিন্তু খুব একটা ভাব হয়েছে বলে মনে হয় না। টুনী রান্নাবাটি খেলার সময় বাবলু একটু দূরে বসে থাকে। তাকিয়ে থাকে গভীর মনযোগে। খেলাতে তার অংশগ্রহণ বলতে এইটুকুই। টুনীর সঙ্গে তার কথাবার্তার নমুনা এ রকম–

    টুনী: রান্নাবাটি খেলবে?

    বাবলুঃ (নিশ্চুপ)

    টুনী: আমি হচ্ছি মা। তুমি কী হবে?

    বাবলুঃ (মৃদু হাসি)

    টুনী: বাবা হবে?

    বাবলু মাথা নাড়ল। তার অর্থ কি ঠিক বোঝা গেল না। হ্যাঁ হতে পারে। আবার নাও হতে পারে।

    টুনী: আচ্ছা, তুমি বাবা। এখন অফিসে যাও। সন্ধ্যার সময় অফিস থেকে আসবে।

    বাবলু নড়ল না।

    টুনী: কি, অফিসে যাবে না?

    বাবলুঃ মাথা নাড়ল। কিন্তু এবারও বোঝা গেল না সে হ্যাঁ বলছে কি না বলছে।

    অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, এ বাড়িতে যে একটিমাত্র লোকের সঙ্গে তার কিছু কথাবার্তা হয়, সে শফিক। সে ঘুরেফিরে শফিকের কাছে আসে এবং অত্যন্ত গম্ভীর হয়ে শফিকের পাশে কিছুক্ষণ বসে থেকে চলে যায়। এই অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই দু-একটা কথাবার্তা হয়।

    যেমন, গত রবিবারের কথা ধরা যাক। শফিক শুয়ে ছিল বিছানায়, বাবলু পর্দার আড়াল থেকে কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকে লক্ষ করল। তারপর গটগট করে ঘরে ঢুকে পা বুলিয়ে খাটে বসে রইল। শফিক বলল, কী খবর তোমার বাবলুসাহেব? ভালো আছ?

    বাবলু হ্যাঁসূচক মাথা নাড়ল। সে ভালোই আছে। শফিক বলল, হাত বাড়িয়ে সিগারেটের প্যাকেটটা দাও তো। বাবলু দিল। শফিক সিগারেট ধরিয়ে বলল, তুমি একটা খাবে নাকি বাবলু? বাবলুমাথা নাড়ল-সে খাবে না। শফিক বলল, তুমি সিগারেট খাও না?

    না।

    কেন।

    ভালো লাগে না।

    এমনভাবে বলা, যেন আগে অভ্যাস ছিল। ভালো না-লাগায় বর্তমানে ছেড়ে দিয়েছে, তবে খুব পীড়াপীড়ি করলে সে একটা সিগারেট টেনে দেখতে পারে।

    বাবলুসাহেব, তুমি ছড়া বা কবিতা, এসব কিছু জান?

    হুঁ।

    শোনাও একটা ছড়া। ছড়া শুনতে ইচ্ছা করছে।

    বাবলু উঠে দাঁড়াল। সম্ভবত ছড়া শোনাবার তার তেমন আগ্রহ নেই। ঘর থেকে বের হয়ে গেল নিঃশব্দে। পর মুহুর্তেই পর্দার ওপাশ থেকে বাবলুর ছড়া শোনা গেল–

    হইয়ার বাড়ি গেছিলাম
    দুধ ভাত দিছিল
    দুই ভাত খাইছিলাম

    অদ্ভুত ছড়া! স্বরচিত হবারই সম্ভাবনা। শফিক হাসিমুখে বলল, খুব চমৎকার ছড়া। এস, ভেতরে এস। বাবলু ভেতরে ঢুকল না। শফিককে অবাক করে দিয়ে একই ছড়া দ্বিতীয় বার পর্দার আড়াল থেকে বলল। শফিক হেসে ফেলল। বড়ো মজার ছেলে তো!

    রোকেয়া রাতে ঘুমান শাহানার সঙ্গে। তিনি, বাবলু ও শাহানা। শাহানার খাটটি ছোট। তিন জনে চাপাচাপি হয়। রোজ রাতেই রোকেয়া বলেন, তোমাকে তো মা বড়ো কষ্ট দিচ্ছি। শাহানা লজ্জিত স্বরে বলে, কী যে আপনি বলেন মাত্রমা, আপনাকে আমরা উল্টো কষ্ট দিচ্ছি। আমার কোনোই কষ্ট হচ্ছে না। আপনি থাকায় কত রকম গল্পটল্প করতে পাচ্ছি।

    এই কথাটা খুবই সত্যি। শাহানা অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থেকে গল্প করে। রোকেয়ার চোখ একেক সময় ঘুমে বন্ধ হয়ে আসে, কিন্তু ঘুমুতে পারেন না। শাহানা ডেকে তোলে, মাঐমা ঘুমাচ্ছেন নাকি?

    না গো মা, জেগেই আছি।

    বীণার কথা কি আপনাকে বলেছি?

    বীণা কে?

    আমাদের বাড়িওয়ালা রশিদ সাহেবের মেয়ে। তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর ঘরের মেয়ে। প্রথম স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন বিয়ের এক মাসের মধ্যে। খুব রূপসী ছিলেন। আমরা অবশ্যি দেখি নি, শুধু শুনেছি। মাঐমা ঘুমিয়ে পড়েছেন?

    না।

    তাহলে বীণার কাণ্ডটা শোনেন। কাউকে বলবেন না। আবার।

    না, বলব না।

    আমার কি মনে হয় জানেন মাঐমা? আমার মনে হয়, আনিস ভাইয়ের সঙ্গে ওর কিছু একটা সম্পর্ক আছে।

    আনিস ভাই কে?

    আহা, ঐদিন না বললাম। আপনাকে-আমাদের চিলেকোঠায় থাকেন! ম্যাজিশিয়ান।

    ও হ্যাঁ, বলেছ।

    আপনার সঙ্গে দেখাও তো হয়েছে। ঐ যে, হলুদ রঙের স্যুয়েটার পরা একটি ছেলে এসে আপনাকে পা ছুঁয়ে সালাম করল।

    হ্যাঁ হ্যাঁ, মনে পড়েছে।

    বুঝলেন মাত্রমা, আমার মনে হয় আনিস ভাইয়ের প্রতি বীণার একটা ইয়ে আছে। কীভাবে বুঝলাম জানেন?

    না, কীভাবে বুঝলে?।

    ব্যাপারটা খুবই গোপন। আমি হঠাৎ টের পেয়ে ফেলেছি। আপনি কাউকে বলবেন না।

    না মা, আমি আর কাকে বলব?

    শাহানা খাটে উঠে বসল। আশেপাশে কেউ নেই, তবু সে গল্প করতে লাগল ফিসফিস করে। রোকেয়া লক্ষ করেছেন, মেয়েটা প্রায়ই আনিস ছেলেটির প্রসঙ্গ নিয়ে আসছে। তার গল্পের এক পর্যায়ে ম্যাজিশিয়ান আনিসের কথা থাকবেই। প্রতি রাতেই ভাবেন, সকালবেলা নীলুকে জিজ্ঞেস করবেন। একটি মেয়ে-যার কয়েক দিনের মধ্যেই বিয়ে হচ্ছে, সে রোজ রাতে অন্য একটি ছেলের গল্প। এত আগ্রহ করে করবে। কেন?

    মাঐমা ঘুমিয়ে পড়েছেন?

    না।

    বীণা মেয়েটার ঘটনাটা কেমন লাগল?

    তিনি কিছু বললেন না। হাই তুললেন।

    মাঐমা, কাল আমি আনিস ভাইয়ের কাছে আপনাকে নিয়ে যাব।

    আচ্ছা। এখন ঘুমাও মা। রাত অনেক হয়েছে।

     

    শাহানা এক ছুটির দিনের দুপুরবেলা তাঁকে আনিসের ঘরে নিয়ে গেল। হাসতে হাসতে বলল, আনিস ভাই, মাঐমাকে একটা ম্যাজিক দেখান তো। গোলাপেরটা না। ওটা দেখতে দেখতে চোখ পচে গেছে।

    আনিস খুব উৎসাহের সঙ্গে ব্লেডের একটা খেলা দেখাল। এই খেলাটা শাহানাও এর আগে দেখে নি। হাত দিয়ে সে শূন্য থেকে একটার পর একটা চকচকে ব্লেড বের করতে লাগল। সেসব ব্লেড সে টপাটপ গিলে ফেলতে লাগল। রোকেয়া আঁৎকে উঠলেন। এ কি কাণ্ড! শাহানা তাঁর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল, সত্যি সত্যি খাচ্ছে না। মাঐমা। ব্লেড কেউ খেতে পারে?

    রোকেয়া ভেবে পেলেন না, যে-ব্লেড়গুলি মুখে পুরেছে, সেগুলি গোল কোথায়? সেই রহস্য কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেদ হল। আনিস গিলে ফেলা ব্লেডগুলি একটার পর একটা মুখ থেকে বের করে সামনের টেবিল প্রায় ভর্তি করে ফেলল। রোকেয়ার বিস্ময়ের সীমা রইল না। করে কী-করে এসব! চোখের ধান্ধা নাকি? এই বাচ্চা ছেলে তাঁর মতো বুড়ো মানুষের চোখে ধান্ধা লাগাবে কীভাবে?

    শাহানা রোকেয়ার বিস্মিত মুখভঙ্গি খুব উপভোগ করছে। যেন এই চম ৎকার ম্যাজিকের কিছু কৃতিত্ব তার। এসব তো ভালো লক্ষণ নয়। নীলুর সঙ্গে কথা বলা দরকার। এত চমৎকার একটি মেয়ের জীবনে সামান্যতম সমস্যাও আসা উচিত নয়। তবে নীলু খুব চালাক মেয়ে। কিছু একটা হলে নিশ্চয়ই তার চোখে পড়বে। কিছু নয় হয়তো। কিন্তু এমন মুগ্ধ চোখে মেয়েটি তাকিয়ে ছিল আনিসের দিকে। এই দৃষ্টি ভুল হবার কথা নয়।

    আনিস ছেলেটিকে তাঁর বেশ লাগল। ভদ্র এবং লাজুক। এ-রকম একটা লাজুক ছেলে ম্যাজিশিয়ান হবে কিভাবে? ম্যাজিক দেখানো কি লাজুক ছেলের কাজ? পড়াশোনা ছেড়ে তার ম্যাজিশিয়ান হবার এমন অদ্ভুত শাখাই-বা কেন হল? মাথার উপর বুদ্ধি দেওয়ার কেউ নেই। বুদ্ধি দেওয়ার কেউ থাকলে কি এ-রকম হয়? মা-বাবা বেঁচে থাকলে এই ছেলে নিশ্চয়ই এসব নিয়ে মেতে উঠতে পারত না। রোকেয়ার বড়ো মায়া লাগল।

    তিনি এক সপ্তাহ থাকবেন বলে এসেছিলেন। প্রায় দু সপ্তাহ কেটে গেল। যেতে ইচ্ছা করছে না। জামাইয়ের বাড়িতে এত দীর্ঘ দিন থাকাও যায় না। কিন্তু থাকতে তাঁর খারাপ লাগছে না। ভালোই লাগছে। যার জন্যে আসা, সেই নীলুর সঙ্গে কথা বলার তেমন কোনো সুযোগ পাচ্ছেন না। অথচ নীলুর সঙ্গে তাঁর কিছু জরুরি কথা বলা দরকার। নীলু অফিস থেকে ফেরে ক্লান্ত হয়ে। ফিরেই সংসারের কাজে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। তাকে একা পাওয়াই মুশকিল, কারণ শাহানা তাঁর সঙ্গে ছায়ার মতো লেগে থাকে। কথাগুলি শাহানার সুমিল্লখুনশ্চয়ই বলা যায়, কিন্তু তাঁর বড়ো লজ্জা লাগে। কিন্তু না বলেই-বা উপায় কী?

    রাজশাহী ফিরে যাবার দু দিন আগে তিনি নীলুকে সঙ্গে নিয়ে ছাদে হাঁটতে গেলেন। নীলু বলল, কিছু বলতে চাও নাকি মা?

    হ্যাঁ।

    টাকা পয়সা দরকার?

    না, সেসব কিছু না।

    নিজের মেয়ের কাছেও তিনি ইতস্তত করতে লাগলেন। বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েরা বোধহয় পুরোপুরি নিজের মেয়ে থাকে না। এদের কাছে সহজ হওয়া

    চুপ করে আছ কেন মা, বল।

    বাবলুকে তোর কাছে রাখবি? ওকে নিয়ে বড়ো কস্টে পড়েছি।

    নীলু চুপ করে রইল।

    তারা ছেলেটাকে সহ্যই করতে পারে না। এইটুকু বাচ্চা, অথচ

    দুলাভাই কোনো রকম খোঁজ খবর করে না?

    না।

    দেকতেও আসে না?

    গত মাসের আগের মাসে এক বার ঘণ্টাখানিকের জন্যে এসেছিল।

    ছেলেকে নিয়ে কী করবে না-করবে, কিছুই বলে নি?

    না।

    কেমন মানুষ বল তো মা?

    দু জন বেশ খানিকক্ষণ চুপ করে রইল। ছাদে ঠাণ্ডা বাতাস দিচ্ছে। আনিসের ঘর থেকে ঝনঝন শব্দ হচ্ছে, কোনো ম্যাজিকের প্রাকটিস বোধহয়। রোকেয়া মৃদুস্বরে বললেন, বাবলু একটা কাঁচের জগ ভেঙে ফেলেছিল, সেই অপরাধের শাস্তি কি হয়েছিল শোন।

    এসব শুনতে চাই না, মা।

    তুই জামাইকে বলে দেখ, যদি রাখতে রাজি হয়। শান্তিতে মরতে পারি।

    এখনই মরার কথা আসছে কেন?

    বাঁচব না বেশি দিন।

    বুঝলে কী করে?

    এসব বোঝা যায়। তোর বাবাও বুঝতে পেরেছিলেন।

    নীলু ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল, বাবলু কি পারবে তোমাকে ছেড়ে থাকতে?

    পারবে। ও শক্ত ছেলে। তুই একটু বলে দেখ জামাইকে। নাকি আমি বলব?

    তোমার বলতে হবে না। যা বলার। আমিই বলব। রাজি হতে চাইবে না হয়তো। কে চায় একটা বাড়তি ঝামেলা কাঁধে নিতে!

    নীলু জবাব দিল না। রোকেয়া বললেন, তুই চাকরি করিস, এটা বোধহয় তোর শাশুড়ি পছন্দ করে না।

    নীলু সে কথারও কোনো জবাব দিল না। সে বাবলুর ব্যাপারটি কী করে বলবে, তাই ভাবছিল। রোকেয়া বললেন, চল নিচে যাই। তোর শাশুড়ি বোধহয় খুঁজছেন।

    তুমি যাও মা। আমি থাকি এখানে কিছুক্ষণ। প্রচণ্ড মাথা ধরেছে।

    রোকেয়া নিচে নেমে গেলেন। তার কিছুক্ষণ পরই চায়ের কাপ হাতে শাহানা তাকে খুঁজতে এল। সে অবাক হয়ে দেখল, নীলু কাঁদছে।

    কী হয়েছে ভাবী?

    কিছু হয় নি।

    তোমার জন্যে চা এনেছি।

    চা খাব না, শাহানা।

    একটু খাও ভাবী, আমি নিজে বানিয়েছি।

    বলতে বলতে সেও কেঁদে ফেলল। কাউকে কাঁদতে দেখলেই তার কান্না পেয়ে যায়। নীলু অবাক হয়ে বলল, তোমার আবার কী হল?

    শাহানা ফোঁপাতে লাগল। কিছু বলল না।

    বাবলুকে রেখে রোকেয়া রাজশাহী চলে গেলেন। মনে করা হয়েছিল বাবলু। খুব কান্নাকাটি করবে, সে তেমন কিছুই করল না। রোকেয়া যখন বললেন, যাই বাবলু?

    বাবলু ঘাড় কাত করল। যেন যাবার অনুমতি দিচ্ছে।

    কাঁদবে না তো?

    বাবলু মাথা নাড়ল। সে কাঁদবে না।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএকটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    একটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }