Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প477 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৪. শাহানার স্যার

    শাহানার স্যার এসেছেন। শাহানা অনেকক্ষণ ধরেই উশখুশ করছে। ভাবীর এসে কাছেই কোথাও বসবার কথা। কিন্তু ভাবী আসছে না। স্যার ভারি গলায় বললেন, এত ছটফট করছ, কেন, কি হয়েছে?

    কিছু হয়নি স্যার।

    তাহলে মন দিয়ে শোনা কি বলছি। এ কিউব প্লাস বি কিউব…

    স্যার, আমি একটু আসছি।

    শাহানা উঠে রান্নাঘরে গেল। নীলু ভাত চড়িয়েছে। সাধারণত সন্ধ্যার আগেই ভাত হয়ে যায়, আজ দেরি হচ্ছে। বাসাবো থেকে নীলুর এক খালাশাশুড়ি এসেছিলেন। মাত্র কিছুক্ষণ আগে গেলেন।

    ভাবী।

    কী ব্যাপার?

    একটু এসে বস না ভাবী। স্যার এসেছেন।

    ভাত চড়িয়েছি। শাহানা, বাবাকে বল।

    বাবা রশীদ সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে গেছেন। স্যারকে বলে দিই। আজ পড়বে না?

    ঠিক আছে। তোমার যদি পড়তে ইচ্ছা না করে, বলে দাও।

    শাহানা দাঁড়িয়ে রইল।

    তুমি এসে বলে দাও না ভাবী।

    আমি কেন?

    শাহানা ইতস্তত করে তুলল, বলে দাও আমি আর তাঁর কাছে পড়ব না। আজও সে-রকম হয়েছে ভাবী।

    ভুলে হয়। সামান্য জিনিসটাকে এত বড়ো করে দেখছ কেন?

    শাহানা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল, ভুলে না ভাবী।

    ঠিক আছে। চল, বলব ওনাকে।

    আমি যাব না। তুমি এক গিয়ে বলবে।

    আর পড়াতে হবে না শুনে মাস্টার সাহেব কিছু বললেন না। নীলুর ধারণা ছিল জিজ্ঞেস করবেন–কেন? কিন্তু তিনি কিছু করলেন না। আপনার পাওনা টাকাটা আপনি সামনের মাসের তিন তারিখে এসে নিয়ে যাবেন।

    মাস্টার সাহেব উঠে দাঁড়ালেন।

    বসুন, চা খেয়ে যান।

    মাস্টার সাহেব সঙ্গে সঙ্গে বসলেন। শাহানা নিজেই চা এনে দিল। চায়ের সঙ্গে দেবার মতো কিছু ছিল না। শুধু চা দিতে শাহানার লজ্জা লাগছিল। মাস্টার সাহেব খুব আগ্রহ করে চা খেলেন। মৃদু স্বরে বললেন, যাই শাহানা, মন দিয়ে পড়বে।

    শাহানার মন খারাপ হয়ে গেল। এমন এক জন ভাল টিচার, কিন্তু কী বাজে একটা স্বভাব! নিশ্চয়ই আরো অনেক জায়গা থেকে তাঁকে এভাবে বিদায় নিতে হয়েছে।

    শাহানার আজ আর বই নিয়ে বসতে ইচ্ছা করছে না। রান্নাঘরে গিয়ে ভাবীর সঙ্গে গল্প করতে ইচ্ছা হচ্ছে, কিন্তু এখন সেখানে মা আছেন।

    রান্নাঘরে গেলেই মাস্টার চলে গেল কেন সেই প্রশ্ন উঠবে। শাহানার ঠিক এই মুহূর্তে কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে ইচ্ছা করছে না। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনল, মা চড়া গলায় চেঁচাচ্ছেন—

    মনটা কত ছোট দেখ বৌমা। বাবুর মুখ দেখে দশটা টাকা দিয়ে গেল, তাও ময়লা একটা নোট। হাতে নিলে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হয়।

    বাদ দেন মা।

    কেন, বাদ দেব কেন? তার নাতনীর মুখ দেখে দেড় শ টাকা খরচ করে আঙটি দিয়েছি। তার ছোট মেয়ের বিয়ের সময় তিন শ টাকা খরচ করে জামদানি দিয়েছি। আমার টাকা কি গাছে ফলে? বল বৌমা, গাছে ফলে?

    সবাই টাকা খরচ করতে পারে না, মা।

    বাজে কথা বলবে না। খরচ ঠিকই করতে পারে। নিজের বেলায় পারে। পঁচিশ বছর ধরে দেখছি তো। নাড়িনক্ষত্র জানি। যাও বৌমা, ঐ দশ টাকাটা তুমি রাস্তায় ফেলে দিয়ে আস, আমার আলমারির উপর আছে।

    বাদ দেন মা।

    তোমাকে ফেলতে বলেছি ফেলে দিয়ে আসে। ঐ দশ টাকা নিয়ে আমি স্বগে যাব না।

    নীলু বেরিয়ে আসতেই শাহানা ফিসফিস করে বলল, আমাকে দিয়ে দিও ভাবী।

    এস, নিয়ে যাও। আর একটু বাবুর কাছে গিয়ে বস, এক্ষুণি দুধ খাবার জন্যে কাঁদবে।

    বাবুর পাশে শফিক বসে ছিল। গভীর মনযোগে সে ফাইল দেখছে। আজ সারাটা দিন তার নষ্ট হয়েছে। হিসাবে কোথাও জট পাকিয়ে গেছে। হিসাবপত্র দেখার দায়িত্ব মণীন্দ্রনাথের। সে ছুটি নিয়ে বাড়ি গেছে।

    ভাইয়া, আসব ভেতরে?

    আয়।

    কী করছ?

    একটা ফাইল দেখছি।

    বসি একটু?

    শফিক অবাক হয়ে বলল, বোস। জিজ্ঞেস করছিস কেন?

    তোমাকে কেমন জানি ভয়-ভয় লাগে ভাইয়া। সারাক্ষণ এমন গম্ভীর হয়ে থাক।

    শফিক হাসল।

    অফিসে সবাই নিশ্চয়ই তোমাকে ভয় পায়। পায় না?

    পায় বোধহয়। জানি না।

    তুমি মাস্টার হলে ছাত্রদের অবস্থা কাহিল হয়ে যেত ভাইয়া।

    শফিক ফাইলে মন দিল। হিসাবের জটটা না-খুললে কিছুতেই আর মন বসবে না। মণীন্দ্র মহা ঝামেলা লাগিয়ে রেখে গেছে।

    ভাইয়া, একটা কথা শোন।

    পরে শুনব। কাজটা শেষ করে নিই।

    কথা না-বলে চুপচাপ বসে থাকা মুশকিল। শাহানা উশখুশ করতে লাগল।

    কাজ শেষ করতে কতক্ষণ লাগবে ভাইয়া?

    শফিক, জবাব দিল না। শাহানা ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল।

    রান্না শেষ হতে রাত নটা বাজল। নীলু এসে বলল, শাহানা, চট করে যাও তো, আনিসকে বলে আসা খাবার দেওয়া হয়েছে।

    শাহানা অবাক হয়ে তাকাল।

    আমি আজ রাতে ওকে খেতে বলেছি।

    কেন ভাবী?

    এমনি বলেছি। খেতে বলার জন্যে আবার বিরাট কোনো কারণ লাগবে নাকি? যাও, বলে আস।

    সিঁড়ি দিয়ে একা একা উঠতে ভয় লাগবে ভাবী। তুমি দরজা খুলে একটু দাঁড়িয়ে থাক।

    আনিস চিলেকোঠার ঘরে থাকে। খাওয়াদাওয়া করে বাড়িওয়ালা রশিদ সাহেবের বাসায়। রশিদ সাহেবের সঙ্গে তার ক্ষীণ একটি আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে। সে সম্পর্ক মোটেই জোরালো নয়। এক সময় আশ্রয় দিয়েছিলেন। চেষ্টাচরিত্র করে সিটি কলেজে ভর্তিও করিয়েছেন। গত বৎসর আই. এ. ফেল করেছে এবং পড়াশোনা করবে না বলে জানিয়েছে। এ-রকম এক জনকে ঘরে রেখে পোষার কোনো মানে হয় না। রশিদ সাহেব এখন প্রাণপণ চেষ্টা করছেন আনিসকে ঝেড়ে ফেলতে। পারছেন না। আনিসের এ জায়গা ছেড়ে নতুন কোথাও যাবার জায়গা নেই! জোর করে তাকে বের করে দেবার মতো নিষ্ঠুরতা তিনি দেখাতে পারছেন না।

    তাছাড়া ছেলে হিসেবে আনিসের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তাঁর নেই। অত্যন্ত ভদ্র ছেলে। চেহারা ভালো। আচার-ব্যবহার ভালো। চায়ের দোকান বসে বিড়ি ফোঁকে না। মেয়েদের দেখে শিস দেয় না। রশিদ সাহেবের মনে একটা গোপন পরিকল্পনা ছিল, আনিসকে পড়াশোনা করিয়ে নিজের কাছেই রেখে দেবেন। বীণার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেবেন। মেয়ে—জামাই তাঁর কাছেই থাকবে।

    রশিদ সাহেবের স্ত্রী সেই পরিকল্পনা একেবারেই পছন্দ করেন নি। স্বামীর নির্বুদ্ধিতায় রেগে অস্থির হয়েছেন। তাঁর মেয়ে কালো নয়, কানা-খোঁড়া নয়, তাকে হাভাতে ঘরের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে হবে? দশটা-পাঁচটা মেয়েও তার না। একটিমাত্র মেয়ে। তার বিয়ে হবে চাকর শ্রেণীর একটি ছেলের সাথে? দেশে কি ডাক্তার ইনজিনিয়ারের অভাব হয়েছে, না তাদের সহায়-সম্পদ নেই? ঢাকা শহরে তিনটি বাড়ি, গ্রামের সম্পত্তি সবই তো তাঁর মেয়েই পাবে।

    আনিসের সাথে তাঁর সম্পর্ক শুরু থেকেই খারাপ ছিল। ইদানীং তিনি তাকে সহ্য করতে পারছেন না। কারণটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম। তিনি লক্ষ করেছেন, আনিস খেতে বসলে বীণা এটা-সেটা তার পাতে তুলে দিতে চেষ্টা করে।

    তিনি এক দিন বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, ওর খাওয়ার সময় তোর থাকার দরকার কী? তুই কেন থালাবাটি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করিস?

    বীণা অবাক হয়ে বলেছে, একটা লোক একা একা বসে খাবে?

    এক একা কোথায়? আকবরের মা আছে, রহিম আছে। তোর যাবার দরকারটা কী?

    অসুবিধা কী?

    অসুবিধা আছে। এতে লাই দেওয়া হয়। লাই দিলেই এরা মাথায় উঠবে। খবরদার, তুই যাবি না।

    বীণা এর পরেও গিয়েছে। তিনি মনের মধ্যে একটা ভয় অনুভব করেছেন। সমন্বয়েসী দুটি ছেলেমেয়ের ঘন ঘন দেখা-সাক্ষাৎ হওয়া ঠিক না। বয়স খুব খারাপ জিনিস। একটা বয়সে সবাইকে ভালো লাগে।

     

    আনিস ঘর অন্ধকার করে বসে ছিল। শাহানা বাইরে থেকে ভয়-পাওয়া গলায় ডাকল, আনিস ভাই?

    এস শাহানা।

    ঘর অন্ধকার কেন?

    বাল্ব ফিউজ হয়ে গেছে।

    আপনি আসুন, ভাত দেওয়া হয়েছে।

    ভেতরে এস শাহানা। বাইরে দাঁড়িয়ে আছ কেন?

    না, আমি ভেতরে আসব না।

    কেন?

    শাহানা জবাব দিল না। আনিস বের হতেই শাহানা বলল, দরজা লাগাবেন না?

    অন্ধকারে তালাচাবি খুঁজে পাব না। থাকুক। চোর আমার ঘরে আসবে না। নেবার মতো কিছু নেই।

    সিঁড়ি অন্ধকার। এর মধ্যে কে আবার পানি ফেলে রেখেছে। শাহানা খুব সাবধানে পা ফেলছে। একবার পিছলে পড়ার মতো হল। আনিস বলল, আমার হাত ধর শাহানা। পিছলে পড়ে হাত ভাঙবে। শাহানা কঠিন স্বরে বলল, হাত ধরতে হবে না। আমি ভালোই দেখতে পাচ্ছি। আনিস হাসল। অন্ধকারে তার হাসি দেখা গেল না।

    আনিসকে খেতে বলা হয়েছে শুনে মনোয়ারা অত্যন্ত বিরক্ত হলেন। হুঁট করে কাউকে খেতে বলার অর্থটা কী? কোনো উপলক্ষ-টুপলক্ষ থাকলেও একটা কথা। হঠাৎ তার মার্জি হল, ওমনি খেতে বলা হল! দুপুর-রাতে শাহানাকে পাঠান হল ডেকে আনতে?

    নীলুর এটা আজ নতুন না। আগেও বেশ কয়েক বার আনিসকে খেতে বলেছে। প্রথম বার তিনি নীলুকে তেমন কিছু বলেন নি। শুধু শুকনো গলায় বলেছেন, কাউকে দাওয়াত-টাওয়াত করতে হলে আগে আমাকে জিজ্ঞেস করবে। বুঝলে বৌমা?

    নীলু বলেছে, দাওয়াত না তো। ঘরে যা রান্না হয়েছে তাই খাবে।

    সেটাও আমাকে জানিও!

    নীলু কোনো উত্তর দেয় নি, কিন্তু আবার খেতে বলেছে এবং তাঁকে কিছুই বলে নি। শাশুড়ির কথার অবাধ্য হবার মেয়ে নীলু না, কিন্তু এই একটি ব্যাপারে সে মনে হয়। ইচ্ছা করেই অবাধ্য হচ্ছে। মনোয়ারার মনে হল, এটা নীলুর একটা ইচ্ছাকৃত অবাধ্যতা। জানিয়ে দেওয়া যে, সেও এই সংসারের কত্রী, তারও অধিকার আছে।

    মনোয়ারা গম্ভীর মুখে শফিকের ঘরে ঢুকলেন। শফিক চোখ তুলে তাকাল, কিছু বলল না।

    কী করছিস?

    কিছু করছি না।

    ভাত খেতে দেওয়া হয়েছে, খেতে যা।

    শফিক উঠে দাঁড়াল। মনোয়ারা শীতল গলায় বললেন, বৌমা দেখলাম আনিস ছোঁড়াটাকে খেতে বলেছে। তুই বৌমাকে ডেকে জিজ্ঞেস কর তো, কেন বলেছে?

    এমনি বলেছে। জিজ্ঞেস করবার দরকার কী?

    মনোয়ারা আরো গম্ভীর হয়ে গেলেন। শফিক বলল, ব্যাপারটা কী?

    ব্যাপার কিছু না।

    কিছু না তো তুমি এমন গম্ভীর হয়ে আছ কেন?

    মনোয়ারা তার জবাব দিলেন না, চলে গেলেন রান্নাঘরে। নীলু ব্যস্ত হয়ে বাটিতে তরকারি ঢালছে। আয়োজন খুবই সামান্য। ছোট মাছের তরকারি, একটা সাজি ও ডাল। তরকারি মনে হয় কম পড়ে যাবে। হোসেন সাহেব দরাজ গলায় বললেন, ছোট মাছের তরকারিটা বড়ো ভালো হয়েছে। আরো নিয়ে আসা। নতুন টমেটো দিয়ে রাঁধলে যে-কোনো জিনিস ভালো হয়। নীলু পড়েছে মুশকিলে। তরকারি কিছুই নেই। মনোয়ারাকে ঢুকতে দেখে বলল, আপনিও ওদের সঙ্গে বসে পড়ুন না মা।

    না, আমি আজ আর খাব না।

    কেন?

    শরীর ভালো লাগছে না, এই জন্যে খাব না। তোমার কাছে জবাবদিহি করতে হবে নাকি?

    নীলু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। কোনো করণে তার শাশুড়ি রেগে আছেন, সে কারণটা ধরতে পারছে না।

    তরকারি তো সবটাই ঢেলে ফেললে। রফিক খাবে কী?

    ওকে একটা ডিম ভেজে দেবী মা। ছোট মাছ সে এমনিতেই পছন্দ করে না।

    করুক আর না-করুক, একটা জিনিস রান্না হয়েছে, সেটা তাকে দেবে না? সে তো আর কাজের লোক না, এই বাড়িরই ছেলে। না, তুমি সেটা মনে করা না?

    নীলু বড়ো লজ্জায় পড়ে গেল। মার গলা যেভাবে উঁচুতে উঠছে, তাতে মনে হয় খাবার ঘর থেকে সবাই শোনা যাচ্ছে।

    হাগারের পাগারের লোকজন ধরে ধরে আনলে খাবার তো কম পড়বেই। এটা তো আর হোটেল না।

    নীলু কী বলবে ভেবে পেল না। এখন কিছু বলা মানেই তাঁকে আরো রাগিয়ে দেওয়া।

    শোন বৌমা, তোমাকে আরেকটা কথা বলি, শাহানা এখন বড়ো হয়েছে। কাউকে ডেকে আনার জন্যে রাত-দুপুরে তাকে ছাদে পাঠানো যায় না। বুঝতে পারছি?

    পারছি।

    নীলুর চোখে পানি এসে গেল। মনোয়ারা তাকিয়ে আছেন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। চোখের পানি তাঁকে বিন্দুমাত্রও নরম করতে পারল না। হোসেন সাহেব দরজায় এসে উঁকি দিলেন।

    কই বৌমা, তরকারির কথা বলছিলাম।

    আনছি, বাবা।

    মনোয়ারা না খেয়েই ঘুমুতে গেলেন। খাওয়া নিয়ে তাঁকে পিড়াপিড়র সাহস নীলুর হল না। সে নিজেওঁ না খেয়ে গভীর রাত পর্যন্ত জেগে বসে রইল রফিকের জন্যে। ইদানীং রফিক ফিরতে রোজ এগারটা-বারটা বাজাচ্ছে। নীলুকে বলা আছে খাবার ঢাকা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়তে। কিন্তু তাতে লাভ নেই—উঠে এসে দরজা তো খুলতেই হবে।

    এখন সাড়ে বারটা বাজে। আজ বোধহয় আর আসবে না। নীলু ঘুমুতে গেল। বাবু কেমন দু হাত উপরে তুলে ঘুমাচ্ছে। কম্বল সরে গেছে গা থেকে। টুকটুকে ফর্সা পা বের হয়ে আছে। ফ্ল্যানেলের পায়জামা বানাতে হবে, যাতে কম্বল সরে গেলেও ঠাণ্ডা না লাগে।

    নীলু, তোমার একটা চিঠি আছে, দিতে মনে ছিল না। দেখ টেবিলের উপর।

    নীলু অবাক হয়ে বলল, তুমি জেগে ছিলে নাকি?

    হুঁ।

    বাবুর গা থেকে কম্বল সরে গেছে, তুলে দাও নি কেন?

    শফিক কিছু বলল না। নীলু চিঠি নিয়ে আবার বসার ঘরে চলে এল। চিঠি মার কাছ থেকে এসেছে। কাজেই এই চিঠি পড়তে পড়তে অনেক বার চোখ ভিজে উঠবে। আড়ালে পড়াই ভালো। মা তার সব চিঠিই শফিকের ঠিকানায় পাঠান। হয়তো ভাবেন, এভাবে পাঠালে অন্য কেউ পড়বে না।

    আমার মা-মনি,
    মাগো, তোমার সোনামনিকে এখনও দেখিতে অ্যাসিতে পারলাম না। যত বার মনে হয় তত বার কষ্ট পাই। কি করিব মা, হাত-পা বাঁধা। বজলুর হাতে টাকা নাই। আসা-যাওয়ার খরচ আছে। এই দিকে বৌমাও অসুস্থ। ঘরে কাজের লোক নাই। সব কিছু আমাকেই দেখাশুনা করিতে হয়।
    লক্ষ্মী মা আমার, রাগ করিও না। ফেব্রুয়ারি মাসে যেভাবি হউক আসিব। আর মা শোন, তোমার শ্বশুর-শাশুড়ি যে নাম রাখিতে বলেন। সেই নামই রাখিও। তাঁহাদের অখুশি করিয়া কোনো কাজ করিও না। এই দিককার খবর ভালোই। বিলু বেড়াইতে আসিয়াছিল। তুচ্ছ ব্যাপার নিয়া বৌমার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হইয়াছে। দোষ বৌমার। মেয়েটা কয়েক দিন ভাইয়ের বাসায় থাকিতে চাহিয়াছিল, রাগারগির জন্য পারে। নাই। তুমি তাহাকে চিঠিপত্র দাও না কেন মা? মেয়েটা বড়ো দুঃখী। তাহাকে নিয়মিত চিঠি দিও।
    বড়ো জামাইয়ের স্বভাব-চরিত্র আগের মতোই আছে। বিলুর সঙ্গে তাহার সম্পর্ক নাই বললেই চলে। বুঝিতে পারি না, আল্লাহ্ পাক কেন আমার জন্যই সমস্ত দুঃখ-কষ্টজমা করিয়া রাখিয়াছেন।
    যাইহোক মা, তুমি এইসব নিয়া চিন্তা করিও না। জামাইয়ের যত্ন নিও। তোমার সোনার সংসারের কথা যখন ভাবি, তখন মনে বড়ো শান্তি পাই! তুমি বড়ো ভাগ্যবতী মা। আল্লাহর কাছে সবুর স্বীকার করিও। না হইলে আল্লাহ পাক নারাজ হইবেন।

    সুদীর্ঘ চিঠি। নীলু চিঠি শেষ করে দীর্ঘ সময় একা একা বসে রইল। মাকে কিছু টাকা পাঠাতে পারলে হত। এই মাসে সম্ভব হবে না। শফিকের হাতে কোনো টাকা পয়সা নেই।

    সংসারের খরচ বেড়েছে, আয় বাড়ে নি। ক্রমে ক্রমেই শফিকের উপর চাপ বাড়ছে। এই চাপ আরো বাড়বে। সামনের দিনগুলি কেমন হবে কে জানে। গত মাসে সে নীলুকে হাতখরচের টাকা দেয় নি। লজ্জিত মুখে বলেছে, এই মাসে দিতে পারলাম না নীলু। এদিকে রফিক বলে রেখেছে-যেভাবেই হোক দুশ টাকা দিতে হবে ভাবী। নয়তো একেবারে বেইজ্জত হব।

    প্রতি বৎসর শীতের সময় দেশের বাড়ি থেকে কিছু চাল আসে, এবার তাও আসে নি। কেন আসে নি কে জানে?

    বাবু উঠে পড়েছে। প্রচণ্ড জোর তার গলায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে সবাইকে জাগিয়ে তুলবে। নীলু নিজের ঘরের দিকে ছুটে গেল। মনোয়ারার ভেঙে গেছে—তিনি তীক্ষ্ণ কণ্ঠে চেঁচাচ্ছেন, কী হয়েছে? ও বৌমা, হয়েছে?

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএকটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    একটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }