Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প477 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৩. পুরানো ঢাকার ঘিঞ্জির মধ্যে

    পুরানো ঢাকার ঘিঞ্জির মধ্যে যে এমন একটি বিশাল এবং আধুনিক ধরনের বাড়ি থাকতে পারে, সেটা রফিকের কল্পনাতেও আসে নি। সে গেটের ভেতরে পা দেবে কি দেবে না, বুঝতে পারল না। এ জাতীয় বাড়িতে কুকুর থাকবেই। এসব কুকুররা আবার কোনো একটা বিশেষ ইন্দ্ৰিয়ের কারণেই বোধহয় মানুষদের মধ্যে যে শ্রেণীর একটা ব্যাপার আছে, সেটা চমৎকার বুঝে ফেলে। কোনো আগন্তুক তাদের মুনিবের শ্রেণীর চেয়ে নিম্ন শ্রেণীর হলেই কামড়াবার জন্যে ছুটে আসে।

    বাড়ির গেট বন্ধ। তবে গেটের ভেতরও আবার ছোট গেট আছে, মাথা নিচু করে যার ভেতর দিয়ে ঢুকতে হয়। রফিক তাই করল এবং আশ্চর্য, সত্যি সত্যি একটি কুকুরের ডাক শোনা গেল! ভয়াবহ কিছু নয়, মৃদু গর্জন। রফিক চট করে মাথাটা টেনে নিল। মৃদু। গেটের দারোয়ান বলল, ও কিছু করবে না। আসেন। কাকে চান? বড়োলোকের বাড়িতে ঢোকার এই আরেক ফ্যাকড়া-জায়গায়জায়গায় জবাবদিহি করে ঢুকতে হবে। গেটে একবার বলতে হবে। বাড়িতে বেল টিপলে দ্বিতীয় এক ব্যক্তি আসবে, তাকেও বলতে হবে। তারপর তাকে বসানো হবে, এবং দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হবে। বড়োলোকেরা চট করে দেখা দেন না।

    কার কাছে যাবেন?

    এই দারোয়ানটির বাড়ি বোধহয় রাজশাহী-টাজশাহীর দিকে হবে। শুদ্ধ ভাষায় কথা বলছে। চেহারাও মাই ডিয়ার টাইপের। রফিক হাসিমুখে বলল, রহমান সাহেব কি আছেন?

    জ্বি-না, উনি নাই। সন্ধ্যার আগে ফিরবেন না।

    তাঁর মেয়ে কি আছে?

    জ্বি, আপামনি আছেন। যান, সোজা চলে যান। দরজার বা দিকে কলিং বেল আছে। কুকুর কিছু করবে না।

    রফিক খুব সহজ ভঙ্গিতে হাঁটবার চেষ্টা করল। কিন্তু কুকুরটা আসছে সঙ্গে সঙ্গে। বিশাল পর্বতের মতো একটা জন্তু। তার চোখে গভীর সন্দেহ। বোধহয় টের পেয়ে ফেলেছে, এই লোক তাদের সমাজের না। এবং এই লোকের পকেটে আছে মাত্র দুটি পাঁচ টাকার নোট, যার একটি ছেঁড়া বলে কেউ নিতে চাচ্ছে না। গত এক সপ্তাহে কয়েক বার ভিড়ের মধ্যে বাস কনডাকটারের হাতে গছিয়ে দেবার চেষ্টা করা হয়েছে। কাজ হয় নি।

    রফিক বেল টিপে দাঁড়িয়ে রইল। কুকুরটা বড়ো বিরক্ত করছে। তাকে শুকে শুকে দেখছে। সে বহু কষ্টে কুকুরটার পেটে প্রচণ্ড একটা কিক দেবার ইচ্ছা দমন করল। কলিং বেল নষ্ট কিনা বোঝা যাচ্ছে না। কারোর কোনো সাড়া নেই। রফিক দ্বিতীয় বার বেল টিপল।

    তাকে অবাক করে দরজা খুলল শারমিন। শারমিনকে আজ অন্য দিনের চেয়েও অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। নিজের বাড়িতে আছে বলেই হয়তো চেহারায় কোনো কাঠিন্য নেই। চুল বাঁধা নয়। পিঠময় ছড়ানো। সাধারণ একটা সুতির শাড়ি এলোমেলো করে পরা। রফিক বলল, চিনতে পারছেন তো?

    চিনতে পারব না কেন? আসুন, ভেতরে আসুন।

    রফিক হড়বড় করে বলল, আগামসি লেনে এসেছিলাম একটা কাজে। তারপর ভাবলাম। এত কাছে যখন এসেছি, তখন বরং দেখেই যাই।

    ভালো করেছেন। আমি যে এখানে থাকি, সেটা জানলেন কীভাবে?

    রফিক জবাব দিল না। মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চারদিক দেখতে লাগল। বসার ঘরটা তেমন জমকাল নয়, বরং বলা চলে বেশ সাধারণ। বেতের তিনটি সোফা। পাশে ছোট ছোট কফি টেবিল। কার্পেটটিও বিবর্ণ। বাড়ির সঙ্গে খাপ খায় না। শারমিন হাসিমুখে বলল, এত মন দিয়ে কী দেখছেন?

    আপনাদের বসবার ঘরটা আরো জমকাল হবে ভেবেছিলাম।

    এটা ড্রইং রুম না। এটা হচ্ছে এস্ট্রি রুম। বসবার ঘরে ঢোকবার আগের ঘর।

    বলেন কি!

    ব্রিটিশ আমলের বাড়ি। ওদের মতো করে বানানো হয়েছে। এমন কি বসবার ঘরে একটা ফায়ার প্লেস পর্যন্ত আছে।

    মাই গড!

    আসুন, আপনাকে দেখাই।

    বসবার ঘরে ঢুকে রফিকের মন খারাপ হয়ে গেল। কোনো এক জন মানুষের এত বেশি টাকা থাকবে এবং অন্য এক জনের পকেটে থাকবে দুটি পাঁচ টাকার নোট, যার একটি ছেঁড়া বলে চালানো যাচ্ছে না।

    শারমিন বলল, এবার পছন্দ হয়েছে বসবার ঘর?

    তাহলে মুখ এমন গম্ভীর করে আছেন কেন? ক্লাসে তো আপনার কথার যন্ত্রণাতে সবাই অস্থির!

    রফিকে ফ্যাকাসেভাবে হাসল।

    বসুন, দাঁড়িয়ে আছেন কেন?

    রফিক বসল। বসতে বসতে বলল, আপনারা এতটা বড়োলোক, আমি বুঝতে পারিনি।

    বুঝতে পারলে আসতেন না?

    রফিক সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলল, আপনার এখানে সিগারেট খাওয়া যাবে?

    যাবে না কেন, এটা তো আর মসজিদ না। খান। তারপর বলুন কোনো কাজে এসেছেন, না এমনিতেই এসেছেন?

    শারমিনের মুখ হাসি—হাসি। রফিক বেশ অবাক হল। এই মেয়েটি ক্লাসে প্রায় কোনো কথাই বলে না। ছেলেরা কেউ কাছে গেলে চোখ-মুখ কঠিন করে রাখে। অথচ এখন কেমন সহজ-স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথাবার্তা বলছে। আরেকটি জিনিস দেখেও রফিক অবাক হল, শারমিনের পায়ে স্পঞ্জের স্যাণ্ডেল। সাত-আট টাকায় যে-সব পাওয়া যায়, সে-সব। তার ধারণা, এ-রকম বাড়িতে যারা থাকে, তারা ঘরে সাধারণত জয়পুরী ঘাসের স্যাণ্ডেল পরে। কি শারমিন বলল, চুপ করে আছেন কেন? বলুন, কোনো কাজে এসেছেন কি?

    না, কোনো কাজে আসি নি।

    গল্প করবার জন্যে এসেছেন?

    হ্যাঁ।

    বেশ, গল্প করুন, এমন স্টিফ হয়ে আছেন কেন? আমার মনে হয় এই ড়ুইং রুমটায় আপনি ঠিক ইজি ফিল করছেন না। আমার নিজের একটি বসার ঘর আছে, আমি আমার নিজের মতো করে সাজিয়েছি। চলুন, ওখানে বসি। এই ঘরটা আমার নিজেরো ভালো লাগে না, কেমন যেন স্টাফি মনে হয়।

    শারামিনের নিজের বসবার ঘরে ঢোকবার সঙ্গে সঙ্গে ট্রলিতে করে একটি কাজের মেয়ে চা নিয়ে এল। চমৎকার একটি রূপোর থালায় ফুট কেক। অন্য একটি প্লেটে শিউলি ফুলের মতো ধবধবে সাদা সন্দেশ।

    এই সন্দেশ ঘরে তৈরী। আমাদের রমিজ ভাইয়ের করা, এক বারু খেলে সারা জীবন মনে থাকবে। এর একটি নাম আছে। নামটি আমার দেয়া–গোলাপ বাহার। সন্দেশে গোলাপের গন্ধ আছে।

    খাবার জিনিসে ফুলের গন্ধ আমার ভালো লাগে না। ফুলের গন্ধ থাকবে ফুলে। সন্দেশে থাকবে সন্দেশের গন্ধ।

    শারমিন খিলখিল করে হেসে উঠল। এত সুন্দর হয় মানুষের হার্সি! রফিক তাকিয়ে রইল মুগ্ধ চোখে।

    আপনি খুব ভালো দিনে এসেছেন। আজ আমার জন্মদিন! এই কেক অবশ্যি জন্মদিনের কেক না। জন্মদিনের কেক বাবা সন্ধ্যাবেলা নিয়ে আসবেন। আপনি নিশ্চয়ই সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকবেন?

    না, আমি এখন উঠব।

    রফিক উঠে দাঁড়াল।

    এখনই উঠবেন কি! চা তো শেষ করেন নি।

    অনেক দূর যেতে হবে।

    কত দূর?

    আমরা থাকি কল্যাণপুর। শহরের বাইরে।

    শারমিন মুখ টিপে বলল, ফার ফ্রম দি মেডিং ক্রাউড?

    না, সে-রকম কিছু না। ঐদিকে বাড়িভাড়া কম। আচ্ছা, যাই তাহলে?

    এক মিনিট দাঁড়ান। আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি, আপনাকে পৌঁছে দেবে।

    পৌঁছে দিতে হবেনা।

    দাঁড়ান তো। এ-রকম করছেন কেন?

    রফিককে পৌঁছে দেবার জন্যে চমৎকার একটি লাল রঙের গাড়ি বের হল। রফিক বিব্রত বোধ করতে লাগল।

    শারমিন হাসিমুখে বলল, আবার যদি কখনো আপনার বন্ধুর বাড়িতে আসেন, তাহলে এদিকে আসতে পারেন। আমি খুশিই হব। কেউ কখনো আসে না।

    আসে না কেন?

    খুব যাদের টাকা পয়সা আছে, তাদের কেউ পছন্দ করে না। আমার বন্ধুবান্ধবরা এক বার এসে দ্বিতীয় বার আসতে চায় না। আজ আমার জন্মদিন, অথচ কাউকে আমি আসতে বলি নি। আপনি হঠাৎ করে এলেন।

    রফিক ইতস্তত করে বলল, আপনার জন্যে একটা বই এনেছিলাম।

    শারমিন অবাক হয়ে বলল, আমার জন্যে! কেন?

    রফিক জবাব দিতে পারল না। পলিথিনের ব্যাগে মোড়া বইটি এগিয়ে দিল।

    একটা কবিতার বই–এই বসন্তে। সবচে অবাক কাণ্ড হচ্ছে, বইটিতে লেখা—শারমিনের জন্মদিনে। তার মানে, জন্মদিনের কথাটা রফিক জানত। রফিক বলল, যাই শারমিন।

    শারমিন কিছু বলল না। সে বড়োই অবাক হয়েছে এবং তার কেমন যেন লজ্জা লজ্জাও করছে। কোথায় যেন সূক্ষ্মতাবে মন খারাপ হবার মতো একটা ব্যাপার ঘটে গেছে। সে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল।

    এই ছেলেটিকে সে পছন্দ করে। দারুণ হুজুগে ছেলে। সারাক্ষণই একটা-না–একটা হৈচৈ নিয়ে আছে। গত মাসে সে হঠাৎ ঘোষণা করল-এটা হচ্ছে সাম্যের যুগ। কবি নজরুলের ভাষায় পুরুষ-রমণীতে কোনো ভেদাভেদ নেই। কিন্তু এই আমাদের ক্লাসেই ব্যাপারটা উল্টো। এ ক্লাসের সব কয়টা মেয়ে প্রথম দিকের দুসারি চেয়ারে এসে বসবে। এই দুসারি ওদের জন্য রিজাৰ্ভড। এখন থেকে এটা বাতিল। মেয়েদের জন্যে এখন আর আলাদা জায়গা থাকবে না। যে আগে আসবে, সে আগে বসবে।

    ক্লাশের সব ছেলের হৈহৈ করে তাকে খুব সাপোর্ট দিল। কাজের সময় সবাই পিছিয়ে গেল। শুধু রফিককে দেখা গেল মেয়েদের মাঝখানে বইখাতা নিয়ে গম্ভীর হয়ে বসে আছে। স্যার অবাক হয়ে বললেন, কী ব্যাপার, তুমি এদের মধ্যে কেন? ক্লাসে দারুণ হাসিাহসি শুরু হয়ে গেল। স্যার বিরক্ত হয়ে বললেন, যাও যাও, নিজের জায়গায় গিয়ে বস। সবার চেষ্টা কীভাবে মেয়েদের বিরক্ত করা যায়। এটা ভালো না। মেয়েদের দিকে মন দেবার সময় অনেক পাবে, এখন পড়াশোনার দিকে মন দাও। আবার হাসির ঝড় উঠল।

    আবার এক দিন সে ডায়াসে উঠে গম্ভীর গলায় এক বক্তৃতা দিয়ে বসল, আমরা ছেলেদের তুই তুই করে বলি অথচ মেয়েদের বলি আপনি করে। আজ এই বারই সেপ্টেম্বরের সকালবেলা আমি ঘোষণা করছি এখন থেকে আমরা মেয়েদেরও তুই করে বলব।

    ক্লাসে নাসরিন হচ্ছে সবচে গম্ভীর ধরনের মেয়ে। মেয়ে না বলে বলা উচিত মহিলা। দুটি বাচ্চা আছে তার। রফিক নাসরিনের কাছে গিয়ে বলল, নাসরিন, তুই কেমন আছিস? নাসরিন রেগেমেগে অস্থির। চোখ-মুখ লাল করে বলল, আমার সঙ্গে ফাজলামি করবেন না। মেয়েদের তুই ডাকার ব্যাপারে এখানেই চাপা পড়ে গেল। এক ধমকেই উৎসাহ মিইয়ে গেল রফিকের। কত বিচিত্র ধরনের মানুষই না আছে!

    শারমিন অলস ভঙ্গিতে বাড়ির পেছনের দিকে রওনা হল। সেখানে তিনটা বড়ো বরই গাছ আছে। রোদের মধ্যে হাঁটতে ভালো লাগছে। বিশাল এ্যালসেশিয়ানটি আসছে তার পেছনে পেছনে। শারমিন তার দিকে তাকিয়ে বলল, হ্যালো মাটি সাহেব? কুকুরটি লেজ নাড়াল। চমৎকার একটি সকাল, কি বল মাটি? মাটি মাথা নাড়াল। যেন সে শারমিনের কথার অর্থ বুঝতে পারছে। চমৎকার একটি সকালে সম্পূৰ্ণ অকারণে মাঝে মাঝে মানুষদের মন খারাপ হয়। তাদের কিছুই ভালো লাগে না। তোমাদেরও কি সে-রকম হয়?

    মাটি সাহেব লেজ নাড়ােল। যার কোনো অর্থ বোঝা গেল না। কুল গাছে হেলান দিয়ে পা ছড়িয়ে বসে থাকলে কেমন হয়? শারমিন তাই করল। মাটি সাহেবের বসে থাকার পরিকল্পনাটা মনে ধরল না। সে রওনা হল গেটের দিকে।

    গাছ ঝেঁপে কুল হয়েছে। পাকা কুলের গন্ধে মম করছে চারদিক। খাবার লোক নেই। প্রকাণ্ড এই বাড়িতে তারা দুটিমাত্র মানুষ—সে এবং বাবা। চার-পাঁচ জন কাজের মানুষ আছে, ড্রাইভার এবং দারোয়ান আছে, কিন্তু ওদের থাকার জায়গা ভিন্ন। গেটের কাছে তাদের জন্যে বড় একটা ঘর তৈরি আছে।

    সব কিছুই মানুষের অভ্যেস হয়ে যায়। এই বিরাট বাড়িতে কত দীর্ঘ দিন ধরেই তারা দু জন থাকছে। খুব ছোটবেলায় সে ঘুমোত। বাবার সঙ্গে। কোনো কোনো রাতে ভয়ানক সব স্বপ্ন দেখে জেগে উঠে কাঁদত। বাবা বলতেন, এই তো আমি, তোমার হাত ধরে আছি। কোনো ভয় নেই। স্বপ্ন দেখেছ?

    হুঁ।

    কী স্বপ্ন? ভূতের স্বপ্ন। দূর বোকা মেয়ে, ভূত আছে নাকি পৃথিবীতে? ভূত-প্রেত বলে কিছু নেই।

    বাতি জ্বালিয়ে রাখ, বাবা।

    বাবা বাতি জ্বলিয়ে দিতেন।

    বাথরুম করব।

    তিনি তাকে কোলে করে বাথরুমে নিয়ে যেতেন।

    শারমিনের প্রায়ই মনে হয়। পৃথিবীর কোনো বাবা বোধহয় তার বাবার মতো নয়। কোনো বাবা তাঁর মেয়েকে এতটা ভালোবাসেন না। সেই কবে শারমিনের মা মারা গেলেন। বাবা তখন যুবক মানুষ, সাতাশ-আঠশ বছর বয়স। কিন্তু মেয়ের কষ্ট হবে এই ভেবে দ্বিতীয় বার বিয়ে করলেন না।

    তাঁর অর্থ বিত্ত কোনো কিছুর অভাব ছিল না। ইচ্ছা করলেই তিনি মেয়ের দেখাশোনার জন্যে কয়েক ডজন কাজের লোক রাখতে পারতেন। তাও তিনি করেন নি। মেয়ের প্রতিটি প্রয়োজন নিজে মেটাতে চেষ্টা করেছেন।

    রোজ নিজে তাকে স্কুলে নিয়ে যেতেন। ক্লাস শেষ হলে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতেন। ম্যাটিক ক্লাস পর্যন্ত সন্ধ্যার পর পড়া দেখিয়ে দিয়েছেন। মায়ের তালোবাসার অভাব তিনি একা মেটাতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কিছু কিছু অভাব আছে, যা কিছুতেই বোধহয় মেটে না। চাপা পড়ে থাকে শুধু।

    আফামনি! আপনের টেলিফোন।

    কে করেছে?

    বড়ো সার।

    শারমিন উঠে গিয়ে টেলিফোন ধরল।

    কি করছিলে মা-মনি?

    কিছু না। কুল গাছের নিচে বসে রোদ পোহাচ্ছিলাম।

    বন্ধুবান্ধব কাউকে আসতে বলেছ?

    না বাবা। আমরা দুজনেই জন্মদিন করব। তুমি কখন আসবে?

    সাতটার মধ্যে এসে পড়ব। খুব বেশি দেরি হলে সাড়ে সাত।

    না, এত দেরি করলে চলবে না। তোমাকে আসতে হবে ছটার মধ্যে। পজিটিভলি?

    আজ রাতে কি আমরা বাইরে খাচ্ছি?

    না, ঘরেই খাবে। আমি রান্না করব বাবা।

    চমৎকার! কী রান্না হচ্ছে?

    তা বলব না। একটা সারপ্রাইজ আছে।

    খাওয়া যাবে তো মা?

    যাবে। যাবেনা কেন?

    রহমান সাহেব হাসতে লাগলেন। শারমিন বলল, তুমি কিন্তু ছটার মধ্যে আসবে।

    হ্যাঁ, আসব। আর শোন মা, আমেরিকায় একটি কল বুক করে সাব্বিরের সঙ্গে কথা বল।

    শারমিন লজ্জিত স্বরে বলল, কেন?

    জন্মদিন উপলক্ষে কথা বলা!

    সে তো উনি আমাকে করবেন। আমি কেন করব?

    তাও তো ঠিক। তুমি আসছতো বাবা সন্ধ্যা ছাঁটার মধ্যে?

    হ্যাঁ।

    আমি কিন্তু পাঁচটার সময় আবার তোমাকে টেলিফোন করব। মনে করিয়ে দেবার জন্যে।

    ঠিক আছে, মনে করিয়ে দিও।

    শারমিন টেলিফোন রেখে দিল, এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আমেরিকায় একটা কল বুক করল। সেখানে এখন বাজে রাত বারটা। সাব্বিরকে পাওয়া যাবার কথা। শারমিন একবার ভাবল নিজের পরিচয় না দিয়ে খানিকক্ষণ কথাবার্তা বললে কেমন হয়।

    হ্যালো। কে?

    গলা শুনে বুঝতে পারছেন না কে?

    ও, শারমিন, কী ব্যাপার?

    কোনো ব্যাপার নেই। আপনার গলা এমন লাগছে কেন?

    কেমন লাগছে?

    ভাঙা ভাঙা। মনে হচ্ছে কোনো কারণে খুব কান্নাকাটি করেছেন।

    কী যে পাগলের মতে কথা বল! শারমিন খিলখিল করে হাসল। হাসি থামিয়ে গম্ভীর গলায় বলল, আপনাকে লিখেছিলাম কয়েকটা সায়েন্স ফিকশন পাঠাতে, আপনি পাঠিয়েছেন ভূতের উপন্যাস।

    স্টিফান কিং পাঠিয়েছি। খুব ভালো লেখা।

    ভূতের গল্প পড়ে, শেষে রাতে ভয়ে মারি আর কি! আপনি সায়েন্স ফিকশন পাঠাবেন। এসিমভের নতুন কোনো বই।

    ঠিক আছে। আর শোন, তোমাকে যে একটা জিনিস পাঠাতে বলেছিলাম, সেটা তো পাঠালে না।

    শারমিন লজ্জায় লাল হয়ে গেল।

    ঐ সব পাঠানো যাবে না।

    যাবে না বললে হবে না। পাঠাবে।

    শারমিন কথা ঘোরাবার জন্যে বলল, আজ কিন্তু আমার জন্মদিন।

    তাই নাকি? মাই গড, আমার মনেই ছিল না।

    তা থাকবে কেন? আচ্ছা, রেখে দিচ্ছি।

    না, রাখবে না। অনেক কথা আছে।

    শারমিন হাসল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএকটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    একটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }