Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প477 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৯. এয়ারপোর্টে সাব্বিরকে রিসিভ

    এয়ারপোর্টে সাব্বিরকে রিসিভ করবার জন্যে শারমিন একা এসেছে। রহমান সাহেবের সঙ্গে আসার কথা, শেষ মুহূর্তে তিনি মত বদলানে, তুমি একাই যাও মা। ড্রাইভারকে বলে দাও একটা ফুলের তোড়া নিয়ে আসতে। সাব্বির পছন্দ করবে।

    ফুলের তোড়া নিয়ে অপেক্ষা করতে শারমিনের লজ্জা করছিল। ফুলটুল নিয়ে আর কেউ আসে নি, সে একাই এসেছে। অনেকেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে দেখছে। কী ভাবছে, তারা মনে মনে, কে জানে!

    নটার সময় প্লেন আসার কথা, সেটা এল এগারটায়। কাস্টমাস সেরে বেরুতে বেরুতে সান্বিরের দুটোর মতো বেজে গেল। সাব্বিরের স্বাস্থ্য অনেক ভালো হয়েছে। শীতের দেশ থেকে আসছে বলেই বোধহয় লালচে ভাব গালে। মাথাভর্তি চুল এলোমেলো হয়ে আছে। তার আচার-আচরণে একটা ছটফট ভাব আছে। শারমিনকে স্বীকার করতেই হল, সাব্বির অত্যন্ত সুপুরুষ। এ রকম সুপুরুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে।

    শারমিন হাসিমুখে বলল, এই নিন। আপনার ফুল।

    ফুল, ফুল কী জন্যে?

    এত দিন পর দেশে ফিরছেন, তাই।

    সাব্বির ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে বিরক্ত স্বরে বলল, আমার দেশের বাড়ি থেকে কেউ আসে নি? কাউকে তো দেখছি না। চিঠি দিয়েছি, টেলিগ্রাম করেছি, হোয়াট ইজ দিস?

    শারমিন কিছু বলল না। সান্বিরের দেশের বাড়ির কারোর সঙ্গে তার পরিচয় নেই। দেশের বাড়িতে সাবিরের তেমন কেউ নেইও। এক চাচা আছেন, যিনি তাকে পড়াশোনা করিয়েছেন। বড়ো এক বোন আছেন, জামালপুরে, তার সঙ্গে শারমিনের কয়েক বার দেখা হয়েছে। সে এয়ারপোর্টে আসে নি। এলে দেখা হত।

    সাব্বির বলল, মা আসেন নি?

    না। উনি ঢাকায় নেই।

    কোথায়?

    জামালপুরে মেয়ের কাছে আছেন।

    জামালপুরে কবে গেলেন, আমি তো কিছু জানি না।

    গতমাসে গিয়েছেন।

    সাব্বির অত্যন্ত বিরক্ত হল। মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, তুমি দাঁড়াও তো এখানে, আমি খুঁজে দেখি। আছে হয়তো কেউ। এত দিন পর আসছি, কেউ আসবে না?

    সাব্বির খুঁজতে গিয়ে আধা ঘণ্টার মত দেরি করল। ফিরে এল মুখ কাল করে। কোথাও কাউকে পাওয়া গেল না। শারমিন বলল, চলুন, যাওয়া যাক।

    কোথায় যাব?

    আমাদের বাসায়, আর কোথায়?

    না, প্রথম যাব ঝিকাতলা। মা কোথায় আছেন খোঁজ নিয়ে আসি।

    সান্বিরের মাকে পাওয়া গেল না। তার ছোট মামার কাছে জানা গেল, তিনি জামালপুরে। ছোট মামা সান্বিরের প্রসঙ্গে কোনো রকম উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন না। সাৰ্বির বলল, আমি আসব, আপনি জানতেন না?

    জানতাম।

    আমি তো আশা করেছিলাম এয়ারপোর্টে আপনাকে দেখব।

    ছোট মামা মুখ কালো করে বললেন, নিজের যন্ত্রণায় অস্থির। ছোট মেয়ের ডায়রিয়া। মহাখালি নিয়ে গিয়েছিলাম। তুই হাত-মুখ ধুয়ে চা-টা খা।

    সাব্বির সেসব কিছুই করল না। বিরক্ত মুখে বের হয়ে এল। শারমিন বলল, এবার কি যাবেন আমার সঙ্গে?

    হুঁ, যাব। তোমাদের ওখানে চা খেয়ে রওনা হব জামালপুর। জামালপুর যাবার সবচে ভালো বুদ্ধি কী?

    ট্রেনে করে যেতে পারেন। বাই–রোডে যেতে চাইলে আমাদের একটা গাড়ি নিয়ে রওনা হতে পারেন। আজই যেতে হবে?

    হুঁ, আজই।

    আপনি এমন ছটফট করছেন কেন?

    কিচ্ছু ভালো লাগছে না।

    কেন?

    জানি না, কেন।

    শারমিন খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলল, বাংলাদেশ কেমন লাগছে?

    বাংলাদেশ দেখলাম কোথায়?

    রাস্তাঘাট তো দেখছেন। কত বড়ো বড়ো রাস্তা হয়েছে, দেখেছেন?

    সাব্বির তার জবাব না দিয়ে মুখ গোমড়া করে বসে রইল। শারমিন বলল, আপনার শরীর ভালো তো?

    হ্যাঁ, ভালোই।

    কত দিন থাকবেন?

    বেশিদিন না। এক সপ্তাহ।

    হঠাৎ এমন হুঁট করে চলে এলেন যে! আপনার তো কথা ছিল আগস্ট মাসে আসার।

    এখানে কী যেন একটা ঝামেলা হচ্ছে, সেটা জানার জন্যে এসেছি।

    কী ঝামেলা?

    সাব্বির বিরক্ত স্বরে বলল, দু শ ডলার করে মাকে প্রতি মাসে পাঠাই। তাঁর একার জন্যে যথেষ্ট টাকা, কিন্তু তার পরেও গতমাসে একটা চিঠি পেলাম, যার থেকে ধারণা হয় যে, তার টাকা পয়সার খুব টানাটানি। এর মানে কী? টাকাগুলি যাচ্ছে কোথায়?

    এটা জানার জন্যে একেবারে আমেরিকা থেকে চলে এলেন?

    শুধু এটা না। মার শরীর খারাপ। মনে হয়, ঠিকমতো চিকিৎসাও হচ্ছে না। সেটাও দেখব।

    রহমান সাহেব সাত্ত্বিরকে জড়িয়ে ধরলেন। তাকে তিনি অত্যন্ত পছন্দ করেন। প্রথম যেদিন দেখেছিলেন, সেদিনই তাঁর তাকে ভাল লেগেছিল।

    সেই ভালোলাগা পরবর্তী সাত বছরে ক্রমেই বেড়েছে, তাদের প্রথম পরিচয়পর্বটি বেশ নাটকীয়।

    রহমান সাহেব সবে অফিসে এসে বসেছেন। তাঁর সেক্রেটারি বলল, একটি ছেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করবার জনে, ঘণ্টাখানেক ধরে বসে আছে।

    কী চায়?

    আমাকে বলছে না।

    রহমান সাহেব ছেলেটিকে আসতে বললেন। নিশ্চয়ই চাকরিপ্রার্থী। প্রতিদিনই বেশ কিছু এ ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়।

    অত্যন্ত সুদৰ্শন একটি ছেলে ঢুকল। এবং সে কোনো রকম ভণিতা না করে বলল, আমার নাম সাব্বির আহমেদ। আমি এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্ট্যাটিসটিকস-এ এম. এস. সি পাশ করেছি। আপনি কি দয়া করে আমার মার্কশিটটা দেখবেন?

    কোনো চাকরির ব্যাপার?

    জ্বি-না, কোনো চাকরির ব্যাপার নয়।

    ব্যাপারটা কী?

    আপনি আগে দেখুন, তারপর বলব।

    রহমান সাহেব দেখলেন। অনার্স এবং এম. এস. সি দুটিতেই প্রথম শ্রেণী।

    আপনার তো চাকরি পাওয়ার ব্যাপারে কোনো অসুবিধা হবার কথা নয়।

    না, আমার কোনো অসুবিধা নেই। আমি অন্য ব্যাপারে এসেছি।

    বলুন, শুনি।

    আমি আমেরিকান একটি ইউনিভার্সিটি-ষ্টেট ইউনিভার্সিটি অব আইওয়াতে টিচিং এ্যাসিসটেন্টশিপ পেয়েছি। সেখানে আণ্ডার-গ্রাজুয়েট ক্লাসে পড়াব, সেই টাকায় পি-এইচ. ডি. করব। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে। আমি অত্যন্ত দরিদ্র। আমার আত্মীয়স্বজনরাও দরিদ্র। আমেরিকায় যাবার জন্যে আমার ত্রিশ হাজার টাকার মতো দরকার।

    আপনি চাচ্ছেন এই টাকাটা আমি আপনাকে দিয়ে সাহায্য করি?

    ধার হিসেবে চাচ্ছি।

    এত লোক থাকতে আমার কাছে এসেছেন কেন?

    শুধু আপনার কাছে নয়, আরো অনেকের কাছেই গিয়েছি। আমি একুশ জন ইণ্ডাষ্টিয়েলিষ্টের একটি লিষ্ট করেছি। ঠিক করেছি, এদের সবার কাছেই যাব।

    লিস্টটা দেখতে পারি?

    নিশ্চয়ই পারেন।

    সাব্বির লিস্টি বের করে দিল।

    আইওয়া ষ্টেট ইউনিভার্সিটির চিঠিটি সঙ্গে আছে?

    হ্যাঁ, আছে। রেজিস্টারের চিঠি।

    রহমান সাহেব চিঠিটা মন দিয়ে পড়লেন। শান্ত স্বরে বললেন, ওরা আই টুয়েন্টি পাঠিয়েছে?

    জ্বি, পাঠিয়েছে।

    ভিসা হয়েছে?

    হ্যাঁ, হয়েছে।

    পাসপোর্টটা দেখাতে পারেন?

    পারি।

    সাব্বির পাসপোর্ট বের করল। মাল্টিপল এন্টি ভিসা। রহমান সাহেব গম্ভীর হয়ে বললেন, টিকেটের টাকা জোগাড় না-করেই ভিসা করেছেন?

    হ্যাঁ, করেছি। কারণ টাকার ব্যবস্থা হবেই।

    রহমান সাহেব শান্তস্বরে বললেন, ক্যাশ দেব না চেক কেটে দেব?

    ক্যাশ হলে ভালো হয়।

    তিনি ক্যাশিয়ারকে পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকার ব্যবস্থা করতে বললেন। সাব্বির বিন্দুমাত্র উচ্ছ্বাস দেখাল না-যেন এটা তার প্রাপ্য। রহমান সাহেব তাকে বাড়তি কোনো ফেভার করছেন না।

    আমেরিকা যাবার আগে সে দেখা করতে পর্যন্ত এল না। ছ মাস পর ইউ গ্লস ডলারে সাব্বির টাকাটা শোধ করল। সেই সঙ্গে চমৎকার একটি চিঠিও লিখল:

    শ্রদ্ধাস্পদেষু,

    বড়লোকদের প্রতি আমার এক ধরনের ঘৃণা আছে। সারা জীবন অত্যন্ত দরিদ্র ছিলাম বলেই হয়তো। এখন বুঝতে পারছি, ধনী সম্প্রদায়ের মধ্যেও ভালোমানুষ আছেন। আপনার অনুগ্রহের কথা আমি মনে রাখব। টাকাটা পাঠানোর আগে আমি আপনাকে লিখি নি, কারণ আমি এক ধরনের হীনমন্যতায় ভুগছিলাম। আশা করি, আপনি আমার মানের অবস্থা বুঝতে পারছেন।

    বিনীত
    সাব্বির

    দু বছরের মাথায় সাব্বির দেশে এল। রহমান সাহেবের জন্যে প্রচুর উপহার নিয়ে এল। সাৰ্বিরের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ হল তখন। পি-এইচ.ডি শেষ করে আবার সে দেশে এল। শারমিনের সঙ্গে বিয়ের কথাবার্তা হল সেই সময়। শারমিন তখন মাত্র কলেজে। সেকেণ্ড ইয়ারে উঠেছে।

     

    দুপুরের খাওয়া সারতে-সারতে দুটা বেজে গেল। খাবার টেবিলে সাব্বির খুব গম্ভীর হয়ে রইল। রহমান সাহেব বললেন, তোমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

    কোন পরিকল্পনার কথা বলছেন?

    আমেরিকাতেই থাকবে, না দেশে আসবে?

    দেশে আসব। আমেরিকায় থাকব। কেন? পোস্ট ডক শেষ করে ফিরব। এখানকার ইউনিভার্সিটিতে সহজেই আমার চাকরি হবার কথা।

    অনেকেই তো ফিরতে চায় না।

    আমি চাই। বিদেশের জন্যে আমার কোনো মোহ নেই।

    শারমিন বলল, আপনি এত তাড়াহুড়া করছেন কেন, আস্তে আস্তে খান।

    দেরি হয়ে যাচ্ছে। জামালপুর যেতে হবে তো।

    আজ না গেলে হয় না?

    আমার হাতে সময় বেশি নেই। আজই যাব। বাসে করে চলে যাব।

    রহমান সাহেব বললেন, বাসে যেতে হবে না। ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি, ও তোমাকে নিয়ে যাবে। তিনটা সাড়ে-তিনটার দিকে রওনা হলেই হবে, তুমি কিছুক্ষণ বিশ্রাম কর। .

    সাব্বিরকে বিশ্রামের ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী বলে মনে হল না। যেন এই মুহূর্তে তার রওনা হওয়া দরকার। শারমিন বলল, আপনি কি সব সময়ই এমন ছটফট করেন?

    তা করি।

    এ রকম ভাব করছেন, যেন দু মিনিটের মধ্যে আপনার গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছে। আপনি আরাম করে বসুন তো, আমি চা এনে দিচ্ছি। শান্ত হয়ে চা খান।

    চা আন। আমি বসছি শান্ত হয়ে।

    আর শোনেন সাব্বির ভাই, আপনি তো গাড়ি চালাতে জানেন?

    জানি। কেন?

    আপনি আবার বাহাদুরি করে গাড়ি চালাতে যাবেন না। যা ছটফটে স্বভাব আপনার, এ্যাকসিডেন্ট করবেন।

    সাৰ্বির হেসে ফেলল এবং পরীক্ষণেই গম্ভীর হয়ে বলল, শারমিন, তুমিও চল না। আমার সঙ্গে, মা খুব খুশি হবে।

    শারমিন হকচকিয়ে গেল।

    গাড়ি যখন যাচ্ছে, তখন তো অসুবিধা হবার কথা নয়।

    না-না, আমি এখন যাব না।

    কেন, অসুবিধাটা কী?

    শারমিন কী বলবে ভেবে পেল না। সাব্বির বলল, গল্প করতে—করতে যাব, তোমার ভালোই লাগবে।

    চট করে রেডি হওয়া যাবে না। তৈরি হতেও সময় লাগবে!

    বেশ তো, না হয়। কাল সকালে যাই। তৈরি হবার সময় পাবে। পাবে না?

    শারমিন বিব্রত স্বরে বলল, আমি এখন যাব না, সাব্বির ভাই।

    কেন?

    আমার যেতে ইচ্ছা করছে না।

    সাব্বিরকে দেখে মনে হল, তার আশাভঙ্গ হয়েছে। যেন সে ধরেই নিয়েছিল শারমিন যাবে।

    বিকেলে শারমিনের নিজেরও কেমন যেন নিঃসঙ্গ লাগতে লাগল। মনে হল—গেলেই হত। যার সঙ্গে সারা জীবন কাটানো হবে, তার সঙ্গে বিয়ের আগে কিছু সময় কাটানোয় এমন কোনো মহাভারত অশুদ্ধ হত না। নাকি হত?

    শারমিন বাগানে বেড়াতে গেল।

    মার্টি বরই গাছের নিচে গা এলিয়ে শুয়ে আছে। সারা গা কাদায় মাখামাখি।

    এই মাটি, তোমার এ কি অবস্থা।

    মার্টি শুয়েই রইল, ছুটে এল না। ওর শরীর ভালো নেই। শরীর ভালো থাকলে এভাবে শুয়ে থাকতে পারত না। ডাকামাত্র ছুটে আসত। শারমিন তীক্ষ্ণ কণ্ঠে ডাকল, জয়নাল, জয়নাল।

    জয়নাল অল্প কিছু দিন হল চাকরিতে যোগ দিয়েছে। তার আসল কাজ হচ্ছে মাটির দেখাশোনা। একটি কুকুরকে দেখাশোনার কাজ তার কাছে খুব অপমানজনক মনে হয়েছে বলেই বোধহয় সে কখনো মাটির ধারে কাছে থাকে না। আজও ছিল না। শারমিনের গলা শুনে ছুটে এল।

    মার্টিকে গোসল করিয়েছিলে?

    জ্বি, আফা।

    ওর গা এত ময়লা কেন?

    কাদার মইধ্যে খালি গড়াগড়ি করে। কি করমু আফা।

    যাও, আবার ওকে পরিষ্কার কর। মাটি উঠে আয়।

    মাটি উঠে এল না। ঝিমুতে লাগল। জয়নাল বলল, এ আর বাঁচত না, আফা!

    বুঝলে কী করে?

    লেজ নাইম্যা গেছে দেখেন না? লেজ নামলে কুত্তা বাঁচে না।

    জয়নালকে খুব উল্লসিত মনে হল। যেন সে একটা সুসংবাদ দিচ্ছে।

    জয়নাল।

    জ্বি আফা।

    কাল ভোরেই ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে।

    জ্বি, আইচ্ছা।

    খাওয়াদাওয়া করছে ঠিকমতো?

    জ্বি, করতাছে।

    রাতের খাবার কখন দেওয়া হবে?

    সইন্ধ্যাবেলা।

    আমাকে খবর দেবে তখন। আমি দেখব ঠিকমত খায় কিনা।

    শারামিনের অত্যন্ত মন খারাপ হয়ে গেল। মাটি কি সত্যি সত্যি মারা যাবে? মৃত্যুর পর পশুরা কোথায় যায়? ওদেরও কি কোনো স্বৰ্গ-নরক

    শারমিন দোতলায় উঠে গেল। বাড়ি এখন একেবারে খালি। বাবা গিয়েছেন মতিঝিল। কখন আসবেন কোনো ঠিক নেই। কী একটা মিটিং নাকি আছে। এসব মিটিং শেষ হতে অনেক দেরি হয়। কোনো কোনো দিন ফিরতে রাত একটা-দেড়টা বেজে যায়। আজও হয়তো হবে। শারমিন কিছুক্ষণ একা একা বারান্দায় বসে রইল। কেমন যেন ক্লান্ত লাগছে। সবচে বড়ো কথা কিছুই করার নেই।

    লাইব্রেরি থেকে একগাদা বই, আনা হয়েছে। কোনোটাই পড়া হয় নি। মাঝে মাঝে এমন খারাপ সময় আসে, কোনো কিছুতেই মন বসে না। বেঁচে থাকা অর্থহীন মনে হয়।

    সন্ধ্যা হয়ে আসছে। মার্টিকে খাওয়াবার সময় হয়েছে বোধহয়। শারমিন নিচে নেমে এল, এবং অবাক হয়ে দেখল রফিক বসে আছে।

    আরে, তুমি কখন এসেছ?

    প্রায় মিনিট পাঁচেক। দেখলাম দরজা খোলা, আশেপাশে কেউ নেই। চুপচাপ বসে আছি।

    ভালো করেছি। এস আমার সঙ্গে।

    কোথায়?

    মাটি সাহেবকে ডিনার দেয়া হবে। আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখব।

    কুকুর খাবে আর আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখব, এত শখ আমার নেই। তুমি খাইয়ে আসা। আমি বসছি। এখানে!

    অসময়ে হঠাৎ কোত্থেকে এলে?

    রফিক গম্ভীর হয়ে বলল, এখানে এক বন্ধুর বাসায় এসেছিলাম, তারপর ভাবলাম এসেছি। যখন, তখন দেখা করে যাই।

    বাজে কথা বলবে না। এখানে তোমার কোনো বন্ধুর বাসা নেই। তুমি আমার কাছেই এসেছিলে। ঠিক কিনা বল।

    রফিক কিছু বলল না। শারমিন বলল, চা খাবে?

    খাব।

    চায়ের সঙ্গে আর কিছু?

    খাব, তবে মিষ্টি না। আমি মিষ্টি খাই না। ঘরে তৈরি সন্দেশও না।

    তোমাকে রোগ লাগছে কোন রফিক?

    ভাবীকে নিয়ে রাজশাহী গিয়েছিলাম। এক সপ্তাহ খুব ছোটাছুটি করেছি। ভাবীর এক বোন মারা গেছে। একটা ছোট্ট ছেলে আছে তার। ছেলেটিকে নিয়ে এমন মুশকিলে পড়েছে সবাই!

    মুশকিল কেন?

    কোথায় রাখবে, কার কাছ রাখবে-এত ছোট বাচ্চার দায়িত্ব কেউ নিতে চাচ্ছে না।

    বল কি।

    দ্যাটস ফ্যাকট। তোমাদের মাটির জন্যে নিশ্চয়ই তিন-চার জন লোক আছে। কিন্তু এই বাচ্চাটির জন্যে কেউ নেই।

    শারমিন কিছু বলল না। রফিক বলল, রাগ করলে নাকি?

    না, রাগ করিনি। তুমি বস, চা নিয়ে আসছি। দুধ-চা না লেবু-চা?

    আদা-চা। গলা খুশখুশ করছে।

    রফিক ভেবেছিল দশোক গল্পসল্প করে চলে যাবে, কিন্তু সে রাত আটটা পর্যন্ত থাকল। এর মধ্যে যে কবারই সে উঠতে চেয়েছে, শারমিন বলেছে, আহ, বস না। এত ব্যস্ত কেন?

    রাত হয়ে যাচ্ছে, অনেক দূর যাব।

    যাবার ব্যবস্থা আমি করব। আজ আমার সঙ্গে ভাত খাবে।

    সে কি, কেন?

    কেন আবার কি? খেতে বলেছি তাই খাবে।

    তোমাদের রান্না কী?

    জানি না কি।

    তোমাদের কখন কী রান্না হয় তা তোমরা জান না?

    শারমিন কিছু বলল না।

    খাও কিসে? রুপোর থালাবাটিতে?

    বকবক করবে না। খেতে বসলেই টের পাবে কিসে খাই।

    খাওয়াটা হবে কখন?

    একটু দেরি হবে। বাবুর্চিকে নতুন একটা আইটেম রান্না করতে বলেছি।

    আইটেমটি কী?

    খেতে বসলেই টের পাবে! এখন আমার সঙ্গে এস, মার্টিকে খাওয়ান হবে।

    আসতেই হবে?

    হ্যাঁ, আসতেই হবে।

    রহমান সাহেব ফিরলেন রাত দশটায়। শারমিন একটি ছেলের সঙ্গে ডিনার খাচ্ছে, এবং কিছুক্ষণ পরপর শব্দ করে হেসে উঠছে। এই দৃশ্যটি তিনি অবাক হয়ে দেখলেন। শারমিন বাবাকে দেখতে পায় নি।

    রহমান সাহেব নিঃশব্দে দোতলায় উঠে গেলেন। তাঁর কপালে সূক্ষ্ম কিছু ভাঁজ পড়ল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএকটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    একটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }