Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    একটুখানি বিজ্ঞান – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প204 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৮. গ্রহ

    গ্রহ

    21. ভূমিকম্প

    1987 সালের অক্টোবর মাসের 1 তারিখ ভোরবেলা আমি বাথরুমে গিয়েছি হঠাৎ করে মনে হলো আমার পায়ের তলার মেঝেটি একটি জীবন্ত প্রাণীর মতো ছটফট করে সরে যেতে শুরু করেছে। আমি তখন দক্ষিণ ক্যালিফোরনিয়ার প্যাসাডিনা এলাকায় থাকি এবং সবাই জানে এই এলাকায় সান এন্ড্রিয়াস ফল্ট লাইনটির কারণে যে কোনোদিন এখানে একটা ভয়াবহ ভূমিকম্প হবে–আমার ধারণা হলো এটিই বুঝি সেটি। আমার ছোট ছেলে এবং স্ত্রীকে নিয়ে দোতলা থেকে নেমে বাইরে যাওয়ার জন্যে যখন ছুটছি তখন অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম ভয়ংকর ভূমিকম্পটি আমাকে করিডোরের এক পাশ থেকে অন্য পাশে ছুঁড়ে দিচ্ছে আমি এগুতেই পারছি না। কোনোভাবে বাইরে এসে দাঁড়িয়েছি এবং দেখছি একটু পরপর ভূমিকম্প ছুটে আসছে ঢেউয়ের মতো। ভূমিকম্প যে মাটির উপর দিয়ে ছুটে আসতে পারে সেটি আমি এর আগে কখনো দেখি নি!

    রিক্টর স্কেলে সেই ভূমিকম্পটি ছিল ছয়! ছয় ভয়াবহ ভূমিকম্প নয় কিন্তু এতেই প্যাসাডিনা এলাকার অনেক ফ্রী ওয়ে ধ্বসে পড়েছিল, মানুষজনও মারা গিয়েছিল। আমার দেখা এটাই ছিল সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প এবং এটা দেখেই ভূমিকম্প বিষয়টির প্রতি আমার একটা শ্রদ্ধা মেশানো ভয়ের জন্ম হয়ে গেছে।

    অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ভূমিকম্প একটু অন্যরকম কারণ এটি কখন আসবে কেউ বলতে পারে না। বিজ্ঞানীরা খুব চেষ্টা করছেন ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী করতে কিন্তু এখন পর্যন্ত খুব লাভ হয় নি। 1975 সালের 4 ফেব্রুয়ারি চীন দেশের মাঞ্চুরিয়া প্রদেশের লিয়াওনিং এলাকার কর্মকর্তারা সেখানে একবার ঘোষণা দিয়েছিলেন সবাই যেন ঘরের বাইরে থাকে, চব্বিশ ঘণ্টার মাঝে একটা ভয়ংকর ভূমিকম্প আসবে। তখন কনকনে শীত, সেই শীতের মাঝে সবাই বাইরে থাকল এবং সত্যি সত্যি সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায় একটা ভয়ংকর ভূমিকম্প এসে পুরো এলাকাটাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে গেল। রিক্টর স্কেলে সেটি ছিল 7.3 তারপরেও মানুষের প্রাণের ক্ষয়ক্ষতি বলতে গেলে কিছুই হয় নি।

    কেউ যেন মনে না করে চীন দেশের বিজ্ঞানীরা ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেন কারণ 1976 সালের 27 জুলাই তাংশান এলাকায় হঠাৎ করে একটা ভূমিকম্পে প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ মারা পড়েছিল বিজ্ঞানীরা তার ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারেন নি। এরপর প্রায় এক মাসের ভেতর 1976 সালের আগস্ট মাসে কোয়াংটাং প্রদেশ বিজ্ঞানীরা ঘোষণা করলেন আবার একটা ভয়ংকর ভূমিকম্প আসছে। এলাকার মানুষজন ভয়ে একদিন-দুদিন নয় পাকা দুই মাস ঘরের বাইরে দিন কাটালো কিন্তু ভূমিকম্প এলো না!

    বিজ্ঞানীরা অবশ্যি একেবারে হাল ছেড়ে দেন নি, ভূমিকম্প ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্যে তারা এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ভূমিকম্পের ঠিক আগে আগে সেই এলাকায় বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের পরিবর্তন হয়, র‍্যাডন গ্যাস বের হয়ে আসে, ছোট ছোট ভূমিকম্পের দেখা দেয় এই ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা চলছে। আবার ভূমিকম্পের ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্যে সম্পূর্ণ অন্য একটি বিষয়কেও মাঝে মাঝে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় সেটি হচ্ছে পশুপাখিদের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। অনেক জায়গাতেই দেখা গেছে ভূমিকম্পের ঠিক আগে আগে মোরগ-মুরগি গাছের উপরে উঠে বসে থাকে, শূকর একেবারে চুপ করে যায়, হাঁস পানি থেকে উঠে আসে এবং কুকুর অবিশ্রান্তভাবে ডাকাডাকি শুরু করে। ঠিক কী কারণে পশুপাখি এ-রকম ব্যবহার করে সেটি এখনো পুরাপুরি জানা যায় নি, পরিবেশের কোনো একটা সূক্ষ্ম পরিবর্তন তারা আঁচ করতে পারে যেটা মানুষ কিংবা মানুষের যন্ত্রপাতি এখনো ধরতে পারে না।

    ভূমিকম্পের সময় যে ক্ষয়ক্ষতি হয় তার কারণ হচ্ছে তিনটি ভিন্ন ধরনের তরঙ্গ। এর মাঝে দুটি তরঙ্গ পুরো মাটির ভেতর দিয়ে যায় তৃতীয়টি যায় শুধু মাত্র পৃষ্ঠদেশের ভেতর দিয়ে। যে তরঙ্গ দুটি পুরো মাটির ভেতর দিয়ে যায় তাদেরকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে, এক ভাগ তুলনামূলকভাবে দ্রুত চলে আসে, পাথরে এর গতিবেগ সেকেন্ডে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। এই ধরনের তরঙ্গকে বলে প্রাইমারি তরঙ্গ। এই তরঙ্গটি ঠিক শব্দতরঙ্গের মতো এবং মাঝে মাঝে যখন ভূমিকম্পের পর দূরে কোথায় মাটি ভেদ করে এই তরঙ্গ বের হয়ে আসে তখন সেটি শোনাও যায় (মানুষের কান অবশ্যি সকল শব্দ শুনতে পায় না, তরঙ্গের কম্পনটি যদি সেকেন্ডে বিশবারের কম হয় মানুষ সেটি শুনতে পারে না, অনেক প্রাণী শুনতে পারে এবং বিচলিত হয়ে উঠে!) প্রাইমারি তরঙ্গ বা সংক্ষেপে P-Waves কীভাবে পাথরের মাঝে সংকোচন এবং প্রসারণ তৈরি করে অগ্রসর হয় সেটি 21.3 নং ছবিতে দেখানো হয়েছে।

    প্রাইমারি বা P তরঙ্গের পর যে তরঙ্গটি ছুটে আসে তার নাম সেকন্ডারি তরঙ্গ বা সংক্ষেপে S-Waves। ছবিটি দেখলেই বোঝা যায় এটি যাবার সময় পাথর বা মাটিকে উপরে নিচে বা ডানে বামে দোলাতে থাকে। কোথাও ভূমিকম্প হবার পর প্রথমে প্রাইমারি ওয়েভ এসে হঠাৎ করে সবকিছু কাঁপিয়ে দেয়, তার কয়েক সেকেন্ড পর সেকন্ডারি ওয়েভ তার পুরো বিধ্বংসী ক্ষমতা নিয়ে হাজির হয়। তখন মাটি উপরে নিচে বা ডানে বামে কাঁপতে থাকে, সেই ভয়ংকর কম্পনে ঘরবাড়ি দালানকোঠা সবকিছু ধ্বসে পড়তে থাকে। সেকন্ডারি তরঙ্গ বা S-Waves কীভবে অগ্রসর হয় সেটি একই ছবির দ্বিতীয় অংশে দেখানো হয়েছে।

    সেকন্ডারি তরঙ্গের গতিবেগ সেকেন্ডে তিন কিলোমিটার, প্রাইমারি তরঙ্গের প্রায় অর্ধেক। প্রাইমারি তরঙ্গ পানির ভেতর দিয়েও চলে যেতে পারে কিন্তু সেকন্ডারি তরঙ্গ যেতে পারে না। তাই সমুদ্র বা মহাসমুদ্রের এক পাশে ভূমিকম্প হলে অন্য পাশে সেকন্ডারি তরঙ্গ এসে পৌঁছাতে পারে না।

    প্রাইমারি এবং সেকন্ডারি তরঙ্গ প্রবাহিত হবার জন্যে পুরো মাটিটুকু ব্যবহার হয়, তৃতীয় তরঙ্গটি প্রবাহিত হয় শুধুমাত্র পৃষ্ঠদেশ দিয়ে। 21.4 নং ছবিতে এই ধরনের তরঙ্গকে দেখানো হয়েছে। পৃষ্ঠদেশ দিয়ে যে তরঙ্গগুলো যায় সেগুলোকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে এক ভাগ যাবার সময় মাটিকে ডানে বামে কাঁপায় (উপরের ছবি) অন্য ভাগ কাঁপায় উপরে এবং নিচে (নিচের ছবি)। মাটির পৃষ্ঠদেশ দিয়ে যে তরঙ্গগুলো যায় সেগুলোর গতিবেগ প্রাইমারি এবং  সেকন্ডারি তরঙ্গ থেকেও কম। 21.6 নং ছবিতে সিসমোগ্রাফের একটা ছবি দেখানো হলো, ছবিতে দেখা যাচ্ছে সবচেয়ে আগে পৌঁচেছে প্রাইমারি তরঙ্গ (P-Waves), তারপর সেকন্ডারি তরঙ্গ s-Waves এবং সবার শেষে পৃষ্ঠদেশ তরঙ্গ।

    একটি ভূমিকম্প কত বড় তার পরিমাপ করার জন্যে রিক্টর স্কেল ব্যবহার করা হয়। আজ থেকে প্রায় বিশ বৎসর আগে শুনেছিলাম বিজ্ঞানীরা নাকি রিক্টর স্কেলের পরিবর্তে অন্য ধরনের স্কেল ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। যারা ভূমিকম্প নিয়ে গবেষণা করেন সত্যি সত্যি তারা একটা ভূমিকম্পকে ব্যাখ্যা করার জন্যে প্রায় দশ রকম ভিন্ন ভিন্ন স্কেল ব্যবহার করে থাকেন, তবে সাধারণ মানুষ এখনো ভূমিকম্প বললেই সেটাকে পরিমাপ করতে চায় রিক্টর স্কেল দিয়ে। 1935 সালে চার্লস রিক্টর এই স্কেলের সূচনা করেছিলেন, এটি হচ্ছে যেখানে ভূমিকম্প হয়েছে তার থেকে একশ কিলোমিটার দূরে সর্বোচ্চ ভূকম্পনের দশ ভিত্তিক লগ। ভূকম্পনটি মাপা হয় মাইক্রোমিটারে, কাজেই কোনো ভূমিকম্পের কেন্দ্র থেকে একশ কিলোমিটার দূরে বসানো কোনো সিসমোগ্রাফে যদি দেখা যায় কম্পনটি এক সেন্টিমিটার (1 সেন্টিমিটার= 10,000 মাইক্রো মিটার) তাহলে রিক্টর স্কেলে সেটি হবে (log 10,000=4) চার। 1987 সালের 1 অক্টোবর প্যাসাডিনা শহরে আমি যে ভূমিকম্প দেখেছিলাম সেটি ছিল রিক্টর স্কেলে ছয়, যার অর্থ একশ কিলোমিটার দূরে ভূ কম্পনের বিস্ত রি ছিল প্রায় এক মিটার! রিক্টর স্কেল এক মাত্রা বেশি হওয়া মানে ভূকম্পনের পরিমাণ দশগুণ বেড়ে যাওয়া। ভূমিকম্পে যে পরিমাণ শক্তি বেরিয়ে আসে সেটা কিন্তু বাড়ে ত্রিশগুণ। আমি যে ভূমিকম্পটি দেখেছিলাম রিক্টর স্কেলে সেটা ছিল ছয়, সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্রোপকূলে যে ভয়াবহ ভূমিকম্পটি হয়েছে সেটি রিক্টর স্কেলে ছিল নয়। যার অর্থ আমার দেখা ভূমিকম্প থেকে সেটি ছিল (30x30x30=) 2700 গুণ বেশি শক্তিশালী।

    আমরা মানুষেরা মাঝে মাঝেই নিজেদের ক্ষমতা নিয়ে একটি বেশি আস্ফালন করে ফেলি, প্রকৃতির শক্তির কাছে আমরা যে কত অসহায় এবং দুর্বল সেটি মাঝে মাঝে ভেবে দেখলে আমাদের অহংকার নিশ্চিতভাবেই একটু কমে আসবে!

    .

    22. গ্রহাণুপুঞ্জ

    আমাদের সৌরজগতে সূর্যকে ঘিরে গ্রহগুলো হচ্ছে–যথাক্রমে বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুন। প্লুটোকে সাম্প্রতিককালে গ্রহ পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। 1772 সালে বার্লিন অবজারভেটরীর জোহান এলার্ট বোড নামে একজন জ্যোতির্বিদ গ্রহগুলোর ভেতরে পরস্পরের দূরত্ব বিশ্লেষণ করে বোডের সূত্র নাম দিয়ে একটা সূত্র দিলেন। তার সেই সূত্র অনুযায়ী মঙ্গল এবং বৃহস্পতির মাঝখানে আরেকটা গ্রহ থাকার কথা কিন্তু অনেক খুঁজে পেতেও সেখানে কোনো গ্রহ খুঁজে পাওয়া গেল না। এখন যেমন বিশাল টেলিস্কোপ আছে তখন সেরকম কিছু ছিল না তারপরেও সকল জ্যোতির্বিদ মিলে বোডের সূত্র থেকে ভবিষ্যদ্বাণী করা সেই অদৃশ্য গ্রহটিকে খুঁজে বের করার জন্যে “মহাজাগতিক পুলিশ বাহিনী” নাম দিয়ে একটা সংগঠন দাঁড় করিয়ে ফেললেন।

    অনেক খুঁজেও তারা কেউ কিছু খুঁজে পেলেন না কিন্তু সেই “পুলিশ বাহিনীর” বাইরের একজন জ্যোতির্বিদ গিসেপ পিয়াজি 1801 সেই অদৃশ্য গ্রহটিকে খুঁজে পেলেন তবে সেখানে একটা গুরুতর সমস্যা দেখা গেল, গ্রহটি এত ছোট যে তাকে গ্রহ বলেই ডাকা যায় না, তাকে বলতে হয় গ্রহাণু। তার ব্যাস মাত্র 621 মাইল! 1802 এবং 1807 সালে আরো দুটি গ্রহাণু খুঁজে পাওয়া গেল একটার নাম পালাস অন্যটি ভেস্টা। দুটোর ব্যাস সাড়ে তিনশত মাইলের কাছাকাছি! এই দুটিও আসলে গ্রহাণু। এর পরের গ্রহাণুটা খুঁজে পেতে সময় নিল সুদীর্ঘ ত্রিশ বৎসর। এ-রকম সময়ে গ্রহ-নক্ষত্র খুঁজে বের করতে আলোকচিত্রের ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে কাজেই যে গ্রহাণুকে খালি চোখে দেখা যায় না সেগুলো সংবেদনশীল আলোকচিত্রে দীর্ঘ এক্সপোজারের কারণে ধরা পড়তে লাগল। দশ বৎসরের ভেতর 48 টা গ্রহাণু খুঁজে পাওয়া গেল। 1899 সালের ভেতরে তার সংখ্যা দাঁড়াল 491 এবং 1930 সালে জ্যোতির্বিদরা 1000 থেকেও বেশি গ্রহাণু খুঁজে বের করে ফেললেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ইন্টারন্যাশনাল এস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন সম্মিলিতভাবে গ্রহাণু খুঁজে বের করার একটা পরিকল্পনা নিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার গ্রহাণু খুঁজে বের করে নিল। অনুমান করা হয় সব মিলিয়ে প্রায় 30000 গ্রহাণু রয়েছে, তবে প্রায় বালু কণার মতো গ্রহাণুও থাকতে পারে যেগুলো হয়তো আসলে কখনোই ঠিক করে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

    বোডের সূত্র অনুযায়ী মঙ্গল এবং বৃহস্পতির মাঝখানে একটা গ্রহ থাকার কথা ছিল সেই গ্রহটি আর কখনোই খুঁজে পাওয়া যায় নি, পাওয়া গেছে হাজার হাজার গ্রহাণু! সবগুলোকে একসাথে বলা হয় গ্রহাণুপুঞ্জ। ইংরেজিতে এস্টেরয়েডস (Asteroids)। ইংরেজি নাকমরণটিতে বোঝানো হয় নক্ষত্ৰকণা কিন্তু এগুলো আসলে নক্ষত্ৰকণা নয় এগুলো হচ্ছে গ্রহাণু বা গ্রহকণা। জ্যোতির্বিদরা অনুমান করেন সত্যি সত্যিই হয়তো মঙ্গল এবং বৃহস্পতি গ্রহের মাঝখানে একটা গ্রহ ছিল। সুদূর অতীতে কোনো এক মহাজাগতিক বিস্ফোরণে গ্রহটা টুকরো টুকরো হয়ে গ্রহাণু হিসেবে মঙ্গল এবং বৃহস্পতির মাঝখানে ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রহাণুগুলোর আকার খুব ছোট। মাত্র ছয়টি গ্রহাণুর ব্যাস 100 মাইল থেকে বেশি।

    জ্যোতির্বিদরা যখন একের পর এক গ্রহাণু খুঁজে পেতে শুরু করেছিলেন তখন তাদের একটা করে নাম দেয় জরুরি হয়ে পড়েছিল। আট-নয়টি গ্রহের আলাদা করে নাম দেয়া সম্ভব এবং সেগুলো মনে রাখাও সম্ভব কিন্তু যখন গ্রহাণুর সংখ্যা ত্রিশ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে যায় তখন সেগুলোর তালিকা করার একটা নিয়ম তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়ল। জ্যোতির্বিদরা যে নিয়মটি করলেন সেটি খুব সহজ, কোনো গ্রহাণুটি কখন খুঁজে বের করা হয়েছে তার ক্রমানুসারে একটা সংখ্যা দিয়ে গ্রহাণুটাকে নির্দিষ্ট করে দেয়া হলো। জ্যোতির্বিদরা অবশ্যি শুধু সংখ্যা দিয়ে নামকরণে সন্তুষ্ট থাকলেন না সবগুলোকেই আলাদাভাবে একটা নামও দিয়ে দিলেন। প্রথম দশটি গ্রহাণুর নাম তাদের আকার এবং অন্যান্য কিছু তথ্য তালিকা 1 এ দেয়া হলো।

    প্রথম প্রথম গ্রহাণুর নামগুলো ছিল বেশ ভারিক্কী। যতদিন যেতে শুরু করেছে জ্যোতির্বিদরা ততোই লঘু মেজাজে নাম দিতে শুরু করেছেন। যেমন 2309 নম্বর গ্রহাণুটির নাম দেয়া হয়েছে মি. স্পক। মি. স্পক হচ্ছে জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিজ স্টার ট্রেকের একটা চরিত্র! অনেক সময় গ্রহাণুর নামগুলো কোনো একটা স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্যেও ব্যবহার করা হয়। 1986 সালের মার্চ মাসে একটা দুর্ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশান চ্যালেঞ্জার বিধ্বস্ত হয়ে সাতজন মহাকাশচারী মারা গিয়েছিলেন। 3350 থেকে 3356 এই সাতটি গ্রহাণুকে এই সাতজন মহাকাশচারীর নামে নামকরণ করা হয়েছিল। এখন মোটামুটিভাবে যে জ্যোতির্বিদ একটা গ্রহাণুকে খুঁজে বের করেন তিনিই তার আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে সেই গ্রহাণুর নাম দিয়ে ফেলতে পারেন।

    1 নং তালিকার গ্রহাণুগুলোর দিকে তাকালে যে বিষয়টিকে সবচেয়ে কৌতূহলোদ্দীপক মনে হবে সেটি হচ্ছে সূর্য থেকে এই গ্রহাণুগুলোর দূরত্ব। সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্বকে 1 ধরে (আসলে এটি 94 মিলিওন মাইল) তার তুলনার দূরত্বগুলো বসানো হয়েছে। মঙ্গলের কক্ষপথের দূরত্ব পৃথিবীর তুলনায় 1.5 এবং বৃহস্পতির কক্ষপথ 5.2 কাজেই গ্রহাণুগুলোর এর ভেতরেই থাকার কথা এবং মোটামুটি সেভাবেই আছে তবে প্রত্যেকটা গ্রহাণুর জন্যে দুটি দূরত্ব দেওয়া আছে একটি কম অন্যটি বেশি। তার কারণ গ্রহাণুগুলোর কক্ষপথ বৃত্তাকার নয় এগুলো উপবৃত্তাকার। কখনো-কখনো এটা সূর্যের কাছাকাছি চলে আসে এবং কখনো-কখনো দূরে চলে যায়। এ-রকম কয়েকটি গ্রহাণুর কক্ষপথ 22.1 নং ছবিতে দেখানো হয়েছে। এগুলোর মাঝে সবচেয়ে বড় গ্রহাণু সিরাসের কক্ষপথটি মোটামুটি বৃত্তাকার। হিলডালগো গ্রহাণুটির কক্ষপথ বৃহস্পতি এবং মঙ্গলের কক্ষপথ ভেদ করে পৃথিবীর কক্ষপথের কাছাকাছি চলে এসেছে। এপোলো এবং ইকারাস গ্রহাণুর কক্ষপথ আসলে পৃথিবীর কক্ষপথ ভেদ করে চলে এসেছে। সম্ভবত ইকারাসের নামকরণটি যথার্থ দেয়া হয়েছে। গ্রিক পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী ইকারাস মোম দিয়ে পাখা তৈরি করে ওড়ার চেষ্টা করেছিল। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী উড়তে উড়তে সে সূর্যের এত কাছাকাছি চলে এসেছিল যে সূর্যের প্রচণ্ড উত্তাপে মোম গলে তার পাখাগুলো খুলে গিয়ে তার মৃত্যু হয়। সূর্যের খুব কাছাকাছি চলে যায় বলেই হয়তো এই গ্রহাণুটার নাম দেয়া হয়েছে ইকারাস।

    সংখ্যা নাম আবিষ্কারের বছর সূর্য থেকে দূরত্ব
    (পৃথিবীর তুলনায়)
    ব্যাস (মাইল)
    1 সিরাস 1801 2.55-2.94 622
    2 পালাস 1802 2.11-3.42 377
    3 জুনো 1804 1.98-3.35 155
    4 ভেস্টা 1807 2.15-2.57 333
    5 এস্ট্রিয়া 1845 2.10-3.06 63
    6 হেব 1847 1.86-2.55 121
    7 আইরিস 1847 2.09-2.55 130
    8 ফ্লোরা 1847 1.86-2.55 94
    9 মিটাস 1848 2.09-2.68 94
    10 হাইজিয়া 1849 2.84-3.46 279

    22.1 নং ছবিতে হেক্টর নামে যে গ্রহাণুটির কক্ষপথটি দেখানো হয়েছে সেটি প্রায় বৃহস্পতির কক্ষপথের মতোই। বৃহস্পতি আসলে বিশাল একটি গ্রহ তার আকর্ষণের কারণে অনেক গ্রহাণুই কাছাকাছি চলে এসেছে। বিশাল বৃহস্পতির সামনে এবং পিছনে থেকে পাইক বরকন্দাজের মতো এই গ্রহাণুগুলো বৃহস্পতিকে অনুসরণ করে। বৃহস্পতির কক্ষপথের এই গ্রহাণুগুলোর নাম হচ্ছে ট্রজান, যেগুলো সামনে থাকে সেগুলো হচ্ছে অগ্রগামী ট্রজান এবং যেগুলো পিছনে যাকে সেগুলো হচ্ছে পশ্চাগামী ট্রজান।

    একটা গ্রহ যখন অনেক বড় হয় মাধ্যাকর্ষণের কারণে তখন সেটা গোলাকার রূপ নেয়। গ্রহাণুগুলোর আকার এত ছোট যে সেগুলোর আকার সব সময়ে গোলাকার নয়, তাদের বিচিত্র সব আকার রয়েছে। আকারে ছোট বলে ভর কম, তাই কোনো বায়ুমণ্ডলও নেই। কাজেই গ্রহাণুগুলোতে গ্রহের মতো জটিল কিছু নেই, এগুলো সহজ-সরল নিঃসঙ্গ ছোট-বড় পাথরের টুকরো ছাড়া আর কিছু নয়।

    কে জানে, কোনোদিন হয়তো বিজ্ঞানীরা এই সাদামাটা পাথরের টুকরো থেকে সুদূর অতীতের কোনো প্রলয়ংকরী দুর্ঘটনা বা বিস্ফোরণের ইতিহাস খুঁজে বের করবেন।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleগাব্বু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article ইস্টিশন – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }