Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প477 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৪৫. নিমের পাতা তিতা তিতা

    শেষ পর্যন্ত নীলগঞ্জ যাবার দিনক্ষণ ঠিক হয়ে গেল। দলটা মোটামুটি বড়োই। রফিক-শারমিন ছাড়া সবাই যাচ্ছে। শাহানা এবং তার বরও যাচ্ছে। শাহানার যাবার ইচ্ছা ছিল না। যাচ্ছে জহিরের কারণে। জহির কেন জানি যাবার জন্যে উৎসাহী হয়ে পড়েছে। অবশ্যি শেষ সময়ে এই দুজনও বাদ পড়ল। ট্রেন রাত নটায়। জহির সন্ধ্যাবেলা এসে বলল, একটা সমস্যা হয়েছে ভাবী। নীলু হেসে ফেলল। জহির বলল, বানানো সমস্যা নয়, সত্যি সমস্যা।

    তোমরা তাহলে যেতে পারছি না?

    না।

    সমস্যাটা কী?

    জহির ইতস্তত করে বলল, চলুন ভাবী ছাদে যাই, সেখানে বলব।

    বলতে না-চাইলে বলার দরকার নেই।

    ভাবী, আমি আপনাকে বলতে চাই। বলা দরকার।

    নীলুচিন্তিত মুখে ছাদে উঠে গেল। নিৰ্ঘাত শাহানা খুব ঝামেলা বাঁধিয়েছে। সেই ঝামেলার প্রকৃতিটি কী, কে জানে। নিশ্চয়ই জটিল কিছু। নয়তো জহির এতটা অস্থির হত না। সে সহজে অস্থির হবার ছেলে নয়।

    কী ব্যাপার, বল।

    বুঝতেই পারছেন, শাহানাকে নিয়ে একটা সমস্যা। আজ ভোরবেলায় নাস্তা খাবার সময় সামান্য একটু কথা কাটাকাটি হল। তার পরপরই সে ছুটে তার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। সেই বন্ধ দরজা এখনও খোলেনি। বেশ অস্বস্তিকর অবস্থা বলতে পারেন। মানে এই জাতীয় অবস্থায় পড়ে আমার অভ্যাস নেই। খুব বিব্রত বোধ করছি।

    কথা কাটাকটি কী নিয়ে হচ্ছিল?

    আনিস সাহেবকে নিয়ে। ও বলল, আনিস সাহেবকে এক দিন দাওয়াত করে খাওয়াতে চায়। আমি বললাম-খুব ভালো কথা। ওনাকে এবং ওনার স্ত্রীকে বল। তাতেই ও রেগে আগুন।

    আমি বুঝলাম না, তাতে রেগে আগুন হবার কী?

    আমি বুঝতে পারি নি। শাহানা বলেছিল—তুমি এখানে তার স্ত্রীর কথা কেন বললে? তোমার কি ধারণা, আমি শুধু তাকে একা খেতে বলব? তা যদি চাইতাম, তাহলে তো অনেক আগেই বলতে পারতাম। তা তো বলি নি। বিশ্ৰী ব্যাপার, ভাবী। কাজের লোকদের সামনে হৈচৈ চিৎকার। প্ৰায় হিস্টিরিয়ার মতো অবস্থা।

    শাহানার কথা শুনে তুমি কী বললে?

    আমি কিছু বলি নি। যা বলার মনে-মনে বলেছি। লোকজনের সামনে সিন ক্রিয়েট করতে চাই নি।

    চল তোমার সঙ্গে যাই, ওকে নিয়ে আসি।

    বাদ দিন, ভাবী। আপনারা ঘুরে আসুন। নীলগঞ্জ গিয়ে আরো ঝামেলা করবে। আপনাদের আনন্দই মাটি করবে।

    আমি সব ঠিক করে দেব।

    কোনো দরকার নেই, ভাবী। এই ব্যাপারটা আমিই ঠিক করতে চাই। বিশ্বাস করুন, আমি ভালোমতোই করব।

    ও খুবই ছেলেমানুষ জহির। ওর বয়সটা দেখ।

    আমি জানি। চলুন নিচে যাই। আপনাদের অনেক গোছগাছ বাকি। আমি গাড়ি রেখে যাচ্ছি, আপনাদের টেনে তুলে দেবে।

    শারমিনের না যাওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে মনোয়ারা নতুন করে কথা তুললেন। এই প্রসঙ্গ নিয়ে গত কদিন ধরেই তিনি চেঁচামেচি করছেন। রফিকের সঙ্গে এক দিন তুমুল ঝগড়া হল। শারমিন এ বাড়িতে আসছে না কেন, এর জবাবে রফিক বিরক্ত হয়ে বলেছে, আমি কী করে বলব? সেটা শারমিনকে জিজ্ঞেস করা। ওটা তার ব্যাপার। হয়তো এ বাড়ি তার ভালো লাগছে না।

    এ বাড়ি ভালো লাগবে না কেন?

    খুব সম্ভব তোমার জন্যেই লাগে না। দিন-রাত ক্যাচ ক্যাচ কর।

    দিন-রাত ক্যাচ ক্যাচ করি?

    রফিক এই প্রশ্নের জবাব না-দিয়ে কেটে পড়ল। মনোয়ারা সারাদিন হৈচৈ করে কাটালেন। আজ আবার শুরু হল। নীলু, টিফিন কেরিয়ারে খাবারদাবার ভর্তি করছিল। মনোয়ারা তাকে ধরলেন, বৌমা, হচ্ছেটা কী? নীলু বিস্মিত হয়ে বলল, কিসের কথা বলছেন?

    ছোট বৌমা এ বাড়িতে আসে না কেন?

    নীলু বলল, অনেক দিন পরে বাবার বাড়ি গিয়েছে, কটা দিন থাকছে, থাকুক না। নীলগঞ্জ থেকে ফিরে এসে আমি ওকে এ বাড়িতে নিয়ে আসব। এখন নিজের বাড়িতেই থাকুক।

    নিজের বাড়ি তুমি কী বলছি? বিয়ের পর মেয়েদের বাড়ি থাকে একটাই। সেটা হচ্ছে স্বামীর বাড়ি।

    আপনাদের সময় তাই ভাবা হত। এখন দিনকাল পাল্টেছে।

    কী রকম পাল্টেছে? এখন বুঝি আর স্ত্রীরা স্বামীদের বাড়িতে থাকে না? তাহলে তুমি এখানে পড়ে আছ কেন?

    নীলু কথা ঘোরাবার জন্যে বলল, আপনার কি সব গোছগাছ হয়েছে মা?

    গোছগাছ আর কী করব? আমার হল গিয়ে মাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল অবস্থা। সংসারে কী শুরু হয়েছে, কিছু বুঝতে পারছি না।

    রাত আটটায় স্টেশনের দিকে রওনা হবার কথা। হোসেন সাহেবের দেখা নেই। শেষ মুহূর্তে তাঁর মনে হয়েছে দুটি খুবই প্রয়োজনীয় ওষুধ তাঁর সঙ্গে নেই। একটি হচ্ছে নাকসমৃভমিকা, অন্যটি পালসেটিলা। গ্রামে যাচ্ছেন, দরকারের সময় হাতের কাছে ওষুধ পাওয়া যাবে না, বিপদে পড়তে হবে। তিনি কাউকে কিছু না-বলে ওষুধের খোঁজে গেলেন।

    ফিরলেন রাত সাড়ে আটটায়, যখন সম্বাই প্ৰায় নিশ্চিত যাওয়া হবে না। স্টেশনে রওনা হবার সময়ও কেউ জানে না, ট্রেন ধরা যাবে কি যাবে না। টেন অবশ্যি ধরা গেল। এবং টেন ছেড়ে দেবার পর জানা গেল, তাড়াহুড়োয় মনোয়ারার সুটকেসটাই আনা হয় নি। তিনি মুখ হাঁড়ির মতো করে নীলুকে বললেন, আমার জিনিসের দিকে কেউ কি আর লক্ষ রেখেছে? তা রাখবে কেন? আমি কি একটা মানুষ?

    ট্রেনে ওঠার উত্তেজনা, নতুন জায়গায় যাওয়ার আনন্দে। টুনির জ্বর এসে গেল। হোসেন সাহেব তাকে এক ফোঁটা পালসেটিলা টু, হানড়েড় খাইয়ে হাসিমুখে শফিককে বললেন, ওষুধটা সঙ্গে না থাকলে কী অবস্থা হত চিন্তা করেছিস? তোরা খামোকা হৈচৈ করিস, কিছু বুঝিস না।

    টুনির জ্বর এসে যাওয়ায় তাঁকে অত্যন্ত আনন্দিত মনে হল।

    কামরায় গাড়িভরা ঘুম, রজনী নিঝুম। ট্রেন ছুটে চলেছে। গফরগাঁয়ে অনেকক্ষণ লেট করেছে, সেটা বোধহয় কাটিয়ে উঠতে চায়। নীলু ছাড়া বাকি সবাই ঘুমিয়ে। নীলুর ঘুম আসছে না! শীতের দিন! জানালার কাঁচ ওঠানো যাচ্ছে না। তার খুব ইচ্ছে করছে, কাঁচ উঠিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখে–অন্ধকার গ্রামের উপর হালকা জোছনা। কে জানে, আজ হয়তো জোছনা হয় নি। গাঢ় আঁধারে চারদিক ঢাকা। মাঝে মাঝে দূরে-বহু দূরে কুপি জ্বলছে; কোনে! জায়গায় লক্ষ লক্ষ জোনাকি একসঙ্গে জ্বলছে আর নিভছে। বন্ধ ট্টেনের কামরা থেকে এসব দৃশ্যের কিছুই দেখার উপায় নেই। নীলু, মেয়ের কপালে হাত রাখল। জ্বর মনে হয় আরো বেড়েছে। সে তার উপর কম্বলটা ভালোমতো টেনে দিল। মাথা কান্ত হয়ে ছিল-সোজা করে দিল!

    শফিক বলল, য়ফাঙ্কে কি চা আছে নীলু?

    আছে। তুমি ঘুমাও নি?

    উঁহু, চোখ বন্ধ করে পড়ে ছিলাম। গাড়িতে আমার ঘুম আসে না।

    শফিক উঠে নীলুর পাশে বসল। নীলু কাঁপে চা ঢালতে-ঢালতে বলল, মেয়েটা দুদিন পরপর জ্বরে ভোগে, ওকে এক জন ভালো ডাক্তার দেখানো দরকার।

    ঢাকায় ফিরেই এক জন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব। আমাকে মনে করিয়ে দিও।

    নীলু বলল, জানালাটা একটু খুলে দেবে? বাইরের দৃশ্য দেখব।

    ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকবে।

    অল্প একটু খোল।

    শফিক পুরোটাই খুলে দিল। আকাশে চাঁদ নেই, তবু নক্ষত্রের আলোয় আবছাভাবে সবকিছু চোখে পড়ে। নদীর পানি ঝিকমিক করে জ্বলে। খোলা মাঠ থেকে চাপা আলো বিছুরিত হয়। কী অদ্ভুত লাগে দেখতে। এই সব দৃশ্য যেন পৃথিবীর দৃশ্য নয়। এদের হঠাৎ হঠাৎ দেখা যায়।

     

    তারা চার দিন কাটাল নীলগঞ্জে।

    টুনির আনন্দের সীমা নেই। এক মুহূর্তের জন্যেও তাকে ঘরে পাওয়া যায় না। বাবলুর সঙ্গে সারাদিন রোদে রোদে ঘুরছে। বাবলুও আগের মতো নেই, তার মুখে কথা ফুটেছে। এই কদিনেই গ্রামের কথা বলার টান তার গলায় চলে এসেছে। টুনিকে এই ব্যাপারটি খুব অবাক করেছে। সেও টেনে-টেনে কথা বলার চেষ্টা করছে, মনোয়ারা যা একেবারেই সহ্য করতে পারছেন না। তিনি টুনিকে চোখে-চোখে রাখার চেষ্টা করেন। পারেন না। তাঁর সবচে বড়ো ভয় কখন এই মেয়ে হুঁট করে পানিতে নেমে যায়। চোখে–চোখে রেখেও কোনো লাভ হয় না। সুযোগ পেলেই পানিতে নেমে পড়ে। টুনি পানিতে নেমেছে, এই খবর শুনলেই তিনি বিশ্ৰী রকমের হৈচৈ শুরু করেন। নীলুকে বলেন, তুমি হচ্ছি মা, তোমার গায়ে লাগে না? চুপচাপ আছ। মেয়েটাকে ঘরে তালাবন্ধ করে রাখি।

    ওর কিছু হবে না মা। ওর সঙ্গে সব সময় একদল ছেলেপুলে থাকে, ওরা দেখবে। গ্রামের ছেলেমেয়ে, ওরা হল পানির পোকা।

    কথা সত্যি, টুনির সঙ্গে থাকে বিরাট এক বাহিনী। শওকত এক দিন এক মহিষ ধরে আনল। বিশাল মহিষ টকটকে রক্তবর্ণ চোখ, বাঁকান শিং। মনোয়ারা তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বললেন, কী সর্বনাশ! এই আজরাইল উঠানে কেন? শওকত হাসিমুখে বলল, বড়ো ঠাণ্ডা জানোয়ার, টুনির জন্যেই আনলাম।

    কী বলছ তুমি। টুনি এটা দিয়ে কী করবো?

    উপরে বসব।

    পাগল নাকি!

    খুব ঠাণ্ডা জানোয়ার।

    বের হও! এক্ষুণি এটা নিয়ে বিদেয় হও। পাগলের কারবার। বলে কী, ঠাণ্ডা জানোয়ার।

    শওকত মহিষ নিয়ে বের হয়ে যাবার কিছুক্ষণ পরই মনোয়ারা আতঙ্কিত হয়ে লক্ষ করলেন, টুনি সেই মহিষের পিঠে। মহিষ গদাইলঙ্করি চালে ঘুরে বেড়াচ্ছে, পেছনে একদল ছেলেপূলে। নীলু মুগ্ধ হয়ে এই দৃশ্য দেখছে। সে বলল, একটা ক্যামেরা থাকলে ভালো হত। ছবি তুলে রাখা যেত। সুন্দর লাগছে, না মা?

    মনোয়ারা চেঁচিয়ে উঠলেন, এর মধ্যে তুমি সুন্দর কী দেখলে? তোমাদের কি মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি? এক্ষুণি ঝাড়া দিয়ে গা থেকে ফেলে দেবে।

    নীলুকে তেমন উদ্বিগ্ন মনে হল না। হোসেন সাহেব এই দৃশ্যে খুব মজা পেলেন। মহিষের পিছনে-পিছনে হাঁটতে লাগলেন।

    শফিক খুব আগ্রহ নিয়ে সুখী নীলগঞ্জের কর্মকাণ্ড ঘুরে ঘুরে দেখল। এতটা সে আশাই করে নি। এত দিন সে এটাকে এক জন বুড়ো মানুষের শখের ব্যাপার বলেই ধরে নিয়েছিল, এখন কাণ্ডকারখানা দেখে হকচকিয়ে গেছে। লাইব্রেরি ঘিরে রাজ্যের বই। এত বই শহরের কোনো লাইব্রেরিতেও নেই। দুটো পত্রিকা আসে এই গণ্ডগ্রামে। শফিক অবাক হয়ে বলল, কে পড়ে এই পত্রিকা? আপনি পড়েন, সেটা বুঝতে পারি। আর কে পড়ে?

    ডাক্তারবাবু পড়েন। হরিনারায়ণবাবু!

    ডাক্তার আছে নাকি?

    ডাক্তার ঠিক না। সরকারী হাসপাতালের কম্পাউণ্ডার ছিলেন, এখন রিটায়ার করে এই গ্রামে আছেন।

    ও, আচ্ছা।

    গ্রামের লোকজনও কেউ কেউ পত্রিকা নাড়াচাড়া করে। তা ছাড়া সন্ধ্যাবেলা এক জন পত্রিকা পড়ে শোনায়। অনেকেই শুনতে আসে।

    বলেন কী?

    কবির মামা যে-কাজ শুরু করেছিলেন, তার সুফল দিতে শুরু করেছে।

    কী রকম সুফল?

    সোভাহান হাসতে-হাসতে বলল, নীলিগঞ্জের মেয়েদের বিয়ের বাজারে খুব কাটতি। আশপাশের গ্রামের সবাই মনে করে, নীলগঞ্জের মেয়ে মানে আদব-কায়দার মেয়ে। এখানকার কোনো মেয়ের বিয়েতে যৌতুক দেওয়া হয় না।

    তাই নাকি?

    হ্যাঁ, কবির মামার নিষেধ ছিল। যৌতুক দিয়ে কোনো মেয়ের বিয়ে দেওয়া যাবে না। কবির মামার জীবদ্দশায় এটা মানা হত না। এখন মানা হয়।

    আমার তো ভাই রূপকথার মতো লাগছে।

    আসলেই রূপকথা। বেশির ভাগই হয়েছে ওনার মৃত্যুর পরে। যেমন গ্রামের ভেতরের রাস্তাগুলি। কেউ নিজের জায়গার এক ইঞ্চি ছাড়তে রাজি নয়। মামা অনেক চেষ্টা করেছিলেন, লাভ হয়নি। তাঁর মৃত্যুর তিন দিনের দিন সবাই ঠিক করল, কবির মাস্টার যে-সব রাস্তা চেয়েছিলেন, সেগুলি করে দেওয়া হবে। করাও হল তাই। লোকটি যখন বেঁচে ছিল, তার মর্ম কেউ বোঝে নি।

    আপনি কি ওনার বাকি কাজ শেষ করতে নেমেছেন?

    হ্যাঁ, তাই।

    কী মনে হয়, পারবেন?

    হয়তো পারব। খুবই কঠিন কাজ। দীর্ঘদিনের কুসংস্কার, অজ্ঞতা, অন্ধকার-চট করে এগুলি যায় না। সময় লাগে। আমিও হয়তো পারব না, অন্য এক জন আসবে। এটা হচ্ছে একটা চেইন রিঅ্যাকশন। শুরুটাই মুশকিল। এক বার শুরু হলে চলতে থাকে।

    ঠিক বলেছেন। শুরুটাই ডিফিকাল্ট।

    গ্রামের লোকদের বিশ্বাস অর্জনের জন্যে আমি খানিকটা প্রতারণাও করছি। তাও কাজে লাগছে।

    আপনার কথা বুঝতে পারলাম না। কী ধরনের প্রতারণা?

    নামাজ পড়ছি নিয়মিত। যদিও ধর্ম, বিধাতাপুরুষ এসব জিনিসে আমার বিশ্বাস নেই। কিন্তু যেহেতু ধর্মপ্রাণ মানুষদের জন্য গ্রামের লোকদের খুব মমতা, আমি তার সুযোগ নিচ্ছি।

    শফিক হেসে ফেলে বলল, কে জানে এক দিন হয়তো দেখা যাবে, ভান করতে করতে আপনি ফাঁদে আটকা পড়ে গেছেন। বেরুতে পারছেন না। বিরাট বুজুর্গ ব্যক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।

    হতে পারে। পৃথিবী বড়োই রহস্যময়। রহস্যের কোনো শেষ নেই।

    ঢাকায় ফেরার আগের রাতে পিঠা বানানোর উৎসব হল। সেই উৎসবে গ্রামের মেয়েরা দল বেঁধে যোগ দিল। টুনি এক ফাঁকে সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে সবাইকে দাওয়াত করে এসেছে। উঠোনে খড়ের আগুন করা হয়েছে। সেই আগুনে তৈরি হচ্ছে পোড়া-পিঠা। বিশাল আকৃতির কদাকার পিঠা। আগুনে পোড়ার পর পাথরের মতো শক্ত হয়ে যাচ্ছে। তখন তা কেটে দুধে জ্বাল দিয়ে খাওয়া। শওকত কোথা থেকে এক গায়ক ধরে এনেছে। সে একটু দূরে তার একতারা নিয়ে বসেছে। তাকে ঘিরে পুরুষদের একটা দল। গায়কের নাম কেরামত মিয়া। তার গলায় সুর তেমন নেই। সুরের অভাব সে পূরণ করেছে। আবেগে। একটি চরণে টান দেবার পরই তার চোখ ছলছল করতে থাকে। তৃতীয় চরণে যাবার আগেই চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ে। গায়ক কেরামত মওলা গান ধরে—

    নিমের পাতা তিতা তিতা
    জামের পাতা নীল,
    কোথায় আমার প্রাণের মিতা
    কোথায় বন কোকিল?

    সবাই স্তব্ধ হয়ে গান শোনে। পুরনো সব দুঃখ হৃদয়ের অতল গহ্বর থেকে ভেসে ওঠে। বড়োই মনখারাপ করে সবাই। তবু ভালো লাগে। হৃদয়ের গহীন চাপা পড়ে থাকা দুঃখগুলি মাঝে-মাঝে দেখতে আমরা ভালোবাসি। সেই সুযোগ বড়ো একটা হয় না। কেরামত মওলার মত গ্রাম্য গায়করা কখনো কখনো তা পারেন। তাঁদের সাহায্য করে প্রকৃতি।

    উঠোনের আগুন জ্বলছে। তাকে ঘিরে বসে বসে আছে বৌ-বিরো। আকাশে ছোট্ট একটা চাদ। তার হিম হিম আলো পড়েছে দিগন্তবিস্তৃত মাঠে। শীতল কনকনে হাওয়া বইছে। দুখ-জাগীনিয়া পরিবেশ তো একেই বলে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএকটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    একটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }