Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প143 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৬. সুলতান সাহেব

    ০৬.

    সুলতান সাহেব খুবই বিরক্তিবোধ করছেন। তিনি গ্রামের বাড়িতে এসেছেন বলেই যখন তখন যে কেউ তার ঘরে ঢুকে পড়বে তা মেনে নিতে পারছেন না। আবার কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে এলে তিনি বলবেন- এখন দেখা হবে না। পরে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে আসতে হবে। সেটাও তার কাছে। গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে না। গ্রামে তিনি সহজ সাধারণ একজন হিসেবে থাকতে চান। এমন একজন যার কাছে যে কেউ যে কোন সময় আসতে পারে A man has many faces. তার গ্রামের যে ছবি তা তাঁর কর্মজীবনের ছবির মত হবে না। কিন্তু তা বোধহয় হবার নয়। মানুষের খুব সম্ভব একটা Face ই থাকে।

    তাঁর কাছে এই মুহূর্তে একজন দেখা করতে এসেছে। দর্শনপ্রার্থীরা নাম ছদরুল বেপারী। বেপারী কারো নাম হতে পারে না। ব্যবসা করলেই নামের শেষে বেপারী যুক্ত করার নিয়ম থাকলে তার নিজের নাম হত সুলতান অ্যাম্বেসেডর। লোকটার টাকা পয়সা আছে বলে সবাই তাকে তোয়াজ করছে। সেও নিশ্চয়ই তোয়াজ পেয়ে অভ্যস্থ হয়ে গেছে। ধরেই নিয়েছে সে যখন ইচ্ছা, যার সঙ্গে ইচ্ছা, দেখা করতে পারে। এ ধারণা ভেঙ্গে দেয়া দরকার। তিনি ঠিক করলেন রমিজকে বলবেন- আজ তিনি দেখা করবেন না। তার শরীর ভাল নেই।

    তাঁর শরীর ভালই আছে। মনটা ভাল নেই। শরীর মনের ওজন বহন করে। কোন কারণে মন ভারী হলে শরীরের সেই ওজন বহন করতে কষ্ট হয়। এই কষ্টটা তার এখন হচ্ছে। রানু তার মন খারাপ করে দিয়েছে। তাঁর সম্পর্কে রানুর ধারণা যে এতটা খারাপ তিনি বুঝতে পারেন নি। তাঁর বোঝা উচিত ছিল। রানু তাকে বুঝতে দেয় নি। এই বিষয়েও রানুর সঙ্গে কথা বলা দরকার। সেই কথাগুলো গুছিয়ে নেবার জন্যেও সময় লাগবে।

    প্রিয়জনদের সঙ্গে মানুষ সব সময় কঠিন যুদ্ধ করে। আদর্শের যুদ্ধ। পছন্দ অপছন্দের যুদ্ধ। মানসিকতার যুদ্ধ। সেই যুদ্ধ মধ্যযুগের তলোয়ার বশীর যুদ্ধের চেয়ে কম ভয়াবহ যুদ্ধ না। সেই যুদ্ধেও আহত হবার মত ব্যাপার ঘটে। রক্তক্ষরণ হয়। যে কোন যুদ্ধে প্রস্তুতি লাগে। অস্ত্র শানিয়ে নিতে হয়। তূণে ধারালো তীর জমা করতে হয়। তাঁকে এই কাজটা করতে হবে। যুদ্ধে নেমে যেন অস্ত্রের অভাবে যুদ্ধ বন্ধ করতে না হয়। এমন এক জটিল সময়ে ছদরুল বেপারীর সঙ্গে কেমন আছেন, ভাল আছি টাইপ কথা বলা সম্ভব না।

    সুলতান সাহেব রমিজকে বললেন, আমার সঙ্গে যিনি দেখা করতে এসেছেন তাঁকে গিয়ে বল আমি এখন পড়াশোনা করছি। তিনি যেন পরে আসেন। তাঁর সঙ্গে পরে কথা বলব।

    রমিজ অবাক হয়ে বলল, চলে যেতে বলব?

    সুলতান সাহেব ভুরু কুঁচকে বললেন, হ্যাঁ চলে যেতে বলবে। তবে খুব ভদ্রভাবে বলবে।

    রমিজ ইতঃস্তত করে বলল, ছদরুল বেপারী খুবই বিশিষ্ট লোক।

    যত বিশিষ্টই হোক আমি এখন নিচে নামব না।

    সুলতান সাহেব বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলেন রমিজ দাঁড়িয়ে আছে যেতে চাচ্ছে না। রমিজকে প্রচণ্ড ধমক দেয়া উচিত। তিনি ধমক দিলেন না। সহজ গলায় বললেন, ঠিক আছে উনাকে বসতে বল, আমি আসছি। আর দুকাপ চা দাও। ঘরে কোন খাবার থাকলে দাও।

    রমিজের মুখে হাসি দেখা গেল। মনে হল সে বিরাট বিপদের হাত থেকে অল্পের জন্যে রক্ষা পেয়েছে। ছদরুল বেপারীর মত বিশিষ্ট লোককে অপমানের হাত থেকে রক্ষা করেছে।

    সুলতান সাহেবকে দেখে ছদরুল বেপারী উঠে দাঁড়াল। অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বলল, স্যার আমি খুবই শরমিন্দা যে আপনারে বিরক্ত করতেছি। বিশ্রাম করতেছিলেন।

    কোন অসুবিধা নেই। বসুন।

    আপনাকে দেখার বড়ই শখ ছিল। শখ মিটানোর জন্যে এসেছি।

    শখ মিটেছে?

    জ্বি মিটেছে। আমার মনে যখন যে শখ উঠে শখ মিটায়ে ফেলার চেষ্টা করি। মওলানা ইস্কান্দর সাহেবকে দেখনের শখ ছিল, দেখলাম। আপনেরে দেখনের শখ ছিল, দেখলাম। লোকজন তাজমহল দেখতে যায়, সমুদ্র দেখতে যায়। আমি যাই মানুষ দেখতে। আসল মজা মানুষের মধ্যে। সুলতান সাহেব লোকটির কথা বলার কায়দায় অবাক হলেন অশিক্ষিত মানুষ এমন গুছিয়ে কথা বলে না। সুলতান সাহেব বললেন, আপনার প্রধান কাজ তাহলে মানুষ দেখে বেড়ানো?

    ছদরুল বেপারী সঙ্গে সঙ্গে বলল, জ্বি না। এটা আমার শখ। কোন মানুষ সম্পর্কে যখন বিশেষ কিছু শুনি তখন মানুষটারে দেখতে ইচ্ছা করে।

    আমার সম্পর্কে বিশেষ কি শুনেছেন?

    অনেক কিছু শুনেছি জনাব। আপনি একটা বই লিখেছেন। সেই বই সংগ্রহ করে পড়েছি। অত্যন্ত তৃপ্তি পেয়েছি। কিছু অতি সত্য কথা বলেছেন।

    সুলতান সাহেব ভুরু কুঁচকে গেল। একটি বই তিনি ঠিকই লিখেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে লেখা বই। নাম The End game ইংরেজীতে লেখা এই বই সামনে বসে থাকা লুঙ্গি ফতোয়া পরা মানুষটা পড়েছে এটা বিশ্বাসযোগ্য না। বই ছাপা হয়েছে মোট এক হাজার কপি। এই বই সংগ্রহ করাই মুশকিল।

    আপনি আমার বইটা পড়েছেন?

    জ্বি জনাব।

    বইটা ইংরেজীতে লেখা।

    জ্বি জনাব। আমার সেক্রেটারীকে বলেছি সে বাংলা করে আমকে শুনায়েছে।

    বই এর কোন জায়গাটা আপনার ভাল লেগেছে?

    ছদরুল বেপারীর হাসি মুখে বলল, আপনার বোধ হয় মনে সন্দেহ হয়েছে বইটা আমি পড়ি নাই। আপনার সঙ্গে দেখা করব ঠিক করার পর আপনার সম্পর্কে জানার জন্যে বইটা ঢাকা থেকে এনে পড়ার ব্যবস্থা করেছি। বইয়ের কোন জায়গাটা ভাল লেগেছে জানতে চেয়েছেন- নামটা ভাল লেগেছে। নাম দিয়েছেন শেষ খেলা অথচ বইটাতে বলেছেন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার কথা। এইটা ভাল হয়েছে। জনাব যদি ইজাজত দেন তাহলে উঠি?

    এখন উঠবেন কেন? চা খান।

    জ্বি না, চা খাব না। জনাব উঠি।

    ছদরুল বেপারী উঠে দাঁড়াল।

    সুলতান সাহেব বললেন, বসুন বসুন। এসেই চলে যাচ্ছেন। আপনি যেমন আমার ব্যাপারে কৌতূহল বোধ করছেন। আমিও করছি। আপনি একজন বিশিষ্ট মানুষ।

    জনাব, আমি মাটির কৃমি। বিশিষ্ট কিছু না। তারপরও যদি আমার। বিষয়ে কিছু জানতে চান বলেন।

    নামের শেষে বেপারী যুক্ত করেছেন কেন?

    ছদরুল বেপারী বসলেন না, দাঁড়িয়ে থেকেই বললেন, নিজে কিছু যুক্ত করি নাই। লোকের মুখে মুখে বেপারী হয়েছি। আমি এতেই খুশি। লোকজন ইচ্ছা করলে আমারে ছদরুল-চোরা বলতে পারত। ছোটবেলায় চুরি-চামারি করতাম। আমার ভাগ্য কেউ চোর বলে না।

    এখানকার স্কুল ফান্ডে আপনি ডোনেশন দিচ্ছেন বলে শুনতে পাচ্ছি।

    জ্বি দিচ্ছি। টাকা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি। আমি আবার নগদ কারবারে বিশ্বাস করি।

    সুলতান সাহেব জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলেন দানের পরিমানটা কত। শেষ মুহূর্তে নিজেকে সামলালেন। এমন অরুচিকর একটা প্রশ্ন যে তাঁর মনে এসেছে। এজন্যেও তাঁর লজ্জা লাগছে।

    ছদরুল বেপারী গলা খাকারি দিয়ে বললেন, স্যারের মনে হয় জানার ইচ্ছা কতটাকা দিতেছি। প্রথম দফায় দশ লাখ টাকা। এটা ছাড়া মসজিদটা করে দিব। পুরানা মসজিদটা ভেঙে পড়ে গেল। মনটা খারাপ হয়েছে। আমি নিজে নামাজ পড়ি না তাতে কি অন্য দশজন তো পড়ে। জনাব যাই। অনেক বিরক্ত করেছি। যাবার আগে আরেকটা কথা বলে যাই বেয়াদবী মাফ করে দেবেন। আপনি যে বইটা লিখেছেন তার নামটাই শুধু ভাল হয়েছে। বইটা ভাল হয় নাই।

    ছদরুল বেপারী ঘর থেকেই বের হয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেল। বাগানে একটা পরী হাঁটছে। পরী তো অবশ্যই। পৃথিবীর কোন মেয়ে এত সুন্দর হতে পারে না। নিশ্চয়ই সুলতান সাহেবের মেয়ে। সবুজ রঙের শাড়ি পরেছে। সবুজ গাছপালার ভেতর সুবজ রঙের শাড়ি। বাগানের সঙ্গে মেয়েটার মিশে যাবার কথা। মিশে যায় নি। মনে হচ্ছে সমস্ত বাগান এক দিকে আর মেয়েটি অন্যদিকে। ছদরুল বেপারীর চোখ চকচক করছে। মেয়েটা নিজের মনে হাঁটছে। ছদরুল বেপারীর দিকে তাকাচ্ছে না। এটা ভাল। চোখে চোখ পড়লে ছদরুল বেপারীকে চলে যেতে হবে। চোখ না পড়া পর্যন্ত তাকিয়ে থাকায় কোন দোষ নেই।

    .

    সুলতান সাহেব ইজিচেয়ার টেনে জানালার কাছে নিয়ে এলেন। তাঁর মন পুরোপুরি বিক্ষিপ্ত। তারপরেও কেন জানি ঘুম ঘুম পাচ্ছে। অভ্যস্ত জীবন যাত্রা থেকে সরে এলে সিস্টেমে গণ্ডগোল হয়ে যায়। যখন ঘুম পাবার কথা না, তখন ঘুম পায়। ঘুমের সময় বিছানায় বসে থাকতে হয়।

    আয়োজন করে ঘুমুতে গেলে ঘুম হবে না। তিনি বেশ আয়োজন করেই ইজিচেয়ারে নিজেকে এলিয়ে দিলেন। মাথার নিচে বালিশ। হাত-পা ছড়ানো। আয়োজন দেখেই ঘুমের পালিয়ে যাবার কথা।

    বাবা, আমার দিকে একটু তাকিয়ে দেখ তো!

    সুলতান সাহেব চোখ মেললেন। রানু তার সামনে দাঁড়িয়ে। রানুর মুখ হাসিহাসি। তাকে দেখে মনে হচ্ছে তার জীবন স্বচ্ছ এবং আনন্দময়। বাবার সঙ্গে কথা বলেও সে তৃপ্তি পাচ্ছে।

    আমাকে কেমন দেখাচ্ছে বাবা?

    খুবই সুন্দর দেখাচ্ছে। সবুজ শাড়ি পরার জন্যে বন-পরী লাগছে।

    বন-পরী আবার তুমি কোথায় পেলে? জল-পরী আছে। বন-পরী বলে কিছু নেই।

    গ্রীক মিথলজীতে বন-পরী আছে। এরা একগাছ থেকে আরেক গাছে। উড়ে উড়ে বেড়ায়। এদের স্বভাবও খানিকটা উগ্র।

    উগ্র স্বভাবের বন-পরী হয়ে লাভ নেই। আমাকে খুবই সুন্দর লাগছে। কি-না সেটা বল।

    যে সুন্দর তাকে সবসময় সুন্দর লাগে। ছেঁড়া কাঁথা গায়ে দিয়ে বের হলেও তাকে দেখে মনে হবে– ছেঁড়া কাঁথাতে তার সৌন্দর্য ফুটেছে।

    দশের মধ্যে তুমি আমাকে কত দেবে?

    দশে সাড়ে আট।

    আমি কিছুক্ষণ পর অন্য একটা শাড়ি পরে আসব। তখনো তুমি নাম্বার দেবে। তিনটা শাড়ি পরব। এর মধ্যে যে শাড়িটায় আমাকে সবচে সুন্দর লাগবে সেইটা পরে নাটক দেখতে যাব।

    তিনটায় যদি একই রকম ভাল লাগে তখন কি করবি?

    তখন টস করব। বাবা শোন, তুমি তো যাচ্ছ না, তাই না?

    না, যাচ্ছি না।

    আমি রমিজ ভাইকে নিয়ে যাব। তুমি কোন দুঃশ্চিন্তা করবে না।

    আমি দুঃশ্চিন্তা করছি না।

    তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে ঘুমে তোমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। প্লিজ, ঘুমুবে না। তুমি হচ্ছ বিউটি কনটেস্টের বিচারক।

    তোকে এত খুশি খুশি লাগছে কেন?

    নকল খুশি বাবা। চিত্রা অভিনয় করে স্টেজে অনেক দর্শকের সামনে। আমি করি বাড়িতে। আমার দর্শক একজন- তুমি।

    সুলতান সাহেব শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসতে বসতে বললেন, একটা কথার জবাব দিয়ে যা, তুই কি আমাকে খুবই অপছন্দ করিস।

    রানু বলল, হ্যাঁ।

    কেন?

    একবার তো বলেছি কেন।

    আমার মধ্যে প্রচুর ভান এই জন্যে?

    হ্যাঁ। তোমাকে আমার নকল মানুষ মনে হয়।

    আধুনিক শিক্ষিত মানুষ মাত্রই নকল মানুষ। বোস আমার সামনে ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করি।

    বক্তৃতা শুনতে একদম ইচ্ছা করছে না।

    বক্তৃতা না। আসল মানুষ, নকল মানুষ ব্যাপারটা শুধু ব্যাখ্যা করব। দুমিনিটের বেশি লাগবে না।

    রানু বাবার ডানপাশের খাটে পা ঝুলিয়ে বসল। সে পা নাচাচ্ছে। সুলতান সাহেব লক্ষ্য করলেন, রানু পায়ে আলতা দিয়েছে। আলতা দেয়া ভাল হয় নি। রঙ লেপ্টে গেছে। তারপরেও সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে আলতা এভাবেই দিতে হয়। সুলতান সাহেব সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললেন– মনে করা যাক খনি থেকে একখণ্ড হীরক পাওয়া গেল। এই হীরাটাকে আমরা বলব আসল। কারণ হীরাটা আছে Crude ফর্মে। সেই হীরা পলিশ করা হল। হীরা কাটা হল। অর্থাৎ Crude হীরা আধুনিক হল। তুই আধুনিক হীরাকে বললি নকল।

    রানু বলল, তোমার যুক্তি আমার কাছে খুবই এলোমেলো মনে হচ্ছে। হীরাকে পলিশ করলে বা কাটলে যা থাকে তাও হীরা। আগে আসল পরেও আসল। এক টুকরা কাঁচ যদি দেখতে হীরার মত হয় সেটা হল নকল।

    হ্যাঁ।

    তোর মার সঙ্গে আমার বনিবনা হয় নি এই কারণে আমি নকল?

    উল্টো। মাকে তো আমি নকল বলছি না। বনিবনা তো মারও তোমার সঙ্গে হয় নি। মাকে আসল বলছি।

    নকল হলেও তোমার আলো খুবই প্রবল। চোখ ধাঁধিয়ে যায়। এই জন্যে আমি ঠিক করেছি তোমার সঙ্গে থাকব না।

    সুলতান সাহেব শান্ত গলায় বললেন, কোথায় যাবি?

    কোথায় যাব এখনো ঠিক করি নি। তবে মার কাছে গিয়ে মাকে বিব্রত করব না। হুট করে কোন এক জায়গায় চলে যাব। আসল কোন মানুষকে গিয়ে বলব– আমাকে আশ্রয় দিন।

    আসল-নকল চিনবি কিভাবে তোর কাছে কষ্টিপাথর আছে?

    হ্যাঁ আছে।

    তুই কি জানিস তুই অসুস্থ? খুবই অসুস্থ।

    যে অসুস্থ তার কাছেই সুস্থ মানুষকে অসুস্থ মনে হয়।

    তোর ধারণা আমি অসুস্থ?

    হ্যাঁ।

    এবং তুই আমাকে ছেড়ে চলে যাবি?

    হ্যাঁ।

    সেই ঘটনাটা কবে ঘটবে?

    যে কোনদিন ঘটতে পারে। আজও ঘটতে পারে।

    সুলতান সাহেব তাকিয়ে আছেন। রানু উঠে দাঁড়াল। হাসিমুখে বলল, বাবা এখন যাই। অন্য একটা শাড়ি পরে আসি। মনে রাখবে সবুজ শাড়িতে তুমি আমাকে দিয়েছ সাড়ে আট। সুলতান সাহেব জবাব দিলেন না। মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

    মেয়ের সঙ্গে কথাবার্তার পর তার ঘুম চলে যাবার কথা। কিন্তু ঘুম যাচ্ছে না। তাঁর মনে হল তিনি মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। মানসিক ক্লান্তি ছড়িয়েছে শরীরে। তাঁর শরীর ক্লান্ত হচ্ছে। ঘুম পাচ্ছে। কিন্তু তাকে ঘুমুলে চলবে না। তাকে জেগে থাকতে হবে।

    বাবা তাকাও।

    সুলতান সাহেব তাকালেন। রানু এবার হলুদ শাড়ি পরে এসেছে হলুদ শাড়ি লাল পাড়। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান কিংবা পহেলা ফাল্গুনে মেয়েরা এধরণের শাড়ি পরে।

    কেমন লাগছে বাবা।

    খুব সুন্দর লাগছে।

    দশে কত দেবে?

    সাড়ে আট।

    সামান্য বাড়ানো যায় না?

    না।

    প্লিজ বাবা, নয় করে দাও।

    রানু হাত জোড় করে তার সামনে দাঁড়িয়েছে। তার মুখ ভর্তি হাসি। মেয়েটা আজ বড়ই আনন্দে আছে। সুলতান সাহেবের বুকে হঠাৎ ধাক্কার মত লাগল। তার মেয়েটা অসুস্থ। অসুস্থ অবস্থায় সে ভয়াবহ কাণ্ড মাঝে মধ্যে করে। ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ার মত ভয়ংকর কিছু। কাণ্ডটা যখন করে তার আগে আগে সে খুব আনন্দে থাকে। এবং চোখে পড়ার মত সাজগোজ করে।

    রানু বলল, বাবা তুমি এমন ঝিম মেরে আছ কেন? কিছু বল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    একটি সাইকেল এবং কয়েকটি ডাহুক পাখি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }