Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এই আমি – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প116 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    লালচুল

    লালচুল

    ভদ্রলোকের বয়স সত্তরের মত।

    মাথার চুল টকটকে লাল। মাথার লালচুলের জন্যেই হয়ত তাকে রাগী রাগী। দেখাচ্ছে। তাছাড়া কোমরের মাংসপেশীতে টান পড়ায় তিনি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না। বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ভঙ্গিটা অনেকটা সাপের ফণা তোলার মত। যেন এক্ষুনি ছোবল দেবেন। আমি বললাম, স্লামালিকুম।

    তিনি বললেন, হুঁ।

    সালামের উত্তরে সালাম দেয়াটাই প্রচলিত বিধি। তিনি হুঁ বলে এড়িয়ে গেলেন। তবে আপ্যায়ন বা শিষ্টতার কোন অভাব হল না। আমাকে হাত ধরে বসালেন। কাজের ছেলেকে চা দিতে বললেন।

    আমার কাছে মনে হল ভদ্রলোক অসুস্থ। তার মাথার চুল যেমন লাল চোখ দুটিও লাল। খুব ঘন ঘন চোখের পাতা ফেলছেন। আমি এত দ্রুত কাউকে চোখের পাতা ফেলতে দেখিনি। বয়স বাড়লে মানুষ ঘন ঘন চোখের পাতা ফেলে কিনা তাও লক্ষ করিনি। আমি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ভদ্রলোক বললেন, আমার চোখে সমস্যা। আছে। চোখে অশ্রুগ্রন্থি বলে কিছু ব্যাপার আছে। সেখান থেকে জলীয় পদার্থ বের হয়ে সব সময় চোখ ভিজিয়ে রাখে। আমার ঐসব গ্রন্থি নষ্ট হয়ে গেছে।

    আমি বললাম, আপনার চুল এমন লাল কেন?

    উনি বললেন, রঙ দিয়ে লাল করেছি। মেন্দী পাতা এবং কাঁচা হলুদের সঙ্গে সামান্য থানকুনি পাতা বেটে মিশিয়ে একটা পেস্টের মত তৈরি করে চুলে মাখলেই চুল এমন লাল হয়। আপনি যখন আমার মত বুড়ো হবেন, মাথার চুল সর্ব পেকে যাবে, তখন মাথায় রঙ ব্যবহার করতে পারেন। মাথায় রঙ ব্যবহার করা ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ নয়। নবী করিমের হাদিস আছে। তিনি খেজাব ব্যবহার করার পক্ষে মত দিয়েছেন। খেজাব’ হচ্ছে এক ধরনের রঙ যা চুলে লাগানো হয়।

    ‘ও আচ্ছা।‘

    ‘মাথাভর্তি সাদা চুল আমার পছন্দ না। সাদা চুল হল White Flag, যা মনে। করিয়ে দেয় খেলা শেষ হয়ে গেছে। তৈরি হয়ে নাও। দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি, বেলা শেষ প্রহর।‘

    ‘আপনি তৈরি হতে চাচ্ছেন না!’

    ‘তৈরি তো হয়েই আছি। শাদা ফ্ল্যাগ উড়িয়ে সবাইকে জানাতে চাচ্ছি না।‘

    ভদ্রলোকের বাড়ি প্রকাণ্ড। বেশির ভাগ প্রকাণ্ড বাড়ির মত এ বাড়িটিও খালি। তার দুই মেয়ে। দু’জনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। তারা স্বামীর সঙ্গে বাইরে থাকে। পত্নী বিয়োগ হয়েছে চার বছর আগে। এগারো কামরার বিশাল বাড়িতে ভদ্রলোক কিছু কাজের লোকজন নিয়ে থাকেন। পুরোপুরি নিঃসঙ্গ মানুষরা নানান ধরনের জটিলতায় ভুগেন। বিচিত্র সব কাজকর্মে তারা থাকতে চেষ্টা করেন। সঙ্গী হিসেবে এরা কখনোই খুব ভাল হয় না। কারণ তারাই সঙ্গী হিসেবে কাউকে গ্রহণ করতে চান না।

    এই ভদ্রলোকও দেখলাম তার ব্যতিক্রম নন। তিনি দেখলাম, এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারছেন না। জায়গা বদল করছেন। এবং কিছুক্ষণ পরপর ঘরের ছাদের দিকে ভুরু কুঁচকে তাকাচ্ছেন। ভাবটা এ রকম যেন ঘরের ছাদটা কিছুক্ষণের মধ্যে ভেঙে তাঁর মাথায় পড়ে যাবে।

    আমি যে কাজের জন্যে এসেছিলাম সেই কাজ সারলাম। ভদ্রলোকের ছোট মেয়ের স্বামীর ঠিকানা দরকার ছিল। তিনি ঠিকানা দিতে পারছেন না, তবে টেলিফোন নাম্বার দিলেন। আমি চা খেয়ে উঠতে যাচ্ছি, তিনি বললেন, আহা, বসুন না। বসুন। অল্পক্ষণ বসুন। গল্প করুন।

    নিঃসঙ্গ একজন বৃদ্ধের অনুরোধ এড়ানো মুশকিল। আমি বসলাম, কিন্তু কি বলব ভেবে পেলাম না। এই বয়সের মানুষ কি ধরনের গল্প পছন্দ করে? পরকালের গল্প? ধর্ম? আমি জানি, একটা বিশেষ বয়সের পর মানুষজন ঘোর আস্তিক হয়ে যায়। কঠিনভাবে ধর্ম-কর্ম পালন করে। ধর্মের কথা শুনতে ভালবাসে। মৃত্যুতেই সব শেষ না–মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকার সম্ভাবনাই তাদের জন্যে মৃত্যু নামক অমোঘ বিধান। মেনে নিতে সাহায্য করে।

    আমি বললাম, আপনি বলুন আমি শুনি। পরকাল সম্বন্ধে বলুন। মৃত্যুর পর কি হবে?

    তিনি চোখ পিটপিট করে বললেন, মৃত্যুর পর কি হবে মানে? কিছুই হবে না। শরীর পঁচে-গলে যাবে। শরীরের যে ফান্ডামেন্টাল পার্টিকেলস আছে–ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রন এরা ছড়িয়ে পড়বে চারদিকে। ফান্ডামেন্টাল পার্টিকেলস-এর ক্ষয় নেই। কাজেই এদেরও ক্ষয় হবে না।

    ‘আপনি কি ধর্ম-টর্ম বিশ্বাস করেন না?”

    তিনি উত্তরে এমন সব কথা বলতে লাগলেন যা শুনলে ঘোর নাস্তিকরাও নড়ে-চড়ে বসবে এবং বলবে–বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। এতটা বাড়াবাড়ি ভাল না। সালমান রুশদী তার কাছে কিছু না। একটু আগে যিনি নবীজীর খেজাব ব্যবহারের হাদিস দিলেন সেই তিনিই তার সম্পর্কে এমন সব উক্তি করতে লাগলেন যা শুনলে নিরীহ টাইপের মুসলমানরাও চাকু হাতে তার পায়ের রগ খুঁজতে বের হয়ে যাবে। এই আলোচনা আমার তেমন পছন্দ হচ্ছিল না। আরবের মরুভূমির একজন নিরক্ষর ধর্মপ্রচারক হয়েও যিনি সেই সময়কার ভয়াবহ আইয়ামে জাহেলিয়াত লোকজনদের মন মানসিকতাই শুধু পরিবর্তন করেননি–সারা পৃথিবীতে এই ধর্মের বাণী ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তাকে তুচ্ছ করা ঠিক না। সমাজে অবিশ্বাসী তো থাকতেই পারে। অবিশ্বাসীদের যে কুৎসা ছড়াতে হবে তা তো না। আমি লক্ষ করেছি, অবিশ্বাসীরা কুৎসা ছড়ানো তাদের পবিত্র কর্তব্য বলে মনে করেন। বছর দু-এক আগে যীশু খ্রিস্ট সম্পর্কে জনৈক আমেরিকান স্কনার (?)-এর একটি লেখা পড়েছিলাম, যাতে তিনি প্রমাণ করতে চেষ্টা করেছেন যে, যীশু খ্রিস্ট ছিলেন একজন হমোসেকসুয়েল।

    আমি লালচুল এই ভদ্রলোকের সঙ্গে তর্কে যেতে পারতাম। ইচ্ছা করল না। তার। চেয়েও বড় কথা, ধর্ম সম্পর্কে আমার পড়াশোনাও তেমন নেই। ভদ্রলোকের দেখলাম। পড়াশোনা ব্যাপক। কোরান শরীফ থেকে মূল আরবী এবং সেখান থেকে সরাসরি ইংরেজী অনুবাদ যেভাবে স্মৃতি থেকে বের করতে লাগলেন তা আমার মত মানুষকে ভড়কে দেয়ার জন্যে যথেষ্ট।

    সন্ধ্যা হয়ে গেছে, আমার উঠা দরকার। উসখুস করছি। ভদ্রলোক যে উৎসাহের সঙ্গে কথা বলছেন তাতে তাকে থামাতেও মন সায় দিচ্ছে না। তিনি এর মধ্যে চায়ের কথা বলেছেন। আমি তাতেও আগ্রহ বোধ করছি না। এ বাড়িতে কাজের মানুষ চা বানানো এখনো শিখেনি। আগের চা-টা দু চুমুক দিয়ে রেখে দিয়েছি। নতুন চা এরচে’ ভাল হবে এই আশা করা বৃথা। এমন সময় এক কাণ্ড হল, লালচুল ভদ্রলোক হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, একটু বসুন। মাগরেবের নামাজের সময় হয়েছে। নামাজটা শেষ করে আসি। মাগরেবের নামাজের জন্যে নির্ধারিত সময় আবার অল্প। আমি মনে মনে বললাম–”হলি কাউ।”

    ভদ্রলোক নামাজ পড়ার জন্যে সময় বেশি নিলেন না। কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরে এসে বসলেন। হাসিমুখে বললেন, স্যরি, আপনাকে বসিয়ে রাখলাম। তাহলে আবার ডিসকাশন শুরু করা যাক–তিনি আবারো কথা বলা শুরু করলেন। কথার মূল বিষয় হচ্ছে–ধর্ম মানুষের তৈরি, আল্লাহ মানুষ তৈরি করেননি। মানুষই আল্লাহ তৈরি করেছে।

    আমি বললাম, আপনি ঘোর নাস্তিক। কিন্তু একটু আগে নামাজ পড়তে দেখলাম। নামাজ পড়েন!

    ‘হ্যাঁ পড়ি। গত পঁচিশ বছর যাবত পড়ছি। খুব কমই নামাজ কাজা হয়েছে।‘

    ‘রোজাও রাখেন?’

    ‘অবশ্যই।‘

    ‘পঁচিশ বছর ধরে রাখছেন?’

    ‘হবে, তবে দু’বার রাখতে পারিনি। একবার গল ব্লাডারের জন্যে অপারেশন হল তখন, আরেকবার–হার্নিয়া অপারেশনের সময়। দুটাই পড়ে গেল রমজান মাসে।‘

    ‘ঘোর নাস্তিক একজন মানুষ নামাজ-রোজা পড়ছেন এটা আপনি ব্যাখ্যা করবেন কি ভাবে? আপনি তো মন থেকে কিছু বিশ্বাস করছেন না। অভ্যাসের মত করে যাচ্ছেন। তাই না কি!’

    ভদ্রলোক জবাব দিলেন না। আমি বললাম, না-কি আপনার মনে সামান্যতম হলেও সংশয় আছে?

    ‘না, আমার মনে কোন সংশয় নেই। আমার নামাজ-রোজার পেছনে একটি গল্প আছে। শুনতে চাইলে বলতে পারি।‘

    ‘বলুন।‘

    ‘আমি জজীয়তি করতাম। তখন আমি বরিশালের সেসান ও দায়রা জজ। আমি কঠিন প্রকৃতির মানুষ। খানিকটা বোধহয় নির্দয়। অপরাধ প্রমাণিত হলে কম শাস্তি দেবার মানসিকতা আমার ছিল না। অপরাধ করেছে, শাস্তি ভোগ করবে। এই আমার নীতি। দয়া যদি কেউ দেখাতে চায় তাহলে আল্লাহ বলে যদি কেউ থাকে সে দেখাবে। আল্লাহ দয়ালু। আমি দয়ালু না।

    এই সময় আমার কোর্টে একটি মামলা এল। খুনের মামলা। সাত বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে খুন হয়েছে। পাশের বাড়ির ভদ্রমহিলা মেয়েটিকে ডেকে নিয়ে গেছে, তারপর সে আর তার স্বামী মিলে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। জমিজমা নিয়ে শত্রুতার জের। সাক্ষ্য-প্রমাণ সবই আছে। আমার মনটা খারাপ হল। শত্রুতা থাকতে পারে। তার জন্যে বাচ্চা একটা মেয়ে কেন প্রাণ হারাবে? মেয়েটার বাবা সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদতে কাঁদতে কাঠগড়াতেই অজ্ঞান হয়ে গেল।

    মামলা বেশিদিন চলল না। আমি মামলার রায় দেবার দিন ঠিক করলাম। যেদিন রায় হবে তার আগের রাতে রায় লিখলাম। সময় লাগল। হত্যা মামলার রায় খুব সাবধানে লিখতে হয়। এমনভাবে লিখতে হয় যেন আপিল হলে রায় না পাল্টায়। আমি মৃত্যুদণ্ড দেব, আপিলে তা খারিজ হয়ে যাবে, তা হয় না।

    আমি স্বামীটিকে মৃত্যুদণ্ড দিলাম। তার স্ত্রীকেও মৃত্যুদণ্ড দেবার ইচ্ছা ছিল। এই মহিলাই বাচ্চা মেয়েটিকে ডেকে নিয়ে এসেছে। প্রধান অপরাধী সে। আইনের হাত সবার জন্যেই সমান হলেও মেয়েদের ব্যাপারে কিছু নমনীয় থাকে। আমি মহিলাকে দিলাম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

    রায় লেখা শেষ হল রাত তিনটার দিকে। আমি হাত-মুখ ধুয়ে নিজেই লেবুর সরবত বানিয়ে খেলাম। খুব ক্লান্ত ছিলাম। বিছানায় শোয়া মাত্র ঘুমিয়ে পড়লাম। গভীর ঘুম। এমন গাঢ় নিদ্রা আমার এর আগে কখনো হয়নি।

    আমি একটা স্বপ্ন দেখলাম। স্বপ্নের অংশটি মন দিয়ে শুনুন। স্বপ্নে দেখলাম, ৭/৮ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে। কোকড়ানো চুল। মেয়েটি আমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। সে তার নাম-টাম কিছুই বলল না। কিন্তু মেয়েটিকে দেখেই বুঝলাম–এ হল সেই মেয়ে যার হত্যার জন্যে আমি রায় লিখেছি। একজনের ফাঁসি এবং অন্যজনের যাবজ্জীবন। আমি বললাম, কি খুকী, ভাল আছ?

    মেয়েটি বলল, হুঁ।

    ‘কিছু বলবে খুকী?’

    ‘হুঁ।‘

    ‘বল।”

    মেয়েটি খুব স্পষ্ট করে বলল, আপনি ভুল বিচার করেছেন। এরা আমাকে মারে নি। মেরেছে আমার বাবা। বাবা দা দিয়ে কুপিয়ে আমাকে মেরে দা’টা ওদের খড়ের। গাদায় লুকিয়ে রেখেছে। যাতে ওদেরকে মামলায় জড়ানো যায়। ওদের শাস্তি দেয়া যায়। আমাকে মেরে বাবা ওদের শাস্তি দিতে চায়।

    ‘তুমি এসব কি বলছ? অন্যকে শাস্তি দেয়ার জন্য কেউ নিজের মেয়েকে মারবে?”

    মেয়েটি জবাব দিল না। সে তার ফ্রকের কোণা দিয়ে চোখ মুছতে লাগল।

    আমার স্বপ্ন ভেঙে গেল। দেখলাম ভোর প্রায় হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে ফজরের আজান হল। আমি রান্নাঘরে ঢুকে নিজেই এক কাপ চা বানিয়ে খেলাম। স্বপ্নের ব্যাপারটিকে তেমন গুরুত্ব দিলাম না। স্বপ্ন গুরুত্ব দেয়ার মত কোন বিষয় না। দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ এইসবই স্বপ্ন হয়ে দেখা দেয়। আমি মামলাটা নিয়ে অনেক চিন্তা-ভাবনা করেছি। স্বপ্ন হচ্ছে সেই চিন্তারই ফসল। আর কিছু না।

    স্বপ্নের উপর নির্ভর করে বিচার চলে না।

    রায় নিয়ে কোর্টে গেলাম। কোর্ট ভর্তি মানুষ। সবাই এই চাঞ্চল্যকর মামলার রায় শুনতে চায়।

    রায় প্রায় পড়তেই যাচ্ছিলাম হঠাৎ কি মনে হল–বলে বসলাম, এই মামলার তদন্তে আমি সন্তুষ্ট নই। আবার তদন্তের নির্দেশ দিচ্ছি। কোর্টে বিরাট হৈচৈ হল। আমি কোর্ট এডজড় করে বাসায় চলে এলাম। আমার কিছু বদনামও হল। কেউ কেউ বলতে লাগল, আমি টাকা খেয়েছি। আমি নিজে আমার দুর্বলতার জন্যে মানসিকভাবে খানিকটা বিপর্যস্তও হলাম। আমার মত মানুষ স্বপ্নের মত অতি তুচ্ছ একটা ব্যাপার দ্বারা পরিচালিত হবে, তা হতে পারে না। আমার উচিত জজীয়তি ছেড়ে দিয়ে আলুর ব্যবসা করা।

    যাই হোক, সেই মামলার পুনঃ তদন্ত হল। আশ্চর্যের ব্যাপার, মেয়েটির বাবা নিজেই হত্যাপরাধ স্বীকার করল। এবং আদালতের কাছে শাস্তি প্রার্থনা করল। আমি তার ফাঁসির হুকুম দিলাম। বরিশাল সেন্ট্রাল জেলে ফাঁসি কার্যকর হল। ঘটনার পর আমার মধ্যে সংশয় ঢুকে গেল। তাহলে কি পরকাল বলে কিছু আছে? মৃত্যুর পর আরেকটি জগৎ আছে? ঘোর অবিশ্বাস নিয়ে ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা শুরু করলাম। নামাজ রোযা আরম্ভ হল। আশা ছিল, এতে আমার সংশয় দূর হবে। যতই পড়ি ততই আমার। সংশয় বাড়ে। ততই মনে হয় God is created by man. তারপর নামাজ পড়ি এবং প্রার্থনা করি–বলি, হে মহাশক্তি, তুমি আমার সংশয় দূর কর। কিন্তু এই সংশয় দূর হবার নয়।

    ‘নয় কেন?’

    কারণ আমাদের পবিত্র গ্রন্থেই আছে–সূরা বাকারার সপ্তম অধ্যায়ে বলা আছে।

    “Allah hath set a seal
    On their hearts and on their hearing
    And on their eyes is a veil.”

    “আল্লাহ তাদের হৃদয় এবং শ্রবণেন্দ্রিয়কে ঢেকে দিয়েছেন, এবং টেনে দিয়েছেন চোখের উপর পর্দা।”

    আমি তাদেরই একজন। আমার মুক্তি নেই।

    ভদ্রলোক চুপ করলেন। আমি বিদায় নেবার জন্যে উঠলাম। তিনি আমাকে বাড়ির গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। আমি বললাম, আপনি আসছেন কেন? আপনি আসবেন না। তিনি মুখ কুঁচকে বললেন, আমাদের নবীজীর একটা হাদিস আছে। নবীজী বলেছেন–কোন অতিথি এলে তাকে বিদায়ের সময় বাড়ির গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিও।

    এই বলেই তিনি বিড়বিড় করে নবী সম্পর্কে অত্যন্ত আপত্তিকর কিছু কথা বলে বাড়ির দিকে রওনা হলেন। সম্ভবত এশার নামাজের সময় হয়ে গেছে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleমীরার গ্রামের বাড়ী – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article হুমায়ূন আহমেদ রচনাবলী ১১

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ রচনাবলী ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    মীরার গ্রামের বাড়ী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    দেবী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }